চুরুটটা নিভে গেছে অনেকক্ষণ, তবু ত্রিদিব সেটা ধরে আছেন দু’আঙুলে। মাঝে মাঝে ঠোঁটেও ছোঁয়াচ্ছেন, পকেটে দেশলাই নেই, ত্রিদিব লাইটার ব্যবহার করেন না, যখন তখন দেশলাই ফুরিয়ে যায়, তবু চুরুটটা ধরে থাকলেও নেশার কাজ হয়। পিকাডেলি সাকাসে একটা রাস্তা পার হবার উদ্যত ভঙ্গিতে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন ত্রিদিব। মাঝে মাঝেই থেমে যাচ্ছে ট্রাফিক, রাস্তা পার হবার সঙ্কেত জ্বলে উঠছে। দু দিক থেকে আসা যাওয়া করছে ব্যস্ত মানুষ, ত্রিদিব যেন একটা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ঝাঁপ দেবেন কি দেবেন না ভাবছেন।
এখন সন্ধে সাড়ে ছ’টা, অফিস ফেরা নারী পুরুষরা এখনো ছুটছে টিউব স্টেশনের দিকে, আকাশ সারাদিন ঝিম মেরে আছে, হাওয়া একেবারে বন্ধ, এখন যে-কোনো মুহূর্তে তুষারপাত শুরু হতে পারে। অনেক গাছের পাতা ঝরে গেছে, আবার সামনে আসছে সুদীর্ঘ শীত। ত্রিদিব একবার ওভারকোটের পকেটগুলো চাপড়ালেন, তিনি যে কী খুঁজছেন, সেটাই মনে নেই। আজ অবশ্য এখনো মদ্যপান করেননি ত্রিদিব, তাঁর ঠোঁটে চাপা কৌতুকের হাসি।
একজন লোক অসাবধানে ত্রিদিবকে একটা জোর ধাক্কা মেরে রাস্তায় নেমে গিয়ে আবার ফিরে এসে বললো। আ’ম স্যরি। ত্রিদিব লোকটিকে গ্রাহ্যই করলেন না। ঠাণ্ডা চুরুটে একটা টান দিলেন। এবার তাঁর খেয়াল হলো যে তাঁর তেষ্টা পেয়েছে।
ধারে কাছেই গোটা দুয়েক পাব আছে বটে কিন্তু ত্রিদিব চেনা পাব ছাড়া যান না। তিনি দ্রুত হাঁটতে লাগলেন। মিনিট দশেক হেঁটে একটা গলির মধ্যে ছোট পাব-এর দরজা ঠেলে ঢুকলেন। ভেতরটা ধোঁয়ায় ভর্তি, এত লোকজন যে অনেকেই বসার জায়গা পায়নি, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পান করছে। এখানে থিয়েটারের উঠতি অভিনেতারা অনেকে আসে, তাদের পোশাক বিচিত্র, কথাবার্তা এবং হাসিও নাটকীয় ধরনের। বার কাউন্টার একেবারে ভর্তি, প্রত্যেকটা উঁচু টুলে লোক বসে আছে, তবু ত্রিদিব ঠেলেঠুলে এক কোণে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত বারটেন্ডারের উদ্দেশে বেশ চেঁচিয়ে বললেন, ‘ইভনিং, ম্যাক!
প্রায় বৃদ্ধ ব্যক্তিটি কিছুতেই ত্রিদিবের নাম মনে রাখতে পারে না, তাই সে বললো, ‘ইভিনিং, মাই ফ্রেন্ড। অ্যাজ ইউজুয়াল?
ত্রিদিব মাথা নেড়ে পকেট থেকে একটা দশ পাউন্ডের নোট বার করলেন।
বারটেন্ডারটি প্রথমে একটা বড় কাচের জাগে লাগার দিয়ে গেল, একটু পরে এক প্লেট ডিম ও সসেজ এনে রাখলো। সেই খাবার শেষ হতে না হতেই ত্রিদিবের বীয়ার শেষ, তাঁকে আর কিছু বলতে হলো না, দ্বিতীয় জাগ এসে পড়লো প্রায় সঙ্গে সঙ্গে।
পাব-এ কেউ শুধু মদ্যপান করতে যায় না, ইংলিশ পাব হলো ইংরেজদের মন খোলসা করার তীর্থস্থান। শ্রমিক কিংবা অফিস ক্লার্করা সন্ধেবেলা পাবে এসে কথায় কথায় রাজা উজির মারে, বুদ্ধিজীবীরা তাদের চেয়েও উচ্চদরের বুদ্ধিজীবীদের মুণ্ডপাত করে, এ ছাড়াও অনেকে আসে বউয়ের সঙ্গে বেশি সময় না কাটাবার জন্য। পাব-এ সাধারণত কেউ চুপচাপ একা একা মদ খায় না, এখানে নিয়ম হলো, কাছাকাছি তিন চারজনকে তুমি এক রাউন্ড খাওয়াও, তারপর তারাও প্রত্যেকে এক রাউন্ড করে খাওয়াবে। এতে অন্যদের খাওয়ানোও হলো, অথচ খরচও বেশি পড়লো না।
ত্রিদিব অবশ্য এর ব্যতিক্রম। এই পাব-এ তিনি প্রায়ই আসেন বলে বেশ কয়েকজন তাঁর মুখ চেনা, কিন্তু চোখাচোখি হলে নড় করা ছাড়া ত্রিদিব কারুর সঙ্গে কথা বলেন না। তিনি সব সময়েই কাউন্টারে এসে দাঁড়ান, বারটেন্ডার, যে এই পাব-এর মালিকও বটে তার সঙ্গে দুটো একটা কথা হয়।
এখানে প্রায় সবাই ওভারকোট খুলে ঝুলিয়ে রাখে হ্যাঁঙারে। ভেতরটা বেশ গরম, তবু ত্রিদিব ওভারকোট খোলেন নি। তাঁর বিভিন্ন পকেটে অনেক কিছু থাকে। পাশের লোকটি চলে যাওয়ায় তিনি একটা উঁচু টুল পেয়ে গেলেন। অন্যদিন তিনি পকেট থেকে কোনো বই বার করে পড়তে শুরু করেন, আজ বার করলেন একটা ছোট্ট, সাদা, চৌকো কার্ড। সেটা একটা সামান্য ভিজিটিং কার্ড, অথচ সেটার দিকেই চেয়ে রইলেন এক দৃষ্টিতে, মুখে মুচকি মুচকি হাসি।
আজ টিউব ট্রেনে আসবার সময় ত্রিদিবের ঠিক মুখোমুখি বসেছিলেন রাতুল। ত্রিদিবের বাল্যবন্ধু সেই রাতুল, বম্বে থেকে বিপত্নীক হয়ে ফেরার পরে যাঁর সঙ্গে আবার নতুন করে ঘনিষ্ঠতা হয়। সেই রাতুল লন্ডনে! ত্রিদিব অন্যমনস্ক স্বভাবের মানুষ, ট্রেনের সহযাত্রীদের দিকে তিনি নজরই দেন না, ট্রেনে উঠেই বই খুলে বসেন। রাতুল নিশ্চয়ই দেখেছিলেন, অন্তত দু’ তিনটি স্টেশন মুখোমুখি বসে থেকেও রাতুল একবারও ত্রিদিবকে ডাকেননি। হঠাৎ কী
একটা বাংলা কথা শুনে ত্রিদিব মুখ তুললেন। রাতুলকে দেখেও ত্রিদিব যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ট্রেনের কামরায় ভারতীয় বেশ কিছু থাকে, বাংলা কথাও শোনা যায়, কিন্তু এ যে সত্যিই রাতুল।
ত্রিদিবের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই রাতুল উঠে দাঁড়ালেন। ট্রেনের গতি মন্থর হয়ে এসেছে, একটা স্টেশনে থামবে। রাতুল পাশের এক মহিলাকে বললেন, এসো! মহিলাটি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে কেন! রাতুল আবার জোর দিয়ে বললেন, এসো!
এক মুহূর্তের জন্য ত্রিদিবের মনে হয়েছিল মহিলাটি যেন অবিকল সুলেখা। সেই রকম দৈর্ঘ্য, মাথা ভর্তি চুল, টানা টানা দুটি গভীর চোখ, একই রকম শরীরের গড়ন। পর মুহূর্তেই ত্রিদিব বুঝলেন, সুলেখা কী করে হবে? সুলেখা তো আর নেই, তাছাড়া মাত্র এই কয়েকটি বছরে তিনি কি সুলেখার মুখখানা ভুলে গেলেন? অন্য কোনো মেয়েই সুলেখা হতে পারে না। সুলেখা ছিল ইউনিক!
ত্রিদিবকে দেখেও রাতুল এগিয়ে যাচ্ছিলেন দরজার দিকে, ত্রিদিব হতভম্বের মতন বললেন, রাতুল! তুমি ইংল্যান্ডে কবে এলে?
রাতুল ভুরু কুঁচকে অতিশয় কৃত্রিম ভদ্রতার সঙ্গে বললেন, আই অ্যাম অ্যাফ্রেড…
ত্রিদিব বললেন, আমায় চিনতে পারছে না? আমি ত্রিদিব!
রাতুল মহা বিস্ময়ের ভাব দেখিয়ে বললেন, ত্রিদিব? এ রকম চেহারা করলে কী করে, সত্যি আমি চিনতে পারিনি।
ট্রেনটা প্রায় থেমে এসেছে, এখনো দরজা খোলে নি। রাতুল বললেন, আমায় এখানে নামতে হবে, একটা জরুরি কাজ আছে।
ত্রিদিব বললেন, তুমি কোথায় আছো? তোমার সঙ্গে যোগাযোগ হবে কী করে?
দরজা খুলে গেছে, আর অপেক্ষা করার উপায় নেই, পেছনের লোকরা ঠেলছে, রাতুল দ্রুত পকেট থেকে একটা কার্ড বার করে ত্রিদিবের হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন, টেলিফোন করো! তারপর সঙ্গিনীর কোমরে হাত দিয়ে নেমে গেলেন প্ল্যাটফর্মে।
ট্রেনটা আবার ছেড়ে যাবার পর ত্রিদিবের মনে হয়েছিল, তিনিও নেমে পড়লেন না কেন? তাঁর এমন কিছু রাজকার্য ছিল না, কিছুক্ষণ রাতুলের সঙ্গে কথা বলে আবার পরের ট্রেনে উঠে পড়তে পারতেন। কিন্তু একটু একটু করে তিনি উপলব্ধি করলেন যে রাতুলের ব্যবহারটাই ছিল অস্বাভাবিক। ত্রিদিবের চেহারা কি এতই বদলে গেছে যে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুও তাঁকে চিনতে পারবেন না? ত্রিদিকে দেখার পরেই রাতুল ধড়ফড় করে নেমে যেতে চাইলেন, ত্রিদিব নিজের মুখে না বললে রাতুল ভবিষ্যতে কোনো যোগাযোগ করারও ইচ্ছে প্রকাশ করেননি।
রাতুলের সঙ্গে একজন মহিলা, সে কি রাতুলের স্ত্রী? মহিলাটির সঙ্গে রাতুলের ব্যবহারে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল। রাতুল আবার বিয়ে করেছে? এত সহজে সে সুলেখাকে ভুলে যেতে পারলো? রাতুল ভাগ্যবান। যারা সহজে অনেক কিছু ভুলে যেতে পারে, তারাই বুঝি জীবনে সার্থক হয়। এই ক’ বছরেও চেহারা একটুও টকায়নি রাতুলের, তাঁকে অনায়াসে এখনো কোনো ক্রিকেট টিমের ক্যাপটেন করা যায়।
সুলেখার মৃত্যুর পর রাতুল আর কোনো সম্পর্কই রাখেননি ত্রিদিবের সঙ্গে। সুলেখার আত্মহত্যার জন্য রাতুল আর শাজাহান দু’জনেই ত্রিদিবকে দায়ী করেছিলেন, যেন ত্রিদিবই নিজের হাতে সুলেখার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
হ্যাঁ, দায়ীই তো ত্রিদিব! তিনি নিজে তা অস্বীকার করতে পারেন না! সুলেখা ত্রিদিবের জন্য অন্য সমস্ত প্রলোভন জয় করতে পেরেছিল, তবু ত্রিদিব তাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। কী কঠিন, নির্মম সেই মুক্তি, কী করে ত্রিদিব উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন সেই কথা! অপমানে নীল হয়ে গিয়ে সুলেখা বলেছিলেন, তুমি চাও, আমি চলে যাই!
এক চুমুকে তৃতীয় বীয়ারটি শেষ করলেন ত্রিদিব, খানিকটা ঝরঝর করে পড়লো তাঁর বুকের জামায়। কাচের জাগটি কাউন্টারে ঠুকে ত্রিদিব আবার নেবা চুরুটটা ঠোঁটে গুজলেন।
ম্যাক আর এক জাগ বীয়ার নিয়ে এসে ত্রিদিবের ঠোঁট থেকে চুরুটটা কেড়ে নিল। একটা লম্বা নতুন চুরুট ত্রিদিবের ঠোঁটে লাগিয়ে দিয়ে লাইটারে ধরিয়ে দিয়ে বললো, দিস ইজ অন দা হাউজ!
ত্রিদিব হাত নেড়ে ধন্যবাদ জানালেন শুধু, ম্যাকের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলার ইচ্ছে নেই তাঁর এখন।
কতদিন আগে এদেশে এসেছে রাতুল? নিছক বেড়াতে এলে কেউ কার্ড ছাপে না। কার্ডে রাতুলের অফিস ও বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নাম্বার। ক্লোরাইড কম্পানি, হ্যাঁ, দেশে থাকতে রাতুল ক্লোরাইডেরই বড় অফিসার ছিল। হয়তো দু তিন বছর ধরেই এখানে আছে। লন্ডনে রাস্তায় ঘাটে চেনা কারুর সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াটাই অস্বাভাবিক। ত্রিদিবও আগে লন্ডনে থাকতেন না, মাস ছয়েক হলো চাকরি বদল করে এসেছেন।
পাব-এ হৈ-হল্লা বাড়ছে, গোটা তিনেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ছেলে গায়ে পড়ে পাশের লোকদের সঙ্গে ঝগড়া বাধালো। ত্রিদিবের কোনোদিকে ভূক্ষেপই নেই। তিনি সেই ছোট্ট কার্ডটাই দেখছেন একদৃষ্টিতে, যেন তাতে লেখা আছে অনেকদিনের ইতিহাস।
গোটা চারেক বীয়ার শেষ করার পর ত্রিদিবের অন্য কথা মনে পড়ে গেল। তাড়াতাড়ি তিনি উঁচু টুল থেকে নেমে পড়লেন, কাউন্টারের ওপরে রাখলেন দু’ পাউন্ড টিপস। বেরিয়ে এসে তিনি টিউবের জন্য না নেমে একটা ট্যাক্সি ধরে চলে এলেন গোল্ডার্স গ্রীনে। চুরুটটা আবার নিভে গেছে, ধরাবার কথা খেয়াল নেই।
ত্রিদিবকে দেখেই তুতুল ভুরু কুঁচকে বললো, ত্রিদিবমামা, আবার তুমি টিপসি হয়ে এসেছো? তোমাকে তো বলেইছি, আলম এটা পছন্দ করে না!
ত্রিদিব সেই বকুনি অগ্রাহ্য করে উদাসীনভাবে হাসলেন। তারপর বললেন, আসলে এই রকম সময়েই আমি সুস্থ থাকি, তোরা বুঝিস না! আলম কই রে?
তুতুল বললো, সার্জারিতে ডিউটিতে গেছে। ফিরতে দেরি হবে।
সোফায় বসে পড়ে ত্রিদিব বেশ শব্দ করে একটা ঢেকুর তুললেন। জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললেন, বেশ ভালো রান্নার গন্ধ বেরিয়েছে, চিংড়ি মাছ, তাই না? তুতুল তুই তো। আমাকে কোনোদিনও নেমন্তন্ন করে খাওয়াস না!
তুতুল বললো, খাওয়াতে পারি, কিন্তু সেদিন ড্রিংক করে আসতে পারবে না। এখানেও মদ পাবে না।
–মুসলমানের বউ হয়ে তুই আরও বেশি অ্যান্টি-ড্রিংকিং হয়ে গেছিস! ওরে বীয়ারকে কেউ মদ বলে না! আসল মদ খাবো এখন!
ওভারকোটের পকেট থেকে একটা ছোট শিশি বার করে ত্রিদিব খানিকটা স্কচ গলায় ঢাললেন।
তুতুল রীতিমতন রাগ করে ঝাঁঝালো গলায় কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। বিলেতে প্রথম এসে তুতুল যখন অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছিল, তখন ত্রিদিব তাকে দুশো পাউন্ড দিয়েছিলেন না চাইতেই। তুতুল অবশ্য টাকাটা শোধ করে দিয়েছে, কিন্তু সেই উপকার কি ভোলা যায়? তাছাড়া ত্রিদিব যে তুতুল আর আলমকে সত্যিকারের স্নেহ করেন, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।
তুতুল কারভাবে বললো, ত্রিদিমামা, তুমি কেন এমনভাবে নিজেকে শেষ করছো! আমি অনেকবার বলেছি, যা হবার তা তো হয়েই গেছে, তুমি পুরোনো কথা ভুলে যাও! তুমি মোটেই গিল্টি নও! রাগের মুহূর্তে মানুষ ও রকম অনেক কথাই বলে ফেলে!
ত্রিদিব এক দৃষ্টে চেয়ে রইলেন তুতুলের দিকে। সুস্থ হয়ে উঠতে যথেষ্ট সময় নিয়েছে তুতুল, এখন অনেকটা ভালো আছে। কিন্তু তার মুখের ফ্যাকাসে ভাবটা যায় নি, তার হাঁটার মধ্যে একটা টলমলে ভাব আছে, তবু সে জোর করেই নিজেকে পুরোপুরি ফিট প্রমাণ করার চেষ্টা করে। আলম অবশ্য তাকে কাজে যোগ দিতে দেয়নি, কিন্তু সে একা একা বাইরে বেরোয়। আজ শাড়ির বদলে একটা হাউস কোর্ট পরে আছে তুতুল, মাথার সব চুল খোলা, তার চোখ দুটিতে ঈষৎ সজল ভাব।
ত্রিদিব বললেন, হ্যাঁ, এবার বদলে যাবো, সময় হয়েছে, আজ একজনকে দেখলাম…হ্যাঁরে তুতুল, তুই শাজাহানের ঠিকানাটা জানিস?
