—তোমার কুসুম দিদির আমি আবার বিয়ে দেবো!
শুনে আঁতকে উঠলো সরোজিনী। তার পতি দেবতাটি যে একটু ক্ষ্যাপাটে ধরনের তা সে অনেক দিন আগেই জেনে গেছে। নিত্য নতুন বাতিক তার মস্তকে ভর করে। কিন্তু এ আবার কী উদ্ভট কথা!
দুই চক্ষু প্ৰায় কপালে তুলে সরোজিনী বললো, আপনি কুসোমদিদির বে দেবেন? আপনি খোয়াব দেকচেন বুজি? ওর বে হয়ে গ্যাচে সেই কবে, তারপর বেধবা হলো, আপনি দেকলেন না সিদিনকে, মাতায় সিঁদুর নেই, হাতে নোয়া নেই, কপাল পুড়িয়ে বাপের বাড়ি এয়েচে—
—বিধবা বলেই তো ওর বিয়ে দেবো আবার!
–বিধবার বে, সে তো ছোট-লোক, অজাত-কুজাতের মধ্যে হয়! চার ঘরের কায়েত বাড়ির মেয়ে সম্পর্কে ও কি অলুক্ষণে কতা! আপনার কি পরকালেরও ভয় নেই?
—ঠিক এই কতটাই বিদ্যেসাগর মশাই বলচিলেন। আমরা এ শহরে যে কটা বনেদী ঘর রয়িচি, আমরা মুখে মুখে বিদ্যেসাগর মশাইয়ের বিধবা-বিবাহ কর্মে সায় দিয়িচি, কেউ কেউ অর্থ সাহায্যও করিচি, কিন্তু নিজেদের বাড়িতে কেউ বিধবা-বিয়ে চালু করিনি! উনি যেদিনকে কতটা বললেন, লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। উনি তো হক কতাই বললেন। আমাদিগের যত প্ৰগতি সব শুধু জিবের ডগায়, কাজে নয়! কিন্তু কী করবো বলো, আমার বাড়িতে তো বিধবা কেউ নেই যে তার বিয়ে দোবো! তুমি যদি বিধবা হতে, কত ঘটাপেটা করে তোমার বিয়ে দিতুম আবার!
সরোজিনী স্বামীর পায়ের কাছে বসে পড়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো, আমার মাতার দিব্যি, আপনি এসব কতা বলবেন না, এই দেকুন, আমার বুকের মধ্যে কেমুন তোপ দাগার মতন গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হচ্চে?
নবীনকুমার হাসতে হাসতে বললো, তুমি বিধবা হলে আমি মরে যেতুম, এই তো! তা এতবড় মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য আমি মত্তেও রাজি আচি। দেশের কাজে মরণেও সুখ!
এর পর সরোজিনী, ওগো আমার কী হবে গো, বলে ড়ুকরে উঠলো। নবীনকুমার তার হাত ধরে টেনে তুলে বললো, অবোধ বালিকা আর কাকে বলে! আরো আমি কি সত্যিই মত্তে যাচ্চি নাকি? এ হলো গে কতার কতা! সেই জন্যই তো বলচি তোমার কুসুম দিদির বিয়ে দেবো! সরোজ, শুধু অন্ধকারেই রয়ে গ্যালে, এত বই কাগচ-পত্তির এনে দি, কিচুই পড়ো না! পড়লে জানতে আজকাল ভদ্রঘরেও বিধবার বিয়ে হয়! চার ঘরের কায়েত কী বলচো, শ্রোত্ৰিয় কুলিন ব্ৰাহ্মণরাও বিধবা মেয়ে বিয়ে কচ্চেন! তোমার কুসুম দিদি পাত্রী হিসেবে খুবই ভালো!
অশ্রু মার্জনা করে সরোজিনী বললো, আপনি কুসোমদিদির বে দেবেন, এ কেমনতরো কতা! কুসোমদিদি কি আপনার বাড়ির মেয়ে? তার বাপ-দাদারা রয়েচেন না, ওঁয়ারা এই কতা শুনলে লাঠি নিয়ে আপনাকে তাড়া করবে।
—কেন? ওঁরা কি নির্বোধ? বাড়িতে এমন খাসা একটি বিধবা পাত্রী থাকতেও ওঁরা বিদ্যেসাগর মশাইকে খুশী কত্তে চাইবেন না?
-বিদ্যেসাগর না কে খুশী হবে বলে ওঁয়ারা এমন পাপ কাজ কত্তে যাবেন? ঝাঁটা মারি এমন খুশী হওয়ার মুকে!
—এই হলো মেয়েমানুষের বুদ্ধি! নিজের ভালো নিজেরা বোঝে না! তোমার কুসুম দিদি। সারাজীবন বিধবা হয়ে কষ্ট পাবে, তাতে তুমি খুশী?
—বিধবা হয়েচে-যার যেমুন ভাগ্য, ভাগ্যে থাকলে হবে না?
—আমি ভাগ্য পাল্টে দেবো! কালই কতা বলবো কুসুমের বাবার সঙ্গে। ওর বিয়েতে আমি দশ-বিশ হাজার টাকা খরচ কত্তেও রাজি আচি!
পর দিনই কথা বলা হলো না। অবশ্য, কিন্তু বিষয়টা নবীনকুমারের মনে রয়ে গেল। সে এখন বিষম ব্যস্ত। মহাভারত অনুবাদের কাজ নিপুণভাবে চলছে প্ৰায় অষ্টপ্রহর ধরে। এতদিন কেউ সঠিক বিশ্বাসই করতে পারেনি যে নবীনকুমারের মতন এক বিংশতিবর্ষীয় অস্থির স্বভাবের যুবক সমগ্ৰ মহাভারতের অনুবাদের মতন বিশাল কাজ হাতে নিয়ে সত্যিই তাতে মন দিয়ে লেগে থাকবে। কিন্তু এখন আর অবিশ্বাসের উপায় নেই। কাজ অগ্রসর হচ্ছে অতি দ্রুত বেগে, ইতিমধ্যে প্রথম পর্ব সম্পূর্ণ হয়ে মুদ্রিত হয়েও বেরিয়েছে। দ্বিতীয় পর্বও যন্ত্রস্থ!
অনুবাদের প্রথম পর্ব পাঠ করেও সকলে বিস্মিত। আট দশ জন সংস্কৃতজ্ঞ সুপণ্ডিতদের দিয়ে নবীনকুমার অনুবাদের কাজ করাচ্ছে, এ খবর সকলেই জানে, কিন্তু এমন গাভীর্যপূর্ণ অথচ সুললিত, সরস বাংলা লেখা তো কোনো পণ্ডিতের কর্ম নয়! এতে বিশেষ একজন কারুর হাত আছে, এবং সেই একজন নবীনকুমার স্বয়ং। সে-ই রচনার ভাষা আদ্যোপান্ত পরিমার্জনা করে।
নিজের বাড়িতে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না বলে শুধু এ কাজের জন্যই নবীনকুমার বরাহনগরে একটি প্রশস্ত উদ্যান বাটী ক্রয় করেছে, এবং তার নাম দিয়েছে সারস্বতাশ্রম। পণ্ডিতরা সবাই সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন। আর একটি বাড়ি কিনে সেখানে স্থাপিত হয়েছে মুদ্রাযন্ত্র। প্রতিদিন জোড়াসাঁকো থেকে জুড়িগাড়ি হাঁকিয়ে নবীনকুমার যায় বরাহনগরে। পথে বাগবাজারে তার শ্বশুরালয় পড়ে। এক একদিন বরাহনগরে অধিক রাত্রি পর্যন্ত কাজ চললে সেদিনটা আর নবীনকুমার নিজের বাড়িতে ফেরে না, শ্বশুর বাড়িতেই রাত্রি যাপন করে। সরোজিনী সেখানেই আছে।
কাজের নেশায় যেন পেয়ে বসেছে নবীনকুমারকে। এতবড় একটা কাজ তো রয়েছেই, তার ওপরেও সে নিয়েছে বিবিধার্থ সংগ্ৰহ-এর মতন উচ্চমানের পত্রিকার সম্পাদনা ভার। রাজেন্দ্রলাল মিত্র পদত্যাগ করায় বঙ্গভাষানুবাদক সমিতির এই পত্রিকাটির অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে উঠেছিল, তখন নবীনকুমার নিজের স্কন্ধে এই দায়িত্ব নেয়। মান্যবার এবং পণ্ডিতপ্রবর রাজেন্দ্রলাল মিত্রের পরিবর্তে কুড়ি বৎসর বয়েসের এক যুবক বিবিধার্থ সংগ্ৰহ-এর মতন পত্রিকার সম্পাদক! অবশ্য অনুবাদক এবং লেখক হিসেবে নবীনকুমার তার যোগ্যতা ইতিমধ্যেই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে।
তবু এতেও ক্ষান্ত নয় সে। প্রতিদিন সংস্কৃত-অনুবাদ ও গুরু গভীর শব্দাবলী শুনতে শুনতে এক এক সময় তার কান ঝালাপালা হয়ে যায়। তার চরিত্রে একটা লঘু আমোদ-প্রিয় দিক আছে। এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ সে উচ্চাঙ্গের চিন্তাভাবনা চালিয়ে যেতে পারে না। মাঝে মাঝে তার চিত্ত বিনোদন দরকার। মুলুকচাঁদের আখড়ায় সে আর যায় না। হরিশ মুখুজ্যের সঙ্গে দেখা হয় না, বন্ধুবান্ধব সংস্পর্শে কালব্যাপন করার মতনও তার অবসর নেই। সেই জন্যেই সে বরাহনগরে মহাভারত চর্চার মাঝে মাঝে হঠাৎ উঠে চলে যায়, সেখানে নিজস্ব একটি কক্ষ আছে, তাতে প্ৰবেশ করে দ্বার রুদ্ধ করে দেয়। সেই কক্ষের একটি দেয়াল জুড়ে রয়েছে একটি বেলজিয়ান আয়না। নবীনকুমার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাচতে শুরু করে। লাফায়, ডিগবাজি খায়। এই তার বিনোদন! একা এক সেই কক্ষের মধ্যে সে কখনো শ্ৰীকৃষ্ণ সাজে, কখনো শ্ৰী রাধিকা, কখনো সে ভীম, আবার সে নিজেই বক রাক্ষস। আয়নার সামনে যাকে দেখা যায়, তাকে সে জিহ্বা প্ৰদৰ্শন করে, নানা রকম ভেংচি কাটে! একটু পরে সে যখন আবার বেশ-বাস ঠিকঠাক করে কাঁধে চাদরটা দিয়ে সে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে গভীর ভাবে, তখন তাকে দেখে কে বুঝবে যে এই মানুষটিই একটু আগে কতরকম ছেলেমি করছিল!
সংস্কৃত ঘেঁষা, সন্ধি সমাস সমন্বিত গুরুগম্ভীর বাক্যগুলি মাথা থেকে তাড়াবার জন্য সে আরও একটা উপায় অবলম্বন করেছে। নিজের গোপন কক্ষটিতে সে একটি ছোট খাতায় যা খুশী লিখে যায়। কিছুদিন আগেই চড়ক গেছে, সেই উৎসবে কলকাতা শহর কেমন মেতে উঠেছিল তার একটা বিবরণ লেখে সে, কিন্তু লেখবার সময় সতর্ক থাকে, পারতপক্ষে সে সংস্কৃত কথা ব্যবহার করবে না।
আপন খেয়ালে এই ভাবে সে লিখে যায়, এদিকে দুলে বেয়ারা, হাড়ি ও কাওরারা নূপুর পায়ে উত্তর সুতো গলায় দিয়ে নিজ নিজ বীরব্রতের মহত্ত্বর স্তম্ভস্বরূপ বাণ ও দশ লাঠি হাতে করে প্রত্যেকে মদের দোকানে, বেশ্যালয়ে ও লোকের উঠোনে ঢাকের সঙ্গতে নেচে ব্যাড়াচে! চাষীরা ঢাকের টোয়েতে চামর, পাখির পালক,ঘণ্টা ও ঘুঙুর বেঁধে পাড়ায় পাড়ায় ঢাক বাজিয়ে সন্ন্যাসী সংগ্রহ কচ্চে; গুরু মহাশয়ের পাঠশালা বন্দ হয়ে গিয়েছে—ছেলেরা…ঢাকের পেচোনে পেচোনে রপ্তে রপ্তে ব্যাড়াচ্চে…
ঠিক যেমন তার মুখের ভাষা সেই রকম লেখা। একই সঙ্গে মহাভারতের বিশুদ্ধ ভাষা এবং এই রকম পথ চলতি গদ্য লিখে চলেছে একই লোক। এই নতুন ধরনের লেখা লিখতে লিখতে বেশ মজা পেয়ে গেল নবীনকুমার। চড়ক পার্বণের পর লিখলে বারোইয়ারি পূজা বিষয়ে। ক্রমে ছোট খাতাটি ভর্তি হয়ে যাওয়ায় নবীনকুমারের মনে হলো, এই লেখাগুলি ছাপিয়ে প্রকাশ করলে কেমন হয়? তারই নিজস্ব ছাপাখানা হয়েছে। কিন্তু গ্ৰন্থকারের নাম কী থাকবে। তার নিজের নাম দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। মহাভারতের অনুবাদক হিসেবে যে পরিচিত, তার কলম দিয়ে এই লেখা বেরিয়েছে, কেউ বিশ্বাস করবে? এ লেখা পড়লে যদি সবাই ছিছি করে? না, নাম দেওয়া চলতেই পারে না। মুলুকচাঁদের নামটা দিয়ে দিলে হয় না? মুলুকচাঁদ কাকপক্ষীর মতন ঘুরে ঘুরে শহর কলকাতার সব সংবাদ সংগ্ৰহ করে। কাকপক্ষী না প্যাঁচা? হুতোম প্যাঁচার নকশা নাম দিলে কেমন হয়?
মাঝে মাঝেই মনে পড়ে কুসুমকুমারীর কথা। ঐ নীল নয়না বালিকাটির গাঢ় চোখের দৃষ্টি যেন নবীনকুমারের মনে গেঁথে গেছে। ওর কথা মনে এলেই নবীনকুমার মাথা ঝাঁকায়, যেন সে-ই কুসুমকুমারীর অভিভাবক, কুসুমকুমারীর জীবনের সুব্যবস্থা করে দেবার দায়িত্ব তারই। একটা কিছু করতেই হবে খুব শীঘ্ৰ, কুসুমকুমারীর পিতার সঙ্গে কথা বলা হয়েই উঠছে না। তিনি কলকাতায় নেই।
একদিন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে গেল নবীনকুমার। হিন্দুস্থানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে প্রবল দুর্ভিক্ষ চলছে, শত সহস্র মানুষ অনাহারের সম্মুখীন, তা নিয়ে কিহচু আলোড়ন হছে সংবাদপত্রগুলিতে। সেই উপলক্ষে দেবেন্দ্ৰনাথ ব্ৰাহ্মসমাজ ভবনে একটি সভা ডেকেছেন। ব্ৰাহ্মধর্ম গ্রহণের বিন্দুমাত্র বাসনা নেই নবীনকুমারের, কিন্তু ইদানীং সে প্রায়ই ওঁদের সভায় যায়। দেবেন্দ্রবাবুর বক্তৃতা শুনতে তার ভালো লাগে, এমন সুমিষ্ট বাংলা সে অন্য কারুর মুখে শোনেনি। সভার বেদীস্থলে বসে দেবেন্দ্রবাবু এ দেশের সুদূরতম প্রান্তের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের চিত্র বর্ণনা করলেন মর্মস্পশী ভাষায়। দেবেন্দ্রবাবু নিজে ঐ সব দেশ ঘুরে এসেছেন, তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। পাহাড়ী জাতির লোকেরা বড় সরল হয়, দেবেন্দ্রবাবুর ভাষায় তাদের দুৰ্দৈবের চিত্র যেন চক্ষুর সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। দেবেন্দ্রবাবু যে-ই বললেন, যে দেশবাসীর বিপদে আমরা যদি সাহায্যের হস্ত প্রসারিত না করি তবে কি আমাদের মনুষ্যত্ব ক্ষুণ্ণ হবে না, অমনি নবীনকুমার আর থাকতে পারলো না, উঠে এগিয়ে গেল দেবেন্দ্রবাবুর দিকে। তার গায়ে যে একটি শাল রয়েছে, যার মূল্য অন্তত দুই সহস্ৰ মুদ্রা, সেটি খুলে দেবেন্দ্ৰবাবুর পদপ্রান্তে রেখে সে বিনীতভাবে বললো, এই আমার সামান্য দান। পরে যথাসাধ্য অর্থ সাহায্য করবো!
তখনই সভাস্থলের অন্য সকলেই নিজেদের অঙ্গুরীয়, সোনার বোতাম ও গার্ড চেইন সম্বলিত ঘড়ি খুলে দিতে লাগলেন।
আশ্চর্যের বিষয়, এই সময়ও নবীনকুমারের মনে পড়ে গেল কুসুমকুমারীর কথা। কোথাও কোনো মানুষের দুঃখের কথা শুনলেই তার কুসুমকুমারীর কথা মনে আসে। না, ঐ অপাপবিদ্ধ বালিকাটিকে কিছুতেই সারাজীবন কষ্ট পেতে দেওয়া হবে না। শীঘ্রই কুসুমকুমারীর জন্য একটি পাত্র জোগাড় করতে হবে। নবীনকুমার তার পরিচিত অকৃতদার কিংবা মৃতদার ব্যক্তিদের কথা চিন্তা করতে লাগলো। যেন কুসুমকুমারীর পিতার অভিমত গ্রহণ করা এমন কিছু জরুরী নয়, একজন উপযুক্ত বিধবা-বিবাহেচ্ছ পাত্রের সন্ধান করাই এখন প্রধান কর্তব্য।
দেবেন্দ্ৰবাবুর পাশে তাঁর দুই পুত্র বসে আছে, একজনের নাম দ্বিজেন্দ্ৰ। অন্য জন্য জ্যোতিরিন্দ্ৰ। দেবেন্দ্ৰবাবুর সন্তান-ভাগ্য খুব ভালো, এর মধ্যেই তাঁর ত্রয়োদশটি পুত্র-কন্যা জন্মেছে। জ্যোতিরিন্দ্ৰ বেশ ছোট, কিন্তু দ্বিজেন্দ্ৰ বোধ হয় নবীনকুমারের সমবয়েসী হবে। নবীনকুমার একবার ভাবলো, দেবেন্দ্ৰবাবুর কাছে প্রস্তাব দিলে হয় না যে তাঁর এক পুত্র ঐ কুসুমকুমারীকে বিবাহ করুক। দেবেন্দ্রবাবু নব্য পন্থী, উদার মনস্ক ব্যক্তি, তিনি নিশ্চয়ই এতে আপত্তি জানাতে পারবেন না। অসামান্য রূপ-লাবণ্যবতী কুসুমকুমারী ঠাকুর বাড়ির বধু হবার অনুপযুক্ত নয়। কিন্তু একটু পরেই তার খেয়াল হলো, এ রকম প্রস্তাব করা যায় না। দেবেন্দ্রবাবুরা ব্ৰাহ্মণ, কুসুমকুমারীরা কায়স্থ। পিরিলির বামুনই হোক আর যে-রকম ব্ৰাহ্মণই হোক, ঐরা এখনো বিবাহ-ব্যাপারে জাতি-ভেদ ঘোচাতে পারেননি।
কয়েক দিনের মধ্যেই অবশ্য নবীনকুমার অন্য এক ব্যাপারে মেতে উঠলো, আর মনে রইলো না কুসুমকুমারীর কথা।
এক প্ৰাতঃকালে বাড়ি থেকে বেরুবার মুখে নবীনকুমারকে ধরলো গঙ্গানারায়ণ। সে বললো, ছোট্কু, কদিন থেকেই তোকে খুঁজচি, তোর আর দেখাই পাই না। মহাভারতের অনুবাদটি বড় সরেশ করিচিস রে! আমায় আরও খানকতক বই দিবি?
নবীনকুমার বললো, তোমার যত খুশী নাও না, দাদামণি! দুলালকে বলো, আনিয়ে দেবে। আমি তো মহাভারত বেচবো না, তিন হাজার কপি ছাপিয়েচি, সব বিলিয়ে দেবো, যে যা চাইবে, মহাভারত নিয়ে আমি ব্যবসা কত্তে নামিনি!
—এটা বড় মহৎ কাজ করলি রে ছোট্কু! আমার বন্ধুদের দেকালুম, তারা তো থ! এমন বিশুদ্ধ বাংলা এমন স্বচ্ছন্দ অনুবাদ, যেন মনে হয় নতুন রচনা।
—দাদামণি, তুমি তো হরিশ মুকুজ্যের ওখেনে গতায়াত করো, ওঁকে বই দিও এক কপি।
—তুই আমায় যে বইখানা দিইচিলি সেটা আমার এক বন্ধু জোর করে নিয়ে নিলে! কিচুতেই ছাড়লে না। তার বদলে সে তার লেখা নতুন একটা বই তোকে পড়তে দিয়েচে, তুই পড়ে দেকবি?
-কে তোমার বন্ধু?
—মধু, আমার সহপাঠী ছেল, এখন তো বেশ কখানা বই লিখেচে, বেশ নামও হয়েচে, তুই নাম শুনিসনি? মাইকেল মধুসূদন দত্ত–
নবীনকুমার হাত বাড়িয়ে বইখানি নিয়ে জুড়ি গাড়িতে উঠে পড়লো। এখান থেকে বরাহনগর যেতে অনেক সময় লাগে, তার মধ্যে বইখানি পড়ে ফেলবে। মধুসূদন দত্তর নাম সে শুনেছে বটে, পাইকপাড়ার রাজাদের বাঁধা নাট্যকারী! নবীনকুমার নিজে বাড়ির মঞ্চে থিয়েটারের প্রচলনের পর অনেকেই তার অনুকরণ করছে। পাইকপাড়ার রাজারা বহু অর্থব্যয়ের আড়ম্বর করে। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে এক ধনী তার চেয়ে একটু বেশী কোনো ধনীকে ঠিক পছন্দ করতে পারে না। সেই অনুযায়ী পাইকপাড়ার রাজাদের সম্পর্কে নবীনকুমারের মনে একটা বিরাগ ভাব আছে। স্বভাবতই তাদের বাঁধা নাট্যকার সম্পর্কেও সে প্ৰসন্ন নয়।
বইখানি অবশ্য নাটক নয়, কাব্য। মেঘনাদ বধ। শুধু নামটি দেখেই নবীনকুমারের মনে একটা চিন্তা-তরঙ্গ খেলে গেল। মহাভারত নয়, রামায়ণের কাহিনী। রামায়ণেরও কোনো বিশুদ্ধ গদ্যে বঙ্গানুবাদ নেই। মহাভারত শেষ করেই রামায়ণ অনুবাদে হাত দিতে হবে তো!
তারপর প্রথম পাতা উল্টে সে পড়তে শুরু করলো। সম্মুখ সমরে পড়ি, বীর চূড়ামণি/বীরবাহু, চলি যবে গেলা যমপুরে/অকালে; কহ হে দেবী অমৃতভাষিণী… নবীনকুমারের ভুরু উত্তোলিত হলো। এইভাবে আরম্ভ, এরকম মাঝখান থেকে? শুরু থেকেই এক বীর চূড়ামণির পতন? এ যে নাটকের মতন। এরকম কাব্য নবীনকুমার কখনো পড়েনি।
অন্যদিন হুতোমের নকশা লেখার মাল-মশলা সংগ্রহের জন্য সে পথের দু পাশ দেখতে দেখতে যায়। আজ আর অন্য কোনো দিকে তার আর খেয়ালই রইলো না। এ কী অবিশ্বাস্য রকমের কবিতা? কবিতা সম্পর্কে নবীনকুমারের মনে এমনিতেই একটা বিস্ময়ের ভাব আছে। সে অনেক চেষ্টা করে দেখেছে, কিন্তু কবিতা তার হাতে ঠিক আসে না। গদ্য রচনা বিষয়ে তার আত্মবিশ্বাস জন্মে গেছে, কিন্তু কবিতা জিনিসটা কেমন যেন হয়েও হয়ে ওঠে না। এ রকম কবিতা নবীনকুমার কখনো পড়েনি। এমন ঝঙ্কারময় শব্দ, এমন উন্নতভাব, লাইনের শেষে মিল নেই। অথচ প্রতিটি লাইনই দৃঢ় সংবদ্ধ।
…শুনিয়াছে বীণা-ধ্বনি দাসী
পিকরব-রব নব পল্লব-মাঝারে
সরস মধুর মাসে, কিন্তু নাহি শুনি
হেন মধুমাখা কথা কভু এ জগতে!
দুলাল চন্দ্ৰ দাঁড়িয়ে থাকে জুড়ি গাড়ির পিছনে। চলন্ত গাড়ি থেকেই নেমে দৌড়ে দরজার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, কী বলচেন, ছোটবাবু?
নবীনকুমার কখন আপনমনে উচ্চস্বরে পাঠ করতে শুরু করেছে। এমন কবিতা মনে মনে পড়া যায় না। হাতের ইশারায় দুলালকে যা, যা বলে সে পাঠে নিমগ্ন হয়ে রইলো। খানিক পরে আবার সে মুখ বাড়িয়ে কোচোয়ানের উদ্দেশে বললো, এই ঘোরা, ঘোরা, শিগগির গাড়ি ঘুরিয়ে নে! দুলাল আবার নেমে এসে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েচে, ছোটবাবু?
নবীনকুমার এমন ঘোরের মধ্যে আছে যেন দুলালকে চিনতেই পারলো না প্ৰথমে। তীব্র দৃষ্টি মেলে বললো, কে? কে বিরক্ত করে এখন?
পরীক্ষণেই আবার সে বললো, ও, দুলাল, আমি আজ কাজে যাবো না, আজ্ঞে বাড়ি ফিরবো, গাড়ি ঘোরাতে বল, তুই দৌড়ে বরানগরে চলে যা-পণ্ডিত মশাইদের খপর দিগে যা—।
সারাদিন বিছানায় শুয়ে শুয়ে নবীনকুমার মেঘনাদবধ কাব্য পাঠ করলো। এমন নেশা সে অনেকদিন পায়নি। তারপর চারদিন ধরে নবীনকুমারের মুখে শুধু ঐ কাব্যের কথা। যাকে পায় তাকে ডেকে ডেকে শোনায়। এই ফিরিঙ্গি কবি সম্পর্কেও তার মনে দারুণ কৌতূহল জেগেছে। ছোটভাই-এর এতখানি উৎসাহের আতিশয্য দেখে গঙ্গানারায়ণ বললো, তুই মধুর সঙ্গে পরিচয় কত্তে চাস? ডেকে আনবোখন একদিন তাকে আমাদের বাড়িতে!
কিন্তু মধুসূদনকে এত সাধারণভাবে ডাকা হলো না এ-বাড়িতে। এর মধ্যে একদিন বিখ্যাত অধ্যাপক রিচার্ডসনের বিদায় অভ্যর্থনা হয়ে গেল। আগেকার হিন্দু কলেজের অধ্যাপক ডি এ রিচার্ডসন বৃদ্ধ হয়েছেন, চিরকালের মতন তিনি ভারত ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ইংলণ্ডে। মধুসূদন, গৌর, গঙ্গানারায়ণ, ভূদেব প্রমুখ ছিল রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র, তারা ওঁকে টাউন হলে সম্বর্ধনা জানালো এবং তারাই চাঁদা করে রিচার্ডসনের ফেরার জাহাজ ভাড়া তুলে দিল। সেই সভাতে উপস্থিত রইলো নবীনকুমার। সভা শেষে বাইরে বেরিয়ে এসেই সে বললো, আমরা প্ৰধান প্রধান সাহেবদের বিদায়ের প্রাক্কালে রিসেপশান দি, আমরা অদ্যাবধি আমাদের দেশীয় কোনো ব্যক্তিকে তা দিয়িচি?
যদুপতি গাঙ্গুলি বললো, এটা তুমি ঠিকই বলেচো, নবীন। আমাদের দেশে সত্যিকারের বড় মানুষদের পেচোনেও আমরা ঘোঁট পাকাই, গুণের সমাদর করি না। নইলে বলো, বিদ্যাসাগর মশাইকে পাবলিক রিসেপশান দেওয়া উচিত ছিল না কি? তুমি একটা ব্যবস্থা করো না!
নবীনকুমার একটুক্ষণ ভেবে বললো, উনি কি এ সব তোয়াক্কা করেন? কে বলতে যাবে ওঁকে। যদি উনি ধমকে ওঠেন? আমি বলি কী, যে নতুন জ্যোতিষ্কের উদয় হয়েচে আমাদের সাহিত্যাকাশে, তাঁকেই প্ৰথমে সম্বর্ধনা জানানো যাক। আগেকার দিনে রাজা-বাদশারা কবিদের শিরোপা দিতেন। এখন রাজা থাকেন বিভূয়ে। আমাদেরই সে দায়িত্ব লওয়া কর্তব্য।
নবীনকুমার পায়ের তলায় জল গড়াতে দেয় না। পরের সপ্তাহেই ব্যবস্থা হলো সম্বর্ধনার। এই সম্বর্ধনা দেওয়া হবে সিংহবাড়ির বিদ্যোৎসাহিনী সভার পক্ষ থেকে। কার্ড ছাপিয়ে বিতরণ করা হলো শহরের সমস্ত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে। ব্যাপারটি সত্যিই অভিনব, কলকাতা শহরের পত্তনের পর এ পর্যন্ত কোনো কবিকে এমনভাবে প্রকাশ্য অভিনন্দন জানানো হয়নি। শুধু মানপত্র নয়, কবিকে একটি উপহারও দেওয়া হবে। উপহারের দ্রব্যটি নবীনকুমারই ঠিক করলো। সুরা-প্রেমিক কবিকে দেওয়া হবে একটি রৌপ্যনিমিত পানিপাত্র।
গঙ্গানারায়ণ গিয়ে সম্মতি নিয়ে এসেছিল মধুসূদনের। নির্দিষ্ট দিনে মধুসূদন সেজোগুঁজে তৈরি, সঙ্গে যাবে গৌরদাস এবং একজন মাইনেকরা পণ্ডিত। গৌরদাসের অনুরোধেও মধুসূদন দেশীয় পোশাক পরিধান করতে রাজি হলেন না। কিন্তু যাবার আগে মনের জোর আনার জন্য মধুসূদন ব্র্যাণ্ডির বোতল খুলে যেই গলায় ঢালতে যাবেন, তখন গৌরদাস চেপে ধরলেন তার হাত। অনুনয় করে বললেন, প্লীজ মধু, অন্তত আজ থাক। ওখেনে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি আসবেন, তোর মুখ থেকে কিছু শুনতে চাইবেন–
বোতলটি নামিয়ে রেখে মধুসূদন বললেন, থাক, আজ আর নিজের পয়সায় কেন খাই! ওরা নিশ্চয়ই সার্ব কর্বে? বড় মানুষের বাড়ির ব্যাপার, আশা করি ওরা বেস্ট কোয়ালিটিই দেবে!
গৌরদাস বললেন, মনে হয় না। যতদূর জানি, ও-বাড়িতে ড্রিঙ্কস-এর চল নেই।
—কী বললি? সভা খুলেচে, ইংলিশ কায়দায় রিসেপশান দিচ্চে, আর ওয়াইন সার্ব কর্বে না? বিদ্যোৎসাহিনী সভা তো শুনিচি আসলে মন্দোৎসাহিনী সভা!
—তুই ভুল শুনিচিস মধু!
—তবে আর যাই কেন? হোয়াই বদার! মিচিমিচি গণ্ডাখানেক লোকের বকবকানি শুনতে যাই কেন?
–তুই কী বলচিস, এত বড় সম্মান চল, প্লীজ, ব্যাপারটা সেরে এসে বাড়ি ফিরে তুই যত খুশী ডিংক করিস।
ঘোড়ারগাড়ি মাঝরাস্তা পর্যন্ত আসার পর আবার ছটফটিয়ে উঠলেন মধুসূদন! গৌরকে তিরস্কার করে বললেন, তুই কী কল্লি বল তো? আমার গলা শুক্যে আসচে। ওরা কি ডায়াস তৈরি করে তার ওপর আমায় বসাবে? ওরে বাপ রে বাপ!
গৌরদাস বললেন, বেশীক্ষণ লাগবে না। তোর লেকচারটা শেষ হলেই তুই বাড়ি চলে আসবি।
–হোয়াট? লেকচার? কে দেবে লেকচার? তোর মাতা খারাপ?
—বাঃ, ওদের সম্বর্ধনার উত্তরে তোকে দু-চার কতা বলতে হবে না? সেটাই তো ভদ্রতা!
—তোরা আমায় মেরে ফেলতে চাস? আমি দেবো বেঙ্গলিতে লেকচার? শুনেই আমার সারা গা কাঁপচে। ওরে বাপ রে বাপ, আমি যাবো না, আমি পালাবো–
পণ্ডিতটি হো হো করে হেসে উঠলেন। মধুসূদন চক্ষু গরম করে তার দিকে ফিরে বললেন, তুমি হাসচো কেন, পণ্ডিত! ভাবচো, আমি প্ৰহসন কচ্চি? আমি বেঙ্গলিতে লেকচার দেবো? নেভার।
পণ্ডিতটি বললেন, বলেন কি মশাই, হাসবো না? বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি যিনি, তিনি বাংলা বক্তৃতা করতে ভয়ে কাঁপছেন, এতে হাসি পাবে না?
এবার গৌরদাসও হেসে উঠলেন সশব্দে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কিন্তু মধুসূদনের সব কিছুই বেশ পছন্দ হতে লাগলো। বিদ্যোৎসাহী সভার সভ্যদের উৎসাহ-উদ্দীপনা খুবই আন্তরিক। বিশিষ্ট ভদ্রমণ্ডলী ঔৎসুক্যের সঙ্গে চেয়ে আছেন তাঁর দিকে। আবেগকম্পিত কণ্ঠে নবীনকুমার পাঠ করলেন মানপত্র। সেই আবেগের স্পর্শ লাগলো মধুসূদনের কণ্ঠে, উত্তর দেবার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে বেশ গড়গড় করেই বাংলা বলতে লাগলেন তিনি। অবশ্য একটুখানি বলার পরই তাঁর হাঁটুদ্বয় কম্পিত হতে লাগলো। হঠাৎ একটুখানি থেমে তিনি বললেন, আমি বক্তৃতা বিষয়ে নিপুণতাবিহীন…কৃতজ্ঞতা প্রকাশে নিতান্ত অক্ষম…। তারপরই বসে পড়লেন। তাতেই বিপুল হর্ষধ্বনি ও করতালিধ্বনি হলো। এরপর অভিনেতা কেশব গাঙ্গুলি পাঠ করলেন মেঘনাদবধের নির্বাচিত অংশ। মধুসূদন বেশ নিবিষ্টচিত্তে শুনতে লাগলেন। তাঁর আর বাড়ি ফেরার তাড়া দেখা গেল না।
ফেরার পথে ঘোড়ার গাড়িতেও গৌরদাসের সঙ্গে মধুসূদন আলোচনা করতে লাগলেন সভাটির সার্থকতা সম্পর্কে। নবীনকুমারকে বেশ পছন্দ হয়েছে মধুসূদনের। ঐ অল্পবয়সী ছোঁকরাটি এ শহরের সমস্ত খ্যাতিমান ব্যক্তিদেরই আনতে পেরেছে এই সভায়, এটা কম কথা নয়। গৌরদাস বললেন, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে একমাত্র হরিশ মুখুজ্যেকেই দেকলুম না। তিনি বোধ হয় অন্য কর্মেব্যস্ত—।
মধুসূদন ললাট কুঞ্চিত করে বললেন, আর একজনকে দেকিনি। অথচ দেকবো বলে একসপেকট করিচিলুম। তোমাদের ঐ বিদ্যাসাগর। তিনি এলেন না কেন? তাঁর বুঝি খুব অহংকার! ইফ ইউ মিট হিম, ওঁকে বলে দিও, ঐ সব অহংকারী পণ্ডিতদের মাইকেল এম এস ডাট্ গ্ৰাহ্য করে না।