রাজবৈদ্য বাসবদত্তের গৃহটি প্রকাণ্ড। দ্বি-তলের যে-ঘরটিতে তিনি নিদ্রা যান, সে-ঘরে আটটি গবাক্ষ। শীতে গ্রীষ্ম সবসময় সবকটি গবাক্ষ খোলা থাকে। ঘরের মাঝখানে একটি পালঙ্কে তিনি একাকি শয়ন করেন, সকালবেলা তার চোখেমুখে এসে রোদ পড়ে, তখন ঘুম ভাঙে।
বাসবদত্তের শরীরটিও বিরাট। যমরাজেরও ভয় পাবারই কথা। জ্বলন্ত ভাটার মতো দুটি চোখ, সেই চোখে বাসবদত্ত যে-কোনও মানুষের দিকে তাকিয়ে তার অন্তঃস্থলটা পর্যন্ত যেন দেখতে পান।
বাসবদত্তের সেবার জন্য রাজার তরফ থেকেই পাঁচটি সর্বগুণসম্পন্না সুন্দরী নিযুক্ত আছে। তারা বাসবদত্তকে স্নান করানো থেকে শুরু করে রাত্রে তার সুরাপানের সময় উৎকট সব খেয়াল চরিতার্থ করা পর্যন্ত সব কিছুই নিপুণ ভাবে পালনের জন্য প্রস্তুত।
সে-দিন সকালে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বাসবদত্তের চোখে রৌদ্র এসে পড়েনি বলে তার ঘুমও ভাঙল না। সেবিকারা দ্বারের পাশে প্রস্তুত, কিন্তু তাকে ডাকার সাহস কারুর নেই।
এদিকে নিচের তলায় অপেক্ষা-কক্ষটি রোগীতে ভরে গেছে। কিন্তু কেউ একটিও শব্দ করছেনা। এমনকি শিশুরা পর্যন্ত নীরব। সামান্য কোলাহল শুনলেই বাসবদত্ত সে-দিনের মতো চিকিৎসা বন্ধ করে দেন।
বাসবদত্তের আপনাআপনি ঘুম ভাঙল ঢের বেলায়। চোখ মেলেই তিনি হাঁক দিলেন, জল! জল!
এক জন সেবিকা রুপোর করকে ভরতি সুগন্ধ জল নিয়ে ঘরে ঢুকল সঙ্গে সঙ্গে। বাসবদত্ত হাত বাড়ালেন না, মুখটা হাঁ করে রইলেন। মেয়েটি তাঁর শিয়রের পাশে বসে খুব সাবধানে জল ঢেলে দিল মুখের মধ্যে, যেন বাইরে এক ফোঁটাও না পড়ে। বাসবদত্ত ঢক ঢক করে সমস্ত জলটাই পান করলেন। এবার তিনি একটা হাত উঁচু করলেন। মেয়েটি বাসবদত্তের হাত ধরে টেনে তুলল প্রাণপণে। বাসবদত্ত তখনও চোখ খোলেননি। মুখে মৃদু মৃদু হাসি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আজ কে এসেছে আমায় তুলতে? স্পর্শ থেকে মনে হচ্ছে মেঘমালা। তাই না? তারপর উঠে বসে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, মেঘমালা, তোমার মুখখানি ম্লান কেন? আকাশে মেঘ করেছে বলে?
মেয়েটি হাসির চেষ্টা করে বলল, কই, না তো!
হ্যাঁ, চোখ মুখ ঠিক স্বাভাবিক নয়। কাছে এসো তো!
বাসবদত্ত মেয়েটির চোখের পাতা দুটো একটু টেনে দেখেই বললেন, তুমি যে বিছানায় শোও, দেখো গিয়ে সেই বিছানার চাঁদরে একটু একটু হলুদ দাগ হয়েছে কিনা। হবেই। তোমার যকৃতের পীড়া আসন্ন।
এইভাবে শুরু হল বাসবদত্তের প্রথম চিকিৎসা।
উঠে তিনি চোখ মুখ প্রক্ষালন করে প্রাতঃকৃত্য সারলেন। তারপর ধ্যানে বসলেন। লোকে বলে, ওই ধ্যানের শক্তিতেই তিনি ধন্বন্তরি।
ও-দিকে নিচে শত শত রোগী অধীর ভাবে অপেক্ষা করছে। তার মধ্যে বসে আছে সুরপতি। বেলা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে ধ্রুবকুমার বাবাকে না দেখতে পেয়ে হয়তো কান্নাকাটি করবে, সুভদ্রা কোনও কথা বলবেনা, সব মিলিয়ে একটা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে, সেদিকে তার খেয়াল নেই।
একসময় বাসবদত্ত নিচে নামলেন। সকলে সসমে উঠেপাড়াল তাকে দেখে। বাসবদত্তের অঙ্গে ঝকঝকেলাল মখমলের পোশাক। মাথায় উষ্ণীষ। যেন তিনি চিকিৎসক নন, একজন রাজা-মহারাজা। তার কণ্ঠস্বর মেঘমন্দ্র। এখানে রোগীদের মধ্যে কোনও অগ্রাধিকার নেই। বাসবদত্তের যাকে খুশি তাকেই আগে ডাকবেন।
সুরপতি একটু নিরাশ হয়ে গেল। এখানে রোগীরা সবাই নিজেরাই এসেছে। বাসবদত্ত রাজবৈদ্য, তিনি সম্ভবত রাজার বাড়ি ছাড়া আর কোনো রোগীর বাড়িতে যান না। সুভদ্রাকে নিয়ে আসা উচিত ছিল।
সুরপতি বিদেশি মানুষ, বাসবদত্তকে অনুনয়-বিনয় করে বুঝিয়ে বললে কি তার দয়া হবে না? বাসবদত্তকে দেখলে বেশ দয়ালু বলে মনে হয়। কিন্তু সবেমাত্র তিনি একজনের রোগ নির্ণয় করেছেন, এমন সময় ঘর্ঘর শব্দে রাজার রথ এসে থামল গৃহের সামনে। তার থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে রাজদূত দৌড়ে এসে ভেতরে ঢুকল, সসম্ভ্রম বাসবদত্তকে অভিবাদন করে বলল, রাজা আপনাকে এখুনি একবার স্মরণ করেছেন।
বাসবদত্ত হেসে বললেন, রাজার পিঠের ডান দিকে একটা ব্যথা উঠেছে তো?
আজ্ঞে হ্যাঁ।
জানতাম।
বাসবদত্ত উঠে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান রোগীদের মুখগুলো একবার দেখে নিলেন। একেবারে মুমূর্ষ কেউ আছে কি না সেটা দেখাই উদ্দেশ্য। তারপর সকলের উদ্দেশে বললেন, তোমরা একটু অপেক্ষা করো। আমি রাজাকে দেখে আসছি, আমার বেশি সময় লাগবে না। তোমরা কেউ যেও না।
এ-রকম নিয়ম আছে যে, সকাল থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত বাসবদত্ত কোনও রোগীকেই ফেরান না।
বাসবদত্তকে দেখে সুরপতির কেশ শ্রদ্ধা ও ভরসা হল। তার দৃঢ় বিশ্বাস হল, ইনি সুভদ্রাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে পারবেন। সুতরাং সে অপেক্ষা করাই মনস্থ করল। এখান থেকে সরাইখানাটি বেশ দুরে, সেখানে গিয়ে আবার ফিরে আসতে অনেকসময় লাগবে। তার চেয়ে বরং যে-কোনও প্রকারেই হোক একেবারে বাসবদত্তকে সঙ্গে করে নিয়ে ফেরাই ভাল।
কক্ষের মধ্যে বসে না থেকে সুরপতি বাইরের পথে পায়চারি করতে লাগল। বাসবদত্তের গৃহের চারপাশে ঘেরা একটি বিশাল উদ্যান। তাতে অদ্ভুত অচেনা সবনানা রকমে লতাবিতান ও গাছপালা। উদ্যানের সবকটি দ্বারেই ‘প্রবেশ নিষেধ’ লেখা। হয়তো এই সব গাছপালা থেকেই বাসবদত্ত ওষুধ সংগ্রহ করেন।
গৃহের বিপরীত দিকে একটি প্রশস্ত প্রান্তর সবুজ তৃণে ঢাকা। তার ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সুরপতি অল্প দূরেই একটি নদী দেখতে পেল। নদীটির দু’তীরে বড় বড় গাছের সারি, শান্ত, নির্জন, বড় মনোরম জায়গাটি। সেদিকে তাকিয়ে সুরপতির চোখ জুড়িয়ে গেল। ধনরাজ ঠিক কথাই বলেছিল, দারুকেশ্বর স্থানটি খুব সুন্দরই বটে। তবে সন্ধ্যার পর এখানকার সবাই প্রায় সুরাপানে উন্মত্ত হয়ে থাকে, এ বড় আশ্চর্য কথা।
একটা পাথরখণ্ডের ওপর বসে সুরপতি একটা গাছে হেলান দিল। এবং অল্পক্ষণের মধ্যে নিজের অজ্ঞাতসারেই ঘুমিয়ে পড়ল। গত কালের রাত্রি জাগরণ, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক যন্ত্রণায় তার সমস্ত শরীরের শিরা-উপশিরাগুলি পর্যন্ত ক্লান্ত হয়েছিল, এই সময় ঘুমের মতো আরামদায়ক আর কিছু নেই। সুরপতি ডুবে গেল গভীর ঘুমে।
সে কতক্ষণ ঘুমিয়েছিল জানে না, ঘুম ভাঙল একটা যন্ত্রণাবোধে। কে যেন তার চুলের মুঠি ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করছে।
সুরপতি চোখ মেলে দেখল চার-পাঁচ জন ধামাকা লোক ঘিরে ধরেছে তাকে। তাদের অঙ্গে প্রহরীর বেশ। একজন তার চুলের মুঠি ধরে টানছে আর চেঁচিয়ে বলছে, এবার পেয়েছি পাপিষ্ঠটাকে। কম ঘুরিয়েছে আমাদের।
সুরপতি যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠল, এ কী! এক জন লোক দুম করে তার চোখর ওপর ঘুষি মারল।
আমাকে মারছে কেন? আমি বিদেশি।
বিদেশি! হারামজাদা বংশীলাল তুই আমাদের চোখে কম ধুলো দিয়েছিস?
কে বংশীলাল? শোনো শোনো, তোমরা আমাকে মেরো না।
ওরা সবাই মিলে সুরপতিকে ঘুষি আর চড়চাপড় মারতে লাগল। সুরপতি প্রাণপণে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করে কাতর ভাবে বলতে লাগল, মেরো না, মেরে না, আমার একটা কথা শোনো আমি বংশীলাল নই, আমার বউ-ছেলে আছে, আমাকে ছেড়ে দাও।
ওরা কোনও কথায় কান দিল না। মেরেই চলল। সেই অবস্থাতেও সুরপতির মনে হল, এরা যদি তাকে হত্যা করে, তাহলে সুভদ্রা আর ধ্রুবকুমারের কী হবে?
সুরপতি কোনও ক্রমে ওদের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে পালাবার চেষ্টা করল। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারল না, ওরা ক্ষিপ্রবেগে ছুটে এসে ধরে ফেলল এবং এক ধাক্কায় তাকে মাটিতে ফেলে চেপে বসল তার বুকের ওপর। সুরপতি বুঝল, তার আর নিস্তার নেই।
সে বলল, আমার যা অর্থ আছে সব তোমরা নাও, আমাকে শুধু ছেড়ে দাও। আমার ছোট ছেলে আছে, স্ত্রী আছে, আমি ছাড়া তারা–।
এক জন তার লগুড় দিয়ে সুরপতির মাথায় এমন প্রচণ্ড আঘাত করল যে, সুরপতি জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ল মাটিতে। এক দিন আগেই তার মাথায় বড় চোট লেগেছিল, এখন সেখান থেকেও রক্ত বেরুতে লাগল গল গল করে।
লোকগুলো সুরপতির কোমর থেকে অর্থের পুটুলিটা বার করে তৎক্ষণাৎসব কটি সিক্কা টাকা ভাগ করে নিল নিজেদের মধ্যে। তারপর সুরপতির পা দুটো ধরে ছ্যাচড়াতে ছ্যাচড়াতে টেনে নিয়ে চলল।
গাছেরওপরে একটা কাঠবিড়ালি আরপাশের ঝোপেদুটো গিরগিট দেখছিল এইদৃশ্য। কাঠবিড়ালিটা ভয় পেয়ে গাছের ডগায় উঠে গেল আর গিরগিটি দুটো বেরিয়ে এসে পাথরের ওপর পড়ে থাকা সুরপতির টাটকা রক্ত চাটতে লাগল লকলকে জিভে।
প্রহরীরা সুরপতির দেহটা টানতে টানতে ঘাসভরা প্রান্তরটা পার হয়ে এসে পথের ওপর দাঁড় করানো একটি শকটের মধ্যে ছুঁড়ে দিল। কয়েক জন পথচারী দেখল সেই দৃশ্য। কেউ কোনও মন্তব্য করল না। এ রাজ্যে এ-রকম প্রায়ই হয়। তস্কর দস্যুরা প্রহরীদের চোখ ফঁকি দিয়ে বেশি দিন পলাতক থাকতে পারবে না, ধরা পড়বেই। প্রহরীদের ওপর কেউ কথা বলতে পারবে না। এ রাজ্যের প্রহরীরা প্রকাশ্য রাজপথেই যখন তখন যার তার মুণ্ড কেটে ফেলে।
প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে সুরপতির প্রাণ হয়তো তখুনি বেরিয়ে যেত। কিন্তু দৈবাৎ সেই সময়েই বাসবদত্ত ফিরলেন রাজপ্রাসাদ থেকে। এবং সুরপতির দিকের চোখ পড়ল। অসাধারণ তাঁর স্মৃতিশক্তি। তিনি সুরপতিকে দেখেই চিনতে পারলেন। এবং প্রহরীদের তিনি ভয় পান না। প্রহরীরাও রাজপ্রাসাদের বাইরে একমাত্র বাসবদত্তকেই সম্ভ্রম করে।
তিনি প্রহরীদের জিজ্ঞেস করলেন, একে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? এ তো আমার রোগী, একটু আগে আমি একে দেখে গিয়েছি।
প্রহরীরা বলল, প্রভু, এই বংশীলাল একজন বিখ্যাত তঞ্চক। নদীর ধারে লুকিয়েছিল। আমাদের বাধা দিতে এসেছিল বলেই আমরা একে প্রহার করেছি। এর নামে পরোয়ানা আছে, একে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু কারাগার পর্যন্ত এ পৌঁছবে না। তার আগেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রভু, আমরা তো সেকথা জানি না। আমরা দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।
তোমাদের অপরাধীকে তোমরা নিয়ে যাবে, তা ঠিক কথা। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে তো কোনও রোগীকে আমি বিনা চিকিৎসায় ফিরিয়ে দিই না। এই লোকটি আমার বাড়িতে চিকিৎসার জন্য এসেছিল। সুতরাং একটু অপেক্ষা করো। আমি এর চিকিৎসা সেরে নিই।
রাজবৈদ্য বাসবদত্তের মুখের ওপর কথা বলার সাহস কারুর নেই। বাসবদত্ত তাঁর দুজন সহকারীকে ডেকে সুরপতির মাথার রক্ত মুছিয়ে দিলেন। খানিকটা মলম লাগিয়ে বেঁধে দিলেন ক্ষতস্থান। তারপর অজ্ঞান সুরপতির ঠোঁট জোর করে ফাঁক করিয়ে তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন চারটি বিভিন্ন বটিকা।
বাসবদত্ত বললেন, এবার যাও। এরপর লোকটি বাঁচবে কিনা সেটা ওর নিয়তি।
প্রহরীরা শকট চালিয়ে দিল। এবং অবিলম্বেই কারাগারে পৌঁছে সুরপতির অচৈতন্য শরীর একটি নির্জন কক্ষে নিক্ষেপ করল।
.
সুরপতির জ্ঞান ফিরল পরদিন সকালে বাসবদত্তের চিকিৎসার গুণে তার শরীরের ব্যথা-বিষ অনেক কমে গেছে। সে ধড়মড় করে উঠে বসতে গেল। কিন্তু পারল না, শরীর অসম্ভব দুর্বল।
প্রায় অন্ধকার কারাগার, দেয়ালের একটা ঘুলঘুলি দিয়ে সামান্য আলো এসে পড়েছে। সুরপতি অনেকক্ষণ পর্যন্ত বুঝতেই পারল না সে কোথায় আছে এবং এখানে কী করেই-বা এল! তারপর ভাবল, সব জিনিসটাই বুঝি দুঃস্বপ্ন। সে নিশ্চয়ই এখনও বল্লারপুরের কাছে সেই জঙ্গলে একটা গাছের নিচে শুয়ে আছে। পাশে রয়েছে তার স্ত্রী ও পুত্র। অদূরে বণিকের দল। একটা নরম হাতের স্পর্শ লাগল তার মাথায়। সুরপতি চমকে উঠে বলল, কে?
একটি সুমিষ্ট নারীকণ্ঠ বলল, আপনি উঠবেন না, আপনি ঘুমোন সুরপতি আরও চমকে উঠল। এ কার কণ্ঠস্বর? এ কি সুভদ্রা?
সে চিৎকার করতে গেল, কিন্তু তার কণ্ঠস্বর বেরুল না। সে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, তুমি–তুমি সুভদ্রা? তুমি কোথায়?
এই তো আমি।
সুভদ্রা, তুমি কথা বলতে পারছ? তোমার অসুখ সেরে গেছে?
আমার তো কিছু হয়নি।
ধ্রুবকুমার কোথায়?
এই তো, কাছেই রয়েছে।
সুরপতি একটা বিরাট নিশ্বাস ফেলল। আঃ কী শান্তি! সুভদ্রা তার সেবা করছে, ধ্রুবকুমার তার কাছেই আছে। এ চেয়ে আর বেশি কী চাই? সুরপতি নিশ্চিন্তে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
একটু বাদে সুরপতির ফের ঘুম ভাঙল। সে ডাকল, সুভদ্রা? সুভদ্রা তুমি কোথায়?
সুভদ্রা বলল, এই তত আমি।
সুরপতি হাত বাড়িয়ে সুভদ্রার নরম হাতটা স্পর্শ করল। তাই তো, সুভদ্রা তো সত্যিই এখানে রয়েছে। তা কী করে হয়? তার একটু একটু মনে পড়ছে, সে গিয়েছিল রাজবৈদ্য বাসবদত্তর কাছে, তারপর কয়েক জন লোক তাকে খুব মারল, মেরে মেরে একেবারে অজ্ঞান করে ফেলল। তারপর–তারপর সে সুভদ্রার কাছে চলে এল কী করে? এ জায়গাটা কোথায়?
সে জিজ্ঞাসা করল, সুভদ্রা, আমরা কোথায় এসেছি?
সুভদ্রা বলল, আপনি কথা বলবেন না, আপনি ঘুমোন।
সুরপতি আর ভাবতে পারছে না। বেশি চিন্তা করলে তার মাথা ঝিম ঝিম করছে। এখনও বুঝি রক্ত পড়ছে মাথা দিয়ে। সে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, সুভদ্রা, ওরা আমাকে খুব মেরেছে, সাংঘাতিক মেরেছে, ওরা নিষ্ঠুর, আমি কোনও দোষ করিনি।
কাঁদতে কাঁদতেই সে ঘুমিয়ে পড়ল।
আবার এক সময় সে জেগে উঠল। এখন তার পাশে কেউ নেই। সে উঠে বসল অতিকষ্টে।
সে চিৎকার করে ডাকল, সুভদ্রা, সুভদ্রা!
কেউ সাড়া দিল না।
সে অন্ধকারের মধ্যে চতুর্দিকে হাতড়িয়ে দেখল। কেউ নেই। কঠিন পাথরের ভূমি। সুরপতি নিজের গায়ে জোরে চিমটি কাটল, তাতে যদি ঘুমের ঘোর ভাঙে।
একটু আগে যে সে সুভদ্রার সঙ্গে কথা বলছিল। সুভদ্রার হাতের স্পর্শ লেগেছিল তার মাথায়। সে তো স্বপ্ন নয়!
তাহলে এখনই সে স্বপ্ন দেখছে। সে চেষ্টা করেও জেগে উঠতে পারছে না। না না, তাকে জেগে উঠতেই হবে। সে সুভদ্রার স্বামী, ধ্রুবকুমাবের পিতা, তার কি এত বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকলে চলে?
সে আরও জোরে চিমটি কাটল নিজের মুখে। খুব ব্যথা লাগল। এবার সে জেগে উঠেছে। এই তো সে বসে আছে। হাত বাড়ালে পাথর ছোঁওয়া যায়।
সে আবার ডাকল, সুভদ্রা, সুভদ্রা!
কেউ সাড়া দিল না।
সুভদ্রা গেল কোথায়? তাকে এখানে একা ফেলে?
সে ডাকল, ধ্রুব! বাছা ধ্রুবকুমার।
তা-ও কোনও সাড়াশব্দ নেই।
সুভদ্রা আর ধ্রুবকুমার দু’জনেই তাকে ফেলে অন্য কোথাও চলে গেছে? তাকে এই রকম অসুস্থ অবস্থায় রেখে?
সুরপতি মাথায় হাত দিয়ে দেখল, চুলের মধ্যে চাপ বেঁধে আছে রক্ত।
না, ওদের খুঁজে বার করতেই হবে। এ-রকম ভাবে বসে থাকলে তো চলবে না।
সুরপতি উঠে দাঁড়িয়ে দুর্বল পায়ে একটু চলার চেষ্টা করতেই একটা কঠিন জিনিসে আঘাত লাগল। একটা দেয়াল। সুরপতি আবার অন্য দিকে ঘুরে চলার চেষ্টা করল, সেদিকেও দেয়াল। নিরেট পাথরের। এটা কোন জায়গা? সুরপতি বেশি ভাবতে পারে না; তার মাথা অবশ হয়ে আসে। সে বসে পড়ল। একটু দূরে কীসের যেন শব্দ। একটু দূরে কারা যেন একটা শিকল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। এখনও কি সে স্বপ্নের মধ্যে আছে?
এক সময় সে বুঝতে পারল, এটা স্বপ্ন নয়। অতি রূঢ় বাস্তব। সেএকা একটি ঘরে বন্দি।
সে দরজায় দুম দুম করে আঘাত করতে করতে বলল, কে আছ? বাইরে কে আছ? দরজা খুলে দাও।
একসময় ওপাশ থেকে একটা গম্ভীর গলা শোনা গেল, এই চুপ।
দরজা খুলে দাও আমার স্ত্রী, আমার ছেলে কোথায়? আমাকে না পেয়ে এতক্ষণ তারা কী করছে কে জানে।
চুপ করে থাকো।
সুরপতি তবু পাগলের মতো চিৎকার করতে লাগল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমকে ছেড়ে দাও।
বহুক্ষণ চিৎকারে সুরপতির কণ্ঠস্বর ভগ্ন হয়ে গেল। দ্বারের গায়ে হেলান দিয়ে সে বসে রইল। এখনও সে সবকিছু বিশ্বাস করতে পারছে না। কোনও মানুষের দুর্ভাগ্য কি এমন দলবদ্ধ হয়ে আসে? সপ্তগ্রামে তাদের বাড়ির মানুষজন এক এক করে মরে গেল। তাদের পুরুষানুক্রমিক ব্যবসা আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেল। বণিকদলের সঙ্গে দেশান্তরে যাচ্ছিল, সেখানেও পথের মধ্যে পড়ল দস্যুদলের হাতে। সুভদ্রার বাকশক্তি নষ্ট হয়ে গেল, তারপর আবার তাকে বংশীলাল ভেবে অত্যাচার করল কয়েকটি লোক। এখন সে কারাগারে আবদ্ধ। সুভদ্রা আর ধ্রুবকুমার কী করছে কে জানে। মাঝখানে স্বপ্নের মধ্যে সুভদ্রা ফিরে এসেছিল। স্নেহকোমল হাতে সেবা করেছিল তার। সেই স্বপ্নের কথা ভেবে সুরপতির কষ্ট আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল।
সুরপতি আর চিন্তা করতে পারল না, জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল আবার। তিন দিন পর সুরপতিকে নিয়ে আসা হল বিচারালয়ে। সুরপতির তখন অধোন্মাদের মতো দশা। সে দ্বারপথ থেকেই চিৎকার করতে লাগল, আমি বংশীলাল নই, আমি বংশীলাল নই, ঈশ্বর জানেন, আমি বংশীলালকে সাত জন্মেও দেখিনি।
বিচারক বললেন, এক!
সুরপতি ছুটতে ছুটতে বিচারকের পায়ের কাছে এসে লুটিয়ে পড়ে বলল, ধর্মাবতার, আমি এক ভাগ্যহীন বিদেশি। এরা ভুল করে আমাকে ধরে এনেছে।
বিচারক বললেন, দুই!
সুরপতি বিলাপ করে বলল, আপনি আমার প্রতি দয়া করুন। আমার স্ত্রী-পুত্র না খেয়ে আছে।
বিচারক বললেন, তিন!
সুরপতি আবার কিছু বলতে যেতেই বিচারক হাত তুলে ইঙ্গিত করলেন। অমনি দুটি ভূমিকায় রক্ষী দু’দিক থেকে এসে সুরপতিকে চেপে ধরল। সুরপতির হাত-পায়ে শৃঙ্খল পরিয়ে তার মুখটাও বেঁধে দেওয়া হল কালো কাপড়ে।
বিচারক বললেন, অযাচিতভাবে এখানে কোনও কথা বলা যায় না। তুমি এ সভার নিয়ম তিনবার ভঙ্গ করেছ। তোমাকে আর কোনও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে না।
সুরপতি মুখ দিয়ে গোঁ গোঁ শব্দ করতে লাগল।
পর পর দুজন সাক্ষ্য দিল যে সুরপতিই বংশীলাল। এ সম্পর্কেকারুর মনে কোনও সন্দেহ নেই। সেই চোখ, সেই নাক, সেই কপাল।
বংশীলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ চুরি, তঞ্চকতা ও নারীর সতীত্ব নাশের। এ পর্যন্ত সাতাশ জন বিবাহিতা রমণীর ধর্মনাশ সে করেছে, তা জানা যায়। আরও কত এরকম ঘটনা অজানা রয়ে গেছে, তা কে জানে! শ্ৰেষ্ঠী বিনয় পালের স্ত্রীর সতীত্বনাশ করার জন্য সেই রমণী মাত্র সাত দিন আগে আত্মঘাতিনী হয়েছে।
অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে বিচারক ফাঁসির আদেশ দিলেন। সেদিন আরও অনেকগুলি আসামির বিচার করতে হবে, তাই তিনি আর বেশি সময় নষ্ট করলেন না।
রক্ষীরা সুরপতিকে ঠেলতে ঠেলতে আবার নিয়ে গেল কারাগারে। সুরপতি আর একটিও শব্দ উচ্চারণ করল না। সে বুঝতে পেরেছে, ভাগ্যলক্ষ্মী তাকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করেছে। এখন মৃত্যুই তার নিয়তি। সুভদ্রা আর ধ্রুবকুমারকে সে আর ইহজীবনে কখনও চোখে দেখবে না।
দারুকেশ্বর কারাগারে তখন একত্রিশ জন ফাঁসির আসামি জমে আছে। প্রতি দিন তিন জনের বেশি ফঁসি হয় না। এই রকমই প্রথা। তাই সুরপতিকে আরও দশ দিন জীবন্মৃত অবস্থায় কাটাতে হল। এই কদিন তার মনের মধ্যে একটা ক্ষীণ আশা ছিল, হয়তো খবর পেয়ে সুভদ্রা ছুটে আসবে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। সুভদ্রা সকলের ভুল ভেঙে দেবে যে, সে বংশীলাল নয়, সে সপ্তগ্রামের শ্রেষ্ঠী সুরপতি। তার পরই মনে পড়েছিল, সুভদ্রা তো কথা বলতে পারে না। খবর পেলেও এ-সবকথা সে লোককে জানাবে কী করে? ধ্রুবকুমার তো আছে! বালকধ্রুবকুমার যথেষ্ট বুদ্ধিমান, সে-ই লোকসমক্ষে পিতৃপরিচয় দিতে পারে।
কিন্তু কেউ এল না সুরপতির খোঁজ করতে।
এই কারাগারের ব্যবস্থা এমন নিচ্ছিদ্র যে, বাইরে কোনও খবর পাঠাবার কোনও উপায় নেই। ভয়াল চেহারার প্রহরীরা ডাণ্ডা হাতে নিয়ে ঘোরে। সুরপতি চিৎকার করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেই তারা ডাণ্ডা তুলে মাথায় মারতে আসে।
দ্বিপ্রহরে শুধু একজন শীর্ণকায় লোক আসে সুরপতিকে আহার্য দিয়ে যেতে। এক টুকরো পোড়া মাংস ও তিনখানি যবের রুটি। সেগুলি দলা পাকিয়ে গরাদের ফাঁক দিয়ে ছুঁড়ে দেয়। একদিন সুরপতি সেই লোকটির হাত চেপে ধরে বলল, ভাই ঈশ্বরের দোহাই, তুমি বলভদ্রের সরাইখানায় গিয়ে একটি বার খবর দাও। সেখানে আমার স্ত্রী ও পুত্র আছে। আমি বংশীলাল নই, আমি সুরপতি। আমি মরি তাতে ক্ষতি নেই, তবু ওরা যেন একবার খবর পায়। আর যদি আমি এখান থেকে কোনও ক্রমে ছাড়া পাই, তাহলে আগামী দশ বছর আমি যা উপার্জন করব, সবই তোমাকে দেব। ভাই দয়া করো, ঈশ্বরের দোহাই, এই সামান্য দয়া করে আমাকে।
লোকটি স্থিরভাবে চেয়েছিল সুরপতির দিকে। সুরপতির কথা শেষ হলে সে হাঁ করল। তার মুখের মধ্যে জিভ নেই। জিভটা সম্পূর্ণকাটা। কথা বলার কোনও ক্ষমতাই লোকটির নেই। ভয় পেয়ে সুরপতি তার হাত ছেড়ে দিল।
এগারো দিনের দিন সুরপতিকে নিয়ে যাওয়া হল বধ্যভূমিতে। জল্লাদ ফাঁসির দড়িটি ঠিক আছে কি না পরীক্ষা করে দেখছে। সুরপতির হাত বাঁধা কিন্তু চোখ-মুখ খোলা।
একজন কারারক্ষী এসে তাকে প্রশ্ন করল, বন্দি, তোমার কোনও শেষ ইচ্ছা আছে?
সুরপতি মাথা নেড়ে বলল, না। তোমার মৃতদেহ কি দাহ করা হবে না নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে?
সুরপতি একটুক্ষণ চিন্তা করে বলল, বলভদ্রের যে সরাইখানা আছে, তার সামনে আমার মৃতদেহটা ফেলে রেখে এসো।
এমন সময় দুর থেকে এক জন অশ্বারোহী তীরবেগে ছুটে এল। সুরপতিকে তখন বধ্যমঞ্চে তোলা হয়েছে, অশ্বারোহী চিৎকার করে বলল, দাঁড়াও, দাঁড়াও।
অশ্বারোহী এসে বলল, আজ সকালেই রাজার একটি পুত্রসন্তান হয়েছে, সেই উপলক্ষে রাজা এক জন ফাঁসির আসামির শাস্তি মকুব করতে চান। এ রাজ্যে সেটাই প্রথা।
সেদিন সুরপতি ছাড়া আর কোনও ফাঁসির আসামি ছিল না। সুরপতি বুকের মধ্যে একটা আনন্দের গোরা লাফিয়ে উঠল। সে জল্লাদের হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আনন্দে প্রায় আর্তনাদ করে উঠল, আ-আ-হা-হা-আ-আ–।
সুরপতি ভাবল, নিয়তি তার ওপর তাহলে একেবারে বিরূপ নয়। ভাগ্যবলেই সে শেষ মুহূর্তে মুক্তি পেয়ে গেল। এখুনি সে ছুটে গিয়ে সুভদ্রা আর ধ্রুবকুমারকে দেখতে পাবে।
সেই বধ্যভূমির ওপর দাঁড়িয়ে সুরপতি উন্মাদের মতো নাচতে লাগল। তার দুচোখ দিয়ে মুক্তির আনন্দের অশ্রু গড়াচ্ছে।
কিন্তু নিয়তি আসলে সুরপতিকে নিয়ে একটা খেলা খেলছে। সেই খেলা এখনও শেষ হয়নি।
অশ্বারোহী রাজার সনদ তুলে দিল কারারক্ষীর হাতে। সে সেটা পাঠ করে সুরপতির দিকে তাকিয়ে বলল, যাক, খুব জোর বেঁচে গেলে বংশীলাল, তোমার মৃত্যুদণ্ড মকুব করে দশ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একথা শুনে সুরপতির যতখানি নিরাশ হওয়ার কথা ছিল, ততখানি সে হল না। শুধু বেঁচে থাকারই যে একটা আনন্দ আছে, তা সে উপেক্ষা করতে পারল না।
এবার সুরপতিকে আনা হল অন্য একটি কারাগারে। কারাগারটি একটি পাহাড়ের পাদদেশে। এতে আছে সু-উচ্চ প্রাচীর ঘেরা একটি বিরাট চত্বর, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যাকালে বন্দিরা যথেচ্ছ ভ্রমণ করতে পারে। দ্বিপ্রহরে তাদের সকলকে সারিবদ্ধ হয়ে বসে পাথর ভাঙতে হয়। বড় বড় পাথরের চাঙড়কে তারা লৌহ হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো করে। দারুণ পরিশ্রমসাধ্য কাজ, মাথার ওপরে চড়া রোদ্দুরে শরীর থেকে গল গল করে স্বেদ বেরোয়, তবু এক মুহূর্ত বিশ্রাম নেবার উপায় নেই, অমনি পিঠের ওপর এসে পড়বে কারারক্ষীর চাবুক।
রাত্রে তাদের শয়ন করতে হয় প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ছোট কুঠুরিতে। সেখানে আলো বাতাসের সম্পূর্ণ প্রবেশ নিষেধ। সেই ঘরে আছে বিরাট বিরাট আকারের মূষিক। কোন ছিদ্রপথ দিয়ে তারা ঢোকে তা বোঝাই যায় না। মূষিকের অত্যচারে রাত্রে ঘুমোয় কার সাধ্য। প্রায়ই কয়েদির গা থেকে ওই সব মূষিক মাংস খুবলে নিয়েছে এমন দেখা যায়। একজনের ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটাই মূষিকে কেটে নিয়েছিল।
সুরপতি সারা রাত ধরে তার হাতুড়িটা এ-দিক ওদিক চালিয়ে মূষিক নিধনের চেষ্টা করে। পাথরভাঙা হাতুড়িটা প্রত্যেক কয়েদির সঙ্গেই থাকে। কেউ কেউ রাগে দুঃখে যন্ত্রণায় সেই হাতুড়ি দিয়ে নিজের মাথাতেই এক ঘা মেরে বসে এক-এক দিন। তাতে কারারক্ষীরা একটুও বিচলিত হয় না। কয়েদির সংখ্যা কমলে তাদের কোনও দুঃখ নেই। কেউ তাদের কাছে কোনও কৈফিয়ৎ চায় না।
কিন্তু এত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও সুরপতি তার মাথায় একদিনও সেই হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেনি। সে বাঁচতে চায়।