নাচতে পিপলীর সব সময়ই ভাল লাগে। আজ যেন আরো ভাল লাগল। মনে হল সারাদিন সে শুধু নেচেই যাবে। নেচেই যাবে।
তোমার নাচ কি শেষ হয়েছে, পিপলী?
জি, রাণী-মা।
এখন বল কি বলতে এসেছ?
আপনাকে আমি পছন্দ করি না, রাণী-মা?
আমাকে তুমি পছন্দ কর না?
না।
শুনে দুঃখিত হলাম। আমার উপর কি তোমার প্রচণ্ড রাগ আছে?
আছে।
তোমার কি ইচ্ছা করছে আমাকে মেরে ফেলতে?
হ্যাঁ, ইচ্ছা করছে।
বল কেন ইচ্ছা করছে।
পিপলী নেচে-নেচে খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আবার কথা বলা শুরু করার আগে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিল —
রাণী মা?
বল, আমি শুনছি।
আমরা সব সময় বলি –পিপীলিকা সম্প্রদায়ের মহান রাণী –আপনার মঙ্গল হোক, কল্যাণ হোক। আমরা সব সময় আপনার মঙ্গল চাই, কল্যাণ চাই —-কিন্তু আপনি আমাদের মঙ্গল চান না।
এ রকম কথা কেন বলছ?
রাণী-মা, আমি অনেক চিন্তা করেছি। চিন্তা করে করে বের করেছি। কিভাবে বের করেছি বলব রাণী মা?
বল।
কালো পিপড়াদের সঙ্গে আমাদের একবার যুদ্ধ হল। আপনার কি মনে আছে রাণী-মা?
মনে আছে। আমার স্মৃতিশক্তি ভাল, পিপলী বেগম। আমার স্মৃতিশক্তি খুবই ভাল। আমার সবকিছু মনে থাকে। আমি কিছুই ভুলি না। যুদ্ধের কথা আমার মনে আছে। সেই যুদ্ধে তোমার বাবা কালো পিপড়াদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন এই খবরও আমি জানি। তোমার বাবার জন্যে আমার দুঃখ হয়।
কিন্তু রাণী-মা, যুদ্ধ শুরু হবার পর যখন আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হল –তখন আরো সৈন্য পাঠানোর জন্যে খবর পাঠানো হল। আপনি বললেন, প্রয়োজন নেই। আমাদের কিন্তু তখনো অনেক অনেক সৈন্য ছিল। আপনি ইচ্ছা করলেই সৈন্য পাঠাতে পারতেন।
আমাকে তো সবকিছু ভাবতে হয় পিপলী। খাবার নিয়ে সামান্য যুদ্ধে যদি আমার সব সৈন্য চলে যায় তাহলে কিভাবে হবে? আমরা কত বিপদ-আপদের মধ্যে বাস করি! আমাদের শক্ত সৈন্যবাহিনী দরকার। তুমি তো জান না, পিপলী, পিপড়াদের সবাই সৈন্য হয় না। যাদের জন্ম হয় মাথায় কাঁটা নিয়ে, তারাই হয় সৈন্য। দশ হাজার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে দেখা যায় এদের মধ্যে সৈন্য মাত্র বিশ-পঁচিশটা।
হ্যাঁ, তাও ঠিক রাণী-মা। হাজার হাজার ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। আপনি নিজে পরীক্ষা করে দেখেন এদের মধ্যে কজন সৈন্য। তাঁদের আপনি বাঁচিয়ে রাখেন। বাকিদের মেরে ফেলেন। এটা কি ঠিক রাণী-মা?
অবশ্যই ঠিক। পিপড়ার রাণী কখনো ভুল কাজ করতে পারে না। ভুল কাজ করার তাদের নিয়ম নেই। সব পিপড়াদের বাঁচিয়ে রাখলে অবস্থা কি হত ভেবে দেখ। পিপড়ার সংখ্যা যেত বেড়ে। এদের কোত্থেকে খাবার দিতাম? এদের বাড়ির ব্যবস্থাই বা কিভাবে করতাম? কাজেই পিপড়ার সংখ্যা বাড়ানো যাবে না।
পিপড়ার সংখ্যা বাড়ানো যাবে না, কিন্তু সৈন্যের সংখ্যা বাড়ানো যাবে। আপনার সৈন্য বাড়ছে –হুঁ হু করে বাড়ছে।
তুমি তো ভুল কথা বললে পিপলী। খুব ভুল কথা। আমার সৈন্য তো বাড়ছে। আমাদের সৈন্য বাড়ছে। ঐ সৈন্যরা, তুমি যখন বিপদে পড়বে, তখন তোমার পাশে দাঁড়াবে।
তা কিন্তু রাণী-মা দাঁড়ায় নি। আমাদের শত শত কর্মী পিপড়া কালোদের হাতে ধরা পড়ল। আমরা দল বেঁধে ছুটে গেলাম আপনার কাছে। আপনি আমাদের সঙ্গে দেখাও করেন নি।
রাণীর নিয়ম তুমি জান না পিপলী। রাণী শুধু তাকেই দেখা দেন, যাকে তিনি ডেকে পাঠান। তোমাকে আমি ডেকে পাঠিয়েছি বলেই দেখা দিয়েছি। তোমার কি আরো কিছু বলার আছে?
আছে।
বল, আমি শুনছি। আমি খুব মন দিয়ে তোমার কথা শুনছি।
আবারো কালো পিপড়াদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হচ্ছে। আপনি সৈন্য পাঠান নি। আপনি সাধারণ পিপড়াদের পাঠিয়েছেন। এরা যুদ্ধ করতে জানে না। এরা যাচ্ছে আর মারা যাচ্ছে।
মৃত্যু খুব স্বাভাবিক ব্যাপার পিপলী। সবাইকে মরতে হয়। মৃত্যু নিয়ে দুঃখ করতে নেই।
আপনার সৈন্যরা যুদ্ধ করবে না?
প্রয়োজন হলেই করবে। প্রয়োজন এখনো হয়নি। পিপলী কথা বলতে বলতে তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছ। তুমি কি আরো কিছু খাবে?
না।
আমি কি বলি জান? আমি বলি –কিছু খেয়ে নাও।
রাণী-মা’র ইঙ্গিতে দুটি পিপড়া থালায় করে আরো খাবার নিয়ে এল। নিশা ফুলের মধু। পিপলী খুব আরাম করে খেল। এত ভাল লাগল তার। এবারো ইচ্ছা করল থালাশুদ্ধ খেয়ে ফেলতে। শুধু তাই না –তার নাচতেও ইচ্ছা করল। এই খাবারের মধ্যে কি কিছু আছে –যা খেলে এ রকম হয়? খুব আনন্দ হয়, ভয় কেটে যায়? মনের মধ্যে যেসব লুকানো কথা আছে সেসব বলে ফেলতে ইচ্ছা করে।
রাণী-মা।
বল পিপলী বেগম।
আমার গান গাইতে ইচ্ছা করছে। নাচতে ইচ্ছা করছে।
বেশ তো গান গাও। গান শুনতে আমার খুব ভাল লাগে।
পিপলী বেগম গান ধরল —
ভাল লাগছে ভাল লাগছে।
আমার বড় ভাল লাগছে।
মজা লাগছে মজা লাগছে
আমার বড় মজা লাগছে।
আনন্দ হচ্ছে আনন্দ হচ্ছে।
আমার বড় আনন্দ হচ্ছে।
রাণী মা।
বল পিপলী।
আমাদের বাড়ির খুব অভাব। মাটির অভাবে বাড়ি তৈরী হচ্ছে না। মাটি আনতে হয় অনেক দূর থেকে। পথে পথে বিপদ। শত শত পিপড়া মাটি আনতে গিয়ে মারা পড়ে রাণী-মা।
যে কোন কাজেই বিপদ আছে পিপলী।
খুব কাছেই এক জায়গায় মাটি পাওয়া গিয়েছিল রাণী-মা। অনুসন্ধানী পিপড়া খুব ভাল মাটির খোঁজ এনেছিল। বাড়ি তৈরির এত ভাল মাটি না-কি হয় না। আপনি সে মাটি পছন্দ করেন নি। আপনি চেয়েছেন –দূরের জায়গা থেকে মাটি আনতে।
হ্যাঁ, তা চেয়েছি। দূরের মাটির খুব সুন্দর গন্ধ। আমি সুঘ্রাণ পছন্দ করি।
আমার কিন্তু অন্য কথা মনে হয়। আমার কি মনে হয় জানেন রাণী-মা –আমার মনে হয় আপনি সবাইকে দূরের পথে পাঠান যাতে তারা মারা পড়ে। কারণ আপনি পিপড়ার সংখ্যা কমাতে চান।
তোমার বুদ্ধি ভাল পিপলী। আসলেই আমি পিপড়ার সংখ্যা কমাতে চাই। আমরা সংখ্যায় কম থাকলে আমাদের খাদ্যের অভাব হবে না। রাণীকে অনেক কিছু ভাবতে হয় পিপলী। অনেক কিছু।
আপনি অনেক কিছু ভাবেন না। আপনি শুধু নিজের কথাই ভাবেন।
তোমার কথা কি শেষ হয়েছে?
হয়েছে।
তুমি যখন নাচানাচি করছিলে তখন তোমার পা লাল দাগের ভেতর পড়েছিল। লাল দাগে পা পড়া কি তা তো তুমি জান পিপলী। জান না?
জানি।
যদি জান, তাহলে বল তো কি শাস্তি?
নির্বাসন।
হু, নির্বাসন। নির্বাসনের শাস্তি আগে ছিল –এখন তা বদলেছি। এখন থেকে শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু। আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যু। আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যু।
রাণী মা আমার পা কিন্তু লাল দাগে পড়ে নি। আমি খুব সাবধান ছিলাম।
রাণীর সঙ্গে তর্ক করার শাস্তিও কিন্তু মৃত্যুদন্ড। আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যু।
এই শাস্তি কবে থেকে চালু হল রাণী-মা?
এখন থেকে। আজ থেকে তবে তোমার বয়স অল্প। এবং আমি দয়া দেখাতে ভালবাসি বলেই তোমাকে নির্বাসন দেব। আগুনে পুড়িয়ে মা’রব না। তোমার নির্বাসন হবে অন্ধকূপে। সেখানে আলো নেই, বাতাস নেই এবং খাদ্য নেই তোমার মৃত্যু হবে –তবে কিছুদিন বেঁচে থাকবে। কিছুদিন বেঁচে থাকাও তো ভাগ্যের ব্যাপার। তাই না পিপলী বেগম?
জী রাণী-মা, ভাগ্যের ব্যাপার। আপনার অসীম দয়া।
রাণী-মা’র নির্দেশে মেয়ে সৈন্যরা এসে পিপলীকে ধরে নিয়ে গেল। পিপলী অবাক হয়ে দেখল –মেয়ে সৈন্যরাও সবাই অন্ধ। তারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কূপের দিকে। পিপলী বেগম বলল, অন্ধ কূপে ফেলার আগে আমি কি আমার মা এবং দাদীমা’র সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি?
ওরা কর্কশ গলায় বলল, না।
পিপলী বলল, আমি কোন কথা বলব না, শুধু একবার তাঁদের দেখব।
না
অনেক দূর থেকে দেখব –শুধু একবার।
না।
তারা পিপলীকে অন্ধকূপে ফেলে দিল। গহীন সেই কূপ। পিপলী পড়ছে তো পড়ছেই। মনে হচ্ছে এই কূপ কখনো শেষ হবে না। ঘড়ঘড় শব্দে কূপের মুখ পাথর-চাপা দেয়া হল। চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। সেই অন্ধকার ভয়াবহ অন্ধকার। পিপলী ডাকল –মা! মাগো! কেউ তার ডাক শুনতে পেল না। সে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। দেয়ালে ঘা খেয়ে তার কান্নার শব্দ তার কাছেই ফিরে আসছে। মনে হচ্ছে অসংখ্য পিপলী বেগম এক সঙ্গে কাঁদছে।
.
গল্প এই পর্যন্ত বলে মতিন সাহেব হাই তুলে বললেন, এবার খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমুতে গেলে কেমন হয়? রাত কম হয়নি। তিন মেয়েই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল –না-না-না। নীলু বলল, পিপলী বেগমকে জেলখানায় রেখে গল্প শেষ করা যাবে না। কিছুতেই না। কিছুতেই না। কিছুতেই না।
আমাকে কি করতে হবে?
তা আমি জানি না।
বিলু বলল, বাবা রাণী-মাকে আমার এত ভাল মনে হয়েছিল, সে এখন এত খারাপ হল কি ভাবে?
তা তো আমি বলতে পারি না, মা।
তিলু বলল, ঐ দেশে রাজা নেই, বাবা?।
না। পোকা-মাকড়দের দেশে রাজা নেই বললেই হয়। মৌমাছিদের বেলাতেই দেখ। ওদের আছে রাণী মৌমাছি। রাজা মৌমাছি বলে কিছু নেই। মৌমাছিদের রাণী মহাসুখে থাকে। অন্য মৌমাছিদের কষ্ট করে নিয়ে আসা মধু চুকচুক করে খায়। অন্যরা খেটে মরে তার জন্যে।
নীলু বলল, অন্যরা খাটাখাটানি না করলেই হয়। অন্যরা কেন বলে না –তুমি পচা রাণী, আমরা তোমার কাজ করব না। করব না, করব না।
মতিন সাহেব বললেন, এরকম কিছু বললে তো হবে না। কীট-পতঙ্গের জগতে এই ধরনের কথা বলা যায় না। ওদের জগতের আইন-কানুন, খুবই কড়া। ওদের জগতের রাজা-রাণীদের আইন বড়ই কঠিন আইন।
নীলু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, আমাদের পিপলী বেগম যে অন্ধকূপে চলে গেল, এখন কি হবে বাবা?
দেখা যাক কি হয়।
ও কি ছাড়া পাবে?
বুঝতে পারছি না। গল্প শেষ হোক। শেষ হলে বোঝা যাবে।
মতিন সাহেব আবার শুরু করলেন –চরম বিপদে পিপড়াদের কি করতে হয় তা স্কুলে শেখানো হয়। যেমন পানিতে পড়ে গেলে কি করতে হবে, আগুনের কাছাকাছি চলে গেলে কি করতে হবে –এইসব। কিন্তু অন্ধ কূপে কাউকে আটকে ফেললে কি করতে হবে স্কুলে তা শেখানো হয় নি। কোন বই এও কিছু লেখা নেই। পিপলী বেগম অনেক উঁচু থেকে নিচে পড়েছে, কিন্তু ব্যথা পায়নি। তার কারণ সে স্কুলে বইএ পড়েছে –উঁচু থেকে হঠাৎ নিচে পড়ে গেলে কি করতে হয়। মাটির দিকে পা এবং শুড় বাড়িয়ে দিতে হয়। প্রচণ্ড চাপে পা, শুড় ভেঙে যাবে তবে ভয় পাবার কিছু নেই। শুড় ও পা সবই গজাবে। নতুন পা এবং নতুন গঁড় হবে আগের চেয়েও মজবুত।
পিপলী প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে। তার শুড় ভেঙেছে কিন্তু পা ভাঙে নি। সে তীব্র ব্যথা নিয়ে এখন এগুচ্ছে অন্ধের মত। কেন এগুচ্ছে তাও জানে না। সে বুঝতে পারছে পুরো জায়গাটা পাথরের তৈরি। মাটির তৈরি হলে মাটি ফুটো করে বের হবার একটা চেষ্টা করা যেত। অবশ্যি সে চেষ্টা করলে লাভ হত না, কারণ মাটি ফুটো করার বিদ্যা সে জানে না।
পিপলীর ভয় ভয় করছে। একা থাকার ভয়। অন্ধকারের ভয়। ভয় কাটানোর জন্যে সে বলল –কেউ কি আছে?
তার নিজের কথাই দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এল। বার বার শব্দ হতে লাগল, কেউ কি আছে? কেউ কি আছে? কেউ কি আছে?
ভয় লাগছে। পিপলীর প্রচণ্ড ভয় লাগছে। ভয় লাগলে কি করতে হয় স্কুলে পড়িয়েছে। ভয় পেলে নিজেকে প্রশ্ন করতে হয়। কি কি প্রশ্ন করতে হয় তাও বইয়ে লেখা। সেই প্রশ্নের জবাব নিজেকেই দিতে হয়। প্রশ্নগুলির জবাব দিলেই ভয় কমে যাবার কথা। পিপলী নিজেকে প্রশ্ন করা শুরু করল।
পিপলী, তুমি কি ভয় পাচ্ছ?
হ্যাঁ।
খুব বেশি ভয় পাচ্ছ?
হ্যাঁ।
কেন ভয় পাচ্ছ, পিপলী?
কারণ জায়গাটা খুব অন্ধকার।
তুমি যে ভয় পাচ্ছ তাতে কি কোন লাভ হচ্ছে –অন্ধকার কমে যাচ্ছে?
না।
তাহলে ভয় পাচ্ছ কেন? ভয়ে তোমার কোন লাভ হচ্ছে না। বরং ক্ষতি হচ্ছে। কাজেই ভয় দূর কর। যা করছিলে কর। তুমি এখন কি করছ?
হাঁটছি।
তাহলে হাঁটতে থাক। তুমি কি গান জান?
জানি।
গান গাইতে গাইতে হাঁট।
পিপলী গান ধরল —
এসো ভাই, গান গাই
গান গেয়ে মজা পাই
গান গাইতে গাইতে পিপলী এগুচ্ছে –হঠাৎ ধমকের শব্দে সে চমকে উঠল —-কে গান গায়?
পিপলী থমকে দাঁড়াল। ভীত গলায় বলল, আমি।
আমি কোন পরিচয় নয়। আমার নাম পিপলী বেগম।
তুমি মেয়ে পিপড়া?
হ্যাঁ
এসো পিপলী, এসো। আজ আমাদের বড়ই আনন্দের দিন। আজ আমাদের হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ হল। এতদিনের প্রতিক্ষার অবসান হল।
আমি কিছুই বুঝতে পরাছি না। আপনি কে?
আমার নাম অরং। আমি অতি বৃদ্ধ এক পিলিলিকা। রাণী-মা তোমাকে যেমন নির্বাসন দিয়েছেন, আমাকেও দিয়েছেন। আমার মত হাজার হাজার পিপড়াকেও দিয়েছেন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আমরা অপেক্ষা করেছি একটি মেয়ে পিপড়ার জন্যে। আজ তোমাকে পাওয়া গেল। কি আনন্দ! কি আনন্দ।
পিপলী অন্ধকারে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু টের পাচ্ছে এই বুড়ো পিপড়া যার নাম অরং, সে আনন্দে লাফাচ্ছে। হাততালি দিচ্ছে। অরং কি পাগল? পাগল হবারই কথা। দীর্ঘদিন অন্ধ কূপে থেকে থেকে মাথা খারাপ হয়েছে। পিপলী ক্ষীণ গলায় ডাকল –বৃদ্ধ অরং।
কি গো মা!
আপনি এমন লাফালাফি করছেন কেন?
খুব আনন্দ হচ্ছে তো মা –তাই লাফালাফি করছি।
আপনি পাগল হয়ে যাননি তো?
হতেও পারি। হয়ত আনন্দে পাগল হয়ে গেছি। তুমি সত্যি পিপলী বেগম তো? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?
না, আপনি স্বপ্ন দেখছেন না। আপনি দয়া করে আমার হাত ধরুন। হাত ধরে নিয়ে চলুন। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
অরং এসে হাত ধরল।
তারা হাঁটতে শুরু করল। মাঝে মাঝে বৃদ্ধ অরং পিপলীর হাত ছেড়ে দিয়ে খানিকক্ষণ নাচানাচি করে নেয়। বিকট শব্দে চিৎকার করে। পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে। পিপলী বেগম চলে এসেছে। তারপর আবার হাঁটা শুরু করে। তারা নানান সুরঙ্গ পার হল। পথ যেন শেষ হতেই চায় না। হাঁটতে হাঁটতে তারা এক সময় সুরঙ্গ ছেড়ে একটা খালি ময়দানে এসে পড়ল। সেখানে হাজার হাজার পিপড়া অপেক্ষা করছে। পিপড়াগুলিকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু এদের নিঃশ্বাসের শব্দ পিপলী শুনতে পাচ্ছে।
বৃদ্ধ অরং চেঁচিয়ে বলল, সুসংবাদ। সবার জন্যে সুসংবাদ। বড়ই সুসংবাদ। আমরা পেয়ে গেছি পিপলী বেগমকে। এতদিন যার জন্যে আমরা অপেক্ষা করছিলাম, তাকে আমরা পেয়ে গেছি। সবাই হাততালি দিন।
তুমুল হাততালি হল। শুধু হাততালি না –সবাই একসঙ্গে লাফাতে লাগল। পিপলী কিছুই বুঝতে পারল না। সে অরংকে কানে কানে বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এসব কি হচ্ছে?
বুঝবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝবে। তোমাকে সব বুঝিয়ে দেয়া হবে। আমরা এতদিন তোমার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম —পেয়ে গেছি। আমরা পেয়ে গেছি।
সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, পেয়ে গেছি। আমরা পেয়ে গেছি।
তাদের লাফালাফি, হৈচৈ আর থামতেই চায় না। এক সময় তারা বৃদ্ধ অরং এবং পিপলীকে কাঁধে তুলে নাচতে লাগল। এবং বিকট স্বরে চেঁচাতে লাগল –পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে। পিপলী আবারো ফিসফিস করে বৃদ্ধ অরংকে বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
বৃদ্ধ অরং বলল, আমাদের পিপলী বেগম কিছুই বুঝতে পারছে না। এখন তাকে আমরা সব বুঝিয়ে দেব। আপনারা হৈচৈ বন্ধ করুন।
হৈচৈ থেমে গেল।
বৃদ্ধ অরং বলল, পিপলী বেগম, তুমি খুব মন দিয়ে আমার কথা শুনবে। শুধু শুনলে হবে না। কথা শুনবে এবং সেই সঙ্গে বুদ্ধি দিয়ে জ্ঞান দিয়ে বিচার করবে।
পৃথিবীতে অসংখ্য পিপীলিকা গোত্র আছে। সব গোত্রেরই রাণী আছে। আমাদের গোত্রেরও আছে। আমাদের রাণীদের সঙ্গে অন্য রাণীদের কিছু অমিল আছে। অমিলগুলি মন দিয়ে শোন —
এই রাণী মা, আমাদের কোন খাবার খান না। যত ভাল খাবারই হোক তিনি পুরোটা ফিরিয়ে দেন। ঠিক না?
ঠিক ঠিক।
সব গোত্রের পিপীলিকা রাণী থাকেন পিপীলিকাদের মাঝখানে। তিনি থাকেন, মাঝখানে তাঁকে ঘিরে থাকে অন্যরা। তিনি কখনোই আলাদা থাকেন না। আমাদের রাণীমা থাকেন আলাদা। অনেক আলাদা। ঠিক কিনা বল তো পিপলী?
ঠিক ঠিক?
সব গোত্রের রাণী-মা’র কাছে যাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের রাণী-মা’র কাছে যাওয়া যায় না। তিনি থাকেন লাল দাগের ভেতরে। সেই লাল দাগের ভেতরে কেউ গেলে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাসন। কেন বল তো পিপলী বেগম?
আমি জানি না।
চিন্তা কর।
চিন্তা করে কিছু পাচ্ছি না।
রাণী-মা লাল দাগ দিয়ে রেখেছেন যাতে কেউ তাঁর কাছে যেতে না পারে। তিনি সাধারণত কাউকে দেখা দেন না। তবু যদি ভুলে কেউ দেখে ফেলে সে জন্যেই এই সতর্কতা। কারণ কেউ ভালমত তাকালেই বুঝে ফেলবে আমাদের রাণী-মা আসলে অন্ধ।
রাণী মা অন্ধ।
হ্যাঁ অন্ধ। আমাদের রাণী মা জন্মান্ধ।
সে কি!
শুধু রাণী-মাই না, রাণী-মা’র প্রাসাদে যারা থাকে তারাও অন্ধ। যে মেয়েসৈন্যরা রাণী-মাকে ঘিরে থাকে তারাও অন্ধ।
হ্যাঁ তাই তো!
এখন বল, এই পৃথিবীতে কোন্ প্রজাতি জন্মান্ধ?
উই পোকা।
এখন বল পিপলী বেগম –রাণী মা কি তোমাকে কোন খাবার দিয়েছিলেন?
হু। নিশা ফুলের মধু।
পিপীলিকার কি খাদ্য তা স্কুলে পড়ানো হয়? হয় না!
হয়।
সেখানে নিশা ফুলের মধু নামের কোন খাবারের নাম পড়েছ?
না।
এই খাবার কাদের খাবার জান?
জানি না।
এটা হচ্ছে উই পোকাদের খাবার।
উইপোকাদের খাবার?
হ্যাঁ। ওরা এই খাবার সংগ্রহ করে। খায়। খেয়ে নাচানাচি করে।
এখন কি বুঝতে পারছ আমাদের রাণী-মা আসলে একটি জন্মান্ধ উইপোকা? এই জন্যে তিনি আমাদের খাবার খান না।
বুঝতে পারছি।
কি ভয়ংকর ঘটনা! তাই না পিপলী?
হ্যাঁ, তাই এতবড় একটা ঘটনা অথচ কেউ বুঝতে পারল না কেন?
পারবে না কেন? পেরেছে। অনেকেই বুঝতে পেরেছে। অনেকেই অনুমান করেছে। তবে যারাই অনুমান করেছে –তাদেরই জায়গা হয়েছে এই অন্ধকূপে।
পিপলী হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তার হতভম্ব ভাব কাটতে সময় লাগল। সে বলল, একটা উইপোকা কি করে আমাদের রাণী হয়ে বসল?
অরং দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, মাঝে মাঝে পিপীলিকা গোত্রে এরকম হয়। উইপোকা এসে পিপড়ার রাণীকে মেরে তার জায়গা দখল করে নেয়। কাজটা তারা এমনভাবে করে যেন কেউ কিছু বুঝতে না পারে। জন্মান্ধ উইপোকা অসম্ভব ধূর্ত। তবে আমরা এখন তাকে উচিত শিক্ষা দেব।
কিভাবে?
সেটা তুমি ঠিক করবে। তুমি যেভাবে শিক্ষা দিতে চাও! সেই ভাবেই শিক্ষা দেয়া হবে। হুকুম দিতে হবে তোমাকে।
পিপলী অবাক হয়ে বলল, আমাকে কেন?
তুমি একটা বড় ব্যাপার এখনো ধরতে পারছ না। পিপীলিকা গোত্রের একটা প্রধান নিয়ম হল রাণীর হুকুম ছাড়া তারা কিছু করতে পারে না। তাদের কিছু করতে হলে রাণীর হুকুম লাগে।
আমরা এই অন্ধকূপে দীর্ঘদিন পড়ে আছি। এই জায়গাটা পাথরের তৈরী। কিন্তু আমরা খুঁজে খুঁজে এমন একটা জায়গা বের করেছি যা মাটির তৈরি। আমাদের কর্মী পিপড়ারা অল্প কিছুদিন পরিশ্রম করলেই এই মাটিতে সুরঙ্গ তৈরী করে ফেলতে পারবে। কিন্তু তারা তা করবে না –যতদিন পর্যন্ত না রাণী হুকুম দিচ্ছেন। এখন পিপলী বেগম, তুমি হবে আমাদের রাণী। তুমি আমাদের হুকুম দেবে।
আমিই রাণী?
হ্যাঁ, তুমি রাণী। এখানে আমরা যারা আছি তারা সবাই পুরুষ। পিপীলিকা গোত্র পুরুষের হুকুমে চলে না। তাদের রাণীর হুকুম লাগে। এখন তুমি আমাদের রাণী। তুমি হুকুম দেবে, আমরা কাজ শুরু করব।
আপনারা মুখে বললেই আমি রাণী হয়ে যাব?
এ ছাড়া আর উপায় কি?
বৃদ্ধ অরং একটুক্ষণ থেমে বলল –পিপলী বেগম এখন থেকে আমাদের রাণীমা। রাণীর কল্যাণ হোক! মঙ্গল হোক!
সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে বলল, রাণী-মা’র কল্যাণ হোক। মঙ্গল হোক। পিপীলিকা গোত্রের মহান রাণী –আমরা আপনার হুকুমের অপেক্ষা করছি।
পিপলী বলল, হুকুম দেবার আগে আমি জানতে চাচ্ছি এই যে দীর্ঘদিন আপনারা বেঁচে আছেন, কিভাবে বেঁচে আছেন। খাদ্য পেয়েছেন কোথায়?
বৃদ্ধ অরং বলল, সেই দুঃখের কাহিনী আপনার না শোনাই ভাল রাণী-মা। আমাদের মধ্যে যারা মারা গেছেন –তাদেরকে আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। আমরা জানি পিপীলিকা গোত্রের কাছে আমরা অপরাধ করেছি। অপরাধের যে শাস্তি আপনি দেবেন সেই শাস্তিই আমরা মাথা পেতে নেব।
পিপলী বলল, আপনারা অপরাধ করেছেন। বিশেষ ভয়ংকর পরিস্থিতির কারণে অপরাধ করেছেন বলেই আমি তা ক্ষমা করলাম। এখন আপনাদের মধ্যে যারা কর্মী তাঁরা সুরঙ্গ খোঁড়ার কাজে লেগে যান। যারা কর্মী নন তারাও সুরঙ্গ খোঁড়ার কাজে সাহায্য করবেন।
সুরঙ্গ খোঁড়া শেষ হবার পর আমরা কি করব রাণী-মা?
তা ঠিক করা হবে যখন আমরা অন্ধকূপ থেকে বের হব, তখন। আপনারা কাজে লেগে পড়ুন। শুধু বৃদ্ধ অরং থাকবেন আমার পাশে। আর সবাই কাজে যাবেন।
সব পিপড়া একসঙ্গে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বৃদ্ধ অরং রইল পিপলী বেগমের কাছে। পিপলী ফিসফিস করে বলল, সুরঙ্গ খোঁড়া শেষ হলে আমরা কি করব?
অরং বলল, তা তো রাণী-মা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।
আপনি আমাকে বুদ্ধি দেবেন না?
পিপীলিকা গোত্রে রাণীকে বুদ্ধি দেবার নিয়ম নেই।
শুনুন, বৃদ্ধ অরং আমি সব পুরানো নিয়ম-কানুন ভাঙব। আমি করব নতুন নতুন নিয়ম। আমার নতুন নিয়মে আপনি বা আপনার মত যারা জ্ঞানী তারা আমাকে বুদ্ধি দিতে পারবেন। এখন আমাকে বুদ্ধি দিন।
বৃদ্ধ অরং বলল, উইপোকা রাণীকে খুব সহজেই সরানো যাবে। জন্মান্ধ উইপোকা আলো সহ্য করতে পারে না। আমরা এমনভাবে মাটি ফুটো করব যেন আলো গিয়ে পড়ে উইপোকা রাণীর প্রাসাদে। এতেই কাজ হবে।
এ ছাড়া আর কোন বুদ্ধি কি আপনার আছে?
আমরা মাটি ফুটো করে সরাসরি উইপোকা-রাণীর প্রাসাদে চলে যেতে পারি। তখন আমাদের যুদ্ধ করতে হবে রাণীর নারী সৈন্যদের সাথে। সেইসব সৈন্যদের সবাই অন্ধ। কাজেই আমাদের যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাছাড়া একবার সত্য প্রকাশ হয়ে পড়লে পিপীলিকা সৈন্যরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।
মাটি কেটে সুরঙ্গ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বিপুল উৎসাহে সবাই মাটি কাটছে। নতুন রাণী পিপলী বেগম এগিয়ে গেল। শান্ত গলায় বলল, আমিও মাটি কাটব। আমাকে দেখিয়ে দিন কিভাবে মাটি কাটতে হয়।
অরং অবাক হয়ে বলল, আপনি হচ্ছেন সবার রাণী-মা। আপনি সুরঙ্গ কাটবেন তা-কি করে হয়?
সবাই কাজ করবে, আমি বসে বসে দেখব তা হয় না। তাছাড়া আমি তো আপনাদের বলেছি –আমার রাজত্বের নিয়ম-কানুন আলাদা। আজ থেকে নতুন নিয়ম –কেউ বসে থাকতে পারবে না। সবাইকে কাজ করতে হবে।
.
সুরঙ্গ কাটা হয়েছে। আলো এসে পড়েছে অন্ধকূপে। দলে দলে পিপড়া বের হয়ে আসছে। সবার সামনে আছে নতুন রাণী পিপলী বেগম। নতুন রাণীর মুখ হাসি-হাসি হলেও চোখ দুটি বিষণ্ণ। তার সামনে অনেক সমস্যা, অনেক দায়িত্ব। সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে এক বিশাল গোত্রের রাণী। তার চোখ বিষণ্নতো হবেই।
.
মতিন সাহেব হাই তুলে বললেন –গল্প শেষ। মায়েরা, চল ভাত খাই। খাবার পর সবাই ঘুমুতে যাও। তিলু বিলু খাবার টেবিলে চলে গেল। শুধু নীলু গম্ভীর মুখে বসে রইল। মতিন সাহেব বললেন, কি হল মা? তুমি এমন কঠিন মুখ করে বসে আছ কেন? নীলু রাগী গলায় বলল, বাবা, গল্প মোটেও শেষ হয়নি। তুমি শেষটা এখনো বলনি। শেষটা না বললে আমি ঘুমুতে যাব না।
মতিন সাহেব বললেন, শেষটা কি মা?
শেষটায় নতুন রাণী পিপলী বেগম, উইপোকা রাণীকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে।
আচ্ছা বেশ, তাড়িয়ে দিল। তারপর?
তারপর পিপলী বেগম বলবে –এখন থেকে পিপড়াদের আর স্কুলে যেতে হবে না।
সে কি?
ওদের স্কুলের কোন দরকার নেই, বাবা। ওদের স্কুল ভাল লাগে না।
তোমার স্কুল ভাল লাগে না বলে ওদেরও ভাল লাগবে না, তা তো না। ওদের স্কুল খুবই ভাল লাগে।
না বাবা, তুমি জান না ওদের স্কুল ভাল লাগে না।
আচ্ছা বেশ, ওদের স্কুল ভাল লাগে না।
পিপলী বেগম বলবে –আজ থেকে স্কুল নেই, পড়াশোনা নেই। সবাই শুধু আনন্দ করবে। হৈচৈ করবে।
ঠিক আছে করবে।
আর পিপলী বেগম বলবে, এখন থেকে দেশে কোন সৈন্য থাকবে না।
তা কি করে হয় মা? সৈন্য ছাড়া ওদের চলবে কি করে?
ওদের সৈন্য ভাল লাগে না, বাবা। ওরা সৈন্যকে ভয় করে।
তুমি ভয় কর। কিন্তু তাই বলে ওরা কেন ভয় করবে।
না, ওরাও করে।
আচ্ছা বেশ, ওরাও করে। এখন খেতে চল মা যাও মা।
.
রাতের খাবার শেষ করে নীলু বাবার গলা জড়িয়ে ঘুমুতে গেল। এবং এক সময় ঘুম-ঘুম গলায় বাবার কানে কানে বলল, বাবা, আমার খুব পিপলী বেগম হতে ইচ্ছা করছে।