বোম্বাইতে বাঙালী চিত্রাভিনেত্রীর শোচনীয় জীবনাবসান।
খবর বটে, তবে দৈনিক খবরের কাগজের নয়। একটা বাজেমার্কা সাপ্তাহিকে ফলাও করে ছেপেই খবরটা। কারণ এ পত্রিকার মূল উপজীব্যই সিনেমা-ঘটিত রসালো সংবাদ।…এরা চিত্রজগতের তুচ্ছ থেকে উচ্চ পর্যন্ত সব খবর সংগ্রহ করে ফেলে নিজেদের রুচি অনুযায়ী ভাষায় এবং ভঙ্গিমায় পরিবেশন করে কাগজের কাটতি বাড়ায়। অতএব এদের কাছে নামকরা আর্টিস্টদের প্রণয় এবং প্রণয়ভঙ্গের খবরও যেমন আহ্লাদের যোগানদার, আত্মহত্যার খবরও তাই।
দুটো তিনটে সংখ্যা এখন ওই নিয়ে ভরানো যাবে। খড়-বাঁশের কাঠামোর উপর মাটির প্রলেপই শুধু নয়, রং-পালিশও এদের আয়ত্তে। তা এদেরও একরকম শিল্পী বলা যায়।
এ পত্রিকা প্যাকেট খুলে পড়বার কথা নয়, নেহাৎই এই কটায় কোনো চিঠিপত্র আসেনি বলেই অনামিকা দেবীর নামে সযত্নে প্রেরিত এই হতচ্ছাড়া পত্রিকাখানার মোড়ক খুলে পাতা উল্টে চোখ বুলোচ্ছিল বকুল, হঠাৎ একটা পৃষ্ঠায় চোখ আটকে গেল।
এ ছবিটা কার?
মদির হাস্যময় এই মুখের ছবি কি আগে কোথাও দেখেছে বকুল? কিন্তু তখন এমন মদির হাস্যের ছাপ ছিল না!
হ্যাঁ, এ মুখ বকুলের দেখা, কিন্তু আর দেখবে না কখনো। দেখা হবে না কোনদিন। বার বার পড়লো বকুল ওই ছবির নীচের ছাপানো সংবাদটা, কিন্তু যেন বোধগম্য হচ্ছে। ছায়া-ছায়া লাগছে।
বোম্বাইতে বাঙালী চিত্রাভিনেত্রীর শোচনীয় জীবনাবসান।…বম্বের বিখ্যাত নবাগতা চিত্রাভিনেত্রী লাস্যময়ী যৌবনবতী শ্রীমতী রূপছন্দা গত সোমবার তার নিজস্ব ফ্ল্যাটে– অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
এই আত্মহত্যার কারণ অজ্ঞাত।
শ্ৰীমতী রূপছন্দা তার ফ্ল্যাটে একাই বাস করলেও বহুজনের আনাগোনা ছিল। শ্ৰীমতী রূপছন্দার বেপরোয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্ৰাপদ্ধতি পরিচিত সমাজকে ক্রমশই বিরূপ করে তুলেছিল, রূপছন্দা তার ধার ধারতেন না।
তবে সম্প্রতি কেউ কেউ তার জীবনের একটি রহস্যময় ঘটনার কথা উল্লেখ করছেন। আত্মহত্যার দু’দিন পূর্বে নাকি তিনি জুহুর উপকূলে এক নির্জন প্রান্তে গভীর রাত্রি পর্যন্ত একা বসেছিলেন এবং সেখানে নাকি একবার এক গেরুয়াধারী সাধুকে দেখা গিয়েছিল।
ওই সাধুর সঙ্গে এই মৃত্যুর কোনো যোগ আছে কিনা সে রহস্য অজ্ঞাত, পুলিস সেই সাধুকে অনুসন্ধান করছে।…
শ্রীমতী রূপছন্দার নৈতিক চরিত্র যাই হোক, ব্যক্তিগতভাবে তিনি নানা সদগুণের অধিকারিণী ছিলেন, দুঃস্থ অভাবগ্রস্তদের প্রতি ছিল তার প্রবল সহানুভূতি। তার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেকে তাকে প্রতারণাও করেছে, কিন্তু শ্রীমতী রূপছন্দার দানের হাত অকুণ্ঠই থেকেছে।…পরবর্তী সংখ্যায় ‘রূপছন্দার মৃত্যুরহস্য’ বিশদভাবে জানানো হবে।
জীবনের প্রারম্ভ দেখে কে বলতে পারে সেই জীবন কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, কী ভাবে শেষ হবে!
জলপাইগুড়ির সেই নম্র নতমুখী বধূ নমিতা, বম্বের এক বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে, ডানলোপিলোর গদিতে শুয়ে ঘুমের বড়ি খেয়ে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে গেল।….
কিন্তু নমিতা যা যা চেয়েছিল সবই তো আহরণ করতে পেরেছিল। অর্থ, প্রতিষ্ঠা, নাম, খ্যাতি, স্বাধীনতা। চেয়েছিল তার পুরনো পরিচিত জগৎকে দেখিয়ে দিতে, সে তুচ্ছ নয়, মূল্যহীন নয়। তবু নমিতা ওই ঘুমের বড়িগুলো আহরণ করতে গেল কেন?
আবছা ভাবে সেই নতমুখী মেয়েটাকেই মনে পড়ছে যে বলেছিল, আমায় নিয়ে গল্প লিখবেন? আমি আপনাকে প্লট দিতে পারি!
অনামিকা দেবী সেই আবেদন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন বলেই কি নমিতা আরো ঘোরালো প্লটের যোগান দিতে বসেছিল?
কিন্তু এই ঘোরালো প্লটটাকে নিয়েই কি লিখতে বসবেন অনামিকা দেবী?
কি লিখবেন?
আজকের সমাজে কি আর এ প্লট নতুন আছে? কোনটা থাকছে নতুন? নতুন হয়ে আসছে, মুহূর্তে পুরনো হয়ে যাবে। এ তো সর্বদাই ঘটছে।
তবু বকুল যেন একটা অপরাধের ভার অনুভব করছিল। কিন্তু নিয়তিকে কি কেউ ঠেকাতে পারে?
অনেকক্ষণ বসেছিল, হঠাৎ নিচের তলায় খুব জোরে জোরে ভোঁ ভোঁ করে শাঁখ বেজে উঠল।
এমন দুপুর রোদে হঠাৎ শাখের শব্দ কেন? বাড়িতে কি কোনো মঙ্গল অনুষ্ঠানের ব্যাপার ছিল? অন্যমনস্ক বকুল সে খবর কান দিয়ে শোনেনি, অথবা শুনে ভুলে গেছে?
কিন্তু কারই বা কি হতে পারে?
‘বিয়ে পৈতে ভাত’–এর যোগ্য কে আছে?…অলকার মেয়ের বিয়েটিয়ে নয় তো? হয়তো বকুলকে বলবার প্রয়োজন বোধ করেনি।
আহা তাই যেন হয়।
তা না হলে ওই মেয়েটাও হয়তো একটা ঘোরালো গল্পের প্লট হয়ে উঠবে।
বকুল কি ওই শখের শব্দে নেমে যাবে? হেসে হেসে বলবে, কি গো, আমায় বাদ দিয়েই জামাই আনছো?
স্বাভাবিক হবে সেটা?
নাকি সাজানো-সাজানো দেখাবে?
যাই হোক, বকুল নেমেই এল, আর নেমে এসেই স্তব্ধ হয়ে গেল।
সে স্তব্ধতা তখনো ভাঙল না, যখন একখানা ঝড়ের মেঘ এসে গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
পিসি!
বকুল অবাক হয়ে দেখতে থাকে, বড় দালানে বাড়ির সবাই এসে দাঁড়িয়েছে, অপূর্ব অলকা বাদে…রয়েছেন বড় বৌদি, বড় বৌদির বৌ আর মেয়েরা। রুগ্ন সেজ বৌদিও। নানা বয়সের কতকগুলো ছেলেমেয়ে।
তাছাড়া অনেকগুলো ঝি-টি।
বাড়িতে এতো ঝি আছে তা জানতো না বকুল।
জানতো না এতো ছেলেময়ে আছে।
হঠাৎ মনে পড়ল বকুলের, আমি কী-ই বা জানি? কতটুকুই বা জানার চেষ্টা করি?
শম্পার চোখে জল, শম্পার মা-বাবার চোখে জল। এমন কি দালানের মাঝখানে যাকে একটা হাতল দেওয়া ভারী চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে, সেই সত্যবানের চোখেও যেন জল।
শুধু বকুলের চোখটা যে শুকনো-শুকনোই রয়েছে সেটা বকুল নিজেই অনুভব করছে।
বকুলের হঠাৎ নিজেকে কেমন অসম্ভব মনে হচ্ছে। যেন এখানে বকুলের কোনো ভূমিকা নেই।…
অথচ থাকতে পারতো। বকুল সে সুযোগ নেয়নি।
ইচ্ছে করেই তো নেয়নি, তবু বকুলের মুখটা দারুণ অপ্রতিভ–অপ্রতিভ লাগছে।
দেখে মনে হচ্ছে, আজকের এই নাট্যদৃশ্যের নায়িকা স্বয়ং বকুলের ছোট বৌদি। এই তো ঠিক হলো, এটাই তো চেয়েছিল বকুল। তবু বকুল ভয়ঙ্কর একটা শূন্যতা অনুভব করছে। যেন বকুলের একটা বড় জিনিস পাবার ছিল, বকুল সেটা অবহেলায় হারিয়েছে।
বকুল বোকা বনে গেছে।
বকুল অবাক হয়ে দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে দেখছে, ছোট বৌদি তার সদ্যলব্ধ জামাইয়ের সামনে জলখাবারের থালা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।….
দেখছে,. ছোড়দা অনুরোধ করছেন, আহা বেশী আবার কি? ওটুকু খেয়ে নাও! ভাত খেতে বেলা হবে।
এর আগে নাটকের যে দৃশ্যটা অভিনীত হয়ে গেছে সেটা বকুলের অজানা, তাই বকুল বোকা বনে যাচ্ছে।
মস্ত একটা পাহাড় দাঁড়িয়ে ছিল সমস্ত পথটা জুড়ে, সমস্ত শুভকে রোধ করে। ওই অনড় অচলকে অতিক্রম করা যাবে, এ বিশ্বাস ছিল না কারুর।
দুর্লঙ্ঘ্য বাধা! কারণ বাধাটা মনের।
মনের বাধা ভাগ্যের সমস্ত প্রতিকূলতার থেকে প্রবল। মানুষ সব থেকে নিরুপায় আপন মনের কাছে। সে জগতের অন্য সমস্ত কিছুর উপর শক্তিশালী প্রভু হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু নিজের মনের কাছে শক্তিহীন দাসমাত্র।
তাই অভিমানের পাহাড় হিমাচল হয়ে উঠে জীবনের সব কল্যাণকে গ্রাস করে বসে।
এতদিন ধরে সেই পাহাড়টা নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে অলঙ্ঘ্যের ভূমিকা নিয়ে। কেউ একবার ধাক্কা দিয়ে দেখতে চেষ্টা করেনি, দেখি অতিক্রম করা যায় কিনা। না পাহাড়ের ওপারের লোক, না বা এপারের।
অথচ ভিতরে ভিতরে ভাঙন ধরেছে, অনমনীয়তার খোলস খুলে পড়েছে। তবু দূরত্বের ব্যবধান দূর হচ্ছে না।
.
আবার মন অনন্ত রহস্যময়ী।
কখন এক মুহূর্তে তার পরিবর্তন ঘটে। যাকে ভাবা হয়েছে দুর্লঙ্ঘ্য পাথরের পাহাড়, সহসাই তা মেঘের পাহাড়ের মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তখন অভিমান হয়ে ওঠে আবেগ। যা কিছুতেই পারা যাবে না বলে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা হয়েছে, তখন তাকত অনায়াসেই পার হয়ে যায়।
তা নইলে শম্পাকে কেমন করে তার বাবার কোলে মুখ রেখে বসে থাকতে দেখা যায়, আর তার বাবাকে বসে থাকতে দেখা যায় শম্পার সেই মাটকোঠার বাড়ির নড়বড়ে বারান্দায়, ততোধিক নড়বড়ে চৌকিটার ওপর।
শম্পার মাকেও দেখা যায় বৈকি। দেখা যায় আরো আশ্চর্য পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর জামাইয়ের পিঠে হাত রেখে বসে আছেন, সে হাতে স্নেহস্পর্শ।
অথচ মুহূর্তেই ঘটে গেছে এই অঘটন। এ অঙ্কে বকুল নেই।
তখন সকালের রোদ এই বারান্দাটায় এসে পড়েছিল। নতুন শীতের আমেজে সেই রোদটুকু লোভনীয় মনে হয়েছিল, তাই শম্পা সত্যবানকে টেনে নিয়ে এসে বসিয়ে চায়ের তোড়জোড় করছিল।
তখন শম্পা নিত্যদিনের মতই টোস্টে মাখন লাগাচ্ছে, আর সত্যবান নিত্যদিনের মতই অনুযোগ করছে–একজনের রুটিতে অত পুরু করে মাখন মাখানো মানেই তো অন্যজনের রুটিতে মাখন না জোটা!
ঠিক সেই সময় বংশী এসে বলল, এই শম্পা, তোকে কারা যেন খুঁজতে এসেছে।
কা-রা।
শম্পার হাত থেকে মাখনের ছুরিটা পড়তে পড়তে রয়ে গেল।
আমাকে আবার কারা খুঁজতে আসবে বংশীদা? পিসি কি? সঙ্গে কে?
তা কি করে জানব? তোর প্রাণের পিসিকে দেখার সৌভাগ্য তো হয়নি কোনোদিন। তা তুই তো বলিস পিসি চিরকুমারী, তাই না? ইনি তো বেশ সিঁদুর-টিদর পরা! যাক, কে কী বৃত্তান্ত সেটা এখানে বসে চিন্তা না করে নেমে চল্ চটপট!
বংশীদা, আমার কী রকম ভয়-ভয় করছে! তুমি বরং জিজ্ঞেস করে এসো কে ওঁরা? সত্যিই আমায় খুঁজতে এসেছেন কিনা?
আমি আর পারবো না। কারণ ওসব কথা হয়ে গেছে। চল বাবা চটপট! তোর “ভয়”। এ যে রামের মুখে ভূতের নাম!
সত্যবান আস্তে বলে, দেখেই এসো না শম্পা।
শম্পা চৌকিটায় বসে পড়ে শুকনো গলায় বলে, দুজন কে কে বংশীদা? দু-জনই মহিলা?
আরে বাবা, না না। একজন মহিলা আর একজন তার বডিগার্ড। আর না-হয়তো একজন—
হঠাৎ চুপ করে যায় বংশী।
খুব তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, এই দেখ, এঁরা চলেই এসেছেন।…যা সিঁড়ি, আপনারা উঠতে পারলেন?
পুরুষটি কাঁপা-কাঁপা গলায় বলে ওঠেন, পারতেই হবে। না পারলে চলবে কেন? তারপর প্রায় কাঁপতে কাঁপতেই চৌকিতে বসে পড়েন।
তার পরের ঘটনাটা অতি সংক্ষিপ্ত, অতি সরল।
এবং তার পরের দৃশ্য আগেই বলা হয়েছে।
এখন এই অসুবিধে চলছে, শম্পা কিছুতেই মুখ তুলছে না। সেই যে বাবার কোলে মুখ গুঁজে পড়েছিল তো সেই পড়েই আছে।
বংশী বার বার বলেছে, শম্পা ওঠো। বাবাকে-মাকে প্রণাম করো। মার দিকে তাকাও।
শম্পা সে-সব শুনতে পেয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে না।
বংশী শম্পাকে ‘তুই’ করেই কথা বলে, এখন এঁদের সামনে এঁদের মেয়েকে তুই করতে যেন সমীহ আসছে বংশীর, নিজেকে ভারী ক্ষুদ্র তুচ্ছ মনে হচ্ছে তার।
যেন এবার অনুভব করতে পারছে বংশী, সে এবার অবান্তর হয়ে যাবে শম্পা নামের মেয়েটার জীবন থেকে, অবান্তর হয়ে যাবে তার বন্ধুর জীবন থেকেও।
এতদিন পরে এঁরা এসেছেন বাধা অতিক্রমের প্রস্তুতি নিয়ে, শম্পাকে পরাজিত করবার সংকল্প নিয়ে। এঁরা হেরে ফিরে যাবেন না।
তারপর?
তারপর বংশী থাকবে, আর থাকবে তার এই মাটকোঠার বাসার অন্ধকার, অন্ধকার ঘরখানা আর এই নড়বড়ে বারান্দাটা।
কিন্তু তখন কি কোনোদিনই আর এখানে সকালের রোদ এসে পড়বে? বিকেলের বাতাসটুকু হবে?
শম্পা বলেছিল, বংশীদা, আমার সঙ্গে চলো। আমি কেমন সাহস পাচ্ছি না।
বংশী হেসে উঠেছিল, তোর বাপের বাড়িতে তুই যাচ্ছিস, আমি যাবো ভরসা দিতে?
শম্পার মা-বাবাও অনুরোধ করেছিলেন বৈকি। বলেছিলেন, এতটুকু দেখেই বুঝতে পারছি তুমিই ওদের সহায়, তোমাকেও যেতে হবে।
কিন্তু বংশী কি করে যাবে?
তার যে ঠিক এই সময়ই ভীষণ কাজ রয়েছে।
ওঁরা মেয়ে-জামাইকে নিয়ে যাবার জন্যে তোড়জোড় করছেন, জামাইয়ের কোনো ওজর আপত্তিই কানে নিচ্ছেন না, মেয়ের তো নয়ই। বলছেন, বার বার ভূল করেছি, আর ভুল করতে রাজী নই।
এর মাঝখান থেকে বংশী তার ভীষণ দরকারী কাজের জন্যে চলে গেল। শম্পা বললো, আর কোনোদিন দেখা করবে না বংশীদা?
বংশী হেসে উঠে বললো, এই দেখ, এরপর কি আর বংশীদাকে মনেই থাকবে তোর?
শম্পা শান্ত গলায় বলল আমাকে তোমার এমনিই অকৃতজ্ঞ মনে হয় বংশীদা?
বংশী বললো, না না, ও আমি এমনি বললাম। জানিসই তো, আমি ওসব উঁচুতলার লোকদের দেখলে ভয় পাই।
তোমার বন্ধুও পায়।
ওকে তো তুই মানিয়ে নিবি।
বলে পালিয়ে গিয়েছিল বংশী।
.
হ্যাঁ, মানিয়ে নেবার ক্ষমতা শম্পার আছে।
তাই বলে মা-বাবার পাগলামির হাওয়ায় গা ভাসাতে পারে না।
মা বলেছিল, লোকজন নেমন্তন্ন করে ঠিকমত বিয়ের অনুষ্ঠান করি—
শম্পা জোরে হেসে উঠে বলে দিলো, দোহাই তোমার মা, আর লোক হাসিও না।
এ রকম তো আজকাল কতই হচ্ছে, মার গলাটা ক্ষীণ শোনালেও শোনা গিয়েছিল, আমাদেরই আত্মীয়-কুটুম্বর বাড়িতে হচ্ছে। কতদিন আগে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে, আবার নতুন করে গায়েহলুদ-টলুদ সব করে ভাল করে বিয়ে হচ্ছে।
তাদের অনেক সাধ মা, আমার আর বেশী ভালয় সাধ নেই।
শম্পার বাবা নিশ্চিন্ত ছিলেন ওরা এখানেই থাকবে, তাই নিজেদের ঘরটাকে ঝালাইটালাই করছিলেন মেয়ে-জামাইয়ের জন্যে।
নিজেদের?
পাশের ওই ছোট ঘরখানাই যথেষ্ট।
কিন্তু শম্পা সে প্রস্তাব হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে, বাবা গো, একেই তো ওই এক অপদার্থর গলায় মালা দিয়ে বসে আছি, তার ওপর যদি আবার ঘরজামাই বনে যায়, তাহলে তো আমার মরা ছাড়া আর গতি থাকবে না! ঘরজামাই আর পুষ্যিপুতুর এরাই তো শুনেছি জগতের ওঁচা!
শম্পা হেসে উঠেছিল, না বাবা, ওটা আর করছি না, ওতে তোমাদের প্রেস্টিজটা বড়ো পাংচার হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। তবে দেখেশুনে একটা কোঠা ঘরে গিয়েই উঠতে হবে। সেই জন্যেই তো বলছি একটা ভাল চাকরি আমার বিশেষ দরকার। দাও না বাবা একটা মোটা মাইনের চাকরিবাকরি করে। কত তো কেষ্টবিষ্টর সঙ্গে চেনা তোমার।
চেনা দিয়ে কোনো কাজ হয়, এই তোর ধারণা?
হয় না বলছো? তবে নিজেই উঠে-পড়ে লাগি বাবা? দেখ তখন কী একখানা ছবির মতন সংসার বানাবো।
শম্পার চোখে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি।
.
শম্পার মুখে দৃঢ়তার ছাপ।
কিন্তু এমন অঘটনটা ঘটলো কোন্ যোগসূত্রে? শম্পার মা-বাপ তার মাটকোঠায় ঠেলে গিয়ে উঠলো কি করে?
সে এক অভাবিত যোগাযোগ।
অথবা বিধাতার ভাবিত। আপন কাজ করিয়ে নেবার তালে অনেক কৌশল করেন তিনি। আর তার জন্যেও থাকে অন্য আয়োজন।
সেই আয়োজনের চেহারাটা এই
শম্পার মা রমলা বিকেলবেলা কোথায় যেন কোন মন্দিরে গিয়েছিল। সেখানে নাকি ভরসন্ধ্যেবেলা কোন্ কালীসাধিকার উপর দেবীর ভর হয়, তিনি সেই ভরের মুখে আর্তজনের সর্বপ্রকার আকুল প্রশ্নের উত্তর দেন। রোগ-ব্যাধি থেকে শুরু করে হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ, মেয়ের বিয়ে, ছেলের চাকরি, মামলার ফলাফল, সবই তার এলাকাভুক্ত।
রমলা গিয়েছিল তার আকুল প্রশ্ন নিয়ে।
এই অলৌকিকের সংবাদদাত্রী হচ্ছে বাড়ির বাসনমাজা ঝি। রমলা কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপিচুপি তার সঙ্গে চলে গিয়েছিল।
চিরদিনের আত্মসমবোধ-সচেতন, মর্যাদাবোধ-প্রখর, স্বল্পবাক রমলার এমন অধঃপতন অবিশ্বাস্য বৈকি। ঝিয়ের সঙ্গে এক রিকশায় বেড়াতে বেরুনো ভাবা যায় না। তা ছাড়া এতো সাহস ওই ঝি-টা পেলো কখন যে, রমলার কাছে এই অলৌকিক কাহিনী ফেঁদে বসে তাকে নোওয়াতে পারলো?
ঝি ডেকে কাজের নির্দেশ দেওয়া ব্যতীত কবে তাদের সঙ্গে বাড়তি দুটো কথা বলেছে রমলা?
অথচ এখন তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সখীর মতো
বিধাতা যাকে অন্য গড়ন দিতে চান, তাকে দুঃখের আগুনে পোড়ানোই যে তার কাজ।
শুধু তো ওই হৃদয়হীন মেয়েটাই নয়, আর একজনও যে তিলে তিলে ক্ষয় করছে রমলাকে অনেক দিন ধরে।
দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, ক্রমশ মাসের পর মাস কেটে যাচ্ছে–সাগরপারে চলে যাওয়া আর এক হৃদয়হীন সন্তান না আসছে ফিরে, না দিচ্ছে চিঠি। যদি বা কখনো দেয়, সে একেবারে সংক্ষিপ্তের পরের নমুনা।
মা-বাপের অনেক অভিযোগ অনুযোগ, উদ্বেগ, অকুল প্রশ্নের উত্তরে লেখে, এতো ভাবনার কী আছে? মরে গেলে কেউ না কেউ দিতই খবর। জানোই তো আমি চিঠির ব্যাপারে কুঁড়ে।
অথবা কখনো কখনো অনেকগুলো পয়সা খরচ করে একটা টেলিগ্রাম করে বসে তার কুশল সংবাদ জানাতে।
চিঠি লেখার আলসোর সপক্ষে তো কুঁড়েমির যুক্তি, আর ফিরে না আসার সপক্ষে?
পড়তে গিয়েছিলি তুই পাঁচ বছরের কোর্স, সাড়ে ন বছর হয়ে গেল আসিস না কেন, এর উত্তর?
তা সে তার জীবনের ঘটনাপঞ্জীতেই প্রকাশিত! পড়ার শেষে বছরখানেক ভ্রমণ করেছে।
ইয়োরোপ আমেরিকার মোটামুটি দ্রষ্টব্যগুলি দেখে নিতে নিতে পেয়ে গেছে চাকরি। যে চাকরিটি এখন উঠতে উঠতে আকাশ ছুঁচ্ছে। দেশে ফিরে এলে তার দশ ভাগের এক ভাগ মাইনের চাকরি জুটবে
তবে?
কোন্ সুখে ফিরে আসবে সে? কিসের আশায়? শুধু মা-বাপকে চোখের দেখা দেখতে? অত ভাবপ্রবণ হলে চলে না।
রমলার নিজেরই দাদা আর জামাইবাবু রমলাকে নস্যাৎ করে দিয়ে বলেছেন, পাগল ছাড়া আর কেউ বলবে না ছেলেকে–তুই চলে আয় তোর ওই রাজ্যপট ছেড়ে। এসে আমাদের সঙ্গে নুনভাত, ফেনভাত খেয়ে চাকরি চাকরি করে ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়া। তোর এই অস্থিরতার কোনো মানেই হয় না রমলা!
রমলা স্বামীর কাছে তীব্র হয়েছে, তুমিও একথা বলবে? কটা টাকার জন্যে খোকা চিরকাল পৃথিবীর ওপিঠে পড়ে থাকুক?
অভিযুক্ত আসামী বলে উঠতে পারেনি, না না, আমি একথা বলি না। আমারই কি খোকাকে একবার দেখবার জন্যে প্রাণ যাচ্ছে না?
যেটা বললে পিতৃহৃদয়ের পরিচয় দেওয়া যেতে পারতো।
কিন্তু কি করে দেবে সে পরিচয়।
চাকরির বাজারের হালচাল জানে না সে?
তাই সে শুকনো গলায় বলে, না বলেই বা উপায় কি? ওকে আমি মাথার দিব্যি দিয়ে ফিরিয়ে এনে ওর উপযুক্ত কোনো কাজ জুটিয়ে দিতে পারবো? সেখানে রাজার হালে রয়েছে–
শুধু রাজার হালে থাকাটাই সব? মা বাপ, নিজের দেশ, সমাজ, এসব কিছুই নয়?
সেটা তার বিবেচ্য। মানু হতাশ গলায় বলেছে, মানুষ মাত্রেই ত এটাই জানে রাজার হালে থাকাটাই সব।
আমি এবার ওকে দিব্যি দিয়ে চিঠি দেব। রমলা উত্তেজিত গলায় ঘোষণা করেছিল এবং দিয়েও ছিল সে চিঠি।
ঈশ্বর জানেন কী দিব্যি দিয়েছিল সে। কিন্তু সে চিঠির আর উত্তরই এলো না। প্রত্যাশার দিনগুলি ঝাপসা হতে হতে ক্রমশই মিলিয়ে যাচ্ছে।
এরপর যদি রমলা সরাসরি দেবীর মুখ থেকে তপন বিদীর্ণ হৃদয়ের প্রশ্নের উত্তর পাবার শাস পায়, তাহলে ছুটে যাবে না সেখানে? সে আশ্বাসটা কার কাছ থেকে পাচ্ছে তা কি বিবেচনা করে দেখতে বসবে? ওই বাসনমাজা ঝিটাকেই তখন তার কাছে দেবীর অংশ বলে মনে হয়েছে।
অথচ মাত্র কিছুদিন আগেও কি রমলা স্বপ্নেও ভাবতে পারতো সে এমন একটা গ্রাম্য কাজ করতে পারবে?
অলকার গুরুভক্তির বহর দেখে সে মনে মনে হেসেছে।
রমলার শাশুড়ী যখন বেঁচেছিলেন, তখন রমলা বরের বদলির চাকুরিসূত্রে বাইরে বাইরে ঘুরছে, জানে না শাশুড়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন কি সংস্কারমুক্ত ছিলেন। কিন্তু কলকাতায় হেড় অফিসে বদলি হয়ে স্থায়ীভাবে কলকাতায় থাকা অবধি বড় জাকে দেখছে। দেখেছে তার নাতি-নিয়ম।
কারো অসুখ করলে বড়গিন্নী ডাক্তারের ওষুধের থেকে অনেক বেশী আস্থা রাখেন মাকালীর খাড়া ধোওয়া জল অথবা মসজিদের জলপড়ার উপর।
রমলা মনে মনে ওই বড় জাকে মুখ্য গাঁইয়া ছাড়া আর কিছু ভাবেনি কখনো।
কিন্তু তখন তো রমলা টাটকা।
তখন রমলার ছেলে টকটক করে ফার্স্ট হয়ে হয়ে ক্লাসে উঠছে, তখন রমলার ছবির মত মেয়েটা নেচে-গেয়ে সারাদিন অনর্গল ছড়া আবৃত্তি করে বাড়ি মাত করে রাখছে। তখন রমলা কেমন করে জানবে সন্তানের মাকে ভূত ভগবান সবই মানতে হয়, মানতে হতে পারে।
.
রুদ্ধদ্বার কক্ষে ‘দেবী’ রমলার কোন্ এগের কী উত্তর দিলেন, তা রমলাই জানে আর দেবীই জানেন, তবে বাড়ি ফিরলো রমলা যেন কী এক আশা-প্রত্যাশায় ছল-ছল করতে করতে।
ঘরে ঢুকে দেখলো স্বামী চুপচাপ বিছানায় বসে। থমকে বললো, এভাবে বসে যে?
মানু সে কথার উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করলো, একা একা কোথায় গিয়েছিলে?
একা নয়। সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল ছোটবৌ।
তারপর হঠাৎ নিজে থেকেই বলে উঠলো, গিয়েছিলাম এক জায়গায়, পরে বলবো।
খোকার একটা চিঠি এসেছে বিকেলে, তোমায় খুঁজছিলাম—
খোকার চিঠি এসেছে!
রমলা বিহ্বলভাবে তাকিয়ে বলে, খোকার? খোকার চিঠি এসেছে? সত্যি এসেছে? ওগো তাহলে তো জগতে অবিশ্বাসের কিছু নেই। এইমাত্র জেনে এলাম শীগগির খবর আসবে। আর আজই-কই, কোথায় চিঠি, দাও? কাকে লিখেছে? রমলার কণ্ঠে ব্যস্ততা।
মানু আস্তে বালিশের তলা থেকে চিঠিটা বার করে দিয়ে বলে, তোমার চিঠি, আমি কিন্তু খুলে দেখেছি, ধৈর্য ধরা শক্ত হচ্ছিল
তার জন্যে এতো কৈফিয়ৎ দেবার কী আছে? কী লিখেছে? ভাল আছে তো?
ভাল? হা–ভাল আছে বৈকি।
মানুর গলার স্বরে বিদ্রুপের ছায়া।
রমলার নিয়ম ছেলের চিঠি এলে তাড়াতাড়ি চোখ বুলিয়ে নিয়ে পরে বসে ধীরেসুস্থে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া। যত সংক্ষিপ্ত চিঠিই হোক বার বার না পড়লে যেন হয় না রমলার।
আজ কিন্তু ওই চোখ বুলিয়ে নিয়েই বসে পড়ে রমলা, দ্বিতীয়বার আর পড়তে পারে না। রমলার মুখটা সাদা দেখায়।
তোমার দিব্যি দেওয়ার প্রতিক্রিয়া
মানু তেমনি বিদ্রূপ আর হতাশার স্বরে বলে, আমি জানতাম। এই রকমই যে একটা চিঠি আসবে এ আমার ধারণা ছিল। তা যাও ছেলের নেমন্তন্নে ছেলের বাড়ি ঘুরে এসো। কত বড় আশ্বাস দিয়েছে–রাহা খরচ পাঠাবে! এই ছেলের কাছে তুমি কাঁদুনি গাইতে গেছলে? মান রাখলো তার?
রমলা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে আস্তে বলে, সে দেশটা এতো ভালো লেগে গেল তার যে, জন্মভূমিতে একবারের জন্যেও আসতে ইচ্ছে করছে না?
ও পক্ষ থেকে এর আর কোনো উত্তর এলো না।
রমলা আবার বললো, সেখানে বাড়ি কিনেছে, গাড়ি কিনেছে, সে দেশের নাগরিক হয়ে বসেছে, তাহলে বিয়েটাই কি করতে বাকি আছে?
না থাকাই সম্ভব।
আমার দু-দুটো সন্তানকেই হারিয়ে ফেললাম! বিদেশে পড়তে না পাঠালে এমন হতো না
শম্পাকে আমরা বিদেশে পড়তে পাঠাইনি!
ওর কথা আলাদা, ওকে তুমি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে! ওর খবর পেয়েও চুপ করে বসে থেকেছ!
রমলাও যে ওই অপরাধের শরিক তা মনে পড়িয়ে দেয় না তার স্বামী। এখনো তেমনি চুপ করে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে থাকে।
হয়তো মনে মনে ভাবে, আমি আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে গেলাম না, এই দুঃখ!
এই কথা ভাবেনি, প্রায়শ্চিত্ত করবার সুযোগ তখুনি এসে যাবে।
এলো এক অদ্ভুত যোগাযোগ।
নইলে পুলক সঙ্ঘের সেই ছেলের দলের একজন তাদের স্মারক পুস্তিকাখানা আজই অনামিকা দেবীকে দেবার জন্য আসবে কেন? আর ঠিক সেই সময়টাতেই তাদের অনামিকা দেবী বাড়িতে অনুপস্থিত থাকবেন কেন?
অবশ্য এমন অনুপস্থিত তো বারো মাসই থাকে বকুল। ছেলেটা শুধু বইখানা দিয়েই চলে গেলে কিছুই ঘটতো না। কিন্তু ঘটতেই হবে যে।
লগ্ন এসে গেছে সেই অঘটন ঘটনা ঘটবার।
তাই ছেলেটা বইটাকে চাকরের হাতে নিয়ে বাড়ির কারুর হাতে দিয়ে যাবার বায়না নেয়, আর সেটা দেবার পর সেই বাড়ির লোকে বলে যায়, ওঁকে বলে দেবেন সেদিন যে মেয়েটিকে পৌঁছে দিতে বলেছিলেন, তাঁকে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। আর বলবে, সামনের মাসে যদি আমাদের ম্যাগাজিনের জন্যে একটা-~
কিন্তু শেষাংশটা কে শুনেছে?
কানের পর্দায় আছড়ে পড়ছে শুধু যে মেয়েটিকে।
কে সেই মেয়ে? কেমন দেখতে?
কি রকম বয়েস?
কোথায় পৌঁছে দিয়েছিলে? একটা মাটকোঠায়?
কোথায় সেই মাটকোঠা? দেখিয়ে দেবে চল! দেখিয়ে দেবে চল।
এখন?
হ্যাঁ হ্যাঁ, এখনই তো। এখন ছাড়া আবার কখন? তোমায় আমি ছাড়ব নাকি?
ট্যাক্সিতে?
তাছাড়া আবার কী? চলো চলো, দেখে আসি চিনে আসি, সত্যি কিনা বুঝে আসি। তারপর দেখবো প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি কিনা।
রমলা বলেছিল, আমিও যাবে। কিন্তু রমলা তখন যেতে পায়নি।
যদি ঠিক না হয়? যদি রমলাকে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে ফিরতে হয়? তার চাইতে একেবারে নিশ্চিত হয়ে প্রস্তুতি নিয়ে ভোর সকালে–
দেখা যাক সে মেয়ে আবার কেমন করে হারিয়ে যায়!