1 of 2

৩৮. কামারপাড়ায় আগুন লাগিয়ে

কামারপাড়ায় আগুন লাগিয়ে আসার পর থেকে আফসার মাঝির বালামুসিবত আসতে লাগলো একটার পর একটা। কয়েকদিন আগে চোর, এসেছিলো তার ঘরে সিঁধ কেটে। ঘরে ঢুকে চোর কিছু না নিয়েই চলে যায়, সিঁধ কাটার গর্ত ছাড়া আর কোনো চিহ্ন রেখে যায় নি, কিছু নিয়েও যায় নি। কিন্তু দশরথ মরার পরদিন আফসারের বৌ টের পায়, চোর সিঁধ কাটতে গিয়েই তার লুকানো টাকার কৌটা পেয়ে গিয়েছে এবং কৌটায় টাকা ছিলো দুই কুড়ির বেশি। ঐ সময় বৌ তার ভরা পোয়াতি; তিন দিন পর টাকার শোকে কিংবা কামারপাড়ার অভিশাপে তার একটা মরা ছেলে জন্মালো। দুই মেয়ের পর এক ছেলে, ছেলেটা বাঁচলো না। বৌটা আবার সুতিকার রোগী, প্রসবের পর একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। বারবার তাকে পায়খানায় যেতে হয় বাঁশঝাড়ে, একদিন পাছার কাপড় তোলা অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলো সেখানেই, ঐ অবস্থায় তাকে দেখে ফেলে আফসারের এক জোয়ান ভাগ্নে। ঘরে মাচায় শুয়ে বৌটা দিনরাত কোঁকায় আর আফসারকে বকে, কামারপাড়ায় হামলা করে আফসার তার সর্বনাশ ডেকে এনেছে।

আফসার কাউকে কিছু বলতে পারে না, বৌকে যতোটা পারে এড়িয়ে চলে। নামাজ পড়ার দিকে হঠাৎ তার খুব মন গিয়েছে, বাড়িতে থাকলে জুম্মাঘরে তো যায়ই, কালাম। মাঝির দোকানেও নামাজের ওকতে দোকানদারি বন্ধ রেখে নামাজ পড়ে। এর মধ্যে জুম্মার নামাজের পর কুদ্স মৌলবি মোনাজাতে কলকাতা আর বিহারের মুসলমানদের দুর্দশা নিয়ে আল্লার দরবারে কান্নাকাটি করে, যে দেশ একদিন মুসলমানের অধীনে ছিলো সেখানে আজ মুসলমানদের মেরে মেরে শেষ করা হচ্ছে দেখে আল্লা পরওয়ারদিগারের কাছে সে রীতিমতো নালিশ করে। এতে আফসার একটু হালকা হয়, যেখানে দেশ জুড়ে এতো এতো মুসলমান নিধন চলছে, সেখানে কামারপাড়ার একটা হিন্দু মারা এমন কিছু গুনার কাজ নয়। কিন্তু ঐ কুদুস মৌলবি আবার একদিন পরই। ফকিরের ঘাটে আফসারকে একা পেয়ে চাপা গলায় বলে, আফসার, ইগলান তোমরা কী কাম করো গো? কামারপাড়ার বুড়া মানুষটা তোমাগোরে কী করিছিলো যে তাক এংকা করা পুড়ায়া মারো? কাফের হবার পারে, তার বিচার করবি আল্লাতালা। তোমার সাথে তো ঐ বুড়া কোনো মোনাফেকি করে নাই, জুলুম করে নাই। তার ঘরত তোমরা আগুন দাও কোন আক্কেলে? আখেরাতের দিন তোমাক জবাব দেওয়া লাগবি না?

আখেরাত তো অনেক দূরে, তার সংসার তো ছারখার হয়ে যাচ্ছে এখনি। আফসার এখন করে কী? এর মধ্যে দুপুরবেলা বৈকুণ্ঠ একদিন কালাম মাঝির দোকানে ঢোকে। হাটবার নয়, লোকজন নাই, কালাম মাঝিও গেছে বাড়িতে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বৈকুণ্ঠ বলে, আফসার, মাঝিপাড়াত তোরা একটু হুঁশিয়ার হয়া থাকিস। কামারপাড়ার নারদ আর ওদিক থ্যাকা আসিছে যুধিষ্ঠিরের বোনাই,—এই দুইটাক লিত্যি কাছারিত যাবার দেখি। লায়েব এই দুইটাক হাত করা ফালাছে, সন্ন্যাসীর থানেত এবার অরা দুর্গাদেবীর পূজা করবিই। বৈকুণ্ঠকে আফসার কখনো এমন মন খারাপ করতে দেখে নি। নায়েববাবু মুকুন্দ সাহাকে বলেছে, মেলা টেলা যেমন চলছে চলুক। মেলার দিন পূজাও যদি এরা করতে চায় তো করবে। কিন্তু বটতলার থানটা পাকা করা হবে, বছরে একবার করে মাকে নিয়ে আসা হবে সেখানে। নায়েবাবু বামুন মানুষ, শিক্ষিত লোক, কেন যে এসব তাল তুলেছে কে জানে? আবার কামারদেরও একদিন সুযোগ করে দেবে, তারা মাঝিপাড়ায় হামলা করে দশরথ কর্মকারের হত্যার প্রতিশোধ নেবে।

শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে আফসার। তার আসরের ওকত যায়, সেদিকেও খেয়াল নাই। হঠাৎ সে জড়িয়ে ধরে বৈকুণ্ঠের হাত, ভারী গলায় বলে, বৈকুণ্ঠদা, হামার তো সব্বোনাশ হয়া গেলো। আমার আখেরাত গেছে, সংসারও যায়। দশরথ বুড়ার গোয়ালেত আগুনটা তো হামিই লাগাছিলাম গো। খুব এলোমেলোভাবে আফসার কামারপাড়ার ঘটনার পর তার পারিবারিক দুর্যোগের কথা বলে; তার ধারণা, দশরথ এবং জন্মের-আগেই-মরা তার নিজের ছেলে দুজনকেই খুন করেছে সে নিজে। তার এখন উপায় কী? এতো নামাজ বন্দেগি করে, মনে হয় না আল্লা তাকে মাফ করবে। কুদুস মৌলবি পর্যন্ত তার নিজের ও আল্লার অসন্তোষের কথা তাকে জানিয়ে দিয়েছে।

শুনে বৈকুণ্ঠ নতুন করে ভাবনায় পড়ে। ফকির চেরাগ আলি থাকলে তো কথাই ছিলো না, পথ সে একটা বাতলে দিতোই। ভবানী সন্ন্যাসী দুই বছর এদিকে মাড়ায় না, আসলে তার অসন্তোষের জন্যেই এই এলাকায় এতো বিপদ। পাকুড়গাছও নাই যে তমিজের বাপকে সেখানে নিয়ে মুনসির একটা পরামর্শ শোনা যায়। তবু তমিজের বাপের কাছে না হয় বৈকুণ্ঠ একবার গিয়ে সব বলুক। আফসার ভয় পায়, না, না। মাঝিপাড়াত কোনো কথা হলেই চাচা শুনবি।

বৈকুণ্ঠ নতুন একটি পথ বাতলায়, তুই না হয় হামার সাথে কামারপাড়াত চল। শুনে আফসার আঁতকে উঠলে বৈকুণ্ঠ বলে, যুধিষ্ঠিরের মাও মানুষ খুব ভালো, যুধিষ্ঠিরও চ্যাংড়াটা সাদাসিধা। তুই যুধিষ্ঠিরের মায়ের পাও ধরা মাফ চালে ঠিকই মাফ করা দিবি। মাঝিপাড়ার উপরে কামারগোরে রাগটাও আর থাকবি না। চল।।

আফসার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, হামাক লিয়া গেলে হামাক তো ধরবিই, তোমাকও খাম করবার পারে।

হামাক? হামাক ইস্পর্শ করবি ঐ শালা কামারের গুষ্টি? বৈকুণ্ঠের তেজ জ্বলে ওঠে, আরে হামি হলাম গিরি বংশের সন্তান। এই গিরিরডাঙা, নিজগিরিরডাঙা, গোলাবাড়ি-ইগলান আগে কার আছিলো, ক তো? কবার পারিস? আরে আমার ঠাকুরদা, তার ঠাকুরদার বাপ, না-কি ঠাকুরদা। তার পূর্বপুরুষের সিংহতেজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে সে তার সিদ্ধান্তের সামান্য পরিবর্তন ঘটায়, ঠিক আছে। আমি একদিন যামু, একলাই যামু। যুধিষ্ঠিরের মায়ের সাথে, যুধিষ্ঠিরের সাথে, নারদ, গৌরাঙ্গ, তারপর ঐ শালা জামাইটার সাথে কথা সাব্যস্ত করা আসি, তারপরে তোক লিয়া যামু।

কিন্তু এরপর তিনদিন বৈকুণ্ঠের আর কোনো সাড়াশব্দ নাই। এদিকে আফসারের বৌ এখন একেবারে বিছানায় পড়ে গিয়েছে, দুই মেয়েকেই এক সাথে ধরেছে কামলা রোগে, গায়ের বন্ন হয়েছে হলুদ, গায়ে জ্বর, যখন তখন বমি করে। বাড়িতে অসুখবিসুখ, চাচার কাছ থেকে সন্ধ্যাসন্ধি ছুটি নিয়ে আফসার হাঁটা দিয়েছে বাড়ির দিকে, দেখে আগে আগে চলেছে বৈকুণ্ঠ। তাকে দেখে বৈকুণ্ঠ থামে, বলে, তুই বাড়িত যা। হামি কামারপাড়াত যাচ্ছি। কাল পাছাবেলা হামার সাথে কথা কোস হাটের মধ্যে, বটতলাত আসিস।

আফসারের গা ছমছম করে, তোমার যদি কিছু হয়? বৈকুণ্ঠ তার পূর্বপুরুষের সৌর্যবীর্য ও নিজের বীরত্ব নিয়ে কথা বলার সুযোগটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে, আফসার ভরসা পায়। ফকিরের হাটে নৌকা নাই, বৈকুণ্ঠ বিলের পশ্চিম তীর ধরে হাঁটে। আফসারকে বলে, তুই বাড়িত যা। বাড়িত না তোর অসুখবিসুখ। কিন্তু আফসার হাঁটে তার পাশাপাশি।

আকাশে খুব রোগা একটা চাঁদ উঠে কিছুক্ষণের মধ্যে নিভে গেছে। মেঘ নাই, তারার আলোয় বিলটাকে চরের মতো দেখায়। মণ্ডলবাড়ির কাছাকাছি শিমুলগাছে কয়েকটা বক উড়তে উড়তে মাঝে মাঝে ডানা ঝাপটিয়ে নিজেদের শরীরে হাওয়া করে, তাদের শরীর হয়তো জুড়ায়, কিন্তু ঐসব শরীরের তাপ ঝরে পড়ায় নিচে গরম পড়ে আরো বেশি। হাঁটতে হাঁটতে আফসার হাঁপায়। তার ভয় করে, বারবার ভাবে, বৈকুণ্ঠদাকে বরং না করে দিই, ওখানে গিয়ে কাজ নাই। বৈকুণ্ঠ অবিরাম কথা বলে চলেছে বলে ভয়টা তার ভালো করে দানা বাঁধার সুযোগ পায় না। আবার এতো কথা শুনতে তার ভালোও লাগছে না। বৈকুণ্ঠের ওপর রাগ হয়। একেকবার বুকের ভেতর খচখচ করে : ময়লা ধুতিপরা লোকটা তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না তো? মণ্ডলবাড়ির পর কয়েক বিঘা জমি পেরিয়ে বলুপাড়া, কলুপাড়ার পর বিলের দক্ষিণ ধার ধরে মণ্ডলের বিঘার পর বিঘা জমি পার হলে খাল। রোগা খাল, এখন পানি একেবারেই নাই। খালের ওপারে বিলের পুবদিকেই কামারপাড়া। খালের এপারে এসে বৈকুণ্ঠ হঠাৎ চুপ করে। তখন এতোক্ষণের ভয়টা একশো গুণ ভারি হয়ে চেপে বসে আফসারের ওপর। সে আস্তে করে বলে, আজ না হয় থাক। আরেকদিন আসো।

বৈকুণ্ঠ জবাব দেয় না। শুকনা খালের এপারে দাঁড়িয়ে দুজনেই দেখে কামারপাড়ার দক্ষিণ সীমানা থেকে খালের দিকে এগিয়ে আসছে কয়েকটি ছায়া। একটা চিৎকার শোনা যায়, শালারা আসিচ্ছে রে, আজ আবার আগুন ধরাবার আসিছে। গলাটা দশরথের জামাইয়ের বলে সনাক্ত করে বৈকুণ্ঠ বলে, না রে আফসার, চল যাই। কামারগোরে হাতত মনে হয় হাতিয়ার আছে।

খালের ওপার থেকে টর্চের আলো এসে পড়ে বৈকুণ্ঠ ও আফসারের মুখের ওপরে। দশরথের জামাই চিৎকার করে বলে, আরে শালার মাঝিপাড়ার ডাকাতগুলান আসিছে গো। ও যুধিষ্ঠির, ও নারদ কাকা, ও গৌরাঙ্গ খুড়া সোগলি আসো। আজ শালারা আবার আগুন দিবার আসিছে। শালা ডাইঙ্গা মাঝির জাত, আজ একটাকো জান লিয়া যাবার দিমু না। দেখতে দেখতে দা সড়কি হাতে কামাররা ছুটে আসতে থাকে। বৈকুণ্ঠ প্রথমেই তাকেও মাঝিদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ জানায়, আরে মাঝি কুটি? হামি বৈকুণ্ঠ, বৈকুণ্ঠ গিরি, হামাক চিনিস? কিন্তু গলা তার বেশি উঁচুতে চড়তে পারে না, আফসারকে বরং একটু জোরে বলে, আফসার, তুই পালা, দৌড় মার, দৌড় মার।

আফসারের পা তখন গেঁথে গেছে খালের এপারের শুকনা মাটিতে, সে দাঁড়ায় বৈকুণ্ঠের পিঠ ঘেঁষে, তার ঘাড়ে হাত রেখে। পলকের মধ্যে অন্তত আট দশজন কামার ছুটে আসতে থাকে, দশরথের জামাই গলা ফাটিয়ে চেঁচায়, বন্দে মাতরম।স্লোগানে। সাড়া দেয় না সবাই, কিন্তু তিন চারজনের বন্দে মাতরম কাঁপিয়ে তোলে বিলের এপার-ওপার জুড়ে। কামারদের মধ্যে থেকে কেউ বলে, হামি না আগেই কছিলাম, শালারা আবার আসবি। দেখলা তো? ওরা ছুটে আসতে আসতে লোহার একটা বল্লম ছুটে আসে আরো আগে, কিন্তু প্রায় ঐ মুহূর্তে বৈকুণ্ঠ আর আফসার দৌড়াতে শুরু করায় বল্লমটা ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যায় আরো সামনে। কলুপাড়ার কাছাকাছি যেতেই কামারদের একজন অন্তত ওদের নাগাল পেয়েছে, দায়ের একটা কোপ এসে পড়ে আফসারের ঘাড়ে। বৈকুণ্ঠ ততোক্ষণে দৌড়ে চলে গেছে আরেকটু সামনে। আফসারের আর্তনাদে সে থমকে দাঁড়ায় এবং ফিরে এসে তখনো দৌড়াতে-থাকা আফসারকে জড়িয়ে ধরে এবং ফের একটা হুঙ্কার ছাড়ে, খবরদার! হামি গিরির বংশের মানুষ। হামি অভিশাপ দেই, শালা কামাররা তোরা নিব্বংশ হবু। কিন্তু নির্বংশ হবার ভয় না করে কিংবা বংশরক্ষার পরোয়া না করে দশরথের জামাই কিংবা নারদ কর্মকার,-বৈকুণ্ঠ ঠাহর করতে পারলো না, মস্ত একটা ছুরি চেপে ধরে আফসারের পেটে এবং বেশ দক্ষতার সঙ্গে একটা পোচ দিতেই আফসারের পেটের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসে। আফসার মাটিতে পড়ে গেলে তার সঙ্গে পড়ে যায় বৈকুণ্ঠও এবং তখন আফসারের মৃত্যু নিশ্চিত করতে অন্য আরেকজন কামার আরেকটি দায়ের কোপ মারে তার বুকে। এই কোপটা ঠেকাতে বাঁ হাতটা উঠিয়েছিলো বৈকুণ্ঠ, তার বুড়ো আঙুলটা সম্পূর্ণ ফেলে দিতে কোপটার জোর একটু ক্ষয় হয়ে গিয়েছিলো বলে আফসারের বুকের ডান দিকে এটা পড়ে দুর্বল হয়ে। ওদিকে অনেকটা ভেতরে চলে এসেছে বন্দেমাতরম ধ্বনি এবং এর জবাবেই বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার আওয়াজ আসে মণ্ডলবাড়ি থেকে। কলুপাড়ায় পুরুষমানুষ কম, তবু অল্প কয়েকজন ছেলে, গফুরের ভাই ভাইপোই হবে, নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর বলে বেরিয়ে পড়ায় কামারের দল পিছু হটে।

কলুপাড়ার লোকজন ও মণ্ডলবাড়ির কামলাপাট এসে আফসারকে পাজাকোলা করে তোলে। শরাফত মণ্ডল খানকা ঘরের বারান্দা থেকে হাঁক দিয়ে বলে, মাঝিপাড়ার কেটা রে? জবাব শুনে সে এগিয়ে আসে এবং নিজের লোকদের হুকুম দেয়, বাঁচে কি-না সন্দেহ। বাড়িত লিয়া যা।

ছাইহাটা থেকে করিম ডাক্তারের আসতে দেরি হয়ে গিয়েছিলো। এতো কাছে তাদের হরেন ডাক্তার, কিন্তু তার কথা কেউ মুখেই আনতে পারলো না। বৈকুণ্ঠের অবিরাম প্যাচাল পাড়া শুনে কালাম মাঝি কটমট করে তার দিকে তাকায়, বলে, তুই শালা হামার ভাইসতাক ভুলায়া লিয়া গেছিলু তোকই ধরা লাগে। কিন্তু আফসার কোনোমতে বলতে পারে, বৈকুণ্ঠদাক লিয়া গেছিলাম আমি। দাদা-। কলুপাড়ার মানুষ ও মণ্ডলবাড়ির কামলারাও আফসারকে রক্ষা করতে বৈকুণ্ঠের চেষ্টার কথা বারবার বললে কালাম মাঝি চুপ করে এবং ডাক্তারের হাত ধরে কেঁদে ফেলে, হামার ভাইস্তা, হামার বেটার চায়াও বেশি। যত টাকা লাগে খরচ করমু। কন তো টাউনের ডাক্তার লিয়া আসি।

তমিজের বাপ এসে হাত ধরে বৈকুণ্ঠের, তুই আমার ঘরত চল। ১ ডাক্তার আসার ঘণ্টাখানেক পর আফসার মারা গেলো। কাদের এসে পরামর্শ দেয়, পুলিস খবর পাওয়ার আগে লাশ দাফন করা ভালো, নইলে লাশ একবার থানায় গেলে, থানা হয়ে ফের টাউনে কাটাছেঁড়া হয়ে ফিরতে ফিরতে অন্তত এক সপ্তাহ। নাড়িভুড়ি বেরিয়ে-যাওয়া লাশ পচে গলে যাবে। ফজরের নামাজের পরপরই আফসারকে কবর দেওয়া হলো মাঝিদের পুরনো গোরস্তানে। এতে শরাফত মণ্ডলের ঘোরতর আপত্তি ছিলো। কিন্তু অবস্থা, এমন আর কালাম মাঝির জেদের কাছে কাদের যেভাবে নত হয়ে গেলো, তার আর করার কী আছে?

কুলসুম দূর্বাঘাস ঘেঁচে দিলে তমিজের বাপ সেটা লাগিয়ে দেয় বৈকুণ্ঠের পড়ে-যাওয়া বুড়ো আঙুলের গোড়ায়। নিজের পুরনো শাড়ি ছিড়ে দেয় কুলসুম, তমিজের বাপ ঠিকমতো জড়াতে না পারলে কুলসুম বলে, লেও হছে। হামাক দাও। কুলসুম বেশ পুরু করে কাপড় জড়ালেও তার রক্ত পড়া বন্ধ হয় না। তমিজের পুরনো লুঙি বৈকুণ্ঠের হাতে দিয়ে তমিজের বাপ বলে, তবনটা তোক পরায়া দেই। সারা গাওত তোর অক্ত। কুলসুম হঠাৎ জিগ্যেস করে, দেখো তোমার জাত যাবি না তো? তারপর ফের বলে, তোমার আক্কেলটা ক্যাংকা কও তো বাপু? আফসারকে তুমি লিয়া গেছে কামারপাড়ার দিকে। আরে সেদিন তো কামারপাড়াত আগুন লাগালো, আফসারই আছিলো সোগলির আগে।।

বৈকুণ্ঠ এই কথার জবাব না দিয়ে জানায়, কামাররা বৈকুণ্ঠ গিরির গায়ে হাত তুলেছে, শালারা কোন বংশের মানুষকে জখম করলো টের পাবে! শালারা নির্বংশ হবে। তারপর সে কৈফিয়ৎ দেয়, আফসারকে সে যেতে মানাই করেছিলো। আফসার তাকে বলেছিলো, যুধিষ্ঠিরের মায়ের কাছে সে মাফ চাইবে। বেচারার একটার পর একটা বিপদ আসছিলো, খুব দমে গিয়েছিলো। তা পরিবার মাফ করলে স্বর্গ থেকে দশরথ কি আর রাগ পুষতে পারে?

তমিজের বাপ বলে, বৈকুণ্ঠ তুই চুপ কর। সে একটু ভয় পেয়েছে। বৈকুণ্ঠকে মাঝিপাড়া থেকে তাড়াতাড়ি সরানো দরকার। বুধা একবার চিৎকার করে উঠেছে, শালা মালাউন একটাকো রাখা হবি না।

জাত খোয়াবার ভয়ে কিংবা হাতের যন্ত্রণায় বৈকুণ্ঠ কিছুই খায় না। তমিজের বাপের মাচায় শুয়ে সে কোঁকায়, আবার কথাও বলে। মেঝেতে চেরাগ আলির বই নিয়ে কুপির আলোয় তমিজের বাপ কী কী দেখে। বৈকুণ্ঠ বলে, ফকিরের বই?

কুলসুম বসে থাকে তমিজের ঘরে, কিন্তু একটু পরপরই উঁকি দিয়ে যায়। ভোরে মাঝিপাড়ার কাক ডাক শুনে তমিজের বাপ বাইরে গেলে কুলসুম বলে, দাদার বই তুমি লিয়া যাও।

তমিজের বাপ অনেকক্ষণ পর ঘরে ফেরে। তার মুখ থমথমে। বলে, বৈকুণ্ঠ, তোক পার করা দিয়া আসি রে।

বৈকুণ্ঠ উঠে দাঁড়ালে কুলসুম ফের বই এগিয়ে দেয়। লিয়া যাও।

তমিজের বাপ কিছুই বলে না। কিছুক্ষণ পর বিড়বিড় করে, বই কি আর থাকবি? পাকুড়গাছই বলে উটকা পাই না। বই তুই লিয়াই যা। এই বই হামরা রাখবার পারমু না রে বৈকুণ্ঠ।

তমিজের বাপ বৈকুণ্ঠকে জড়িয়ে ধরে বাড়ির পেছন দিয়ে বেরুতে যাচ্ছে, কুলসুম খোয়াবনামা এনে ধরলো তার সামনে, বই লিলা না? লেও।

না। ঐ বই লেওয়া যাবি না।

কুলসুমের হঠাৎ রাগ হয়। এই বই থেকে বৈকুণ্ঠ তার নিজের কতো বানোয়াট ও আসল স্বপ্নের মানে জেনে নিয়েছে তার দাদার কাছে বসে। এমন কি ভবানী পাঠকের মতিগতি ও গতিবিধির খবরও তো জানতে এসেছে এই বই থেকেই। এখন সে এই বই নেবে না কেন? কুলসুম কি বোঝে না? এতো ঝামেলা যাচ্ছে, লোকটার জাতের ব্যারাম গেলো না। কুলসুম ভারী গলায় বলে, হামার দাদাক তুমি হেলা করলা?

বৈকুণ্ঠ একটু দাঁড়ায়, ভরা চোখে কুলসুমকে দেখে, কোনো জবাব দেয় না।

 

একদিন পর কালাম মাঝি গোরু জবাই করে মেলা মানুষকে ভাত খাওয়ায়। কুন্দুস মৌলবি এসে কোরান খতম করে। কালাম মাঝির পৃষ্ঠপোষকতায় জুম্মাঘরের সঙ্গে চালু-হওয়া মক্তবের ছোটো ছোটো তালেবেলেমদের চিকন গলার করুণ সুরে আল্লার কালাম বাজতে থাকে মাঝিপাড়া জুড়ে। কালাম মাঝির ওখানে গোরুর গোশত দিয়ে পেট পুরে ভাত খেয়ে কোরান শরিফের সুরে বিভোর কেরামত আলি হেঁটে যাচ্ছিলো তমিজের বাপের বাড়ির সামনে দিয়ে। কুলসুমকে দেখা যায় কি-না ভেবে সে এদিক ওদিক চোখ ফেরায়। এমন সময় ডাক শোনে, শোনেন।

আরে, দরজা খুলে তার সামনে দাঁড়ায় কুলসুম। হাত থেকে ফকির চেরাগ আলির বই কেরামতের দিকে এগিয়ে দেয়, দাদার বই না চাইছিলেন। লেন।

কেরামত অভিভূত হয়ে যায়। চেরাগ আলির ভেঁড়াখোড়া বই হাতে পেয়ে এতোটাই অভিভূত হয় যে অভিভূত হওয়ার ক্ষমতাও তার লোপ পায়। কী বলবে কীভাবে বলবে ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কুলসুম নাই, দরজাটাও তার বন্ধ।

আলিম মাস্টারের ঘরে ঢুকেই কেরামত এক গাল হাসে। তার মাথায় এখন পদ্য আর পদ্য। চেরাগ আলির বই হাতে এলো, আর ভাবনা নাই। গান্ধি জিন্নার মিলন নিয়ে পদ্যের কথা ভাবতে ভাবতে বলে, মাস্টারসাহেব, ঐদিন ইসমাইল সাহেব তেভাগার নেতাক লিয়া আসিছিলো, অজয়বাবু, কী সোন্দর কথা কয়া গেলো, শুনিছিলেন? গান্ধি, জিন্নার মিলন চাই, হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই। এখন এইরকম কথার খুব দরকার।

আরে দূর মিয়া! অজয় দত্তের কথায় আলিম মাস্টারের কোনো উৎসাহ নাই, এ্যাদ্দিন। পরে ওরা কয় গান্ধি জিন্নাক একত্তর হবার। দুইজনে আলাদা থ্যাকা যে জুলুমটা চালাচ্ছে, একত্তর হলে দ্যাশের মানুষ একটাকও বাঁচবার দিবি না। তেভাগার মানুষ হয়া অজয় দত্ত হিন্দু মুসলমান মিল করাবার আর মানুষ পায় না? মাথা পাতে গান্ধি আর জিন্নার কাছে?

এসব কথা কেরামতের কানে যায় না। কাগজ পেনসিল নিয়ে সে সামনে রাখে চেরাগ আলির বই। মাঝিপাড়ায় উত্তেজনার খবর পেয়ে পরদিন ইসমাইল হোসেন ফের আসে। এবার তার সঙ্গে অজয় ও তার বোন নাই, সে এসেছে কংগ্রেসের সুরেন সেনগুপ্তকে নিয়ে। হঠাৎ করে দুইজন এম এল এ গ্রামে আসায় আমতলি থানার দারোগাও হাজির হয়, টাউন থেকে এসেছে একজন সার্কেল অফিসার। মাঝিপাড়া বা কামারপাড়া কোথাও যাবার দরকার হয় না তাদের। সুরেনবাবুকে নিয়ে ইসমাইল সোজা ঢোকে কালাম মাঝির দোকানে। সুরেনবাবু কালাম মাঝিকে জড়িয়ে ধরলে লোকটা কান্নায় ভেঙে পড়ে, বাবু, আফসার হামার ভাইসতা লয়, হামার বেটা, হামার বেটাই কবার পারেন তাক। বৈকুণ্ঠকেও ডাকা হয়, তবে সে তার পূর্বপুরুষের ইতিহাস বলার সুযোগ পায় না। সুরেনবাবু মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনে তাকেও জড়িয়ে ধরে, তারও চোখ ছলছল করে। কালাম মাঝির শোক একটু থিতিয়ে এলে সে তোলে বিলের ইজারা। দেওয়ার কথা। সুরেন সেনগুপ্ত বলে, মাঝিদের হক মেরে অন্য পেশার মানুষকে বিল ইজারা দেওয়া ঠিক হয় নি। তবে জমিদারের কাছ থেকেও শোনা দরকার। কিন্তু ইসমাইল ওয়াদা করে, জমিদারকে অনুরোধ করে, দরকার হলে সরকারি চাপ প্রয়োগ করে এ বছর থেকেই বিল মাঝিদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

কালাম মাঝি এর মধ্যেই গোলাবাড়ি হাটে মাঝিদের মস্ত সমাবেশের আয়োজন। করে ফেলেছে। মুকুন্দ সাহার দোকানের বারান্দা উঁচু বলে সেখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করে সুরেন সেনগুপ্ত আর ইসমাইল হোসেন। পালপাড়াও ভেঙে পড়েছে সুরেনবাবুকে দেখতে। ছোটোখাটো দেখতে খাটো ধুতি ও খালি গায়ে পাতলা একটা চাদর জড়ানো সুরেনবাবু হিন্দু মুসলমান মিলন নিয়ে এমন মিষ্টি করে, এতো সহজ করে বলে যে, লোকজন মুগ্ধ হয়ে শোনে। ইসমাইলের বক্তৃতার পর দুজনে টাউনে ফিরে গেলে গান ধরলো কেরামত আলি। চেরাগ আলির বইটা পাওয়ার পরই তার গানের স্রোত এসে গেছে। সবাইকে ঝুঁকে সালাম করে সে শুরু করে :

বিসমিল্লা বলিয়া শুরু করে কেরামত। ভারতবর্ষে কায়েম হবে ইনসাফি হুকমত।।
প্রথম বলি নিরঞ্জন সংসারের সার। দ্বিতীয় বলি যম রাজা করিবে সংসার।।
শিঙা হাতে ইসরাফিলে যখন দিবে ফুক। থাকবে না দালান কোঠা থাকবে না তালুক।।
দরবেশ সাধুর মন্ত্র নিতে কেহ ভুইলো না। লীগ কংগ্রেসের হিংসা কেন গেলো না।।

লোকজন খুশিতে হৈ হৈ করে ওঠে। বিপুল করতালিতে কেরামতের কণ্ঠ চাপা পড়ে। আলিম মাস্টার হঠাৎ দাঁড়িয়ে ধমক দেয়, আরে চুপ করেন না। কেরামত ফের শুরু করে,

নমরুদে রাখিত হিংসা ইব্রাহিমের পর। বেহেস্ত করিল তোয়ের নমরুদ বব্বর।।
কোথায় গেলো নমরুদ কোথায় তাহার আমিরানা। লীগ কংগ্রেসের হিংসা কেন গেলো না।।
মুসলিম লীগে ভারতবর্ষে যাহা দাবি করে। পাকিস্তান করিবে তারা লেয্য অধিকারে।।
কংগ্রেসিরা বলে তাহা নাহি দিব ছাড়ি। এই বলিয়া দুইটি পাট্টি করে মারামারি।।
কাঁচা ফলে কিল মারিয়া নষ্ট করলো বেদানা। লীগ কংগ্রেসের হিংসা কেন গেল না।।
লীগ কংগ্রেসের চারি নেতা পাইলো নিমন্তন। আনন্দিত হইয়া করে লন্ডনে গমনা।।
মহামান্য লীগের নেতা কায়েদে আজম। লিকচারে লন্ডন সভা করিল গরম।।
লিয়াকত আলী খান সঙ্গে গেলো তার। লর্ড ওয়াভেল বটে ভারত সরকার।।
বলদেও সিং বটে কংগ্রেসের একজন। জহরলাল পণ্ডিত সহ এই পাঁচজন।।
লন্ডন শহরে গিয়া লাভমুনাফা হইলো না। লীগ কংগ্রেসের মিলন কেন হইলো না। চিরযুগের দুফি মোরা হিন্দু মোসলমান। স্বাধীন পাবো আশা করি হতেছি বিরান।।
এই দেশ আমার এই দেশ তোমার গণ্ডগোল আর কইরো না।।
লীগ কংগ্রেসের হিংসা কেন গেলো না।।
কেরামত আলীতে বলে স্বজাতির কাছে। ভালো মনে বোঝো ভাগ্যে কিবা তোমার আছে।।
দুধ বেচিয়া তামুক কিনি শরীল কৈলা ক্ষয়। বুঝিয়া দেখহ মানুষ কেরামত কী কয়
স্বাধীন পাবো আশা করি সকল জাতে দেওয়ানা। লীগ কংগ্রেসের হিংসা কেন গেলো না।।

গান শুনে মানুষের হর্ষধ্বনি উপচে পড়ে তাদের গলার ওপর দিয়ে। অনেকে মুখে তার গানের ধুয়াটা গাইতে থাকে। অভিভূত কেরামত আলি তার ঝোলা থেকে চেরাগ আলির বইটা নিয়ে মাথায় ঠেকায়। আবদুল কাদের তাকে ডেকে নেয় দোকানের ভেতর, কালই তুই চল টাউনেতা ইসমাইল ভাই এই গান দেখ্যা খুব খুশি হবি। পাকিস্তানের কথা আছে। আবার অজয়বাবুরাও দেখবি, লীগ কংগ্রেসের মিলনের কথা আছে। তারাও খুশি হবি। চল, কালই চল।।

আজিজ বাইরে ডেকে নেয় কেরামতকে, তোমার গান বাপু খুব ভালো হছে। তুমি তমিজের বাপকে নিয়া একদিন টাউনে আমার বাড়ি আসো। বাবরের মায়ের অসুখ তো কমে না। এতো খরচপাতি করলাম, ফল নাই। একটু চাপা স্বরে বলে, কাদের ইগলান ফকিরালি কথা শুনবার পায় না। আমার মামাশ্বশুর আলেম মানুষ, তমিজের বাপের সাথে কথা বলে ঐ বইটা দেখে যদি।

তমিজের বাপের দরকার কী? কেরামত বেশ জোরের সঙ্গে তমিজের বাপকে প্রত্যাখ্যান করে, তার জারিজুরি সব তো আমার কাছে।

কেমন?

তার দাদাশ্বশুর চেরাগ আলির বই তো আমার কাছে। একদিন তার বৌ কলো, কবি, হামার স্বামী জাহেল মানুষ, এই বইয়ের বোঝে কী? বই আপনে লিয়া যান, দশের কামেত আসবি।

বই তোমার কাছে? চেরাগ আলির বই তুমি জোগাড় করিছো? আজিজ উত্তেজিত হয়ে বলে, সত্যি? কেরামত সামনে ধরলে বইটা সে তুলে নেয় নিজের হাতে। কেরামত তার গৌরবের কথা বলেই চলে আর হেঁড়া বইটার পাতা ওলটায় আজিজ। কেরামতের কথায় বিরতি পড়লে সে বলে, বই এখন আমার কাছে থাক। আমার মামাশ্বশুরকে কালই পড়তে দেবো। আলেম মানুষ, বড়ো মওলানা, খালি বড়ো বড়ো কেতাব নিয়ে থাকে।

ঐ বই তো আমার খুব দরকার ভাইজান। কেরামত মিনতি করে, তমিজের বাপের বৌ তো আমাক কিছুতেই দিবার চায় না। অনেক কষ্ট করা আনিছি। বই তো তাক ফেরত দেওয়া লাগবি। .

আমার কাছে থাকা যা, তোমার কাছেও থাকাও তো তাই, চেরাগ আলি ফকিরের বই নিজের ব্যাগে ভরতে ভরতে আজিজ বলে, আমার মামাশ্বশুরকে একবার দেখাবো। আলেম মানুষ। খালি পানিপড়া আর তাবিজ দিয়াই তার মাসের রোজগার শও টাকার উপরে। এই বই তিনিই বুঝবেন। কেরামতের হাতে দশ টাকার একটি নোট দিয়ে আজিজ বলে, তোমার ঐ গানের বই ছাপায়া ফালাও। এই টাকাতেই হবে তো? কেরামত টাকাটা হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে আবদুল আজিজ কাদেরের দোকানে ঢুকতে ঢুকতে বলে, তোমার গানের বই ছাপালে আমাকে দুই কপি দিও। মনে করে দিও কিন্তু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *