পঞ্চত্রিংশ অধ্যায় – শরভের দেহত্যাগ
মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–হে দ্বিজবরগণ! মহাদেব, বরাহের সহিত যুদ্ধ করিতে যে শরভরূপ ধারণ করেন, তাহার পরিত্যাগবৃত্তান্ত সবিস্তারে বর্ণন করিতেছি যত্নপূর্বক শ্রবণ কর। ১।
বরাহপুত্রগণের দেহ, যজ্ঞে অগ্নিরূপে পরিণত হইলে লোক-পিতামহ ব্রহ্মা জগতের হিতের নিমিত্ত শরভরূপী মহাদেবকে বলিয়াছিলেন। ২
দেব! বহুদেশব্যাপক আপনার দেহ দর্শন করিয়া সকল লোকেই ভয় পাইতেছে, অতএব ভয়ঙ্কর রূপ সম্বরণ কর। ৩
স্বর্গমর্ত্যব্যাপী আপনার দেহ দর্শন করিয়া কি খেচর, কি স্বর্গবাসী, সকলেই ভীত হইতেছে। ৪
অতএব হে বিশ্বনাথ! ত্রিভুবনহিতার্থে আপনি এ দেহ ত্যাগ করিয়া স্বধামে চলুন। ৫
মার্কণ্ডেয় বলিলেন, অনন্তর লোকহিতকর শঙ্কর, সুরজ্যেষ্ঠ ব্রহ্মার সেই বাক্য শ্রবণ করিয়া জলমধ্যে শরভ-দেহ ত্যাগ করিলেন। ৬।
অষ্টমূর্তি মহাদেব শরভ-দেহ ত্যাগ করিলে সেই দেহের আটটী চরণ অষ্ট মূর্তিকে আশ্রয় করিল। ৭
দেহের দক্ষিণভাগের প্রথম চরণ বেগে আকাশে গমন করিল। বামভাগের দ্বিতীয় চরণ সূৰ্যে লীন হইল। দক্ষিণভাগের তৃতীয় চরণ চন্দ্রমণ্ডল আশ্রয় করিল। ৮
বামভাগের চতুর্থ চরণ অগ্নিমূর্তিতে পর্যবসিত হইল। পৃষ্ঠস্থিত দক্ষিণ ভাগের পঞ্চম চরণ ক্ষিতিরূপে পরিণত হইল। পৃষ্ঠদেশের বামভাগ-স্থিত যষ্ঠ চরণ জলরূপ আশ্রয় করিল। ৯
দক্ষিণপৃষ্ঠস্থিত সপ্তম চরণ বায়ুমূর্তির আশ্রিত হইল, বামপৃষ্ঠের অষ্টম চরণ হোতৃরূপ মূর্তিতে যুক্ত হইল। ১০
এই প্রকারে অষ্টমূর্তির অষ্টপাদ আকাশাদি অষ্ট মূর্তিতে আশ্রিত হইল। তাহার দেহ হইতে তেজোময় শক্তি নিত্যধামে গমন করিল। ১১
মহাত্মা মহাদেবের অবশিষ্ট শরভ-দেহ হইতে প্রচণ্ডরূপধারী দুর্ধর্ষ কপালী, ভৈরব, ভূতপ্রভৃতির জন্ম হইল। ১২
যাহারা মৃত ব্রাহ্মণের মস্তিষ্ক মেদ মাংস সহিত কপালদ্বারা অগ্নিতে হোম করে এবং মদ্য দ্বারা দেবের পূজা করে। ১৩।
মনুষ্য বলিদান, সৰ্ব্বদা রক্তপান, সুরাদ্বারা যজ্ঞ আচরণ, অদ্ভুত নর-কপাল ধারণ, ব্যাঘ্রচর্মপরিধান, সমল-ত্ৰিবলিময় ব্যাঘ্ৰ চৰ্ম পরিধান প্রভৃতি ভয়ানক কর্ম করত কপাল ব্ৰতধারী হইয়া প্রতিদিন ভৈরবের পূজা করে, ইহাদের আরাধ্য কপালধারী ভৈরব, মহাভৈরব নামে প্রসিদ্ধ। ১৪-১৬
নবসূৰ্য্যসমদ্যুতি অষ্টাদশবাহুবিশিষ্ট, আরক্তলোচন ভয়ঙ্কর-শব্দকারিণী কালী প্রচণ্ডা প্রভৃতির সহিত সর্বদা ক্রীড়াপরায়ণ, অত্যুষ্ণ মনুষ্য-মাংস-ভোজী, মৃতমনুষ্যের হস্তমালদ্বারা পরিবৃতকণ্ঠ। ১৭-১৮
রক্তচন্দনদ্বারা লিপ্তাঙ্গ, শবনির্মিত আসনোপবিষ্ট, বিস্তৃত-বদনে ক্ষুদ্র ওষ্ঠধারী, খর্বাকৃতি, দীর্ঘাচরণ, ক্রীড়াবাদ্যাদিরত এবং উচ্চভাবে হাস্যকারী মহাভৈবর, লোকে বিখ্যাত। ১৯
এইপ্রকার শরভ দেহ হইতে কপালি প্রভৃতির সহিত প্রকাশ পাইয়া ভৈরব নামে প্রসিদ্ধ হইলেন এবং তিনি প্রমথগণের সহিত আকাশে ক্রীড়া করিতে আরম্ভ করিলেন। ২০-২১
অদ্যাপি জগজ্জন মহাভৈরবের উপাসনা করিয়া মনোমত ফললাভ করিতেছে। ২২
যে ব্যক্তি চৈত্রমাসের শুক্লচতুর্দশীদিনে মধু, মদ্য, ফল, মাংস, মৎস্য এবং রক্তাদিদ্বারা একবার ভৈরবের পূজা করে, সে ব্যক্তি সফলমনোরথ হইয়া অতুল ঐশ্বর্যের অধিপতি হয় এবং বৃষোপরি আরোহণ করিয়া শিবলোকে গমন করে। ২৩-২৪
হে ঋষিবরগণ! তোমরা আমার নিকট যাহা প্রশ্ন করিয়াছিলে পৰ্য্যায় ক্রমে সকল প্রশ্নের উত্তর করিলাম। আর যদি কিছু শ্রবণ করিতে ইচ্ছা হয়, তাহা হইলে বল, তোমাদের নিকটে বর্ণন করিতেছি। ২৫
পঞ্চত্রিংশ অধ্যায় সমাপ্ত। ৩৫