৩৪. আবারো জঙ্গল

৩৪. আবারো জঙ্গল

অবশেষে সে বাস্তবে ফিরে এল। সে মুখটা ধুলিমাখা কার্পেটের উপর উবু হয়ে শুয়ে আছে। এই অফিসটিকে সে মনে করেছিল এক সময় এখানে সে বিজয়ের গোপন শিক্ষা পাঠ নিয়েছিল। কিন্তু হ্যারি বুঝতে পেরেছে যে তার বাঁচার কোনো উপায় নেই। তার কাজ হল ধীরে ধীরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। এই সময়টাতে সে শুধু ভোষ্টেমর্টের সংযোগটিকেই বহন করে যাবে। এভাইে সে যখন ভোল্ডেমর্টের পথে গিয়ে দাঁড়াবে এবং তার নিজের যাদুদণ্ডটি আর তুলে ধরবে না তখন অবসানটি পরিস্কার হয়ে যাবে। এবং যে কাজটি গোড্রিচ হলোতে করার কথা ছিল তা শেষ হয়ে যাবে। দুজনের কেউই বাঁচবে না, টিকে থাকতে পারবে না।

সে অনুভব করল বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডটা প্রচণ্ডভাবে বাড়ি দিচ্ছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার যে মৃত্যু আতঙ্কের ভেতর এটি ধুকধুক করে দম চালিয়ে যাচ্ছে, সাহসের সঙ্গে তাকে টিকিয়ে রেখেছে! কিন্তু এটাকে অতি শীঘ্রই থামতে হবে। বুকের এই শব্দ এখন গোণা শব্দ, সীমিত। সে উঠে দাঁড়িয়ে মাঠের ভেতর দিয়ে, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ক্যাসেলের দিকে যাবার পর আর কত সময় থাকবে?

মেঝেতে শুয়ে থাকার সময় আতঙ্ক তাকে জাপটে ধরল। মৃত্যুর ড্রাম যেন বাজছে। মৃত্যু কি কষ্টদায়ক হবে? সব সময় সে মনে করেছে মৃত্যু কাছে এসেছে এবং বেঁচে গেছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা নিয়ে সে কখনো চিন্তা করেনি। মৃত্যুর ভয়ের চেয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা সব সময় অনেক শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এখন তার কাছে ভোল্ডেমর্টকে পরাজিত করা বা নিজের বেঁচে যাওয়ার কথা মনে হচ্ছে না। সে জানে সেটা শেষ হয়ে গেছে। সর্বশেষ যা বাকী আছে তা হল মৃত্যুবরণ।

যদি সে গ্রীস্মের সেই রাতে মারা যেত, যে রাতে মহান ফিনিক্স পালকের যাদুদণ্ডটি তাকে রক্ষা করেছিল! যদি সে হেজভিগের মত তাৎক্ষণিক মারা যেত তাহলে সে জানতো না যে মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। অথবা যদি আপন কোনো মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে কোনো যাদুদণ্ডের সামনে দাঁড়াতে… এখন তার বাবা মায়ের মৃত্যুও তাকে ঈর্ষা জাগায়। নিজের ধ্বংসের দিকে শীতল পায়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ভিন্ন ধরণের সাহস প্রয়োজন। সে অনুভব করলো যে তার হাত একটু একটু কাঁপছে, এবং সে তা থামাতে চেষ্টা করলো। যদিও কেউই তাকে দেখছে না। দেয়ালের পোট্রেইটগুলোও সব খালি।

ধীরে, অত্যন্ত ধীর গতিতে হ্যারি উঠে বসল। আর উঠে বসার পরপরই তার ভেতরে একটা প্রাণ এল। সে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে নিজের জীবন্ত শরীরটার প্রতি সচেতন হয়ে উঠল। কেন সে এতকাল বুঝতে পারেনি যে তার মস্তিস্ক, স্নায়ু এবং ভেতরে ধুকধুক করে বাড়ি দেয়া হৃদপিণ্ড একটা মিরাকল? এ সব কিছু তার ভেতর থেকে চলে যেত…অথবা অন্তত সে এগুলো থেকে নিস্তার পেত। তার নিঃশ্বাস ধীর এবং গভীর হয়ে উঠল। গলা পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে, মুখ শুকিয়ে গেছে।

ডাম্বলডোরের বেঈমানি কিছুই ছিল না। অবশ্যই অন্য একটা বড় প্ল্যান ছিল। হ্যারি এত বোকা ছিল যে সেটা বুঝতে পারেনি। সেটা এখন সে অনুভব করতে পারছে। সে নিজের ধারণাকে কখনো প্রশ্ন করেনি যে ডাম্বলডোর তাকে জীবিত রাখতে চান। এখন সে বুঝতে পারছে যে তার জীবণের পরিধি নির্দিষ্ট হয়েছে সে কতদিনে হরক্রুক্সগুলো তুলে আনতে পারে তার উপর। এগুলোকে ধ্বংস করার দায়িত্ব ডাম্বলডোর তাকে দিয়ে গেছে। আর সে অব্যাহতভাবে শুধু ভোল্টেমর্টের জীবনই নয়, তার নিজেরটাও খাটো করে নিয়ে আসতে চেষ্টা করছে। কতটা পরিস্কার, কতটা পারদর্শিতা এ কাজে যে অন্যদের জীবন না খুইয়ে শুধুমাত্র তাকে এই কঠিন দায়িত্ব দেয়া যার মৃত্যুর পরোয়ানা চিহ্নিত হয়ে আছে, যার মৃত্যু কোনো কিছুর ধ্বংস আনবে না, কিন্তু ভোল্ডেমর্টের জন্য আঘাত হবে।

