৩৩
বিজ্লীর কাছে যাওয়া হয়নি আর। যাওয়া উচিত ছিল। পৃথু বড় কামিনা হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এমন ছিল না ও আগে।
বেচারি বিজ্লী। কত কষ্ট ওর। সত্যিই বেচারি ভারী কষ্ট করে। সকালে নাকি এক বয়স্কা বাঈ-এর কাছে নাচের তালিম নেয়। দুপুরে রান্না বান্না সেরে জিরিয়ে নেয় একটু। সন্ধে লাগতে না লাগতেই সাজ গোজ করতে হয়। গোলাপের আর ঈত্বরের গন্ধে আর ঝাড় লণ্ঠনের আলোতে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও তার মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।
রাত নামলেই মুজ্রো। তবে আসরে তো আর আজকাল নাচ-গানের পরীক্ষা বেশি হয় না। মুজ্রো ওই নাম-কা-ওয়াস্তেই। যতক্ষণ না ফরাসে বা কামরার কাঁচের-দেওয়াল-ঘেরা পালঙ্কে অথবা জাজিমেই স্পর্শদোষ না ঘটে ততক্ষণ কি আর ছুটি হয়? তারপরও হয়তো রেহাই পায় না। কত রকমের পুরুষই না আসে!
পৃথুর হঠাৎ হাসি পেল খুউব। সব পুরুষই বোধহয় এমনই ভাবে। নিজে ভাল এবং অন্য সকলেই খারাপ! পৃথু তো নিজেই গেছিল। মত্ত অবস্থায়। খুনি বা ডাকাতেরই মতো। তার সঙ্গে যেমন ভাল ব্যবহার করেছিল বিজ্লী, সকলের সঙ্গেই হয়তো তেমন ব্যবহারই করে।
বিজ্লীর কথা মনে হলেই তাকে খুব দুঃখ দিতে ইচ্ছে করে পৃথুর। মেয়েটার ইমানদারি বাজিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। ওকে কাঁদাতে ইচ্ছে করে খুব। কুর্চিকে বা রুষাকে সামনে কাঁদতে দেখলে যে পৃথুর বুকের মধ্যে কষ্ট হয় সেই পৃথুই বিজ্লীকে কাঁদাতে চায়। এ তার বুকের গভীরের নিষ্ঠুরতা। যা সাধারণত ছাই-চাপা থাকে। পৃথুর মধ্যে অনেকগুলো মানুষ বাস করে যে!
বিজ্লীর কপালে খুবই দুঃখ আছে। পৃথু ঘোষের মধ্যের সাডিস্ট-সত্তা বিজ্লীকে খুব কষ্ট দিতে চায়। ও তো বাজারের মেয়েছেলেই। ওর তো গুমোর নেই, স্বামীর গরম বা গর্ব নেই। ওর শরীর এবং মনও হয়তো ব্যবহৃত, ব্যবহৃত, ব্যবহৃত হয়ে শুয়োরীর মাংস হয়ে গেছে। ওকে নিয়ে তো খুশি মতন ছিনিমিনি খেলাই যায়! কাউকেই কৈফিয়ৎ দেবার নেই। তালাক। তালাক। তালাক। তিনটি শব্দ সময় মতো না বলতে পারার জন্য জীবনভর গঞ্জনা সওয়া নেই, সাত-পাকে বাঁধা স্ত্রীর ভর্ৎসনা নেই। বিজ্লী তো বিজ্লীই। রাণ্ডী বিজ্লী।
ম্যানেজারবাবুর বাড়িতে প্রথম আলাপ হয়েছিল কুর্চির সঙ্গে। সেদিন কুর্চি সাদার উপর হলুদ পোলকা ডট-এর ছিটের একটি ফ্রক পরেছিল। মাথায় সাদা রিবন। সাদা জুতো। ম্যানেজারবাবুর স্ত্রী করুণা-কাকিমা আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন পৃথু এই যে, এর নাম কুর্চি। এও ভাল গান গায়। নিমুবাবুর মেয়ে ও।
কুর্চি তো ফুলের নাম!
