৩. অমিতাদির মৃতদেহ ঘিরে

অমিতাদির মৃতদেহ ঘিরে, তার মা ভাই বোনদের কান্নাকাটি শুরু হয়ে গিয়েছিল। থানার অফিসে বসেই, প্রদ্যোতের স্টেটমেন্ট নেওয়া হল। অমিতার মা ভাই বোনদের একটা স্টেটমেন্টও নেওয়া হল। তারপর সকলেই বাড়ি চলে গেল। যাবার আগে, প্রদ্যোৎ শাশুড়ি শালি শালা, সবাইকে তার গাড়িতে যাবার জন্য ডাকল। প্রদ্যোৎকে তখন দেখাচ্ছিল যেন, সমস্ত মুখে একটা ভাবলেশহীন শূন্যতা। তার সঙ্গে একটা অসহায় বিস্ময়ের ছাপ। অনুমান করা যায় ঘটনার চমক তাকে একেবারে বিমূঢ় করে দিয়েছে। অমিতা নেই, এই শূন্যতাবোধের সঙ্গে, ঘটনার অন্ধকারে সে যেন দৃষ্টিপাত করতে চাইছে। কে বা কারা এটা ঘটাতে পারে। এটাই বোধ হয় অসহায় বিস্ময়ের কারণ।

সে যখন সবাইকে তার গাড়িতে যাবার জন্যে ডাকল, তখন অমিতাদির ছোট বোন সুমিতা বলল, সে রিকশায় করে যাবে। সুমিতা অমিতাদির বেশ কয়েক বছরের ছোট, এখনও বিয়ে হয়নি। বি. এ. এবং বি. টি. পাশ করে স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ায়। এম. এ. পরীক্ষা দেবার চেষ্টায় আছে। দেখতে শুনতে, অমিতাদির মতোই। সুমিতার জন্যও শহরের অনেক যুবকের প্রাণে তরঙ্গ লেগে আছে। অনেক ভ্রমরের অনেক গুঞ্জন তাকে ঘিরে।

প্রদ্যোৎ যখন বারে বারে অনুরোধ করল সুমিতাকে তার গাড়িতে যাবার জন্যে, তখন সুমিতা যে হঠাৎ কেবল বিরক্তি দেখাল, তা নয় একটু যেন ফুঁসে উঠেই বলল, বললাম তো, আপনার সঙ্গে গেলে আমার চলবে না, আমার অন্য জায়গায় যেতে হবে।

এ রকম একটা পরিস্থিতিতে, শালী ভগ্নিপতির ব্যবহারটা খুব সঙ্গত মনে হল না। বিশেষ করে, সুমিতার দিক থেকে। সদ্য বিপত্নীক ভগ্নিপতিকে কেউ এরকম মুখ ঝামটা দিয়ে কথা বলে না। এবং পরিবর্তে, কোনও ভগ্নিপতি ব্যাপারটাকে আমল না দিয়ে, প্রদ্যোৎদার মতো এমন শান্তভাবে চলেও যায় না।

সুমিতার সঙ্গে প্রদ্যোৎদার কিছু ছিল টিল নাকি? দিদির মৃত্যুতে, হঠাৎ অনুশোচনায় জামাইবাবুর ওপর বিরাগ দেখা দিয়েছে? কে জানে, কিছুই বলা যায় না। সুমিতা প্রদ্যোতের গাড়িতে গেল না বলেই বোধ হয়, ওর মা বা ভাইয়েরাও গেল না। সকলেই রিকশায় করে চলে গেল।

শ্যামাচরণ তার ঘরে অশোককে ডেকে পাঠাল। সেখানে তখন আর কেউ নেই। অশোক তা জানত। শ্যামাচরণ এখন তাকে খানিকটা নাজেহাল করবে। আসলে, অশোক কতটুকু কী জানে, সেটাই বের করবার চেষ্টা করবে। লোকটা যদি ভালভাবে চেষ্টা করত, তবু একটা কথা ছিল। এমন চেঁচাবে, গালাগাল দেবে যে, কথাই বলা যাবে না।

শ্যামাচরণ প্রথমেই প্রশ্ন করল, সত্যি করে বলো তো, কেন জনসন রোডে গেছলে? তোমার কোনও খবর জানা ছিল?

না।

 তবে গেলে কেন হঠাৎ?

হঠাৎ আবার কোথায়? বললাম তো, ম্যানেজারের কোয়ার্টারে একটা চাকরির ফিকিরে যাচ্ছিলাম।

 লোচ্চা কোথাকার, মিথ্যুক, লায়ার।

শ্যামাচরণ একেবারে ক্ষিপ্ত হয়ে, গর্জন করে উঠল। অশোক একটা সিগারেট ধরাতে গেল। সেটা কেড়ে নিয়ে, পায়ের তলায় ফেলে দিল শ্যামাচরণ। অশোক মনে মনে সঙ্কল্পবদ্ধ, কিছুতেই কাল্লুর নামটা বলবে না। বলল, দামি সিগারেট নষ্ট করে ফেললেন?

আমি তোমাকে সুদ্ধ নষ্ট করব। এখুনি লক আপে পুরে দেব। যে ভাবে তুমি অমিতার ডেডবডি আবিষ্কার করেছ তাতে সমস্ত ব্যাপারটাই সন্দেহজনক। ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি, তোমার ব্যাপারটাও তাই। তাই তুমি গা বাঁচাবার জন্য তাড়াতাড়ি আমাকে ফোন করেছ।

তার মানে, আপনি বলছেন, আমি অমিতাকে খুন করেছি।

এখন পর্যন্ত ঘটনার গতিপ্রকৃতি তাই বলছে। থানা থেকে বেরিয়ে সোজা তুমি জনসন রোডে গেলে, ডেডবডি দেখলে, আমাকে ফোন করলে, এর থেকে কী প্রমাণ হয়?

আপনি যা বলছেন, তা-ই।

তবে?

তবে, তারপরেও এ্যালিবাই আর মোটিভের প্রশ্নটা থাকে। প্রমাণ করা তো বহুত দূরের কথা।

শ্যামাচরণ হাতে ঝটকা দিয়ে বলল, ও সব পরের ব্যাপার, আগে তোমাকে ঝুলিয়ে দিই তো, তারপরে দেখা যাবে।

যা আপনার খুশি। তাতে যদি অমিতাদির খুনিকে ধরতে পারেন বা খুনের একটা কিনারা করতে পারেন, তাই করুন।

শ্যামাচরণ কিছু না বলে হঠাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কয়েক মিনিট বাদে ফিরে এল। একটু শান্ত মনে হল। বসে বলল, দেখো অশোক, আমি জানি, তুমি এমনি এমনি জনসন রোডে যাওনি, একটা কিছু খবর তোমার কাছে নিশ্চয় ছিল। সেটা কি তুমি আমাকে বলবে?

অশোক নির্বিকার মুখে বলল, সত্যি কোনও খবর ছিল না।

 তুমি অবাঙালি এলাকায় গেছলে কেন? জান না, যে কোনও মোমেন্টে তোমার পেট ফাঁসিয়ে দিতে পারত?

দিনের বেলা তো, তা ছাড়া আর্মড গার্ড পাহারা দিচ্ছে, তাই গেছলাম।

শ্যামাচরণ কয়েক মুহূর্ত অশোকের দিকে চেয়ে থেকে বলল, তোমাকে আমি অ্যারেস্ট করতে পারি, কিন্তু করব না। পাশের ঘরে গিয়ে, তোমার স্টেটমেন্ট পড়ে সই করে চলে যাও। শহর ছেড়ে যাবে না। ডাকলেই যেন পাই।

অশোক তৎক্ষণাৎ উঠে পড়ল।

.

অশোক যখন বাড়ি এল, তখন ওদের সেকালের বাড়ির বাইরের দিকের সারি সারি ঘরের একটাতে, তানপুরা সহযোগে প্রবল ধ্রুপদ রেওয়াজ হচ্ছে। আর এক ঘরে, সপ্তমে বৃহস্পতি, চন্দ্রে শুক্র এবং রাহুর দশা ইত্যাদি নিয়ে প্রচণ্ড জ্যোতিষী চলছে। দুই দাদার যা নেশা, তাই চলছে সেখানে।

বাইরের বাড়ির আগেই, প্রকাণ্ড মন্দির। বহুকালের প্রাচীন শিব মন্দির। বাইরের বাড়িতে, কম করে দুখানা বড় বড় ঘর। তারপরে উঠোন পেরিয়ে ভিতর বাড়ি। ভিতর বাড়িতেও উঠোন, চারপাশে ঘর। দোতলা বাড়ি। আশেপাশে আরও অনেক বাড়ি। এবাড়ির আরও তিনটি ছোট ছোট দরজা আছে, অন্যান্য গলি দিয়ে বেরুনো যায়। এমনকী, কোনও কোনও বাড়ির ভিতরেও চলে যাওয়া যায়।

অশোক সোজা দোতলায় উঠে ওর ঘরে চলে গেল। গিয়েই, মান্ধাতা আমলের পুরনো খাটে চিত হয়ে শুয়ে একটা সিগারেট ধরাল। অমিতাদির ব্যাপারটা ও ভাবতে চায়। একলা গভীর মনোযোগের সঙ্গে।

কিন্তু তা সম্ভব হল না। নতুন বউ এসে হাজির হল। নতুন বউ হল, অশোকেরই এক জ্ঞাতি ভাইয়ের স্ত্রী। নাম কাঞ্চন। কেন তাকে নতুন বউ বলা হয়, অশোক ঠিক জানে না। জ্ঞাতি ভাইয়ের নাম জীবন, পাশেই তাদের বাড়ি। জীবন জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ। কথা অস্পষ্ট, হাবা, মুখ দিয়ে লালা গড়ায়। শরীর বাঁকা, চলেও এঁকে বেঁকে।

নতুন বউ ফরসা, পান পাতার মতো মুখ। একটু কটা মুখ। একটু ছোটখাটোর ওপরে, আঁটো শরীরের সুন্দর বাঁধুনি। ডাগর চোখের রং একটু কটা, নাকটা টিকোলো। বয়স পঁচিশ ছাব্বিশের মতো। মাথায় লালপাড় শাড়ির অল্প ঘোমটা থাকলেও, খোঁপাটা যে বেশ বড়, তা বোঝা যায়। চুল আছে বেশ মাথায়। শাড়িটা তেমন পরিষ্কার নয়। গৃহস্থালির কাজ করতে করতেই এসেছে বোঝা যায়। জামাটাও নিতান্ত মোটা কাপড়ের, একটু খাটোও বটে।

এ হেন, কাঞ্চনের সঙ্গে, জীবনের বিবাহের কারণ, জীবনের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি অনেক। যারা মেয়ে দেবে জীবনের অনুপস্থিতিতে তারাই সেই সম্পত্তি পাবে। এ ছাড়া জীবনকে মেয়ে দেবার কোনও কারণ নেই। কাঞ্চনের বাবা মা, কাঞ্চনকেই সেই বলি হিসাবে বেছে নিয়েছে। ওর বাপের বাড়ি চব্বিশ পরগনার রাজপুর গ্রামে।

অশোক বলল, তুমি আবার এখন এলে কেন নতুন বউদি?

 কাঞ্চন ভুরু কুঁচকে এক বার ঠোঁট ফোলাল। তারপর বলল, আমার ইচ্ছে।

তোমার শাশুড়ি এবার সত্যি একদিন নোড়া দিয়ে তোমাকে থেঁতো করবে।

করুক। সকাল থেকে কোথায় গেছলে?

 আড্ডা দিতে।

এবার তাই আমিও আড্ডা দিতে এলাম।

মেয়েদের সঙ্গে তুমি আড্ডা দিতে পার না কেন বলো তো?

 মেয়েরা আবার মেয়েদের সঙ্গে আড্ডা দেবে কী? মেয়েরা আড্ডা দেবে ছেলেদের সঙ্গে তবে তো মজা।

বলে মেঝেতে বসে পড়ল। ভঙ্গিতে ক্লান্তি। অশোক আবার জিজ্ঞেস করল, জীবনদাকে খুন করবার কোনও রাস্তা পেলে?

কাঞ্চন দেওয়ালে হেলান দিয়ে, ঠোঁট উলটে বলল, নাঃ।

এই সাত বছর বিয়ে হয়েছে, সাত বছরে কিছুই করতে পারলে না! তবে আর সম্পত্তি আর স্বাধীন জীবন ভোগ করবে কেমন করে?

তুমি তো ওসব ফন্দি ফিকির অনেক জান, তুমিই বলে দাও, কেমন করে মারব?

 তোমার বাবা মা বলে দেয় না কেন?

দেবে, তবে আমার স্বামীকে খুন করবার জন্য নয়, আমার আত্মহত্যার পথটা বলে দেবে শিগগির।

দুজনেই দুজনের চোখের দিকে তাকাল। কাঞ্চনের চোখ দুটো কেমন ছলছল করে উঠল। সে মুখ নামিয়ে নিল।

অশোকও মুখটা ফিরিয়ে নিল। ওর মুখেও ব্যথার ছাপ ফোটে। তারপরে হঠাৎ বলল, সত্যি, মানুষের জীবনটা খুব অদ্ভুত। এক এক সময় কী মনে হয় জানো নতুন বউদি। লোকে বাস্তব বাস্তব বলে, বাস্তবতাই সবথেকে এক রকমের অস্বাভাবিক অবাস্তব, অ্যানন্যাচারেল, অলৌকিক।

কাঞ্চন চকিতে মুখটা ফিরিয়ে, আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিল। বলল, তোমার ও সব বক্তিমে রাখো। সকাল থেকে দু-দুবার ঘুরে গেলাম, একবারও তোমার দেখা পেলাম না।

অশোক বলল, কেন কোথায় গেছলাম, পরে বলছি। কিন্তু সত্যি ভেবে দেখো তো, জীবনদার সঙ্গে তোমার বিয়ে, এটা একটা বাস্তব ব্যাপার তো?

কিন্তু আমি কত টাকার মালিক, সেটাও একটা বাস্তব।

দুজনেই হাসতে যায়। কিন্তু দুজনেই আবার গম্ভীর হয়ে চুপ করে থাকে। কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনও কথা বলতে পারে না।

একটু পরে কাঞ্চন বলল, সকালে কিছু খেয়েছিলে?

খেয়েছি।

মিথ্যে কথা। আমি তোমাদের ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করেছি। সে বলল, তুমি সকালবেলাই না খেয়ে বেরিয়ে গেছ।

অশোক কোনও জবাব দিল না। কাঞ্চন আবার বলল, রোজ রোজ পাশের বাড়ির বউ এসে তোমার খোঁজ নেবে খেয়েছ কি না খেয়েছ, না? শরীরটা কি আমার?

না, আমার। অপরের বলেই তো এত খোঁজ। নিজের দিকে কখনও তাকিয়ে দেখেছ।

দেখেছি।

দুজনের চোখাচোখি হতে, আবার খানিকক্ষণ চুপচাপ। দুজনেই, দুজনের প্রতি তাকালে চোখের তারায় কেমন একটা নিবিড়তা এসে যায়। দুজনেরই যেন কথা হারিয়ে যায়। আবার একটু পরেই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

অশোক বলল, সত্যি ভেবে পাইনা, মানুষের এই আশ্চর্য বাস্তব ইতরতা আর লোভ কতদূরে যেতে পারে। জীবনদার সঙ্গে তোমার বিয়ে হয়। অমিতাদির মতো মেয়েকে, খুন হয়ে নর্দমায় পড়ে থাকতে হয়…।

কী কী বললে?

 কাঞ্চন চমকে সোজা হয়ে বসল। অশোক সমস্ত ঘটনা কাঞ্চনকে বলল। জিজ্ঞেস করল, তোমার কী মনে হয় নতুন বউদি?

কাঞ্চন ভুরু কুঁচকে একটু চুপ করে থেকে বলল, বুঝতে পারছি না। তবে বাপু, এটা গুণ্ডাদের ব্যাপার নয়।

কেন?

অমিতা কখনও তাদের হাতে পড়বে না। ওদিকে সে যাবেই না। এ নিশ্চয় কেউ মেরে ওখানে ফেলে এসেছে।

চিন্তাটা অশোকের সঙ্গে মিলছে। জিজ্ঞেস করল, তোমাদের মেয়েদের গেজেটে নতুন কোনও সংবাদ আছে?

একটা খবর আছে। প্রবীরের সঙ্গে নাকি অমিতা ইদানীং একটু বাড়াবাড়ি করছিল।

প্রবীর মানে, প্রবীর গাঙ্গুলী?

হ্যাঁ। ছেলেবেলায় নাকি প্রবীরের সঙ্গে অমিতার ভাবসাব ছিল, যেজন্য প্রবীর বিয়ে করেনি।

শুনেছি। প্র শব্দের ওপর অমিতাদির একটু বিশেষ আকর্ষণ ছিল দেখছি। প্রবীর, প্রদ্যোৎ! কিন্তু কী রকম বাড়াবাড়ি?

এই এক সঙ্গে বেড়ানো, প্রবীরদের বাড়ি অমিতার নিয়মিত যাতায়াত, এইসব।

প্রদ্যোৎদার রিঅ্যাকশন কী তাতে?

সে তো শুনছি, সুধাকে নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।

সুধা আবার কে?

কে আবার, সুধা হালদার, কলকাতার সেই ঢলানি মেয়েটি, গার্লস ইস্কুলের টিচার। ওসব মেয়ে, ফিলমে না গিয়ে কেন যে ইস্কুল টিচার হয়েছে, কে জানে।

এটা তো জানা ছিল না। সুধা হালদারের সঙ্গে প্রদ্যোৎদার হবনবস আছে নাকি?

 আবার নাকি? তুমি তা হলে কী জান। সুধার সঙ্গে প্রদ্যোৎ ডাক্তারের রীতিমতো চলছে। এমন খবর শুনেছি, সুধার সঙ্গে প্রদ্যোৎ ঘরে বসে গল্প করছে, অমিতা তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে, প্রবীরদের বাড়িতে চলে গেছে। তারপরে সুধা নিজের হাতে প্রদ্যোৎকে খাইয়ে, নিজের বাসায় ফিরে গেছে।

অশোক চুপ করে রইল। তার প্রথমেই মনে হল, অমিতাদি, ছোট বোন সুমিতা, সুধা হালদার, সব একই ইস্কুলের টিচার। থানায় সুমিতার ব্যবহারটা স্বাভাবিক লাগেনি। এ সবের মধ্যে কি, অমিতা হত্যার কোনও রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে?

কী করে তা সম্ভব। তা হলে ধর্ষণের ব্যাপারটা আসে না। ধর্ষণ কি নিশ্চিতই ঘটেছে? নাকি, জামা কাপড় ছিঁড়ে, আঘাত করে, চোখে ধুলো দেবার চেষ্টা হয়েছে? এ বিষয়ে, ডাক্তারের রিপোর্টই আসল কথা বলতে পারে। কোনও পুরুষ সংসর্গ ঘটেছে কি না, বাইরের থেকে দেখে, কিছুই বলা যায় না।

কাঞ্চন অমিতার এরকম মৃত্যুসংবাদে রীতিমতো অবাক আর বিষণ্ণ হয়ে উঠল। অশোক জিজ্ঞেস করল, তোমার কী মনে হয় নতুন বউদি, কে মারতে পারে অমিতাদিকে? প্রদ্যোৎদা?

কাঞ্চন একটু চুপ করে থেকে বলল, বুঝতে পারছি না। মারবে কেন, দুজনেরই তো সমানে চলছিল শুনেছি।

প্রবীরের সঙ্গে অমিতাদির ঠিক ব্যাপারটা কী? প্রেম?

নাও হতে পারে। প্রদ্যোতের ঈর্ষা বাড়ানোর জন্যে অমিতা প্রবীরের সঙ্গে ইচ্ছে করে, দেখিয়ে দেখিয়ে মিশতে পারে।

তাতে প্রবীরের ঈর্ষা বাড়তে পারে। পুরুষ হিসেবে নিজের প্রাপ্য পাবে না, অথচ তাকে সামনে রেখে, একটি মেয়ে, তার দাম্পত্য জীবনের মোড় ফেরাবে, এটা কেউ সহ্য করতে পারে না। প্রবীর খেপে যেতে পারে?

তাও পারে নিশ্চয়।

সুধা হালদারের জন্য, অমিতাদিকে প্রদ্যোৎদা খুন করতে পারে কি?

এতটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না।

আমারও তাই ধারণা।

এমন সময়ে নীচের থেকে ঠাকুর চেঁচিয়ে বলল, অশোকবাবু, তোমার টেলিফোন।

বসো নতুন বউদি, আসছি।

 বলে সে নীচে যাবার উদ্যোগ করতেই, কাঞ্চন বলে উঠল, তোমার এমন বাজে ব্যাপারে আমি নেই। আমার অনেক কাজ আছে, চললাম।

সত্যি সত্যি অশোকের সঙ্গে সে নীচে চলে এল। নীচের একটা ঘরে টেলিফোন রয়েছে। অশোক বলল, বউদি, আবার এসো।

না আসব না।

দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকাল। প্রায় একটি বালিকার মতোই, অশোককে জিভ ভেংচে দিয়ে কাঞ্চন চলে গেল। অশোক ঘরে ঢুকে টেলিফোন ধরল, অশোক বলছি।

আমি থানার ও. সি।

ও, শ্যামাচরণবাবু?

 তোমার সংবাদদাতাকে আমি ধরেছি। কাল্লু এখন থানার লক আপ-এ আছে। আরও তিনটি গুণ্ডাকে ধরেছি। এরাই যে অমিতাকে মেরেছে, এবং কোনও জায়গা থেকে তুলে নিয়ে গেছে, সেই স্বীকারোক্তি আদায় করতে আমার বেশি সময় লাগবে না। এদের সবাইকে আমি ফাঁসিতে লটকে ছাড়ব।

তাই নাকি?

 হ্যাঁ। তোমাকে জানানোর উদ্দেশ্য, তোমার খবরের সূত্রটা আমি পেয়েছি।

তা হলে আমার ওপর থেকে আপনার সন্দেহ দূর হয়েছে?

এখনও নয়। তোমার সঙ্গে এদের যোগাযোগ কতখানি আছে, সেটা আমাকে দেখতে হবে।

সত্যি, আপনার মতো বুদ্ধি আমার নেই। যাই হোক ডাক্তারের রিপোর্টটা

শ্যামাচরণ লাইন ছেড়ে দিল। অশোক নিজের মনে বলল, একদম বুন্ধু।

.

সন্ধ্যার সময়, বাইরের বাড়ির রকে অশোক বন্ধুদের সঙ্গে বসে ছিল। অধিকাংশ বেকার যুবক। রকবাজই বলা যায়। নানান কথার মধ্যে, অশোক প্রবীরের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিল। তাতে একটা ঘটনা ও জানতে পারল, প্রবীর নাকি প্রদ্যোৎ অমিতা, দুজনের ওপরেই সমান বিরক্ত। দুজনকেই ঘৃণা করে। এমনকী, অমিতার সম্পর্কে নাকি সম্প্রতি এ কথাও বলেছে, ওরকম একটা বাজে জঘন্য মেয়ের পাল্লায় যে পড়িনি, ভালই হয়েছে।

এ কথা সে বলেছে তার বিশেষ এক পরিচিত পরিবারের মেয়েকে। যে মেয়ে আবার অশোকেরই রকের বন্ধুর বোন। তাদেরই পরিবারে এ কথা শোনা গিয়েছে। এবং অশোকের এই বন্ধুর বোনের সঙ্গে ইদানীং প্রবীরের একটা বোঝাপড়ার ভাব এসেছে। বিয়ে হবারও সম্ভাবনা আছে।

বন্ধুর মুখে এ কথা শুনে, অশোক উড়িয়ে দিতে পারল না কথাটা। কিন্তু তা হলে, অমিতাদির সঙ্গে, প্রবীরের বাড়াবাড়ি চলছে, এ খবরটার মধ্যে কিছু গোলমাল আছে। প্রবীর বরং অমিতাকে ঘৃণাই করে এখন। অথচ, তাদের মেশামিশিও চলছে, এটা সবাই দেখেছে। ব্যাপারটা আরও বেশি রহস্যাবৃত হয়ে উঠল যেন।

কোনটা সত্যি! প্রবীরের সঙ্গে অমিতার প্রেম! বন্ধুর বোনের কাছে গিয়ে, অমিতার নামে মিছিমিছি বলেছে? নতুন প্রেমিকাকে হাতে রাখার জন্য? নাকি, অমিতা এলে, না মিশেও পারছে না, আবার মনে মনে সত্যি ঘৃণাও করে!

বন্ধুদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে, তখন ঠাকুর এসে জানাল, নতুন বউদি ভিতরে ডাকছে। অশোক একটু পরে, বাড়িতে ঢুকে, দোতলায় গিয়েই বলল, পরের বউ হয়ে, লোকের মধ্যে ডাকাডাকি করো কেন! তোমার কি লোকলজ্জা নেই!

তা থাকলে তো, কবেই গলায় দড়ি দিতাম।

কী বলবে বলো।

কিছু না।

বলেই কাঞ্চন দরজার দিকে পা বাড়াল। অশোক তার হাতটা ধরে ফেলল। বলল, শোনো শোনো।

কাঞ্চন হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে বলল, না, ছেড়ে দাও। ভারী তোমার দেমাক, তোমার কাছে আসি বলে। আর আসব না।

তা হলে আমি যাব।

ঢঙ! কেন পাড়ায় আর ছেলে নেই তুমি ছাড়া? এবার থেকে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেব।

অশোক কপট কঠিন মুখে চিবিয়ে বলল, তাদের প্রত্যেককে খতম করে দেব।

 ইস! কেন খতম করবে?

কেন নতুন বউদি তাদের কাছে যাবে।

 আমার ইচ্ছে।

তবে আমারও ইচ্ছে, তাদের খতম করব। নতুন বউদি শুধু আমার, আমার বন্ধু।

 ইস!

বলে দুজনেই দুজনের দিকে তাকাল। অশোকের চোখের দিকে তাকিয়ে, সহসা লজ্জায় লাল হয়ে উঠল কাঞ্চন। সে চোখ ফেরাল। অশোক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এসো।

বলে, হাতটা ছেড়ে দিল।

কাঞ্চন সহজ হয়ে এল আবার। খাটের কাছে সরে গিয়ে বলল, একটা সংবাদ তোমার কাজে লাগবে কি না জানি না, তবে তোমার শোনা দরকার।

কী?

প্রদ্যোৎ ডাক্তারের বাড়ির ঝি বৃন্দা হঠাৎ আজ দুপুরে দেশে চলে গেছে।

অশোক তীক্ষ্ণ অনুসন্ধিৎসু চোখে কাঞ্চনের দিকে তাকাল। কাঞ্চন বলল, তোমার একটু অস্বাভাবিক লাগছে না? হঠাৎ আজ দুপুরেই সে ছুটি নিয়ে দেশে চলে গেল কেন?

কে বললে তোমাকে?

বৃন্দার মা।

তার দেখা পেলে কোথায়?

আমাদের পাড়াতেই। সে প্রদ্যোৎ ডাক্তারের বাড়ি কাজ করতে যাচ্ছিল। তার কাছেই শুনলাম, মেয়ে দেশে গেছে, তার বদলিতে সে কাজ করতে যাচ্ছে।

হয়তো আগেই ছুটি চেয়েছিল।

তাও হতে পারে। তবু এ সময়ে ছুটি নেওয়াটা ঠিক হয়নি।

অশোক কাঞ্চনের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু ভাবল। ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার মতো নয়। গতকাল বৃন্দা ছিল। আজ দেশে চলে গেছে। কিন্তু পুলিশের কাছে স্টেটমেন্ট সে দিয়েছে। তার যা বলার ছিল, বলেছে। সে বলেছে, বিকেল পাঁচটা নাগাদ বউদি, অর্থাৎ অমিতা সেজেগুজে বেরিয়েছিল। ডাক্তার তখন বাড়িতে ছিল না। বৃন্দা নিশ্চয় পালায়নি, কোনও কাজেই হয়তো দেশে গিয়েছে।

অশোক জিজ্ঞেস করল, কবে ফিরবে, কিছু শুনলে?

না, তা শুনি নি।

তোমার এ বিষয়ে কী মনে হয়?

বুঝতে পারছি না। বৃন্দার মায়ের ভাবটা যেন কেমন। মুখ খোলবার ইচ্ছে নেই যেন।

ওদের বাড়ি কোথায়, কিছু জান?

শুনলাম, বেড়াচাঁপায়।

তারপরে কাঞ্চন বলল, তবে কাল বিকেলে প্রদ্যোৎ ডাক্তারের বাড়িতে যে সুধা হালদার ছিল, সেটা খবর পেয়েছি।

তাই নাকি? কিন্তু প্রদ্যোৎদা তো ছিল না।

সে বিষয়ে সঠিক কিছু খবর পাইনি।

তা হলে সুধা কার কাছে আসবে? নিশ্চয়ই অমিতাদির কাছে নয়

অমিতা তো বেরিয়েই গিয়েছিল শোনা যাচ্ছে।?

কী শুনেছ তুমি সুধার সম্পর্কে?

আমি শুনেছি, সুধা বিকেলে একবার প্রদ্যোৎদের বাড়ি গিয়েছিল, আবার খানিকক্ষণ পরে তাকে চলে যেতেও দেখা গেছে।

কিন্তু এতে করে কিছুই প্রমাণ হয় না। হয়তো সুধা গিয়ে দেখেছে প্রদ্যোৎ নেই, তাই আবার ফিরে গিয়েছিল। হয়তো প্রদ্যোৎদাকে জানিয়েছিল অমিতা বিকেলে বেরোবে, সুধা যেন আসে। কিন্তু কোনও কারণে, প্রদ্যোৎ ফিরতে দেরি করেছিল, তাই সুধা অভিমান করে চলে গিয়েছিল। সবটাই আন্দাজ। তবে, বৃন্দা হঠাৎ দেশে চলে গেল কেন? বিশেষ এরকম একটা মুহূর্তে? পুলিশের কাছে, প্রথম স্টেটমেন্ট সে দিয়েছে। আরও তো দরকার হতে পারে। তার কি এ সময়ে শহর ছেড়ে যাওয়া ঠিক হয়েছে? থানার অনুমতি নিয়েছে কি? যদি কোনও জরুরি কারণে গিয়ে থাকে, তা হলে তার অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। প্রদ্যোৎদাই তো সে কথা তাকে বলে দেবে।

কাঞ্চন বলল, এবার আমি চলি।

 একটু বসো না।

না সময় নেই। স্বামীকে খাওয়াতে হবে।

কী খাওয়াবে, বিষ নাকি?

 খাওয়াতে পারছি কোথায়। সে জ্বালাতেই তো মরছি। তাই ভাবছি নিজেই খাব।

তখন আমাকেও একটু দিয়ো।

বালাই ষাট, তুমি কোন দুঃখে আমার সঙ্গে বিষ খেয়ে মরবে।

 বড় সাধ হয়।

সেটা অন্যের সঙ্গেই সেখো।

বলে ঘাড়ে একটা ঝটকা দিয়ে, চোখ ঘুরিয়ে, হাত তুলে মার দেখিয়ে চলে গেল। অশোক খাটের ওপর উঠে শুয়ে পড়ল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ আবার উঠে, নীচে নেমে থানায় শ্যামাচরণকে ফোন করল।

অশোক গলার স্বরটা একটু মোটা করে জিজ্ঞেস করল, ও. সি. আছেন?

বলছি।

আমি অশোক।

কী চাই?

আচ্ছা, প্রদ্যোৎদার ঝি বৃন্দা হঠাৎ আজ দুপুরে দেশে গেছে, আপনি জানেন?

না জানবার কী আছে। সে এখান থেকে পারমিশন নিয়েই গেছে।

তাই নাকি?

শ্যামাচরণ বিদ্রূপ করে বলল, চৌদ্দপুরুষের জমানো টাকায় খাচ্ছ আর রকবাজি করছ, তাই করো না কেন। আবার এসব ব্যাপারে কেন। বরং নিজের চামড়া বাঁচাবার চেষ্টা করো।

বলেই লাইন ছেড়ে দিল।

পরদিন ভোরবেলা অশোককে দেখা গেল বৃন্দার মায়ের বাড়িতে। ওদের পাড়ার কাছেই, বোষ্টমতলার বস্তিতে থাকে। অশোক রীতিমতো একটা ঝুঁকি নিয়ে, সোজা বলল, এটা কী করলে বৃন্দার মা। মেয়েকে কোথায় সব সত্যি কথা বলতে বলবে তা নয়, ভয়ে তাকে দেশে পাঠিয়ে দিলে?

বৃন্দার মা তার মুখের ভয়ের অভিব্যক্তি চাপতে পারল না, তবু স্বাভাবিকভাবে বলার চেষ্টা করল, কীসের সত্যি কথা বাবা!

অশোক বলল, পরশু বিকালের সব সত্যি কথা।

বৃন্দার মা নিজেকে আরও স্বাভাবিক করে বলল, পরশু বিকেলে কী হয়েছে ঠাকুর?

অশোক তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল, পরশু বিকেলে ডাক্তার বাড়িতে কী হয়েছিল?

সে সব তো আমি জানি না বাবা।

তোমার মেয়ের উচিত হয়নি এটা। পুলিশ তো সন্দেহ করছে, সে অনেক কিছু জানে। যাই হোক, সে হঠাৎ দেশে গেল কেন?

এমনি একটু কাজকর্ম ছিল। ডাক্তারবাবু ছুটি দিলেন, তাই গেল।

 বেড়াচাঁপায়?

হ্যাঁ।

অশোক আর একটা মিথ্যা কথা বলল, কোন পাড়ায় যেন? কৈবর্তপাড়া, না?

 তা কেন বাবু। আমাদের বাড়ি গয়লাপাড়ায়।

 দেখ আবার পুলিশ কী বলে।

বলে, আর না দাঁড়িয়ে অশোক চলে এল। রাস্তা চলতে চলতেই, বৃন্দা থেকে ওর চিন্তা চলে গেল অন্য দিকে। মনে হল, একবার প্রবীর আর অমিতাদির বাপের বাড়ি যাওয়া দরকার। প্রদ্যোৎদার সঙ্গে সুমিতার ব্যবহারটা মনের মধ্যে খচ খচ করছে। কিন্তু প্রবীরের কাছেই আগে যাওয়া দরকার। সে কলকাতায় চাকরি করতে যায়। এখন গেলে বাড়ি পাওয়া যাবে। তা ছাড়া, সুমিতা এখন ইস্কুলে গিয়েছে। ওদের বাড়ি গিয়ে, ওর সঙ্গে কথা বলাটা বেশি জরুরি।

অশোক আগে এল প্রবীরের বাড়ি। ও প্রবীরকে প্রবীরদা বলে ডাকে। তবু ওর মনে একটা দ্বিধা আছে, প্রবীর ওকে কী ভাবে নেবে। হয়তো, অপমান করে, গালাগালি দিয়ে, তাড়িয়ে দিতেও পারে। অবিশ্যি, প্রবীরের প্রতিক্রিয়া সবই নির্ভর করবে, অমিতা হত্যার ঘটনায়, তার ভূমিকার ওপর। যদি কোনও ভূমিকা থেকে থাকে।

অশোক প্রবীরদা বলে ডেকে, বাড়ির ভিতরে ঢুকল। খোলা উঠোন, ইংরেজি এল অক্ষরের মতো দোতলা বাড়ি। প্রবীর নীচেই একটি ঘরে ছিল। দাড়ি কামাবার জন্য, সাবান লেপা মুখ নিয়ে বেরিয়ে এল। প্রবীরের বোন ওপরের বারান্দা থেকে একবার উঁকি দিয়ে দেখল। প্রবীর জিজ্ঞাসা করল, কী ব্যাপার অশোক, সকালে কী মনে করে?

অশোক একটু সংকুচিত হেসে বলল, আপনার কাছে এসেছিলাম একটু–মানে বিপদে পড়েই, বলতে পারেন। কিন্তু আপনার তো আবার অফিস যাওয়া আছে এখন।

প্ৰবীর বলল, তা আছে, তবু তুমি এসো, শুনি, কী বিপদে পড়েছ। তাও আবার বিপদে পড়ে আমার কাছে এসেছ, আমি তো ব্যাপারটা কিছু বুঝতেই পারছি না। এসো, ঘরে এসো।

অশোক প্রবীরের ঘরে ঢুকল। প্রবীর আয়নার সামনে সেফটি রেজর নিয়ে দাঁড়াল, এবং আয়নার বুকে অশোকের প্রতিবিম্বকে বলল, বসো চেয়ারে, বলো কী বিপদ হয়েছে তোমার।

অশোক চেয়ারে বসে বলল, বিপদ মানে, আমাদের থানার ও. সি. শ্যামাচরণবাবুর ধারণা, অমিতাদির মার্ডারের ব্যাপারে নাকি আমার হাত আছে।

প্রবীর অবাক মুখে, ভুরু কুঁচকে অশোকের দিকে ফিরে বলল, তোমার হাত আছে? কেন, ও. সি. এরকম ভাবল কেন?

অশোক বলল, কারণ জনসন রোডের নর্দমায় অমিতাদির ডেডবডিটা আমিই প্রথম দেখতে পাই, পেয়ে থানায় ও. সি.-কে টেলিফোন করি। তাতেই ভদ্রলোকের ধারণা হয়েছে, আমি যখন সকলের আগে ডেডবডি দেখেছি, তা হলে মার্ডারের পেছনে আমার কোনওরকম হাত আছে।

প্ৰবীর বলল, তুমি তো বোকা। ডেডবডি দেখে, ও. সি.-কে টেলিফোন করতে গেলে কেন? চেপে গেলেই পারতে!

সেই তো আমার ভুল হয়ে গেছে প্রবীরদা।

তা এখন আমি কী করতে পারি বলো তো?

আপনি করতে পারেন মানে– বলতে বলতে অশোক এক মুহূর্ত থামল। প্রবীর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। অশোক আবার বলল, এখন অমিতাদির মার্ডারের ব্যাপারটা আমি নিজেই খুঁজে বের করতে চাই। এ বিষয়ে আপনার একটু সাহায্য

অশোকের কথা শেষ হবার আগেই, প্রবীর আয়নার দিকে ফিরে, গালে রেজর চালাতে চালাতে বলল, আমি কী সাহায্য করতে পারি? কিছুই না। আমি কিছুই জানি না।

অশোক বলল, না না, মার্ডারের ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন, তা বলছি না। আমি খালি আপনার মতামতটা জানতে এসেছি, ব্যাপারটা কী হতে পারে।

প্রবীর নির্বিকার ভাবে বলল, তা আমি কী করে বলব, কী হতে পারে। অমিতা মার্ডার হয়েছে, এটাই কেবল শুনেছি।

কে মার্ডার করতে পারে বলে আপনার মনে হয়, মানে আপনি কি কারোকে সন্দেহ করেন?

 কেন করতে যাব? যে খুশি অমিতাকে মার্ডার করতে পারে, তাতে আমার সন্দেহ করার কী আছে?

অশোক একটু সংকোচের ভঙ্গিতে বলল, না, মানে অমিতাদির সঙ্গে তো আপনার একটু ঘনিষ্ঠতা ছিল, তা-ই।

ঘনিষ্ঠতা বলতে তুমি কী বোঝাতে চাও?

প্রবীরের স্বর রীতিমতো শক্ত ও সন্দিগ্ধ। অশোক তাড়াতাড়ি বলল, না না প্রবীরদা, আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি, অমিতাদিকেও করতাম, আপনি আমার কথা অন্যভাবে নেবেন না। আমি শুনেছিলাম কিনা, অমিতাদি প্রায়ই আপনার কাছে আসতেন, হয়তো অমিতাদি তাঁর মনের কথা আপনাকে কিছু বলতেন।

প্রবীর বাধা দিয়ে বলে উঠল, ভুল শুনেছ। প্রায়ই ও আমার কাছে আসত না। মাঝে মধ্যে আসত, মনের কথা কিছু বলত না। বলতে চাইলেও আমার শোনবার মন ছিল না। আমি অমিতার আসাটাও পছন্দ করতাম না।

অশোক যেন খুবই অবাক হয়েছে, এমনি ভাবে বলল, ওহ্, তাই নাকি?

প্রবীর বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলল, হ্যাঁ, তা-ই। আসলে অমিতা আমার জীবনে শনি ছাড়া আর কিছু ছিল না। আমার সঙ্গে ও প্রথম থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, পরেও করে যাচ্ছিল, এর বেশি আমার আর কিছু বলবার নেই।

অশোক উঠে দাঁড়াল, বলল, তা হলে তো আপনার আপদ ঘুচেছে।

 প্রবীর ঝটিতি ঘুরে দাঁড়িয়ে, ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, তার মানে?

অশোক যথেষ্ট সম্ভ্রমের সুরে, অথচ ঠোঁটে একটু হাসি ফুটিয়ে, নরম গলায় বলল, মানে, যে আপনার জীবনে শনি ছিল, সে যদি পৃথিবী থেকে সরে যায়, তা হলে আপদ ঘুচে যায় না? আমি হলে তো তাই মনে করতাম।

প্রবীরের তীক্ষ্ণ সন্দিগ্ধ দৃষ্টি, অশোকের চোখের দিকে। বলল, তুমি কী মনে করো না করো, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু তুমি যে ভাবে আপদ ঘোচবার কথাটা বললে, তার ভঙ্গিটা আমার মোটেই ভাল লাগল না। তুমি হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে কেন?

অশোক খানিকটা নিস্পৃহ গলায় বলল, আপনি যখন কিছু জানেন না, তখন আর বসে থেকে কী করব। অমিতাদির বোন সুমিতার কাছে শুনলাম, অমিতাদির ইদানীংকার মনের ভাব আপনার কাছে হয়তো কিছু জানতে পারব, সেজন্যই এসেছিলাম। শ্যামাচরণ দারোগা আমাকে না জ্বালালে, আমি এ সব নিয়ে কিছুই ভাবতাম না।

অশোক অনায়াসে, নির্বিকার সরল মুখে মিথ্যা কথাগুলো বলে গেল। কিন্তু ও প্রবীরের মনে নতুন কৌতূহল আর জিজ্ঞাসার সৃষ্টি করল। বলল, অমিতার বোন সুমিতা তোমাকে এ কথা বলেছে?

অশোক বলল, হ্যাঁ। তা না হলে আমি আপনার কাছে আসব কেন বলুন? আমি কি কিছু জানতাম, অমিতাদি আপনার কাছে আসতেন, আপনাদের যোগাযোগ ছিল?

প্রবীর যেন কথঞ্চিৎ শান্ত হল, এবং আবার গালে সেফটি রেজর টানতে টানতে বলল, বসো। কিন্তু তোমার আপদ ঘোচার কথাটা আমার কানে মোটেই ভাল ঠেকেনি। তবে হ্যাঁ, একদিক থেকে বলতে পারো, অমিতার মার্ডার আমার মনে কোনও দাগ কাটেনি।

অথচ–কথাটা বলবার আগে, অশোক এমন একটা সংকোচের ভাব করল, প্রবীরকেই বলতে হল, কী বলতে চাও, বলো।

অশোক বলল, অথচ এক সময়ে আমরা জানতাম, অমিতাদির সঙ্গে আপনার বিয়ে হবে।

প্রবীর গালে আবার সাবানের ব্রাশ ঘষতে ঘষতে বলল, কিন্তু হয়নি, দেখেছ। এক সময়ে আমিও বিশ্বাস করতাম, অমিতাকে আমি বিয়ে করব। অমিতাও তা-ই বোধ হয় ভাবত, অন্তত আমাকে তাই বলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ে করল প্রদ্যোৎ ডাক্তারকে। আমাকে হয়তো অমিতার এক সময়ে ভাল লেগেছিল, কিন্তু প্রদ্যোৎ আমার থেকে বড়লোক, এ শহরে তার পসার খুব জমজমাট, এ বয়সেই সে বাড়ি গাড়ি করেছে। আমার মতো আপার ডিভিশনের কেরানিকে ও বিয়ে করবে কেন?

অশোক যেন খুবই আশ্চর্য হয়েছে, এমনি ভাবে উচ্চারণ করল, আশ্চর্য।

প্রবীর একটু ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল, আশ্চর্য অনেক কিছুই। অমিতা কী রকম মেয়ে ছিল জান? একদিকে সে আমার সঙ্গে যেমন অনায়াসেই মিথ্যাচার করেছে, কেন না, আমার সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কে স্থির থেকেও, না জানিয়ে হঠাৎ একদিন প্রদ্যোৎকে বিয়ে করে বসল, তেমনি ওর পসেসিভনেস। যে কোনও পুরুষকে ও নিজের হাতে রাখতে চায়। বিশেষ করে যাকে ওর মনে ধরত।

অশোক জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু উনি আপনার কাছে আসতেন কেন?

 কেন আবার, টু মেন্টেন এ শো।

মেন্টেন এ শো? অশোক অবাক স্বরে বলল, তার মানে কী? কী শো বজায় রাখতে চাইতেন?

প্রবীর ব্রাশ আর রেজর জলের পাত্রে ডুবিয়ে দিয়ে বলল, কী আবার? অ্যাজ ইফ, ওর সঙ্গে আমার পুরনো সম্পর্ক এখনও আছে, এটাই বোঝাবার জন্য?

অশোক বলল, তাতে অমিতাদির লাভ? তা ছাড়া, প্রদ্যোৎদা-ই বা কী ভাবতেন?

প্রবীরের মুখ কঠিন দেখাল, তার নাকের পাশে গভীর ভাবে কুঞ্চিত হয়ে উঠল। বলল, প্রদ্যোৎ কী ভাবত না ভাবত আমি জানি না। কিন্তু অমিতা যে ডেলিবারেটলি আমার এখানে যাওয়া আসা করত, তা আমি জানি। ও বিশেষ একজনকে দেখতে চাইত, আমার সঙ্গে ওর সম্পর্ক এখনও আছে। আর সেটা ও বেশ ভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিল, আর একজনের কাছে আমি অবিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছিলাম।

কার কাছে, সে নামটা জিজ্ঞেস করতে, অশোকের সংকোচ হল। তবে অনুমান করে নেওয়া যায়, প্রবীরের নতুন কোনও প্রেমিকা হয়েছে, যাকে অমিতা দেখাতে চাইত, বিয়ে হলেও, প্রবীরের সঙ্গে ওর আগের মতোই প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সেই প্রেমিকাও নিশ্চয় অমিতার সঙ্গে, প্রবীরের আগের প্রেমটা জানে।

প্রবীর আবার বলল, এমন কী, অমিতাকে আমি মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছি, তবু ওকে আমি নিরস্ত করতে পারিনি। একে এক ধরনের ব্ল্যাকমেল ছাড়া কিছু বলা যায় না। অমিতা তো আমার মুখের ওপরেই বলত, আমাকে ও ছাড়বে না।

বলতে বলতে প্রবীরের মুখে একটা নিষ্ঠুর হাসি ফুটে উঠল, এবং দাঁতে দাঁত পিষে, চিবিয়ে চিবিয়ে আবার বলল, একে বলে রাহুর গ্রাস। কে কাকে ছাড়ল, সেটা এবার দেখা গেল।

বলেই হেসে উঠে, দেওয়ালের হুক থেকে তোয়ালে টেনে নিল। অশোক উঠে দাঁড়াল। দেখল, প্রবীরের মুখে যেন একটা প্রতিশোধ এবং প্রশান্তির হাসি একই সঙ্গে, এখনও জ্বলজ্বল করছে। অশোক বলল, চলি তা হলে প্রবীরদা, আপনার তো অফিস যাওয়ার তাড়া আছে। দরকার হলে আবার আসব।

না, আমার কাছে তোমার আসার আর দরকার নেই। আমার যা বলবার তা বলে দিয়েছি, আর কিছু বলার নেই।

অশোক অপলক তীক্ষ্ণ চোখে প্রবীরের দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রবীরও তাকিয়েছিল, এবং প্রবীর হঠাৎ চোখ সরিয়ে নিয়ে, বলল, আমি চান করতে চললাম, আমার আর সময় নেই।

অশোক আর কোনও কথা না বলে, প্রবীরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। প্রবীরের হঠাৎ চোখ সরিয়ে নেওয়াটা, কেমন যেন সন্দেহজনক। প্রবীর অমিতাকে ঘৃণা করত, এটা স্পষ্ট। অমিতার মৃত্যুতে সে খুশিই, কারণ অমিতা তার জীবনকে, সম্ভবত প্রেমের ক্ষেত্রে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। যদি প্রবীর অমিতাকে হত্যা করে থাকে, তা হলে মোটিভ স্পষ্ট। কল্পনা করে নেওয়া যেতে পারে, হত্যার দিন, অমিতা প্রবীরের বাড়ি এসেছিল, প্রবীর তাকে খুন করে, জনসন রোডের নর্দমায় ফেলে এসেছিল। ব্যাপারটা অবিশ্যি সহজ না, কারণ জনসন রোড অবাঙালি এলাকায়। অমিতার মৃতদেহ নিয়ে সেখানে যাওয়া কঠিন। লোকচক্ষুকে ফাঁকি দেওয়া প্রায় অসম্ভব। রাত্রে কার্টু ছিল, পুলিশ প্রহরা ছিল সমস্ত রাস্তায়। তা ছাড়া, প্রবীরের অ্যালিবাইয়ের প্রশ্ন আছে। কলকাতার অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে, প্রবীরের রাত্রি প্রায় নটা বেজে যায়, এবং হত্যার দিনটা ছুটির দিন ছিল না। তথাপি প্রবীরকে মোটেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা যায় না। তার পক্ষে, খুনের মোটিভ অত্যন্ত জোরালো।

অশোক কবজি উলটে ঘড়ি দেখল। পৌনে নটা। সুমিতা এখনও ইস্কুল থেকে ফেরেনি। ওদের বাড়িতে, ওর সঙ্গে কথা বলাই দরকার। ও প্রদ্যোতের প্রতি ওরকম বিরূপ আচরণ কেন করল, জানতেই হবে।

হঠাৎ অশোকের মনে একটা নতুন চিন্তা এল। সুমিতার বিরূপ আচরণের ব্যাপারটা প্রদ্যোতের কাছ থেকেও জানা যেতে পারে। কথাটা মনে হতেই, পথ চলতি একটা খালি সাইকেল রিকশা থামিয়ে, তাতে উঠে বলল, প্রদ্যোৎ ডাক্তারের ডিসপেনসারিতে চলো তো।

শহরের সব রিকশাওয়ালাই প্রদ্যোতের ডাক্তারখানা চেনে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রদ্যোতের ডাক্তারখানায় পৌঁছে গেল। রুগির ভিড় বেশ রয়েছে। কিন্তু প্রদ্যোৎ নেই, তার গাড়িও দেখা যাচ্ছে না। কম্পাউন্ডার অশোকের চেনা। প্রদ্যোতের খবর জিজ্ঞেস করে জানা গেল, সে আট ন মাইল দূরে এক রুগি দেখতে গিয়েছে, বোধ হয় অপারেশন করতে হবে, তার সাজ সরঞ্জাম এবং গ্যাস সিলিন্ডারও মিউনিসিপ্যালিটি থেকে নিয়ে গিয়েছে। কখন ফিরবে, কিছুই বলা যায় না।

একজন ডাক্তারের পক্ষে এটা খুবই স্বাভাবিক, তবু মনের এ অবস্থায় এরকম একজন রুগিকে অপারেশন করতে যাওয়া, যথেষ্ট স্ট্যামিনা থাকা দরকার। প্রদ্যোতের তা আছে। কম্পাউন্ডার জিজ্ঞেস করল, কারোর অসুখ বিসুখ করেছে নাকি?

অশোক বলল, না এমনি একটু দরকার ছিল। ভেতরে চলুন, আপনার সঙ্গে একটা কথা আছে।

 কম্পাউন্ডার একটু সন্দিগ্ধ চোখে অশোকের দিকে দেখল, তারপর ভিতরে রুগি দেখবার ঘরে গেল। অশোক গলা নামিয়ে বলল, পুলিশের মগজ ভরতি তো গোবর। থানার দারোগা সন্দেহ করছে, প্রদ্যোৎদাই নাকি অমিতাদির খুনের পেছনে আছেন। ভাবতে পারেন?

কম্পাউন্ডার অবাক হয়ে বলল, ডাক্তারবাবু? ছি ছি ছি, অমন দেবতুল্য লোকের সম্পর্কে পুলিশ এসব ভাবছে?

তা হলে আর আপনাকে বলছি কী। পুলিশ বলছে, পরশুদিন, বিকেল পাঁচটা থেকে ছটা প্রদ্যোৎদা কোথায় ছিলেন, তার কোনও হদিস করা যাচ্ছে না।

কম্পাউন্ডার অবাক হয়ে বলল, কেন, ডাক্তারবাবু তো বাড়িতেই ছিলেন তখন। ওঁর সেদিন এখানে আসতে একটু দেরি হয়েছিল।

অশোকের মাথায় নতুন চিন্তা আর জিজ্ঞাসা জাগল। কারণ, এটা নতুন সংবাদ, অমিতাদি যখন বাড়ি থেকে বেরোেন, প্রদ্যোত তখন বাড়িতে ছিল। কিন্তু পুলিশকে সে বলেছে, সে তখন ডাক্তারখানায় ছিল। কম্পাউন্ডারকে অশোক আর বেশি ঘাঁটাতে চাইল না, কেবল বলল, দেখুন তো, পুলিশ কীরকম আহাম্মক। যাক গে, আপনি আর এ বিষয়ে কিছু বলবেন না।

না, আমার আর বলার কী আছে। তবে পুলিশদের সত্যি বিশ্বাস নেই। ওরা দিনকে রাত করতে পারে।

যা বলেছেন।

বলে অশোক ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে এল। মিথ্যা কথা বলে, একটা সত্যি কথা জানা গেল, প্রদ্যোৎ বাড়িতেই ছিল। অবিশ্যি কাঞ্চন বউদির সংবাদও তা-ই, এবং অশোকের মনে চকিতে হেড মিস্ট্রেস সুধা হালদারের ছবি ভেসে উঠল। সুধা হালদারের কোনও ভূমিকা আছে কি, এই খুনের ঘটনায়? প্রদ্যোতের সঙ্গে নাকি তার ইদানীং প্রেমলীলা চলছে, সংবাদ কাঞ্চন বউদির। কাঞ্চন বউদির সংবাদের মধ্যে, বিশেষ ফাঁক থাকে না। ভদ্রমহিলার সঙ্গে একবার দেখা করলে কেমন হয়? কিন্তু তার আগে, সুমিতাকে দরকার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *