পৌরুষিক অত্যাচার
১. ওরা আমাদের বাড়িতে বেলপাতা নিতে আসত পুজোর জন্য। ওদের লক্ষ্মীপুজোয় খেতে গিয়েছি তিলের নাড়ু, নারকেলের বরফি। খুব ভোরে ওরা ফুলের ঝুড়ি ভরে নিয়ে গেছে আমাদের লাল মাধবীলতা। দুর্গোৎসবে আমরাও দল বেঁধে সন্ধেয় বেরিয়েছি পুজো দেখতে। বিসর্জনের রাতে দেবীকে আরতি দিয়েছি। ওরা আমাদের ঈদের দুপুরে পোলাও কোর্মা খেয়েছে। কই, কারও কোনও অসন্তোষ তো দেখিনি।
মানিকগঞ্জে কালিগঙ্গার ধারে একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম। স্কুলের মাঠে সরস্বতীর পূজোমণ্ডপ। ওই স্কুলে দল বেঁধে মুসলমান ছেলেরা পড়তে আসে। কই, কেউ তো ঢ়িল ছুড়ে সরস্বতীর কপাল ফুটো করেনি।
ভারতের অযোধ্যায় মসজিদ নিয়ে গণ্ডগোল হয়, আর এদেশে মুসলমান নামের কাফের নিরীহ হিন্দুদের অবলীলায় জবাই করে, দোকানপাট ঘর-বাড়ি লুঠ করে। আমার বাড়ির পাশের মন্দিরগুলো গুড়ো হয়ে গেছে, মন্দিরের একটি ভাঙা টুকরো কুড়িয়ে এনেছি—দেখে আমার মা আঁতকে উঠেছেন। তিনি বুঝতে পারেননি এটি মসজিদ না মন্দিরের টুকরো।
(ধর্মের দালান কোঠা যদি মানুষে মানুষে ভালবাসা নষ্ট করে তবে এই পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যাক মন্দির, মসজিদ, গির্জা ও প্যাগোডার সকল অস্তিত্ব। ইট-সুরকির চেয়ে মানুষ বড়। ইট-সুরকির চেয়ে ভালবাসা বড়।)
২. চার-পাঁচজন পুরুষের একের পর এক একটি মেয়েকে ধর্ষণ করবার ঘটনাকে লোকে ‘পাশবিক অত্যাচার’ বলে। আমি এই ক্ষেত্রে পাশবিক শব্দটিতে বড় আপত্তি করি। পশুর মত আচরণকে পাশবিক বলা হয়। কিন্তু আমি নিশ্চিত, চার পশু একত্র হয়ে যত নিচেই নামুক, এত নিচে নামে না—যত নিচে পুরুষেরা নামে। তাই এ ধরনের অত্যাচারকে ‘পৌরুষিক অত্যাচার’ বললে অত্যাচারের নির্মমতা ভাল আন্দাজ করা যায়।
৩. তৃতীয় বিশ্বে পিতা ও স্বামীর উত্তরাধিকার ছাড়া নারীরা রাজনীতির নেতা হতে পারে না। নারী, সে যদি মানুষ হয়, সে যদি শক্তিমান হয়, তবে কোনও উত্তরাধিকার ছাড়া সে রাজনীতি করুক, আর সেই রাজনীতি নারীকে স্বতন্ত্র করুন, অন্যের জনপ্রিয়তার লেজ ধরে তৃতীয় বিশ্বের নারী আর এগোবে কতদূর? এবার সময় এসেছে থামার। নারী নিজ কণ্ঠে তুলে নিক নিজের শ্লোগান, নারী নিজ হাত মুষ্টিবদ্ধ করুক, তর্জনী যদি তোলে একবার নিজস্ব তর্জনী তুলুক।