1 of 2

৩৯. প্রশাসনিক বিধি

অধ্যায় : ৩৯ প্রশাসনিক বিধি

ধারা—৮৯৮ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকিবে।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকিতে হইবে কারণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছাড়া কোন জাতির ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না। ইসলামের শিক্ষাই হইল সকলকে সম্মিলিতভাবে সুশৃংখলার সহিত বসবাস করিতে হইবে, অনৈক্য বা বিভেদের সহিত নহে। এ প্রসংগে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ।

واعتصموا بحبل الله جميئا ولا تفرقوا واذكروا نعمت الله عليكم اذ كنتم أعداء فألف بين قلوبكم فأصبحتم بنعمته اخوانا وكنتم على شفا حفرة من النار فأنقذكم منها كذلك يبين الله لكم ايته لعلكم تهتون. ولتكن منكم ا دعون إلى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر وأولئك هم المفلحون – ولا تكونوا كالذين تفرقوا واختلفوا من بعد ماجاهم البيت وأولئك لهم عذاب

(১.০-১. : ১৯c Jissw): “এবং তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর। তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তাঁহার অনুগ্রহে তোমরা

১৯৬

পরস্পর ভাই হইয়া গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ উহা হইতে তোমাদিগকে রক্ষা করিয়াছেন। এইরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁহার নিদর্শন স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাহাতে তোমরা সৎপথ পাইতে পার। তোমাদের মধ্যে এমন একদল হউক যাহারা কল্যাণের দিকে আহবান করিবে এবং সকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কার্যে নিষেধ করিবে। ইহারাই সফলকাম। তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসিবার পর বিচ্ছিন্ন হইয়াছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করিয়াছে। তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে” (সূরা

আল ইমরান : ১০৩-৫)।

বর্ণিত আয়াতে আল্লাহর রজ্জ্ব বলিতে কুরআন মজীদকে বুঝানো হইয়াছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেনঃ

كتاب الله هو حبل الله الممدود من السماء الى الأرض.

“কুরআন মজীদ হইল আল্লাহর রজ্জ্ব, যাহা আসমান হইতে জমিন পর্যন্ত প্রলম্বিত”।

হযরত যায়েদ ইবন আরকামের বর্ণনামতে, L, আল্লাহর রজ্জ্ব হইতেছে কুরআন (ইবন কাসীর)। কুরআন মজীদের মূল শিক্ষাই হইতেছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সুশৃংখল ঐক্য বন্ধন প্রতিষ্ঠা করা এবং পরস্পর বিভেদ সৃষ্টি না করা। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য তিনটি জিনিস পছন্দ করিয়াছেন : (১) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করিবে এবং তাঁহার সহিত কাহাকেও শরীক বা অংশীদার করিবে না। (২) তোমরা আল্লাহর কিতাব, কুরআনকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করিবে এবং অনৈক্য হইতে বাঁচিয়া থাকিবে। (৩) শাসনকর্তাদের প্রতি শুভেচ্ছা মনোভাব পোষণ করিবে।

ইসলামী রাষ্ট্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হইতেছে জাতির মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করা, সমাজে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা, ইনসাফ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, সর্বোপরি আল্লাহ পাকের স্বাভাবিক বিধান ইসলাম অনুযায়ী সম্ভাব্য বৃহত্তম সংখ্যক মানুষের নৈতিক ও সামাজিক জীবন যাপনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।

১৯৭

ধারা-৮৯৯

রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একজন প্রধান নির্বাহী খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান থাকিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একজন সর্বোচ্চ প্রশাসক বা প্রধান নির্বাহী অর্থাৎ খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান থাকিবেন। যেহেতু বংশভিত্তিক বা সাংস্কৃতিক কোন গোষ্ঠী বা গোত্র সত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণ ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নহে, বরং জাতির সামষ্টিক কর্ম পরিচালনার একটি ব্যবহারিক ব্যবস্থা হিসাবে ইসলামী বিধানের প্রতিষ্ঠাই ইহার কাম্য। বলা বাহুল্য সেই ব্যক্তির উপরই যিনি আইনের ঐশী উৎসে বিশ্বাসী, অর্থাৎ একজন মুসলমানের উপর রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বভার অর্পিত হইতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া যেমন ইসলামী বিধানমতে জীবন যাপন সম্ভব নহে, তেমনি কোন রাষ্ট্রকেই ইসলামী রাষ্ট্র বলা যায় না, যদি না তাহা এমন জাতি কর্তৃক পরিচালিত হয় যাহা ইসলামী আইনের নিকট স্বতঃ প্রবৃত্ত হইয়া আত্মসমর্পণ করিতে প্রস্তত। যে সকল দেশ সম্পূর্ণভাবে বা প্রায় সম্পূর্ণভাবে মুসলিম অধ্যুষিত, সে সকল দেশে ইসলামী নীতি বাস্তবায়নে কোন অসুবিধা নাই।

ধারা-৯০০

রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্যতা কোন ব্যক্তি- (ক) মুসলিম, (খ) বালেগ, (গ) বুদ্ধিমান, (ঘ) পুরুষ, (ঙ) দৈহিক ত্রুটিমুক্ত, (চ) সবল, স্বাস্থ্যবান ও সাহসী, (ছ) ন্যায়পরায়ণ এবং (জ) ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক হইলে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য গণ্য হইবেন।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তিকে ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হইতে হইলে তাহাকে অবশ্যই মুসলিম নাগরিক হইতে হইবে। এই বিষয়ে সকল মাযহাবের ফকীহগণ একমত। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

১৯৮

بها الذين امنوا أطيعوا الله وأطيعوا الرسول وأولي الأمر

منم ج فان تنازعتم فی شئی فردوه الى الله والرسول .

“হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আনিয়া থাক তাহা হইলে আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং যাহারা তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বের অধিকারী তাহাদের। কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ হইলে উহা পেশ কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট” (সূরা নিসা : ৫৯)।

ولن يجعل الله للكفرين على المؤمنين سبيلا .

“আর আল্লাহ কখনও মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফেরদের জন্য কোন পথ রাখিবেন “ (সূরা নিসা : ১৪১)।

প্রথমোক্ত আয়াতে বলা হইয়াছে যে, নাগরিকগণ ও শাসকের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হইলে তাহাদেরকে আল্লাহ ও রাসূল অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করিতে হইবে। শাসক বা শাসিত যদি কাফের হয় তাহা হইলে তাহারা কুরআন ও সুন্নাহ্র কাছে প্রত্যাবর্তন করিতে বাধ্য নহে, আইনবলেও তাহাদের বাধ্য করা যায় না। দ্বিতীয় আয়াতে পরিষ্কার ভাষায় বলিয়া দেওয়া হইয়াছে যে, মুসলমানদের উপর কাফেরদের নেতৃত্ব কখনও বৈধ নহে।

শাসকের বালেগ ও বুদ্ধিমান হওয়াও অপরিহার্য শর্ত। কারণ নাবালেগ ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তির পক্ষে কোন প্রকারেই সামগ্রিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন কাজ পরিচালনা করা সম্ভব নহে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

ولا تؤوا القهاء أموالكم التي جعل الله لكم قيما.

“তোমাদের সম্পদ, যাহা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করিয়াছেন তাহা নির্বোধদের হাতে অর্পণ করিও না” (সূরা নিসা : ৫)।

মহানবী (সা) বলেন :

تعوا بالله من رأس السبعين وامارة الصبيان (أحمد

(TY1/ “তোমরা আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর সত্তর বৎসরের বৃদ্ধ ও নাবালেগদের শাসন হইতে” (মুসনাদ আহমাদ, ২ খ, পৃ. ৩২৫, হাদীস নং ৮৩০২-৩, ৮৬৩৯, ৯৭৮২)।

১৯৯

রাষ্ট্রপ্রধানের বুদ্ধিমান হওয়ার অর্থ তাহাকে গভীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হইতে হইবে, যাহাতে তিনি দেশ ও জাতিকে সার্বিক কল্যাণের পথে পরিচালিত করিতে পারেন। তাহাকে উদ্ভূত সমস্যার মুজতাহিদ সুলভ সমাধান বাহির করার যোগ্যতা সম্পন্ন হইতে হইবে। যাহাতে তিনি স্বাধীনভাবে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে সমাধান নির্ণয়ে সক্ষম হন।

রাষ্ট্রপ্রধানের পুরুষ হওয়াও অপরিহার্য শর্ত। এই বিষয়ে সুন্নী ও শীআগণ একমত। এই পদটি অত্যন্ত গুরুদায়িত্বপূর্ণ বিধায় এবং অনেকগুলি বাস্তব ও যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে ইহা সাধারণভাবে পুরুষের জন্য সংরক্ষিত রাখা হইয়াছে। পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে?

الرجال قوامون على النساء بما فضل الله بعضهم على بعض.

“পুরুষগণ নারীগণের কর্তা, কারণ আল্লাহ তাহাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন” (সূরা নিসা : ৩৪)।

তবে ইসলামী রাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ ফকীহগণ (আহলুল হালু ওয়াল-আব্দ) কোন বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জাতির সার্বিক কল্যাণ বিবেচনা করিয়া উক্ত সর্বোচ্চ পদ নারীর উপর অর্পণ অনুমোদন করিতে পারেন। কারণ নারীর রাষ্ট্রপ্রধানের পদে অধিষ্ঠান চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ (হারাম) নহে। আল্লামা ইন হাযম (র) বলিয়াছেন যে, উক্ত পদে নারীর অধিষ্ঠান বৈধ। কারণ স্বৈরাচারী নীতি অবলম্বন করার ক্ষেত্রে নারীকে উক্ত পদ হইতে পুরুষের তুলনায় সহজে অপসারণ করা সম্ভব। এখানে উপমহাদেশের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় আলেমের অভিমত উল্লেখ করা হইল। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র) বলেন যে, হযরত বিলকিসের মুসলমান হওয়ার পর তাহার রাষ্ট্রাধিকার কাড়িয়া নেওয়ার কোন প্রমাণ নাই, বরং তাহার রাজ্য যে আগের মতই বহাল ছিল ইতিহাসে তাহার যথেষ্ট প্রমাণ রহিয়াছে। বিলকিসের রাজত্ব ও রাজ্যশাসন পদ্ধতির প্রতি কুরআনে কোনরূপ অবজ্ঞা বা অসমর্থন জ্ঞাপন করা হয় নাই। উসূলে ফিক্হ এর সুবিধিত বিধান এই যে, কুরআন বা হাদীসে যদি অতীতের কোন ঘটনা বা ব্যবস্থাকে কোনরূপ অবজ্ঞা বা অসমর্থন প্রকাশ না করিয়া বর্ণনা করা হয় তবে তাহা শরীআতে প্রমাণ হিসাবে গৃহীত হইতে পারে। সুতরাং কুরআনের বর্ণনা হইতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মহিলার নেতৃত্ব চলিতে পারে (ইমদাদুল ফাতাওয়া, তাতিন্ময়ে ছানিয়া, পৃ. ১৬৯-৭০-এর বরাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র, ২য় খণ্ড,

পৃ. ২৪০-১)।

২০০

মাওলানা সায়্যিদ সুলায়মান নদবী (র) বলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালনের জন্য ইসলাম যেসব শর্ত আরোপ করিয়াছে তাহা পালন করা কোন মহিলার পক্ষে দুঃসাধ্য। তাই নারী জাতিকে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু শুধু এই একমাত্র কারণে যদি কেহ মনে করেন যে, কোন অবস্থায়ই মহিলা মুসলমানদের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে পারে না তবে তাহা ভুল হইবে। কারণ যখন জাতি কোন ফেতনা-ফাসাদের সম্মুখীন হয় এবং সেই ফেতনা হইতে রক্ষা করিতে পারে এমন কোন ব্যক্তিত্ব জনগণের দৃষ্টিতে কোন মহিলা ব্যতীত আর না থাকে, তবে উক্ত মহিলাকেই জাতির নেতৃত্ব প্রদান করিতে হইবে (সীরাতে আয়েশা (রা), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১১৩-এর বরাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ …..। ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪১)।

মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী (র) বলেন যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া ইসলামী শিক্ষা ও ঐতিহ্যের খেলাফ নহে। দৈহিক জং, ৩ নভেম্বর, ১৯৬৪ খৃ.-এর বরাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ………,২য় খণ্ড, পৃ. ২৪১)।

“মাওলানা সায়্যিদ আবুল আলা মওদূদী (র) বলেন যে, এই কথাও মনে রাখিতে হইবে যে, ইসলামের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধানের পুরুষ হওয়া একটি শর্ত বটে, কিন্তু নারীর রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া ইসলামী শরীআতে সম্পূর্ণ হারাম—এমন হারাম যে, অত্যন্ত ও সাংঘাতিক প্রয়োজন দেখা দিলেও তাহা জায়েয হইবে না -এমন কথা কেহই বলিতে পারে না …….. এই কাজ যে চূড়ান্ত ও স্থায়ীভাবে হারাম-এই কথা প্রমাণ করার কোন দলীলই আমরা শরীআতে পাই নাই। ……. ইসলামে রাষ্ট্রপ্রধানের জন্যে কেবল পুরুষ হওয়াই কি একমাত্র শর্ত? ……. কোন এক বিশেষ সময়ে আমাদের সামনে যদি দুই ব্যক্তির মধ্যে একজনকে গ্রহণ করার প্রশ্ন দেখা দেয়, দুইজনের একজনকে অনিবার্যভাবে কবুল করিয়া নিতে হয়, আর তাহাদের একজনের মধ্যে কেবল “নারী হওয়া ব্যতীত অন্য কোন আপত্তিকর জিনিস না থাকে এবং অপরজনের মধ্যে কেবল “পুরুষ হওয়া ব্যতীত অন্য সব দিকই হয় মারাত্মকভাবে আপত্তিকর, তাহা হইলে ইসলামের জ্ঞানসম্পন্ন কোন ব্যক্তি কি আমাদেরকে নারীকে গ্রহণ না করিয়া সেই পুরুষকেই গ্রহণ করার কথা বলিতে পারে ……. (২৯ নভেম্বর, ১৯৬৪ সনে পল্টন ময়দানে প্রদত্ত বক্তৃতা হইতে-বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ………., ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪১-৪৩)?

রাষ্ট্রপ্রধানের দৈহিক ত্রুটিমুক্ত হওয়াও শর্ত। অন্ধ, খঞ্জ, মুক, বধির বা অনুরূপ দৈহিক ত্রুটিযুক্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য নহে। তবে ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিশক্তি,

২০১

রাতকানা রোগ এবং ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদ আস্বাদন শক্তির বিলুপ্তি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার

প্রতিবন্ধক নহে।

বােবা, খঞ্জ ও বধির ব্যক্তিও রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য নহে। তবে উক্ত পদে সমাসীন হওয়ার পর বাকশক্তিহীন, খঞ্জ ও বধির হইলে একদল বিশেষজ্ঞের মতে রাষ্ট্রপ্রধান তাহার পদ হইতে অপসারিত হইবেন। অপর দলের মতে তিনি ইশারা-ইংগিতে ও লিখিতভাবে কাজ চালাইতে সক্ষম হইলে উক্ত ত্ৰুটি তাহার

অপসারণের কারণ হইবে না।

এইরূপ দৈহিক ক্রটি যাহা মানুষের দৈহিক সৌন্দর্যে ঘাটতির কারণ হয় তাহা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার অন্তরায় নহে। যেমন সন্তান উৎপাদনে অক্ষম ব্যক্তি, কান বা নাক কর্তিত ব্যক্তি। এই ধরনের ত্রুটি লুকাইয়া রাখা যায় বা ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে দূরীভূত করা যায়। কুরআন মজীদে হযরত ইয়াহইয়া (আ) সম্পর্কে বলা হইয়াছে?

وسيا وحصورا با من الملحنين .

“এবং নেতা, হাসূর এবং পুণ্যবানদের মধ্যকার একজন নবী”।

(সূরা আল ইমরান ও ৩৯)। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস ও আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা) “হাসূর” শব্দের অর্থ করিয়াছেন জন্মগত নপুংসক, যে স্ত্রীসহবাস করিতে অক্ষম। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (র) উহার অর্থ করিয়াছেন, যাহার পুরুষাঙ্গ নাই অথবা আছে কিন্তু এত ক্ষুদ্র যে, তাহা দ্বারা সংগম করা সম্ভব নহে (আহকামুস সুলতানিয়্যা, পৃ.১৯)। সুতরাং এই ধরনের দৈহিক ত্রুটিযুক্ত ব্যক্তি নবী হইতে পারিলে অনুরূপ ক্রটিযুক্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ায় কোন বাধা নাই।

দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমের জন্য অপরিহার্য কোন অংগ না থাকিলে তাহা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার প্রতিবন্ধক হিসাবে গণ্য হইবে। যেমন হস্তদ্বয় বা পদদ্বয় কর্তিত ব্যক্তি। তবে এক হাত বা এক পাবিহীন ব্যক্তি কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে রাষ্ট্রপ্রধান হইতে পারেন।

রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য কোন ব্যক্তির সবল, স্বাস্থ্যবান ও সাহসী হওয়াও জরুরী। বহিশত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের চুক্তি সম্পাদন, জরুরী অবস্থার মোকাবিলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধানের সাহসিকতা, বীরত্ব, মনোবল ও দৈহিক শক্তি থাকা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ তালূত সম্পর্কে বলেন :

২০২

ان الله اصطف عليكم وزاده بسطة في العلم والجسم .

“আল্লাহই তাহাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করিয়াছেন এবং তিনি তাহাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করিয়াছেন” (সূরা বাকারা : ২৪৭)।

কোন ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী ও মুত্তাকী না হইলে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য নহেন। মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবমতে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য কোন ব্যক্তির ন্যায়পরায়ণ (আদেল) হওয়া শর্ত। তবে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি না পাওয়া গেলে ফাসেক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপ্রধান করা যাইতে পারে। মহান আল্লাহর বাণী :

ان الله يأمركم أن تؤدوا الأمنت الى أهلها .

“আমানত উহার যোগ্য ব্যক্তির নিকট অপর্ণ করিতে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিতেছেন” (সূরা নিসা : ৫৮)।

ان أكرمكم عند الله اتقكم.

তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাবান যে অধিক মুত্তাকী” (সূরা হুজুরাত : ১৩)।

অতএব ন্যায়পরায়ণ বলিতে উন্নত চরিত্রের অধিকারী, সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, দুর্নীতিমুক্ত, সংশয়মুক্ত, আত্মমর্যাদার অধিকারী, ক্রোধ ও অসন্তোষের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিকে বুঝায়। তাই পাপাচারী, দুর্নীতিবাজ, বিশ্বাসঘাতক, মিথ্যাবাদী ও দুশ্চরিত্রের লোক রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য নহে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

ولا تطع من أغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هوه وكان أمره فرطا .

“তুমি তাহার আনুগত্য করিও না যাহার অন্তরকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করিয়া দিয়াছি, যে তাহার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যাহার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে” (সূরা কাহফ : ২৮)।

মহানবী (সা) বলেন :

من وقرصاحب بدعة فقد أعان على هدم الاسلام .

“যে ব্যক্তি ইসলাম বিরোধী প্রথার ধারককে সম্মান করে সে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য সহায়তা করিল” (বায়হাকী)।

অবশ্য হানাফী মাযহাবের মতে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য কোন ব্যক্তির ন্যায়পরায়ণ (আদেল) হওয়া শর্ত নহে। অতএব ন্যায়পরায়ণ ও মুজতাহিদ ব্যক্তি বর্তমান থাকা স্বত্ত্বেও ফাসেক ও অন্ধ ব্যক্তির রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া বৈধ।

২০৩

দেশের নাগরিক ব্যতীত কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য নহে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

إن الذين أمنوا وهاجروا وجاهدوا بأموالهم وأنفسهم في سبيل الله والذين أووا ونصروا أولئك بعضهم أولياء بعض ط والذين اموا ولم يهاجروا ما لكم من ولا يتهم من شيئ حتى يهاجروا .

“যাহারা ঈমান আনিয়াছে, হিজরত করিয়াছে, স্বীয় জীবন ও সম্পদ দ্বারা জিহাদ করিয়াছে এবং যাহারা আশ্রয়দান করিয়াছে ও সাহায্য করিয়াছে তাহারা পরস্পর পরস্পরের অভিভাবক (ওয়ালী)। আর যাহারা ঈমান আনিয়াছে কিন্তু হিজরত করে নাই, হিজরত না করা পর্যন্ত তাহাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব তোমার নেই” (সূরা আনফাল : ৭২)।

মাওলানা সায়্যিদ আবুল আলা মওদূদী (র) তাঁহার ইসলামী রিয়াসাত (ইসলামী রাষ্ট্র) শীর্ষক গ্রন্থে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য উপরোক্ত শর্ত যোগ করিয়াছেন। অবশ্য আধুনিক রাজনীতি বিজ্ঞানে এবং যে কোন দেশের সংবিধানে কোন ব্যক্তির রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য তাহার সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক হওয়া অপরিহার্য শর্ত। এমনকি কোন দেশের রাজনৈতিক দলে ভিন্ন দেশের নাগরিকের অংশগ্রহণও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ধারা-৯০১ রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ বাধ্যতামূলক রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী পরিচালনার জন্য একজন রাষ্ট্রপ্রধান থাকিবেন, ইহা বাধ্যতামূলক।

বিশ্লেষণ

উম্মাতকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এবং তাহাদের সামগ্রিক কার্যাবলী সুষ্ঠভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য একজন ন্যায়পরায়ণ আমীর থাকা অপরিহার্য। এই বিষয়ে উম্মাতের ফকীহগণ একমত। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

ايها الذين آمنوا أطيعوا الله وأطيعوا الرسول وأولي

২০৪

উপরোক্ত আয়াতে (অনুবাদ ইতিপূর্বে উল্লেখিত) আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কর্তৃত্বের অধিকারী (আমীর) ব্যক্তির আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়াছেন। অতএব ইহাতে প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম রাষ্ট্রের একজন আমীর থাকা অপরিহার্য।

ولو ردوه الى الرسول والى أولى الأمر منهم .

“যদি তাহারা বিষয়টি রাসূল কিংবা তাহাদের মধ্যে কর্তৃত্বের অধিকারী ব্যক্তির গোচরে আনিত” (সূরা নিসা : ৮৩)।

উপরোক্ত আয়াত হইতেও প্রমাণিত হয় যে, মুসলমানদের একজন আমীর থাকা বাঞ্ছনীয়। মহানবী (সা) বলেনঃ

سليم بعدى وة فيلم البربرة ويليم الفاجر بفجوره فاسمعوا لهم وأطيعوا في كل ما وافق الحق قان أحسوا قلم ولهم وان أساء وا لكم وعليهم .

“আমার পরে তোমাদের জন্য প্রশাসক (হাকীম) নিয়োগ করা হইবে …. তোমরা তাহাদের প্রতিটি ন্যায়সংগত আদেশ পালন করিবে। সে যদি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর কাজ করে তবে উহার উপকারিতা সে এবং তোমরা সকলে লাভ করিবে এবং সে ক্ষতিকর কাজ করিলে উহার প্রতিফল সেই ভোগ করিবে।৫।

উপরোক্ত হাদীস হইতেও প্রমাণিত হয় যে, একজন আমীর নিয়োগ করা অপরিহার্য এবং তাহার প্রতিটি ন্যায়সংগত আদেশ মান্য করা জরুরী। এমনকি জনসংখ্যা তিনজন হইলেও তাহাদের মধ্যে একজনকে তাহাদের নেতা নির্বাচন করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন।

اذا خرج ثلاثة في سقر قليؤمروا أحدهم .

“তিন ব্যক্তি ভ্রমণে বহির্গত হইলে তাহারা যেন তাহাদের একজনকে আমীর নিয়োগ করে” (আবু দাউদ)। অপর হাদীসে মহানবী (সা) বলেন : “কোন বনভূমিতে তিন ব্যক্তি একত্রে অবস্থান করিলে তাহাদের মধ্য হইতে একজনকে তাহাদের নেতা নির্বাচন করা তাহাদের কতব্য” (মুসনাদে আহমাদ)।

ان أمر عليكم عبد مجدع (وفي رواية عبد حبشي كان رأسه

بيبة) يقوم بكتاب الله فاسمعوا له وأطيعوا .

“থেবড়া নাকবিশিষ্ট (অপর বর্ণনায় আছে ও আঙ্গুর ফলের ন্যায় মস্তকবিশিষ্ট হাবশী) গোলামকেও যদি তোমাদের নেতা নির্বাচিত করা হয় এবং সে আল্লাহর

২০৫

কিতাব অনুসারে তোমাদের শাসনকার্য পরিচালনা করে তবে তোমরা তাহার কথা শশান এবং আনুগত্য কর” (মুসলিম, হজ্জ, বাব ৫১, হাদীস ৩১৩৮; তিরমিযী, জিহাদ, বাব ২৮, হাদীস ১৭০৬; ইবন মাজা, জিহাদ, বাব ৩৯, হাদীস ২৮৬০-৬২)।

সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর কার্যক্রম হইতে একজন আমীর নিয়োগ অপরিহার্য হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। তাঁহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মৃত্যুর পরপরই তাহাদের একজন খলীফা নির্বাচনের জন্য সাকীফায়ে (সম্মেলনগৃহ) বানূ সাইদায় সমবেত হন এবং হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা)-কে তাহাদের নেতা (খলীফা) নির্বাচিত করেন। অনুপস্থিত সাহাবীগণও পরে তাহার নিয়োগ সমর্থন করেন। তাহাদের মধ্যে কেহই বলেন নাই যে, খলীফা নিয়োগের কোন প্রয়োজন নাই।

বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক ইবন খালদূন মত প্রকাশ করিয়াছেন, মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করিতে অভ্যস্ত। তাহাদের মধ্যে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য এবং তাহাদেরকে জুলুম-অত্যাচার হইতে রক্ষার জন্য তাহাদের মধ্য হইতে একজন নেতা নির্বাচন একান্ত অপরিহার্য।

“অতএব এই কথা যখন স্থির হইল যে, খলীফার পদে (কাহাকেও) সমাসীন করা ওয়াজিব, তখন তাহা ফরজে কিফায়া পর্যায়ের কাজ এবং তাহা সম্পাদনের ভার। আহলুল হালু ওয়াল- আ-এর উপর বর্তায়। এই কাজ সম্পন করা তাহাদেরই দায়িত্ব এবং তাহাদের আনুগত্য করা জনগণের কর্তব্য।

অতএব কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবীগণের ইজমা ও বুদ্ধিবৃত্তির আলোকে জাতির সর্বোচ্চ নেতৃত্বে একজনকে সমাসীন করা একান্ত প্রয়োজনীয় প্রমাণিত হয়। আল্লামা আল-মাওয়ারদী লিখিয়াছেন যে, কোন ব্যক্তিকে আমীর নিয়োগ না করা হইলে উম্মাতের শিক্ষিত, নেতৃস্থানীয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ গুনাহগার সাব্যস্ত হইবেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার পরে কে খলীফা হইবে তাহা এইজন্য নিয়োগ করিয়া যান নাই যে, তিনি যদি তাহা করিতেন তবে উক্ত খলীফার আদেশ-নিষেধ মানা করা মুসলমানদের জন্য তাঁহার আদেশ-নিষেধ মান্য করার মতই অপরিহার্য হইয়া যাইত এবং তাহা লংঘন করা মারাত্মক পাপের কারণ হইত। এই প্রসঙ্গে মহানবী (সা)-এর বাণী :

عن حذيفة قال قالوا يارسول الله لو استخلفت قال إن

.22.21. ali 

২০৬

“হুযায়ফা (রা) বলেন, সাহাবীগণ বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যদি কাহাকেও খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) নিয়োগ করিয়া যাইতেন! তিনি বলেন : আমি কাহাকেও তোমাদের খলীফা নিয়োগ করিলে এবং তোমরা তাহার অবাধ্যাচারী হইলে তোমাদেরকে শাস্তি দেওয়া হইবে।”৮

ধারা-৯০২

বংশ বা গোত্রের পক্ষপাতমুক্ত শাসন (ক) খেলাফতের জন্য কোন সম্রান্ত গোত্র বা পরিবারের সদস্য হওয়া জরুরী নহে।

(খ) দেশের বিশেষ কোন পরিবার বা গোত্রের জন্য শাসন ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

খেলাফতের জন্য কুরাইশী হওয়ার শর্ত সম্পর্কে হাদীস যাহা উল্লেখিত হইয়াছে ইমাম আবু হানীফা (র) সে সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করিয়া বলিয়াছেন যে, খলীফাকে যে কুরাইশ বংশীয় হইতে হইবে ইহা কেবল তাহার একার মত নহে, বরং সকল আহলুস সুন্নাহর সর্বসম্মত অভিমত (কিতাবুল মিলাল, ১খ, পৃ. ১০৬)। ইহার কারণ কেবল ইহাই নহে যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামী খেলাফত কেবল একটি গোত্রের শাসনতান্ত্রিক অধিকার, বরং ইহার আসল কারণ ছিল সে সময়ের পরিস্থিতি, যে পরিস্থিতিতে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ রাখিবার জন্য খলীফার কুরাইশী হওয়া জরুরী ছিল। ইবন খালদূন এই কথা অত্যন্ত স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন যে, তখন ইসলামী রাষ্ট্রের মূল রক্ষাকবচ ছিল আরব। আর আরবদের সর্বাধিক ঐক্য নির্ভরশীল ছিল কুরাইশদের নেতৃত্বের উপর। অপর গোত্রের লোককে গ্রহণ করিলে বিরোধ এবং অনৈক্যের আশংকা এতটা প্রকট ছিল যে, খেলাফত ব্যবস্থাকে এ আশংকার মুখে ঠেলিয়া দেওয়া সমীচীন ছিল না (আল-মুকাদ্দিমা, ১৯৫-৬)।

এই কারণে রাসূলুল্লাহ (সা) নির্দেশ জারী করিয়াছিলেন যে, “ইমাম হইবে কুরাইশদের মধ্যে হইতে” (ফাতহুল বারী, ১৩ খ, পৃ. ৯৩, ৯৬, ৯৭)।

অন্যথায় এই পদ অকুরাইশদের জন্য নিষিদ্ধ হইলে হযরত উমার তাহার ওফাতকালে বলিতেন না যে, হােযাইফার মুক্তদাস “সালো” জীবিত থাকিলে আমি তাহাকে আমার স্থলাভিষিক্ত করিবার প্রস্তাব করিতাম। রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেও

২০৭

কুরাইশের মধ্যে খেলাফত রাখিবার হেদায়াত দিতে গিয়া একথা স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন যে, যত দিন তাহাদের মধ্যে কতিপয় বিশেষ গুণাবলী বিদ্যমান থাকিবে তত দিন তাহাদের জন্য এ পদ নির্দিষ্ট থাকিবে” (ফাতহুল বারী, ১৩ খ, পৃ. ৯৫)। ইহা হইতেই প্রমাণিত হয় যে, সেই সকল গুণাবলীর অবর্তমানে অকুরাইশীর জন্য খেলাফত হইতে পারে।

ইমাম আবু হানীফা (র) এবং সকল আহলুস সুন্নাহর পথ এবং খারিজী ও মুতাযিলার মতের মধ্যে ইহাই হইতেছে মূল পার্থক্য। যাহারা অকুরাইশী জন্য অবাধ খেলাফতের বৈধতা প্রমাণ করে, বরং এক কদম অগ্রসর হইয়া অকুরাইশীকে খেলাফতের অধিক হকদার প্রতিপন্ন করে তাহাদের দৃষ্টিতে আসল গুরুত্ব ছিল গণতন্ত্রের, তাহার পরিণতি বিচ্ছেদ ও অনৈক্যই হউক না কেন। কিন্তু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামায়াত গণতন্ত্রের সহিত সে সময়কার রাষ্ট্রের স্থিতি ও সংহতির কথাও চিন্তা করিত।

রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা বিশেষ কোন বংশ বা গোত্রের জন্য নির্দিষ্ট নহে বরং যাহারা যোগ্য কেবল তাহারাই শাসন ক্ষমতা লাভের অধিকারী। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ওফাতের পরে আরবের গোত্রবাদ মাথাচাড়া দিয়া উঠিয়াছিল। তাহাদের গোত্রবাদ এইভাবে উখিত হইয়াছিল যে, মোসায়লামার জনৈক ভক্তের উক্তি ছিল, আমি জানি মোসায়লামা মিথ্যাবাদী, কিন্তু “রাবীআর মিথ্যাবাদী মুদারের” সত্যবাদীর চেয়েও উত্তম (তাবারী, ২খ, ৫০৮)। বনু গাতাফানের জনৈক সর্দার বলে, আল্লাহর কসম, কুরাইশের নবীর অনুসরণ করা হইতে আমাদের বন্ধু গোত্রের নবীর অনুসরণ আমার নিকট অধিক প্রিয় (ঐ, পৃ. ৪৮৭)।

মদীনায় যখন হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা)-এর হাতে বায়আত অনুষ্ঠিত হয় তখন গোত্রবাদের ভিত্তিতে হযরত সাদ ইবনে উবাদা (রা) তাহার খেলাফত স্বীকার করা হইতে বিরত ছিলেন। এমনিভাবে গোত্রবাদের ভিত্তিতেই হযরত আবু সুফিয়ান তাহার খেলাফত পছন্দ করেন নাই। তিনি হযরত আলী (র)-এর নিকট গিয়া বলিয়াছিলেন, কুরাইশদের সবচেয়ে ছােট গোত্রের লোক কিভাবে খলীফা হইয়া গেল? আপনি নিজেকে খলীফা হিসাবে প্রস্তুতি নিলে আমি পদাতিক এবং অশ্বারোহী বাহিনী দ্বারা সমগ্র উপত্যকা ভরিয়া ফেলিব। উত্তরে হযরত আলী (রা) বলিয়াছিলেন, তোমার এই কথা ইসলাম ও মুসলমানদের সহিত শত্রুতা প্রমাণ করে। তুমি কোন পদাতিক বা অশ্বারোহী বাহিনী আন আমি তাহা কখনই চাই না। মুসলমানরা পরস্পরের কল্যাণকামী। তাহারা একে অপরকে ভালবাসে, তাহাদের আবাস ও

২০৮

দৈহিক সত্তার মধ্যে যতই ব্যবধান থাকুক না কেন। অবশ্য মুনাফিক একে অন্যের সহিত সম্পর্ক ছিন্নকারী। আমরা আবু বাক্রকে এ পদের যোগ্য মনে করি। তিনি এ পদের যোগ্য না হইলে আমরা কখনও তাহাকে এই পদে নির্বাচিত করিতাম না (কানযুল উম্মাল, ৫খ, হাদীস ২৩৭৪; তাবারী, ২খ, ৪৪৯)।

এমনি এক পরিবেশে হযরত আবু বাকর ও হযরত উমার (র) পক্ষপাতমুক্ত এবং ইনসাফপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে কেবল আরবের বিভিন্ন গোত্র নহে, বরং অনারব নওমুসলিমদের সহিতও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করেন এবং আপন বংশ-গোত্রের সহিত কোন প্রকার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ হইতে তাহারা সম্পূর্ণ বিরত থাকেন। ইহার ফলে সকল প্রকারের বংশ ও গোত্রবাদ বিলীন হইয়া যায়। হযরত আবু বাকর (রা) তাহার খেলাফতকালে আপন গোত্রের কোন লোককে কোন সরকারী পদে নিয়োগ দেন নাই। হযরত উমার (রা) তাহার সমগ্র শাসনকালে তাহার গোত্রের নোমান ইবন আদী নামক একজন মাত্র ব্যক্তিকে বসরার নিকটে মায়দান নামক এক ক্ষুদ্র এলাকার তহশিলদার নিযুক্ত করিয়াছিলেন। কিছু দিন পরই আবার এই পদ হইতে তাহাকে বরখাস্ত করিয়াছিলেন (ইসতীআব, ১খ, ২৯৬)।

হযরত উমার (রা) জীবনের শেষ অধ্যায়ে আশংকা বােধ করিলেন যে, তাহার পরে আরবের গোত্রবাদ পুনরায় যেন মাথাচড়া দিয়া না উঠে যাহার ফলে ইসলামের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি না হয়। একদা তাহার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীদের সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা)-কে হযরত উসমান (রা)-এর সম্পর্কে বলিলেনঃ আমি তাহাকে আমার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচিত করিলে তিনি বনী আবু মুয়াইতকে লোকদের ঘাড়ে চাপাইয়া দিবেন। আর তাহারা লোকদের মধ্যে আল্লাহর নাফরমানী করিয়া বেড়াইবে। আল্লাহর কসম! আমি উসমানকে স্থলাভিষিক্ত করিলে সে তাহাই করিবে। আর উসমান তাহাই করিলে তাহারা অবশ্যই পাপাচার করিবে। এক্ষেত্রে জনগণ বিদ্রোহ করিয়া তাহাকে হত্যা করিবে (ইসতীআব, ২ খ, ৪৬৭)।

ওফাতকালে এ বিষয়টি তাহার স্মরণ ছিল, শেষ সময়ে তিনি হযরত আলী (রা) হযরত উসমান (রা) ও হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা)-এর প্রত্যেককে ডাকিয়া বলিলেন, “আমার পরে তোমরা খলীফা নির্বাচিত হইলে স্ব স্ব গোত্রের লোকদের জনগণের উপর চাপাইয়া দিবে না” (তাবারী, ৩খ, ২৬৪; তাবাকাত ইন সাদ, ৩খ, ৩৪০-৪)। হযরত উসমান (রা)-এর শাসনকালে অবশ্য ইহার কিছু ব্যতিক্রমও ঘটিয়াছিল। তবে উসমান (রা.)-এর পরিণতি সন্তোষজনক হয় নাই।

২০৯

ধারা-৯০৩

রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন নিম্নোক্ত যে কোন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হইবেন (ক) মুসলিম জনগণের গরিষ্ঠ সংখ্যকের সমর্থনের দ্বারা; অথবা

(খ) মজলিসে শূরার মুসলিম সদস্যগণের গরিষ্ঠ সংখ্যকের সমর্থনের দ্বারা।

বিশ্লেষণ

দুইটি পন্থার যে কোন একটি পন্থায় রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করা যাইতে পারে। মুসলিম জনগণের অথবা শূরার সমর্থনের দ্বারা। বর্তমান কালে প্রচলিত নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে (ভোট প্রদানের দ্বারা) এই সমর্থন লাভ করা যাইতে পারে। ইহা বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রপতিক সরকারের ক্ষেত্রে গৃহীত ও প্রচলিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দেশের সকল যোগ্য ভোটারদের দ্বারা সরাসরি রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন। অথবা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত শূরার সদস্যগণের ভোট গ্রহণের মাধ্যমেও এই সমর্থন লাভ করা যাইতে পারে। এই পদ্ধতিকে বর্তমান বিশ্বে সংসদীয় পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে সংসদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। শরীআতে উভয় পদ্ধতির সমর্থনে দলীল বিদ্যমান আছে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :

وأمرهم شورى بينهم .

“তাহাদের যাবতীয় ব্যাপার পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়” (সূরা শূরা : ৩৮)।

উপরোক্ত আয়াত হইতে পরিষ্কার জানা যায় যে, মুসলমানদের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও জাতীয় বিষয় তাহাদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন করিতে হইবে। আর রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়।

খােলাফায়ে রাশেদার নির্বাচন পদ্ধতি হইতেও ইহার সমর্থন পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তিকে খলীফা নির্বাচন করিয়া যান নাই, বরং তিনি বিষয়টি মুসলিম জনগণের উপর ছাড়িয়া দিয়াছেন। তাহার ইন্তিকালের পর মুসলমানগণ আবূ বাকর সিদ্দীক (রা)-কে তাহাদের খলীফা নিয়োগ করেন।

২১০

 প্রথমে প্রবীণ সাহাবীগণ তাঁহাকে খলীফা নির্বাচন করেন, অতঃপর জনগণ এই নির্বাচনে তৎকালে প্রচলিত পদ্ধতি মোতাবেক বায়আত গ্রহণের মাধ্যমে তাহাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। অতঃপর তিনি খলীফা হিসাবে বরিত হন। মহানবী (সা)-এর পরে আবু বা (রা)-এর খলীফা হওয়ার ব্যাপারে তাঁহার আগ্রহের প্রমাণ পাওয়া যায়। বুখারীতে উল্লেখ আছে যে, তিনি আবু বা সিদ্দীক (রা)-কে খলীফা নিয়োগের ইচ্ছা পোষণ করিয়াও তাহা প্রকাশ্যভাবে ব্যক্ত করিয়া যান নাই এবং বিষয়টি মুসলিম জনতার উপর ছাড়িয়া দেন। তিনি বলেনঃ

T

‘.

,

القذهممت أو اردت أن أرسل إلى أبي بكر وابنه فاعه أن يقول القائلون أو يتمى المتون ثم قلت يابي الله ويدفع المؤمنون أو يدفع الله ويابى المؤمنون .

“আমি আবু বা ও তাহার পুত্রকে ডাকার এবং তাহার পক্ষে প্রতিশ্রুতি গ্রহণের ইচ্ছা করিয়াছি। যাহাতে আপত্তিকারীরা আপত্তি করিতে বা আকাঙখা পোষণকারীরা (খলীফা হওয়ার) আকাঙ্খ পোষণের সুযোগ না পায়। অতঃপর আমি চিন্তা করিলাম যে, আল্লাহ সব রুখিবেন এবং মুসলমানরা প্রতিরোধ করিবে অথবা আল্লাহ প্রতিরোধ করিবেন এবং মুসলমানরা রুখিয়া দাঁড়াইবে।”৮

উপরোক্ত হাদীসের “আল-মুমিনূন (মুমিনগণ) শব্দের দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, খলীফা নির্বাচনের কাজ মুমিন মুসলমানদের স্বাধীন ইচ্ছা ও মতের ভিত্তিতে সম্পন্ন হইবে এবং ইসলামে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ইহাই উত্তম, উন্নত ও আম্‌দর্শ পদ্ধতি।

হযরত উমার (রা) বলেন :

من دعا الى امارة نفسه أو غيره من غير منشورة من المسلمين

فلا يحل لكم أن تؤتوا .

“মুসলমানদের পরামর্শ ব্যতীত যে ব্যক্তি তাহার নিজের অথবা অন্য কাহারও নেতৃত্বের প্রতি আহবান জানায় তাহাকে হত্যা না করা তোমাদের জন্য বৈধ নহে।”১০।

উমার ফারূক (রা)-র কথার তাৎপর্য এই যে, রাষ্ট্রপ্রধানের পদ কোন ব্যক্তির জোরপূর্বক দখল করার তাৎপরতা একটি মারাত্মক অপরাধ, তাহা বরদাশত করা উম্মাতের উচিৎ নহে।

২১১

আল্লামা ইমাম ইবন তায়মিয়া (র)-র অভিমত হইতেও এই পদ্ধতির সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলেনঃ

الامامة لاتثبت الابمبايعة الناس له لا بعهد السابق له .

“রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন সম্পন্ন হয় জনগণের বায়আতের ভিত্তিতে জনসমর্থনের মাধ্যমে, পূর্ববর্তী খলীফার মনোনয়নের ভিত্তিতে নহে।”১১

হাম্বলী মাযহাবের ফকীহ ইবন কুদামা (র) উক্ত মাযহাবের অভিম এইভাবে তুলিয়া ধরিয়াছেন :

“ من اتفق المسلمون على إمامته وبيعته تثبت أمامته ووجبت

• 5$ “যে ব্যক্তির নেতৃত্ব সম্পর্কে মুসলমানগণের মতৈক্য হইবে এবং যাহার হাতে বায়আত হইবে তাহার রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া স্বীকৃত হইবে এবং তাহার সহযোগিতা করা

অপরিহার্য হইবে।”১২

অতএব খােলাফায়ে রাশেদীনের সকলেই প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হইয়াছিলেন- যেই পদ্ধতির প্রত্যক্ষ নির্বাচন তখনকার আমলে ও তদান্তনীন্তন ভৌগোলিক পরিবেশ ও যোগাযোগের অবস্থার দিক দিয়া সম্ভবপর ছিল।১৩

হযরত আলী (রা)-এর নির্বাচন হইতেও জনগণের সমর্থন লাভের প্রমাণ পাওয়া যায়। হযরত উসমান (রা)-এর শাহাদাতের পর একদল সাহাবী তাঁহার বাড়ীতে উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে খলীফার পদ গ্রহণের প্রস্তান প্রদান করেন। তিনি তাহাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিলে তাহারা তাহাকে এই পদ গ্রহণের জন্য পীড়াপীড়ি করিলে তিনি বলেনঃ

فان بيعتى لا تكون خفيفا ولا تكون الا عن رضا من المسلمين

“আমার বায়আত গোপনে হইতে পারে না এবং মুসলমানদের সম্মতি ব্যতীত তাহা অনুষ্ঠিত হইতে পারে না” (তাহাবী, ২খ, পৃ. ১১২, মাতবাআ আল-ইস্তিকামা, মিসর)।

অতঃপর তিনি মসজিদে নব্বীতে যান এবং তথায় প্রবীণ সাহাবী ও জনগণের উপস্থিতিতে তাঁহার বায়আত অনুষ্ঠিত হয়।

২১২

হযরত উমার (রা) ও হযরত উসমান (রা)-এর খলীফা হিসাবে নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হইতে দ্বিতীয় পদ্ধতির সমর্থন পাওয়া যায়। আবু বা সিদ্দীক (রা) তাঁহার জীবদ্দশায় পৃথক পৃথকভাবে প্রবীণ সাহাবীগণের সহিত পরামর্শ করিয়া তাহাদের মত যাচাই করার পর হযরত উমার (রা)-কে পরবর্তী খলীফা মনোনয়ন করেন। তিনি নিজ বাড়ির সামনে জনগণকে সমবেত করিয়া বলেন :

اترضون بمن استخلف عليكم فاني والله ما الوت من جهدي الرأي ولا وليت ذاقرابة وانی اسخلف عمر بن الخطاب فاسمعوا له واطيعوا قالوا سمعنا وأطعنا .

“আমি যাহাকে আমার স্থলাভিষিক্ত করিব তাহাকে কি তোমরা সমর্থন করিবে? আল্লাহর শপথ! আমি যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করিয়া মত গঠন করিতে মোটেই অলসতা করি নাই এবং আমার কোন নিকটাত্মীয়কেও স্থলাভিষিক্ত করি নাই। আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-কে আমার স্থলাভিষিক্ত করিয়াছি। অতএব তোমরা তাহার নির্দেশ শোন এবং আনুগত্য কর। তাহারা সমস্বরে বলিল, আমরা শুনিলাম ও আনুগত্য করিলাম” (তাহাবী, ২খ, পৃ. ৬১৮)।

* উমার (রা) তাঁহার পরবর্তী খলীফা নিয়োগের জন্য ছয়জন প্রবীণ সাহাবীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করিয়া দেন। তাঁহারা সকলে পরামর্শক্রমে একজন খলীফা বাছাই করার ভার কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুর রহমান ইব্‌ন আওফ (রা)-র উপর ন্যস্ত করেন। তিনি এমনকি অন্দর মহলে নারীগণেরও মতামত সংগ্রহ করেন এবং উছমান ও আলী (রা)-এর পক্ষে সমর্থ পান। তবে উসমান (রা)-এর প্রতি সমর্থন ছিল কিছুটা বেশী। তিনি কমিটির সহিত পরামর্শক্রমে উসমান (রা)-কে খলীফা হিসাবে ঘোষণা করেন এবং জনতা তাঁহার নিকট বায়আত গ্রহণ করেন। উমার ফারুক (রা) কমিটিকে এই কথাও বলিয়াছিলেন?

من تامر منكم على غير مشورة المسلمين فاضربوا عنقه .

“আপনাদের মধ্যে যে কেহ মুসলমানদের সহিত পরামর্শ ব্যতীত আমীর বনিবে তাহার ঘাড় উড়াইয়া দিন” (মুহাম্মদ হুসায়ন হায়কাল, আল-ফারূক উমার, ২ খ, পৃ. ৩১৩)।

বর্তমান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুইভাবে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হইয়া থাকেন। গণভোটের মাধ্যমে অথবা সংসদ সদস্যগণের সমর্থনের মাধ্যমে। তবে শেষোক্ত পদ্ধতিতে একজন হন রাষ্ট্রপ্রধান এবং তিনি একজন প্রধান মন্ত্রী নিয়োগ করেন যিনি

২১৩

হন সরকার প্রধান। কিন্তু ইসলামী শরীআ এই দ্বৈত নেতৃত্ব সমর্থন করে না। এখানে যিনি রাষ্ট্রপ্রধান হইবেন তিনিই সরকার প্রধানও হইবেন। অবশ্য তিনি তাহার কার্যভার লাঘবের জন্য বিভিন্ন স্তরে তাঁহারা প্রতিনিধি নিয়োগ করিতে পারেন।

কোন ব্যক্তির রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য জনগণের সকলের অথবা শূরার সদস্যগণের সকলের সমর্থন প্রয়োজন হইবে কি? এই বিষয়ে ফকীহগণ ভিন্নমত পোষণ করিয়াছেন। তবে মালিকী ও হাম্বলী মাযহাবের মত সর্বাধিক যুক্তিসংগত। উক্ত মাযহাবদ্বয়ের মতানুযায়ী জনগণের অথবা শূরার সদস্যগণের গরিষ্ঠ সংখ্যকের সমর্থন রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগের জন্য প্রয়োজন। শাফিঈ মাযহাব মতে দেশের সমস্ত শহরে ছড়াইয়া থাকা আহলুল হালু ওয়াল-আ-এর একমত হওয়া জরুরী নহে। উক্ত মাযহাবের এই মত হইতে ও পূর্বোক্ত মাযহাবদ্বয়ের মত হইতে আরও প্রমাণিত হয় যে, কোন দেশে প্রাদেশিক ভিত্তিতে একাধিক গভর্ণর এবং কেন্দ্রীয় শূরার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যগণের সমর্থনে কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হইতে পারেন।

ধারা—৯০৪

রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আনুগত্য রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।

তবে শর্ত থাকে যে, তিনি শরীআত বিরোধী কোন নির্দেশ দিবেন না এবং তিনি যে নির্দেশ দেন তাহা তর্কাতীত না হইলে উহা শরীআত সম্মত কিনা তাহা মজলিসে শূরা নির্ধারণ করিবে।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্য করা সকল নাগরিকের কর্তব্য। এই বিষয়ে কুরআন মজীদে নির্দেশ বিদ্যমান।

يأيها الذين آمنوا أطيعوا الله و أطيعوا الرسول وأولي الأمر

ܩܢܽܠܳܥܺ.

“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃত্বের অধিকারীগণেরও” (সূরা নিসা : ৫৯; আরও দ্র. ৮৩ নং আয়াত)।১৪

২১৪

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ

إن أمر عليگم عبد مجع (وفي رواية عبد حبشى كأن رأسه

بيبة) يقوم بكتاب الله فاستمعوا له وأطيعوا .

‘কোন নাক বোঁচা গোলামকেও (অপর বর্ণনায় আছে ও আঙ্গুর ফলের ন্যায় ক্ষুদ্র মস্তকবিশিষ্ট কোন হাবশী গোলামকেও) তোমাদের আমীর করা হইলে এবং সে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক তোমাদের পরিচালনা করিলে তোমরা তাহার কথা শোন এবং আনুগত্য কর।” ১৫

السمع والطاعة على المرء المسلم فيما أحب وكره مالم

يؤمر بمعصية فاذا أمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة .

, “শাসকের নির্দেশ মনঃপূত হউক বা না হউক তাহা শ্রবণ ও মান্য করা মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাপকাজের নির্দেশ প্রদান করা হয়। অতএব কোন পাপ কাজের নির্দেশ প্রদান করা হইলে সেই ক্ষেত্রে শ্রবণও নাই, আনুগত্যও

নাই।”১৭

طاعة في مضية اما الطاعة في المعروف .

“পাপকাজে কোন আনুগত্য নাই, আনুগত্য কেবল নেক কাজে।”১৮,

علب بالسمع والطاعة فى سرك ويسرك ومنشطك ومكرهك

. 1. ১৯, “কষ্ট-কাঠিন্য, সুখ-দুঃখ, পছন্দ-অপছন্দ সর্বাবস্থায় ইমামের নির্দেশ শ্রবণ ও মান্য করা তোমার কর্তব্য।”১৯

– • +

من أطاعني فقد أطاع الله ومن عصاني فقد عصى الله ومن

أطاع الامام فقد أطاعني ومن عصى الأمام فقد عصاني .

“যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করিল সে আল্লাহ্রই আনুগত্য করিল। যে আমার অবাধ্যাচরণ করিল সে আল্লাহরই অবাধ্যাচরণ করিল। যে নেতার আনুগত্য করিল সে আমার আনুগত্য করিল এবং যে নেতার অবাধ্যাচরণ করিল সে আমারই অবাধ্যাচরণ করিল।”২০

باينا رسول الله صلي الله عليه وسلم على السمع والطاعة

فقال فيما استطعم.

২১৫

“আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট (নেতৃনির্দেশ) শ্ৰবণ ও আনুগত্যের শপথ করিয়াছি। তিনি বলেন, যতটা তোমাদের সামর্থে কুলায়।”২১ :

উপরোক্ত হাদীসে নিম্নোক্ত আয়াতের দিকে ইংগিত করা হইয়াছে?

لا يكلف الله نفسا الا وسعها .

“আল্লাহ কাহারও উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যাহা তাহার সাধ্যাতীত” (সূরা বাকারা :২৮৬; আরও দ্র.২৩৩ নং আয়াত; আনআম : ১৫২; আরাফ : ৪২; আল-মুমিনূন : ৬২)।…

আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একটি যুদ্ধাভিযানে আলকামা ইন মুজাযিয (রা)-কে অধিনায়ক নিয়োগ করেন। আমিও উক্ত বাহিনীতে শরীক ছিলাম। ……. কিছু লোক আগুন প্রজ্জলিত করিল। অধিনায়ক বলিলেন, আমার আনুগত্য করা কি তোমাদের কর্তব্য নয়? তাহারা বলিল, হাঁ। তিনি বলিলেন, তাহা হইলে তোমরা এই আগুনের মধ্যে ঝাপাইয়া পড়। তাহারা আগুনে ঝাপাইয়া পড়িতে প্রস্তুত হইলে তিনি তাহাদের বিরত রাখেন এবং বলেন, আমি তোমাদের সহিত রসিকতা করিয়াছি। তাহারা ফিরিয়া আসিয়া মহানবী (সা)-এর নিকট ইহা বর্ণনা করিলে তিনি বলেন : কোন অধিনায়ক তোমাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করিতে নির্দেশ দিলে তোমরা তাহার সেই নির্দেশ মানিবে না।২২

হযরত আবু বাকর (রা) খলীফার দায়িত্বভার গ্রহণের পর তাঁহার প্রথম ভাষণে বলেনঃ

أطيعونی ماطغت الله ورسوله اذا عصيت الله ورسوله فلا

طاعة لني عليكم . وفي رواية وإن عصيت الله اغصونی .

“আমি যতক্ষণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করি আপনারা ততক্ষণ আমার আনুগত্য করিবেন। আমি যখনই আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের অবাধ্যাচরণ করিব তখন আমার আনুগত্য করা আপনাদের কর্তব্য নয়। অপর বর্ণনায় আছেঃ আমি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করিলে আপনারাও আমার অবাধ্যাচরণ করুন।” ২৩

হযরত আলী (রা) তাহার এক ভাষণে বলেন : “আল্লাহর অনুগত থাকিয়া আমি আপনাদেরকে যে নির্দেশ দেই তাহা মান্য করা আপনাদের জন্য বাধ্য কর তাহা আপনাদের মনঃপুত হউক বা না হউক। আর আল্লাহর অবাধ্যাচরণমূলক কোন, নির্দেশ দিলে সেই ক্ষেত্রে কেহই সেই নির্দেশ মান্য করিবে না। আনুগত্য কেবল ন্যায় কাজে আনুগত্য কেবল ন্যায় কাজে, আনুগত্য কেবল ন্যায় কাজে।২৪

২১৬

শাহ ওলিউল্লাহ্ (র) বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান যেসব নির্দেশ করেন তাহা মান্য করা, জনগণের কর্তব্য, যদি তাহা শরীআত বিরোধী না হয়। তাহার কোন নির্দেশ মনঃপূত না হইলে এই অজুহাতে তাহা প্রত্যাখ্যান করা যাইবে না, যতক্ষণ না তাহা কুরআন, প্রসিদ্ধ হাদীস, উম্মতের ইজমা ইত্যাদির পরিপন্থী না হয়।২৫

উপরোক্ত আলোচনা হইতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি অনুগত্য নিঃশর্ত নয়। ইসলামী আইনে যাহা নস নির্দেশিত শুধু তাহাই অবশ্য পালনীয়, অন্য কিছু নহে। সুতরাং নস বহির্ভূত কোন আদেশ-নির্দেশ, তাহা যিনিই দেন না কেন, অবশ্য প্রতিপালনীয় নহে। ইসলামী আইনে নসই সার্বভৌম। ইহার পরিপন্থী কোন আদেশ দিবার অধিকার কাহারও নাই। বিচারক, শূরা এবং রাষ্ট্রপ্রধান ইহার অধীন।

ধারা-৯০৫ রাষ্ট্রপ্রধানের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রপ্রধান তাঁহার দায়িত্ব পালনের জন্য বেতন-ভাতা, সরকারী বাসস্থান, যান-বাহন এবং খাদেমসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা লাভ করিবেন।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদা ভিত্তিক ভরণপোষণের দায়িত্ব গোটা জাতির উপর বর্তায়। কারণ তাহাদের সামগ্রিক কার্যাবলী পরিচালনার ভার তাহার উপর অর্পণ করা হইয়া থাকে। খিলাফতে রাশেদীনের আমলে তিন খলীফাই রাষ্ট্রীয় তহবিল হইতে বেতন-ভাতা গ্রহণ করিয়াছেন, যদিও প্রথম দুই খলীফা মৃত্যুর পূর্বে নিজ নিজ ওয়ারিসগণকে সমপরিমাণ অর্থ বায়তুল মালে প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিয়া যান এবং তাহা পালন করা হয়। হযরত উসমান (রা) যথেষ্ট সম্পদশালী হওয়ায় রাষ্ট্রীয় তহবিল হইতে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন নাই। রাষ্ট্রপ্রধানের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে মহানবী (সা) বলেন :

من ولی لناعم ولم تكن له زوجة فليتخذ زوجة ومن لم يكن

له خادم قليتخذ ادما أو ليس له مسن فليتخذ مسكنا أو ليس له دابة فليتخذ داب؛ فمن أصاب سوى ذلك فهو غال أو سارق .

“যে ব্যক্তি আমাদের রাষ্ট্রীয় কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ (9) গ্রহণ করে তাহার স্ত্রী থাকিলে সে একজন স্ত্রী গ্রহণ করিবে, খাদেম না থাকিলে একজন খাদেম গ্রহণ

২১৭

করিবে, বসতবাড়ী না থাকিলে একটি বসতবাড়ী গ্রহণ করিবে, যান-বাহন না। থাকিলে একটি যান-বাহন গ্রহণ করিবে। যে ব্যক্তি ইহার অধিক অগ্রসর হয় সে প্রতারক অথবা তঙ্কর।” ২৬

ধারা—৯০৬ বাণিজ্যিক কর্ম হইতে রাষ্ট্রপ্রধানের বিরতি রাষ্ট্রপ্রধান কোনরূপ বাণিজ্যিক কর্মে অংশগ্রহণ হইতে বিরত থাকিবেন।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব এতই বিস্তৃত যে, তাহার পক্ষে উক্ত দায়িত্ব বহির্ভূত অতিরিক্ত কোন ব্যক্তিগত কর্ম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। খলীফা হওয়ার পর একদিন তিনি কাপড়ের থান কাঁধে করিয়া তাহা বিক্রয়ের জন্য বাজারে যান। হযরত উমার ফারুক (রা) তাঁহার হাত ধরিয়া বাজার হইতে ফিরাইয়া আনেন এবং প্রবীণ সাহাবীগণের সহিত পরামর্শক্রমে তাঁহার জন্য বেতন নির্ধারিত করিয়া দেওয়া হয়। অতঃপর তিনি আর কখনও ব্যবসায়িক কর্মে লিপ্ত হন নাই। এই বিষয়ে মহানবী (সা)-এর বাণী নিম্নরূপঃ

من أخوين الخيانة تجارة الولى في رعيته .

“শাসকের জন্য স্বীয় প্রজাদের মধ্যে ব্যবসা করা সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট প্রতারণা।”২৭

ধারা-৯০৭ রাষ্ট্রপ্রধানের পদ শূন্য থাকাকালে দায়িত্ব পালন। ধারা (১১১) ও (১১২) মোতাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের পদ শূন্য হইলে পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য পরামর্শ

পরিষদ বা মজলিস শূরা ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারেন।

বিশ্লেষণ

মহানবী (সা) ও তাঁহার পরবর্তী তিন খলীফার ইন্তেকালের পর সাময়িক সময়ের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের পদ শুন্য ছিল। কারণ তাহাদের কেহই নিজ মৃত্যুর পূর্বে

২১৮

পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত করিয়া যান নাই। বর্তমান কালেও রাষ্ট্রপ্রধান বা যে কোন পদের কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করিলে ঐরূপ শূন্যতার সৃষ্টি হইতে দেখা যায়। কারণ মৃত্যুর সংবাদের অবগতি ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে অবশ্যই কিছু সময় অতিবাহিত হইয়া যায়। তবে বর্তমান কালে প্রায় সব রাষ্ট্রেই উহার সংবিধানে ইহার জন্য পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কে উক্ত দায়িত্ব পালন করিবেন, যেমন উপ-রাষ্ট্রপ্রধান বা স্পীকার খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালন করিবেন, তাহা সংবিধানে উল্লেখ থাকে।

ইসলামী আইনের মূলনীতি অনুযায়ী এইরূপ আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা বৈধ। হযরত উমার ফারূক (রা) তাঁহার মৃত্যুর পূর্বে পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত করিবার জন্য ছয়জন প্রবীণ সাহাবীর সমন্বয়ে যে কমিটি গঠন করিয়া দিয়াছিলেন তাহার সমর্থনে কোন নস না থাকিলেও উক্ত ব্যবস্থা কোন নস-এর বিরোধীও ছিল না। যে ব্যবস্থার অনুকূলে কোন নস নাই এবং যাহা কোন নস-এর বিরুদ্ধে যায় না, তাহা শরীআতে মুবাহ (বৈধ) হিসাবে গণ্য। অতএব আগাম ব্যবস্থার এই বিষয়টিও মুবাহ্ -এর আওতাভুক্ত। তাই জাতির সার্বিক কল্যাণের দিক বিবেচনা পূর্বক কাজের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে এবং বিশৃংখলা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির যাহাতে উদ্ভব না হইতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখিয়া উক্তরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইতে পারে। আল্লামা আল-মাওয়ারদী তাঁহার আহকামুস সুলতানিয়া গ্রন্থে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ শূন্য হওয়ার আশংকা দেখা দিলে কি পদক্ষেপ নেওয়া যাইতে পারে তৎসম্পর্কে প্রায়

অনুরূপ কথাই বলিয়াছেন। ২৮

ধারা-৯০৮

রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমা প্রদর্শন (ক) রাষ্ট্রপ্রধান তাযীরের আওতায় দণ্ডিত অপরাধীর যে কোন দণ্ড (১) মার্জনা করিতে পারেন; (২) বিলম্ব বা অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখিতে পারেন; (৩) বিরাম দিতে পারেন অর্থাৎ গুরুদণ্ডের পবির্তে লঘুদণ্ড দিতে পারেন; (৪) মওকুফ করিতে পারেন অর্থাৎ দণ্ডের মাত্রা হ্রাস করিতে পারেন; (৫) স্থগিত করিতে পারেন অর্থাৎ দণ্ডাজ্ঞা বলবৎ স্থগিত করিতে পারেন; (৬) পরিবর্তন করিতে পারেন।

২১৯

(খ) হদ্দ অথবা কিসাস-এর আওয়াতাভুক্ত অপরাধী কোন কারণে তাযীরের আওতায় দণ্ডিত হইলে সেই ক্ষেত্রেও উপধারা (ক) (১-৬)-এর বিধান প্রযোজ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

ইসলামী আইনে রাষ্ট্রপ্রধান যদিও বিচারকের রায়ের উপর হস্তক্ষেপ করিতে পারেন না, তথাপি তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে সর্বোচ্চ বিচারকও বটে। নির্বাহী ক্ষমতাবলে তিনি ইচ্ছা করিলে আদালতের যে কোন রায় পুনর্বার বিবেচনা করিয়া দেখিতে পারেন। তবে বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ শরীআতে মোটেই কাম্য নহে। বিচারের নিরপেক্ষতার প্রতি কুরআন ও হাদীসে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করা হইয়াছে। এই ব্যাপারে সুপারিশ বা পক্ষপাতিত্বকে নিরুৎসাহিত, বরং তিরস্কৃত করা হইয়াছে। হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধ না বিচারক ক্ষমা করিতে পারেন, ন: বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ক্ষমা করিতে পারে আর না অন্য কেহ। বিখ্যাত মাখযুম গোত্রের ফাতেমা বিনতে কায়স নাম্নী এক নারী চুরি করিয়া ধরা পড়িলে তাহার শাস্তি মওকুফের জন্য উসামা ইবন যায়দ (রা)-কে মহানবী (সা)-এর নিকট সুপারিশ করার জন্য পাঠানো হয়। মহানবী (সা) বলিলেনঃ হে উসামা! তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি কার্যকর করা হইতে বিরত থাকার জন্য সুপারিশ করিতেছ? তিনি তৎক্ষণাৎ জনগণকে সমবেত করিয়া ভাষণ দিলেন এবং বলিলেন, হে জনগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ধ্বংসের কারণ এই যে, তাহাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করিলে তাহাকে ক্ষমা করিয়া দেওয়া হইত এবং কোন দুর্বল (সাধারণ) ব্যক্তি চুরি করিলে তাহার উপর হদ্দ কার্যকর করা হইত। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করিত তবে আমি তাহার হাত কাটিয়া দিতাম।২৯

মহানবী (সা) বলেন

أقيلوا وي الهيئات عثراتهم الأ الحدود .

“তোমরা অনুতপ্ত ব্যক্তিদের পদস্খলন মার্জনা কর, হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধ ব্যতীত।”

تعافوا الحدود بينكم فما بلغنى من حبي فقد وجب .

“তোমরা পরস্পর হদ্দ মার্জনা কর। কিন্তু আমার নিকট হদ্দের মোকদ্দমা পৌছিলে শাস্তি কার্যকর হইবে (এবং মার্জনার সুযোগ থাকিবে না)।”৩১

২২০

সাফওয়ান ইবন উমায়্যা (রা) তাহার চাদর মাথার নিচে দিয়া মসজিদে ঘুমাইতেছিলেন। এক চোর আসিয় তাহার মাথার নিচের চাদরটি টানিয়া বাহির করিয়া লইয়া গেল। সাফওয়ান (রা) জাগ্রত হইয়া জোরে চিৎকার দিলেন এবং চোর ধরা পড়িল। তাহাকে মহানবী (সা)-এর নিকট হাযির করা হইলে তিনি তাহার হস্ত কর্তনের নির্দেশ দিলেন। সাফওয়ান (রা) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাহার নিকট চাদরটি ধারে বিক্রয় করিলাম। মহানবী (সা) বলিলেন : আমার নিকট উপস্থিত করার পূর্বে তুমি তাহা করিলে না কেন!৩২

কিসাস-এর আওতাভুক্ত অপরাধও না বিচারক ক্ষমা করিতে পারেন আর না রাষ্ট্রপ্রধান। অবশ্য এই অপরাধ ক্ষমার অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রদান করা হইয়াছে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

فمن عفى له من أخيه شيئ اتباع بالمعروف وأداء اليه

باحسان .

“তাহার ভ্রাতার পক্ষ হইতে কিছু ক্ষমা প্রদর্শন করা হইলে ন্যায়নীতির অনুসরণ করা ও সততার সহিত তাহার দেয় আদায় করা বিধেয়” (সূরা বাকারা : ১৭৮)।

তবে কোন কারণে হদ্দ অথবা কিসাসের আওতাভুক্ত অপরাধের শাস্তি তাযীরের আওতায় প্রদত্ত হইলে তাহা রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমা প্রদর্শনের আওতায় আসিতে পারে। যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাল চুরি করিয়াছে এবং হস্ত কর্তনের সমস্ত শর্ত বিদ্যমান পাওয়া গিয়াছে, একটি শর্ত ব্যতীত অর্থাৎ অরক্ষিত স্থান হইতে মাল চুরি করা হইয়াছে। এই অবস্থায় অন্যসব শর্ত বিদ্যমান থাকা সত্বেও হস্ত কর্তনের শাস্তি কার্যকর না হইয়া অপরাধী তাযীরের আওতা শাস্তিপ্রাপ্ত হইবে।

তাযীরের আওতায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হইতে পারে এবং ইহা ব্যতীত হাজতবাস, অর্থদণ্ড বা একত্রে উভয় প্রকারের শাস্তিও হইতে পারে। তাযীর হইল দৃষ্টান্তমূলক, সংশোধনমূলক বা শিক্ষামূলক শাস্তি। এই ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের অধিকার বা স্বার্থ ক্ষুন্ন না করিয়া এবং সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর অবস্থা বিবেচনা করিয়া রাষ্ট্রপ্রধান তাহার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ শাস্তিভোগরত ব্যক্তি এমন বয়সে পৌছিয়াছে যে, তাহার অপরাধকর্ম করিবার আর সামর্থ্য নাই অথবা অপরাধীর মধ্যে আমূল পরিবর্তন আসিয়াছে অথবা তারুণ্যের প্রভাবে অপরাধ করিয়াছে এবং শাস্তি ভোগ করিয়া অনুতপ্ত হইয়াছে, এইসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করিয়া রাষ্ট্রপ্রধান অপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন করিতে পারেন।

২২১

উপরোক্ত বিষয়ে নীতিগত কথা এই যে, ইমাম আবু হানীফা, মালেক ও আহমাদ (র)-এর মতে রাষ্ট্রপ্রধান তাযীরের আওতায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে তখনই ক্ষমা প্রদর্শন করিতে পারেন যখন শাস্তি প্রদানের তুলনায় ক্ষমা প্রদর্শনই উত্তম বিবেচিত হয়। জনস্বার্থেই কেবল রাষ্ট্রপ্রধান এই ধরনের ক্ষমা প্রদর্শন করিতে পারেন।৩

ধারা-৯০৯ রাষ্ট্রপ্রধানের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা জরুরী অবস্থা চলাকালে এবং যখন মজলিসে শূরার অধিবেশন স্থগিত থাকে তখন রাষ্ট্রপ্রধান কোন কাজ বাধ্যতামূলক ও কোন কাজ নিষিদ্ধ করিয়া এবং তাহা অমান্য করার ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা করিয়া আইন জারী করিতে পারেনঃ

তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপ্রধানের অনুরূপ কার্যক্রম ‘নস’ ও শরীআতের সাধারণ নীতিমালার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হইতে হইবে, অন্যথায় উহা

আদিতেই বাতিল গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রপ্রধান জরুরী অবস্থা চলাকালে এবং যখন মজলিসে শূরার অধিবেশন থাকে, তখন প্রয়োজনবােধে কোন কাজ বৈধ, কোন কাজ বাধ্যতামূলক এবং কোন কাজ নিষিদ্ধ করিয়া আইন প্রণয়ন করিতে পারেন এবং কেহ তাহা অমান্য করিলে শাস্তির ব্যবস্থাও করিতে পারেন। তবে তাহার এই এখতিয়ার নিরংকুশ নহে। কতিপয় শর্ত পালন সাপেক্ষে তিনি ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করিতে পারেন। প্রথমত, তাহার প্রণীত আইন শরীআতের নসসমূহের পরিপন্থী হইতে পারিবে না। যদি তাহা কোন নস-এর সহিত অসংগতিপূর্ণ হয় তবে উহা বালিত গণ্য হইবে। অনুরূপভাবে তাহা নস-এর ভিত্তিতে ইসলামী আইনের যে নীতিমালা গড়িয়া উঠিয়াছে তাহার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হইতে হইবে। তৃতীয়ত, তাহার আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান থাকিতে হইবে অর্থাৎ কোন একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনের জন্যই আইন প্রণীত হইবে। যেমন জনস্বার্থ রক্ষা করা বা জনগণের সমূহ কোন ক্ষতি প্রতিহত করা ইত্যাদি। রাষ্ট্রপ্রধান এসব শর্ত অনুসরণ করিয়া আইন প্রণয়ন করিলে তাহা বাতিল গণ্য হইবে এবং ইহা অমান্য করার

২২২

ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা করাও বৈধ হইবে না। অতএব বলা যাইতে পারে যে, রাষ্ট্রপ্রধান শরীআতের কোন নসকে অকার্যকর ঘোষণা করিতে পারেন না বা নসসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানেও বাধা দিতে পারেন না।

ধারা-৯১০

আদালতের কার্যক্রম নির্দিষ্টকরণ রাষ্ট্রপ্রধান শূরার পরামর্শক্রমে বিচারের সুবিধার্থে আদালতের বিভাজন করিতে পারেন এবং ইহার কার্যসীমাও নির্দিষ্ট করিয়া দিতে পারেন।

বিশ্লেষণ

আদালতের মজলিসে বিভাজন অর্থাৎ ইহার বিভিন্ন বিভাগ সৃষ্টি করা যাইতে পারে, বিচারের সুবিধার্থে ইহার সংখ্যা বৃদ্ধি করা যাইতে পারে এবং জনগণের সুবিধার্থে ইহা এক স্থানে কেন্দ্রীভূত না রাখিয়া বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা যাইতে পারে। রাষ্ট্রপ্রধান শূরার পরামর্শক্রমে তাহার এখতিয়ারাধীনে ইহা করিতে পারেন। অপরাধসমূহের বিচারের জন্য ভিন্ন আদালত, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ের মীমাংসার জন ভিন্ন আদালত অর্থাৎ বিষয়ভিত্তিক আদালতও স্থাপন করা যাইতে পারে, যাহা শুধু সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মীমাংসা করিবে।

ধারা-৯১১

রাষ্ট্রপ্রধানের অপসারণ

নিম্নবর্ণিত যে কোন ত্রুটির কারণে রাষ্ট্রপ্রধান তাহার পদ হইতে অপসারিত হইবেন –

(ক) বােধশক্তি স্থায়ীভাবে লোপ পাইলে;

(খ) এমন কোন শারীরিক বা মানসিক বৈকল্য বা অংগহানি হইলে, যাহাতে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন অসম্ভব হইয়া পড়ে;

(গ) জঘন্য পাপাচারে অভ্যস্ত হইয়া পড়িলে;

(ঘ) ইসলামের কোন মৌলিক বিষয়ের উপর হইতে ঈমান প্রত্যাহার করিলে;

(ঙ) শত্রুবাহিনীর হাতে বন্দী হইলে এবং যথাসাধ্য চেষ্টার পরও উদ্ধার করা সম্ভব না হইলে।

২২৩

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তির রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পথে যেসব শারীরিক, মানসিক ও বিশ্বাসগত অন্তরায় রহিয়াছে, রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর সেইগুলির মধ্যে কোন একটি বা একাধিক অন্তরায় সৃষ্টি হইলে তিনি উক্ত পদ হইতে অপসারিত হইবেন। যেমন পাগল ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার অযোগ্য। এখন কোন সুস্থ ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর পাগল হইয়া গেলে তিনি উক্ত পদ হইতে অপসারিত হইবেন। বুদ্ধিজ্ঞান লোপ পাইলে রাষ্ট্রপ্রধান তাহার পদ হইতে অপসারিত হইবেন। কিন্তু সাময়িকভাবে উহার বিলুপ্তির কারণে তিনি স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন না। যেমন মহানবী (সা) তাঁহার রোগগ্রস্ত অবস্থায় সাময়িক সময়ের জন্য সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়িয়াছিলেন।

রাষ্ট্রপ্রধানের দর্শনশক্তি বিনষ্ট হইয়া গেলেও তিনি স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন। তবে হানাফী মাযহাবমতে অন্ধ ব্যক্তির রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া বৈধ। তবে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি অটুট থাকিলে অথবা রাতকানা রোগ বা ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির কারণেও তিনি স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন না।

ঘ্রাণশক্তি বা স্বাদ আস্বাদনশক্তি বিলুপ্ত হওয়ার কারণেও রাষ্ট্রপ্রধান তাহার পদ হইতে অপসারিত হইবেন না অর্থাৎ এমন যে কোন দৈহিক ত্রুটি যাহা দায়িত্ব পালনের পথে অন্তরায় নহে, উহার কারণে রাষ্ট্রপ্রধান বা অন্য কোন পদ হইতে কেহ অপসারিত হইবেন না। রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর কোন ব্যক্তির বাকশক্তি ও শ্রবণশক্তি বিনষ্ট হইয়া গেলে তিনি স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন কি না এই বিষয়ে ফকীহগণের মতভেদ আছে। একদল ফকীহর মতে তিনি বাকশক্তিহীন ও শ্রবণশক্তিহীন হইয়া পড়ার কারণে স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন। ফকীহগণের এই মতকেই সর্বাগ্রগণ্য বলা হইয়াছে। অপর এক দলের মতে তিনি ইশারা-ইংগিতে দায়িত্ব পালন করিতে সক্ষম হইলে স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন না। অপর এক দলের মতে লিখিতভাবে কর্ম সমাধা করিতে সক্ষম হইলে স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন না। তবে তিনি তোতলা হইয়া গেলে এবং উচ্চ স্বরে কথা বলিলে শুনিতে সক্ষম হইলে স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন না।

রাষ্ট্রপ্রধানের কোন অংগহানি ঘটিলে এবং তাহাতে তাহার দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হইলে তিনি স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন। তাহার দুই হাত বা দুই পা নষ্ট হইয়া গেলে তিনি তাহার পদ হইতে অপসারিত হইবেন। কারণ ইহার দ্বারা তাহার দৈহিক শক্তি ও কর্মক্ষমতা বহুলাংশে লোপ পায়। অথচ রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য সুস্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম হওয়া প্রয়োজনীয় শর্ত হিসাবে গণ্য। কিন্তু এক

২২৪

হাত অথবা এক পা বিনষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ আছে। এক দলের মতে উক্ত কারণে তিনি তাহার পদ হইতে অপসারিত হইবেন কিন্তু অপর দলের মতে অপসারিত হইবেন না। তবে যেসব অংগ বিনষ্ট হওয়ার কারণে দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না, সেই ক্ষেত্রে তিনি স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবে না। যেমন দুই কান কর্তিত হইলে উহার দ্বারা শ্রবণ শক্তির কোন ক্ষতি। হয় না।

জঘন্য পাপাচার বলিতে শরীআতের বিধানে যেসব অন্যায় কাজ চূড়ান্তভাবে কবীরা গুনাহ বলিয়া সাব্যস্ত এবং যাহাতে লিপ্ত বা অভ্যস্ত হইয়া পড়িলে মানুষের ন্যায়নিষ্ঠার (1) গুণ তিরহিত হইয়া যায় তাহাকে বুঝায়। তবে হানাফী মাযহাব মতে রাষ্ট্রপ্রধান ফাসেক (পাপাচারী) হইয়া গেলে তিনি স্বীয় পদ হইতে অপসারিত হইবেন না, কিন্তু মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাব মতে অপসারিত হইবেন। আল-মাওয়ারদীও এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন।

কোন ব্যক্তি ইসলামের যে কোন স্বতঃসিদ্ধ মৌলিক বিষয়ের উপর হইতে ঈমান প্রত্যাহার করিলে সে মুসলমানের গণ্ডিবহির্ভূত হইয়া পড়ে। অতএব রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে এইরূপ ঘটিলে তিনি আপনাআপনি তাহার পদ হইতে অপসারিত হইবেন।

রাষ্ট্রপ্রধান শত্রুবাহিনীর হাতে বন্দী হইলে তাহাকে উদ্ধার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ গোটা জাতির জন্য বাধ্যতামূলক হইয়া যায়। কারণ উক্ত পদে সমাসীন হওয়ার পর তাহার সাহায্য-সহযোগিতা করা গোটা জাতির অপরিহার্য কর্তব্য। যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করিয়া অথবা সন্ধির মাধ্যমে তাহাকে মুক্ত করা সম্ভব বলিয়া মনে হইবে তাবৎ কাল তিনি রাষ্ট্রপ্রধান থাকিবেন। সার্বিক প্রচেষ্টার পরও তাহাকে মুক্ত করা সম্ভব না হইলে তিনি উক্ত পদ হইতে অপসারিত গণ্য হইবেন। নূতন রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগের পর তিনি মুক্ত হইয়া আসিলেও স্বীয় পদে আসীন হইতে পারিবেন না। কিন্তু তিনি যদি মুসলিম বিদ্রোহী বা অভ্যুত্থানকারীদের হাতে বন্দী হন এবং তাহাকে মুক্ত করার অবকাশ থাকে তবে তিনি স্বপদে বহাল গণ্য হইবেন। আর যদি তাহাকে মুক্ত করার উপায় না থাকে এবং বিদ্রোহীরা নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ করিয়া থাকে, তবে তিনি স্বীয় পদ হইতে অপসারিত বলিয়া গণ্য হইবেন। বিদ্রোহী বা অভ্যুত্থানকারীগণ নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল গণ্য হইবেন। বিদ্রোহী বা অভ্যুত্থানকারীদের উপেক্ষা করিয়া বন্দী ইমামের প্রতিনিধি নিয়োগ করা সম্ভব হইলে সংসদ (আহলুল হালু ওয়াল-আন্দ) সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।

২২৫

ধারা-৯১২ রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বের অবসান

নিম্নোক্ত যে কোন কারণে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বের অবসান ঘটিবে

(ক) তিনি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হইয়া থাকিলে উক্ত মেয়াদ শেষ হইলে;

(খ) তিনি পদত্যাগ করিলে; (গ) ধারা (৯১১)-এ বর্ণিত কোন কারণে তিনি অপসারিত হইলে; (ঘ) তিনি মৃত্যুবরণ করিলে বা নিহত হইলে।

বিশ্লেষণ

শরীআ আইন অনুযায়ী মেয়াদ নির্দিষ্ট না করিয়া যেমন রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ করা যায়, তেমনি মেয়াদ নির্দিষ্ট করিয়াও নিয়োগ করা বৈধ। ইহা সম্পূর্ণরূপে স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। এই ব্যাপারে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে জাতির সর্বাধিক কল্যাণ সাধিত হইবে তাহাই বিবেচনা করিতে হইবে। শরীআ আইনে এই বিষয়ে যথেষ্ট নমনীয়তা রহিয়াছে। খােলাফায়ে রাশেদীন মেয়াদহীনভাবে নিযুক্ত হইয়াছিলেন এবং তাহাদের প্রত্যেকে আমৃত্যু স্বীয় পদে বহাল ছিলেন। অতঃপর রাজতন্ত্রের যুগ শুরু হয় এবং সত্যিকার ইসলামী ভাবধারাপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উন্নয়ন তিরহিত হইয়া যায়।

রাষ্ট্রপ্রধান ইচ্ছা করিলে পদত্যাগ করিতে পারেন। ইহা তাহার ব্যক্তিগত অধিকার এবং এই ব্যাপারে তাহার উপর জোর-জবরদস্তি করা যাইবে না। এই অবস্থায়ও তাহার দায়িত্বের অবসান ঘটিবে এবং তদস্থলে অপর একজন রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ শূরার জন্য বাধ্যকর হইবে।

ধারা (৯১১) এ বর্ণিত কোন কারণে অপসারিত হইলেও তিনি দায়মুক্ত হইয়া যাইবেন।

তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হইলে বা নিহত হইলেও তাহার দায়িত্বের অবসান ঘটিবে।৩৬

২২৬

ধারা-৯১৩

রাষ্ট্রপ্রধানের জবাবদিহিতা রাষ্ট্রপ্রধান তাহার কার্যাবলীর জন্য মজলিসে শূরার নিকট জবাবদিহি করিবেন।

বিশ্লেষণ

. রাষ্ট্রপ্রধানকে তাহার কার্যাবলীর জন্য যেমন আখেরাতে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করিতে হইবে, তেমনিভাবে তিনি ইহকালেও জনগণের নিকট জবাবদিহি করিতে বাধ্য। কারণ তিনি জনগণের সমর্থনেই তাহাদের রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করিয়াছেন। এই দায়িত্ব পালনে তিনি ভুল করিলে বা শিথিলতা প্রদর্শন করিলে বা জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করিলে ইহার জন্য তিনি কৈফিয়ত প্রদান করিতে বাধ্য। মহান আল্লাহর বাণী :।

ايها الذين آمنوا لا تؤثوا الله والرسول وتخونوا أمانتكم

وانتم تعلمون .

“হে মুমিনগণ! তোমরা জ্ঞাতসারে আল্লাহ ও রাসূলের সহিত বিশ্বাস ভংগ করিও না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও না”।

(সূরা আনফাল : ২৭) অতএব রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট জনগণ কর্তৃক অর্পিত একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এই আমানতের খেয়ানত করিলে বা তাহার যথার্থ সংরক্ষণ না করিলে রাষ্ট্রপ্রধানকে ইহার জন্যও জনগণের নিকট জবাবদিহি করিতে হইবে। মহানবী (সা) বলেন :

ألا كلكم راع وكلكم مسؤل عن رعيته الإمام على الناس راع

وهو مسؤول عن رعيته .

“সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল (পরিচালক) এবং তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ রাখালী সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে। অতএব রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের রাখাল (পরিচালক, রক্ষক) এবং তাহাকে তাহার রাখালী সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে”।৩৭

এই জবাবদিহির চিন্তায় ব্যাকুল হইয়া হযরত উমার (রা) বলিয়াছিলেন?

لئن ضلت شاة على شاطئى الفرات لخشيت أن يسئلنى الله

• Lales Ac  

২২৭

“ফোরাতকুলে একটি ছাগও যদি অযত্নে ধ্বংস হইয়া যায় তবে আমার ভয় হইতেছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে ইহার জন্য আমাকে জবাবদিহি করিতে হইবে”।

অবশ্য প্রত্যেক নাগরিকের নিটক জবাবদিহি করা একজন রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে সম্ভব নহে। তাই তিনি তাহার যাবতীয় কার্যের জন্য মজলিসে শূরার নিকট জবাবদিহি করিবেন।

ধারা-৯১৪ রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে আদালতী কার্যক্রম রাষ্ট্রপ্রধান—(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা ভুলবশত অথবা ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া সরকারী মাল অথবা কোন ব্যক্তি বা সংস্থার মালের ক্ষতি বা ধ্বংস সাধন করিলে অথবা আত্মসাৎ করিলে তাহার বিরুদ্ধে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা যাইবে এবং তিনি দোষী প্রমাণিত হইলে তাহার উপর মালের ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে;

(খ) কিসাস-এর আওতাভুক্ত কোন অপরাধ করিলেও তাহার বিরুদ্ধে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা যাইবে এবং অপরাধ প্রমাণিত হইলে ইহার প্রকারভেদ অনুযায়ী তাহার উপর দণ্ড কার্যকর হইবে;

(গ) হদ-এর আওতাভুক্ত কোন অপরাধ করিলে তাহার বিরুদ্ধে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

প্রত্যেক বালেগ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি শরীআর বিধান মানিতে এবং বিধান ভংগ করার ক্ষেত্রে বিচারের সম্মুখীন হইতে বাধ্য। কেহই আইনের ঊর্ধ্বে নহে। ইসলাম ধনী-নির্ধন, ইতর-ভদ্র, মুসলিম-অমুসলিম, নারী-পুরুষ সকলের জান, মাল ও ইজ্জত-আব্রুকে সমান মর্যাদার অধিকারী ঘোষণা করিয়াছে। উহার উপর যে-ই হস্ত প্রসারিত করিবে তাহাকেই জবাবদিহির সম্মুখীন হইতে হইবে। অতএব রাষ্ট্রপ্রধান গোটা জাতির ইমাম হওয়া সত্ত্বেও তাহাকেও আইনের ঊর্ধ্বে রাখা হয় নাই। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেকে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের সামনে পেশ করিয়াছেন। হযরত উমার ফারূক (রা)-ও নিজেকে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের সামনে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য পেশ করিয়াছেন। ৯

২২৮

রাষ্ট্রপ্রধান মাল সম্পর্কিত বিষয়ে কোন অপরাধ করিলে আদালতের রায় মোতাবেক তিনি তাহার ব্যক্তিগত মাল হইতে উহার ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবেন। এই বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে কোন মতভেদ নাই। অনুরূপভাবে তিনি মানবজীবন ও মানবদেহের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ করিলে আদালতের রায় অনুযায়ী তিনি কিসাস অথবা দিয়াতের দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। এই বিষয়েও ফকীহগণ একমত।

অবশ্য তিনি হদ-এর আওতাভুক্ত কোন অপরাধ করিলে তাহার বিরুদ্ধে আদালতী কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে কিনা এই ব্যাপারে ফকীহগণের মতভেদ আছে। হানাফী ফকীহগণের মতে এই ক্ষেত্রে তাহার বিরুদ্ধে আদালতী কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে না। শাফিঈ মাযহাবমতে এই ক্ষেত্রেও তাহার বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করা যাইবে এবং তিনি দোষী সাব্যস্ত হইলে শাস্তি ভোগ করিবেন। তবে যেনার মিথ্যা অপবাদের ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবমতে রাষ্ট্রপ্রধান শাস্তির সম্মুখীন হইবেন। কারণ বিষয়টি মানুষের সম্মান, সম্ভ্রম ও নৈতিকতার সহিত সম্পর্কিত ৪০

ধারা-৯১৫

রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ রাষ্ট্রপ্রধান- (ক) রাষ্ট্রের সামগ্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মন্ত্রী নিয়োগ করিবেন;

(খ) প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক প্রশাসন, যদি থাকে, পরিচালনার জন্য প্রশাসনের প্রধান (গভর্নর বা প্রশাসক) নিয়োগ করিবেন;

(গ) গুরুত্বপূর্ণ সরকারী বিভাগসমূহের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে নিয়োগ করিবেন;

(ঘ) বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ পদের নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে নিয়োগ করিবেন।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রপ্রধান সরাসরি অথবা প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করিয়া তাহার নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলন করিতে পারেন। মূলত সারা দেশে সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করিয়া শাসনকার্য পরিচালনা করা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব। এইজন্য ফকীহগণ কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি সরাসরি রাষ্ট্রপ্রধানের উপর

২২৯

ন্যস্ত করিয়াছেন এবং এই ক্ষেত্রে নিয়োগের বিষয়টিকে চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করিয়াছেন। উহার প্রথম হইল জনগণের রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীর সার্বিক অভিভাকত্ব

L J_act _,। ইহাকে সার্বিক নির্বাহী দায়িত্ব বলা যায়। অভিভাবকত্বের এই সার্বিক দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক মন্ত্রী নিয়োগ করিয়া তাহাদের মধ্যে উক্ত দায়িত্ব বণ্টন করিয়া দিতে পারেন। মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা তাহার কর্তৃত্বে ন্যস্ত করা হইয়াছে।

দ্বিতীয়ত, বিশেষ বিশেষ এলাকার জনগণের অভিভাবকত্ব ( L_y, as Jwel) বিশেষ বিশেষ এলাকা বলিতে একটি দেশের প্রদেশ বা বিভাগওয়ারী প্রশাসনিক একক (খভ)-কে বুঝানো হইয়াছে। একটি দেশ ইহার আয়তন ও লোকসংখ্যার ব্যাপ্তির ভিত্তিতে একাধিক প্রদেশ বা অঞ্চলে বিভক্ত হইতে পারে। সেই বিশেষ বিশেষ এলাকার রাষ্ট্রপ্রধানের অভিভাবকত্বের দায়িত পালনের জন্য তিনি প্রাদেশিক বা আঞ্চরিক শানসকর্তা নিয়োগ করিতে পারেন। ফকীহগণ এইসব গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগও রাষ্ট্রপ্রধানের উপর ন্যস্ত করিয়াছেন।

তৃতীয়ত, জনগণের কার্যাবলীর বিশেষ অভিভাবকত্ব (JL, Lau aul) এখানে বিশেষ অভিভাবকত্ব বলিতে রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগসমূহের নির্বাহী দায়িত্ব বুঝানো হইয়াছে। যেমন সামরিক বা প্রতিরক্ষা বিভাগে প্রধান সেনাপতি নিয়োগ, উচ্চ আদালত ও সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ, সীমান্ত বাহিনীর প্রধান নিয়োগ, সরকারী সম্পদ বিভাগের প্রধান নিয়োগ, সরকারী আয়-ব্যয় বিভাগের প্রধান নিয়োগ ইত্যাদি। ফকীহগণ এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা নিয়োগের দায়িত্বও রাষ্ট্রপ্রধানের উপর ন্যস্ত করিয়াছেন।

চতুর্থত, বিশেষ কার্যের বিশেষ অভিভাবকত্ব (L.; JLciaLus) এখানে বিশেষ কার্যের বিশেষ অভিভাবকত্ব বলিতে বর্তমান কালের প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ হইতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদের কথা বুঝানো হইয়াছে, যাহার দায়িত্ব কোন সংস্থার অভ্যন্তরে অথবা কোন নির্দিষ্ট শহর বা এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেমন কোন প্রাদেশিক বা আঞ্চলিত আদালতের বিচারপতি, সরকারী সম্পদের রক্ষক, সরকারী আয়-ব্যয়ের হিসাবক, সরকারী প্রশাসক ইত্যাদি। এইসব পদের দায়িত্বের গুরুত্ব বিবেচনা করিয়া ফকীহগণ এই ক্ষেত্রেও কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপ্রধানের উপর ন্যস্ত করিয়াছেন।১

ধারা-৯১৬

প্রধান মন্ত্রী নিয়োগ (ক) রাষ্ট্রপ্রধান একজন প্রধান মন্ত্রী বা উপ-রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ করিতে পারেন, যিনি তাহার নায়েব বা প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন।

(খ) প্রধান মন্ত্রী বা উপ-রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য কোন ব্যক্তির মধ্যে ধারা (৯০০)-এ উল্লেখিত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

শরীআ আইনে প্রধান মন্ত্রীই নির্বাহী মন্ত্রী এবং রাষ্ট্র প্রধানের নায়েব (প্রতিনিধি) হিসাবে গণ্য। তাহাকে বর্তমান কালের সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রধান মন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে উপ-রাষ্ট্রপ্রধান বলা যায়। মন্ত্রী নিয়োগের সমর্থনে ফকীহগণ হযরত মূসা (আ) ও তদীয় ভ্রাতা হারূন (আ) সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত পেশ করেন?

واجعل لي وزيرا من أهلي هرون أخي اشدد به ازري وأشركه

في امري.

“আমার জন্য আমার পরিবারের মধ্য হইতে একজন উযীর নিয়োগ করুন, আমার ভ্রাতা হারূনকে। তাহার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাহাকে আমার কর্মে অংশীদার করুন” (সূরা তহা : ২৯-৩২)।

অতএব নবুয়াতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উযীর নিয়োগ বৈধ হইলে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাহা সর্বোতভাবেই বৈধ। কারণ জাতির সামগ্রিক দায়িত্ব রাষ্ট্রপ্রধানের উপর ন্যস্ত থাকে, যাহা তাহার একার পক্ষে পালন করা সম্ভব নহে। তাই তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক মন্ত্রী নিয়োগ করিয়া তাহাদের সহায়তায় নিজ দায়িত্ব পালন করিবেন। এই ব্যবস্থা দেশ ও জাতির জন্যও কল্যাণকর। সম্মিলিত চিন্তা ও পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করিলে ভুল-ভ্রান্তিও বিচ্যুতি হইতে অনেকাংশে নিরাপদ থাকা যায়।

শরীআতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় সরকারী পদে নিয়োগ লাভের জন্য প্রার্থীদের মধ্যে একই ধরনের কতগুলি মৌলিক গুণের সমাবেশ হওয়া বাধ্যতামূলক করা হইয়াছে। যেমন রাষ্ট্রপ্রধান, উপ-রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধান মন্ত্রী, মন্ত্রী,

২৩১

তুলনামূলকভাবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আদালতসমূহের বিচারপতিগণ, প্রদেশ ও বিভাগের প্রধান নির্বাহী এবং অন্যান ও গুরুত্বপূর্ণ পদ। সেই গুণগুলি হইতেছে ধারা (৯০০)-এ উল্লেখিত শর্তাবলী। তবে মন্ত্রণার কোন কোন পদে অমুসলিম ব্যক্তিকে মন্ত্রী নিয়োগ অনুমোদন করা হইয়াছে।৪২

অনন্তর মন্ত্রীদেরকে সামরিক ও আর্থিক বিষয় সম্পর্কেও অভিজ্ঞ হইতে হইবে। আল্লামা আল-মাওয়ারদী তাহার আহকামুস সুলতানিয়া গ্রন্থে আব্বাসী খলীফা মামুনুর রশীদের উযীরদের গুণাবলী সম্পর্কিত একটি পত্রের বক্তব্য এভাবে তুলিয়া ধরিয়াছেন?

“আমি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক দায়িত্ব এমন এক ব্যক্তির উপর সোপর্দ করিতে চাই যাহার মধ্যে বিভিন্নমুখী গুণের সমাবেশ ঘটিয়াছে। তিনি হইবেন সৎ, পুণ্যবান, নীতিবান এবং পোশাক-পরিচ্ছদ ও চালচলনে রুচিশীল, আচার-ব্যবহারে দ্র, অভিজ্ঞ ও রাষ্ট্রের একান্ত গোপনীয় বিষয়ের বিশ্বস্ত রক্ষক, কঠিন হইতে কঠিনতর কাজে কর্মক্ষম ও তৎপর। তাহার নীরবতা তাহার গাম্ভীর্য এবং তাহার বাক্যালাপ তাহার জ্ঞানের পরিচায়ক হইবে। চোখের ইশারায়ই তিনি মুহূর্তের মধ্যে কথা বুঝিতে সক্ষম হইবেন। তাহার মধ্যে প্রসাশক সুলভ ঐশ্বর্য ও আঁকজমক, বিচারক সুলভ দূরদর্শিতা, জ্ঞানী সুলভ অমায়িকতা এবং ফকীহ সুলভ তত্ত্বজ্ঞানের সমাবেশ থাকিবে। তিনি হইবেন অনুগ্রহ প্রদর্শনকারীর প্রতি কতৃজ্ঞ, বিপদে ধৈর্যশীল, মৃদুবাক ও বাকপটু।”৪৩

ধারা-৯১৭ রাষ্ট্রপ্রধানের উপঢৌকন গ্রহণ ও প্রদান (ক) রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক উপঢৌকন গ্রহণ নিষিদ্ধ। (খ) রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক উপঢৌকন প্রদান বৈধ। (গ) রাষ্ট্রপ্রধান বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত উপঢৌকন গ্রহণ করিতে

পারেন।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারী কর্মচারী কর্তৃক উপহার-উপঢৌকন গ্রহণ মাকরূহ হওয়ার বিষয়ে ফকীহগণ একমত। হানাফী ফকীহ ইবন আবিদীন বলেন, সরকারী কর্মচারীগণ কর্তৃক উপঢৌকন গ্রহণ হালাল নহে। কারণ এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) হইতে নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে। ইবন হাবীব বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান বিচারক, কর্মকর্তা

২৩২

প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের উপহারাদি গ্রহণ মাকরূহ হওয়ার বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে কোন মতভেদ নাই। ইমাম মালেকসহ মুহাদ্দিসগণ ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতেরও এই মত। মহানবী (সা)-এর উপহার উপঢৌকন গ্রহণের বিষয়ে বলা হইয়াছে যে, ইহা তাহার জন্য একটি ব্যতিক্রমধর্মী (oes_) বিষয়। কারণ তিনি ছিলেন নিষ্পাপ ও নির্লোভ। উমার ইবন আবদুল আযীয (র) তাঁহাকে প্রদত্ত উপঢৌকন ফেরত প্রদান করিলে তাহাকে বলা হইল যে, মহানবী (সা) উপঢৌকন গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি উত্তরে বলেন, উহা তাঁহার জন্য ছিল উপঢৌকন, কিন্তু আমাদের জন্য ঘুষ।

রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক উপহার-উপঢৌকন প্রদান দুইভাবে হইতে পারে। তাহার ব্যক্তিগত মাল হইতে তল্কর্তৃক উপহার প্রদান সর্বোতভাবে বৈধ। ইহা ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে গণ্য হইবে। সরকারের কোন সেবা প্রদানের পরিবর্তে অথবা জাতির জন্য বিশেষ কোন অবদান রাখার জন্য কোন ব্যক্তিবিশেষকে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক উপহার প্রদান বৈধ। অবশ্য এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধানকে জাতির সার্বিক কল্যাণের দিকটি বিবেচনায় রাখিতে হইবে। নিজ ইচ্ছামত যাহাকে খুশি উপঢৌকন প্রদান অনুমোদনযোগ্য নহে। কারণ তিনি কেবল জাতির সার্বিক স্বার্থেই সরকারী অর্থ ব্যয় করার অধিকারী হইতে পারেন।

বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত উপহার- উপঢৌকন রাষ্ট্রপ্রধান গ্রহণ করিতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রেও তাহাকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে যে, ইহার অন্তরালে কোন স্বার্থ উদ্ধারের মনোভাব লুকায়িত আছে কিনা।

ধারা-৯১৮ খলীফার বা রাষ্ট্রপ্রধানের উত্তরসুরি নির্বাচন রাষ্ট্রপ্রধান-এর মেয়াদ শেষের আগেই তাহার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য পরবর্তী খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

খলীফা তাহার পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করিয়া যাইতে পারিবেন। আহকামুস সুলতানিয়াতে উল্লেখ আছে যে, ক্ষমতাসীন খলীফা কর্তৃক পরবর্তী খলীফা মনোনয়ন করা বৈধ। কেননা হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা) খলীকা থাকা অবস্থায় হযরত উমার (রা)-কে নিজের স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করিয়া যান। অর্থাৎ

হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা) তাহার ওফাতকালে হযরত উমার (রা) সম্পর্কে ওসিয়াত লিখান, অতঃপর জনগণকে মসজিদে নববীতে সমবেত করিয়া বলেন, “আমি যাহাকে স্থলাভিষিক্ত করিয়াছি তোমরা কি তাহার উপর সন্তুষ্ট? আল্লাহর শপথ! সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বুদ্ধি-বিবেক প্রয়োগে আমি বিন্দুমাত্রও ক্রটি করি নাই। আমার কোন আত্মীয়-স্বজনকে নহে, বরং উমার ইবনুল খাত্তাবকে আমার স্থলাভিষিক্ত করিয়াছি। সুতরাং তোমরা তাহার নির্দেশ শুনিবে এবং আনুগত্য করিবে। তখন উপস্থিত সকলেই সমস্বরে বলিয়া উঠিলঃ আমরা তাহার নির্দেশ শুনিব ও মানিব” (তারীখুল উমাম, ২খ, ৬১৮)।

স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের পরে অবশ্যই তাহার প্রতি সাধারণ জনমত গ্রহণ জরুরী। জনমত তাহার বিপক্ষে গেলে তিনি পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত হইতে পারিবেন না। হযরত আবু বাকর (রা) কর্তৃক হযরত উমার (রা)-কে খলীফা মনোনয়নের পর অবশ্যই জনমত গ্রহণের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। ইহা দ্বারা এই কথাই প্রমাণিত হয় যে, নির্বাচিত স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি সাধারণ জনগণের সমর্থন থাকিতে হইবে।

ধারা—৯১৯ খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের উত্তরসুরি মনোনয়নের শর্তাবলী (১) রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হইবার জন্য ধারা (৯০০) মোতাবেক যে সকল যোগ্যতা ও শর্তাবলী বিদ্যমান থাকা দরকার, তাহার উত্তরাধিকারীর ক্ষেত্রেও সেই সকল যোগ্যতা ও শর্তাবলী প্রযোজ্য।

(২) উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন প্রকারে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ বৈধ নহে।

(৩) মনোনীত ব্যক্তিকে পরবর্তীতে মজলিসে শূরা বা পার্লামেন্ট অথবা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

খলীফার উত্তরাধিকারী নিয়োগে কি কি শর্ত থাকিতে হইবে এই বিষয়ে আহকামুস সুলতানিয়া গ্রন্থে বলা হইয়াছে যে, উক্ত ব্যক্তির নির্বাচনে সর্বাত্মকভাবে এই প্রচেষ্টা থাকিতে হইবে যে, তিনি যেন উক্ত পদের জন্য সবচাইতে যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হন এবং তাহার মধ্যে একজন খলীফার সকল যোগ্যতাও শর্তাদি পাওয়া যায় (আহকামুস সুলতানিয়া, পৃ. ২০, উর্দু সং)। উত্তরাধিকারী নির্বাচনে এই

২৩৪

কথা বিশেষভাবে পর্যালোচনা করিতে হইবে যে, তিনি যেন বর্তমান খলীফার নিকটাত্মীয় না হন। এ বিষয়ে হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা)-এর বক্তব্য পূর্বোক্ত ধারায় বিশ্লেষণে দেখা যাইতে পারে। হযরত আলী (রা)-এর ওফাতকালে লোকেরা জিজ্ঞাসা করিল, আমরা আপনার পুত্র হযরত হাসান (রা)-এর হাতে বাইয়াত করিব? জবাবে তিনি বলিলেনঃ আমি তোমাদেরকে নির্দেশও দিতেছি না, নিষেধও করিতেছি

। তোমরা নিজেরাই এ ব্যাপারে ভাল বিবেচনা করিতে পার (আল-মাসউদী, ২খ, ৪৬)। তিনি যখন আপন পুত্রদেরকে শেষ উপদেশ দান করিতেছিলেন ঠিক তখন জনৈক ব্যক্তি আরজ করিল, আমীরুল মুমিনীন! আপনি আপনার উত্তরসুরি মনোনয়ন করিতেছেন না কেন? জবাবে তিনি বলিলেনঃ আমি মুসলমানদেরকে সে অবস্থায় ছাড়িয়া যাইতে চাহি যে অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়িয়া গিয়াছিলেন।

স্বজনপ্রীতি সম্পর্কে হযরত আলী (রা) আরও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করিয়াছিলেন যখন তিনি খলীফা হিসাবে মিসরের নবনিযুক্ত গভর্নর হযরত মালিক ইবনে হারিস আশতার (র)-এর নিকট লিখিত ঐতিহাসিক নির্দেশনামা জারী করিয়াছিলেন। হযরত আলী (রা) ৩৭ হিজরী / ৬৫৮ খৃস্টাব্দে গভর্নর মালিককে উদ্দেশ্য করিয়া লিখিয়াছিলেনঃ “এ কথা ভুলিলে চলিবে না যে, শাসকদেরও আপন আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জন থাকে যাহারা তাহাকে ঘিরিয়া তাহাদের সম্পর্কের সুবিধা আদায় করিতে তৎপর হয়। তাহাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাহারা চক্রান্ত, ধোঁকাবাজি দুর্নীতি ও জুলুমের আশ্রয় লইতে পারে। তাহাদের কাহাকেও যদি তুমি নিকটে দেখিতে পাও তাহা হইলে সঙ্গে সঙ্গে যত ঘনিষ্টভাবেই তাহারা তোমার সহিত সম্পৃক্ত হউক না কেন, তাহাদের তাড়াইয়া দাও। দুষ্কৃতির গোড়া এবং আগা দুইটাই তোমার সমূলে উৎপাটন করিয়া ফেলিতে হইবে। কোন প্রকারের কালক্ষেপন না করিয়া তোমার আশেপাশের ঐ সকল নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আবর্জনা সাফ করিয়া ফেলিতে হইবে। তোমার সমর্থক ও আত্মীয়দেরকে কখনও ভূমির স্থায়ী ইজারা বা মালিকানা প্রদান করিবে না। পানির উৎসগুলিকে কোন অবস্থাতেই তাহাদের মধ্যে বন্দোবস্ত দিবে না। যদি তাহারা এ ধরনের সম্পদের অধিকার পাইয়া বসে, স্বাভাবিকভাবেই তাহারা তাহাদের প্রতিবেশীদের বা তাহাদের অংশীদারদের সেচ সুবিধায় হস্তক্ষেপ করিবার মাধ্যমে সকল অবৈধ মুনাফা লাভ করিয়া তোমার জন্য এই দুনিয়ার জীবনে দুর্নাম ও অপমান এবং পরবর্তী জীবনের জন্য শাস্তির কারণ হইয়া দাঁড়াইবে। যথার্থই ন্যায়বিচার করিবে। যাহারা শাস্তির উপযুক্ত তাহাদের শাস্তি দাও, তাহারা তোমার আত্মীয়ই হউক বা ঘনিষ্ট বন্ধুই হউক। তোমাকে অবশ্যই দৃঢ় ও সতর্ক থাকিতে হইবে। অন্যদের অধিকার প্রতিষ্ঠা

২৩৫

করিতে গিয়া যদি তোমার আপন লোকজনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবুও তাহাতে ভ্রুক্ষেপ করিও না। এ ধরনের কাজ তোমার জন্য বেদনাদায়ক হইতে পারে, এ ধরনের দুঃখ ও বেদনা সহ্য করিও এবং পরবর্তী জগতে যে কল্যাণ তোমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে তাহার প্রত্যাশা করিতে থাক। এগুলি কষ্টকর বােধ করিতে পার কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইহাই তোমার জন্য পরম কল্যাণ বহিয়া আনিবে (নাহজুল বালাগা, মালিক আশরকে লিখিত পত্রের অংশবিশেষ)।

খলীফা কর্তৃক মনোনীত উত্তরাধিকারী হিসাবে বিবেচিত ব্যক্তিকে অবশ্যই পরবর্তীতে মজলিসে শূরা বা জনগণ কর্তৃক সমর্থিত হইতে হইবে। মজলিসে শূরা অথবা জনগণ যদি উক্ত উত্তরাধিকারীকে প্রত্যাখ্যান করে তবে তাহার মনোনয়ন বাতিল বিবেচিত হইবে।

খলীফা যদি তাহার কোন নিকটাত্মীয়কে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন তবে সেক্ষেত্রে তাহার মনোনয়নের বৈধতা সম্পর্কে ফকীহদের মতভেদ রহিয়াছে। ফকীহদের একদলের মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত মজলিসে শূরা তাহার উত্তরাধিকারীকে গ্রহণ না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাহার মনোনয়ন স্থগিত থাকিবে। যদি তাহারা খলীফা কর্তৃক মনোনীত উত্তরাধিকারীকে বহাল রাখেন তবে তাহার মনোনয়ন বৈধ বিবেচিত হইবে। ফকীহদের দ্বিতীয় মত হইল : শুধুমাত্র খলীফা কর্তৃক মনোনীত উত্তরাধিকারী ব্যক্তি বৈধ বিবেচিত হইবে। কেননা খলীফা হইলেন উম্মতের আমীর বা নেতা। সুতরাং তাহার প্রতিটি নির্দেশ অবশ্য পালনীয়। মজলিসে শূরার অনুমোদনের কোন প্রয়োজন হইবে না।

তৃতীয় দলের মতেঃ খলীফা নিজে তাহার পিতাকে উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনয়ন দান করিতে পারিবেন। অনুরূপভাবে ভাই অথবা ঘনিষ্ট আপনজনদেরকেও উত্তরাধিকারী মনোনীত করিতে পারিবেন।

এই সকল ঘটনা হইতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, খেলাফত সম্পর্কে খেলাফায়ে রাশেদীন এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীদের সর্বসম্মত মত ইহাই ছিল যে, খেলাফত একটি নির্বাচন ভিত্তিক পদ, মুসলমানদের পারস্পরিক পরামর্শ এবং তাহাদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের মাধ্যমে তাহা কায়েম করিতে হইবে। বংশানুক্রমিকভাবে বা বল প্রয়োগের দ্বারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব তাহাদের মতে খেলাফত নহে। হযরত আবু মূসা আশআরী (রা) বলিয়াছেন, ইমারত হইতেছে পরামর্শের ভিত্তিতে।

২৩৬

ধারা—৯২০ নির্বাচিত উত্তরসুরির কার্যকালের সূচনা

নির্বাচিত উত্তরসুরির কার্যকাল বর্তমান খলীফার মেয়াদ শেষে আরম্ভ হইবে।

বিশ্লেষণ

নির্বাচিত উত্তরসুরির কার্যকাল কখন হইতে আরম্ভ হইবে এই বিষয়ে ফকীহদের মতভেদ রহিয়াছে। কাহারও মতে বর্তমান খলীফার মৃত্যুর পরেই তাহার কার্যকাল আরম্ভ হইবে। দ্বিতীয় মত হইলঃ উত্তরাধিকারী হিসাবে নির্বাচিত ব্যক্তি তাহার মনোনয়নের সময় হইতে কার্যকাল আরম্ভ হইয়া যাইবে। বর্তমান খলীফার মৃত্যু বা কার্যকালের সমাপ্তি বা পদত্যাগের প্রয়োজন নেই (আহ্কামুস সুলতানিয়া, উর্দু অনু, পৃ. ২২)।

ধারা—৯২১

নির্বাচিত উত্তরসুরির অপসারণ

সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া নির্বাচিত উত্তরসুরি খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের অপসারণ বৈধ নহে।

বিশ্লেষণ

কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া মনোনীত উত্তরসুরিকে অপসারণ করা যাইবে না। খলীফা অথবা মজলিসে শূরার এই অধিকার নাই যে, বৈধভাবে মনোনীত উত্তরাধিকারীকে কোন সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ ছাড়া অপসারণ বা বরখাস্ত করিতে পারে। যদি খলীফা কোন কারণ ছাড়া মনোনীত উত্তরাধিকারীকে বরখাস্ত করিয়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিকে উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনয়ন দান করেন তবে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যক্তির মনোনয়ন বাতিল গণ্য হইবে। প্রথম মনোনীত ব্যক্তি স্বপদে বহাল থাকিবেন। যদি প্রথম ব্যক্তি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিয়া থাকেন তবে তাহার পদত্যাগপত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির ঐ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত প্রথম ব্যক্তির নিয়োগ বহাল থাকিবে।

২৩৭ :

ধারা-৯২২

নির্বাচিত উত্তরসুরির অসম্মতি জ্ঞাপন

নির্বাচিত বা মনোনীত উত্তরসুরি খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের পদ গ্রহণে অসম্মতি জানাইতে পারেন।

বিশ্লেষণ

নির্বাচিত উত্তরাধিকারী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিতে পারিবেন। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি তাহার পদত্যাগপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন, সেক্ষেত্রে তাহার পদত্যাগ বৈধ বলিয়া গণ্য হইবে না। এমতাবস্থায় দেখিতে হইবে যদি ঐ পদের জন্য যোগ্য অন্য লোক থাকিয়া থাকে এবং তিনি ঐ পদ গ্রহণে ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তবে সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিয়া দ্বিতীয় ব্যক্তিকে নির্বাচিত কর। আর যদি ঐ পদের জন্য যোগ্য কোন লোক পাওয়া না যায় তবে সেক্ষেত্রে তাহার পদত্যাগ বৈধ হইবে না।

ধারা-৯২৩

প্রাদেশিক শাসক নিয়োগ আঞ্চলিক প্রশাসন পরিচালনার জন্য শাসক নিয়োগ করা যাইবে।

বিশ্লেষণ

আঞ্চলিক প্রশাসন পরিচালনার জন্য প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য একজন করিয়া আঞ্চলিক প্রশাসক নিয়োগ করা যাইবে। খুব সম্ভব ওয়াদী আল-কুরা ছিল কেন্দ্র হইতে প্রেরিত সর্বপ্রথম গভর্নর শাসিত এলাকা। সপ্তম হিজরীর প্রথমভাগে উমাইয়া গোত্রের বিখ্যাত সাঈদী পরিবারের আমর ইবন সাঈদ সংশ্লিষ্ট এলাকার গভর্নর নিযুক্ত হন। ওয়াদী আল-কুরাতেই তাহার কার্যালয় ছিল। অপর এক বর্ণনা হইতে জানা যায় যে, বিশাল এক এলাকা শাসনের জন্য তাহাকে গভর্নর হিসাবে নিয়োগ করা হইয়াছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল ছিলেন। অর্থাৎ তিনি প্রায় চার বৎসর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অধীনে আঞ্চলিক শাসকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করেন। বালাযুরী ও যুবাইরীর মতে ঠিক একই সময়ে “তায়মা” অঞ্চল অধিকারে আসিলে উমাইয়া গোত্রের অপর সদস্য

২৩৮

ইয়াযীদ ইবন আবু সুফিয়ানকে উক্ত এলাকার গভর্নর নিযুক্ত করা হয় (জুবায়রী, পৃ. ১৭৮)। অতঃপর খায়বার এলাকার জন্য খাযরাজের বনু নাজজার গোত্রের সদস্য সাওয়াদ ইবন গাযিয়া (রা) গভর্নর হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন (ফুতুহুল বুলদান, পৃ. ৪৮)। এক বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সাকীফ গোত্রের হুবাইরা ইবন শিবল ইহার প্রথম গভর্নর নিযুক্ত হন (উসদুল গাবা, ২খ, ৩৭৪)। কিন্তু শীঘ্রই তাহার পরিবর্তে আত্তাব ইবন আসীদ নামক এক যুবক এবং বলা যায় এক বালক ১৮ বছরের তরুণকে গভর্নর হিসাবে নিয়োগ করা হয়। এই যুবক উমাইয়া গোত্রভুক্ত ছিলেন, যিনি কুরাইশদের বড় বড় প্রখ্যাত নেতার মুকাবিলায় এহেন গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করিয়াছিলেন (মুহাম্মাদ এট মদীনা, পৃ. ১০৫-১৭)। সম্ভবত ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে এই নিয়োগ কার্যকর হয়। চতুর্দশ হিজরী এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)-এর খেলাফত আমলের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল ছিলেন (ইবন সাদ, ২খ, ১৪৫)।

রাষ্ট্রীয় সেবার জন্য গভর্ণরের বেতন নির্ধারিত হইয়াছিল মাসিক ৪০ উকিয়াহ রৌপ্য। পরবর্তী বছরে তাইফ মদীনার কর্তৃপক্ষের অধীনে আসিলে স্বাভাবিকভাবেই তাহা একজন আঞ্চলিক গভর্নরের কর্তৃত্বাধীন হয়। এখানেও একজন ১৮ বছরের তরুণকে গভর্নর হিসাবে নিয়োগ করা হয়। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাক্ষাতপ্রার্থী মদীনায় অপেক্ষারত তাইফী প্রতিনিধিদলের অন্তর্ভুক্ত সাকীফ গোত্রের উসমান ইবনুল আস। উসমানও মক্কার গভর্নরের মত দীর্ঘদিন গভর্নরের পদে বহাল ছিলেন। অর্থাৎ হযরত উমার (রা)-এর খেলাফতের প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত তিনি গভর্নর পদে বহাল ছিলেন।

ধারা-৯২৪ সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রী নিয়োগ সরকার পরিচালনার জন্য খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান মন্ত্রী নিয়োগ করিতে পারিবেন।

বিশ্লেষণ

সরকার পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানকে সাহায্য করিবার জন্য তাহার একটি মন্ত্রী পরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদ থাকিবে। কুরআন মজীদে অতীতের অনেক সরকারের

২৩৯

আলোচনায় আল্লাহ পাক তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীপরিষদের কথাও উল্লেখ করিয়াছেন। যেমন হযরত ইউসুফ (আ)-এর সময়কালে তৎকালীন মিসরীয় সরকার প্রধান তাহার মন্ত্রী পরিষদের উদ্দেশ্যে বলিয়াছিলেনঃ

.

i

يائها الم؟ أفتوني في رؤيا ان گنتم للرؤياء تعبرون

• (5Y: & 128) “হে পারিষদবর্গ! তোমরা যদি স্বপ্নের ব্যাখ্যা জান তবে আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান কর” (সূরা ইউসুফ : ৪২)।

وقال فرعون يايها الم” (قصص)

“ফেরাউন বলিল, হে পারিষদবর্গ”

ايها الملا ام يأتينى بعرشها قبل أن يأتونى مسلمون

• (ry : L iss) “হে পারিষদবর্গ! তোমাদের মধ্যে কে আছে যে তাহার (বিলকিসের) সিংহাসন আমার সামনে উপস্থিত করিতে পারে, তাহাদের মুসলমান হিসাবে আমার নিকট আসিবার পূর্বেই” (সূরা নামল : ৩৭)।

বিলকিস হযরত সুলায়মান (আ)-এর পত্র লইয়া তাহার মন্ত্রীবর্গের সহিত পরামর্শ করিয়াছিলেন, বলিয়াছিলেন, “আপনারা আমাকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিন” (সূরা নামল : ৩২)।

হযরত ইউসুফ (আ)-ও তঙ্কালীন মিসরীয় রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁকে মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগের সুপারিশ করিয়াছিলেন। এ বিষয়ে বলা হইয়াছে।

قال اجعلنى على خزائن الأرض انى حفيظ علي (سورة

(৫০ : ৫ “সে বলিল, আপনি আমাকে “কৃষি ও খাদ্য ভাণ্ডারের দায়িত্ব দিন। আমি নিশ্চয় এ ব্যাপারে ভাল আমানতদার এবং বিজ্ঞ “ (সূরা ইউসুফ : ৪৫)।, হযরত মূসা (আ) তাঁহার ভাই হারূন (আ) সম্পর্কে বলিয়াছিলেন?

واجعل لي وزير امن اهلى هارون الجی (طه : ۲۸-۲۹)

“আপনি আমার পরিবার হইতে আমার ভাই হারূনকে আমার উজীর মনোনীত করুন” (সূরা ত্বহা : ২৮-২৯)।

২৪০

মন্ত্রী নিয়োগ সম্পর্কে হাদীসে বলা হইয়াছে?

عن انس رضی الله تعالى عنه قال قال رسول الله اذا اراد الله بالامير خيرا جعل له وزيرصدق ان نسي ذكره وان ذكر اعانه

رواه أبو داود والنسائي على معرفة مشكوة) .

“হযরত আনাস (রা) বলন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ পাক যখন কোন শাসকের মঙ্গল কামনা করেন তখন তাহার জন্য ভাল সত্যবাদী উজীর দান করেন। শাসক কোন কিছু ভুলিয়া গেলে সে তাহা স্মরণ করাইয়া দেয় এবং পরামর্শ চাহিলে তাহাকে সাহায্য করে” (আবু দাউদ ও নাসাঈ হইতে মিশকাত, কিতাবুল ইমারা, পৃ. ৩২২)।

ধারা-৯২৫

কর্মকর্তা নিয়োগ সরকার বিভিন্ন দায়িত্বে কর্মকর্তা নিয়োগ করিতে পারিবে

বিশ্লেষণ

সরকার প্রয়োজন মনে করিলে বিভিন্ন কাজে কর্মকর্তা নিয়োগ করিতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সা) প্রশাসনিক কিংবা অন্যান্য সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করিতেন। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি কিছু সংখ্যক সাহাবীদের নিকট কর্তৃত্ব ন্যস্ত করিতেন। দুইটি কারণে এই বিষয়টি জরুরী ছিল। প্রথমতঃ দিন দিন জটিলতর রূপ ধারণ করা একটি বৃহত্তর সমাজের বিষয়সমূহকে ব্যক্তিবিশেষের একার পক্ষে নজর দেওয়া বাস্তব ক্ষেত্রে একরূপ অসম্ভব ছিল। দ্বিতীয়তঃ তিনি এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে সচেতন ছিলেন যে, অন্য কোন বিষয় ছাড়াও তাহার সাহাবী ও অনুসারীদেরকে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করিয়া তোলা বড়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাহাতে তাঁহার ইন্তিকালের পর তাহারা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করিতে পারেন। বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট সেনাপতির দায়িত্ব অর্পণ, আঞ্চলিক বিভিন্ন প্রশাসক ও গভর্নর নিয়োগ এবং বহু সংখ্যক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধির নিকট কর্তৃত্ব হস্তান্তরই বস্তুত তাঁহার উপলব্ধি সম্বন্ধে প্রমাণ বহন করে। যখনই প্রয়োজন হইয়াছে তখনই তিনি সাহাবীদের ডাকিয়া তাহার পক্ষে তাহাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করিয়াছেন।

২৪১

তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও নিয়োগ করিয়াছেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ সাধারণত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্পন্ন করার জন্য নিযুক্ত হইতেন। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে তাহারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করিতেন। বর্ণিত আছে যে, তিনটি বিভিন্ন ঘটনায় হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রা) মুসলিম সৈনিকদের দ্বারা অজ্ঞতাবশত নিহত পরিবারকে রক্তপণ দানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন। বনু জাযীমাহ ও মক্কার লোকদের নিকট তিনি যথাক্রমে ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাস এবং ৮ম হিজরীর রম্যান / জানুয়ারী মাসে পৌঁছিয়াছিলেন (ইবন হিশাম, ২খ, পৃ. ৩৪০)।

ইতিপূর্বে ষষ্ঠ হিজরীর জামাদিউস-সানী মাসে তিনি জুমের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ও বন্দীদের ফিরাইয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেন। তাবুক অভিযানের অব্যবহিত পূর্বে কুরাইশ গোত্রের তায়ম পরিবারের তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ (রা) মুনাফিকের আড্ডাখানা হিসাবে ব্যবহৃত একটি গৃহ ধ্বংস করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন (ওয়াকিদী, পৃ. ৫৫৯)।

উসদুল গাবা গ্রন্থে উল্লেখিত আছে যে, আসলাম গোত্রের জনৈক মহিলার ব্যভিচার প্রমাণিত হইলে তাহার স্বগোত্রের উনাইস ইবন আদ্-দাহহাককে প্রস্তর নিক্ষেপ করিয়া (রজম) হত্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছিল ( ইব্‌ন খালদূন, পৃ. ৮১৯)।

এক খৃস্টান প্রজা দেশের আইন মানিতে অস্বীকার করিলে হযরত উমার ইবন খাত্তাব (রা)-কে বিষয়টির নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তিনি তাহার অর্ধেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন (তাবারী, ৩খ, পৃ. ১১০)। একটি হাদীস অনুযায়ী দুই সহােদর ভ্রাতার মধ্যকার সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলার মীমাংসার জন্য হানযালা ইবন আল-ইয়ামান দায়িত্বপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন (উসদুল গাবা, ৪খ, ৫২-৭২)।

বিভিন্ন সরকারী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসনে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের প্রয়োজন হইতে পারে। বিভিন্ন সূত্রমতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অধীনে কিছু বেসামরিক কর্মকর্তা ছিলেন যাহাদেরকে বলা হইত আযিন (আহবানকারী), বাওয়াব (দ্বাররক্ষী) এবং হাজিব (গেটপ্রহরী)। কাত্তানী তাহাদেরকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের কর্মী বিবেচনা করিয়াছেন। আসলে কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী তিনটি শব্দ বা পরিভাষা যতভাবেই ব্যবহৃত হউক না কেন, কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী বুঝা যায় যে, সেগুলি একটি ‘পদ’ এবং উহা একটি কর্মচারীর প্রতিই নির্দেশ করে। বস্তুত একজন দ্বাররক্ষী নিযুক্তির উদ্দেশ্য ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোন উপলক্ষে রাসূলুল্লাহ

২৪২

(সা)-এর সাক্ষাতপ্রার্থী জনতার ঢলকে নিয়ন্ত্রণ করা। বুখারী শরীফের এক হাদীসে উল্লেখ আছে যে, শাসক ও আল্লাহর রাসূল হিসাবে দ্বৈত ক্ষমতার আধার রাসূলুল্লাহ (সা) যে কোন সময় যে কোন স্থানে সাধারণ মুসলমানদের তথা রাষ্ট্রের সর্বস্তরের নাগরিককে সাক্ষাত দিতেন (কাত্তানী, পৃ. ২৪-২৬)।

তবুও রাজনৈতিক কারণে বা সময়ের দাবির প্রেক্ষিতে কখনো কখনো দর্শকদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন দেখা দিত। বনু কায়নুকা অভিযানকালে ২য় হিজরীতে এই ধরনের কর্মচারী নিয়োগের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। ওয়াকিদীর মতে বনু কায়নুকার কাহাকেও দেশান্তর করিবার সিদ্ধান্তের পর তাহাদের হালীফ (মিত্র) আবদুল্লাহ ইবন উবাই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাক্ষাতপ্রার্থী হইয়াছিলেন। দ্বারদেশে তিনি আওয়াম ইবন সাঈদের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হন। কেননা দ্বাররক্ষী তাহাকে এই কথা বলিয়া প্রতিহত করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করিবেন না। ইহার ফলে ইবন উবাই আওয়ামকে এক পার্শ্বে ঠেলিয়া বলপূর্বক প্রবেশের প্রয়াস পান। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ফলে আবদুল্লাহ আহত হন। এই ঘটনা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ (সা) আবদুল্লাহকে দোষী সাব্যস্ত করেন (ওয়াকিদী, পৃ. ১৭৮)।

৯ম হিজরীতে বিশেষ ঘটনার সময় রাসূলুল্লাহ (সা) গৃহদ্বারে রাবাহ নামক এক ব্যক্তিকে আযিন নিযুক্ত করিয়াছিলেন (বুখারী, ইলম, নিকাহ, তালাক)। বালাযুরী ও তাবারীর মতে রাবাহ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্থায়ী আযিন-এর দায়িত্ব পালন করেন (কাত্তানী, ১খ, ৪)। মুহাম্মদ ইবন হাবিব আল-বাগদাদী তাহাকে হাজিব গণ্য করেন (তাবারী, ৩খ, ১৭১)। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু মূসাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আযিন বলিয়া দাবি করা হইয়াছে। একদিন তিনি হযরত আবু বাকর ও হযরত উমার (রা)-কে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করেন এবং অন্যদেরকে বাধা দেন (বুখারী, আদাব)। উদস-এর এক তথ্য হইতে জানা যায় যে, কুরাইশ গোত্রের আবদুল্লাহ ইবন যামআ আসাদীর ইসলাম গ্রহণের পর দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আজীবন রাসূলল্লাহ (সা)-এর দ্বাররক্ষীর দায়িত্ব পালন করিয়াছিলেন। ইমাম কাসতাল্লানী ও তাঁহার সম্পাদক যুরকানীর মতে তিনি তাহার সেবার বিনিময়ে কোন বেতন গ্রহণ করিতেন না।

২৪৩

ধারা-৯২৬

রাষ্ট্রের বিভাগসমূহ রাষ্ট্রের প্রধানত চারটি বিভাগ থাকিবে : (১) আইন বিভাগ; (২) নির্বাহী বিভাগ; (৩) বিচার বিভাগ এবং (৪) প্রতিরক্ষা বিভাগ।

বিশ্লেষণ

ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য চারটি বিভাগ থাকিবে। তাহা হইল, (ক) আইন প্রণয়ন বিভাগ, (খ) নির্বাহী বা শাসন বিভাগ, (গ) বিচার বিভাগ এবং (ঘ) প্রতিরক্ষা বিভাগ।

(ক) আইন প্রণয়ন বিভাগ ও ইসলামে আইনদাতা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। সেই আইন তাঁহারই মনোনীত প্রতিনিধি রাসূল মুহাম্মাদ (সা)-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিল হইয়াছে। তিনি সেই আইন নিজে পালন করিয়াছেন, জনসাধারণকে শুনাইয়াছেন, শিক্ষা দিয়াছেন, প্রচার করিয়াছেন এবং প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা দিয়াছেন। তিনি আল্লাহর নির্দেশ, অনুমতি ও শিক্ষা অনুযায়ী উপবিধি তৈয়ার করিয়াছেন এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে তাহা কার্যকর করিয়াছেন, জনসাধারণের উপর জারি করিয়াছেন। প্রয়োজনবােধে আল্লাহর আইন আদেশকে, রাসূলুল্লাহ (সা) প্রদত্ত ব্যাখ্যা এবং খুলাফায়ে রাশেদুনের আমলে তাহার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সূক্ষ্ম অধ্যয়ন, অনুধাবন, অনুসরণ ও কার্যকারণ ইত্যাদির আলোকে সমসাময়িক সমাজ-পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আইন রচনা করা যাইবে। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আল্লাহর দেয়া আইন পর্যায়ে মানুষের যতটুকু এবং যাহা কিছু করণীয় তাহা সম্পাদনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সংস্থা থাকিবে, যাহাকে মজলিসে শূরা বা আইন পরিষদ বলা হইবে।

ইসলামী আইন কার্যকর হইবার চারটি পর্যায় রহিয়াছে : (১) আইন রচনা আল্লাহর কাজ (২) আইন সন্ধান, বিধিবদ্ধকরণ এবং যেসব ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহতে আইন দেওয়া হয় নাই সেখানে মজলিসে শূরার কাজ; (৩) আইন কার্যকরকরণ (নির্বাহী পর্যায়ের আইন) নির্বাহী কর্মকর্তার কাজ এবং (৪) আইনের ভিত্তিতে পারস্পরিক নিষ্পত্তি ও অপরাধীকে দণ্ডদান বিচার বিভাগের কাজ।

(খ) নির্বাহী বিভাগ ও আইনসমূহ যথাযথ প্রয়োগের জন্য সরকারের একটি নির্বাহী বিভাগ থাকিবে। বস্তুত কুরআন ও সুন্নাহ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক ও

২৪৪

ব্যবহারিক জীবনে বাস্তবভাবে প্রয়োগ ও অনুসরণের জন্য। মজলিসে শূরা যে চিন্তা-গবেষণা (ইস্তিত) করিয়া পারস্পরিক আলোচনা-পর্যালোচনা করিয়া যে আইনসমূহ বিধিবদ্ধ করিবে তাহারও চরম লক্ষ্য ইহাই। এই আইনসমূহ যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্রের একটি বিভাগকে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকিতে হইবে। আইনকে অন্ধ নির্বিচার রাষ্ট্র শক্তির সাহায্যে শুধু জারী করাই উদ্দেশ্য নহে; বরং ইসলামের আসল উদ্দেশ্য হইতেছে সেই আইনের ভিত্তিতে ব্যক্তি, সমাজ ও পরিবার গঠন এবং লালন। সেজন্য পূর্ণ সতর্কতা, সহনশীলতা, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতার সহিত নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করা একান্ত প্রয়োজন। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

ان الانسان لفي خسر الا الذين آمنوا وعملوا الصلخت

وتواصوا بالحق وتواصو بالصبر (سورة العصر) .

“মানুষ নিশ্চয় ক্ষতির মধ্যে নিপতিত। কেবল তাহারা ব্যতীত যাহারা ঈমান আনিয়াছে, নেক আমল করিয়াছে, পরস্পর পরম সত্য ও কল্যাণের উপদেশ ও পরামর্শ দিয়াছে এবং ধৈর্য ধারণের জন্য পরস্পরকে উৎসাহিত করিয়াছে” (সূরা আল-আসর)।

প্রশাসনিক দুর্বলতা গোটা রাষ্ট্রকেই দুর্বল করিয়া দেয়। তাই প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগে কখনও দুর্বলতা প্রকাশ করা উচিত নহে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

ولا تأخذگم بهما رأفة في دين الله ان كنتم تؤمنون بالله واليوم

• (Y: ১৪ ৪১৯)। “সেই দুইজনকে আল্লাহর আইনের দণ্ড দানের ব্যাপারে তোমাদেরকে যেন কোনরূপ দয়া, অনুগ্রহ পাইয়া না বসে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও” (সূরা নূর : ২)।

আল্লাহর বিধান প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই সমাজের উপর কার্যকর করিতে হইবে, “হদ্দসমূহ জারী করিতে হইবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। এ সকল কাজ যেমন একান্ত জরুরী, তেমনি তাহা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই নির্বাহী শক্তির সাহায্যেই আঞ্জাম দিতে হইবে। এই কাজের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের উপর ছাড়িয়া দেওয়া যায় না। মানুষকে আইন নিজেদের হাতে তুলিয়া লইবার সুযোগ দেওয়া যায় না। অন্যথায় সমাজে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি হইতে বাধ্য

২৪৫

এবং তাহাতে মানুষের উপর নির্বিচার জুলুম হওয়া, মানুষের মর্যাদা বিনষ্ট হওয়া এবং মানুষের মানবাধিকারও হরণ হওয়া নিশ্চিত। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও নির্বাহী সংস্থা

এইজন্যই একটি অপরিহার্য বিভাগ। এই বিভাগটিই হইবে এই কাজের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তৃত্বশীল (আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার, পৃ. ১৭০-৭২)।

(গ) বিচার বিভাগ ও সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করিতে হইলে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ থাকিতে হইবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে উল্লেখ করা হইয়াছে?

.৪৫,

لقد أرسلنا رسلنا بالبنت وانزلنا معهم الكتب والميزان ليقوم

الناس بالقسط و أنزلنا الحديد فيه باس شديد ومنافع للناس

له بالغيب إن الله قوى عزيز(سورة

ويعلم الله من ينصره و الحديد : ۲۰)

“আমরা আমাদের রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাদিসহ পাঠাইয়াছি এবং তাহাদের সঙ্গে দিয়াছি কিতাব ও মানদণ্ড, যেন লোকেরা ইনসাফ ও সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে এবং লৌহ নাযিল করিয়াছি। উহাতে রহিয়াছে প্রচুর শক্তি এবং জনগণের জন্য বিপুল কল্যাণ। এসকল কাজের উদ্দেশ্য হইতেছে যেন আল্লাহ জানিতে পারেন কে তাহাকে এবং তাহার রাসূলগণের সাহায্য করে আগাইয়া আসে। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই শক্তিমান, মহাপরাক্রমশালী” (সূরা আল-হাদীদ ও ২৫)।

ইমাম ফখরুদ্দীন আল-রাযী এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলিয়াছেন, আল্লাহ রাসূলগণকে “কিতাব” ও “মিযান” দিয়াছেন, কিতাব বলিতে নিশ্চয় যবুর, তাওরাত, ইঞ্জীল ও ফুরকান (কুরআন) বুঝানো হইয়াছে। কিন্তু মিজান-এর অর্থ কি? আভিধানিকরা ইহার অর্থ করিয়াছেন তুলাদণ্ড, দাড়িপাল্লা, যাহা দ্বারা কোন জিনিস ঠিকভাবে ওজন করা হয়। ইহার পরোক্ষ অর্থ হইতেছে ন্যায়বিচার, সুবিচারের নীতি

ও আইন। কুরআনে বলা হইয়াছে?

الله الذي أنزل الكتاب بالحق والميزان (الشوری : ۱۷)

“আল্লাহ তো তিনিই যিনি পরম সত্যতা সহকারে কিতাব ও মীযান নাযিল করিয়াছেন” (সূরা আশ-শূরা : ১৭)।

কিতাব ও মীযান নাযিল করা এবং লৌহধাতু ও লৌহশক্তি (রাষ্ট্র) সৃষ্টির মুখ্য উদ্দেশ্য হইতেছে মানবসমাজে ইনসাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা (তাফসীরে কবীর, ২৯খ, পৃ. ২৪০-৩)।

২৪৬

সূরা নিসাতে আল্লাহ পাক উল্লেখ করিয়াছেন।

انا أنزلنا اليك الكتاب بالحق لتحم بين الناس بما أراك الله

. assif &v, “নিশ্চয় আমরা তোমরা প্রতি এই কিতাব (কুরআন) নাযিল করিয়াছি এই উদ্দেশ্যে যে, তুমি লোকদের পরস্পরের মধ্যে বিচার ফয়সালা করিবে আল্লাহর দেখানো নিয়মে এবং তুমি কখনো খেয়ানতকারী লোকদের পক্ষপাতী হইবে না” (সূরা নিসা : ১০৫)।

সূরা আল-মায়েদাতে আরও বলা হইয়াছে?

وإن حكمت فاحكم بينهم بالقسط ان الله يحب المقسطين

• (: LI58) “তুমি যদি বিচার ফয়সালা কর, তাহা হইলে তাহাদের মধ্যে পূর্ণ ইনসাফ সহকারে বিচার ফয়সালা কর। আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালবাসেন (৫ঃ ৪২)।

আরও বলা হইয়াছে : “অতএব তুমি লোকদের মধ্যে আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট আগত পরম সত্য হইতে বিমুখ হইয়া লোকদের ইচ্ছা-বাসনার অনুসরণ করিও না “ (৫ঃ ৪৮)।

(ঘ) সামরিক বিভাগ : প্রাথমিক পর্যায়ে মূলত রাষ্ট্রের প্রশাসনই ছিল একমাত্র বিভাগ। পরবর্তী কালে প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র বিভাগসমূহ গড়িয়া উঠে। সর্বপ্রথম হযরত উমার ফারূক (রা) তাঁহার খেলাফতকালে সামরিক বিভাগকে প্রশাসন হইতে প্রথক করিয়া রাষ্ট্রের একটি স্বতন্ত্র মৌলিক শাখার রূপ দান করেন। পরবর্তী কালে হযরত আলী (রা) তাঁহার খেলাফতকালে বিচার বিভাগকে প্রশাসন হইতে পৃথক করিয়া রাষ্ট্রের একটি স্বতন্ত্র ও মৌলিক শাখার রূপ দান করেন। রাষ্ট্রের চতুর্থ শাখা আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করিত মজলিসে সূরা।

ধারা-৯২৭

সরকারের জবাবদিহিতা সরকারের কার্যাদির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করিতে হইবে এবং এ বিষয়ে শাসনতন্ত্রে ধারা থাকিবে।

২৪৭

বিশ্লেষণ

সরকার তাহার সকল কার্যাদির ব্যাপারে জবাবদিহিতার জন্য বাধ্য থাকিবে। শাসন কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা-এখতিয়ার, অর্থসম্পদ আল্লাহ এবং মুসলমানদের আমানত। আল্লাহভীরু, ঈমানদার ও ন্যায়পরায়ণ লোকদের হাতে তাহা ন্যস্ত করা উচিত। কোন ব্যক্তি নিজের ইচ্ছামত বা স্বার্থবুদ্ধি প্রণােদিত হইয়া এই আমানত খেয়ানত করিবার অধিকার রাখে না। এই আমানত যাহাদের সোপর্দ করা হইবে তাহারা এজন্য জবাবদিহি করিতে বাধ্য থাকিবে। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

إن الله يأمركم أن تؤدوا الأمانت إلى أهلها واذا حكمتم بين الناس أن تختموا بالعدل ط ا الله نعما يعلم به ط إن الله كان سميا بصيرا (سورة النساء : ۵۸) .

“আল্লাহ নিশ্চয় তোমাদেরকে এই নির্দেশ দিয়াছেন যে, আমানতগুলিকে তোমরা তাহার যোগ্য পাত্রে ন্যস্ত করিবে এবং জনগণের মধ্যে শাসনকার্য পরিচালনা করিতে প্রবৃত্ত হও তখন যখন তাহা পরিচালনা করিবে আম্‌দল অনুসারে। কতই না সুন্দর সেই বিষয়টি যাহার সম্বন্ধে আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিয়াছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বশ্রষ্টা” (সূরা নিসা : ৫৮)।

বর্ণিত আয়াত হইতে বুঝা যায় যে, রাষ্ট্র একটি আমানত। রাষ্ট্রের সকল সম্পত্তি একটি আমানত। সুতরাং সরকারের প্রতিটি কাজ হইতে হইবে আমানতদারির সহিত, দায়িত্বশীলতার সহিত, জবাবদিহিতার সহিত। রাষ্ট্রের এই আমানত সম্পর্কে বিশিষ্ট পণ্ডিত ড. মজিদ খান্দুরি বলেন : ইসলামে আল্লাহ প্রত্যক্ষ শাসক নন। আল্লাহর খলীফাই প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষ শাসক। রাষ্ট্রের আগে আইনের জন্ম সুতরাং রাষ্ট্র আইনকে জন্ম দেয় না, বরং আইনই রাষ্ট্রকে জন্ম দেয়”।

সরকারের জবাবদিহিতা সম্পর্কে বলিতে গিয়া মুফতী মোহাম্মদ শফি (র) বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করিয়াছেন যে, (১) সমস্ত সরকারী সম্পত্তি, অর্থ ও পদ অর্জন, গ্রহণ, ভোগ এবং ব্যয় করিবেন শাসক এবং রাষ্ট্র পরিচালকগণ আমানতের রক্ষী হিসাবে, এগুলিতে তাহাদের মালিকানা নাই। ভোগ ও ব্যয়ের ব্যাপারে তাহারা আইনের সীমার মধ্যে চলিতে বাধ্য।

(২) এই সকল আমানত শাসক এবং পরিচালকেরা জনসাধারণের স্বার্থে বিলি ব্যবস্থা করিবেন এবং যোগ্যতা অনুযায়ী বন্দোবস্ত, বিতরণ প্রভৃতি কার্য করিবেন। ইলা আলিহা’ শব্দের অর্থে এই জাতীয় ইঙ্গিত আছে।

২৪৮

(৩) মানুষের মধ্যে যোগ্যতা এবং কৃতিত্বের স্তরভেদ আছে। আমানত বিতরণের সময় সে স্তরভেদ লক্ষ্য রাখিতে হইবে। সব লোক সব কিছুই দাবি করিতে পারিবে না।

(৪) যদি সরকার পরিচালকগণ কোন অযোগ্য লোকের হাতে কোন পদ বা সম্পদ তুলিয়া দেন তবে তাহারা আমানতের খেয়ানতকারী হিসাবে চিহ্নিত হইবেন এবং ইহার জন্য জবাবদিহি করিতে বাধ্য থাকিবেন।

সরকারের জবাবদিহিতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেনঃ

م

راع وكلكم مسئول عن رعيته الإمام الأعظم الذي

أ على الاس راع وهو مسئول عن رعيته (رواه البخاري في كتاب الأحكام ولمسلم في كتاب الامارات) .

_)

“সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তাহার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে। জনগণের সর্বোচ্চ শাসক দায়িত্বশীল। তাহাকে তাহার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে।

ما من وال نیلی رعية من المسلمين فيموت وهو غاش لهم الأ

حرم الله عليه الجنة .

“যিনি মুসলিম প্রজাদের কাজ-কারবারের প্রধান দায়িত্বশীল, তিনি যদি তাহাদের সাথে প্রতারণা এবং খেয়ানতকারী অবস্থায় মারা যান তাহা হইলে আল্লাহ তাহার জন্য জান্নাত হারাম করিয়া দিবেন” (বুখারী, আহকাম, বাব ৮; মুসলিম, ঈমান, বাব ৬১; ইমারাত, বাব ৫)।

ما من أميريلي امر المسلمين ثم لا يجهد لهم ولا ينصح

الأ لم يدخل معهم في الجنة.

“মুসলিম রাষ্ট্রের কোন পদাধিকারী শাসক যিনি নিজের পদের দায়িত্ব পালন করিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা করেন না, নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালন করেন

, তিনি কখনও মুসলমানদের সহিত জান্নাতে প্রবেশ করিবেন না” (মুসলিম, ইমারা, বাব ৫)।

یا ابا ذر انك ضعيف وانها امانة وانها يوم القيامة خزي وندامة

الا من اخذ بحقها وادي الذي عليه فيها (کنز العمال) .

২৪৯

রাসুলুল্লাহ (সা) সরকারী দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে আবু যার (রা)-কে বলিলেন, “হে আবু যার! তুমি দুর্বল মানুষ, আর সরকারী পদ একটি আমান। কিয়ামতের দিন তাহা লজ্জা এবং অপমানের কারণ হইবে। অবশ্য তাহার জন্য নহে যে পুরাপুরি দায়িত্ব পালন করিবে এবং যথার্থভাবে উহা পালনে সক্ষম হইবে” (কানযুল উম্মাল, ৬খ, হাদীস নং ৬৮ ও ১২২)।

من أخوين الخيانة تجارة الولي في العيته

“শাসকের জন্য আপন প্রজাদের মধ্যে ব্যবসা করা সবচেয়ে নিকৃষ্ট খেয়ানত” (ঐ গ্রন্থ, হাদীস নং ৭৮)।

من ولی لناعم” ولم تكن له زوج؛ فليتخذ زوجة ومن لم يكن

الله خادم فليتخذ خادما أو ليس له مسكن فليتخذ مسكنا أو ليس له دابة فليتخذ دابه من اصاب سوى ذالك فهو غال او سارق (کنز

• ( L. 1 JL// “যে ব্যক্তি আমাদের রাষ্ট্রের কোন পদ গ্রহণ করে, তাহার স্ত্রী না থাকিলে সে বিবাহ করিবে, কর্মচারী না থাকিলে একজন কর্মচারী গ্রহণ করিবে, থাকিবার বাসস্থান না থাকিলে বাসা গ্রহণ করিবে। যাতায়াতের বাহন না থাকিলে সরকারী বাহন (গাড়ী) গ্রহণ করিবে। যে ব্যক্তি ইহার অধিক সুবিধাদি গ্রহণ করে সে খেয়ানতকারী অথবা চোর” (ঐ গ্রন্থ, ৬খ, হাদীস নং ৩৪৯)।

من يكن اميرا فانه من اطول الناس حسابا واغلظه عذابا ومن لا یگن اميرا فائه من ایسر الناس حسابا واهونه عذابا الأمراء اقرب الناس من ظلم المؤمنين ومن يظلم المؤمين قائما خفر الله

• (JLa15) “যে ব্যক্তি শাসক হইবে তাহাকে সবচেয়ে কঠিন হিসাব দিতে হইবে, আর সবচেয়ে কঠিন শাস্তির আশংকায় পতিত হইবে। আর যে ব্যক্তি শাসক হইবে না তাহাকে হালকা হিসাব প্রদান করিতে হইবে। তাহার জন্য হালকা শাস্তির আশংকা থাকিবে। কারণ শাসকের মাধ্যমে মুসলমানদের উপর যুলুমের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর যে ব্যক্তি মুসলমানদের উপর যুলুম করে সে আল্লাহর সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করে” (কানযুল উম্মাল, ষষ্ঠ খণ্ড, হাদীস ২৫০৫)।

২৫০

সরকারের জবাবদিহিতা সম্পর্কে হযরত উমার (রা) বলিয়াছেন?

الوهلك حمل من ولدالضان ضياعا بشاطي الفرات خشيت ان

• al-15 “ফোরাত নদীর তীরে যদি একটি বকরীর বাচ্চাও হারাইয়া যায় (বা ধ্বংস হয়) তবে আমার ভয় হইতেছে আল্লাহ আমাকে সেজন্যও জিজ্ঞাসাবাদ করিবেন”।

ধারা-৯২৮ নাগরিকদের উপর সরকারের অধিকার ক) নাগরিকগণ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করিবে।

(খ) সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত আইনসমূহ মান্য করিয়া চলিবে এবং শাসন শৃংখলায় বিভেদ সৃষ্টি করিবে না।

(গ) নাগরিকগণ সরকারের কাজে সহযোগিতা করিবে।

(ঘ) রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নাগরিকগণ জান-মাল দ্বারা সরকারকে সাহায্য করিবে।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রের নাগরিকগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য হইল তাহারা সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করিবে। বৈধ কোন কারণ ছাড়া সরকারের বিরোধিতা করা যাইবে না। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

أطيعوا الله وأطعوا الرسول وأولي الأمر منځم (سورة النساء : ۰۹)

“আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য করা রাসূলের এবং যাহারা তোমাদের মধ্যে উলিল-আমর” (সূরা নিসা : ৫৯)।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন?

من خلع يدا من امن طاعة لقي الله يوم القيامة لا حجة له من مات وليس في عنقه بيعة مات ميتة جاهلية – (رواه مسلم عن ابن عمر رضى الله تعالی عنه) .

২৫১

“যে ব্যক্তি ন্যায়ানুগ সরকারের প্রতি তাহার আনুগত্যের হস্তকে তুলিয়া নেয় (প্রত্যাহার করে) কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় আল্লাহর সামনে উপনীত হইবে যে, তাহার পেশ করার মত কোন যুক্তি থাকিবে না। যে ব্যক্তি নিজেকে আনুগত্যের শপথে আবদ্ধ না করিয়া মারা যায়, সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে।”

নাসায়ী এবং মুসলিমে আরও বলা হইয়াছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন :

اما رجل خرج يفرق بين أمتى فاضربواعنقه من أتاكم وامرگم جميع على رجل واحد يرايد يشق عصام او يفرق جماعتكم فاقتلوا (رواه النسائي عن ابن اسامة ولمسلم عن عرفضة) .

“আমার উম্মতের ঐক্য যে ব্যক্তি নষ্ট করিতে চাহে তাহার গর্দানে আঘাত হাননা। যখন তোমরা এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছ তখন যদি কেহ তোমাদের শক্তি নষ্ট করিতে বা ঐক্য ভঙ্গ করিতে চাহে তাহা হইলে তাহাকে হত্যা কর” (নাসায়ী ও মুসলিম ১, ইসলামে; রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা, পৃ. ৭৪-৫)।

নাগরিকগণ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত আইন মান্য করিয়া চলিবে, শাসন শৃংখলায় ফাটল সৃষ্টি করিবে না। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে উল্লেখ আছে?

لا تفسدوا في الأرض بعد اصلاحها.

“সংস্কার-সংশোধনের পর যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করিও না” (সূরা আরাফ : ৫৬)।

اما جزاء الين يحاربون الله ورسوله ويسعون في الأرض

فسادا أن يقتلوا أو يصلبوا ( سورة المائدة : ۳۳) .

“যাহারা আল্লাহ এবং রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তাহাদের শাস্তি এই যে, তাহাদেরকে হত্যা করা হইবে অথবা শূলিবিদ্ধ করা হইবে” (সূরা মায়িদা : ৩৩)।

জনগণ সরকারের ন্যায়ানুগ কাজে সহযোগিতা করিবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজিদে বলা হইয়াছে?

وتعاونوا على البر والتقوى (المائدة : ۲) .

“ভাল কাজে এবং তাওয়ার ব্যাপারে তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর” (সূরা মায়িদা : ২)।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে নাগরিকগণ তাহাদের জান-মাল দ্বারা সরকারকে সাহায্য করিবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে উল্লেখ আছে?

২৫২

مالكم اذا قيل لكم انفروا في سبيل الله اثاقلتم الى الأرض

كم عذاب أليما ويستبدل قوما غيركم ولا

…………………… الأنفوا تضروه شيئا ………………………………..انفروا خفافا وثقا وجاها بأموالكم وانقسم في سبيل الله ذلكم ير لكم إن تم تعلمون (سورة

• (2। – TA: 44J “তোমাদের কি হইয়াছে, আল্লাহর রাস্তায় বাহির হইতে বলিলে তোমরা জমিনকে আকড়াইয়া ধর? ….. তোমরা যদি বাহির হইয়া না পড় তাহা হইলে আল্লাহ তোমাদিগকে কঠোর শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে অন্য কোন জাতিকে বিকল্প দাঁড় করাইবেন। তোমরা তাহাদের কোন ক্ষতি করিতে পারিবে

।…. তোমরা (জিহাদে) বাহির হইয়া পড় হালকাভাবে অথবা ভারীভাবে এবং জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ কর। ইহা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝিতে পার” (সূরা তাওবা ও ৩৮-৪১)।

তকে বিকল্প দাড় করাঃ বাহির হইয়া পভু হতামাদের জন্য উৎ

ধারা-৯২৯ ইসলামী রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি নিম্নরূপ নীতিমালার ভিত্তিতে নির্ধারিত হইবেঃ

(ক) অন্য রাষ্ট্রের সহিত সম্পাদিত চুক্তির প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করিতে হইবে।

(খ) যুদ্ধ নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষা করিতে হইবে।

(গ) শত্রুভাবাপন্ন নহে এমন রাষ্ট্রের সহিত সুসম্পর্ক বজায় রাখিতে হইবে।

(ঘ) শত্রু রাষ্ট্রের সহিত প্রতিশোধ গ্রহণে বাড়াবাড়ি করা যাইবে না। (ঙ) পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

বিদেশী যে কোন রাষ্ট্রের সহিত সম্পাদিত চুক্তির প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করিতে হইবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

وافوا بالعهد ان العهد كان مسؤ؟ (سورة بنی اسرائیل :۳۵) .

“চুক্তি বা অঙ্গীকার পূর্ণ করিও। কেননা চুক্তি সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হইবে” (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৪)।

وأوفوا بعهد الله اذا غهم

ولا تنقضوا الأيمان بعد توكيدها ……………… ولا تكونوا كالتي نقضت غزلها من بعد قوة انكااتخون أيمانم ت بينكم أن تكون أممه هی آربی من امة اما يبلوكم الله به وليبين لكم يوم القيامة ما كنتم فيه تختلفون

• (৭ -৭: J ) “আল্লাহর সহিত কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করিও যখন তোমরা অঙ্গীকার কর। পাকাপোক্ত শপথ করিবার পর তাহা ভঙ্গ করিও না।…. তোমরা সেই মহিলার মত হইও না যে আপন শ্রম দ্বারা সুতা কাটিয়া পরে তাহা টুকরা টুকরা করিয়া ফেলে। এক জাতি অন্য জাতির চেয়ে বেশী ফায়দা হাসিল করিবার জন্য তোমরা নিজেদের অঙ্গীকারকে নিজেদের মধ্যে প্রতারণার মাধ্যম করিও না। আল্লাহ ইহা দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন। কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমাদের মধ্যে বিরোধের রহস্য উন্মােচন করিবেন”(সূরা নাহল : ৯১-৯২)।

فما استقاموا لكم فاستقيموا لهم ان الله يمم المتقين

• (V: 4911199) “দ্বিতীয় পক্ষের লোক যতক্ষণ তোমাদের সহিত অঙ্গীকারে অটল থাকে, তোমরাও অটল থাক। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে পছন্দ করেন” (সূরা তাওবা : ৭)।

الا الذين عهدم من المشركين ثم لم ينقصوم شيئا ولم ظاهروا عليكم احدا فتيمموا إليهم عهدهم إلى متهم إن الله يحب

🙁 : 911 528):11.j। “মুশরিকদের মধ্যে তোমরা যাহাদের সহিত অঙ্গীকার (চুক্তি) করিয়াছে, অতঃপর তোমাদের সহিত ওফাদারীতে তাহারাও ত্রুটি করে নাই, তোমাদের বিরুদ্ধে কাহারও সাহায্যও করে নাই, তাহা হইলে তাহাদের চুক্তি মেয়াদ পর্যন্ত পূর্ণ

করিবে” (সূরা তাওবা ও ৪)।

وان استنصروكم في التين فعلم النفر الأ على قوم بينكم

وبينهم ميثاق

২৫৪

“(আর যদি শত্রুর এলাকায় বসবাসকারী মুসলমানরা) তোমাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে তবে তাহাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। অবশ্য এমন কোন জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য করা যাইবে না যাহাদের সহিত তোমাদের চুক্তি রহিয়াছে” (সূরা আনফাল : ৪২)।

واماتخافين من قوم خان فائبة اليهم على سواء ان الله

يحب الخائنين .

“কোন জাতির পক্ষ হইতে তোমাদের যদি খেয়ানত (চুক্তি ভঙ্গের)-এর আশংকা হয় তাহা হইলে (তাহাদের চুক্তি) তাহাদের প্রতি ছুড়িয়া মার (অর্থাৎ প্রকাশ্যে চুক্তি বাতিল কর), অবশ্য সমতার প্রতি লক্ষ রাখিয়া তাহা করিবে” (৮ : ৫৮)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল-জাসসাস উল্লেখ করিয়াছেন, অর্থাৎ তোমাদের এবং তাহাদের মধ্যে যে চুক্তি বা সন্ধি হইয়াছিল, তাহা বাতিল হইয়া যাইবার খবর তাহাদেরকে জানাইয়া দাও। যাহাতে উহা বাতিল হওয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সমান হয়। আর তোমরা যদি তাহাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ কর তখন অপর পক্ষ যেন এ ধারণায় না থাকে যে, তোমরা তাহাদের সহিত সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করিয়াছ (আহকামুল কুরআন, ৩খ, পৃ. ১১২)।

যুদ্ধনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষা করিতে হইবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

قان تولوا ق وهم واقتلوهم حيث وجدتموهم الا الذين

يصلون إلى قوم بينكم وبينهم ميثاق (سورة النساء – ۹۰) .

“যদি তাহারা (দুশমনের সহিত মিলিত মুনাফিকরা) না মানে তাহা হইলে তাহাদেরকে পাকড়াও কর। যেখানেই পাওয়া যায় তাহাদেরকে হত্যা কর, তাহাদেরকে ছাড়া যাহারা এমন কোন জাতির সহিত মিলিত হইয়াছে, যাহাদের সহিত তোমাদের কোন চুক্তি রহিয়াছে” (সূরা নিসা : ৯০)।

শত্রুভাবাপন্ন নহে এমন সকল রাষ্ট্রের সহিত সুসম্পর্ক বজায় রাখিতে হইবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

لأنهم الله عن الذين لم يقاتلوكم في الدين ولم يخرجوكم من دارم آن توهم وتقسطوا إليهم أن الله يح المقسطين

21

JI)

• (A-  

২৫৫

“যাহারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের সহিত যুদ্ধ করে নাই, তোমাদের নিবাস হইতেও তোমাদেরকে বাহির করিয়া দেয় নাই, তাহাদের সহিত সদাচারণ এবং ইনসাফ করিতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। ইনসাফকারীদেরকে আল্লাহ নিশ্চয় পছন্দ করেন” (সূরা মুমতাহানা, আয়াত নম্বর ৮)।

শত্রু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণে বাড়াবাড়ি করা যাইবে না। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

من اعتدى عليكم اعتدوا عليه بمثل ما اعتدى عليگم واقوا

الله واعلموا أن الله مع المتقين (بقرة ۱۹4)

“সুতরাং যাহারা তোমাদের উপর বাড়াবাড়ি করে তাহাদের সহিত ততটুকু বাড়াবাড়ি কর যতটুকু তাহারা করিয়াছে” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৪)।

وإن عاقبتم فعاقبوا بمثل ما عوقبتم به وأن صبرم لهوير

للصبرين .

“আর যদি প্রতিশোধ নিতেই হয় তবে ততটুকু যতটুকু তোমাদেরকে উত্যক্ত করা হইয়াছে। আর যদি ধৈর্য ধারণ কর তবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য তাহাই উত্তম” (সূরা নাহাল : ১২৬)।

“আর অন্যায়ের বিপরীতে ততটুকু অন্যায় যতটুক অন্যায় করা হইয়াছে। অতঃপর যে ক্ষমা করিয়া দেয় এবং শুদ্ধি করিয়া লয় তাহার বিনিময় আল্লাহর যিম্মায়। আল্লাহ জালেমদের পছন্দ করেন না। নির্যাতিত হওয়ার পর যাহারা প্রতিশোধ গ্রহণ করিয়াছে তাহাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই। অভিযোগ কেবল তাহাদের বিরুদ্ধে যাহারা মানুষের উপর জুলুম করে। যাহারা জমিনে নাহক ঔদ্ধত্য করে তাহাদের জন্য রহিয়াছে কঠোর শাস্তি” (সূরা শূরা : ৪০-৪১)।

দুনিয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টি এবং অন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যায় না।

تلك الدار الآخرة تجعلها للذين يريدون علوا في الأرض ولا

…. “যমীনে যাহারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বাহাদুরি প্রতিষ্ঠা করিতে চাহে না, চাহে না বিপর্যয় সৃষ্টি করিতে, পরকালের নিবাস তো শুধু তাহাদের জন্যই নির্দিষ্ট করিব” (সূরা কাসাস : ৮৩)।

২৫৬

ধারা-৯৩০

সরকারী কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ সরকারী কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকিবে।

বিশ্লেষণ

সরকারী কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। এ সম্পর্কে মিসরে নিযুক্ত গভর্নর মালিক ইবনে হারিস আশতারীকে আলী (রা) নিম্নরূপ উপদেশ দিয়াছিলেন যাহা প্রশিক্ষণের সমতুল্যঃ আমি তোমাকে আল্লাহকে ভয় করিবার নির্দেশ প্রদান করিতেছি, জীবনে সর্ববিধ কাজে আল্লাহ এবং তাঁহার প্রদত্ত ব্যবস্থাকে সর্বোপরি স্থান প্রদান করিবে। তাঁহার স্মরণ ও ইবাদতকে অত্যন্ত সতর্কতার সহিত অনুসরণ করিবে। এসকল নির্দেশ প্রতিপালনের উপরই দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নির্ভরশীল। যাহারা ইহা অমান্য করিবে তাহাদের জন্য রহিয়াছে চিরকালীন অভিশাপ, তোমাকে অবশ্যই আল্লাহ প্রদত্ত মূলনীতিগুলিকে মানিয়া চলিতে হইবে, আল্লাহর উদ্দেশ্যকে সমর্থন দিতে হইবে এবং তাহার নির্দেশমালাকে সম্মান করিতে হইবে। কেবলমাত্র এভাবেই তুমি আল্লাহর সাহায্য, অনুগ্রহ ও রহমতের যোগ্য হইতে পারিবে।

আমি তোমাকে আদেশ করিতেছি মালেক, তোমার মনমগজ, হাত, কণ্ঠ এবং তোমার সমগ্র সত্তা দিয়া আল্লাহ তোমাদের যে আদেশ করিয়াছেন, তোমাদের কামনা ও বাসনা নিয়ন্ত্রিত করিতে, তোমাদের “আত্ম-অহংবােধের রশি টানিয়া ধরিতে। বিশেষ করিয়া যখন তোমাদের কামনার পাগলা ঘোড়া তোমাদের শঠতা ও পাপের দিকে তাড়াইয়া লইতে চাহে। রাসূলুল্লাহ (সা) যখনই কোন সাহাবীকে কোন অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্বশীল নিযুক্ত করিয়া পাঠাইতেন, তখন তাহাকে ইসলামী আম্‌দর্শ, শাসনকার্য পরিচালনা ও অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করিতেন। এই পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক একটি প্রশিক্ষণমূলক ভাষণের উল্লেখ করা হইলঃ রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.)-কে ইয়ামনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করিয়া তাহার দায়িতুভার গ্রহণের জন্য যাত্রা করিবার পূর্বেই ভাষণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়াছিলেন। হে মুয়াজ! তুমি লোকদেরকে আল্লাহর কিতাব কুরআন শিক্ষাদান করিবে। তাহাদের অতিব উত্তম ও পবিত্র নৈতিক চরিত্র ও আম্‌দব-কায়দা শিখাইবে। লোকদেরকে

বিবি ইকাম্ভী জানা

*

**

*

অহারে বাসগৃহে অৱস্থান করিতে দিৱেযে ভালো কোকতাহাকেওএরং যেমদ লোক্টাতোয়কেওআর তাহাদের মধ্যে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করিয়ে আশেও নিষেধসমূহ জাস্তবায়িত করিরেতাহার অনুসরণে তাহাদেৱরোধ করিব দের কাজকর্মেনিরূপ বাধার সৃষ্টি করিবেনা। কাহারও ধন-মালের কাপাক্লোজকাহাক্কেও ভিরু করিয়া জুলিবো। কেননা ক্লাহ তোমার কর্তৃত্বে অৰীহের সেল-মলিওতামার নাকো তাহাদেরৰাখিয়ায়চুয়াম তাহাদেৱকে ফিরাইয়াদাও. হার পরিমাণ কম হউক অথবা বেশী জনগণের প্রতি দয়ার্ডহি ও ক্ষমাশীল হইবে, অবশ্য তাহা সত্যের দাবিকে উপেক্ষা ঝঅস্বীকার করিয়া নহে। কেনাগ্রাহা হইলে লোকেরা অভিযোগ তুলিবে যে, তুমি আল্লাহর হককেরিহার করিয়াছ $ 1. ** :

যে সকল ব্যাপারেতুমি করিবে যে, তোমার কর্মচারীয় দোষত্রুটির বােঝ তোমার উপর আসিবে, সেই সকল ব্যাপারে আগেই তাহাদেরকে সতর্ক করিয়া দিবে। অন্যথায়ন্সকল দোষ তোমার উপরই চাপানো হইবে। * : >!জাহেলিয়াতের সকল নিয়ম-নীতি ও প্রচলন ও আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করিয়া দিবে। চালু রাখিবে শুধুতাহী যাহা ইসলাম প্রবর্তন বা সমর্থন করে ইসলামের প্রতিটি কাজ ও ব্যাপারকে প্রকট বিজয়ী করিয়া তুলিবে, তাহা ক্ষুদ্র হউক কিংবা বৃহৎ তবোধিক গুরুত্ব আরোপ করবেনামায কায়েমের ব্যাপারে। কেননা দীনাকবুল করিবার পর উহাই তুইতেছে ইসলামের প্রধান কাজ। লোকদেরকে তুমি মসীহত কর্মিরোস্লাহর নামে ভাইয়েরুণরাইয়া দিকে আল্লাহ ও পরকালকোনা ফ্লোকদেরকে শিদেন। করিতেই।স্মাকিবে। কেনলাইহাই হইতেছে মানুষকে আমল করিবার জন্য উদ্বুদ্ধকরঙ্গেরুড়ঙ্গতিয়ার; যেআমল আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন ইয় ছাড়া জনগণের মধ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণ দানের দায়িত্বশী লোকদেরকে ছড়াইয়া পাঠাইয়া দিবে। তুমি দাসত্ব করিবে একমাত্র আল্লাহর তাঁহারই ইবাদতে আত্মনিয়োগকারী হইবে। কেননা সকলকে তাঁহার নিকট ফিরিয়া যাইতে হইবে। আর এই সকল কাজে তুমি কোন উৎপীড়কের উৎপীড়নকে বিন্দুমাত্র ভয় করিবে না। আমি নিজে তোমাকে ওসিয়ত করিতেছি আল্লাহকে ভয় করিতে, সত্য কথা

!

PI Le!!

5

1

*

2.

1

,1:;

;;

:

:

::

k

i

!!

***! চাং

চ চ ‘৬ ণর, আমানত

ওয়ার, খি

নত, আত্মসাৎ

ও বিশ্বাসভঙ্গ পরিহার করিবার কথা বলিবার, সালাম দেওয়ার প্রতিবেশীর রক্ষণাবেক্ষণের, ইয়াতীমের প্রতি দয়া অনুকম্পা প্রদর্শনের, নেক আমলের,

২৫৮

কামনা-বাসনা সংযত করিবার, পরকালকে অধিক ভালবাসিবার, বিচার দিনের হিসাব-নিকাশকে বেশী ভয় করিবার, সর্বাবস্থায় ঈমান রক্ষা করিবার, কুরআন মজীদ গভীরভাবে অনুধাবন করিবার, ক্রোধ হজম করিবার ও সেবার হস্ত সকলের জন্য প্রসারিত করিবার। কোন মুসলমানকে গালিগালাজ করা হইতে অনেক দূরে থাকিবে। কোন পাপীকে অনুসরণ করা হইতেও দূরে থাকিবে। কোন ন্যায়বাদী ও সুবিচারকারী রাষ্ট্রীয় নেতাকে অমান্য করিবে না, কোন মিথ্যাবাদীকেও সত্যবাদী বলিয়া মানিবে না। প্রতি মুহূর্তে তুমি তোমার রবকে স্মরণ করিবে। যখনই কোন গুনাহ হইবে সেজন্য তাহার নিকট নূতন করিয়া তওবা করিবে। গোপনীয় গোপন রাখিবে, প্রকাশ্যকে প্রকাশ্যভাবেই করিবে। হে মুয়াজ! কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তোমার সহিত আমার কখনও সাক্ষাত হইবে না এই কথা যদি আমি মনে না করিতাম তাহা হইলে তোমাকে এই দীর্ঘ ওসিয়াত করিতাম না। সংক্ষিপ্ত কথা বলিয়াই ছাড়িয়া দিতাম। কিন্তু আমার মনে হইতেছে এই দুনিয়ায় তোমার সহিত আর কখনও আমার সাক্ষাৎ হইবে না। শেষ কথা হিসাবে তুমি জানিবে হে মুয়াজ! তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়, যাহার সহিত আমার সাক্ষাত হইবে ঠিক সেইরূপ অবস্থায় যেরূপ সে আমার নিকট হইতে বলিয়া গিয়াছিল (তুহাফুল উকূল, পৃ. ২৫-৬-এর বরাতে আল-হুকূমাতুল ইসলামিয়্যা)।

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত আমর ইবনুল আস (রা)-কে বনু হারিস গোত্রের শাসনকর্তা নিযুক্ত করিয়া এইভাবে তাহার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়াছিলেনঃ “মহান আল্লাহর নামে যিনি অতীব দয়াবান ও অশেষ অনুগ্রহশীল, ইহা আল্লাহর এবং তাঁহার রাসূলের পক্ষ হইতে ঘোষণাপত্র। হে ঈমানদারগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ যথাযথ পূর্ণ কর। মুহাম্মাদ আল্লাহর নবী ও রাসূল”।

উপরোক্ত বর্ণনা হইতে এই কথা সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার সাহাবীগণের মধ্যে যে লোকদের প্রয়োজনীয় কার্যসমূহের মধ্যে যে কাজের যোগ্য মনে করিতেন তাহাকে সেই কাজে নিযুক্ত করিতেন, সেই কাজ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করিতেন। আর শুধু নিয়োগপত্র দিয়াই তাহাকে পাঠাইতেন না, বরং তাহাকে তাহার কাজ ও দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণ প্রশিক্ষণও দিতেন। তাহার কাজের প্রকৃতি কি, কি মনোভাব লইয়া কাজ আঞ্জাম দিতে হইবে, জনগণের সহিত তাহার কেমন আচরণ করিতে হইবে, সব কিছুই তাহাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বুঝাইয়া দিতেন।

ধারা – ৯৩১

বাজার প্রশাসন। বাজারে পণ্যের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের একটি বাজার প্রশাসন থাকিবে।

বিশ্লেষণ

বাজারে পণ্যের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারে এবং এজন্য “বাজার প্রশাসন” নামে পৃথক বিভাগ গঠন করিতে পারিবে। বাজার ও বাজারের সদস্যদের বাণিজ্যিক তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা মধ্যযুগীয় সরকারসমূহের জন্য সর্বাবস্থায় ছিল কঠিনতর এক সমস্যা। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করিয়া রাসূলুল্লাহ (সা) অসাধু বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক তৎপরতা সংস্কার করার জন্য যত্নবান ছিলেন। কখনো কখনো তিনি নিজেই বাজারের হালচাল পরিদর্শন করিতেন এবং পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী বিধানসমূহ জারী করিতেন। তিরমিযীর এক হাদীস হইতে জানা যায় যে, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) বাজারে গেলেন এবং একটি খাদ্যের স্তুপের মধ্যে স্বীয় হাত প্রবেশ করাইয়া ভিতরে সেগুলি ভিজা অনুভব করিলেন। প্রতারণামূলক কাজের জন্য তিনি বিক্রয়কারীকে তিরস্কার করিলেন (কাত্তানী, ১খ, পৃ. ২৮৪-৫)। বুখারীর অপর এক হাদীসে উল্লেখ আছে, “খাদ্যশস্য ক্রয় করিয়া স্থানান্তর না করা পর্যন্ত বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিল (কাত্তানী, ১খ, ২৮৪)। অনুরূপভাবে যে শস্য বিক্রেতা বা মুজাযাফাহ ব্যবস্থার লেনদেন করিতেছিল তিনি তাহাদেরকে সে কাজ হইতে নিবৃত্ত করেন (কাত্তানী, ২খ, ২৮৪-৫)। খাদ্যশস্য সচরাচর যেখানে বিক্রয় করা হইত কেবলমাত্র সেখানেই খাদ্যশস্য লেনদেনের অনুমতি দেওয়া হইত। স্পষ্টতই এইজন্য এই নির্দেশ দেওয়া হইয়াছিল যাহাতে একদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, অপরদিকে প্রতারণামূলক প্রক্রিয়া বন্ধ করা সম্ভবপর হয়।

এই উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সা) বাজারসমূহের জন্য বিশেষ কর্মচারী নিযুক্ত করিয়াছিলেন। ইবন সাদ বলেন যে, উমাইয়া গোত্রের সাঈদী পরিবারের একজন সদস্য সাঈদ ইবন আস (রা.) মক্কার পতনের পরপরই এই বাজার কর্মকর্তা হিসাবে নিযুক্ত হইয়াছিলেন (তাবারী, ২খ, ১৫৪; কাত্তানী, ১খ, ২৪৪)। অপর এক বর্ণনায় জানা যায় যে, মদীনাতে উমার ইবনুল খত্তাব (রা) বাজার কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করিয়াছেন (কাত্তানী, ১খ, পৃ. ২৮৭)। যদিও এ ধরনের কর্মকর্তাদের সম্বন্ধে

বিধিবদ্ধ ঈসায়ী চাচী

6

আর কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না তুবুও ইহা ধারণা করাই যুক্তিযুক্ত হইবে যে, ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে আরও কতক বাজার কর্মকর্তা নিযুক্ত হইয়াছিলেন। এই সকল বিশেষ কর্মকর্তা ছাড়াও প্রাদেশিক গভর্নর, স্থানীয় প্রশাসক এবংহদিয়প্রতিনিধিফএইক্ষার্জেরুিকছিলিন P FIা চা5 চুচি

। চীe Fাশ ধাক্কাস Pse fচা চাচী জনগণের প্রতিষ্টান্দেটুপাষণ চা5r চাকাচ ভ্যারিক জনগুরতি অহেতুলাইগোষণ হইত কিতকিৰেীক চুরি চিক Eিচুদি ভিচ কীজান চ্যাচ ৩ চাকাচ। চচী

ও চীচী। FিC ক চাক দিৱী ঢাচিF IFত চ)চাকচ চারুক তাহারু জাগণের প্রক্কিন্দেহ পোষকুরিরে কি সম্পর্কে

বা মঙ্গল হয় এভী দিক দিক। দাড়ী দচিড় দিত চাচক কতক্ষী চিমকামী চর্টি ফীচাচী চীৎ চাচ (Fি) =চি নীক . Iঢ় Fিাত ভFনা চদিল্লী দ্দিী) চJভভী চিক শ্চিৎ কাড়ি টাক চJ8 চান তীৰ্চ চF চাজ মান্নারগুণ। গম বীতাকুশধারকরা হইতেরি গাড়িতে

ভেন্ন ব্লক ধরা ন্যায় এবং গোয়াগিৰিকল্পিও

নালিষ্ঠাক) চাচী একাতরামীণরায়ছায়াড় মচক্রানব্যক্তিক উপর আবাত্মক ধরুনতলই বুঝা না এফঙহত্যুকাগোয়াক্ষিরিচাৱৈধ। = হাদীসে ত্রিইন্সন্দেহসূলপর্জেলা হইয়াছেক F) JPoাতীত ভিী চিন্তীত)চীক

CHEERLEADI SÉE_IBII HEB 2012 mars 162-805 115VM) ISNJAT EP 1ST PEL FET m কর্মরত অবু’মামা) করিয়াছেন নষী) স্কুলের ক্ষী জনসাধারণের প্রতি সন্দেহ পোষণ করলে তাহাদেরকেনষ্ট করিয়া ফেলিকে?আঁধু দদিমধ্যিমেশক্তিপূ [ফোকাচ (IFC) STচ শিশু উঁ2 TE PRA PEMERK TETET, FPJE JE DOSTUD চoাড়েী কিকে চাচি ১ চা*চু* চFত চাঙ্গা (চি) Fচু না Fে দাদীচ ক চ ৪৪টিাতা:

চটাচাতীe’পূর্ণ ভুৱাব সুয়ারিয়রঞ্জলনআন্তিরামুরহ-কালিঞ্চিলিছিটি যদিক্ষিণাটির পিছুপড়িয়া যাও(তাহা হইলে রুমি তাহাদেরকে

বিধিবদ্ধলামী আইন

ديزل

করিয়াদৰোৱঁহাকীর শুআবুলজাম হইতেমিশকাতে ইমরা, ২ি২)। সরকার ঝাষ্ট্রীয় জাতীয় নিরূপত্তার স্বার্থেকেঁগোয়েন্দারতা পরিচালনা করে স্তাহ অপরিহার্য এবং ইমিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নহে। চ

ভর্তাবচF চিলি

। ( ৩g৩. চিড়ি {E:চ ৩াচী চী চকুত চধারদ অe $াশ উদ) চার

•>} চচচী কৗজনগণের প্রতি ভাল স্ব্যবহকরাচীক ওচচ চাঢ় -তিকে কল্পকারসুদা জনগণের প্রস্তাবৃনং চকী bi

By f% 6) চুনতে চাই চাই চিচ, চিন চাচা। চউক চীফ ১১:29াশ চিরাচরু হিন্দি চিৗবিশেষত) চাড়তি মত-নিতি চকচি 1:

১াজনগর্গ একরকারের মধেনসম্পয়াঙচিকাসকষম্বুেল্লাহ

আমাঙf ঋক্তি; চ)-(চ) বিড়ি চুত চাভ hভনিীচ টিভি টাঙ ২১pী চচবাচচ গাড়ি ভাড় ভাকে ভীব চুচাচচত দীভী চীতে Jফুভিটা চে59 #03, ১লল-s el”চুসূক্ষ্মী নায়- BIjkঞ্জী + [ ) চন্ডীe ($$$৯৯dার্ট ডি 6gk1গী $ 2 5

“হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা) যখম কোয়ও -সাহাবীদেরশ্নধাইক্রোকাহাকেওঁফে সুরকাঞ্জাায়িত্বর্পাখরুতনি, তখন ব্বিকোউপদেরী করল্লা ললিতনষ্কিাজলগ্নেমন্ধোপ্রন্সিঞ্চাকরিঞ্জীণা সৃষ্টি করিল,হাদীসতিন- চরণজরিওকাকুরাক্ষরণ করিও না” (বুখাৱী জাসুসল্লিম মিশকাল্লাহইব্দেকিজাণইমাপ্ত কাঞ্চী ৯; 15<s fচইঞ্জীভিড় চী।

চিতি iFণীC চী* #5ার) চুক্তিটি চূাত $ে Tদীত কি? চাকুতি। চীক ভর্তিা,

চী ১০ টা চচ চচাচা) চি

Fe?) হিত ভভড় দীতী। বি. চাচা রাসুলুল্লাহ (স) বল্লেন, জনগুণের সহিতসহজ-সরঞ্জামুল-আচবণ করিও, রূঢ় ব্যবহারকুরিওল ওহাদের পূতি ভালবাসা স্থাপন করিও, মুণমুষ্টি করিও না” বুখারী, মুসলিমরত শিকাভইমারা, ৩২৪238 (F) কিািড় চূাত। চীক

.jPS)

। : :

قابت بعيد عن المنجني ونجلي العلميه جهلهم قال لكل تفادرج

الوفة المقدراسته كنق #قيافة وفن رواية يوقعاته بقو فجرهاو غافوا القمرا من اميز لعامة الراوبشهتظلم الاحترافية المطلق للكوا

1 $s

pীg -চ) ফিল ইতি।  

২৬২

“নবী (সা) বলিয়াছেন, প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য কিয়ামতের দিন নির্দিষ্ট ঝণ্ডা থাকিবে। অপর বর্ণনামতে ঐ ঝণ্ডা তাহার হইবে। সাবধান, জনপ্রতিনিধিদের গাদ্দারী সবচাইতে মারাত্মক বিশ্বাসঘাতকতা” (মুসলিমের বরাতে মিশকাত, ইমারা, পৃ. ৩২৩)।

স্বৈরাচারের নেতৃত্ব শুধু অবৈধই নহে, বরং তাহার বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করা যাইবে, বরং করিতে হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, সফল স্বার্থক বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকিবে হইবে। স্বৈরাচারের পরিবর্তে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে ক্ষমতাসীন করিতে হইবে। বিদ্রোহের ফল কেবল প্রাণহানি এবং শক্তিক্ষয় যেন না হয়। আবু বাকর আল-জাস্সাস তাহার মতের ব্যাখ্যা করিয়া লিখিয়াছেনঃ স্বৈরাচারী শাসকের বিরোধিতা করিবার ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফার মত অত্যন্ত স্পষ্ট। একারণে ইমাম আওযাঈ বলিয়াছেন, আমরা আবু হানীফা (র)-এর সকল কথা সহ্য করিয়াছি, এমনকি তিনি তরবারির সহিতও একমত হইয়াছেন অর্থাৎ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমর্থক হইয়াছেন। আর ইহা ছিল আমাদের জন্য অসহ্য। আবু হানীফা বলিতেন, “আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার প্রথম মুখের দ্বারা ফরজ। কিন্তু এ সোজা পথে সম্ভব না হইলে তরবারি ধারণ করা ওয়াজিব (আহকামুল কুরআন, ১খ, পৃ. ৮১)।

যখন প্রথম আব্বাসী মন্ত্রী আবু মুসলিম খােরাসানী স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করিয়াছিলেন, তখন খােরাসানের তঙ্কালীন প্রসিদ্ধ ফকীহ ইব্রাহীম আস-সায়েগ ইমাম আবু হানিফার সহিত আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছিলেন। আলোচনা শেষে সবাই এ বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হইলে হঠাৎ ইব্রাহীম বলিলেন, হস্ত সম্প্রসারিত করুন আপনার নিকট বাইয়াত করি। তাহার এ কথা শুনিয়া ইমাম আবু হানীফার চোখে পানি আসিয়া গেল। তিনি হতভম্ব হইয়া গেলেন। ইবনুল মোবারক বলেন, আমি এ বিষয়ে ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেনঃ ইব্রাহীম আমাকে আল্লাহর একটি অধিকারের দিকে আহবান জানান আর আমি তাহা গ্রহণ করিতে অস্বীকার করি। আবু হানীফা (র) বলেন, আমি অবশেষে ইবরাহীমকে বলিলাম, একা কোন ব্যক্তি একাজে দাঁড়াইলে সে প্রাণ হারাইবে। এ প্রাণ দান মানুষের কোন উপকারে আসিবে না। অবশ্য সে যদি একজন সৎ সাহায্যকারী ব্যক্তি লাভ করে, নেতৃত্বের জন্য এমন একজন ব্যক্তিকে পাওয়া যায় আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে যে নির্ভরযোগ্য, তাহা হইলে আর কোন প্রতিবন্ধকতা নাই।

২৬৩

ইমাম আযম আবু হানীফা (র) বলেন, এই ঘটনার পর ইবরাহীম যখনই আমার নিকট আসিতেন এ কাজের জন্য আমাকে এমনভাবে চাপ দিতেন যেমন কোন মহাজন ঋণ আদায়ের জন্য করিয়া থাকে। আমি তাহাকে বলিতাম, ইহা কোন একক ব্যক্তির কাজ নহে। ইহা এমন একটি কাজ যে, কোন ব্যক্তি এককভাবে এজন্য দাঁড়াইলে নিজের জান হারাইবে। আমার আশংকা হইতেছে, সে ব্যক্তি আপন প্রাণ সংহারে সহায়তার অপরাধে অপরাধী হইবে। সে প্রাণ হারাইলে এই বিপদ মাথা পাতিয়া লইতে অন্যদের সাহসও লোপ পাইবে (আহকামুল কুরআনর, ২খ, পৃ. ৩৯)।

ধারা-৯৩৪ প্রশাসনিক দায়িত্বে নিযুক্ত লোেকদের যোগ্যতা প্রশাসনিক দায়িত্বে নিযুক্ত লোেকদের নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকিতে হইবে

(ক) দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞতা;

(খ) বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা; (গ) ধার্মিকতা।

বিশ্লেষণ

প্রশাসনিক দায়িত্বে নিযুক্ত লোকদের সর্বপ্রথম দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞতার অধিকারী হইতে হইবে। যে লোককে যে কাজে নিযুক্ত করা হইবে বা যে লোকের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হইবে সেই কাজটি বা সেই দায়িত্ব নিখুঁতভাবে সম্পাদনের যোগ্যতাই যদি না থাকে তাহা হইলে সবকিছুই নিষ্ফল হইয়া যাইতে বাধ্য। কুরআন মজীদে এই সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে?

فاسئلوا أهل الذكر ان گنتم لا تعلمون .

“তোমরা নিজেরা না জানিলে জ্ঞানবান লোকদের নিকট জিজ্ঞাসা কর” (সূরা আন নাহল : ৪৩)।

এই নির্দেশে প্রতিটি ব্যাপারে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকদের নিকট হইতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান গ্রহণের জন্য উৎসাহ দেওয়া হইয়াছে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা)

বন?

ان الرياسة لا تصلح الا لاهلها.

২৬৪

দৃথিবন্ধইসলামী আইন

চি51) রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনা যোগ্য লোকেরই শজি প্লালাহুকুমাতুল

* ইসলামিয়াহ, পূণ্ঠ৪৮ এর মাধ্যম আল কুরআর্মেরাষ্ট্রগুলিরকারাণীত কি কি কি কি!? বী! ১) চীজ দিত চারানা »! দাতার 15-৯ ( 5343উঃ হাক চিক নী?.) “আনাজ নোক গড়ার তুলন্ত অল্পচারই বেশিরুঝিবেন চত

2. = ত্রাপ্রসঙ্গেলা হইয়াছেঃ! * ১1px} ভিক্F চ১19ংK tere »াড়ি

الحكمة هي وضع الاجر الاب في المكان المناسب ومن

الحمق وضع الرجل غير المناسب المكان غير المناسب .

!

:

“যোগ্য স্থানে যোগ্য লোক নিয়োগই বুদ্ধিমত্তার পরিচারক। আর অযোগ্য ব্যক্তিকে, ঐ স্থানেন্য সে বােগ্যত্রতাত্মীফেনিয়োগচির নির্বুদ্ধিতা”। কীকর্মের যোগ্যতা ও দক্ষতার পত্নপ্রয়োজনীয়বিশেহইর্তছে বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা। সরকারী দায়িত্বশীলদের আমানতদার হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়ই কারণে কুরআন মজীদ সকল প্রকারের কল্যায়েৰ্জনকেবলমাত্র যোর্গ বিশ্বস্ত কর্মচারীর উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ কৃক্রিয়া বলিছেঃ মিঃ (8)

استأجرت القوى الامين (القصص – ۲۹) .

ان يلزم

“তোমার জন্য সর্বোত্তম কর্মচারুহইতে পারে সেই ব্যক্তি যে শক্তিমান, চিরিঙ্ান্ত” (সূরা কাসাল : ২১৬) i, 19া চমক!) চুম ভুলি কাশীদাশ ৪) চঙ্গিীয় ঝেগড়াহইল দ্বার্মিক হয়। কাকী চক্র্যাক ধ্বর্মিকলিতে মন

ব্যক্তিকে বুঝায় যে বৈষয়িক্টসুখ-শান্তি অন্যায়ভাকৈলারফতি জাগুইনহে, লোেক অল্পতেই সন্তুষ্টিকে। সিরকারী-সর্দিকায়িত্বেত্রই প্রশের লোকদের নিয়োগ একান্ত জরুরী স্ত্রী সম্পর্কেরত আলী (স্বাধিলিয়াছেন

1

LT

:

ان الله فرض الفيلم العكل الن قدوة لمعيشتهم على قدر

Pr:-) “চু [jsৎসা কী চf১*, শ্বত দীটি খন্থ ‘ফ্রি an;

“ন্যায়বাদী রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য আল্লাহ ফরজ করিয়া দিয়াছেন যে, তাঁহারা যেন এজনগণের দুর্বলতীর অনুপাতোঁহাদের জীবিকার পরিমাণ নির্ধারণ করে। তাহা

তদ; হইলে তাহারা

; ২ বাই 139) RS OF C Bo•ন্তি

রিয়ে

কান অন্যায় কাজ করায় বাসবে।

ও দ১৮

1 :1. … .LTk ka… : 

ধিবদ্ধসর্লাজী আইন

Fভ চক চিচা নির দ্রুe Sৱন্তেী চচাত ভদ্দীশী চ + © কৃচি Fচর্চ

Pr১ চিটা.তাঁE #চ না; চ)১ Foাত ত নির্বাচ্চ) by চা) কি চুনিয়া দুচ কুচি কচ চো

রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্য দূত নিয়োগ করা যাইঝেy . > #JP ক্রীঃ জী ভভিড় চাচির চরী ভাল চাড়া $): F) চুছিকানো চা E>

কাজ Dে Tাচ 1+চা কাটা 77 চল ঠিক শিশু ঠিচাচা ও চাচীক ছি {াকা চF নচ রিজী গুরুত্বপূর্ণ কাজাদনে জন্য প্রায় দ্রুত নিয়োগন্নিতে পারে। Fপাইলামসুগে মক্কায় গেঞ্জীয়নকাঠামোর মধ্যেওদৗকর্মসফোরাহ) সার্জিল্লচারুপলষ্ট সম্পূর্ণরূপেই প্ররিচিত ছিল-(মাকিদীপ্তি :৩৩; ইবন চুইঙ্গক পৃথিৱগকারে বহুকাল পূর্বী থেঙ্গেীকুরাইগোত্রোর আদী! শিরিত্রেয়ীলোকোক্কাইচত্রই লিঙ্গেৰিযুক্তিারপাইয়াছিরাইসলামের চঅভুয়েরপূর্বমুহূৰ্তাপদ্দাক্তভাহারাইউহা বহাল রাখিয়ালিৰিাষ্টমারইবনুল গ্লাত্তাব (শুধকইইলেও হর গোষ্ঠীঠোকজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলেন এবং কথিত আন্থেক্ষে তিনিই ইস্পদৈসমশ্রনশষ ক্যক্তি এইভাবে রবের অন্যন্সব গোত্রেরান্সছিঃ তাহাদের সম্পর্কের বিষয়টিতে স্তনইকুরাইশদের প্রতিনিধিত্ব চকরিতেন। ঘটনাদৃষ্টে মনে হয় ইসলামী মুশরিকরদের নিকট হইতে রাষ্ট্রদূতের কার্যক্রম উত্তরাধিকার সূত্রেলম্ভি করিয়াছে এবংতম যোগ করিয়া হকারমুকরিয়াছে। সফরনামক দুন্নীতদ্বতিষ্ঠানটি যুাহা ইলমী যুগে রিসালাহ দুতাবাস) নাম ধারণ করিয়াছে,সিইটি একদিকন্থিতেইসলামী প্রতিষ্ঠানের সহিতক্ষার্থক্য রাখেমক্কার গোত্রপতিদের সামনেই পদের স্থায়ী কর্মকর্জনিযুক্ত ছিলো ইসলমিরাষ্ট্রে ড্রপ পদাধিকারী ছিলেন স্থির পরিবর্তে সেখানে ফুল বিরটি সংখ্যক স্কুিটনৈতিকও ‘দূতীকালী উল্লেখ করিয়াছেনঃশ্নথিপত্ৰীহঁত ‘জানাঘায়, কয়েকটি সামরিক আগ্ধজামরিক অভিযানকালে ইসলাহ্ম রূন্ত্রে সর্বপ্রথমতনখুচ্ছন্ন চৰ্তবেইসঙ্গেল” রিভাষাটি ব্যবস্থায় নাই সম্ভবত স্থিতিপূবে কিছুসকি দূত নিযুক্ত হইয়াছিলেন কিন্তু তাহাদেরঙল্লেখ দেখাযায়ক্রসঙ্গে প্রথম দৃষ্টান্তগাউয়া ম্যায় তৃতীয় হিজরীঘৃিস্টাব্দেবন্নীষীরের বিরুদ্ধে অভিযাচেষমাসূলুল্লাহ সৈ-এর সিদ্ধান্ত জানাইবার জন্য মুহাম্মাদম্বন মাসলামকেদূত হিমস্ত্রিরণ

ইছিলদহরহামচ,

চাটু-চা। চিড়িীর তীcs  

দুই বৎসর সম্মিলিত আরব শক্তিসমূহ যখন মদীনা অবরোধ করে তখন মুসলিম দূত আওস গোত্রের সাদ ইবন মুআজ, খাযরাজ গোত্রের সাদ ইবন উবাদাহ ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা বনু কুরায়যা গোত্রের নিকট প্রেরিত হন (ওয়াকিদী, পৃ. ৬৯০)।

তাহাদের দায়িত্ব ছিল মুসলমানদের সঙ্গে অতীতে সম্পাদিত চুক্তি সম্বন্ধে বনু কুরায়যাকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া, সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র এবং আক্রমণকারীদের সে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাহায্য না করিবার প্রশ্নে সাবধানবাণী শোনানো, যাহার প্রতিরক্ষার ব্যাপারে তাহারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল (ওয়াকিদী, পৃ. ৬৯০)। হুদায়বিয়ার অভিযান চলাকালে এক এক করিয়া কমপক্ষে তিনজন দূত নিযুক্ত হইয়াছিল। যখন মুসলিম কাবাযাত্রীগণ সেখানে পৌঁছাইলেন তখন পবিত্র নগরীতে মুসলমানদের প্রবেশ করিবার অনুমতি আদায়ের জন্য খুযায়া গোত্রের খিরাস ইবন উমাইয়াকে মক্কায় গোত্রীয় প্রধানদের নিকট প্রেরণ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল যাহাতে তাহারা উমরা পালন করিতে পারেন। কিন্তু এই মিশন ব্যর্থ হয় (ওয়াকিদী, পৃ. ৬৯০)। সম্ভবত কিছু দিন পর উমারের উপদেশে হযরত উসমান ইবন আফফান (রা) একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদনের অভিপ্রায়ে মক্কায় প্রেরিত হন, তবে তাহার দূতালীও বিফল হয় (ইবন ইসহাক, পৃ. ৫২২)। চুড়ান্ত পর্যায়ে মক্কায় দু’টি প্রতিনিধি দলের চুক্তির শর্তসমূহ সম্বন্ধে গ্রহণযোগ্যতার পৌঁছাইতে ব্যর্থতার পর সুহায়ল ইবন আমার ও হুওয়াইতিবের নেতৃত্বে বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটে। মুসলমানদের পক্ষে দৌত্যকর্ম সম্পাদনের জন্য হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রা) নিযুক্ত হইয়াছিলেন। বস্তুতপক্ষে হুদায়বিয়ার বিখ্যাত সন্ধিচুক্তি এই সকল আলোচনারই ফল (ওয়াকিদী, পৃ. ৬০৩)।

৭ম হিজরীতে ইবন হিশামের মতে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের এবং আরব উপদ্বীপের সীমান্ত এলাকার শাসকদের নিকট পাঁচজন দূত প্রেরিত হইয়াছিলেন। প্রামাণ্য বিভিন্ন গ্রন্থের সম্মিলিত বিবরণী অনুযায়ী বিদেশী শাসকদের নিকট যে পাঁচজন দূত প্রেরণ করা হইয়াছিল তাহারা হইতেছেন যথাক্রমে-রোম সম্রাটের নিকট প্রেরিত দিহইয়া ইবন খলীফা আল-কালবী, ইরানের কির নিকট আবদুল্লাহ ইবন হুযায়ফা আস-সাহমী, আবিসিনিয়ার নাজাশীর নিকট আমর ইবন উমাইয়া আল-জামুরী, মিসরের বাদশাহ মুকাওকিসের নিকট হাতিব ইবন আবু বালতাআ এবং সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের বাদশাহর নিকট গুজা ইবন ওয়াহাব আল আসাদী। ইবন সাদের মতে সালিত ইবন আমর আল-আমিরী প্রেরিত হইয়াছিলেন। আল-ইয়ামামার দুই বাদশার নিকট তিনি এবং উপরোক্ত

২৬৭

ছয়জন একই দিনে মদীনা হইতে রওয়ানা হইয়াছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পত্রসমূহ এবং লেখকদের বর্ণনাসমূহ ইহাই প্রমাণ করে যে, উল্লেখিত ছয়জন দূতই বিদেশী শাসকদের নিকট ইসলাম প্রচারের জন্য প্রেরিত হন। এসব ছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে আরও কিছু দূতাবাসের বিষয় বর্ণিত হইয়াছে। তাহাদের মতে, আল-আলা আল-হাদরামী, আমর ইবনুল আস-সাহমী এবং আল-মুহাজির ইবন আবু উমাইয়া আল-মাখমী একই উদ্দেশ্যে যথাক্রমে বাহরাইন, উমান ও ইয়ামনের শাসকদের সমীপে পৌঁছান (ইবন সাদ, ১খ, পৃ. ২৬২-৩)।

৯ম হিজরীতে কমপক্ষে ৭ জন দূত আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরিত হইয়াছিলেন। মাত্র পাঁচজনের নাম উল্লেখ করিয়া ইবন সাদ বলেন যে, নুমায়ের ইবন খারাশাকে তাইফস্থ তাহার লোকদের মধ্যে, বাকর ইবন ওয়াইল গোত্রের নিকট যিবয়ান ইবন মারসাদ আস-সাদূসীকে, বুসরার অধিপতির নিকট হারিস ইবন উমায়র আল-আযদীকে, আবু রাবী আল-মাখযুমীকে হিময়ার এবং দিহইয়া ইবন খালীফা আল-কালবীকে নাজরানের আল-উসফুকির নিকট প্রেরণ করা হয়। বাকী দুইজন সম্পর্কে উসদ উল্লেখ করেন যে, আলকামা ইবন ফাগওয়া আল- খুযাই এবং তাহার ভ্রাতা আমর কিছু অর্থসহ মক্কার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব আবু সুফিয়ানের নিকট প্রেরিত হইয়াছিলেন। অনুরূপভাবে হুদায়বিয়া ও মক্কা বিজয়ের মাঝামাঝি কোন এক সময় আমর ইবন উমাইয়া আল-যামুরীও রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক প্রেরিত হন (তাবারী, ৩খ, পৃ. ১৭৮)। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবনের অন্তিম বৎসরটিতে তথা দশম ও একাদশ হিজরীতে সর্বাধিক সংখ্যক দূত পাঠানো হইয়াছিল। তাহাদের প্রায় সকলের নাম উসদুল গাবার রচয়িতা উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু অল্প কয়েকজনের নাম অন্যান্য উৎস গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। ইবন সাদ দুইটি দূতাবাসের বিষয় উল্লেখ করেন। বনু হানীফার ভণ্ড মুসায়লামার নিকট প্রেরিত আমর ইবন উমাইয়া আল-যামুরী এবং আল-কুলা ও আল-যুলাইম-এর শাসকের নিকট প্রেরিত জারীর ইবন আবদুল্লাহ আল-বাজালী (রা.) ছিলেন উক্ত দূতাবাসের অন্তর্ভুক্ত।

ধারা-৯৩৬

অমুসলিমদের প্রতি আচরণ ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল অমুসলিম সংখ্যালঘুর প্রতি ভাল ব্যবহার করিতে হইবে।

২৬৮

ব্লিবিদ্ধ ইসলামী আইন

চP-(IF) =চিচি। Fভীঢ়ৎ বিশ্লেষণ

চিনির ১নী & Fার

চাঁs৮) ৩

ইসলীমা

১) oিkযায় নামের’আধকার অনা

অত্যন্ত

_

চুম্বলিষ্ঠজষয়ঘাষিত হইয়াছে। কুরআম্‌দমজীদেষলাহইয়াছে ফুকলাশ শিচী চ্ছিাকৃতভ,912 চলত। ভক্তই ভীচু চী, ফচাভ, লক্ষী,চাড় টিভিীতি জালিত তিন-চাল লিচিয়াত চড়

!

লাশ উপোত

। {৩-. $ . p; alf-ম8ি) চী: “আল্লাহভাগীদেরক্কোর্নিষেধকিনেই কাজ হইতেফেব্দীনেরব্যাপার চালইয়া যে সকল লোকহুর্তামাদের সহিত যুদ্ধ কিরুমাই এবং তোমাদেরকে

তোমাদের্নমুরবাড়ী হইতে বহিষ্কারও করে নাই, তাহাদের সহিত তোমরা লাগৰ্ময় Fও সুবিচারপূর্ণ, নীতি অবলম্বন করিবে। কেননা আল্লাহ সুবিচারকারীঙ্গেীকান্দ

করেন”-(সূরা আল-মুমতাহিনা৮ে)] চি!! pi© .. চাত

5 বর্ণিত আত্মা শষ্টজাকীৰূহইয়াছোয়চুলকলঅমুসলিমমুসলমানদের 9:বিরুদ্মেন্দীইসলাত্তলনকার সুদককে নাই,সুফললজেরুষছিক্তক্ষকবিয়া

তাহাদের বাড়ীসহায়শ্বজিইকেলঞ্চিত করে নাই, আকরামুলঙ্গের নিকট ইসলামী রাষ্ট্রে বিশেষ মর্যাদাধিকার লড়জরিবেছে জিপূর্ণ ইনসাফ করা হইবে। তাহারে সুপ্পিরপুরাপুরি আদ্রায় করা হইব্ধে এবঙ্গহাত্মদের যুবতীয় প্রয়োজন পূরণের পূর্ণ মর্যাদা, অ্যাধিকারঃ নিরূপত্তারূ-সতি ক্লাসের

ময়লা করলেন তাড়া কম seK কীচK ভর্চিতভী কি ৬ দশ i. ইসলামী রাষ্ট্রেরসাবসকারী অমুসলিলারিক্কদের মুধেআহক্টোঙ্গিাব লোকেও শামিল হাওর্ণ স্বাধীনুতাওৱািপড়লাভলিহারা স্ত্রহাতে নুিশ্চিন্ধে-নিজেদেধর্ম ঝানভাৱে পালঙ্ক করিতেপ্পাকোড়ঝাপ্রাঙর চাহাদেরকে স্বয়েগ্নিকরিবারও নির্দেশ দেওয়া হইয়াছোরুনঃজীবেলা হহইয়াছে ও। ভc Fচাভন লর্ড (চ) নিত্যাচ-ড়ি তাড়নচা চর্য

ولا تجالوا أهل الكتاب الأ بالتي هي أحسن الأ الذين ظلموا

منهم وقولوا أمنا بالذي أنزل اللاواني اليكم .

“তোমরা মুসলমানরূত্মহলে তীলোকদেমুহিত ঝগড়া-ফাসাদ, বাক বিতণ্ডারিং মাম্মদি করিভেহইয়জৰে উহত্তমভাবে কিনিকেতবোহারা

জালিম, তাহাদের প্রসঙ্গে এই নির্দেশ নহে। তোমরা ধরুজ্জামান

বিধিবদ্ধ ইললালী ফ্লাইস

২৬৯৫

আনিছি হামাসক্লাজনঃ অতীর্ণয়েছে ভারচহ্নিকুয়ায় ক্রেমারে প্রতিক্ষিকা ইয়াছড়ায়াক্কাতি’ভাক্ষিকারুঞ্জা দক)। ভিী চললুল্লাইসালিয়াছিছ ভ্যতীচঠি চাত ১তভীরুৎ চ2) ভর্তু

PRAT DE L ES PUCI JESUS HD) * টিভি চচী চক) ভাFি F১ ভীর চিাত ভ১তীদি )। িচত

। চাচু দাচ ডিee* ভ্যাশ ৩ চারা কি চাত ভাইকে

যালাকপ্রকাৰু চুক্তিবদ্ধ লাগরিকেরুউপযুলুম কলিবোনাস অতিরিক্ত কাজ, কুরিকে বরকল্পিত, কিয়াঙ্কচক্ষুর আম জহার বিরুদ্ধে অভিযোগকাল্পী হুই রুশ চাচী চলনীতে (I) ভাড়াচ

ঢাজ্ঞagr><AA%ঘার্সঃ «INGLEaCBক্তকা চ্য ক্তি কোন যিৰ্মীক (অমুসলিম নাগরিককে কষ্ট দিবে আমি তাহার বিবাহই আর আমি যহীর বিরুদ্ধে বাদী হইব তাহার বিরুদ্ধেকয়ামতের দি বী হইব, লক্ষন স্থলা এ95 ১চীক ফিতীত মক) : চী ১ ী চাচাত যত চমকা চাড়া-কে কাত [দ্দিীতীর

রাচ-বাঃী চাহাত মুচকি bাত চিত+ভি+ চাত ফচ নাজরান,এলাকার প্রধান খৃষ্টান পাদরী আবুল হারিস ইবনুল কামাতকে যে চুক্তিপত্র।

hীর এক তৃত চাকতি ভকিা Jalsী Ca 3 দি চিকা লিখিয়া পাঠাইয়াছিলেন র্তাহার উল্লেখ করা যায়। এই চুক্তিপত্রে লেখা ছিলঃ ‘

১ তাই চটীক চিচৗ চাঙ্গy চাচ fe. B9 2

Brg ਪ ਟਿਪਦੀ ਨੇਏ ਉਏ ਇਣਾਈ ਹਾਣ Lচীকা ১৬4ীত সন্ত্রক ৯১ds

কর স্বার্থ

ন্য রাণী

পদ

ايقاظهم مهايلوكايكل بيكله وطولهکه وهائلهم

MYFI TIFFAIP PÉ FUÉE VERIFICI কঃ ন্যাচ) চা কি, হাজাছ ছাড়া ভিড়

: RFত

চা কিন্তু Fি চনত চী: 6 রাত ptং রিচীকউ$াতিল 2

৫ ডেঠিs2494; &#ীybজান শাহির্জিাচি উF) চকু কুচ চাচ) চনী কারুe4 islাধু lucfjy তন্সর করুণাময় আল্লাহয়ীক্ষাম। আল্লাহ্বধীমুহাম্মদ (সা)-রুপক্ষ হইঞ্জে নাজরানের প্রত্ন দিরীক্ষাসু হারিসাজরামেরু অনমপাজল্পীড়াজাহারী পুরোহিত হয়ে অনুসরণকরস্নাহেগগের ত্রিই চুক্তি। তাহাদের জন্যই থাকিকেমিবলী বাহীবিভুইত্মহাজের হাতেআঁদ্ধেজাহা সবই তাহাদেৱ

২৭০

উপসানালয়, মন্দির ও রাহেব কেন্দ্র ও আচরণ। তাহারা আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের প্রতিবেশী। কোন পাদরী তাহার পাদরীত্ব হইতে কোন রাহেবকে তাহার বৈরাগ্য হইতে এবং পুরহিতকে তাহাদের পৌরহিত্য হইতে বদলানো হইবে না। তাহাদের কোন অধিকার প্রত্যাখ্যান করা হইবে না। তাহাদের আধিপত্য ও কর্তৃত্ব পরিবর্তিত হইবে না। যে নীতিতে তাহারা চলিতেছে সেই নীতিতে কোন পরিবর্তন আনা হইবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা কল্যাণ কামনা ও শান্তি শৃংখলা বজায় রাখিবে। তাহাদের উপর কোন জুলুম চাপানো হইবে না। তাহাদেরকে জুলুমকারী হইতে দেওয়া হইবে না” (তাবাকাতুল কুবরা, ১খ, ২৬৬; বিদায়া, ৫খ, ৫৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা) অমুসলিমদের অধিকার সংরক্ষণ সম্পর্কে উল্লেখ করিয়াছেনঃ “পরম করুণাময় আল্লাহর নামে তাঁহারই সাহায্য সহকারে। মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর পক্ষ হইতে সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারীরূপে নিযুক্ত। আল্লাহর আমানতের আমানতদার তাঁহার সৃষ্টিকুলের মধ্যে, যেন জনগণ রাসূল আগমনের পর আল্লাহর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিতে না পারেং আল্লাহ সুবিজ্ঞানী। মুহাম্মাদ (সা) এই চুক্তিনামা লিখিয়াছেন তাহার সম-মিল্লাতের লোকদের জন্য। তাহার নিকটবর্তী ও দূরবর্তী, তাহাদের স্বভাষাভাষী, তাহাদের কম বাকপটু, তাহাদের পরিচিত-অপরিচিত সকল মানুষের জন্য। এই লিখনটি মূলত তাহাদের সহিত কৃত এক চুক্তিনামা ওয়াদাপত্র। এই ওয়াদা যে ভঙ্গ করিবে, তাহার বিরুদ্ধতা করিবে, ইহাতে যে আদেশ-নির্দেশ লিপিবদ্ধ আছে তাহার বিপরীত কাজ করিবে সে আল্লাহর সহিত ওয়াদাকৃত চুক্তি ভঙ্গ করিবে, তাহার দীনের প্রতি অপমান ও বিদ্রুপ করিবে এবং এইজন্য লানতে পড়িবার যোগ্য হইবে সে শাসন কর্তৃপক্ষ হউক বা মুমিন মুসলিমের মধ্য হইতে কেহ হউক। কোন রাহের বা সাধক পাহাড়ে, উপত্যকায়, গুহায়, সভ্য এলাকায়, প্রস্তরময়, বালুকাময়, কুটিরবাসী, মন্দীর যেখানেই হউক না কেন আমিই তাহাদের সকলের পৃষ্ঠপোষকতা করিব। তাহাদের খোঁজ-খবরের জন্য আমি নিজে এবং আমার সহায়তাকারী আমার মিল্লাতের ও আমার অনুসরণকারী লোক নিয়োজিত থাকিবে। ওরা আমার রক্ষণাবেক্ষণ অধীন আমার দায়িত্বভুক্ত, চুক্তিবদ্ধ লোকেরা খারাজ ইত্যাদির যে বােঝা বহন করে সেই কষ্টদায়ক অবস্থা তাহাদের উপর হইতে আমি দূর করিব। তাহারা যাহা খুশি হইয়া দিবে তাহাই গ্রহণ করিব। তাহাদের উপর কোন জবরদস্তি করা হইবে না। কোন পাদরীকে তাহার পদ হইতে বরখাস্ত করা হইবে না। কোন রাহেবকে তাহার বৈরাগ্য হইতে বিরত করা হইবে না। কোন ধ্যানমগ্ন ব্যক্তিকে তাহার ধর্মকেন্দ্র,

২৭১

হইতে বহিষ্কার করা হইবে না। কোন বাউলকে তাহার বাউলী কাজে বাধা দেওয়া হইবে না। তাহাদের গীর্জা, মন্দির, ধর্মকেন্দ্রকে ধ্বংস করা হইবে না। তাহাদের গির্জা বা ধর্মকেন্দ্রের কোন জিনিসপত্র মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার করা হইবে না, মুসলমানদের ঘর-বাড়ী নির্মাণে ব্যবহার করা হইবে না। যদি কেহ তাহা করে তবে সে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিল, তাঁহার রাসূলের বিরোধিতা করিল। রাহেব, পাদরী, পুরোহিত ও অন্যান্য ধরনের উপাসনাকারীদের উপর কোন জিযিয়া বা জরিমানা ধার্য হইবে না। তাহারা যেখানেই বাস করুক, স্থলভাগে বা নদী-সমুদ্রে, পূর্বে বা পশ্চিমে, উত্তরে বা দক্ষিণে, তাহাদের সকলের অধিকার আমি পালন করিব, সংরক্ষণ করিব। তাহারা সকলেই আমার যিম্মায় আমার চুক্তিতে এবং সকল প্রকার অবাঞ্ছিত অবস্থার মধ্যে পূর্ণ নিরাপত্তায় থাকিবে। অনুরূপভাবে যাহারা পাহাড়ে-পর্বতে, অন্যান্য পবিত্র স্থানে ইবাদতে এককভাবে রত আছে তাহারা চাষাবাদ করিলেও তাহাদের উপর উশর বা খারাজ ধার্য হইবে না। তাহাদের বিলাসবহুল জীবন ও সুখ-স্বাচ্ছন্দে হস্তক্ষেপ করা হইবে না। ধনী জমি জায়গার মালিক ও ব্যবসায়ীদেরকে প্রতি বৎসর মাত্র ১২ (বারো) দিরহাম দিতে বলা হইবে। কাহারও উপর অতিরিক্ত বােঝা চাপানো হইবে না। তাহাদের সহিত ঝগড়া বিবাদ করা হইবে না, শুধু উত্তম ও যুক্তিপূর্ণ কথা বলা হইবে। তাহদের জন্য দয়া-অনুগ্রহের বাহু বিছাইয়া দেওয়া হইবে। তাহারা যেখানেই যে অবস্থাতেই থাকুক, সকল প্রকারের খারাপ আচরণ হইতে তাহাদেরকে রক্ষা করা হইবে। মুসলমানদের নিকট কোন খৃস্টান বসবাস করিলে সে তাহাই দিবে যাহা দিতে সে রাজী হয়। তাহাকে তাহার উপাসনালয়ে প্রতিষ্ঠিত রাখা হইবে এবং যে তাহার ধর্মীয় কাজকর্মে কোন প্রকারের বাধা সৃষ্টি করিবে, সে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের প্রতিশ্রুতির নাফরমানরী করিল। তাহাদের উপাসনালয় মেরামতে তাহাদের সাহায্য করা হইবে। তাহাদের ধর্ম পালনের ব্যাপারে তাহাদের প্রতি সাহায্য ও সহযোগিতা করা হইবে, চুক্তি পরিপূরণ স্বরূপ তাহাদের অস্ত্র বহনে বাধ্য করা হইবে না, মুসলমানরাই তাহাদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করিবে। কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানরা এই চুক্তি যথাযথভাবে পালন করিবে, ইহার বিরুদ্ধতা করিবে

। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ (সা) লিখিত এই চুক্তি, সকল খৃস্টান (অমুসলিমদের জন্য ) এবং ইহার মধ্যে লিখিত যাবতীয় শর্ত রক্ষার ব্যাপারে সাক্ষী হইল আলী ইবন আবু তালিব (রা) (মাজমুয়াতুল ওসাইক আস-সিয়াসিয়াহ, পৃ. ৩৭৩)।

২৭২

ISA

বন:

,

re Pi> কি! Fিif Sধারা৯৩)। • চ$ ip চিড়িীচ ভ5$

চুনাভূত বিভিন্ন পেশাজীবীর অধিকার সংরক্ষণ! .] চর্চ

22 vF2exaীতি দক) চি কচি চি লিলি রাষ্ট্রে বস্তুবাসব্রত সকল শ্রেণী ও শাজীবীর অধিকাৰু সংরক্ষণ করিতে হয়। চীক ভিচচচী চা চাড়া চিক ভি ভৗভীe 1ST R, চি [চীজী দক) চি$ চর্চিাকরিণে % fr্যা ৩ ভী।চJ* ছিন?

রাষ্ট্ৰেন্বিগৰীসকল শ্রেণীপেশজীবীর অধিকার

স ম্পর্কে হর্ষর আলী (রা)কে কখল্পেকায়িত্বঞ্চিতুর্থখলীফাহর আলী(রা)র্তিক মিসরের ভাবগভর্নর মালিক ইবন হারিস আঁশজারীকেই সম্পর্কে বলিয়াছিলেন, “তোমাকে জানিতে হইবেঙ্গলিক তোমাকে যে জনগণেরুরশাসক নিযুক্ত করা হইয়াছে তাহরী বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত প্রত্যেক শ্রেণীর সমৃদ্ধিই ব্যক্তিত ও সমষ্টিগতভাবে এতর্জনিপিরম্পর নির্ভরশীল গোটা সমাজ কাঠামোইযেম। একটি ঘনভাবে বোনা জালj-অপর অংশের কার্যকর সহযোগিতাও সদিচ্ছা ছাড়া কোন একটি দল মুখে শান্তিতে বসবাস করিতে পারে নাস্তিহাদের মধ্যে। রহিয়াছে আল্লাহর উদ্দেশ্য প্রতিপালনের জন্য একটি সুশৃংখল শক্তিশালী সেনবাহিনীরষ্ট্ৰীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্য সঠিববৃন্দ, সুষ্ঠ বিচার বিভাগ পরিচালনার জন্য কাযী বিচারপতি), অভ্যন্তরীণ শক্তিশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অতঃপর রহিয়াছে সাধারণজনগণ হরি সরকারী বিভিন্নকরপ্রদানকরিয়া থাকে তাহার পর সমাজের পশ্রিদৈশের ব্যবসায়ী, দোকামীর, শিল্পী কারিগরখাহার সরবরাহকারী ও ভোক্তারে স্মধ্যে মধ্যস্থ হিসাদেকজিকরে হিরা লাভের আশায় দোকান,বাজারু স্ব্যর্থসাকেন্দ্র স্থাপন করে। কারিগররী তাহাদের নির্মাণকর্ম দিয়া সমাজকে এমনভাবে সাহায্য কৱোহা অদক্ষ শ্রদিরা সম্ভব নহে। সকল শ্রেণীর অধিকার আল্লাহ ও তাঁহীরাপ্পাসূল স্বাহালিয়াছেন, তুমি ভাহা সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকবে নাহজুল বালাগা মাধ্যমঃ হযরত আলী () এর একটি গুরত্বপূর্ণ প্রশাসনিক চিঠি,

d i N)!

kak .] চাক চটি ত চ ই সী!ি ভjs! তার উt)!ি মি- তীর উঁ2 ত}} (F) চাচামচ Fশ; চ চত?s ji >- * ->}}> কী “! চ! ( 5 ) [s } :: – চFe =াজা (চ)বিচারাগাত Fa: 17শে ১১

রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিচারবিভাগ থাকিকে-তা:

২৭৩

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিচার বিভাগ থাকা প্রয়োজন। এই বিচার বিভাগ কেমন হইবে সে সম্পর্কে হযরত আলী (রা)-এর মতামত উল্লেখ করা যায়। তিনি গর্ভনর মালিক আল-আশতারীকে লক্ষ্য করিয়া বলেনঃ বিচারকার্য পরিচালনার জন্য তোমাকে সুবিবেচক হইতে হইবে। এই উদ্দেশ্যে উন্নত চরিত্র মেধাবী, উচু মনের যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নির্বাচন করা উচিত। তাহাদের অবশ্যই নিম্নরূপ গুণাবলী সম্পন্ন হইতে হইবে। (১) সমস্যার জটিলতার কিংবা সংখ্যার আধিক্যের কারণে তাহাদের কখনও মেজাজের ভারসাম্য হারানো উচিত নহে। (২) তাহারা লোভী দুর্নীতিপরায়ণ ও চরিত্রহীন হইতে পারিবেন না। (৩) যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি অভিযোগের সকল দিক সার্বিকভাবে যাচাই করিয়া না দেখা হইতেছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাহাদের নিশ্চিত হওয়া অনুচিত। যখন অস্পষ্টতা ও দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তখন আরও বিস্তৃত অনুসন্ধান চালাইয়া বিষয়গুলি স্পষ্ট করিয়া অতঃপর রায় প্রদান করিতে হইবে। (৪) তাহাদের অবশ্যই যুক্তি-প্রমাণের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করিতে হইবে এবং তাহাদের কখন মামলাকারীর দীর্ঘ কৈফিয়ত শুনিবার ব্যাপারে অধৈর্য হইলে চলিবে না। বিশদ বিবরণের মিথ্যা হইতে সত্যে উপনীত হইবার কাজে অবশ্যই ধীরস্থির এবং অধ্যবসায়ী হইতে হইবে। আর এইভাবে যখন সত্য আবিস্কৃত হইবে তখন তাহাদের নির্ভয়ে রায় প্রকাশ করিয়া বিবাদের ইতি টানিতে হইবে। (৫) যাহাদের প্রশংসা করা হইলে আত্মদর্পী হইয়া উঠে এবং যাহারা তোষামোদে গলিয়া যায় আর চাটুকারিতা ও প্ররোচনায় বিপথগামী হয় তাহাদের মধ্যে কেহ যেন বিচারক নিযুক্ত না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত এ সকল গুণসম্পন্ন লোক খুব কমই দেখা যাইবে। যখন তুমি বিচারক নিয়োগ করিবে তাহাদের কিছু কিছু বিচারের রায় ও ধারা বিবরণী তুমি আদ্যোপান্ত পরীক্ষা করিয়া দেখিবে। সাথে সাথে তুমি তাহাদের জন্য একটি ভালো পরিমাপের ভাতা নির্ধারণ করিয়া দিবে। যাহাতে তাহাদের সকল বৈধ প্রয়োজনগুলি পূর্ণ হয়, আর তাহারা যেন কাহারও মুখাপেক্ষী না হয় কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য না হয়। তোমার সরকারের মধ্যে তাহাদেরকে এমন একটি মর্যাদা ও সম্মান এবং তোমার ঘনিষ্ঠতা নিশ্চিত করিবে যেন তোমার কোন কর্মকর্তা, সভাসদ কেহই তাহাদেরকে ভীত ( কিংবা তাহাদের উপর কর্তৃত্ব করিতে না পারে। বিচার বিভাগকে অবশ্যই সকল প্রকারের প্রশাসনিক চাপ ও প্রভাব হইতে মুক্ত হইতে হইবে। ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির উর্দ্ধে উঠিতে হইবে। বিচার বিভাগকে অবশ্যই ভীতি ও পক্ষপাতহীন হইয়া কাজ করিতে হইবে। বিষয়টি ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখ, আর বিশেষত এই দিকটির উপর

বিধবদ্ধ ইসলামtf3://eilm.weebly.com/

২৭৪

গুরুত্ব দাও। কারণ তোমার নিযুক্তির আগে এ রাষ্ট্রটি দুর্নীতিপরায়ণ ও দাগাবাজদের হাতে ন্যস্ত ছিল। এ সকল লোভী ও জঘন্য ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাষ্ট্রকে শোষণ করিয়াছে এবং নিজেরা লাভবান হইয়োছে (নাহজুল বালাগা)।

ধারা-৯৩৯। বিচার বিভাগের লক্ষ্য অর্জনের পন্থা বিচারকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, মুখাপেক্ষীহীনতা ও পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করিয়া সুবিচার নিশ্চিত করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

বিচার বিভাগ সমাজে ইহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিতে পারে, যদি বিচারকের প্রকৃত যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ও সেজন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ততা তাহার মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় বর্তমান থাকে, যদি বিচারকার্যের যোগ্যতার জন্য জরুরী শর্তসমূহ তাহার মধ্যে পুরাপুরি পাওয়া যায়, যে সকল শর্তের উল্লেখ ইতিপূর্বে ধারা (৫৪৭)-এ বিস্তারিত উল্লেখ হইয়াছে।

ইমাম জাফর সাদেক (র) বলিয়াছেন, সমাজে সাধারণত চার প্রকারের বিচারক দেখা যায়। উহার মধ্যে তিন শ্রেণীর বিচারকই জাহান্নামে যাইবে। মাত্র এক শ্রেণীর বিচারক জান্নাতে প্রবেশ করিবে। প্রথম যে তিন শ্রেণীর বিচারক জাহান্নামে যাইবে তাহারা হইলঃ যে বিচারক সজ্ঞানে অবিচার করে। দ্বিতীয়, যে বিচারক না জানিয়া অবিচার করে। তৃতীয়, যে বিচারক না জানিয়াও সঠিক বিচার করে এবং কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করিবে যে জানিয়া-শুনিয়া সুবিচার করে (আল-হুকুমাতুল ইসলামিয়্যা, পৃ. ৩৬৮)।

বিচারকের অর্থনৈতিক মুখাপেক্ষীহীনতা, রাজনৈতিক পক্ষপাতহীনতা, স্থিতিশীলতা ও পূর্ণ স্বাধীনতা ও একথা সর্বজনবিদিত যে, বিচারকের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা অত্যন্ত বিশাল ও কঠিন। এই দিক দিয়া তাহার সহিত অপর কোন পদে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের কোন তুলনা হয় না। এই কারণে তাহার জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য সবচাইতে বেশী প্রয়োজন। অন্যথায় তাহার পক্ষে এই দায়িত্ব পালন কিছুতেই সম্ভব নহে। তাহাকে যদি এইরূপ স্বাতন্ত্র ও স্বাধীনতা দেওয়া হয় তাহা হইলেই আশা করা যায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে অনীহা বা বাধা-প্রতিবন্ধকতা কাটাইয়া উঠা ও তাহার প্রভাবমুক্ত হওয়া সম্ভব। আর সেজন্য অর্থনৈতিক দিক দিয়া তাহার অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও স্বাধীন থাকিবার ব্যবস্থা কার্যকর করিতে হইবে। যেন সে কখনও লোভের ফাঁদে না পড়ে।

২৭৫

বিচারককে সেজন্য সকল প্রকার বহিরাগত ও সরকারী বা রাষ্ট্রীয় প্রভাব হইতেও সম্পূর্ণ মুক্ত থাকিবার ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। বিচারকের বিচারকার্যের উপর কোন হস্তক্ষেপ কাহারও কাম্য হইতে পারে না। এইজন্যই হযরত আলী (রা) খুলাফায়ে রাশেদূনের চতুর্থ খলীফা পদে অভিষিক্ত হইবার পর তাহার নিয়োগকৃত গভর্নর মালিক আশতার নখয়ীকে লিখিত পত্রে তিনি উল্লেখ করিয়াছিলেনঃ বিচারককে তোমার নিকট এমন মর্যাদা প্রদান করিবে যাহা পাইবার লোভ তোমার বিশেষ লোকদের মধ্যে অপর কাহারও মনে কখনও জাগিবে না। তোমার নিকট এইরূপ মর্যাদা থাকিলেই বিচারক লোকদের সকল প্রকার প্রভাব ও প্রলোভন হইতে রক্ষা পাইতে পারিবে। অতএব তুমি সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য নিবদ্ধ করিবে (নাহাজুল বালাগা, নং ৫০-৫৩)।

ইসলামী রাষ্ট্রবিদগণ বলেন, সরকারের প্রশাসন কর্তৃত্ব দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ হইতেছে দেশ শাসন, আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃংখলা রক্ষা ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় ভাগে আছে, জনগণের সংশ্লিষ্ট জটিল সামষ্টিক বিষয়াদিতে স্পষ্ট অকাট্য রায়দান, পথনির্দেশনা ও পারস্পরিক বিবাদের সময় বিচার কার্য সম্পাদন করা। রাসূলুল্লাহ (সা) এবং খুলাফায়ে রাশেদূনের আমলে এই দুইটি পদ দুই শ্রেণীর লোকদের উপর অর্পিত ছিল। প্রথম কাজের জন্য যেমন প্রতিটি অঞ্চলে শাসনকর্তা (১) নিযুক্ত ছিল তেমনি দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য স্বতন্ত্রভাবে বিচারক (কাযী) নিযুক্ত হইয়াছিল। অবশ্য কখনও কখনও এই উভয় ধরনের কাজের দায়িতু একই ব্যক্তিকেও দেওয়া হইয়াছে এবং একই ব্যক্তি প্রশাসক ও বিচারক উভয় পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করিয়াছেন। তবে তখন তাহা দেওয়া হইয়াছে সেই একই ব্যক্তির উভয় দিকের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের বিশেষ যোগ্যতা থাকিবার কারণে। কিন্তু সাধারণত এইরূপ হইত না, বরং দুই কাজের দায়িত্বে দুই স্বতন্ত্র ব্যক্তিকেই নিযুক্ত করা হইত।

ধারা- ৯৪০

সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

বিচার বিভাগের দায়িত্ব হইল সমাজে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, ধনী-গরীব, সবল-দুর্বল পার্থক্য না করিয়া সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে বিচার ফয়সালা করিতে হইবে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেনঃ

২৭৬

الناس سواسية كاستان المشط الناس أمام الحق سواء

“মানুষ চিরুনীর দাঁতগুলির মতই সমান। মানুষ আইনের দৃষ্টিতে সর্বতোভাবে সমান”।

সাম্যের এই নীতি বর্ণনা প্রসংগে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?

وكتبنا عليهم فيها أن النفس بالنفس والعين بالعين والأنف بالأنف والأذن

بالأذن والسن بالسن والجروح قصاص (سورة المائدة : 45

“তাওরাতে আমরা তাহাদের প্রতি এই বিধান দিয়াছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং সকল প্রকার যখমের জন্য সমান বদলা নির্দিষ্ট” (সূরা মাইদা : ৪৫)।

আইনের দৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্যকরণ ধনী-গরীব বা সবল-দুর্বলের মধ্যে কাহাকেও আইনের অধীন ও কাহাকেও আইনের উর্দ্ধে রাখাকে জাতীয় ধ্বংস ও কঠিন বিপর্যয়ের কারণরূপে চিহ্নিত করা হইয়াছে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন।

ايها الناس …….انما هلك من كان قبلكم انهم كانوا اذا سرق فيهم الشريف تركوه واذا سرق فيهم الضعيف أقاموا عليها الحد .

“হে জনগণ! তোমাদের পূর্বে এমন সব লোক ছিল, যাহাদের অবস্থা এই ছিল যে, তাহাদের মধ্যকার কোন শরীফ অভিজাত ব্যক্তি চুরি করিলে তাহারা তাহার উপর আইনের দণ্ড কার্যকর করিত না। আর কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করিলে তাহার উপর আইনের দণ্ড কার্যকর করিত” (সহীহ মুসলিম)।

ধারা-৯৪১ শাসন বিভাগ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ শাসন বিভাগ হইতে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন হইবে।

বিশ্লেষণ

শাসন বিভাগ হইতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করিতে হইবে। প্রশাসন বিচার বিভাগের উপর অবৈধ প্রভাব খাটাইতে পারিবে না। বিচার বিভাগ সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফার মত ছিল যে, ন্যায়ের খাতিরে তাহাকে কেবল শাসন বিভাগের

২৭৭

হস্তক্ষেপ এবং প্রভাবমুক্ত হইলেই চলিবে না, বরং আদালতকে এতখানি ক্ষমতার অধিকারী হইতে হইবে যে, স্বয়ং খলীফাও যদি জনগণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে সেক্ষেত্রে আলাদত যেন তাহার উপরও নির্দেশ জারী করিতে পারে। ইমাম আবু হানীফা (র) তাহার জীবনের শেষ পর্যায়ে আসিয়া তাহার ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলিয়াছিলেন, খলীফা যদি এমন কোন অপরাধ করেন যাহা মানুষের অধিকারের সহিত সম্পৃক্ত তখন আলাদত তাহার নির্দেশ জারী করিতে পারিবে (আল-মাক্কী, ২খ, পৃ. ১০০)।

বনী উমাইয়া ও বনী আব্বাসীদের শাসন আমলে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর বিচারকের পদ গ্রহণ না করিবার অন্যতম কারণ ছিল, সে সময়ে আদালতের স্বাধীনতা ছিল না। সেখানে খলীফার উপর আইনের বিধান প্রয়োগের সুযোগ ছিল

। কেবল তাহাই নহে, ইমাম আবু হানীফা (র)-এর আশংকা ছিল যে, তাহাকে সরকার অত্যাচারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করিবে। তাহার উপর প্রভাব খাটাইয়া অন্যায় ফয়সালা জারী করা হইবে। ১৩০ হিজরীতে ইরাকের তঙ্কালীন গভর্ণর ইয়াযীদ ইবনে উমার ইবন হুবায়রা আবু হানীফাকে বিচারকের পদ গ্রহণে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। এই সময়ে গভর্নর সরকারের প্রতি বড় বড় ফকীহদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ফকীহ ইবন আবু লায়লা, দাউদ ইবন আবুল হিন্দ, ইবন শুরুমা প্রমুখ ফকীহদের সরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দান করেন।

অতঃপর সরকার ইমাম আবু হানীফাকে ডাকিয়া বলিলেন, আমার সীলমোহর আপনার হাতে সোপর্দ করিতেছি। আপনি সীল না দিলে কোন সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারী হইবে না। আপনার অনুমোদন ছাড়া ট্রেজারী হইতে কোন অর্থও বাহিরে যাইবে না। জবাবে তিনি বলিলেন, সে কোন ব্যক্তির হত্যার নির্দেশ দিবে আর আমি তাহাতে অনুমোদন দিব, এই জাতীয় কাজ আমার দ্বারা অসম্ভব (মানাকিবুল ইমাম, পৃ. ৩০)।

খলীফা মানসূর ইমামকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণের অনুরোধ করিলেও তিনি তাহা গ্রহণ করেন নাই। তিনি খলীফাকে বলিয়াছেন, আপনার শাহযাদা এবং সেনাপতিদের উপর আইন জারী করিবার মত সাহস যাহার নাই সেই ব্যক্তি এই পদের যোগ্য নহে। আল্লাহর কসম! সন্তুষ্ট হইয়া আমি এই পদ গ্রহণ করিলেও আপনার আস্থাভাজন হইতে পারিব না। সুতরাং অসন্তুষ্ট হইয়া দায়ে পড়িয়া এই পদ গ্রহণের প্রশ্নই উঠে না। কোন ব্যাপারে যদি আমার ফয়সালা আপনার বিরুদ্ধে যায়, আর আপনি আমাকে ধমক দিয়া বলেন,ম তোমার ফয়সালা পরিবর্তন না করিলে

২৭৮

আমি তোমাকে ফুরাত নদীতে ডুবাইয়া মারিব, তখন আমি নদীতে ডুব দিয়া মরা কবুল করিব কিন্তু ফয়সালা পরিবর্তন করিব না। এইভাবে ইমাম সাহেব বিচারকের পদ গ্রহণ অস্বীকার করিলেন (আল-মাক্কী, ২খ, পৃ. ১৭৩; ইবন খাল্লিকান, ৫খ, পৃ. ৪৬)।

ধারা-৯৪২

বিচার বিভাগের কর্মসীমা (ক) কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিচার বিভাগের সকল কার্যাদি নিয়ন্ত্রিত হইবে।

(খ) যে সকল বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট বিধান নাই সে সকল বিষয়ে বিচারকল্পে বিচারক ইজতিহাদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন।

বিশ্লেষণ

বিচার বিভাগের এখতিয়ার ও কর্মসীমাও আল্লাহর সার্বভৌম প্রভুত্বের নীতি মানিয়া লইবার পর আপনা আপনিই নির্ধারিত হইয়া যায়। ইসলামী আম্‌দর্শের ভিত্তিতে যখন কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, স্বয়ং রাসূলগণই সে রাষ্ট্রের সর্বপ্রথম বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। আল্লাহর আইন মোতাবেক জনগণের মধ্যে বিচারপ্রতিষ্ঠা করাই তাহাদের প্রধান কাজ হয়। রাসূলের পরে যাহারা এই দায়িত্বে অভিষিক্ত হইবেন তাহারাও নিজেদের বিচারকার্যের ভিত্তি আল্লাহ ও রাসূল হইতে প্রাপ্ত আইনের উপর স্থাপিত করিতে বাধ্য। কুরআন মজীদে সূরা মাইদার দুই রুকু ব্যাপী এই বিষয়ের উপর আলোচনা হইয়াছে। উহাতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি তাওরাত নাযিল করিয়াছি। উহাতে হেদায়াত ও উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা ছিল এবং বনী ইসরাঈলের সকল নবীই আর তাহাদের পর সকল রব্বানী ও পণ্ডিতগণ সেই অনুসারেই ইহুদীদের পারস্পরিকব্যাপার সমূহের মীমাংসা করিত। তাহাদের পরে আমি ঈসা ইবন মারয়ামকে প্রেরণ করিয়াছি এবং তাহাকে হেদায়াত ও উজ্জল আলোকবিশিষ্ট ইঞ্জীল কিতাব দিয়াছি। অতএব ইঞ্জীল কিতাবধারীদের কর্তব্য আল্লাহ প্রদত্ত ইঞ্জীলের হিদায়াত অনুসারে ফয়সালা করা”। এই ঐতিহাসিক বিবরণ দানের পর আল্লাহ তায়ালা আমাদের রাসূল (সা)-কে সম্বােধন করিয়া বলিতেছেন, আমি এই কিতাব কুরআন মজীদ ঠিক ঠিকভাবে পরম সত্যতা সহকারে তোমাদের প্রতি নাযিল করিয়াছি।

২৭৯

قام

بينكم بما أنزل الله ولا تتبع أهوائهم عما جاك من الحق .

“অতএব তুমি জনগণের মধ্যে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে বিচার ফয়সালা কর এবং তোমাদের নিকটস্থ এই মহান সত্যকে উপেক্ষা করিয়া মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা ও মানব বুদ্ধিতে রচিত বিধানের অনুসরণ করিও না” (৫ঃ ৪৮)

أفحكم الجاهلية يبغون ومن أحسن من الله حكما لقوم

L

• “মানুষ কি ইহার পরিবর্তে জাহিলী যুগের বিচার ব্যবস্থা দাবি করে? অথচ আল্লাহর প্রতি যাহাদের দৃঢ় বিশ্বাস আছে তাহাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া উত্তম বিচারক আর কে হইতে পারে” (সূরা মাইদা : ৫০)?

এই দীর্ঘ আলোচনা প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা তিনবার বলিয়াছেন, যাহারা আল্লাহর দেওয়া বিধান মোতাবেক বিচার ফয়সালা করে না তাহারই কাফের… তাহারই জালেম…. তাহারাই ফাসেক(দ্রঃ ৫ঃ৪৪, ৪৫,৪৭)।

আল্লাহ পাকের এই কঠোর শাসনবাণী উচ্চারণের পর ইসলামী রাষ্ট্রের আদালতসমূহের কর্তব্য সম্পর্কে কর্মসীমা সম্পর্কেও আর বিস্তারিত কিছু বলিবার অবকাশ থাকে না।

ধারা-৯৪৩

সরকারের আনুগত্যের সীমা। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হইবে, জনগণ শুধু ভাল কাজে (মারূফ) তাহার আনুগত্য করিতে বাধ্য থাকিবে এবং শরীয়াত পরিপন্থী কাজে আনুগত্য করিতে বাধ্য নহে।

বিশ্লেষণ

ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হইবে সেই সরকারের প্রতি জনগণকে অনুগত থাকিতে হইবে। এই আনুগত্যের সীমা কি হইবে সেই বিষয়ে এই ধারাতে উল্লেখ করা হইয়াছে। বলা হইয়াছে, জনগণ শুধু সরকারের ন্যায়ানুগ কাজ যাহা শরীয়াত পরিপন্থী নহে, এই জাতীয় সকল কাজে আনুগত্য প্রকাশে বাধ্য থাকিবে। আর যদি সরকার এমন কোন আদেশ-নির্দেশ প্রদান করে, যাহা শরীয়ত সম্মত নহে, তবে সেক্ষেত্রে জনগণ সরকারের উক্ত নির্দেশ মানিতে

২৮০

বাধ্য থাকিবে না এবং সরকারও উক্ত নির্দেশ পালনে জনগণকে বাধ্য করিতে পারিবে না। এই সম্পর্কে আল্লাহ পাক সূরা মুমতাহানাতে উল্লেখ করিয়াছেন?

ايها النبي اذا جاك المؤمن يبايعك على أن لا يشرك بالله

•(1Y: I will ) Li l a …

“হে নবী! ঈমানদার মহিলারা যখন তোমার নিকট বায়আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করিবার জন্য আসে যে, তাহারা আল্লাহর সহিত শরীক করিবে না…. এবং কোন বৈধ বিধানের ব্যাপারে তোমার বিরুদ্ধাচরণ করিবে না তখন তুমি তাহাদের বায়আত কবুল করিও” (সূরা মুমতাহানা :১২)।

وتعاوؤا على البر والتقوى ولا تعاوؤا على الاثم والعدوان

واتقوا الله إن الله شديد العقاب (سورة المائدة الاية : ۲۶) .

“সৎকর্ম এবং তাকওয়ার ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করিও এবং পাপ ও ঔদ্ধত্যে সহযোগিতা করিও না। আল্লাহকে ভয় করিও। আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা” (সূরা মাইদা ও ২)।

• (15 : Jl) { ii 31, “তাহাদের মধ্য হইতে কোন পাপাচারী এবং অকৃতজ্ঞের আনুগত্য করিও না” (সূরা আম্‌দ-দাহার ও ২৪)।

আনুগত্য সম্পর্কে হাদীসের কিতাবে উল্লেখ করা হইয়াছে? রাষ্ট্রপ্রধান যথাবিধি নির্বাচিত হইলে বলা যায় যে, তিনি সমগ্র সমাজের আনুগত্যের (বায়আত) প্রতিশ্রুতি অর্জন করিয়াছেন অর্থাৎ যে সংখ্যাগুরু অংশ তাহাকে ভোট দিয়াছে শুধু তাহাদেরই আনুগত্য নহে, যাহারা তাহার বিরুদ্ধে ভোট দিয়াছেন তিনি তাহাদেরও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি লাভ করিয়াছেন। কারণ সমাজ সম্পর্কিত যে সকল সিদ্ধান্ত শরীয়ার কোন বিধানকে লঙঘন করে না সেসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু অংশের মতামত সমাজের প্রতিটি সদস্যের উপরই বাধ্যতামূলক। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন।

ش في النار من فارق الجماعة

يد الله على الجماعة ومن ش بشرا فقد خلع الاسلام من عنقيه ..

“আল্লাহর হস্ত রহিয়াছে সমাজের ( আল-জামাআত ) উপর এবং যে কেহ উহা হইতে নিজকে বিচ্ছিন্ন করে তাহাকে ছিন্ন করিয়া নিক্ষেপ করা হইবে জাহান্নামের আগুনে।

২৮১

সমাজ হইতে যে ব্যক্তি হস্ত পরিমাণ ব্যবধানেও সরিয়া পড়ে সে আর মুসলিম থাকে না (শাব্দিক অর্থে)। ইসলামকে সে নিজের কাঁধের উপর হইতে ছুড়িয়া ফেলিয়া দেয়” (আবু দাউদ, আহমাদ ও ইবন হিব্বান)।

ফলে সরকার যখন শরীয়া কর্তৃক আরোপিত শর্তগুলি অনুসরণ করিতে সমর্থ হয়, তখন নাগরিকদের আনুগত্যের প্রতি সরকারের দাবি হয় নিরংকুশ।

على السمع والطاعة في العسر واليسر والمنشط والمكره .

“জনগণ সংকটে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে, প্রীতিকর এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় (কথা) শুনিতে এবং মানিয়া চলিতে বাধ্য” (বুখারী ও মুসলিম)।

সংক্ষেপে তাহাদেরকে অবশ্যই সরকারের আনুগত্য করিতে হইবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদের সূরা তওবার ১১১ নং আয়াতে বিস্তারিত উল্লেখ করা হইয়াছে। মুসলিম শরীফের এক বর্ণনামতে আনুগত্য প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হইয়াছে

من خلع يدا من امن طاعة لقي الله يوم القيامة ولا حجة له

من مات وليس في عنقه بيعة مات ميتة جاهلية.

“যে ব্যক্তি সরকারের প্রতি তাহার আনুগত্যের হস্তকে উঠাইয়া লয় (প্রত্যাহার করে) সে যখন কিয়ামতের দিন আল্লাহর সহিত সাক্ষাত করিবে তখন তাহার নিজের সমর্থনে কিছুই পাইবে না এবং যে ব্যক্তি নিজেকে আনুগত্যের শপথে আবদ্ধ না করিয়া মৃত্যুবরণ করে সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে”।

মুসলিম জাতির ঐক্যের উপর আল-কুরআন এবং সুন্নাহতে যে গুরুত্ব আরোপিত হইয়াছে সেই গুরুত্বের বিচারে এই ঐক্য নষ্ট করিবার যে কোন অন্যায় চেষ্টা যে সবচাইতে বড় অপরাধ তাহাতে সন্দেহ নাই।

ایما رجل خرج يفرق بين أمتی فاضربوا عنقه

“আমার উম্মতের ঐক্য যে ব্যক্তি নষ্ট করিতে চাহে তাহারই গর্দানে আঘাত হানিবে” (নাসাঈ)।

من أتاكم وامركم جميع على رجل واحد يريد ليشق عصاکم او

يفرق جماعتكم فاقتلوه (النسائی) .

• “যখন তোমরা কোন এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হইয়াছে তখন যদি কেহ তোমাদের শক্তি নষ্ট করিতে বা ঐক্য ভঙ্গ করিতে চেষ্টা করে তবে তাহাকে হত্যা কর” (মুসলিম)।

২৮২

“পাপ কার্যে আনুগত্যের দায়িত্ব নাই। জানিয়া রাখ! শুধুমাত্র ভাল কাজের ক্ষেত্রেই (মারুফ) আনুগত্য” (বুখারী, মুসলিম)

“আল্লাহর প্রতি যে অনুগত নহে তাহার প্রতি আনুগত্য নাই” (আহমাদ)।

রাষ্ট্রপ্রধান যদি অত্যাচারী হইয়া যায় তবুও কি তাহাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করিতে হইবে? এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেনঃ

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خيار ائمتكم الذين تحبونهم ويحبونكم وتصلون عليهم ويصلون علیکم وشرار ائمتكم الذين تغضونهم ويبغضونكم وتلعونهم ويلعنونكم قلنا رسول الله لاتنابذهم عند ذالك قال لا ما قاموا فيكم الصلواة لا ما قاموا فيكم الصلواة – (رواه مسلم برواية عوف بن مالك)

“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম রাষ্ট্রপ্রধান তাহারই যাহাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং যাহারা তোমাদেরকেও ভালবাসে, যাহাদের জন্য তোমরা শুভ কামনা কর এবং যাহারা তোমাদের শুভ কামনা করে। আর তাহারাই তোমাদের নিকৃষ্টতম রাষ্ট্রপ্রধান তোমরা যাহাদেরকে ঘৃণা কর এবং যাহারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে, যাহাদেরকে তোমরা অভিশাপ দাও এবং যাহারা তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। আমরা (সাহাবীগণ) জিজ্ঞাসা করিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! অবস্থা যদি এমন হয় তাহা হইলে কি আমাদের উচিৎ হইবে না, আমরা তাহাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করি? তিনি বলিলেন, না! যতক্ষণ তাহারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম করে”।

এইখানে সালাত দ্বারা শুধু নামাযকে বুঝানো উদ্দেশ্যে নহে, বরং শরীয়াতের পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যকে বুঝানো হইয়াছে।

دعانا النبي صلى الله عليه وسلم فبايعناه فقال فيما اخذ علينا أن بايعنا على السمع والطاعة في منشطنا ومكرهنا وعسرنا ويسرنا واثرة علينا وان لا تنازع الأ والامراهله الا تروا كفرا بواحا عندكم من الله فيه برهان (رواه البخاری ومسلم) .

“নবী (সা) আমাদেরকে ডাকিলেন এবং আমরা তাহার নিকট আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করিলাম। তিনি আমাদেরকে আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ যাহাই হউক কেন, সংকটে এবং সুখে আমাদের জন্য আনন্দজনক হউক অথবা বিরক্তিকরই

২৮৩

হউক শুনিবার ও মানিয়া চলিবার দায়িত্ব দিলেন এবং আমাদেরকে বুঝাইয়া বলা হইল, যাহাদেরকে কর্তৃত্ব দান করা হইয়াছে তাহাদের নিকট হইতে উহা ফিরাইয়া নেওয়া আমাদের উচিত নহে। যদি না তোমরা প্রকাশ্য সত্য প্রত্যাখ্যান (কুফুরী) দেখিতে পাও যে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহর কিতাব হইতে) স্পষ্ট প্রমাণ পাইতেছ” (বুখারী ও মুসলিম)।

ধারা – ৯৪৪

ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠা জনগণের সুবিধার জন্য স্থায়ী আদালত ছাড়াও আদালত প্রতিষ্ঠা করা যাইবে।

বিশ্লেষণ

সুষ্ঠু বিচারকার্য পরিচালনার জন্য জনগণের সুবিধার্থে স্থায়ী আদালত ছাড়াও অস্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠা করা যায়। এ সম্পর্কে প্রমাণ হিসাবে ইমাম বুখারী (র) অনুচ্ছেদ কায়েম করিয়াছেন এই বলিয়া ওJI – Lal Lall “রাস্তায় বিচারকার্য ও ফতোয়া দান পরিচালনা এবং প্রমাণ হিসাবে বলিয়াছেন?

وقضی یحی بن يعمر في الطريق وقضى الشبعي على باب داره.

“হযরত ইয়াহইয়া ইবন ইয়ামার রাস্তায় বসিয়া বিচারকার্য সম্পাদন করিয়াছেন এবং শাবী (র) তাহার বাড়ীর আঙ্গিনায় বসিয়া বিচারকার্য সম্পাদন করিয়াছেন” (বুখারী, আহ্কাম, রাস্তায় ফতোয়া ও বিচারকার্য পরিচালনা অনুচ্ছেদ, পৃ. ১০৫৯)।

এ বিষযে হযরত ইমাম বুখারী একটি হাদীসও উল্লেখ করিয়াছেন।

عن انس بن مالك قال بينما انا والنبي صلى الله عليه وسلم

خارجان من المسجد فلقينا رجل عند سدة المسجد فقال بارسول

…………….. – Jaa acL1 40। “হযরত আনাস ইবন মালেক (রা) বলেন, আমি ও রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদ হইতে বাহির হইতেছিলাম। পথিমধ্যে একজন লোেক রাসুলাল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হইবে? রাসূলাল্লাহ (সা) তাহাকে প্রশ্ন করিলেন, তুমি তাহার জন্য কতুটুকু প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়াছ? লোকটি বলিল, আমি অবশ ইহার জন্য বেশী বেশী রোযা, নামায, দান করিয়া তৈরি হই

২৮৪

নাই। তবে আমি আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূলের প্রতি গভীর ভালবাসা রাখি। রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তুমি যাহাকে ভালবাস, কিয়ামতের দিন তাহার সহিত থাকিবে” (বুখারী, পূর্বোক্ত বরাত)।

ধারা – ৯৪৫ শাসনতন্ত্র ব্যাখ্যায় বিচার বিভাগের মতই চূড়ান্ত শাসনতন্ত্র ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সবাের্চ আদালতের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে।

বিশ্লেষণ

সাধারণত সরকার পরিচালনা অথবা যে কোন বিষয়ে নীতি নির্ধারণে পরস্পর মতবিরোধ দেখা দিলে যে পন্থা অবলম্বন করিতে হইবে সে সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে।

قان تنازعتم فی شئ قوة الى الله والرسول ان گنتم

تؤمنون بالله .

“অতঃপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হও তাহা হইলে সে বিষয় তোমরা আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর” (সূরা নিসা : ৫৯)।

মতবিরোধের ক্ষেত্রে বর্তমান কালে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে সে ব্যাপারে মুফতী মুহাম্মাদ শফী (র) উল্লেখ করিয়াছেন, “যখনই কোন বিষয়ে কোন সমস্যার ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয় তখনই রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বিচারক সাব্যস্ত করিয়া তাহার মীমাংসা করাইয়া নেওয়া, অতঃপর তাঁহার মীমাংসাকে স্বীকার করিয়া সেমতে কাজ করা উভয় পক্ষের অবশ্য কর্তব্য। তাফসীরকারগণ উল্লেখ করিয়াছেন যে, এই নির্দেশটি কিয়ামত পর্যন্ত তেমনিভাবে বলবৎ থাকিবে যেমন ছিল তাহার যুগে। তখন যেমন সরাসরি তাঁহার নিকট পেশ করা হইত তেমনি তাঁহার পরে তাঁহার শরীয়াতের মীমাংসা গ্রহণ করিতে হইবে” (তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন, পৃ. ২৬১)।

এই যুগে শাসনতন্ত্রে মতবিরোধ নিরসনের পন্থা বলা থাকে এবং আইন ও শাসনতন্ত্রের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা সর্বোচ্চ আলাদত প্রদান করে। ইসলামী রাষ্ট্রে যেহেতু সর্বোচ্চ আদালত কুরআন ও সুন্নাহ্ মোতাবেক মতবিরোধ নিরসন করবে, সুতরাং এ ব্যবস্থা কল্যাণকর ও গ্রহণযোগ্য।

২৮৫

ধারা – ৯৪৬

বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য গ্রহণ ঘটনার সাক্ষী ব্যতীত বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায়।

বিশ্লেষণ

প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনা সম্পর্কে জানে এমন সাক্ষী ছাড়াও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায়, বিশেষ করিয়া যে সকল বিষয় বিশেষ কোন বিদ্যার সহিত সংশ্লিষ্ট। যেমন হযরত উমার (রা) বিশেষ বিদ্যার সহিত সংশ্লিষ্ট বিষয় সেই বিদ্যার বিশেষজ্ঞের দ্বারা পরীক্ষা করার পর তাহাদের সাক্ষ্য অনুযায়ী বিচার করিতেন। একদা কবি হােতিয়া যিরকান ইবন বদর নামক এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করিয়া একটি ব্যঙ্গ কবিতা রচনা করিয়াছিলেন। কবিতার ভাষার দ্বারা যদিও প্রত্যক্ষ কিছু মনে হইত না কিন্তু পরোক্ষভাবে ইহার দ্বারা যিরকান ইবন বদরকে অত্যন্ত অপদস্ত করা হইয়াছিল। যিরকান খলীফার নিকট তাহার মানহানির কারণে বিচার প্রার্থনা করিলেন। খলীফা হযরত উমার (রা) কবিতার পরিভাষা এবং প্রকাশভঙ্গী প্রত্যক্ষ করার জন্য বিশিষ্ট কবি হাসসান ইবন ছাবেতকে এই ব্যাপারে তদন্তের ভার দেন এবং তাহার অভিমত অনুযায়ী এই মোকদ্দমার বিচার করেন। অনুরূপভাবে বংশ নির্ণয় সংক্রান্ত সকল সমস্যায় হযরত উমার (রা) দেহাবয়ব বিদ্যায় পারদর্শীদের মতামতের ভিত্তিতে ফয়সালা করিতেন (আল-ফারূক, পৃ. ২০৭-৮)।

ধারা -৯৪৭

ফতওয়া বিভাগ বিচার কার্য পরিচালনায় আদালত ধারা (৫৬৫) সাপেক্ষে মুফতীগণের সাহায্য নিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

দেশের জনগণ যাহাতে শরয়ী আইন-কানুন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করিতে পারে, সেজন্য ফতওয়া বিভাগ থাকিতে হইবে। বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে ফতওয়া বিভাগের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ইসলামের প্রাথমিক যুগেই এই বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিভাগের মুফতীগণ আদালতী সহায়তা দিতে পারিবে। এই

২৮৬

বিভাগের প্রধান দায়িত্ব হইতেছে জনসাধারণের মাঝে শরয়ী আইন-কানুনের প্রচার করা, যাহাতে জনসাধারণ আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করিতে পারে। ফতওয়া আর বিচার এক জিনিস নহে। ফতওয়া হইল কোন বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান বা আইনগত অভিমত প্রদান। ফতওয়াপ্রার্থীর উহা গ্রহণ করা বা না করার এখতিয়ার আছে। আর বিচার হইল এমন একটি বিষয়ে যে, বিচারক বিচার করার পর তাহার রায় বিচারপ্রার্থী গ্রহণ করিতে বাধ্য। অর্থাৎ ফতওয়া হইল কোন বিষয়ে জ্ঞাত করা বা সঠিক ধারণা দেওয়া। আর বিচার হইল রায় প্রদান করা, ডিক্রী জারী করা যাহা জনগণ মানিতে বাধ্য। সরকার দেশের সকল অঞ্চলে আইন বিশেষজ্ঞ মুফতী ও ফকীহগণকে নিযুক্ত করিবেন, যাহাতে জনগণ আইন সম্বন্ধীয় যে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করিয়া সঠিক বিষয় জানিতে পারে। মুফতীগণও প্রত্যেক প্রশ্নকারীর উত্তর প্রদানে বাধ্য থাকিবেন।

এই বিভাগটি সুস্পষ্টভাবে পরিচালনার জন্য সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় বিষয় হইতেছে, জনসাধারণকে ফতওয়া দেওয়ার অধিকার না দিয়া রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে নীতিমালা প্রদান করা। কেবলমাত্র যোগ্য ব্যক্তিই ফতওয়া দিতে পারিবেন। অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা যেন কোন ভুল মাসআলার প্রচার হইতে না পারে সেজন্য হযরত উমার (রা) তাহার খেলাফতকালে অত্যন্ত সাবধানতার সহিত এই বিভাগের লোক নির্বাচিত করিতেন। তিনি কেবলমাত্র হযরত আলী, হযরত উসমান, হযরত মুয়ায ইবন জাবাল, হযরত আবদুর রহমান ইবন আওফ, হযরত উবাই ইবন কাব, হযরত যায়েদ ইবন ছাবেত, হযরত আবু হুরায়য়া এবং হযরত আবু দারদা (রা) প্রমুখ যুগশ্রেষ্ঠ মনীষিগণকে ফতওয়া প্রদানের অধিকার দিয়াছিলেন। হযরত উমার (রা) এই ব্যাপারে এত সাবধানতা অবলম্বন করিতেন যে, অনেক সময় অনুমতিপ্রাপ্ত মুফতীগণের প্রদত্ত ফতওয়াও যাচাই করিতেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা)-কে অনেক সময় তিনি এমন প্রশ্ন করিতেন যে, এইরূপ মাসয়ালার তুমি কি জবাব দিয়াছ? আবু হুরায়রা যখন ইহার জবাব দিতেন তখন খলীফা বলিতেন, যদি তুমি এই মাসআলার অন্য কোন জবাব দিতে তবে ভবিষ্যতে আর তোমার ফতওয়া দেওয়ার অধিকার থাকিত না।

ফতওয়া বিভাগকে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য আর একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হইতেছে ফতওয়া দেওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নাম সাধারণের মাঝে প্রকাশ করিয়া দেওয়া। হযরত উমার ফারুক (রা) তাহার নিয়োগকৃত মুফতীদের বড় বড় জনসমাবেশে পরিচয় করাইয়া দিতেন, তাহাদের নাম ঘোষণা করিতেন। হযরত উমার (রা) সিরিয়া সফরের সময় “জারীয়া” নামক স্থানে এক বিশাল জনসভায় যে

২৮৭

ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়াছিলেন তাহার একটি অংশ ছিল : যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করিতে চায় তাহাকে উবাই ইবন কাব-এর নিকট যাইতে হইবে। যিনি ফরায়েজ সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করিতে চান তিনি যেন যায়েদ ইবন ছাবিতের নিকট যান। আর যিনি ফিকহ বা আইন-কানুন সম্বন্ধে কিছু জানিতে চান তিনি যেন মুআয ইবন

জাবালের শরণাপন্ন হন (আল-ফারূক, পৃ. ২০৯)।

ধারা – ৯৪৮

ফৌজদারী পুলিশ বিভাগ জনগণের জান মালের নিরাপত্তার জন্য ফৌজদারী পুলিশ বিভাগ থাকিবে।

বিশ্লেষণ

দেশের জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বিভাগ থাকিবে, যাহার দায়িত্ব হইবে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফৌজদারী পুলিশ স্থাপন সম্পর্কে মাওলানা শিবলী নোমানী বলেন, আমরা যতটুকু জানিতে পারিয়াছি, হযরত উমার ফারুক (রা)-এর খেলাফত পর্যন্ত কোন নিয়মিত ফৌজদারী পুলিশ বিভাগ গড়িয়া ওঠে নাই। ব্যভিচার, চুরি ইত্যাদি গুরুতর অপরাধগুলির বিচার কাযীর আদালতেই করা হইত। এতদ্ব্যতীত সর্বপ্রকার প্রাথমিক বিচারাদির ক্ষমতা পুলিশের হাতেই অর্পণ করা হইত। পুলিশ বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে গঠন করা হইয়াছিল। তখন এই বিভাগের নাম ছিল আহদাছ’ এবং পুলিশ প্রধানকে বলা হইত “ছাহেবুল আহদাছ”। হযরত উমার (রা) বাহরাইনে কুদামা ইবন মাযউন এবং আবু হুরায়রাকে কর্মচারী নিযুক্ত করিয়া পাঠান। হযরত কুদামা ইবন মাযউন (রা) রাজস্ব আদায় করিতেন এবং হযরত আবু হুরায়রা পুলিশ বিভাগ পরিচালনা করিতেন। হযরত উমার (রা) নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা আঞ্জাম দিয়াছিলেন। তাহার সময় স্থানে স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হইত। এই সকল পুলিশের দায়িত্ব ছিল, দোকানদারগণ যেন কোন সাধারণ ক্রেতাকে ধোকা দিতে না পারে, অবৈধভাবে কেহ যেন সরকারী জায়গা দখল করিয়া জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করে, কেহ যেন ভারবাহী পশুর উপর অতিরিক্ত বােঝা চাপাইতে না পারে। সকল প্রকার মাদক দ্রব্যসহ অবৈধ পণ্যের কেনাবেচা রোধসহ জনগণের পূর্ণ নিরাপত্তা ও শান্তির পরিবেশ বজায় রাখা এই বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব ছিল। তবে এই সকল কাজের জন্য পৃথক কোন বিভাগ খােলা হইয়াছিল কিনা সে বিষয়ে

২৮৮

মতভেদ থাকিলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে শান্তি রক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব পুলিশের উপর ছিল। “কানযুল উম্মাল” গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, হযরত উমার (রা) আবদুল্লাহ ইবন উতবা (রা)-কে বাজারে শান্তি রক্ষার জন্য নিযুক্ত করিয়াছিলেন (আল-ফারূক, পৃ. ২০৯)।

ধারা-৯৪৯

জেলখানা প্রতিষ্ঠা কয়েদের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের সরকারী হেফাজতে রাখার জন্য জেলখানা স্থাপন করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের রাখার জন্য সরকারকে জেলখানা স্থাপন করিতে হইবে। জেলখানার উদ্ভাবন ও প্রচলন হযরত উমার (রা)-এর খেলাফতকালে হইয়াছিল। ইহার পূর্বে আরবদেশে জেলখানার কোন প্রচলন ছিল

। এইজন্য লঘু অপরাধেও বাধ্য হইয়া গুরুতর সাজা দিতে হইত। হযরত উমার (রা) সর্বপ্রথম মক্কা শরীফে সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার একটি বাড়ি চারি হাজার দিরহাম দ্বারা খরিদ করিয়া তাহাতে জেলখানা প্রতিষ্ঠা করেন (মাকরিযী, ২খ, পৃ. ১৮৭)। আল্লামা বালাযুরীর বর্ণনা মতে, হযরত উমার (রা) “নারসাল” নামক এক প্রকার মজবুত কাঠ দ্বারা কুফার জেলখানা তৈয়ার করাইয়াছিলেন (ফাতহুল বুলদান, পৃ. ৪৬৩)। প্রথম প্রথম কেবল অপরাধীকে জেলখানায় রাখা হইত। কিন্তু হযরত উমারের খেলাফতের শেষ কালে কাযী শুরায়হ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ ব্যক্তিদেরকেও জেলের সাজা দিতেন।

ধারা-৯৫০ জনসাধারণের অভাব-অভিযোগ শোেনা জন সাধারণ তাহাদের অভাব অভিযোগ যাহাতে সকল সময় পেশ

করিতে পারে তাহার ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

সর্বস্তরের জনগণ যাহাতে তাহাদের অভাব-অভিযোগের কথা সরকারকে জানাইতে পারে সেজন্য সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ

২৮৯

করিবেন। ইহাতে যেন কোন প্রকারের বাধা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সরকার সজাগ দৃষ্টি রাখিবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন?

عن عمرو بن مرة أنه قال لمعاوية سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من ولاه الله شيئا من امر المسلمين فاحتجب دون حاجتهم وخلتهم وفقرهم احتجب الله دون حاجته وخلته وفقره وفي رواية من ولی من امر الناس شيئا ثم اغلق بابه دون المسلمين المظلوم او ذی الحاجة اغلق الله ثون ابواب رحمته عند

• (51 4 4ll 130) • “হযরত আমর ইবন মুররা (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ পাক যাহাকে মুসলমানদের কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন, তিনি যদি তাহাদের অভাব-অভিযোগের কথা না শুনেন, তাহা হইলে আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তির কোন অভাব-অভিযোগের কথা শুনিবেন না। অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, যখন কাহারও উপর মুসলমানের জন্য বন্ধ রাখে তাহা হইলে আল্লাহ পাকও তাহার রহমতের দরজা ঐ ব্যক্তির জন্য বন্ধ করিয়া দেন” (বাইহাকী)।

হযরত উমার ফারুক (রা) যখন কাহাকেও কোন এলাকার দায়িত্ব অর্পণ করিতেন তখন তিনি তাহাকে বিশেষভাবে উপদেশ প্রদান করিতেন যেন যথাসম্ভব জনসাধারণের অভাব-অভিযোগের কথা শুনা হয়। তাহাদের জন্য সর্বদা দরজা উন্মুক্ত রাখা হয়। অন্যথায় তুমি শাস্তির যোগ্য বিবেচিত হইবে।

ধারা – ৯৫১

নিরাপত্তা প্রদান করা সরকার কর্তৃক জনগণ নিরাপত্তা প্রাপ্ত হইবে।

বিশ্লেষণ

প্রত্যেক নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। সৈনিকের দায়িত্ব পালনে মুসলিম নাগরিকের যে কর্তব্য, তাহারই অনুরূপ রাষ্ট্রের দায়িত্ব কর্তব্য হইতেছে বহিশত্রু ও আভ্যন্তরীণ শত্রুর হামলা হইতে সকল নাগরিকের রক্ষা করা। একইভাবে বিধিমত প্রতিষ্ঠিত সরকারকে মান্য ও সম্মান  G ১৯,

২৯০

করিবার যে দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের রহিয়াছে তাহার বিনিময়ে সরকারের অবশ্য করণীয় কর্তব্য হইতেছে নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবন রক্ষা করা। এ সম্পর্কে অবগত করাইবার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) বিদায় হজ্জে আরাফাতের ময়দানে ঘোষণা করিয়াছেন?

آن دماءكم واموالكم حرام عليكم كحرمة يومكم هذا (رواه

مسلم عن جابر بن عبد الله رضي الله تعالی عنه) .

“জানিয়া রাখ! তোমাদের জীবন, তোমাদের ধন-সম্পদ তোমাদের নিকট তেমনি পবিত্র যেমন পবিত্র আজকের এই দিন” (মুসলিম)।

অপর এক হাদীসে উল্লেখ করা হইয়াছে।

كل المسلم حرام دمه وماله وعرضه .

“প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ এবং সম্মান (অন্য) প্রত্যেক মুসলিমের নিকট অবশ্যই পবিত্র” (মুসলিম)।

ধারা – ৯৫২ মজলিশে শূরা বা পরামর্শ পরিষদ (সংসদ)

পরামর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার জন্য এবং প্রয়োজনীয় আইন প্রয়ণন, সংশোধন ও সংস্কারের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান একটি পরামর্শ পরিষদ গঠন করিবেন।

বিশ্লেষণ

মুসলমানদের সামগ্রিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিচালিত হইবে। ইসলামের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মূলত পরামর্শ ভিত্তিক। কুরআন মজীদে এই বিষয়ের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হইয়াছে। মহান আল্লাহর বাণী :

وأمرهم شورى بينهم.

“তাহাদের কর্ম তাহাদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পাদি হয়” (সূরা শূরা ও ৩৮)।

وشاورهم في الأمر ج فاذا عزمت فتوكل على الله.

“এবং কাজেকর্মে তুমি তাহাদের সহিত পরামর্শ কর; অতঃপর তুমি কোন সংকল্প করিলে আল্লাহর উপর নির্ভর করিবে” (সূরা আল ইমরান : ১৫৯)।

২৯১

মহানবী (সা) তাহার কল্যাণময় যুগেই পরামর্শ পরিষদ ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করিয়াছিলেন। যেসব বিষয়ে তিনি সরাসরি আল্লাহর পক্ষ হইতে কোন বিশেষ নির্দেশ পান নাই সেই সব বিষয়ে রায় প্রদানের যোগ্যতাসম্পন্ন সাহাবীদের সহিত পরামর্শ করিতেন এবং বলিতেন, হে লোকেরা! আমাকে পরামর্শ দান কর। তিনি বলেনঃ

استعينوا على أموركم بالمشورة .

“তোমাদের কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য পরামর্শের দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা কর” ৪৪

ماشتاور قوم قط الأهوالا رشد أمورهم .

“যে জাতিই কখনও পারস্পরিক পরামর্শ গ্রহণ করে তাহারা তাহাদের কাজে সর্বাধিক সঠিক পথনির্দেশ প্রাপ্ত হয়।”৪৬।

المستشار مؤتمن

“পরামর্শ গ্রহণকারী নিরাপদ।”৪৬ আবু হুরায়রা (রা) বলেন,”রাসূলুল্লাহ (সা)-এর তুলনায় অধিক পরামর্শ গ্রহণকারী কেহ ছিল না”।৪৭

মহানবী (সা)-এর সাহাবীগণ, বিশেষ করিয়া খােলাফায়ে রাশেদীনও বিভিন্ন বিষয়ে প্রবীণ সাহাবীগণের সহিত পরামর্শ করিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেন। উদাহরণস্বরূপ হযরত আবু বা সিদ্দীক (রা) কুরআন মজীদকে গ্রন্থাকারে সংকলনের জন্য এবং ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে প্রবীণ সাহাবীগণের সহিত পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অনুরূপভাবে উমার (রা) যুদ্ধলব্ধ সম্পত্তি সৈনিকদের মধ্যে বণ্টন এবং কর ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য সাহাবীদের পরামর্শ গ্রহণ করেন।

ধারা – ৯৫৩ পরামর্শ পরিষদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা (ক) ইসলামী শরীআ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ (মুজতাহিদ) ব্যক্তিগণ এবং সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে পরামর্শ পরিষদের সদস্যগণ নির্বাচিত হইবেন এবং তাহাদের মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি গুণ বিদ্যমান থাকিতে হইবে।

(১) ন্যায়নিষ্ঠা; (২) জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা; (৩) সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা।

২৯২

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্রপ্রধান যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তির সমন্বয়ে তাহার পরামর্শ পরিষদ গঠন করেন তাহাদেরকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় “আহলুল হালু ওয়াল-আব্দ” বলে, অর্থাৎ যাহারা সমস্যা চিহ্নিত করিয়া উহার সমাধান নির্ণয় করিতে সক্ষম। আল্লামা

আল-মাওয়ারদীর মতে তাহারা দুই শ্রেণীর লোক হইবেন : একদল ইসলামী আইনে পণ্ডিত ব্যক্তি। (মুজতাহিদ) এবং অপর দল সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ফিহুল ইসলামীতে বলা হইয়াছে, লক্ষ্য রাখিতে হইবে যে, রাজনৈতিক

কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে পরামর্শ পরিষদের সদস্যপদ কেবল মুজতাহিদ আলেমগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিবে না, বরং সমাজের নেতৃস্থানীয় লোকদের মধ্য হইতেও উহার সদস্য গ্রহণ করিতে হইবে।৪৯ অবশ্য পরামর্শ পরিষদের সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হওয়ার জন্য তাহাদের মধ্যে আরও কয়েকটি অপরিহার্য গুণ বিদ্যমান থাকিতে হইবে। উহার মধ্যে ন্যায়নিষ্ঠা ও সততা (আদালত) অন্যতম। আদালাত অর্থাৎ ন্যায়নিষ্ঠা বলিতে তাকওয়া ও মনুষ্যত্ব বুঝায়। শরীআতের আদেশ পালন ও নিষিদ্ধ বিষয় বর্জন তাকওয়ার অন্তর্ভুক্ত। মনুষ্যত্ব বলিতে মানবিক গুণাবলী, যথা দয়া-দাক্ষিণ্য, দ্রতা, বিনয় ইত্যাদিকে বুঝায়।

পরামর্শ পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা গুণে গুণান্বিত হওয়া জরুরী। কারণ ইহার সাহাযে সমস্যা চিহ্নিত করা, পরিস্থিতির মূল্যায়ন করা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়।

জ্ঞান-বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার সাহায্যে সমস্যা ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর প্রার্থীর মধ্যে রায় প্রদানের যোগ্যতা বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। অবশ্য সদস্য হওয়ার জন্য সম্পদশালী হওয়া, কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীভুক্ত হওয়া বা শহরবাসী হওয়া জরুরী নহে।

ধারা – ৯৫৪

পরামর্শ পরিষদের কার্যসীমা পরামর্শ পরিষদ – (ক) শরীআতের বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে;

(খ) যেসব বিষয়ে সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহর বিধান বিদ্যমান নাই, পরামর্শ পরিষদ সেই সব বিষয়ে আইন প্রণয়ন করিবে;

২৯৩

(গ) একই বিষয়ে একাধিক মত বিদ্যমান থাকিলে উহার মধ্যে একটি মতকে অগ্রাধিকার প্রদান করিয়া উহাকে আইন হিসাবে গ্রহণ করিবে।

বিশ্লেষণ

কুরআন ও সুন্নাহতে বিবৃত বিধানের আওতায় থাকিয়া পরামর্শ পরিষদ আইন প্রণয়ন করিবে। যে বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাতে কোন বিধান দেওয়া হয় নাই বা যেইসব বিষয় সম্পর্কে উক্ত দুইটি উৎস নীরব, সেইসব ক্ষেত্রে পরামর্শ পরিষদ প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করিবে। কোন বিষয়ে একাধিক মত বিদ্যমান থাকিলে পর্যালোচনার পর যে কোন একটি মতকে গ্রহণ পূর্বক আইনে পরিণত করিবে। আধুনিক কালের একটি সংসদ যেসব দায়িত্ব পালন করিয়া থাকে তাহাও পরামর্শ পরিষদের আওতায় আসিবে।

ধারা-৯৫৫ নির্বাচনের মাধ্যমে মজলিসে শূরা গঠন নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা মজলিসে শূরা গঠিত হইবে।

বিশ্লেষণ

“মজলিসে শূরা”-র সদস্য জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইতে হইবে। সর্বসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে তাহাকে ঐ পদে আসিন হইবে। এই ধারণা কুরআন মজীদে বর্ণিত আয়াতে।;; “কর্তৃপক্ষ তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে পাওয়া যায়। এই শব্দ কয়টি দ্বারা গোটা সমাজকে বুঝানো হইয়াছে। সুতরাং আইন পরিষদ বা মজলিসে শূরা অব্যশ্যই গোটা সমাজের জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক হইতে হইবে। এই ধরনের প্রতিনিধিত্ব শুধুমাত্র অবাধ এবং সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমেই অর্জিত হইতে পারে। সুতরাং মজলিসে শূরার সদস্যদেরকে অবশ্যই জনগণের সমর্থনেই নির্বাচিত হইতে হইবে। আল্লাহ পাক অন্যত্র যে কথা বলিয়াছেন যে, “তাহাদের (মুমিনদের) সামাজিক কার্যাদি নিজেদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হইবে” (৪২ নং সূরা, আয়াত ৩৮), এই নির্দেশটি এতই ব্যাপক যে, রাজনৈতিক জীবনের প্রায় প্রত্যেকটি বিভাগই ইহার আওতায়

২৯৪

পড়ে এবং ইহা এতই স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন যে, ইচ্ছামত ব্যাখ্যার কোন চেষ্টাই ইহার অর্থের পরিবর্তন ঘটাইতে পারে না। এই নির্দেশ (আমর) শব্দটি দ্বারা সামাজিক ধরনের সকল বিষয় ও কর্মের প্রতি এবং সে কারণে ইসলামী রাষ্ট্রে সরকার কি পদ্ধতিতে গঠিত হইবে উহার প্রতিও ইঙ্গিত করা হইয়াছে। অর্থাৎ সকল সরকারী কর্তৃত্বমূলে যে নির্বাচনের নীতি রহিয়াছে। ‘ শব্দটি তাহারই ইঙ্গিত বহন করে। তাহা ছাড়া তাহাদের সামাজিক কাজ হইতেছে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ, ইহার দ্বারা সর্বপ্রকার রাজনৈতিক ক্রিয়া-কলাপকে যে শুধু আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শের ফল গণ্য করা হইতেছে তাহাই নহে, বরং আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শের সমার্থকও গণ্য করা হইয়াছে। ইহার অর্থ রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতাও পরামর্শের সমার্থক গণ্য করা হইতেছে। ইহার অর্থ রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সমাজ কর্তৃক বিশেষভাবে উক্ত উদ্দেশ্যে নির্বাচিত একটি পরিষদের হাতে অবশ্যই অৰ্পণ করিতে হইবে।

কুরআন মজীদে পরামর্শের যে পদ্ধতি বর্ণনা করা হইয়াছে, আমাদের মতে জটিল সমাজ ব্যবস্থায় এই ধরনের পরামর্শের রূপ, নির্বাচন ব্যতীত বিকল্প আর কিছুই হইতে পারে না (ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মূলনীতি, পৃ. ৪৪)।

ধারা-৯৫৬ মজলিসে শূরা কর্তৃক আইন প্রণয়ন (ক) রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মজলিসে শূরা শরীয়াত মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করিবে।

(খ) আইন পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে আইন প্রণীত হইবে।

বিশ্লেষণ

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মজলিসে শূরা প্রয়োজনীয় সকল আইন প্রণয়ন করিবে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কুরআন ও সুন্নাহ কর্তৃক স্পষ্টভাবে ‘নসের মাধ্যমে যে সকল আইন নির্দিষ্ট আছে অর্থাৎ আইনের যে সকল ধারা স্পষ্টভাবে কুরআন ও সুন্নাহতে উল্লেখ আছে মজলিসে শূরা সে ব্যাপারে কোন আইন প্রণয়ন করিতে পারে। অন্যান্য সকল ব্যাপারে মজলিসে শূরা আইন প্রণয়ন করিতে পারিবে। যখনই

২৯৫

সমাজের স্বার্থে ও জনকল্যাণে আইন প্রণয়ন প্রয়োজন হয় তখন বিবেচনাধীন সমস্যার সহিত সম্পর্কিত পথনির্দেশকে কোন সাধারণ আইন বা বিধানের জন্য মজলিসকে অবশ্যই সর্বপ্রথম শরীয়ার আশ্রয় লইতে হইবে। এই ধরনের কোন সাধারণ নীতি পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠিত শরয়ী নীতির সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া আইন প্রণয়নের অধিকার আইন পরিষদের এখতিয়ারভুক্ত থাকিবে। কিন্তু প্রায়ই মজলিসে শূরা আইন প্রণয়নে এমন সকল সমস্যার সম্মুখীন হইবে যে সকল বিষয়ে শরীয়া সম্পূর্ণ নীরব। এই সকল সমস্যা এমন যে, এসকল বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা নাই এবং ১৯৪৭ -এ সূত্রবদ্ধ কোন সাধারণ নীতিও নাই। এ সকল ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ইসলামের লক্ষ্য ও জনকল্যাণকে সামনে রাখিয়া মজলিসে শূরা প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করিতে পারিবে (ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মূলনীতি, পৃ. ৪৬)।

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে সকল ক্ষেত্রে শরীয়াতের সুস্পষ্ট বিধান নাই এমন ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের সময় মজলিসে শূরার সদস্যদের মাঝে পরস্পরে মতানৈক্য সৃষ্টি হইতে পারে। মজলিসে শূরার সদস্যগণ যাবতীয় যোগ্যতার অধিকারী হওয়া সত্বেওঁ কোন বিশেষ সামাজিক পরিস্থিতিকে তাহারা সকলেই যে হুবুহু একই আলোকে দেখিবেন এবং পরিণামে ঐ পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের সময় তাহারা যে সম্পূর্ণ একমত হইবেন এমনটি নহে। মতের এই বিভিন্নতা নেহায়েতই স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ সমস্ত যুক্তি-বিচারই হইতেছে একটি অতিশয় মৃন্ময় প্রক্রিয়া এবং তাহাকে চিন্তকের মেজাজগত ঝোঁক, অভ্যাস, সামাজিক পটভূমিকা এবং অতীত অভিজ্ঞতা হইতে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করা যায়

। তাই মানুষের পরস্পর মতের ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। এই প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন?

اختلاف علماء امت رحم

“আমার উম্মতের জ্ঞানী ব্যক্তিদের মতের ভিন্নতা আল্লাহর রহমতস্বরূপ।” (সূয়ূতীর জামে সগীর হইতে সরকার পরিচালনার মূলনীতি, পৃ. ৪৭)।

কাজেই পৃথিবীর সকল দেশের অন্যান্য আইন পরিষদের মতই ইসলামী রাষ্ট্রে মজলিসে শূরার সিদ্ধান্তসমূহতেও মতের ভিন্নতা প্রকাশ পাইবে, ইহাই স্বাভাবিক। এই অবস্থায় গরিষ্ঠ সংখ্যক কর্তৃক গৃহীত মতই আইন হিসাবে স্বীকৃত হইবে।

২৯৬

তথ্য নির্দেশিকা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র, ১ম সংস্করণ, ১৯৮২ খৃ. 1 ১৩৮৯ বংগাব্দ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪০-২৪৫। মাওলানা আতহার আলী, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ ছিদ্দিক (শশীনা) ও

মাওলানা আবদুর রহীম সাহেবের এতদসংক্রান্ত বক্তব্য এই বরাতে দেখা যাইতে পারে।

আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৬খ, পৃ.২১৯। ৩. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৬খ, পৃ. ২১৯।

ইসলামী রিয়াসাত (বাংলা অনু. ইসলামী রাষ্ট্র ও সংবিধান, পৃ. ২৩৫) ৬. ইবন খালদূন, আল-মুকাদ্দিমা, পৃ. ১৯৩ -এর বরাতে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা, পৃ. ৩৩-৩৪। ৭. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা ৬খ, পৃ. ২১৭। আহ্কামুস সুলতানিয়্যা, পৃ.৩; ফিকহুল

ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৬৬৩; ইন খালদূন, আল-মুকাদ্দিমা। ৮. তিরমিযী, আবওয়াবুল মানাকিব, বাব মানাকিব হুযায়ফা (রা), হাদীস নং ৩৭৫০ (ইসলামিক

সেন্টার সংস্করণ)। ৮. সহীহ বুখারী (বাংলা অনু, আধুনিক প্রকাশনী), কিতাবুল আহকাম, বাবুল ইসতিখলাফ, ৬খ,

৩য় সংস্করণ, ১৯৯৫ খৃ, পৃ. ৩৮০-১, নং ৬৭১১। ৯, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা, পৃ. ৪০। ১০. কানযুল উম্মাল, ৫খ, হাদীস নং ২৫৭৭। ১১. ইবন তায়মিয়ার মিনহাজুস সুন্নাহ গ্রন্থের (১খ,পৃ. ১৪২) বরাতে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা,পৃ. ৪০। ১২. আল-মুগনী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ১০৬-এর বরাতে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা, পৃ. ২৪। ১৩. যুক্তিপূর্ণ আলোচনা দ্র. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা, পৃ. ৩৪-৫। ১৪. তাফহীমুল কুরআন, উক্ত আয়াতের অধীনে ৯০ ও ৯১ নং টীকায় বিস্তারিত আলোচনা দ্র.। ১৫. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে “হাদীসের আলোকে মানবজীবন, পৃ.১৯০, নং ২৪৪ ও ২৪৫;

ইবন মাজা, জিহাদ, বাব তাআতিল ইমাম।

১৭. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে “ইন্তেখাব হাদীস,পৃ.২০৬, নং ৩৭৫। ১৮. বুখারী ও মুসলিমের বরাতে হাদীসের আলোকে মানবজীবন, পৃ. ১৯১, নং ২৪৭। ১৯, ইবন মাজা, জিহাদ বাবুল বায়আ; মুসলিম, ইমারাহ, নাসাঈ, বায়আ। ২০. ইবন মাজা, জিহাদ, বাবু তাআতিল ইমাম। ২১. ইন মাজা, জিহাদ, বাবুল বায়আ। ২২. ইবন মাজা, জিহাদ, বাব লা তাআতা ফী মাসিয়াতিল্লাহ্। ২৩. কানযুল উম্মাল, ৫খ, নং ২২৮২-এর বরাতে ইসলামী রিয়াসাত, পৃ. ৪০৯। ২৪. কানযুল উম্মাল, ৫খ, নং ২৫৮৭-এর বরাতে ইসলামী রিয়াসাত, পৃ. ৪১০।

২৯৭

২৫. ইলাতুল খিফা, ১খ, পৃ. ৩১! ২৬. কানযুল উম্মাল, ৬খ, নং ৩৪৬। ২৭. কানযুল উম্মাল, ৬খ, নং ৭৮। ২৮. আহকামুস সুলতানিয়া, মজলিসে শূরা সম্পর্কিত আলোচনার অধীনে, পৃ. ৪৬। ২৯, ইবন মাজা, কিতাবুল হুদূদ, বাবুশ শাফাআতি ফিল হুদূদ; তিরমিযী, আবওয়াবুল হুদূদ, বাব মা

জাআ ফী কারাহিয়াতি আন ইয়াশফাআ ফিল হাদ্দি, আবু দাউদ; কিতাবুল হুদূদ, বাব।

ফিল-হাদ্দি ইউশফাউ ফীহি। ৩০. আবু দাউদ, হুদূদ, বাব ফিল হাদ্দি ইউশফাউ ফীহি। ৩১. আবু দাউদ, হুদূদ, বাবুল আবি আনিল হুদূদ মা লাম তাবলুগিস-সুলতান। ৩২. আবু দাউদ, কিতাবুল হুদূদ, বাব মান সারাকা মিন হিরযিন। মুসতাদরাক আল-হাকেমে

উল্লেখ আছে যে, মহানবী (সা) তাহার হস্ত কর্তনের নির্দেশ দেন এবং তাহা কার্যকর করা হয়।

(৪খ, পৃ.৩৮১); আরও বায়হাকীর সুনানুল কুবরা, ৮খ, পৃ. ২৭১। ৩৩. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ৬৩-৪; আল-মুগনী, ১০থ, পৃ. ৩৪৮; শারহু যুরকানী, ৮খ, পৃ.

১১৫-৬। ৩৪. আত-তাশরীউল জানাই, ১খ, পৃ. ২৫২-৩। ৩৫. আহকামুস সুলতানিয়া, পৃ. ১৬, ১৭, ১৯, ২০; আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৬খ, পৃ.

২২৭-২২৯; ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৭০২-৩। ৩৬. ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ, ৬খ, পৃ. ৭২০। ৩৭. বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদ-এর বরাতে ফিকহুল ইসলাম,

৬খ, পৃ. ৭২৩। ৩৮. ফিকহুল ইসলামী, ৬, পৃ. ৭২৩। ৩৯. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৬খ, পৃ. ২৩১। ৪০. মুগনিল মুহতাজ, ৪খ, পৃ. ১৫২; আল-মুগনী, ৬খ, পৃ. ৪৪৩-৪৪; ফাতহুল কাদীর, ৪খ,

পৃ.১৬০-৬১; হাশিয়া ইবন আবিদীন, ৩খ, পৃ. ১৫৮-এর বরাতে আল-মাওসূআতুল

ফিকহিয়্যা, ৬খ, পৃ. ২৩০-১। ৪১. আহকামুস সুলতানিয়া, পৃ. ২১; আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৬খ, পৃ. ২৩০ (আবূ ইয়ালা,

পৃ. ১৩ ও মাওয়ারদী, পৃ. ১৭-এর বরাতে)। ৪২. আহকামুস সুলতানিয়্যা, পৃ. ৫৪। ৪৩. আহকামুস সুলতানিয়া, পৃ. ৪৫। ৪৪. আল-মাওয়ারদী, আদাবুদ দুনয়া ওয়াদ-দীন, পৃ.৪৯৪-এর বরাতে ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ.

৭১৩। ৪৫. পূর্বোক্ত বরাত (পৃ. ৪৯১)।

২৯৮

,

৪৬, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজা ও নাসাঈর বরাতে ফিল ইসলামী, ৬/৭১৩। ৪৭. তিরমিযীর বরাতে ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৭১৩। ৪৮. ফিল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৭১৪। ৪৯. ফিল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৬৮৬।

ويلاحظ أن أهل الحل والعقد في السياسة لا يقتصر على المجتهدين ……

وانما يشمل فئات أخرى لها ميزاتها في المجتمع .

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *