অধ্যায় : ৩৬ মুযারাআ (ভাগচাষ)
ধারা-৮৫৭
সংজ্ঞা নির্ধারিত হারে উৎপন্ন ফসল ভাগ করিয়া নেওয়ার শর্তে ভূম্যাধিকারী কর্তৃক তাহার জমি অপর ব্যক্তিকে চাষাবাদ করিতে দেওয়াকে “মুযারাআ” বা ভাগচাষ” বলে।
বিশ্লেষণ
মুযারাআ ( 21 ) শব্দটি ‘যারউন’ (১১) শব্দ হইতে নির্গত। যারউন শব্দের অর্থ ‘জমি চাষ করা’, ‘বীজ বপন করা। মুযারাআ শব্দের অর্থ ভাগচাষে জমি বন্দবস্ত দেওয়া এবং এই শব্দটিই ভাগচাষের পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হইয়াছে। হিদায়া গ্রন্থে বলা হইয়াছে, “শরীআতে মুযারাআ একটি চুক্তি, যাহা উৎপন্ন ফসলের অংশবিশেষ প্রদানের শর্তে অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ জমি চাষাবাদকারী যে ফসল উৎপন্ন করিবে, তাহার একটি অংশ ভূম্যাধিকারী পাইবে-এই শর্তে পক্ষবৃন্দের মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয় তাহাকে মুযারাআ বলে।
কোন ব্যক্তি তাহার জমি নিজেও চাষাবাদ করিতে পারে অথবা অপরের সাহায্যেও চাষাবাদ করাইতে পারে। অন্যের দ্বারা চাষাবাদ করানোর তিনটি পন্থা আছেঃ (১) শ্রমিক নিয়োগ করিয়া চাষাবাদ করানো। এই ক্ষেত্রে চাষাবাদের যাবতীয় খরচ এবং শ্রমিকের মজুরি জমির মালিক বহন করিবে এবং উৎপন্ন ফসল সে লাভ করিবে। (২) বীজ মালিক সরবরাহ করিবে এবং শ্রম ও হাল-বলদ জমি চাষকারী সরবরাহ করিবে এবং উৎপন্ন ফসল চুক্তি মোতাবেক উভয়ে ভাগ করিয়া লইবে। (৩) মালিক তাহার জমি নগদ অর্থের বিনিময়ে
৬৪৬
ইজারা প্রদান করিতে পারে। এই ক্ষেত্রে ইজারাদার মূল্য পরিশোধ করিয়া জমি চাষাবাদ করিবে এবং উৎপাদিত ফসলের মালিক সেই হইবে।
আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবী বা জমি মানবজাতির কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করিয়াছেন। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
والأرض وضعها ينام فيها فاكهة والخل ذات الأكمام. والحب و العصف والريحان.
“তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করিয়াছেন সৃষ্ট জীবের জন্য। ইহাতে রহিয়াছে ফলমূল এবং খেজুর বৃক্ষ, যাহার ফল আবরণযুক্ত এবং খােসা বিশিষ্ট ফসল ও সুগন্ধ গুল্ম”- (সূরা আর-রহমানঃ ১০-১২)।
هو الذي جعل لكم الأرض ولا فامشوا في مناكبها ولوا من رزقه
“তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করিয়া দিয়াছেন। অতএব তোমরা দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তাহার প্রদত্ত জীবনোপকরণ হইতে আহার্য গ্রহণ কর”- (সূরা মুকঃ ১৫)।
أفرايم اتحرثون. انتم تزرعونه أم نحن
الزارعون .
“তোমরা যে বীজ বপন কর সেই সম্পর্কে চিন্তা করিয়াছ কি? তোমরা কি উহাকে অংকুরিত কর, না আমি অংকুরিত করি?”–(সূরা ওয়াকিআঃ ৬৩-৪)।
أولم يروا أثانسوق الماء الى الأرض الجرز فتخرج به زرا تأكل منه أنعامهم وأنفسهم.
“তাহারা কি লক্ষ্য করে না, আমি উষর ভূমির উপর পানি প্রবাহিত করিয়া উহার সাহায্যে শস্য উদ্গত করি, যাহা হইতে তাহাদের গৃহপালিত পশু ও তাহারা আহার গ্রহণ করে?” – (সূরা সাজদাঃ ২৭)। মহানবী (স) বলেন :
৬৪৭
৬৪৭
ما من مسلم يغرس غرسا أو يزرع زرعا يأكل منه طير أو إنسان أو بهيم الأكان له به صدقة.
“কোন মুসলমান যে বৃক্ষ রোপন করে অথবা যে ফসল উৎপাদন করে এবং তাহা হইতে পাখি, মানুষ ও পশু যাহা খায় তাহা তাহার জন্য দান-খয়রাত হিসাবে গণ্য হয়।”
ধারা-৮৫৮
মুযারাআ চুক্তি (ক) পক্ষবৃন্দের ঈজাব-ককূলের মাধ্যমে মুযারাআ চুক্তি পাদিত হয়। (খ) মুযারাআ প্রথা বৈধ।
বিশ্লেষণ
ভূম্যাধিকারী চাষীকে লক্ষ্য করিয়া বলিবে, আমি এই জমি এত হাবে ফসল প্রদানের শর্তে তোমাকে চাষাবাদ করিতে দিলাম। চাষী বলিবে, আমি কবুল করিলাম, আমি সম্মত হইলাম, অথবা অনুরূপ কোন কথা বলিবে। এইভাবে ঈজাব-কবুল পাওয়া গেলে মুযারাআ চুক্তি সম্পাদিত হইবে।
ভাগচাষ প্রথা বৈধ কি না এই বিষয়ে প্রচুর মতভেদ আছে। ইমাম আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ ও আহমাদ (র)-এর মতে ভাগচাষ বৈধ। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা, মালেক ও শাফিঈ (র)-এর মতে ভাগচাষ বৈধ নহে।
যাহারা মুযারাআকে বৈধ মনে করেন তাহারা খায়বার এলাকার জমি ইহূদীদেরকে ভাগচাষে প্রদানের ঘটনা নিজেদের মতের সমর্থনে পেশ করেন। উক্ত এলাকা বিজীত হওয়ার পর তথাকার ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া আবেদন করিল, আপনি আমাদেরকে এখানে বসবাস করিতে দিন। আপনার পক্ষে আমরা এখানকার জমি চাষাবাদ করিব। উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক আপনি পাইবেন এবং অর্ধেক আমরা পাইব। রাসূলুল্লাহ (স) তাহাদের প্রস্তাব অনুমোদন করেন। রাসূলুল্লাহ (স)-এর তিরোধানের পরও আবু বা (রা)-র
৬৪৮
খেলাফতকাল এবং উমার (রা)-র খেলাফতের প্রথমাংশ পর্যন্ত উক্ত বন্দবস্ত বহাল থাকে। অতঃপর উমার (রা) রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অপরাধে ইহূদীদেরকে তথা হইতে বিতাড়িত করেন।
উক্ত হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহানবী (স) ভাগচাষ করাইয়াছেন-নিজের পক্ষ হইতেও, রাষ্ট্রের পক্ষ হইতেও এবং খায়বারের জমির পনর শত মালিকের পক্ষ হইতেও। এই বন্দবস্ত তাহার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এবং তাহার পরের দুই খলীফার যুগেও তাহা অব্যাহত থাকে। অতএব ইহার দ্বারা ভাগচাষ প্রথা বৈধ প্রমাণিত হয়।
মহানবী (স) হিজরত করিয়া মদীনা শরীফে আগমন করিলে তথাকার আনসার মুসলমানগণ তাহার নিকট আবেদন করেন?
قسم بيننا وبين اخواننا الخل.
“আপনি আমাদের খেজুর বাগান আমাদের ও আমাদের (মুহাজির) ভাইদের মধ্যে বণ্টন করুন।”
কিন্তু রাসূলুল্লাহ (স) তাহা করিতে অসম্মতি প্রকাশ করিলে আনসারগণ মুহাজিরগণকে বলেনঃ
تكفونا العمل و شرم في الثمرة .
“আপনারা আমাদের পক্ষ হইতে উক্ত বাগানে কাজ করুন এবং আমরা উ ৎপাদিত ফলে আপনাদের শরীক করিব।” এই প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করিয়া মুহাজিরগণ বলেনঃ
سمعنا و أطعنا۔
“আমরা আপনাদের প্রস্তাব মানিয়া নিলাম।” ইমাম বুখারী (র) তাহার সহীহ গ্রন্থে ভাগচাষ সম্পর্কিত অধ্যায়ের ৮ নং অনুচ্ছেদে লিখিয়াছেন যে, “অর্ধেক বা অনুরূপ পরিমাণ ফসলের শর্তে ভাগে চাষাবাদ করা। কায়স ইব্ন মুসলিম (র) আবু জাফর (ইমাম মুহাম্মাদ বাকের) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি বলেন, মদীনাতে মুহাজিরদের এমন কোন পরিবার ছিল না যাহারা এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ ফসলের শর্তে ভাগচাষ করিতেন না। আলী ইব্ন আবু তালিব, সাদ ইবন মালেক, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা), উমার ইবন আবদুল আযীয, কাসেম ইন মুহাম্মাদ, উরওয়া
৬৪১
ইবনুয যুবায়র, আবূ বা (রা)-র পরিবারের লোকেরা, উমার ও আলী (রা)-র পরিবারের লোকেরা এবং ইব্ন সীরীনও ভাগচাষ করাইতেন। হাসান বসরী (র) বলেন, আধাআধি শর্তে তুলা চাষ করাতে কোন দোষ নাই।
আবু জাফর (ইমাম বাকের) বলেন,
كان أبو بكر يعطى الأرض على الشطر .
“আবূ বা (রা) তাহার জমি অর্ধেক ফসল প্রদানের শর্তে ভাগচাষে প্রদান করিতেন।”৬।
ইবন আবী শায়বা (র) আলী (রা)-র নিম্নোক্ত বক্তব্য নকল করিয়াছেনঃ
لا بأس بالمزارعة بالصف .
“অর্ধেক ফসল প্রদানের শর্তে ভাগচাষ করায় কোন দোষ নাই।”
তাউস (র) বলেন, মুআয ইবন জাবাল (রা) মহানবী (স)-এর যুগে এবং তাহার পরে আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রা)-র যুগে তাহার জমি এক-তৃতীয়াংশ ও এক-চতুর্থাংশ ফসল প্রদানের শর্তে ভাগচাষে দিতেন।”৮।
মূসা ইবন তালহা (র) বলেন, উসমান (রা) আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, আম্মার ইন ইয়াসির, খাব্বাব ইবনুল আরাত্তি ও সাদ ইবন মালেক (রা)-কে জমি প্রদান করেন। তাহাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ ও সাদ ইবন মালেক (রা) নিজ নিজ জমি এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ ফসল প্রদানের শর্তে ভাগচাষে প্রদান করিতেন। *
যাহাদের মতে ভাগচাষ বৈধ নহে তাহারা রাফে ইব্ন খাদীজ (রা)-র সূত্রে বর্ণিত হাদীস পেশ করেন। রাফে (রা) বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ (স)-এর যুগে চাষাবাদ করার জন্য (অপরের) জমি লইতাম এবং এক-তৃতীয়াংশ, এক-চতুর্থাংশ অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল বিনিময় হিসাবে নির্ধারণ করিতাম। এক দিন আমার চাচাগণের মধ্যে একজন আসিয়া বলিলেন, রাসূলুল্লাহ (স) আমাদেরকে এমন একটি কাজ হইতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়াছেন যাহা ছিল আমাদের জন্য লাভজনক। অবশ্য আল্লাহ ও তাহার রাসূলের অনুসরণই আমাদের জন্য অধিক লাভজনক। তিনি আমাদেরকে ভাগচাষ করিতে এবং এক-তৃতীয়াংশ, এক-চতুর্থাংশ ও নির্ধারিত পরিমাণ শস্যের বিনিময়ে. জমি
৬৫০
ইজারা প্রদান করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি এই নির্দেশ দিয়াছেন যে, জমির মালিক হয় নিজে তাহা চাষাবাদ করিবে অথবা (বিনিময় ব্যতীত) অপরকে চাষাবাদ করিতে দিবে। তিনি জমি ইজারা প্রদান ও উহা ব্যতীত অন্যান্য প্রথা অপছন্দ করিয়াছেন।”১০
অপছন্দ করার কারণও রাফে (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসেই বিদ্যমান আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স)-এর যুগে লোকেরা তাহাদের জমি ইজারা প্রদানের সময় এই শর্ত আরোপ করিত যে, পানির উৎসের সম্মুখভাগের এবং উহার কিনারার জমিতে এবং নির্দিষ্ট কোন অংশে যে ফসল ফলিবে তাহা মালিক পাইবে। কখনও কখনও এমন হইত যে, জমির এক অংশের ফসল ধ্বংস হইয়া যাইত এবং অপর অংশ রক্ষা পাইত। ঐ যুগে এই প্রথা ব্যতীত জমি ইজারা প্রদানের অন্য কোন প্রথা ছিল না। মহানবী (স) এই পন্থায় জমি ইজারা প্রদান করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তবে উৎপন্ন ফসলের নির্ধারিত অংশের শর্তে জমি ইজারা প্রদানে কোন দোষ নাই।”
যায়দ ইবন সাবিত (রা)-র নিকট উরওয়া ইবনুয যুবায়র (ব) নিষিদ্ধতার কারণ জানিতে চাহিলে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা রাফে ইব্ন খাদীজকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ্র শপথ! এই বিষয়টি তাঁহার চাইতে আমি অধিক অবগত। আসল ঘটনা এই যে, দুই ব্যক্তি ঝগড়া করিতে করিতে মহানবী (স)-এর নিকট আসিয়া উপস্থিত হয়। তখন তিনি বলেন, তোমাদের এইরূপ অবস্থা হইলে তোমাদের জমি ইজারা প্রদান করিও না। রাফে (র) কেবল রাসূলুল্লাহ (স)-এর এতটুকু কথা শুনিলেনঃ তোমাদের জমি ইজারা প্রদান করিও না।
সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রা) বলেন, মহানবী (স)-এর যুগে ভূম্যাধিকারীগণ এই শর্তে তাহাদের জমি ইজারা দিত যে, পানির নালার দুই পার্শ্বের জমির উৎপাদন এবং যে অংশে সহজে পানি পৌছিতে পারে সেই অংশের উৎপাদন মালিকের প্রাপ্য হইবে। এইসব ব্যাপার নিয়া লোেকদের মধ্যে বিবাদ বাধিলে তাহারা উহার মীমাংসার জন্য রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট উপস্থিত হয়। রাসূলুল্লাহ (স) তাহাদেরকে উক্তরূপ শর্তে জমি ইজারা দিতে নিষেধ করেন এবং বলেন, তোমরা নগদ অর্থের বিনিময়ে উহা ইজারা প্রদান করিতে পার। ১৩
৬৫১
অনুরূপভাবে জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা)-র বক্তব্যে (মুসলিম, আহমাদ) এবং ইবন আব্বাস (রা)-র ভাষ্যেও (ইবন মাজা) উক্তরূপ অবৈধ শর্তের উল্লেখ রহিয়াছে, যাহার কারণে রাসূলুল্লাহ (স) জমি ভাগচাষে প্রদান করিতে নিষেধ করেন। এই ধরনের অন্যায় শর্ত পরিহার করিয়া ন্যায়সংগত শর্তে ভাগচাষ করা বৈধ। যেমন পূর্বোক্ত রাফে (রা)-র বর্ণনায়ই বিদ্যমান রহিয়াছে যে, জমিতে যে ফসল উৎপন্ন হইবে তাহা একটি নির্দিষ্ট হারে (যথা অর্ধেক, এক-তৃতীয়াংশ ইত্যাদি) প্রদানের শর্তে জমি ইজারা দেওয়ায় কোন দোষ নাই। যায়দ ইবন সাবিত ও সাদ (রা)-র বক্তব্যে নিষিদ্ধতার মূল কারণ ছিল অসংগত শর্তের ফলে ভূম্যাধিকারী ও চাষীর মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ। সুতরাং ন্যায়সংগত শর্তের দ্বারা উক্ত বিবাদ তিরহিত হইতে পারে।
ধারা—৮৫৯
মুরাআর শর্তাবলী মুযারাআ চুক্তি সহীহ হওয়ার জন্য যেসব শর্ত অবশ্য পালনীয় সেইগুলি নিম্নরূপ- (ক) পক্ষবৃন্দের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার যোগ্যতা থাকিতে হইবে, তবে
অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে সগীর মুমায়্যিয চুক্তিবদ্ধ হইতে পারেঃ
তবে শর্ত থাকে যে, পক্ষবৃন্দের বালেগ ও মুসলমান হওয়া আবশ্যক নহে; (খ) কোন প্রকারের ফসলের বীজ বপন করা হইবে তাহা নির্ধারিত হইতে হইবে;
(গ) ফসল উৎপন্ন হওয়ার পর তাহা ভূম্যাধিকারী ও চাষীর প্রাপ্য হইবে; (ঘ) ভূম্যাধিকারী বা চাষী কোন পক্ষকে উৎপন্ন ফসল ব্যতীত বিকল্প কিছু প্রদান করা হইবে না;
(ঙ) উৎপন্ন ফসল বণ্টনের হার নির্ধারিত হইতে হইবে;
(চ) জমি কৃষি-উপযোগী ও সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে এবং তাহা কৃষকের দখলে অৰ্পণ করিতে হইবে;
(ছ) চুক্তির মেয়াদ সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে;
(জ) কৃষি উপকরণ কোন পক্ষ প্রদান করিবে তাহাও নির্ধারিত হইতে হইবে।
৬২
বিশ্লেষণ
যাহারা মুযারাআ চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে ইচ্ছুক তাহাদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার যোগ্যতা বিদ্যমান থাকিতে হইবে। অতএব নাবালেগ ও পাগলের সহিত মুযারাআ চুক্তি করিলে তাহা সহীহ হইবে না। অবশ্য সগীর মুমায়্যিযের সহিত তাহার অভিভাবকের সম্মতিতে মুযারাআ চুক্তি বৈধ। কারণ মুযারালার জন্য বালেগ হওয়া শর্ত নহে। অনুরূপভাবে ভাগ-চাষীর মুসলমান হওয়াও শর্ত নহে। অমুসলিম ব্যক্তির সহিতও মুযারাআ চুক্তি করা যাইতে পারে।১৪
জমিতে কোন প্রকার ফসলের বীজ বপন করা হইবে তাহাও সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করিতে হইবে। তবে ভূম্যাধিকারী বিষয়টি চাষীর উপর ছাড়িয়া দিলে তাহাও বৈধ হইবে। কিন্তু চাষী বৃক্ষরোপণ করিতে পারিবে না। কারণ তাহা মুযারাআ চুক্তির আওতায় পড়ে না। কতটুকু জমিতে কি পরিমাণ বীজ বপন করিতে হইবে তাহা নির্ধারণ করা জরুরী নহে। কারণ উহা কৃষকের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল।
যে ফসল উৎপাদন করা হইবে তাহা চাষাবাদের প্রক্রিয়ায় বর্ধনশীল হইতে হইবে। যাহা বর্ধনশীল নহে তাহার চাষাবাদে পক্ষবৃন্দ লাভবান না হইয়া ক্ষতিগ্রস্তই হয়।
ফসল উৎপন্ন হওয়ার পর তাহা ভূম্যাধিকারী ও চাষীর প্রাপ্য হইবে এই কথাও চুক্তিতে উল্লেখ থাকিতে হইবে। কারণ মুযারাআ অংশীদারী কারবারের অনুরূপ। তাহাতে অংশীদারিত্ব ছিন্নকারী কোন শর্ত থাকিলে চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে।
মালিক (ভূম্যাধিকারী) বা চাষী কোন পক্ষকে উৎপন্ন ফসল ব্যতীত অন্য কিছু প্রদান করা যাইবে না। যদি ফসল ব্যতীত অন্য কিছু প্রদানের শর্ত করা হয় তবে চুক্তি সহীহ হইবে না। যেমন একই জমিনের এক অংশে চুক্তি মোতাবেক গম এবং অপর অংশে ধান উৎপন্ন করা হইল এবং চুক্তি করা হইল যে, ধান মালিকের এবং গম চাষীর প্রাপ্য হইবে। এইরূপ চুক্তি করা হইলে উহা সহীহ হইবে না, বরং যে ফসল বা যত প্রকারের ফসলই উৎপাদন করা হইবে উহাতে বা উহার প্রতিটিতে মালিক ও চাষী উভয়ের অংশ থাকিতে হইবে। যদি এইরূপ চুক্তি করা হয় যে, এক পক্ষ পাইবে উৎপাদিত ফসল এবং অপর পক্ষ পাইবে
ভিন্নতর কিছু, তবে তাহাও বৈধ হইবে না।
পক্ষবৃন্দের মধ্যে উৎপন্ন ফসল বণ্টনের হারও সুনির্দিষ্ট করিয়া লইতে হইবে, যেমন এক পক্ষের জন্য ৎপন্ন ফসলের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ হইলে অপব পক্ষ অর্ধেক, দুই-তৃতীয়াংশ বা তিন-চতুর্থাংশ পাইবে। কিন্তু এইরূপ শর্ত করা বৈধ হইবে না যে, এক পক্ষ দশ মন ফসল পাইবে এবং অপর পক্ষ অবশিষ্ট ফসল পাইবে, অথবা এক পক্ষ জমির এই অংশের ফসল পাইবে এবং অপর পক্ষ ঐ অংশের ফসল। এইরূপ শর্ত করা হইলে চুক্তি অবৈধ হইবে। অথবা যদি এইরূপ শর্ত করা হয় যে, যে পরিমাণ বীজ বপন করা হইয়াছিল তাহা বিয়োগ করার পর উৎপাদিত ফসল পক্ষবৃন্দের মধ্যে বণ্টিত হইবে, তবে উক্তরূপ চুক্তিও বৈধ হইবে না।
যে জমি মুযারাআয় প্রদান করা হইবে তাহার উর্বরাশক্তি থাকিতে হইবে। অনুর্বর জমি চাষাবাদের জন্য চুক্তি করা হইলে তাহা সহীহ হইবে না। জমির মালিক তাহার জমির চৌহদ্দি নির্দিষ্ট করিয়া তাহা চাষীর দখলে অৰ্পণ করিবে, যাহাতে সে তাহা বাধাহীনভাবে চাষাবাদ করিতে পারে। যদি এইরূপ চুক্তি করা হয় যে, চাষীর সহিত মালিকও চাষাবাদে অংশগ্রহণ করিবে তবে চুক্তি ফাসিদ হইয়া যাইবে। কারণ ইহাতে জমির উপর মালিকের দখল থাকিয়া যায়।
চুক্তির মেয়াদও ঠিক করিতে হইবে। কারণ মুরাআ এমন প্রকৃতির চুক্তি যাহা জমি হইতে উদগত মুনাফা লাভের জন্য করা হইয়া থাকে। অতএব মেয়াদ অনুল্লেখ থাকিলে চুক্তি সহীহ হইবে না। মেয়াদ দুইভাবে নির্ধারিত হইতে পারে। যেমন (এক) অমুক মাসের অমুক তারিখ হইতে পরবর্তী অমুক মাসের অমুক তারিখ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ নির্ধারণ করা হইল। এই ক্ষেত্রে মেয়াদ যুক্তিসংগত হইতে হইবে, যাহাতে যে ফসল উৎপন্ন করার চুক্তি হইয়াছে তাহা বপন করার পর ফসল কাটিয়া ভোলা যাইতে পারে। (ই। কোন ফসল বপন হইতে শুরু করিয়া তাহা কাটিয়া তোলা পর্যন্ত যে সময় প্রয়োজন তদনুযায়ী মেয়াদ নির্ধারিত হইতে পারে। যেসব এলাকায় এক এক মৌসুমে এক এক ধরনের ফসল উৎপন্ন হয় সেসব এলাকায় উরফ (প্রথা) অনুযায়ী মেয়াদ নির্ধারণ না করিলেও চুক্তি বৈধ হইবে। এই অবস্থায় নির্দিষ্ট শ্রেণীর ফসলই মেয়াদ নির্দেশক হইবে।
কৃষি উপকরণ কে প্রদান করিবে- মালিক না চাষী-তাহাও চুক্তিতে উল্লেখ
৬৫৪
থাকিতে হইবে। এই প্রসংগে ‘মুযারাআর শ্রেণীবিভাগ’-এর অধীনে বিস্তারিত আলোচনা করা হইবে।
ধারা-৮৫০
মুযারাআর শ্রেণীবিভাগ (ক) মুযারাআ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত –(১) সহীহ মুযারাআ ও (২) ফাসিদ মুযারাআ।
(খ) সহীহ মুযারাআর শ্রেণীবিভাগ নিম্নরূপ—(১) ভূম্যাধিকারী জমি প্রদান করিবে এবং চাষী বীজ, কৃষি-উপকরণ ও শ্রম প্রদান করিবে;
(২) ভূম্যাধিকারী জমি, বীজ ও কৃষি-উপকরণ প্রদান করিবে এবং চাষী শ্রম প্রদান করিবে;
(৩) ভূম্যাধিকারী জমি ও বীজ প্রদান করিবে এবং চাষী কৃষি-উপকরণ ও শ্রম প্রদান করিবে;
(৪) ভূম্যাধিকারী জমি ও কৃষি-উপকরণ প্রদান করিবে এবং চাষী বীজ ও শ্রম প্রদান করিবে;
(৫) ভূম্যাধিকারী ও চাষী যৌথভাবে জমি, বীজ, কৃষি-উপকরণ ও শ্রম প্রদান করিবে।
(গ) ফাসিদ মুযারাআর শ্রেণীবিভাগ নিম্নরূপ- (১) জমি উভয় পক্ষের, তবে এক পক্ষ উহার সহিত বীজ এবং অপর পক্ষ কৃষি-উপকরণ প্রদান করিবে;
(২) ভূম্যাধিকারী জমি প্রদান করিবে এবং একাধিক চাষীর ক্ষেত্রে একজন বীজ, একজন কৃষি-উপকরণ এবং একজন শ্রম প্রদান করিবে;
(৩) ভূম্যাধিকারী জমি প্রদান করিবে এবং একাধিক চাষীর ক্ষেত্রে একজন বীজ এবং অপর জন কৃষি-উপকরণ ও শ্রম প্রদান করিবে;
(৪) ভূম্যাধিকারী জমি ও শ্রম এবং অপর পক্ষ বীজ ও কৃষি-উপকরণ প্রদান করিবে;
৬৫৫
(৫) ভূম্যাধিকারী জমি, উভয় পক্ষ (ভূম্যাধিকারী ও চাষী) বীজ এবং ভূম্যাধিকারী ব্যতীত অন্য কেহ শ্রম প্রদান করিবে;
(৬) চুক্তিবদ্ধ পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষ উৎপাদিত ফসলের একটি নির্দিষ্ট অংশ পাইবে, অথবা উভয় পক্ষ নির্দিষ্ট হারে যাহা পাইবে তাহাদের মধ্যে এক পক্ষ নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত পাইবে অথবা এক পক্ষ সংশ্লিষ্ট জমিতে উৎপন্ন ফসল ব্যতীত অন্য কিছু পাইবে।
(৭) চুক্তিবদ্ধ পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষ বীজ এবং অপর পক্ষ জমি, কৃষি-উপকারণ ও শ্রম প্রদান করিবে;
(৮) ভূম্যাধিকারী ও কৃষক যৌথভাবে বীজ প্রদান করিবে;
(৯) ভূম্যাধিকারী জমি, চাষী পক্ষ বীজ ও কৃষি-উপকরণ এবং চাষী ও মজুর পক্ষ শ্রম প্রদান করিবে।
বিশ্লেষণ
বৈধ মুযারাআর সকল শ্রেণীর বেলায় উৎপন্ন ফসল বণ্টনের হার নির্ধারণ করিয়া লইতে হইবে, অন্যথায় উহা ফাসিদ গণ্য হইবে। (খ) (৩) ধারায় বর্ণিত শ্ৰেণী হিদায়া গ্রন্থে এবং (খ) (৪) ধারায় বর্ণিত শ্ৰেণী বাদায়ে গ্রন্থে উল্লেখিত হইয়াছে। (গ) (২) ধারায় উল্লেখিত শ্রেণী সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, “রাসূলুল্লাহ (স)-এর যুগে চার ব্যক্তি উপরোক্ত পন্থায় অংশীদার হইলে তিনি তাহাদের মুরাআ বাতিল ঘোষণা করেন।” (ঘ) (৪) ও (গ) (৭) ধারায় বর্ণিত শ্ৰেণীদ্বয় ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে বৈধ এবং এই শ্রেণীদ্বয় বাদাই গ্রন্থে উল্লেখিত হইয়াছে।
ধারা-৮৬১
মুরাআ ফাসিদকারী শর্ত মুরাআ চুক্তিতে নিম্নের কোন শর্ত থাকিলে উক্ত চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে—(ক) কোন এক পক্ষ উৎপাদিত ফসল পাইবে-এইরূপ শর্ত করিলে;
(খ) ভূম্যাধিকারীও শ্রম প্রদান করিবে- এইরূপ শর্ত করিলে;
৬৬
(গ) ভূম্যাধিকারী হাল-বলদ বা ট্রাকটর প্রদান করিবে-এইরূপ শর্ত করিলে;
(ঘ) কৃষিকাৰ্য, ফসল উৎপাদন ও উহার পরিচর্যা এবং ফসল সংগ্রহের সহিত যুক্ত নহে এইরূপ কোন কাজ করার শর্ত করিলে;
(ঙ) যেই পক্ষ বীজ প্রদান করে নাই সেই পক্ষ খড়-কুটা পাইবে এইরূপ শর্ত করিলে;
(চ) ভূম্যাধিকারী কর্তৃক চাষীর দ্বারা এইরূপ কোন কাজ করাইয়া লওয়ার শর্ত করিলে যাহার প্রভাব কৃষিকার্য শেষ হইবার পরও অবশিষ্ট থাকে;
(ছ) জমিতে কোন ফসলের বীজ বপন করা হইবে তাহা অনির্ধারিত থাকিলে;
(জ) এক পক্ষকে উৎপাদিত ফসল এবং অন্য পক্ষকে অন্য কিছু প্রদানের শর্ত করিলে;
(ঝ) কোন পক্ষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল প্রদানের শর্ত করিলে;
(ঞ) বীজের সম-পরিমাণ ফসল বিয়োগ করার পর অবশিষ্ট ফসল পক্ষবৃন্দের মধ্যে বণ্টনের শর্ত করিলে;
(ট) জমি অনির্ধারিত রাখিয়া চুক্তি সম্পন্ন করিলে;
(ঠ) জমির এক অংশে এক প্রজাতির ফসল এবং অন্য অংশে অন্য প্রজাতির ফসল বপনের চুক্তি করিয়া কোন অংশে কোন প্রজাতির ফসল বপন করা হইবে তাহা অনির্দিষ্ট থাকিলে।
বিশ্লেষণ
‘কোন এক পক্ষ উৎপাদিত ফসল, পাইবে’ অর্থাৎ এইভাবে চুক্তি করা হইল যে, ভাগচাষে প্রদত্ত জমিতে উৎপাদিত ফসল ভূম্যাধিকারী পাইবে এবং চাষী অন্য জমিতে উৎপাদিত ফসল অথবা পারিশ্রমিক পাইবে। এই ক্ষেত্রে চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে।
‘ভূম্যাধিকারীও শ্রম প্রদান করিবে’ অর্থাৎ এইভাবে চুক্তি করা হইলে যে, চাষীর সহিত ভূম্যাদিকারীও চাষাবাদকার্যে অংশগ্রহণ করিবে। এইরূপ শর্ত রাখা
৬৫৭
হইলে চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। কারণ ভাগচাষ প্রধানত অ র কারবারের মুদারাবা শ্রেণীভুক্ত, যেখানে মুদারিবকেই শ্রম প্রদান করিতে হয়।
জমি কর্ষণের উপকরণ অর্থাৎ হাল-বলদ ইত্যাদি চার শ্রমের সহিত সংযুক্ত। জমি চাষ করার কারণেই চাষী ফসলের অংশ পাইয়া থাকে। তাই উহা চাষাবাদের উপকরণ তাহাকেই সরবরাহ করিতে হইবে। উহা ভূম্যাধিকারীর প্রদানের শর্ত করা হইলে চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে।
যেসব কাজ জমির চাষাবাদ, ফসল উৎপাদন ও উহার পরিচর্যা এবং সংগ্রহের সহিত যুক্ত নহে, চাষীর উক্তরূপ কাজ করার শর্ত করিলে চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। একদল ফকীহ ফসল কাটা, উহা মাড়াই করার স্থানে জড়াে করা এবং মাড়াই করা ইত্যাদি কাজকে চাষাবাদ বহির্ভূত বলিয়াছেন। আহাদের মতে চাষীর ঐসব কাজ করার শর্ত করিলে চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে উক্ত কাজ ফসল সংগ্রহের সহিত জড়িত বিধায় চুক্তি ফাসিদ হইবে না। বাংলাদেশে সাধারণভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ভাগচাষী ফসল কাটিয়া মাড়াই করার স্থানে জড়াে করে এবং মাড়াই করার পর ফসল ওজন করিয়া বা মাপিয়া উভয় পক্ষ ভাগ করিয়া নেয়। এই অবস্থায় কোন পক্ষের ভাগে চুক্তিতে উল্লেখিত হারের চাইতে কম বা বেশী ফসল পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। যেই পক্ষ বীজ প্রদান করে নাই সেই পক্ষ খড়-কুটা পাইবে এইরূপ শর্ত করিলেও চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে।
যে কাজের প্রভাব, ফলাফল বা উপকারিতা চাষাবাদ শেষ হওয়ার পরও অবশিষ্ট থাকে এই ধরনের কোন কাজ চাষী করিয়া দিবে এই শর্ত করা হইলেও চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। যেমন জমির চতুর্দিকে আইব বান্দিয়া দেওয়া, গভীর গর্ত ভরাট করা, কূপ খনন করা ইত্যাদি। এসব কাজ চাষীকে দিয়া করানো যাইবে না, বরং ভূম্যাধিকারীর নিজ খরচে করাইতে হইবে।
কোন পক্ষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল প্রদানের, যেমন দমন, বিশ মন, পঞ্চাশ ধামা ইত্যাদি, শর্ত করিলেও চুক্তি ফাসিদ গণ্য হন। সব সময় উৎপাদিত ফসল নির্দিষ্ট হারে বণ্টনের শর্ত থাকিতে হইবে।
যেই পক্ষ বীজ প্রদান করিবে সেই পক্ষকে উৎপাদিত ফাইতে বীজের সম-পরিমাণ প্রদানের পর অবশিষ্ট ফসল পক্ষবৃন্দের মধ্যে বন্টিত হওয়ার শর্ত
৬৫৮
করিলেও চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে।
যে জমি ভাগচাষে প্রদান করা হইবে তাহা নির্দিষ্ট না করিয়া চুক্তি সম্পাদন করা হইলে তাহা ফাসিদ গণ্য হইবে। অতএব চুক্তি অনুষ্ঠানকালে জমিও নির্দিষ্ট করিতে হইবে। ১৫
ধারা-৮৬২
ফাসিদ মুযারাআর ফলাফল (ক) কোন কারণে মুযারাআ চুক্তি ফাসিদ হইলে ঐ চুক্তি কার্যকর করা চাষীর জন্য বাধ্যকর নহে;
(খ) ফাসিদ চুক্তির আওতায় জমি চাষাবাদ করা হইলে এবং—(১) ভূম্যাধিকারী বীজ প্রদান করিয়া থাকিলে সে চাষীকে উপযুক্ত মজুরি প্রদান করিয়া উৎপন্ন ফসল গ্রহণ করিবে;
(২) চাষী ঋজ প্রদান করিয়া থাকিলে সে ভূম্যাধিকারীকে চাষাবাদকালীন সময়ের জন্য জমির উপযুক্ত ইজারা (কেরায়া) প্ৰদান করিয়া উৎপন্ন ফসল গ্রহণ করিবে;
(৩) জমিতে ফসল উৎপাদিত না হইলেও চাষী উপযুক্ত মজুরি পাইবে? * তবে শর্ত থাকে যে, জমিতে কোন কাজ না করা পর্যন্ত উপযুক্ত মজুরি প্রদান বাধ্যকর হইবে না;
(৪) ভূমকিারী কৃষি-উপকরণ প্রদান করিলে চাষী তাহাকে উহার ভাড়া প্রদান করিবে।
বিশ্লেষণ
কোন কাণে মুযারাআ চুক্তি ফাসিদ হইলে জমি চাষাবাদ করা চাষীর জন্য বাধ্যকর হয় না। কারণ যথার্থ (সহীহ) চুক্তির দ্বারাই পক্ষবৃন্দের উপর নিজ নিজ দায়িত্ব পালন বাধ্যকর হয়। এখানে চুক্তি ফাসিদ হওয়ার কারণে কোন পক্ষই চুক্তি পালনে বাধ্য নহে।
চুক্তি ফাসিদ হওয়া সত্ত্বেও জমি চাষাবাদ করা হইলে, যেই পক্ষ বীজ প্রদান
করিয়াছে সর্বাবস্থায় সেই পক্ষ উৎপন্ন ফসলের মালিক হইবে। অতএব ভূম্যাধিকারী বীজ প্রদান করিয়া থাকিলে সে উৎপন্ন ফসল বুঝিয়া লইবে এবং চাষীকে যুক্তিসংগত পরিমাণ ( J
se) মুজরির সম-পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবে। আর চাষী বীজ প্রদান করিয়া থাকিলে সে উৎপন্ন ফসল পাইবে এবং জমির মালিককে যুক্তিসংগত পরিমাণ কেরায়ার সম-পরিমাণ ক্ষতিপূরণ ‘ প্রদান করিবে। কারণ এই ক্ষেত্রে সে জমির ইজারাদার বলিয়া গণ্য হইবে।
ফাসিদ চুক্তির আওতায় জমি চাষাবাদ করা সত্ত্বেও ফসল উৎপাদিত না হইলে অথবা কোন প্রাকৃতিক কারণে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে ভূম্যাধিকারী চাষীকে যুক্তিসংগত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবে, কিন্তু চাষীর উপর জমির কেরায়া প্রদানের দায় বর্তাইবে না। তবে জমিতে কোন কাজ না করা * হইয়া থাকিলে কোন পক্ষের উপর কোনরূপ ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যকর হইবে না।
ভূম্যাধিকারীর হাল-বলদ বা ট্রাকটর দ্বারা চাষী জমি চাষাবাদ করিয়া থাকিলে সে মালিককে উহার যুক্তিসংগত ভাড়া প্রদান করিবে। কারণ উক্ত জিনিসগুলি জমির অনুগামী অনুষঙ্গী নহে, বরং চাষাবাদ কর্মের অনুষঙ্গী।
ধারা-৮৬৩
চুক্তি প্রত্যাখ্যান মুযারাআ চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর—(ক) চাষী জমি চাষাবাদ করিতে অস্বীকার করিলে তাহাকে চাষাবাদ করিতে বাধ্য করা যাইবে;
(খ) চাষী কর্তৃক জমি চাষ করার পূর্বে ভূম্যাধিকারী চুক্তি প্রত্যাখ্যান করিলে তাহাকে উহা পালনে বাধ্য করা যাইবে না; তবে চাষী জমি চাষ করিয়া বীজ বপনোপযোগী করার পর চুক্তি প্রত্যাখ্যান করিলে সে চাষীকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবে।
বিশ্লেষণ
চুক্তিপত্রে পক্ষবৃন্দ জমি চাষ করার শর্ত যুক্ত করিলে এবং এই অবস্থায় চাষী জমি চাষাবাদ করিতে অস্বীকার করিলে তাহাকে চাষাবাদে বাধ্য করা যাইবে। কারণ সে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে এইরূপ কোন কারণ ব্যতীত চুক্তি পালনে
৬৬০
অসম্মত হইতে পারে না। যদি পক্ষবৃন্দ চুক্তিপত্রে জমি চাষ করা সম্পর্কে কিছু উল্লেখ না করিয়া থাকে তবে এই অবস্থায় দুইটি ব্যবস্থা রহিয়াছে। (১) চাষাবাদ ব্যতীতই জমিতে ফসল উৎপন্ন হইলে চাষীকে জমি চাষে বাধ্য করা যাইবে না। (২) চাষাবাদ ব্যতীত জমিতে ফসল উৎপন্ন না হইলে চাষীকে জমি চাষে বাধ্য করা যাইবে।
চাষী জমিতে হাল চাষের পূর্বে ভূম্যাধিকারী একচ্ছত্রভাবে চুক্তি প্রত্যাহার করিতে পারে। জমিতে হাল চাষ এবং আগাছা পরিষ্কার করার পরও ভূম্যাধিকারী চুক্তি প্রত্যাখ্যান করিতে পারে, কিন্তু এই অবস্থায় ইনসাফের স্বার্থে যুক্তিসংগত পরিমাণ মজুরি প্রদান করিয়া চাষীকে খুশি করিতে হইবে।১৬
ধারা-৮৬৪
ফসল বণ্টনের হারে কম-বেশী করা :
(ক) ফসল সংগ্রহের উপযোগী হওয়ার পূর্বে যে কোন সময় পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতিতে ফসল বণ্টনের হার পরিবর্তন করা যাইতে পারে।
(খ) ফসল সংগ্রহের পর—(১) ভূম্যাধিকারী চাষীর অংশ বর্ধিত করিলে তাহা বৈধ হইবে, যদি বীজ চাষী প্রদান করিয়া থাকে;
(২) চাষী ভূম্যাধিকারীর অংশ বর্ধিত করিলে তাহা বৈধ হইবে, যদি বীজ ভূম্যাধিকারী প্রদান করিয়া থাকে।
বিশ্লেষণ
চুক্তিপত্রে ফসল বণ্টনের হার নির্দিষ্ট করিয়া লওয়ার পর কোন কোন অবস্থায় উহার পরিবর্তন করা যাইতে পারে। এই পরিবর্তন ভূম্যাধিকারীর দ্বারাও হইতে পারে এবং চাষীর দ্বারাও হইতে পারে। আবার এই পরিবর্তন ফসল তোলার পূর্বেও হইতে পারে অথবা পরেও হইতে পারে। ফসল সগ্রহের পূর্বে পক্ষবৃন্দের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে যে কোন সময় ফসল বণ্টনের হার পরিবর্তন করা যাইতে পারে। এই ক্ষেত্রে কোন আইনগত জটিলতা বা বাধা নাই।
কিন্তু ফসল তোলার পর কোন কোন ক্ষেত্রে অনুরূপ পরিবর্তন বৈধ নহে। বীজ
৬৬১
চাষী প্রদান করিলে এবং সে ভূম্যাধিকারীর অংশ বর্ধিত করিলে তাহা বৈধ হইবে
এবং চুক্তিপত্রে উল্লেখিত হার অনুযায়ী তাহাদের মধ্যে ফসল বণ্টিত হইবে। তবে ভূম্যাধিকারী চাষীর অংশ বর্ধিত করলে তাহা বৈধ হইবে। ভূম্যাধিকারী বীজ প্রদান করিলে এবং সে চাষীর অংশ বর্ধিত করিলে তাহা বৈধ হইবে না, তবে চাষী ভূম্যাধিকারীর অংশ বর্ধিত করিলে তাহা বেধ হইবে।১৭
ধারা-৮৬৫ মুযারাআ চুক্তি রদকরণ
(اقالة )
(ক) মুযারাআ চুক্তি রদ হওয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ—(১) চাষী বা ভূম্যাধিকারী চুক্তি রদ জ্ঞাপক শব্দ উচ্চারণপূর্বক রদযোগ্য চুক্তি রদ করিলে;
(২) চুক্তির মেয়াদ শেষ হইয়া গেলে; (৩) ভূম্যাধিকারীর মৃত্যু হইলে; (৪) চাষীর মৃত্যু হইলে;
(খ) যেসব বিষয় মুযারাআ চুক্তি রদ হওয়ার কারণ হইতে পারে তাহা নিম্নরূপ—(১) ঋণে জর্জরিত হইয়া ভূম্যাধিকারীর জমি বিক্রয় করা;
(২) চাষীর রোগগ্রস্ত হইয়া পড়া অথবা সফরে গমন করা অথবা পেশা পরিবর্তন করা;
(৩) জমি চাষাবাদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকর কোন বাধার উদ্ভব হওয়া। (গ) মুযারাআ চুক্তি রদ হওয়ার ফলাফল নিম্নরূপ—(১) চাষী কর্তৃক জমি কর্ষণের পর, কিন্তু বীজ বপনের পূর্বে, চুক্তি রদ হইলে ভূম্যাধিকারী তাহাকে যুক্তিসংগত পরিমাণ মজুরি প্রদান করিবে;
(২) জমিতে কৃষিকার্য করার পর এবং ফসল পাকার পর চুক্তি রদ হইলে চুক্তির শর্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট হারে চাষী ও ভূম্যাধিকারীর মধ্যে ফসল বণ্টিত হইবে;
(৩) ফসল পাকার পূর্বে চুক্তি রদ হইলে বা মেয়াদ শেষ হইয়া গেলে
فال
ফসল না পাকা পর্যন্ত চাষী ও ভূম্যাধিকারী উভয়ে শ্রম প্রদান করিবে এবং ফসল চুক্তি মোতাবেক তাহাদের মধ্যে বণ্টিত হইবেঃ
তবে শর্ত থাকে যে, এই অবস্থায় চাষী, তাহার অংশ অনুপাতে ভূম্যাধিকারীকে তাহার জমির অতিরিক্ত কাল ব্যবহারের জন্য যুক্তিসংগত পরিমাণ মূল্য প্রদান করিবে;
(৪) ভূম্যাধিকারী বা চাষীর মৃত্যুর কারণে চুক্তি রদ হইলে ফসল না পাকা পর্যন্ত উহা জমিতে থাকিবে এবং চুক্তির শর্ত মোতাবেক ফসল উভয়ের মধ্যে বণ্টিত হইবে।
(৫) ফসল বপনের পূর্বে অথবা ফসল পাকিবার পর ঋণের কারণে জমি বিক্রয় করা হইলে চুক্তি মোতাবেক ফসল চাষী ও ভূম্যাধিকারীর মধ্যে বণ্টিত
হইবেঃ
তবে শর্ত থাকে যে, ফসল কাটার উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত ঋণ পরিশাধের জন্য জমি বিক্রয় করা যাইবে না।
বিশ্লেষণ
ভূম্যাধিকারী অথবা চাষী “ইকালা” ( 3। বা”ফাস্থ” ( 3) শব্দযোগে প্রত্যক্ষভাবে চুক্তি রদ করিতে পারে অথবা পরোক্ষভাবেও চুক্তি রদ করা যায়। যেমন বীজ প্রদানকারী (চাষী বা ভূম্যাধিকারী যে-ই হউক) চুক্তি অটুট না রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করিয়া বলিল, “আমার ভাগচাষ কাম্য নহে, ইহাতে চুক্তি রদ হইয়া যাইবে। চুক্তি পালনে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হউক বা না হউক, বীজ প্রদানকারী পক্ষ স্বাধীনভাবে চুক্তি রদ করিতে পারে (বাদাই, উর্দু, ৬/৪৩৯)। চাষাবাদের পূর্বে চুক্তি রদ হইলে চাষী কোন ক্ষতিপূরণ পাইবে না।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হইয়া গেলেও চুক্তি রদ হইয়া যায়। কারণ পক্ষবৃন্দ যে সময়সীমার জন্য পরস্পরের নিকট দায়বদ্ধ থাকিবার চুক্তি করিয়াছিল সেই সময়সীমা অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে। ফসল পাকিয়া যাওয়ার পর কিন্তু সংগ্রহের পূর্বে মেয়াদ শেষ হইয়া গেলে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু ফসল পাকিবার পূর্বে মেয়াদ শেষ হইয়া গেলে যে অতিরিক্ত সময় ফসল জমিতে থাকিবে তাহার জন্য
৬৬৩
চাষী তাহার অংশ অনুপাতে ভূম্যাধিকারীকে জমির ভাড়া বা মূল্য প্রদান করিবে। যেমন চাষী উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক পাইবে বলিয়া চুক্তি করা হইয়াছে। এই অবস্থায় সে চুক্তিবহির্ভূত অতিরিক্ত সময়ের জন্য ভূম্যাধিকারীকে অর্ধেক জমির যুক্তিসংগত পরিমাণ ভাড়া বা মূল্য প্রদান করিবে। মেয়াদ বহির্ভূত সময়ে ভূম্যাধিকারী ও চাষী নিজ নিজ অংশমত প্রয়োজনীয় শ্রম প্রদান করিবে। এই অতিরিক্ত সময়ের জন্য চাষী একা শ্রম প্রদান করিতে বাধ্য নহে। বাংলাদেশে মেয়াদের ক্ষেত্রে এই জাতীয় কোন সমস্যার উদ্ভব হয় না। কারণ এখানে কোন ফসল বপনের পর হইতে উহা পরিপক্ক বা সংগ্রহের উপযোগী হওয়া পর্যন্ত মেয়াদ নির্দিষ্ট হইয়া থাকে।
ভূম্যাধিকারী বা চাষী যে কোন পক্ষের মৃত্যুর কারণেও চুক্তি বুদ হইয়া যায়। ফসল বপনের পূর্বে কোন পক্ষের মৃত্যু হইলে উহাতে কাহারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা নাই এবং সেই ক্ষেত্রে চুক্তি সম্পূর্ণ রদ গণ্য হইবে। কারণ যাহারা চুক্তি করিয়াছিল তাহাদের মৃত্যুতে চুক্তির অবসান ঘটিয়াছে। মৃত পক্ষের ওয়াসিগণ চুক্তির দ্বারা দায়বদ্ধ হইবে না। কিন্তু আল-মাবসূত ও যাখীরা গ্রন্থে বলা হইয়াছে যে, ফসল না পাকা পর্যন্ত চুক্তি বহাল থাকিবে (ইসতিহ্সানান)। কারণ চুক্তি রদ হইলে ভূম্যাধিকারীর ওয়ারিসগণ অপরিপক্ক ফসল কাটিলে ইহাতে চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। ১৯ বীজ বপন ও চাড়া গজাইবার পর চাষী মারা গেলে এবং তাহার ওয়ারিসগণ কৃষিকার্য অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দিলে ভূম্যাধিকারী তাহাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করিলে তাহার এই আচরণ অন্যায় হিসাবে গণ্য হইবে এবং চাষীর ওয়ারিসগণ ফসল না পাকা পর্যন্ত কৃষিকার্য অব্যাহত রাখার অধিকারী হইবে।২০
ঋণ পরিশোধের জন্য জমি বিক্রয় করার কারণেও চুক্তি রদ হইতে পারে। বীজ বপনের পূর্বে ভূম্যাধিকারী ঋণ পরিশোধের জন্য জমি বিক্রয় করিতে পারে। তবে ফসল উৎপন্ন হওয়ার পর তাহা কর্তন উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে জমি বিক্রয় করা যাইবে না। কারণ ইহাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। অতএব এই অবস্থায় ঋণদাতাগণের আবেদনক্রমে আদালত ভূম্যাধিকারীকে আটক করিয়া থাকিলে তাহাকে কয়েদমুক্ত করিয়া দিতে হইবে। কারণ এই ক্ষেত্রে একটি বিশেষ কারণে জমি বিক্রয় করা সম্ভব হইতেছে না।২১
৬৬৪
ফসলসহ জমি ক্রিয় করা হইলে তাহা চাষীর সম্মতি সাপেক্ষে কার্যকর হইতে পারে। এই অবস্থায় জমির মূল্য ভূম্যাধিকারী পাইবে এবং ফসল বিক্রয় বাবদ প্রাপ্ত মূল্য পূর্বনির্ধারিত হার অনুযায়ী চাষী ও ভূম্যাধিকারীর মধ্যে বণ্টিত হইবে। চাষ জমি বিক্রয়ের সম্মতি প্রদান না করিলে ক্রেতা ইচ্ছা করিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি ও করিতে পারে অথবা ফসল পাকা পর্যন্ত অপেক্ষাও করিতে পারে।২২
চাষী ব্রোক্রান্ত হইয়া জমি চাষাবাদ করিতে অক্ষম হইয়া পড়িলে অথবা কোন প্রয়োজনে চুক্তির মেয়াদকালে জমি চাষাবাদ না করিয়া বিদেশে সফরে গেলে অথবা চাষাবাদের পেশা ত্যাগ করিয়া অন্য পেশা গ্রহণ করিলেও মুযারাআ চুক্তি রদ হইয়া যায়।২৩
ধারা—৮৬৬
শ্রমিক নিয়োগ চাষীর নিজ শ্রমেই জমি চাষাবাদ করিতে হইবে এইরূপ চুক্তি না হইয়া থাকিলে চাষী শ্রমিক নিয়োগ করিয়া জমি চাষাবাদ করাইতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
চাষীকেই জমি চাষাবাদ করিতে হইবে এইরূপ চুক্তি হইয়া থাকিলে চাষী শ্রমিক নিয়োগ ফরিয়া চাষাবাদ করাইতে পারিবে না। তবে এইরূপ কোন শর্ত না থাকিলে চাষী প্রযোজীয় সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ করিয়া জমি চাষাবাদ করাইতে পারিবে। যেমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক বাস ভাড়া নিয়া তাহা ড্রাইভার দ্বারা চালানো বৈধ। এই অহয় চাষী শ্রমিকের মজুরি প্রদান করিবে। ২৪
ধারা-৮৬৭
বন্ধকী জমিতে ভাগচাষ (ক) ভূমকিারী তাহার জমি বন্ধক গ্রহীতাকে ভাগচাষে প্ৰদান করিলে তাহা বৈধ হইবে এবং উৎপন্ন ফসল নির্ধারিত হারে উভয়ের মধ্যে বণ্টিত হইবেঃ
৬৬৫
তবে শর্ত থাকে যে, বন্ধকদাতা বীজ প্রদান করিয়া থাকিলে ফসল কাটার পর বন্ধকগ্রহীতা উক্ত জমি নিজ দখলে ফিরাইয়া লইতে পারিবে; কিন্তু বন্ধকগ্রহীতা বীজ প্রদান করিয়া থাকিলে ফসল কাটার পর উক্ত জমি বন্ধকমুক্ত হইয়া যাইবে এবং বন্ধক চুক্তি নবায়ন না করা ব্যতীত সে তাহা নিজ দখলে ফিরাইয়া লইতে পারিবে না।
(খ) ভূম্যাধিকারী ফসলসহ তাহার জমি বন্ধক রাখার পর নির্দিষ্ট হারে ফসলের অংশ প্রদানের শর্তে বন্ধক গ্রহীতাকে উহার পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করিলে এবং বন্ধক গ্রহীতা তাহা গ্রহণ করিলে চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। এই অবস্থায় বন্ধকগ্রহীতা তাহার শ্রমের যুক্তিসংগত মজুরি পাইবে এবং উৎপাদিত ফসল জমিসহ বন্ধক থাকিবে।
বিশ্লেষণ
বন্ধকী জমি বন্ধক গ্রহীতার হেফাজতে ন্যস্ত থাকে। জমি বন্ধক থাকা অবস্থায় ভূম্যাধিকারী অর্থাৎ বন্ধকদাতা ও বন্ধক গ্রহীতার মধ্যে ভাগচাষের চুক্তি সম্পদিত হইতে পারে। এই অবস্থায় উৎপাদিত ফসল চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত হারে উভয়ের মধ্যে বণ্টিত হইবে। বীজ বন্ধকদাতা প্রদান করিলে চাষাবাদশেষে জমি বন্ধক গ্রহীতা তাহার দখলে ফিরাইয়া লইতে পারিবে, বন্ধকী চুক্তি নবায়নের প্রয়োজন হইবে না। কিন্তু বীজ বন্ধক গ্রহীতা প্রদান করিলে ফসল তোলার পর বন্ধকী চুক্তির অবসান ঘটিবে এবং পুনর্বার চুক্তি না করা পর্যন্ত সে উক্ত জমি নিজ দখলে ফেরত লইতে পারিবে না। ফসলসহ জমি বন্ধক রাখা বৈধ হইলেও ফসলের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জমির মালিকের। বন্ধক গ্রহীতাকে ফসলের অংশ প্রদানের শর্তে ঐ দায়িত্ব তাহাকে প্রদান করা বৈধ নহে। এই অবস্থায় উৎপন্ন ফসল মালিক ও বন্ধক গ্রহীতার মধ্যে বণ্টিত হইবে না শেষোক্ত চুক্তি ফাসিদ হওয়ার কারণে। বরং ফসলও বন্ধক গ্রহীতার নিকট বন্ধক থাকিবে এবং সে ফসলের পরিচর্যা ও দেখাশুনার জন্য বন্ধকদাতার নিকট হইতে যুক্তিসংগত পরিমাণ পারিশ্রমিক লাভ করিবে।২৫
৬৬৬
ধারা-৮৬৮ :
গসবকৃত জমিতে চাষাবাদ (ক) কোন ব্যক্তি অপরের জমি জোরপূর্বক দখল করিয়া চাষাবাদ করিলে ফসল গসবকারী পাইবে এবং সে জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবে।
(খ) জোরপূর্বক দখলকৃত জমি চাষাবাদের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হইলে এবং জমি মালিককে ফেরত দেওয়া পর্যন্ত তাহা দূরীভূত না হইলে গসবকারী উহার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবে ২৬
ধারা-৮৬৯
প্রতিনিধি নিয়োগ (ক) জমি ভাগচাষে প্রদানের জন্য ভূম্যাধিকারীর প্রতিনিধি নিয়োগ করা বৈধ, তবে তাহাকে জমির চতুঃসীমা সুনির্দিষ্ট করিয়া প্রতিনিধিকে দেবাইয়া দিতে হইবে।
(খ) ভূম্যাধিকারী প্রতিনিধিকে মুযারাআর মেয়াদ নির্দিষ্ট করিয়া বলিয়া না দিলে উহার মেয়াদ হইবে এক বৎসর।
(গ) ভূম্যাধিকারী ফসল বণ্টনের হার প্রতিনিধিকে বলিয়া না দিলে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী উৎপন্ন ফসল ভূম্যাধিকারী ও চাষীর মধ্যে বণ্টিত হইবে।
(ঘ) কোন প্রকারের ফসলের চাষাবাদ করা হইবে তাহা নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া না হইলে প্রতিনিধি তাহা নির্ধারণ করিতে পারিবে।
ধারা-৮৭০
চাষীর দায় (ক) চাষীর মূল কাজের সহিত ফসলের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ, পানিসেচ, আগাছা পরিষ্কারকরণ ইত্যাদি দায়িত্ব চাষীর উপর বর্তাইবে।
.
৬৬০
(খ) নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে ভূম্যাধিকারীকে ক্ষতিপূরণ প্রদান চাষীর উপর বাধ্যকর হইবে—(১) পানি সরবরাহের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জমিতে পানিসেচ না করার কারণে বা সেচে বিলম্ব করার কারণে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে;
(২) সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে; (৩) পোকা-মাকড়, বন্য জীব-জন্তু ও পাখির আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইলে;
(৪) রাত্রে ফসল পাহারা দেওয়ার প্রথা প্রচলিত থাকিলে সেই অবস্থায় পাহারা না দেওয়ার কারণে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইলে।
বিশ্লেষণ
চাষীর দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে সে ভূম্যাধিকারীকে তাহার অংশ অনুপাতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিবে। যেমন ভূম্যাধিকারী যদি ফসলের অর্ধেকের অংশীদার হয় তবে সে মোট নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের অর্ধেক পাইবে।
জমিতে পানি সরবরাহের সামর্থ্য ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চাষী সময়মত পানি সরবরাহ না করার কারণে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইলে সে ভূম্যাধিকারীকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে। কিন্তু পানির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অথবা যুক্তিসংগত অন্য কোন কারণে পানি সরবরাহ সম্ভব না হইলে এবং ইহার ফলে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইলে চাষী দায়ী হইবে না।
সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে, যেমন আগাছায় ক্ষেত ভরিয়া যাওয়ার কারণে বা পশু-পাখিতে ভক্ষণ করার কারণে অথবা পোকার আক্রমণ, পাখির আক্রমণ, জীব-জন্তুর আক্রমণ ইত্যাদি প্রতিরোধযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাহা প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইলে চাষী ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে। কিন্তু এই সবের আক্রমণ ব্যাপক আকারে অথবা আকস্মিকভাবে ঘটিলে তাহার জন্য চাষী দায়ী হইবে না। যেমন রাতের বেলা
৬৬৮
বন্য হাতীর দল লোকালয়ে আসিয়া ফসলের ক্ষেত পদদলিত করিয়া ফসল ধ্বংস করিয়া ফেলিল অথবা আকস্মিকভাবে ঝাকে ঝুঁকে পাখি বা পঙ্গপাল আসিয়া ফসল ভক্ষণ করিয়া নিঃশেষ করিয়া ফেললি। এই অবস্থায় চাষীর উপর ক্ষতিপূরণ ধার্য হইবে না।
যে এলাকায় রাত্রিবেলাও ফসলের ক্ষেত পাহারা দেওয়ার প্রথা আছে সেখানে চাষীকে উক্ত সময় উক্ত দায়িত্ব পালন করিতে হইবে। তাহার অবহেলার কারণে রাত্রে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইলে উহার ক্ষতিপূরণ প্রদান তাহার জন্য বাধ্যকর হইবে। তবে রাত্রিবেলা ফসল পাহারার প্রথা না থাকিলে ঐ সময় ফসলের ধ্বংস বা ক্ষতির জন্য সে দায়ী হইবে না।২৭
ধারা—৮৭১ চুক্তি নবায়ন না করিয়া পুনর্বার মুযারাআ চুক্তি নবায়ন না করিয়া চাষী ভূম্যাধিকারীর জমি চাষাবাদ করিলে তাহা বৈধ হইবে, যদি এইরূপ করার প্রথা প্রচলিত থাকে।
বিশ্লেষণ
চাষী ভূম্যাধিকারীর জমি মুযারাআ চুক্তির আওতায় চাষাবাদ করার পরের ব ৎসর চুক্তি নবায়ন না করিয়া পুনর্বার চাষাবাদ করিতে পারে, যদি সংশ্লিষ্ট এলাকায় এইরূপ প্রথা প্রচলিত থাকে। এই অবস্থায় পূর্বের চুক্তির শর্তাবলী অনুসরণযোগ্য হইবে। ২৮
ধারা—৮৭২
সহীহ মুযারাআর ক্ষেত্রে মতভেদ মুযারাআ চুক্তি সহীহ হওয়া সত্ত্বেও ফসল বণ্টনের হার সম্বন্ধে —(১) ভূম্যাধিকারী ও চাষীর মধ্যে মতভেদ হইলে আদালত বিষয়টি সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মীমাংসা করিবে। কোনও পক্ষের নিকট সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকিলে এবং মতভেদ চাষাবাদ শুরু করার পূর্বে সংঘটিত হইলে আদালত প্রথমে বীজ প্রদানকারী পক্ষকে অতঃপর অপর পক্ষকে শপথ করাইবে। উভয় পক্ষ শপথ করিলে আদালত চুক্তি রদ করিয়া দিবে, যদি
৬৬১
কোন পক্ষ চুক্তি রদের আবেদন করে। শপথ অনুষ্ঠানের পর কিন্তু চুক্তিদের পূর্বে কোন পক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত করিতে পারিলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে। চাষাবাদের পর মতভেদ হইলে এবং কোন পক্ষের নিকট সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকিলে আদালত শপথ অনুষ্ঠান হইতে বিরত থাকিবে;
(২) ভূম্যাধিকারী বা চাষীর বা উভয়ের মৃত্যুর কারণে তাহাদের ওয়ারিসগণের মধ্যে মতভেদ হইলে ভূম্যাধিকারীর ওয়ারিসের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে। উভয় পক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত করিলে চাষীর ওয়ারিসের সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণযোগ্য হইবে।২৯
ধারা-৮৭৩
ফাসিদ মুযারাআর ক্ষেত্রে মতভেদ (ক) এক পক্ষ নির্দিষ্ট হারে এবং অপর পক্ষ নির্দিষ্ট পরিমাণে তাহাদের মধ্যে ফসল বণ্টনের দাবি করিলে এবং এই মতভেদ ফসল বপনের—(১) পূর্বে হইলে, যাহার দাবি অনুযায়ী চুক্তি ফাসিদ গণ্য হয় তাহার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে এবং এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে, যাহার দাবি অনুযায়ী চুক্তি সহীহ গণ্য হয় তাহার পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে;
(২) পরে হইলে, যেই পক্ষের বীজ প্রদানের শর্ত করা হইয়াছে সেই পক্ষের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে এবং এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে, যাহার দাবি অনুযায়ী চুক্তি সহীহ গণ্য হয় তাহার পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য
হইবে।
(খ) চাষী চাষাবাদের পূর্বে বা পরে ফসল বণ্টনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে এবং ভূম্যাধিকারী নির্দিষ্ট হারের সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত ফসল যোগ হওয়ার দাবি করিলে এবং বীজ ভূম্যাধিকারীর প্রদানের শর্ত থাকিলে, চাষীর। বক্তব্য এবং তাহার পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে।
(গ) ভূম্যাধিকারী চাষাবাদের পূর্বে নির্দিষ্ট হারে এবং চাষী নির্দিষ্ট হারের সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত ফসল যোগ হওয়ার দাবি করিলে এবং বীজ—(১) ভূম্যাধিকারীর প্রদানের শর্ত থাকিলে তাহার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য
৬৭০
হইবে এবং উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে চাষীর পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে;
(২) চাষীর প্রদানের শর্ত থাকিলে তাহার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে এবং উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে ভূম্যাধিকারীর পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে।
(ঘ) চাষাবাদের পরে ভূম্যাধিকারী নির্দিষ্ট হারে এবং চাষী নির্দিষ্ট হারের সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত যোগ হওয়ার দাবি করিলে এবং বীজ- (১) ভূম্যাধিকারীর প্রদানের শর্ত থাকিলে চাষীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে এবং উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে চাষীর পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে;
(২) চাষীর প্রদানের শর্ত থাকিলে ভূম্যাধিকারীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে এবং উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে ভূম্যাধিকারীর পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে।
(ঙ) জমিতে চারা উদ্গত হওয়ার পর চাষী ফসল বন্টনের নির্দিষ্ট হার হইতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিয়োগ হওয়ার দাবি করিলে এবং বীজ ভূম্যাধিকারী প্রদান করিলে সেই ক্ষেত্রে ভূম্যাধিকারীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হইবে এবং উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে চাষীর পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে; কিন্তু উক্ত দাবি চারা উদগত হওয়ার পূর্বে করিলে ভূম্যাধিকারীর বক্তব্য ও তাহার পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে।
(চ) চাষাবাদের পূর্বে কোন পক্ষ কর্তৃক ফসল বন্টনের নির্দিষ্ট হার হইতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিয়োগ হওয়ার দাবি উত্থাপিত হইলে, সেই ক্ষেত্রে—(ক) বীজ প্রদানকারী পক্ষের দাবি অনুযায়ী মুযারাআ চুক্তি বৈধ হইলে তাহার দাবি ও তাহার পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে;
(খ) চাষীর দাবি অনুযায়ী মুযারাআ চুক্তি বৈধ হইলে ভূম্যাধিকারীর বক্তব্য এবং সাক্ষী উপস্থিত করা হইলে চাষীর পক্ষের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হইবে।
(ছ) চাষী ও ভূম্যাধিকারীর মতভেদের কারণে মুযারাআ চুক্তি ফাসিদ
৬৭১
সাব্যস্ত হইলে সেই ক্ষেত্রে ধারা (৮৬১) মোতাবেক ফাসিদ মুযারাআর বিধান প্রযোজ্য হইবে।
বিশ্লেষণ
ফসল বণ্টনের হার লইয়া চাষী ও ভূম্যাধিকারীর মধ্যে তিন ধরনের মতভেদ হইতে পারে। (১) এক পক্ষের দাবি অনুযায়ী উৎপন্ন ফসল নির্দিষ্ট হারে এবং অপর পক্ষের দাবি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে বন্টিত হইবে; (২) এক পক্ষের দাবি অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে এবং অপর পক্ষের দাবি অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারের সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত যোগ হইবে; (৩) এক পক্ষের দাবি অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে এবং অপর পক্ষের দাবি অনুযায়ী নির্দিষ্ট হার হইতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিয়োগ হইবে। নির্দিষ্ট হার,যেমন ২ ৪ ইত্যাদি। নির্দিষ্ট পরিমাণ, যেমন এক মন, দুই মন, এক ধামা, দুই ধামা ইত্যাদি। নির্দিষ্ট হারের সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ যোগ হওয়া, যেমন এক-তৃতীয়াংশ হারে যে পরিমাণ ফসল পাওয়া যাইবে তাহার সহিত আরও এক মন বা এক ধামা যুক্ত হইবে। নির্দিষ্ট হার হইতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিয়োগ হওয়া, যেমন এক-তৃতীয়াংশ হারে যে পরিমাণ ফসল পাওয়া যাইবে তাহা হইতে এক মন বা এক ধামা বিয়োগ হইবে।
উপরোক্তরূপ মতভেদের কারণে আদালত কর্তৃক মুযারাআ চুক্তি ফাসিদ সাব্যস্ত হইলে সেই ক্ষেত্রে ধারা ( ৮৬১)-এ উল্লেখিত বিধান প্রযোজ্য হইবে।
৬৭২
তথ্য নির্দেশিকা
১ . হিদায়া, ২২, পৃ. ৪০৮ঃ
وفي الشريعة هي عقد على الزرع ببعض الخارج
আরও দ্র. আলামগীরী, ৫খ, পৃ. ২৩৫। মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৪২৩ঃ
المزارعة دفع الارض الى من يزرعها على ان يكون الزرع بينهما
কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃ. ৪৮০৪
هي عقد على الزرع ببعض الخارج يعني معاقدة دفع الارض الى من يزرعها على ان الله بينهما على ما شرطا ۔
২. বুখারী, কিতাবুল হারছ ওয়াল মুরাআ, বাব ফাদলিয-যারই ওয়াল গারস, ২খ, (বাংলা অনু,
আধুনিক প্রকাশনী), পৃ. ৪২১, নং ২১৫২। ৩. বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবন মাজা ও মুসনাদে আহমাদের বরাতে মাস
আলা মিলকিয়াতে যমীন, পৃ. ৬৮-৯। ৪. বুখারী (বাংলা অনু, আধুনিক প্রকাশনী), ২, পৃ. ৪২৩, নং ২১৫৭। ৫. বুখারী (বাংলা অনু.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৪২৪। ৬. শারহু মাআনিল আছার (তাহাবী)-এর বরাতে কানযুল উম্মাল, কিতাবুল মুযারাআ, ১৫ খ, পৃ.
৫৩৩, নং ৪২০৬৫। ৭. কানযুল উম্মাল, কিতাবুল মুযারাআ, ১৫ খ, পৃ. ৫৩৪, নং ৪২০৬৮, ইবন আবী শায়বার বরাতে। ৮. ইবন মাজা, কিতাবুর রাহন, বাবুর রুখসাহু ফিল মুযারাআ, নং ২৪৬৩। ৯. আবু ইউসুফ, কিতাবুল খারাজ। ১০. সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, কিতাবুল মুযারাআ ওয়াল মুসাকাত। ১১. আবু দাউদ, বুয়ু, বাব ফিল মুযারাআ, নং ৩৩৯২; বুখারী, কিতাবুল হারছ ওয়াল মুযারা;
মুসলিম, বুয়ু বাব কিরাইল আরদ বিয-যাহাব; নাসাই, নং ৩৯৩২। ১২. আবু দাউদ, কিতাবুল বুয়ু, বাব ফিল মুযারা, নং ৩৩৯০; ইবন মাজা, রাহন, বাব মা
ইয়াকরাহু মিনাল মুযারাআ, নং ২৪৬১; নাসাঈ, মুরাআ, বাব নাহি আন কিরাইল আরদ, নং
৩৯৫৯।
১৩. আবু দাউদ, নং ৩৩৯১; নাসাঈ, নং ৩৯২৫। ১৪. হিদায়া, মুযারাআ, ২৩, পৃ. ৪০৮ প; বাদাই, মুযারাআ, ৬খ, পৃ. ১৭৬; আলামগীরী, মুযারাআ,
১ম বাব, ৫খ, পৃ. ২৩৫। ১৫. বাদাই, কিতাবুল মুযারাআ, ফাসল- যেসব শর্ত মুযারাআ চুক্তি ফাসিদ করিয়া দেয়, ৬৩, পৃ.
:
৬৭৩
১৮০-৮১; হিদায়া, মুযারাআ, ২খ, পৃ. ৪০৮ প.। ১৬. বাদাই, মুযারাআ, ৬খ, পৃ. ১৮৫ প; হিদায়া, ২য় ভলম, মুযারাআ, পৃ. ৪০৮.। ১৭. বাদাই, কিতাবুল মুরাআ, ৬খ.। ১৮. হিদায়া, ২খ, পৃ. ৪০৮ প; বাদায়ে, ৬খ, কিতাবুল মুযারাআ। ১৯. আইনুল হিদায়া (হিদায়ার উদ্ অনু.), ৪খ, পৃ. ১১৮। ২০. হিদায়া, ২খ, মুযারাআ, আইনুল হিদায়া, ৪খ, পৃ. ১২১। ২১. হিদায়া, ২খ, মুরাআ; আইনুল হিদায়া, ৪খ, পৃ. ১১৯-২০। ২২. আলমগীরি, কিতাবুল মুরাআ, বাব ১১, পৃ. ২৬০। ২৩. আলামগীরী, কিতাবুল মুযারাআ, বাব ১২, পৃ. ২৬০। ২৪. আলমগীরী, কিতাবুল মুযারাআ, বাব ৫, পৃ. ২৫০। ২৫. আলমগীরী, মুযারাআ, বাব ১৫, পৃ. ২৬৪। ২৬. আলমগীরী, কিতাবুল মুযারাআ, বাব ১০, পৃ. ২৫৫ প.। ২৭. আলমগীরী, মুরাআ, বাব ১৯, পৃ. ২৬৭ প.। ২৮. আলামগীরী, মুযারাআ, বাব ২৩, পৃ. ২৭২ প.। ২৯. আলমগীরী, কিতাবুল মুযারাআ, বাব ২২, পৃ. ২৭০ প.। ৩০. সম্পূর্ণ আলোচনাটি আলামগীরী, কিতাবুল মুরাআ, বাব ২২ হইতে গৃহীত, পৃ. ২৭০ প.।