৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
হেলেনের জন্ম ১৮৮০ সালের ২৭ জুন উত্তর আমেরিকার টুসকুমবিয়া নামে এক ছোট শহরে। বাবার নাম আর্থার কেলার, মায়ের নাম ক্যাথরিন। আর্থার ছিলেন সামরিক বিভাগের একজন অফিসার। জন্ম সূত্রে সুইডিশ। তার পূর্বপুরুষরা ভাগ্য অন্বেষণে আমেরিকায় এসেছিল।
জনের সময় হেলেন ছিলেন সুস্থ সবল স্বাভাবিক আর দশটি শিশুর মত। এক বছর বয়সে তার কলকাকলি আর চঞ্চল পদশব্দে সমস্ত ঘর ভরে উঠত। দেখতে দেখতে এক বছর সাত মাসে পা দিলেন হেলেন। একদিন মা তাকে গোসল করিয়ে ঘর থেকে বার হচ্ছিলেন। মায়ের কোল থেকে মাটিতে পড়ে গেলেন হেলেন। সাথে সাথে জ্ঞান হারালেন হেলেন। যখন জ্ঞান ফিরল তখন প্রবল জ্বর। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা দেখলেন আর জ্বর নেই হেলেনের। হঠাৎ যেমন জ্বর এসেছিল তেমনিভাবেই জ্বর ছেড়ে গিয়েছে। আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠলেন মা-বাবা। তখন তারা কল্পনাও করতে পারেননি ভয়ঙ্কর এক দুর্যোগ নেমে এসেছে তাদের একমাত্র সন্তানের জীবনে।
অল্প কিছুদিন যেতেই অনুভব করলেন, আকস্মিক আসা সেই জ্বর কেড়ে নিয়েছে হেলেনের দৃষ্টিশক্তি আর শ্রবণশক্তি। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বললেন, পাকস্থলী আর মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়ার জন্যই হেলেনের জীবনের এই বিপর্যয়।
মেয়ের এই অসহায়তা দেখে বিচলিত হয়ে পড়লেন কেলার দম্পতি। তারা ধরেই নিয়েছিলেন এই মেয়ের জীবনে আর কোন আশা নেই, আলো নেই। একমাত্র যদি কোন অলৌকিক ঘটনা ঘটে।
হেলেন তখন পাঁচ বছর বয়স। চিকিৎসকদের উপর সব বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন আর্থার। এমন সময় সংবাদ পেলেন গুপ্তবিদ্যায় পারদর্শী এক ব্যক্তি নাকি দুরারোগ্য যে কোন ব্যাধি সারাতে পারেন। হেলেনকে তার কাছে নিয়ে গেলেন আর্থার। গুপ্তবিদ্যার প্রভাব হেলেনের জীবনে কোন পরিবর্তন হল না, কিন্তু সেই ভদ্রলোক হেলেনকে লেখাপড়া শেখাবার পরামর্শ দিলেন। তাহলে হয়ত হেলেনের জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে।
আর্থার ভেবে পেলেন না তার এই বোবা অন্ধ মেয়েকে কিভাবে লেখাপড়া শেখাবেন।
ভাগ্যক্রমে সেই সময় ওয়াশিংটনের বিখ্যাত ডাক্তার আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের সাথে পরিচয় হল। ডাক্তার বেল তাকে পরামর্শ দিলেন বোস্টনের পার্কিনস ইনষ্টিটিউশনের সাথে যোগাযোগ করতে। এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছিলেন ডাক্তার
হো। এখানে অন্ধদের কিভাবে শিক্ষা দেওয়া যায় তাই শিক্ষা দেওয়া হত।
ডাক্তার হো হেলেনের মত একটি অন্ধ বোবা মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। স্বামীর সাথে ক্যাথারিনও এই প্রতিষ্ঠানটির সম্বন্ধে কৌতূহলী হয়ে উঠলেন।
সেই সময়ে হো মারা গিয়েছিলেন। পার্কিনস ইনস্টিটিউশনের নতুন ডিরেক্টর হয়ে এসেছিলেন মাইকেল এ্যাগানোস। তিনি কেলার দম্পতির মুখে হেলেনের সমস্ত কথা শুনে একজন শিক্ষয়িত্রীর উপর তার শিক্ষার ভার দেবার পরামর্শ দিলেন।
একদিন সকালে আলবামা শহরে কেলার পরিবারের বাড়িতে এসে হাজির হলেন একুশ বছরের এক তরুণী মিস অ্যানি সুলিভ্যান ম্যানসফিল্ড। হেলেন কেলারের অন্ধকার জীবনে তিনি নিয়ে এলেন প্রথম আলো।
অ্যানির ছেলেবেলা থেকেই দৃষ্টিশক্তি কম ছিল, তাই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হল ম্যাসচুসেট প্রতিবন্ধী আশ্রমে। এই সময় অ্যানি পার্কিনস ইনস্টিটিউটের কথা শুনতে পান।
পার্কিনস ইনস্টিটিউটে ছয় বছর ছিলেন অ্যানি। কয়েকজন বিখ্যাত ডাক্তার এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাদের চিকিৎসায় এবং দুবার অপারেশনের পর চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে পেলেন অ্যানি। অন্ধত্বের নিদারুণ যন্ত্রণার কথা ভেবে অ্যানি স্থির করলেন তিনি অন্ধদের শিক্ষা দেওয়ার কাজেই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করবেন। সেদিন ছিল ৩রা মার্চ ১৮৮৭।
প্রতিটি বস্তুর সাথে প্রথমে পরিচয় করাতেন অ্যানি। হেলেন তার স্পর্শ অনুভূতি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করতেন তার উপর লিখতেন সেই বস্তুর নাম। কখনো আবার হেলেনকে দিয়ে বার বার লেখাতেন সেই নাম।
অল্পদিনেই প্রকাশ পেল হেলেনের অসামান্য প্রতিভা। অ্যানি যা কিছু শেখাতেন অবিশ্বাস্য দ্রুততায় তা শিখে নিতেন হেলেন। লুই ব্রেলা আবিষ্কৃত ব্রেল পদ্ধতিতে (এই পদ্ধতিতে অন্ধরা পড়াশুনা করে। হেলেন কয়েক বছরের মধ্যে শিখলেন ইংরাজি, লাটিন, গ্রীক, ফরাসী এবং জার্মান ভাষা। আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে তিনি খুব সহজেই নিজের মনোভাব প্রকাশ পারতেন।
যখন তার দশ বছর বয়স, একদিন অ্যানি জানতে পারলেন নরওয়ের একটি শিশু বিশেষ পদ্ধতিতে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে। দীর্ঘ এগারো মাস ধরে চলল গুরু-শিষ্যর নিবিড় অনুশীলন। একদিন হেলেনের কণ্ঠে অস্ফুষ্ট স্বরে প্রথম উচ্চারিত হল আমি আর বোবা নই। পরিণত বয়সে বিশেষ চিকিৎসায় তার বাকশক্তি অনেকখানি সহজবোধ্য হয়ে এসেছিল।
কুড়ি বছর বয়েসে হেলেন সাহিত্য দর্শন ধর্ম ইতিহাসে এতখানি জ্ঞান অর্জন করলেন, তাকে র্যাডক্লিফ কলেজে ভর্তি করে দেওয়া হল।
চার বছর পর হেলেন B.A.পাশ করলেন। তাই নয়, সমস্ত কলেজের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ নম্বর পেলেন।
কলেজে পড়বার সময়েই শুরু হল তার সাহিত্যচর্চা। তিনি লিখলেন আত্মজীবনীমূলক ছোট একটি রচনা Optimism { কলেজ থেকে স্নাতক হবার পর তিনি রচনা করলেন তার আত্মজীবনী The story of my life। এতে আছে তার জীবনের তেইশ বছরের কাহিনী। হেলেন লিখেছেন কেমন করে অ্যানি তার মধ্যে শিক্ষার সাথে সাথে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিলেন, কিভাবে অ্যানি তার শ্রদ্ধা ভালবাসা অর্জন করেছিলেন তার অপূর্ব বর্ণনা।
ইতিমধ্যে হেলেনের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ছাপা হবার সাথে সাথেই তার জীবন কাহিনী নিঃশেষ হয়ে গেল। শুধু আমেরিকায় নয়, ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ল তার খ্যাতি।
কলেজ জীবন শেষ করে হেলেন শুরু করলেন তার কর্মজীবন। নিজের জীবনের সমস্ত সুখ থেকে বঞ্চিত হলেও জীবন তার কাছে ছিল গতিময় প্রাণবন্ত।
এইসময় অ্যানি মিঃ ম্যাকি নামে র্যাডিকাল পার্টির এক কর্মকর্তাকে বিবাহ করেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কিছু লোক অ্যানির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে থাকে…তার লেখার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় তিনি একটি রাজনৈতিক মতবাদের সমর্থক।
এই ঘটনায় হেলেন ও অ্যানি দুজনেই বিচলিত হয়ে পড়লেন। যদিও এই ধরনের কুৎসা সমালোচনার বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল হেলেনের তবুও তিনি স্থির করলেন আর সাংবাদিকের জীবন নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে যে অর্থ উপার্জন করবেন তাই দিয়ে জীবন ধারণ করবেন।
অ্যানির সংসার জীবনেও নেমে এল বিভেদ আর অশান্তির আগুন। বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেল দুজনের। হেলেন আর অ্যানি আবার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে বাধা পড়ে গেলেন।
এরপর থেকে দুজনে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে ছোট ছোট মঞ্চে বক্তৃতার আয়োজন করতেন। হেলেলেন সম্বন্ধে মানুষের মনের মধ্যে এমন এক অবিমিশ্রিত কৌতূহল আর শ্রদ্ধা জেগে উঠেছিল, দলে দলে লোক এসে তার সভায় ভিড় করত। এইভাবে বক্তৃতা করে যে অর্থ উপার্জন হত তাতে অতি কষ্টে দিন গুজরান হত দুজনের।
কিন্তু দুর্ভাগ্য নেমে এল অন্য দিক থেকে। অ্যানির দৃষ্টিশক্তি কোনদিনই ভাল ছিল না। ক্রমশই তা খারাপের দিকে যেতে আরম্ভ করল। অল্পদিনেই প্রায় অন্ধ হয়ে গেলেন অ্যানি।
দুটি অবলা নারী ও নিজের ব্যয়ভার বহন করা ক্রমশই কষ্টকর হয়ে উঠছিল হেলেনের কাছে। বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে বক্তৃতার আয়োজন করে যে সামান্য অর্থ আয় হত, সমস্ত ব্যয়ভার মেটাবার পর হাতে সামান্য অর্থই উদ্ধৃত থাকত।
হেলেন বহু বিশ্ববিখ্যাত মানুষের সাথে মিলিত হয়েছেন, তাদের সাথে কথাবার্তা বলেছেন। যারাই তার সংস্পর্শে এসেছে তারাই মুগ্ধ হয়েছে।
হেলেনের একজন অনুরাগী ছিলেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোকাল ফিজিওলজির অধ্যাপক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল (ডাক্তার বেলই প্রথম হেলেনের বাবাকে পার্কিনস ইনস্টিটিউটের সন্ধান দেন)। ডাক্তার বেলই টেলিফোনের আবিষ্কারক। হেলেনকে নিজের কন্যার মত স্নেহ করতেন, তাকে নানাভাবে সাহায্য করতেন।
ডাক্তার বেলের নেশা ছিল দেশভ্রমণের। হেলেন এবং অ্যানিকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়লেন ইউরোপে।
যখন যে দেশে গিয়েছেন হেলেন কেলার সেই দেশের মানুষের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রনায়ক থেকে আরম্ভ করে সাধারণ মানুষ যারাই তার সংস্পর্শে এসেছেন, সকলেই মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখেছেন এই অসামান্য প্রতিভাময়ী নারীকে।
উডু-উইলসন, স্যার হেনরি আর্ভিং, মার্ক টোয়েন, বার্নার্ড শ, জহরলাল নেহরু সকলেই ছিলেন তার গুণমুগ্ধ অনুরাগী।
এই সময় হলিউডের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হেলেনের কাছে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব করেন। ছবির নাম রাখা হয় Deliverrance। এই চলচ্চিত্রে হেলেনের প্রকৃত জীবনকে বাদ দিয়ে তাকে জোয়ান অব আর্কের সমগোত্রীয় করে তোলা হয়, যে যুদ্ধের বিরুদ্ধে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে।
১৯২২ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল মারা গেলেন। তিনি ছিলেন “American Foundation for Blind”-এর সম্পাদক। তার মৃত্যুর পর ডাক্তার বেলের অন্তিম ইচ্ছা
অনুসারে এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলেন হেলেন। এতদিন তিনি এককভাবে অন্ধদের কল্যাণে কাজ করেছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বহু মানুষ নিজেদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। হেলেন অনুভব করলেন এই অন্ধ মানুষদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন।
তিনি আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর ব্লাইন্ড”-এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকলেও পৃথিবীর বহু সংস্থার সাথেই ছিল তার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। শুধু আমেরিকা নয়, পৃথিবীর বহু দেশে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দিয়েছেন। মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাকে অর্থ সাহায্য করেছে। সেই অর্থে তিনি দেশে দেশে গড়ে তুলেছিলেন অন্ধদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এইভাবে প্রায় পঞ্চাশটি প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তুলেছিলেন। একজন মানুষ শুধুমাত্র সদিচ্ছা নিয়ে কতদূর এগিয়ে যেতে পারে, কি বিশাল কর্মযজ্ঞের নায়ক হতে পারে হেলেন কেলার তার প্রকষ্ট উদাহরণ।– তার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার অন্ধ মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করে নিজেদের সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্ধকারের বুকে তাদের জীবনে জ্বলে উঠেছে। আলো।
১৯৩৬ সালে আকস্মিকভাবে কেলারের জীবনে নেমে এল বিরাট আঘাত। তার শিক্ষয়িত্রী, সঙ্গী, সহকারী, অ্যানি সুলিভান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এর অল্পদিন পরেই মারা গেলেন অ্যানি।
ইতিমধ্যে ইউরোপের বুকে শুরু হল বিশ্বযুদ্ধ। মানবতার পূজারী এই নারী দেশে দেশে ঘুরে আহত মানুষদের সেবা করেছেন। অন্ধ বিকলাঙ্গ পঙ্গু মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের সাহায্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ হেলেনকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। আমেরিকায় গিয়ে দুজনের পরিচয় হয়। সেই সময় কবি তাকে শান্তিনিকেতনে আসবার আমন্ত্রণ জানান। হেলেন সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন ১৯৫৫ সালে তিনি ভারতে আসেন। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে তাকে সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কলকাতাতেও এসেছিলেন তিনি। এখানে অন্ধ স্কুল পরিদর্শন করেন।
দেশ ভ্রমণ সমাজ কল্যাণকর কাজের মধ্যেও তিনি নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তার লেখা কয়েকখানি উল্লেখযোগ্য বই, আমার জীবন কাহিনী, ১৯০৩ (‘The story of my life) আমার জগৎ ১৯০৮ (The world I live in), বিশ্বাস রাখ, ১৯০৪, (Let us have faith) শিক্ষিকা মিস অ্যানি স্যুলিভান, ১৯৫৫, (Teacher Annie Sullivan); খোলা দরজা, ১৯৫৭ (The open door)।
১৯৫০ সালে সতের বছর বয়সে পা দিলেন হেলেন কেলার। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। প্যারিসে সেই উপলক্ষে এক বিরাট সম্বর্ধনার আয়োজন করা হল। দেশ-বিদেশ থেকে সাংবাদিকের দল এসে ভিড় করল প্যারিসে। সকলেই ভেবেছিল তিনি বোধ হয় এই কর্মময় জীবন থেকে ছুটি নেবেন। কিন্তু হেলেন কেলার ছিলেন এক অন্য ধাতুতে গড়া মানুষ। সেবা আর কর্মের মাঝেই একাত্ম হয়েছিল তার জীবন। তাই ১লা জুলাই ১৯৬৮ সালে যখন তিনি মারা গেলেন তখনও তিনি ছিলেন কর্মরত।
পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও হেলেন কেলার আজও পৃথিবীর সমস্ত অন্ধ বিকলাঙ্গ পঙ্গু প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে এক প্রেরণা আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন জীবনের দৃষ্টান্ত প্রকৃতই বিরল।