৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
২৫ অক্টোবর ১৮৮১ স্পেনের ভূমধ্যসাগরীয় দক্ষিণ উপকূলে কাতালান প্রদেশের মালাগা শহরে পিকাসোর জন্ম। বাবা ডন জোস রুইজ ব্লাসকো ছিলেন আর্ট স্কুলের শিক্ষক এবং শহরের একটি মিউজিয়ামের কিউরেটর। বিয়ের এক বছর পরেই পিকাসোর জন্ম হয়। ডন জোস ছেলেন নাম রাখলেন পাবলো নেপোমুসেনো ক্রিসপিনায়ানো দ্য লা সান্তিমাসসিমা ত্রিনিদাদ রুইজ পিকাসো।
এই বিশাল নাম ধরে ডাকা কারোর পক্ষেই সম্ভব ছিল না। তাই সংক্ষেপে ডাকা হত পাবলো রুইজ। রুইজ ছিল তার পিতার পদবি, পিকাসো মাতৃকুলের পদবি। বড় হয়ে পিতৃকুলের পদবি বর্জন করে শিল্পী নিজের নাম রাখলেন পাবলো পিকাসো। এই নামেই আজ তিনি জগৎবিখ্যাত।
ছবি আঁকার হাতেখড়ি তার বাবার কাছে। শিশু বেলা থেকেই পিকাসোর মধ্যে ছিল ছবির প্রতি গভীর অনুরাগ। শোনা যায় যখন তিনি তিন বছরের শিশু, একটা পেনসিল কিম্বা কাঠকয়লা পেলে কাগজ কিম্বা মেঝের উপরেই ছবি আঁকতে আরম্ভ করে দিতেন।
ছাত্র অবস্থাতেই তার মধ্যে শিল্প চেতনায় বিকাশ ঘটতে থাকে। পিকাসোর যখন চৌদ্দ বছর বয়স, কাবা মালাগা ছেড়ে এলেন বার্সিলোনাতে। স্থানীয় আর্ট স্কুলে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিলেন ডন জোস। বাবার স্কুলেই ভর্তি হলেন পিকাসো। অল্পদিনের মধ্যেই তার প্রতিভার বিকাশ লক্ষ্য করা গেল।
বার্সিলোনায় ছাত্র অবস্থায় তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন শিল্প জগতে নতুন ধারার প্রবক্তা ভ্যান গক, তুলুস লোত্রেক, পল গ্যগা, সেজান প্রভৃতির একসপ্রেশনিজম বা প্রকাশবাদকে। লক্ষ্য করতেন তাদের চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্য।
তিন বছর বার্সিলোনার আর্ট স্কুল ছাত্র হিসাবে থাকার পর ১৮৯৭ সালে তিনি মাদ্রিদের রয়াল এ্যাকাডেমিতে ভর্তি হলেন। এই সময় কিছু তরুণ শিল্পী ছবির প্রদর্শনীতে আয়োজন করেছিল। এতে বহু প্রতিষ্ঠিত শিল্পীও যোগ দিলেন। সকলকে বিস্মিত করে এখানে শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার পেলেন পিকাসো। তার জীবনের এটাই প্রথম সাফল্য।
আর মাদ্রিদের পরিবেশ ভাল লাগল না। ফিরে এলেন বার্সিলোনায় বাবা-মায়ের কাছে। এই সময়টি ছিল তার প্রস্তুতির যুগ। বাড়িতেই একটি স্টুডিও তৈরি করলেন। তার দিনের বেশির ভাগটাই কাটাতেন পথে, ঘাটে, বস্তিতে, জাহাজঘাটায়, পতিতাপল্লীতে, জেলেপাড়ায়, সমুদ্রের কূলে। তিনি যা দেখতেন তাই আঁকতেন। পথের ধারে বসে থাকা ভিখারি, গীর্জার সন্ন্যাসিনী, কারখানার শ্রমিক, পথের কুকুর, বৃদ্ধা, যৌবন হারানো পতিতা-তার ছবিতে কেউ বাদ যেত না।
১৯০০ সালে তিনি স্থির করলেন লন্ডন যাবেন। স্পেনের পরিমণ্ডল শিল্পের অনুকূল ছিল না। পথে কয়েকদিনের জন্যে নামলেন প্যারিসে। উদ্দেশ্য ছিল শিল্পের তীর্থক্ষেত্র প্যারিসের শিল্পকলার সাথে পরিচিত হওয়া।
মুগ্ধ হয়ে গেলেন পিকাসো। তার মনে হল স্পেন নয়, ইংল্যান্ড নয়, প্যারিসই হবে তার শিল্প সাধনার কেন্দ্রভূমি। প্রধানত আর্থিক কারণেই প্যারিসে স্থানীয়ভাবে ঘর বাধতে পারলেন
না। এর পরবর্তী চার বছর তিনি কখনো প্যারিস কখনো বার্সিলোনায় কাটিয়েছেন।
১৯০০ সালে তার প্রথম ছবি প্যারিস প্রদর্শিত হল “The moulin de la Galettle”. একটি কফি হাউসের দৃশ্য। এতে পিকাসোর প্রতিভা বিকশিত না হলেও ছবির বলিষ্ঠতা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। এই প্রদর্শনীতে কোন ছবি বিক্রি হল না।
পিকাসোর শিল্পী জীবনের প্রথম পর্যায়ে যেতে পারে ১৯০১ থেকে ১৯০৪। এই সময়টিকে নাম দেওয়া হয়েছে ব্লু পিরিয়ড (Blue Period)। সমস্ত ছবি জুড়ে থাকত নীল রং। তার কাছে নীল রং ছিল জীবনের বিষণ্ণতা আর বেদনার প্রতীক।
এরই মধ্যে কিছুদিনের জন্য মাদ্রিদে এসে কয়েক জন তরুণ বন্ধুর সহযোগিতায় প্রকাশ করলেন একটি পত্রিকা ছবির “Young Ar”। পিকাসো হলেন এই পত্রিকার সম্পাদক। মাদ্রিদে তার একটি ছবির প্রদর্শনীও হল। এই সব ছবিগুলোই ছিল প্যাস্টেলে আঁকা। কিছুদিন পর ফিরে এলেন প্যারিসে।
ছবিতে নীল রঙের ব্যবহারের পরিবর্তে এবার দেখা গেল গোলাপী রং। যাকে বলা হয়েছে Pink Period। ১৯০৩ সাল থেকেই তার ছবির মধ্যে এল গাঢ় কালো সীমারেখা।
সৌভাগ্যক্রমে খুব অল্পদিনের মধ্যেই তার ছবি শিল্পরসিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। তাই দেখা যায় সে সময়ে শিল্পীরা নিদারুণ যন্ত্রনা আর আর্থিক কষ্টের মধ্যে সংগ্রাম করে চলেছেন, তখনই তিনি ছবির ক্রেতা পেতে আরম্ভ করেছেন। তার বেশ কিছু ছবি বিক্রি হতেই তিনি স্থায়ীভাবে এসে প্যারিসে বাসা বাধলেন (১৯০৪)। কিন্তু ফরাসী সরকারের তরফে বহুবার তাকে নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি ফরাসী নাগরিক হননি। স্পেনের সন্তান হিসাবে নিজের পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন।
তার প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্বের চূড়ান্ত পরিণতি দেখা গেল ১৯০৭ সালে আঁকা লে ডিময়সেলস দ্য এভিগনন ছবিতে (Leo Demoiselles d Avignon)। তার কিউবিজম ধারার প্রথম সূত্রপাত হয় এই ছবিতে।
পিকাসোর এভিগনন ছবিটি ১৯০৭ সালে আঁকা হলেও তা জনসাধারণের সামনে প্রথম প্রদর্শিত হয় ১৯৩৭ সালে। কারণ এই ছবির আঙ্গিককে সাধারণ মানুষ কতখানি গ্রহণ করতে পারবে সে বিষয়ে পিকাসো ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত।
কিন্তু পিকাসো নিজের পথ থেকে সামান্যতম সরে আসেননি। ১৯০৭ থেকে ১৯১১ তিনি ধারাবাহিকভাবে তার ছবির মধ্যে একটু একটু করে পরিবর্তন নিয়ে আসতে থাকেন। ছবির ভাষা হয়ে উঠতে থাকে জটিল থেকে আরো জটিল। ছবির মধ্যে জীবনের স্বাভাবিক প্রকাশ একদম মুছে গেল, জন্ম নিল আধুনিক চিত্রশিল্পকলার। এই সময় কিছু বিখ্যাত ছবি ফলের ডিশ (১৯০৯)। গীটার হাতে মহিলা (Ma Jolic)।
পিকাসো এবং ব্রাক-এর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে প্রচারিত হতে আরম্ভ করল কিউবিক চিত্রকলা। একে বলা হত কিউবিস্ট কলেজ (Cubist College} এই সময় পিকাসো সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি হল (Still life with chair Caning (1911-1912)। ১৯১২ সালে তার কিছু কিউবিস্ট ছবির লন্ডনে এক প্রদর্শনী হয়। তখন ছবিগুলোর মূল্য ছিল ২ থেকে ২০ পাউন্ড। বর্তমানে সেই সব ছবিগুলোর মূল্য এক লক্ষ পাউন্ডের চেয়ে বেশি।
পিকাসোর জীবনের প্রথম নারী ফেরানডে অলিভিয়ের। ১৯০৪ সালে পিকাসো যখন আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছেন, সেই সময় অলিভিয়ের সাথে পরিচয়। অলিভিয়ের সৌন্দর্য ব্যক্তিত্ব তাকে মুগ্ধ করেছিল। দীর্ঘ ৯ বছর দুজনের মধ্যে ছিল গভীর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। বিবাহ সম্পর্কে আবদ্ধ না হলেও দুজনে থাকতেন স্বামী-স্ত্রীর মত।
১৯১৭ সালে একটি রাশিয়ান ব্যালে দল নৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য প্যারিসে এসেছিল। পিকাসোর খ্যাতির কথা শুনে তাকে শিল্পী দলের পোশাকের পরিকল্পনা এবং মঞ্চের দৃশ্যপট আঁকবার দায়িত্ব দেওয়া হল। এই দলের প্রধান শিল্পী ছিলেন এলগা কোকোলভা। দুজনে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। প্যারিসের অনুষ্ঠান শেষ করে দশটি গেল মাদ্রিদ এবং বার্সিলোনায়। পিকাসোও এই দলের সঙ্গী হলেন। স্পেনে থাকার সময়েই ওলগাকে বিবাহ করেন পিকাসো। বিবাহের এক বছর পরেই পিকাসোর প্রথম পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করল।
বিয়ের অল্প কিছুদিন পরেই সস্ত্রীক প্যারিসে ফিরে এলেন পিকাসো। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হয়েছে, পিকাসোর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কবি এ্যাপোনিয়ার আহত হয়ে মারা গিয়েছেন। এই সংবাদ যখন পিকাসোর কাছে এসে পৌঁছাল, তিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মপ্রতিকৃতি আঁকছিলেন। এইভাবে পিকাসো নিজের বহু ছবি এঁকেছেন। বন্ধুর মৃত্যুতে এতখানি বিহ্বল হয়ে পড়লেন, সেই ছবি আর সমাপ্ত করেননি এবং এর পর জীবনে আর কোন দিনই নিজের ছবি আঁকেননি।
বন্ধুর স্মৃতিতে তিনি আঁকলেন তার একটি বিখ্যাত ছবি The Three Dancers বা তিন নর্তকী। এতে ফুটে উঠেছে মানুষের যন্ত্রণার এক তীব্র বিলাপ।
মানবিক যন্ত্রণার এই রূপ পরবর্তীকালে বারবার নানাভাবে দেখা দিয়েছে তার ছবিতে। এক একটি ছবিতে ফুটে উঠেছে খণ্ড-বিখণ্ডিত দেহ, ছিন্ন মুখ, উৎপাটিত চোখ দাঁত। তিনি দেখেছিলেন মানুষের উপরে শক্তিমানের অত্যাচার অত্যাচারিত পীড়িত মানুষের যন্ত্রণার করুণ প্রতিচ্ছবি। এরই মূর্ত প্রকাশ ঘটেছে ‘গোয়ের্নিকা ছবিতে।
১৯৩৭ সালে স্পেনের অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বিদ্রোহ ঘোষণা করল। দেশে শুরু হল গৃহযুদ্ধ। ১৯৩৯ সালে শাসকদের বোমারু বিমান স্পেনের ছোট্ট শহর গোয়ের্নিকার উপর বোমা বর্ষন করল। এই ঘটনায় ক্ষোভে দুঃখে ফেটে পড়লেন পিকাসো। স্পেনের সরকারের তরফে তাকে বহু সম্মান খেতাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি ছিলেন মাদ্রিদ আর্ট কলেজের ডিরেকটার। সব কিছুকে ঘৃণায় প্রত্যাখ্যান করে তিনি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে তুলি ধরলেন। তার ছবি গোয়ের্নিকা হয়ে উঠল এক জ্বলন্ত প্রতিবাদ। ছবিটি ১১ ফুট চওড়া, লম্বায় ২৬ ফুট। এই বিশাল ছবিটি আঁকতে তার সময় লেগেছিল মাত্র সাত সপ্তাহ। কালো সাদা ধূসর রঙে আঁকা এই ছবি আধুনিক চিত্রশিল্পের জগতে এক অনন্য সৃষ্টি।
১৯২৭ সালে পিকাসোর জীবনে এল আরেক নারী। নাম মারি থেরেসা ওয়ালটার। মারি ছিল পিকাসোর ছবির মডেল। অল্পদিনের মধ্যেই দুজনের সম্পর্ক গড়ে উঠল। এই সম্পর্কের পরিণতিতেই ভাঙন ধরল ওলগার সম্পর্কে। ক্রমশই দুজনের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠল। চরম ঘৃণার মধ্যেই ১৯৩৫ সালে দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে গেল। পরের বছর মারির একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মারি ছিল অসাধারণ সুন্দরী। পিকাসোর ছবিতে বার বার কামময়ী নারীমূর্তি হিসাবে দেখা গিয়েছে মারিকে কন্যা সন্তান জন্মবার পরেই দুজনের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাছাড়া পিকাসোর জীবনের তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল। কারণ সেই সময় তর সঙ্গী হয়েছে যুগোশ্লাভ ফটোগ্রাফার ডোরা মা।
ইতিমধ্যে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে এসেছিল। তিনি ফরাসী কমিউনিস্ট মাটিতে যোগ দিলেন।
মস্কোর সাথে কোন সম্পর্ক গড়ে না উঠলেও ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টির সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। কমিউনিস্ট পার্টির তরফে যে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন বসেছিল তাতে তিনি পর পর তিন বছর যোগদান করেছিলেন। প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় শান্তি সম্মেলনে পিকাসো লিথোগ্রাফে শান্তির প্রতীক হিসাবে সাদা পায়রার ছবি আঁকেন। উত্তরকালে এই ছবিকেই শান্তি প্রতীক হিসাবে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ গ্রহণ করেছে।
শিল্পের ইতিহাসে ছবি বিক্রি করে পিকাসো যে পরিমাণ অর্থ পেয়েছেন তার এক শতাংশও কেউ পায় নি। তার ছবির বাজার ছিল সমস্ত পৃথিবীর জুড়ে। ইউরোপ আমেরিকার ধনী মানুষেরা তার একটি ছবির জন্য লক্ষ মুদ্রা ব্যয় করতে সামান্যতম দ্বিধা করত না। ছবির বিক্রির সময় পিকাসো পাকা ব্যবসাদারদেরও লজ্জা দিতেন।
অর্থ, খ্যাতি, সম্মান, নারীসঙ্গ পিকাসোর জীবনে অপরিমেয়ভাবে এলেও তা কখনো তার শিল্পসৃষ্টিকে ব্যাঘাত করেনি। শিল্প সাধনার সময় তিনি প্রায় সাধকের স্তরে উত্তীর্ণ হতেন।
তিনি কি না করেছেন–কিউবিজম, এক্সপ্রেশনিজম, সুরিয়ানিজম, ভাস্কর্য, কারুশিল্প, মঞ্চসজ্জা, পোশাক পরিকল্পনা, পোস্টার এচিং, লিথোগ্রাফ বই-এর অলংকরণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অনন্য সাধারণ। লিওনার্দ দ্য ভিঞ্চির পর শিল্পজগতের ইতিহাসে এমন বহুমুখী প্রতিভার আর জন্ম হয়নি।
শুধু শিল্পী নয়, পিকাসো ছিলেন কবি। তার কবিতা সে যুগে যথেষ্ট সমাদর পেয়েছিল।
জীবনের এই পর্যায়ের বেশ কিছু লিথোগ্রাফের মধ্যে তার একদিকে জীবন সাধনা অন্যদিকে নারীর প্রতি তার দুর্নিবার আকর্ষণ-এই দুই-এর মধ্যেকার অনুরাগ এবং দ্বন্দুকে অপূবং শৈলীতে মূর্ত করে তুলেছেন।
১৯৬৮ সালে ৮৭ বছর বয়েসে তিনি করলেন এক বিস্ময়কর কাজ “Tour de Force”। দীর্ঘ সাত মাস ধরে তিনি ৩৪৭টি এনগ্রেভিং-এর মধ্যে দিয়ে মানুষের জৈব কামনাকে চিত্রিত করেছেন। এর অনেক ছবির মধ্যেই ফুটে উঠেছে এক জটিল দুর্বোধ্যতা।
নিজের জীবিতকালেই পিকাসো হয়ে উঠেছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তী। চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সংগ্রহশালা প্যারিসের লুভর মিউজিয়াম। ১৯৫৫ সালে এই মিউজিয়ামে পিকাসোর সমস্ত শিল্পকীর্তির এক বিরাট প্রদর্শনী হয়েছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিল্প অনুরাগীরা এই প্রদর্শনীতে এসেছিলেন।
শুধু তার সৃষ্টির উৎকর্ষতা নয়, সৃষ্টির পরিমাণ দেখলেও বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। প্রায় ১৫০০ ক্যানভাস, ১০০০০ লিথো প্রিন্ট, ৩০০ ভাস্কর্য সিরামিক মাটির কাজ এছাড়াও প্রায় ৩৫০০০ ছোট ছোট ছবি।
১৯৭০ সালে তার সমস্ত জীবনব্যাপী শিল্পকর্ম বার্সিলোনার মিউজিয়ামকে দান করে যান। মাতৃভূমির প্রতি এই ছিল তার শেষ শ্রদ্ধার্ঘ।
১৯৭৩ সালের ৮ই এপ্রিল। ফ্রান্সের মুগা শহরে পিকাসোর শিল্পজীবনের পির সমাপ্তি ঘটল। প্রকৃত পক্ষে পিকাসোর জীবনটাই ছিল এক বিরাট শিল্প। মৃত্যুতেও যে শিল্পের লয় হয় না।