এয়োত্রিংশ পরিচ্ছেদ
ভালোবাসুন ও বাঁচতে দিন
ডিসরেলি বলেছিলেন, ‘জীবনে আমি প্রচুর ভুল করতে পারি, তবে কখন ভলোবাসার জন্য বিয়ে করবো না।’
আর তা তিনি করেন নি। তিনি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত একাই ছিলেন। আর তারপর এক ধনী বিধবাকে বিয়ে করেন, তার চেয়ে পনেরো বছরের বড় বিধবাকে। যে বিধবার সব চুল ছিলো সাদা, যিনি পঞ্চান্নটি শীত পার হয়েছিলেন। প্রেম? না, তা নয়। ভদ্র মহিলা জানতেন ডিসরেলি তাকে ভালোবাসেন না। তিনি এটাও জানতেন ডিসরেলি তাঁকে এক বছর অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন যাতে তার চরিত্র বুঝতে পারেন। তারপর সেই সময় কাটলে তাঁকে তিনি বিয়ে করেন।
খুবই গদ্যময়, ব্যবসায়িক কথা বলে মনে হয়। তাই না? তা সত্ত্বেও কিন্তু ডিসরেলির ঐ বিয়ে অনেক বিয়ের চেয়েই সফলতায় ভরা ছিলো। বিয়ের ইতিহাসে এটাই আশ্চর্য।
যে ধনী বিধবাকে ডিসরেলি বেছে নিয়েছিলেন তিনি তরুণী, সুন্দরী বা দারুণ কিছু একটুও ছিলেন না। তাঁর কথাবার্তায় সাহিত্য বা ইতিহাস সম্বন্ধে হাস্যোদ্রেক করার মতই সব ঘটনা ঘটতো। যেমন উদাহরণ হিসাবে দেখা যায়, তিনি জানতেন না আগে কারা এসেছিলো গ্রীক না রোমানরা। পোশাক সম্বন্ধে তাঁর রুচি ছিলো জঘন্য, বাড়িঘর সাজানো সম্পর্কেও রুচি ছিলো অদ্ভুত। কিন্তু তিনি একটা বিষয়ে ছিলেন ওস্তাদ-পুরুষকে কি করে নাড়াচাড়া করতে হয় সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন একেবারে সিদ্ধহস্ত। বিয়ের ব্যাপারেও তিনি ছিলেন অসামান্য দক্ষ।
তিনি তাঁর বুদ্ধিকে ডিসরেলির উপর চাপাতে চাননি! ডিসরেলি যখন চালাক চতুর ডাচেসদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিরক্ত অবস্থায় শ্রান্ত হয়ে ফিরে আসতেন, মেরী অ্যানের কথাবার্তায় তখন তিনি আনন্দলাভ করতেন। বাড়ির আবহাওয়া তাঁর মনকে ক্রমেই আনন্দময় করে তুলতো। স্ত্রীকে আপ্যায়ন তাকে মধুর শান্তি এনে দিতো। বাড়িতে বয়স্কা স্ত্রীর সঙ্গে যে সময়টা তিনি কাটাতেন সেটাই ছিলো তার কাছে পরম সুখের। তাঁর স্ত্রী তাঁর কাছে ছিলেন তার সঙ্গিনী, তাঁর বিশ্বাসের পাত্রী, তার পরামর্শদাতা। প্রতি রাতে তিনি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসে স্ত্রীকে সারাদিনের কমন্স সভার সব বিবরণী শোনাতেন। আর-আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মেরী অ্যান আদপেই বিশ্বাস করতেন না ডিসরেলি যে কাজ করতে চান তাতে ব্যর্থ হবেন।
ত্রিশ বছর ধরে মেরী অ্যান ডিসরেলির জন্যেই বেঁচে ছিলেন, একমাত্র তারই জন্য। তার অর্থ সম্পদ তাঁর কাছে দামী ছিল শুধু স্বামীর সুখেরই জন্য। তার পরিবর্তে তিনি ছিলেন ডিসরেলির নায়িকা। মেরী মারা যাওয়ার পর ডিসরেলি আর্ল উপাধি পান, কিন্তু তিনি যখন সাধারণ একজন ছিলেন, তখন তিনি মহারাণী ভিক্টোরিয়াকে বলে মেরী অ্যানকে একটি উপাধি দান করান। অতএব ১৮৬৮ সালে তাঁকে ভাইকাউন্টেস বীকনসৃফিল্ড উপাধি দেওয়া হয়।
জনসমক্ষে মেরী অ্যানকে যতটাই বুদ্ধিহীনা বলে মনে হয়ে থাকুক, ডিসরেলি কিন্তু কখনই স্ত্রীর সমালোচনা করেন নি। কখনও একটা কড়া কথাও বলেন নি। তাছাড়া কেউ যদি তাঁকে ঠাট্টা করতে চাইতো তিনি সঙ্গে সঙ্গেই স্ত্রীর সমর্থনে দ্রুত অগ্রসর হতেন। এর মধ্যে থাকতো তীব্র বিশ্বস্ততা।
মেরী অ্যান হয়তো ত্রুটিহীনা ছিলেন না, তা সত্ত্বেও তিন দশক ধরে স্বামীর বিষয়ে কথা বলতে তাঁর ক্লান্তি আসেনি। তিনি সব সময়েই তার প্রশংসা করতেন। এর ফল কেমন হয়? ডিসরেলি বলেন, আমরা ত্রিশ বছর বিবাহিত জীবন যাপন করছি, অথচ আমি কখনই একঘেয়ে বোধ করিনি। (অথচ অনেকেই বলতেন মেরী অ্যান ইতিহাস জানতেন না, অতএব তিনি মূর্খ)
তাঁর নিজের অংশ হিসেবে ডিসরেলি কখনও গোপন করেন নি যে মেরী অ্যান তাঁর জীবনে অনেকখানি। এর ফল কি হয়? মেরী অ্যান তাদের বন্ধুদের বলতেন, আমার জীবনে এসেছে কেবল আনন্দ।
নিজেদের মধ্যে তাদের একটা ঠাট্টা চালু ছিলো। ডিসরেলি বলতেন, জানো তোমার টাকার জন্যই তোমায় বিয়ে করেছি।’ মেরী অ্যান হেসে বলতেন, হ্যাঁ,তবে আবার বিয়ে করতে হলে আমাকে এবার নিশ্চয়ই ভালোবাসার জন্যই করবে?
ডিসরেলি স্বীকার করতেন সেটা ঠিক।
না, মেরী অ্যান ত্রুটিহীনা ছিলেন না। কিন্তু ডিসরেলি তাঁর নিজের মত জীবন যাপন করায় কখনও বাধা দিতেন না।
হেনরী জেমস বলেছেন অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে গেলে এটা জেনে রাখা দরকার যে, অন্য লোকের সুখী হবার বিশেষ উপায়গুলোতে যেন কোন রকম বাধা না হয়। যদি না অবশ্য এতে আমাদের সুখের ব্যাঘাত হয়।
কথাটা বারবার বলার মতই।
লেল্যাণ্ড ফস্টার উড তাঁর বই ‘গ্লোয়িং টুগেদার ইন দি ফ্যামিলি’তে বলেছেন ‘বিয়েতে সাফল্য নির্ভর করে সঠিক লোক খুঁজে বের করার উপর। অবশ্য সঠিক লোক হওয়াটাও কম জরুরী নয়।
অতএব যদি সুখী হতে চান, তাহলে ২নং নিয়ম হল :
সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে অধিকার করার চেষ্টা করবেন না।’