মূসা (আ) ও খিযির (আ)-এর ঘটনা
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :
‘স্মরণ কর, যখন মূসা তার সঙ্গীকে বলেছিল, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না। অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। তারা উভয়েই যখন দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে পৌঁছল তারা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল, এটা সুড়ংগের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। যখন তারা আরো অগ্রসর হলো, মূসা তার সঙ্গীকে বলল, ‘আমাদের সকালের নাশতা নিয়ে এসো, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’ সঙ্গী বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই এটার কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। মূসা বলল, আমরা তো সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম। তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। তারপর তারা সাক্ষাৎ পেল, আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমি আমার কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমার কাছ থেকে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।
মূসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দেবেন, এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি? সে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না, যে বিষয়ে আপনার জ্ঞানায়ত্ত নয়। সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করবেন কেমন করে? মূসা বলল, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না। সে বলল, ‘আচ্ছা। আপনি যদি আমার অনুসরণ করবেনই। তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলি।’ তারপর উভয়ে চলতে লাগল, ‘পরে তারা যখন নীেকায় আরোহণ করল, তখন সে ওটা বিদীর্ণ করে দিল। মূসা বলল, আপনি কি আরোহীদের নিমজ্জিত করে দেবার জন্যে এটা বিদীর্ণ করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।’ সে বলল, ‘আমি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না?’ মূসা বলল, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন कन्त6वन न्पा।
სტეO
তারপর উভয়ে চলতে লাগল। চলতে চলতে ওদের সাথে এক বালকের সাক্ষাত হলে সে তাকে হত্যা করল। তখন মূসা বলল, ‘আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন, হত্যার অপরাধ ছাড়াই? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।’ সে বলল, ‘আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না?’ মূসা বলল, ‘এটার পর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না, আমার ওযর আপত্তির চূড়ান্ত হয়েছে।’ তারপর উভয়ে চলতে লাগল, চলতে চলতে তারা এক জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের কাছে খাদ্য চাইল, কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করলো। তারপর তারা এক পতনোনুখ প্রাচীর দেখতে পেল এবং সে এটাকে সুদৃঢ় করে দিল। মূসা বলল, ‘আপনি তাে ইচ্ছে করলে এটার জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।’ সে বলল, ‘এখানেই আপনার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কছেদ হল; যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেন নি। আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।’
নীেকাটির ব্যাপার-এটা ছিল। কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির, ওরা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত; আমি ইচ্ছা করলাম নীেকাটিকে ক্ৰটিযুক্ত করতে। কারণ, তাদের সম্মুখে ছিল এক রাজা যে বলপ্রয়োগে সকল নীেকা ছিনিয়ে নিত। আর কিশোরটি—তার পিতামাতা ছিল মু’মিন। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর দ্বারা তাদেরকে বিব্রত করবে। তারপরে আমি চাইলাম যে, ওদের প্রতিপালক যেন ওদেরকে তার পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি-ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর। আর ঐ প্রাচীরটি-এটা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, এর নিম্নদেশে আছে ওদের গুপ্তধন এবং ওদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং আপনার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, ওরা বয়ঃপ্রাপ্ত হউক এবং ওরা ওদের ধনভাণ্ডার উদ্ধার করুক। আমি নিজ থেকে কিছু করিনি, আপনি যে বিষয়ে ধৈর্যধারণে অপারক হয়েছিলেন, এটাই তার ব্যাখ্যা। (সূরা কাহাফ : ৫৯-৮২)
কোন কোন কিতাবী বলে যে, খিযির (আ)-এর কাছে যে মূসা (আঃ) গমন করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন মূসা (আ) ইব্ন মীশা ইব্ন ইউসুফ (আ) ইব্ন ইয়াকুব (আ) ইব্ন ইসহাক (আ) ইব্ন ইব্রাহীম আল খলীল (আ)। এ সব কিতাবীর অভিমতের সমর্থন করে যারা তাদের কিতাব ও বই-পুস্তক থেকে তথ্যাদি উদ্ধৃত করে থাকে, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন নূপ ইব্ন ফুআলা। আল হেমইয়ারী আশ-শামী, আল বুকালী। কথিত আছে যে, তিনি ছিলেন দামিশকের অধিবাসী। তার মাতা হচ্ছেন কা’ব আহবারের স্ত্রী। বাহ্যত কুরআনের পূর্বাপর বর্ণনা ও সর্বজন গৃহীত বিশুদ্ধ হাদীসের স্পষ্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মূসা (আ) ইব্ন ইমরানই হচ্ছেন বনী ইসরাঈলের কাছে প্রেরিত মূসা (আ)।
ইমাম বুখারী (র) বলেন, সাঈদ ইব্ন জুবোয়র (রা) বলেছেন—একদিন আমি ইব্ন আব্বাস (রা)-কে বললাম যে, নুফ আল বুকালীর ধারণা যে, খিযির (আ)-এর সাথে যে মূসা (আ) সাক্ষাত করেছিলেন তিনি বনী ইসরাঈলের মূসা (আ) নন। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, ‘আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে।’ উবাই ইব্ন কা’ব (রা) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছেন যে, একদিন মূসা (আঃ) ইসরাঈলীদের কাছে বক্তব্য রাখছিলেন। এমন সময় তাকে প্রশ্ন করা হল যে, মানব জাতির মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী কে? তিনি বললেন ‘আমি’। যেহেতু জ্ঞানকে তিনি আল্লাহ তা’আলার দিকে সম্পর্কিত করেন নি। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে
სტNსტა
ভৎসনা করলেন। তার কাছে আল্লাহ তা’আলা এ মর্মে ওহী প্রেরণ করেন যে, দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আমার এক বান্দা রয়েছে যিনি তোমার চাইতে অধিক জ্ঞানী। মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি কেমন করে তার কাছে পৌছতে পারব?’ আল্লাহ তা’আলা। বললেন, ‘একটি মাছ সাথে নিয়ে তা থলেতে পুরে নাও। যেখানেই মাছটি হারিয়ে যাবে, সেখানেই তাকে পাওয়া যাবে।’ তিনি একটি মাছ নিয়ে তা একটি থলে পুরে নিলেন। তারপর তিনি চলতে লাগলেন। তার সাথে তার খাদিম ইউশা। ইব্ন নূনও ছিলেন। যখন তারা শৈলশীলার কাছে পৌছলেন, তখন তারা তাতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। মাছটি লাফ দিয়ে থলে থেকে বের হয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের পথ করে সাগরে নেমে গেল।
আল্লাহ তা’আলা মাছের যাত্রাপথের পানি ঠেকিয়ে রাখলেন, যাতে সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। মূসা যখন জাগলেন, তখন খাদিম মাছটি সম্বন্ধে তাকে অবহিত করতে ভুলে গেলেন এবং তারা বাকি দিন ও রাত পথ চলতে লাগলেন। পরদিন সকালে মূসা (আঃ) তার খাদিমকে বলেন, ‘আমাদের প্রাতঃরাশ, আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’ যে স্থানে পৌছার জন্য আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে হুকুম দিয়েছিলেন সে স্থান অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোন ক্লান্তি বোধ করেননি। খাদিম মূসা (আ)-কে বললেন, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই এটার কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে সাগরে নেমে যায়।’ অর্থাৎ মাছটি পথ করে সমুদ্রে নেমে যাওয়ায় দু’জনই আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলেন। মূসা (আঃ) বললেন, ‘আমরা তো সেই স্থানটিরই অন্বেষণ করছিলাম।’
তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন এবং পাথরটির কাছে গিয়ে পৌছলেন। তাঁরা সেখানে একজন বস্ত্রাবৃত লোককে দেখতে পান। মূসা (আঃ) তাকে সালাম দিলেন, তখন ঐ ব্যক্তি অর্থাৎ খিযির (আ) বললেন, আপনার এ জনপদে সালাম আসল কোথেকে? মূসা (আ) বললেন, আমি মূসা। তিনি প্রশ্ন করলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা (আ)? মূসা (আ) বললেন, হ্যা, তাই। সত্যের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন। এজন্য আমি আপনার কাছে এসেছি। খিযির (আ) বললেন, ‘হে মূসা (আ)!! আল্লাহ তা’আলা তার জ্ঞান থেকে আমাকে একটি বিশেষ জ্ঞান প্ৰদান করেছেন, যা আপনার অজ্ঞাত। অনুরূপভাবে আপনাকে এমন একটি জ্ঞান দান করেছেন যা আমার অজ্ঞাত। তাই আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না।’
হযরত মূসা (আ) খিযির (আ)-কে বললেন, ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।’ খিযির (আ) মূসা (আ)-কে বললেন, ‘যদি আপনি আমার অনুকরণ করেনই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলি।’ তারপর উভয়ে সাগরের তীর ধরে চলতে লাগলেন এবং একটি নীেকার দেখা পেলেন। নৌকার মালিকদের সাথে পারাপারের ব্যাপারে আলোচনা করলেন। নীেকার মালিকগণ খিযির (আ)-কে চিনতে পারলেন এবং ভাড়া না নিয়েই তাদেরকে পার করে দিলেন। যখন তারা উভয়ে নীেকায় আরোহণ করলেন, খিযির (আ) কিছুক্ষণের মধ্যে কুঠার দ্বারা নীেকার একটি কাঠ খুলে ফেললেন। তখন মূসা (আঃ) তাকে
বললেন, ‘এরা বিনাভাড়ায় আমাদেরকে পার করে দিলেন আর আপনি আরোহীদেরকে নিমজিত করার জন্যে নৌকাটিকে বিদীর্ণ করে দিলেন!! আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন!’ তিনি মূসা (আ)-কে বললেন, ‘আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না?’ মূসা (আ) বললেন, ‘আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী ঠাওরাবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’
রসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, ‘প্রথম বারের প্রশ্নটি মূসা (আঃ) হতে ভুলক্রমে সংঘটিত হয়েছিল।’ রসূলুল্লাহ (সা) আরো বলেন, এমন সময় একটি চড়ুই পাখি এসে নীেকার এক পাশে বসল। তারপর ঠোঁট দিয়ে পানি উঠাল। তখন খিযির (আ) মূসা (আ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আল্লাহ তা’আলার জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞানের পরিমাণ হচ্ছে সাগর থেকে নেয়া চড়ুই পাখির এক বিন্দু পানির মত।’ তারা উভযে নীেকা থেকে অবতরণের পর সাগরের কূল ঘেঁষে চলতে লাগলেন। অতঃপর খিযির (আ) এক বালককে দেখতে পেলেন। সে অন্যান্য বালকের সাথে খেলাধুলা করছিল। খিযির (আ) কিশোরটির মাথা ধরে টেনে ছিড়ে ফেললেন। এভাবে তাকে তিনি হত্যা করলেন। মূসা (আঃ) তখন তাঁকে বললেন, ‘আপনি কি এক নিষ্পাপ জীৱন নাশ করলেন, হত্যার অপরাধ ছাড়াই? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন!’ তিনি বললেন, ‘আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না?’
রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, এবারের প্রশ্নটি উত্থাপন ছিল পূর্বের বারের চেয়ে গুরুতর। তাই মূসা (আ) বললেন, এটার পর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। আমার ওযর আপত্তির চূড়ান্ত হয়েছে। অতঃপর উভয়ে চলতে লাগলেন। চলতে চলতে তাঁরা এক জনপদের আধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের কাছে খাদ্য চাইলেন। কিন্তু তারা এদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অতঃপর তারা তথায় এক পতনোনুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন, তখন খিযির (আ) তা সুদৃঢ় করে দিলেন। তখন মূসা (আ) বললেন, ‘তারা এমন একটি সম্প্রদায় যাদের কাছে আমরা আগমন করলাম, তারা আমাদেরকে না দিল খাদ্য, না করল মেহমানদারী, আপনি তো ইচ্ছে করলে এটার জন্যে পারিশ্রমিক গ্ৰহণ করতে পারতেন।’ খিযির (আ) বললেন, ‘এখানেই আপনার এবং আমার মধ্যে সম্পৰ্কছেদ হল। যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেন নি। আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।’
রসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, ‘আমাদের এটা পছন্দনীয় ছিল যে, মূসা (আ) যদি ধৈর্যধারণ করতেন, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাদের সম্বন্ধে আমাদেরকে আরও অনেক ঘটনা শুনাতেন। সাঈদ ইব্ন জুবোয়র (র) বলেন, উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখিত আয়াতাংশ
ү ‘ ‘; (রা) পাঠ বা ১ + … শব্দটির সাথে ধ_-_Ju~) বিশেষণ সহকারে পাঠ করতেন। পুনরায় আয়াতাংশ 5(<*?$2’| 2.1% -এর সাথে আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) পড়তেন।
/ (٪ ۷ ܪܒ . 1,’[ الغلام فكان ابو الأمؤمنين, শব্দটি যোগ করে পড়তেন। হাদীস শরীফে উল্লেখ
রয়েছে যে, সে ছিল কাফির। বুখারী শরীফে সুফয়ান ইব্ন উয়ায়না (রা)-এর সূত্রে অনুরূপ
სტსტ5)
বর্ণনা রয়েছে। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে, মূসা (আ) সফরে বের হয়ে পড়লেন। তার সাথে ছিলেন ইউশা ‘ইব্ন নূন এবং তাদের সাথে ছিল একটি মাছ। অতঃপর তারা উভয়ে একটি পাথরের কাছে পৌছলেন এবং দুজনেই পাথরের নিকট অবতরণ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ‘মূসা (আ) পাথরের উপর তাঁর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। পাথরের উপর ছিল একটি প্রস্রবণ, যাকে। বলা হত। কোন কিছুর মধ্যে ঐ প্রস্রবণের পানি পড়লে ঐ বস্তুটি জীবিত হয়ে যেত। ভুনা মাছটির উপরও উক্ত প্রস্রবণ থেকে পানি পড়েছিল। তাই মাছটি নড়ে উঠল, থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে পড়ে গেল। অতঃপর যখন মূসা (আ) জেগে উঠলেন, তখন খাদিমকে বললেন, আমাদের নাশতা নিয়ে এস। আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তারপর হাদীসটির বাকি অংশ বর্ননা করা হয়েছে। উক্ত হাদীসে আরো আছে, তিনি বলেন, নীেকার একপাশে একটি চড়ুই পাখি এসে বসল; সমুদ্রে তার ঠোঁট ডুবাল। তখন খিযির (আ) মূসা (আ)-কে বললেন, ‘আমার, আপনার এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় এই চড়ুই পাখির সমুদ্রে ডুবানো ঠোঁটের মাধ্যমে সংগৃহীত এক বিন্দু পানির ন্যায় নগণ্য। আতঃপর পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন।
ইমাম বুখারী (র) অন্য একটি সূত্ৰেও সাঈদ ইব্ন জুবোয়র (রা) হতে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রা) বলেন, ‘একদিন আমরা আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা)-এর ঘরে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা আমাকে যে কোন প্রশ্ন করতে পার।’ আমি বললাম, হে আবু আব্বাস (রা)! আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্যে আমাকে উৎসর্গ করে দিন, কুফাতে একজন বক্তা আছে, তাকে বলা হয় নূফ। তার ধারণা যে, খিযির (আ)-এর সাথে যার ঘটনা ঘটেছে তিনি বনী ইসরাঈলের মূসা (আ) নন। বর্ননাকারী আমরের মতে, আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, ‘আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে।’ বর্ণনাকারী ইয়ালা (র)-এর মতে, আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, আমাকে উবাই ইব্ন ক’ব (রা) বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহর রাসূল মূসা (আ) একদিন জনগণকে নসীহত করছিলেন, তাতে চােখে পানি এসে গিয়েছিল এবং অন্তরসমূহ বিগলিত হয়ে গিয়েছিল। মূসা (আঃ) যখন স্থান ত্যাগ করছিলেন অমনি এক ব্যক্তি তাঁকে পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর যমীনে কি কেউ আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী রয়েছেন?’ তিনি প্ৰতি উত্তরে বললেন ‘না’। জ্ঞানকে আল্লাহ তা’আলার প্রতি সম্পর্কিত না করায় আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে ভৎসনা করেন। মূসা (আ)-কে বলা হল, ‘হ্যা রয়েছে।’ মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তিনি কোথায় আছেন?’ আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘দুই সমুদ্রের সংগমস্থানে।’ মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি চিহ্ন নির্দেশ করুন যা দিয়ে আমি তাকে চিনে নিতে পারব।’ তিনি বললেন, ‘যেখানে মাছটি তোমার নিকট থেকে পৃথক হয়ে যাবে।’
ইয়ালা (র) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘একটি ভুনা মাছ সাথে নিয়ে নাও। যেখানেই তাতে প্ৰাণ সঞ্চার করা হবে সেখানেই তুমি খিযির (আ)-কে পাবে।’ মূসা (আ) একটি মাছ নিয়ে একটি থলে রাখলেন। অতঃপর আবার খাদেমকে বললেন, ‘আমি তোমাকে অন্য কোন দায়িত্ব দিয়ে কষ্ট দেব না, তুমি শুধু যেখানে মাছটি আমাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে সে জায়গাটি সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করবে।’ খাদেম ইউশা (আ) বললেন, এটাতো আর তেমন কােন কঠিন কাজ নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, 464 1.2, 616 181% অর্থাৎ
‘স্মরণ কর, যখন মূসা (আ) আপন খাদেম ইউশা। ইব্ন নূন-কে বললেন।’ সাঈদ (রা) ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারী বর্ণনা করেন, ইউশা (আ) একটি পরিষ্কার জায়গায় পাথরের ছায়ায় অবস্থান করছিলেন এবং মূসা (আ) নিদ্রিত ছিলেন। মাছটি নড়ে উঠল, ইউশা (আ) মনে মনে বললেন, নিজে না জেগে ওঠা পর্যন্ত আমি মূসা (আ)-কে জাগাব না। বরং জেগে উঠলে তাঁর কাছে মাছের ঘটনাটি বলব। কিন্তু পরে তিনি তা বলতে ভুলে গেলেন। এদিকে মাছটি নড়াচড়া করতে করতে সাগরে নেমে গেল। আল্লাহর হুকুমে মাছের নির্গমন জায়গায় পানির চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। পাথরের মধ্যেও মাছের কিছু চিহ্ন রয়ে যায়। বর্ণনাকারী আমরা সেই চিহ্নের প্রতি ইঙ্গিত করতে গিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তার পাশের দুইটি আঙ্গুলের দ্বারা বৃত্ত তৈরি করে দেখালেন।
অতঃপর মূসা (আ) বললেনঃ ‘………. … * لقد لقبيئا من سفرنا
‘আমরা এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’ এ পর্যন্ত তোমা থেকে আল্লাহ তা’আলা ভ্রমণের কষ্ট দূর করে রেখেছিলেন। উভয়ে ফিরে চললেন এবং খিযির (আ)-কে পেয়ে গেলেন। উসমান ইব্ন আবু সুলাইমান (র) বলেন, খিযির (আ) সমুদ্রের বুকে একটি সবুজ রংয়ের চাটাইয়ের উপর ছিলেন। সাঈদ (রা) বলেন, তিনি তার কাপড়ে আবৃত অবস্থায় ছিলেন। কাপড়ের একপ্রান্ত ছিল তাঁর দুই পায়ের নিচে এবং অপরপ্রান্ত ছিল তাঁর মাথার নিচে। মূসা (আঃ) তাকে সালাম করলেন। তখন তিনি চেহারা থেকে কাপড় সরালেন এবং বললেন, ‘এ অঞ্চলে কি সালামের প্রথা আছে? আপনি কে?’ মূসা (আ) বললেন, ‘আমি মূসা।’ তিনি বললেন, ‘বনী ইসরাঈলের মূসা?’ মূসা (আ) বললেন, ‘হ্যা’। খিযির (আ) বললেন, ‘ব্যাপার কী? আপনি কেন এসেছেন?’ মূসা (আ) বললেন, ‘আপনি যে জ্ঞান শিক্ষা লাভ করেছেন তার থেকে আপনি আমাকে কিছু শিখাবেন এজন্যই আমি এখানে এসেছি।’ আপনার হাতে তৌরাত রয়েছে তা কি যথেষ্ট নয়? হে মূসা (আ)! আপনার কাছে তো আল্লাহর ওহী আসে। আমার কাছে এক প্রকার জ্ঞান রয়েছে যা শিক্ষা করা আপনার পক্ষে সমীচীন নয়। অন্যদিকে আপনার কাছে এমন জ্ঞান
রয়েছে যা আমাকে মানায় না।
এমন সময় একটি পাখি তার ঠোঁট দ্বারা সমুদ্র থেকে এক বিন্দু পানি উঠােল। খিযির (আ) বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আল্লাহ তা’আলার জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞানের পরিমাণ হচ্ছে সমুদ্র থেকে উঠানো পাখির ঠোঁটের এ পানির বিন্দুর মত। যখন তারা উভয়ে নীেকায় আরোহণ করলেন তখন তারা দেখলেন, ছোট ছোট ফেরী নীেকা রয়েছে, যেগুলো লোকদেরকে নদী পারাপার করে। তারা খিযির (আ)-কে চিনতে পেরে বলে উঠল ৪ ‘ইনি তো আল্লাহর পুণ্যবান বান্দা।’ বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সাঈদ (রা)-কে জিজ্ঞাসা করলাম : তিনি কি খিযির (আ)? তিনি বললেন ‘হ্যা’। তারা আরো বলল, তার কাছ থেকে আমরা ভাড়া গ্ৰহণ করব না। খিযির (আ) নীেকাটিকে ফুটো করে দিলেন এবং এতে একটি পেরেক ঠুকে দিলেন। মূসা (আ) বললেন, ‘আপনি কি আরোহীদেরকে ডুবিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে ফুটো করে দিলেন? আপনি তো একটা গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।’
মুজাহিদ (র) বলেন, আয়াতে উল্লেখিত। -৯। শব্দটির অর্থ হচ্ছে <,, অর্থাৎ অন্যায় কাজ। খিযির (আ) বললেন, ‘আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ
করে থাকতে পারবেন না?’ প্রথম প্রশ্নটি ছিল ভুলক্রমে, দ্বিতীয়টি ছিল শর্ত হিসেবে আর তৃতীয়টি ছিল ইচ্ছাকৃত। মূসা (আ) বললেন, ‘আমার ভুলের জন্যে আমাকে অপরাধী ঠাওরাবেন না ও আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’ তারপর উভয়ে চলতে লাগলেন, চলতে চলতে তাদের সাথে এক বালকের সাক্ষাত হলে তিনি তাকে হত্যা করলেন। বর্ণনাকারী ইয়ালা (র) বলেন, সাঈদ (রা) বলেছেন, তিনি অনেকগুলো ছেলেকে খেলারত অবস্থায় পেলেন, তাদের মধ্য থেকে তিনি একটি চটপটে কাফির বালককে শোয়ালেন এবং ছুরি দ্বারা যাবোহ করে ফেললেন। মূসা (আঃ) বললেন, ‘আপনি একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন, যে এখনও কোন নোংরা কাজ করেনি!’ ইব্ন আব্বাস (রা) আয়াতে উল্লেখিত (A.4% ‘4°5»-কে – ধ_A L. – ধ – < 13 L. a, পাঠ করেছেন অর্থাৎ নিষ্পাপ ও মুসলিম পবিত্ৰাত্মা বালক। অতঃপর উভয়ে চলতে লাগলেন এবং তারা একটি পতনোনুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। তিনি এটাকে সুদৃঢ় করে দিলেন। বর্ণনাকারী হাত উঠিয়ে বলেন, খিযির (আ) এভাবে হাত উঠালেন এবং এতে প্রাচীরটি ঠিক হয়ে গেল। বর্ণনাকারী ইয়ালা বলেন, আমার ধারণা সাঈদ (র) বলেছেন, ‘খিযির (আ) প্রাচীরটিকে আপন হাত দ্বারা স্পর্শ করলেন। অমনিতেই এটা সুদৃঢ় হয়ে গেল।’ মূসা (আ) বললেন, ‘আপনি তো ইচ্ছা করলে এটার জন্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন, যা আমরা খেতে পারতাম।’ আয়াতে উল্লেখিত : :4%। ৬%,(<% (তাদের পেছনে) কে ইব্ন আব্বাস (রা:) — L.|- (তাদের সামনে) পড়েছেন। সাঈদ (র) ব্যতীত অন্য মুফাসসিরগণ বলেন, উল্লেখিত বাদশার নাম ছিল : (১১, ৬-১৬৬৯) (হাদাদ ইব্ন বাদাদ)। আর নিহত কিশোরটির নাম ছিল জয়সূর।
বাদশা’র সামনে দিয়ে যখন কোন খুঁত বিশিষ্ট নৌকা অতিক্রম করত তখন সে এটাকে খুঁতের কারণে ছেড়ে দিত এবং তারপর এ স্থান অতিক্রম করার পর মালিকের খুঁত সারিয়ে নিয়ে নীেকাকে কাজে লাগাত। তাফসীরকারদের কেউ কেউ বলেন, ‘নীেকার ছিদ্রটি বন্ধ করা হয়েছিল কাচের দ্বারা।’ আবার কেউ কেউ বলেন, আলকাতরা দিয়ে। কিশোরটির পিতামাতা ছিলেন মু’মিন বান্দা কিন্তু কিশোরটি নিজে ছিল কাফির। খিযির (আ) বলেন, তাই আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, তার প্রতি বাৎসল্যের কারণে পিতামাতা তার ধর্মের অনুসারী হয়ে পড়বেন। এজন্যেই আমি চেয়েছিলাম যে, তাদেরকে প্রতিপালক যেন ওর পরিবর্তে এমন এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি-ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (র)-এর ধারণা, সন্তানটি ছিল বালক, মেয়ে নয়।’ দাউদ ইব্ন আবু আসিম (র) অসংখ্য তাফসীরকারের থেকে বর্ণনা করেন যে, সন্তানটি ছিল বালিকা।
আবদুর রাজাক (র) আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে এবং মুহাম্মাদ ইব্ন ইসহাক (র) উবাই ইব্ন কা’ব সূত্রে অন্যরূপ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
ইমাম যুহরী (র) আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। ‘একদিন তিনি ও হুর ইব্ন কায়স ইব্ন হাসন ফারাবী মূসা (আ)-এর সঙ্গী সম্পর্কে বিতর্কে রত ছিলেন। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, ‘তিনি ছিলেন খিযির (আ)।’ এমন সময় উবাই ইব্ন কা’ব (রা) তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। ইব্ন আব্বাস (রা) তাকে ডাকলেন এবং বললেন, আমি ও আমার এই সঙ্গী মূসা (আ)-এর সঙ্গী সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি, যার সাথে সাক্ষাত করার
জন্যে মূসা (আঃ) আল্লাহ্ তা’আলার নিকট পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। আপনি কি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, ‘হ্যা’। এরপর হাদীসের বাকি অংশটুকু বর্ণনা করেন। হাদীসের বিস্তারিত বর্ণনা বিভিন্ন সনদ সহকারে সূরায়ে কাহাফের তাফসীরে আমি বর্ণনা করেছি। সমস্ত প্ৰশংসা আল্লাহর।
আয়াতাংশ L447%AK 4, 2, … ওঁLK% –এ উল্লেখিত ইয়াতীমদের সম্পর্কে সুহায়লী (র) বলেন, তারা ছিল কাশিহ-এর দুই ছেলে আসরাম ও সুরাইম। আয়াতে উল্লেখিত কানুন্য (১৮৭২) ছিল অর্থ স্বর্ণ। এটা ইকরিম (র)-এর অভিমত। আবার আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, (১-১২)-এর অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। অধিক গ্রহণীয় অভিমত অনুসারে এটার অর্থ হচ্ছে, জ্ঞানের বাণী সম্বলিত একটি স্বর্ণের পাত। বাযযার (র) আবৃযর (রা)-এর সূত্রে একটি মারফু’ হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কিতাবে যে – <–এর কথা উল্লেখ করেছেন তা ছিল একটি নিরেট সোনার পাত।
তাতে লিখা ছিল ৪
অর্থাৎ—’তকদীরে বিশ্বাসী লোক কী করে ব্যতিব্যস্ত হয়, সে জন্যে বিস্মিত হই, দোযখের কথা মনে রেখেও যে ব্যক্তি হাসতে পারে তার জন্যে আমি বিস্ময় বোধ করি; যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা স্মরণে রেখেও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ থেকে গাফিল থাকে, তার জন্য বিস্মিত রোধ করি।’
অনুরূপভাবে হাসান বসরী (র) ও জাফর সাদেক (র) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আয়াতে উল্লেখিত (AA? বলতে কারো কারো সপ্তম পূর্ব-পুরুষের, আবার কারো কারো মতে দশম পূর্ব-পুরুষের কথা বলা হয়েছে। যাই হোক, এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ পুণ্যবান লোকের বংশধরদের হেফাজত করে থাকেন।
আয়াতাংশ এ।(৬৬%,’_4২%-এর দ্বারা বোঝা যায় যে, খিযির (আ) নবী ছিলেন। তিনি নিজের থেকে কিছুই করেননি। বরং যা করেছেন তার প্রতিপালকের নির্দেশেই করেছেন। সুতরাং তিনি নবী ছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, ‘তিনি একজন রাসূল ছিলেন।’ আবার কেউ কেউ বলেন, ‘তিনি একজন ওলী ছিলেন।’ একটি বিরল মতে, ‘তিনি একজন ফেরেশতা ছিলেন।’ এর চাইতে আশ্চর্যজনক কথা হচ্ছে যে, কেউ কেউ বলেন, ‘তিনি ফিরআউনের পুত্ৰ ছিলেন।’ আবার কেউ কেউ বলেন, ‘তিনি ছিলেন যাহহাকের পুত্র যিনি হাজার বছর ধরে গোটা পৃথিবীতে রাজত্ব করে গেছেন।’
ইব্ন জারীর তাবারী (র) বলেন, ‘কিতাবীদের অধিকাংশের অভিমত হচ্ছে, তিনি ছিলেন আফরীদুনের যুগের লোক।’ আরো কথিত আছে যে, ‘তিনি ছিলেন সুপ্ৰসিদ্ধ যুল-কারনায়নের অগ্রগামী বাহিনীর সেনাপতি। আর এ যুলকুরনায়নকেই কেউ কেউ আফরীদুন ও যুল ফারাস বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ছিলেন, ইবরাহীম খলীল (আ.)-এর যুগের লোক।’ কিতাবীরা আরো মনে করেন যে, ‘তিনি ‘আবে-হায়াত’ পান করে অমর হয়ে গেছেন এবং আজও তিনি
۹ بابا
জীবিত আছেন।’ কেউ কেউ বলেন, ইবরাহীম (আ)-এর প্রতি যারা ঈমান আনয়ন করেছিলেন এবং বাবেল শহর থেকে ইবরাহীম (আ)-এর সাথে হিজরত করেছিলেন, তিনি তাদের কারোর সন্তান ছিলেন।’ আবার কেউ কেউ বলেন, ‘তার নাম ছিল মালকান।’ কেউ কেউ বলেন, তার নাম ছিল, ‘আরমিয়া ইব্ন খালকিয়া।’ কেউ কেউ বলেন, ‘লাহরাসিবের পুত্ৰ সাবাসিবের আমলে তিনি একজন নবী ছিলেন।’ ইব্ন জারীর (র) বলেন, আফরীদূিন ও সাবাসিবের মধ্যে যুগ-যুগান্তরের ফারাক ছিল যা সম্পর্কে বংশ বৃত্তান্তের পারদর্শীদের কেউ অনবহিত থাকতে পারে की |
ইব্ন জারীর (র) বলেন, বিশুদ্ধ অভিমত হল যে, তিনি আফরীদূিনের যুগের লোক, যিনি মূসা (আ)-এর যুগ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। মূসা (আ)-এর নবুওতের কাল ছিল মনুচেহেরের আমল। আর মনুচেহের ছিলেন পারস্য সম্রাট আফরীদূিনের পৌত্র এবং আবরাজের পুত্র। পিতামহ আফৱীদূনের পর যুবরাজ মনুচেহের সম্রাট হন। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। তিনিই প্রথম পরিখা খনন করেছিলেন এবং তিনিই প্রথম প্রত্যেক গ্রামে সর্দার নিযুক্ত করেছিলেন। তার রাজত্বকাল প্রায় ১৫০ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কথিত আছে যে, তিনি ছিলেন ইসহাক ইব্ন ইবরাহীমের অধঃস্তন বংশধর। তাঁর বহু বাগিতাপূর্ণ সুন্দর সুন্দর বক্তৃতা ও উক্তির উল্লেখ পাওয়া যায়, যা শ্রোতৃবর্গকে বিস্ময়াভিভূত করে। আর এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি ইবরাহীম খলীল (আ)-এর অধঃস্তন বংশধর ছিলেন। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন?
স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তা’আলা নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি। আর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে, যখন একজন রাসূল আসবে তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে? (সূরা আল ইমরান : ৮১)
অন্য কথায়, আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক নবী থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, তিনি তাঁর পরে আগত নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন ও তাকে সাহায্য করবেন। যদি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যমানায় খিযির (আ) জীবিত থাকতেন, তাহলে রসূলুল্লাহ (সা)-এর আনুগত্য স্বীকার, তার সাথে মিলিত হওয়া ও তার সাহায্য করা ব্যতীত খিযির (আ)-এর কোন গত্যন্তর থাকত না। তিনি অবশ্যই ঐসব লোকের অন্তর্ভুক্ত হতেন যারা বদরের দিন রসূলুল্লাহ (সা)-এর পতাকাতলে সমবেত হয়েছিলেন। যেমনটি জিবরাঈল (আ.) ও ফেরেশতাদের সর্দারগণ হয়েছিলেন। কিংবা তিনি রাসূল ছিলেন—যা কেউ কেউ বলেছেন; অথবা তিনি ফেরেশতা ছিলেন— যেমনি কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। খিযির (আ) নবী ছিলেন এবং এটিই সঠিক অভিমত। তিনি যাই হয়ে থাকুন না কেন, জিবরাঈল (আঃ) হচ্ছেন ফেরেশতাদের সর্দার এবং মূসা (আ) মর্যাদায় খিযির (আ)-এর তুলনায় শ্রেষ্ঠ। রসূলুল্লাহ (সা)-এর যমানায় যদি মূসা (আঃ) জীবিত থাকতেন, তবে রসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি ঈমান আনা ও তার সাহায্য করা তার জন্যেও অপরিহার্য হত।
এমতাবস্থায় খিযির (আ) যদি ওলীই হয়ে থাকেন। যেমনি অনেকেই মনে করে থাকেন। তবে তাঁর উম্মতভুক্ত হওয়াটা অধিকতর যুক্তিযুক্ত হতো। কিন্তু কোন হাসান পর্যায়ের কিংবা নির্ভরযোগ্য দুর্বল হাদীসেও পাওয়া যায় না যে, তিনি একদিনও রসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে হাযির হয়েছিলেন কিংবা তার সাথে মিলিত হয়েছিলেন। এ সম্পর্কে হাকীম (র) কর্তৃক যে শোকবাণী সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত রয়েছে, তার সূত্র খুবই দুর্বল। পরবর্তীতে খিযির (আ) সম্বন্ধে স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করা হবে।
মূসা (আ)-এর কাহিনী সম্বলিত পরীক্ষার হাদীস
ইমাম আবু আবদুর রহমান নাসাঈ (র) তাঁর ‘সুন্নানের’ কিতাবুত তাফসীরে কুরআন মজীদের সূরায়ে তা-হার ৪০ নং আয়াতের তাফসীরে ৩, -, ৭। এ-এ–? বা পরীক্ষার হাদীস বর্ণনা করেন।
وقتلت نفسا فنجيناك من الغم وفتنالك فتونا – 3 08ع تآكTRITت ‘আর তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলো; অতঃপর আমি তোমাকে দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দেই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করেছি।’ আর সে হাদীসটি হচ্ছে নিম্নরূপ :
আব্দুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মদ (র) হতে বর্ণিত। তিনি সাঈদ ইব্ন জুবোয়র (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি একদিন আয়াতাংশ L· · · এJU’,’;;;-এর তাফসীর প্রসঙ্গে ইব্ন আব্বাস (রা)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘ফুতুন’ কি? আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বললেন, ‘হে ইব্ন জুবায়র! দিন ফুরিয়ে আসছে ৩,১৭১। সম্বন্ধে একটি সুদীর্ঘ হাদীস রয়েছে। বর্ণনাকারী বললেন, পরদিন সকালে সে প্রতিশ্রুত ফুতুন সংক্রান্ত হাদীসটি শোনার জন্যে আমি আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা)-এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন : ইবরাহীম (আ)-এর বংশে আল্লাহ তা’আলা যে নবীগণ ও রাজ-রাজড়ার উদ্ভব ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে ফিরআউন ও তার পরামর্শদাতারা আলোচনায় বসে। তাদের কেউ কেউ বলল, বনী ইসরাঈলরা এটা সম্বন্ধে কোন সন্দেহ পোষণ করে না। তাই তারা এটার জন্যে অপেক্ষা করছে। তারা ধারণা করেছিল যে, ইউসুফ ইব্ন ইয়াকুব (আ) সেই প্রতিশ্রুত নবী। কিন্তু যখন তিনি ইনতিকাল করলেন, তখন তারা বলল, ইবরাহীম (আ)-কে এরূপ ওয়াদা দেয়া হয়নি।
ফিরআউন বলল, তোমাদের অভিমত কি? অতঃপর তারা পরামর্শ করল এবং এ কথার উপর একমত হল যে, ফিরআউন কিছু সংখ্যক লোককে বড় বড় ছুরিসহ পাঠাবে। তারা বনী ইসরাঈলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে যখনই কোন ছেলে সন্তান পাবে, তখনই তাকে হত্যা করবে। তারা কিছুদিন যাবত এরূপ করল। অতঃপর যখন তারা দেখল যে, বনী ইসরাঈলের বৃদ্ধর মৃত্যুর কারণে এবং ছোটরা হত্যার কারণে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা বলাবলি করতে লাগল যে, এভাবে বনী ইসরাঈলরা ধ্বংস হয়ে গেলে যে সব দৈহিক শ্রম ও সেবার কাজ তারা করত। তা ভবিষ্যতে কিবতীদেরকে করতে হবে, তাই তারা পুনরায় স্থির করল যে, এক বছর প্রতিটি ছেলে সন্তান হত্যা করা হবে এবং পরের বছর তাদের কাউকে হত্যা করা হবে না। নবজাতকগুলো বড় হয়ে বৃদ্ধদের মধ্যে যারা মারা যাবে তাদের স্থান পূরণ করবে। আর বৃন্ধর সংখ্যায় যাদের
জীবিত রাখা হচ্ছে, তাদের চেয়ে অধিক হবে না। মোটকথা, প্রয়োজনীয় কমীদের সংখ্যা পূর্বের মত থাকবে, তাতে হত্যার দ্বারা কোন প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না। সুতরাং এই সিদ্ধান্তে তারা একমত হল। যে বছর নবজাতকদের হত্যা করা হবে না, সে বছরই মূসা (আ)-এর মা হারূন (আঃ)-কে নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা হন এবং তিনি নিবিয়ে নবজাতক হারূন (আ)-কে জন্ম দেন। পরবর্তী বছর তিনি মূসা (আ)-কে গর্ভে ধারণ করেন। তাই তাঁর অন্তরে ভীতি ও দুশ্চিন্তার উদ্রেক হল। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, হে ইব্ন জুবায়র! এটা ছিল ‘ফুতুন’ বা পরীক্ষাসমূহের একটি। মাতৃগর্ভে থাকতেই আল্লাহর ইচ্ছায় মূসা (আ)-কে এই পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়।
আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-এর মায়ের কাছে ইলহাম করলেন যে, তুমি ভীত হবে না ও চিন্তাগ্রস্ত হবে না, আমি তাকে আবার তোমার কাছে ফেরত পাঠাব এবং তাকে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করব। আল্লাহ তা’আলা তখন তাঁকে নির্দেশ দিলেন যে, যখন তুমি তাকে প্রসব করবে: তখন তাকে একটি সিন্দুকে পুরে নদীতে ভাসিয়ে দেবে। যখন তিনি মূসা (আ)-কে প্রসব করেন। তখন সে মতে কাজ করেন। সন্তান যখন মার কাছ থেকে দূরে সরে গেল, তখন তার কাছে শয়তান আগমন করল। মা মনে মনে বলতে লাগলেন, হায়! আমার ছেলেকে আমি কী করলাম। যদি আমার সামনে ছেলেকে যবোহ করা হত, আমি তাকে দাফন-কাফন করতে পারতাম। তাহলে ছেলেটিকে সাগরের প্রাণী ও মাছের খাদ্য হিসেবে নদীতে ফেলে দেয়া থেকেআমার কাছে অধিকতর প্রিয় হতো। পানির স্রোত সিন্দুকটিকে প্রায় নদীমুখে নিয়ে গেল, যেখান থেকে ফিরআউনের স্ত্রীর বঁাদীরা পানি উঠিয়ে নিয়ে যেতো। যখন তারা সিন্দুকটি দেখতে পেল, তখন এটা তারা উঠিয়ে নিল এবং খুলতে চাইল। তাদের একজন বলল, ‘এটার ভেতরে যদি কোন সম্পদ থাকে। আর আমরা এটা খুলি তাহলে এটাতে আমরা যা পাব ফিরআউনের স্ত্রী তা বিশ্বাস নাও করতে পারেন।’ সুতরাং তারা যেরূপ পেলো হুবহু সে অবস্থায় এটাকে ফিরআউনের স্ত্রীর কাছে নিয়ে হাযির করল। ফিরআউনের স্ত্রী যখন সিন্দুকটি খুললেন তাতে একটি নবজাতক শিশুকে দেখতে পেলেন এবং তার অন্তরে শিশুটির প্রতি এক অভূতপূর্ব স্নেহের উদ্রেক হল। অন্যদিকে মূসা (আ)-এর মা অস্থির হয়ে পড়লেন এবং তার মনে শুধু মূসা (আ)-এর স্মৃতিই ভাসতে লাগল। জল্লাদেরা যখন এ নবজাতকটির কথা শুনতে পেল তখন তারা তাকে যবোহ করার জন্যে ফিরআউনের স্ত্রীর কাছে ছুরি নিয়ে ছুটে আসল। আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বললেন, হে ইব্ন জুবায়র! এটাও ছিল সে ফুতুন বা পরীক্ষাসমূহের অন্যতম।
ফিরআউনের স্ত্রী জল্লাদদের বললেন, ফিরআউন না। আসা পর্যন্ত একে ছেড়ে দাও। এই একটি ছেলের জন্যে বনী ইসরাঈল সংখ্যায় বেড়ে যাবে না। তিনি আসলে আমি তার কাছ থেকে তাকে চেয়ে নেবো, যদি তিনি তা মঞ্জর করেন, তাহলে এটা হবে তোমাদের একটা চমৎকার কাজ, আর যদি তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ দেন, তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ থাকবে না। তিনি তখন ফিরআউনের কাছে গেলেন এবং বললেন, এই শিশুটি আমার ও আপনার চোখ জুড়াবে। ফিরআউন বলল, তোমার জন্যে তা হতে পারে, কিন্তু আমার জন্যে নয়, আমার এটার কোন প্রয়োজন নেই। রসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, সে পবিত্র সত্তার শপথ! যার শপথ গ্ৰহণ করা হয়ে থাকে, যদি ফিরআউন মূসা নবজাতককে নয়ন গ্ৰীতিকর রূপে
গ্রহণ করে নিত, যেমন তার স্ত্রী সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, তাহলে তাকে আল্লাহ তা’আলা। সুপথ প্রদর্শন করতেন। যেমন তার স্ত্রীকে করেছিলেন। কিন্তু সে তা থেকে বঞ্চিত থাকে। সুতরাং ফিরআউনের স্ত্রী তার আশে-পাশের প্রতিটি মহিলার কাছে লোক প্রেরণ করে একজন ধাত্রী তালাশ করতে লাগলেন। কিন্তু যে মহিলাই তাকে দুধ পান করাতে আসে কারো স্তন নবজাতক মূসা গ্রহণ করলেন না। তাতে ফিরআউনের স্ত্রী আশংকা করতে লাগলেন যে, হয়তো এই শিশুটি দুধ না খেয়ে মারাই যাবে। তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন।
অতঃপর তিনি এ আশায় তাকে বাজারে ও লোকালয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন যে, হয়তো এই ধরনের কোন ধাত্রী পাওয়াও যাবে, যার স্তন শিশুটি গ্রহণ করবে। কিন্তু শিশুটি কারো স্তনই গ্রহণ করলেন না। অন্যদিকে মূসা জননী ব্যাকুল হয়ে মূসার বোনকে বললেন, তার পিছনে পিছনে যাও এবং খোজ নাও যে, তার কোন সংবাদ পাওয়া যায়। কিনা, সে জীবিত আছে নাকি কোন জীব-জন্তু তাকে খেয়ে ফেলেছে। আর এসময় তিনি তাঁর সন্তান সম্পর্কে তার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতির কথাটি ভুলেই বসেছিলেন। দূর থেকে মূসা (আ)-এর বোন তার দিকে লক্ষ্য রাখছিলেন, কিন্তু লোকজন টের পায়নি। মূসার বোন দেখলেন, কোন ধাত্রীই মূসা (আ)-কে দুধ পান করাতে পারছে না। তখন তিনি অত্যন্ত খুশী হয়ে ধাত্রী অন্বেষণকারীদের বলতে লাগলেন, আমি তোমাদের এমন একটি পরিবারের সন্ধান দিতে পারি, যারা তাকে স্নেহ-মমতা দিয়ে সুচারুরূপে লালন-পালন করার দায়িত্ব নিতে পারে। তারা সব সময়ই তার হিতাকাঙ্ক্ষী হবে। তারা বলতে লাগল, তুমি কেমন করে জানতে পারলে যে, তারা তার হিতাকাজক্ষী হবে, তারা কি তাকে চিনে? এ ব্যাপারে তারা সন্দেহ করতে লাগল। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, হে ইবনে জুবায়র! এটাও ছিল সে পরীক্ষাসমূহের একটা।
মূসার বোন বললেন, তারা তার হিতাকাঙ্ক্ষী ও তার প্রতি সদয়। কেননা, তারা সম্রাটের শ্বশুর পক্ষের সন্তুষ্টি বিধান ও সম্রাটের কাছ থেকে উপকার লাভের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। তার কথায় তারা মুগ্ধ হয়ে মূসার বোনকে তার মায়ের কাছে প্রেরণ করল। তিনি মায়ের কাছে গিয়ে এ সংবাদ দিলেন। তখন তার মা আসলেন। যখন তিনি তাকে আপন কোলে তুলে নিলেন, তখন তিনি মায়ের স্তন চুষতে আরম্ভ করেন ও তৃপ্তিসহকারে দুধ পান করেন। তখন একজন সংবাদদাতা ফিরআউনের স্ত্রীর কাছে গিয়ে এ সুসংবাদ দিলেন যে, আমরা আপনার ছেলের জন্যে ধাত্রী পেয়েছি। ফিরআউনের স্ত্রী মা ও শিশুকে ডেকে পাঠান। তারা তার কাছে গিয়ে পৌছলেন। তিনি যখন তার প্রতি শিশুটির আকর্ষণ লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি এখানে থেকে যাও এবং আমার এই সন্তানকে দুধ পান করাও। কেননা, সে আমার কাছে অতি প্ৰিয়। মা বললেন, আমার সন্তানাদি ও বাড়িঘর ছেড়ে আমি এখানে থাকতে পারি না, তাতে আমার সব কিছু বিনাশ হয়ে যাবে। যদি আপনি ভাল মনে করেন, তাহলে তাকে আমার কাছে সমৰ্পণ করতে পারেন, আমি তাকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে পারি। সে আমার সাথে থাকবে। তার কল্যাণ সাধনে আমার কোন প্রকার ক্রটি হবে না। আমি আমার ঘরবাড়ি ও সন্তানাদি ছেড়ে কোথাও থাকতে পারব না। মূসার মা ঐ মুহুর্তে আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি স্মরণ করে ফিরআউনের স্ত্রীর নিকট অনড় রইলেন এবং নিশ্চিত থাকলেন যে, আল্লাহ তা’আলা। অবশ্যই তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন।
তারপর মূসার মা আপন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তখন থেকে আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে তার মায়ের তত্ত্বাবধানে অতি উত্তম রূপে লালন-পালন করতে লাগলেন এবং তাকে ভাগ্য-নির্ধারিত পন্থায় তাকে হিফাজত করলেন। ইতিপূর্বে বনী ইসরাঈল যেরূপ উপহাস ও জুলুমের শিকার হচ্ছিল তা কিছুটা লাঘব হল এবং তারা শহরের এক প্রান্তে বসবাস করতে লাগল। মূসা (আঃ) যখন আরো বেড়ে উঠলেন, তখন একদিন ফিরআউনের স্ত্রী মূসার মাকে বললেন, ‘একদিন আমাকে তুমি আমার ছেলেটি দেখাবে।’ মূসার মা ছেলেকে দেখাবার জন্যে একটি দিন নির্ধারণ করেন। এদিকে ফিরআউনের স্ত্রী খাজাঞ্চী ধাত্রী ও আমলাদেরকে নির্দেশ দিলেন প্রত্যেকে যেন উপহারসহ তাঁর পুত্র মূসা (আ)-কে সংবর্ধনা জানায়। তিনি অন্য একজন বিশ্বস্ত কর্মচারীকে পাঠালেন, যাতে তাদের মধ্যে কে কি উপহার দেয় তার হিসাব রাখে।
মূসা (আ) মায়ের বাড়ি থেকে বের হবার পর হতে ফিরআউনের স্ত্রীর কাছে পর্যন্ত আসার পথে অসংখ্য উপহার ও উপটৌকন লাভ করেন। ফিরআউনের স্ত্রীর কাছে এসে পৌছলে তিনিও তাকে উপঢৌকনাদি প্ৰদান করলেন এবং অত্যন্ত খুশি হলেন। মূসা (আ)-এর মাকেও তার উত্তম সেবার জন্যে বহু টাকা-পয়সা প্ৰদান করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি মূসা (আ)-কে নিয়ে ফিরআউনের কাছে যাবো, যাতে করে তিনিও তাকে উপঢৌকন প্ৰদান করেন ও তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। যখন ফিরআউনের স্ত্রী মূসা (আ)-কে নিয়ে তার কোলে তুলে দিলেন, তখন মূসা ফিরআউনের দাড়ি ও মাটির দিকে আকর্ষণ করলেন। তখন ফিরআউনকে আল্লাহর শক্ৰ পথভ্রষ্ট পারিষদরা বলল, আপনার কি স্মরণ নেই যে, আল্লাহ তা’আলা তার নবী ইবরাহীম (আ)-কে কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ইবরাহীমের একজন অধঃস্তন বংশধর। আপনার উত্তরাধিকারী হবেন। তিনি আপনার উপর জয়লাভ করবেন ও আপনাকে পরাজিত করবেন। সুতরাং আপনি কসাই জল্লাদের নিকট কাউকে প্রেরণ করেন যাতে তারা এসে তাকে হত্যা করে ফেলে। আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, হে ইব্ন জুবায়র! এটাও ছিল একটা পরীক্ষা।
ফিরআউনের স্ত্রী একথা শুনে ফিরআউনের কাছে দৌড়ে আসলেন এবং বললেন যে, শিশুটি আপনি আমাকে দান করেছেন, এর ব্যাপারে আপনার কী হয়েছে? ফিরআউন বলল, তুমি কি দেখতে পোচ্ছ না যে, এই শিশুটির ধারণা সে আমাকে পরাস্ত করবে ও আমার উপর বিজয়ী হবে। ফিরআউনের স্ত্রী বললেন, আপনি বরং তাকে পরীক্ষা করুন। চলুন আমরা এমন একটি কাজ করি যা থেকে সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে। দু’টি জ্বলন্ত অঙ্গার ও দুটি মুক্তা তার সামনে রেখে দিন যদি সে মুক্তা দু’টি ধরে এবং জুলন্ত অঙ্গার না ধরে, তাহলে বুঝতে হবে যে তার বোধশক্তি আছে। আর যদি জুলন্ত অঙ্গার দু’টি ধরে এবং মুক্তা না ধরে, তাহলে বুঝতে হবে তার এখনও বোধোদয় হয়নি। কেননা বোধশক্তি সম্পন্ন কেউ মুক্তার উপর অঙ্গারকে অগ্রাধিকার দিতে পারে না। সে মতে দু’টি জুলন্ত অঙ্গার ও দুটি মুক্তা তার সামনে রাখা হল। তিনি জ্বলন্ত অঙ্গার ধরলেন। ফিরআউন তার হাত পুড়ে যাবে এ ভয়ে তার হাত থেকে অঙ্গারগুলো সরিয়ে নিল। ফিরআউনের স্ত্রী বললেন, আপনি কি লক্ষ্য করছেন না?
শিশু মূসা মুক্তা ধরার জন্যে ইচ্ছে করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তা থেকে তাকে ফিরিয়ে রাখলেন। আল্লাহ তা’আলা তার সিদ্ধান্ত কার্যকরী করেই থাকেন। মূসা (আঃ) যখন
যৌবনে পদার্পণ করলেন, তখন ফিরআউন সম্প্রদায়ের কারো পক্ষে বনী ইসরাঈলের প্রতি কোনরূপ জুলুম বা কটাক্ষ করার উপায় ছিল না। এখন বনী ইসরাঈল পুরোপুরি বিরত থাকে। একদিন মূসা (আ) শহরের এক প্রান্ত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, অমনি দেখলেন যে, দুইটি লোক একে অপরের সাথে ঝগড়া করছে। এদের একজন কিবতী ও অন্য একজন ইসরাঈলী। মূসা (আ)-কে দেখে ইসরাঈলীটি তার কাছে কিবতীর বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করল। তাতে মূসা (আ) অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। কেননা, কিবতীটি ইসরাঈলীদের মধ্যে মূসা (আ)-এর অবস্থান এবং তিনি ইসরাঈলীদের হিফাজত করে থাকেন তা জানতো। যদিও অন্য কারে। তা জানা ছিল না। তখন মূসা (আ) কিবতীটিকে একটি ঘুষি দিলেন। ফলে সে মারা গেল। ইসরাঈলী ও আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এই হত্যুর বৃপ্তিরটি দেখতে পৃঢ়নি। যখন লােকটি মারা গেল, তখন মূসা (আ) বললেন, অর্থাৎ—এটা শয়তানের কাণ্ড! সে তাে প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী। (কাসাস : S@)
অতঃপর তিনি বলেন, :
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি জুলুম করেছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর। অতঃপর তাকে ক্ষমা করলেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সে আরো বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হবো না। অতঃপর ভীত সতর্ক অবস্থায় সেই নগরীতে তার প্রভাত হল। (সূরা কাসাস : ১৬-১৮)
ফিরআউনের কাছে তার সম্প্রদায় সংবাদ পৌছোল যে, বনী ইসরাঈলরা ফিরআউন সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। হে ফিরআউন! আমাদের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করুন, আমরা তাদেরকে ক্ষমা করব না। ফিরআউন বলল, হত্যাকারীকে তোমরা খুঁজে বের করে দাও, সাক্ষী উপস্থিত করো। কেননা, সম্রাট তার সম্প্রদায়কে ভালবাসলেও বিনা সাক্ষ্য-প্রমাণে তাদের জন্যে কাউকে হত্যা করা তার পক্ষে সমুচিত হবে না। সুতরাং তাকে খোজ করে বের করা: আমি এর প্রতিশোধ নেব। তারা খুঁজতে লাগল। কিন্তু তারা কোন প্রমাণ খুঁজে পেল না। পরের দিন মূসা (আ) উক্ত ইসরাঈলীকে দেখতে পেলেন, সে অন্য একজন কিবতীর সাথে ঝগড়া করছে। মূসা (আ)-কে দেখে সে পূর্বের দিনের মত কিবতীটির বিরুদ্ধে মূসা (আ)-এর কাছে ফরিয়াদ করল। মূসা (আ) অগ্রসর হলেন। কিন্তু আগের দিন যেই ঘটনা ঘটে গেছে তার জন্য খুবই লজ্জিত ছিলেন এবং আজকের দৃশ্যও অপছন্দ করতে লাগলেন। এদিকে ইসরাঈলীটি খুবই রাগান্বিত হয়ে কিবতীকে আক্রমণ করতে উদ্যত গীতদিনের ও আজকের কাজের জন্য মূসা (আ) ইসরাঈলীকে লক্ষ্য করে বললেনঃ ওঁ,44 441…। অর্থাৎ তুমি তাে স্পষ্টই একজন বিভ্ৰান্ত ব্যক্তি।
ইসরাঈলীটি মূসা (আ)-এর প্রতি তাকাল। মূসা (আ)-এর কথা শুনে এবং আগের দিনের ন্যায় রাগান্বিত অবস্থায় দেখে সে ঘাবড়ে গেলো এবং ভয় করতে লাগলো যে, তাকে স্পষ্টই একজন বিভ্রান্ত ব্যক্তি বলার পর হয়ত মূসা (আ) তাকেই আক্রমণ করতে পারেন। অথচ তিনি কিবতীকে আক্রমণ করতেই উদ্যত ছিলেন। ইসরাঈলীটি মূসা (আ)-কে লক্ষ্য করে বললঃ হে মূসা গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাও? তাকে হত্যা করার জন্যে মূসা (আ) আক্রমণ করছেন ভেবেই সে এ কথাটি বলল। ততক্ষণে তারা দু’জন ঝগড়া থেকে ক্ষান্ত হল। কিন্তু কিবতীটি তার সম্প্রদায়ের কাছে ইসরাঈলীর মুখে শোনা হত্যা তথ্যটি জানিয়ে দিল। এই কথা শুনে ফিরআউন জল্লাদদের মূসা (আ)-কে হত্যার জন্যে প্রেরণ করল। ফিরআউন প্রেরিত জল্লাদরা রাজপথ ধরে ধীর গতিতে মূসা (আ)-এর দিকে অগ্রসর হতে লাগল। মূসা (আ) তাদের হাতছাড়া হয়ে গেল এরূপ কোন আশংকা তাদের ছিল না। অতঃপর মূসা (আ)-এর দলের একজন লোক শহরের প্রান্ত থেকে সংক্ষিপ্ত পথ ধরে তাদের পূর্বেই মূসা (আ)-এর কাছে পৌঁছে। এ সংবাদটি দিল। আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, হে ইব্ন জুবোয়র (রা)। মূসা (আ)-এর জন্য এটাও ছিল একটি পরীক্ষা।
মূসা (আঃ) তখন মাদায়ান শহরের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। ইতিপূর্বে মূসা (আ) এ ধরনের কোন পরীক্ষার শিকার হননি এবং এ রাস্তায়ও চলাচল করেন নি। কাজেই এই রাস্তা ছিল তার অপরিচিত। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার ওপর ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস ও অটল ভরসা।
প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করবেন।
এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে :
অর্থাৎ— যখন সে মাদায়ানের কূপের নিকট পৌছল, দেখল একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে এবং ওদের দুটি স্ত্রীলোক তাদের পশুগুলোকে আগলাচ্ছে অর্থাৎ ছাগলগুলোকে।
মূসা (আ) তাদের দু’জনকে বললেন, তোমাদের কী ব্যাপার? তোমরা পৃথক হয়ে বসে আছ, লোকজনের সাথে পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছ না? তারা দু’জন বললেন, ‘জনতার ভিড় ঠেলার শক্তি আমাদের নেই। আমরা তাদের পান করাবার পর উচ্ছিষ্ট পানির অপেক্ষা করছি।’ মূসা (আ) তাদের দুজনের বকরীগুলোকে পানি পান করালেন। তিনি বালতি দিয়ে এত বেশি পানি উঠাতে সক্ষম হলেন যে, তিনিই রাখালদের অগ্রবতী হয়ে গেলেন। এরপর দু’জন মহিলা তাদের বকরীগুলো নিয়ে তাদের বৃদ্ধ পিতার কাছে পীেছলেন। অন্যদিকে মূসা (আ) গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলেন এবং বলতে লাগলেন ৪ – ৩৫, ৯ ৫৯ ৬৮, ৩ এ.
অর্থাৎ—’হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবে। আমি তার কাঙ্গাল।’ আজ বকরীগুলোকে নিয়ে দেরি না করে দ্রুত পৌছায় তাদের পিতার কাছে কেমন কেমন (১ম খণ্ড) ৮৫—
ঠেকছিল। তাই বললেন, : আজকে তোমাদের ব্যাপার কী? তখন তারা দু’জনেই মূসা (আ) সম্বন্ধে তাদের পিতাকে অবহিত করল। তাঁকে ডেকে আনার জন্যে পিতা একজনকে মূসা (আ)-এর কাছে পাঠালেন। তাদের একজন মূসা (আ)-এর কাছে গিয়ে তাকে ডেকে আনলেন। মূসা (আ) যখন মহিলাদের পিতার সূথে আলোচনা করলেন, তখন তিনি মূসা (আ)-কে অভয় 5846 37311035 if617ن ذي-s fisة نجوت ومن القوم الظالمين : 1910515- fa03 হতে বেঁচে গিয়েছ। আমাদের এখানে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের কোন কর্তৃত্ব নেই। আমরা তার রাজত্বে বাস করি না।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—’তাদের একজন বলল, হে পিতা! তুমি তাকে মজুব নিযুক্ত করা। কারণ, তোমার মজুর হিসাবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী-বিশ্বস্ত।’ পিতাকে তাঁর মর্যাদাবোধ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য করল যে, তুমি কেমন করে জানলে যে, সে শক্তিশালী এবং আমানতদার? মেয়েটি বলল, তার শক্তির বিষয়ে প্রমাণ এই যে, পানি পান করানোর ক্ষেত্রে বালতি টানার ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী আমি কাউকে দেখিনি। আমানতদারীর বিষয়ে প্রমাণ এই যে, আমি যখন তার কাছে গিয়ে পরিচয় দিলাম, তখন তিনি একবার আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। যখন তিনি আৗচ করতে পারলেন আমি একজন মহিলা, তখন তিনি তার মাথা নীচু করলেন। আপনার সংবাদ তার কাছে না পৌছানো পর্যন্ত তিনি আর মাথা উঠিয়ে তাকাননি। অতঃপর আমাকে বললেন, তুমি আমার পেছনে চলবে এবং রাস্তার নির্দেশনা দেবে। তাঁর এ কাজের দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি আমানতদার। পিতার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল, মেয়ের কথার সত্যতাও প্রমাণিত হল এবং মেয়ের বক্তব্য অনুযায়ী মূসা (আ) সম্বন্ধে তিনি তাঁর অভিমত নির্ধারণ করলেন। তিনি তখন মূসা (আ)-কে উদ্দেশ করে বললেন :
‘আমি আমার এই কন্যা দু’টির একটি তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার কাজ করবে। যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, সে তোমার ইচ্ছে। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ চাহেতো তুমি আমাকে,সদাচারী পাবে।’ (সূরা কাসাস : ২৭)
তিনি এ প্রস্তাবে রাষী হলেন। আট বছর কাজ করা ছিল মূসা (আ)-এর উপর অপরিহার্য। আর দুই বছর ছিল তার পক্ষ থেকে অঙ্গীকার। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে পূর্ণ দশ বছরের মেয়াদ পালনের তাওফীক দেন। সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রা) বলেন, ‘একদিন এক খৃস্টান পণ্ডিত আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘তুমি কি জান, মূসা (আ) কোন মেয়াদটি পূর্ণ করেছিলেন?’ তখন আমি জানতাম না, তাই বললাম, না, আমি জানি না।’ এরপর আমি আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং এ সম্পর্কে আমি তার সাথে আলোচনা করলাম। তিনি
ՆԳ(:
বললেন, তুমি কি জান না যে, আট বছর পূর্ণ করা আল্লাহর নবীর উপর ওয়াজিব ছিল। তিনি কোনক্রমেই তার থেকে কম করতে পারতেন না। তুমি জেনে রেখ, আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-এর দ্বারা ওয়াদা মুতাবিক দশ বছরের মেয়াদ পূরণ করান। অতঃপর আমি উক্ত খৃস্টানের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে সংবাদটি দিলাম, তখন সে বলল, ‘তোমাকে এ ব্যাপারে যে সংবাদ দিয়েছে সে কি তোমা থেকে বেশি জ্ঞানী?’ উত্তরে আমি বললাম, ‘হ্যা, তিনি শ্রেষ্ঠ ও অগ্রগণ্য।’
মূসা (আঃ) যখন তাঁর পরিবার নিয়ে রওয়ানা হলেন, তখন আগুন, লাঠি ও হাতের মু’জিযা প্রকাশিত হল— যা আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনুল করীমে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর মূসা (আ) নিহত ব্যক্তি ও মুখের জড়তা সম্পর্কে ফিরআউন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যে আশঙ্কা পোষণ করতেন, সে সম্বন্ধে তিনি আল্লাহ তা’আলার দরবারে ফরিয়াদ করেন। মুখের জড়তা অনর্গল কথাবার্তা বলার ব্যাপারে কিছুটা অন্তরায় সৃষ্টি করত। তাই তিনি তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থীনা করলেন যেন আল্লাহ তা’আলা তার ভাই হারূনের মাধ্যমে তার সাহায্য করেন। তার পক্ষ থেকে হারূন (আ.) প্রাঞ্জল ভাষায় জনগণের সাথে কথা বলেন, যেখানে মূসা (আঃ) তাদের সাথে অনর্গল কথা বলতে অপারক। আল্লাহ তা’আলা তার দরখাস্ত মঞ্জর করলেন। তার মুখের জড়তা দূর করে দিলেন, হারূন (আ.)-এর কাছে ওহী প্রেরণ করলেন ও তাকে হুকুম দিলেন যেন তিনি তাঁর ভাই মূসা (আ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। মূসা (আ) আপনি লাঠিসহ ফিরে আসলেন। শেষ পর্যন্ত হারান (আ.)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়।
অতঃপর দু’জন একত্রে ফিরআউনের কাছে গমন করলেন এবং তার ফটকে বহুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করলেন। কিন্তু তাদেরকে অনুমতি দেয়া হল না। কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করে তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হল। তাঁরা বললেন, আমরা তোমার প্রতিপালকের দৃত। ফিরআউন বলল, তোমাদের প্রতিপালক কে? তারা তার উত্তর প্রদান করেন, যার বর্ণনা কুরআনুল করীমে রয়েছে। ফিরআউন বলল, ‘তোমরা কী চাও?’ প্ৰসঙ্গক্রমে সে ইত্যবসরে হত্যার কথাও উল্লেখ করল। হত্যার ব্যাপারে ওযর পেশ করে মূসা (আঃ) বলেন, আমি চাই যে, তুমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে যেতে দেবে। ফিরআউন তা অস্বীকার করল এবং বলল, যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে কোন মু’জিযা প্রদর্শন কর। তখন তিনি তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন। আমনি তা একটি বিরাট অজগরে পরিণত হল, যা বিরাট হা মেলে ফিরআউনের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়। ফিরআউন যখন দেখল। অজগরটি তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, সে ভয় পেয়ে গেল এবং সিংহাসন থেকে লাফিয়ে পড়ল। মূসা (আ)-এর কাছে এটাকে ফিরিয়ে রাখার জন্যে ফরিয়াদ করতে লাগল। তখন মূসা (আঃ) তা-ই করলেন। অতঃপর মূসা (আঃ) তার হাত বগলের নীচ থেকে বের করলেন। ফিরআউন এটাকে শুভ্ৰসমুজ্জ্বল নির্দোষ ও শ্বেত রোগে আক্রান্ত নয় দেখতে পেল। তিনি আবার হাত ভিতরে নিয়ে নিলেন। এটা অমনি পূর্বের রঙ ধারণ করল। ফিরআউন যা দেখল তা নিয়ে তার পারিষদবর্গের সাথে
সালাপরামর্শ করল। তখন তারা বলল ৪
‘এ দু’জন অবশ্যই জাদুকর, তারা চায় তাদের জাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে।’
অর্থাৎ তোমাদের রাজত্ব এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য থেকে তোমাদেরকে বিতাড়িত করতে। এভাবে মূসা (আ) যা চেয়েছিলেন ফিরআউন ও তার পারিষদবর্গ তার কিছুই দিতে রায়ী হল না।
জাদুকর একত্রিত হবার জন্যে আপনি নির্দেশ দেন, যাতে তারা তাদের দু’জনের উপস্থাপিত জাদুকে পরাজিত করতে পারে।’ অতঃপর ফিরআউন বিভিন্ন শহরে জাদুকর সংগ্ৰহকারী পাঠাল, যাতে তারা উচুমানের জাদুকরদের ডেকে আনে। যখন তারা ফিরআউনের কাছে আসল তখন বলতে লাগল, কি দিয়ে তিনি জাদু দেখান? পারিষদবৰ্গ বলল, ‘সাপ দিয়ে।’ তখন তারা বলল, আল্লাহর শপথ, তাহলে তারা উভয়ে আমাদের উপর জয়লাভ করতে পারবে না। কেননা, পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যে আমাদের ন্যায় সাপ, রশি ও লাঠি দিয়ে আমাদের চাইতে উত্তম জাদু দেখাতে পারে। তবে যদি আমরা তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারি, তাহলে আমাদের পুরস্কার কী হবে? ফিরআউন তাদেরকে বলল, ‘তাহলে তোমরা আমার নৈকট্য লাভকারী ও বিশিষ্ট সভাষদবর্গের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর তোমরা যা চাইবে তা-ই আমি তোমাদেরকে দেবো।’ এভাবে তারা ফিরআউন থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করল ও উৎসবের দিন নির্ধারিত করল, যে দিন পূর্বাহে জনগণকে সমবেত করা হবে।
সাঈদ ইব্ন জুবোয়র (রা) বলেন, আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) আমার কাছে বর্ণনা করেন, উৎসবের দিনেই আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে ফিরআউন ও তার জাদুকরদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেছিলেন। আর সেই দিনটি ছিল আশুরার দিন। যখন তারা একটি মাঠে সমবেত হলো, তখন লোকজন বলাবলি করতে লািগল—চল, আজ আমরা তাদের এই প্রতিযোগিতা দেখার জন্যে উপস্থিত হই এবং উপহাস ছলে বলতে লাগল, ‘যদি নতুন জাদুকররা (মূসা ও হারূন) জয়লাভ করে তাহলে আমরা তাদের অনুসরণ করবো। জাদুকরগণ বলল, ‘হে মূসা! হয় তুমি প্রথমে নিক্ষেপ কর, নতুবা আমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করি।’ মূসা (আ) বললেন, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর।’ তখন তারা তাদের দড়ি ও লাঠি নিক্ষেপ করল ও বলতে লাগল, ‘ফিরআউনের ইযযতের শপথ, আমরাই জয়ী হব।’ মূসা (আঃ) তাদের জাদু প্ৰত্যক্ষ করলেন ও তাতে তিনি তাঁর অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলেন। তাঁর কাছে আল্লাহ তা’আলা ওহী পাঠালেন, ‘হে মূসা! তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর।’ যখন তিনি তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন, তখন তা একটি বিরাট অজগরে পরিণত হল, যা হা করে থাকে। সে লাঠি ও দড়িগুলোকে একত্র মিশিয়ে সবগুলোকে তার মুখে পুরতে লাগল। এমনকি কোন লাঠি বা দড়িই অবশিষ্ট রইল না। জাদুকররা যখন ঘটনার যথার্থতা বুঝতে পারল, তখন তারা বলতে লাগল, মূসা (আ)-এর ব্যাপারটি যদি জাদু হত তাহলে আমাদের জাদুকে এটা কখনও গ্রাস করতে পারত না। এটা নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে। কাজেই আমরা আল্লাহ তা’আলার প্রতি ও মূসা (আ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করলাম, আমরা পূর্বে যা কিছু পাপ করেছি। তার থেকে তাওবা করলাম।’ এভাবে আল্লাহ তা’আলা উক্ত জনপদে ফিরআউন ও তার পারিষদবর্গের শক্তি চূৰ্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন।
সত্য প্রতিষ্ঠিত হল এবং তাদের সমস্ত কার্যকলাপ মিথ্যা প্রতিপন্ন হল। তারা পরাভূত হল ও অপদস্থ হল। অন্যদিকে ফিরআউনের স্ত্রী ছিন্ন বসন পরিহিতা অবস্থায় বের হলেন এবং ফিরআউন ও ফিরআউনীদের বিরুদ্ধে মূসা (আ)-এর সাহায্যের জন্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করতে লাগলেন। ফিরআউনের গোত্রের যারা তাকে দেখল তারা মনে করতে লাগল যে, তিনি ফিরআউন ও ফিরআউনীদের জন্যে সহানুভূতি প্রদর্শনার্থে ছিন্ন বসন পরেছেন। আসলে তার সমস্ত চিন্তা-ভাবনা ছিল মূসা (আ)-এর জন্যেই। মূসা (আ)-এর সাথে কৃত ফিরআউনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বিষয়টি দীর্ঘায়িত হতে লাগল। বনী ইসরাঈলকে মূসা (আ)-এর কাছে প্রত্যার্পণ করার জন্যে যখনই ফিরআউন কোন নিদর্শন প্রদর্শন করার শর্ত আরোপ করতো এবং মূসা (আ)-এর দু’আয় আল্লাহর পক্ষ থেকে নিদর্শন প্ৰকাশিত হতো, তখনই ফিরআউন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বলতো, ‘হে মূসা! তোমার প্রতিপালক কি এটা ব্যতীত অন্য একটি নিদর্শন আমাদের জন্যে প্রদর্শন করার ক্ষমতা রাখেন?’
এরূপ বার বার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণে আল্লাহ তা’আলা ফিরআউনের সম্প্রদায়ের প্রতি স্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে পর্যায়ক্রমে তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ভেক ও রক্ত আযাবরূপে পাঠান। প্রত্যেকটি মুসীবত অবতীর্ণ হলে ফিরআউন মূসা (আ)-এর কাছে ফরিয়াদ করত এবং তা দূর করার জন্যে মূসা (আঃ)-কে অনুরোধ করত যে, মুসীবত দূর হয়ে গেলে সে বনী ইসরাঈলকে মূসা (আ)-এর কাছে প্রত্যাৰ্পণ করবে। আবার যখনই মুসীবত দূর হয়ে যেত, তারপর দিনই সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করত। শেষ পর্যন্ত আপন সম্প্রদায়সহ উক্ত জনপদ ত্যাগ করার জন্যে মূসা (আ)-এর প্রতি আল্লাহর নির্দেশ আসল। মূসা (আঃ) তাদেরকে নিয়ে রাতের বেলা রওয়ানা হয়ে পড়লেন। প্রত্যুষে ফিরআউন টের পেল যে, বনী ইসরাঈলরা চলে গেছে। তখন সে বিভিন্ন শহরে লোক পাঠাল এবং বিরাট এক সৈন্যদল নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করল। এদিকে আল্লাহ তা’আলা সমুদ্রকে হুকুম দিলেন, আমার বান্দা মূসা (আ) তোমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করবে, তখন তুমি বারটি খণ্ডে খণ্ডিত হয়ে যাবে, যাতে মূসা ও তার সাথীরা নির্বিঘ্নে পার হয়ে যেতে পারে। অতঃপর তুমি ফিরআউন ও তার সাখীদেরকে গ্রাস করে ফেলবে।
লাঠি দিয়ে সমুদ্রকে আঘাত করতে মূসা (আঃ) ভুলে গেলেন ও সমুদ্রের পাড়ে পেঁৗছে গেলেন। মূসা (আঃ) তাঁর লাঠি দ্বারা আঘাত করবেন। আর সে গাফিল থাকবে, যার কারণে সে হবে আল্লাহ তা’আলার কাছে নাফরমান- এই ভয়ে সাগর উত্তাল ছিল। যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল ও নিকটবতী হল, মূসা (আ)-এর সাথিগণ তাকে বলল, আল্লাহ। আপনার প্রতিপালক, আল্লাহ তা’আলা যা হুকুম করেন। তাই করুন, নচেৎ আমরা ধরা পড়ে যাব। তিনি মিথ্যা বলেননি এবং আপনিও আমাদেরকে মিথ্যা বলেননি। মূসা (আঃ) বলেন, আমার প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমি যখন সমুদ্রের কিনারায় আসব, তখন তা বার ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে যাতে আমি নির্বিয়ে সমুদ্র পার হয়ে যেতে পারি। অতঃপর লাঠির কথা স্মরণে আসল, তখন তিনি আপনি লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করলেন। এরপর যখন ফিরআউনের সেনাবাহিনীর অগ্রভাগ মূসা (আ)-এর সেনাবাহিনীর পশ্চাৎভাগের নিকটবতী হলো, সমুদ্র তার প্রতিপালকের নির্দেশ অনুযায়ী ও মূসা (আ)-এর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বিভক্ত হয়ে গেল। যখন মূসা (আ) ও তার সাথিগণ সকলেই সমুদ্র পার হলেন এবং ফিরআউন ও তার সাথীরা সমুদ্রে
প্রবেশ করল, নির্দেশ মোতাবেক সমুদ্র দু’দিক থেকে মিশে গিয়ে তাদের ডুবিয়ে দিল। আবার মূসা (আঃ) যখন পার হয়ে গেলেন, তখন তার সাথিগণ বলতে লাগল, আমাদের আশংকা হচ্ছে ফিরআউন হয়তো ডুবেনি। আমরা তার ধ্বংসের ব্যাপারে সুনিশ্চিত নই।
মূসা (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের কাছে। এ ব্যাপারে দু’আ করলেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা। ফিরআউনের শরীর সমুদ্র থেকে বের করে দিলেন যাতে তারা ফিরআউনের ধ্বংসের ব্যাপারে নিশ্চিত হল। অতঃপর বনী ইসরাঈলরা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে আগমন করলেন যাদের
ইবাদতের জন্যে প্রতিমা রয়েছে, তখনু তারা মূসা (আ)-কে বলতে লাগল?
তারা বলল, ‘হে মূসা’! তাদের দেবতার ন্যায় আমাদের জন্যেও এক দেবতা গড়ে দাও।’ তিনি বললেন, তোমরা তো এক মূর্থ সম্প্রদায়, এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত হবে এবং তারা যা করছে তাও অমূলক।’ (সূরা আ’রাফ : ১৩৮)
অর্থাৎ-হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তো সমুদ্র পার হওয়ার ব্যাপারটি নিজ চক্ষে প্ৰত্যক্ষ করলে এবং নিজ কানেও শুনলে, যা তোমাদের পক্ষে আল্লাহর কুদরত অনুধাবন করার জন্যে যথেষ্ট।
অতঃপর মূসা (আ) পথ চলতে লাগলেন এবং তাদেরকে নিয়ে অবতরণ করলেন ও বলতে লাগলেন, তোমরা হারূন (আ.)-এর আনুগত্য করবে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন। আমি আমার প্রতিপালকের সমীপে যাচ্ছি এবং ত্ৰিশ দিন পর আমি তোমাদের কাছে ফিরে আসব। মূসা (আঃ) যখন তার প্রতিপালকের সাথে ত্রিশ দিনের মধ্যে কথাবার্তা বলার ইচ্ছে করলেন ও ত্রিশ দিন-রাত রোযা রাখলেন, তখন তিনি রোযাদারের মুখের গন্ধের ন্যায় গন্ধ অনুভব করলেন এবং আপন প্ৰতিপালকের সাথে এ গন্ধ নিয়ে কথাবার্তা বলা অপছন্দনীয় মনে করলেন। তাই মূসা (আ) একটি গাছের ডাল নিয়ে চিবালেন যাতে মুখের দুৰ্গন্ধ দূর হয়ে যায়। মূসা (আঃ) যখন আল্লাহর সমীপে পৌছলেন, তখন তার প্রতিপালক তাকে বললেন, তুমি রোযা কেন ভঙ্গ করলে? অথচ কেন তিনি এরূপ করেছিলেন এ ব্যাপারে তিনিই অধিক জ্ঞাত ছিলেন। মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! সুগন্ধিযুক্ত মুখ নিয়ে ছাড়া আপনার সাথে কথাবার্তা বলা আমার অপছন্দনীয় ছিল।’ আল্লাহ তা’আলা বললেন, ‘হে মূসা! তুমি কি জান না, রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশকের গন্ধের চেয়ে শ্রেয়? কাজেই তুমি ফেরত যাও, আরো দশটি রোযা রাখা এবং তারপর আসা।’ প্রতিপালক যা নির্দেশ দিলেন মূসা (আ) उठा-३ कद्धएलन।
এদিকে মূসা (আ)-এর সম্প্রদায় যখন দেখতে পেল যে, মূসা (আ) নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ত্রিশদিনের মধ্যে ফেরত আসছেন না, এটা তাদের কাছে খুবই খারাপ লাগল। হারূন (আ.) বনী ইসরাঈলদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমরা মিসর থেকে বের হয়ে এসেছ অথচ তোমাদের কাছে ফিরআউন সম্প্রদায়ের দেয়া ও আমানতের প্রচুর বস্তু রয়েছে। অনুরূপভাবে তোমাদেরও প্রচুর বস্তু তাদের কাছে রয়েছে। আমার মতামত হচ্ছে, তাদের কাছে তোমাদের যে পরিমাণ বস্তু
রয়েছে, সে পরিমাণ তােমরা হিসাব করে রেখে দিতে পোর, তবে তাদের ধার দেয়া বস্তু তোমাদের কাছে তাদের আমানতী বস্তু, আমি তোমাদের জন্য হালাল মনে করি না। আর আমরা তাদের কোন বস্তু তাদের কাছে ফেরত পাঠাতে পারছি না। অন্যদিকে আমরা তাদের
কোন বস্তু নিজেরাও ভোগ করতে পারছি না। হারূন (আ) একটি গর্ত খুঁড়তে হুকুম দিলেন, যখন একটি বিরাট গর্ত খোড়া হল, তখন তিনি সম্প্রদায়ের সকলকে তাদের কাছে মজুদ জিনিসপত্র ও অলংকারাদি গর্তে নিক্ষেপ করতে আদেশ করলেন। অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে তা পুড়িয়ে দেয়া হল। হারূন (আঃ) বললেন, এ সম্পদ আমাদেরও নয় এবং তাদেরও নয়।
সামিরী ছিল বনী ইসরাঈলের পড়শী এমন এক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত যারা গরু পূজা করত। সে বনী ইসরাঈলের লোক ছিল না। মূসা (আ) ও বনী ইসরাঈলের সাথে সমুদ্র পাড়ি দেবার সময় সে জিবরাঈলের ঘোটকীর পায়ের ধুলা দেখতে পেয়ে এক মুষ্টি তুলে নিয়েছিল। এখন সে হাররূন (আ)-এর কাছে গেল। হারূন (আ) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, : ‘হে সামিরী! তোমার মুষ্ঠির মধ্যে যা রয়েছে তুমি কি তা অগ্নিতে নিক্ষেপ করবে না?’ সে সকলের অলক্ষ্যে সেই ধুলা মুঠোয় ধরে রেখেছিল। সে বলল, এটাতো সেই দূতের ঘোটকীর পায়ের ধুলা, যে আপনাদেরকে সমুদ্র পার করিয়েছেন, তবে আমি এটাকে কিছুতেই নিক্ষেপ করব না, যতক্ষণ না। আপনি আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ করেন যে, আমি যে কাজের জন্য এটাকে নিক্ষেপ করব সে কাজই যেন হয়ে যায়। সে মতে তিনি দু’আ করলেন এবং সে তা নিক্ষেপ করে বলল, আমি চাই এগুলো যেন বাছুরে পরিণত হয়ে যায়। ফলে গর্তের মধ্যে যত সোনা-দানা, সহায়-সম্পদ অলংকারাদি তামা-লোহা ইত্যাদি ছিল, একত্রিত হয়ে একটি বাছুরের আকার ধারণ করল। যার মধ্যখানটা ছিল ফাঁকা, তার মধ্যে প্ৰাণ ছিল না, ছিল শুধু গরুর ডাক।
আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, আল্লাহর কসম, বাছুরটির কোন শব্দ ছিল না, বাতাস তার পেছনের দিক দিয়ে ঢুকত এবং সামনের দিক দিয়ে বের হয়ে যেত। এজন্য এক প্রকারের শব্দ হত, বাছুরের নিজস্ব কোন শব্দ ছিল না। এই ঘটনার পর বনী ইসরাঈল তিন ভাগে বিতক্ত হয়ে পড়ল। একদল বলল, হে সামিরী! এটা কি? তুমিই তো এটা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। সামিরী বলল, এটা তোমাদের প্রতিপালক। তবে মূসা (আ) পথ হারিয়ে ফেলেছেন। অন্য একদল বলল, যতক্ষণ না মূসা (আ) আমাদের কাছে ফিরে আসেন, আমরা এটাকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করব না। এমনও তো হতে পারে যে, এটাই আমাদের প্রতিপালক! তাই এটাকে আমরা বিনষ্ট করলাম না। আর এটা সম্বন্ধে আমরা বিপাকেও পড়লাম না। তাই আমরা এটাকে দেখে-শুনে রাখব। আর যদি এটা আমাদের প্রতিপালক বলে প্রমাণিত না হয়, তাহলে এ সম্পর্কে আমরা মূসা (আ)-এর নির্দেশই মান্য করব। অন্য একদল বলল, এটা শয়তানের কাজ, এটা আমাদের প্রতিপালক নয়, এটাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি না, এটাকে আমরা সত্য বলে গ্রহণও করি না। বাছুরটি সম্বন্ধে সামিরী যা বলেছিল, তাকে তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তার
মিথ্যা দাবিকে তারা মিথ্যা বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করল। হারূন (আ) তাদেরকে বললেন :
‘হে আমার সম্প্রদায়! এটা দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। তোমাদের প্রতিপালক দয়াময়।’ এটা তোমাদের প্রতিপালক নয়। তার হারূন (আ)-কে প্রশ্ন করল, মূসা (আ)-এর খবর কি? আমাদের সাথে ত্ৰিশদিনের ওয়াদা করে গিয়েছেন, তিনি তো আমাদের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করলেন না! চল্লিশ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। তাদের মধ্যে যারা নির্বোধ, তারা বলল, মূসা (আ) তাঁর প্রতিপালককে পাননি, তাই তিনি তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-এর সাথে কথা বলার সময় তিনি তাকে বনী ইসরাঈলের মধ্যে সংঘটিত ব্যাপারসমূহ অবগত করেন। তাতে মূসা (আ) অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসেন। এরপর তিনি তাদেরকে যা বললেন, তা কুরআনুল করীমে উল্লেখিত হয়েছে।
মূসা (আঃ) তার সহোদর হারূন (আ.)-এর কেশ ধরে আকর্ষণ করতে লাগলেন এবং রাগের কারণে ফলকগুলো ফেলে দেন। তারপর তিনি তার সহোদরের ওযর গ্রহণ করে নিলেন এবং তার জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থীনা করলেন। অতঃপর তিনি সামিরীর দিকে মনোযোগ দিলেন এবং তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তুমি এমনটি কেন করলে?’ সামিরী বলল, ‘আমি জিবরাঈলের ঘোটকীর পায়ের এক মুঠো ধুলা সংগ্রহ করেছিলাম, আমি এটার অলৌকিক ক্ষমতা অনুধাবন করেছিলাম এবং আপনাদের কাছে ছিল এটা অজানা বস্তু। এরপর এটাকে নিক্ষেপ করলাম এবং আমার মন এরূপ করাই আমার জন্য শোভন করেছিল। মূসা (আঃ) বললেন, ‘দূর হ’, তোর জীবদ্দশায় তোর জন্যে এটাই রইল যে, তুই বলবি, ‘আমাকে কেউ ছুয়ো না’ এবং তোর জন্য রইল একটি নির্দিষ্ট কাল, তোর বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না; তুই তোর সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যার পূজায় তুই রত ছিলে, আমরা এটাকে জ্বলিয়ে দেবই; অতঃপর এটাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করবই।’
বলাবাহুল্য, এটা যদি উপাস্যই হত তাহলে এটাকে এরূপ কেউ করতে পারত না। এজন্যই বনী ইসরাঈল এটাকে নিশ্চিতভাবে পরীক্ষা হিসেবে গণ্য করে। আর যাদের মতামত হারূন (আ)-এর মতামতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল তারা মহাখুশী হলো এবং নিজেদের সম্প্রদায়ের উপকারার্থে মূসা (আ)-কে লক্ষ্য করে তারা আরো বলল, ‘হে মূসা (আ)! আপনি আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থীনা করুন, যেন তিনি আমাদের জন্যে তওবা করার নিমিত্তে একটি বিধি ব্যবস্থা করেন, যা আমরা আঞ্জাম দিলে, আমাদের কৃত পাপরাশির কাফফারা হয়ে যায়।’ অতঃপর মূসা (আঃ) তাঁর সম্প্রদায় থেকে সত্তরজন এমন লোককে এ কাজের জন্যে মনোনীত করলেন, যারা ভাল কাজ সম্পাদনে ক্ৰটি করে না এবং আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করে না, তাদের নিয়ে মূসা (আ) তওবার জন্যে চললেন। অতঃপর ভূমিকম্প দেখা দিল। আর এতে আল্লাহর নবী, তার সম্প্রদায় ও মনোনীত লোকদের কাছে লজ্জিত হলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহ্ তা’আলা! ইচ্ছে করলে তুমি তাদেরকে ও আমাকে এর পূর্বেই ধ্বংস করে দিতে পারতে। আমাদের মধ্যে যারা নির্বোিধ, তাদের কৃতকর্মের জন্যে কি আমাদেরকে তুমি ংস করবে?’ উত্তর আসল, তাদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে যাদের অন্তরে বাছুরপ্রীতি রয়েছে ও এটার প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে; তাই তাদেরকে নিয়ে ভূমি কেঁপে উঠেছিল।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন
‘আমার দয়া-তা তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি এটা তাদের জন্যে নির্ধারিত করব যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে, যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উক্ষ্মী নবীর, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইঞ্জীল, যা তাদের কাছে আছে তাতে
লিপিবদ্ধ পায়।’ (সূরা আ’রাফ : ১৫৬-১৫৭)
মূসা (আ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায়ের জন্য আমি তােসুর কাছে তাওবা কবুলের দু’আ করছি, আর তুমি আমাকে বলছি, নিশ্চয়ই আমার রহমত এমন একটি সম্প্রদায়ের জন্যে লিপিবদ্ধ করেছি যা তোমার সম্প্রদায় থেকে ভিন্ন। হায়! যদি তুমি আমার জন্মকে আরো বিলম্ব করতে এবং আমাকে সেই রহমতপ্রাপ্ত ব্যক্তির উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করতে, কতই না ভাল হত!! আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ)-কে বললেন, তাদের তওবা হচ্ছে তাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি যার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তার পিতা বা সন্তান হোক না কেন সে তাকে তরবারি দ্বারা হত্যা করবে। কে নিহত হলো, এ ব্যাপারে কোন পরোয়া করবে না। যাদের গুনাহ মূসা (আ) ও হারূন (আঃ)-এর কাছে অজ্ঞাত থাকলেও আল্লাহ তা’আলা তাদের পাপ সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন। তারা নিজ নিজ পাপের কথা স্বীকার করলো ও তাদেরকে যা করতে বলা হয়েছে তা করলো। তখন আল্লাহ তা’আলা হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়কে মাফ করে দিলেন।
অতঃপর মূসা (আ) বনী ইসরাঈলদেরকে নিয়ে পবিত্র ভূমির দিকে অগ্রসর হলেন। রাগ থেমে যাবার পর তিনি ফলকগুলো কুড়িয়ে নিলেন এবং ফলকে লিখিত বিভিন্ন করণীয় কাজ সম্পর্কে উম্মতদেরকে নির্দেশ দিলেন। এগুলো তাদের কাছে কঠিন মনে হতে লাগল এবং এগুলোকে পুরোপুরি স্বীকার করে নিতে তারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করল। তখন আল্লাহ তা’আলা তুর পাহাড় তাদের মাথার উপর চাঁদােয়ার মত উত্তোলিত করলেন। পাহাড় তাদের নিকটবতী হতে লাগল, এমনকি তারা ভয় করতে লাগল যে, তা তাদের মাথার উপর না পড়ে যায়। তারা একদিকে তাদের ডান হাতে কিতাবখানা ধরে রেখেছিল, অন্যদিকে গভীর মনোযোগ সহকারে পাহাড়ের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিল। তারা ছিল পাহাড়ের পেছনে। ভয় করছিল, না জানি কখন তাদের উপর তা পড়ে যায়।
অতঃপর তারা চলতে চলতে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছে গেল এবং সেখানে তারা একটি শহর পেল, যাতে রয়েছে একটি দুর্ধর্ষ জাতি। তারা ছিল নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। তাদের ফল-ফলাদি অত্যন্ত বৃহৎ আকারের ছিল বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বনী ইসরাঈলরা বলল, ‘হে মূসা! এখানে রয়েছে একটি দুর্দান্ত জাতি যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত এরা শহরে অবস্থান করবে। আমরা তাতে প্ৰবেশ করব না। যদি তারা বের হয়ে যায় তাহলেই কেবল আমরা সেখানে প্ৰবেশ করব। দুর্দান্ত সম্প্রদায়টির মধ্য থেকে দুই ব্যক্তি
যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করত; বললেন, আমরা মূসা (আ)-এর প্রতি ঈমান এনেছি। এবং আমরা আমাদের সম্প্রদায় থেকে বেরিয়ে এসেছি। তারা আরো বললেন, আমরা আমাদের সম্প্রদায়ের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে সম্যক অবগত। তোমরা তাদের বিরাট শরীর ও সংখ্যার আধিক্য দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছো। আসলে তাদের তেমন শক্তি-সামৰ্থ্য নেই। তোমরা তাদের ফটক দিয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা কর। তোমরা তাতে প্ৰবেশ করতে পারলেই তাদের উপর জয়ী হবে। কেউ কেউ বলেন, যাদের উক্তি উপরে উল্লেখ করা হল, তারা হলেন মূসা (আ)-এর সম্প্রদায়ের লোক। অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা ভয় করছিল।
আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন :
‘তারা বলল, হে মূসা’! তারা যতদিন সেখানে থাকবে, ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করবই না। সুতরাং তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ করা। আমরা এখানেই বসে থাকব। (৫ মায়িদা : ২৪)।
এরূপ বলে তারা মূসা (আ)-এর ক্রোধের উদ্রেক করল। তিনি তাদের জন্য বদদুআ করলেন, তাদেরকে ‘ফাসিক’ বলে আখ্যায়িত করলেন। এর আগে তিনি তাদের বিরুদ্ধে আর বদদুআ করেননি। কেননা, এখন তিনি তাদের মধ্যে পাপ এবং অবাধ্যতা দেখতে পেলেন, আর আল্লাহ্ তা’আলা তার বদদুআ কবুল করলেন এবং আল্লাহ তা’আলাও তাদেরকে ফাসিক বলে আখ্যায়িত করলেন-যেমনটি মূসা (আ) করেছিলেন। চল্লিশ বছরের জন্যে পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ তাদের জন্যে নিষিদ্ধ করে দিলেন। যাতে তারা পৃথিবীতে উদভ্ৰান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে। সারাদিন ধরে তারা চলতেই থাকবে। তাদের কোন স্বস্তি নসীব হবে না। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা সদয় হয়ে তাদের উপর তীহের ময়দানে মেঘের ছায়া দান করেন; তাদের জন্যে মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ করেন। তাদেরকে এমন পোশাক দান করেন যা না ছিড়ে, না ময়লা হয়। তাদেরকে এমন একটি বর্গাকৃতির পাথর দান করলেন এবং এটাকে লাঠি দ্বারা আঘাত করার জন্য মূসা (আ)-কে নির্দেশ দিলেন। ফলে পাথর থেকে বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হল। প্রতি দিকে তিনটি করে প্রস্রবণ অবস্থিত ছিল, তাদের প্রতিটি গোত্ৰ নিজ নিজ প্রস্রবণের পরিচয় পেয়ে গেল। তারা নিজ নিজ প্রস্রবণ থেকে পানি পান করতো। আবার তারা যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেত, সেখানেই এই পাথরটিকে পূর্বদিনের অবস্থানে পেত।
উপরোক্ত হাদীসটি মারফু বলে ইব্ন আব্বাস (রা) উল্লেখ করেছেন। আমার মতে এটাই যথার্থ। কেননা, একদা মু’আবিয়া (রা) ইব্ন আব্বাস (আ) থেকে শোনার পর মূসা (আ) কর্তৃক নিহত ব্যক্তিটি সম্বন্ধে ফিরআউনীকে তথ্য প্ৰকাশকারী হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ফিরআউন বংশীয় লোকটির জানার কোন উপায়ই ছিল না। জানতো কেবল ইসরাঈলীটি, যে সেখানে উপস্থিত ছিল। তাহলে ফিরআউনী ব্যক্তিটি কেমন করে এ তথ্য প্রকাশ করতে পারে? তাঁর এই উক্তি শুনে আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) রাগান্বিত হলেন এবং মু’আবিয়া (রা)-এর হাত ধরলেন ও তাঁকে নিয়ে সা’দ ইব্ন মালিক যুহরী (রা)-এর কাছে গেলেন
এবং তাকে বললেন, ‘হে আবু ইসহাক! আপনার কি ঐ দিনটির কথা মনে পড়ে? যেদিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) মূসা (আ) কর্তৃক নিহত ফিরআউন সম্প্রদায়ের লোকটি সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন? তথ্যটি ইসরাঈলীটি প্রকাশ করেছিল, না-কি ফিরআউনী? জবাবে তিনি বলেছিলেন, এই তথ্যটি প্রকাশ করেছিল। ফিরআউনী। তবে সে এটা শুনেছিল। ইসরাঈলী থেকে, যে এ ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছিল ও এটা উল্লেখ করেছিল।
ইমাম নাসাঈ (র)-ও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। ইব্ন জারীর তাবারী (র) ও ইব্ন আবু হাতিম (র) তাদের তাফসীরে এরূপ হাদীসের উল্লেখ করেছেন। তবে এ হাদীসটি মরফু না হয়ে মওকুফ হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। এ বর্ণনার অধিকাংশই ইসরাঈলী বৰ্ণনা থেকে গৃহীত। এতে কিছু কিছু অংশ এমনও রয়েছে যা সন্দেহমুক্ত নয়। আমি আমার উস্তাদ হাফিজ আবুল হাজ্জাজ ময়ী (র) থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, এটা ইহুদী আলিমদের বর্ণনা হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
তাঁবু গম্বুজের নির্মাণ প্রসঙ্গ
কিতাবীরা বলে, আল্লাহ তা’আলা একবার মূসা (আ)-কে শিমশার কাঠ, পশুর চামড়া ও ভেড়ার পশমের দ্বারা একটি তাবু তৈরি করতে নির্দেশ দিলেন। তাদের বিস্তারিত বর্ণনা অনুযায়ী রঙিন রেশম, স্বর্ণ ও রৌপ্য দ্বারা এটাকে সজ্জিত করার হুকুম দেয়া হয়েছিল। এতে ছিল ১০টি শামিয়ানা। প্রতিটি শামিয়ানার দৈর্ঘ ছিল ২৮ হাত ও প্রস্থ ছিল ৪ হাত। এতে ছিল ৪টি দরজা। এর রাশিগুলো ছিল বিভিন্ন প্রকার ও বিভিন্ন বর্ণের রেশমের, এতে এর চৌকাঠ এবং তাক ছিল স্বর্ণ-রৌপের। প্রতিটি কোণে ছিল। ২টি দরজা, এছাড়া আরো অনেক বড় বড় দরজা ছিল। এর পর্দাগুলো ছিল রঙিন রেশমের।
এ ধরনের বহু সাজসজ্জার সামগ্ৰী ছিল, যার ফিরিস্তি ছিল দীর্ঘ। আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে শিমশার কাঠের একটি সিন্দুকও তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যার দৈর্ঘ আড়াই হাত এবং প্রস্থ দুই হাত এবং উচ্চতা ছিল দেড় হাত। ভিতরে ও বাইরে খাটি স্বর্ণ দ্বারা মোড়ানো, এটার চার কোণে ছিল চারটি আঙটা, সম্মুখ ভাগের দুই দিকে ছিল চারটি আঙটাি; সম্মুখ ভাগের দুই দিক ছিল স্বর্ণের পাখাবিশিষ্ট। তাদের ধারণায় দুইজন ফেরেশতার মূর্তি যেগুলো মুখোমুখিভাবে স্থাপিত ছিল। এগুলো ছিল বাসিলিয়াল নামক এক প্রসিদ্ধ শিল্পীর তৈরি। তারা তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শিমশার কাঠের একটি খাঞ্চা তৈরি করতে যার দৈর্ঘ দুই হাত ও প্রস্থ ছিল দেড় হাত। এতে ছিল উপরের ডালায় স্বর্ণের তালা ও স্বর্ণের মুকুট; এর চতুর্দিকে ছিল চারটি আঙটা যেগুলোর কিনারাগুলো ছিল সোনা দিয়ে মোড়ানো, আনারের ন্যায় কাঠের তৈরি। তারা তাকে নির্দেশ দেন, তিনি যেন খাঞ্চাটিতে বড় বড় বরতন; পেয়ালা ও গ্রাসের ব্যবস্থা করেন। তিনি যেন স্বর্ণের মিনারা তৈরি করেন যাতে প্ৰতি দিকে তিনটি করে ৬টি সোনার আলোক স্তম্ভ থাকে, আবার প্রতিটি স্তম্ভে যেন ৩টি করে বাতি থাকে। আর মিনারের মধ্যে যেন চারটি ঝাড় বাতি থাকে। এগুলো এবং অন্যান্য পানিপাত্ৰ যেন স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত হয়। এ সবই ছিল বাসিলিয়ালের তৈরী। বাসিলিয়াল পশু যাবাইর বেদীও তৈরী করে। উপরোক্ত তাবুটি তাদের
V8
বছরের প্রথম দিন স্থাপন করা হয়। আর সেই দিনটি ছিল বসন্ত ঋতুর প্রথম দিন। আবার ‘শাহাদতের তাবৃতা’ও এতে স্থাপন করা হয়েছিল। সম্ভবত কুরআনুল করীমে নিম্নোক্ত আয়াতে
‘তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের কাছে সেই তাবৃত (ইসরাইলীদের পবিত্র সিন্দুক) আসবে, যাতে তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে চিত্ত প্রশান্তি এবং মূসা ও হারূন বংশীয়গণ যা পরিত্যাগ করেছে তার অবশিষ্টাংশ থাকবে; ফেরেশতাগণ এটা বহন করে আনবে। তোমরা মু’মিন হও, তবে অবশ্যই তোমাদের জন্য এটাতে নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা বাকারা ৪। ২৪৮)
ইসরাঈলী কিতাবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এতে রয়েছে তাদের শরীয়ত, তাদের জন্যে নির্দেশাবলী, তাদের কুরবানীর বৈশিষ্ট্য ও নিয়ম-পদ্ধতি সম্বন্ধে আলোচনা | আবার এতে বর্ণিত রয়েছে যে, তার গম্বুজ তাদের বাছুর পূজার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর বাছুর পূজার ব্যপারটি ঘটেছিল তাদের বায়তুল মুকাদাসে আগমনের পূর্বে। আবার এটা ছিল তাদের কাছে কাবা শরীফ তুল্য। তারা এটার ভিতরে ও এটার দিকে মুখ করে প্রার্থীনা করত এবং এটার কাছেই আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভের আশা করত। মূসা (আঃ) যখন এটার ভিতরে প্রবেশ করতেন, তখন বনী ইসরাঈলরা এর পাশে দণ্ডায়মান থাকত। এটার দ্বারপ্রান্তেই মেঘমালার জ্যোতির্ময় স্তম্ভ অবতীর্ণ হত। তখন তারা আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। আল্লাহ তা’আলা মেঘমালার স্তম্ভের ভেতর থেকে মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলতেন। মেঘমালাটি ছিল আল্লাহ তা’আলার নূর। আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-কে লক্ষ্য করে একান্তে কথা বলতেন। তার প্রতি আদেশ-নিষেধ অবতীর্ণ করতেন এবং মূসা (আঃ) তাঁবুতের কাছে দণ্ডায়মান থাকতেন ও পূর্বোক্ত মূর্তি দুইটির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করতেন। ঐ সময় শাসন সংক্রান্ত ফয়সালাদি। আসতো। ইবাদতখানায় স্বর্ণ, রঙিন মুক্তার ব্যবহার তাদের শরীয়তে বৈধ ছিল। কিন্তু আমাদের শরীয়তে বৈধ নয়। আমাদের শরীয়তে মসজিদে জাকজমকপূর্ণ অলংকরণ নিষিদ্ধ, যাতে সালাতে মুসল্লীদের মনোযোগ বিঘ্নিত না হয়। মসজিদুন নববী সম্প্রসারণের সময় উমর ইব্ন খাত্তাব (রা) নির্মাণ কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তিকে বললেন, এমনভাবে মসজিদটি নির্মাণ করা যাতে বেশি বেশি লোকের জায়গা হয়। তবে মসজিদকে লাল কিংবা হলদে রং করা থেকে বিরত থাকো। কেননা, তাতে মুসল্লীগণের একাগ্রতা বিঘ্নিত হবে। আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, আমরা অবশ্যই আমাদের মসজিদসমূহ এমনভাবে সাজাবো যেরূপ ইয়াহুদ ও নাসারগণ তাদের গির্জা ও ইবাদতখানাগুলোকে সাজায়। এটা হবে মসজিদের ইজ্জত-সম্মান ও পবিত্ৰতা রক্ষার উদ্দেশ্যে। কেননা, এই উম্মত পূর্বেকার উম্মতের মত নয়। তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা তাদের সালাতে আল্লাহ তা’আলার প্রতি একনিষ্ঠ ও মনোযোগী হবার, গাইরুল্লাহ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখার, এমনকি অন্য সকল চিন্তা ও
ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত থেকে শুধু আল্লাহ তা’আলার দিকে একাগ্ৰচিত্ত হবার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর জন্যেই সমস্ত প্ৰশংসা।
উপরোক্ত ‘তাঁবু গম্বুজ’ তীহ প্ৰান্তরে বনী ইসরাঈলদের সাথে ছিল, তারা এটার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করত। এটা ছিল তাদের কিবলা ও কা’বা এবং মূসা (আ) ছিলেন তাদের ইমাম আর তার ভাই হারূন (আ) ছিলেন কুরবানীর দায়িত্বপ্রাপ্ত। যখন হারূন (আ) এবং তারপর মূসা (আ) ইনতিকাল করলেন, তখন হারূন (আ.)-এর বংশধররা নিজেদের মধ্যে কুরবানী প্রথা চালু রাখেন এবং এটা আজ পর্যন্তও তাদের মধ্যে চালু রয়েছে। মূসা (আ) এরপর তাঁর খাদেম ইউশা। ইব্ন নূন (আ) রিসালাতসহ সমস্ত কাজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তিনি তাদেরকে নিয়ে বায়তুল মুকাদাসে প্রবেশ করেন। এ ঘটনাটি পরে বর্ণনা করা হবে।
মোদ্দা কথা, বায়তুল মুকাদাসের নিয়ন্ত্রণভার যখন ইউশী ইব্ন নূন (আ.)-এর উপর ন্যস্ত হল, তখন তিনি বায়তুল মুকাদাসের একটি পাথরের উপর এই তাঁবু গম্বুজটি স্থাপন করেন। বনী ইসরাঈলরা এটার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করত। অতঃপর যখন তাঁবু গম্বুজটি বিনষ্ট হয়ে যায়। তখন তারা গম্বুজের স্থান অর্থাৎ পাথরের দিকেই সালাত আদায় করতে লাগল। এ জন্যেই ইউশা (আঃ)-এর পর থেকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগ পর্যন্ত সমস্ত নবীর কিবলা ছিল এটাই। এমনকি রাসূলুল্লাহ্ (সা)ও হিজরতের পূর্বে বায়তুল মুকাদাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন, তবে কাবা শরীফকে সামনে রেখেই তা করতেন। রাসূল (সা) যখন মদীনায় হিজরত করেন, তখন তাঁকে বায়তুল মুকাদাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয় এবং ষোল মাস মতান্তরে সতের মাস তিনি বায়তুল মুকাদাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেন। অতঃপর দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে আসরের নামাযে মতান্তরে জোহরের সময় ইবরাহীমী কিবলা কা’বার দিকে কিবলা পরিবর্তিত হয়। তাফসীরে এ সম্পর্কে নিম বর্ণিত আয়াতের ব্যাখায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
নির্বোধি লোকেরা বলবে যে, তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিল এটা হতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল? বল, পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছে সরল পথে পরিচালিত করেন। আকাশের দিকে তোমার বার বার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করি। সুতরাং তোমাকে অবশ্যই এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, যা তুমি পছন্দ কর। অতএব, তুমি মসজিদুল হারমের দিকে মুখ ফিরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন সেদিকে মুখ ফিারাও। (সূরা বাকারা : ১৪২ ও ১৪৪)