৩. তৃতীয় দিন

৩. তৃতীয় দিন

রাজুর ঘুম ভাঙল খুব ভোরে। নতুন জায়গায় রাজু বেশি ঘুমাতে পারে না। তা ছাড়া আজগর মামার বাসাটা একটা জঙ্গলের মাঝে, চারপাশে গাছগাছালি, সারারাত নানারকম জন্তু-জানোয়ার, নাম-না-জানা বিচিত্র সব পাখি ডাকাডাকি করে। এরকম জায়গায় বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকা খুব সোজা ব্যাপার না। রাজু চোখ কচলে বাসি ঘুম দূর করে বিছানা থেকে নামল। সাগর এখনও ঘুমিয়ে কাদা হয়ে আছে। বিশাল বড় একটা ঘরে, আরও বড় একটা বিছানায় আজগর মামা কাল রাতে তাদের শুইয়ে দিয়েছিলেন, তাদের কিছু মনে নেই। রাজুকে নিশ্চয়ই মামা কোলে করে আনেননি, সে নিশ্চয়ই হেঁটে হেঁটে এসেছে, কিন্তু রাজু এখন আর কিছু মনে করতে পারে না।

রাজু বিছানা থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, বাইরে কতরকম গাছপালা, তার মাঝে থেকে কত বিচিত্র রকম শব্দ আসছে! পাখির ডাক, পোকার ডাক, বাতাসের শব্দ, গাছপালার পাতার শব্দ, ডালের সাথে ডালের ঘষা খাওয়ার শব্দ, পাখির পাখা ঝাঁপটানোর শব্দ, শুকনো পাতা উড়ে শব্দ, তার মাঝে সরসর করে কিছু-একটা ছুটে যাবার শব্দ। কী আশ্চর্য-না লাগছে শুনতে! তার উপর হালকা কুয়াশায় চারিদিকে ঢেকে আছে, দেখে মনে হয় যেন এটা সত্যি নয়, যেন কেউ স্বপ্ন থেকে তুলে এনে দিয়েছে।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই রাজু দেখল আজগর মামা হেঁটে হেঁটে আসছেন–মানুষ যেরকম আস্তে আস্তে আপন মনে হাঁটে সেরকম হাঁটা নয়, মামা হাঁটছেন ধপ ধপ করে, দুই হাত নেড়ে নেড়ে দেখে মনে হচ্ছে বুঝি ট্রেন ধরতে যাচ্ছেন। জানালার নিচে এসে মামা উপরে তাকিয়ে রাজুকে দেখতে পেলেন, তখন হাঁটা থামিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, “উঠে গেছিস?”

রাজু মাথা নাড়ল। মামা বললেন, “আয় বাইরে আয়, দেখ কী সুন্দর সকাল।“

রাজু দরজা খুলে বাইরে এল, মামা তখন ঘাসের উপর পা ছড়িয়ে বসে হাত দিয়ে পায়ের আঙুল ধরার চেষ্টা করছেন, রাজু বলল, “তুমি এত জোরে জোরে হেঁটে হেঁটে কোথায় যাচ্ছিলে?”

“যাব আবার কোথায়? সকালে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো, জানিস না?”

“হাঁটা কোথায় মামা? তুমি তো রীতিমতো দৌড়াচ্ছিলে!”

“মেনি-বেড়ালের মতো হাঁটব নাকি? হাঁটব বাঘের মতো। বাঘের মতো হাঁটলে কার্ডিও ভাসকুলার ব্যায়াম হয়। জোরে জোরে হেঁটে হার্টবিট বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ফেলতে হয়, তারপর সেই হার্টবিট আধ ঘণ্টা ধরে রাখতে হয়।”

“তুমি আধা ঘণ্টা ধরে হাঁটছ?”

মামা মাথা নাড়লেন, “সকালে হাঁটতে কী ভালো লাগে! হেঁটে দেখিস। দিনের একেকটা সময় হচ্ছে একেক রকম, সকালটা হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর। সকালবেলা সবকিছু পবিত্র, সবকিছুতেই শান্তি। সবকিছু নরম।”

“আর দুপুর?”

“দুপুর হচ্ছে ব্যস্ততার সময়। দুপুরে কারও অবসর নেই। দুপুরে সবার জন্যে শুধু কাজ আর কাজ!”

“আর রাত?”

“রাত? রাত হচ্ছে বিশ্রামের সময়। অবিশ্যি তুই যদি চোর হোস তা হলে রাত হচ্ছে চুরি করার সময় তখন দুপুর হবে তোর বিশ্রামের সময়।

রাজু হি হি করে হেসে বলল, “তার মানে যারা দুপুরে ঘুমায় তারা সবাই চোর?”

মামাও হেসে ফেললেন, বললেন, “কে জানে, হয়তো চোর।”

রাজু বারান্দায় সিঁড়িতে বসে বসে মামার ব্যায়াম দেখতে লাগল। তার হঠাৎ করে আব্বা আর আম্মার কথা মনে পড়ল, কী করছে এখন আব্বা আর আম্মা? এখনও নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছেন। ঘুম থেকে উঠে কী করবেন, আবার কি ঝগড়া করবেন?

মামা ব্যায়াম শেষ করে উঠে এসে রাজুকে এক হাতে আঁকড়ে ধরে নরম গলায় বললেন, “সাগর এখনও ঘুমাচ্ছে?”

“হুঁ।“

“যা, তুলে দে ঘুম থেকে। হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করবি। কাল রাতেও কিছু খাসনি। কী খাবি বল। গোশত-পরোটা? আমাদের চান মিয়া একেবারে ফাস্ট ক্লাস গোশত-পরোটা তৈরি করে। বেহেশতি পরোটা। একবার খেলে তার স্বাদ মুখে লেগে যাবে, জন্মেও ভুলতে পারবি না।”

সাগরকে ঘুম থেকে তুলে হাতমুখ ধুয়ে যখন রাজু নাস্তা করতে এল তখন দেখা গেল বেহেশতি পরোটা তৈরি হয়নি। বিখ্যাত বাবুর্চি চান মিয়া–যে বেহেশতি পরোটা তৈরি করে, সে বাড়িতে গিয়েছিল এখনও আসেনি। তাকে খবর পাঠানো হয়েছে, সে নিশ্চয়ই দুপুরবেলাতেই চলে আসবে। আজগর মামা অবিশ্যি সেটা নিয়ে বেশি ঘাবড়ে গেলেন না, সকালে নাস্তা করার জন্যে বিশাল একটা বাটিতে অনেকগুলি ডিম ভেঙে সেটা খুব উৎসাহ নিয়ে ফেটাতে থাকলেন। রাজু আর সাগরকে বললেন, “সকালের নাস্তা হবে টেস্টি, অমলেট আর হরলিক্স। দুপুরবেলা খাব কাবাব-পরোটা, রাত্রে ভুনা খিচুড়ি।”

রাজুর যেরকম খিদে লেগেছে সে ইচ্ছে করলে এখন লবণ ছিটিয়ে জুতা স্যান্ডেল পর্যন্ত খেয়ে ফেলতে পারে। মামা বললেন, “আয়, হাত লাগা। পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কাট। সাথে কাঁচামরিচ। পেঁয়াজ কাটার সময় মুখ হাঁ করে নিঃশ্বাস নিবি, তা হলে দেখিস চোখে পানি আসবে না।”

সাগর রুটি টোস্ট করল, রাজু পেঁয়াজ মরিচ কেটে দিল এবং মামা ডিম ভাজা করলেন। তারপর সবাই মিলে খেতে বসল।

রাজু প্রায় রাক্ষসের মতো খেল, আম্মা থাকলে আজ খুব খুশি হতেন। খাবার পর এক গ্লাস করে হরলিক্স খেয়ে রাজু আর সাগর মামার সাথে বারান্দায় গিয়ে বসল। মামা মোটা মোটা কিছু কলা নিয়ে বসেছেন, রাজুকে আর সাগরকে একটা করে ছিঁড়ে দিয়ে বললেন, “খাবার পর সবসময় ফল খেতে নেয়। নে খা।”

সাগর বলল, “এই কলা এত মোটা কেন মামা?”

আজগর মামা কলা ছিলে তাতে কামড় দিয়ে বললেন, “এর নাম বিচিকলা। এর মাঝে তিন লাখ তেত্রিশ হাজার বিচি। তবে খেতে ফাস্ট ক্লাস।”

মামা কলাটা খেয়ে মুখ থেকে পুট পুট করে বিচিগুলি বের করতে থাকেন, দেখে মনে হয় ভারি বুঝি মজা। সাগর আর রাজু কলা খেয়ে পুট পুট করে তার বিচি বের করার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল, মামার অনেক গুণ, তার কিছু-কিছু কোনোদিন তারা নাগালে পাবে না।

বাইরে তখন একটু বেলা হয়েছে, মামা ঘড়ি দেখে বললেন, “সকালে ঘুম থেকে ওঠার সুবিধা কী জানিস?”

“কী মামা?”

“সারাটা দিন লম্বা হয়ে যায়। কত কী করা যায় এক দিনে! চল এখন বের হই। জুতা-মোজা পর।”

রাজু উৎসাহ জুতা পরতে পরতে বলল, “কোথায় যাব মামা?”

“আমার মোটর-সাইকেল করে ঘুর আসব। এখানে একটা ঝরনা আছে, পাহাড়ি ঝরনা। অপূর্ব সুন্দর, তোদের দেখিয়ে আনি। কাল নিয়ে যাব জিন্দা আগুন দেখাতে।”

“সেটা কী মামা?”

“মাটি ফেটে গ্যাস বের হচ্ছে সেখানে দাউদাউ করে দিনরাত আগুন জ্বলছে। দেখলে মাথা ঘুরে পড়ে যাবি। আর পরশু নিয়ে যাব কিংশুনাগের মন্দিরে। দেখবি তান্ত্রিক সাধু বসে আছে। অমাবস্যা রাতে নাকি এখনও নরবলি দেয়।”

“সত্যি?”

“সত্যি-মিথ্যা জানি না, তোক বলে। চল চল, দেরি করিস না।”

মামা তাঁর মোটর-সাইকেলে বসলেন, মামার পিছনে বসল সাগর, সাগরের পিছনে রাজু। মামা বললেন, “ধরেছিস তো শক্ত করে?”

রাজু আর সাগর বলল, ধরেছি মামা।”

মামা স্টার্টারে লাথি দিতেই মোটর-সাইকেল গর্জন করে উঠল, তারপর মামা পা তুলে মোটর-সাইকেল ছুটিয়ে নিয়ে চললেন। রাজু আগে কখনও মোটর সাইকেলে ওঠেনি, তার কী যে মজা লাগল সে আর বলার মতো নয়! মনে হতে লাগল বুঝি সে উড়ে যাচ্ছে।

বাতাসের ঝাঁপটা লাগছে মুখে, রাস্তা পিছনে ছুটে যাচ্ছে রাস্তার পাশে গাছপালা হুশ হুশ করে বের হয়ে যাচ্ছে। সে চিৎকার করে বলল, “আরও জোরে মামা–আরও জোরে।”

মামা সত্যি সত্যি আরও জোরে ছোটালেন। এতক্ষণে সাগরও মজা পেয়ে গেছে, সে চিৎকার করে বলল, “আরও জোরে।“

মামা আরও জোরে ছুটলেন, মোটর-সাইকেল জীবন্ত প্রাণীর মতো গর্জন করতে লাগল। রাজু বলল, “আরও জোরে মামা।”

আজগর মামা মাথা পিছনে ঘুরিয়ে বললেন, “আরও জোরে গেলে তো উড়ে যেতে হবে!”

“উড়েই যাও মামা–উড়ে যাও।”

মামা শরীর নাড়িয়ে নাড়িয়ে উড়ে যাবার ভান করতে লাগলেন। তাই দেখে সাগর আর রাজু হি হি করে হাসতে লাগল।

প্রায় ঘণ্টাখানেক গিয়ে মামা একটা পাহাড়ি রাস্তায় যেতে শুরু করলেন। এরকম রাস্তায় হেঁটে যেতেই জান বের হয়ে যাবার কথা, মোটর-সাইকেলে যাবার তো কোনো প্রশ্নই আসে না, কিন্তু মামাকে সেটা নিয়ে খুব চিন্তিত দেখা গেল না, চোখ বন্ধ করে মোটর সাইকেল ছুটিয়ে নিতে লাগলেন। ঝাঁকুনি খেতে খেতে যখন রাজুর মনে হতে লাগল তার মগজ এখন নাক-মুখ দিয়ে বের হয়ে আসবে তখন মামা থামলেন। সামনে একটা উঁচু পাহাড়, আর সেই উঁচু পাহাড় থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। নিচে বড় বড় একটা পাথর, সেখানে পড়ে পানি চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে। জায়গাটি নির্জন সুমসাম–বহু দূরে একটা পাহাড়ের উপর রঙিন কাপড় পরে কয়টা পাহাড়ি মেয়ে বসে আছে, এ ছাড়া আশেপাশে কোথাও কেউ নেই।

মামা মোটরসাইকেল থেকে নেমে বললেন, “কী বলেছিলাম, সুন্দর না?”

রাজু আর সাগর মাথা নাড়ল।

“এখন তো ঝরনাটা শুকিয়ে গেছে। বর্ষাকালে এলে দেখবি কী ভয়ংকর ঝরনা–দুই মাইল দূর থেকে এর গর্জন শোনা যায়!”

“সত্যি?”

”সত্যি। মামা মাথা নাড়লেন, বর্ষাকালে শুধু একটা সমস্যা।”

“কী সমস্যা মামা?”

“জোক। খুব জোঁকের উপদ্রব হয় তখন।”

 “জোক? ইয়াক থুঃ–” সাগর মুখ কুঁচকে মাটিতে থুতু ফেলল।

রাজু পানির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “পানিতে নামি, মামা?”

“ইচ্ছে হলে নাম।”

রাজু জুতো খুলে পানিতে নামল, পরিষ্কার টলটলে পানি, আর কী ঠাণ্ডা, রাজুর সারা শরীর কেমন জানি শিরশির করে ওঠে! সাগর কিছুক্ষণ জোঁকের ভয়ে তীরে দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত আর লোভ সামলাতে পারল না, সেও জুতো খুলে নেমে এল। ঝকঝকে পরিষ্কার পানিতে ছোট ছোট মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাগর আর রাজু খানিকক্ষণ সেই মাছ ধরার চেষ্টা করল, এইটুকুন ছোট ছোট মাছ, কিন্তু কী বুদ্ধি সেই মাছের, কিছুই ধরা দিল না।

মামা একটা পাথরে লম্বা হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাঁকে দেখে মনে হতে লাগল আকাশে বুঝি কেউ একটি বই খুলে রেখেছে আর মামা একমনে সেই বইটা পড়ছেন।

রাজু আর সাগরকে নিয়ে মামা ঘণ্টাখানেক ঝরনার কাছে থাকলেন, তারপর ঘড়ি দেখে বললেন, “চল বাসায় যাই। খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে জিন্দা আগুন দেখতে যাব।”

পানিতে লাফঝাঁপ দিতে ভারি মজা, এখান থেকে যেতে ইচ্ছে করছিল না, কিন্তু জিন্দা আগুনের কথা শুনে দুজনেই লাফিয়ে উঠে জুতো-মোজা পরে নিতে থাকে।

ফিরে আসার সময় মামা বাজারের কাছে একটা রেস্টুরেন্টে থামলেন। দুপুর হয়ে গেছে, বাসায় ফেরার আগে খেয়ে নিতে চান। রাজু একবার বিখ্যাত বাবুর্চি চান মিয়া এবং তার বেহেশতি পরোটার কথা মনে করিয়ে দিল, আজগর মামা আর ঝুঁকি নিলেন না। বাসায় গিয়ে যদি দেখা যায় চান মিয়া এখনও এসে পৌঁছায়নি, আবার তা হলে পাউরুটি আর ডিম ভাজার পরে বিচিকলা খেতে হবে।

খেয়েদেয়ে বাসায় ফিরে আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে গেল। আজগর মামা এই এলাকায় খুব জনপ্রিয় মানুষ বলে মনে হল, যার সাথেই দেখা হয় সেই মামার সাথে খানিকক্ষণ কথা বলে নেয়।

বাসায় পৌঁছে মামা যখন তাঁর মোটর-সাইকেলটা তুলে রাখছেন তখন রাজু বলল, “মামা, আমি তোমার মোটর-সাইকেলটা একটু চালাই?”

মামা চোখ কপালে তুলে বললেন, “কী বললি?”

“তোমার মোটর-সাইকেলটা চালাই?”

“তুই মোটরসাইকেল চালাতে পারিস?”

রাজু মাথা নাড়ল, “না, পারি না।”

“তা হলে?”

“তুমি শিখিয়ে দেবে।”

অন্য কোনো মানুষ হলে এই সময়ে রাজুকে একটা বাঘা ধমক দেওয়া হত, কিন্তু আজগর মামার কথা আলাদা। মামা কয়েক সেকেন্ড রাজুর দিকে তাকিয়ে দেখে বললেন, “নে, দেখি পারিস কি না!”

রাজু মোটর সাইকেলটা ধরল, দেখে বোঝা যায় না, কিন্তু বেশ ভারী, শক্ত করে ধরে রাখতে হয়। মামা বললেন হাত দিয়ে ঠেলে একটু ঘুরিয়ে আনতে। রাজু বেশ সহজেই ঘুরিয়ে আনল। তারপর মামা বললেন সীটে বসতে। রাজু সীটে বসল, মামা তখন তার দুই পা কতটুকু যায় লক্ষ করলেন। কিছু-একটা পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, “সাইকেল চালাতে পারিস তো?”

“পারি মামা।”

“ঠিক আছে, তা হলে দেখা যাক তুই সত্যি সত্যি মোটর-সাইকেল চালাতে পারিস কি না। ব্যাপারটা যত সোজা মনে হল আসলে তত সোজা না। ব্যালেন্স রাখার ব্যাপারটা সোজা হতে পারে, কিন্তু ক্লাচ চেপে ধরে গিয়ার পালটানো ব্যাপারটা এত সোজা না। প্রথম প্রথম ফাস্ট গিয়ারেই প্র্যাকটিস করা যাক, দেখি কতদূর কী হয়।”

সাগর একটু দূর থেকে হিংসা-হিংসা চোখে তাকিয়ে রইল, আর তার মাঝে রাজু আজগর মামার কথামতো চাবি দিয়ে অন করে স্টাটারে লাথি মেরে মোটর সাইকেলের ব্রেকটা ছেড়ে দিলে সে খুব ধীরে ধীরে এগুতে শুরু করল। মামা সাথে সাথে একটু এগিয়ে গেলেন, দেখা গেল রাজু একা একাই বেশ চালিয়ে নিয়ে গেল। খানিক দূর গিয়ে সে ব্রেক চেপে মোটর-সাইকেলটা থামিয়ে দিয়ে মামার দিকে ঘুরে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসল।

মামা বললেন, “এই তো হয়েছে, এখন ঘুরে আয় দেখি!” রাজু নিজে নিজেই ঘুরে এল।

মামা পিঠে হাত দিয়ে বললেন, “এই তো মোটামুটি শিখে গেছিস, আজকে এই পর্যন্তই থাক–কাল আবার চালাবি।“

রাজু বলল, “মামা, আরেকটু চালাই? বেশি দূরে যাব না, এই উঠোনেই ঘুরে আসব, তুমি বসে বসে দেখো।”

অন্য কেউ হলে রাজুকে একটা বাঘা ধমক দিত, কিন্তু মামা বেশ সহজে রাজি, হয়ে গেলেন। বারান্দায় একটা চেয়ার এনে খবরের কাগজ নিয়ে বসলেন। সাগর হিংসা-হিংসা চোখে তাকিয়ে রইল, আর তার মাঝে রাজু বিশাল মোটর সাইকেলটা চালিয়ে বেড়াতে লাগল।

কিছুক্ষণের মাঝেই আজগর মামা আবিষ্কার করলেন, মোটরসাইকেল চালানোর ব্যাপারে রাজুর বেশ নিজস্ব একটা দক্ষতা আছে। ব্যাপারটা সে এত চমৎকারভাবে আয়ত্ত করে ফেলল যে মামা নিজে থেকেই তাকে কেমন করে গিয়ার পালটাতে হয় শিখিয়ে দিলেন। মামার ধারণা ছিল ব্যাপারটা করতে গিয়ে রাজু গোলমাল করে আজকের দিনের মতো ক্ষান্ত দেবে। কিন্তু দেখা গেল রাজু কোনো গোলমাল করল না এবং মোটামুটি বেশ ভালো গতিতে রাস্তা দিয়ে ছুটে গেল।

রাজু প্রায় নেশাগ্রস্তের মতো মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল এবং কতক্ষণ এভাবে চলত বলা মুশকিল, কিন্তু ঠিক তখন মামার সাথে কিছু মানুষ দেখা করতে এল। অনেক দূর থেকে এসেছে, মামা তাদের ভিতরে গিয়ে হাতমুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন, তাদের সাথে সাথে বলতে হবে, মামার রাজুর দিকে নজর দেবার সময় নেই। রাজু বাধ্য হয়ে মোটর-সাইকেলটা বন্ধ করে তুলে রাখল।

মানুষগুলি গ্রামের মানুষ, অনেকেই লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরে এসেছে। একজন ফুলপ্যান্ট শার্ট পরে এসেছে, তার চোখে চশমা এবং মুখে গোঁফ আছে, তবুও তাকে দেখে কেমন জানি গ্রামের মানুষ বলে বোঝা যায়। মামা জিজ্ঞেস করলেন, “কী খবর ইদরিস মিয়া?”

ইদরিস মিয়া শুকনো মুখে বলল, “খবর বেশি ভালো না।”

“কেন, কী হয়েছে?”

“খবিবুর রহমান”

নামটা শুনেই মামা কেমন জানি শক্ত হয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “কী করেছে খবিবুর রহমান?”

“ফতোয়া দিয়েছে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া হারাম।”

“তাই ফতোয়া দিয়েছে?”

“জি। গ্রামের দুইটা মেয়ের পিঠে দোররা মেরেছে। এখন তার মুরিদেরা লাঠিসোটা নিয়ে তৈরি হচ্ছে মেয়েদের স্কুলটা ভেঙে ফেলার জন্যে।”

“স্কুল ভেঙে ফেলবে?”

“জি।”

আজগর মামার মুখ রাগে থমথম করতে লাগল। রাজু এর আগে মামাকে কখনও রাগ হতে দেখেনি। সত্যি কথা বলতে কী মামা যে রাগ হতে পারেন সেটাই তার জানা ছিল না। দেখল, মামা ভয়ংকর রাগ হতে পারেন, আর মামা যখন রেগে যান তখন তাঁকে দেখে ভয়ে হাত-পা শীরের মাঝে সেঁধিয়ে যেত চায়।

মামা কিছু না বলে পাথরের মতো মুখ করে বসে রইলেন। ইদরিস মিয়া খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, “আপনার একবার যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজন।”

মামা কিছু বললেন না। কিন্তু তার মুখে এবারে চিন্তার একটা ছায়া পড়ল। ইদরিস মিয়া বলল, “আরও ব্যাপার আছে।”

“কী ব্যাপার?”

ইদরিস মিয়া ইতস্তত করে বলল, “এখানে বাচ্চাকাচ্চা আছে, তাদের সামনে বলতে চাই না। যদি যান তা হলে তো শুনবেনই–”

রাজু বুঝতে পারল ইদরিস মিয়া তাদের সামনে বলতে চাইছে না, এখন কি তাদের সামনে থেকে সরে যাওয়া দরকার? সরে যেতে হলে মামা নিশ্চয়ই বলবেন। মামা কিছু বললেন না, তাই রাজুও সরে গেল না।

আজগর মামা উঠে দাঁড়িয়ে হেঁটে এসে ঘরের চৌকাঠ ধরে দূরে তাকিয়ে থেকে বললেন, সমস্যা হয়ে গেল ইদরিস মিয়া।”

“কী সমস্যা?”

“এই যে আমার দুইজন ভাগনেকে নিয়ে এসেছি, এদের ফেলে যাই কেমন করে?”

“দুই একদিনের ব্যাপার–”

“একা একা থাকবে এরা?”

“একা কেন? চান মিয়া তো আছে।”

“তা আছে–এখনও এসে পৌঁছায়নি অবিশ্যি।”

ইদরিস মিয়া মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, “সে তো এসে পৌঁছে যাবে। আপনি যদি বলেন আমাদের একজন থাকতে পারে এখানে।”

উপস্থিত মানুষেরা জোরে জোরে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। একজন মানুষ বলল, “গ্রামের অবস্থা ভালো না, না হলে তো আমরা সাথেই নিয়ে যেতাম।”

ইদরিস মিয়া বলল, “আপনার ভাগনে তো আমাদেরও ভাগনে।”

আজগর মামা বললেন, “তা ঠিক, কিন্তু এই অবস্থায় এদের গ্রামে নেওয়া ঠিক না।”

সবাই চুপ করে বসে রইল, আর মামা তখন অন্যমনস্কভাবে ঘুরে রাজুর দিকে তাকালেন, তাঁর মুখে একই সাথে একটু দুঃখ আর একটু লজ্জার ভাব। মামা

কী বলতে চাইছেন হঠাৎ করে রাজু বুঝে গেল, তাই মামা বলার আগেই সে বলে ফেলল, “মামা, আমরা দুই-একদিন একা একা থাকতে পারব, আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।”

“সত্যি?” মামা উজ্জ্বল চোখে বললেন, “সত্যি পারবি?”

“কেন পারব না? একশোবার পারব।”

সাগর সাধারণত উলটোপালটা কথা বলে, এবারে কী হল কে জানে, সে মাথা নেড়ে বলল, “পারব মামা, কোনো অসুবিধে নেই।”

মামার চেহারায় তবু কেমন জানি একটু অপরাধী-অপরাধী ভাব রয়ে গেল। সেভাবেই বললেন, “চান মিয়া আজ রাতের মাঝে এসে যাবে। সে খুব কাজের মানুষ, একেবারে নিজের ঘরের মানুষের মতো। সে এসে গেলে তোদের আর কোনো অসুবিধা হবে না, দেখিস কী চমৎকার রান্না করবে!”

রাজুর মামার জন্যে খুব মায়া লাগল, বলল, “তুমি চিন্তা কোরো না মামা, আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। তুমি গিয়ে স্কুলটাকেও বাঁচাও।”

মামা বললেন, “বাঁচাব। দেখিস, স্কুলটাকে ঠিকই বাঁচাব।”

উপস্থিত সব মানুষ তখন জোরে জোরে মাথা নাড়াল। মামা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “ড্রয়ারের মাঝে বইয়ের আলমারির চাবি আছে, চান মিয়াকে বলিস, খুলে দেবে।”

“বলব।”

“শেলফের উপর দেখিস একটা বাইনোকুলার আছে, রাত্রিবেলা সেটা দিয়ে আকাশে চাঁদ দেখতে পারবি।”

“ঠিক আছে মামা?”

“গানের ক্যাসেট আছে অনেক। যত জোরে ইচ্ছে গান শুনতে পারিস, আশেপাশে কেউ নেই, কেউ এসে নালিশ করবে না।”

সাগর বলল, “তোমার বন্দুকটা দিয়ে খেলতে পারি মামা?” মামা চোখ কপালে তুলে বললেন, “কী বললি বন্দুক?”

“হ্যাঁ।”

“মাথা খারাপ হয়েছে তোর? বন্দুক কি একটা খেলার জিনিস হল?” সাগর ভুরু কুঁচকে বলল, “তা হলে রাজু যে মোটর-সাইকেল চালাল?”

মামা মাথা নেড়ে বললেন, “সে তো আমার সামনে চালিয়েছে। আমি না থাকলে রাজুকে মোটর সাইকেল ছুঁতে দেব?”

“দেবে না মামা?”

“না।” শুনে সাগর খুব খুশি হয়ে দুলে দুলে হাসতে লাগল।

মামা বললেন, “আমি ঘুরে আসি, তারপর সবরকম অ্যাডভেঞ্চার শুরু হবে। এখন বই পড়িস, গান শুনিস, ইচ্ছে হলে পিছনে পুকুর আছে–যেখানে মাছ ধরতে পারিস। মাঝারি সাইজের রুইমাছ আছে। চান মিয়াকে বলিস ছিপ বের করে দেবে। সাঁতার জানিস তো?”

রাজু মাথা নাড়ল, “না মামা।”

মামা চোখ কপালে তুলে বললেন, “তা হলে খবরদার পুকুরের ধারে কাছে। যাবি না। মাছ ধরার দরকার নেই। ঠিক আছে? মনে থাকবে তো?”

মনে থাকবে।”পিছনে টিলা আছ, সেখানে বেড়াতে যেতে পারিস।”

“ঠিক আছে মামা।”

“আমি দুদিনের মাঝে চলে আসব। চান মিয়ার বাড়ির উপর দিয়ে যাব, সে যদি এর মাঝে রওনা দিয়ে না থাকে তা হলে তাকে পাঠিয়ে দেব। কোনো চিন্তা করিস না।”

মামা খুব তাড়াতাড়ি একটা ব্যাগে দরকারি কিছু জিনিস ভরে নিয়ে বের হয়ে গেলেন। যাবার আগে রাজুর হাতে বাসার চাবি আর বেশকিছু টাকা দিয়ে গেলেন, যদি হঠাৎ করে কোনো কারণে দরকার হয় সেজন্যে। মামার সাথে আসার সময় আব্বাও বেশকিছু টাকা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে রাজুর কাছে অনেক টাকা, ইচ্ছে করলে মনে হয় একটা ছাগল নাহয় গোরুর বাচ্চা কিনে ফেলতে পারবে।

.

মামা চলে যাবার পর হঠাৎ মনে হয় সারা বাসাটা বুঝি ফাঁকা হয়ে গেছে। বাসাটা হঠাৎ এত ছমছমে নির্জন হয়ে যায় যে দিনদুপুরে সাগর আর রাজুর কেমন জানি ভয়-ভয় লাগতে থাকে। রাজু অবিশ্যি খুব চেষ্টা করল তার ভয়-ভয় ভাবটা ঢেকে রাখতে। এমনভাবে কথা বলতে লাগল যেন নির্জন একটা বাসায় একা একা থাকাটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। দুজনে ঘরের ভিতরে বসে বই পড়ার চেষ্টা করতে থাকে, আর যখনই খুট করে একটা শব্দ হয় তখন দুজনেই একসাথে চমকে ওঠে, তারপর ছুটে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে চান মিয়া এসেছে কি না।

ঘণ্টাখানেক এভাবে কাটিয়ে দেওয়ার পর রাজু বলল, “চল, বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”

সাগর চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাবে?”

“এই তো এদিক-সেদিক।”

”কেন?”

“বসে বসে অপেক্ষা করে করে বিরক্তি লেগে গেছে। বাইরে থেকে ঘুরে এলে সময়টা কাটবে আর খিদেটাও লাগবে ভালো করে। আমরা যখন আসব তখন দেখব চান মিয়া সবকিছু রান্না করে রেখেছে।”

“যদি না করে?”

রাজু রেগে উঠে বলল, “কেন করবে না? মামা তার বাড়ি হয়ে যাচ্ছেন না?”

“যদি বাড়িতে না পান?”

“তা হলে মামা অন্য ব্যবস্থা করবেন।”

সাগর তবু নিশ্চিন্ত হয় না, সবকিছুতে সন্দেহ করা হচ্ছে তার স্বভাব। সাগর অবিশ্যি শেষ পর্যন্ত বাইরে যেতে রাজি হল, না হয়ে উপায়ও ছিল না, সাগর না গেলে রাজু একা একাই বাইরে বেড়াতে যাবে বলে তাকে জানিয়ে দিল।

বাসার পিছনে বড় বড় গাছ, তার মাঝে দিয়ে ছোট একটা হাঁটাপথ চলে গেছে। পথের দুধারে ঝোঁপঝাড়, তার মাঝে নানারকম বুনো ফুল ফুটে আছে। হেঁটে হেঁটে তারা একটা বিশাল পুকুরের তীরে হাজির হয়, পুকুরটা ঘিরে নানারকম গাছ, দেখা চোখ জুড়িয়ে যায়। পুকুরের একদিকে একটা শান-বাঁধানো ঘাট, সেখানে চমৎকার বসার জায়গা। রাজু বলল, “আয় গিয়ে বসি।”

সাগর বলল, “মামা পুকুরে যেতে নিষেধ করেছেন মনে নেই?”

“আমরা পুকুরে যাচ্ছি না, বসার জায়গাতেই বসছি।”

সাগর গজগজ করতে লাগল, রাজু সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে শান-বাঁধানো ঘাটে পা ছড়িয়ে বসে। চারিদিকে কেমন জানি সুমসাম নীরবতা। গাছগুলিকে মন হচ্ছে মানুষ, সবাই যেন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রাজু অনেকটা নিজের মনে বলল, “ইশ, কী সুন্দর!”

সাগর এতক্ষণ গজগজ করছিল, এখন হঠাৎ ফোঁশ করে উঠে বলল, “এর মাঝে সুন্দর কী আছে?”

রাজু সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই সুন্দর কী জানিস না?

“জানব না কেন?”

“তা হলে এটা সুন্দর লাগছে না?”

“না।“ সাগর পা দাপিয়ে বলল, “আমি এখানে থাকব না।”

রাজুর ইচ্ছে করল সাগরের চুলের মুঠি ধরে তাকে একবার পুকুরের পানি থেকে চুবিয়ে আনে, কিন্তু দুজনে কেউই সাঁতার জানে না–ব্যাপারটা সহজ নয়। সে শুধু চোখ পাকিয়ে সাগরের দিকে তাকাল, দেখল, সাগর ঠোঁট উলটিয়ে কাদার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। রাজু উদাস গলায় সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখন থামোকা কাঁদিস না, তোর কান্না শুনে কেউ তোকে দেখতে আসবে না।”

কথাটাতে ম্যাজিকের মতো কাজ হল, মুহর্তে সাগরের কান্না-কান্না ভাব দূর হয়ে গিয়ে সেখানে ভয়ের একটা ভাব ফুটে ওঠে। ঢোক গিয়ে শুকনো গলায় বলল, “বাসায় যাব।”

“ঠিক আছে, যাব। একটু বসে যাই, বাসায় গিয়ে তো বসেই থাকবি।”

আশ্চর্য ব্যাপার, সাগর মাথা নেড়ে রাজি হয়ে রাজুর পাশে বসে পড়ে! রাজু তখন হেলান দিয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মাঝেই তার মুখ দেখে মনে হতে থাকে তার পেটব্যাথা করছে।

রাজু আর সাগর যখন বাসায় ফিরে এল তখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। এতক্ষণে চান মিয়া নিশ্চয়ই এসে গেছে। তার কাছে রান্নাঘরের চাবি থাকে। সে নিশ্চয়ই এসে এতক্ষণে বেহেশতি পরোটা আর শিককাবাব তৈরি করে ফেলেছে। কিংবা কে জানে হয়তো ভুনা খিচুড়ি। মামা কোনটার কথা বলেছেন কে জানে! সে নাকি খুব ভাল কুলপি বরফ তৈরি করে, আইসক্রিমের মতো খেতে, কে জানে আজকে তৈরি করবে কি না! যদি তৈরি করে তা হলে সে একসাথে দুটি বাটি খেয়ে ফেলবে।

আজগর মামার বাসায় এসে পৌঁছানোর আগেই হঠাৎ করে রাজুর দুটি জিনিস মনে হয়, অনেকটা দৈববাণীর মতো। তার মনে হল চান মিয়া এখনও আসেনি এবং চান মিয়া আর আসবে না। কেন এটা তার মনে হল সে জানে না, কিন্তু ব্যাপার দুটি নিয়ে তার মনের ভিতরে আর এতটুকু সন্দেহ রইল না।

কাজেই বাসায় পৌঁছে যখন তারা আবিষ্কার করল পুরো বাসাটিতে থমথমে অন্ধকার এবং রান্নাঘরে তালা ঝুলছে, রাজুও একটুও অবাক হল না। সাগর কিন্তু ব্যাপারটি যেন ঠিক বুঝতে পারল না, কেমন যেন রেগে উঠে বলল, “চান মিয়া এখনও আসেনি?”

রাজু কোনো উত্তর দিল না, হঠাৎ কেন জানি তার একটু ভয়-ভয় লাগতে শুরু করেছে।

“আমরা খাব কেমন করে?” রাজু এবারেও কোনো উত্তর দিল না, দূরে তাকিয়ে রইল।”ঘুমাব কেমন করে?”

রাজু তখনও কোনো কথা বলল না, মুখে শুধু চিন্তার একটা ছাপ স্পষ্ট হয়ে এল। ঠিক তখন সাগর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল।

একেকজন মানুষের কান্নার ধরন একেক রকম, সে-হিসেবে সাগরের কান্নার ধরনটি খুব বিচিত্র। সে প্রথমে হাউমাউ করে একচোট কেঁদে নেয়, তারপর তার কান্নার দমকটা একটু কমে আসে, তখন সে কাঁদতে কাঁদতে নানারকম কথা বলতে শুরু করে। এমনিতে সে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না, কিন্তু কাঁদতে কাঁদতে সে খুব গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলে। মনের ভাবটা সে খুব সুন্দর করে প্রকাশ করে।

রাজু ধৈর্য ধরে সাগরের কান্নার প্রথম পর্ব শেষ হয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে এবং দেখতে দেখতে সেটা শুরু হয়ে গেল। সাগর কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করল যে, আজগর মামার এই বাসাটা একটা জঙ্গল ছাড়া আর কিছু না, তাদের এখানে আসাই ভুল হয়েছে। আজগর মামা তাদেরকে একা একা ফেলে চলে গিয়ে খুব ভুল করেছেন, কারণ, তারা এখন কয়েকদিনের মাঝে না খেয়ে মারা যাবে। একটু স্কুল ভেঙে ফেললে কী হয়–সেটা আবার তৈরি করা যায়, কিন্তু কেউ মরে গেলে তাদেরকে কি আবার বাঁচিয়ে তোলা যায়? যায় না। বন্দুকটা তার ধরা নিষেধ, পুকুরে মাছ ধরতেও যেতে পারবে না। বাসাতে কোনো খেলনা নেই, আলমারিতে যে-বইগুলি আছে তার কোনোটাতে ছবি নেই–সেইসব বই থাকলেই কী আর না থাকলেই কী? এই বাসায় থেকে তাদের কী লাভ? এই মুহূর্তে তাদের আব্বা-আম্মার কাছে চলে যাওয়া উচিত। তাদের যেরকম কপাল, গিয়ে দেখবে আব্বা-আম্মা ঝগড়া করে করে শেষ পর্যন্ত তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তখন তারা কোথায় যাবে? এর থেকে তো মরে যাওয়াই ভালো, তা হলে সে মরে যাচ্ছে না কেন? খোদা কেন শুধুমাত্র কষ্ট দেওয়ার জন্যে তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন? ইত্যাদি ইত্যাদি…

রাজু প্রথম দিকে সাগরের কান্না আর কথাবার্তাকে বেশি গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু শেষের দিকে যখন আব্বা-আম্মার কথা বলতে শুরু করল তখন হঠাৎ করে তার নিজেরও মন-খারাপ হয়ে গেল। তখন সে জীবনেও যেটা করেনি সেটা করে ফেলল, সাগরকে ধরে নরম গলায় বলল, “ধুর বোকা ছেলে! কাঁদিস কেন? কাঁদার কী হয়েছে?”

সাগর সাথে সাথে কান্না থামিয়ে অবাক এবং সন্দেহের চোখে রাজুর দিকে তাকাল, রাজু তার সারাজীবনে কয়বার তার সাথে নরম গলায় কথা বলেছে সেটা আঙুলে গুনে ফেলা যায়। সাগর ভুরু কুঁচকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল রাজু সত্যিই তার সাথে নরম গলায় কথা বলছে নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। যখন দেখল অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই তখন সে আরও জোরে ভেউভেউ কর কাঁদতে শুরু করল।

ঠিক কী কারণ বুঝতে পারল না, কিন্তু সাগরের কান্না দেখে রাজুর নিজের চোখেও হঠাৎ পানি এসে গেল। সাবধানে সে চোখ মুছে সাগরের পিঠে হাত রেখে বলল, “কাদার কী আছে, দুইদিন একা থাকতে হলে থাকব।”

“খাব কী?”

“আমাদের কাছে টাকা আছে না? বাজারে গিয়ে হোটেলে খাব। হোটেলে মানুষ খায় না?”

সাগর একটু অবাক হয়ে রাজু দিকে তাকাল। রাজু গলার জোর দিয়ে বলল, “বাজার থেকে চাল-ডাল কিনে আনব, তারপর নিজেরা রান্না করে খাব। পিকনিকের মতো হবে।”

“রাত্রে?”

“রাত্রে কী?”

“রাত্রে যদি ভয় লাগে?”

“ভয়? রাজু অবাক হবার ভান করে বলল, “কিসের ভয়?”

“ভূতের।”

“ধুর!” রাজু হাত দিয়ে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার ভান করে বলল, “ভূত বলে আবার কিছু আছে নাকি!”

“যদি রাত্রে ডাকাত আসে?”

“ডাকাত?”

“হ্যাঁ।”

“মামার বন্দুক আছে না? বন্দুক মাথার কাছে রেখে ঘুমাব।”

সাগর চিন্তিত মুখে বলল, “কিন্তু মামা যে বন্দুকটা ধরতে না করেছে?”

“আমরা তো আর ব্যবহার করছি না, শুধু মাথার কাছে রাখছি।”

এই প্রথম সাগরের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল। চোখ মুছে বলল, “আমার মাথার কাছে রাখব। ঠিক আছে?”

“ঠিক আছে। রাজু নরম গলায় বলল, “চল, এখন দেখি রান্নাঘরে খাওয়ার কিছু আছে কিনা। যদি থাকে তা হলে আজ রাতে আর বের হব না।”

রান্নাঘরে চাল, ডাল, তেল, মশলা, বাসনকোসন, থালা, চামচ সবকিছু খুঁজে পাওয়া গেল। শুধু তা-ই না, একটা ঝুড়িতে কিছু আলু, কিছু শুকনো ঢ্যাঁড়শ এবং কয়েকটা মাঝারি আকারের ডিমও রয়ে গেছে। একনজর দেখে রাজু হাতে কিল দিয়ে বলল, “চল রান্না করে ফেলি।”

সাগর ভয়ে-ভয়ে বলল, “তুমি রান্না করতে পার?”

“না পারার কী আছে?”

“কী রান্না করবে?”

“খিচুড়ি আর ডিমভাজা।”

সাগর চোখ বড় বড় করে বলল, “তুমি জান খিচুড়ি কেমন করে রান্না করতে হয়?”

“একশো বার জানি। খিচুড়ি রান্না হচ্ছে সবচেয়ে সহজ। চাল ডাল তেল মশলা লবণ সবকিছু মিশিয়ে আগুনে গরম করলে খিচুড়ি হয়ে যায়। যদি ল্যাদলেদে থেকে যায় সেটার নাম হয় নরম খিচুড়ি যদি শুকিয়ে যায় তা হলে বলে ভুনা খিচুড়ি।”

“সত্যি?”

“হ্যাঁ, তুই খালি দ্যাখ।”

রাজু সত্যি সত্যি বাসনকোসন টানাটানি করে রান্না শুরু করে দেয়।

রান্নার এই প্রজেক্টটি পুরোপুরি শেষ হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগে গেল। এই সময়ের বেশির ভাগ অবিশ্যি লেগেছে চুলোর আগুন সামলাতে, বাসনকোসন বের করে সেগুলি ধোয়াধুয়ি করতে আর পেঁয়াজ মরিচ কাটাকাটি করতে। রান্নার পর খেতে সময় লাগল খুব কম। রাজু এবং সাগর দুজনেই খুব অবাক হয়ে গেল যখন তারা আবিষ্কার করল তাদের রান্না হয়েছে চমৎকার, তবে আন্দাজ না থাকায় যে-পরিমাণ খিচুড়ি রান্না হয়েছে সেটা হেসে খেলে প্রায় এ-সপ্তাহ খেলেও শেষ হবে বলে মনে হয় না। খিচুড়িতে আরও একটা ছোট রহস্য রয়ে গেছে, এর উপরের ইঞ্চি দুয়েক ভুনা খিচুড়ির মতো হলেও নিচের প্রায় একফুট ল্যাদলেদে রয়ে গেছে। ডিমভাজার মাঝে অবিশ্যি কোনো খুঁত নেই। চোখ বন্ধ করে পাকা বাবুর্চির কাজ হিসাবে চালিয়ে দেওয়া যায়।

খাওয়ার পর দুজনেরই মন একটু ভালো হয়ে যায়। তখন তারা মামার বাসায় কী কী আছে পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করল। শেলফের উপরে মামার বাইনোকুলারটা পাওয়া গেল। বাইরে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার, আকাশে চাঁদও নেই–তাই সেটা দিয়ে কিছু দেখা গেল না। বইয়ের আলমারিতে অনেক বই, তবে বেশির ভাগই পড়ার অযোগ্য–ছোট ছোট ছাপাতে ইংরেজি লেখা। খোজাখুঁজি করে কিছু বাচ্চাদের বই পাওয়া গেল, তবে বেশ পুরনো। অনেকগুলি গানের ক্যাসেট, তবে বেশির ভাগই খুব ঢিলে ধরনের গান, খুঁজে খুঁজে কয়েকটা তালের ইংরেজি গান বের করে সেটাই লাগিয়ে দিল। ভলিউম বাড়িয়ে দেবার পর ঘরে বেশ উৎসব-উৎসব ভাব এসে পড়ে। মামার বন্দুকটাও পাওয়া গেল, তবে সেটা আলমারির মাঝে তালা মারা, আশেপাশে কোনো ছবিও নেই। যন্ত্রপাতির একটা বড় বাক্সও পাওয়া গেল, তার মাঝে রাজ্যের ক্রু নাট বল্টু আর যন্ত্রপাতি।

রাজু আর সাগর দুটা বই নিয়ে এসে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে। ঘরে ইংরেজি গান হচ্ছে, কিন্তু দুজনেই কান খাড়া করে রেখেছে হঠাৎ করে যদি চান মিয়া এসে হাজির হয়!

বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বই পড়ার একটা ছোট অসুবিধে আছে, সহজেই ঘুম পেয়ে যায়। সাগরের বইটি ছিল একটু নীরস ধরনের, কাজেই প্রথমে সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম জিনিসটা বাড়াবাড়ি সংক্রামক, তাই কিছুক্ষণের মাঝে রাজুর চোখের পাতাও ভারী হলে এল। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, দুজন একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাজু বিচিত্র সব স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নগুলি ঠিক দুঃস্বপ্ন নয়, কিন্তু দুঃস্বপ্নের মতোই। সে দেখল, কারা যেন আম্মা আর আব্বাকে ট্রেনের মাঝে দরজা বন্ধ করে কোথায় জানি নিয়ে যাচ্ছে, রাজু চিৎকার করে ডাকছে, কিন্তু কেউ তার কথা শুনছে না। রাজু চান মিয়াকেও স্বপ্নে দেখল, বসে বসে পরোটা তৈরি করেছে, কিন্তু যতবার পরোটা তৈরি করা হয় ততবার সেগুলি ছোট ছোট জম্ভর মতো ঘরের মাঝে ঘুরে বেড়াতে থাকে। তারপর সে স্বপ্নে দেখল খবিবুর রহমানকে। বিশাল রামদা হাতে নিয়ে সে লাফঝাঁপ দিচ্ছে। তার মুখে বড় দাড়ি, চোখ লাল আর হাতে বিশাল একটা রামদা। তার সাদা পাঞ্জাবিতে রক্তের ছিটা। সে রামদা হাতে নিয়ে লাফাচ্ছে আর ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েদের দেখলেই তার পিছুপিছু ছুটে যাচ্ছে। একসময় খবিবুর রহমান রাজুকে দেখে ফেলল, তখন রামদা হাতে নিয়ে তার দিকে ছুটে এল, কিন্তু তার কাছে না এসে দরজার চৌকাঠে কোপাতে শুরু করল। খটখট শব্দ হচ্ছে আর সে পান-খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসছে–আর ঠিক তখন ঘুম ভেঙে গেল রাজুর। দেখল সত্যিই দরজায় সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, মানুষটা নড়ে উঠল আর খটখট করে শব্দ হল চৌকাঠে। ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল রাজু, মানুষ নয়, দরজায় পর্দা ঝুলছে, বাতাসে নড়ে উঠে দরজা জানালা খটখট করে শব্দ করছে।

রাজু বিছানায় পা তুলে বসে রইল। বুকের ভিতর ধকধক করে শব্দ করছে, কী ভয়টাই-না সে পেয়েছিল! সাগর এখনও ঘুমিয়ে আছে, মুখটা একটু খোলা নিঃশ্বাসের সাথে সাথে ঠোঁট নড়ছে একটু একটু।

রাজু বিছানা থেকে নেমে এল। দরজা-জানালা বন্ধ করে মশারি টানাতে হবে। খুব বেশি মশা নেই, একটা-দুটা পিনপিন শব্দ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে–তারা বাইরে গিয়ে হয়তো খবর দেবে অন্যদের। রাজু জানালার কাছে দাঁড়ায়, বাইরে অন্ধকার, তার মাঝে দমকা বাতাস। গাছের পাতা নড়ছে, ঝিঁঝি পোকা ডাকছে, হঠাৎ কেন জানি মন-খারাপ হয়ে গেল রাজুর।

জানালা বন্ধ করতে গিয়ে হঠাৎ রাজু থমকে দাঁড়াল, দূরে টিলার উপর দাউদাউ আগুন জ্বলছে। কী আশ্চর্য, এই গভীর রাতে নির্জন টিলার উপরে আগুন জ্বলছে কেন! কে জ্বালিয়েছে আগুন? রাজুর হঠাৎ কেমন জানি ভয় লাগতে থাকে।

ভালো করে তাকাল সে, অনেক দূরে ভালো করে দেখা যায় না কিছু, মনে হচ্ছে আগুনের সামনে কিছু একটা নড়ছে–কোনো মানুষ আছে ওখানে! কীরকম মানুষ–এত রাতে টিলার উপরে আগুন জ্বালিয়েছে। মামা যে বলেছিলেন নরবলি দেয় তান্ত্রিক সাধুরা সেরকম কোনো মানুষ নাকি? নরবলি কি দিচ্ছে টিলার উপরে?

রাজু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল, আর ঠিক তখন তার বাইনোকুলারটার কথা মনে পড়ল। সে ছুটে গিয়ে শেলফের ওপর থেকে এনে বাইনোকুলারটা চোখে লাগায়, ফোকাস করতেই হঠাৎ আগুনটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দাউদাউ করে বিশাল একটা আগুন জ্বলছে আর তার সামনে মানুষ নয়, বাচ্চা একটা ছেলে। ঠিক তার বয়সী ছেলেটার মাথায় লাল একটা ফিতা বাঁধা, খালি গা, হাতে ঢোলের মতো কিছু-একটা জিনিস। আগুনটা ঘিরে ঘিরে সে নাচছে, কিছু-একটা বলছে আর হঠাৎ করে কিছু-একটা ছুঁড়ে দিচ্ছে আগুনের দিকে সাথে সাথে দাউদাউ করে আগুনটা বেড়ে যাচ্ছে অনেক গুণ।

মাথা দুলিয়ে শরীর ঝাঁকিয়ে অঙ্গভঙ্গি করে ছেলেটা নেচে যাচ্ছে আর নেচে যাচ্ছে, যেন তার উপর কোনো প্রেতাত্মা এসে ভর করেছে অদৃশ্য জগৎ থেকে। ছেলেটা চিৎকার করছে, কথা বলছে আর আগুনটা বেড়ে যাচ্ছে। মনে হয় কিছুক্ষণেই এই আগুন গ্রাস করে ফেলবে চারদিক।

রাজু হতবাক হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *