মাঝরাত? না ভোরবেলা? বিকালবেলা না সন্ধ্যা? কী জানি মেঘলা দুপুরও হতে পারে। আবছা আন্ধারে ঘুটঘুটে কালা আন্ধার চলে গড়িয়ে গড়িয়ে, ওটা কী গো? কী! কুলসুম এতোক্ষণ দিশাই পায় নি। ওটা না তমিজের বাপ! তমিজের বাপের শরীরটা কয়েকদিনে একটু রোগা হয়েছে। আহারে! আধপেটা খেয়ে মানুষটা গেলো বিলের উত্তর সিথানে, আর ফিরলো না। যাবার আগে তার চুল ছিলো পাটের আঁশের মতে, কয়দিনে তাই ঘন হয়ে কেঁপে উঠেছে ঝাঁকড়া হয়ে। তার মাথায় আর দাড়িতে কী যেন চিকচিক করে, সেগুলি কি তার হাসির কুচি একরম হাসির কণা তো তমিজের বাপের মুখে কখনো দেখা যায়নি। জেয়াফত বাড়িতে ড়ুম ড়ুমা গোশত দিয়ে ভাত খেয়েও সে তো এতো খুশি কখনো হয়নি। তবে আজ এতো সুখ কিসের তার? মরার পর বেটার ভেতর ঢুকে পড়ে কি সে শরীরের স্বাদ এমন তারিয়ে তারিয়ে চেখে গেলো নাকি? দাড়ির: জঙ্গলে, চিকচিকে বালিতে তমিজের বাপ তাই কি এমন হেসে হেসে এভাবে ঘোরে? চেরাগ। আলিকে পেলে কুলসুম ঠিক জিগ্যেস করতো ও দাদা, মরার পরে মানুষ খাব দেখবার পারে? তমিজের বাপ এখন কী খাব দেখে? কী দেখিচ্ছে কও তো।
চেরাগ আলির দোতারার টুংটাং শোনা যায়। তার গানের প্রথম কথা শুনতে শুনতেই কুলসুম গলা মেলায় :
মরণ তাজ্জব বড়ো বুঝিবারে নারি।
তাজ্জব দ্রিাও সহোদর যে তাহারি।।
ভায়ে ভায়ে মোহাব্বত না বুঝি ফারাক।
সাপটিয়া থাকে যেন বীজ আর খাক।।
ও দাদা, খালি রহস্য করো কিসক গো? তমিজের বাপ এখন খেয়াৰ দেখে?
হাতের দোতারার টুংটাং অব্যাহত রেখে চেরাগ আলি বলে, তমিজের বাপ খোয়াব দেখিছে কুনোদিন? মানুষটা তো খোয়াবের মধ্যেই আছিলো! কুলসুম অবাক হয়ে দাদার দিকে তাকিয়ে থাকলে চেরাগ আলি বলে, তাই খোয়াব দেখবি ক্যাংকা করা? মরার পর তমিজের বাপ আসিচ্ছে তোর খোয়াবের মদ্যে, বুঝলু?
কুলসুমের বোঝ না বোঝার পরোয়া না করে ফকির শোলোক গায়,
নিন্দে জীব বিচরয় স্বপনে স্বপনে।
খোয়াব দেখায় মুর্দা নিজ প্রিয়জনে।।
গাইতে গাইতে চেরাগ আলি দোতারা বাজায় খুব দ্রুত লয়ে, দুনিয়া বাজে ঝমঝম করে। শোলোকের তালে দুলতে দুলতে তমিজের বাপ চলে যায় বাশঝাড়ের দিকে। তার দাড়ি আর চুলে হাসির কণা চিকচিক করে।
শোলোক তমিজের কানে না গেলেও তার ঘুম ভেঙে যায়। কাঁথার নিচে লুঙি গুছিয়ে নিতে নিতে বিছানা থেকে উঠে আড়চোখে সে তাকায় কুলসুমের মুখে। অন্ধকারেও বোঝা যায়, তার ঠোঁটের কোণে থুথুর মতো সেঁটে রয়েছে হাসির কুচি। তার একটা হাত জড়ানো ছিলো তমিজের গলায়। তমিজ উঠে বসলে হাতটা আস্তে পড়ে যায় কাথার ওপর। সেখানেও তমিজের পায়ের ওম। কিন্তু তমিজ বড়ো উসখুস করে, ঘুমের আগে কীভাবে যে কী হয়ে গেলো! মাথাটা তার নিচের দিকে ঢলে পড়ে। অন্ধকারেও সে তাকাতে পারে না কুলসুমের দিকে। ঢলে-পড়া মাথাটা নিচু করে তমিজ উঠে দাঁড়ায় মেঝেতে এবং ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে যায় দরজাটা আস্তে করে ভেজিয়ে দিয়ে। নিজের ঘরে। গিয়ে শোয়, কিন্তু ঘুম আর আসে না। ভোর হওয়ার আগেই বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
সেদিন মোষের দিঘির পুবের জমিতে ধানখেতে তমিজের কাস্তের পোঁচ পড়ে এমন তেজে যে দেখতে দেখতে তার আঁটির পরিমাণ হয়ে যায় পাহাড় সমান, হুরমতুল্লা বলে, কেটা কবি চাষার ঘরের মানুষ তুই লোস!
খুশি হয়ে তমিজ ফুলজানকে তার নিকার কথাটা বলতে চায়। ফুলজানও একটু দূরে থেকে তাকিয়েছিলো তার ধানের দিকে। তার ঘ্যাগটা আজ বড়ো বেঢপ বড়ো, কুলসুমের গলার ওই জায়গাটা বড়ো মসৃণ, ওখানকটায় গাল দিলে বডেড়া আরাম লাগে। কিন্তু যতোই সন্ধ্যা হয়, বাড়ির দিকে মেলা করতে তার পা আর ওঠে না। অতো সুন্দর মসৃণ গলা সত্ত্বেও কুলসুমকে দেখতে তার ভয় ভয় করে। হুরমতুল্লার বাড়ির উঠানে একটার পর একটা কাজ হাতে নেয়, শেষকালে একবার গুণে-রাখা ধানের আঁটি সে ফের গুণতে শুরু করলে ফুলজান এসে দাঁড়ায় তার পাশে, বাড়িত যাবা না? মাও তোমার একলা আছে না বাড়িত? ফুলজান কুলসুমকে তার মা বলায় তমিজের গা ছমছম করে, তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসে, গলা শুকিয়ে যায়। ফুলজান ফের বলে, মরার বাড়ি, এখনো চল্লিশ দিন হয় নাই। তোমার মাও একলা থাকলে ভয় করবি না? বাড়িত যাও।
পাকুড়তলায় এখন তো মানুষ কিছু না কিছু থাকেই, ইটের ভাটা সেখানে জমজমাট। কিন্তু চোরাবালি এড়াতে তমিজ বাড়ি যায় একটু ঘুরে। বাপের যে হাত এখান থেকে তার লুঙি উঠিয়ে দিয়েছিলো সেই হাতই যদি সাঁড়াশি হয়ে চেপে ধরে তার গলা? ইটখোলার এক পাশে তমিজ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে দুইজন পশ্চিমা মিস্ত্রি তাকে দেখে আফসোস করে, আহা, বাপের টানে ছেলেটা রোজ একবার এখানে আসে। একজন তাকে জানায়, তার বাপ প্রত্যেক বাত্রে বড়ো আওয়াজ করে। সংসারের টান সে এখনো কাটাতে পারে নি।
বাপের দুনিয়ার মায়ার কথা শুনে তমিজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে। কুলসুমের দিকে তাকাতে তার ভয় হয়। ভাত দিছি। ভাত খাও। কুলসুমের এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে খিদে পেটে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে, ভাত খায়া আসিছি। তার পিছে পিছে কুলসুমকে আসতে দেখে সে দরজা ভেজিয়ে দেয় ভেতর থেকে।
চোরাবালির ভেতর থেকে তমিজের বাপ আজকাল রোজ রোজ আসে, কুলসুমের। সঙ্গে এটা ওটা কথাও বলে। তা মানুষটা আগের মতোই আছে, কথাবার্তা তেমনি কম। তবে রোগা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে কেমন খুশি খুশি দেখায়। সন্ধ্যার অনেক পরে বাড়ি ফেরে তমিজ। কিন্তু ভাত খেতে বসলে কুলসুমের সারা দিনের বৃত্তান্ত তাকে শুনতেই হয়। বাপের খুশি থাকার খবরে তমিজ একটুও খুশি হয় না। মরা মানুষ প্রতিদিন জীবিত মানুষের খোয়বে আসবে কেন? লক্ষণ তো ভালো নয়। কুলসুমকে কী তমিজের বাপ চোরাবলির ভেতরে টেনে নেবে নাকি? শাস্তিই যদি দিতে চায় তো তমিজ বাদ পড়ে কীভাবে?
মাথা নিচু করে তমিজ ভাত খায়, ভাত খেয়েই জোর করে হাই তুলতে তুলতে নিজের ঘরের ভেতর ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দেয়। কুলসুমের মসৃণ গলাটা বারবার দেখতে ইচ্ছা করলেও সে দিকে তাকায় না।
ওদিকে শরাফত মণ্ডলের বাড়ি থেকে ফিরে হুরমতুল্লা একদিন খুব খুশি। জগদীশ সাহার এক দাগে বারো বিঘা জমি মণ্ডল পানির দামে কিনে ফেললো। রেজিষ্ট্রি করা হয়ে গেছে। কালাম মাঝি ভালো করে খবর পাবার আগেই আজিজকে নিয়ে মণ্ডল সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে ফেলেছে। মণ্ডলের সাফল্যে হুরমতুলা অনেকদিন পর হাসে, কাশিতে তার গলা বন্ধ হয়ে এলেও হাসি তার আর যায় না।
তমিজ কিন্তু গম্ভীর। হুরমতুল্লার কাশির দমক কমলে তমিজ বলে, জমি তুমি কিছু রাখবার পারলা না? এতো সস্তা!
হুরমতুল্লা হঠাৎ চুপ করে, তারপর আস্তে আস্তে বলে, পানিত বাস করি, কুমিরের সাথে লাগা ভালো লয়। মণ্ডলের ভাগত মুখ বসাবার যায় মাঝিপাড়ার কী দশাটা হলো, তুই বুঝিস না?
তমিজ অবশ্য বোঝার চেষ্টাও করে না। সে বরং তার পরিকল্পনা বোঝায় হুরমতকে হুরমত তো এখন ব্যস্ত থাকবে মণ্ডলের নতুন জমি নিয়ে, সে তো খালের পুবে। তো হুরমতুল্লার বাড়ির পেছনে তার পালানের জমিটা তমিজকে বর্গা দিক না। সবটাই দিক। চার বিঘার ওপর জমি, জমিতে তমিজ সোনা ফলিয়ে ছাড়বে। এই জমির ফসল বেচেই হুরমত নতুন জমি কিনতে পারে। এমন কি, তমিজ ভাগে যা পাবে তাই দিয়ে সে মণ্ডলের কাছ থেকে তার ভিটার লাগোয়া জমি ফেরত না-ও পায় তো অন্তত কালাম মাঝির হাত থেকে ভিটাটা উদ্ধার করবেই। লাঙল দিলে জমি তার বশে থাকে, তমিজ কভো ধান তোলে হুরমতুল্লা নিজেই দেখতে পাবে।।
তার কথা শুনতে শুনতে হুরমতের চোখ চকচক করে, নিশ্বাস ফেলে সে বলে, হামিও পারিচ্ছিলাম রে, এখন শরীলেত কুলায় না।
তুমি করবা কিসক? তুমি মণ্ডলের জোতের দেখাশোনা করো। তমিজ তাকে আশ্বাস দেয়, তোমার বিটি আমার সাথে থাকলে জমিত হামি কী করি তুমি দেখো। নিজের কথাতেই বুকে বল পায় সে, বিটিক তো তোমার লিকা দেওয়াই লাগবি। ইংকা রাড়ি করা রাখবার তো আর পারবা না। তা হামার সাথে!
মাঝির বেটার সাথে লিকা দিলে মানষে আবার? হুরমতুল্লার গলায় আগের তেজ নাই। তমিজকে রাখতে পারলে জমির ফসল সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়। ফুলজানটা তার বড়ো হতভাগী। মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে গেলেই তার বুক পোড়ে। তা তমিজের সঙ্গে তার নিকা হলে মেয়েটার মুখ আন্ধার থাকে না। হুরমতুল্লা আস্তে আস্তে বলে, হামার সমাজ আছে একটা বুঝিস তো? দেখি, সোগলির সাথে কথা কয়া।
কিন্তু শরাফত মণ্ডলের অনুমতি চাইতে গেলে মানুষটা গম্ভীর হয়ে বলে, হুরমতুল্লা, তোমার বিটি তুমি কাটো, তুমি মারো, যার কাছে খুশি তুমি তার হাতে দিবা। হামার কী? কিন্তু এরপর তার গলা চড়ে, কিন্তু ঐ বিটিজামাইক লিয়া তুমি এটি থাকলে হামার ইজ্জত থাকে কুটি? একটু থেমে সে ধীরেসুস্থে বলে, এখন আল্লা হামার অবস্থা ভালো করিছে। কিন্তু তোমার সাথে রক্তের সম্পর্ক তো আর বাদ দিবার পারি না। মাঝির বেটার সাথে তুমি কুটুম্বিতা করলে হামার ইজ্জত থাকে কুটি? হামার জমির তদারকি তুমি করবা। তোমাক কিসক দেই?–না, তুমি আমার আত্মীয়, না কী? তার সাথে তুমি আত্মীয়তা করলে তোমার সাথে হামি সম্পর্ক রাখি ক্যাংকা করা? তুমিই কও।
হুরমতুল্লা, কিন্তু তমিজকে এসব কিছুই বলে না। ফুলজানের ব্যাপারে তাকে একেবারে না করে দিতে হুরমতুল্লা মন থেকে সায় পায় না। ছোঁড়াটাকে দিয়ে তার জমির আয় উন্নতি হচ্ছে, তা হোক না! ফুলজানের পেছনে সে ঘুরবে আর কতদিন? নিজে নিজেই একদিন কেটে পড়বে। ছোঁড়াটাকে জামাই করে নিজের কাছে রাখতে পারলে ভালো হতো। তবে মণ্ডল সহ্য করবে না। ভিটামাটি থেকে তাকে উচ্ছেদ করবে না ঠিকই, কিন্তু মণ্ডলের এতোগুলো জমি বর্গা করা, বর্গাদারদের ওপর খবরদারি করা। এসব তার বন্ধ হয়ে যাবে। শরাফত তার সঙ্গে আত্মীয়তার কথাটা এভাবে বললো, তাতেও হুরমতের বুকটা একেবারে ভরে গেছে। তার মানে আবদুল আজিজ, আবদুল কাদের আর সে একই বংশের মানুষ। আজিজ কাদের এদের ছেলেরা সব বড়ো অফিসার। হবে। তারাও তার আত্মীয় হবে। মাঝির বেটার হাতে বেটিকে তুলে দিয়ে হুরমতুল্লা বংশের ইজ্জত হারায় কী করে?
এসব নিয়ে তার মাথার কামড়াকামড়ি অবশ্য হুরমতুল্লা খুব একটা টের পাচ্ছে না। কেন?-বুড়া বয়সে মণ্ডল তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তাই দেখতে তাকে দিনমান থাকতে হয় বাইরে বাইরে। হামিদ সাকিদার জগদীশের কিছু জমি কিনে নেওয়ার পর নিজেই এখন জোতদার, তার বর্গা খাটে বেশ কয়েকজন চাষা। হুরমতুল্লার কাজ এখন অনেক।
তমিজের ওপর ভরসা না করে তার আর উপায় কী? হুরমতুল্লার জমি সে বর্গা তো করেই, এর ওপর মোষের দিঘির পুবে মণ্ডলের জমিটার খাটাখাটনি বেশিরভাগ করতে হয় তাকেই। শমশের হয়েছে হুরমতুল্লার বড়ো কামলা। কিন্তু বেলা ডোবার আগেই তার বাড়ি ফেরা চাই; সন্ধ্যা হতেই তার জ্বর আসে, জ্বর একবার এসে পড়লে হাঁটতে তার ভারি কষ্ট। ওই জমি থেকে পেঁয়াজ আর মরিচ তোলা হলো, এখন চলছে আউশ বোনার জন্যে জমি তৈরি। এই গরমে অবশ্য সন্ধ্যার পর ওখানে কাজ করতে তমিজের ভালোই লাগে। ওই সময় মানুষজন থাকে না, ফুলজান এসে একটু আধটু হাত লাগায়, তবে ভুল। ধরে অনেক বেশি। চৈত্রের এক সন্ধ্যায় মোষের দিঘির ঢালে দাড়িয়ে তমিজ বলে, তুই কি খালি হামাক ইংকা হেলাই করবু? এতো করাও হামি মাঝির বেটাই থাকি? ফুলজান বসে পড়েছে মোষের দিঘির পুবের ঢালে। সে সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঝামটা না দেওয়ায় তমিজ হয়তো একটু দমেও যায় আবার একটু লাইও পায়, সে তোলে তার মরা বেটার কথা, হামার কাছে থাকলে তোর বেটা ওংকা কর্যা মরে? কৈ, গেরস্থ চাষার ঘর তো করলু। তাও আবার ল্যাখাপড়াজানা মানুষ, শোলোক বান্দে, বই বেচে। সেই মানুষটা কী করলো?
তার কথায় ফুলজান এই প্রথম বড়ো বিচলিত হয়, তার পায়ের নিচে মাটি কঁপে, কাঁদতে কাঁদতে সে বলে, হামার নসিব! তুমি মাঝির বেটা হলা কিসকঃ তমিজ তার গা ঘেঁষে বসে পড়লে ফুলজান তার বুকে হঠাৎ করে কিল মারে আর অভিযোগ করে, তুমি মাঝির ঘরত জর্ম লিলা কিসক? কিসক? কিসক?
এই কঠিন প্রশ্নের জবাব নিয়ে তমিজ মাথা ঘামায় না। ফুলজানের কিল খেতে খেতেই সে তাকে জড়িয়ে ধরে দুই হাতে। মোটা ঠোঁটে ফুলজানের চোখের নোনতা পানি চুষে নিতে নিতে নুনের ধকে তার সারা শরীর জ্বলে। ফুলজানের গালে, ঠোঁটে ও ঘ্যাগে অবিরাম মুখ ঘষতে ঘষতে সে তাকে নিয়ে শুয়ে পড়ে মোষের দিঘির ঢালে। তাদের কয়েক হাত পরেই চৈত্রের খরখরে চষা জমি। তাদের মাথার কাছে হুরমতুল্লার জোড়া বলদ। আকাশে তারা ফোটে। ফুলজান নিজের শাড়ি গুছিয়ে নিতে নিতে বলে, মাঝির বেটা, কাপড়খানা ছিড়া ফালালা।
অনেকদিন পর সেদিন বাড়ি ফিরে তমিজ কুলসুমের সঙ্গে খুব গল্প করে তার মুখের . দিকে সোজা তাকিয়ে। তমিজের বাপ নাকি অনেক রাত্রে রোজই কুলসুমের কাছে একবার না একবার আসে। তমিজ কিন্তু ভয় পায় না; বরং খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিগ্যেস করে বাপের কথা।