৩৬. শুক্লযজুর্বেদ – ষট‌ত্রিংশ অধ্যায়

ষট্‌ত্রিংশ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– ঋচং বাচং এ পদ্যে মনো যজুঃ প্র পদ্যে সাম প্রাণং প্র পদ্যে চক্ষুঃ স্রোত্ৰং প্র পদ্যে। বাগোজঃ সহৌজো ময়ি প্রাণাপানৌ১৷৷ যন্মে ছিদ্রং চক্ষুষো হৃদয়স্য মনসো বাতিতৃপ্নং বৃহস্পতিৰ্মে তন্দধাতু। শং নো ভবতু ভুবনস্য যম্পতিঃ।২৷৷ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুবরেণাং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদ্দয়াৎ৷৷৩৷ কয়া নশ্চিত্র আ বুবদূৰ্তী সদাবৃধঃ সখা। কয়া শচিয়া বৃতা।৪৷ কত্ত্বা সতত্যা মদানাং মংহিষ্ঠো মৎসন্ধসঃ। দৃঢ়া চিদারুজে বসু৷৷৷৷ অভী য়ু ণঃ সখীনামবিতা জরিতৃণা। শতং ভবাস্যুতিভিঃ৷৷৷৷কয়া ত্বং ন উত্যাভি প্র মন্দসে বৃষ। কয়া স্তোতৃভ্য আ ভর।৭৷৷ ইন্দ্রো বিশ্বস্য রাজতি। শং নো অস্তু দ্বিপদে শং চতুষ্পদে৷৷৷৷ শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ শং নো ভবমা। শং ন ইন্দ্রো বৃহস্পতিঃ শং নো বিষ্ণুরুরুক্ৰমঃ।৯৷৷ শং নো বাতঃ পবতাং শং নস্তপতু সূৰ্য্যঃ। শং নং কনিক্ৰদৰ্দেবঃ পর্জনন্যা অভি বৰ্ষতু।১০৷ অহানি সং ভবন্তু নঃ শং রাত্রীঃ প্রতি ধীয়তা। শং ন ইন্দ্রাগ্নী ভাবতামবোভিঃ শং ন ইন্দ্রাবরুণা রাতহব্যা। শং ন ইন্দ্রাপুষণা বাজাতে শমিন্দ্রাসোমা সুবিতায় শং যোঃ নঃ ॥১১৷৷ শং নো দেবীরভিষ্টয় আপো ভবন্তু পীতয়ে।শং যোরভি স্রবন্তু নঃ১২সস্যানা পৃথিবি নো ভবানৃক্ষরা নিবেশনী। যচ্ছা নঃ শৰ্ম সপ্রথাঃ।১৩৷৷ আপো হি ষ্ঠা ময়োভূবস্তা ন ঊর্জে দধাতন। মহে রণায় চক্ষসে৷৷১৪৷৷ যো ৰঃ শিবতমো রসস্তস্য ভাজয়তেহ নঃ। উশতীরিব মাতরঃ।।১৫৷ তস্মা অরং গমাম বো যস্য ক্ষরায় জিম্বথ। আপো জনয়থা চ নঃ।।১৬৷৷ দৌঃ শান্তিরন্তরিক্ষং পৃথিবী শান্তিরাপঃ শান্তিরোষধয়ঃ শান্তিঃ। বনস্পতয় শান্তির্বিশ্বে দেবাঃ। শান্তিব্রহ্ম শান্তিঃ সর্বং শান্তিঃ শান্তিরে শান্তিঃ সামা শান্তিরেধি৷১৭৷দৃতে দৃংহ মা মিত্রস্য মা চক্ষু সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষা। মিত্রস্যাহং চক্ষুষ সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষে। মিত্রস্য চক্ষুষা সমীক্ষামহে৷৷১৮৷৷ দৃতে দৃংহ মা। জ্যোক্তে সসি জীব্যসং জ্যোক্তে সদৃশি জীব্যাস৷১৯৷নমস্তে হরসে শোচিষে নমস্তে অস্ত্রার্চিষে। অন্যান্তে অস্মত্তপন্তু হেতয়ঃ পাবকো অস্মভ্যং শিবো ভব৷৷২০ নমস্তে অন্তু বিদ্যুতে নমস্তে স্তনয়িত্নবে। নমস্তে ভগবস্তু যতঃ স্বঃ সমীহসে৷৷২১৷ যততা যতঃ সমীহসে ততো নো অভয়ংকুরু।শংনঃকুরু প্রজাভ্যোহভয়ংনঃ পশুভ্যঃ৷৷২২। সুমিত্রিয়া নআপ ওষধয়ঃ সন্তু দুর্মিত্রিয়াস্তস্মৈ সন্তু যোহশ্মন্ দ্বেষ্টি যং চ বয়ং দ্বিষ্মঃ ২৩৷৷ তচক্ষুদেবহিতং পুরাছুমুচ্চরৎ। পশ্যেম শরদঃ শতং জীবেম শরদঃ শতং শৃণুয়াম শরদঃ শতং প্রত্ৰবাম শরদঃ শতমদীনাঃ স্যাম শরদঃ শতং ভূয়শ্চ শরদঃ২৪৷

 [কণ্ডিকা-২৪, মন্ত্র–২৪]

.

মন্ত্ৰার্থঃ– ১।ঋচা বা ঋক্ (বেদ) রূপ বাণীকে প্রাপ্ত হচ্ছি। মন রূপ যজুর্বেদকে প্রাপ্ত হচ্ছি। সাম রূপ প্রাণকে প্রাপ্ত হচ্ছি। চক্ষু ও শ্রোত্রকে প্রাপ্ত হচ্ছি। বাক্, ওজ, শত্ৰুংসহ বল, বীর্য, প্রাণ এবং অপান আমাতে প্রাপ্ত হোক।

২। চক্ষু বা হৃদয়ের যে ছিদ্র আমাতে বিদ্যমান আছে অথবা মনের যে অতিহিংসন (ব্যাকুলতা) হয়ে গিয়েছে, আমার সেইগুলি বৃহস্পতি সম্পূর্ণ করুক (অর্থাৎ নিরোগ করুক)। যে স্বামী (অধিপতি বা পালক), সে আমাদের প্রতি সুখস্বরূপ হোক।

৩। ভূঃ ভুবঃ স্বঃ। বরণীয় সবিতাদেবের সেই বরণীয় তেজকে আমরা ধারণ করছি। সে আমাদের বুদ্ধিসমূহকে সৎপথে প্রেরিত করুক।

৪। বিচিত্র ও সদাবর্ধক সেই ইন্দ্র আমাদের কোন্ স্তুতির দ্বারা আপন রক্ষাশক্তির সাথে আমাদের মিত্র হয়ে থাকে? কোন্ অত্যন্ত সুগঠিত স্তুতির দ্বারা বরণকৃত হয়ে (সে আমাদের রক্ষক হবে)?

৫। হে ইন্দ্র! সকল মদকারী পদার্থের মধ্যে কোন্ রকম অত্যন্ত মদকরী সোমরস তোমাকে মদমত্ত করে, যে মদে তুমি অত্যন্ত দৃঢ় হয়েও শত্রুধন বিভেদিত (বা ছিন্ন) করে নিয়ে থাকো?

৬। হে ইন্দ্র! আমাদের মিত্র স্তোতাগণকে কবে তুমি আপন অসংখ্য রক্ষাসমূহের সাথে রক্ষক হয়ে থাকো? (যজ্ঞে কখন তুমি আগমন করছ?)।

৭। হে অভীষ্ট বর্ষক ইন্দ্র! কোন্ রক্ষার দ্বারা তুমি আমাদের আনন্দিত করছ? কোন্ স্তুতির দ্বারা প্রসন্ন হয়ে তুমি স্তোতৃগণের নিমিত্ত সম্পূর্ণ ধন আহরণ করে থাক?

৮। ইন্দ্রই সকল জগতের (বিশ্বের) রাজা। সে আমাদের দ্বিপাদ মনুষ্য ইত্যাদির নিমিত্ত সুখদ হোক; চতুষ্পদ গো ইত্যাদির নিমিত্তও (সুখদায়ক হোক)।

৯। মিত্রদেবতা আমাদের নিমিত্ত সুখদ হোক। বরুণদেব সুখদ থোক এবং অর্যমা দেবতাও আমাদের নিমিত্ত সুখকরী হোক। ইন্দ্র ও বৃহস্পতি দেবতাদ্বয় আমাদের নিমিত্ত সুখস্বরূপ তোক। উরুক্রম (অর্থাৎ বিস্তৃত পদক্ষেপ সম্পন্ন) বিষ্ণুঃ আমাদের সুখকারী হোক৷

১০। বায়ু আমাদের নিমিত্ত সুখকারী হয়ে প্রবাহিত হোক। সূর্য আমাদের নিমিত্ত সুখকর তাপ প্রদান করুক। গর্জনকারী পর্জন্য দেব আমাদের নিমিত্ত সুখদায়ক বর্ষণ করুক।

১১। দিবসগুলি আমাদের নিমিত্ত সুখকর হোক। রাত্রিসমূহ সুখ প্রদান করুক। ইন্দ্র ও অগ্নিদেব আপনাপন রক্ষার দ্বারা আমাদের সুখকর হোক। প্রদত্ত হবিঃ ইন্দ্র ও বরুণদেবতা আমাদের নিমিত্ত সুখদ হোক। অন্নপ্রাপক যুদ্ধ বা যজ্ঞে ইন্দ্র ও পূষা দেবতাদ্বয় সুখদ হোক। আমাদের নিমিত্ত সুখদ জীবন, সুখপ্রাপ্তি ও রোগ ইত্যাদি নিবারণে ইন্দ্র ও সোম দেবতাদ্বয় সুখদ হোক।

১২। অভীষ্ট সিদ্ধি ও পানের নিমিত্ত দ্যোতমানা জল আমাদের নিমিত্ত সুখদা হোক। আমাদের সুখপ্রাপ্তি এবং রোগ নিবারণের অনুকূলা হয়ে তারা সুবিত হোক।

১৩। হে পৃথিভী! তুমি আমাদের নিমিত্ত সুখস্বরূপা, অকণ্টকা (দুঃখরহিতা) এবং বাসয়িতা (বাসের যোগ্য) হও। তুমি আমাদের সবিস্তার সুখ প্রদান করো।

১৪। জলের অধিষ্ঠাত্রী  দেবীগণ সুখকারিণী হোক। তারা আমাদের মহারমণীয় প্রকাশের নিমিত্ত বলে (সামর্থ্যে) স্থাপিত করুক।

১৫। হে আপঃ (জলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী)! তোমার যে অত্যন্ত সুখকর সার (বা রস) আছে, সেইগুলিকে তুমি এই স্থানে আমাদের ভাজুন (যোগ্য ভোগকারী) করে দাও, যেমন কাময়মানা মাতৃগণ আপন পুত্রগণকে স্তন্যপান করিয়ে থাকেন।

১৬। হে আপঃ! আমরা তোমাদের সেই রস প্রভূত মাত্রায় প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে তার নিকট গমন করি, যার যজ্ঞগৃহের নিমিত্ত তোমরা অনুকূল হয়ে থাক। হে জলসমূহ। তোমরা আমাদের পবিত্র করো।

১৭। দ্যুলোক, অন্তরিক্ষলোক, পৃঙ্খীলোক, জল, ওষধিসমূহ, বনস্পতি সকল, দেবগণ, শব্দব্রহ্ম তথা সব কিছু আমাদের নিমিত্ত শান্তিময় হোক। স্বয়ং শান্তিই শান্তিময়ীরূপে আমাদের প্রাপ্ত হোক। সে-ই আমাদের সর্বশান্তি বৃদ্ধি করুক।

১৮। হে মহাবীর ঘট! তুমি আমাকে জরাজর্জরিত হলেও দৃঢ় করো। সকল প্রাণী যেন আমাকে মিত্রের দৃষ্টিতে দর্শন করে। আমিও যেন সকল প্রাণীকে মিত্রের দৃষ্টিতে দর্শন করি। আমরা সকলে যেন পরস্পর মিত্রের দৃষ্টিতে দর্শন করি।

১৯। হে মহাবীর ঘট! তুমি আমাকে দৃঢ় করো। আমরা তোমার কৃপাদৃষ্টিতেই জীবরিত আছি, আমরা তোমার দয়াদৃষ্টিতে গঠিত আছি।

২০। হে পবিত্রকারী অগ্নি! আমাদের নিমিত্ত তুমি কল্যাণকরী হও। রসহরণশীল জ্যোতির নিমিত্ত তোমাকে নমস্কার করছি। জ্বালাসমূহের নিমিত্ত তুমি নমস্কার প্রাপ্ত হও। অন্য শত্রুগণকেই তোমার জ্বালাসমূহ তাপদগ্ধা করুক৷

২১। হে ভগবন্! সেই সবই আমাদের নমস্কার প্রাপ্ত হোক, যাদের দ্বারা তুমি আমাদের সুখ সম্পাদিত করতে আকাঙ্ক্ষা করো। বিদ্যুতের নিমিত্ত (বা বিদ্যুঞ্জপী) তোমাকে নমস্কার করছি। গর্জনের নিমিত্ত (বা গর্জনরূপী) তোমাকে নমস্কার করছি।

২২। হে মহাবীর ঘট! হে ভগবন্! যে যে দুশ্চরিত হতে তুমি উচিত মনে করো, তাদের হতে আমাদের নির্ভয় করো। আমাদের সন্তানগণকে তুমি সুখ দান করো এবং আমাদের পশুগণকে অভয়ত্ব প্রদান করো।

২৩। আপঃ (জল) ওষধিসমুদায় আমাদের নিমিত্ত মিত্ররূপা হোক। তারা (অর্থাৎ সেই জলরাশি ও ওষধি সমুদায়) তাদের পক্ষে বা নিমিত্ত শত্রুরূপা হোক, যারা আমাদের প্রতি দ্বেষ করে এবং আমরা যাদের প্রতি দ্বেষ করি।

২৪। দেবতাগণের হিতের নিমিত্ত স্থাপিত সেই সর্বচক্ষু সূর্যের পূর্ব দিকে উদয় হচ্ছে। আমরা তার প্রসাদে শত বর্ষ পর্যন্ত দর্শন করব, শত বর্ষ পর্যন্ত জীবিত থাকব। আমরা তার প্রসাদে শত বর্ষ পর্যন্ত শ্রবণ করব; (অর্থাৎ স্পষ্ট শ্রবণেন্দ্রিয়সম্পন্ন হয়ে থাকব)। আমরা তার প্রসাদে শত বর্ষ পর্যন্ত বাক-সম্পন্ন হবো; (অর্থাৎ অখলিত বাগিন্দ্রিয়শালী থাকব) আমরা তার প্রসাদে শত বর্ষ পর্যন্ত অদীন হয়ে থাকব; (অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে দৈন্যরহিত হয়ে জীবন বাহিত করব)। শত শত বৎসরের পরেও বহুকালব্যাপী আমরা এমনই থাকব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *