নীলগঞ্জ থেকে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ বাসেতের তার মাকে লেখা (তারিখবিহীন) চিঠি।
আমার অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার
মা
আসসালাম। মা, মেজর সফদর জামিলের মাধ্যমে পাঠানো আপনার পত্র যথাসময়ে পাইয়াছি। আপনি যে কিসমিস ও চিলগোজা পাঠাইয়াছেন তাহাও পাইয়াছি। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
আমি ভালো আছি। আমাকে নিয়া দুশ্চিন্তার কোনোই কারণ নাই। দুষ্ট বাঙালিদের আমরা শায়েস্তা করিয়াছি। অল্পকিছু ইন্ডিয়ার দালাল বিভিন্ন স্থানে উৎপাতের চেষ্টা করে। তবে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে তারাও কুকুরের মতো লেজ গুটািইয়া পালাইতেছে। সেই দিন আর দূরে নাই যেদিন পূর্ব পাকিস্তান হইতে সমস্ত কুকুরকে আমরা জাহান্নামে পাঠাইব।
বর্তমানে আমার পোস্টিং নীলগঞ্জে। আমি মোটামুটিভাবে এই পোস্টিং-এ ভালো আছি। অত্র এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি। ইহাতে আমাদের কিছু লোকক্ষয় হইয়াছে। কিন্তু তাহাদের ক্ষতির পরিমাণ সঙ্গত কারণেই বহুগুণে বেশি।
আমাদের প্রচলিত ধারণা বাঙ্গালি সাহসী না। এই ধারণা সঠিক না। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মাত্র দুইজনের একটা ক্ষুদ্র দল অতর্কিতে আমাদের ক্যাম্পে চুকিয়া পড়ে। তাহাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাকে হত্যা করা। তারা সেই কাজ করিতে পারে নাই, তবে আমাদের কিছু ক্ষতি করিয়াছে।
আপনি কোনো চিন্তা করিবেন না। পরদিন দুপুরেই রিএনফোর্সমেন্টের ব্যবস্থা হইয়াছে। আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সাবধান।
মা, এখন আপনাকে একটা জরুরি বিষয় বলি। জেনারেল বেগের সঙ্গে আপনার ভালো পরিচয় আছে। আমি যতদূর জানি উনার সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তাও আছে। আপনি উনার মাধ্যমে আমাদের চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল গুল হাসানকে অনুরোধ করাইবেন যেন আমি দেশে ফিরিয়া আসিতে পারি। আপনি মনে করিবেন না যে, আমি ভীত বলিয়া দেশে ফিরিতে চাইতেছি। আমি মোটেই ভীত নেই। দেশে ফিরিতে চাইবার প্রধান কারণ— এইখানে আমার স্বাস্থ্য টিকিতেছে না।
অতি জঘন্য এই দেশ। শুকনায় থাকে সাপ। পানিতে সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর এক প্ৰাণী, তার নাম জোঁক। এই জোঁকের প্রধান খাদ্য মানুষের রক্ত।
রাইফেলের সাহায্যে শক্রির মোকাবেলা সম্ভব কিন্তু জোঁকের বা সাপের মোকাবেলা সম্ভব না।
মা, আপনি যেভাবে পারেন আমাকে ওয়েস্টার্ন কমান্ডে ট্রান্সফারের ব্যবস্থা নিবেন। আমার বড় চাচি হয়তো এই বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করিতে পারেন। বড় চাচিকে আমার সালাম। বোন রেহনুমাকে আমার আদর ও স্নেহ। তাহার বিবাহের দিন কি ধাৰ্য হইয়াছে?
মা, আপনি আমার জন্যে দোয়া করুন। কিছুদিন হইল। মন এবং শরীর কোনোটাই ভালো যাইতেছে না।
ইতি
আপনার আদরের ছোট ছেলে
ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ বাসেত