এবং ডাম্বলডোর জানতেন যে হ্যারি এর থেকে সরে যেতে পারবে না। সে কারণেই তিনি শেষ পর্যন্ত, এমনকি মৃত্যুর সময়ও চুপ থেকেছেন। সে কারণেই তাকে জানতে কষ্ট হয়েছে। ভোল্টেমর্টের মত ডাম্বলডোরও জানতেন যে হ্যারি নিজের কারণে কারো মৃত্যুকে মেনে নেবে না। ফ্রেড, লুপিন এবং টঙ্কসের মৃত্যু দৃশ্য তার মনের চক্ষুতে ফিরে এসেছে এবং এক মুহূর্তের জন্য তার দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যু তাকে অস্থির করে ফেলেছে….

কিন্তু ডাম্বলডোর তার সম্পর্কে অধিক উচ্চ ধারণা করেছেন। সে আসলে ব্যর্থ হয়েছে : সাপটি বেঁচে আছে। হ্যারিকে হত্যা করা হলেও একটি হরক্রুক্স ভোল্টেমর্টের সঙ্গেই পৃথিবীতে থেকে যাবে। সত্যি তখন যে কারো জন্য কাজটি সহজ হয়ে যাবে। হ্যারি ভাবল, কে এই কাজটি করতে পারবে…..রন এবং হার মিয়নেরই জানা থাকবে কী করতে হবে। অবশ্যই… সে কারণেই ডাম্বলডোর চাইতেন হ্যারি অন্য দুজনের সঙ্গে সব গোপন বিষয় শেয়ার করুক…যাতে যদি হ্যারি তার নিয়তির দিকে অগেভাগে চলে যায় তাহলে যেন অসমাপ্ত কাজ বাকী দুজন করতে পারে….

ঠাণ্ডা জানালায় বৃষ্টির মতো এই অনস্বীকার্য সত্যটি আবার শক্ত করে বাড়ি দিতে থাকল যে তাকে মরতে হবে। আমি অবশ্যই মারা যাবো, আমি শেষ হয়ে যাবো।

রন এবং হারমিয়নকে মনে হল তার দেশ থেকে অনেক দূরে। তার মনে হল যেন সে ওদের কাছ থেকে অনেক আগেই আলাদা হয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে। বিদায় নেয়া হবে না, কোনো ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। সে এ ব্যাপারে দৃঢ়। এটা এমন এক ভ্রমণ যা সবাই মিলে তারা করতে পারবে না। ওকে যদি ওরা ফেরানোর চেষ্টা করে সেটা হবে মুল্যবান সময় নষ্ট। সে তার টোপ খেয়ে যাওয়া সোনার ঘরিটার দিকে তাকালো। ঘড়িটা সতের তম জন্মদিনের উপহার পেয়েছিল। দেখল ভোল্ডেমর্টের কাছে তার আত্মসমর্পনের বেধে দেয়া সময়ের অর্ধেকটা পার হয়ে গেছে।

হ্যারি উঠে দাঁড়ায়। তার হৃদপিণ্ডটি বুকের খাঁচার ভেতরে একটি পোষ না মানা পাখির মত জাপটে বেড়ায়। হয়তো সেটি জানে যে আর খুব অল্প সময় আছে। হয়তো বাকী হার্টবিটগুলো জীবনাবসানের আগেই শেষ করতে চাচ্ছে। সে অফিস। দরোজাটি বন্ধ করার সময় পেছনে তাকালো না।

ক্যাসল পুরোপুরি ফাঁকা। সে ভূতের মত তার ভেতর দিয়ে একা একা আগালো, যেন সে ইতিমধ্যেই মরে গেছে। পোট্রেইটের ভেতরের মানুষগুলো এখন আর ফ্রেমের ভেতর নেই। পুরো এলাকা অস্বাভাবিক শান্ত, মনে হল যেন বেঁচে থাকা সবাই গ্রেট হলে গিয়েছে যেখানে মৃতরা এবং শোকার্তরা ভীড় করেছে।

হ্যারি অদৃশ্য আলখাল্লাটি তার গায়ে চড়ালো এবং মেঝেতে নেমে এল। শেষে মার্বেলের সিঁড়ি দিয়ে এন্ট্রান্স হলে এসে প্রবেশ করল। হয়তো তার আলখাল্লাটির ছোট কোনো অংশ দেখা যাবে, বা কাজ করবে না। কিন্তু এটি আগের মতই পুরোপুরি কার্যকর আছে। পারফেক্ট। সে সহসাই সামনের দরোজার কাছে পৌঁছে গেল। 

ঠিক তখনই নেভিল প্রায় তার দিকে চলে আসছিল। আরেকটু হলেই ধাক্কা খেতো। নেভিল দুটো মানুষের মত হয়ে আছে, সে গ্রাউন্ড থেকে মৃত একটি দেহ বয়ে এনেছে। হ্যারি নিচু হয়ে দেখল এবং তার ভেতরে আরো একটি প্রচণ্ড ধাক্কা লাগল। কলিন ক্রিভি, সে হয়তো ক্র্যাবে, ম্যালফয় এবং গয়েলের মতো চুপি চুপি পিছু হটেছিল। মরার পর সে ছোট হয়ে গিয়েছে। 

তুমি শুনেছ? আমি ওকে একাই বয়ে নিতে পারি, নেভিল, অলিভার উড বলল। সে কলিনকে কাধের উপর তুলে নিয়ে গ্রেট হলে প্রবেশ করল। 

নেভিল খানিক সময়ের জন্য দরোজার চৌকাঠের সঙ্গে হেলান দিল এবং হাতের তালু দিয়ে কপাল মুছল। তাকে একজন বৃদ্ধ লোকের মত দেখা যাচ্ছে। তারপর সে আবার নিচে নেমে অন্ধকারের দিকে চলে গেল আরো মৃতদেহ তুলে আনার জন্য। 

হ্যারি একবার গ্রেট হলের প্রবেশ পথের দিকে তাকালো। লোকজন চলাচল করছে, একজন আরেকজনকে শান্তনা দিচ্ছে। কেউ কেউ ড্রিংকস করছে। কেউ মৃতদেহের পাশে হাঁটু গেড়ে বসেছে। কিন্তু হ্যারি নিজের কাছের কোনো মানুষকে দেখতে পেল না। রন, হারমিয়ন এবং জিনি বা অন্য কোনো উইসলি পরিবারের কাউকে দেখা গেল না। লুনাকেও না। সে অনুভব করল তার বাকী সময়টা সে শেষ বারের মত তাদের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেবার জন্যই ধার্য করবে। কিন্তু তারপর, সে দেখা কি থামানোর ক্ষমতা তার থাকবে? 

সে নিচের সিঁড়ির দিকে গেল এবং অন্ধকারের উদ্দেশে। তখন প্রায় ভোর চারটা বেজে গেছে। মনে হল নিথর দেহগুলোর শ্বাস প্রশ্বাস আছে। অপেক্ষা করছে। হ্যারির যা করবার কথা তা সে করতে পারে কিনা। 

হ্যারি সরাসরি নেভিলের দিকে গেল। নেভিল আরো একটি মৃতদেহ তুলছে।

নেভিল। 

হায় হায়! হ্যারি, তুমি আমার পিলে চমকে দিয়েছিলে! 

হ্যারি টান দিয়ে অদৃশ্য আলখাল্লাটি খুলে ফেলল। কোত্থেকে যেন বুদ্ধিটা এল। সেটা নিশ্চিত করার জন্য ইচ্ছা জেগে উঠল। 

তুমি একা কোথায় যাচ্ছ? নেলি সন্দেহ নিয়ে জানতে চাইল।

এটা আমার একটা পরিকল্পনার অংশ, হ্যারি বলল। আমাকে একটা কাজ করতে হবে। শোনো, নেভিল-। 

হ্যারি! নেভিলকে হঠাৎ আতঙ্কিত মনে হল। হ্যারি! তুমি নিজেকে হাতে তুলে দেয়ার, সমর্পন করার চিন্তা করছ?

 না, হ্যারি সহজভাবে মিথ্যা কথা বলল। অবশ্যই না–এটা অন্য একটা ব্যাপার। কিন্তু আমাকে আপাতত চোখের বাইরে যেতে হবে। তুমি ভোল্টেমর্টের সাপটির কথা জানো, নেভিল? তার একটি বিশাল সাপ আছে…যার নাম নাগিনী.. 

আমি শুনেছি… হা… সেটার ব্যাপারে কি? 

এটাকে হত্যা করতে হবে। রন এবং হারমিয়ন সেটা জানে। কিন্তু যদি কোনোক্রমে ওরা 

এ সম্ভাবনার ভয়ে তার দম মুহূর্তের জন্য আটকে আসতে চাইল। কিন্তু আবার নিজেকে সে নিয়ন্ত্রণ করলো। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাকে ডাম্বলডোরের মত মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে তার ব্যাক আপ আছে, অন্যরা কাজটি সম্পন্ন করবে। 

ডাম্বলডোর মৃত্যুর সময় জানতেন যে তিনজন জীবিত মানুষ আছে যারা হরক্রুক্সটি সম্পর্কে জানে। এখন নেভিলের হ্যারির জায়গাটা নেয়া দরকার। তাহলে এখনো গোপন বিষয়টি তিনজনের জানা থাকবে। 

যদি কোনোভাবে ওরা… ব্যস্ত… আৰু তুমি যদি সুযোগ পাও…

সাপটিকে হত্যা করার?

সাপটিকে হত্যা করার, হ্যারি তার কথা রিপিট করলো।

 ঠিক আছে হ্যারি, তোমার সব কিছু ঠিক আছে?

 আমি ঠিক আছি, ধন্যবাদ নেভিল।

 কিন্তু হ্যারি হাঁটতে শুরু করলেই নেভিল তার হাত টেনে ধরল। 

আমরা সবাই লড়ছি, তুমি সেটা জানো?

 হ্যাঁ, আমি

 কথা শেষ করতে গিয়ে তার গলা আটকে গেল। না সে আর বলতে পারছে। নেভিল বিষয়টি লক্ষ করেনি। সে হ্যারির কাঁধে পিঠ চাপড়ে দিয়ে হাত ছেড়ে দিল। তারপর হেঁটে মৃতদেহ খুঁজতে চলে গেল। 

হ্যারি আবার আলখাল্লাটি গায়ে চড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল। কেউ একজন কাছেই নড়ে উঠল। একটি পড়ে থাকা শরীরের উপর ঝুকল। কয়েক পা দূরে থাকতেই হ্যারি বুঝল মেয়েটি জিনি। 

হ্যারি দাঁড়িয়ে পড়ল। জিনি একটি মেয়ের উপর ঝুঁকে পড়েছে। মেয়েটি তার মায়ের কথা ফিসফিস করে বলছে। 

ঠিক আছে, জিনি বলতে থাকল। ওকে, আমরা তোমাকে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি। 

কিন্তু আমি বাড়ি যেতে চাই, মেয়েটি ফিসফিস করে বলল। আমি আর লড়তে চাই না। 

আমি জানি, জিনি বলল। তার গলার স্বর ভেঙে আসল। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। 

হ্যারির গায়ের উপর দিয়ে একটি শীতল স্রোত বয়ে গেল। তার চিৎকার দিতে ইচ্ছা হল। জিনিকে জানাতে প্রচণ্ড ইচ্ছ হল যে সেও এখানে দাঁড়িয়ে আছে। জিনিকে বলতে ইচ্ছা করল সে কোথায় যাচ্ছে। তার ইচ্ছা হল থামতে, ফিরে যেতে, ঘরে ফিরে যেতে….। 

কিন্তু সে বাড়িতেই আছে। তার জানামতে হোগার্টেই হল তার প্রথম এবং সবচেয়ে ভাল বাড়ি। সে নিজে, ভোল্ডেমর্ট, স্নেইপ এবং এখান থেকে ছেলেদের সবার জন্য এটাই তাদের বাড়ি…। 

জিনি আহত মেয়েটির পাশে হাঁটু গেড়ে বসল। তার হাতটা ধরল। হ্যারি প্রচণ্ড চেষ্টা করে আবার নিজের পথে হাঁটতে শুরু করল। তার মনে হল সে দেখল জিনি, পেছন ফিরে ঘুরে তাকিয়েছে। ভাবল, জিনি কি বুঝতে পেরেছে যে কেউ একজন কাছ দিয়ে হেঁটে গেল। কিন্তু হ্যারি কিছু বলল না। সে পেছনের দিকে আর ফিরে তাকালো না। 

হ্যাগ্রিডের ছোট ঘরটি অন্ধকারের ভেতর দেখা গেল। কোনো আলো নেই। দরোজায় কোনো দাঁত কড়মড় করার শব্দ নেই। হ্যাগ্রিডের এখানে আসলে দেখা যেত সিলভারের কেতলি চুলার ওপর, পাথরের টুকরার মত কেক, খাবারের স্তূপ এবং তার দাঁড়ি ভরা মুখটি। 

হ্যারি হাঁটতে থাকল এবং জঙ্গলের কোণায় পৌঁছে দাঁড়ালো। 

গাছগাছালির ভেতর দিয়ে ডেমেনটরগুলো দৌড়ে বেড়াচ্ছে। হ্যারি ওদের চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু বঝুতে পারছে না যে ওদের পার হয়ে যেতে পারবে কি না। প্যাট্রোনাস তৈরির জন্য তার যথেষ্ট শক্তি অবশিষ্ট নেই। সে নিজের কাঁপতে থাকাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যাই হোক, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা এত সহজ ব্যাপার নয়। প্রতিটি মুহূর্তে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ঘামের গন্ধ, মুখের উপর ঠান্ডা বাতাস এসে লাগা-এ সব কিছু বড়ই মুল্যবান। সে ভাবল, মানুষের বছরের পর বছর অযথা কাটানোর সময় রয়েছে। আর তার নিজের প্রতিটি সেকেন্ড সময় হিসাব করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সে চিন্তা করল যে সে যেতে পারবে না, কিন্তু জানে যে করতেই হবে। দীর্ঘ খেলার অবসান হতে যাচ্ছে, স্নিচটি হাতে ধরা হয়েছে, এখন ছেড়ে দেয়ার পালা… 

স্নিচটির জন্য গলার সঙ্গে ঝোলানো ব্যাগটির ভেতরে কাঁপা আঙুল দিয়ে খুঁজল এবং সেটি বের করে আনল। 

আমি কাছাকাছি চলে এসেছি —

ঘনঘন, কষ্ট করে দম নিতে হচ্ছে। হ্যারি চোখ নামিয়ে সিঁচটি দেখল। হ্যারি চাইল সময়টা যেন ধীরে বয়ে যায়, কিন্তু সময় যেন আরো দ্রুত গতিতে পার হচ্ছে। স্নিচের সঙ্গে বোঝা পড়া যেন চিন্তারও আগে চলছে। এটাই এখন মোক্ষম সময়। 

হ্যারি স্নিচটি মুখের কাছে নিয়ে ঠেসে ধরল এবং ফিসফিস করে বলল, আমি মরতে যাচ্ছি। 

ধাতব মোড়কটি ভেঙে খুলে গেল। সে কাঁপা হাতটি নিচে নামালো। তারপর অদৃশ্য আলখাল্লার নিচ থেকে যাদুদণ্ড তুলে ধরে বলল, লিউমাস!

স্নিচের ভেতরে মাঝখানে দুই-তৃতীয়াংশ স্থান জুড়ে থাকা কালো পাথরটির উপরের দুই ভাগ ভেঙে বের হয়ে এল। এই পুনরুত্থান পাথরটি আড়াআড়ি ভেঙে গেছে যেটির একটি এলডার ওয়্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে। আর ত্রিকোণ এবং গোল অংশ হল আলখাল্লার প্রতিনিধিত্ব করে এবং পাথরটি পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। 

আবারো হ্যারি কোনো চিন্তা ছাড়াই কিছু বিষয় বুঝতে পারল। তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য তাদের নিয়ে আসাটা আসলে কোনো ঘটণন না। সে তাদেরকে নিয়ে আসছে না, বরং তারাই ওকে টেনে নিয়েছে। 

হ্যারি চোখ বুজল এবং পাথরটি তিনবার তার হাতের উপর ঘোরালো। 

সে জানতো যে ঘটনাটা এমনই ঘটবে। সে শব্দ শুনতে পেল। বনের প্রান্ত থেকে কিছু দুর্বল শরীর ছোটছোট ডালপালা মাড়িয়ে চলাফেরা করছে। হ্যারি চোখ খুলল এবং চারদিকে তাকালো। 

তারা না মানুষ, না ভূত। সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে। তারা দেখতে অনেকটা রিডলের মত–সেই যে বহুদিন আগে যে রিড়ল ডায়েরি থেকে সরে গিয়েছিল। হ্যারির পরিস্কার মনে আছে। তারা হ্যারির দিকে এগিয়ে আসছে। মানুষের মত এত পরিপূর্ণ নয়, আবার ভূতের মত অতটা অস্পষ্টও নয়। প্রতিটি মুখেই একটি আন্তরিক হাসি। 

 জেমসের উচ্চতা একেবারে হ্যারির সমান। যে পোষাকটি পরে তিনি মারা গিয়েছিলেন ঠিক সেই পোষাকটিই পরে আছেন। তার চুলগুলো এলোমেলো এবং উসকোখুসকো। তার চোখের চশমাটি মি. উইসলির মত সামান্য বেঁকে আছে। 

সিরিয়স অনেক লম্বা এবং স্বাস্থ্যবান। তার জীবিত থাকাকালে হ্যারি যেমন দেখেছে তার চেয়ে অনেক অল্পবয়সী মনে হচ্ছে। সে শান্তভাবে হাঁটছে। তার হাত দুটো পকেটের ভেতর এবং মুখে হাসি। 

লুপিনকেও অনেক বেশি অল্প বয়সের মনে হচ্ছে। তার চুলগুলো পাতলা এবং কালো। তাকে এই পরিচিত জায়গায় আসতে পেরে খুশি মনে হচ্ছে। চারপাশে কৈশরের অনেক স্মৃতি। 

সবার চেয়ে বিস্তৃত হাসি লিলির মুখে। তিনি কাছে আসতেই তার চুলগুলো তিনি ঠেলে পেছনের দিকে দিলেন। হ্যারির মতই তার সবুজ চোখ দুটো দিয়ে হ্যারির দিকে এমন ক্ষুধার্তভাবে দেখছেন যেন কখনোই তাকে যথেষ্ট তৃপ্তির সঙ্গে দেখা হয়নি। 

তুমি অত্যন্ত সাহসী! 

তুমি প্রায় পৌঁছে গেছ, জেমস বললেন। খুবই কাছে… আমরা তোমাকে নিয়ে সত্যিই গর্বিত। 

খুব কষ্ট?

 শিশু সুলভ প্রশ্নটি হ্যারির মুখ ফসকে বের হয়ে গেল।

মৃত্যু মোটেই না, সিরিয়স বলল। ঘুমাতে যাওয়ার চেয়ে সহজ এবং দ্রুত। 

লুপিন বলল, এবং সেও এটি দ্রুত শেষ করতে চায়। 

আমি চাই না যে তোমাদের মৃত্যু হোক, হ্যারি বলল। তার ইচ্ছার বাইরেই কথাগুলো বের হয়ে এল। 

তোমাদের যে কারো মৃত্যু, আমি খুবই দুঃখিত। 

অন্যদের চেয়ে লুপিনের দিকে তাকিয়েই হ্যারি অনুনয় করে কথা বলছে।

 –তোমার ছেলেটি জন্ম নেয়ার পরপরই…রেমুস। আমি সত্যিই দুঃখিত… 

আমিও দুঃখিত, লুপিন বলল। দুঃখ, আমি তাকে কখনো জানতে পারব ….কিন্তু সে জানবে কেন আমি মারা গেছি। এবং আমি আশা করি সে বুঝতে পারবে। আমি চেষ্টা করেছিলাম তার জন্য একটি জগত তৈরি করতে যেখানে সে শান্তিতে বসবাস করবে। 

একটি তীক্ষ্ণ ঠাণ্ডা হাওয়া জঙ্গলের গভীর থেকে উঠে এসে হ্যারির ভুরুগুলোকে নাড়িয়ে দিল। হ্যারি জানে যে তারা ওকে চলে যেতে বলবেন না, সিদ্ধান্তটি তাকেই নিতে হবে। 

তোমরা কি আমার সঙ্গে থাকবে? 

একেবারে শেষ পর্যন্ত, জেমস বললেন।

ওরা আপনাদের দেখে ফেলবে না? হ্যারি জানতে চাইল। 

আমরা তোমারই অংশ, সিরিয়স বলল। তবে, অন্য যে কারো কাছে অদৃশ্য। 

হ্যারি তার মায়ের দিকে ফিরে তাকালো।

হ্যারি শান্তভাবে বলল, আমার কাছাকাছি থেকো। 

সে রওয়ানা হল। ডেমেনটরদের প্রভাব তার উপর পড়ল না। সে সঙ্গীদের নিয়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলতে থাকল। তারা ওর প্যাট্রোনাসের মত কাজ করতে থাকল। সবাই ঘন, আরো নিবিড়ভাবে হয়ে আসা বহু পুরাতন গাছগুলোর ভেতর দিয়ে এক সঙ্গে কাছাকাছি থেকে চলতে থাকল। গাছের শিকড়গুলো সব একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িয়ে পেঁচিয়ে আছে। অন্ধকারের ভেতর হ্যারি তার আলখাল্লাটি আরো শক্ত করে ধরে জঙ্গলের আরো গভীর থেকে গভীরে চলতে থাকল। তার কোনো ধারণা নেই যে ডোন্ডেমর্ট ঠিক কোন স্থানে আছে, কিন্তু সে নিশ্চিত যে সেটা খুঁজে পাবে। তার পাশাপাশি খুবই নিস্তব্ধভাবে জেমস, সিরিয়স, লুপিন এবং লিলি চলতে থাকলেন। তাদের উপস্থিতির কারণে হ্যারির সাহস সঞ্চার হয়েছে এবং সে তাদের কারণে এক পায়ের পর আরেক পা ফেলতে পারছে। 

তার শরীর এবং মনটিকে এখন অস্বাভাবিকভাবে সংযোগহীন বলে মনে হচ্ছে। তার পাগুলো কোনো সচেতন নির্দেশ ছাড়াই কাজ করছে। যেন সে পা দুটোর চালক নয়, যাত্রী। যে মৃতরা এখন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে তার পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছেন তাদেরকে ক্যাসলের জীবন্ত মানুষগুলোর চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে। সে যখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভোল্টেমর্টের উদ্দেশে আসছিল তখন রন, হারমিয়ন বা জিনিকে বরং অনেকটা ভৌতিক বলে মনে হচ্ছিল….. 

থপ করে একটি শব্দ হল এবং ফিসফিস শব্দ শোনা গেল। অন্য কোনো জীবন্ত প্রাণী হ্যারির কাছেই নড়ে উঠেছে। হ্যারি আলখাল্লার নিচেই থেমে গেল। চারদিকে তাকালো, শব্দ শুনতে চেষ্টা করল। তার বাবা, মা, লুপিন এবং সিরিয়সও দাঁড়িয়ে পড়েছে। কেউ একজন এখানে আছে! হাত খানেক দূর থেকে একটি কণ্ঠ বলে উঠল, তার পরণের অদৃশ্য আলখাল্লা! এমন হতে পারে না। 

পেছনের একটি গাছের পেছন থেকে দুটি শরীর বের হয়ে এল। তার হাতের যাদুদণ্ডদুটো ঝকঝক করে উঠল। হ্যারি দেখল অন্ধকারের ভেতর থেকে ইয়াক্সলি এবং দোহোলভ সরাসরি তারা সবাই যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওরা কিছু দেখতে পাচ্ছে না… 

অবশ্যই কোনো শব্দ হয়েছে, ইয়াক্সলি বলল। কোনো প্রাণী হবে, তোমার কি মনে হয়? 

মাথামোটা হ্যাগ্রিড এখানে নানা জিনিস জড়ো করেছিল, ঘরের উপর দিয়ে তাকিয়ে দোহোলভ বলল। 

ইয়াক্সলি হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো। 

সময় হয়ে গেছে, পটারের সময় শেষ। কিন্তু সে আসছে না।

এবং তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে সে আসবে! তিনি বিষয়টায় খুব একটা সুখী হবেন না। 

চলো ফিরে যাই, ইয়াক্সলি বলল। এখন দেখতে হবে নতুন কি পরিকল্পনা আছে। 

ইয়াক্সলি এবং দোহোলভ ঘুরে জঙ্গলের আরো গভীরের দিকে রওয়ানা হল। হ্যারি ওদেরকে অনুসরণ করল। সে জানে যে ওরা সেখানেই যাচ্ছে যেখানে হ্যারি যেতে চায়। সে চারদিকে তাকালো এবং তার মা ওর দিকে তাকিয়ে হাসলেন। বাবা সাহস দিয়ে মাথা নাড়লেন। 

এক মিনিটের রাস্তা পার হতেই হ্যারি দেখল সামনে আলো দেখা যায়। হ্যারি জানে ইয়াক্সলি এবং দোহোলভ যে ফাঁকা জায়গাটার দিকে পা বাড়ালো সেদিকে এক সময় বিশালাকারের অ্যারাগগ বাস করতো। তার বিশাল জালটির কিছু অংশ রয়ে গেছে, কিন্তু অসংখ্য জালের সুতা ডেথ-ইটাররা নিজেদেও কারণে ধ্বংস করে ফেলেছে। 

একটি আলো ফাঁকা জায়গাটায় জ্বলে উঠল। এবং সে আলোর ঝলকানিতে পুরোপুরি নিরব তাকিয়ে থাকা অসংখ্য ডেথ-ইটার দেখা গেল। তাদের অনেকেরই মুখে এখনো মুখোশ আছে, মাথা ঢাকা। অন্যদের মুখ দেখা যাচ্ছে। দুটি বিশালাকারের দৈত্য বসে আছে ভীড়ের থেকে আলাদা হয়ে। ওদের ছায়া এসে পড়েছে জায়গাটির উপর। দেখতে দুটোই ভয়ানক নিষ্ঠুর। হ্যারি দেখল ফিনরির একপাশে দাঁড়িয়ে তার লম্বা নখগুলো কামড়াচ্ছে। আর বিশাল রাউল তার রক্তাক্ত ঠোঁটদুটো টিপছে। সে লুসিয়াস ম্যালফয়কে দেখল। তাকে শঙ্কিত এবং হতাশ দেখা গেল। আর নার্সিসা চোখ স্থির করে পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করছে। 

সবার চোখ এখন ভোল্ডেমর্টের দিকে। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার সাদা হাতদুটো সামনের এলডার ওয়্যান্ডের উপর ভঁজ করে রাখা। মনে হল সে প্রার্থনা করছে, অথবা মনে মনে কিছু গুনছে। হ্যারি তখনো জায়গাটার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। অদ্ভুতভাবে তার মনে হল যেন একটি শি লুকোচুরি খেলার সময় শুনছে। তার মাথার পেছনে বিশাল সাপ নাগিনী দুলছে, পাক খাচ্ছে বিশাল আলোর চকচকে খাচাটির ভেতর। 

দোহোলভ এবং ইয়াক্সলি দলের ভেতর ফিরে আসা মাত্র ভোল্ডেমর্ট চোখ তুলে তাকালো। 

তার কোনো চিহ্নই নেই, মাই লর্ড, দোহোলভ বলল।

 ভোল্টেমর্টের চেহারায় কোনো পরিবর্তন হল না। লাল চোখ দুটো মনে হল আগুনের আলোতে পুড়ছে। ধীরে ধীরে সে এলডার ওয়্যান্ডটি লম্বা আঙুলগুলোর ভেতর তুলে নিল। 

মাই লর্ড 

বেলাট্রিক্স বলতে থাকল। সে ভোল্ডেমর্টর কাছাকাছি বসা। সে অনেকটা এলোমেলো। তার মুখটা একটুখানি রক্তাক্ত। এ ছাড়া কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। 

ভোল্ডেমর্ট তাকে থামিয়ে দিতে হাত উঁচু করল। ফলে বেলাট্রিক্স আর কোনো কথা বলল না। সে প্রভুভক্তি নিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে ভোল্টেমর্টের দিকে তাকিয়ে থাকল।

 আমি ভেবেছিলাম সে আসবে, ভোল্ডেমর্ট উচ্চকণ্ঠে বলল। তার দৃষ্টি বোয়ার দিকে, আমার মনে হয়েছিল সে আসবে। 

কেউ কোনো কথা বলল না। তাদের সবাইকে মনে হল আতঙ্কিত। হ্যারিও আতঙ্কিত। তার হৃদপিণ্ডটি পাঁজরের সঙ্গে বাড়ি খাচ্ছে। যদিও সে নিজে তার দেহটি পরিত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তার হাত দুটো ভিজে উঠেছে। হ্যারি টান দিয়ে অদৃশ্য আলখাল্লাটি খুলে ফেলল। তারপর সেটি গাউনের ভেতর যাদুদণ্ড দিয়ে ঢুকিয়ে রাখল। যুদ্ধ করার কোনো ইচ্ছাই তার নেই। 

আমি, মনে হয়…ভুল হয়েছে, ভোল্ডেমর্ট বলল।

তোমার ভুল হয়নি। 

হ্যারি যতটা উচ্চস্বরে সম্ভব বলল। কণ্ঠে ভয়ের কোনো আভাস থাকুক হ্যারি তা চায় না। তার পুনরুত্থান পাথরটি আঙুল গলে বেরিয়ে গেল এবং সে চোখের কোণ দিয়ে তার বাবা, মা, লুপিন এবং সিরিয়সকে দেখল। হ্যারি আলোর ভেতর প্রবেশ করতেই তারা উধাও হয়ে গেলেন। ওই মুহূর্তে সে ভোল্ডেমর্ট ছাড়া আর কাউকে খেয়াল করল না। শুধু তারা দুজন। 

যত তাড়াতাড়ি এসেছিল ঠিক তত তাড়াতাড়ি তার ভেতর থেকে বিভ্রম কেটে গেল। দৈত্যগুলো গর্জন করে উঠল, ডেথ-ইটারগুলো সব এক জায়গায় হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি এমনকি হাসি তামাশা করতে থাকল। ভোল্ডেমর্ট যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই স্থির হয়ে রইল। কিন্তু সে তার লাল চোখ দিয়ে হ্যারিকে দেখেছে। হ্যারি তার দিকে আগাতে থাকলে সে হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইল। দুজনের মাঝখানে আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। 

তখনই একটি কণ্ঠ চিৎকার করে উঠল।

 হ্যারি! না!

সে পেছন ফিরে তাকালো। হ্যাগ্রিড তার দিকে দৌড়ে আসছিল কিন্তু আটকে দেয়া হয়েছে, কাছেই একটি গাছের সঙ্গে বাধা পড়েছে। সে ছুটে যাবার চেষ্টা করছে। তার বিশাল দেহ ছোটানোর চেষ্টার কারণে গাছের ডালগুলো ঝাঁকি খাচ্ছে। 

না! না! হ্যারি, কী করছ! 

চুপ! রাউলে চিৎকার করে বলল। তার যাদুদণ্ড ঝলকে উঠতেই হ্যাগ্রিড নিরব হয়ে গেল। 

বেলাট্রিক্স লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। সে উত্তেজিত হয়ে একবার হ্যারি আবার ভোল্টেমর্টের দিকে দেখছে। তার বুকটা শুধু ওঠানামা করছে। একমাত্র ধোয়া উঠছে এবং ভোল্টেমর্টের পেছনে সাপটিই নড়ছে, খাচার ভেতর পাক খাচ্ছে। এ ছাড়া আর কিছু নড়ছে না। 

হ্যারি ওর বুকে যাদুদণ্ডটি অনুভব করল। কিন্তু সেটি বের করার কোনো চেষ্টা করল না। সে ভাল করেই জানে যে সাপটি শক্তভাবে প্রোটেকশন দেয়া আছে। সে ভাল করেই জানে যদি নাগিনীর দিকে যাদুদণ্ড তাক করতে যায় তাহলে তার আগেই অন্তত পাশটি কার্স এসে গায়ে পড়বে। এখনো ভোল্ডেমর্ট এবং হ্যারি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর তোভেমৰ্ট একপাশে ঘাড় কাত করল। ভাল ছেলেটি তার সামনে এসেছে! এবং সে ঠোঁটহীন মুখটি বাকা করে একটি রুঢ় হাসি দিল। 

হ্যারি পটার, সে অতি সুরে বলল। যে ছেলেটি এখনো বেঁচে আছে। 

ডেথ-ইটারদের কেউ নড়ল না। ওরা অপেক্ষা করছে : সবাই অপেক্ষা করছে। হ্যাগ্রিড ছুটতে চেষ্টা করছে। বেলাট্রিক্স দ্রুত দম ফেলছে। কেন বোঝা গেল না, কিন্তু হ্যারি জিনির কথা ভাবল, তার তীব্র চাহনির কথা ভাবল, তার ঠোঁটটিকে অনুভব করল নিজের 

ভোল্ডেমর্টে তার যাদুদণ্ডটি তুলল। তার মাথাটি এখনো উৎসাহী একটি শিশুর মত একদিকে বাঁকা করে আছে। ভাবল সে এখন পদক্ষেপ নিলে কী ঘটবে। হ্যারি তার লাল চোখর দিকে আবারো তাকালো, ভাবল এখনই ঘটনাটি ঘটানো দরকার, সে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে থাকতে, ভয় তাকে পরাজিত করার আগেই 

সে মুখটি নড়তে দেখল এবং একটি সবুজ আলোর ঝলকানি দেখল। সবকিছু বিলীন হয়ে গেল। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *