সপ্তচরিংশ অধ্যায় – ভৃঙ্গী ও মহাকালের শাপবিবরণ
ঔৰ্ব বলিলেন,–জগতের জন্য হরকে দেবকুল, স্তুতিবাক্যে প্রসাদিত করিলে, মহাদেব উমাসহ মহামৈথুন পরিত্যাগ করিলেন। ১
কিন্তু কেবল রতিমাত্র অবলম্বন করিয়া অভিলাষ পূর্ণ করিতে লাগিলেন এবং সেই রূপেই দেবীরও মনোরথ পূরণ করিতে লাগিলেন। ২
অনন্তর এক সময়ে মহাদেব উমার সহিত রতিমন্দিরে আমোদযুক্ত হইয়া চাটুবাক্যে সংলাপ করিতেছেন। ৩
যে সময়ে পার্বতী হরসমীপে গমন করেন, সেই সময়ে ভৃঙ্গী ও মহাকাল দ্বাররক্ষক হইয়া দ্বারে প্রতিষ্ঠিত ছিল। ৪
কৌতুকাবসান হইলে দেবী বন্ধনমুক্ত কেশপাশে গাত্র হইতে স্খলিত বস্ত্র, হস্ত দ্বারা অবলম্বন করত, বিপর্যস্ত হার হইয়া, সুগন্ধ পুষ্পে অল্প শোভাসম্পন্না, অঙ্গে কুঙ্কুম লেপন করিয়াছেন বলিয়া মনোহারিণী, অধরপল্লব দৃষ্ট হইয়াছে বলিয়া বিশেষ বিভ্রমযুক্তা–এইরূপ মনোহর ভাবমুক্তা পদ্মাননা উমা, রতিতে আসক্ত মনেই নিজভবন হইতে নিঃসৃত হইলেন। তাহার নয়নদ্বয় ঈষদঘূর্ণিত এবং স্বেদবিন্দু-নিচিত। ৫-৭
প্রিয় বৃষধ্বজ ভিন্ন অন্যের দর্শনের অযোগ্যা সেই রতি-সময়ের মনোহর অবস্থাপন্না উমা পুর হইতে নির্গত হইতেছেন। ৮
মহাত্মা ভৃঙ্গী ও মহাকাল দর্শন করিল; সেই সময়ে তাহারা অত্যন্ত কুপিত হইল। ৯
তৎপরে মাতাকে তদ্রপাবস্থাপন্না দেখিয়া অতি দীনভাবে অধোবদন হইল এবং তাহাদিগের তীব্র চিন্তাবেগ প্রবাহিত হইতে লাগিল, ঘন ঘন দীর্ঘ নিশ্বাস পতিত হইতে লাগিল। ১০
তাহারা সেইরূপ অবস্থাতে তাহাকে দর্শন করিয়াছে বলিয়া হিমালয়সুতা অপর্ণা ক্রোধপরবশ হইয়া এইরূপ বাক্য বলিলেন। ১১
অহো! আমার এইরূপ অসম্বন্ধ অবস্থা কিজন্য ইহারা দেখিল।–তোমরা তনয় হইয়াও এইরূপ লজ্জা-মৰ্য্যাদা-বর্জিত হইয়াছ! ১২
যেহেতু তোমরা এইরূপ নির্লজ্জ হইয়া আমাকে অমৰ্য্যাদা করিয়াছ, অতএব তোমাদের জন্ম মনুষ্যযোনিতে হইবে। ১৩
মাতৃ-অবেক্ষণদোষে মনুষযোনিতে জন্ম হইয়া বানরমুখসদৃশ তোমাদের মুখকান্তি হইবে। ১৪
এইরূপে মহামতি ভৃঙ্গী ও মহাকাল উমাদত্ত অভিশাপগ্রস্ত হইয়া মাতৃসমীপে গমন করিল। ১৫
হর-তনয়-দ্বয় শাপজনিতদুঃখার্ত হইয়া বিমর্ষচিত্তে তাহার শাপবেদনা সহ্য করিতে না পারিয়া গিরিজাকে বলিল। ১৬
হে গিরিজে! আমরা সর্বদা নিরপরাধ, অতএব মাতঃ! হঠাৎ এরূপ কুপিত হইয়া আমাদিগকে অভিশাপ দিলেন কেন? ১৭
আপনার সহিত একত্র হইয়া মহাদেব আমাদিগকে ধরে নিয়োগ করিয়াছেন। সেই নিয়োগক্রমে আমরা দ্বারেই সংযতরূপে অবস্থান করিতেহি। ১৮
গৃহ হইতে হঠাৎ নিঃসৃত হওয়া আপনারই অনুচিত হইয়াছে; আপনি আগমন করিয়াই সুন্দর সংযতাবস্থায় আমাদিগকে দেখিতে পাইয়াছেন। ১৯
আমাদের তাহাতে দোষ কি? অতএব আপনি নিরর্থক কোপ করিয়াছেন, যাহা হউক মাতঃ! তাহার এক প্রতীকার আছে, তাহা শ্রবণ করুন। ২০
আপনি মানুষীরূপে ক্ষিতিতে অবতরণ করুন এবং হর মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হউন; তাহার পর মনুষ্যরূপী হরের তেজে তাহার জায়া মনুষ্যরূপিণী আপনার গর্ভে আমরা উভয়ে জন্মগ্রহণ করিব। ২১-২২
হে গিরিসুতে। আমরা যদি নিশ্চয় হরাত্মজ এবং নিরপরাধ হই, তাহা হইলে আমাদের এই বাক্য সত্য হউক। ২৩
হে নৃপশার্দুল! এইরূপ পরস্পরকে পরস্পরে ভয়ঙ্কর অভিশাপ প্রদান করত ভৃঙ্গী ও মহাকাল প্রস্থান করিলেন। ২৪
অনন্তর কিঞ্চিৎকাল অতীত হইলে সর্ব বৃষধ্বজ ভবিষৎকাৰ্য জানিতে পারিয়া স্বয়ং মনুষ্য রূপে জন্মগ্রহণ করিলেন। ২৫
ব্ৰহ্মর দক্ষিণ অঙ্গুষ্ঠ হইতে ব্ৰহ্মসুত দক্ষ জন্মগ্রহণ করিলেন, তৎপরে তাহার কন্যা অদিতি জন্মগ্রহণ করিলেন। ২৬
তাহার পর পূষা নামক দক্ষসুত উৎপন্ন হইল। পূষার পুত্র পৌষ্য জন্মগ্রহণ করিয়া সর্ব শাস্ত্ৰ-পারদর্শী হইলেন। ২৭
যাহার সমসংখ্য নৃপতি হয় নাই ও হইবেও না; নৃপতিসত্তম পৌষ্যরাজ পুত্রহীন হইলেন; তাহার পর বয়ঃ-পরিণামাবস্থায় পৌষ্য ভাৰ্য্যাত্রয়ের সহিত পরম ভক্তিভাবে ব্ৰহ্মাকে সন্তুষ্ট করিলেন। ২৮
লোক পিতামহ ভগবান্ ব্ৰহ্মা, তাহার প্রতি প্রসন্ন হইয়া রাজাকে বলিলেন। হে নৃপশ্রেষ্ঠ! আপনি কি অভিলাষ করিতেছেন আমাকে বলুন, আপনার প্রতি প্রসন্ন হইয়াছি; অতএব সেই অভিলষিত বস্তু আপনাকে প্রদান করিব। সম্প্রতি আপনার জায়াগণের যাহা অভিলষিত, তাহা আমাকে বলুন। ২৯-৩০
পৌষ্য বলিলেন, হে হিরণ্যগর্ভ! আমি অপুত্র, পুত্ৰার্থী হইয়া আপনাকে উপাসনা করিতেছি। আপনি প্রসন্ন হইলে, সৰ্ব্ব-সুলক্ষণ সম্পন্ন পুত্ৰ উৎপন্ন হইবে। ৩১
ইহার নিমিত্ত ভাৰ্যার সহিত ভক্তিপূর্বক আপনার আরাধনায় রত আছি। হে জগৎপতে। যাহাতে একটি পুত্ৰ উৎপন্ন হয়, তাহাই করুন। ৩২
পুত্ৰ-পিতা ও মাতাকে পুন্নাম নরক হইতে উদ্ধার করিয়া থাকে, অতএব ব্রহ্মন। সেই ঘোর নরকভয় নিবারণ করুন। ৩৩
ব্রহ্মা বলিলেন, হে পৌষ্য! আপনার কুলোদ্ভব-পুত্র ভবিষ্যতে হইবে, তজ্জন্য আমি আপনাকে বলিতেছি, আপনার ভাৰ্যাগণসহ তাহা আচরণ করুন। ৩৪।
হে নৃপোত্তম! আমি এই ফল আপনাকে প্রদান করিতেছি–গ্রহণ করুন। স্বরবর্গের বহুকালেও জীর্ণের অযোগ্য এই রসযুক্ত ফল গ্রহণ করত বৎসরদ্বয় পৰ্যত মহাদেবকে আরাধনা করুন। তিনি প্রসন্ন হইবেন। ৩৫-৩৬।
তিনি সুপ্রসন্ন হইয়া যাহা বলিবেন, আপনিও তাহা করিবেন এবং হে রাজন্! ভাৰ্য্যায়ের সহিত মিলিত হইয়া ভর্গের উপদেশমতে অনুষ্ঠান করিবেন। ৩৭
তাহা হইলেই লক্ষণসম্পন্ন কুলবর্ধন আপনার যে তনয় উৎপন্ন হইবে, সে চক্রবর্তী লক্ষণাক্রান্ত হইবে। ৩৮
ব্রহ্মা এইরূপ আদেশ করিয়া প্রস্থান করিলেন; রাজাও সস্ত্রীক পরম ভক্তির সহিত হরের আরাধনায় রত হইলেন। ৩১
নিরাহারে সংযতাহারে এবং কোন সময়ে ফলভোজন করত দৃষদ্বতী-নদী তীরে সেই ব্ৰহ্ম-প্রদত্ত ফল অগ্রে সংস্থাপন করিয়া পুষ্প, অর্ঘ্য, ধূপ দীপাদি দ্বারা বৃষধ্বজের তৃপ্তি সাধন করিতে লাগিলেন। ৪০-৪১
এইরূপে বর্ষদ্বয় অতীত হইলে, জগৎপতি মহাদেব, পৌষ্যরাজের অভিলাষ পূরণের নিমিত্ত তাহার প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রসন্ন হইয়া সহর্ষ-চিত্তে নৃপতিকে বলিলেন, আমাকে কি জন্য উপাসনা করিতেছ বল, আমি তোমাকে তাহা প্রদান করিব। ৪২-৪৩
পৌষ্য বলিলেন, হে বৃষধ্বজ! আমি পুত্ৰ-হীন, অতএব সেই পুত্র কামনায় আরাধনা করিতেছি, যেরূপে আমি পুত্রবান্ হই, তাহাই করুন। ৪৪
রাজা ভাৰ্যাগণের সহিত ভক্তি-প্রবণচিত্তে স্তুতিবাক্যে এই কথা বলিলেন। তাহার পর বৃষভধ্বজ, প্রসন্নচিত্তে ব্ৰহ্মদত্ত ফল হস্তে করিয়া পুত্ৰার্থী রাজাকে এই কথা বলিলেন। ৪৫-৪৮
হে নৃপতে। এই ব্ৰহ্মদত্ত ফল ত্ৰিভাগ করত অতি হৃষ্টান্তঃকরণে তোমার পত্নীত্রয়কে ভোজন করাও। ৪৭
তাহার পর তোমার সহিত ইহাদের রতি সঙ্গম প্রবৃত্ত হইলে হে নৃপ! তোমার পত্নীত্রয় এক সময়ে গর্ভবতী হইবে। ৪৮
তাহার পর কালক্রমে তোমার ভাৰ্যাগণ এক সময়ে প্রসব করিবে। হে নৃপশ্রেষ্ঠ! তাহাতে তুমি এক কাৰ্য্য করিও। ৪৯
তোমার এক স্ত্রীর গর্ভে শিরোভাগ হইবে, অপর এক ভাৰ্য্যার গর্ভে কুক্ষি ও মধ্যভাগ হইবে এবং অবশিষ্ট এক ভাৰ্যার জঠরে নাভির অধোভাগ পর্যন্ত উৎপন্ন হইবে, সেই প্রসূত খণ্ডত্রয় পৃথক পৃথকৃ রূপে যথাস্থানে সংযোগ করিতে হইবে। ৫০-৫১
পরে সেই ভাগ্যত্রয় যোগে তোমার এক পুত্র হইবে, তাহার শিরোদেশে স্বভাবতঃ চন্দ্রলেখা হইবে, সেই বালক, সেই নামেই ভূতলে খ্যাত হইবে। ৫২
এই কথা বলিয়া, মহাদেব স্বয়ং নিজের নিবাসযোগ্য তাহাদের গর্ভসংস্কার করিবার নিমিত্ত তাহা স্বশিরস্থ জাহ্নবীজলে নিহিত করিলেন। ৫৩
তাহার পর সেই ফলে মহাদেব প্রবেশ করিলেন এবং প্রবেশ করিবামাত্রই ফল স্বয়ং ত্ৰিভাগ হইল। ৫৪
পৌষ্য সেই ফল গ্রহণ করিয়া ভাৰ্যাগণ-সহ হৃষ্টান্তঃকরণে এবং হরের অনুমতিক্রমে নিজ মন্দিরে গমন করিলেন। ৫৫
হে নৃপশ্রেষ্ঠ। তাহার পর উপযুক্ত কাল উপস্থিত হইলে পৌষ্য-ভাৰ্যাগণ সেই ত্ৰিভাগ ফল তিনজনে ভক্ষণ করিলেন, তাহাতেই তাহাদের গর্ভসঞ্চার হইল। ৫৬
গর্ভকাল সম্পূর্ণ হইলে খণ্ডত্রয় প্রসব হইল; শিবের সেই বাক্যানুসারে পৌষ্য রাজা খণ্ডত্রয় পৃথক্রূপে যথাস্থানে যোগ করিয়া এক পিণ্ড করিলেন, তাহাতেই একপুত্র উৎপন্ন হইল। ৫৭-৫৮
হে রাজন! তাহার শিরোভাগে আকাশস্থ শারদীয় চন্দ্রের কলার ন্যায় ইন্দুকলা বিরাজ করিতে লাগিল। ৫৯
অনন্তর পৌষ্য, ভাৰ্য্যাত্রয়ের সহিত সৰ্ব্বলক্ষণসম্পন্ন, বিস্তারিত-বক্ষঃস্থল, সুন্দর-নাসিকাযুক্ত, সিংহের ন্যায় গ্রীবা, বিশাল-নেত্ৰ, দীর্ঘভুজ সেই পুত্রকে দেখিয়া, বিপুল ধনাগারপ্রাপ্ত দরিদ্রের ন্যায়, অত্যন্ত আনন্দ লাভ করিলেন। ৬০-৬১
তাহার পর রাজা ব্রাহ্মণবর্গ ও স্বীয় পুরোহিতের দ্বারা সংস্কার পূর্বক তাহার চন্দ্রশেখর এই নাম রাখিলেন; পুত্ৰও স্বয়ং চন্দ্রের ন্যায় সুন্দর লাবণ্যময় হইলেন। ৬২
সেই মহাভাগ বাল্যরূপ-সম্পন্ন হইয়া তেজস্বিভাবে যেরূপ শারদীয় নিশাকর, কলাসমূহ দ্বারা নিরন্তর বৃদ্ধি পায়, সেইরূপ বৃদ্ধি পাইতে লাগিলেন। ৬৩
এইরূপে মাতৃত্রয়ের গর্ভে তাহার জন্ম হইয়াছে বলিয়া জগতে এবং বেদে হরের ত্র্যম্বক নাম খ্যাত হইল। ৬৪
রাজপুত্র কৌমারাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া সৰ্ব্ব-শাস্ত্ৰাৰ্থপারদর্শী বিষ্ণুতুল্য তত্ত্বজ্ঞ হইলেন। ৬৫
তিনি বল, বীর্য, শাস্ত্ৰপারদর্শিতা ও সুশীলতাতেও বিষ্ণুসম হইলেন। হে নৃপশ্রেষ্ঠ! তাহার সমান সৎস্বভাবাপন্ন ব্যক্তি জন্মে নাই এবং জন্মিবেও না। ৬৬
তৎপরে পৌষ্য রাজা, বলশালী সমস্ত রাজগুণসম্পন্ন ষোড়শবর্ষীয় পুত্রকে রাজপদে অভিষিক্ত করিলেন। ৬৭
পরম ধাৰ্মিক সেই রাজা, বৃদ্ধ-কালোচিত নিমিত্ত ভাৰ্যাগণ সহ বনে গমন করিলেন। ৬৮
পিতার বন গমনের পর চন্দ্রশেখর, অমাত্যগণের সহিত সমস্ত রাজ্য স্বীয় আয়ত্তাধীন করিলেন। ৬৯
সার্বভৌম নৃপতিরূপে রাজবর্গের পূজিত হইলেন এবং অমরগণসেবিত দেবেন্দ্রের ন্যায় শোভাসম্পন্ন হইয়া বিহার করিতে লাগিলেন। ৭০
পুণ্যশীল ত্র্যম্বক এইরূপে পৌষ্য-সুত হইয়া ব্ৰহ্মাবর্তের মধ্যে দৃষদ্বতীনদী তীরে করবীরনামক পুরে রাজপদে প্রতিষ্ঠিত হইয়া পরম আনন্দিত হইলেন। ৭১
হে নৃপশ্রেষ্ঠ। অনন্তর একদা রাজার, বনবাসগত মাতা-পিতার দর্শনের নিমিত্ত অভিলাষ হইল। চন্দ্রশেখর একাকী এক-রথারূঢ় হইয়া, বাণ সংযোজিত শরাসন গ্রহণ করিলেন। ৭২-৭৩।
বৃদ্ধ পিতা-মাতার দর্শনাভিলাষে বিষয় বাসনার অবসানে ব্যবস্থিত পুণ্যময় তপোবনে গমন করিলেন। ৭৪
নৃপতি চন্দ্রশেখর, পিতার সমীপে গমন করিয়া তপস্যারত নমুচ নামক মহামুনিকে দর্শন করিলেন। ৭৫
তাঁহার কলেবর, কৃষ্ণাজিনের উত্তরীয় দ্বারা সংবীত, সূর্যসদৃশ-প্রভাশীল উর্ধ্বগামী-জটাভারযুক্ত; তিনি কৃশ ও ধ্যান-নিরত। ৭৬
তাঁহার শরীর তপঃপ্রভাবে অত্যন্ত প্রদীপ্ত এবং নিশ্চল। তিনি কুশময় আসনে উপবিষ্ট; রাজা রথ হইতে সেই মুনিকে দর্শন করিলেন। ৭৭
আদরের সহিত বিনয়াবনত মস্তকে মুনিকে কিঞ্চিৎ স্তুতিবাক্য বলিতে লাগিলেন এবং তাহাকে প্রণাম করত এই কথা বলিলেন। ৭৮
হে ব্ৰহ্মন! আমি পৌষ্যের পুত্র, আমার নাম–চন্দ্রশেখর; আমি ভক্তি পূর্বক আপনাকে প্রণাম করিতেছি। ৯।
এই কথা বলিয়া নৃপতি বদ্ধাঞ্জলি হইয়া মুনির মুখ দর্শন করত ভক্তি-নম্র মস্তকে তাহার অগ্রস্থিত হইয়া অবস্থান করিতে লাগিলেন। ৮০
পরম পণ্ডিত পৌষ্যরাজ, তপস্যার জন্য যে সময়ে তপোবনে প্রবেশ করেন; সেই সময়ে ভাৰ্যাগণসহ মুনিকে পূজা করেন। তাহাকে অনেক সময় আরাধনা করিয়া পুত্রের নিমিত্ত তাহাকে প্রসন্ন করিয়াছিলেন। ৮১-৮২
তিনি বলিলেন,–হে মুনিশ্রেষ্ঠ! আপনি বিষয়-ভোগান্তে তপস্যা করত এই স্থানে অবস্থান করিতেছেন; আমি একটী প্রার্থনা করি, যদি আমার প্রতি দয়া থাকে, তাহা হইলে দান করুন। ৮৩
হে মুনে! আমার পুত্র চন্দ্রশেখর রাজা হইয়াছে। সে শিশু–স্বাভাবিক ইন্দুকলাযুক্ত এবং বালভাববশতঃ চঞ্চল। ৮৪
অতএব যদি সে আপনার সমক্ষে কোন দিন অপরাধ করে, তবে আপনি তাহা ক্ষমা করিবেন, এই আমার প্রার্থনা। ৮৫
পৌষ্যের বাক্য শ্রবণ করিয়া মুনি তাহাই স্বীকার করিলেন। রাজ-তনয়কে দেখিয়া মুনি পৌষ্যবাক্য স্মরণ করিলেন। ৮৬
স্মরণ করত দয়াশীল মুনি নম্রভাবে অগ্রস্থিত চন্দ্রশেখরকে এই কথা বলিলেন;–হে চন্দ্রশেখর। তোমার বিনয়ে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়াছি। বাঞ্ছিত বর প্রার্থনা কর, আমি দান করিব। ৮৭-৮৮
রাজা চন্দ্রশেখর, তাহার বাক্য শ্রবণ করিয়া পুনৰ্বার প্রণাম করিয়া নমুচ মুনিকে এই কথা বলিতে লাগিলেন। ৮৯
হে দ্বিজসত্তম। শরীর, মন ও বাক্যদ্বারা যাহা প্রার্থনা করিব, সে সমস্তই আমার বিষয়ে আছে এবং সমস্তই আমার অনুকূল। ৯০
আমার দুষ্প্রাপ্য মনোগত বিষয় বিদ্যমান দেখিতে পাই না; অতএব আপনি যাহা স্বয়ং দান করিবেন, সেইটাই আমার পক্ষে বরণীয়। ৯১
নমুচ বলিলেন, হে নৃপশ্রেষ্ঠ! বর্তমান সময়ে তুমি সপ্তদশবর্ষীয়; আর এক বৎসর অতীত হইলে উৎকৃষ্টা স্ত্রীর পতি হইয়া অত্যন্ত সুখী হইবে। ৯২
যেরূপ শম্ভুর গিরিসুতা, গদাধরের লক্ষ্মী, ইন্দ্রের শচী; তোমার পত্নী সেই রূপ হইবে। এই কথা বলিয়া তপোনিধি নমুচ রাজাকে বিদায় করিলেন, রাজাও হৃষ্টান্তঃকরণে গমন করিলেন। ৯৩-৯৪
চন্দ্রশেখর, পিতা মাতার নিকট গমন করিয়া যথাযোগ্য তাহাদিগকে পূজা করিলেন, তাহারা সন্তুষ্ট হইয়া আশ্বাস প্রদান করিলেন। ৯৫
অনন্তর রাজা চন্দ্রশেখর স্বীয় করবীরপুরে গমন করিয়া সচিবগণের সহিত আনন্দিত হইয়া ইন্দ্রের ন্যায় বিরাজ করিতে লাগিলেন। ৯৬
সপ্তচত্বারিংশ অধ্যায় সমাপ্ত। ৪৭