পঁচিশে মার্চের পর টিক্কা খানের নামটিই বাঙালীর মনে ত্রাসের সৃষ্টি করে। তিনি একই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং সামরিক আইন প্রশাসক। লেফটেনান্ট জেনারেল টিক্কা খান শক্ত মেজাজের মানুষ। পঁচিশে মার্চ রাত্রের সেই যে গোপন পরিকল্পনা, একই সঙ্গে বাঙালী সৈনিক, পুলিশ ও সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংবাদপত্র অফিসে আক্রমণ, শেখ মুজিবকে আটক ও প্রতিটি শহরে ভীতির অবস্থা সৃষ্টি করা, যে পরিকল্পনার সামরিক নাম ‘অপারেশন সার্চলাইট, তার প্রধান পরিচালক এই টিক্কা খান। অগ্নিকাণ্ড ও রক্তের স্রোত বইয়ে দেবার ব্যাপারে তাঁর কোনো গ্লানি হয়নি, কারণ এ সবই তো তাঁকে করতে হয়েছে নিছক কর্তব্যের খাতিরে, পাকিস্তানের ঐক্য রক্ষার জন্য তিনি বদ্ধপরিকর।
মাস ছয়েকের মধ্যে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহ অনেকটা ঠাণ্ডা করে এনেছেন। সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে এখনও সংঘর্ষ চলছে বটে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে বিশ্বাসঘাতক মুক্তিযোদ্ধারা চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শহরগুলির অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক, সরকারি কাজকর্ম মোটামুটি চলছে, দোকান বাজার সব খুলেছে। এই সব কৃতিত্বই টিক্কা খানের।
হঠাৎ এই সময় তার বদলির আদেশ এলো!
পচিশে মার্চ যেমন ভাবে তোক বাঙালীদের দমন করার আদেশ দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সেই যে গোপনে রাওয়ালপিন্ডি চলে গেলেন, তারপর আর তিনি পূর্ব পাকিস্তানমুখো হননি। তার ঘনিষ্ঠ সহচররা কেউ কেউ বলে, তিনি বাঙালীদের অকৃতজ্ঞতায় বড়ই বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। ঐ বাঙালীগুলো আধা-হিন্দু, ওরা পাকিস্তানকে না-পাক করে দিতে চায়। মূর্তিপূজক, অপবিত্র হিন্দুদের থেকে পৃথক হবার জন্যই তো জন্ম হলো পাকিস্তানের, এখন ঐ পূর্ব পাকিস্তানীরা আবার ভারতের খপ্পরে সাধ করে যেতে চায়?
মনের খেদ মেটাতে তিনি সঙ্গী করলেন সুরার বোতল, দু-একটি রক্ত মাংসের সঙ্গিনীও রইলো তাঁর সেবার জন্য। দিনের পর দিন তিনি ঘর থেকে বেরুতেই চান না।
মাঝে মাঝে তার হুঁস হয়, তখন তাঁর বুক জ্বালা করে ওঠে। তিনি শুধু রাষ্ট্রপ্রধান নন, তিনি। একজন পেশাদার সেনাধ্যক্ষ। তার এত বড় শক্তিশালী পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী থাকতেও যদি পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তার থেকে অপমানের আর কী আছে? ভারত যতই মদত দিক, পাকিস্তানের সৈনিকেরা তার মুকাবিলা করতে পারবে না? ভারতের প্রধানমন্ত্রী একজন স্ত্রীলোক, যুদ্ধে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ, সেই স্ত্রীলোকটির কাছে হার স্বীকার করবেন তিনি?
এক এক সময় তার ইচ্ছে হয়, বন্দী শেখ মুজিবের মুণ্ডটা এক কোপে উড়িয়ে দিয়ে তিনি আবার ঢাকায় যাবেন। সেখানে গিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দেবেন যে তিনিই পাকিস্তানের দুই অংশের একেশ্বর। তেজের মাথায় তিনি করাচি পর্যন্ত চলে এলেও তার বিশ্বস্ত পরামর্শদাতারা। তাঁকে আটকে দেয়। এখন কোনোক্রমেই তার পক্ষে পূর্ব দিকে যাওয়া ঠিক নয়। বিশ্বাসঘাতকরা তাঁর বিমান ধ্বংস করে দিতে পারে, ঢাকা শহরেও যখন তখন বিস্ফোরণ ঘটছে। আর মুজিবকে হত্যা করাও উচিত কাজ হবে না, কারণ মৃত মুজিব জীবিত মুজিবের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
তাদের আরও মত এই যে, এখনও একটা রাজনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করা দরকার।
রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তো ইয়াহিয়া কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু লারকানার ভুট্টোই তো কিছুতেই মুজিবের সঙ্গে আপোসে এলো না! ভুট্টো যতই চালাক চালাক কথা বলুক, পূর্ব
পাকিস্তানে তার পার্টির জন্য সে ভোটও আদায় করতে পারেনি, আবার মুজিবের সঙ্গে ক্ষমতা। ভাগাভাগির প্রশ্নে সে কোনো যুক্তিরও ধার ধারেনি। পাকিস্তান যদি ভাঙে, তবে তার জন্য কে বেশী দায়ী হবে, মুজিব না ভুট্টো?
ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মৈত্রীচুক্তি করেছে, তা করুক, চীন ও আমেরিকা পাকিস্তানের বন্ধু। চুড়ান্ত বিপদের সময় তারা সাহায্য করবে। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে ইঙ্গিত আসছে যে চীন ও আমেরিকা মনে করে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উচিত সামরিক চাপ কমিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের মন জয় করা। আর একটা উপ-নির্বাচন, জনপ্রতিনিধিদের হাতে কিছুটা ক্ষমতার হস্তান্তর, খানিকটা গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষা করা। ভাবপ্রবণ বাঙালীরা তো এই সবই চায়।
সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ইয়াহিয়া খান হঠাৎ ঠিক করলেন, পূর্ব পাকিস্তানে প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীকে আলাদা করে দেবেন। এর জন্য প্রথমেই দরকার একজন বেসামরিক গভর্নরের। প্রথমে প্রস্তাব গেল নুরুল আমিনের কাছে। এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদটি কিছুদিন এদিককার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা যথেষ্ট, নিষ্ঠাবান মুসলমান, আওয়ামী লীগের ঘোরতর বিরোধী এবং খাঁটি পাকিস্তান সমর্থক। তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যের কারণে জনাব নুরুল আমিন এই গুরু দায়িত্ব নিতে নাকি চাইলেন না।
তখন ঠিক করা হলো ডাক্তার এ এম মালিককে। তিনি একজন দাঁতের ডাক্তার এবং বয়েসও পঁচাত্তরের কাছাকাছি, একসময় ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনীতি করেছেন বটে, কিন্তু অনেকদিন সেসব থেকে দূরে ছিলেন। তিনি গভর্নরের পদ নিতে রাজি হয়ে গেলেন।
নতুন গভর্নরের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় উপস্থিত থাকলেন অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি, যেমন সবুর খান, ফজলু কাদের চৌধুরী, প্রাক্তন গভর্নর মোনেম খান ইত্যাদি। এসেছেন অনেক ব্যবসায়ী, সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রদূত। বৃদ্ধ ডাক্তার মালিকের গায়ের চামড়া থলথল করছে, চোখে বেশী পাওয়ারের চশমা, তাঁকে দেখে অনেকেই ভাবতে লাগলো, এই লোকটি আসছে লৌহমানব টিক্কা খানের বদলে শাসনভার নিতে! এই দুঃসময়ে এমন পরিবর্তন!
ক্ষমতার অর্ধেক চলে যাওয়ার টিক্কা খান ক্ষুব্ধ ও অপমানিত বোধ করলেন। অচিরেই জানা গেল যে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রধান হয়েও আসছেন আর একজন, লেফটেনান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী।
টিক্কা খানকে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেবার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট নন। এক এলাহি নৈশভোজ দেওয়া হলো তাঁর বিদায় সম্মানে, সেখানেও তিনি মুখ গোমড়া করে রইলেন। যখন তাঁকে একটা আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা দিতে বলা হলো, তিনি স্পষ্টই বলে ফেললেন, পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্ব নেবার জন্য আমাকে তাড়াহুড়ো করে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ডেকে আনা হয়েছিল ৪ঠা মার্চ। এখন কেন হঠাৎ আমাকে চলে যেতে বলা হচ্ছে তা আমি জানি না, সে বিষয়ে মন্তব্যও করতে চাই না। প্রেসিডেন্ট যা ভালো বুঝবেন নিশ্চয়ই তা করবেন। যে কাজে আমি হাত দিয়েছিলাম, সেটা শেষ করে যেতে পারলেই আমি খুশি হতাম। আমি দুঃখিত যে আপনাদের মধ্যস্রোতে ফেলে রেখে যাচ্ছি। যাই হোক, আপনারা নিয়াজীর মতন একজন অভিজ্ঞ কমান্ডারকে পেয়েছেন, সেটাই আশার কথা। আপনাদের প্রতি আমার শুধু এই একটাই অনুরোধ, সব সময় মনে রাখবেন, মুঠো আলগা করা চলবে না, এই বাঙালী জাতটাকে শক্ত করে চেপে রাখবেন!
অভিজ্ঞ সেনানী হলেও আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর স্বভাবটা অনেকটা ঢিলেঢালা। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মতন তিনিও ভোগী পুরুষ। তাঁর মুখ আলগা, আদি রসাত্মক ইয়ার্কি ঠাট্টার জন্য তিনি আর্মি ব্যারাকে প্রসিদ্ধ। বক্তৃতা পর্বের মধ্যে নিয়াজী একসময় প্রবল হাসি-হুল্লোড়ের মধ্যে নানারকম মন্তব্য করতে করতে শেষে বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না টিক্কা খান সাহেব, আমি ঐ মুক্তিযোদ্ধা ব্যাটাদের পেছনগুলো একে একে এমন…
অনেক বাঙালীই টিক্কা খানের নাম শুনে ভয় পেত, তাকে মান্য করতো। ডক্টর মালিককে তারা প্রথম থেকেই অগ্রাহ্য করতে শুরু করলো। এমনকি যারা নিজেরা দালাল, তারাও অন্য দালালদের পছন্দ করে না।
রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে গিয়ে ইয়াহিয়া খান আর একটি ভুল করলেন। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, তারা ছাড়া তিনি আর সব কারাবন্দীদের মুক্তির আদেশ দিলেন এবং সমস্ত দুষ্কৃতকারীদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। তিনি বা তার উপদেষ্টারা বোধহয় ভেবেছিলেন যে ক্ষমার কথা শুনলেই বুঝি মুক্তিযোদ্ধারা সব অনুতপ্ত হয়ে সুড়সুড় করে বাপমায়ের কাছে ফিরে আসবে। সেরকম কিছুই ঘটলো না। বরং এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা আরও দুঃসাহসী হয়ে সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে এসে চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালাতে লাগলো।
বন্দীমুক্তির ঘোষণায় প্রকটিত হয়ে উঠলো সেনাবাহিনীর এত দিনের অত্যাচারের বীভৎস রূপ। প্রেসিডেন্টের দয়ায় জয়দেবপুর, ঢাকার জেলখানা থেকে ছাড়া পেল মাত্র শ’দুয়েক বন্দী। তাহলে যাদের নামে কোনো চার্জশিট নেই অথচ এবারে মুক্তিও পেল না। সেইরকম হাজার হাজার যুবকেরা গেল কোথায়? তাদের বিনা বিচারেই হত্যা করে লাশ গায়েব করে ফেলা হয়েছে নিশ্চয়ই। বেগম জাহানারা ইমামের ছেলে রুমীও এই সময় ছাড়া পেল না। তার কোনো সন্ধানও পাওয়া গেল না। অবশ্য ফকির পাগলাবাবা এখনও বলে চলেছেন, ফিরে আসবে। রুমী ঠিক ফিরে আসবে। জাহানারা ইমামের মতন অনেক জননী সেই বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বসে আছেন, বলা তো যায় না, হয়তো ওরা জেলখানা ভেঙে পালিয়ে গিয়ে সীমান্তের ওপারে কোথাও আত্মগোপন করে রয়েছে।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমা ঘোষণায় সাধারণ মানুষের আরও মনে হলো, এবার বুঝি তাহলে শেখ মুজিবও ফিরে আসবেন। ইয়াহিয়া খান কোনো বড় শক্তির চাপেই এমন নরম হয়েছেন। এবার তিনি শেখ মুজিবকেও মুক্তি দিতে বাধ্য হবেন। এই ধারণা নতুন আশার সঞ্চার করলো। যারা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সন্দিহান হয়ে উঠেছিল ইতিমধ্যে তারা ভাবলো, শেখ মুজিব ফিরে এলে স্বাধীনতা না নিয়ে ছাড়বেন না। তা হলে আর পাকিস্তানী কর্তাদের মান্য করার কী মানে হয়!
লেফটেনান্ট জেনারেল নিয়াজী খাবার টেবিলে বসে অনেকক্ষণ গালগল্প করতে ভালোবাসেন। মাঝেমাঝেই তিনি গর্ব করে সহযোদ্ধাদের বলেন, এটা জেনে রেখো, ইন্ডিয়া যদি টোটাল ওয়ার শুরু করতে চায়, তাহলে সে যুদ্ধ হবে ভারতের মাটিতে! আমার পাকিস্তানে আমি কোনো ক্ষয়ক্ষতি হতে দেবো না!
একদিন তিনি আরও বাড়িয়ে বলে ফেললেন, তোমরা দেখতে চাও, আমি কলকাতার বুকে কামানের গোলা ফেলতে পারি কিনা? আমি ইচ্ছে করলে যে-কোনো সময়ে কলকাতা দখল করে নিতে পারি। ইনসাল্লা, আমরা কলকাতার সবচেয়ে বড় হোটেলে শিগগিরই খানা খাবো। তবে কিনা, কলকাতা শহরটা বড় গন্ধা, আমার যেতে ইচ্ছে করে না।
নিয়াজী এক এক সময় বিদেশী সাংবাদিকদের সামনেও এইরকম কথা বলে ফেলেন বলে তার প্রেস অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স অফিসার সিদ্দিক সালিক বড় অপ্রস্তুতে পড়ে যায়। সেনাপতির এরকম বাগাড়ম্বরে অন্য দেশের সাংবাদিকরা গুরুত্ব দেবে কেন?
একদিন নিরিবিলিতে পেয়ে সিদ্দিক বিনীতভাবে বললেন, জেনারেল, আমাদের সামরিক শক্তির ব্যাপারটা এতখানি বাড়িয়ে বলা কি ভালো?
নিয়াজী হাসতে হাসতে বললেন, এ আর আমি এমনকি বাড়িয়ে বলেছি হে! তুমি জানো না, ধাপ্পা আর মিথ্যে স্ট্যাটিসস্টিকই হলো সব যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার।
সিদ্দিক বললো, জেনারেল, যদি অভয় দেন তো বলি, আমরা নিজেদেরই ধাপ্পা দিচ্ছি না। তো? এখনো পুরো যুদ্ধ লাগেনি, এরই মধ্যে আমাদের সীমান্তের ৩০০০ বর্গমাইল ভারতের অধীনে চলে গেছে।
নিয়াজী বললেন, ঐ জায়গা আমরা আবার যে কোনো সময়ে পুনর্দখল করে নিতে পারি। আমার অধীনে সত্তর হাজার অতি সুশিক্ষিত সৈন্য আছে। আরও পাঁচ ব্যাটেলিয়ন আসছে। স্থলযুদ্ধে আমরা ভারতের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী, বুঝলে হে!
–কিন্তু জেনারেল, বিমান ও নৌবহরের শক্তিতে আমরা কিছুই না। মানে, পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কখনো জোরালো করা হয়নি, পশ্চিমেই বেশীর ভাগ রাখা হয়েছে।
–শোনো সিদ্দিক, শুধু সৈন্যসংখ্যা দিয়ে আর প্লেন আর জাহাজ দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। যুদ্ধে জয় পরাজয় হয় সেনাপতির জন্য। সঠিক সংখ্যক সৈন্য, সঠিক জায়গায় এবং সঠিক সময়ে নিয়োগের কায়দা যে সেনাপতি জানে, সে-ই জেতে। পূর্ব পাকিস্তান ভাগ্যবান, তারা যথাসময়ে একজন যোগ্য সেনাপতি পেয়েছে।
–সেটা ঠিকই বলেছেন, স্যার। আপনার মতন সেনাপতি কজন আছে এখন পৃথিবীতে। তবে কি না, আমাদের শত্রু দু’দিকে। দেশের মধ্যে আর বাইরে। দেশের মানুষও যদি শত্রুতা করে, তবে সেই যুদ্ধ যে-কোনো সেনাবাহিনীর পক্ষে দুঃসহ হয়ে ওঠে। ঠিক কি না, বলুন?
–তা অনেকটা ঠিক বটে। কিন্তু দেশের মানুষের মন বদলাবার দায়িত্ব তো তোমাদের মতন। অফিসারদের। রেডিও, টি ভি, খবরের কাগজ সব জায়গায় দেশাত্মবোধের সুর তোলো, পবিত্র ইসলামের জয়গান করো, হিন্দু ভারতের পিণ্ডি চটকাও!
–তার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে মনে হয়। স্যার, আমি আপনার থেকে কিছু আগে এসেছি ঢাকায়, আমি এসেছি সত্তর সালে, ইলেকশানের আগে। তখন থেকেই দেখছি, আমরা বাঙালীদের ওপর জোর জুলুম করেছি, কিন্তু গোড়া থেকে বন্ধুভাবে নিইনি। আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের অনেকেরই ধারণা, বাঙালী মুসলমানরা পুরোপুরি মুসলমান নয়!
–কেন, সেটা কি ভুল নাকি?
–জী, অবশ্যই ভুল। আমি অনেক বাঙালী মুসলমানের অন্তঃপুরে গিয়ে দেখেছি। তারা নিষ্ঠাবান মুসলমান। তারা ইসলামকে যে অন্তর দিয়ে মান্য করে শুধু তাই নয়, তারা ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অনেকের চেয়ে বেশী জানে। তবে তাদের কিছু আচার আচরণ আছে, যা আমাদের নেই। যেমন শবে বরাত। তাতে কিছু যায় আসে না।
–কিছু ধার্মিক মুসলমান তো থাকতেই পারে। তারাও কি পাকিস্তানের বিরোধী?
–তারা পাকিস্তানের বিরোধী নয় স্যার। তারা পাকিস্তানের গণতন্ত্রের পক্ষে। ওয়েস্টে কখনো ডেমোক্রেসির ধারণা স্পষ্ট ছিল না, হয়তো আজও নেই, কিন্তু এই ইস্টার্ন সাইডে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই, বলতে পারেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। এখানকার ছাত্ররা পলিটিক্যালি অনেক বেশী কনসাস, এটা একটা রিয়েলিটি। ওয়েস্ট পাকিস্তানের মানুষ সদ্য ফিউডল যুগ পেরিয়ে এসেছে, আর্মি রুল সেখানে এখনও এমন কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু এরা আর্মি রুল সহ্য করতে পারে না। তবু আমরা আর্মি দিয়ে এদের রিপ্রেস করার চেষ্টা করেছি, আর্মিকে এদের বন্ধু বা সাহায্যকারী হিসেবে প্রমাণ করার কখনো চেষ্টা করিনি।
–এখনও সময় যায়নি, সিদ্দিক। তুমি এদের সাইকোলজি আরও ভালো ভাবে বুঝবার চেষ্টা করো। সেই অনুযায়ী ক্যামপেইন শুরু করো।
–আমি আপনাকে একটা উদাহরণ দেবো, স্যার? কয়েক মাস আগে ঢাকার একটি বাংলা কাগজের সম্পাদক, কাগজটির নাম দিন কাল, তার মালিক বেশ অবস্থাপন্ন, পত্রিকার ব্যবসা ছাড়াও তার কয়েকটি হোটেল আছে, সেই সম্পাদকটি প্রায় জোর করেই তার বাড়িতে আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেল। আমি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম। যেতে চাইনি, কিন্তু সে অনুনয় বিনয় করলো। কারণটি হচ্ছে এই যে, এর দু’তিন দিন আগেই ভদ্রলোকটির শ্যালিকার বাড়িতে অতি তুচ্ছ কারণে মিলিটারি হামলা হয়েছিল। বাড়ি সার্চ করার নাম করে দু’তিনজন সৈন্য ঐ শ্যালিকাকে এবং বাড়ির আরও একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে। সেইজন্য এই সম্পাদকটির বাড়ির সবাই খুব আতঙ্কিত। উনি বললেন, আমাকে দেখলে বাড়ির সবাই তবু কিছুটা সান্ত্বনা ও ভরসা পাবে, কারণ আমিও মিলিটারিদের একজন।
–তুমি কি ইউনিফর্ম পরে গেলে সেই বাড়িতে।
–জী! ভদ্রলোক একেবারে অন্দর মহলে আমাকে নিয়ে গিয়ে তাঁর মা, বোন ও অন্যান্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার। তারপর খুব সুন্দর সাজানো একটি ঘরে নিয়ে এলেন আমায়, সেখানে একটি দারুণ রূপসী তরুণী বসে আছে। সেই ভদ্রলোকের যথেষ্ট বয়েস হয়েছে, শুনলাম ঐ যুবতীটি তাঁর তৃতীয় স্ত্রী। আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েই ভদ্রলোক বললেন, আপনারা একটু গল্প করুন। আমি এখুনি একবার হোটেল ইন্টারকন থেকে আসছি, সেখান থেকে আর একজন অতিথিকে আনতে হবে। আমাদের দু’জনকে ঐ ভাবে বসিয়ে রেখে ভদ্রলোক কেন যে চলে গেলেন তা বুঝতে পারলুম না।
–এর একটাই মানে হয়। তারপর তুমি কী করলে ইডিয়েট?
–দারুণ অস্বস্তিজনক অবস্থা। কেউ কোনো কথা বলতে পারছি না। আমি খালি ভাবছি, তৃতীয় পক্ষের বউ হলেও এই যুবতীটি বাড়ির অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে না থেকে, এই ঘরে একজন পরপুরুষের সামনে কেন বসে রইলো!
–সাধে কি আর তোমাকে ইডিয়েট বলেছি? তোমার সামনে কেউ এক প্লেট গরম কাবাব রেখে গেল, আর তুমি কি তখন ভাববে বাজারে গোস্তের দাম কত? তৃতীয় পক্ষের বউ না ছাই! ঐ ডরপুক বাঙালীটা তোমাকে খুশি করার জন্য একটা খুব সুরৎ লেড়কী যোগাড় করে এনেছিল। তুমি কিছু করলে না?
–বাকিটা শুনুন স্যার। মহিলাটিকে আমার কিন্তু মনে হলো, লেখাপড়া জানা, সফিসটিকেটেড মেজবান। খানিকক্ষণ চুপ করে কাটাবার পর আমি বললাম, শুনেছি আপনার বোনের বাড়িতে একটা মিসহ্যাপ হয়ে গেছে। শুনে আমি খুবই দুঃখিত।
–শুধু মুখের কথা বললে? মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলে না? বেওকুফ আর কাকে বলে! ৩৭৬
–আমি ঐ কথাটা বলতেই, স্যার, ইস্ট পাকিস্তানে এক রকম সাপ আছে, তার নাম। কালনাগিনী, মেয়েটি সেই রকম কালনাগিনীর মতন ফোঁস করে উঠে বললো, দুঃখিত! আপনার লজ্জা করে না? আপনারা বাড়ি ঘর ধ্বংস করছেন, যখন তখন মানুষ মারছেন, মেয়েদের ইজ্জত কেড়ে নিচ্ছেন, তারপর শুধু ‘দুঃখিত’? আমি বললাম, দেখুন, বেগমসাহেবা, সবাই এক নয়, আমি স্বীকার করছি যে মিলিটারিতে এরকম কিছু লোক আছে… আমাকে বাধা দিয়ে মেয়েটি আবার বললো, যেন দু’চোখে আগুন ছিটিয়ে বললো, আমি আপনাদের ঐ খাঁকি উর্দির প্রত্যেকটা সুতোকে ঘেন্না করি! প্রতিটি পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যের চেহারায় ও ব্যবহারে বর্বরতার ছাপ, আমাদের ওপর অত্যাচার করাটা তারা পবিত্র কাজ মনে করে। আমি বুঝতে পারছি না, আমার স্বামী আপনাকে কেন এখানে বসিয়ে রেখে গেলেন। আমার বোনের ওপর যারা অত্যাচার করেছে, আপনিও সেই পশুদের একজন!
–তুমি কেন তাকে দেখিয়ে দিলে না যে পশুদের মতন নয়, যথার্থ প্রেমিকদের মতনও আমরা মেয়েদের খুশি করতে পারি!
–স্যার, সেই মেয়েটির কথা শুনে আমার এমন লজ্জা হলো! আমার এমনও মনে হলো যে তার কাছে হয়তো জহরের কৌটো লুকোনো আছে, আমি তাকে স্পর্শ করতে গেলেই সে আত্মহত্যা করবে। নিপীড়িত, অপমানিত মানবীরও যে এমন তেজ থাকে, তা আমি আগে দেখিনি। সেই তেজে তার মুখখানা ঝকঝক করছিল। আমি মাথা নীচু করে বেরিয়ে গেলাম সেই ঘর থেকে।
নিয়াজী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, চলো তো, কোন বাড়ি, কোন বাড়ি, আমি সেই সুন্দরী তেজস্বিনীকে এক্ষুনি দেখতে চাই!
সিদ্দিক বললো, তার দেখা পাবেন না। সেই বাঙালী সম্পাদকটি তার পরদিনই সপরিবারে ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তারা ইণ্ডিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
মাটিতে পা ঠুকে নিয়াজী বললেন, তুমি একটি অপদার্থ, সিদ্দিক। তোমার ট্রাউজার্স খোলো তো, দেখি তোমার ঐ জিনসটি আছে কি না! ওরকম একটা চমৎকার মেয়েকে তুমি ছেড়ে দিলে? আমাদের সুন্দরী মেয়েদের যদি ইণ্ডিয়া নিয়ে নেয়, দেন ইঁট ইজ ওয়ান মোর রিজন টু ক্রাস ইণ্ডিয়া!
সিদ্দিক বললো, জেনারেল, আপনি সব ব্যাপারটা কৌতুকের সঙ্গে নিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের সৈন্যরা যদি এ রকম নির্বিচারে বাঙালী মেয়েদের ধর্ষণ করে চলে, তা হলে আমাদের প্রতি বাঙালীদের মনে তো গভীর ঘৃণার সৃষ্টি হবেই। আমাদের যত সামরিক শক্তিই থাক, কিছুতেই আর তাদের মন জয় করা যাবে না।
নিয়াজী এবারেও হালকা ভাবে বললেন, এটা ঠিক বলছো, আমাদের সৈন্যদের মধ্যে কিছুতেই ধর্ষণের প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। তাদের প্রেমিক হতে হবে। তা হলে কি আর্মির মধ্যে দা আর্ট অব লাভ মেকিং বিষয়ে একটা কোর্স চালু করবো?
–স্যার, যে আমি পুরোপুরি ইমমরাল হয়ে যায়, তারা ভালো করে যুদ্ধও করতে পারে না। আপনি বড়ারে গেলে দেখবেন, মুক্তিবাহিনীর সামান্য অ্যাটাকেও আমাদের আর্মি রিট্রিট করে। তারা ‘মুক্তি’ শব্দটাকেই ভয় পায়।
নিয়াজী এবার রেগে উঠে বললেন, সেসব আমি দেখছি! নতুন করে অর্ডার দেওয়া হবে, অন্তত সেভেন্টি ফাইভ পার্সেন্ট পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি না হলে কোনো জায়গা থেকে রিট্রিট করা চলবে না। চলো, আমি সীমান্ত পরিদর্শনে যাবো!
কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হলো কুখ্যাত প্রাক্তন গভর্নর মোনেম খান। ঢাকার রাস্তায় যেখানে সেখানে বিস্ফোরণ ঘটতে লাগলো, প্রচণ্ড শক্তিশালী বোমায় উড়ে গেল ইন্টারকন হোটলের একটা অংশ, বিমানবন্দরের রানওয়েতেও মুক্তিবাহিনীর মটারের শেল এস পড়তে লাগলো। সীমান্তের বহু এলাকা থেকে পাক বাহিনীর পিছু হঠে আসার সংবাদ আসছে
এরই মধ্যে নিয়াজী বেরুলেন সীমান্ত সফরে। তিনি প্রকাশ্যে বেশী বেশী বীরত্ব দেখাতে চান বলে কখনো কখনো খোলা জিপেও দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সিদ্দিক ফিসফিস করে বলে, জেনারেল গ্রামের মানুষগুলোকে লক্ষ করুন। এরকম রোগা, হাড় জিরজিরে কুঁজো হয়ে পড়া অসংখ্য মানুষ কি পশ্চিম পাকিস্তানে দেখেছেন? আমরা শুধু এদের কম মুসলমান বলে দোষারোপ করেছি, কিন্তু আমরা কি এদের খেতে পরতেও কম দিইনি? এরা যে মরীয়া হয়ে স্বাধীনতা চাইছে, এটা কি আমরা একবারও ভেবে দেখবো না?
নিয়াজী অবহেলার সঙ্গে বললেন, ওসব রাজনীতির ব্যাপার। আমি রাজনীতি বুঝি না। আমি সোলজার, আমি শুধু জানি যে-কোনো উপায়ে তোক পাকিস্তানের ইনটিগ্রিটি রক্ষা করতে হবে। ইণ্ডিয়া আমাদের পিছন দিক থেকে ছুরি মারতে চাইছে, আমার সেনাবাহনী ইণ্ডিয়াকে উচিত শিক্ষা দেবে!
সিদ্দিক বললো, আমরা ইণ্ডিয়ার ঘাড়ে সব দোষ চাপাচ্ছি, সেটা প্রায় একচক্ষু বন্ধ করে থাকার মতন নয় কি? পূর্ব পাকিস্তানের বিরাট সংখ্যক মানুষ বিদ্রোহী হয়ে না উঠলে কি ইণ্ডিয়া এর মধ্যে নাক গলাতে পারতো? স্বাধীনতার জন্য যারা লড়াই করে, তারা অনেক সময়ই পাশের রাষ্ট্রের সাহায্য নেয়, এতে নতুন কিছু নয়। আমার শত্রুর যে শত্ৰু, সে আমার বন্ধু, এই নীতি তো বহু স্বাধীনতার যুদ্ধেই দেখা গেছে।
নিয়াজী বললেন, তুমি আবার রাজনীতির কথা বলছো, সিদ্দিক! আমি চিন্তা করছি যুদ্ধের কথা। ওসব বলে তুমি আমার মাথা ঘুলিয়ে দিও না!
ঘুরতে ঘুরতে নিয়াজী এলেন হিলি এলাকায়। সেখানে কয়েকদিন আগেই বেশ বড় রকমের সংঘর্ষ হয়ে গেছে। এমনকি একটা ভারতীয় ট্যাংকও ঢুকে পড়েছিল অনেকখানি ভেতরে, সেটাকে অবশ্য ঘায়েল করা হয়েছে কোনোক্রমে।
একদল সাংবাদিককে জড়ো করে নিয়াজী দেখালেন সেই ট্যাংক। ভারতের বদমাইশির প্রত্যক্ষ নিদর্শন। যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, তবু ভারত ট্যাংক পাঠাচ্ছে পর্যন্ত!
ডাক বাংলোর ঘরে খানাপিনার ব্যবস্থা হলো, সেখানে নিয়াজী সাংবাদিকদের নানান প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলেন।
একজন তরুণী সাংবাদিক এক সময় জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা জেনারাল, ইণ্ডিয়ার সঙ্গে টোটাল ওয়ার সত্যিই কি হবে! যদি হয়, আপনার ধারণায় কবে থেকে তা শুরু হতে পারে?
প্লেট থেকে মুৰ্গীর কাবাব তুলে নিয়ে মুখে ভরে দিয়ে নিয়াজী বললেন, আমার জন্য টোটাল ওয়ার তো অলরেডি শুরু হয়ে গেছে।
সেই দ্ব্যর্থক রসিকতায় অনেকেই হেসে উঠলো। তরুণী সাংবাদিকটি বললো, আমার আরও অনেকগুলো প্রশ্ন আছে।
নিয়াজী দেখলেন, মেয়েটির মুখখানা পালিশ করা, ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা চুল, চোখের দৃষ্টিতে সেই ঝিলিক আছে যা পুরুষদের বুক কাঁপায়।
তিনি হেসে বললেন, আমি এক্ষুনি হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরছি। তুমিও আমার সঙ্গে চলো। তারপর ফ্লাগ স্টাফ হাউসে তোমার সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকার। তুমি যতক্ষণ চাও!