৩. পারিজাত

৩। পারিজাত

লোকটা চেঁচাচ্ছে ফটকের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে, গলায় প্রগাঢ় মাতলামি। আমার ঘর থেকে অত দুরের চেঁচানি শোনা যায় বটে, কিন্তু ভাল বোঝা যায় না। তবে আমি জানি, লোকটা আমাকে গালাগাল দিচ্ছে। খুবই অশ্লীল, অসাংবিধানিক ভাষায়। ওর কথায় কান বা গুরুত্ব না দেওয়াই ভাল। কারণ আমার ধারণা, যে কোনও গরিব দেশেই এরকম দৃশ্য হামেশাই দেখা যায়। কিছু লোকের বদ্ধমূল ধারণা, তাদের দুর্ভাগ্যের জন্য অন্য কিছু লোক দায়ী। এদের যত রাগ সব সেই অন্যদের বিরুদ্ধে। যারা জোট বেঁধে মিছিলে সামিল হয়ে অন্যের বিরুদ্ধে তারস্বরে নালিশ জানায় তারাও এরকমই। দারিদ্র্যসীমা নামক যে রেলবাঁধটা আমি দেখতে পাই এরা হচ্ছে তার ওপারের লোক।

অরিন্দমবাবু একটু সচকিত হয়ে বললেন, বাইরে একটা লোক খুব চেঁচাচ্ছে না?

আমি বিনীতভাবে বললাম, আজ্ঞে হ্যাঁ।

 কী বলছে বলুন তো?

আমি সত্য গোপন না করে আরও বিনীতভাবে বলি, আমাকে গালগাল দিচ্ছে।

 আপনাকে। কেন?

ওর ধারণা ওর দুর্ভাগ্যের জন্য আমিই দায়ী।

সে কী! আপনি ওর কী করেছেন?

আমি নাটকীয়ভাবে একটু চুপ করে থাকি। গল্পটা খুবই সাধারণ এবং এরকম ঘটনা আকছার ঘটছেও। অক্ষয় নামে ওই লোকটির একটি ছোট্ট ওয়ার্কশপ ছিল। বেশিরভাগই গ্যাস আর ইলেকট্রিক ওয়েলডিং-এর কাজ হত তাতে। লাভ মন্দ হত না একসময়ে। কিন্তু লোকটা দুর্দান্ত মালখোর, তেমনি সাংঘাতিক মেয়েমানুষের প্রতি লোভ। খালপাড়ের এক সেয়ানা হুঁড়ি অক্ষয়ের রসকষ টেনে নিচ্ছিল। এসব লোকের যা হয়, হঠাৎ একদিন নগদ টাকায় টান পড়ে। তখন আর কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। সেই আস্থায় একদিন কারখানাটা আমাকে বিশ হাজারে বেচে দেয়, দাম যে খুব খারাপ পেয়েছে তা নয়। কিন্তু মুশকিল হল, টাকাটা নিয়েই ফুকে দিয়েছে। এদিকে আমার লক্ষ্মীমন্ত হাতে পড়ে কারখানাটা এখন দিব্যি চলছে। সাত-আটজন লোক খাটে। লোকটার সেই থেকে রাগ। কিন্তু আমি ওর ওপর রাগ করতে পারি না। মূর্খ, অজ্ঞ, দরিদ্র ভারতবাসীরই ও একজন।

ঘটনাটা যতদূর সম্ভব নিরলঙ্কার এবং সরলভাবে আমি একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অরিন্দমবাবুকে শোনালাম।

উনি একটু ভ্রু কুঁচকে বললেন, স্ট্রেঞ্জ। কিন্তু লোকটা এরকম চেঁচায় আর আপনিও সহ্য করে যান? স্টেপ নে না কেন?

আমি বিনীতভাবে চুপ করে থাকি। অরিন্দমবাবুর মাথা নিশ্চয়ই অতি পরিষ্কার এবং ঝকঝকে। নইলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করতেন না। আমার মাথা তত পরিষ্কার নয়। অনেক কুটিলতা-জটিলতার রাস্তা আমাকে পেরোতে হয়। তবে পাবলিসিটির ব্যাপারটা আমি অরিন্দমবাবুর চেয়ে ভাল বুঝি। ওই যে অক্ষয় চেঁচায় এবং আমি ওকে তাড়িয়ে দিই না এটাও লোকে লক্ষ করে। চেঁচাতে চেঁচাতে, গালাগাল দিতে দিতে অক্ষয় একসময় ক্লান্ত হয়ে চলে যায়, লোকেও রোজ শুনে শুনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তারা আর অক্ষয়ের কথায় গুরুত্ব দেয় না, বরং আমি যে অক্ষয়ের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিই না এটাই ক্রমে ক্রমে গুরুত্ব পেতে থাকে। উপরন্তু অক্ষয়ের কোনও গালাগালিই আমাকে স্পর্শ করে না। আমি যখন দারিদ্র্যসীমার ওপাশে ছিলাম তখন এর চেয়ে বহুগুণ খারাপ গালাগাল আমি নিত্যদিন শুনেছি।

আমি অরিন্দমবাবুকে তার জিপগাড়িতে তুলে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফটক পর্যন্ত এগিয়ে যাই এবং অক্ষয়ের মুখোমুখি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। আমাকে সামনে দেখে অক্ষয়ের উৎসাহ চতুগুণ বেড়ে যায়। সে সোল্লাসে লাফাতে লাফাতে বলতে থাকে, এই সেই হারামির বাচ্চা, এই সেই শুয়োরের বাচ্চা, এই ব্যাটা খানকির পুত আমার কারখানা হাতিয়ে নিয়েছে, আমার বউকে বিধবা করেছে…ইত্যাদি। শেষ কথাটা অবশ্য ডাহা মিথ্যে। অক্ষয়ের বউ বহুদিন আগে মারা গেছে, কাজেই তার বউয়ের বিধবা হওয়ার প্রশ্ন আসে না। যদি বউ বেঁচে থাকতও তাহলেই বা অয় বেঁচে থাকতে কীভাবে তাকে আমি বিধবা করতাম সেটা আমার মাথায় এল না।

অক্ষয়ের এই আস্ফালন ও গালমন্দ কিন্তু বাস্তবিকই আমি উপভোগ করি। ভির ভিতরে আমার একধরনের শিহরণ হতে থাকে। পৃথিবীকে আমি কতখানি ডিসটার্ব করতে রেছি অক্ষয় তার এক জ্বলন্ত প্রমাণ। দারিদ্র্যসীমার ওপাশে থাকার সময় আমি প্রায়ই নিজের অস্তিত্ব অনুভব করতাম না। আমরা আছি কি নেই তা নিয়ে বহুবার সংশয় দেখা দিত। আমাদের বাঁচা বা মরা কোনওটাই টের পেত না বিশ্ববাসী, আমাদের খিদে লজ্জা ভয় সবই ছিল আমাদের নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই যখন অক্ষয় বা তার মতো কেউ আমাকে গালমন্দ করে, আমার বিরুদ্ধে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করে, লোকজনকে ধরে ধরে আমার কুৎসা গেয়ে বেড়ায় তখন আমি আমার ব্যাপক অস্তিত্বটাকে টের পাই। আমার অস্তিত্ব চারদিকে নাড়াচাড়া ফেলছে, আমাকে ঘিরে ঘটছে ঘটনাবলী। আমি আর উপেক্ষার বস্তু নই। আমি যে আছি তো লোকে টের পাচ্ছে।

সন্ধে হয়ে এসেছে। গাঢ় মেঘ ছিল আকাশে। বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামল। আমি ঘরে ফিরে আসি।

চতুর্ভুজের সাইকেল এসে থামল বাইরে। ভেজা গা বারান্দায় একটু ঝেড়ে নিয়ে ঘরে ঢুকে সে বলল, বাকা বাঁশ আজও সোজা হল না।

আমি বললাম, বুড়ো যদি রাজি না হয়েই থাকে তবে তুমি আর শিগগির ওর কাছে যেয়ো না, বরং তার যে ছেলে কলকাতায় থাকে তার পাত্তা লাগাও। শুনেছি তার অবস্থা ভাল নয়। ভাল দাম পাওয়া যাবে শুনলে সেই এসে বুড়োকে রাজি করাবে।

চতুর্ভুজ একটু হতাশার গলায় বলল, সরকার যে ওদিকে ডেভেলপমেন্ট করবে তা বুড়ো জেনে গেছে।

আমি শান্ত স্বরেই বললাম, এসব খবর কি আর চাপা থাকে? কেউ না কেউ রটাবেই।

চতুর্ভুজ যে ব্যর্থতার গ্লানিতে ভুগহে তা ওর মুখ দেখেই বোঝা যায়। অথচ জমিটা ও কিনবে না, কিনব আমি। তবে ওর দুঃখ কীসের? আমার মনে হয়, অন্য লোকে যদি লটারি পায় তবে মানুষ যে সব সময়ে তাকে হিংসে করে তা নয়। অনেক সময়ে মানুষ সেই লোকটার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে এক ধরনের আত্মরতি করতে থাকে। এও হল তাই। এ জমি কিনে আমি যদি মোটারকম একটা দাও মারতে পারি তবে চতুর্ভুজ খুশি হবে।

কিন্তু মোটারকম দাঁও মারার ব্যাপারটা এখনও অনিশ্চিত। গভর্নমেন্ট যে ঠিক ওই জায়গাতেই ডেভেলপমেন্ট করবে তা পাকাপাকিভাবে স্থির হয়নি। তবে এই অঞ্চলে কিছু কৃষিনির্ভর, শিল্প বা অ্যাগ্রো ইনডাসট্রি গড়ে তোলার একটা কথা চলছে। মউডুবির বঙ্কিম গাঙ্গুলির জমিটা কিনতে পারলেও সেটা আমার পক্ষে একটা জুয়া খেলার সামিলই হবে। যদি শেষ অবধি ওদিকে ডেভেলপমেন্ট না হয় তাহলে টাকাগুলো আটকে রইল। তবে অরিন্দমবাবু এবং অন্যান্য জানবুঝওলা অফিসাররা আমাকে গোপনে জানিয়েছেন, মউডুবিই সেই চিহ্নিত জায়গা।

আমি সহজে হতাশ হই না। কারণ আমি বড় হয়েছি এক মস্ত অন্ধকার বুকের মধ্যে নিয়ে। আমার জীবনটাও নানারকম জুয়া খেলার সাফল্যের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে।

আমি আচমকাই চতুর্ভুজকে জিজ্ঞেস করলাম, নারকোল ডিহাইড্রেট করা যায় না?

 চতুর্ভুজ ক্যাবলার মতো মুখ করে বলল, তা তো জানি না।

 মউডুবিতে খুব নারকোল হয়।

তা হয়। তবে লোকে টাটকা নারকোল পেলে কি আর নারকোলের গুঁড়ো নিবে?

আমি টপ করে বললাম, আদাও তো বাজারে টাটকা পাওয়া যায় তবে আদার গুঁড়ো বিক্রি হয় কেন?

চতুর্ভুজ অবাক হয়ে বলে, হয় নাকি?

না হলে বললাম কেন? গুড়ো নারকোলের অনেকগুলো প্লাস পয়েন্ট আছে। আজকালকার বউ-ঝিরা ঘরের কাজ বেশি করতে চায় না। নারকেল কোরানোও এক মহা ঝামেলার ব্যাপার। ডিহাইড্রেটেড নারকোল পেলে তারা খুশিই হবে। তাছাড়া উত্তর ভারতের একটা মস্ত এলাকায় নারকোল হয় না। দক্ষিণ ভারত বা এদিক থেকে যা যায় তার দাম সাবাতিক। সুতরাং ডিহাইড্রেটেড নারকোলের বাজার আছে। অবশ্য যদি করা যায়।

চতুর্ভুজ এ কথাতেও বেশ উত্তেজিত হয় এবং বোধহয় স্বপ্ন দেখতে থাকে। যদিও ডিহাইড্রেটেড নারকোল ঘেঁ আমি আরও বড়লোক হলেও তার এক পয়সা লাভ নেই। সু সে আমার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে একটা গোলাপি ভাবীকালের কথা ভাবতে থাকে, তার চোখেমুখে একটা সশ্রদ্ধ স্বপ্নাচ্ছন্ন ভাব ফুটে ওঠে। সে বলে, মউডুবিতে এক সাহেবের একটা পোয় নারকোলবাগান আছে। ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করব?

দাঁড়াও, আগে খোঁজ নিই নারকোলের ডিহাইড্রেশন সম্ভব কি না।

চতুর্ভুজ সে কথাকে পাত্তা না দিয়ে বলে, বঙ্কিম গাঙ্গুলিরও মেলা নারকেল গাছ। ফাঁকা জমিতে কেরালার কিছু জলদি জাতের আরও চারা লাগিয়ে দিলে পাঁচ বছরের মধ্যে ফলন পেয়ে যানে।

আমি তাকে আর থামানোর চেষ্টা করি না। গরিবের তো স্বপ্নই সম্বল, হোক না তা অন্যকে নিয়ে। চতুর্ভুজ নারকেল গাছের বাই-প্রোডাক্টগুলোর কথাও আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। দড়ি, পাপোশ, হুঁকোর থেলো, পুতুল, অ্যাশট্রে, ছাইদানি, আরও কত কী!

আজ একটু দেরি করে অসীমা এল। দেরি হওয়ারই কথা। শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীদের খুব জরুরি একটা মিটিং হয়ে গেল স্কুলে আজ। প্রসঙ্গ ছিল, করাপশন। স্কুলের বেশ কিছু টাকা নয়ছয় হয়েছে, হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না, অডিটার অসন্তুষ্ট। এ সবই আমি আগে থেকে জানতাম।

আজ সন্ধে হয়ে গেছে এবং বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। কাজেই আজ আমাদের বনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অসীমা তার বেঁটে ছাতাটা দরজার পাশে রেখে আধভেজা শরীরে ঘরে ঢুকতেই চতুর্ভুজ সবেগে বেরিয়ে গেল। প্রেমিক-প্রেমিকাকে ডিস্টার্ব করতে নেই।

অসীমার মুখ চোখের চেহারা আজ আরও খারাপ। ওর ভিতরকার সব আলোই যেন নিভে গেছে। উপমাটা কারও কারও অপছন্দ হতে পারে। কিন্তু আমি মানুষকে মাঝে মাঝে বাড়ি হিসেবেও দেখি। এক-একটা মানুষকে দেখে মনে হয়, সব ঘরে আলো জ্বলছে, জানলা দরজা খোলা, পর্দা উড়ছে হাওয়ায়, এইসব মানুষেরা হা হা করে হাসে, উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে, এদের জীবনে দুঃখ বড় ক্ষণস্থায়ী। কিছু কিছু মানুষের দু-একটা ঘরে আলো জ্বলে, বেশিরভাগ জানালা কবার্টটাই থাকে বন্ধ। আর কিছু মানুষ জন্মদুঃখী। ওদের বড়জোর বাথরুমে একটুখানি আলো জ্বলে। জানান দেয় যে, লোকটা আছে। অসীমার আলোর জোর নেই, জানালা কপাট সবই প্রায় বন্ধ। তবু এক চিলতে কপাটের ফাঁক দিয়ে একটু যে আলো দেখা যেত তাও যেন কে আজ এক ফুকারে নিভিয়ে দিয়েছে।

সে বসলে আমি জিজ্ঞেস করি, আজ মিটিং-এ কী হল?

অসীমা মাথা নেড়ে বলল, কিছু হয়নিখুব গণ্ডগোল হয়ে মিটিং ভেঙে গেল।

 সেরকমই কথা। তবু আমি মুখখানা নির্বিকার রেখে বললাম, কী নিয়ে গণ্ডগোল?

কমলাদি তোমার এগেনস্টে চার্জ আনার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কয়েকজন কমলাদির এগেনস্টে কথা বলতে শুরু করে দিল। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক।

অস্বাভাবিক কেন?

টিচাররা এতকাল কেউ কমলাদির বিরুদ্ধে একটিও কথা বলত না, দু-একজন ছাড়া। আজ অনেকেই দেখলাম কমলাদির বিরুদ্ধে। তবে তারা যা বলছিল তা আমাদের আজকের এজেন্ডায় ছিল না।

আজ তো করাপশান নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল তোমাদের।

হ্যাঁ, স্কুল ফান্ড এবং অডিট রিপোর্ট নিয়ে সে আলোচনা ভণ্ডুল হয়ে গেছে।

কমলাদির রি-অ্যাকশন কী?

প্রথমে কিছুক্ষণ কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর যখন ওঁর বিরুদ্ধে খোলাখুলি বলতে লাগল কয়েকজন তখন একদম পাথরের মতো চুপ করে গেলেন। সারাক্ষণ একটিও কথা বলেননি।

আমি অসীমার মুখের দিকে নিবিড় দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলাম। বুঝতে পারছি, অসীমা আজকের মিটিং ভণ্ডুল হওয়ায় খুশি হয়নি। কমলা সেন জব্দ হওয়াতেও আহ্লাদিত হয়নি। অথচ হওয়া উচিত ছিল। আমার মন বলছে, আর কয়েকদিনের মধ্যেই কমলা সেনকে রেজিগনেশন দিতে হবে। সেক্ষেত্রে অসীমার হেডমিসট্রেস হওয়া আটকানোর কেউ নেই। তবু অসীমা খুশি নয়। আশ্চর্য।

আমি মৃদু মেহসিক্ত স্বরে বললাম, তোমার কি শরীর ভাল নেই অসীমা?

কেন বলো তো!

 তোমাকে ভাল দেখছি না।

মনটা ভাল নেই। স্কুলটার কী হবে তাই ভাবছি।

 কী আর হবে, উঠে যাবে না। ভয় নেই।

তা নয়। কমলাদি চলে গেলে স্কুলটার আর সেই গুডউইল থাকবে না। এই স্কুলের জন্য উনি একসময়ে নিজে বাহান্ন ভরি সোনার গয়না দিয়ে দিয়েছিলেন, সেটা তো জানো।

জানি।

 স্কুল স্কুল করে পাগল। এখনও ঘুরে ঘুরে দেখেন কোথাও ঝুল জমছে কি না, কোথাও ঘাস বড় হয়েছে কি না, কোনও বেঞ্চির পেরেক উঠে আছে কি না। ওঁর মতো এরকম আর কে করবে?

আমি নিরীহ মুখ করে বললাম, পৃথিবীতে কেউ তো অপরিহার্য নয়।

অসীমা আমার দিকে চেয়ে ছিল। কিন্তু লক্ষ করলাম ওর দৃষ্টি আমাকে ভেদ করে বহু দুরের এক আভাসিত রহস্যময় অন্ধকারকেই দেখছে বুঝি।

আমি জানি কথা ও নীরবতা এই দুইয়ের আনুপাতিক ও যথাযোগ্য সংমিশ্রণের দ্বারাই মানুষকে প্রভাবিত করতে হয়। কেবল কথা বলে গেলেই হয় না, আবার শুধু চুপ করে থাকলেও হয় না। কখন কথা বলতে হবে এবং কখন নয় তা বোঝা চাই।

পরিস্থিতি বিচার করে আমি বুঝলাম, এখন চুপ করে থাকাটা ঠিক হবে না। তাই আমি খুব মোলায়েম গলায় বললাম, একসময়ে পণ্ডিত নেহরু যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন আমরা ভাবতাম নেহরু মারা গেলে বুঝি দেশ অচল হয়ে যাবে। কিন্তু তা তো হয়নি। রাশিয়ায় স্ট্যালিনের পরও দেশ চলেছে, মাওকে ছাড়াও চলছে চিন।

অসীমার দৃষ্টি দুর দর্শন থেকে নিবৃত্ত হল না। তবে সে মৃদুকণ্ঠে বলল, কমলাদির জায়গায় আমি হেডমিসট্রেস হলে কেউ আমাকে পছন্দ করবে না।

কথাটা নির্মম সত্যি। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে গেলাম। মুখটা একটু হাসি-হাসি করে বললাম, কমলাদির অবদান তো কম নয়। এতকাল তিনিই তো একচ্ছত্র আধিপত্য করেছেন। কিন্তু আমরা যেমন নেহরুর পর ইন্দিরা গাঁধীকে মেনে নিয়েছি, তেমনি তোমাকেও সবাই একদিন মেনে নেবে।

তুলনাটা অসীমাকে স্পর্শ করল না। খুব সিরিয়াস টাইপের মেয়ে। সহজে ওকে প্রভাবিত করা যায় না। একটু ধরা গলায় বলল, স্কুলকে আমিও ভালবাসি। কিন্তু কমলাদি অন্যরকম। স্কুলটাই ওঁর প্রাণ। আমার তো মনে হয় চাকরি ছাড়লে উনি বেশিদিন বাঁচবেন না।

আমি একটু কঠিন হওয়ার চেষ্টা করে গম্ভীর হয়ে বললাম, আমাদের তো কিছু করার নেই।

 জানি।-বলে চুপ করে রইল অসীমা।

আমি অসীমার মনোভাব যে সঠিক বুঝি তাও নয়। কমলা সেন চাকরি ছেড়ে দিলে অসীমা হেডমিস্ট্রেস হবে, কিন্তু ওই লোভনীয় পদ ও নিরঙ্কুশ আধিপত্যের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ওকে আকর্ষণ করে না। কেন করে না তা ভেবে আমি বিস্মিত হতে পারতাম। কিন্তু আমার বিস্ময়বোধটা বিচিত্র ধরনের মানুষ দেখে দেখে লুপ্ত হয়ে গেছে। বিচিত্র, বহুমুখী ও বিটকেল চরিত্রের লোকে দুনিয়াটা ভরা। একজন বিচিত্র মানুষের কথা আমি জানি। খুবই বিচিত্র চরিত্রের লোক। গাঁয়ের কয়েকজন কামার্ত পুরুষ একবার একজন সুন্দরী যুবতীর প্রতি লোভ করেছিল। মেয়েটা যেখানে যেত সেই পথেরই আশেপাশে ঘাপটি মেরে থাকত তারা। মেয়েটা ভ্রূক্ষেপও করত না। লোকগুলো নানা রকম ফাঁদ পেতে পেতে যখন হয়রান হয়ে পড়ল তখন সেই বিচিত্র লোকটি একদিন এসে জুটল তাদের দলে। জিজ্ঞেস করল, তোদের মতলবখানা কী বল তো? লোকগুলো কাচুমাচু হয়ে বলল, ঠাকুর ভাই, ওই মেয়েটা যে আমাদের পাত্তাই দেয় না, তার একটা ব্যবস্থা করে দাও। তুমি তো শুনি বিস্তর লোকের হরেকরকম, সমস্যার সমাধান করে বেড়াও। আমাদের এটুকু করে দাও দেখি। লোকটা বলল, এ আর কথা কী! মেয়েটা পুকুর থেকে কলসিতে জল ভরে ফিরছিল। লোকটা গিয়ে পিছন থেকে ডাক দিল, মা, ওমা। কেমন আছিস মা? মেয়েটা ওই মা ডাকে এমন উজ্জ্বল, এমন আলোকিত, এত লজ্জারুশ হয়ে উঠল যে, বহুগুণ সুন্দর দেখাল তাকে। মিষ্টি হেসে বলল, ভাল আছি বাবা, তুমিও ভাল থেকো। লোকটা একগাল হেসে কামার্ত সেই লোকগুলোর কাছে এসে বলল, দেখলি। ভারী সোজা মেয়েদের বশ করা। একবার মা যদি ডেকে ফেলতে পারিস তাহলেই কেল্লা ফতে। মেয়েটাও বশ হল, ভিতরকার শক্তটাও বশ হল। এরপর থেকে সেই লোকটা বোজ সেই লোকগুলোকে তাড়া দিত, ডাক, মেয়েটাকে মা বলে ডাক। ডেকেই দেখ না, কী হয়। তা সেই লোকগুলো অতিষ্ঠ হয়ে একদিন ডেকেই বসল, মা। আর সেই মা ডাকের সঙ্গে সঙ্গে কাধ থেকে ভূতটা নেমে গেল।

বলতে কী, এইসব বিচিত্র ও বিটকেল লোককে আমি ভয় খাই। কাঁধ থেকে ভূত নামানো আমার উদ্দেশ্য নয়। বরং কাঁধে কিছু কিছু ভূত সর্বদা বসে ঠ্যাং দোলাতে থাকুক। তাতে দুনিয়াটা অনেক স্বাভাবিক ও যুগোপযোগী হয়। হেডমিসট্রেস হওয়ার সম্ভানায় অসীমার আনন্দ না হওয়াটা আমার চোখে ভূতের অভাব বলেই ঠেকল। তবু আমি বিস্মিত হলাম না। কারণ এরকম আমার দেখা আছে।

অত্যন্ত সৌহার্দ্যের গলায় আমি বললাম, কমলা সেন যতই এফিসিয়েন্ট হোক অসীমা, একটি স্কুলের হেডমিসট্রেসের পক্ষে চরিত্রটা মস্ত বড় কথা।

অসীমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর উঠল।

বলতে কী, আজ আমাদের প্রেমপর্বটা বেশ দীর্ঘক্ষণই চলেছে। অন্যান্য দিন এতক্ষণ আমরা প্রেম করি না।

বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। বর্ষাকালের ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি। সহজে থামবে না, তাই অসীমাকে যেতে নিষেধ করে লাভ নেই। এই বৃষ্টিতে ওর তেমন কোনও ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না।

অসীমা ছাতা খুলে বারান্দা থেকে নামতে গিয়েও কী ভেবে ফিরে এল।

শোনো।

বলো।

আমাদের স্কুলে ম্যাথমেটিকসের ভ্যাকেনসিতে কি ক্যান্ডিডেট ঠিক হয়ে গেছে?

মোটামুটি। কেন বলো তো?

আমাকে একজন খুব ধরেছে একটা ছেলেকে ওই চাকরিটা দেওয়ার জন্য।

ছেলেটা কে?

তুমি চিনবে না। কলকাতায় থাকে।

 আমরা তো ঠিকই করেছি, লোকাল ক্যানডিডেটকে প্রেফারেনস দেব।

এই ছেলেটিও লোকাল। মউডুবিতে বাড়ি।

ওর হয়ে কে তোমাকে ধরেছে?

সত্যনারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের গণেশবাবু। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। ছেলেটা আমার কাছে এসেছিল। খুব স্মার্ট আর সিরিয়াস ছেলে।

আমি একটু মুশকিলে পড়লাম। জহরবাবুর মেয়েও অঙ্কে অনার্স। গতকাল রাতে আমি একরকম ঠিক করেই ফেলেছিলাম যে, জহরবাবুর মেয়েকেই এই চাকরিতে বহাল করা হবে। এখন অসীমার ক্যানডিডেট আবার গোলমাল পাকাল।

বললাম, ছেলেটাকে আমার কাছে পাঠিও তত একবার দেখব। মউডুবিতে বাড়ি বলছ? কোন বাড়ির ছেলে?

অত খোঁজ নিইনি। কেন বলো তো?

এমনি। অঙ্কের পোস্টটার জন্য জহরবাবুর মেয়েও ক্যানডিডেট। বি এসসি বি এড।

জানি।

এই ছেলেটার কোয়ালিফিকেশন কী?

অঙ্কে অনার্স, তবে বি এড নয়।

তা হলে তো মুশকিল।

অসীমা একটু ধৈর্যহারা গলায় বলল, তোমাকে অত ভাবনা করতে হবে না। যদি পারো দেখো। চাকরি দিতেই হবে এমন কোনও কথা নেই। ছেলেটাকে আমি ভাল করে চিনিও না। তবে একবার দেখেই বেশ ভাল লেগেছিল, এই যা। খুব স্পিরিটেড ছেলে।

আমি চুপ করে রইলাম। স্পিরিটেড ছেলেদের সম্পর্কে আমার কোনও দুর্বলতা নেই। কোনও মানুষের বাড়তি স্পিরিট থাকলে অন্যদের ভারী মুশকিল। বাড়তি স্পিরিট যাদের থাকে তারা সর্বদাই সৎ-অসৎ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদির ব্যাপারে অন্যদের গুতিয়ে ফেরে। কাছাকাছি কোনও স্পিরিটেড লোক থাকলে বরং সাধারণ মানুষের কাজকর্মের অসুবিধেই বেশি।

অসীমা চলে যাওয়ার পরও আমি অনেকক্ষণ চুপচাপ আমার চেয়ারে বসে রইলাম। বাইরে বৃষ্টির তেজ বাড়ল। হুংকার দিয়ে একটা বাতাসও বয়ে গেল সেইসঙ্গে। আরও মেঘ নিয়ে এল বুঝি। এক ঘন ছেদহীন আদিম বৃষ্টিতে ছেয়ে গেল চারধার। বৃষ্টির দুটো দিক আছে। একটা তার সৌন্দর্যের দিক, যা নিয়ে মেঘদূত বা রবীন্দ্রনাথের কবিতা বা সত্যজিৎ রায়ের ছবি, অন্যদিকে বন্যা, দুর্গতি এবং তথা অর্থনীতি। আমি দ্বিতীয় দিকটা নিয়েই ভাবি। এবারের বর্ষার চেহারা তেমন ভাল নয়।

এফ সি আইকে আমার তিনটে গুদাম ভাড়া দেওয়া আছে। ম্যানেজার শুভ্রাংশু সেন আমার বন্ধু-লোক। ফুড করপোরেশনে নতুন ঢুকেছে। বৃষ্টিটার আদিম হিংস্রতা টের পেয়েই আমি তাকে ফোন করি।

কী করছেন সেন সাহেব?

শুভ্রাংশু কিছু একটা খাচ্ছে। পরিষ্কার টের পাচ্ছিলাম। ইলিশ ভাজা কি? হতে পারে। আজ বিকেলেই দুটো ইলিশ আমি নিজেই পাঠিয়েছি। দুটোর দরকার ছিল না। শুভ্রাংশুরা মোটে সাড়ে তিনজন লোক। স্বামী স্ত্রী আর একটা পাঁচ আর একটা সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা। চিবোতে চিবোতেই শুভ্রাংশু বলে, এই ঘরে বসে হাল্লাগুল্লা হচ্ছে আর কী। বৃষ্টির দিন, কিছু করার নেই।

হাল্লাগুল্লাটা কী জিনিস?

শুভ্রাংশুবাবু একটু লজ্জা পেয়ে বলে, এই গ্যাঞ্জাম আর কী। বাচ্চারা আর আমি মিলে মিসেসকে একটু টিজ করছিলাম।

ইলিশটা কেমন ছিল?

 দারুণ! দারুণ! মিসেস ভাজছেন আর আমরা খাচ্ছি। খেতে খেতেই হাল্লাগুল্লা হচ্ছে। মিসেস আবার ইলিশের গন্ধ সইতে পারেন না। নাকে ওডিকোলোন মাখানো রুমাল চাপা দিয়ে ভাজছেন।

বলেন কী? মিসেস সেন ইলিশ পছন্দ করেন না জানতাম না তো!

চূড়ান্ত বেরসিক আর কী! ইলিশ, রবীন্দ্রসঙ্গীত, শিউলি ফুল এসব যার ভাল না লাগে সে মানুষ নয়, পাথর।

আমি সতর্ক গলায় জিজ্ঞেস করলাম, চিংড়ি কেমন বাসেন উনি?

 বাসেন। চিংড়িটা বাসেন। তবে সে আমরাও বাসি মশাই।

ঠিক আছে। আর একটা কথা, আপনার মিসেস কেন মাছ ভাজছেন? আপনাদের তো একজন রাধুনি আছে।

আছে। কিন্তু সে দেশে গেছে। আর একবার দেশে গেলে ওরা একেবারেই যায়।

খুব অসুবিধে তো তা হলে!

আর বলেন কেন? মিসেস একদম ফরটি নাইন।

আমি একটু হেসে বললাম, আমার ইটের ভাটি থেকে একটা কামিনকে পাঠিয়ে দেবোখন কাল।

 পাঠাবেন? আঃ, বাঁচলাম।

গলা খাকারি দিয়ে বললাম, সেনসাহেব, গোডাউনে স্টক কেমন?

কেন বলুন তো। যতদূর জানি, ভালই।

এবারকার বর্ষাটা আমার ভাল লাগছে না। যদি ফ্লাড হয় তবে দুবছর আগেকার মতো জায়গাটা ফের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। সেবার টানা কুড়ি দিন কোনও সাপলাই আসতে পারেনি।

হ্যাঁ, জানি।

এবারও যদি সেই বৃত্তান্ত হয়, তা হলে? সেবার গোডাউন লুট হয়েছিল।

শুভ্রাংশু একটু চিন্তিত গলায় বলে, আমাদের সিকিউরিটি খুব ভাল নয়। এমনিতেও খুচখাচ চুরিচামারি হচ্ছে। কী করা যায় বলুন তো।

আমি বিনীতভাবে বললাম, দেশের সব গুদাম থেকেই অল্পবিস্তর চুরি হয়, এমনকী ডিফেন্সের গুদাম থেকেও। ওটা কথা নয়। কথা হল লুট নিয়ে।

শুভ্রাংশু চিন্তিতভাবে বলে, আগের লুটটা আমার আমলে হয়নি। তখন মিস্টার রায় ছিলেন। ঘটনার ডিটেলস জানি না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, আমি জানি।

এখানকার লোকেরা কি একটু হোসটাইল ধরনের?

আমি হাসলাম। বললাম, সাধারণ মানুষেরা কখনওই হোসটাইল নয় সেন সাহেব। তবে তাদের হোসটাইল করে তোলা যায়। এখানে এমন কয়েকজন লোক আছে যারা কাজটা খুব সুন্দর পারে।

তারা কারা?

জানলেই বা তাদের আপনি কী করবেন?

কোনও স্টেপ নেওয়া যায় না?

আমি নিরেট গলায় বললাম, না। কারণ তারা নেতা বা নেতা-স্থানীয় লোক।

 ওঃ! খুব হতাশ শানাল শুভ্রাংশুর গলা। বলল, তা হলে অবশ্য কিছু করার নেই।

না। কিছু করার নেই সেন সাহেব। সরকারি মাল জনসাধারণ সুট করবে, এতে কার কী করার আছে? তবে টনাটা যদি ঘটেই যায় তা হলে আপনাকে হয়তো জবাবদিহি করতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রেও কনফিডেনসিয়াল রিপোর্টে একটা দাগ থেকে যাবে। আপনি ইয়ং ম্যান।

কিন্তু কিছু করারও তো নেই। আরও ফোর্স চেয়ে পাঠাতে পারি।

তাতে লাভ হবে না।

সেটা জানি। আর কী করব?

ভাবুন সেন সাহেব, ভাবুন, দুর্যোগ আসছে। ডার্ক ডেজ আর অ্যাহেড।

শুভ্রাংশু হতাশ গলায় বলল, এ, সন্ধেটাই মাটি করে দিলেন মশাই। দিব্যি হালাগুল্লা করছিলাম। কেন ঝামেলা মাচালেন বলুন তো?

বৃহত্তর ঝামেলা অ্যাভয়েড করার জন্য।

কিন্তু অ্যাভয়েড করব কী করে তা তো বললেন না।

অত উতলা হবেন না। অনেক কিন্তু আছে। ধরুন বন্যা যদি না হয় বা নেতারা যদি ভুখা জনসাধারণকে না খ্যাপায় তা হলে ঝামেলা হবে না। আমি শুধু বৃষ্টির রকমটা দেখে আগাম আপনাকে সাবধান করে দিলাম।

এমনিতেই তো ফুড ব্যাপারটা সাংঘাতিক সেনসিটিভ। তার ওপর ফ্লাড-পোন এরিয়া। নাঃ, আপনি আমাকে ভাবিয়ে তুললেন, ইলিশটার কোনও টেস্ট পাচ্ছি না আর।

দোষ ইলিশের নয় সেন সাহেব। দোষ আপনার মনের। অত সহজে ঘাবড়ে যান কেন?

ঘাবড়ে যাই সাধে নয়। আমি এফ সি আই-এর লোক নই। সেনট্রাল অ্যাকাউনটসে দিব্যি দশটা-পাঁচটা নিরাপদ চাকরি করতাম। দুম করে কমপিটিটিভ পরীক্ষায় সিলেকটেড হওয়ার পর ফুডে ঠেলে দিল। বিচ্ছিরি ডিপার্টমেন্ট। রোজ ঘেরাও, রোজ লেবার ট্রাবল। অফিসটা একেবারে নরক। ক্লাস ফোর স্টাফদের পর্যন্ত কানো যায় না। তার ওপর যদি গুদাম লুট হয় তো সোনায় সোহাগা। আপনার কী মনে হয়, ফ্লাড কি হবেই?

বৃষ্টির ধরনটা তো সেইরকমই। দুটো নদীর জল ডেনজার লেভেলের ওপরে উঠেছে।

ফ্লাড জিনিসটাকে আমি বড় ভয় পাই।

আমি আবেগমথিত গলায় বললাম, ফ্লাডের আপনি কী জানেন সেনসাহেব? আমার কত কী ভেসে গেছে বন্যায়। খরায় জ্বলে গেছে কত কী। তখন আমারও সব লুটপাট করতে ইচ্ছে করত। আমি, আমরা বড় গরিব ছিলাম।

জানি। আপনার মুখেই শুনেছি।

সেইজন্যই বৃষ্টি দেখলে আমার মেঘদূতের কথা মনে পড়ে না। মনে পড়ে, আমার হাঁপানির রুগি বাবাকে যতবারকাথাকানি দিয়ে ঢাকতে যাচ্ছেন মা, ততবার দেখছেন, সব ভেজা। সপসপে ভেজা। ঘরের মধ্যে অবাধ ঘোলা জল, তাতে কেঁচো, ব্যাং, টোড়া সাপ, উচ্চিংড়ে, কত কী। ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি সেন সাহেব?

না, শুনছি। ভারী প্যাথেটিক।

ভীষণ। আপনার কি কখনও লুটপাট করার ইচ্ছে হয়েছে সেন সাহেব?

না, কখনও নয়।

 স্বাভাবিক। আপনি তো কখনও দারিদ্র্যসীমার ওপাশে থাকেননি। ওপাশে যারা থাকে তাদের মধ্যে সর্বদাই ওরকম একটা ইচ্ছে কাজ করে। তবে ভয় পাবেন না। সাধারণত দারিদ্র্যসীমার নীচেকার মানুষেরা নিরীহ, বোকা, সংহতিহীন এবং ভিতু। দাদা বা নেতা গোছের কেউ এসে যদি তাদের ঐক্যবদ্ধ করে বিশেষ একটি লক্ষ্যে চালনা করে তা হলেই বিপদ।

সে তো বটেই। খুব পাশুটে গলায় শুভ্রাংশু বলে।

আমি মোলায়েম গলায় বললাম, জনসাধারণকে ভয়ের কিছু নেই সেন সাহেব, শুধু দাদা বা নেতাদের দিকে নজর রাখুন।

সেই কাজটাই কি খুব সোজা?

না। কোনও কাজই বড় সোজা নয় সেনসাহেব। আমি শুধু সাবধান করে দিচ্ছি। আর কিছু করার নেই আমার। তবে আমার আরও দুটো গুদাম আছে। যদি বিপদ বোঝেন তা হলে নতুন স্টক যা আসবে তা আমার গুদামে তুলে দেবেন।

কোনও রিস্ক নেই তো!

আমি একটু হেসে বললাম, সব কাজেই রিস্ক থাকে সেনসাহেব। তবু যদি রিস্ক অ্যাভয়েড করতে চান তা হলে না হয় আমার লোকজন আর লরি দিয়ে আমি মাল খালাস করিয়ে আনব।

আচ্ছা। ভেবে দেখি।

টেলিফোনটা আমি নামিয়ে রাখি। শুভ্রাংশুকে টেলিফোনে কথাটা বলার উদ্দেশ্য কী তা স্পষ্টভাবে আমিও জানি না। তবে দীর্ঘদিনের অভ্যাসে আমার মনের মধ্যে একটা আশ্চর্য স্বয়ংক্রিয় ক্যালকুলেটর কাজ করে যায়। সেই ক্যালকুলেটর কখনও ভুল করেছে বলে নজির নেই। আমার মন বলছে এবারও আবার এই শহরে এবং আশেপাশে বন্যা হবে। অজস্র মানুষ এসে জড়ো হবে শহরে। ভরে যাবে ইস্কুলবাড়ি, কলেজ, কাছারি, অফিস। যথারীতি রিলিফ আসবে দেরীতে। লোকের মধ্যে ফেনিয়ে উঠবে পুঞ্জীভূত ক্রোধ। কেউ একজন সেই বারুদে খুব দক্ষতার সঙ্গে একটি দেশলাই কাঠির আগুন ধরিয়ে দেবে। গত বছরের আগের বছর এই কাজটি করেছিল অধর।

স্পিরিটেড বলতে যা বোঝায় অধরও অনেকটা তা-ই। কমলা সেনের সঙ্গে তার প্রণয়ঘটিত ব্যাপারটি বাদ দিলে তার আর কোনও বন্ধ বা দুর্বলতা নেই। অধরকে তাই আমি কিছুটা ভয় পাই। আমার ধারণা অধর আমাকে ছোবল দেওয়ার একটা সুযোগ খুঁজছে। বন্যা হলে সে সুযোগ অধর পেয়েও যাবে। এই অঞ্চলে রিলিফের চাল ও গম সাধারণত আমাকেই সাপলাই দিতে দেওয়া হয়। মোটামুটি পাকা চুক্তি। আমার নিজস্ব দুটো গুদাম আছে শহরের এক ধারে। আমার ধারণা অধর এবার সেখানে চড়াও হবে। জনতার ঢেউয়ে ভেসে যাবে দুটো গুদাম। যাক, তাতে ক্ষতি নেই। তার আগেই আমি গুদামের মাল সরিয়ে নেব। তা বলে দরিদ্র, মূর্ধ, বঞ্চিত ভারতবাসীকে হতাশও করব না আমি। তারা যদি লুট করে তো করবে। তবে সুট করবে সরকারি জিনিস যা লুট করার অসাংবিধানিক অধিকার তাদের আছে।

জানালা দিয়ে আমি আরও খানিকক্ষণ বৃষ্টি দেখলাম। চমৎকার বৃষ্টি, হিংস্র, আদিম, ভয়ংকর।

সিংহীবাবুদের এই বাড়িটা বেশ বড়সড়। এর স্থাপত্যে নানা জায়গায় বেশ কারুকাজ আছে। অবশ্য সময়ের খাজনাও দিতে হয়েছে বাড়িটাকে। মেঝে ফেটে গেছে জায়গায় জায়গায়। দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে কয়েকটা ঘরে। দোতলায় দুটো ঘরে জল চোয়ায়। আমি সেগুলো মেরামত করিনি। কারণ এই প্রকাণ্ড বাড়িটায় থাকি মাত্র আমরা দুটি ভাইবোন এবং কয়েকজন দাসদাসী ও দুটো কুকুর, আর আছে হাঁস, মুরগি, খাঁচার পাখি ও গোটা দুই জারসি গরু। অন্যান্য বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা কেউ সুখে, কেউ দুঃখে আছে। আমার দুটি ভাই কলকাতা এবং দিল্লিতে চাকরি করে। সম্পর্ক খুব ক্ষীণ, নেই বললেই হয়।

আমার বোন রুমা যদিও আমার কাছেই থাকে তবু তার সঙ্গেও আমার সম্পর্ক খুবই ক্ষীণ। প্রায়ই সে কলকাতায় খোঁপা বাঁধতে বা চুল ছাঁটতে বা ফাংশন করতে চলে যায়। যতদূর জানি সে সাইকেল, স্কুটার এবং মোটরগাড়ি চালাতে পারে। স্কুলে পড়ার সময় সে জিমনাস্টিকস করত। ভাল গান গাইতে এবং নাচতেও পারত। দেখতে সে মোটামুটি ভাল, মুখশ্রী তেমন সুন্দর না হলেও ফিগার অসাধারণ। ইদানীং সে কারাটে বা ওই জাতীয় কিছু শিখছে বলে শুনেছি। অতিরিক্ত শরীরচর্চার ফলেই বোধহয় সে তেমন মস্তিষ্কের চর্চা করতে পারেনি। কম্পার্টমেন্টাল হায়ার সেকেন্ডারি টপকেই সে মোটামুটি লেখাপড়া শেষ করে। তারপর সে মন দেয় পুরুষজাতির প্রতি। বলতে নেই পুরুষজাতির মধ্যে প্রবেশ করেই রুমা একটা ঝড় তুলেছিল, তার জনপ্রিয়তায় আমিও চিন্তিত হয়ে পড়ি এবং তাকে ঠারেঠোরে বোঝাতে থাকি যে, মহিলারা সাধারণত একগামিনীই হয়ে থাকে। বহুগামিনী হওয়া মেয়েদের প্রকৃতিবিরুদ্ধ।

ব্যাপারটা রুমাও বুঝতে পারত। তবে কোন পুরুষটি তার উপযুক্ত হবে তা বেছে বার করতে হিমশিম খাচ্ছিল সে। শাড়ির দোকানে ঢুকলে মেয়েদের যে অবস্থা হয় আর কি। কোনওটাই পছন্দ হয় না বা একসঙ্গে অনেকগুলো হয়।

গন্ধর্ব নামটা জনগণের কেমন লাগে আমি জানি না। কিন্তু এই নামের লোকদের আমি সন্দেহের চোখে দেখি। গন্ধর্ব নামটার মধ্যেই একটা ধোঁকাবাজি আছে বলে আমার ধারণা। অবশ্য এ নামের একটা লোককেই আজ অবধি আমি চিনি। রুমা অনেক বেছেগুছে এই গন্ধর্বকেই বিয়ে করেছিল। নামটা যেমনই হোক, গন্ধর্ব ছেলেটা বোধহয় তেমন খারাপ নয়। রোগা, ফরসা ও সুদর্শন এই ছেলেটি ছিল অধ্যাপক। ছিল কেন, এখনও আছে। জাতি হিসেবে অধ্যাপকদেরও আমার বিশেষ পছন্দ হয় না। দেদার ছুটি ভোগ করে করে এরা অল্প দিনেই ভীষণ কুঁড়ে হয়ে পড়ে। উচ্চাকাঙ্ক্ষা জিনিসটা একদম হারিয়ে ফেলে। বইপোকা হওয়ার ফলে এদের অধিকাংশেরই বাস্তববুদ্ধি কিছু কম হয়ে থাকে। গন্ধর্বর মধ্যে অধ্যাপকোচিত সব অপগুণই ছিল। ফলে বিয়ের দুবছরের মাথায় রুমা তাকে ডিভোর্স করে আমার কাছে ফিরে আসে। শোকে গন্ধর্ব মদ ধরে। মাতাল অবস্থাতেই সে একদিন আমার কাছে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, দাদা আমাকে বাঁচান। রুমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।

রুমাকে আমি জানি। আমাকে সে সামান্যতমও সমীহ করে না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে গেলেই সে আমার দিকে অত্যন্ত শীতল ও কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। রুমা দাদা হিসেবে আমাকে স্বীকার করলেও মানুষ হিসেবে সে আমাকে শ্রদ্ধা করে না তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই। সম্ভবত রুমা আমার উত্থানের গোপন ইতিহাসটিও জানে। তাই রুমাকে আমি ঘটাতে সাহস পাই না। গন্ধর্বর কাতর আবেদনে সাড়া দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে আমি তাকে একটি সুপরামর্শ দিয়ে বলি, গন্ধর্ব, রুমা একটু ফিজিক সেনট্রিক। যাকে শরীর-সর্বস্ব বলা যায় আর কি। হুট করে তোমাকে বিয়ে করে ফেলেছে বটে ঝোঁকের মাথায়, কিন্তু আমি জানি, ওর বিয়ে করা উচিত ছিল কোনও ব্যায়ামবীরকে। যদি রুমার মন পেতে চাও তবে ব্যায়াম করতে থাকো। তোমার, বয়স এমন কিছু হয়নি, এখন শুরু করলেও পারবে।

বাস্তবিকই গন্ধর্ব ব্যায়াম শুরু করে দেয়। একটা জিমনাসিয়ামে ভর্তি হয়ে সে বছর দুই একতানমনপ্রাণে শরীরচর্চা করে যেতে থাকে। ফলও পায় হাতে হাতে। দুবছর বাদে তার ঘাড়ে গর্দানে দিব্যি পেশীবহুল স্বাস্থ্য হয়। ততদিনে অবশ্য রুমার আরও বহু গুণগ্রাহী জুটে গেছে। যে কোনওদিন সে দ্বিতীয় স্বামী নির্বাচন করে বসবে, সেইসময়ে একদিন আমারই প্ররোচনায় গন্ধর্ব এসে হাজির হয় এবং প্রায় জোর করেই রুমাকে তুলে নিয়ে যায়।

আমার ধারণা গন্ধর্বর সেই জোর খাটানোর ব্যাপারটা রুমা বেশ উপভোগ করেছিল। তাই বিশেষ চেঁচামেচি করেনি, সুড়সুড় করেই চলে গিয়েছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় দফার বিয়েটা টিকল মাত্র বছরখানেক। গন্ধর্বকে আবার ডিভোর্স করার মামলা ঠুকে ফিরে এসে রুমা আমাকে বলল, গন্ধর্ব ভীষণ আনকালচার্ড, একটা জংলি, ব্লুট।

আমি অবাক হলেও, মুখে কিছু বলার সাহস পেলাম না।

গন্ধর্ব একদিন অপরাধী মুখ করে গোপনে আমার সঙ্গে দেখা করে বলল, দাদা, আজকাল আমার শরীরের সবরকম খিদে বেড়ে গেছে। গায়ের জোরও হয়েছে সাংঘাতিক। ফাইনার সেনসগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমার এই শারীরিক তেজ রুমা ঠিক সহ্য করতে পারছিল না। এবার কী করব বলুন!

আমি বুদ্ধি খাঁটিয়ে বললাম, সব কিছুরই একটা প্রোপোরশন রাখতে হয় গন্ধর্ব। শরীরটা তোমার সাংঘাতিক হয়েছে বটে, কিন্তু অন্যান্য দিকগুলো ডেভেলপ করেনি। আমার অ্যাডভাইস হল, একটু-আধটু নাচ আর গান শেখো। তাতে স্ট্রেংথের সঙ্গে পেলবতা যুক্ত হবে। বজের কাঠিন্যের সঙ্গে যোগ হবে ফুলের কোমলতা।

বছরখানেক যাবৎ গন্ধর্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে নাচ ও গান শিখছে। কী হবে তা জানি না। তবে খবর রাখি, নাচ-গানেও গন্ধর্ব খারাপ করছে না।

আমি সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে দোতলায় উঠলাম। পারতপক্ষে আমি দোতলায় আসি না। শুধু দোতলায় খাওয়ার সময় ছাড়া। এই অঞ্চলটা রুমার। আসানসোল না কোথায় যেন ফাংশন করে আজ সকালেই রুমা ফিরেছে। আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। খবরটা পেয়েছি মাত্র।

খুব পা টিপে টিপেই আমি ওপরে উঠলাম। রুমা হয়তো বিশ্রাম-টিশ্রাম করছে। সাড়া শব্দ করা ঠিক নয়।

খাওয়ার ঘরে ঢুকতেই কিন্তু মার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ডাইনিং টেবিলের ওপর একটা বাংলা সাপ্তাহিকের পাতা ওলটাচ্ছে বসে বসে। আমার দ্বিকে একবার তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকাল। আমার ভিতরটা সংকুচিত হয়ে গেল হঠাৎ।

আমি একটু অস্বস্তির সঙ্গে খেতে বসি এবং ঘরের অন্য জিনিস দেখতে থাকি। টেবিলের দুধারে দুজনে বসলেও কমার সঙ্গে আমার মানসিক দূরত্ব বহু যোজনের।

রুমা সশব্দে সাপ্তাহিকটা টেবিলে আছড়ে ফেলে বলল, অসহ্য।

আমি বললাম, কী?

 রুমা আমার দিকে চেয়ে তেতো গলায় বলে, তুমি ধারণা করতে পারো, গন্ধর্ব ফাংশনে গান গাইছে?

আমি যথেষ্ট অবাক হয়ে বলি, তাই নাকি?

তা নয় তো কী? আসানসোলে গিয়েছি ফাংশনে। দেখি মূর্তিমান হাজির। মুখটা খুব গভীর। তখনও বুঝতে পারিনি। ফাংশনের শুরুতেই দু-একজন আর্টিস্টের পর শুনি গন্ধর্বর নাম অ্যানাউনস করা হচ্ছে।

আমি সাগ্রহে বলি, তারপর?

তারপর আর কী শুনতে চাও? দেখি দিব্যি এসে স্টেজে হারমোনিয়াম বাজিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে লাগল।

আমি সাগ্রহে জিজ্ঞেস করি, কেমন গাইছে?

 রুমা কটকট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, জানি না।

রাগ করছিস কেন? কেমন গাইল?

 রুমা একটা হাই তুলে ক্লান্তিসূচক দু-একটা শব্দ করে বলল, খুব খারাপ গাইছিল না। কিন্তু হঠাৎ ও গান ধরল কেন সেটাই বুঝতে পারছি না।

সেটা ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখ না।

হু!-বলে রুমা টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *