রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হযরত আইশা (রা)-কে ঘরে তোলা প্রসঙ্গে
ইমাম আহমদ ওয়াকী সূত্ৰে….. হযরত আইশা (রা) থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন। হযরত আইশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) শাওয়াল মাসে আমাকে বিবাহ করেন এবং শাওয়াল মাসে আমাকে ঘরে তুলে আনেন। তাই রাসূল (সা)-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে কে তাঁর নিকট আমার চাইতে অধিকতর প্রিয় ছিলেন? আর এজন্যেই হযরত আইশা পসন্দ করতেন যে, স্ত্রীরা শাওয়াল মাসেই স্বামীগৃহে গমন করুক। মুসলিম, তিরমিয়ী, নাসাঈ ও ইবন মাজা সুফিয়ান ছাওৱী সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেন এবং ইমাম তিরমিয়ী হাদীছটিকে হাসান-সহীহ বলে অভিহিত করে মন্তব্য করেন যে, সুফিয়ান ছাওরীর সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্ৰ হাদীছটি সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। এ হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নবী করীম (সা)-এর সঙ্গে হযরত আইশা (রা)-এর বাসর হিজরতের সাত বা আট মাস পরে হয়েছিল। ইবন জারীর তাবারী এ দু’টি উক্তিই উল্লেখ করেছেন। ইতোপূর্বে হযরত সাওদার সঙ্গে নবী (সা)-এর বিবাহের বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এবং কিভাবে এ বিবাহ সংঘটিত হয়েছে এবং হযরত আইশার সঙ্গে তার বাসরের বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ বাসর হয় মদীনা আগমনের পর লোকজনের বর্তমানকালের অভ্যাসের বিপরীতে ‘সুনেহ’ নামক স্থানে দিনের বেলা। নবী করীম (সা) কর্তৃক শাওয়াল মাসে হযরত আইশা (রা)-এর সঙ্গে সংগত হওয়ার মধ্যে কিছু লোকের এ ধারণার প্রতিবাদ রয়েছে যে, দুই ঈদের মধ্যবর্তী কালে (অর্থাৎ শাওয়াল মাসে) নববধূর সঙ্গে সংগত হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ার আশংকা থাকে। এ কারণে কেউ কেউ এ সময়ের মিলনকে না-পসন্দ করতেন। এ কথার কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের উক্তির” প্রতিবাদ করেই হযরত আইশা (রা) বলেন, : নবী (সা) আমাকে শাওয়াল মাসে বিবাহ করেছেন এবং শাওয়াল মাসেই আমার সঙ্গে সংগত হয়েছেন। সুতরাং তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে কে তার নিকট আমার চেয়ে প্রিয়তর? এ থেকে বুঝা যায় যে, হযরত আইশা (রা) বুঝতে পেরেছেন যে, নবী (সা)-এর স্ত্রীদের মধ্যে তিনি তার নিকট সবচেয়ে বেশী প্ৰিয়। তাঁর এ উপলব্ধি যথার্থ। কারণ, এর পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। প্রমাণ হিসাবে সহীহ বুখারীতে আমর ইবন আস (রা) থেকে বর্ণিত হাদীছ দুটিই যথেষ্ট। উক্ত হাদীছে আছে, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নিকট প্রিয়তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আইশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে বেশী প্রিয়? তিনি বললেন, আইশার পিতা।
১. আবু আসিম বলেন, : অতীতকালে শাওয়াল মাসে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণে লোকেরা এ মাসে স্ত্রী সংগমকে অশুভ কর্ম মনে করতো। তাঁর এ উক্তি ঠিক হয়ে থাকলে এ ধারণা দূর করার জন্যই তিনি শাওয়াল মাসে স্ত্রীদের সঙ্গে সংগত হন। ইবন সাআদ— তাৰকাত খ ৮, পৃ. ৬০
ইবন জারীর বলেন, ঃ কথিত আছে, এ বছর অর্থাৎ হিজরতের প্রথম বর্ষে মুকীম অবস্থার নামাযে দু’ রাকাআত করে বাড়িয়ে দেয়া হয়। ইতোপূর্বে মুকীম অবস্থায় ও সফরে নামায ছিল দু’ রাকাআত । আর এ ঘটনা ঘটে নবী করীম (সা)-এর মদীনায় আগমনের এক মাস পর রবিউছ-ছানী মাসের ১২ তারিখে। ইবন জারীর বলেন, ঃ ওয়াকিদীর ধারণা মতে হিজাযবাসীদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই।
আমার মতে, মামার সূত্রে হযরত আইশা থেকে বর্ণিত বুখারীর হাদীছ ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আইশ বলেন, ঃ প্ৰথমে নামায প্রতি ওয়াকত দুরাকাআত ফরয করা হয়। সফরকালে দু’ রাকাআত বহাল রাখা হয় এবং মুকীম অবস্থায় আরো দুই রাকাআত যোগ করা হয়। শা’বী সূত্রেও তিনি এ মর্মে হযরত আইশা (রা) থেকে হাদীছ বৰ্ণনা করেন। ইমাম বায়হাকী হাসান বসরী সূত্রে বর্ণনা করেন যে, মুকীম অবস্থায় শুরুতে চার রাকাআত নামায ফরয করা হয়। আল্লাহই ভাল জানেন। সূরা নিসা আয়াত—
واذا ضربنم فی الار ضد فلیس علی گم جناح آن تقصر و امن الصلوة. যখন তোমরা পৃথিবীতে সফর কর, তখন নামায কসর করায় তোমাদের কোন দােষ নেই। (৪ ঃ ১০১) এ আয়াতের তাফসীরে আমরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি।