৪৮. মা

৪৮
হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে আছে টগর আর জায়েদ৷
লক্ষ লক্ষ পাখি স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে কানের কাছে কলকলিয়ে উঠতে শুরু করে৷ টগর বুঝতে পারে, তার জ্ঞান ফিরে আসছে৷
খানিকটা ধাতস্থ হলে তার মনে পড়ে, পাশের বিছানায় জায়েদেরও শুয়ে থাকবার কথা৷ সে ঘাড় ঘোরায়৷ ওই তো জায়েদ৷
সে বলে, ‘জায়েদ, পা তো নাড়াইতে পারি না৷ তুই পারিস ?’
টগরের বাবা আলাউদ্দিন চৌধুরী আসেন কার্গো-ভরা সুপারি নিয়ে, পটুয়াখালী থেকে সদরঘাটে৷ ঢাকায় পা রেখেই শুনতে পান দুঃসংবাদটা৷ ছেলে তার গুলিবিদ্ধ৷ তিনি দৌড়ে যান হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে৷
ধীরে ধীরে জায়েদ আর টগর অনেকটা সেরে ওঠে৷ তাদের এই হাসপাতাল থেকে যত তাড়াতাড়ি সরিয়ে নেওয়া যায় ততই মঙ্গল৷ ডিসচার্জ করার কাগজপত্র সব তৈরি করাচ্ছেন টগরের বাবা আলাউদ্দিন চৌধুরী৷ হলি ফ্যামিলির ডাক্তাররা আর ফাদাররা যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন এবং করছেন৷ তারা বিল কয়েক হাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছেন৷
এই সময় টগর হাসপাতালের বিছানায় উঠে বসে৷ নিজের পেটের কাছে ক্ষতস্থানে হাত বুলোতে বুলোতে হঠাৎই দেখে, শক্তমতোন কী যেন দেখা যায়৷ ব্যাপার কী ?
সে বলে, ‘বাবা বাবা, আমার পেটে এটা কী দেখেন তো ? শক্ত৷’
বাবা আসেন৷ দেখেন৷ বুঝতে পারেন না ছেলের পেটে জিনিসটা কী আসলে৷ তিনি ডাক্তার ধরে আনেন একজন৷ ডাক্তার সাহেব টগরের পেটে হাত দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলেন, ‘ওটা কিছু না৷ বুলেট৷’
‘বুলেট ? বলেন কী ?’ টগরের বাবা আঁতকে ওঠেন৷
ডাক্তার ভাবলেশহীন মুখে বলেন, ‘ওতে কোনো ক্ষতি হবে না৷ থাকুক৷’
‘পরে যদি অসুবিধা হয় ?’ আলাউদ্দিন চৌধুরীর কন্ঠে উদ্বেগ৷
‘পরেও হওয়ার কথা নয়৷ হলে আমরা তো আছিই৷’
‘না না৷ পরে আর আসা যাবে না৷ আপনারা এখনই এটা বের করার ব্যবস্থা নিন৷’
ডাক্তার হেসে বলেন, ‘কী টগর৷ তুমি কী বলো ? বুলেটটা পেটে রাখবে, না বের করবে ?’
টগরও ঘাড় শক্ত করে বলে, ‘বার করব৷’
‘আচ্ছা তাহলে তুমি বসো৷ আমি ব্যবস্থা করছি৷’ ডাক্তার সাহেব বাইরে যান৷
কী বলেন ডাক্তার সাহেব৷ এখনই করবে নাকি ? টগর বিস্মিত৷
ডাক্তার এসে বলেন, ‘এখানে তো এঙ্-রে মেশিন নষ্ট৷ আপনি বাইরে থেকে এঙ্-রে করিয়ে আনেন৷’
টগরের বাবা টগরকে নিয়ে গিয়ে এঙ্-রে করিয়ে আনান৷ ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট দেখে বলেন, ‘আরেকটা অপারেশন করতে হবে৷ তবে এটা ছোট অপারেশন৷ পেটের বাইরের দিকে আছে বুলেটটা৷
লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে ডাক্তাররা টগরের পেটে অস্ত্রোপচার করেন৷ টগর সব বুঝতে পারে৷ বুলেটটা বের করে ডাক্তার সাহেব টগরের হাতে দিয়ে বলেন, ‘ধরে থাকো৷’
টগর ওটা ধরেই থাকে৷ সেই বিকালেই টগরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে টগরের বাবা নিয়ে যান আজাদদের মগবাজারের বাসায়৷ টগরের হাতে তখনও ধরা আছে বুলেটটা৷ আজাদদের বাসার কাছেই শিল্পী আবদুল জব্বারের বাসা৷ তার সামনে একটা সজনে গাছ৷ সেই গাছের কাছে এসে কী মনে করে টগর বুলেটটা ফেলে দেয় গাছের গোড়াটা লক্ষ্য করে৷
এর পরে টগরকে তার বাবা নিয়ে যায় বরিশালে৷
ইতিমধ্যে জায়েদকেও হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন সাফিয়া বেগম৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *