সাঁইত্রিশ
মাধবীলতার পাশাপাশি খালিপায়ে হাঁটছিল অর্ক। মাথায় তেল সাবান দেওয়া নিষেধ কিন্তু চিরুনি না চালিয়ে থাকা যায় না। অনিমেষকে সে প্রশ্ন করেছিল, ‘এগুলো করে কি লাভ হয় বাবা?’
অনিমেষ জবাব দেওয়ার আগে মাধবীলতা বলেছিল, ‘লাভ লোকসানের বিচার সবসময় করতে নেই, মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে এসব করতে হয়।’
অর্ক হেসে ফেলেছিল, ‘এসব না করলে অসম্মান করা হয় বুঝি?’
মাধবীলতা বিরক্ত হয়েছিল, ‘অত প্রশ্ন করতে হবে না তোমাকে। যা নিয়ম তা মেনে চললে সবাই খুশি হবে। তুই দাঁড়া, আমি ভেতর থেকে ঘুরে আসছি।’
অর্ক বলেছিল, তাহলে সবাইকে খুশি করার জন্যে বাবা ওই পোশাক পরেছে? মৃতের প্রতি সম্মান জানানো নয়?’
মাধবীলতা কাঁধ ঝাঁকালো, তারপর বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল, ‘যা ইচ্ছে তাই ভাবো।’
অনিমেষ হাসছিল, ‘উত্তর পেয়ে গেছিস।’
অর্ক, বলল, ‘তুমি কিছু বললে না!’
অনিমেষ বলল, ‘আমার কিছু বলার নেই। একজন মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেলে সব জাতই কিছু না কিছু শোকচিহ্ন ধারণ করে। আমরা হয়তো একটু বেশী করি। এই যে কদিন ধরে কৃচ্ছ্রসাধন করে থাকা, এটা আর কিছু নয়, নিজেকে শুদ্ধ করে রাখা। শ্রাদ্ধ অবধি আত্মার মুক্তি হয় না বলে একটা বিশ্বাস আছে। তদ্দিনের জন্যে এই ব্যবস্থা।’
‘কিন্তু কেউ মারা গেলে যদি আমার এক ফোঁটা কষ্ট না হয়, তাকে বেঁচে থাকতে যদি আমি সম্মান না করি তাহলে মরে যাওয়ার পর এসব করব কেন? লোক দেখাতে?’
‘বোধহয় তাই।’
অর্ক অনিমেষকে এবার সরাসরি প্রশ্ন করেছিল, ‘তুমিও এসব মানো?’
‘মানি না, মেনে নিই। দ্যাখ, আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে অনেক ফাঁকি অনেক গোঁজামিল আছে। অল্প বয়সের উত্তেজনায় সেগুলিকে নস্যাৎ করার একটা প্রবণতা আসে। তখন মনে হয় এগুলোকে ভেঙে ফেলব, অমান্য করব। কিন্তু তাতে কিছু লাভ হয় না। যেসব বিশ্বাস সমাজের ক্ষতি করে না সেগুলো মানলে যদি প্রিয়জনেরা খুশি হয় তাহলে মেনে নেওয়া ভাল। ওগুলো অস্বীকার করে যেমন বিপ্লবী হওয়া যায় না আবার স্বীকার করলেও চরিত্র নষ্ট হয় না।’ কথাগুলো শেষ করা মাত্র অনিমেষের খেয়াল হল এত সিরিয়াস হয়ে সে, কার সঙ্গে কথা বলছে? আজ পর্যন্ত অর্কর সঙ্গে কোন ব্যাপক সমস্যা নিয়ে এই ভঙ্গীতে কথা বলেনি। ও কথাগুলোর অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে কিনা তাতেও সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
অর্ক মাথা নাড়ল। তারপর ঘরের কোণে রাখা চটিটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিন্তু বাইরের রাস্তায় আমার খালি পায়ে হাঁটতে কষ্ট হয়। বাড়িতে চুপচাপ বসে ওইসব নিয়মগুলো মানা যায় কিন্ত—।’
খোঁচাটা ইচ্ছাকৃত কিনা অনিমেষ বুঝতে পারল না কিন্তু সেটা সে গায়ে মাখল না, ‘বেশ তো, একটা রবারের হাওয়াই কিনে নে। মায়ের কাছে পয়সা চেয়ে নিয়ে যা।’
‘মা বলেছিল। কিন্তু চামড়ার চটি পরলে নিয়ম ভাঙা হবে আর রবারে হবে না, এটা মানা যায়?’ অর্ক ব্যঙ্গের হাসি হাসল।
অনিমেষ মাথা নাড়ল, ‘যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে কিছুটা অ্যাডজাস্ট করতে হয়।’
‘যেমন, শানু বলছিল, ফিল্মস্টাররা মাথা না কামিয়ে পুরোহিতকে টাকা ধরে দেয় তাতে নাকি নিয়ম ভাঙে না। আমি আজকে এই জুতো পরে যাব।’
‘তোর যদি ইচ্ছে হয় তো যা। এত কথা বলছিস কেন?’
‘তোমার আপত্তি নেই তো?’
‘শোন, যেটা ভাল মনে করবি সেটা নিঃসঙ্কোচে করবি। তোর মনে দ্বিধা আছে বলেই তুই হাজারটা কথা বলে নিজেকে শক্ত করতে চাইছিস। বেশ, তোর যদি এসব না মানতে ইচ্ছে করে তুই জুতো পরে যা, মাথায় তেল দিবি, বাজার থেকে মাছের ঝোল কিনে এনে বাড়িতে খাবি আমি আপত্তি করব না। কোন একটা মানব না আর বাকিগুলো স্বীকার করব এটা চলবে না। নিয়ম ভাঙতে গেলে তোমাকে সবকটাই ভাঙতে হবে। আমি কথা দিচ্ছি কেউ তোমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলবে না।’ অনিমেষ প্রশান্তমুখে বলল।
অর্ক কিছুক্ষণ বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। সে যে দ্বিধায় পড়েছে এটা বোঝা যাচ্ছিল। বাবার কথামত সে নিয়মগুলো ভাঙতে পারে। কিন্তু তাতে এই বাড়িতে দৃষ্টিকটু ঠেকবে। সে দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করেছিল, ‘মা!’
মাধবীলতা তৈরি হয়ে এল। প্রসাধনের কোন প্রশ্ন ওঠে না, এই অবস্থায় কোন মেয়ের পক্ষে বাইরে যাওয়া মুশকিল কিন্তু আজ না গিয়ে উপায় নেই। অর্কর ওপর ছেড়ে দিলে সে স্বস্তি পাবে না। তার হাতব্যাগে যেহেতু চামড়া আছে তাই কাগজের মধ্যে মুড়ে নিতে হয়েছে জিনিসটাকে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাধবীলতা আর একবার অনিমেষকে দেখল। এখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অনিমেষ। তার দৃষ্টি এখন এদিকেই। কাল রাত থেকে অনেক আপত্তি করেছিল সে। কিন্তু আপত্তি করলেই হয় না, সমস্যা সমাধানের কোন পথ দেখাতে পারেনি। অগত্যা এটাকে মেনে নিতেই হবে। মাধবীলতাও অনেক ভেবেছে। কোন জিনিস নতুন করে গড়া যাচ্ছে না তাই বিক্রি করতে গেলে ধরেই নিতে হয় এটার বিকল্প আসবে না। কিন্তু এ অবস্থায় চুপ করে বসে থাকা যায় না। কলকাতা থেকে আসবার সময় যে টাকা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল তাতে কিছুই হবে না। আর সেটা ফুরিয়ে গেলে এখানে চলবে কি করে, ফেরার ভাড়াটাই বা পাওয়া যাবে কোথায়? মহীতোষের জমানো টাকা যা থেকে সুদ আসে তাতে হাত দিতে চায়নি মাধবীলতা। গতকাল বিকেলে হঠাৎ ছোটমা তার কাছে সেই প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সে মাথা নেড়েছিল, ওই টাকায় একবার হাত দিলে এ বাড়ির মানুষ দুজনের আর দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। শেষপর্যন্ত ছোটমা দুটো সোনার কানপাশা বের করেছিলেন। গয়নাগাঁটি এক এক করে এতদিনে ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে, এটি শেষ সম্বলগুলোর মধ্যে হয়তো ছিল। মহীতোষের কাজ উপলক্ষে তাও বেরিয়ে এল। মাধবীলতা ইতস্তত করলেও শেষপর্যন্ত মেনে নিয়েছিল। তবে দুটোয় মিলে বারো আনার বেশী হবে না। বারো আনা সোনা বিক্রি করলে কত পাওয়া যায়? আর তখনই তার নিজের আঙ্গুলের দিকে নজর গিয়েছিল। এটা যে সোনার আংটি তা আর খেয়ালই নেই। আঙ্গুলে চেপে বসে আছে দীর্ঘকাল। সেই বিয়ের আগে থেকেই। হেসে ফেলেছিল মাধবীলতা। বিয়ে কথাটা এত স্বাভাবিক ভাবে মনে আসে আর তখনই শান্তিনিকেতনের সেই বাড়িটার কথা মনে পড়ে যায়।
খালি পায়ে হাঁটছিল অর্ক। বলল, ‘এটা হচ্ছে টাউন ক্লাব স্টেডিয়াম।’
‘স্টেডিয়াম? যাঃ, এটা আবার স্টেডিয়াম নাকি?’ মাধবীলতার গলায় তাচ্ছিল্য।
‘ওপাশে লেখা রয়েছে। জায়গাটা খুব নির্জন, না মা?’
‘হুঁ।’
সেই পান-সিগারেটের দোকানটার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় লোকটা ওদের দেখে হেসে চেঁচিয়ে বলল, ‘শানুবাবু এখনও আসেনি।’
অর্ক কথা না বলে মাথা নাড়ল। মাধবীলতা অবাক হল, ‘তোকে চেনে দেখছি। শানুবাবু আবার কে?’
‘এখানকারই একটা ছেলে। ও না সিনেমায় নামতে চায়।’
‘চমৎকার। এখানে সিনেমা কোথায়?’
‘এখানে কেন হবে, কলকাতায় যাবে। এই নদীটার নাম করলা।’
মাধবীলতা একটা মজা নদীকে দেখল। অনিমেষ এই নদীর গল্প করত। অবশ্য তার বেশী আকর্ষণ ছিল তিস্তার ওপরে। তিস্তাটাকে দেখা হয়নি। এখানে আসার পর এই প্রথম বাড়ির বাইরে বের হওয়া। অনিমেষ সঙ্গে থাকলে ভাল লাগত। সেই কথা বলতে অর্ক হাসল, ‘বাবা তো অনেককাল এখানে আসেনি। আমি বাবার চেয়ে এই শহরটাকে ভাল চিনে গেছি। এই রাস্তা ধরে আর একটু এগোলেই থানা, ওদিকে দিনবাজার এদিকে কদমতলা, তিনটে সিনেমা হল পড়ে এই রাস্তায়।’
‘তিস্তা নদীটা খুব দূরে?’
‘দূরে নয় মোটেই। এই করলা গিয়ে তিস্তায় পড়েছে। ওখানে একটা সুন্দর পার্ক করেছে, জুবিলি পার্ক। বাবা কোনদিনই সেটাকে দ্যাখেনি। আর আমাদের বাড়ির পেছন দিক দিয়ে একটু হাঁটলেই তিস্তার চরে যাওয়া যায়। তুমি তিস্তা নদী দেখবে?’
‘ফেরার সময় খুব দেরি না হলে যাব।’
‘তোমার খালিপায়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে না? অবশ্য এখন আর রিকশা নিয়ে কি হবে, আমরা প্রায় এসেই গেছি।’
মাধবীলতা কিছু বলল না। ছেলে যে এই কদিনে শহরটাকে গুলে খেয়েছে তা সে জানতো না। এখন মনে হল এটাই স্বাভাবিক। তবে এখানে বোধ হয় বেশী বেকার ছেলে নেই। কারণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কলকাতার মত আচ্ছা এবং অশ্লীল কথা বলতে সে কাউকে দেখতে পেল না। দুপাশে এখন গিজগিজে দোকান, রিকশা আর সাইকেলে রাস্তাটা উপচে পড়ছে। অর্ক মাধবীলতাকে নিয়ে অপেক্ষাকৃত একটা ফাঁকা এলাকায় চলে এল। মাথায় বিরাট সাইনবোর্ড বলছে সোনা রূপা গহনার আদান-প্রদান করা হয়। দোকানটা মাঝারি। সামনে লোহার খাঁচা, ভেতরে দুজন লোক বসে আছে। একজন একদম রাঙামুলোর মত দেখতে, গায়ে সিল্কের পাঞ্জাবি, চোখে স্টেনলেসের চশমা। ওদের দেখে হেসে বলল, ‘আসুন।’
এরকম চেহারার লোক দেখলেই মাধবীলতার অস্বস্তি হয়। পুরুষমানুষের মধ্যে মেয়েলিপনা সহ্য করা যায় না। ওরা খাঁচার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটা মিষ্টি হাসবার চেষ্টা করল, ‘বলুন কি চাই?’
মাধবীলতা সামান্য ইতস্তত করল। সে গহনা বিক্রি করতে এসেছে কিন্তু কি ভাবে সেই কথা বলতে হয় তা ভাবেনি। লোকটা আবার বলল, ‘আপনি কি ক্রেতা না বিক্রেতা? দুদলকেই আমরা আপ্যায়ন করি। অবশ্য কেউ যদি বন্ধক রাখতে চায় তাতেও আমাদের আপত্তি নেই। সঙ্কোচ করবেন না।’ বন্ধক রাখতে শব্দটা শোনামাত্র মাধবীলতার হুঁশ হল। বিক্রি করলে তো সারাজীবনের মত হাতছাড়া হয়ে গেল। কিন্তু বন্ধক রাখলে ভবিষ্যতে ফিরে পাওয়ার সুযোগ থাকবে। সে মাথা নাড়ল, ‘হ্যাঁ, হঠাৎ খুব বিপদে পড়েছি, আমি দুটো জিনিস বন্ধক রাখতে চাই। আপনার নিয়মগুলো—।’
‘এক ভরি সোনা রাখলে যা বাজার দর তার ষাটভাগ আপনি ধার পেতে পারেন। দুবছরের মধ্যে গহনা ছাড়িয়ে নিয়ে না গেলে ওটা বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। বার্ষিক সুদ শতকরা বিশ টাকা।’ লোকটা হাসল।
‘টোয়েন্টি পার্সেন্ট!’ আঁতকে উঠল মাধবীলতা।
‘ব্যাঙ্কে যান, ওরা এইটিন পার্সেন্ট চাইবে। আর ভোলা বাজারে মাসেই তিন পার্সেন্টের নিচে লোন পাওয়া যায় না। দেখি গহনাগুলো।’ লোকটা হাত বাড়াল। মাধবীলতা একবার অর্কর দিকে তাকাল। সে ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে। টাকার দরকার কিন্তু এইভাবে ধার নিলে দুবছরের মধ্যে শোধ করা যাবে? সে যেন নিজেকে জিজ্ঞাসা করার মত গলায় বলল, ‘কি করব!’
অর্ক মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা শুনছিল। দাদুর কাজের জন্যে ছোটমা এই গহনা বিক্রি করতে দিয়েছেন। কাল রাত্রে মায়ের সঙ্গে বাবার কথাবার্তায় এই তথ্যটি সে জেনেছে। বন্ধক রাখলে অনেক কম টাকা পাওয়া যাবে এবং ছোটমা যখন কোনদিনই শোধ করতে পারবেন না তখন মা খামোকা কেন বন্ধক রাখতে চাইছে সে বুঝতে পারছিল না। সে নিচু গলায় বলল, ‘ঝামেলা না করে একেবারে বিক্রি করে দাও।’
মাধবীলতা মাথা নাড়ল। কথাটা যে তার মনঃপূত হয়নি সেটা বোঝা গেল। আংটি আর কানপাশা বের করে সে খাঁচার ভেতরে রাখল। লোকটা জিনিসদুটো খানিকক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখল। তারপর তার সঙ্গীকে বলল, ‘নিন, দেখুন।’
দ্বিতীয় লোকটা যেন ওত পেতে বসেছিল, শোনামাত্র ছোঁ মেরে নিয়ে গেল ভেতরে। এবার প্রথম লোকটা বলল, ‘আরে আপনারা দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেন? ওই দরজাটা ঠেলে ভেতরে বসুন। ততক্ষণে জিনিসগুলো যাচাই করা হয়ে যাবে।’
মাধবীলতা দেখল ডানদিকে খাঁচার একটা দরজা আছে। তবে সেটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না যদি বন্ধ থাকে। সে এবং অর্ক দরজাটা ঠেলতেই খুলে গেল। ভেতরে একটা লম্বা গদি দেওয়া বেঞ্চি রয়েছে। ওরা দুজনে সেটার ওপর বসতেই লোকটা বলল, ‘একটু চা হোক।’
মাধবীলতা ঘাড় নাড়ল, না। লোকটা জিভ বের করল, ‘সে কি! আপনারা প্রথম দিন এলেন, ব্যবসা শুরু হল, খালিমুখে যাবেন কেন? চা না খান, ঠাণ্ডা দিতে বলি।’
মাধবীলতা শান্ত গলায় বলল, ‘এখন আমাদের খাওয়ার ইচ্ছে নেই।’
লোকটা যেন কষ্ট পেল। তারপর বলল, ‘কেউ চলে গেছেন বুঝি।’
‘হ্যাঁ।’ মাধবীলতার এই গায়ে-পড়া ভাবটা ভাল লাগছিল না।
‘কোন পাড়ায় থাক তোমরা?’ এবারের প্রশ্নটা অর্কর দিকে তাকিয়ে।
‘হাকিমপাড়া।’
‘কোন বাড়ি?’
এবার মাধবীলতা জবাব দিল, ‘এখানে আমরা থাকি না, আপনি চিনবেন না।’
এবার লোকটা হেসে ফেলল, ‘আমার প্রশ্ন শুনে আপনি বোধহয় বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু আমি অকারণে জিজ্ঞাসা করছি না। আসলে কি জানেন, এই সোনাদানার বিক্রিবাটা খুব সাবধানে করতে হয়। ধরুন, আমি আপনাকে চিনি না, ঠিকানা জিজ্ঞাসা করিনি এবং আপনি একটা সোনার হার আমাকে বিক্রি করে চলে গেলেন। পরে পুলিস এসে বলল ওটা চোরাই মাল। আমাদের অবস্থাটা তখন চিন্তা করুন।’
মাধবীলতা কিছু বলার আগেই অর্ক খিঁচিয়ে উঠল, ‘চোরাই মাল? আমরা কি ওগুলো চুরি করে এনেছি মনে করছেন?’
‘আহা, সেকথা আমি বলিনি। আমি শুধু নিয়মের ব্যাপারটা বোঝালাম। ঠিকানা এবং সামান্য পরিচয় থাকলে আমাদের সুবিধে হয়।’
এই সময় দ্বিতীয় লোকটা ফিরে এসে প্রথমজনের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে কিছু বলতেই প্রথমজন মাথা নাড়ল। তারপর জিনিসদুটো আঙুলে নাড়তে নাড়তে বলল, ‘শুনুন, এই দুটো মিলে বারো আনা সোনা আছে। কোন মিশেল নেই মনে হচ্ছে। তা এখন বলুন বন্ধক রাখবেন না বিক্রি করবেন?’
মাধবীলতা বিস্মিত গলায় বলল, ‘বারো আনা?’ ওজনটা কি ঠিক করা হয়েছে?’
‘কেন বলুন তো?’
‘কানপাশাটাই তো বারো আনার ছিল।’
‘দেখুন, আপনাদের সামনেই আমি ওজন করছি।’
ঠিক সেইসময় দুটি ছেলে দোকানে ঢুকল। প্রথম লোকটা তখন ওজনের তোড়জোড় করছে। ছেলেদুটো সোজা খাঁচার দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বলল, ‘চাঁদা দিন।’
‘চাঁদা? কিসের চাঁদা? ভেতরে ঢুকতে কে বলল?’ খিঁচিয়ে উঠল লোকটা।
‘তোর বাপের বিয়ের। হাত তোল মাথার ওপরে।’
কথাটা শোনা মাত্র লোকটার মুখ হাঁ এবং চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল।
ছেলেটার হাতে তখন রিভলভার। দ্বিতীয়জন বলল, ‘কেউ চেঁচাবেন না, নড়বেন না। গোলমাল দেখলেই গুলি চালাবো।’ এইসময় আরো দুজন ছেলে গেটে এসে দাঁড়াল। এরা যে একদলের বুঝতে অসুবিধে হয় না।
সিল্কের পাঞ্জাবি ফ্যাসফেসে গলায় বলল, ‘কি চাই?’
দুজনই একসঙ্গে উঠে গেল ওপরে। রিভলভার নাচিয়ে বলল, ‘আপনার পার্টনারকে নিয়ে ওই দেওয়ালের কাছে চলে যান।’
লোকটা ককিয়ে উঠল, ‘মরে যাব, মরে যাব।’
সঙ্গে সঙ্গে রিভলভারটা লোকটার কপালে আঘাত করল। দুহাতে মুখ ঢেকে লোকটা যখন সঙ্গীর পাশে দেওয়ালের গায়ে দাঁড়াল তখন তার গাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
ওদের একজন এগিয়ে এসে কাউন্টার থেকে চাবিটা তুলে নিল।
প্রথমে অর্কর বুকের মধ্যে একটা হিমভাব ছড়িয়েছিল। এই দোকানে ডাকাতি হচ্ছে এটা স্পষ্ট। বাইরের রাস্তায় রিকশা এবং গাড়ির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে কিন্তু খদ্দের ঢুকছে না। যারা ডাকাতি করছে তাদের বয়স পঁচিশের মধ্যে। কেউ মুখোশ পরেনি। ওরা লোহার আলমারি খুলে কিছু টাকা পেল। একজন চামড়ার ব্যাগে সেগুলোকে যখন তুলে রাখছিল তখন অর্ক লক্ষ্য করল এদের হাতে গ্লাভস রয়েছে। আর আশ্চর্যের কথা ছেলেগুলো ওদের দিকে নজরই দিচ্ছে না।
বেশ ভাল সোনার গহনা যোগাড় করে নিল ওরা। তারপর আবার কাউন্টারে ফিরে এসে ওজন-দাঁড়ির দিকে তাকাতেই কানপাশা এবং আংটিটাকে দেখতে পেল। দ্বিতীয়জন সেদিকে হাত বাড়াতেই মাধবীলতা উঠে দাঁড়াল, ‘দোহাই, ওদুটো নেবেন না। আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।’
প্রথমজন জিজ্ঞাসা করল, ‘এদুটো আপনাদের?’
‘হ্যা, বিক্রি করতে এসেছি। ওই টাকা না হলে শ্রাদ্ধ হবে না।’
দ্বিতীয়জন নির্দ্বিধায় জিনিসদুটো ব্যাগে ফেলে দিতে মাধবীলতা চিৎকার করে উঠল। প্রথমজন বলল, ‘গয়না বিক্রি করে শ্রাদ্ধ করছে যখন তখন অবস্থা বুঝতে পারছিস, ওদুটো আর নিস না।’
এইসময় দরজায় দাঁড়ানো একজন বলে উঠল, ‘কুইক। বেরিয়ে আয়।’
দ্বিতীয়জন কাউন্টার থেকে নামতে নামতে বলল, ‘শ্রাদ্ধ করার কোন প্রয়োজন নেই। ওটা বিলাসিতা।’
ওরা যখন মাধবীলতাদের সামনে এসে পড়েছে তখন বাইরে হইচই উঠল। কে একজন বলল, ‘এখন দোকান বন্ধ, ভেতরে যাবেন না।’
আর একটা গলা ভেসে এল, ‘আমার দোকান আর তুমি বলছ বন্ধ। কি ব্যাপার হে, সরে যাও, ও সুনীত, সুনীত!’
দরজায় দাঁড়ানো দুজনের একজন বেরিয়ে গিয়েছিল আগেই, দ্বিতীয়জন চিৎকার করে সঙ্গীদের বলল, ‘কুইক। আমি চার্জ করছি।’ তারপরেই ছুটে চলে গেল। আর তখনই মাধবীলতা ব্যাগ হাতে ছেলেটার পথ জুড়ে দাঁড়াল, ‘আমার জিনিসদুটো নিয়ে যেতে পারবেন না।’
তখনি দুমদাম করে বাইরে বোমাফাটার আওয়াজ হল। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথমজন, যার হাতে রিভলভার সে ততক্ষণে দরজার কাছে। দ্বিতীয়জন চিৎকার করল, ‘আঃ, পথ ছাড়ুন। নইলে মারা পড়বেন।’
‘না, আমি পথ ছাড়বো না। ওদুটো দিয়ে তবে যেতে পারবেন।’ প্রচণ্ড জেদে কথাগুলো বলল মাধবীলতা।
ছেলেটার মুখে প্রচণ্ড রাগ ফুটে উঠল। সে তার ব্যাগটা শূন্যে তুলল মাধবীলতাকে আঘাত করবে বলে। কিন্তু সেটা নেমে আসার আগেই অর্ক তার হাত ধরে ফেলল। এবং সেই ধাক্কায় ব্যাগটা ছিটকে পড়ে গেল মাটিতে। পড়ে মাটিতে ছিটকে গেল কিছু গহনা এবং নোট। ছেলেটা চকিতে সেই ব্যাগ কুড়িয়ে নিয়ে ছুটে গেল দরজার দিকে। প্রথম ছেলেটি তখন ঘরের ছাদ লক্ষ্য করে ট্রিগার টিপেছে। অর্ক এগিয়ে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। বাইরে তখনও বোমার শব্দ হচ্ছে এবং ছেলেদুটো চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেছে।
কয়েক সেকেণ্ড বাদেই হুড়মুড় করে লোকজন ঢুকতে লাগল। একজন মোটাসোটা মানুষ খাঁচার মধ্যে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে চেঁচাতে লাগল, ‘সুনীত, সুনীত। গেছে সব গেছে, ওহো, আমার সব ডাকাতে নিয়ে গেল রে।’
খাঁচার মধ্যে দাঁড়িয়ে অর্ক আর মাধবীলতা দেখল লোকটা ছুটে গেল আহত সিল্কের পাঞ্জাবির দিকে, গিয়ে ঠাস করে চড় মারল যে গালটায় রক্ত ছিল না, ‘কেন খুলে রেখেছিলে দরজা, আঁ? পই পই করে বলেছি দরজা বন্ধ রাখতে। চাবি নিয়েছিল? ওরা চাবি নিয়েছিল?’
সিল্কের পাঞ্জাবি মাথা নাড়ল। সঙ্গে সঙ্গে লোকটা মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। খাঁচার বাইরে তখন মানুষেরা উদগ্রীব হয়ে এই দৃশ্য দেখছে। ডাকাতগুলো বোমা ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে গেছে। কেউ ধরা পড়েনি। এই শহরের লোক নয় ওরা। এরকম আলোচনা চলছিল।
সিল্কের পাঞ্জাবির মাথার ক্ষত বোধহয় বেশী নয় কারণ তার রক্তপাত আর হচ্ছিল না। সে রুমাল সেখানে চেপে এগিয়ে এসে মাটিতে পড়ে থাকা গহনা আর টাকা দেখতে পেল। পেয়ে ফিসফিস করে মালিককে কিছু বলল। সঙ্গে সঙ্গে মালিক তড়াক করে উঠে বসল। তারপর ছুটে গেল ভেতরের ঘরে। সিল্কের পাঞ্জাবি গহনা আর টাকা মাটি থেকে তুলে মাধবীলতাকে বলল, ‘আপনারা ভেতরের ঘরে আসুন।’
ভেতরের ঘরে বোধহয় গহনার কাজকর্ম হয়। কিন্তু সেখানে লোকজন নেই। সিল্কের পাঞ্জাবি তার মালিককে বলল, ‘এরা বারো আনা সোনা বন্ধক রাখতে এসেছিলেন। আমি যখন ওজন করছিলাম তখন ডাকাতরা এল।’
‘আর তুমি দরজা খুলে দিলে?’ খিঁচিয়ে উঠল মালিক। তারপর অর্কর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি ওদের সঙ্গী নও তো?’
অর্ক অবাক হল। মাধবীলতা বলল, ‘ও আমার ছেলে।’
‘যে কোন ডাকাতই একজনের ছেলে। তাতে কিছু প্রমাণ হয় না।’
সিল্কের পাঞ্জাবি মাথা নাড়ল, ‘জামাইবাবু, এখন মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। এরা ওই দলের হলে এদের গহনা ওরা নিয়ে যেত না। ওই ব্যাগ হাতে ছেলেটাকে এরাই বাধা দিয়েছিল, মনে রাখবেন। ওরা কানপাশা আর আংটি হারিয়েছে।’
‘হুম।’ মালিক চোখ ছোট করলেন, ‘তা এখন কি করতে হবে?’
সিল্কের পাঞ্জাবি বলল, ‘পুলিস আসার আগেই এগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। আমাদের বলতে হবে সব গহনা আর টাকা ডাকাতরা নিয়ে গেছে। এগুলো যে পড়ে গিয়েছিল বলা চলবে না। বুঝতে পেরেছেন?’
আচমকা মালিকের শরীরে চাঞ্চল্য দেখা দিল। সে ঘন ঘন মাথা নেড়ে বলল, ‘গুড। সরিয়ে ফেল, সরিয়ে ফেল এগুলোকে। মহাদেবকে দিয়ে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দাও।’
সিল্কের পাঞ্জাবি সেগুলোকে টেবিলের ওপর রেখেছিল। এবার সে মাধবীলতাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এর মধ্যে আপনার জিনিস আছে?’
মাধবীলঅ মাথা নাড়ল, ‘না।’ কিন্তু তখনই সে আংটিটাকে দেখতে পেল, ‘এইটে আমার।’ সে আংটিটাকে তুলে নিতেই সিল্কের পাঞ্জাবি বলল, ‘পরে ফেলুন।’
মাধবীলতার আঙ্গুলের সাদা দাগ আবার ঢেকে গেল। টাকার বাণ্ডিল থেকে দেড় হাজার টাকা তুলে মালিক বলল, ‘এই নিন আপনার কানপাশার দাম। মনে করুন বিক্রি করে দিয়েছেন। আর তার বিনিময়ে একটি অনুরোধ, পুলিস এলে বলবেন না যে এগুলো ওরা ফেলে গেছে।’
মাধবীলতার হাতে টাকা, কিন্তু সে বলল, ‘মাপ করবেন, আমি মিথ্যে বলতে পারব না। এগুলো পেয়ে তো আপনার লাভ হল, লুকোচ্ছেন কেন?’
মালিক বলল, “সে আপনি বুঝবেন না। সত্যি কথা বললে ওই দেড় হাজার আর আংটিটা ফেরত পাবেন না। কি চান বলুন!’
মাধবীলতা বলল, ‘দেখুন, এই দেড় হাজার আমার ন্যায্য পাওনা।’
‘কোন প্রমাণ আছে আপনি কানপাশা আর আংটি আমাকে দিয়েছিলেন? নেই। আমি তবু আপনাকে দিচ্ছি।’
এইসময় সিল্কের পাঞ্জাবি গহনা আর টাকার পুঁটলি নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতেই সামনের দরজায় পুলিস এল। প্রথমেই তারা দর্শকদের হঠিয়ে দিল দোকান থেকে। দারোগার সামনে মালিক কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
প্রায় এক ঘণ্টা বাদে মুক্তি পেল ওরা। মাধবীলতাকে নিজের মুখে মিথ্যে কথা বলতে হয়নি। সিল্কের পাঞ্জাবি যে বিবরণ দিয়েছিল সেটা সত্যি কিনা তাই যাচাই করতে দারোগা মাধবীলতাকে যেসব প্রশ্ন করেছিল তাতে ব্যাগটা পড়ে যাওয়ার কথা ছিল না। শুধু তিনি এর মধ্যে একজন পুলিসকে পাঠিয়ে মাধবীলতার ঠিকানা যাচাই করে নিয়েছিলেন। সে অনিমেষকে প্রশ্ন করে জেনেছে যে মাধবীলতা অর্ককে নিয়ে গহনা বিক্রি করতে গিয়েছে। একটা বিবরণ তৈরি করার পর দারোগা তাতে সই নিয়ে ওদের ছেড়ে দিল। বলা হল, প্রয়োজনে তাদের আবার ডাকা হবে।
রাস্তায় তখনও প্রচুর লোক। সবাই মাধবীলতা আর অর্কর দিকে তাকিয়ে। ওদের দেখতে পেয়ে ভিড় জমে যাচ্ছিল। ডাকাতির বিবরণ জানবার জন্যে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছিল সবাই। নাস্তানাবুদ হয়ে কোনরকমে মুক্তি পেয়ে ওরা একটা রিকশায় উঠতেই মাধবীলতা নেতিয়ে পড়ল। অর্ক উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘কি হয়েছে তোমার?’ মাধবীলতা মাথা নাড়ল, কিছু না।
রিকশাটাকে বড়রাস্তা দিয়ে যেতে বলায় সেটা এফ ডি আই স্কুলের রাস্তায় চলছিল। মাধবীলতা বলল, ‘কি করলাম কে জানে! হয়তো অন্যায় হল।’
অর্ক বলল, ‘মোটেই অন্যায় হয়নি। আমাদের জিনিসগুলো তো হারালাম।’
মাধবীলতা বলল, ‘কি জানি।’
অর্ক বলল, ‘তুমি বেশী বেশী ভাবো।’
মাধবীলতা চোখ খুলল, ‘তাই?’
অর্ক হাসল, ‘তবে তুমি সাহস দেখিয়েছ!’
হঠাৎ মাধবীলতা সোজা হয়ে বসল, ‘হ্যাঁরে, তিস্তা নদীটা কোথায় বল তো?’
‘এখন যাবে? চল।’ অর্ক রিকশাওয়ালাকে নির্দেশ দিল।
পোস্ট অফিসের পাশ দিয়ে সোঁ সোঁ করে রিকশা খানিকটা পথ পেরিয়ে বাঁধের কাছে চলে এল। অর্ক বলল, ‘নেমে এস। ওই বাঁধের ওপাশেই তিস্তা।’
মাধবীলতা রোমাঞ্চিত হল। এই রোমাঞ্চ কেন তা সে জানে না। ছেলের হাত ধরে সে দ্রুত পা ফেলে বাঁধের ওপরে উঠে এসেই অবাক হয়ে গেল। বালির ওপরে ছোট ছোট চালাঘর, দূরে একটা কাঠের দোতলা দেখা যাচ্ছে। কাশ বনে হাওয়া খেলছে। কিন্তু কোথাও জল নেই। বিরাট চরটা শুকনো এবং একটি নবীন বাসভূমির আকার নিচ্ছে। মাধবীলতার মুখ থেকে বেরিয়ে এল, ‘এই তিস্তা!’