বেল বাজতেই মিঃ সোম দরজা খুলে দেখলেন, বাইশ-তেইশ বছরের একটি অত্যন্ত আধুনিক মেয়ে আর তার পিছনে চল্লিশ বিয়াল্লিশ বছরে একটি লোক। ভদ্রলোক বলতে যা মনে হয়, লোকটি তা নয়। মেয়েটির পরনে একটা জিন্স, উপরে একটা নটেড ব্লাউজ। তাও উপরের দিকের গোটা দুই বোম খোলা।
মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল, একসকিউজ মী, আপনিই কি ম্যারেজ অফিসার মিঃ সোম?
প্রশ্নটি শুনেই উনি বুঝলেন, মেয়েটি আইন জানে। সাধারণ সবাই বলে, ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কিন্তু আইন বলে ম্যারেজ অফিসার। উনি বললেন, হ্যাঁ।
বিয়ের নোটিশ দিতে এসেছি। আপনার কী এখন সময় হবে?
নিশ্চয়ই। ভিতরে আসুন।
মিঃ সোম কথাটা শেষ করতে না করতেই মেয়েটি পিছন ফিরে, বললো, জন, কাম ইন।
তিনজনে ঘরে এসে বসতেই মেয়েটি ইংরেজীতে বললো, আমি মিস প্রীতি মজুমদার। আই ইনটে টু ম্যারি জন।
মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নিশ্চয়ই আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছে?
মিস মজুমদার সঙ্গে সঙ্গে কাঁধে ঝোলান ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে মিঃ সোমের সামনে খুলে ধরে বললো, আমার তেইশ বছর বয়স হলো। একটু পাশ ফিরে জনের দিকে তাকিয়ে বললো, জনের বয়স থার্টি-ফাইভ।
মিঃ জন বিবাহিত কি?
ওরা দুজনে একসঙ্গে উত্তর দিল,।
মিঃ সোম ফর্ম দেবার দু-তিন মিনিটের মধ্যেই মিস মজুমদার সব কিছু লিখে জনকে বললো, জন, প্লীজ সাইন হিয়ার।
জন কোন কথা না বলে সই করল।
এবার মিস মজুমদার ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে টেবিলে রেখে বললো, আপনার ফী।
ওরা আর দেরী করল না। উঠে দাঁড়াল। দুজনেই বিদায় নেবার আগে বললল, গুড বাই!
গুড বাই।
ওরা চলে গেলেও ওদের পথের দিকে চেয়ে মিঃ সোম বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলেন।
ঠিক এক মাস পরে শিক্ষিত, সুন্দরী ও আধুনিক মিস প্রীতি মজুমদারের সঙ্গে খানসামা মিঃ জন নিকোলাস ডায়াসের বিয়ে হলো।
বিয়ের জন্য মিস মজুমদার একটা সুন্দর ম্যাকসিস্কার্ট পরেছিল; জন পুরোদস্তুর সাহেব সেজেছিল। যারা সাক্ষী দিল তারা সবাই জনের বন্ধু। বিয়ের শেষে প্রীতিকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে জন চুমুও খেল।
মিঃ সোম ভেবেছিলেন, এখানেই নাটক শেষ হলো, কিন্তু না, নাটকের তৃতীয় অঞ্চ অভিনীত হলো মাস দুয়েক পরে।
সকালবেলায় কাগজ পড়ার সময় ঠিক নজরে পড়ে নি। দুপুর বেলায় ভাল করে কাগজ পড়তে গিয়েই মিঃ সোম চমকে উঠলেন।…….
ঘটনাস্থল–দিল্লী।
দৃশ্য বিশিষ্ট অভিজাত পল্লী।
সময়-গভীর রাত্রি।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক মার্কিন সংস্থার উত্তর ভারতের ম্যানেজার সস্ত্রীক ককলেট আর ডিনার সেরে যখন ফিরলেন, তখন রাত প্রায় একটা। এ ধরনের নেমন্তন্ন থেকে উনি এইরকম সময়েই ফেরেন এবং গাড়ীর হর্ন বাজাবার সঙ্গে সঙ্গেই ওদের বারো বছরের পুরানো খানসামা জন নিকোলাস ডায়াস ছুটে এসে দরজা খুলে দেয়। ম্যানেজার সাহেব আরো দু-তিনবার হর্ন বাজালেন, কিন্তু না, খানসামা এলো না। অত রাত্রে বেশী জোরে বারবার হর্ন বাজালে প্রতিবেশীদের বিরক্ত করা হবে মনে করে ম্যানেজার সাহেব গেট টপকে লনে ঢুকে বাড়ীর পিছনদিকে গেলেন।
একটু এদিক-ওদিক উঁকি মেরেও খানসামাকে দেখতে পেলেন না। তারপর মেয়ে প্রীতির ঘরের পর্দার ফাঁক দিয়ে সামান্য একটু আলো দেখতে পেয়ে সেদিকেই গেলেন। ম্যানেজার সাহেব উন্মাদের মত চিৎকার করে উঠলেন; জন, আই উইল কিল ইউ।
মেয়ে প্রীতি আর খানসামা জনকে এমন পরিস্থিতিতে ম্যানেজার সাহেব দেখলেন যে উনি সত্যি আর স্বাভাবিক থাকতে পারলেন না। পাগলের মত ছুটে এলেন সামনের দিকে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলেন। রাইফেলটা দেখতে পেলেন না। আলমারির লকার থেকে রিভলবার বের করলেন। গুলী ভরলেন। এগিয়ে গেলেন মেয়ের ঘরের দিকে।
প্রতি জনকে আড়াল করলেও জনের হাতের রাইফেলা ম্যানেজার সাহেব দেখতে পেলেন।
ম্যানেজার সাহেব গর্জে উঠলেন, প্রীতি, সরে যাও। আই মাস্ট কিল দ্যাট বীস্ট। জানোয়ারটাকে মারতেই হবে। প্রতি চিৎকার করে উঠল, ড্যাডি জন আমার স্বামী।
ননসেন্স।
ইয়েস ড্যাডি, জন ইজ মাই…..
প্রীতিকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই পিছন থেকে জন একটু বিদ্রূপ করে বললো, প্রীতি ইজ প্রেগন্যান্ট। আর কমাস পরেই……
স্টপ! বাস্টার্ড!
জন পাশ থেকে মুখখানা একটু বের করে বলে, সত্যি, আপনার নাতি হবে।
এ নাটক বেশীক্ষণ চলেনি। মাত্র মিনিট দশেক। নাটকের অভিনয় শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের উপর ম্যানেজার সাহেব, জন আর প্রীতির মৃতদেহ গড়িয়ে পড়ল।
খবরের একেবারে শেষে বলা হয়েছে, পুলিশ প্রীতির ঘর থেকে ওদের বিয়ের ম্যারেজ সার্টিফিকেট উদ্ধার করেছে এবং জানা গেছে, মাস ছয়েক আগে কলকাতায় ওদের বিয়ে হয়।
খবরটা পড়া শেষ হতেই মিঃ সোম যেন প্রীতিকে চোখের সামনে দেখতে পেলেন। জনকে ভালবাসার মধ্যে তার কোন দ্বিধা নেই, দ্বন্দ্ব নেই, সংশয় নেই। মিঃ সোম যেন স্পষ্ট শুনতে পেলেন সেই সুন্দরী, শিক্ষিতা, আধুনিক মুক্তকণ্ঠে বলছে, আই ইনটে টু ম্যারি জন।
কতক্ষণ যে উনি চুপচাপ বসেছিলেন, তা ওর নিজের খেয়াল নেই।
সাবিত্রী পাশে এসে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললেন, বিনু মামা খাবার সামনে নিয়ে কতক্ষণ বসে থাকবেন?
মিঃ সোম খুব আস্তে বললেন, তুমি যাও। আমি আসছি।
মিঃ সোম খাওয়া-দাওয়া করেই আবার এই ঘরে ফিরে এলেন। তারপর টেবিলের নীচের ড্রয়ার থেকে পুরানো.চিঠির বাণ্ডিল বের করে কী যেন খুজতে লাগলেন। পোস্টকার্ড-ইনল্যাণ্ড লেটারগুলো। পাশে সরিয়ে রেখে নানা রংয়ের, নানা সাইজের বহু খাম দেখার পর হঠাৎ একটা এয়ার-মেল খাম হাতে পড়তেই উনি যেন একটু চঞ্চল হয়ে উঠলেন। হ্যাঁ, এর মধ্যেই প্রীতির চিঠিগুলো আছে।…
হাজার হোক আপনি ম্যারেজ অফিসার। আইনগতভাবে উপযুক্ত সাবালক ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়াই আপনার কাজ। মিঃ জন নিকোলাস ডায়াসের সঙ্গে আমার বিয়েও আপনার ওখানেই হয়েছে। আপনার সঙ্গে আমার ভাবাবেগের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কোন অবকাশ নেই, ইচ্ছাও নেই। তবুও কলকাতা থেকে দিল্লী ফিরে এসেই আপনাকে চিঠি লিখতে ইচ্ছে করল বলেই এই চিঠি লিখছি।
জনকে বিয়ে করার জন্য মাত্র দুদিনই আপনার ওখানে গিয়েছি। এই সামান্য সময়ের জন্য দেখা হলেও আপনাকে আমার ভাল লেগেছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই অপরের ব্যাপারে একটু বেশী উৎসাহী; মেয়েদের ব্যাপারে আগ্রহ ও উৎসাহ প্রায় সীমাহীন। আপনাকে দেখে মনে হয়েছে, আপনি এই পর্যায়ের না। তাই আপনাকে কিছু জানাতে ইচ্ছে করছে।
খুব ছোটবেলার কথা আমার মনে নেই। শুধু মনে আছে, আমি প্রায় সারা দিনই একটা ঘরের মধ্যে বন্দিনী হয়ে থাকতাম। আমার প্রচুর খেলনা ছিল আর ছিল একটা কালো মোটা আয়া। নতুন নতুন খেলনা নিয়ে খেলতে ভালই লাগত; কিন্তু আমার মত শিশুর কাছে নতুন খেলনা পুরানো হতে বেশী সময় লাগত না। খেলনা পুরানো হলেই আমার মন খারাপ হয়ে যেত। আয়া আমাকে ঠিকমত খেতে দিলেও কোনদিনই আদর করত না বলে ওর উপর ভীষণ রাগ হতো। তবে হ্যাঁ, রোজ বিকেলে ও আমাকে নিয়ে সমুদ্রের ধারে বেড়াতে যেতো। বোষের কোলাবার ঐ সমুদ্রদর্শনই আমার শৈশবের একমাত্র সুখ-স্মৃতি।
বাবার সঙ্গে আমার রোজ দুএকবার দেখা হলেও পিতৃস্নেহেরু স্বাদ উপভোগ করেছি বলে মনে পড়ে না। ঐ অতি শৈশবেই আমি অনুভব করতাম, উনি আমাকে ভালবাসেন না।
মোটামুটি ঐ রকম অনাদর-হতাদরেই আমার জীবনের প্রথম কয়েকটা বছর কেটে গেল। তারপরের কয়েকটা বছর কাটল ব্যাঙ্গালোর-মাদ্রাজ-কোচিনে। ইতিমধ্যে শুরু হল আমার লেখাপড়া। স্কুলের সময়টা খুবই আনন্দে কাটত। ক্লাশের প্রত্যেকটা মেয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হলো। কত হাসিঠাট্টা খেলাধূলা করতাম ওদের সঙ্গে। তাছাড়া সিস্টাররাও আমাকে খুব স্নেহ করতেন।
এই সময়ই আমি জানতে পারলাম, আমার মা অত্যন্ত অহংকারী ও বদমেজাজের ছিলেন বলে সংসার ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু কেন জানি না কথাটা আমার একটুও বিশ্বাস হলো না। মার ব্যাপারে বাবার ঔদাসীন্য ও নোংরা মন্তব্য শুনলে আমার গা জ্বলত, কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না। তাছাড়া বাবাকে আমার একটুও ভাল লাগত না। উনি আমার জন্য শুধু অর্থব্যয় করা ছাড়া আর কিছুই করেন নি।
আরো একটু বয়স বাড়ার পর আমি বেশ বুঝতে পারলাম, আমার বাবা চরিত্রহীন। ছোটবেলা থেকেই দেখছি, বাবা ভাল চাকরি করেন ও প্রচুর আয়ও করেন। সর্বত্রই দুএকজন অধস্তন কর্মচারীর স্ত্রীর সঙ্গে বাবার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। শুধু তাই নয়, আমাকে দেখাশুনার জন্য যেসব আয়ারা কাজ করেছে, রাত্রির অন্ধকারে তাদের ঘরে যেতেও বাবার রুচিতে বাধত না।।
তখন আমরা কোচিনে থাকি। রোজি নামে একটা মেয়ে তখন আমাদের বাড়ীতে থাকে। বাবার অফিসের ড্রাইভার এ্যাব্রাহাম বাবার গাড়ী চালান ছাড়াও বাজার যেত ও আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিত। অফিসের কাজে আটকে না পড়লে ও আমাকে ছুটির পর বাড়ীতেও পৌঁছে দিত। সন্ধ্যার পর এ্যাব্রাহাম গাড়ী রেখে সাইকেল চড়ে নিজের বাড়ী চলে যেতো। এই এ্যাব্রাহামই আমাকে সাইকেল চড়া শেখায়।
আমি তখন ক্লাশ ফাইভে পড়ি। নেহাত ছোট নয়। নিজের সব কাজই নিজে করতে পারি। রোজি সংসারের সব কাজ করত।
রোজি কালো হলেও দীর্ঘাঙ্গী ও সুন্দরী ছিল। বয়স তিরিশ বত্রিশের মত হবে। দীর্ঘদিন একজন বাঙ্গালী ন্যাভাল অফিসারের বাড়ীতে কাজ করার জন্য বেশ ভাল রান্না শিখেছিল। রোজি ইংরেজি তো জানতই; তাছাড়া একটু-আধটু হিন্দী-বাংলাও বুঝতে পারত। সুতরাং ওকে পেয়ে ভালই হলো।
ওখানে আমাদের বাড়ীটা পুরানো হলেও বেশ বড় ছিল। অনেকগুলো ঘর। সামনে-পিছনে বিরাট লন; দুপাশে ফুলের বাগান।
বিকেলবেলায় স্কুল থেকে ফিরে কিছু খাওয়া-দাওয়া করার পরই আমি আর রেজি ব্যাডমিন্টন খেলতাম। খেলাধূলার পর আমি আমার ঘরে চলে যেতাম; রোজি যেত রান্নাবান্না করতে। পড়াশুনা করতে করতে যখনই দেখতাম বাবার গাড়ী ঢুকছে, আমি তাড়াতাড়ি সামনের বারান্দায় চলে যেতাম। উনি অত্যন্ত মামুলি দুটো-একটা কথা বলেই নিজের ঘরের দিকে চলে যেতেন। আমিও আমার ঘরে ফিরে আসতাম।
রাত্রে কদাচিৎ কখনও আমি আর বাবা একসঙ্গে ডিনার খেতাম। ডিনার খাবার পরই আমরা দুজনে দুজনের ঘরে চলে যেতাম এবং রাত্রে বাবার সঙ্গে আমার আর দেখা হতো না। অন্যান্য দিন বাবা একবার ঘরে এসে জিজ্ঞাসা করতেন, কী করছ? পড়ছ?
হ্যাঁ।
গুড! ঘর থেকে বেরুবার আগে বলতেন, ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করবে।
ব্যস্! আর নয়! বাবা সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঘরে চলে যেতেন।
কেন জানি না, বাবা কোনদিন আমাকে ওঁর ঘরে ডাকতেন না। আমি বেশ বুঝতে পারতাম, উনি পছন্দ করেন না আমি ওঁর ঘরে যাই। তাই আমিও কোনদিন ওঁর ঘরে যেতাম না। বাবাকে কিছু বলতে হলেই আমি রোজিকে দিয়ে বলে পাঠাতাম। তাই কখনও কখনও প্রয়োজনের জন্যই আমাকে নোজির ঘরে যেতে হতো।
সেদিন রাত্রে ডিনার খাবার সময় বাবা বললেন, কাল খুব ভোরে আমি ত্রিবান্দ্রম যাচ্ছি। সেখান থেকে মাদ্রাজ ঘুরে ফিরব।
ডিনারের পর আবার পড়তে বসলাম। পড়াশুনা শেষ করে শুতে যেতে বেশ রাত হলো। বোধহয় এগারটা। শোবার পর হঠাৎ মনে পড়ল, পরশুদিন স্কুলের মাইনে দিতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে রোজির ঘরে গেলাম; কিন্তু কোথায় রোজি? গেলাম কিচেনে। না, দরজা বন্ধ। ড্রইং রুমে গেলাম, ডাইনিং রুমে গেলাম, সব বারান্দা গুলো ঘুরলাম কিন্তু কোথাও রোজিকে দেখতে পেলাম না। ভাবলাম, বোধহয় লনে ঘোরাঘুরি করছে। এ পাশের লন ঘুরে ও পাশের লনে যেতেই চমকে উঠলাম। দেখি, বাবার ঘরের জানালা খোল। আলো জ্বলছে। রোজি? হা, বাবার ঘরেই আছে কিন্তু ওদের দুজনকে এমন ঘনিষ্ঠভাবে দেখলাম যে সেকথা আমি আপনাকে লিখতে পারব না।
যে বয়সে পৃথিবীর সবকিছুই সুন্দর মনে হয়, সব মানুষকেই ভাল লাগে, ঠিক সেই সময়ই আমার মন বিষিয়ে গেল। ঘেন্না হলো সব পুরুষদের উপর।
জন যখন আমাদের বাড়ীতে এলো তখনও আমার বয়স বেশী নয়। ইতিমধ্যে অনেক রোজির মধু খাবার পর বাবা হঠাৎ একবার বিলেত থেকে আমার নতুন মাকে নিয়ে এসেছেন। সে এক বিচিত্র পরিস্থিতি। বাবা আমাকে দূরে সরিয়ে রাখেন, নতুন মা আমার কাছে আসেন না, জনকেও আমি বিশ্বাস করি না।
বাবা অফিস যান; মাও বেরিয়ে পড়েন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। কোনদিন ওরা লাঞ্চে বাড়ীতে আসেন, কোনদিন আসেন না। সন্ধ্যার পর দুজনেই নিয়মিত বাইরে যান ককটেল-ডিনার-রিসেপসন বা কোন পাঁচ তারার হোটেলে। ফিরে আসেন মধ্যরাত্রিতে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমন কি বছরের পর বছর এইভাবেই কেটে গেল। ইতিমধ্যে আবিষ্কার করলাম, জন পশু নয়, মানুষ। ওর চরিত্রে স্নেহ-মায়া-মমতা আছে। আস্তে আস্তে উপলব্ধি করলাম, ও আমাকে স্নেহ করে, আমাকে ভালবাসে, আমার কল্যাণ কামনা করে।
জন আমার ঘরের দরজার ওপাশ থেকে বললো, ছোটা মেমসাব, পড়তে বসবে না?
না। ভাল লাগছে না।
শরীর খারাপ লাগছে?
না; শরীর ভালই আছে।
তাহলে ছোটা মেমসাব পড়তে বসো। জন একটু থেমে বলে,
তোমাকে পড়তে দেখলে আমার খুব ভাল লাগে।
আমি এতক্ষণ জনের দিকে ফিরেও তাকাই নি, কিন্তু একথা শোনার পর ওর দিকে না তাকিয়ে পারলাম না। আমি কিছু বলার আগেই ও বললো, ছোটা মেমসাব, আমি সব বুঝতে পারি। তুমি লেখাপড়া করে বড় হলে সব দুঃখ ঘুচে যাবে।
আমি মুখ নীচু করে হাসি।
না, না, ছোটা মেমসাব, হাসির কথা নয়। যে মানুষ মন-প্রাণ দিয়ে লেখাপড়া করতে পারে, তাকে কোন দুঃখই ছুতে পারে না।
আমি জিজ্ঞাসা করি, তুমি কি করে জানলে?
জন সঙ্গে সঙ্গে দেশপাণ্ডে সাহেবের গল্প শুরু করে, লোকটা যেন বিদ্যের জাহাজ ছিল। ঘরভর্তি শুধু বই আর বই। কলেজে যাবার আগে, কলেজ থেকে ফিরে এসে সব সময় শুধু পড়তেন আর লিখতেন। কী বলব ছোটা মেমসাব, প্রফেসার সাহেব শুধু পড়াশুনা ছাড়া আর কিছুই জানতেন না।
তারপর?
প্রফেসার সাহেবের ছেলে আর পুত্রবধূ বিলেতে থাকত।…বোম্বতে প্রফেসার সাহেব আর তার ওয়াইফ থাকতেন। তারপর হঠাৎ ওঁর স্ত্রী মারা গেলেন। আমি ভাবলাম, লোকটা বোধহয় এবার সন্ন্যাসী হয়ে যাবে; কিন্তু না, দুএকদিন পর থেকে প্রফেসার সাহেব আবার পড়াশুনা শুরু করে সব দুঃখ ভুলে গেলেন।
জন এবার আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, ছোটা মেমসাব, তুমি লেখাপড়া করো। দেখবে তোমার মনেও কোন দুঃখ নেই।
আপনি বিশ্বাস করুন, এই জনের জন্যই আমাকে লেখাপড়া করতে হয়। ও না থাকলে কিছুতেই আমার লেখাপড়া হতো না; আমি কোনদিনই বি.এ.-এম.এ. পাস করতাম না।
কী হলো ছোটা মেমসাব? এখনই শোবে নাকি?
হ্যাঁ।
এখন তো মোটে সাড়ে নটা বাজে।
আমার বড় ঘুম পাচ্ছে।
পরীক্ষার আগে এত তাড়াতাড়ি ঘুম পেলে চলবে কেন? আমি তোমার জন্য এক কাপ ব্ল্যাক কফি আনছি। খাও; দেখবে ঘুম চলে গেছে।
জন কফি আনে। আমি কফি খাই। ও বলে, প্রত্যেক ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমি তোমাকে কফি দেব। তুমি পড়ে যাও।।
ফাস্ট ডিভিশনে হায়ার সেকেণ্ডারী পরীক্ষা পাস করার পর বাবা আমাকে তিন দিনের জন্য সিমলা নিয়ে গেলেন। আমার নতুন মা আমাকে একদিন বড় হোটেলে ডিনার খাওয়ালেন। আর জন? ও আমাকে একখানা বাইরেল আর একটা শেফার্স কলম দিয়ে বলেছিল, ছোটা মেমসাব, আমি ক্রিশ্চিয়ান। অন্য ধর্মের কথা জানি না। তবে বাইরেলটা পড়ে দেখো, মনে শান্তি পাবে।
কিন্তু কলমটা দেবার কি দরকার ছিল?
জন হেসে বললো, আমি তো মহা পণ্ডিত। ভেবেই পেলাম না কোন বই তোমার ভাল লাগবে। তাই মনে হলো, কলম দেওয়াই সব চাইতে ভাল।
আমি অবাক হয়ে ওকে দেখি।
ও একটু আনমনা হয়। তারপর বলে, ছোটা মেমসাব, আমি নিশ্চয়ই তোমাদের এখানে চিরকাল চাকরি করব না। তখন এই কলম দিয়ে লিখতে গেলেই তোমার মনে পড়বে, জন চেয়েছিল তুমি অনেক লেখাপড়া শিখে বড় হও।
জনের কথা লিখতে গেলে অনেক কিছু মনে পড়ে। আমরা তখন কলকাতায়। আমি ব্ৰেবোর্নে পড়ি। বাবা অফিসের কাজে কয়েক দিনের জন্য গৌহাটি-শিলং-ইম্ফল ঘুরতে গেছেন। নতুন মা-ও তার সঙ্গিনী হয়েছেন। বাবা নতুন মা যেদিন রওনা হলেন, সেদিন রাত্রে শুতে যাবার আগে জন আমাকে বললো, ছোটা মেমসাব, তুমি দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিও।
কেন?
কেন আবার? আজ তো সাহেব-মেমসাহেব নেই, তাই……
তুমি তো আছে।
হাজার হোক আমি অশিক্ষিত খানসামা। আমার মাথায় কখন বদ বুদ্ধি চাপবে, তা কি কেউ বলতে পারে?
আমি হেসে বললাম, যে আমাকে বাইরেল উপহার দিয়েছে, সে কোনদিনই আমার ক্ষতি করবে না।
তুমি সত্যি তাই মনে কর?
আমি হাসতে হাসতে বললাম, আমি জানি তুমি আমাকে এত ভালবাসো যে তুমি আমার ঘরে শুলেও আমার কোন ক্ষতি করবে না।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই জন আমার দুটো হাত চেপে ধরে বললো, ঠিক বলেছ ছোটা মেমসাব, আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালবাসি। আমার দ্বারা তোমার কোন ক্ষতি হবে না।
তা আমি জানি। এবার আমি ওর আত্মতৃপ্তিভরা উজ্জ্বল মুখখানার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার একটা অনুরোধ রাখবে?
নিশ্চয়ই রাখব।
আজ থেকে তুমি আর আমাকে ছোটা মেমসাব বলবে না; তুমি আমাকে প্রতি বলেই ডাকবে।
কি বলছ তুমি?
হ্যাঁ জন, ঠিকই বলছি।
বাট…
কোন কিন্তু নয়; আগে কথা দাও।
জন একটু ভেবে বললো, ঠিক আছে, তোমাকে প্রীতি বলেই ডাকব, কিন্তু সাহেব বা মেমসাহেবের সামনে নয়।
জানেন মিঃ সোম, সেই রাত্রি থেকে আমার আর জনের মধ্যে বন্ধুত্বের নতুন অধ্যায় শুরু হলো।
আচ্ছ। জন, তুমি বিয়ে করনি কেন?
আমাকে তো দেখতে ভাল নয়। কোন মেয়ে আমাকে ভালবাসবে?
শুধু চেহারাটাই কি সব?
আমার বাইরের চেহারার মত ভিতরের চেহারাটাও যে আগলি নয়, তা কে বলতে পারে?
ডোন্ট সে দ্যাট : তোমার মত মানুষ কটা পাওয়া যায়?
সত্যি বলছি মিঃ সোম, ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি, আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম, আমার নতুন মা আমাকে ঈর্ষা করেন। উনি আমাকে যত বেশী ঈর্ষা করতেন, বাবাও তত বেশী উপেক্ষা করতে শুরু করলেন। দিনের পর দিন ওরা দুজনের কেউই আমার সঙ্গে কথা বলার সময় পেতেন না। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া বা ঘোরাঘুরি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল। ভাবতে পারেন আমার মানসিক অবস্থা? আমার জ্বালা। আমার অব্যক্ত বেদনা।
ওঁরা আমাকে যত বেশী দূরে সরিয়ে দিয়েছেন, জন আর আমি তত বেশী কাছাকাছি এসেছি। ওঁরা আমাকে যত বেশী অপমান করেছেন, জন আমাকে তত বেশী সম্মান দিয়েছে। ওঁদের যন্ত্রণার জ্বালাকে ভুলিয়ে দিয়েছে জনের ভালবাসা আর সমবেদনা।
আমার পিতৃদেব আমাকে শুধু স্নেহ-ভালবাসা থেকেই বঞ্চিত করেন নি; বঞ্চিত করেছেন শুভ বুদ্ধি থেকে। তিনি আমার জন্মদাতা হলেও তার চরিত্রের কোন গুণই আমি গ্রহণীয় মনে করি নি। শুধু তাই নয়। বাবাকে আমি শ্রদ্ধাও করি না, ভালবাসিও না।……
চিঠিখানা পড়তে পড়তে মিঃ সোম আনমনা হয়ে পড়েন। মনে পড়ে সেই দুটি দিনের কথা। অনেক ছেলেমেয়েরই বিয়ে হলো ওর সামনে কিন্তু এমন আত্মপ্রত্যয় নিয়ে আর কোন মেয়েকে বিয়ে করতে দেখেন নি। ওদের বিয়ে দেবার পর মিঃ সোম জনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বিবাহিত জীবন কিভাবে কাটাবার পরিকল্পনা করেছেন?
জন হেসে জবাব দেন, প্রতি অনেক ঐশ্বর্য দেখেছে। ওসবের প্রতি ওর কোন মোহ নেই। ও আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের মা হতে চায়; ওর আর কোন দাবি বা আশা নেই।
মিঃ সোম প্রীতির দিকে তাকাতেই ও বললো, ভবিষ্যতে দেখবেন আমি কিভাবে স্বামী ও সন্তানদের সুখী করি।
মিঃ সোম বললেন, নিশ্চয়ই আপনারা সুখী হবেন। জন একটু হেসে বললো, প্রীতিকে সুখী করা খুবই সহজ।
সোম সাহেব প্রশ্ন করলেন, তাই নাকি?
হ্যাঁ ও তো কিছু চায় না, শুধু ভালবাসা চায়। জন একটু থেমে বললো, ঐ ভালবাসা ছাড়া আমারও তো আর কিছুই দেবার ক্ষমতা নেই।
সেদিন বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হবার পর সামান্য কিছুক্ষণের জন্য কথাবার্তা হয়েছিল। সব কথা মিঃ সোমের মনে নেই কিন্তু প্রীতির একটা কথা কোনদিন উনি ভুলবেন না। ও বলেছিল, মিঃ সোম, আজ এই বিয়ের দিনই আপনাকে একটা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমাদের সন্তানদের কতদূর লেখাপড়া হবে, বল পারব না; তাদের সম্মান প্রতিপত্তি-ঐশ্বর্য হবে কিনা তাও জানি না কিন্তু জোর করে বলতে পারি আমাদের সন্তানরা নিশ্চয়ই ভদ্র, সভ্য ও চরিত্রবান হবে।
প্রীতির আত্মপ্রত্যয়ের কথা ভাবতে গিয়েও মিঃ সোম বিস্মিত হন। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন। ভাবেন ওদের কথা। তারপর আবার ওর চিঠিখানা পড়তে শুরু করেন।
…এ সংসারে সব মেয়েরাই বাবা ও দাদাদের মধ্য দিয়েই পুরুষদের সম্পর্কে ধারণা গড়ে তোলে। এরপর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই সে ধারণার পরিবর্তন হয়। বাবার কথা তা আগেই লিখেছি। বাবার দৌলতে আমি যে সমাজে বিচরণ করার সুযোগ পেয়েছি এবং পুরুষদের সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, তাও বিশেষ সুখকর নয়। বাবার হুকুমে, আমার নতুন মা-র তাগিদে আমাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন কোন পার্টি বা আউটিংএ যেতেই হয়েছে। প্রতিবারই অত্যন্ত তিক্ত অভিজ্ঞতা, নিয়ে ফিরে এসেছি এবং যে সমাজে আমি জন্মেছি, তার প্রতি আমার ঘৃণা আরো তীব্র হয়েছে। এই ঐশ্বর্যসম্পন্ন মানুষরূপী পশুগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্যও আমি জনকে বিয়ে করছি।…
প্রীতির এই দীর্ঘ চিঠির উত্তরে মিঃ সোম সামান্য কয়েক লাইনের চিঠি লিখেছিলেন। দিন দশেকের মধ্যেই আবার প্রীতির চিঠি এসেছিল। এই চিঠির শেষে সে লিখেছিল, জনকে বিয়ে করে আমি যে ভুল করিনি, তা প্রতি পদক্ষেপে বুঝতে পারছি। এ সংসারে মানুষ যে কত মহৎ হতে পারে, তা জনকে বিয়ে না করলে জানতে পারতাম না। কিন্তু এমন স্বামীর প্রতিও আমি আমার কর্তব্য পালন করতে পারছি না। তাই ঠিক করেছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যাব।…
ওদের কথা ভাবতে গিয়ে মিঃ সোমের দুটি চোখ ঝাঁপসা হয়ে ওঠে। হঠাৎ কলিং বেল বাজতেই তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে পড়েন।
বিয়ের নোটিশ দেবার ফর্মে সুবোধবাৰু আর শিখা সই করতেই কণিকা বললো, যাক, প্রথম পর্ব শেষ হলো। এবার তোমাদের বিয়ে দিয়ে হনিমুনে পাঠাবার পর আমার ছুটি।
মিঃ সোম হাসতে হাসতে বললেন, মনে হচ্ছে, আপনিই ঘটকালি করে এ বিয়ে দিচ্ছেন।
কণিকা হাসতে হাসতে বললো, তাহলে শুনুন। আমরা তিনজনেই এক অফিসের এক সেকশনে কাজ করি।শিখা আমার সবচাইতে ক্লোজ ফ্রেণ্ড। আস্তে আস্তে আমাদের দুজনের সঙ্গেই সুবোধের বেশ ভাব হয়। কণিকা এবার মুহূর্তের জন্য ওদের দুজনকে দেখে নিয়ে বললো, প্রথম প্রথম ভাবতাম, ও বোধহয় আমাকেই ভালবাসে……
ওর কথায় তিনজনেই হাসেন। :
ওদের হাসি দেখে কণিকা আরো সিরিয়াস হয়ে মিঃ সোমকে বললো, সত্যি বলছি, আগে আমার তাই ধারণা ছিল এবং সেজন্যই সিনেমা দেখার সময় সুবোধের হাতের উপর আমি হাত রাখতাম।…
কণিকার কথায় ওরা তিনজনে আরো জোরে হেসে ওঠেন।
কণিকা ওদের হাসি গ্রাহও করে না। বলে, অফিসের ক্যান্টিনে, রাস্তাঘাটে বা আউট্রাম ঘাটের ধারে ঘুরেফিরে বেড়াবার সময় কতবার সুবোধকে গদগদ হয়ে কত কথা বলেছি, কিন্তু সেসব ও আমলই দেয় নি।
মিঃ সোম গম্ভীর হয়ে বলেন, তাই নাকি?
কণিকা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে, আমার দুখের কথা শুনলে আপনার চোখে জল আসবে।…
বলেন কী?
সুবোধের দিকে তাকিয়ে কত মুচকি হেসেছি, কত সময় ইসারায় কত কি বলেছি কিন্তু ও এমন ন্যাকামি করত যেন আমাকে চেনেই না।
শিখা মুখ টিপে হাসতে হাসতে বললো, তুই প্রেমপত্র লিখেও জবাব পাস নি, সে কথা বলবি না?
কণিকা কপট গাম্ভীর্য নিয়ে বললো, নিজের মুখে নিজের ব্যর্থতার কথা আর কত বলব?
মিঃ সোম হাসতে হাসতে প্রশ্ন করলেন, সুবোধবাবু আপনি এত উদাসীন ছিলেন?
কণিকা আর উৎসাহ না পেয়ে বললো, শেষপর্যন্ত বুঝলাম, না, আমার কোন চান্স নেই।……
মিঃ সোম হাসতে হাসতে প্রশ্ন করেন, তাই বুঝি আপনি ওদের বিয়ের ঘটকালি করলেন?
এতক্ষণ চুপ করে থাকার পর শিখা বললেন, এবার আমাকেই ওর বিয়ের ঘটকালি করতে হবে।
মিঃ সোম বললেন, সে বিয়েও যেন আমার এখানেই হয়।
শিখা বললেন, সে আর বলতে হবে না।
আরো বেশ কিছুক্ষণ হাসিঠাট্টা গল্পগুজবের পর কণিকা বললেন, ওদের রেজেস্ট্রি বিয়ে হলেও লগ্ন দেখেই বিয়ে হবে।
মিঃ সোম আশ্বাস দেন, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
ওরা চলে গেলেও মিঃ সোম ওদের কথাই ভাবেন। তিনজনকেই ওর ভাল লেগেছে। যেমন হাসিখুশি প্রাণবন্ত, সেই রকম ভদ্র, সভ্য, মার্জিত। কারুর মধ্যেই যেন কোন গ্লানি নেই।
দিন পনের পরে শিখার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে কণিকা এসে বলে গেল, সাতাশে শ্রাবণ বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। সাতটা বাহান্ন থেকে নটা আঠারোর মধ্যে বিয়ে হবে।
মিঃ সোম বললেন, ঠিক আছে।
আমরা আপনার সামনে সামান্য একটু অনুষ্ঠানও করব।
তাতেও আপত্তি নেই।
.
সাতাশে শ্রাবণ।
সাড়ে সাতটা বাজতে না বাজতেই কণিকার নেতৃত্বে পনের কুড়ি জনের এক পার্টি এসে হাজির। সুবোধবাবু বরের বেশে ও শিখা নববধূর সাজে এসেছে। সঙ্গে দুপক্ষের কিছু আত্মীয়স্বজন ছাড়াও অফিসের বন্ধুবান্ধবরা এসেছেন।
প্রথমে আইন অনুসারে বিয়ে হলো। তারপর সাত পাক ঘোরা, মালাবদল। এক ব্রাহ্মণ বৈদিক মন্ত্রও পাঠ করলেন। সবশেষে মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা।
মিঃ সোমের এখানে ঠিক এ ধরনের বিয়ে হয়নি। তাই মাঝে মাঝেই এই বিয়ের স্মৃতি ওর মনে পড়ে।
তিন-চার মাস পরে মিঃ সোম আর তার স্ত্রী সাবিত্রী কিছু কেনাকাটা করতে বেরিয়ে সুবোধবাবু ও কণিকাকে দেখলেন। ওরা টের না পেলেও মিঃ সোম মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখেন, ওদের কথা শোনেন।
সুবোধবার একটা জামার কাপড় হাতে তুলতেই কণিকা বললেন, না, না, এটা তোমাকে মানাবে না।
সুবোধবাবু বললেন, অফিসের কাকে যেন এই ধরনের জামা পরতে দেখে শিখার খুব পছন্দ হয়েছিল। ও বলছিল–
শিখার পছন্দের কথা বলো না।
সুবোধবাবু আর কথা বলেন না। কণিকা জামার কাপড় পছন্দ করে বললো, দর্জিকে ঠিকমত বুঝিয়ে বলল। আগের জামার মত হলেই কেলেঙ্কারী।
মিঃ সোম রাস্তাঘাটে কদাচিৎ কখনও সুবোধবাবু ও কণিকাকে একসঙ্গে দেখতেন কিন্তু তার কোন বিশেষ তাৎপর্য বুঝতে পারতেন না। বছরখানেক পরে হঠাৎ একদিন ওরা দুজনে মিঃ সোমের কাছে এসে বিয়ের নোটিশ দিতেই সব তাৎপর্য বোঝা গেল।
মিঃ সোমের মনে অনেক প্রশ্ন এলেও উনি কিছু জিজ্ঞাসা করলেন। উনি জানেন, এসব নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এসব ব্যাপারে তৃতীয় ব্যক্তির নাক গলানো মোটেই উচিত নয়। তবে সুবোধর নিজেই কোর্টের অর্ডার দেখিয়ে বললেন, জানেন মিঃ সোম, যা চকচক করে তা অধিকাংশ সময়েই সোনা হয় না।
মিঃ সোম একটু ম্লান হাসি হেসে বললেন, গুরুজনরা তত তাই বলেন।
এবার কণিকা বললো, শিখা মেয়েটা ভাল কিন্তু কিভাবে স্বামীকে সুখী করতে হয় তা জানে না।
মিঃ সোম বললেন, অনেক মেয়ে যেমন স্বামীকে সুখী করতে জানেন, সেইরকম অনেক স্বামীও জানেন না কিভাবে স্ত্রীকে সুখী করতে হয়।
কণিকা বললো, তা ঠিক।
এবার মিঃ সোম বললেন, আসল কথা, আমরা সবাই যদি একটু বিচার-বিবেচনা করে চলতাম তাহলে এই পৃথিবীটা আরো অনেক সুন্দর হতে পারতো।
ওরা চলে গেলেও মিঃ সোমের মনে কিছু প্রশ্ন, একটু বিস্বাদ থেকে গেল।
.
তারপর একদিন ওদের বিয়ে হলো। সাক্ষী হিসেবে যারা এসেছিলেন তারা সুবোধবাবুর সঙ্গে শিখার বিয়ের সময় আসেন নি। অনুষ্ঠান শেষ হতেই ওরা চলে গেলেন। সুবোধবার আর কণিকা কিছু সময় গল্পগুজব করলেন।
কোন ভূমিকা না করেই সুবোধবাবু বললেন, কোনদিন ভাবিনি বিয়ে করব কিন্তু এমনই কপাল যে
ওকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই কণিকা বললেন, জানেন মিঃ সোম, আমি সত্যি ভাবিনি আমি সুবোধকে বিয়ে করব।
মিঃ সোম একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, সবই অদৃষ্ট।
কণিকা আবার বললেন, শিখা সত্যি ভাল মেয়ে। ওর অনেক গুণ আছে, কিন্তু সত্যি সংসার করতে জানে না। বিয়ের পর সুবোধ যেভাবে অফিস যেতো, তা দেখলে আপনি অবাক হতেন।
শিখার নিন্দা শুনতে মিঃ সোমের একটুও উৎসাহ ছিল না। তাই উনি বললেন, আপনাদের এসব ব্যক্তিগত কথা আমাকে না বলাই ভাল। আমি চাই আপনারা সবাই সুখী থাকুন।
সুবোধবাবু বললেন, আপনি আমাদের তিনজনকেই চেনেন বলেই কণিকা এসব বলছে।
মিঃ সোম একটু হেসে বললেন, আপনাদের তিনজনকে চিনি বলেই তো এসব শুনতে মন চাইছে না।
আর বিশেষ কিছু না বলে একটু পরেই ওরা দুজনে চলে গেলেন।
দিন দশ-পনের পরে হঠাৎ শিখা এসে হাজির। মিঃ সোম অবাক হয়ে বললেন, আপনি।
শিখা একটু হেসে বললো, এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম দেখা করে যাই।
খুব ভাল করেছেন।
আপনি কেমন আছেন?
আমি একরকম আছি। আপনি কেমন আছেন, তাই বলুন।
শিখা একটু ম্লান হেসে বললো, আমি কেমন আছি, তা কী আপনি জানেন না?
হ্যাঁ মানে…
আপনি তো জানেন, আমাদের ডিভোর্স হয়েছে?
মিঃ সোম মাথা নাড়লেন।
কণিকার সঙ্গে সুবোধের বিয়ে হয়েছে, তা তো নিশ্চয়ই জানেন?
মিঃ সোম মুখ নীচু করে বললেন, আমার এখানেই ওদের বিয়ে হয়েছে।
শিখা আবার একটু হাসলেন। বললেন, জানি।
এবার মিঃ সোম মুখ তুলে শিখার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, এরকম কেন হলো বলুন তো?
সত্যি শুনতে চান?
যদি আপনার আপত্তি না থাকে তো…
না, না, একটুও আপত্তি নেই। শিখা একটু থেমে বললো, আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, কণিকা সব ব্যাপারেই নিজেকে ইমপোজ করতে চায়?
হ্যাঁ, তা লক্ষ্য করেছি।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝখানে যদি একটা মেয়ে এসে সব সময় নিজেকে ইম্পোজ করে এবং স্বামী তা মেনে নেয়, তাহলে কী সংসার করা যায়?
তা ঠিক।
শিখা একটা চাপা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো, আপনি শুনে অবাক হবেন সুবোধ কি জামা-প্যান্ট পরবে, তাও কণিকা বলে দিত।
হঠাৎ সেই দোকানের স্মৃতি মনে পড়ল ওর। তবে মুখে কিছু বললেন না।
শিখা বলে যায়, প্রত্যেক দিন অফিসের পর কণিকা আমাদের সঙ্গে আমাদের বাড়ীতে আসত এবং সংসারের প্রতিটি ব্যাপারে আমাকে নিন্দা করত। আমি যা রান্না করব, তা ওর পছন্দ নয়; আমি যে বেডকভার কিনব, তা ওর পছন্দ নয়, আমি যে জামাকাপড় পরব, তাও ওর পছন্দ নয়।…
সুবোধবাবু কিছু বলতেন না?
কণিকার রুচির প্রতি, বুদ্ধির প্রতি ওর এমনই শ্রদ্ধা যে ও কখনই কোন ব্যাপারে প্রতিবাদ করত না।
আশ্চর্য ব্যাপার।
এতেই আশ্চর্য হচ্ছেন? শিখা একটু হেসে বললো, আপনি শুনলে অবাক হবেন, আমাদের স্বামী-স্ত্রীর একান্তই গোপনীয় ও প্রাইভেট ব্যাপারেও…
থাক, থাক, ওসব আর বলবেন না। মিঃ সোম একটু থেমে বললেন, আপনি ডিভোর্স করে ভালই করেছেন কিন্তু…। মিঃ সোম কথাটা শেষ করতে পারেন না। একটু দ্বিধা হয়।
শিখাই জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু কী?
একটু সঙ্কোচের সঙ্গে মিঃ সোম বললেন, আপনি এভাবে কতদিন। থাকবেন?
কেন? বেশ তত আছি।
হাজার হোক আপনার বয়স তত বেশী নয়, তার উপর কিছুদিন বিবাহিত জীবন কাটিয়েছেন।
তাতে কী হলো?
এখন বোধহয় আপনার পক্ষে বেশীদিন একলা থাকা সম্ভব নয়।
আমার তো এখন একলা থাকতে বরং ভালই লাগছে।
এবার মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করেন, আচ্ছা, আপনারা তিনজনে কী এখনও একই সেকশনে কাজ করছেন?
শিখা একটু হেসে বললো, না। কণিকা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে; আর সুবোধ অন্য সেকশনে চলে গেছে।
একটু চুপ করে থাকার পর শিখা আবার বলে, সুবোধকে বিয়ে করার পর কণিকার আর আমাদের অফিসে চাকরি করা সম্ভব নয়।
কেন?
শিখা একটু হেসে বলে, এম. এ. পাস করার পর চাকরি শুরু করি কিন্তু তবু মাঝে মাঝে মনে হতো, কোন কলেজে পড়াবার সুযোগ পেলেই ভাল হতো। তাই মাঝে মাঝেই আমার এক অধ্যাপিকার বাড়ীতে যেতাম। উনি অবশ্য সব সময় বলতেন, মফঃস্বল কলেজে চাকরি করার চাইতে যে চাকরি পেয়েছ, তা অনেক ভাল। তবু আমি মাঝে মাঝে ওঁর কাছে যেতাম।
তারপর?
কবছর আগে এক রবিবার সকালবেলায় ঐ শিবানীদির ওখানে যেতেই
আরে শিখা, এসো, এসো। তোমার কথাই ভাবছিলাম।
কেন শিবানী দি? কলকাতার কোন কলেজে…
শিখা, না। আমার জানাশুনা একটি মেয়ে বড়ই বিপদগ্রস্ত। তাহ ভাবছিলাম তুমি যদি চেষ্টা করে মেয়েটিকে তোমাদের অফিসে ঢোকাতে পারতে তাহলে খুব ভাল হতো।
সেও বুঝি আপনার ছাত্রী?
না, কণিকা আমার ছাত্রী না কিন্তু এক ছাত্রীর সঙ্গে এককালে আমার কাছে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতো।
মেয়েটির নাম বুঝি কণিকা?
হ্যাঁ।
উনিও কি এম. এ পাস?
না; বি. এ.।
আমাদের ওখানে কোন ভ্যাকান্সী আছে কিনা জানি না, তবে আপনি যখন বলছেন তখন নিশ্চয়ই চেষ্টা করব।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, চেষ্টা করে। কণিকা চাকরি না পেলে সত্যি খুব বিপদে পড়বে। শিবানীদি খুব জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, বেচারা যেভাবে দিন কাটাচ্ছে সে আর বলার নয়।
শিখা একটু হেসে বললো, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি আমার কথায় কণিকার চাকরি হবে; কিন্তু ডিরেক্টর সাহেবকে অনুরোধ করতেই উনি রাজী হয়ে গেলেন।
মিঃ সোম অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, তাহলে আপনিই ওকে চাকরি দেন?
হ্যাঁ, তা বলতে পারেন।
সুবোধবার কতকাল আপনাদের অফিসে চাকরি করছেন?
আমার বছর দুই আগে থেকে ও কাজ করছে।
মিঃ সোম আপন মনে একটু হাসেন। কি যেন ভাবেন। কয়েক মিনিট কেউই কোন কথা বলেন না। তারপর শিখাই প্রথম কথা বলে, কী ভাবছেন এত গভীরভাবে?
আর কি ভাবব? আপনার কথাই ভাবছি।
এবার শিখা একটু হেসে প্রশ্ন করল, শুধু আমার কথাই ভাবছেন? কণিকার কথা ভাবছেন না?
নিশ্চয়ই ভাবছি।
কী ভাবছেন?
ভাবছি যে আপনার দ্বারা এত উপকৃত হয়েছে, সে কিভাবে আপনার সর্বনাশ করল।
শিখা আবার একটু হাসে। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, এসব কথা কোনদিন কাউকে বলিনি, কিন্তু আজ আপনাকে বলছি, শুধু চাকরি দিয়ে নয়, সে সময় আরো অনেক ভাবে কণিকাকে সাহায্য করেছিলাম। তাছাড়া কণিকাকে সত্যি আমি ভালবেসেছিলাম।
তা আমি প্রথম দিনই বুঝেছিলাম।
আরো কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে শিখা চলে গেল। যাবার আগে মিঃ সোম বললেন, এদিকে এলে নিশ্চয়ই আসবেন। খুব খুশী হবে।
হ্যাঁ, আসব।
সত্যি এদিকে কোন কাজকর্মে এলেই শিখা আসত। একটু গল্প গুজব করে চলে যেত। সব সময় একলা আসত না, মাঝে মাঝে অফিসের কেউ-না-কেউ সঙ্গে থাকতেন। মিস ঘোষ বা মিসেস ব্যানার্জি ছাড়াও অলকবার কখনও কখনও শিখার সঙ্গে আসতেন।
এইরকমই কাউকে সঙ্গে এনে শিখা একবার জানিয়ে গেল, বিয়ের মাসের মধ্যেই কণিকার মেয়ে হয়েছে। হাসপাতালে আছে, সময় হলে একবার দেখে আসবেন।
মিঃ সোম কোন মন্তব্য করলেন না, শুধু একটু হাসলেন।
এইভাবে আরো মাসছয়েক কেটে গেল।
তারপর একদিন বিকেলে হঠাৎ শিখা আর অলকবাবু এসে হাজির!
দু-পাঁচ মিনিট অন্যান্য কথা বলার পর শিখা বললো, আপনি ঠিকই বলেছিলেন, একলা একলা বেশীদিন থাকা যায় না।
মিঃ সোম বললেন, একলা থাকা তো মানুষের ধর্ম নয়।
শিখা একটু মুখ নীচু করে বললো, আমাদের অফিসের সবাই অলককে ভালবাসেন। আমারও ভাল লাগে; কিন্তু জানতাম না, ও আমাকে ভালবাসে।
মিঃ সোম ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, একটা কথা বলব?
অলকবাবু বললেন, নিশ্চয়ই।
মিঃ সোমের মুখে তখনও হাসি। উনি অলকের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা দুজনে যেদিন প্রথম আমার এখানে আসেন, সেদিন রাত্রেই আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিলেন
শিখার সঙ্গে যে ভদ্রলোক এসেছিলেন, তার নাম কী?
অলকবাবু।
ভদ্রলোককে দেখলেই মনে হয় খুব ভাল লোক। তাই নাকি?
হ্যাঁ। সাবিত্রী একটু থেমে বললো, ভাল লোক না হলে এমন সৌম্য দর্শন হয় না।
মিঃ সোম বললেন, হ্যাঁ, ওকে দেখতে ভারী সুন্দর।
শুধু সুন্দর নয়; ওর দুটো চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, ভদ্রলোক অত্যন্ত সৎ।
অলকবাবুর সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমারও বেশ লাগল।
সাবিত্রী এবার আক্ষেপ করে বলে, শিখা যদি সুবোধবাবুকে বিয়ে না করে এই ভদ্রলোককে বিয়ে করতো, তাহলে মেয়েটাকে এত দুঃখ ভোগ করতে হতো না।
মিঃ সোমের কাছে ওর স্ত্রীর কথা শুনে ওরা দুজনেই অত্যন্ত খুশি হলো কিন্তু লজ্জায় কেউই কোন কথা বললেন না।
মিঃ সোম জানতে চাইলেন, অলকবাবুর সঙ্গেই আপনার বিয়ে হচ্ছে তো?
শিখা মুখ নীচু করে বললো, হ্যাঁ, অলক আমার দায়িত্ব নিতে স্বাজী হয়েছে।
খুব ভাল কথা। আমি চাই, আপনি বিয়ে করুন, সুখে থাকুন।
সেদিনই ওরা বিয়ের নোটিশ দিয়ে গেলেন। তারপর একদিন ওদের বিয়েও হলো।