এ সম্পর্কিত আরও কয়েকটি আশ্চর্য ঘটনা
আবু নু আয়ম তার দালায়িল গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, সাঈর ইব্নে সাওয়াদা আল আমেরী বলেন, একটি উন্নত জাতের উটি আমার অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সে উটের পিঠে চড়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আমি দূর-দূরান্ত সফর করতাম। একবার আমি ব্যবসার পণ্য নিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কায় আসি ৷ সফর শেষে কোন এক রাতে মক্কায় এসে উপনীত হই। রাতের আধার কেটে জ্যোৎস্না এলো। হঠাৎ মাথা তুলে আমি দেখতে পেলাম, পাহাড়ের মত উচু কয়েকটি তাঁবু। তাঁবুগুলো তায়েফের চামড়ায় ঢাকা। তারই পার্শ্বে কয়েকটি উট জবাই করা হলো আর কয়েকটি উট কোথায় যেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সম্মুখের পাত্রে খাদ্যদ্রব্য রাখা। কয়েকজন লোক বলছে, আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন, আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন। অপর এক ব্যক্তি এক উচুস্থানে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে বলছে : ওহে আল্লাহর মেহমানগণ! আপনারা খেতে আসুন। আরেকজন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলছে, আপনাদের যাদের খাওয়া শেষ হয়েছে, চলে যান; আবার রাতের খাওয়ায় অংশ নেবেন। এসব দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। আমি সর্দারের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলাম। আমাকে আমার একজন সঙ্গী চিনে ফেলে। সে বলল, আপনি সামনে এগিয়ে যান। সামনে এগিয়ে গিয়ে আমি একজন প্ৰবীণ ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। লোকটির দুচোয়াল দাগে ভরা। ব্যক্তিত্বের জ্যোতি যেন তার দুই কপোল থেকে ঠিকরে পড়ছে। মাথায় তার কালো পাগড়ি। পাগড়ির পাশ দিয়ে কালো চুল দেখা যাচ্ছিল। আর হাতে একটি লাঠি। তার চারপাশে আরো কয়েকজন প্ৰবীণ লোক উপবিষ্ট। তারা সকলেই নীরব। সিরিয়া থেকে আসা একটি সংবাদের প্রতি তাদের সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ। সংবাদটি হলো : নিরক্ষর নবীর তারকা উদয়ের এটিই সময়। প্ৰবীণ লোকটিকে দেখে আমি ভাবলাম, ইনিই বুঝি তিনি। তাই আমি বললাম, আসসালুমা আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, থাম, থাম, আমি নই। তুমি আমাকেই নবী বানিয়ে ফেললে। বিব্রত হয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি তাহলে কে? পাশ্বের লোকেরা জবাব দিল, ইনি আবু নাজলাহ-মানে হাশিম ইব্নে আবদে মানাফ। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ, ইনি নিশ্চয়ই সিরিয়ার গাসসানের নয়; বরং আরবের কোন সম্রােন্ত ব্যক্তি হবেন। উল্লেখ্য যে, হাশিম ইব্নে আবদে মানাফের যে আপ্যায়নের কাহিনী বর্ণনা করা হলো, তা ছিল রিফাদাহ তথা হজ্জ মওসুমে হাজীদের আপ্যায়ন।
অপর এক সূত্রে আবু নু আয়ম আবু জাহাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি শুনেছি, আবু তালিব আবদুল মুত্তালিব থেকে বর্ণনা করেছেন, আবদুল মুত্তালিব বলেন :
একদিন আমি হিজারে অর্থাৎ হাতীমে ঘুমিয়ে ছিলাম। এই ঘুমে ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখে আমি আতংকিত হয়ে উঠলাম। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আমি এক জ্যোতিষিণীর নিকট গেলাম। আমার গায়ে ছিল নকশী রেশমী চাদর এবং আমার লম্বা চুল ঘাড়ে ঝুলিছিল। আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তিনি আমার চেহারায় পরিবর্তন টের পেয়ে যান। আমি তখন আমার সমাজের নেতা। জ্যোতিষিণী বললেন, ঘটনা কী? আমাদের সরদার এমন বিবৰ্ণ চেহারায় আমার নিকট আসলেন কেন? কোন বিপদ-আপদে পড়েছেন বুঝি? আমি বললাম হ্যাঁ। তার নিয়ম ছিল, কেউ তার নিকট আসলে প্রথমে আগন্তুককে তার ডান হাত চুম্বন করতে হতো এবং তার মাথার তালুতে হাত রাখতে হতো। এরপর তার সঙ্গে কথা বলার ও সমস্যার কথা জানানোর সুযোগ পাওয়া যেত। সমাজের নেতা হওয়ার কারণে আমি এসব করলাম না।
এবার আমি বসে বললাম, গত রাতে আমি হিজারে ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখি, একটি গাছ মাটি থেকে অংকুরিত হয়ে বড় হয়ে আকাশ ছুই ছুই করছে। ডালগুলো ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত। গাছটি এতই আলোকময় যে, তার চেয়ে উজ্জ্বল আলো আমি আর দেখিনি। সূর্যের আলো থেকে তা ছিল সত্ত্বর গুণ বেশি। আরও দেখলাম, আরব আজম তাকে সিজদা করে আছে। প্রতি মুহূর্তে গাছটির পরিধি, ঔজ্জ্বল্য ও উচ্চতা বেড়েই চলেছে। গাছটি ঔজ্জ্বল্য ক্ষণে খানিকটা স্নান হয়। আবার পরীক্ষণে উজ্জ্বল হয়। আমি আরও দেখলাম, কুরায়শের একদল লোক গাছটির ডাল ধরে ঝুলে আছে। কুরায়শেরই অপর একটি দল গাছটি কেটে ফেলার চেষ্টা করছে। কাটার উদ্দেশ্যে তারা গাছের নিকটে গেলে এক যুবক তাদের হটিয়ে সেই যুবকের মত এত সুশ্ৰী আর সৌরভময় যুবক আমি আর কখনো দেখিনি। যুবক পিটিয়ে তাদের হাড়-গোড় ভেঙে দিচ্ছিলেন এবং চোখ উপড়ে ফেলছিলেন। আমি দুহাত বাড়িয়ে গাছ থেকে কিছু নিতে চাইলাম। কিন্তু যুবক আমাকে বারণ করল। আমি বললাম, তাহলে এ গাছ কাদের জন্য? তিনি বললেন, যারা গাছ ধরে ঝুলে আছে এবং যারা তোমার আগে এসেছে, এ গাছ তাদের জন্য। এতটুকু দেখার পর এক ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় আমার ঘুম
আমি দেখতে পেলাম স্বপ্নের বিবরণ শুনে জ্যোতিষিণীর চেহারার রং পাল্টে গেছে। সে বলল, আপনার স্বপ্ন যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আপনার বংশে এমন এক ব্যক্তি জন্ম নেবেন। যিনি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত গােটা পৃথিবীর রাজা হবেন। মানুষ তার ধর্মঠত গ্রহণ করবে।
এই ঘটনার বিবরণ দেওয়ার পর আবদুল মুত্তালিব আবু তালিবকে বললেন, উক্ত সন্তানটি বোধ হয় তুমিই হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের এবং নবুওত লাভের পর আবু তালিব প্রায়শই এই ঘটনাটি বলে বেড়াতেন। তারপর তিনি বলেন, আবুল কাসেম আল আমীনই ছিল সেই গাছ। মানুষ আৰু তালিবকে জিজ্ঞেস করত, আপনি কি তার প্রতি ঈমান আনবেন না? জবাবে তিনি বলতেন, গালমন্দ আর নিন্দার ভয়েই তো তা পারছি না।
আবু নু আয়ম … ইব্নে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, আব্বাস (রা) বলেন, ব্যবসা করার জন্য এক কাফেলার সঙ্গে আমি ইয়ামন যাই। সেখানে একদিন আমি খাবার তৈরি করতাম এবং আবু সুফিয়ান ও অন্যদের নিয়ে খেতাম, অন্যদিন আবু সুফিয়ান রান্নাবান্না করতেন এবং সকলকে নিয়ে খেতেন। একদিন আমার রান্নার পালা ছিল! আবু সুফিয়ান বললেন, আবুল ফযল তুমি কি আহার্য ও সঙ্গীদের নিয়ে আমার বাসস্থানে আসবে? আমি রাজী হলাম। সেখানে আবু সুফিয়ান ছিলেন। কাফেলার অন্যতম সদস্য। আমরা ইয়ামন পৌঁছলাম। একদিন আহার শেষে অন্যদের বিদায় করে একান্তে বসে আবু সুফিয়ান আমাকে বললেন, আবুল ফযল! আপনি কি জানেন যে, আপনার ভাতিজা মনে করে যে, সে আল্লাহর রাসূল? আমি বললাম, আমার কোন ভাতিজা! আবু সুফিয়ান বললেন, আমার নিকটও বিষয়টি গোপন করছেন। দেখছি? একজন ছাড়া আপনার কোন ভাতিজা এমনটি বলতে পারে? আমি বললাম, বলুন না, আপনি কার কথা বলছেন? তিনি বললেন, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। আমি বললাম, এই কাজ করে ফেলেছে ও? তিনি বললেন, হ্যাঁ করে ফেলেছে। এই বলে তিনি হানযাল ইব্নে আবু সুফিয়ানের পাঠানো একটি পত্র বের করে দেন। তাতে লেখা আছে : আমি আপনাকে অবহিত করছি যে, মুহাম্মদ আব্বতাহে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছে যে, আমি রাসূল। আপনাদেরকে আমি মহান আল্লাহর পথে আহবান করছি। আব্বাস (রা) বলেন, জবাবে আমি বললাম, হে আবু হানযোলা! আমি তো তাকে সত্যবাদীই পাচ্ছি। আবু সুফিয়ান বললেন, থাম হে আবুল ফযল।
আল্লাহর শপথ! মুহাম্মদ এমনটি বলুক, আমি তা পছন্দ করি না। হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্ৰ! ওর এরূপ কথায় আমি ক্ষতির আশংকা করছি। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, কুরায়শরা এমনিতেই বলাবলি করছে যে, তোমাদের হাতে বহু ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। আমি আপনাকে দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করছি হে আবুল ফযল! আপনি কি ঐ কথাটা শুনেননি? আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি বটে। আবু সুফিয়ান বললেন, আল্লাহর কসম, এটা তোমার অকল্যাণ বয়ে আনবে। আমি বললাম, হতে পারে এটা আমাদের জন্য কল্যাণই বয়ে আনবে।
এরপর অল্প কদিন যেতে না যেতেই আবদুল্লাহ ইব্নে হুযাফা খবর নিয়ে এলেন। তখন তিনি ঈমান এনেছেন। সেই খবর ইয়ামনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। আবু সুফিয়ানও ইয়ামনের এক মজলিসে বসতেন। এক ইহুদী পণ্ডিত সেই মজলিসে আলোচনা করতেন। সেই ইহুদী আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমি জানতে পেলাম যে, এই যে লোকটি কি যেন বলেছে, তার চাচা নাকি আপনাদের মধ্যে আছেন? আবু সুফিয়ান বললেন, ঠিকই শুনেছেন, আমিই তার চাচা। ইহুদী বললেন, মানে, আপনি তার পিতার তাইঃ আবু সুফিয়ান বললেন, হ্যাঁ। ইহুদী বললেন, তবে তার সম্পর্কে বলুন। আবু সুফিয়ান বললেন, আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না। ও এমন কিছু দাবি করুক, আমি কখনো-ই তা পছন্দ করব না। আবার তার দোষও বলব না। তবে তার চেয়ে উত্তম মানুষও তো আছে। এতে ইহুদী বুঝতে পারলেন যে, আবু সুফিয়ান মিথ্যাও বলতে পারছেন না। আবার তার দোষও বলতে চাচ্ছেন না। তাই তিনি বললেন, এতে ইহুদী ও মূসার তাওরাতের কোন ক্ষতি হবে না।
আব্বাস (রা) বলেন, তারপর ইহুদী পণ্ডিত আমাকে ডেকে পাঠান। আমি পরদিন সেই মজলিসে গিয়ে বসি। আবু সুফিয়ান ইব্নে হারব-ও সেই মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। পণ্ডিত তো আছেনই। আমি পণ্ডিতকে বললাম, খবর পেলাম, আপনি আমার চাচাতো ভাই-এর নিকট সেই ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, যার ধারণা সে আল্লাহর রাসূল? আর আপনাকে তিনি উক্ত ব্যক্তির চাচা বলে পরিচয় দিয়েছেন? তিনি তো তার চাচা নন। তিনি তার চাচাতো ভাই। তার চাচা হলাম আমি, মানে আমি তার পিতার ভাই! পাদ্রী অবাক হয়ে বললেন, আপনি তার পিতার ভাই! আমি বললাম হ্যাঁ, আমি তার পিতার ভাই। শুনে পণ্ডিত আবু সুফিয়ানের প্রতি মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কি সত্য বলেছেন? আবৃ সুফিয়ান বললেন, হ্যাঁ, সত্য বলেছেন। আমি বললাম, আরো কিছু জািনবার থাকলে আমাকে জিজ্ঞেস করুন, যদি আমি মিথ্যা বলি, তাহলে ইনি তার প্রতিবাদ করবেন। এবার পণ্ডিত আমার প্রতি মুখ ফিরিয়ে বললেন, দোহাই আপনার, সত্য বলবেন। আপনার ভাতিজার কি কারো প্রতি আসক্তি ছিল, না সে মূখ? আমি বললাম না, আবদুল মুত্তালিবের প্রভুর শপথ! সে মিথ্যাও বলেনি, খিয়ানতও করেনি। কুরায়র্শের নিকট তার নাম ছিল আল-আমীন। পণ্ডিত বললেন, সে কি কখনো নিজ হাতে লিখেছে? আব্বাস (রা) বলেন, আমি মনে করলাম, নিজ হাতে লিখেছে বললেই বোধ হয় তার পক্ষে কল্যাণকর হবে। ফলে তাই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে আবু সুফিয়ানের উপস্থিতির কথা মনে পড়ল। ভাবলাম, একথা বললে তো তিনি তার প্রতিবাদ করবেন ও আমাকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করবেন। তখন আমি বললাম, না, সে লিখতে জানে না।
এ তথ্য শুনে পণ্ডিত লাফিয়ে ওঠেন। তবে তার গায়ের চাদর খসে পড়ে। তিনি বললেন, ইহুদীরা জবাই হয়ে গেছে, ইহুদীরা খুন হয়ে গেছে! আব্বাস (রা) বলেন, তারপর আমরা যখন বাড়ি ফিরে আসি, তখন আবু সুফিয়ান বললেন, আবুল ফযল! ইহুদীরা তো তোমার ভাতিজার নাম শুনলে আঁতকে ওঠে। আমি বললাম, আপনি তো যা দেখার তাই দেখেছেন। আমিও তাই দেখছি। আচ্ছা, তার প্রতি ঈমান আনতে আপনার অসুবিধা কোথায়? হে আবু সুফিয়ান! সে যদি হক হয়ে থাকে, তাহলে আপনি সকলের আগে-ভাগে ঈমান এনে ফেললেন; আর যদি সে বাতিলই হয়ে থাকে, তাহলে মনে করবেন। আপনার আরো সমমর্যাদার আর দশজন যা করল, আপনি তাই করলেন। আবু সুফিয়ান বললেন, আমি তার প্রতি ঈমান আনিব না যতক্ষণ না আমি কোদায় ঘোড় সওয়ার বাহিনী দেখব। আমি বললাম, আপনি কী বলছেন? তিনি বললেন, মুখে একটি কথা এসে গেল, তাই বললাম। অন্যথায় আমি জানি, কোদা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আল্লাহ কোনো ঘোড় সওয়ার বাহিনী ছেড়ে দেবেন না। আমাক বাস (রা) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কা বিজয়ের জন্য আসলেন এবং আমরা কোদা থেকে তার ঘোড়সওয়ার বাহিনী বেরিয়ে আসছে দেখতে পাই তখন আমি আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম, আবু সুফিয়ান! কথাটা কি এখন আপনার মনে পড়ছে? আৰু সুফিয়ান বললেন, আল্লাহর শপথ, মনে পড়ছে বৈ কি। আমি প্ৰশংসা করছি সেই আল্লাহর, যিনি আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছেন।
এ বর্ণনাটি হাসান পর্যায়ের। এ থেকে সত্যের আভা ফুটে উঠছে; যদিও এর কোন কোন বর্ণনাকারীর ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। এর আগে আমরা উমাইয়া ইব্নে আবুস সালত-এর সঙ্গে আবু সুফিয়ানের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছি। সেই ঘটনার সঙ্গে আলোচ্য ঘটনার মিল আছে। আবার পরে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের সঙ্গে তাঁর যে ঘটনা ঘটেছিল, তাও উল্লেখ করা হবে। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর গুণ-পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং তা থেকে নবী করীম (সা)-এর সত্যতা, নবুওত ও রিসালাতের প্রমাণ পেয়ে বলেছিলেন? আমি জানতাম যে, তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন। কিন্তু তিনি যে আপনাদের মধ্য থেকে হবেন, তা অবশ্য ধারণা করিনি। আমি যদি জানতাম যে, আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে তার কাছে যেতে পারব তাহলে তার সাক্ষাতের জন্য কষ্ট করে হলেও চলে যেতাম। যদি আমি তার কাছে থাকতাম, তাহলে আমি তাঁর দুপা ধুয়ে দিতাম। তুমি যা বলেছি, যদি সব সত্য হয়ে থাকে, তা হলে অবশ্যই তিনি আমার এই দুপায়ের জায়গাটুকুরও অধিকারী হবেন। প্রকৃতপক্ষে ঘটেছেও তাই।