সামনে দেখা
রাত নেমে আসার সময় ছেলেটা হাজির হয় ছোট খালি গির্জায়। এখনো বেদীর কাছে আছে গাছটা। আজো ভাঙা ছাদ দিয়ে আকাশ দেখা যায়।
ভেড়ার পাল নিয়ে আসার পর সে রাতের কথা মনে পড়ে যায় তার। কী শান্তিময় রাত ছিল… শুধু সমস্যা বাধায় স্বপ্ন।
এবার আর সে ভেড়ার পাল নিয়ে হাজির হয়নি, হাজির হয়েছে বেলচা নিয়ে।
বসে প্রথমে আকাশ দেখে নেয়। তারপর কাধ থেকে নামায় ঝোলা। বোতল খুলে একটু মদ্যপান করে নেয়। একদিন এভাবে আকাশের নিচে সে। আর এ্যালকেমিস্ট মদ খেয়েছিল। মনে পড়ে ফেলে আসা অনেক পথের কথা। সবশেষে কৃতজ্ঞ বোধ করে। ঈশ্বর তাকে গুপ্তধন পাইয়ে দিতে চায়। সে যদি একাধিকবার দেখা স্বপ্নে বিশ্বাস না করত তাহলে দেখতে পেত না গণক। মহিলাকে, রাজাকে, চোরটাকে… আরো অনেককে।
যাক, তালিকা অনেক লম্বা। আর পথটা লেখা ছিল লক্ষণের সাথে। অনেক লম্বা তালিকা। নিজেকে শোনায় সে।
ঘুমিয়ে পড়েছিল। জেগে উঠে দেখে মাথার উপর ঝলমলকছে আকাশ। বিশাল গাছটার কাছে গিয়ে গোড়া থেকে শুরু করে।
হে বুড়ো জাদুকর, আকাশের দিকে চোখ তোলে সে, তুমি চেয়েছিলে আমি এখানেই পাই। এমনকি একখন্ড স্বর্ণ রেখেছিলে আমার জন্য, যেন ফিরে আসতে পারি আন্দালুসিয়ার মাঠে ময়দানে। তুমি কি চাইলেই আমাকে তা পাইয়ে দিতে পারতে না?
না। বাতাস ছাপিয়ে একটা কষ্ট কথা বলে ওঠে, আমি বলে বসলে তোমার আর পিরামিড দেখা হত না। দেখতে দারুণ, তাই না?
মুচকি হেসে আবার কাজে নেমে পড়ে ছেলেটা। আরো আধঘন্টা পর। প্রথম খটাং করে আওয়াজ ওঠে। পরে বেরিয়ে আসে স্প্যানিশ স্বর্ণমুদ্রা ভরতি। একটা বাক্স। আরো আছে নানা জাতের দামি পাথর, সাদা আর লাল পালক লাগানো সোনার মুখোশ, রত্নখচিত মূর্তি। এ দেশ ছেড়ে গেছে অভিযাত্রিরা, এখনো মাঝে মাঝে এখানে তাদের চিহ্ন পাওয়া যায়।
উরিম আর থুমিমকে বের করে সে। পাথর দুটা মাত্র একবার কাজে লেগেছিল। পরে আর দরকার পড়েনি। পথে পথে সব সময় ছিল অনেক
উরিম আর থুমিমকে বাক্সে ভরে নয় সে। কারণ এটাও এক গুপ্তধন। এমন এক রাজার কথা মনে করিয়ে দেয় গুপ্তধনটা যার দেখা আর কখনো পাওয়া যাবে না।
কথা সত্যি, যারা স্বপ্নের পিছুধাওয়া করে জীবন তাদের কোন না কোনভাবে সহায়তা করবে, ভাবে ছেলেটা। এখন তারিফায় গিয়ে দশ ভাগের একভাগ দিয়ে আসতে হবে ভবিষ্যত বলা ঐ বুড়ির্কে।
এ বেদুইনরা আসলেই খুব বিচিত্র, তারা আশা করে অনেক অপ্রত্যাশিত ব্যাপার, তার কারণ, মরুভূমিতে বাসা ছিল এককালে।
আফ্রিকার দিক থেকে বাতাস শো শো করে বইছে। এখন কি আবার তার মন ঘুরিয়ে দিতে চায় ল্যাভেন্ডার? এখন আর এ বাতাস মরুভূমির কথা মনে করিয়ে দেয় না। মনে করিয়ে দেয় না আক্রমণকারীদের কথা। বরং ভেসে আসে পথ চেয়ে থাকা এক নারীর গায়ের সুগন্ধি। সুগন্ধিটাকে সে চেনে। একটু একটু করে মেয়েটার গালে চুমু খেয়েছিল সে। তখন পাওয়া যায় এ নাম না জানা আতরের ঘ্রাণ।
আবার হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ছেলেটার চোখমুখ। এই প্রথম মেয়েটা এমন করল।
আসছি আমি, ফাতিমা! বলে ওঠে ছেলেটা।
পুরোটা কই?