অনুরোধ – আহমদ নদিম কাসমি
পাড়ার বড় গলির মোড়টায় সবসময় তিন-চারটা টাঙ্গা দাঁড়ানো থাকে। কিন্তু আমি সেদিন মোড়ের কাছে এসে দেখলাম একটা টাঙ্গাও নেই। আমাকে যেতে হবে অনেক দূর আর আমাকে খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছুতে হবে। তাই বসে বসে টাঙ্গার প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থাকলাম। অনেক টাঙ্গা এ পথে যাওয়া-আসা করছে কিন্তু সবগুলোই যাত্রী বোঝাই। এ সময় হঠাৎ ফিকে কোচওয়ানকে আমার দিকে আসতে দেখে বললাম, ‘ভাই ফিকে, টাঙ্গা কোথায়? টাঙ্গা নিয়ে এস না।’
‘বাবু টাঙ্গা তো আজ জুড়িনি।’ ফিকে জবাব দিল।
দেখলাম যে ফিকা কোচওয়ান বেশ শক্ত সামর্থ্য তাগড়া জোয়ান ছিল– আজ তাকে কেমন নিরীহ নিরীহ মনে হচ্ছে, যেন এ লাইনে সে এই প্রথম এসেছে। সে আজ শেভ করেনি। তার চোখজোড়ায়ও আজ সুরমা পড়েনি এবং পালকহীন পক্ষিশাবকের মতো রক্তিম হয়ে আছে।
‘কী ব্যাপার ফিকা!’ আমি জিগ্যেস করলাম।
সে বলল, –‘বাবু একটা কাজ আছে।’
‘হাঁ হাঁ, বল।’ আমি বললাম।
‘কাজ হল বাবু, আপনি আমার বাবাকে তো চেনেন?’ ফিকে বলল, ‘তার একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।’
‘উহ্’–আমি বড় ব্যথিত হলাম, ‘কী করে নষ্ট হল– কোনো দুর্ঘটনা?’
‘জী না– ‘ ফিকের চেহারায় একটা উদাস নির্লিপ্ততা ফুটে উঠল।
‘লাল তো সবসময়েই থাকে এবং চোখ ফেটে পানিও সবসময়ে গড়িয়ে পড়ে। আপনি তো জানেন। বাবার সাথে কয়েকবার তো আপনি টাঙ্গায়ও বসেছিলেন। তো বাবু কাল হল কী, বাবা মিছরি শহরের পথ দিয়ে আসছিলেন, সেখানে প্রতিদিন যে হাকিমটি সান্ডার তেল বিক্রি করত, সে আজ সুরমা বিক্রি করছিল। বাবা সে সুরমা নিয়ে এলেন। এবং আমাকে বললেন– ‘এতে চোখের লালিমা দূর হবে। হাকিম খোদা এবং রসুলের কসম খেয়ে বলেছে, এবং এ-ও বলেছে যে, যদি লালিমা দূর না হয় তাহলে কেয়ামতের দিন তুমি আমার ঘাড় ধর।’ তা আমিও বললাম, ‘হাকিম যখন খোদা এবং রসুলের কসম খেয়ে বলেছে আপনিও একটু লাগিয়ে দেখুন না।’ আম্মাও এই পরামর্শ দিলেন। তিনি ‘লোকমান হাকিম হেকমতের রাজা’ বলেই চোখে সুরমার শলা ঘুরিয়ে দিলেন। বাস আর যায় কোথা– বাবু কসম খেয়ে বলছি সেই যে চোখ বন্ধ হয়েছে– এবং যে কষ্ট, যেন তার নয় আমার–। বাবুজি, আপনার অসুবিধা হচ্ছে না তো? সিগ্রেটওয়ালার চেয়ারটা আনব নাকি?’
এ-সময় ফিকাকে আমার কাছে মনে হল যেন তার চওড়া বুক কুঁচকে গেছে।
আমি বললাম– ‘তুমিও বড় বাড়াবাড়ি করছ। তারপর কী হল বলে যাও না।’
ফিকার চোখে-মুখে কৃতজ্ঞতার ছায়া প্রকাশিত হল এবং সে বলল– ‘বাস– বাবুজি, খোদা আপনার ভালো করুন। রাত তো যাহোক বাবা কান্নাকাটি করে শেষ করলেন।
পরে সকালে সব কোচওয়ান এসে জড় হল। তাদের মধ্যে থেকে চাচা শায়দে বলল ‘তুলোর কোষ পিষে দিয়ে চোখ পরিষ্কার কর।’ তার কথামতো চোখ পরিষ্কার করলাম কিন্তু বাবা সেই আগের মতো কাতরাতে থাকলেন। আবার একজন বলল, ‘পালক পিষে চোখে বেঁধে দাও।’ তাই বাঁধলাম। পরে চোখ খুললে বাবা বললেন– ‘এত চেষ্টা আর কেন করছ, চোখের জ্যোতি তো চলে গেছে।’
‘তাকে দুটো হাসপাতালে নিয়ে গেলাম কিন্তু একটাতেও জায়গা পেলাম না। দুপুরে, রাজগড়ের এক কোচওয়ান বলল তার শালা নাকি মেও হাসপাতালের চৌকিদার। তার অনুরোধে জায়গা যাহোক একটা পাওয়া গেছে। তবে বারান্দাতে। হোক, তবুও কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু বাবু, সন্ধ্যা হতে চলল অথচ ডাক্তার দূরে থাকুক কোনো নার্সও এ দিকে আসেনি। আপনি তো সাহেব মানুষ, এ দেখুন, দুহাত জোড় করে অনুনয় করছি আমার সাথে চলুন। নিষ্পাপ রুগীটাকে একটু দেখে আসবেন।’
আমি বললাম, ‘ওখানে একজন ডাক্তার আছেন, ডাক্তার আবদুল জব্বার। তাঁকে আমার সালাম বলগে। যাও, কাজ হয়ে যাবে। আর যদি না হয় তাহলে কাল আমি তোমার সাথে যাব। এখন আমাকে একটা দাওয়াতে যেতে হবে। নাম মনে রেখ, ডাক্তার আবদুল জব্বার।’
ফিকা আমার প্রতি অজস্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিদায় নিল। পরে একটা খালি টাঙ্গা পেয়ে গেলাম। টাঙ্গা মেও হাসপাতাল অতিক্রম করাকালে দেখলাম, ফিকা হাসপাতালের এক চৌকিদারের সাথে কথা বলছে। বোধহয় সে ডাক্তার জব্বারের ঠিকানা জিগ্যেস করে নিচ্ছে।
একবার ভাবলাম, হাসপাতালে গিয়ে জব্বার সাহেবকে বলি কিন্তু তখন টাঙ্গা অনেকদূর চলে এসেছে। তাছাড়া আমার এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
কিছুদূর গিয়ে ঘোড়া হঠাৎ পা ফসকে পড়ে গেল। প্রায় দশ মিনিটকাল পড়ে থাকল ঘোড়া। পরে উঠে যখন আবার চলতে শুরু করল তখনি দেখলাম, হঠাৎ জব্বার সাহেবের
স্কুটার আমার টাঙ্গার পাশ কেটে চলে গেল।–‘জব্বার সাহেব’–আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। কিন্তু জব্বার সাহেব আমার চিৎকারের চাইতেও দ্রুত চলে গেলেন।
কোনো চিন্তা নেই, আমি ভাবলাম কাল গিয়ে বলে দেব। কাল প্রথম কাজই করব এটা।
রাতে বাসায় প্রত্যাবর্তন করে শুনলাম, ফিকা কোচওয়ান এসেছিল এবং বলে গেছে, ‘বাবু আসলেই যেন আমাকে খবরটা দেয়।’
আমি ভাবলাম, এ-সময় তাকে আবার কে ডাকে। যদি জব্বার সাহেব হাসপাতালে গিয়ে থাকেন এবং যদি ফিকার কাজ হয়ে থাকে, তাহলে তার কৃতজ্ঞতা সকালেই না হয় কবুল করে নেব। আর যদি কাজ না হয় তাহলে যখনি যে চেষ্টা চালানো দরকার সকালেই চালাব।
সকালে আমি তখনো বিছানা ছাড়িনি– হঠাৎ ফিকা এসে দরজায় নক্ করল।
ফিকা জানাল– ‘রাতে জব্বার সাহেবের ডিউটি ছিল না। আজ দিনেই তাঁর ডিউটি।’
‘অর্থাৎ, তোমার বাবা ডিসেম্বরের এই কনকনে শীতের মধ্যে বারান্দাতেই পড়ে আছে?’ আমার কণ্ঠে দুশ্চিন্তা প্রকাশ পেল।
‘জি হাঁ’– সে বলল– ‘কিন্তু এ আর এমন কী বাবুজি। আপনি তো আমাদের ঘর দেখেননি। দশ বছর থেকে স্যাঁতসেঁতে কুঁড়েঘরে পড়ে আছি।’
‘আর তাঁর চোখ?’ আমি জিগ্যেস করলাম।
‘সে তো চলে গেছে বাবু!’ ফিকা এমনভাবে বলল– যেন বছরখানেক হল তার বাবার চোখ চলে গেছে।
আমি বললাম– ‘চোখ যখন চলেই গেছে তখন কেন খামাখা বেচারা বুড়োকে হাসপাতালে টানাটানি করছ। সময় নষ্ট হবে, টাকা পয়সাও নষ্ট হবে।’
ফিকা বলল– ‘বাবুজি, কে জানে যদি চোখের কোনো অংশে ক্ষীণ একটুখানি দৃষ্টিশক্তি থেকে থাকে। দেখুন বাবুজি উনুন নিবে যায়। কিন্তু অনেকক্ষণ পরেও যদি ছাইয়ে হাত দেয়া না হয় তবে বুঝা যায় না কোনো জ্বলন্ত অঙ্গার অবশিষ্ট আছে কিনা।’
আমি এ কথায় চমকে উঠলাম। এতদিন পর্যন্ত ফিকা আমার সাথে শুধু চালের উচ্চমূল্য এবং আটার ভেতর ভেজাল মিশ্রণ সম্বন্ধেই কথাবার্তা বলত– পরে সে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলল– ‘বাবুজি একটু চলুন না আমার সাথে।
শরীর থেকে তখনো আমার ঘুমের রেশ পুরোপুরি কাটেনি। আরো একটু ঘুমানো দরকার। তার ওপরও শেভ করা, চা-নাস্তা করা– সুতরাং আমি বললাম– ‘আমি তোমাকে নিজের কার্ড দিচ্ছি। তা ডাক্তার জব্বারকে দেখিও। বড় বন্ধুমানুষ, তাড়াতাড়ি কাজ করে দেবে। তোমার বাবা একেবারে ওয়ার্ডে চলে যাবে আর ওষুধ-পত্রের জন্যে তো আমি গিয়েই বলব।’
সে আমার কাছ থেকে কার্ড নিয়ে এমনভাবে চলল যেন পৃথিবীর তাবৎ ধনদৌলত একত্রিত করে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কার্ডে লিখে দিয়েছি, ‘জব্বার সাহেব! এর কাজটা করে দেবেন, বেচারা বড় গরিব, দোয়া করবে।’ আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস কাজটা হয়ে যাবে। ডাক্তারদের শুধু এতটাই দেখা– চোখ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে– না কিছু ঔজ্জ্বল্য বাকি আছে।
আমি সারাটা দিন বাইরে বাইরে ছিলাম আর ফিকা সারাদিন আমার বাড়ির চারদিকে চক্কর দিয়ে ফিরছিল। সন্ধ্যায় সে আমাকে বলল, ‘জব্বার সাহেব চেম্বারে বসেছিলেন, তবে ভেতরে ঢুকতে দিলেন না। বলেন, পালাক্রমে এস। অনেকক্ষণ বসেছিলাম, কিন্তু আমার পালা আসেই না। তাই হাঁটু গেড়ে বসে লুকিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম পালা কীভাবে আসে বাবু।’
ফিকা আরেকবার আমাকে চমকিয়ে দিল। জানি না, পলোয়ান ফিকার ভেতরে এই অনুভূতিশীল ফিকাটা এত বছর কোথায় লুকিয়ে ছিল।
আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, কাল নিশ্চয়ই যাব। এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
পরদিন অতি প্রত্যূষেই আমার হঠাৎ শিখুপুর যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। রাতে প্রত্যাবর্তন করে জানতে পারলাম, ফিকা এসেছিল।
এরপর তিনদিন পর্যন্ত দীর্ঘসময় আমি ঘরেই কাটালাম। কিন্তু ফিকা আসেনি। চতুর্থ দিন আমি গলির মোড়ে এক কোচওয়ানকে জিগ্যেস করে জানতে পারলাম তার বাবা ওয়ার্ডে জায়গা পেয়েছে। এ-সময় ফিকাও আমার সামনে এসে উপস্থিত হল। তাকে দেখেই আমার লজ্জা লাগল। অতএব একটু মিথ্যা বলতে হল ‘কেমন ফিকা, জব্বার সাহেব কাজ করে দিয়েছেন না?’
সে বলল,–‘কিন্তু বাবুজি, তিনি তো আমার সাথে দেখাও করেননি।
আমি তৎক্ষণাৎ বললাম, ‘আমি তাঁকে ফোন করেছিলাম।’
ফিকার চেহারায় রক্তিমাভা দেখা দিল। এবং তার চোখে-মুখে কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠল– ‘তাই তো আমি বলি, নার্স কেন বারবার শুধু বলেছিল দেখ বুড়োর যেন কোনো কষ্ট না হয়।’
পরে আমি ওখান থেকে চলে এলাম। যদিও আমার পা আস্তে আস্তে চলছিল কিন্তু চিন্তাশক্তি যেন হেরে গিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল।
রাতের প্রশস্ত নিদ্রা আমার লজ্জাভাবের কিছুটা লাঘব করেছে। কিন্তু সকালেই দেখি ফিকা আমার দ্বারে উপস্থিত। বলল– ‘আপনার অনুগ্রহে প্রবেশপত্র পেয়েছিলাম। তা তারা বাবাকে এখন কোটি লাখপতিদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ তো বড় সর্বনাশ হয়ে গেল বাবুজি। আজ আমি মাকে সাথে নিয়ে গেছিলাম দুটা টাকাই মাটি হল। কিছু হয় যদি তো করে দিন।’
আমি বললাম– ‘আমি এক্ষুনি গিয়ে ডাক্তার জব্বারকে ফোন করছি।’
ফোন আমি করেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার সাহেবের দেখা পাইনি। পরে কর্মব্যস্ততার ভেতর ডুবে গেলাম আমি। পাঁচ ছ-দিন পর ফিকাকে দেখলাম! ভাবলাম তার দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে অন্য গলিতে ঢুকে যাব এবং সেখান থেকে পালিয়ে বেরিয়ে যাব।
কিন্তু ফিকা হঠাৎ দৌড়ে আমার সামনে উপস্থিত হল। বলল– ‘বাবুজি, আপনার এতসব উপকারের প্রতিদান কী করে দেব বুঝতে পারছি না।’
মিথ্যা আমার লজ্জাভাবকে কান ধরে একদিকে সরিয়ে দিল,– ‘তোমার বাবা ফিরে এসেছে না?’
ফিফা বলল,– ‘ফিরেও এসেছে। এবং অপারেশনও হয়ে গেছে। শুক্রবারে পট্টি খুলবে। দোয়া করবেন।’
আমি বললাম– ‘খোদা রহম করবেন।’
পরে সে শুক্রবার সন্ধ্যায় এল। আমি জিগ্যেস করতেই সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। ‘বাবুজি সর্বনাশ হয়ে গেছে। পট্টি খুলে জানা গেল এক চোখ তো আগেই চলে গেছে– এখন বাকিটার ওপরও তার প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারা বলল, এখন প্ৰথম অপারেশনের ক্ষত শুকিয়ে গেলে দ্বিতীয়টার অপারেশন করা হবে।’
আমি তাকে সান্ত্বনা দিলাম। এবং সাথে করেই সামনে একটা দোকান থেকে ফোন করলাম ডাক্তার জব্বারকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সে ফোনের কাছে উপস্থিত ছিল না। আমি তাকে কথা দিলাম যে, কাল গিয়ে ডাক্তার জব্বারের সাথে দেখা করব। তাকে হাসপাতালে না পেলে তার বাসায় গিয়ে ধরব।
পরদিন আমি ডাক্তার জব্বারের কাছে যেতে না পারলেও ফোন করেছিলাম। কিন্তু সেদিনও ফোনে পাইনি।
সম্ভবত সপ্তাহ দু-আড়াই পরে দরজায় কড়া নড়ে উঠল, চাকর এসে বলল– ‘ফিকা কোচওয়ান এসেছে।’ আমিও তাকে জানালাপথ দিয়ে দেখেছিলাম। একেবারে সাদা দেখাচ্ছিল তখন তাকে।
আমি চাকরকে জিগ্যেস করলাম ‘তুমি কি তাকে আমি আছি বলেছ?’
‘জ্বি হাঁ’–চাকর বলল– ‘হঠাৎ আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।’
‘বড় বোকা তো তুই’–আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম– ‘যা বলগে কাপড় বদলে আসছেন। ‘
কাপড় তো আমি আগেই বদলে রেখেছিলাম– তবে এখন আমার ভ্রুকুঞ্চন বদলাবার চেষ্টা করতে লাগলাম। পরে ভাবলাম, কী মিথ্যাবাদী আমি! দুপয়সা বা দুটো টাকা অথবা দুলাখেরও ব্যাপার নয়, শুধু দুটি চোখের ব্যাপার। আর আমি মিথ্যা বলতে যাচ্ছি। আমাকে ফিকার সামনে স্বীকার করে নিতে হবে যে, আমি তোমার জন্য সত্যি কিছু করতে পারিনি। পরে তার সামনে এসব কথা বুঝে শুনে এমনভাবে বলব যাতে সত্য কথাটা প্রকাশ পায় এবং সে-ও দুঃখ না পায়।
আমি বাইরে এসে দাঁড়ালাম। সে ঝরঝরিয়ে কাঁদতে শুরু করল এবং বলল– ‘বাবুজি, কিছুই বুঝে আসছে না যে– কিছুই বুঝে-আসছে না।’ তার গলা বুজে এল। এবং ঝুঁকে পড়ে আমার পা-জোড়া জড়িয়ে ধরল।
আমার মুখস্থ করা বাক্য এক মুহূর্তে গুলিয়ে গেল। কোনোরকম আমি বললাম- ‘ফিকা– কথা হল– ফিকা কথা হল কি
ছোট ছেলের মতো অশ্রুসিক্ত লাল চেহারা নিয়ে সে উঠল। এবং বলল– ‘বাবুজি কিছুই বুঝে আসছে না, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। আমার বাবা ভালো হয়ে গেছেন। তার দুটো চোখের জ্যোতিই খোদা ফিরিয়ে দিয়েছেন আপনার সহায়তায়। আপনি আমাকে খরিদ করে ফেলেছেন। বাবুজি খোদার কসম আমি সারাজীবন আপনার চাকর হয়ে থাকব।’
এবং আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম– ‘ও কিচ্ছু না ফিকা, ও কিছু না।’
অনুবাদ : আখতার-উন-নবী