মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্ৰ ইয়াহুদীরাও এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত
কুরায়শী এবং ইয়াছরিবী মুসলমান এবং তাদের অনুসারীদের মধ্যে উক্ষ্মী নবী মুহাম্মদ (সা) এ সনদ জারী করেন। ১. এক জাতি হিসাবে তারা জিহাদে অংশ গ্ৰহণ করবে। অন্যদের মুকাবিলায়। રે. কুরায়শী মুহাজিররা তাদের কর্তৃত্বে বহাল থাকবে। তারা রীতি অনুযায়ী নিজেদের রক্তপণ পরিশোধ করবে এবং প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে বন্দীদের মুক্তিপণ পরিশোধ করবে। ৩. বনু আওফ তাদের কতৃত্বে বহাল থাকবে। তারা রীতি ও বিধি মতো দিয়্যত পরিশোধ করবে এবং প্রত্যেক দল রীতি অনুযায়ী ইনসাফের ভিত্তিতে মু’মিনদেরকে ফিদিয়া পরিশোধ করে তাদের বন্দীদেরকে মুক্ত করবে। :. এরপর তিনি আনসারদের প্রত্যেক বংশ-গোত্র-এর উল্লেখ করেন। এরা হলো, বনু সাইদা, বনু জুশাম, বনু নাজ্জার, বনু আমর ইবন আওফ, বনু নাবীত। এমনকি চুক্তিতে তিনি একথাও উল্লেখ করেন যে, কোন মুসলমান ঋণভারে জর্জরিত বিপণ জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়হীন রাখবে না এবং ফিদিয়া আর দিয়্যতের ক্ষেত্রে নিয়ম-রীতি
৫. কোন মুসলমান অপর মুসলমানের আযাদ করা গোলামের সঙ্গে কোন চুক্তি করবে না। তাকে বাদ দিয়ে (মুহাম্মদ (সা)-কে ছাড়া)। (অর্থাৎ অন্যের মুক্ত দাসের সঙ্গে কোন মুসলমান মৈত্রী চুক্তি স্থাপন করতে পারবে না। ৬. মু’মিন মুত্তাকীরা ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গঠন করবে বিদ্রোহী, যালিম, অত্যাচারী, পাপাচারীর বিরুদ্ধে, মু’মিনদের মধ্যে ফাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টির বিরুদ্ধে। এমন কি আপন সন্তানদের বিরুদ্ধে গেলেও এ মোর্চা গঠন করতে হবে এবং এ ব্যাপারে সকলে নবী মুহাম্মদ (সা)-কে সহায়তা করবে। ৭. কোন কাফিরের বদলায় কোন মু’মিন কোন মু’মিনকে হত্যা করবে না।
মুমিনের বিরুদ্ধে কোন কাফিরের সাহায্য করা যাবে না। ৯. আল্লাহর যিম্মা-অঙ্গীকার এক ও অভিন্ন। তাদের পক্ষ থেকে একজন সামান্য-নগণ্য
ব্যক্তিও কাউকে আশ্রয় দিতে পারবে।
১০. অন্যদের মুকাবিলায় মুসলমানগণ পরস্পরে ভাই।
আমাদের অনুগত ইয়াহুদীরা সাহায্য-সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। তাদের প্রতি জুলুম করা যাবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না।
সকল মুসলমানের নিরাপত্তা আর স্বাৰ্থ এক। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কোন মু’মিন অপর মু’মিন ভাইকে বাদ দিয়ে সন্ধি চুক্তি করবে না। তা সমভাবে সকলের জন্য ইনসাফ ভিত্তিক হতে হবে।
যে সব যোদ্ধা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে শরীক হবে, তারা একে অন্যের সহায়তা করবে। মু’মিনগণ আল্লাহর রাস্তায় নিহতদেরকে পরস্পরে সহায়তা করবে। মু’মিন-মুত্তাকীরা সত্য-সরল ও সঠিক হিদায়াতের উপর আছে। কোন মুশরিক কোন কুরায়শীকে জান-মালের নিরাপত্তা দেবে না। কোন মুমিনের মুকাবিলায় সে প্রতি–বন্ধক হবে না। (এবং তার বিরুদ্ধে সাহায্য-সহায়তা করবে না)। অহেতুক কোন মুমিনকে হত্যা করলে হত্যাকারীকে দায় বহন করতে হবে এবং নিহত ব্যক্তির ওলী-ওয়ারিসকে সন্তুষ্ট করতে হবে। হত্যাকারীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সমস্ত মুমিনের কর্তব্য হবে। তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কিছু করা তাদের জন্য হালাল হবে না।
কোন মু’মিন ব্যক্তি, যে এ সনদের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে ঈমান রাখে এবং তা স্বীকার করে,
আল্লাহ এবং শেষ দিনে যার ঈমান ও বিশ্বাস আছে, কোন নতুন কিছু উদ্ভাবনকারীর সাহায্য সহায়তা করা তার জন্য হালাল নয়, হালাল নয় এমন নব উদ্ভাবনকারীকে আশ্রয় দান করা। যে ব্যক্তি এমন লোককে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা তাকে আশ্ৰয় দান করবে কিয়ামতের দিন তার প্রতি আল্লাহর লা’নত, আল্লাহর গযব। আপতিত হবে। তার নিকট থেকে কোন বিনিময় গ্ৰহণ করা হবে না। (তার তাওবাও কবুল করা হবে না)। চুক্তির ক্ষেত্রে কোন বিরোধ, মত-পার্থক্য দেখা দিলে (তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ইয়াহুদীরা যত দিন মুমিনদের সহযোদ্ধা রূপে থাকবে, ততদিন তারা মুমিনদের সাথে ব্যয় নিবাহের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বনু আওফের ইয়াহুদীরা মুমিনদের সঙ্গে একই উম্মা রূপে থাকবে। ইয়াহুদীরা তাদের ধর্ম মেনে চলবে। আর মু’মিনরা মেনে চলবে তাদের নিজেদের দীন। তাদের দাস এবং তারা নিজেরা নিরাপদ থাকবে। অবশ্য কেউ জুলুম, পাপাচার আর অপরাধ করলে সে কেবল নিজেকেই ধ্বংস করে। নিজের এবং নিজের পরিজনের ক্ষতি সাধন করে। (অন্যায়কারীকে অন্যায়ের শাস্তি ভোগ করতে হবে)।
বনু নাজ্জার, বনু হারিছ, বনু সাইদা, বনু জুশাম, বনু আওস, বনু ছালাবা বনু জাফনা, বনু শাতনা—এসব শাখা গোত্রের ইয়াহুদীরা বনু আওফের ইয়াহুদীদের মতো অধিকার ভোগ করবে, সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে এবং ইয়াহুদীদের গোপন বিষয় নিজেদের গোপন বিষয়ের মতো বিবেচিত হবে।
মুহাম্মদ-এর বিনা অনুমতিতে তাদের কেউ বের হতে পারবে না।
২৬. কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে তা করবে নিজেরই সঙ্গে, তবে জুলুমের বিপরীতে জুলুমের
শাস্তি তাকে পেতে হবে।
২৭. আর আল্লাহ তো রয়েছেনই তার পশ্চাতে। ২৮. ইয়াহুদীরা নিজেদের ব্যয় ভার বহন করবে, আর মুসলমানরা বহন করবে নিজেদের
ব্যয়ভার। ২৯. এ চুক্তিপত্রের অনুসারীর বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করবে, তার বিরুদ্ধে সাহায্য করা সকলের
কতব্য হবে। ৩০. চুক্তিবদ্ধ পক্ষসমূহের মধ্যে সম্পর্ক হবে শুভাকাঙ্ক্ষী, সুন্দপদেশও পুণ্যভিত্তিক—
পাপাচারমূলক হবে না। ৩১. কোন ব্যক্তি তার মিত্রপক্ষের সঙ্গে পাপাচারের কর্ম করবে না। মিত্রপক্ষের অপরাধের
কারণে সে অপরাধী হবে না। ৩২. মজলুমের সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে। ৩৩. এ চুক্তির পক্ষের লোকের জন্য ইয়াছরিব এবং তার উপকণ্ঠ হবে সম্মানাহঁ। ৩৪. প্রতিবেশী-আশ্রয়প্রার্থী হবে নিজের মতো— যদি সে ক্ষতিকর এবং অপরাধী না হয়। ৩৫. অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন নারীকে আশ্রয় দেয়া যাবে না। ৩৬. এ চুক্তির পক্ষের মধ্যে কোন ঘটনা-উত্তেজনায় বিপর্যয়ের আশংকা সৃষ্টি হলে (বা কোন বিরোধ দেখা দিলে) ব্যাখ্যার জন্য আল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন
করতে হবে। ৩৭. যে এ চুক্তি মেনে চলবে আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন। ৩৮. কুরায়শ এবং তাদের সাহায্যকারীকে আশ্রয় দেয়া যাবে না। ৩৯. কেউ ইয়াছরিবের উপর চড়াও হলে সকল পক্ষ মিলে ঠেকাবে। :০. মুসলমানদেরকে কোন সন্ধি-চুক্তির জন্য আহবান করা হলে তারা (ইয়াহুদীরা) ও তা মেনে চলবে। ইয়াহুদীরা কারো সঙ্গে চুক্তি করলে মুসলমানরাও তাতে যোগ দিবে। তবে কেউ দীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তাতে মুসলমানরা যোগ দেবে না। :১. প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য তার অংশের সংরক্ষণ করা। :২. জালিম আর অপরাধী ছাড়া কেউ এ চুক্তিপত্রের অন্যথা করবে না। :৩. কেউ মদীনার বাইরে গেলে বা মদীনায় বসবাস করলে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে— যদি
সে জালিম এবং অপরাধী না হয়ে থাকে। :৪. যে ব্যক্তি পুণ্যবান এবং মুত্তাকী, আল্লাহ হবেন তার হিফাযতকারী। ইবন ইসহাক চুক্তিপত্রের অনুরূপ বিবরণ দিয়েছেন। অবশ্য আবু উবায়দ কাসিম ইবন সালাম তাঁর কিতাবুল গরীব ইত্যাকার গ্রন্থে এ সম্পর্কে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।