ষট্চত্বারিংশ অধ্যায় – বেতাল-ভৈরবের উপাখ্যান
সগর বলিলেন,–হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! বেতাল কাহার নাম? ভৈরবই বা কাহার নাম? এবং কিরূপেই বা তাহারা মনুষ্য-শরীরে গণাধিপতি হইলেন? তাহা আমাকে বিশেষরূপে বলুন। ১
নন্দীকে শিবের সহচর বলিয়া জানি এবং যেরূপে তিনি গণাধিপতি হইয়াছেন, তাহা নারদমুখে শ্রুত হইয়াছি। ২
হে দ্বিজসত্তম! এ বিষয় যথার্থরূপে শুনিতে ইচ্ছা করি। ইহারা কাহার পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করিয়া গণাধ্যক্ষ হইলেন? ৩
মহাভৈরবাখ্য গণাধিপ–শুনিয়াছি–মৃগরূপ মহাদেবের শরীরের অংশ স্বরূপ। ৪
কিন্তু হে দ্বিজোত্তম। সেই ভৈরব এ ভৈরব কি না, তাহাই যথার্থরূপে জানিতে ইচ্ছা করি। ৫
কাহার তনয় হইয়া গণাধিপ হইলেন এবং কি জন্যই বা তাহাদের উভয়ের মুখ বানরাকৃতি হইল, তাহাই বলুন। ৬-৭
ঔৰ্ব বলিলেন,–হে রাজন্! মহাত্মা মহাকাল, ভৃঙ্গী, ভৈরব ও বেতালের অদ্ভুতচরিত বলিতেছি শ্রবণ করুন। ৮
ভৃঙ্গী হরাত্মজ এবং মহাকালও হরসূত; ইহারা উভয়েই গৌরীর শাপে নরযোনিজ হইয়াছেন। ৯
বেতাল ও ভৈরব পৃথিবীতে কোন নৃপভবনে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন; যেরূপে মহাকাল ও ভৃঙ্গী পূৰ্বে উৎপন্ন হইয়াছেন, তাহা বিশেষরূপে শ্রবণ করুন। ১০
মহাভৈরব শরভরূপী মহাদেবের কায়ভাগ, কিন্তু ভৈরব পৃথক একজন; ইনি গণাধ্যক্ষ এবং হরাত্মজ। ১১
ইন্দ্রাদি দেবগণ তারকের বধের নিমিত্ত স্তুতিবাক্যে উমার গর্ভে হরের ঔরসে হরসমীপে সন্তান প্রার্থনা করিলেন। ১২।
ভগবান্ বৃষধ্বজও দেবগণের প্রার্থিত হইয়া পুত্রের নিমিত্ত উমসহ মহাসুরত ক্রীড়া আরম্ভ করিলেন। ১৩
হে রাজন! চন্দ্রশেখরের সেই মহাসুরত ক্রীড়া আরম্ভ হইলে মনুষ্য পরিমিত বর্ষ-সংখ্যায় বত্রিশ বৎসর ক্ষণকালের ন্যায় অতীত হইল। ১৪
মহেশ্বর এইরূপ নিধুবনক্রীড়ায় তৃপ্তিলাভ করিলেন না এবং তেজও প্রচ্যুত হইল না, পাৰ্বতীও কিছুই তৃপ্তিলাভ করিলেন না। ১৫
সেইরূপ ঘোর নিধুবন সময়ে বসুধা নিরন্তর কম্পিতা হইতে লাগিল এবং স্বর্গস্থ সমস্ত দেবগণ আকুল হইলেন। ১৬
হরগৌরীর সেইরূপ সুরত ব্যাপারে সমস্ত জগৎ আকুলীভূত হইল। ১৭
অনন্তর ইন্দ্রাদি দেবগণ হরের কেলিতে ভীত হইয়া জগৎপতি শরণ্য ব্রহ্মার শরণাগত হইলেন। ১৮
সুরোত্তমগণ মিলিত হইয়া বিধাতাকে প্রণামকরত হরক্রীড়ায় আকুলচিত্তে সমস্ত বিষয় তাহার নিকট বর্ণন করিলেন। ১৯
তাহার পর ইন্দ্র সকল দেবগণকে পশ্চাৎ রাখিয়া তৎকালোপস্থিত ভয় গদগদবাক্যে বিধাতাকে বলিলেন। ২০
ইন্দ্র বলিলেন, হে ব্ৰহ্ম। হরের সুরতক্ৰীড়ায় সমস্ত জগৎ আকুলিত হইয়াছে এবং আমিও অত্যন্ত ভীত হইয়া আপনার শরণাপন্ন হইয়াছি। ২১
হে ব্ৰহ্মন্! এইরূপ হরগৌরীর সঙ্গমে যে পুত্ৰ উদ্ভূত হইবে, সে নিশ্চয় আমাকে অতিক্রম করিবে। ২২
ক্রীড়াসক্ত মহাদেবের ঔরসজাত পুত্র হইতে আমার তারক অপেক্ষাও অধিক ভয় হইতেছে। ২৩
তাহা হইলে সেই হরপুত্র আমাকে ও দেবগণকে পীড়া না দিতে পারে, তদ্বিষয়ে যত্ন করত আমাদিগকে এই মহাভয় হইতে উদ্ধার করুন। ২৪
ব্ৰহ্মা বলিলেন,–যদি উমার গর্ভে শঙ্করের তেজে পুত্ৰ উৎপন্ন হয়, তাহা হইলে সেই পুত্রের পরাক্রম ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণের ও সমস্ত লোকের দুঃসহ হইবে। ২৫
যাহাতে হর-তেজঃসম্ভূত পুত্ৰ উমাগর্ভে উৎপন্ন না হয়, আমি দেবগণসহ হর-সমীপে গমন করত সে বিষয়ে চেষ্টা করিতেছি। ২৬
যাহাতে তারকাসুর হর-তেজঃ-প্রভাবে শীঘ্র বিনষ্ট হয়, তাহারও প্রতি বিধান করিতেছি। ২৭
ব্রহ্মা এই কথা বলিয়া দেবগণসহ কৈলাসপৰ্বতে হরগৌরীর সুরতস্থানে গমন করিলেন। ২৮
লোকপিতামহ ব্রহ্মা সমস্ত দেবগণসহ সেইস্থানে গমন করিয়া বৃষধ্বজকে দেবগণ সহ স্তব করিতে লাগিলেন। ২৯
দেবগণ বলিলেন, যাহার রতি-প্রীতির নিমিত্ত নহে এবং কাম যাহার মনোজ নহে, যাহার জন্মের কোনরূপ কারণাদি নাই, তাহাকে আমরা প্রণাম করি। ৩০
যাহার লোকহিতের নিমিত্ত জায়াপরিগ্রহ, সেই ত্র্যম্বককে আমরা ভক্তি প্রবণ চিত্তে প্রণাম করি–তিনি আমাদিগের প্রতি প্রসন্ন হউন। ৩১
মন্মথ ব্যতীত, শৃঙ্গারাদি যাহার স্মরণমাত্রেই আশ্রয় করে, সেই দেবশ্রেষ্ঠ মহাদেবকে আমরা প্রণাম করি। ৩২
যিনি হিরণ্যরেতা হিরণ্যাভ ও হিরণ্য-বাহুরূপে খ্যাত–সেই সৃষ্টি-সংহার কারী শিব আমাদের প্রতি প্রসন্ন হউন। ৩৩
জগন্ময়ী যোগনিদ্রা বলীয়সী বিষ্ণুমায়া স্বয়ং যাহার পত্নী হইয়াছেন, তাহাকে আমরা প্রণাম করিতেছি। ৩৪
যাহার পঞ্চভূতস্বরূপ পঞ্চ-বদন শোভা পাইতেছে, সেই পঞ্চবক্ত্র দেবকে ভক্তিপূর্বক প্রণাম করিতেছি। ৩৫
লোকে যাহাকে প্রধানপুরুষ বলে, সেই সদ্যোজাত অঘোর বামদেব উমা পতি ঈশানকে প্রণাম করিতেছি। ৩৬
যিনি অসৎ ব্যক্তির অমঙ্গল স্বরূপ এবং ভক্তিশালীর মঙ্গল স্বরূপ–যিনি মঙ্গল ও অমঙ্গল স্বরূপ, সেই উভয় গুণসম্পন্ন মহাদেবকে আমরা প্রণিপাত করি। ৩৭
যিনি ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব এই ত্রিবিধ-রূপসম্পন্ন হইয়া নিরন্তর জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশাদি বিধান করিতেছেন; হে বিভো! সেই মঙ্গলাস্পদ বিরূপাক্ষকে আমরা বন্দনা করিতেছি। ৩৮
যিনি শূল, খট্বাঙ্গ ও মৃগাঙ্কাদি ধারণ করিতেছেন, যিনি সর্ব শক্তিমান, যাহার গোধ্বজ, সেই জাতবেদঃপ্রভাশালী ভগবান্ মহাদেবকে বারংবার প্রণাম করিতেছি। ৩৯
যিনি ব্ৰক্ষা ও অগ্নিস্বরূপ, সর্পধারী, দৈত্যহন্তা, নিয়োগের কর্তা এবং যিনি অখিল ব্রহ্মাণ্ডের দর্পহারী; সেই আপনি স্তুতিতে তুষ্ট হইয়া আমাদের প্রতি প্রসন্ন হউন। ৪০
অনন্ত নিত্যোদ্রেকী, বিবিধ রূপসম্পন্ন প্রধান এবং পরমব্রহ্ম স্বরূপ, নিয়ত একবিষয়ে লীন, নিত্যজ্যোতীরূপ, নিয়ত অসীম, নিরন্তর আত্মভোগরত, ভর্গ রূপ গিরিশ আমাদের মঙ্গলবর্ধক হউন। ৪১
মহামায়াধার উমাপতি মহাদেব জগৎপতি শান্ত মঙ্গলকর শিবকে আমরা প্রণিপাত করিতেছি–প্রসন্ন হউন। ৪২
মহাদেব, এইরূপ ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণের স্তবে প্রসন্ন হইয়া উমার সঙ্গ পরি ত্যাগ করিলেন। ৪৩
যেরূপে মহাসুরত ক্রীড়াসক্ত ছিলেন, সেই অবস্থাতেই ব্ৰহ্মাদি দেবগণ সমীপে উপস্থিত হইলেন। ৪৪
অনন্তর মহাদেব, সুরগণকে সত্বর বলিলেন, হে নিৰ্জরগণ! আপনারা কিজন্য আগমন করিয়াছেন, তাহা বলুন। ৪৫
শক্র প্রভৃতি সমস্ত দেবগণ, মহাদেবকে বলিলেন; হে ভর্গ! আপনার মহা সুরত ক্রীড়াতে সকল জগৎ কম্পিত হইতেছে। ৪৬
পৃথিবী-শৈল কাননাদি সহ নিরন্তর কম্পিত হইতেছে, সমস্ত নদ নদী ও সাগরাদি ক্ষুব্ধপ্রায়। ৪৭
দেবগণ ও দিকপালগণ নিরন্তর অশান্তি অবস্থায় অবস্থান করিতেছেন; অতএব হে সৰ্ব্বলোকেশ! সকলের প্রতি কৃপা করুন। মহামৈথুন ত্যাগ করত কেবল মাত্র রতি অবলম্বন করুন। ৪৮
শঙ্কর, পরমাত্মা ব্রহ্মার বাক্য শ্রবণ করত হৃষ্ট না হইয়া দেবগণকে বলিলেন। ৪৯
হে দেবগণ! আমার এই প্রবৃত্তি আপনাদের হিতের জন্য; মহামৈথুন ত্যাগ করত রতিমাত্র অবলম্বন করিলে উমাগর্ভে পুত্র উৎপন্ন হইবে না। তাই আমার এই উদ্যম। ৫০-৫১
উমার গর্ভে সেই জন্যই আমার তেজে যে পুত্র উৎপন্ন হইবে, সেই পুত্র, রিপুকুল বিনাশ করত দেবতাদিগকে উদ্ধার করিবে। ৫২
অতএব আমার এই ক্রীড়াতে বীতভয় হইয়া সুরোত্তমগণ স্বস্থানে প্রস্থান করুন,আমি কর্তব্য কাৰ্য্য চিন্তা করি। ৫৩
দেবগণ বলিলেন,–হে জগন্নাথ! উমাশরীরজ পুত্র যাহাতে না হয়, সেই অনুষ্ঠান করত মৈথুন পরিত্যাগ করুন। ৫৪
ঈশ্বর বলিলেন, কেবল রতিমাত্রে উমাতে আমার পুত্র হইবে না, অতএব মহামৈথুন পরিত্যাগ করিলে পাৰ্ব্বতী অপুত্রা হইবেন। ৫৫
তাহা হইলেও দেবতাদের ও ব্রহ্মার বাক্যানুসারে আমি মহামৈথুন পরিত্যাগ করিতেছি। ৫৬
হে নিৰ্জরগণ! আপনারা এক কাৰ্য করুন, মহামৈথুন জন্য আমার প্রসূত তেজ, যিনি নিষ্কম্প ও নির্বিকার হইয়া ধারণ করিতে পারিবেন, সেই তেজস্বী দেবতাকে আপনারা আনয়ন করুন; হে ত্রিদশগণ! এরূপ ব্যক্তি দেখাইয়া দিন–আমি শরীরজ তেজ পরিত্যাগ করি। ৫৭-৫৮
ঔর্ব বলিলেন, অনন্তর বৃষধ্বজের বাক্য শ্রবণ করিয়া ব্ৰহ্মা প্রভৃতি দেবগণ বুদ্ধিপূর্বক বীতিহোত্রসমীপে গমন করিলেন। ৫৯
অনন্তর ব্রহ্মা সহ মন্ত্রণা করত পাবককে তেজোধারণে স্বীকৃত করাইয়া ইন্দ্রাদি দেবগণ হরকে এই বাক্য বলিলেন। ৬০
এই তেজোময় বলী বৈশ্বানর আপনার মহামৈথুনসম্ভূত তেজ স্বয়ং গ্রহণ করিবেন। এই কথা বলিয়া ত্রিদশগণ অগ্রস্থিত বীতিহোত্রকে সৰ্ব্বকারণ শম্ভুসমীপে নির্দেশ করিলেন। ৬১-৬২
তাহার পর মহাবাহু ভর্গ, মৈথুন-সম্ভূত স্বকীয় তেজ দহনশীল বহ্নিমধ্যে পরিত্যাগ করিলেন। ৬৩
শশি-শেখরের অগ্নিতে পরিত্যক্ত তেজের পরমাণুদ্বয় পরিমিত অল্পতেজ, গিরি-সানুতে পতিত হইল। ৬৪।
সেই পতিত অণুদ্বয়-মাত্র তেজ হইতে শঙ্করের দুইটি পুত্র উৎপন্ন হইল। সেই পুত্রদ্বয় মধ্যে একটি ভৃঙ্গ সদৃশ কৃষ্ণবর্ণ বলিয়া ব্রহ্মা তাহার নাম ভৃঙ্গী রাখিলেন, অপরটী মর্দিত অঞ্জন-সদৃশ অত্যন্ত কৃষ্ণ, এইজন্য পিতামহ তাহার নাম মহাকাল রাখিলেন। ৬৫
শঙ্কর, তাহাদের উভয়কে প্রমথাদি গণসমূহ দ্বারা প্রতিপালন করাইলেন এবং অপর্ণাও তাহাদিগকে বিশেষ যত্ন করত বর্ধিত করিলেন। তাহারা হর ও উমার প্রতিপালনে প্রবৃদ্ধ হইল এবং হর তাহাদিগকে গণাধিপতি করিয়া দ্বারে নিয়োগ করিলেন। ৬৬
সগর বলিলেন,–হে দ্বিজোত্তম! যে তেজ, অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিল, তাহা কিরূপ হইল; সেই বিষয় জানতে আমার অভিলাষ, অতএব সংক্ষেপ রূপে তাহা বলুন। ৬৭
ঔর্ব বলিলেন,–বৃষধ্বজ অগ্নিতে তেজঃসমূহ তৎকালে পরিত্যাগ করত আকাশগঙ্গাকে উদ্দেশ করিয়া দেবতাদিগকে বলিলেন। ৬৮
হে সুরোত্তমগণ! দেবী যোগনিদ্রা ভিন্ন এবং শৈলতনয়া ভিন্ন অন্য স্ত্রী এই তেজ গ্রহণ করিতে পারিবে না। ৬৯
হে দেবগণ! আমি এইকথা বলিতেছি যে, এই তেজ যে গ্রহণ করিবে, তাহার পুত্র উৎপাদন হইবে। ৭০
এই আকাশ গঙ্গা শৈলরাজের অপর সুতা, উমার জ্যেষ্ঠা ভগিনী, ইহার গর্ভে হুতাশন নিজ প্রভাবে এই তেজ দ্বারা পুত্ৰ উৎপাদন করিবে। ৭১
সেই পুত্ৰ অনুপমদ্যুতিশালী দেবতা এবং অরিন্দম হইয়া সেনাপতি হইবে। সেই শিখিধ্বজ, তারককে আপনাদের সমক্ষে পরাজয় করিবে; তাহাকে অপ্রতিহত মহাবীর্যের দ্বারা আমিই বর্ধিত করিব। ৭২-৭৩
এই কথা বলিয়া মহাদেব সকল দেবগণকে পরিত্যাগ করত পার্বতীসমীপে নিজের শুদ্ধতার নিমিত্ত গমন করিলেন। ৭৪
সতী পাৰ্বতী, দেবগণের সেই অপ্রিয় বাক্য শ্রবণ করিয়া পুত্রের আশা পরিত্যাগ করত দেবসমূহের প্রতি কোপ করিলেন। ৭৫
কোপে দগ্ধপ্রায় হইয়াই যেন তাহার অধরোষ্ঠ কম্পিত হইতে লাগিল। তিনি পরিত্যক্তমৈথুন হরকে দেখিয়া সুরগণকে এই কথা বলিলেন। ৭৬
যেহেতু আপনারা আমার সুরত কাৰ্য্য হইতে শম্ভুকে বিযুক্ত করিলেন এবং আমি অজাতপুত্রা হইয়া বারস্ত্রীর ন্যায় নিতান্ত পীড়িত হইলাম। ৭৭
অতএব সুরগণ-অদ্য পর্যন্ত নিজ স্ত্রী সহ মহামৈথুনভ্রষ্ট হউন। ৭৮
ইহাদেরও আর আনন্দদায়ক পুত্র জন্ম গ্রহণ করিবে না। বরাঙ্গনা দেবস্ত্ৰীসকল পুত্রহীন হউক। ৭৯
যেরূপে আমি পুত্রের আশায় বঞ্চিত হইয়া পরিতাপ করিতেছি, সেইরূপ দেবযোষিদগণও পুত্রাশায় বঞ্চিত হইয়া পরিতাপ করিবে। ৮০
গিরিসুতা এইরূপ ক্রোধে হুতাশনের ন্যায় হইয়া দেবগণকে শাপ দিলেন; সেই পর্যন্ত ত্রিদশভবনে অদ্যাবধিও দেবগণের পুত্ৰ উৎপন্ন হইতেছে না। ৮১-৮২
অগ্নি, কালক্রমে গঙ্গার উদরে হর-সম্বন্ধীয় সুবর্ণসন্নিভ রেতঃ সংক্রান্ত করিলেন। ৮৩
দেবী গঙ্গা সেই রেত দ্বারা সম্পূর্ণ কালে সৰ্ব্বলক্ষণ-সম্পন্ন মনোহর পুত্রদ্বয় প্রসব করিলেন। ৮৪।
সেই পুত্রদ্বয়ের মধ্যে একটির নাম স্কন্দ, অপরটির নাম বিশাখ। তাহারা রেতঃ-সদ্ভুত কান্তিবর্ধিত হইয়া মনোহর রূপশালী হইলেন এবং উভয়েই শক্তি ধর হইলেন। ৮৫
তৎপরে বিশাখ ও স্কন্দের উভয় দেহ, একভাগে পরিণত হইল, যেমন জগতে অন্য শিশু হয়। সেই শিশু জন্মগ্রহণ করিয়াছে দেখিয়া গঙ্গা, বিস্মিতচিত্তে হঠাৎ শরবণমধ্যে নিক্ষেপ করিলেন। ৮৬-৮৭
গর্ভ পরিত্যাগ করিয়া গঙ্গাদেবী গর্ভের বৃত্তান্ত ও জাত পুত্র পরিত্যাগ সমস্তই বহুলার নিকট বলিলেন। ৮৮
বহুলা শ্রবণ করত মহাদেবের পুত্র জানিতে পারিয়া অবিলম্বে সেই পুত্র গ্রহণ করত প্রতিপালন করিলেন। ৮৯
তৎপরে উমা ও শঙ্করকে জ্ঞাত করাইয়া তাহাদের অনুমতিক্রমে সেই অরিমর্দন পুত্রকে দেবীর করে সমৰ্পণ করিলেন। ৯০
অতিপ্রবৃদ্ধ মহাবলপরাক্রম শক্তিধর শঙ্কর-প্রভাবে বর্ধিত হইয়া দেব সেনাপতি-পদে অভিষিক্ত হইলেন। ৯১
তাহার পর মহাবল শক্তি-হস্ত হরতনয় সুরারি তারকাসুরকে স্বগণের সহিত অবসাদিত করিলেন। ১২
হে নৃপোত্তম! এইরূপে ভর্গের তেজ অগ্নিতে পরিত্যক্ত হইয়া যেরূপ হইয়াছিল, তাহা বলিলাম। ৯৩
সম্প্রতি মহাকাল ও ভৃঙ্গীর প্রকৃত বৃত্তান্ত আপনাদের শ্রবণ করা কর্তব্য। অতএব হে রাজেন্দ্র। তাহারা উভয়ে যেরূপে মানবযোনি প্রাপ্ত হইলেন, সেই বৃত্তান্ত শ্রবণ করুন। ৯৪
ষট্চত্বারিংশ অধ্যায় সমাপ্ত। ৪৬