তুতুল আবার তীক্ষ্ণ হয়ে গিয়ে বাচ্চাকে বকুনি দেবার ভঙ্গিতে বললো, না তুমি শাজাহান সাহেবের সঙ্গে দেখা করবে না। তোমরা দেখা হলেই ঝগড়া করো।
–নারে, ঝগড়া করবো না। শাজাহানের সঙ্গে আমি খারাপ ব্যবহার করেছি, তার কাছে ক্ষমা চাইবো।
–তার বাড়ি গিয়ে তুমি ক্ষমা চাইবে! সেটারও কোনো দরকার নেই, তুমি বরং ওর নামে একটা নোট লিখে দিও, আমরা পৌঁছে দেবো। তবে তাড়াতাড়ি দিও, ত্রিদিবমামা, আমরা সপ্তাহ দু’ একের মধ্যে কলকাতা যাচ্ছি। তোমার কারুকে কোনো খবর দেবার আছে তো বলো!
কলকাতার প্রসঙ্গে ত্রিদিব কোনো আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। আর এক ঢোঁক পান করে মদের বোতলটায় ছিপি আঁটলেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তাদের টেলিফোন নোট বুকটা কোথায়?
তুতুল বললো, চিংড়ি মাছের তরকারি বেঁধেছি। ভাত হয়নি এখনো। তুমি দুটো টোস্ট দিয়ে একটু খাবে আমার রান্না! বসো, আমি গরম করে দিচ্ছি এক্ষুনি!
–কথা ঘেরাবার চেষ্টা করছিস কেন রে, তুতুল? আমি কিছুই খাবো না। আই নেভার টেইক এনিথিং সলিড আফটার সানডাউন! পাব-এ ডিম আর সসেজ খেয়েছি, পেট ভরে গেছে!
–রোজ রোজ তুমি বাইরের ঐসব ভাজাভুজি, গারবেজ ফুড খাও?
–নাউ আ ডক্টর ইজ স্পিকিং! তুই শাজাহানের ঠিকানাটা আমাকে দিবি কি দিবি না বল?
–ঠিকানা আমাদের কাছে লেখা নেই।
-–ফোন নাম্বার থাকলে ঠিকানা জানা বুঝি শক্ত কিছু!
–তুমি কেন শুধু শুধু ওর বাড়িতে যাবে? ত্রিদিবমামা, শাজাহান সাহেব তার পরেও অনেকবার এসেছেন এখানে। তোমার সেদিনকার ব্যবহারে উনি মোটেই রাগ করেননি। উনি বুঝেছেন যে তুমি আমার জন্য চিন্তা করে খুব আপসেট হয়েছিলে। তুমি বোধ হয় ভেবেছিলে, আমি আর বাঁচবো না, মরেই যাবো!
–বালাই ষাট! তুই মরবি কেন? তোদের মতন ছেলেমেয়েরা মরে গেলে এই পৃথিবীটা আরও শুকনো আর বিচ্ছিরি হয়ে যাবে! কই, তোদের নোট বুকটা দেখাবি না?
কালো রঙের নোট বুকটার ভেতরের খাপে অনেকগুলো কার্ড গোঁজা। তার মধ্যে সবচেয়ে ওপরেরটাই শাজাহানের। সুদৃশ্য, আইভরি ফিনিশ কাগজে ছাপা, তাতে শাজাহানের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম, দু’তিনটি ফোন নাম্বার ও ঠিকানা রয়েছে।
তুতুল লজ্জা পেয়ে বললো, ও-মা, এই কার্ডটা যে এখানে আছে আমি জানতাম না, সত্যি বিশ্বাস করো, আলম কখন রেখেছে …
ত্রিদিব বললেন, আমি তোকে বিশ্বাস করছি রে, তুতুল। এমন কিছু ব্যাপার তো নয়। এই কার্ডটা আমি নিলুম আজ, পরে ফেরত দিয়ে যাবো। দ্যাখ, এদের থেকেও অনেক বেশিদিন আমি বিলেতে আছি, কিন্তু আমার কোনো কার্ড নেই! কেউ আমার ঠিকানা জানে না। ইজট ইঁট ফানি! হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ!
তুতুল ওর হাত চেপে ধরে ব্যাকুলভাবে বললো, ত্রিদিবমামা…
–কী রে?
–তুমি কথা দাও–
–কথা দিচ্ছি রে তুতুল! আই শ্যাল নেভার মিসবিহেভ উইথ শাজাহান! আমাদের দু’জনের মধ্যে একটা কমন বন্ডেজ আছে।
হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তুতুলের মাথায় রেখে ত্রিদিব বললেন, বেঁচে থাক, বেঁচে থাক, মৃত্যুর কথা কখনো চিন্তা করিস না। মৃত্যু বড় ঠাণ্ডা, বড় ভালগার রকমের ফাইন্যাল।
ঈষৎ স্খলিত পায়ে বেরিয়ে গেলেন ত্রিদিব। আবার একটা ট্যাক্সি ধরলেন। শাজাহানের মতন একজন ব্যস্ত মানুষকে বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টে বাড়িতে পাওয়া যাবে কি না সেকথা চিন্তাও করলেন না।
নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছোনোর পর বেল দিতে দরজা খুলে দিলেন স্বয়ং শাজাহান। ত্রিদিকে দেখে বিস্ময় গোপন করে কঠোর মুখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়েস?
ত্রিদিব বললেন, ইয়েস আবার কী? আমি তোমার সঙ্গে দু একটা কথা বলতে এসেছি। আমি কি তোমার অচেনা যে এমন দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছো?
শাজাহান বললেন, আমি এখন একটু এনগেজড আছি। আমার বাসায় কয়েকজন গেস্ট রয়েছেন।
ত্রিদিব প্রকৃত মাতালের মতন ফুরফুরেভাবে হেসে বললেন, বাসায়? এতদিন বিলেতে থেকেও পাখির বাসা ছাড়তে পারলে না? গেস্ট আছে তো কী হয়েছে? আমি অপেক্ষা করবো। গেস্ট চলে গেলে তোমার সঙ্গে কথা বলবো। জরুরি কথা!
শাজাহান আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, ত্রিদিব তাঁকে প্রায় ঠেলেই ঢুকে পড়লেন ভেতরে।
বাইরের ঘরের সোফাগুলি ফাঁকা, কার্পেটের ওপরে বসে আছে পাঁচ ছ জন যুবক ও দু জন যুবতী। তাদের সামনে ছড়ানো অনেক কাগজপত্র ও বেশ কিছু পাউন্ডের নোট। সবাই ত্রিদিবকে দেখে বিব্রত হয়ে কথা বন্ধ করে চেয়ে রইলো।
ত্রিদিব প্যান্টের দু’ পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ঈষৎ দুলতে দুলতে বললেন, সবকটা মুসলমান। পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বাংলাদেশ! বল্ডারড্যাস্! পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ তৈরি হলেই বা কী এমন হাতিঘোড়া লাভ হবে? এনিওয়ে, ইউ মে ইগনোর মাই প্রেজেনস! আমি কেউ না!
সেই যুবকেরা শাজাহানের দিকে সপ্রশ্নভাবে তাকালো। শাজাহান বিব্রতভাবে বললেন, ঠিক আছে, তোমরা এবার গুছিয়ে ফেলো! কথা তো হয়েই গেল। নেকস্ট ক্যাম্পেন হবে সাসেক্স-এ। আমরা বারট্রান্ড রাসেলকে দিয়ে একটা অ্যাপিল করাবো।
ত্রিদিব একজনের প্রায় ঘাড়ের কাছে বসে পড়ে বললেন, তোমরা সব সাচ্চা মুসলমান, সন্ধের পর লুকিয়ে লুকিয়ে মিটিং করো, কিন্তু মদ খাও না। আমি ব্যাটা এক ব্লাডি হিন্দু, আ ব্লাডি ড্রাঙ্ক অ্যাজ ওয়েল, আমি এই সময় মদ খাই। আমি তোমাদের ডিসটার্ব করবো না, বাট মে আই হ্যাভ আ গ্লাস অ্যান্ড সাম ব্লাডি আইস?
শাজাহান বললেন, বসুন, সব দিচ্ছি।
কাবার্ড খুলে তিনি গ্লাস, সোডার বোতল, একটি ব্ল্যাক লেবেল স্কচের বোতল বার করলেন।
ভেতরে গিয়ে বরফও নিয়ে এলেন। একটা ছোট টেবল টেনে তার ওপরে সব কিছু রেখে বললেন, প্লিজ হেল্প ইয়োরশেলফ।
ত্রিদিবের উত্তরোত্তর নেশা বাড়ছে। এর মধ্যেই তিনি নিজের বোতলের কাঁচা হুইস্কিতে আরও দু তিন চুমুক দিয়েছেন। এবার তিনি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন, হেলপ ইয়োরশেলফ। ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে খারাপ শব্দ! মোস্ট হ্যাঁকনিড এক্সপ্রেশান, শুনলেই আমার গা জ্বালা করে। আরে বাবা, নিজের মদ নিজের গেলাসে ঢালবো। তাকেই বলে হেলপ ইয়োর শেলফ! ডিসগাসটিং! ওঃ হো, আমি আপনাদের ডিসটার্ব করছি, তাই না! দুঃখিত, দুঃখিত, ইউ প্লিজ গো অ্যাহেড! আর আমি কোনো কথা বলব না। তবে, শাজাহান ভাইয়া, তোমার ঐ ফ্যান্সি স্কচ আমি খাবো না! যে বাড়ির হোস্ট নিজে ড্রিংক করে না, তার মদ আমি দুই না। আমি আমার নিজের বোতল থেকে খাবো। ওকে? তোমরা মিটিং করো, আমি স্পিকটি নট!
যুবকের দল টাকা পয়সাগুলো গুনে তুলে একটি ভেলভেটের গয়নার বাক্সে ভরলো। তারা। বুঝে নিয়েছে যে আজ আর কোনো আলোচনা হবে না। তবু দু একটা কথাতেও কথা বাড়ে। সামনের সপ্তাহেই ফান্ড রেইজিং-এর জন্য কনসার্ট আছে, সে বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়।
ত্রিদিব আর কোনো মন্তব্য না করে চুপচাপ মদ খেয়ে যেতে লাগলেন। তাঁর ঠোঁটে একটা অভিব্যক্তিহীন হাসি লেগেই আছে। তাঁর চোখে সুদূর দৃষ্টি।
একটু পরে শাজাহানের অতিথিরা বিদায় নিয়ে চলে গেল। তারা ভদ্রতাসূচক দু একটা কথা বলতেও চাইলো ত্রিদিবের সঙ্গে, কিন্তু ত্রিদিব গ্রাহ্যই করলেন না। তিনি অন্য কিছুতে বিভোর।
শাজাহান সবাইকে দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে ফিরে এসে অত্যন্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, নাও, হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ?
ত্রিদিব ঘোর ভেঙে কয়েক পলক চেয়ে রইলেন শাজাহানের দিকে। তারপর বিদ্রূপের সুরে বললেন, তুমি এত অর্ডিনারি কবে থেকে হয়ে গেলে, শাজাহান? হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ? এটা কি ইংরিজি, না তার আবারেশন? কেউ কি কারুর জন্য সত্যি কিছু করতে পারে? যত রাজের দোকানদাররা এই কথা বলে। শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা! তুমি শাজাহান সিরাজ, তুমি একজন শেক্সশপীয়ার-বিশেষজ্ঞ, তোমার মুখে এত সাধারণ কথা?
শাজাহান চোয়াল আড়ষ্ট করে বললেন, ফরগেট শেক্সপীয়ার! আপনি আমার কাছে কী জরুরি কথা বলতে এসেছেন, সেটাই বলে ফেলুন। আমি একটু তাড়াতাড়ি শুতে যাই!
ত্রিদিব আবেগ মথিত গলায় বললেন, শাজাহান, তোমার সঙ্গে কতদিন আমি শেক্সপীয়ার বিষয়ে নোট এক্সচেঞ্জ করিনি! এদেশের অধিকাংশ ইংরেজই শেক্সপীয়ারের দু’তিন লাইনও মুখস্ত বলতে পারে না। র্যাঙ্ক ইডিয়েটস। একদিন এক ব্যাটা দোকানদারকে বললুম, ম্যাড অ্যাজ দা সী. অ্যান্ড উইন্ড, হোয়েন বোথ কনটেন্ট, হুইচ ইজ দা মাইটিয়ার… তা সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আমি বললুম। ওরে ব্যাটা, এ তোদেরই মহাকবির রচনা, হ্যামলেটের মায়ের সংকল্প, তাও কিছু বোঝে না। যেন হ্যামলেটের নামও শোনেনি!
শাজাহান কঠোর গলায় বললেন, ত্রিদিববাবু, এত রাত্রে আমি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নই। আপনার যদি অন্য কিছু…
তাকে বাধা দিয়ে ত্রিদিব বললেন, আজ রাতুলের সঙ্গে দেখা হলো।
প্রায় আমূল চমকে উঠে, কণ্ঠস্বর পুরো বদলে শাজাহান জিজ্ঞেস করলেন, কে? কার সঙ্গে দেখা হল বললেন?
ত্রিদিব হাসতে হাসতে বললেন, রাতুল, রাতুল, মনে নেই? সেই যে অ্যাথলিট ও প্রেমিক, বিরহী ও বিয়ে পাগলা, অতি সাধারণ একটি জীব, কোনোদিন কবিতা পড়েনি, পড়লেও বোঝেনি, সেই রাতুল এখন লন্ডনে।
শাজাহান জিজ্ঞেস করলেন, সে কোথায় থাকে?
ত্রিদিব বললেন, ঠিক আমার মনেও এই প্রশ্ন জেগেছিল। সে কোথায় থাকে? সে নিশ্চিত কোথাও না কোথাও থাকে। সে সাধারণ একজন টুরিস্ট নয়। সে এদেশে আছে বেশ কিছুদিন। শাজাহান, তুমি, আমি আর রাতুল, দ্যাট ওল্ড থ্রিসাম! আবার আমরা মিট করতে পারি না? ধরো আমরা তিনজনে এক সঙ্গে বসে আড্ডা দিতে দিতে প্ল্যানচেটে সুলেখাকে ডাকলুম!
শাজাহান ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞেস করলেন, ত্রিদিব, তুমি রাতুলকে কোথায় দেখলে? সে কি এদেশে আরও কিছুদিন থাকবে?
ত্রিদিব বললেন, প্ল্যানচেট ব্যাপারটাকে তুমি হয়তো বোগাস মনে করতে পারো আমারও খুব একটা বিশ্বাস নেই। তবু তো, বিশেষ একজনের কথা চিন্তা করে তিনজনের এক হওয়া। আমরা মাথায় মাথা ঠেকাবো। আমাদের ভাইব্রেশান সঞ্চারিত হবে এক মাথা থেকে অন্য মাথায়, তাতেই সুলেখা আবার ফিরে আসবে তিনজনের কাছে।
শাজাহান উত্তেজিত ভাবে বললেন, ত্রিদিব, সুলেখা সম্পর্কে এতটা অবসেড থাকার কোনো মানে হয় না। জীবিতেরা যখন হারিয়ে যায়, তখন তারা বড় বেশি হারিয়ে যায়। তুমি মনে মনে এখনো যে সুলেখার স্মৃতি নারচার করছে, সেটা তোমার মনগড়া এক নারী। সে আসলে সুলেখা নয়!
ত্রিদিব ঠাট্টার সুরে বললেন, থ্যাঙ্কস ফর ইয়োর অ্যাডভাইস! ওভার সিমপ্লিফিকেশান! সব কিছুরই তুমি একটা ব্যাখ্যা দিতে পারো, তাই না? তোমার মনে তা হলে সুলেখার কোনো স্মৃতি নেই? বেচারা সুলেখা, সে মরে গিয়েও হেরে গেল! রাতুলই তা হলে ভালো আছে, সে অন্য মেয়ের কাছে সান্ত্বনা পেয়েছে!
শাজাহান জিজ্ঞেস করলেন, রাতুল কোথায়?
ত্রিদিব পকেট থেকে কার্ডটা বার করে, সেটা ঝটো কোনো হীরে কিংবা আসল এই ভঙ্গিতে উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে বললেন, এই যে এখানে, এ দেশেই!
শাজাহান হাত বাড়িয়ে বললেন, কার্ডটা আমাকে দাও!
ত্রিদিব বললেন, আর এক বোতল সোডা! আর একটু পান করবো। মনে হচ্ছে, আজ রাতটা তোমার এখানেই শুয়ে থাকতে হবে। তুমি আমাকে যদি অবশ্য তাড়িয়ে না দাও, শাজাহান! বয়েস হয়েছে, হাঁটুতে ব্যথা হয়, বেশি রাত্তিরে রাস্তায় বেরুতে ভয় পাই! তবে, একদিন রাতুলকে ডাকবো, আমরা তিনজন এক সঙ্গে—
–কার্ডটা আমাকে দাও, ত্রিদিব!
–না! এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? আমিই সব ব্যবস্থা করবো। বিচিত্রভাবে হেসে শাজাহান বললেন, ঠিক আছে, দিও না! আমার স্মৃতি শক্তি ভালো, তুমি যে একবার দেখালে তাতে আমার টেলিফোন নাম্বারগুলোও মুখস্ত হয়ে গেছে। রাতুলের সঙ্গে শিগগিরই আমার দেখা হবে! কিন্তু সেখানে তুমি থাকবে না। ওর সঙ্গে আমার বোঝাঁপড়া বাকি আছে।