দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – বিশেষ্যের শ্রেণীবিভাগ
উপমন্যুর গুরুভক্তি উল্লেখুনীয়। গোরুটি জল খাইতেছে। তুমুল হট্টগোলে সভা পণ্ড হইল। দুয়ে আর দুয়ে চারই হয়। শৈশব বড়ো মনোরম। উত্থান-পতন হর্ষ-বিষাদের মধ্যে দিয়েই তো চলেছে জীবনের রথ। এখানে আয়তাক্ষর প্রত্যেকটি পদই বিশেষ্য। উপমন্যু’ বলিতে কোনো ছাত্রের নাম, ‘গুরুভক্তি’ একটি গুণের নাম, ‘গোরু’ একটি পশুজাতির নাম, জল’, ‘রথ’ এক-একটি বস্তুর নাম, হট্টগোল’, ‘জীবন’, ‘উত্থান-পতন’ এক-একটি কাজের নাম, সভা বলিতে মানুষের সমষ্টির নাম, দুই’ বা ‘চার’-এর দ্বারা কোনো সংখ্যার নাম, শৈশব’ বলিতে জীবনের একটি বিশেষ অবস্থার নাম, হর্ষ-বিষাদ’ বলিতে মনের কোনো বিশেষ ভাবের নাম বুঝাইতেছে। এইজন্য বিশেষ্যকে আমরা নয়টি বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করিতে পারি।
(ক) সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য (Proper)–যে বিশেষ্যপদে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, স্থান, দেশ, নদী, পর্বত, সমুদ্র, গ্রন্থ, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির বিশেষ নাম বুঝায়, তাহাকেসংজ্ঞবাচকবিশেষ্য বলে। রামকৃষ্ণদেব (বিশেষ একজন মানুষের নাম) অবতারবরিষ্ঠ। “গঙ্গা (বিশেষ একটি নদীর নাম) আর রামায়ণ (বিশেষ একখানি কাব্যের নাম) কোন্ কীর্তি বঙ্গে (বিশেষ একটি অঙ্গরাজ্যের নাম) বরণীয়?” সেইরূপ-বঙ্কিমচন্দ্র, বেদ, বিবেকানন্দ, নিবেদিতা, ভারতবর্ষ, ইরান, মথুরা, তাজমহল, ভাগীরথী, হিমালয়, প্রশান্ত মহাসাগর, পৃথিবী, সূর্য, বাংলা, ইংরেজী, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, রোহিণী ইত্যাদি।
(খ) জাতিবাচক বিশেষ্য (Common)–যে বিশেষ্যপদে কোনো জাতি বা এক ধর্মবিশিষ্ট সকল ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে বুঝায়, তাহাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। “সবার উপরে মানুষ (একশ্রেণীর জীবের নাম) সত্য।” “পাখিরে (একশ্রেণীর প্রাণীর নাম) দিয়েছ গান।” হিন্দু শ্রীমধুসূদন খ্রীষ্টান (এক-একটি ধর্মের নাম) হইয়াছিলেন। সেইরূপ–পশু, পক্ষী, কীট, পতঙ্গ, গোরু, বাঘ, বৃক্ষ, লতা, জৈন, জার্মান, ব্রাহ্মণ, আর্য, ভিল, ইংরেজ, ফরাসী ইত্যাদি।
জাতিবাচক ও সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের পার্থক্যটি মনে রাখিও। মানুষ’ বলিলে জাতিবাচক বিশেষ্য হইবে; কিন্তু অরুণা’ বলিলে ওই জাতিবাচক বিশেষ্যেরই ‘অরুণা’ নাম্নী বিশেষ এক বালিকাকে বুঝাইবে। তাই অরুণা’সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। ‘অশ্ব’ জাতিবাচক বিশেষ্য, কিন্তু “চৈতক’ (রানা প্রতাপের প্রভুভক্ত মৃত্যুঞ্জয়ী ইতিহাস-প্রসিদ্ধ অশ্ব) সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য।
(গ) বস্তুবাচকবিশেষ্য (Material)–যে বিশেষ্যপদে সাধারণভাবে কোনো জিনিসের নাম বুঝায়, তাহাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে।–রুণ ছেলেটার জন্য এক ফোঁটা দুধ (জিনিসের নাম) চাই। রূপাসোনায় (ধাতুর নাম) কিছুই হয় না, চাই উপাসনা। “যিনি খান চিনি (পদার্থের নাম) তারে যোগান চিন্তামণি।” সেইরূপ–জল, ফুল, আকাশ, বাতাস, সন্দেশ, কালি, টাকা, পয়সা, তৈল, ঘটি, বাটি, খাট, পালঙ্ক, সিমেন্ট, কাগজ, কলম ইত্যাদি।
সাধারণতঃ বস্তুবাচক বিশেষ্যের সংখ্যা-গণনা সম্ভব নয়, মাপিয়া বা ওজন করিয়া পরিমাণ স্থির করিতে হয়। কিন্তু বই-খাতা, পেনসিল-কলম, থালা-বাটি, খাট-পালঙ্ক ইত্যাদি সংখ্যা দ্বারা গণনীয় বলিয়া ইহাদের সংখ্যাত্মক বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে।
(ঘ) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective)–যে বিশেষ্যপদে কোনো জাতিবাচক বিশেষ্যের সমষ্টি বুঝায়, তাহাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। “পদ্মকোষের বজ্ৰমণি ওই আমাদের ছেলের দল (একাধিক ছেলের সমষ্টি)।” সামনেই তো সমিতির (একাধিক সভ্য লইয়া গঠিত প্রতিষ্ঠান) বার্ষিক অধিবেশন। বাসে যা ভিড় (একাধিক মানুষের সমাবেশ)! সেইরূপ–সভা, সংঘ, জনতা, সংস্থা, পঞ্চায়ত, শ্রেণী, গোষ্ঠী, নৌবহর, পাঠাগার, কঁক, পাল, গুচ্ছ, স্তবক, বাহিনী, ত্রিফলা, পঞ্চবটী, সংসদ ইত্যাদি।
ধর, নবম শ্রেণীতে তোমরা চল্লিশজন ছাত্রী আছ। প্রত্যেককে নিজ নিজ নামে যখন ডাকা হয় তখন সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য; সকলকে সাধারণভাবে ছাত্রী’ বলিলে জাতিবাচক বিশেষ্য; আর যখন ‘শ্রেণী’ বলা হয় তখন ছাত্রীদের সমষ্টিজাত পরিচয়টিই বড় হইয়া উঠে। এইজন্য শ্রেণী সমিতি সংঘ প্রভৃতি সমষ্টিবাচক বিশেষ্য।
(ঙ) সংখ্যাবাচক বিশেষ্য (Cardinals)–এক, দুই, তিন প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দগুলি বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হইলে সংখ্যাবাচক বিশেষ্য বলে। উনিশে আর। বিশে কী এমন তফাত? আমি তোমাদের সাতেও নেই, পাঁচেও নেই। “দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।”
(চ) গুণবাচক বিশেষ্য (Abstract) যে বিশেষ্যপদে প্রাণীর বা বস্তুর দোষ, গুণ, ধর্ম, প্রকৃতি ইত্যাদি বুঝায়, তাহাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। অহংকার (মনের এক নিকৃষ্ট অবস্থার নাম) মানুষের পতনের মূল। তাজমহলের সৌন্দর্য (গুণের নাম) অতুান। মেয়েটির চমৎকার বুদ্ধি (গুণের নাম)। সেইরূপ–ক্ষমা, মমতা, স্নেহ, মহত্ত্ব, কুটিলতা, মাধুর্য, তিক্ততা, কামনা, ঔদ্ধত্য, হিংসা, দ্বেষ, দান, করুণা, প্রতিভা, সাহস, পাপ, পুণ্য, হীনতা ইত্যাদি।
(ছ) অবস্থাবাচক বিশেষ্য (Abstract-Concrete)–যে বিশেষ্যপদে প্রাণী বা বস্তুর অবস্থা বুঝায়, তাহাই অবস্থাবাচক বিশেষ্য। শৈশব সারল্যের ঋতু। “সুখে আছে সর্ব চরাচর।” “দারিদ্র্যে নাহিক ভয়।” সেইরূপ–যৌবন, বার্ধক্য, মৃত্যু, দৈন্য, দুঃখ, কষ্ট, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাস্থ্য, সম্পদ, দুরবস্থা, স্বাধীনতা, রোগ, জ্বালা, যন্ত্রণা, সন্ধ্যা, রাত্রি, শান্তি ইত্যাদি।
(জ) ভাববাচক বিশেষ্য (Abstract)–যে বিশেষ্যপদে প্রাণীর মনের কোনো বিশেষ ভাব বুঝায়, তাহাই ভাববাচক বিশেষ্য। ক্রোধ (মনের ভাব) আমাদের চরম শত্রু। নৈরাশ্যে মন ভরে গেছে? মনে আনন্দ আন, বেদনা আপনি হঠে যাবে। সেইরূপ–তৃপ্তি, সুখ, হর্ষ, উল্লাস, সমাধি, উন্মত্ততা, উন্মাদনা ইত্যাদি।
(ঝ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য (Verbal)–যে বিশেষ্যপদে কোনো কাজের নাম বুঝায়, তাহাই ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য। ভজন-ভোজন শেষ, এখন শয়নের জোগাড় চাই। রোদনেতে কী ফল ফলিবে? সেইরূপ-গমন, চলন, বলন, আচরণ, আসা, যাওয়া, লেখা, পড়া, লিখন, পঠন, অধ্যাপনা, দর্শন, মরণ, বচন, খাওয়া, ঘুম ইত্যাদি।
আচার্য সুনীতিকুমার গুণবাচক, অবস্থাবাচক ও ভাববাচক বিশেষ্যকে গুণ বা ভাববাচক বিশেষ্য বলিয়াছেন। কিন্তু গুণ, অবস্থা ও ভাব–এই তিনটির মধ্যে পার্থক্য আছে বইকি।’যৌবনকে আমরা গুণও বলিতে পারি না, মনের ভাবও বলিতে পারি না। যৌবন’ হইতেছে মানুষের জীবনের একটি বিশেষ পর্যায়। সুখ হইতেছে মনের একটা বিশেষ অবস্থা। সুতরাং শৈশব, যৌবন, বার্ধক্য, সুখ ইত্যাদিকে অবস্থাবাচক বিশেষ্য বলাই সঙ্গত মনে হয়। আবার প্রতিভা বলিলে মনোভাবও বুঝায় না, অবস্থাও বুঝায় না, দেবদত্ত একটি গুণ বা শক্তিকেই বুঝায়। সুতরাং প্রতিভা, মেধা, বুদ্ধি প্রভৃতিকে গুণবাচক বিশেষ্যের পর্যায়ভূত করিয়াছি। আবার সমাধি, আনন্দ, নৈরাশ্য, অতৃপ্তি তো মনের এক-একটি বিশেষ ভাব। সুতরাং ইহাদের ভাববাচক বিশেষ্যের দলভূত করাই সমীচীন।
কেহ কেহ ক্রিয়াবাচক বা ভাববাচক বিশেষ্যকে একই পর্যায়ভূত করিয়াছেন। কিন্তু উভয়শ্রেণীর মধ্যে কিছুটা যে পার্থক্য রহিয়াছে, একটু অবহিত হইলেই বুঝিতে পারা যায়। আহার-নিদ্রা, ভজন-ভোজন, বাচন-মরণ ইত্যাদি শব্দে ক্রিয়ার কাজটিই প্রধান। কিন্তু আনন্দ-বেদনা, উন্মত্ততা, প্রফুল্লতা, শোক-হর্ষ ইত্যাদিতে ক্রিয়ার ছোঁয়াচ থাকিলেও ভাবেরই প্রাধান্য প্রকট। সেইজন্য ইহাদের ভাববাচক বিশেষ্য বলাই সঙ্গত।
এই নয়প্রকার বিশেষ্যকে আবার রূপের দিক দিয়া মোটামুটি তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় : (১) রূপাত্মক (Concrete), (২) অরূপাত্মক (Abstract) ও (৩) অর্ধরূপাত্মক (Abstract-Concrete)।
রূপাত্মক বিশেষ্যের ইন্দ্রিয়গোচর একটি রূপ আছে। সংজ্ঞাবাচক, জাতিবাচক, বস্তুবাচক, সমষ্টিবাচক–এই চারিপ্রকার বিশেষ্য চোখে দেখা যায় বলিয়া রূপাত্মক।
অরূপাত্মক বিশেষ্যের কোনো রূপ নাই–সুতরাং এই শ্রেণীর বিশেষ্যকে চোখে দেখা যায় না। গুণবাচক, ভাববাচক ও ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যগুলি এই পর্যায়ে পড়ে।
অর্ধরূপাত্মক বিশেষ্য সম্পূর্ণ রূপাত্মকও নয়, সম্পূর্ণ অরূপাত্মকও নয়। ইহাদের চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ইহাদের অস্তিত্ব যে রহিয়াছে, তাহার লক্ষণ পরিস্ফুট। অবস্থাবাচক, সংখ্যাবাচক এবং কিছু কিছু ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য এই শ্রেণীতে পড়ে। গ্রীষ্ম-বসন্ত, কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য, দিবস-রাত্রি, সকাল-সন্ধ্যা, আলো-অন্ধকার, জীবন-মৃত্যু, পতন-অভ্যুদয়, রচনা-বিচারণা, নাচন-কেঁদন ইত্যাদি অধরূপাত্মক, বিশেষ্য।
বিভিন্ন শ্রেণীর বিশেষ্যপদের কয়েকটি প্রয়োগ : “ভজন পূজন সাধন আরাধনা সমস্ত থাক্ পড়ে।” “শিউলির মুখে ঝরে মা’র সুধা হাসিটি।” “সাহসে যে দুঃখদৈন্য চায়, মৃতরে যে বাঁধে বাহুপাশে, কালনৃত্য করে উপভোগ, মাতৃরূপা তারই কাছে আসে।” “অন্ধকারে লুকিয়ে আপন-মনে কাহারে তুই পূজিস সঙ্গোপনে?” “মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন।” দরকারী কাজে দরবারী কুম্ভকর্ণদের ঘুম বড়ো-একটা ভাঙে না। [“কুম্ভকর্ণ” পদটি এখানে সংজ্ঞাবাচক নয়, জাতিবাচক ]। মানবীর মধ্যে দানবী আছে, দেবীও আছে [ এখানে “দানবী” ও “দেবী” জাতিবাচক নয়, ভাববাচক ]। “কুকথায় পঞ্চমুখ কণ্ঠভরা বিষ” [বিষ” এখানে বস্তুবাচক নয়, ভাববাচক]। “জীবন-উদ্যানে তোর। যৌবনকুসুমভাতি কত দিন রবে?” সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য শান্তি সন্তোষ–সবই নিজের মনে [ এখানে “সুখ” ভাববাচক। আকাশছোঁয়া অহঙ্কার আজ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে [ “অহঙ্কার” গুণবাচক না হইয়া সংজ্ঞাবাচক হইয়াছে। প্রাচীন–শিল্পসাহিত্য-সংস্কৃতিকে নূতনভাবে উপলব্ধির মধ্যেই রেনেসাঁসের জন্ম। “অহিংসা ও কাপুরুষতা এক নয়।” গৌরীর কাছে অন্য সকল হইতে শাঁখা ও সিঁদুরের দাম ছিল বেশী। ভ্রাতৃপ্রেমই ভরতকে সন্ন্যাসী সাজিয়েছিল। পশ্চিমের মৈত্রেয়ীকেও একদিন বলতে হবে “যেনাহং নামৃতা স্যাং কিমহং তেন কুর্যা?” [ “মৈত্রেয়ী” সংজ্ঞাবাচক নয়, জাতিবাচক ]।
অনুশীলনী
১। বিশেষ্যপদ কাহাকে বলে? এই পদ কয় প্রকার? তোমাদের পাঠ-সংকলনের অদ্যকার পাঠ হইতে যত প্রকারের যতগুলি বিশেষ্যপদ পর, সংগ্রহ কর।
২। উদাহরণ দাও : সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য, ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য, ভাববাচক বিশেষ্য, গুণবাচক বিশেষ্য।
৩। হিন্দু, অলঙ্কার, যৌবন, মাতৃনাম, জরা, মূরণ, বচন, পুলিস, ভারতবাসী, গোলাপ, রূপা, সংস্থা, জবাব, শ্রীলঙ্কা, মধু, ফরাসী, শ্যামলিমা, বার্ধক্য, চমচম, শান্তি, হাসি-কান্না, কৈশোর, পঞ্জাবী, মৌন, পাঞ্জাবি, পাঠন, শূদ্র–কোন্ প্রকারের বিশেষ্য তাহা উল্লেখ করিয়া প্রত্যেকটি দিয়া এক-একটি বাক্যরচনা কর।
৪। উদাহরণগুলি হইতে বিশেষ্যপদ আহরণ কর এবং কোন্ প্রকারের বিশেষ্য, উল্লেখ করঃ “তেজে বজ্র তুমি রাজা, স্নেহে তুমি জলদ সজল।” “জাতীয়তাবোধের অর্থ ইংরেজ-বিদ্বেষও নয়, জাতির অতীত গৌরবের স্বপ্ন দেখাও নয়।” “গুরুজনের শাসন থেকে বঞ্চিত হওয়ার মতো দুর্ভাগ্য আর নেই। যে জাতির একতা নাই, তাহার দুর্গতিরও সীমা নাই। আচার্য মনীষাকে অলঙ্কার পড়াইতেছেন। রসপুর্ণ বাক্যই কাব্য। “মৃত্মাঝে হবে তবে চিতাভস্মে সবার সমান।” এ জগতের সব কালো, সবরকমের আলো, সেই আলোর আলো পরম কালোয় এক হয়ে গেছে। আমাদের দেশে নারীত্বের আদর্শ সীতাসাবিত্রীর ছাঁচে চিরকালের জন্য ঢালা হয়ে গিয়েছে। “বঙ্কিমমানস-আকাশে আয়েষা নারীমহিমার উষজ্যোতি।” অর্থ প্রতিপত্তি সামাজিক আভিজাত্য–সবকিছুরই ঊর্ধ্বে মানবতার প্রতিষ্ঠা। দুঃখের সুতিকাগারেই দুঃখত্ৰাতার জন্ম। শিল্পীর পরকাল নেই, তিনি ইহকাল থেকে চলে যান চিরকালে। “প্রতিদিন অশ্রুর রামায়ণ আর বেদনার মহাভারত রচিত হয়।” অনুভূতির আবার বিশ্লেষণ কী? “যথার্থ হাস্যরসের মধ্যে একটা গভীরতা আছে।” “মায়ের রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব, যার হাতে মরণ-বাঁচন।” “অরূপ-সায়রে লীলালহরী উঠিল মৃদুল করুণা-বায়।” “ভারতের ধনসম্পদ নেই, কিন্তু সাধনসম্পদ আছে।” “সাদা পাথরেগড়া একটি তপস্বিনীমূর্তি লোকমাতা নিবেদিতা।” “অমৃত জিনিসটা রসের মধ্যে নাই, রসবোধের মধ্যেই আছে।” “সত্য কাহারও একার সম্পত্তি নয়।” “যার হৃদয়ে ভক্তি আছে, তার ত্রুটি আমি ধরি না।” “যথার্থ ঐশ্বর্যের পরিচয় ত্যাগের স্বাভাবিকতায়।” মানবমহিমার জাগরণ রেনেসাঁসের মূল সুর। “পথে চলার নিত্যরসে জীবন ওঠে মাতি।” “স্বার্থই স্বার্থত্যাগের প্রধানশিক্ষক।” গানে সংগীতময়তাও চাই, কাব্যময়তাও চাই। নাম আর নত একই ধাতুগত, তাই তো নামের কাছে প্রণত হওয়ার এত গৌরব। “নিন্দনেরে রূপায়িত কর গো চন্দনে।” চিন্তা কথা ও কার্যকে একসুরে বাঁধতে হবে। বাদল হাওয়ায় আজকে আমার পাগলী মেতেছে।” “মহৎ প্রতিভার ধর্মই হল বৃহৎ ব্যাপ্তি।” “ব্যক্তিত্বের বড় স্তম্ভ আদর্শনিষ্ঠা।” মন হচ্ছে অভ্যাসের দাস। একেবারে মূল ধরে নাড়া দেওয়ার নামই হচ্ছে বিপ্লব। যেখানেই ব্রহ্মজ্ঞান সেখানেই মৌন।