৩৬. দ্য ওনলি ওয়ান হি এভার ফিয়ার্ড

৩৬. দ্য ওনলি ওয়ান হি এভার ফিয়ার্ড

হ্যারি উঁচু গলায় বললো–না, তিনি আছেন।

.

হ্যারি বিশ্বাস করতে পারছে না সিরিয়স নেই–কোনদিনই বিশ্বাস করবে না। তাই ও সুপিনের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে চললো। লুপিন বুঝতে পারছে না, পর্দার আড়ালে লুকিয়ে কেউ আছে, হ্যারি তাদের ফিস ফিস শব্দ শুনতে পেল। ও লুপিনের হাত ছাড়িয়ে প্রথম পর্দা ঢাকা ঘরে ঢুকলো, সিরিয়স নিশ্চয়ই কোথাও আত্মগোপন করে রয়েছেন।

–সিরিয়স ও চিৎকার করে উঠলো, সিরিয়স!

–ও আর ফিরে আসবে না হ্যারি, লুপিন বললেন। বলতে গিয়ে লুপিনের গলা কেঁপে কেঁপে উঠলো। ও আসবে না, সিরিয়স নেই, মৃত।

হ্যারি আকাশ ফাটানো গলায় বললো–না সিরিয়স মৃত নয়।

ঘরের বাইরে তখনও ও শুনছে একের পর এক স্পেলের শব্দ, প্রচণ্ড শব্দ। উড়ন্ত কার্সের দিকে তার ধ্যান নেই, তাতে কিছু যায় আসে না। ও চায় লুপিন ভান ছেড়ে সত্যি কথাটা বলবেন। ওর মন বলছে ঘরের এক কোণে সিরিয়স লুকিয়ে আছেন। ওর আর্ত ডাকে কী সাড়া না দিয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারেন? যেকোনো মুহূর্তে ওর সামনে এসে দাঁড়াবেন, মাথার বড়ো বড়ো চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে। কেমন করে লড়াই থেকে সরে দাঁড়াবেন?

লুপিন, হ্যারিকে ডায়াস থেকে টেনে আনলেন। হ্যারি তখনও এক দৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে পর্দা ঢাক আর্চওয়ের দিকে। ও সিরিয়সের ওপোর দারুণ রেগে গেছে ওকে অযথা অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য।

কিন্তু সুপিনের দিকে তাকিয়ে মনে হলো, কই সিরিয়সতো কখনো, কোনোদিন ওকে দাঁড় করিয়ে রাখেননি। একবার ডাকলে, খবর পাঠালে চলে এসছেন,তাহলে কী লুপিনের কথা সত্য? তা হলে কী সিরিয়স সত্যি নেই, আর আসবেন না?

ওদিকে ডাম্বলডোর বেশিরভাগ ডেথইটারসদের অদৃশ্য দড়িতে বেঁধে রেখেছেন। ওরা এক ইঞ্চিও নড়তে চড়তে পারছে না। ম্যাড আই মুভী লড়াই করে চলেছেন। ডায়াসের অন্য ধারে তখনও লড়াই চলেছে। কিংগসলে সিরিয়সের জায়গায় বেল্লাট্রিক্সের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন।

হ্যারি?

নেভিল পাথরের সিঁড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে নেমে এসে হ্যারির পাশে দাঁড়ালো। হ্যারি আর লুপিনের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি করতে চায় না। লুপিনের মুখ ওর জীবনের মর্মান্তিক খবরটা মেনে নিয়েছে। লুপিন কিন্তু হ্যারির হাত ছাড়েননি। আশঙ্কা করছেন যেকোনও মুহূর্তে হ্যারি আবার চলে যেতে পারে পরদা ঢাকা ঘরে।

নেভিলে বললো, হ্যারি আমি দুঃখিত! ভাবতেই পারছি না তোমার বন্ধু, আমাদের সকলের বন্ধু সিরিয়স ব্ল্যাক আর নেই।

হ্যারি মাথাটা নাড়ালো। লুপিন খুব ধীর স্থির ভাবে নেভিলকে বললেন, এদিকে এসো।

নেভিলের পায়ে জাদুদণ্ড ছুঁইয়ে বললেন, ফাঁইনাইট। সে স্পেলে নেভিলের হাঁটা-চলা আর বন্ধ রইলো না। নেভিল স্বাভাবিকভাবে মাটিতে পা রাখতে পারলো। লুপিনের মুখ অতিবিষণ; বললেন, চলো তোমাদের বন্ধুদের খোঁজ করা যাক। তারা সব কোথায় আছে বলতে পারো নেভিল?

লুপিন যত তাড়াতাড়ি পারেন ঘরটা ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন। প্রতিটি মুহূর্ত তাকে যন্ত্রণা দিয়ে চলেছে তার মনে।

নেভিল বললো–ওরা সবাই ভালো আছে। রনের ব্রেনে যে অ্যাটাক হয়েছিলো সেটাও ভালো হয়ে গেছে। তবে হারমিওন তখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি।

ওরা সেই সময় ডায়াসের পেছনে ভীষণ এক শব্দ শুনতে পেলো। হ্যারি দেখলো কিংগসলে মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। বেল্লাট্রিক্স, কিংগসলে আহত করার পর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ডাম্বলডোরের দিকে ছুটে গেলো। ডাম্বলডোর ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। ওর দিকে একটা স্পেল ছুঁড়লেন; কিন্তু বেলাট্রিক্স সেই স্পেলটাকে অন্যদিকে সরিয়ে দিলো। তখন ও সিঁড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়েছিল।

–হ্যারি, হ্যারি শোনন! যেও না বলছি, লুপিন হাত ছাড়িয়ে যাওয়া হ্যারিকে ধাওয়া করলেন।

হ্যারি ভীষণভাবে চিৎকার করতে করতে বললো, ও মেরে ফেলেছে, বেল্লাট্রিক্স সিরিয়সকে মেরে ফেলেছে। আমি ওকে মেরে ফেলবো।

হ্যারি সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে ওপোরে উঠতে লাগলো। ও কারও কথা শুনতে চাইছে না। ও বেল্লাট্রিক্সের রোবসের পায়ের কাছের অংশ দেখতে পেলো। ওরা যে পুকুরে ব্রেন ভেসে বেড়াচ্ছিলো সেখানে ঢুকলো।

বেল্লাট্রিক্স পুকুরের ভাসমান ব্রেনের দিকে পেছন ফিরে কার্স ছুঁড়লো। পুকুরটা ওপরে উঠে আসতেই হ্যারি জলে ডুবে গেলো। পোসান মিশ্রিত জলে অতি উল্কট গন্ধ। ব্রেনগুলো ওর সর্বাঙ্গে আঠার মতো আটকে গেলো। রঙিন কিলবিলে নাড়িভু ড়ির মতো জিনিসগুলো ওকে ছোটো ছোটো সরিসৃপের মতো জড়িয়ে ধরলো। হ্যারি জোরে জোরে বললো, উইংগার ডিয়াম লেভিওসা! বলার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ওকে ছেড়ে দিয়ে আবার বাতাসে ভাসতে লাগলো। ও টপকাতে টপকাতে পাশের ঘরে লুনার কাছে পৌঁছলো। লুনা তখনও মেঝেতে শুয়ে যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছে। জিনির কাছে গেলে জিনি বললো, হ্যারি সব খবর ভালো তো? তারপর গেলো রন আর হারমিওনের দিকে। হারমিওন তখনও অজ্ঞান হয়ে রয়েছে। হ্যারি গোল ঘরের দরজাটা খুলে দেখলো বেল্লাট্রিক্স অন্য এক দরজা দিয়ে পালাবার চেষ্টা করছে। সেখান থেকে গেলেই লম্বা করিডোর, তারপর লিফট!

হ্যারি ওকে ধরবার চেষ্টা করলো; কিন্তু দরজার কাছে ও পৌঁছবার আগেই বেল্লাট্রিক্স বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। ঘরের দেয়ালটা তখন ঘুরে চলেছে। আবার দোদুল্যমান ঝাড়ু লণ্ঠনের মোমবাতির নীল আলো ওকে ঘিরে ধরলো।

দেওয়ালের ঘূর্ণন থেমে গেলে হ্যারি পাগলের মতো চিৎকার করতে করতে ঘরময় ঘুরতে লাগলো, দরজা, দরজাটা কোথায়? ঘরের দরজা বোধহয় ওর প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলো। ঠিক ওর পেছনের দিকে একটা দরজার কপাট খুলে গেলো। সামনেই ও দেখতে পেলো করিডর, করিডরের শেষ প্রান্ত লিফটের দরজা। করিডোরে টর্চ জ্বলছে; কিন্তু জনমানবহীন। হ্যারি দৌড়োলো।

ঠিক সেই সময় ওর কানে এলো লিফটের শব্দ! ও লিফটের মুখে দাঁড়িয়ে লিফটের জন্য বোতাম টিপলো। শুনতে পেলো লিফটের ওপোর থেকে নিচে নামার শব্দ। লিফট দাঁড়াতেই গ্রিল খুলে গেলো। হ্যারি ভেতরে ঢুকে অ্যাট্রিয়ম লেখা বোতামটা বার বার টিপে যেতে লাগলো। দরজা বন্ধ হলেই লিফট উপরে উঠতে লাগলো। লিফট থামলে গ্রিল সম্পূর্ণভাবে খোলার আগেই ও লাফিয়ে বাইরে দাঁড়ালো। এধার ওধার তাকালো, বেল্লাট্রিক্সকে দেখার জন্য। বেল্লাট্রিক্স তখন হলের অন্য এক প্রান্তে টেলিফোন লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। বেল্লাট্রিক্স ওর পায়ের শব্দ শুনে পেছন ফিরলো। একটুও সময় নষ্ট না করে ওকে লক্ষ্য করে আরও একটা স্পেল ছুঁড়লো। মাথায় লাগার আগেই হ্যারি মথাটা নিচু করে ম্যাজিক্যাল বিদ্রেনের (ফোয়ারা) পেছনে লুকোলো। বেল্লাট্রিক্সের স্পেল ওর গায়ে স্পর্শ না করে আট্রয়ামের অন্য ধারে ছিটকে কারুকার্য করা সোনার গেটে লাগতেই টুং টাং ঘন্টা বেজে উঠলো। কোনও পদশব্দ হ্যারির কানে এলা না। বেল্লাট্রিক্স তখন দৌড়ানো থামিয়েছে। স্ট্যাচুর পেছনে দাঁড়িয়ে ও কানখাড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।

বেল্লাট্রিক্স বাচ্চা মেয়েদের মতো গলায় আধো আধো করে বললো–এসো এসো, এদিকে এসো আমার ছোট্টহ্যারি! হলের পালিশ করা কাঠের ফ্লোরে প্রতিধ্বণিত হতে লাগলো ওর ইচ্ছাকৃত আধো আধো গলার স্বর। যদি না আসো তাহলে আমার পিছু পিছু এসেছে কেনো? আমি ভেবেছিলাম আমার কাজিনকে (সিরিয়স) হত্যা করেছি বলে তুমি প্রতিশোধ নিতে এসেছে!

–হ্যাঁ এসেছি, হ্যারি চিৎকার করে উঠলো। প্রায় বারোটা হ্যারির গলা নকল করে ভূতুড়ে গলা একই সঙ্গে বললো, আমি এসেছি, আমি এসেছি, আমি এসেছি।

–আহাহা! লিটল পটার, তুমি কী সিরিয়সকে ভালোবাসতে?

অভূতপূর্ব এক ঘৃণায় হ্যারির মন পূর্ণ হয়ে গেলো। ও ফোয়ারার পেছন থেকে চলে এসে বললো, কুসিও!

নেভিলের মতো বেল্লাট্রিক্স কাতরে উঠলো যন্ত্রণায়। আবার ও সোনার ফোয়ারার দিকে এগিয়ে গেলো। ওর বিরোধী স্পেল সুন্দর জাদুকরদের মূর্তির মুণ্ডুতে লাগলো। সেটা উড়ে গিয়ে কুড়ি ফিট দূরে পড়লো। ছিটকে পড়ার সময় কাঠের ফ্লোরে লম্বা লম্বা কাটা দাগ পড়ে গেলো।

–খোকাবাবু, এর আগে কখনও অক্ষমণীয় কার্স (আফরগেটেবল কার্স) প্রয়োগ করেছো, বলো করেছো? বেল্লাট্রিক্স ব্যাঙ্গ করে বললো। এখন ওর গলা। বাচ্চা মেয়ের মতো নয়, তোমার জানা দরকার পটার। তুমি কী আনন্দ উপভোগের জন্য যন্ত্রণা–ব্যথা-বেদনা চাও? তোমার রাগ আমাকে বেশি সময় বিব্রত করতে পারবে না। কেমন করে ওই কার্স তোমাকে ঠাণ্ডা করার জন্য প্রয়োগ করছি দেখো, করি? তোমাকে তাহলে উচিৎ শিক্ষা দিই?

হ্যারি তখন ফোয়ারার চারধারে ঘুরছিলো। তখন বেল্লাট্রিক্স ক্ষিপ্ত স্বরে বললো, কুসিও! ও আবার একটা সেনট্যারের হাতের ওপোর পড়ে গেলো–সেনট্যারের হাতের ধনুকটা নিয়ে ফোয়ারার সামনে লুটিয়ে পড়লো। ওর খুব কাছেই পড়ে রয়েছে উড়ে যাওয়া জাদুকর মূর্তির মুণ্ডুটা।

বেল্লাট্রিক্স দম্ভ করে চিৎকার করে উঠলো, শোনো পটার তোমার এই জীবনে আমাকে তুমি পরাজিত করতে পারবে না।

হ্যারি দেখলো উন্মাদের মতো বেলাট্রিক্স ওর দিকে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। ও কোনো রকমে উঠে মূর্তিটার পেছনে দাঁড়ালো। ও ধরে রইলো সেনট্যারের মূর্তির পা, মাথাটা এলফের মূর্তি থেকে সামান্য ওপোরে।

–জেনে রেখো হ্যারি, আমি ডার্কলর্ডের সবচেয়ে বিশ্বাসী ভৃত্য ছিলাম ও এখনও আছি। আমি ডার্কলর্ডের কাছ থেকে শিখেছি। আমি এমন স্পেল ছুঁড়বো তার শক্তি, বুঝেছো পুঁচকে ছেলেটি, অন্য কোনও স্পেলের সঙ্গে তুলনা করতে পারবে না।

হ্যারি চিৎকার করে উঠলো, স্টুপিফাই! মুণ্ডুহীন জাদুকরের পাশে গবলিনের মূর্তির আড়ালে দাঁড়ালো হ্যারি। বেলাট্রিক্স এগিয়ে গেলো ফোয়ারার কাছে। এতো দ্রুত যে হ্যারি মাথা হেট করার সময় পেলো না।

–প্রোটেগো!

আলোর রশির ধারা ও নিজস্ব স্পেল ঘুরে ফিরে এলো নিজেরই কাছে। হ্যারি ফোয়ারার দিকে পিছু হটতে গেলে একটা গবলিনের সঙ্গে ধাক্কা লাগলো। ধাক্কাতে গরলিনের মূর্তির একটা কান ভেঙে পড়ে ঘরময় উড়তে লাগলো।

বেল্লাট্রিক্স বললো–পটার এবার তোমায় শেষ সুযোগ দিচ্ছি। প্রফিসিটা আমাকে দাও–ওটা আমার দিকে ছুঁড়ে দাও। যদি দাও তো তোমার প্রাণ নেবো না।

ওটাতো নেই, হ্যারি গর্জন করে বললো। ব্যাথা–বেদনা–জ্বালা যন্ত্রণা শুরু হলো ওর কপালে, কাটা দাগে। ও ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠলো; সুন্দর, ওটা আমার কাছে নেই, তাও তুমি আমাকে হত্যা করতে চাইছো! হেসে উঠলো অসম্ভব জোরে। হাসিটা বেল্লাট্রিক্সের সঙ্গে যেনো পাল্লা দিলো।

–তোমার প্রিয় ভোল্ডেমর্টও জানেন ওটা আর নেই। তাই তোমার ওপোর তিনি মোটেই খুশি হবেন না, হবেন কী?

–কী বললে? তুমি কী বলতে চাইছো? বেল্লাট্রিক্স অসম্ভব রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললো। হ্যারি লক্ষ্য করলো হাসিটা বেল্লাট্রিক্সের এই প্রথম ভয় মিশ্রিত হাসি, আগের মতো পৈশাচিক হাসি নয়।

–নেভিলকে তোলার সময় ওটা ভেঙে গুঁড়োগঁড়ো হয়ে গেছে তা তুমি জানো? ভোল্ডেমর্ট তোমায় ছেড়ে দেবেন বলতে চাও?

হ্যারি কাটা দাগে আবার চুলকানি আর জ্বালা শুরু হলো। যন্ত্রণাতে ওর দুচোখে জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

–মিথ্যাবাদী! বেল্লাট্রিক্স পাগলের মতো চিৎকার করে বললো। কিন্তু বেল্লাট্রিক্সের চিৎকার আর রাগের সঙ্গে নিদারুণ এক ভয় লুকিয়ে রয়েছে হ্যারি বুঝতে পারলো, পটার ওটা তোমার কাছে আছে, এখন তোমাকে ওটা আমার হাতে দিতেই হবে। অ্যাকিও প্রফেসি! অ্যাকিও প্রফিসি!

হ্যারি হাসলো। হাসার মতলব বেল্লাট্রিক্সকে আরও উত্তেজিত করা, রাগিয়ে দেওয়া। কিন্তু ওর মাথার তো যন্ত্রণা কমছে না। মনে হলো ব্যথায় ওর মাথাটা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।

ও এককান ওয়ালা গবলিনের আড়াল থেকে একটা শূন্য হাত দেখিয়েই, পরক্ষণেই হাতটা টেনে নিলো। তখন বেল্লাট্রিক্স স্রোতের মতো সবুজ আলো ওর দিকে পাঠাতে শুরু করেছে।

–নেই আমার কাছে, হ্যারি চিৎকার করে বললো, নেই, নেই ওটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। প্রফিসি ভাঙার পর একজন কিছু বলেছিলো, সে কথা কেউ শুনতে পায়নি, তোমার মালিককে কথাটা বলবে।

–না, তুমি মিথ্যে কথা বলছে, সত্য নয় মিথ্যে! আমি চেষ্টা করেছি প্রভু, আমাকে আপনি শাস্তি দেবেন না!

হ্যরি বললো, অযথা কাঁদবেন না! ব্যথায় ও ছটফট করতে লাগলো। ভোল্ডেমর্ট তোমার কাঁদুনি এখান থেকে শুনতে পাচ্ছেন না।

–কে বললে শুনতে পাচ্ছি না, পটার? ঠাণ্ডা শির শিরে গলায় কে যেনো বলে উঠলো।

হ্যারি ওর চোখ খুললো; দেখলো ওর সামনে ভোল্ডেমর্ট। মুখটা তার বরফের মতো সাদা ধবধবে কঠোর লম্বা, রোগা, মাথা কালো কাপড়ে ঢাকা, লাল কোটরাগত চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। লর্ড ভোল্ডেমর্ট হলের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছেন। হাতের জাদুদণ্ড হ্যারির দিকে প্রসারিত ও বরফের মতো হয়ে গেছে, একচুলও নড়তে পারছে না।

–তো শেষ পর্যন্ত তুমি আমার প্রফিসি ভেঙ্গেছো? ভোল্ডেমর্ট তার নির্দয় লাল চোখে হ্যারির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন। না বেল্লা ও এক বর্ণও মিথ্যা বলছে না। আমি ওর মূল্যহীন মনের কথা ওর দৃষ্টি থেকে দেখতে পারছি। মাসের পর মাস প্রচেষ্টা, মাসের পর মাস নিজেকে তৈরি। আমার ডেথ ইটারসরা হ্যারি পটারকে দিয়ে আমার সবকিছু আবার ব্যর্থ করে দিয়েছে…।

–প্রভূ, আমি অতিশয় লজ্জিত, আমি প্রফিসির ব্যাপারে কিছুই জানি না, আমি অ্যানিমেগাস ব্ল্যাকের সঙ্গে লড়াই করছিলাম। বেলাট্রিক্স ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাড়তে বললো–প্রভূ আপনি তো সবই জানেন।

ভোল্ডেমর্ট নৃশংস সুরে বললেন, চুপ করো বেল্লা। আমি এক মুহূর্তে তোমার ব্যবস্থা করছি, তুমি কী মনে করো আমি ম্যাজিক মিনিস্ট্রিতে এসেছি তোমার হাস্যকর অপরাধ স্বীকার আর কৈফিয়ত শুনতে?

–কিন্তু প্রভূ ও এখানে আছে, নিচে আছে।

ভোল্ডেমর্ট সে কথায় কান দিলেন না।

ভোল্ডেমর্ট খুব আস্তে হ্যারিকে বললেন–তোমাকে আমার আর কিছু বলার নেই পটার। তুমি ক্রমাগত বিরক্ত করছে, অনেক দিন ধরে, অভাদা কেদাভরা।

হ্যারি বাধা দিতে ওর মুখ খেলতে পারলো না! ওর মনের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে, ওর জাদুদণ্ড অকেজো হয়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছে।

মুণ্ডহীন সোনার জাদুকর জীবন্ত হয়ে গেলো। ও হ্যারি আর ভোল্টেমর্টের শূন্যস্থানে ফোয়ারা থেকে ঝাঁপ দিয়ে দাঁড়ালো। ভোল্টেমর্টের স্পেল প্রায় ওর বুকে লাগার আগে জীবন্ত জাদুকরের মুণ্ডহীন মূর্তি ওকে বাঁচানোর জন্য দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়ালো।

–কে? কে তুমি? চিৎকার করে উঠলেন ভোল্ডেমর্ট। শ্বাস ফেলে ফেলে মূর্তি বললেন, ডাম্বলডোর!

হ্যারি পিছন ফিরে তাকালো। বুকের ভেতরটা ধরাস ধরাস করতে লাগলো। দেখলো ডাম্বলডোর সোনার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

ভোল্ডেমর্ট আবার তার জাদুদণ্ড তুললেন। একগুচ্ছ সবুজ আলো ডাম্বলডোরের দিকে বেগে এগিয়ে গেলো। ডাম্বলডোর পাশে সরে যেতেই সবুজ আলো ঘুরতে ঘুরতে তার আলখেল্লার (রোবের) একপাশ স্পর্শ করে উধাও হয়ে গেলো। পর মুহূর্তে ভোল্ডেমর্টের পেছনে ডাম্বলডোর দাঁড়ালেন, হাতের জাদুদণ্ডটা ফোয়ারার দিকে দোলালেন। ফোয়ারার আশেপাশে যতগুলো মূর্তি ছিলো তারা সবাই জীবন্ত হয়ে গেলো। জাদুকরীর জীবন্ত মূর্তি বেল্লাট্রিক্সের দিকে এগিয়ে গেলো। বেল্লাট্রিক্স বৃথাই স্পেল ছুঁড়লো। তার স্পেল জাদুকরীর বুকে লাগার আগে কাঠের মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি দিতে লাগলো। সেনট্যার, হাউজ এলফ মিলিত হয়ে ভোল্ডেমর্টকে আক্রমণ করলো। প্রথমে তিনি অদৃশ্য হয়ে গিয়ে তারপর আবার ফোয়ারার জলের পাশে দাঁড়ালেন। মুণ্ডুহীন মূর্তি হ্যারিকে ঠেলে সরিয়ে দিলো। ভোল্ডেমর্ট ডাম্বলডোরের দিকে আবার এগিয়ে গেলে সোনার সেনট্যার দুজনের মাঝে দাঁড়ালো।

ডাম্বলডোর শান্ত স্বরে বললেন–টম (ভোল্ডেমর্টের নাম) আজ রাতে এখানে এসে খুবই মূর্খের মতো কাজ করেছে, এখনি আউররা এখানে এসে পড়বে।

–সেই অবকাশে আমি চলে যাবো, আর তোমার মৃত্যু হবে, কথাটা বলে ভোল্ডেমর্ট থুতু ফেললেন। ডাম্বলডোরের দিকে আরও একটি মৃত্যুবান ছুঁড়লেন, কিন্তু সেটা তার গায়ে না লেগে সিকিউরিটি গার্ডের ডেস্কে লেগে আগুন ধরে গেলো।

ডাম্বলডোর তার জাদুদণ্ড থেকে দারুন এক শক্তিশালী স্পেল ছুঁড়লেন। এতো বেশি শক্তিশালী যে ব্যারিপটার সোনার গর্তে আত্মগোপন করে থেকেও রেহাই পেলো না। সমস্ত শরীর থর থর করে কেঁপে উঠলো, মাথার চুলগুলো খাড়া হয়ে গেলো। ভোল্ডেমর্ট সেই শক্তিশালী স্পেলটা আটকাবার জন্য একট রুপোর শিল্ড ঐন্দ্রজালিক প্রভাবে বুকের ওপোর রেখে প্রতিহত করলেন। যতোই সেই স্পেল শক্তিশালী হোক না কেন তার শিন্ডে খুব ছোট মতো এটা দাগ কাটলো। তখনও হলটা থর থর করে কেঁপে যেতে লাগলো, হাজার কামান দাগার শব্দের মতো শব্দ লুপ্ত হলো না।

ভোল্ডেমর্ট শিল্ডটা বুকের কাছে রেখে বললেন, তুমি কী আমাকে মেরে ফেলতে চাইছো ডাম্বলডোর? ওর ছোটো ছোটো লাল চোখ দুটো মিট মিট করতে থাকলো। কথাটা শুনে ডাম্বলডোর শান্ত অতি শান্ত প্রশান্ত মুখ করে ধীর পদক্ষেপে ভোল্টেমর্টের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন এমনভাবে যেনো পৃথিবীর কিছুতেই তিনি ভীত নয়। তাকে রুখতে সক্ষম হবে, যেনো এখনও কোনও শক্তিশালী মারণ অস্ত্র ব্যবহার করেননি। তখন ভোল্ডেমর্ট মুখ বেঁকিয়ে খনখনে গলায় বললেন মৃত্যুর চেয়ে আর নগন্য কি হতে পারে ডাম্বলডোর। জানি টম, তোমার জীবন নিলেই আমার শান্তি হবে না, এটা আমি অস্বীকার করছি না।

হ্যারি আশ্চর্য হয়ে গেলো দুজনের কথাবার্তা শুনে। এমনভাবে তারা কথাবার্তা বলছেন যেনো কিছুই হয়নি। সৌজন্যমূলক সাক্ষাঙ্কার!

হ্যারি অ-সুরক্ষিত ভাম্বলডোরকে ভোল্টেমর্টের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। ও চিৎকার করে ডাম্বলডোরকে সাবধান করে দিতে চাইলো কিন্তু মুণ্ডুহীন গার্ড ওকে ঠেলে দেওয়ালের দিকে সরিয়ে দিলো।

ডাম্বলডোর বললেন–ভুল, তুমি ভুল করছো টম। তুমি বুঝতে চাওনি মৃত্যুর পর মানুষের শক্তি, দম্ভ, ক্ষমতা লাভের লোভ; সবকিছু শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই সহজ সরল সত্যটা তুমি বুঝতে চাইলে না এটাই তোমার চরম দুর্বলতা।

হ্যারি দেখলো রূপোলী শিন্ডের পেছন থেকে সবুজ আলোর রশি স্রোতের মতো বেরিয়ে আসছে। আর এক-হাতওয়ালা সেনট্যার লাফাতে লাফাতে এগিয়ে আসছে ডাম্বলডোরের দিকে। ও এক মুহূর্ত দেরি না করে সেই স্পেলে সেনট্যারকে খণ্ড বিখণ্ড করে দিলো। ডাম্বলডোর তখন তার হাতের জাদুদণ্ড যেনো একটা চাবুকে ঘোরাচ্ছেন এমনভাবে ঘোরাতে লাগলেন। দত্রে মুখ থেকে সরু সুতোর মতো রশ্মি বেরিয়ে এসে ভোল্টেমর্টের আগাপাশতলা দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলো। দেখে মনে হয় ডাম্বলডোর জয়লাভ করেছেন। কিন্তু সেই দড়িগুলো একটা প্রকাণ্ড সাপে রূপান্তরিত হয়ে ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে হিস হিস করতে লাগলো। তারপর সেই সাপটা ভোল্ডেমর্টকে মুক্ত করেদিলো। ভোল্ডেমর্ট আবার ডাম্বলডোরের মুখোমুখি হলেন।

ভোল্ডেমর্ট তারপরই অদৃশ্য হয়ে গেলেন। রয়ে গেলো ডাম্বলডোরের সামনে সেই বিরাট সাপ! ও ডাম্বলডোরকে ছোবল মারতে এগিয়ে এলো।

তারপরই আবার কানফাটানো এক শব্দ! ভোল্ডেমর্ট ফিরে এলেন। এবার ডাম্বলডোরের সামনে নয়, ফোয়ারার জলের ওপোর। একটু আগেই মূর্তিগুলো সেখানে জীবন্ত হয়ে উঠেছিলো।

হ্যারি চিৎকার করে উঠলো, আবার ও ফিরে এসেছে। কিন্তু হ্যারি চিৎকার করে সাবধান করার আগেই এক ঝলক সবুজ রশ্মি ভোল্টেমর্টের জাদুদণ্ড থেকে বেরিয়ে এসে সাপটাকে আঘাত করলো।

ফকেস উড়তে উড়তে এসে ডাম্বলডোরের সামনে গোত্তা মারলো। মুখটা হাঁ করে সমস্ত সবুজ আলোটা গিলে ফেলতেই ওর সারা দেহে আগুন লেগে গেলো। তারপর ছোট্ট কুঞ্চিত ও উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফকেস মেঝেতে পড়ে গেলো। সেই সময় ডাম্বলডোর তার লম্বা জাদুদণ্ড ঘোরাতে ঘোরাতে যে সাপটা তাকে দংশন করবার জন্য ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিলো আবার তাকে স্পর্শ করতেই সে শূন্যে উড়ে গেলো। তারপর কালো ধোঁয়ার অন্তরালে সিলিয়ে গেলো। তারপর ফোয়ারার জল একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে ভোল্ডেমর্টকে ডুবিয়ে দিলো। সেই স্বচ্ছ জলের মধ্যে ভোল্টেমর্টকে দেখে হ্যারির মনে হলো একটা রেশমের গুটি গলিত কাঁচের ভেতর পড়ে রয়েছে।

ভোল্ডেমর্ট বাঁচার জন্য জলের ভেতর থেকে উঠে আসার জন্য আঁকুপাঁকু করতে লাগলেন। সবকিছু দুহাতে ঠেলে দিতে লাগলেন। জল বাড়তে বাড়তে ফোয়ারা উপচে হলের মেঝে ভাসিয়ে দিলো।

প্রভূ! বেল্লাট্রিক্স আর্তনাদ করে উঠলো।

সব শেষ হয়ে গেছে! ভোল্ডেমর্ট পালাতে গিয়েও পারলেন না। হ্যারি সেই গার্ডের মূর্তির পিছন থেকে জীবনে প্রথম দেখলো ডাম্বলডোর যেন একটু শঙ্কিত হয়েছেন। ডাম্বলডোর বললেন, যেখানে আছ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো হ্যারি।

হ্যারি বুঝতে পারে না ডাম্বলডোর কেন শঙ্কিত। হল বলতে গেলে শূন্য! ওরা দুজন ছাড়া বেল্লাট্রিক্স মূর্তিগুলোর (জাদুকর) পিছনে আটকা পড়ে রয়েছে। ফেনেক্স ফকেস মেঝেতে পরে মৃদুমন্দ কণ্ঠে ডেকে চলেছে।

তারপর হ্যারির কপালের কাটা দাগ ফেটে চৌচির হয়ে গেলো। ভাবলো ওর মৃত্যু হয়েছে। তীব্র অব্যক্ত যন্ত্রণার যেনো শেষ নেই।

একটা লাল চোখের জন্তু ওকে জড়িয়ে রেখেছে মোটা তারের মতো। নিজের শরীর পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে না। এতো শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরেছে যে ব্যথায় সমস্ত শরীরটা টনটন করছে। পালাবার কোনও উপায় নেই।

সেই জন্তুটা হ্যারির মুখ দিয়ে তার কথা বললো, ভীষণ যন্ত্রণায় ওর চোয়াল দুটো নড়লো, ডাম্বলডোর আমাকে হত্যা করুন।

সেই জম্ভ হ্যারির মুখ দিয়ে নিজের কথা বললো–ডাম্বলডোর মৃত্যু যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে হ্যারিকেও হত্যা করুন।

হ্যারি মনে মনে বললো–আমার এই তীব্র যন্ত্রণার অবসান হোক, আমাদের ও হত্যা করুক। ডাম্বলডোর এই যন্ত্রণা ভোগ করার চেয়ে মৃত্যু ভালো। তাহলে আম সরিসকে আবার দেখতে পাবো। হ্যারির হৃদয় ভাবাবেগে পূর্ণ হতেই সেই জন্তুর বাঁধন শিথিল হয়ে গেলো। যন্ত্রণা একটু একটু করে কমতে লাগলো। হ্যারি মেঝেতে মুখ গুঁজে পড়ে রইলো। চোখেতে ওর চশমা নেই। এতো ঠাণ্ডা, মনে হলো একটা বিরাট বরফের উপর শুয়ে রয়েছে, কাঠের মেঝেতে নয়। দারুণ শীতে ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগলো।

হলে অনেকের গলা ও শুনতে পাচ্ছে, অনেক অনেক বেশি লোকের কথাবার্তা। হ্যারি ধীরে ধীরে তাকালো। ঝাঁপসা ঝাঁপসা দেখলো ওর চশমাটা মুণ্ডুহীন মূর্তি যে ওকে গার্ড দিচ্ছিলো তার পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে। সেই মূর্তিটা এখন জীবিত নয় পাথর হয়ে মেঝেতে উল্টে পড়ে রয়েছে। ও হাত বাড়িয়ে চশমাটা তুলে নিয়ে চোখে লাগিয়ে পরিস্কারভাবে দেখলো, মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূর থেকে ডাম্বলডোর ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

–তুমি ভালো আছো তো হ্যারি? শান্ত, অতি মিষ্টি কণ্ঠস্বর। সেই স্বর অনেকদিন হ্যারি শোনেনি।

–হ্যাঁ। তখনও ও কাঁপছে, ভীষণভাবে থর থর করে কাঁপছে, মাথাটা ভালো করে তুলতে পারলো না। আমি কোথায়? কারা এতো কথা বলছে? কেন কথা বলছে?

অ্যাট্রিয়ম লোকে লোকারণ্য। অদূরে ফায়ার প্লেসের সবুজ আলো আবার পূর্ণত্যাজে জ্বলে উঠেছে। দেওয়াল তারই আলোতে ঝলমল করছে। ডাম্বলডোর। সস্নেহে ওকে তুলে ধরলেন, হ্যারি সোজা হয়ে দাঁড়ালো। হ্যারি দেখলো ছোট ছোট সোনার মূর্তি গাবলিন আর এলফদের। কর্নেলিয়স ফাজ হতভম্ব চোখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

–একটু আগে ওকে আমি ওখানে দেখেছি। একজন টকটকে লাল রং-এর রোবস পরা লোক পনিটেল হলের একধারে তূপাকার করা সোনার কুচির দিকে তাকিয়ে বললো–আমি একটু আগেই ওকে ফাঁদ পাততে দেখেছি। মি. ফাজ আমি শপথ করে বলতে পারি ও ইউ–নো–হুঁ ছাড়া আর কেউ নয়। ও একজন মহিলাকে ধরে পালিয়ে গেছে! (লোকটার অসংলগ্ন কথা বার্তা)

ফাজ বললেন, আমি জানি, আমি জানি, উইসলিয়মসন, আমিও তাকে দেখেছি। ফাজের পরণে পাজামা গায়ে পিনস্ট্রিপন্ড ক্লোক। খুব হাফাচ্ছেন, মনে হয় দৌড়ে দৌড়ে হলে এসেছেন। মারলিনসের দাড়ি…(ক্ষুদ্র বাজপাখি) এখানে… এখানে মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিকে! হায় ঈশ্বর! কেমন করে এটা হলো, কেমন করে হলো?

–আপনি যদি নিচের তলায় ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজ-এ যান কর্নেলিয়স, ডাম্বলডোর বললেন। মুখ দেখে মনে হয় হ্যারিকে দাঁড়াতে দেখে, সুস্থ দেখে খুবই খুশি! অনেকেই প্রথম হ্যারিকে দেখলেন ওদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের জাদুদণ্ড উঁচু করলো। অন্যরা যেনো আনন্দে আত্মহারা, এলফ আর গবলিনের মূর্তিগুলো হাততালি দিচ্ছে মনে হলো। ফাজ এতো জোরে লাফালেন যে, তার স্লিপার পরা

পা হড়কে পরে গেলেন। আপনারা জেল পালানো ডেথ ইটারসদের ডেথ চেম্বারে দেখতে পাবেন, ওদের অ্যান্টি–ডিসঅ্যাপারেসান জাদুতে বেঁধে রাখা হয়েছে।

এখন তাদের নিয়ে কি করা হবে আপনার নির্ণয়ের অপেক্ষা!

ফাজ আগের মতোই হাঁফাতে হাফাতে বললেন–ডাম্বলডোর আপনি? আ… আ… আপনি এখানে…?

কথাটা বলে ফাজ ওর সঙ্গে করে আসা আউররদের কি বলবেন; না বলবেন ভেবে না পেয়ে বললেন, ওকে গ্রেফতার করো।

ডাম্বলডোর বজ্রগম্ভীর গলায় বললেন, কর্নেলিয়স আমি আপনার লোকদের সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত; কয়েক মিনিট আগে নিজের চেখে দেখে তার প্রমাণ পেয়েছেন। আমি আপনাকে গত এক বছর ধরে বলে চলেছি ভোল্ডেমর্ট আবার ফিরে এসেছে। গত বারো মাস ধরে আপনি কতগুলো অবাঞ্ছিত ধূর্ত লোকদের ওপোর আস্থা রেখে চলেছেন। এখন আপনার সুবুদ্ধির পথে আসার সময় হয়েছে।

–আমি, মানে আমি, ফাজ এধার-ওধার তাকালেন। আশা, কেউ যদি তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে, বলে দেয় অতঃপর কি করতে হবে। যখন তার সেই আশা ব্যর্থ হলো, ফাজ বললেন–ডলিশ, উইসলিয়মসন তোমরা ডিপার্টমেন্টে যাও, দেখো কি হয়েছে। হা ডাম্বলডোর, আপনি এক এক করে বলুন আসল ব্যাপারটা কি… কি হয়েছে?

ফাজ মেঝেতে পড়ে থাকা উগ্র জাদুকরদের মূর্তির দিকে তাকিয়ে রইলেন।

ডাম্বলডোর বললেন, সবই আপনার সঙ্গে আলোচনা করবো, তার আগে হ্যারিকে হোগওয়ার্টসে পাঠাতে হবে।

–হ্যারি, হ্যারি পটার?

ফাজ দূরে দাঁড়িয়ে হ্যারিকে দেখলেন। হ্যারি তখনও সেই ভগ্ন মূর্তি, যারা জীবন্ত হয়ে লড়াইয়ে সহায়তা করেছিলো, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। সেখান থেকে ও দেখেছে ভোল্ডেমর্ট আর ডাম্বলডোরের লড়াই।

–হ্যারি, হ্যারি পটার এখানে? কেন? কি কাজ করতে এখানে এসেছে শুনি? ফাজ হ্যারিকে চোখ পাকিয়ে দেখতে দেখতে বললেন।

ডাম্বলডোর বললেন, সবই আপনাকে বিস্তারিত জানাবো। এখন হ্যারি স্কুলে ফিরে যাক।

ডাম্বলডোর ফোয়ারার কাছ থেকে যেখানে সোনার জাদুকরের ছিন্ন মুণ্ডুটা পড়েছিলো সেখানে গিয়ে মুণ্ডুটাকে জাদুদণ্ড স্পর্শ করে বললেন, পোর্টার্স! সেই ছিন্ন মুণ্ডুটা নীল বর্ণের হয়ে গিয়ে কাঠের মেঝেতে ঠক্ ঠক্ শব্দ করতে লাগলো। মাত্র কয়েক সেকেন্ড, তারপর স্থির হয়ে গেলো। ডাম্বলডোর মুণ্ডুটা হ্যারির কাছে নিয়ে যাচ্ছেন তখন ফাজ বাধা দিয়ে বললেন–শুনুন ডাম্বলডোর, আপনার পোট-কী ব্যবহার করার অথরাইজেসন নেই। মিনিস্টার অফ ম্যাজিকের চোখের সামনে আপনি কখনই বে-আইনী কাজ করতে পারেন না। বলতে বলতে ফাজের কথা আটকে গেলো।

ডাম্বলডোর তার অর্ধচন্দ্র আকৃতি ঝুলে পড়া চশমা নাকে ঠিক করতে করতে বললেন, অ্যামব্রিজকে হোগওয়ার্টস থেকে অপসারণের আদেশ দিতে হবে আপনাকে। আপনার অউররদের বলবেন, তারা যেন কেয়ার অফ ম্যাজিক্যাল ক্রিচারের শিক্ষকের বাড়ি তল্লাশি বন্ধ করে। তিনি যেনো আবার তার কাজে ফিরে আসতে পারেন।

ডাম্বলডোর পকেট থেকে ঘড়ি বার করে সময় দেখে আবার বললেন, আর আধঘণ্টা মাত্র আমার হাতে সময় আছে, মনে হয় এই সময়ের মধ্যে যা যা ঘটেছে। তা আপনাকে জানাতে পারবো। তারপর আমি স্কুলে ফিরে যাবো। আপনি যদি আমার কাছ থেকে কোনও সাহায্য আশা করেন, আপনি অবশ্যই স্বাগত। চিঠিতে এড্রেস করবেন–হেডমাস্টার, তাহলেই পেয়ে যাবো।

ফাজ তোতলাতে লাগলেন, মুখ হাঁ, মাথার শুভ্র চুলের তলায় গোল মুখটা লাল হয়ে গেলো।

আ… আ… আপনাকে আমি…। ডাম্বলডোর কোনও ভ্রুক্ষেপ না করে হ্যারির দিকে তাকালেন।

সোনার মুণ্ডুটা স্পর্শ করলেন। হ্যারিও তার হাত ছোঁয়ালো। পোর্ট কী ঝড়ের মতো উড়তে উড়তে হোগার্টসে যাবে, পরে কি হবে জানে না।

ডাম্বলডোর বললেন, আধঘণ্টা পর আপনার সঙ্গে দেখা হবে। হ্যারির পোর্ট-কী চেপে স্থানান্তরে যাওয়া নতুন নয়। ওর পায়ের তলা থেকে চকচকে পালিশ করা কাঠের ফ্লোর সরে গেলো। দ্য আট্রয়াম, ফাজ এবং ডাম্বলডোর সকলেই তার দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো। ও ভীষণ ঘূর্ণিঝড় আর নানারকম শব্দের মধ্য দিয়ে উড়ে চললো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *