উনচল্লিশ
সন্ধ্যের পরেই টিপিস টিপিস বৃষ্টি শুরু হল। জলপাইগুড়িতে বর্ষাকাল অনেকটা সময় জুড়ে থাকলেও অন্য ঋতুতে যে বৃষ্টি হবে না একথা কেউ জোর করে বলতে পারে না। যেমন আজ হচ্ছে। জুলিয়েন চলে যাওয়ার পরেই মেঘেদের দেখতে পেয়েছিল অনিমেষ। হু হু করে ছুটে আসছে কালো দৈত্যগুলো। তারপর হাওয়া থমকে গেল, অদ্ভুত সব গন্ধ বের হতে লাগল গাছেদের শরীর থেকে আর তারপরেই টিপটিপিয়ে বৃষ্টি নামল।
আজ আবার বিজলী আলো জ্বলছে না। চারপাশে ঘুটঘুটি অন্ধকার। অনিমেষ বারান্দায় চুপচাপ বসেছিল। ওর খেয়াল নেই তিনহাত দূরে অর্ক রয়েছে। আজ জুলিয়েনের সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে তার সবই ছেলে শুনেছে। একবার ভেবেছিল ওকে চলে যেতে বলবে কিন্তু তারপরই উদাসীন হয়েছিল। এবং যখন দেখল জুলিয়েনও আপত্তি করছে না তখন আর ওকে নিয়ে মাথা ঘামায়নি। মাঝখানে একবার উঠে চায়ের কাপ বয়ে এনেছিল। অনিমেষের এতক্ষণে খেয়াল হল মাধবীলতা একবারও বাইরে আসেনি।
এইসময় বিদ্যুৎ চমকালো। এক মুহূর্তের জন্যে সামনের বাগান, বড় আমগাছগুলো সাদা নেগেটিভ হয়ে আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। তারপরেই বৃষ্টির শব্দ হল। এবার ফোঁটাগুলো বড় হয়েছে।
অর্ক কথা বলল প্রথম, ‘এইসময় এখানে বৃষ্টি হয়?’
‘সাধারণত হয় না কিন্তু হতে পারে, যেমন এখন হচ্ছে।’
‘কিন্তু বিকেলে আকাশে একটুও মেঘ ছিল না।’
‘এখানকার বৃষ্টির চরিত্র এইরকম। হঠাৎ ঝাঁপিয়ে আসে। তোর মা কোথায়?’
‘রান্নার ঘরে।’ অর্ক উত্তর দিয়ে একটু ইতস্তত করল, ‘বাবা, তুমি তাহলে এখানে থেকে যাবে?’
অনিমেষ মুখ তুলে ছেলের দিকে তাকাল। অন্ধকারে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না অর্ককে। তারপর কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গী যেন আচমকা এসে গেল গলায়, ‘থাকি, কিছুদিন থেকে দেখি এখানে! তুই বড় হয়েছিস, তোর মা তুই কলকাতায় একসঙ্গে থাকলে কোন অসুবিধে হবে না। কিন্তু এদের দেখবে কে? বল?’
অর্ক এবার উঠে এল, এসে অনিমেষের চেয়ারের পাশে দাঁড়াল, ‘আমি একটা কথা বলব বাবা? তুমি যাও মায়ের সঙ্গে, আমি এখানেই থাকি।’
‘তুই একা এখানে থাকবি?’ অনিমেষ চমকে উঠল।
‘আমার এখানে থাকতে ভাল লাগবে। জায়গাটা খুব সুন্দর। আমি থাকলে এদের খুব সুবিধে হবে, তাছাড়া আমার মনে হচ্ছে আমি এখানে ভালভাবে পড়াশুনা করতে পারব। তুমি রাজি হয়ে যাও।’ আবদারের ভঙ্গী অর্কর গলায়।
অনিমেষ মাথা নাড়ল। তারপর খোলাখুলি বলল, ‘তুই তো এতক্ষণ বসে বসে সব শুনলি। আমার এখানে থাকার অন্য কারণও আছে।’
‘কিন্তু তোমার চেয়ে আমি সেটা ভালভাবে করতে পারব।’
‘মানে?’ অনিমেষ হতভম্ব হয়ে পড়ল।
‘জুলিয়েনবাবুকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তুমি তো একসময়, সেই ছেলেবেলায় বলতে, আমরা যা পারিনি তোরা সেটা করবি, আর ভুল করবি না। আমি তো এখানে থেকে জুলিয়েনবাবুর কাছে সেসব শিখতে পারি। পারি না?’ অর্ককে খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছিল। ওর গলায় আবেগ স্পষ্ট।
‘জুলিয়েনের সঙ্গে তোর কি কোন কথা হয়েছে?’
‘হ্যাঁ। আজ বিকেলে তিস্তার চরে গিয়ে ওঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছে।’
‘সে তো বুঝলাম, কিন্তু কি কথা হয়েছে?’
‘উনি বলছিলেন, কিছু মানুষ পড়াশুনা করে বড় চাকরি করে, যাদের টাকা আছে তারা আরও টাকা বাড়িয়ে সেই লোকগুলোকে চাকর করে রাখে। দেশের নব্বুইভাগ মানুষকে নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় কারো নেই। নিজের জন্যে যাঁরা পড়াশুনা করেন তাঁরা শ্রদ্ধেয় মানুষ কিন্তু চাকরির জন্যে যারা পড়তে চায় তারা দেশের মেরুদণ্ডটাকেই নড়বড়ে করে দিচ্ছে। এইসব কথা।’ অর্ক তৃপ্তির হাসি হাসল। তারপর জিজ্ঞাসা করল, ‘বাবা আমি থেকে যাই?’
অনিমেষ বলল, ‘তুই রাজনীতির কিছুই বুঝিস না। এসব এখন মাথায় ঢোকাস না।’
অর্ক বলল, ‘আমি রাজনীতির কিছু বুঝতে চাই না। আর আমি এখানে থাকবো মানেই পড়াশুনা ছেড়ে দিনরাত এসব করব তাই বা ভাবছ কেন?’
অনিমেষ এবার শক্ত হল। তারপর বলল, ‘প্রত্যেকটা জিনিসের একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। একটা গাছ মাটিতে পুঁতলেই তাতে ফুল ফোটে না। আর কুঁড়ি ধরা মানেই সেটাকে টেনে ফুল করা যায় না। তুই আগে পাশ কর। জীবনটাকে নিজের চোখে দ্যাখ। তারপর এসব বিবেচনা করবি।’
হঠাৎ অর্ক জেদের গলায় কথা বলল, ‘আমি জীবনটাকে কম দেখিনি।’
‘মানে? তুই কি দেখেছিস? এইটুকুনি বয়সে কি দেখা যায়?’
‘আমি তোমাকে সব কথা খুলে বলতে পারব না। তবে মানুষকে দেখলে বোঝা যায় না তার সত্যিকারের অবস্থা কি! যেসব নোংরা কাজ হয় তার অনেকটাই হয় পেটের জন্যে। আমি আমেরিকা রাশিয়ার কথা জানি না কিন্তু কলকাতায় তাই হয়। আমি ঠিক বললাম না বোধহয়। যত নোংরা কাজ হয় তা করে টাকা নেই বলে আর কেউ করে প্রচুর টাকা আছে বলে। এসব আমি নিজের চোখে দেখেছি।’
‘তুই দেখেছিস! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না অর্ক।’
‘কি ভাবো তোমরা আমাকে? ছেলেমানুষ, বাচ্চা ছেলে, অন্ধ?’ অর্কর গলায় ঝাঁঝ।
অনিমেষ তরল গলায় বলল, ‘তুই তো সত্যি সত্যি বাচ্চা।’
‘বাজে কথা বলো না!’ অর্ক কটকটে স্বরে বলে উঠতেই অনিমেষ মুখ তুলল।
‘অর্ক, এদিকে আয়।’ কনকনে ঠাণ্ডা গলায় নিজের নামটা শুনে অর্ক দরজার দিকে তাকাল। মাধবীলতা যে কখন ওখানে এসে দাঁড়িয়েছে সে টের পায়নি। গলা শুনে অনিমেষও অবাক হয়েছিল। ওদের কথাবার্তা কি নিঃশব্দে মাধবীলতা দরজায় দাঁড়িয়ে শুনেছিল! অর্ক বলল, ‘কেন?’
‘এদিকে আসতে বলছি।’
মায়ের গলার স্বর এবার অর্কর কানে অস্বাভাবিক ঠেকল। সে কিছুটা গোঁয়ার ভঙ্গীতে অন্ধকার দরজায় দাঁড়ানো মাত্র ঠাস করে শব্দ হল। অর্ক কিছু বুঝবার আগেই তার ডান গালে আঘাত এল এবং বেশ জ্বলছিল। সেই সঙ্গে মাধবীলতার চাপা নিঃশ্বাস জড়ানো কণ্ঠস্বর, ‘ছি ছি ছি। তোর লজ্জা ঘেন্না সব চলে গেল? তোকে আমি এইজন্যে পেটে ধরেছিলাম? মুখে মুখে তর্ক করছিস, কাকে ধমকাচ্ছিস তুই? কত বড় হয়েছিস যে ওইভাবে কথা বলতে পারিস? এখানে থাকতে চাও তুমি? সাপের পাঁচ পা দেখেছ? আরও বখাটে হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে? গুণ্ডা, বদমাস, লোচ্চার! যা, ভেতরে যা!’
অর্ক কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলল, ‘তুমি আমায় মিছিমিছি মারলে। এসব গালাগাল না বুঝে দিয়েছ।’
মাধবীলতার গলার স্বর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতেও ভাঙ্গল না, ‘ঠিক করেছি, আমি ঠিক করেছি।’ আর এইসময় আলো জ্বলে উঠল। ম্যাড়মেড়ে আলো যদিও তবু পরস্পরকে দেবার পক্ষে যথেষ্ট। অর্ক দেখল মায়ের চোখ অন্যরকম দেখাচ্ছে। একটু বিস্ফারিত এবং জ্বলজ্বলে। এরকম অস্বাভাবিক চেহারা দেখে অর্ক বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেল। তারপর একবার অনিমেষের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেল।
পুরো ব্যাপারটাই অনিমেষের কাছে বোধগম্য হচ্ছিল না। হঠাৎ মাধবীলতা এত উত্তেজিত হয়ে অত বড় ছেলেকে চড় মারতে গেল কেন? বাজে কথা না বলতে বলা সত্যি অন্যায় কিন্তু ঠাট্টা করতে করতে অনেকসময় তো সে অর্ককে এরকম প্রশ্রয় দেয়। আর সেটা মাধবীলতার অজানা নয়। সে একটু রেগে উঠল মাধবীলতার ওপর। কয়েক পা এগিয়ে সে দরজার কাছে আসতেই দেখল ঘরটা ফাঁকা, মাধবীলতা নেই।
মন খুব তেতো হয়ে গেল অনিমেষের। বাইরে বেশ বৃষ্টি পড়ছে। আবার সে ফিরে গেল বারান্দার চেয়ারে। তারপর চুপচাপ বৃষ্টি দেখতে লাগল। এখন এই বাড়িটা একদম নিঝুম, বৃষ্টির শব্দ ছাড়া কোন আওয়াজ নেই। মাধবীলতার গলার স্বরটা সে কিছুতেই ভুলতে পারছিল না। একদম অচেনা।
নিঃশব্দে খাওয়াদাওয়া হয়ে গেল। অর্ক এবং অনিমেষ পাশাপাশি। মাধবীলতা যখন খাবার দিচ্ছিল তখন ছোটমা দাঁড়িয়ে। এই ব্যাপারটা আজ নতুন। অর্ক মাথা গুঁজে খেয়ে উঠে গেল। মাধবীলতা খাবার দিয়ে আর দাঁড়ায়নি। শেষ দিকে ছোটমা আর অনিমেষ ছাড়া সেখানে আর কেউ ছিল না। খাওয়া শেষ হলে ছোটমা চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি হয়েছে?’
‘মানে?’ অনিমেষের কপালে ভাঁজ পড়ল।
‘কিছু হয়নি তো?’ ছোটমার গলায় সন্দেহ।
‘কি হবে, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কি ব্যাপারে জানতে চাইছ।’
‘সন্ধ্যেবেলায় বউমা রান্নাঘরে একা বসে কাঁদছিল।’
‘তাই নাকি! জিজ্ঞাসা করলে না কেন?’
‘করেছিলাম। এড়িয়ে গেল। তোমাকে আমরা জোর করে আটকে রাখছি না তো?’
অনিমেষ হাসল, ‘আমি কি বাচ্চা ছেলে। না, এজন্যে কোন গোলমাল হয়নি।’
কিন্তু খাওয়া দাওয়ার পর অনিমেষের স্পষ্ট বোধ হল গোলমালটা এই জন্যেই হয়েছে। অর্কর ওপর মাধবীলতার আক্রমণ সেই রাগেরই বহিঃপ্রকাশ। অর্ক ছোট ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ার আধঘন্টা বাদে মাধবীলতার দেখা পাওয়া গেল। অনিমেষ আলো নিবিয়ে দিয়ে খাটে হেলান দিয়ে খোলা জানলায় চোখ রেখেছিল। বাইরে বৃষ্টি এখন ঝমঝমিয়ে পড়ছে। জানলার ওপরে শেড থাকায় ঘরে ছাঁট আসছে না।
মাধবীলতা আলো জ্বাললো না। এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ঘরের কোণে দাঁড় করানো পাটিটাকে মেঝেয় বিছিয়ে দিল। অনিমেষ এবার সজাগ হল, ‘কি করছ?’
‘দেখতে পাচ্ছ। না পেলে বল আলো জ্বেলে দিই।’ একদম নিস্পৃহ স্বর।
‘তুমি এই বৃষ্টিতে নিচে শোবে নাকি?’
মাধবীলতা জবাব দিল না। খাট থেকে একটা বালিশ টেনে নিয়ে পাটির ওপর রাখল। অনিমেষ খাটের ধারে একটু এগিয়ে এল, ‘তোমার কি হয়েছে? এরকম ব্যবহার করছ কেন? তখন খামোকা ছেলেটাকে মারলে। খাওয়ার সময় একটাও কথা বললে না। আবার এখন মাটিতে শুচ্ছ!’
‘এসবের জন্যে তোমার কাছে জবাবদিহি করতে হবে নাকি!’
অনিমেষের চোয়াল শক্ত হল। হঠাৎ মাথাটা গরম হয়ে গেল তার, ‘নিশ্চয়ই।’
‘কেন?’ হাসল মাধবীলতা। অন্ধকারে ছোট্ট শব্দ হল।
‘আমি তোমার স্বামী। সে অধিকার আমার আছে।’
‘অধিকার! স্বামী! চমৎকার।’ মাধবীলতা এবার পাটির ওপর শুয়ে পড়ল আঁচলে শরীর মুড়ে। অন্ধকার সয়ে যাওয়ায় তার শরীরটাকে খুব ছোট দেখাচ্ছিল। মুহূর্তেই অনিমেষের পৃথিবী যেন টলে উঠল। এ কোন সুরে কথা বলছে মাধবীলতা। সে আবার বিহ্বল গলায় বলল, ‘লতা, তুমি কি বলছ?’
মাধবীলতা কোন উত্তর দিল না। অনিমেষের বুকের ভেতর তখন হাজার থাবার আঁচড় পড়ছে। সে সুস্থির হয়ে থাকতে পারল না। ক্রাচ ছাড়াই দুই হাতে খাটে ভর দিয়ে মেঝেয় নেমে পড়ল। তারপর শরীরটাকে প্রায় হামাগুড়ি দেবার মত করে মাধবীলতার কাছে নিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে বসল মাধবীলতা, ‘কি আশ্চর্য! তুমি আমাকে একটু ঘুমুতেও দেবে না?’
অনিমেষের গলা রুদ্ধ হয়ে এল, ‘লতা, তুমি এরকম করছ কেন?’
‘আমি কিছুই করছি না, দয়া করে আমাকে ঘুমুতে দাও।’
‘তুমি এখানে শুয়েছ কেন?’
‘ওপরে শুলে তোমার কি সুবিধে হবে?’
‘লতা!’
‘চিৎকার করো না৷ নাটক করার ইচ্ছে হলে পাশের ঘর থেকে ছেলেকে ডেকে দিচ্ছি তার সামনে করো। কি চাও তুমি?’
‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ তুমি এরকম হয়ে গেলে কি করে?’
‘হঠাৎ? চমৎকার।’
‘আজ বিকেলেও তুমি আমার সঙ্গে স্বাভাবিক গলায় কথা বলেছ। তোমার সঙ্গে আমার কোন ঝগড়াঝাঁটি হয়নি। এমনকি এত বছর একসঙ্গে আছি কিন্তু কোনদিন তুমি আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করোনি।’
‘আঃ, অনিমেষ, প্লিজ! আর আমাকে কথা বলিও না। একটু চুপচাপ থাকতে দাও। আমি আর পারছি না, পারছি না।’ তারপর যেন ওর ঠোঁট অসাড় হয়ে গেল, ‘এক সঙ্গে আছি!’ তিনটে শব্দে যেন রাজ্যের তিক্ত মাখামাখি।
অনিমেষ মাধবীলতার দিকে তাকাল। অন্ধকারে ওর মুখ ভাল করে বোঝা যাচ্ছে না। নাক এবং চিবুকের রেখাগুলো ছাড়া কোন অভিব্যক্তি চোখে পড়ছে না। কতবছর পর মাধবীলতা তাকে অনিমেষ বলে ডাকল? এবং এই প্রথম নিজের নামটাকে অত্যন্ত মন্দ শোনাল কানে। শেষ পর্যন্ত সরাসরি প্রশ্ন করল অনিমেষ, ‘তুমি চাও না আমি এখানে থাকি?’
‘আমি চাওয়ার কে?’
‘তুমি আমার স্ত্রী।’
‘না কি আমরা একসঙ্গে আছি, শুধু এইটুকু?’
‘লতা!’ অনিমেষের গলা থেকে শব্দটা ছিটকে এল।
‘সত্যি কথা অনিমেষ, এটাই সত্যি কথা। আমি তোমার কে? যদি তুমি রোজগার করতে আর আমরা এইভাবে থাকতাম তাহলে লোকে আমায় তোমার রক্ষিতা বলত। আর তুমি যদি সুস্থ হতে, তোমাকে যদি ওই লাঠি দুটোয় ভর দিয়ে না চলতে হতো তাহলে বলত আমি—’ ঠোঁট কামড়ালো মাধবীলতা। তারপর প্রাণপণে কান্না গেলার চেষ্টা করে বলল, ‘আমি তোমার কেউ না, আমি তোমার কেউ না। আঃ ভগবান!’
‘তুমি আমার কেউ না?’
‘না।’ হঠাৎ মাধবীলতা সোজা হয়ে বসল। অন্ধকারেও ওর চোখ জ্বলছিল, ‘কেউ হলে এক কথায় এখানে থাকতে চাইতে না।’
‘এখানে আমার থাকার প্রয়োজন লতা।’
‘এতদিন এই প্রয়োজনবোধটা কোথায় ছিল? কেন জেল থেকে বেরিয়ে প্রায় অপরিচিত এক বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলে? তখনই তো চলে আসতে পারতে এখানে? কেন বিকলাঙ্গদের হোমে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলে? কেন আমার সঙ্গে বস্তিতে এতবছর থেকেও এ বাড়িতে একটা চিঠি লিখতে পারোনি? আর এবার যখন আমি তোমাকে নিয়ে এলাম তখন কেন তুমি আসতে চাইছিলে না? তখন তো প্রয়োজন মনে হয়নি। কেন, জবাব দাও।’ মাধবীলতার প্রতিটি প্রশ্ন তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হচ্ছিল।
অনিমেষ চোখ বন্ধ করল। ওর মনে হচ্ছিল বাঁধের ফাটলটাকে এখনই যে কোন ভাবে বন্ধ করা দরকার। সে জবাব দিল, ‘এখানকার এই অবস্থা আমি জানতাম না লতা। এখন পরিস্থিতি অনুযায়ী তো ব্যবস্থা নিতে হবে।’
‘চুপ করো। এরকম সুবিধেবাদী কথা শুনলে গা ঘিনঘিন করে ওঠে।’
‘বেশ। কিন্তু তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ বাবা মারা যাওয়ার পর এ বাড়িতে একটা মানুষ নেই যে ওঁদের পাশে দাঁড়াবে। দুজন বিধবা আজ আমার মুখ চেয়ে রয়েছে। তাঁদের ফেলে আমি যাই কি করে?’
‘আর আমি? আমি কি নিয়ে থাকব? সেটা ভেবেছ?’
এইবার মাধবীলতার দিকে তাকিয়ে যেন আঘাত করে সামাল দিতে চাইল অনিমেষ, ‘লতা, এবার তুমি স্বার্থপর হচ্ছ!’
‘স্বার্থপর? চমৎকার।’ মাধবীলতা হিংস্র বাঘিনীর মত ঘুরে বসল, ‘কথাটা যখন উচ্চারণ করলে তখন তোমাকে জবাবদিহি দিতে হবে। কিসের আশায় আমি শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম? তুমি আন্দোলন করছ জেনেও আমি কেন তোমাকে শরীর দিয়েছিলাম। যে কোন দিন পুলিস তোমাকে মেরে ফেলবে জেনেও আমি—! কেন?’
‘আমাকে ভালবাসতে বলে।’
‘কেন তোমার জন্যে আমি বিনা প্রতিবাদে লালবাজারে অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করেছিলাম? কেন তোমার বাচ্চাকে পেটে নিয়ে একা এই সমাজ আর লোভী মানুষগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম? বছরের পর বছর একা ওই বাচ্চাকে নিয়ে বস্তিতে কার জন্যে অপেক্ষা করেছি? কেন তোমাকে জেল থেকে আমি এনেছিলাম? কেন এতগুলো বছর তোমার মত পঙ্গু মানুষকে আমার পক্ষে যতটা সম্ভব তারও বেশী দিয়ে মাথায় করে রেখেছিলাম? কি স্বার্থপরতা ছিল তাতে?’
অনিমেষ মুখ ফিরিয়ে নিল। তার জবাব দেওয়ার কিছু নেই।
‘সবাই বলত মাধবীলতার মত মেয়ে হয় না। তুমি নিজেকে নিঃশেষ করে দাও, প্রতিদানে কিছু চেও না, তোমার মত মেয়ে হবে না। এই প্রশংসা শুনতে শুনতে আমার সমস্ত মন বিদ্রোহ করল। তুমি ঠাট্টা করেছ নিজেকে কষ্ট দিয়ে আমি নাকি আনন্দ পাই। একবারও ভাবোনি কেন আমি এসব করেছি, কার মুখ চেয়ে। জবাব দাও?’
‘সবই সত্যি। কিন্তু তুমি শক্ত সমর্থ। তার ওপর খোকা তোমার সঙ্গে থাকছে। কিন্তু এদের কথা ভাবো।’ অনিমেষের গলায় অনুনয়।
‘কি ভাববো? না। আমি আর ভাববো না। এত বছর তো অনেক দিলাম। এবার আমার চাই। তোমাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে।’ মাধবীলতার গলায় এবার কর্তৃত্বের সুর। মুখের চামড়া টানটান।
‘তুমি মিছিমিছি জেদ করছ। একটু খোলা মনে ব্যাপারটা ভাবো, প্লিজ।’
‘কি ভাববো? তুমি আমাকে কি পেয়েছ? সর্বংসহা। সারা জীবন আমার ওপর অত্যাচার করে যাবে আর আমি সেসব মুখ বুজে সইব? তুমি আমাকে কি দিয়েছ আজ পর্যন্ত?’
অনিমেষ ক্রমশ অসহায় হয়ে পড়ছিল। আজকের মাধবীলতাকে কোনদিন যেন সে দ্যাখেনি। অসহায়তা থেকে অনিমেষের বুকে একটা উত্তেজনা জন্ম নিল। সে শক্ত গলায় বলল, ‘এসব কথা এখন শোনাচ্ছ কেন? তোমার মনে আছে, যেদিন তুমি আমায় জেলফেরত নিয়ে যেতে চেয়েছিলে সেদিন আমি আপত্তি করেছিলাম!’
‘হ্যাঁ করেছিলে। আমি সেটাকে সঙ্কোচ বলে ভেবেছিলাম। তুমি কোন কাজ না করে আমার সঙ্গে থাকতে চাওনি, তাই বিনয় বলে মনে করেছিলাম। আমি তোমার জন্যে জীবন দিতে পারি যখন তখন ওই সঙ্কোচ বা বিনয়কে আমল দেব কেন? কিন্তু এতগুলো বছর একসঙ্গে থেকেও তুমি আমাকে বুঝতে পারলে না? আজ সত্যি আফসোস হচ্ছে আফসোস হচ্ছে অনিমেষ। সত্যি কথা বললাম।’
‘আমাকে ভালবেসেছো বলে আফসোস হচ্ছে?’
‘না। ভালবাসা ইলেকট্রিকের সুইচ নয় যে ইচ্ছে মতন নেবানো কিংবা জ্বালানো যায়। আমার আফসোস হচ্ছে এই ভেবে ভগবান কেন তোমাকে দুটো চোখ দিলেন না, এত অন্ধ তুমি!’
‘লতা, আমি তোমাকে অন্যরকম ভেবেছিলাম।’
‘কি রকম? যার কোন সাড় নেই, সব বোঝা চাপিয়ে দিলে যে মুখ বুজে বইবে, একটুও প্রতিবাদ করবে না? আর পাঁচজনে কি মহৎ বলে হাততালি দেবে, সেইরকম? খুব ছোট হয়ে যাচ্ছি অনিমেষ, কিন্তু আজ ছোট হতে ভাল লাগছে। আমরা মেয়েরা বড় বেশী উদার হই বলে তোমরা পুরুষেরা চিরকাল বেঁচে যাও। তুমি কি কিছু বুঝতে পারছ?’
‘না।’
‘তা পারবে না জানতাম। আচ্ছা অনিমেষ, আমি একটা মেয়ে। আমার শরীরে যৌবন আছে, লোকে বলত আমি সুন্দরী। এই আমি এতগুলো বছর তোমার সঙ্গে এক ঘরে থাকলাম অথচ আমার কালরাত্রি ঘুচলো না, ঘুচবে না। তুমি কখনও ভেবেছ সে কথা?’
‘লতা তুমি একটা সাধারণ মেয়ের মত কথা বলছ। একটা দেহসর্বস্ব মেয়ের মনের কথা তোমার মুখে মানায় না।’
‘সাধারণ মেয়ে? অনিমেষ আমিও তো সাধারণ মেয়ে। আমি অসাধারণ হবার ভান করতে করতে কখন—! কিন্তু আমার শরীর? সে তো মাঝে মাঝেই বিদ্রোহ করত? কেন আমি জোর করে মুখ ফিরিয়ে রাখতাম? অনিমেষ, তুমি আমাকে এতগুলো বছরে কদিন জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছ?’
অনিমেষ কথা বলতে পারল না। মাধবীলতা অন্ধকারে যেন নিজের মনেই হাসল, ‘স্বার্থপর বলছিলে না একটু আগে? যৌবনের শুরুতেই শুধু তোমাকে একবার চোখে দেখব বলে একা মেয়ে শান্তিনিকেতনে ছুটে গিয়েছিলাম। শুধু তোমার পাশে একটা দিন থাকতে পারব, তোমার কাজের ফাঁকে দুটো কথা বলার সুযোগ পাব। আমার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তখন একা হোস্টেলে থাকি। তুমি, সেই রাত্রে আমায় গ্রহণ করে জিজ্ঞাসা করেছিলে আমি কিছু মনে করেছি কিনা? অবাক হয়েছিলাম, জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন? আসলে উত্তেজনায় তুমি আমার শরীর ভোগ করেই অপরাধ বোধে পীড়িত হয়েছিলে। কিন্তু সেই মুহূর্তটায় আমি আমার ভালবাসাকে সাজিয়েছিলাম। সত্যিই ছেলেমানুষ ছিলাম। মেয়েদের শৈশব বড় দেরিতে কাটে। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমার শরীরে অর্ক এসে গেছে। অথচ তুমি একবারও খোঁজ করছ না। তোমার দেশ-উদ্ধার—বিপ্লব করে যাচ্ছ নিশ্চিন্তে। আর একটা মেয়ের শরীরে যে বীজ দিয়ে এলে তার পরিণতি নিয়ে চিন্তাও করলে না। আর আমি কি বোকার মতন সেই বীজটাকে তিল তিল করে বাঁচাবার চেষ্টা করলাম। হোস্টেল ছাড়তে হল। এর বাড়ি তার বাড়ি করে আমি একা মেয়ে কলকাতা শহরে হাবুডুবু খেতে খেতে তোমার অর্ককে নিয়ে তোমার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কই, আমি তো তখন অ্যাবরসন করাতে পারিনি। একটা কুমারী মেয়ের পক্ষে সেইটেই স্বাভাবিক ছিল। আমি কি ঝুঁকি নিয়েছিলাম! কুন্তী তো কর্ণকে জলে ভাসিয়ে দিয়েছিল, আমি অর্ককে তো—।’ মাধবীলতা হাঁপাতে লাগল। তারপর একসময় নিঃশ্বাস চেপে বলল, ‘এই সমাজ তখন অর্ককে বাস্টার্ড বলতে পারত। যে জানে সে বোধহয় তাই বলবে। আমার আর জোর করার গলা রইল না। আমি স্বার্থপর? স্বার্থপরতার সংজ্ঞা কি জানি না।’
‘ছিঃ।’ অনিমেষ চিৎকার করে উঠল, ‘তোমার লজ্জা করল না একটুও?’
‘কেন? লজ্জা করবে কেন’ মাধবীলতা যেন অনেক দূর থেকে কথা বলছে।
‘তুমি অর্ককে বাস্টার্ড বলছ! বলতে পারলে?’
‘আমি বলিনি। লোকে বললে জবাব দিতে পারব না।’
‘কেন? আমি, আমি ওর বাবা না?’
‘সে বিষয়েও সন্দেহ হচ্ছে নাকি?’
‘এত ছোট ভেব না। কিন্তু আমার সামনে ও কথা উচ্চারণ করলে কি করে?’
‘অনিমেষ, তোমার ক্ষণিক আনন্দের জের মেটাতে অর্ক আমার শরীরে এসেছিল। কিন্তু তুমি তো ওর বাবা কখনও হওনি। কি করেছ তুমি ওর জন্যে? একটি মেয়ে তার সন্তানকে দশ মাস শরীরে লালন করে জন্ম দেয়। একজন পুরুষ বাবা হয় তার আচরণের মাধ্যমে।’
‘ওঃ, চুপ করো। আমি সহ্য করতে পারছি না।’
‘কিন্তু এটাই বাস্তব। আজ যখন আমরা পেঁয়াজের খোসা ছাড়াচ্ছি তখন জানি শেষে কিছুই থাকবে না, তবু এটাই সত্যি। অনিমেষ ওঠো, আমাকে একটু শুতে দাও।’
বাইরে তখনই বিদ্যুৎ চমকালো। অনিমেষের মনে হল তার সামনে একটা পাথরের মূর্তি বসে আছে। বিপর্যস্ত অনিমেষ বলতে পারল, ‘লতা, আমার অপরাধ আমি বুঝতে পেরেছি।’
‘কি বুঝেছ?’
‘আমার এখানে থাকতে চাওয়া উচিত হয়নি।’
‘না। সেটা তোমার অপরাধ নয়।’
‘তা হলে? তাহলে তুমি এরকম করছ কেন?’
‘আমি তো কিছুই করছি না। অনিমেষ, এঁদের কষ্ট এঁদের একাকিত্ব আমি বুঝি। এ বাড়ি নিয়ে মামলা হচ্ছে, একটাও পুরুষমানুষ এঁদের পাশে নেই। এঁরা তোমার অত্যন্ত আপনজন। তোমার পক্ষে এঁদের কাছে কিছুদিনের জন্যে হলেও থাকা একান্ত প্রয়োজন। এটুকু বুঝি।’
‘তা হলে? আমি তো তাই করেছি।’ অনিমেষ অবাক হয়ে গেল।
হঠাৎ মাধবীলতার মুখ অনিমেষের দিকে ঘুরে এল, ‘তুমি ওঁদের বলতে গিয়েছিলে কলকাতায় যাওয়ার কথা। ওখানে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার তো আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারতে! আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব কিনা এই চিন্তা একবারও তোমার মাথায় এল না?’ অনিমেষ এতক্ষণে যেন পায়ের তলায় মাটি পেল। সে নিচু গলায় বলল, ‘আমার অন্যায় হয়ে গেছে লতা।’
মাধবীলতা মাথা নাড়ল, ‘না। তুমি ঠিক করেছ। এসব আমার পাওনা।’
‘কিন্তু এত সামান্য ব্যাপার নিয়ে তুমি এরকম করলে!’
‘সামান্য? তোমার কাছে হয়তো সামান্য, লোকে শুনলে বলবে যে মাধবীলতা এত এত আত্মত্যাগ করেছে এইটুকুনিতে তার—। আসলে এসব উপেক্ষা করে চোখ বন্ধ করে আমার চলে যাওয়া উচিত ছিল উদারতা দেখিয়ে। কিন্তু জানো, অন্যের হাতের ছোঁড়া বর্শার আঘাত যে মুখ বুজে সহ্য করতে পারে সে প্রিয়জনের ছোট্ট কাঁটা বেঁধানোতে পাগল হয়ে যায়। এ তুমি বুঝবে না। যাও, আমায় একটু একা থাকতে দাও।’
‘তুমি আমায় ভুল বুঝছ লতা।’
‘না। একটুও না। শুধু তোমার কাছে একটা শেষ অনুরোধ আছে। কলকাতায় নিয়ে গেলে আমি হয়তো অর্ককে আর বাঁচাতে পারব না। ঈশ্বরপুকুর লেনের ওই বস্তি ওকে গ্রাস করে নেবে। এখানে এই কয়দিনে ওর চেহারায় ব্যবহারে যে পরিবর্তন এসেছে সেটা আগে দেখিনি। তুমি তোমার কাছে অর্ককে রেখে দাও। আমি নিশ্চিন্ত হই।’
‘তুমি ওখানে একা থাকবে?’
‘তাই তো ছিলাম। একটা একুশ বাইশ বছরের মেয়ে যদি একা থাকতে পারে তো—। এখন তো বুড়ি হতে চললাম। তোমার জিনিস তোমার কাছে রইল।’
‘লতা, এরকম করে বলো না। আমি সহ্য করতে পারছি না।’
‘আমিও না। কিন্তু এবার বাস্তবের মুখখামুখি দাঁড়াও অনিমেষ।’
হঠাৎ অনিমেষ দুহাতে মাধবীলতাকে জড়িয়ে ধরল। তার সবল হাত মাধবীলতার শরীরকে বুকের মধ্যে পিষে ফেলতে চাইল, ‘না, আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না। আমি তোমার সঙ্গে যাব।’
মাধবীলতা স্থির হয়ে রইল যতক্ষণ না অনিমেষের হাত শিথিল হয়। তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘এখন আর তা হয় না অনিমেষ।’
ঠিক সেইসময় খুট করে একটা শব্দ হল। বাইরের বৃষ্টি ততক্ষণে থেমে গেছে। ওরা দুজনেই মুখ ফেরাল। পাশের ঘরের দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেল। আবছা অন্ধকারে অর্কর শরীরটাকে রহস্যময় মনে হচ্ছিল।