৪৫
আজাদদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁও বিমানবন্দরের উল্টোদিকে ড্রাম ফ্যাক্টরির কাছে এমপি হোস্টেলে ৷ রুমী, জামী, তাদের বাবা শরীফ ইমাম, বন্ধু হাফিজ প্রমুখকে ধরে বাইরে রাস্তায় জিপের সামনে এনে হেডলাইট জ্বালানো হয়, তখন কেউ একজন রুমীকে শনাক্ত করে ৷ হতে পারে সেই কেউ একজনটা বদি, হতে পারে সামাদ ভাই, হতে পারে অন্য কোনো ইনফরমার ৷ রুমীকে শনাক্ত করার পর তাকে আলাদা করে জিপে তোলা হয় ৷ চুল্লুকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ কিন্তু স্বপনের বাড়ির সামনে গিয়ে আর্মিরা যে ‘স্বপন ভাগ গিয়া’ বলেছিল, এটা চুল্লু শুনতে পায় ৷
এখন রাত কত হবে, আজাদ জানে না ৷ সময়ের হিসাব এখন তাদের কাছে গৌণ হয়ে গেছে ৷ তাকে একটা ঘরে আলাদা করে নেওয়া হয়েছে ৷ ধরা পড়ার পর থেকেই তার ওপরে মারটা বেশি পড়ছে ৷ তাদের বাড়িতে পাকিস্তান আর্মির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারই রেশ ধরে তার ওপর দিয়েই ঝড়টা যাচ্ছে বেশি ৷ পিটিয়ে তার মুখ ক্ষতবিক্ষত করে ফেলা হয়েছে ৷ সমস্ত শরীরে ব্যথা ৷ ওই ঘরে যখন সবাই মিলে এক জায়গায় ছিল, তখন থেকেই শুরু হয়েছে মারধর ৷ বুকে পেটে মুখে লাথি ৷ ঘুসি ৷ বেত, চাবুক, লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটুনি ৷ বিশেষ করে গিঁটে গিঁটে, কনুইয়ে, হাঁটুতে, কব্জিতে মার ৷ চারদিকে বাঙালির আর্তনাদ, চিৎকার ৷ গোঙানি ৷
এরপর আজাদকে একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এঘরে একজন বসে আছে ৷ অফিসার ৷ নেমপ্লেটে লেখা নাম : ক্যাপ্টেন হেজাজি ৷
‘তুম আজাদ হ্যায় ৷’
আজাদ বলে, ‘নেহি, হাম মাগফার হ্যায় ৷’
সঙ্গে সঙ্গে হান্টারের বাড়ি এসে পড়ে গায়ে, পিঠে, ঘাড়ে, মাথায় ৷
‘ফের ঝুট বলতা হ্যায়!’
এরপর একজনকে আনা হয় ৷ তার মুখ কাপড়ে ঢাকা ৷ তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এ আজাদ ?’
মুখ-ঢাকা মাথা নেড়ে বোঝায়, হ্যাঁ ৷ এ-ই আজাদ ৷
আবার শুরু হয় জেরা ৷
‘তুমি ইন্ডিয়া কবে গেছ ?’
‘যাই নাই ৷’
‘কোন জায়গায় ট্রেনিং নিয়েছ ?’
‘নেই নাই ৷’
আবার মার ৷ মারতে মারতে মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয় আজাদকে ৷ তারপর জেরাকারী বুটসহ উঠে পড়ে তার গায়ে পায়ে মাথায়! প্রথম প্রথম এই মার অসহ্য লাগে ৷ তারপর একটা সময় আর কোনো বোধশক্তি থাকে না ৷ ব্যথাও লাগে না ৷ আজাদ পড়েই থাকে মেঝেতে ৷ খানিকক্ষণ বিরতি দেয় জওয়ানটা ৷
আজাদের চোখ বন্ধ ৷ সে প্রায় সংজ্ঞাহীন ৷ পানি এনে ছিটানো হয় তার চোখেমুখে ৷ আবার চোখ মেলতেই আজাদকে বসানো হয় মেঝেতে ৷
‘কোন কোন অপারেশনে গিয়েছিলে ?’
‘যাই নাই ৷’
‘আর কে কে মুক্তিযোদ্ধা আছে তোমার সাথে ?’
‘জানি না ৷’
আবার মার ৷ প্রচণ্ড ৷ কিন্তু আশ্চর্য, কিছুই টের পাচ্ছে না আজাদ ৷
‘শোনো ৷ সব স্বীকার করো ৷ বন্ধুদের নাম বলে দাও ৷ অস্ত্র কোথায় লুকিয়ে রেখেছ, বলে দাও ৷ তাহলে কথা দিচ্ছি, তোমাকে ছেড়ে দেব ৷’
‘আমি কিছু জানি না ৷ আমি নির্দোষ ৷’
‘জানো না ? তোমার বন্ধুরাই তোমার কথা বলেছে ৷ তোমার বাসা দেখিয়ে দিয়েছে ৷ তোমাকে চিনিয়ে দিয়েছে ৷ যে সব স্বীকার করছে, তাকে আমরা ছেড়ে দেব ৷ তাহলে তুমি কেন বোকার মতো মরবে ৷ স্বীকার করো ৷’
‘আমি কিছু জানি না ৷ তোমরা ভুল করছ!’
আবার প্রচণ্ড জোরে মার ৷ দড়ির মতো করে পাকানো তার দিয়ে ৷ হাত চলে যায় অজান্তেই, পিঠে ৷ হাতের আঙুলে গিয়ে পড়ে চাবুক ৷ আঙুল থেঁতলে যায় ৷ নখগুলো মনে হয় খুলে খুলে পড়বে ৷
আজাদ ‘ওরে বাবা রে ওরে মা রে’ বলে কেঁদে ওঠে ৷ তখন তার নিজেরই বিস্ময় লাগে ৷ যে বাবাকে সে দুই চোখে দেখতে পারে না, যে বাবাকে সে স্বেচ্ছায় ছেড়ে এসেছে, যার ওপরে তার অনেক রাগ, তাকে কেন তার মহান মায়ের সঙ্গে এক করে ডাকল ৷
তার ওপর দিয়ে মারের ঝড় বয়ে যাচ্ছে ৷ যাক ৷ আজাদ এসব কথা মনে করবে না ৷ সে অন্য কিছু ভাববে ৷ সে তার মাকে ভাববে ৷ তার মায়ের মুখ মনে করবে ৷ তার মা দেখতে খুব সুন্দর ৷ তার সব সময়ই মায়ের মুখটা মিষ্টি লেগেছে ৷ তার মায়ের মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে ৷ এটাই সে সুখে-দুখে দেখে এসেছে ৷ সে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে ৷ সে শুধু তার মায়ের মুখটা মানসচোখে ফুটিয়ে তুলতে চায় ৷ এই তো তার মা ৷ সেই ঠোঁট, সেই মুখ ৷ সেই পান-খাওয়া লাল ঠোঁট ৷ মা তার মিটিমিটি হাসছে ৷ সেদিন কেন সে জানে না, হঠাৎ করেই দরজার চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে বলেছে, ‘মা, তুমি কিন্তু আমাকে কোনো দিনও মারো নাই, আশ্চর্য, না! এমন মা বাংলাদেশে আছে, যে মা তার সন্তানকে কোনো দিনও মারে নাই! আমার মা আছেন ৷ তিনি তাঁর সন্তানকে কোনো দিনও মারেন নাই ৷ কিন্তু বিনিময়ে মাকে সে কী দিয়েছে! শুধুই অবাধ্যতা! মাকে জড়িয়ে ধরে সে কোনো দিনও বলেনি, মা, আমি তোমাকে ভালোবাসি ৷ অনেক ছেলের সঙ্গেই মায়ের এ রকম সম্পর্ক আছে ৷ তার মায়ের সঙ্গে তার নাই ৷ কিন্তু মা কি তার বোঝে না, এই জগতে মা ছাড়া তার আর কেউ নাই ৷ সে তো ইচ্ছা করলে বাবার কাছে চলে যেতে পারত ৷ তার ছোটমা তাকে নানাভাবে আদর করতে চেয়েছেন ৷ কিন্তু সে তো সেই আদর, সেই প্রাচুর্য ভোগ করবে বলে মাকে ফেলে চলে যায়নি ৷ বা, ফেলেই বা চলে যেতে হবে কেন, সে তো মাকেও বলতে পারত, মা পাগলামো করে না, কতজনই তো দ্বিতীয় বিয়ে করে, তাদের সবার প্রথম স্ত্রী কি সংসার ছেড়ে চলে গেছে! করাচিতে তার হোস্টেলের তিন রুমমেটের বাবাই তো দ্বিতীয়বার সৎকার্য করেছিল, সে চিঠি লিখে সেটা জানিয়েওছিল ৷ সে তো বলতে পারত, চলো মা, বাবার সঙ্গে একটা আপসরফা করে নিই ৷ কোনো দিন বলেনি তো! বলবার কথাও ভাবেনি ৷ বাবার সঙ্গে তার তো কোনো গোলযোগ হয়নি ৷ বাবা তাকে আদরই করতেন ৷ কিন্তু সে বাবাকে ছেড়েছে শুধু তার মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে ৷ বাবাকে ছাড়া মানে তো শুধু বাবাকে ছাড়া নয়, আরাম-আয়েশ অর্থ-প্রতিপত্তি গাড়ি-বাড়ি, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মোহ-সব ছাড়া ৷ সে ছেড়েছে তো সব ৷ প্রথম প্রথম অসুবিধা হয়েছে ৷ কিন্তু মেনে কি সে নেয়নি ? ‘মা, এর মধ্য দিয়েই আমার বলা হয়ে গেছে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি ৷ মা, তুমি কি তা বুঝেছ ৷ মা, যদি আমি আর ছাড়া না পাই, তাহলে তোমার আর কী থাকবে মা ? আমি জানি, তুমি শুধু আমাকেই মানুষ করতে চেয়েছ ৷ আর তার বিনিময়ে আমার কাছ থেকে কিছুই প্রত্যাশা তুমি করো না ৷ এটা তুমি চিঠিতেও লিখেছিলে ৷ কিন্তু আমি তো তোমার পাশে থাকতে চাই ৷ না, তোমার ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার জন্যে নয়, তোমাকে খুব ভালোবাসি বলে ৷’
প্রথম রাতের নির্যাতনে আজাদের মুখ থেকে কোনো কথাই আদায় করা যায় না ৷
সময় কীভাবে, কোথা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, আজাদ টের পায় না ৷ এক সময় দেখতে পায়-বদি, রুমী, চুল্লু ভাই, সামাদ ভাই, আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারক আলভী, বাশার, জুয়েল, সেকেন্দার, মনোয়ার দুলাভাই, আলতাফ মাহমুদের শ্যালকেরা, রুমীর বাবা, ভাই, আরো অনেকের সঙ্গে সেও একই ঘরে ৷ তার কী রকম একটা অভয় অভয় লাগে ৷ একই সঙ্গে এতগুলো পরিচিত, অভিন্ন-লক্ষ্য মানুষ, সতীর্থ মানুষ ৷
আলতাফ মাহমুদ শিখিয়ে দেন তাঁর শ্যালকদের, আলভীকে, একই সঙ্গে ধরা পড়া তাঁর দুই পড়শিকে, ‘তোমরা বলবে তোমরা কিছু জানো না ৷ যা জানার আমিই জানি ৷’
রুমী শিখিয়ে দেয় তার বাবাকে, ভাইকে, বন্ধুকে, ‘তোমরা কিছু জানো না ৷ বলবে, ছেলে কোথায় কী করে বেড়ায় আমরা জানি না ৷ ব্যস ৷’
গাদাগাদি করে বসে আছে সবাই ৷ পানির পিপাসায় সবার অবস্থা খারাপ ৷ পানি পানি করে চিৎকার করে ওঠে একজন ৷ তখন সবার মনে পড়ে, সবাই বড় তৃষ্ণার্ত ৷ একজন সেন্ট্রি দরজার ওপারে ৷ কিন্তু তার কানে এই আবেদন পৌঁছুচ্ছে বলে মনে হয় না ৷ ঘরের ভেতরেই একটা পানির কল আছে ৷ কেউ দেখেনি ৷ একজনের চোখে পড়ে ৷ তখন সবাই এক এক করে উপুড় হয়ে আঁজলা ভরে পানি খায় ৷ প্রত্যেকের চেহারা বিধ্বস্ত ৷ আলতাফ মাহমুদের গেঞ্জিভরা রক্তের দাগ ৷ আবুল বারক আলভীর নখ মারের চোটে খুলে খুলে যাচ্ছে ৷ যারা আগে মার খেয়েছে, তাদের গা ফেটে বেরুনো রক্ত শুকিয়ে আরো বীভৎস দেখাচ্ছে ৷ বাশারের হাত ভাঙা ৷ বোঝাই যাচ্ছে যে ওটা ভেঙে গেছে মাঝ বরাবর ৷ বাশারের মুখে আঁজলা ভরে পানি দেয় আজাদ ৷
আজাদকে ধরা হয়েছে গতকাল রাত ১২টার পরে ৷ এখন সন্ধ্যা ৷ প্রায় ১৮ ঘন্টা হয়ে গেছে তাদেরকে কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি ৷
জাহানারা ইমাম সারা দিন চেষ্টা করেছেন ফোনে, আর্মি এঙ্চেঞ্জে ৷ তিনি ক্যাপ্টেন কাইয়ুমকে চাইছেন ৷ কিন্তু ক্যাপ্টেন কাইয়ুমকে কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এই ক্যাপ্টেন গত রাতে তাদের বাসায় রেইডের নেতৃত্বে ছিলেন ৷ আর এ বাসায় এসেছিল সুবেদার সফিন গুল ৷ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জাহানারা ইমাম সুবেদার সফিন গুলকে পেয়ে যান ৷ এই সুবেদার বলে গিয়েছিল, ‘এক ঘন্টা পরে ইন্টারোগেশন শেষে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে ৷’
জাহানারা বলেন, ‘কী এত ইন্টারোগেশন ৷ ওদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন ? ওরা কেমন আছে ? আমি কি ওদের কারো সাথে কথা বলতে পারি ?’
সফিন গুল জামীকে ডেকে দেন ৷
জামী সংক্ষেপে সারে ৷ ‘হ্যালো, ভালো আছি ৷ আমাদের ছেড়ে দেবে ৷’
‘তোরা খেয়েছিস কিছু ?’
‘না ৷’
‘দে তো, সুবেদার সাহেবকে ফোনটা দে ৷’
জাহানারা মিনতি করে আল্লার দোহাই পেড়ে সুবেদারকে অনুরোধ করেন ওদের কিছু খেতে দিতে৷
এই সুবেদার, নাকি অন্য কেউ, আবুল বারক আলভী বহুদিন তার কথা ভুলতে পারবে না যে, তাদের মেস থেকে হাতে বেলা রুটি আর চিনি এনে দিয়েছিল খেতে৷ তাকে আলভীর মনে হয়েছিল সাক্ষাৎ দেবদূত৷ তবে প্রত্যেকের মুখে প্রহারের ক্ষত থাকায় কেউই কিছু খেতে পারেনি৷
ওরা যখন এক ঘরে, কখনও খানসেনারা আসে, দলে দলে বা জোড়ায় জোড়ায়, ইচ্ছামতো পেটাতে থাকে ওদের, যেন ওরা খেলার সামগ্রী, বা ব্যাটিং প্রাকটিস করার বস্তা৷
রাত ১১টার পরে রুমীকে বাদ দিয়ে সবাইকে রমনা থানায় আনা হয়৷
রমনা থানায় দুটো সেল৷ দুটো লাইন করা হয়েছে৷
আবুল বারক আলভী, তখন সবে আর্ট কলেজ থেকে পাস করে বেরিয়েছে, তাকে দেখতে বালকের মতো দেখায়, মেলাঘর থেকে এসেছে, ভাবে, ‘আমাকে আলতাফ মাহমুদের ফ্যামিলির সঙ্গে দাঁড়াতে হবে৷’ সে নিজে থেকে গিয়ে আলতাফ মাহমুদের পরিবারের লাইনে ভিড়ে যায়৷ আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, তার নাম সে বলবে সৈয়দ আবুল বারক৷ আলতাফ মাহমুদের বাসায় এসেছে নিতান্তই আত্মীয় হিসাবে, বেড়াতে, সে তার শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়৷
সৈন্যরা এক এক করে ডেকে ডেকে নাম এন্ট্রি করছে, আলভী তার নামের প্রথম অংশ বলে, বাকিটা আর বলে না৷ সবাইকে সেলে ঢোকানো সাঙ্গ করে সৈন্যরা চলে যায়৷ সঙ্গে সঙ্গে এতক্ষণ সেলে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকা আগে থেকে ঢোকানো আসামীরা জেগে ওঠে৷ তাদের কেউ হয়তো চোর, কেউবা পকেটমার৷ তারা জানে রোজ রাতে মুক্তিরা আসে, তারা দিনের বেলা তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে নোভালজিন ট্যাবলেট, আয়োডেঙ্ এসব নিয়ে রেখে দিয়েছে৷ তারা সবাই মুক্তিদের সেবায় লেগে যায়৷ আজাদের সারা গায়ে আয়োডেঙ্ লাগায় একজন৷ বলে, ‘ভাইজান, আমি পকেট মারার কেসে ধরা পড়ছি, অনেক মাইর খাইছি, হাটুরা মাইর, আপনাগো মতো মাইর খাই নাই৷’
বাশারের হাতে রুমাল বেঁধে দেয় একজন৷
নিজের গামছা খুলে পুরোটা মেঝে মুছে দেয় কেউ৷ তারা শিখিয়ে দেয় মার থেকে বাঁচার উপায়, বলে, ‘প্রথমে দু-এক ঘা মাইর খাওনের সাথে সাথে অজ্ঞান হওনের ভান কইরা পইড়া যাইবেন, চোখ উল্টায়া রাখবেন, দেখবেন তাইলে মাইর থামায়া চোখেমুখে পানি ছিটাইব৷’
ভাত আর তরকারি আসে কিছু৷ দু চামচ করে ভাত, একটু করে নিরামিষ তরকারি৷ বন্দিরা খায়৷ তারপর হাজতিরা পুলিশকে টাকা-পয়সা দিয়ে এদের জন্যে পান আর সিগারেট জোগাড় করে৷
অল্প ভাত৷ সবাই ভাগাভাগি করে খায়৷ আজাদ গিয়েছিল হাতমুখ ধুতে৷ এসে দেখে ভাত ফুরিয়ে গেছে৷ তার রেজেকে ভাত নাই! কী আর করা! সে পান মুখে দেয়৷ তার মা খুব পান পছন্দ করে৷ কী জানি, মা এখন কী করছে!