কিশোর পৃথু বলেছিল।
কিশোর পৃথু অবাক বিস্ময়ে বালিকা কুর্চির দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে চেয়ে বলেছিল।
তাইই তো! মানুষ বুঝি ফুল হতে পারে না?
সপ্রতিভ কুর্চি উত্তরে বলেছিল।
এখনও স্পষ্ট মনে আছে পৃথুর। কী করে কেটে গেল বছরগুলো। অথচ আয়নার সামনে যখনই দাঁড়ায়, বাথরুমে বা বেসিনে তখন নিজের সেই ছোটবেলার মুখটাকেই দেখতে পায়। চার বছর বয়স থেকে রোজই দেখছে তো। সেই মুখটার বয়স বাড়েনি। তবে ছেলেবেলার কোনও বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে আঁতকে ওঠে ও। বন্ধুকে যদি এমন দেখতে হয়ে গিয়ে থাকে, তার যুবক-মুখকে খুঁজে না পায় যদি, তবে সেও নিজেও নিশ্চয়ই অনেকই বদলে গেছে। ভেবেই মন খারাপ হয়ে যায়।
অফিসার চেয়ারে বসে এই সবই ভাবছিল পৃথু। ভাবনাগুলোর কোনও খেই থাকে না আজকাল। ওর মনোসংযোগ নষ্ট হয়ে গেছে। আবোল-তাবোল উল্টোপাল্টা ভাবে। পাগলামির আগের স্টেজ। বুঝতে পারে।
ছুটি হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। ইতোয়ারিন আসবে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে। ওর বরের জ্বর ছাড়েনি এখনও। বুকের ব্যথাটাও যায়নি। পৃথুকে ডেকে পাঠিয়েছে। আজ যাবে। বিজ্লীর কাছে যাওয়া হল না। অথচ যাওয়া উচিত। বিজ্লীর প্রায়রিটি সবচেয়ে পরে। গুগ্গা-ইতোয়ারিনের স্বামীর স্থানও বিজ্লীর অনেক উপরে।
সেদিন সকালে বিজ্লীকে বলেছিল পৃথু, এত কষ্ট করার দরকার কী? বাজাবেই যদি তো গান গাওয়া কেন? নাচটা রাখো, ফিগার ঠিক রাখার জন্যে। আর মাঝে সাঝে বাজাও। না-বাজালে যখন চলেই না।
বিজ্লী বড় আহত হয়েছিল। বলেছিল আপনিও এ কথা বলবেন তা ভাবিনি! গান ছেড়ে দিলে যে চলে সে তো আমিও জানি। কিন্তু আমি যে গান গাই তা তো কোনওদিনও ময়লা-কুচলা হবে না পিরথুবাবু! আমি নিজে তো একদিন তবাহ হয়ে যাব। ফান্দাবাজি করেই তো নিজের পেট চালাতে হবে। এই আমাদের নসীবী। “কিম্তি চীজ”, “কিম্তি চীজ” শুনতে শুনতেই একদিন জওয়ানী শেষ হয়ে যাবে। সব কিছুরই তো শেষ থাকে পিরথুবাবু। যেদিন জওয়ানী শেষ হয়ে যাবে; পুরুষরা আর মচ্ছির মতো আমার উপর পড়বে না এসে, সেদিন? সেদিন কী নিয়ে বাঁচব আমি বলুন? গানই তখন রইবে আমার সাথী হয়ে। একমাত্র সাথী।
ওয়াহ। ওয়াহ! মনে মনে বলেছিল পৃথু। “আমার শেষ পারানীর কড়ি কণ্ঠে নিলেম গান, কণ্ঠে নিলেম”। আবার সেই সাদা-দাড়ির বৃদ্ধ। নিস্তার নেই। তাকে বাদ দিয়ে বাঁচার উপায় নেই; মরার উপায় নেই।
পৃথু বলেছিল, পৃথু ঘোষ আর কজন আছে? শুধু তোমার গানের জন্যেই তোমার কাছে আসবে সেদিন এমন মানুষ কি খুব বেশি পাবে? গান শোনার মতো জিন্দা-দিল আজ সজাগ-কান কজন মানুষকেই পাঠান খুদাহ?
বিজ্লী হেসেছিল।
বলেছিল, পাব পাব। আপনাকে খুঁজে পেলাম কী করে? আপ যৈসী ইনসান যে-দুনিয়ায় থাকে সে-দুনিয়াতে গান থাকবেই। গানই যেদিন শুনবে না মানুষ, গানকে ভাল বাসবে না; সেদিন এই দুনিয়াই বরবাদ হয়ে যাবে।
সত্যিই। বিজ্লী কোনও রকম ঈজৎতারিফ-এর মোহে পড়ে গান শেখেনি। তার শিল্প-সাধনাতে ফাঁক ছিল না এককণাও। তার জওয়ানী গুজর যাওয়ার পরও তার এই সুন্দর পবিত্র শিল্পকে আশ্রয় করেই সে বাঁচবে। শুধু শরীরেই নয়; মনেও। একজন শিল্পীর বাঁচা তো কখনই শরীর-সর্বস্ব হতে পারে না। বাঃ। বাঃ। ভাবলেও ভাল লাগে পৃথুর। একেকজন মানুষের প্রতি একেকরকম শ্রদ্ধায় মন নুয়ে আসে। ভাগ্যিস, শ্রদ্ধা এখনও করতে পারে অনেককে। সেইটুকুই আশার কথা। আয়ী সাহাব।
চমকে উঠল পৃথু।
ভাবনার রাজ্যে কোথায় যে চলে গেছিল!
এত দেরি করে এলি তুই ইতোয়ারিন? ফিরতে আমার রাত হয়ে যাবে যে অনেক।
তুমি তো জঙ্গলেরই মানুষ সাহাব। আমাদেরই মতো। জঙ্গলে তোমার ভয় কী? এখনও তো পুরো শীত। সাপের ভয়ও নেই তো এখন। চলো সাহাব। তোমার কথা বারবার বলছে ও।
ডাক্তার গেল না শেষ পর্যন্ত?
না।
তোকে যে বললাম ঝিংকু ডাক্তারকে নিয়ে যা ভিজিট দিয়ে।
সে তো অনেকই খরচের ব্যাপার। আমাদের বস্তিতে বাপ-দাদার জন্মে কেউ কখনও হ্যালোপ্যাথী ডাক্তারকে ভিজিট দিয়ে নিয়ে যায়নি।
হ্যালোপ্যাথী নয়, অ্যালোপ্যাথী।
ওই হল। আমাদের চিকিৎসাই করাব আর দু-একদিন দেখে নিয়ে। গাওয়ানকে বলে রেখেছি। ওঝাকেও ডাকব।
তাহলে আর আমাকে কষ্ট দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিস কেন এতদূর? আমি তো ডাক্তার নই, পাহান বা ওঝাও নই।
তোমার সঙ্গে ওর অন্য ব্যাপার। তোমাকে খুবই ভালবাসে। কেন, জানি না। কিন্তু বাসে; ভাল।
চল।
চল্।
বলে, ইতোয়ারিনের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল পৃথু।
কারখানার হ্যালোজেন ভেপার ল্যাম্পের গাঢ়কমলা রঙা আলোটা পেছনে ফেলে জঙ্গলের পথে ঢুকতেই জঙ্গলকে অন্ধকারতর বলে মনে হল। জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে চড়াই-উৎরাই এ রাস্তা। শীতের রাতের বনের গায়ের গন্ধ মনে হয় থম মেরে আছে। কিন্তু আসলে ধীরে ধীরে উড়ে যাচ্ছে অন্ধকার আকাশের তারাদের দিকে।
চলতে চলতে নিচু গলায় স্বগতোক্তির মতো বিড় বিড় করে কথা বলছে ইতোয়ারিন। গেঁহু বাজরার হিসেব। হাট থেকে মোরগ-মুরগি কিনেছিল চারটে ডিমের ব্যবসা করবে বলে, খাটাশে খেয়ে গেছে তাদের। একবার ছাগলের ব্যবসাও করতে চেয়েছিল। শোনচিতোয়াতে নিয়ে গেছে ছাগল। কানহা-কিস্লির জানোয়ারেররাও আসে। পুরো পার্কের সীমানাতে তো আর পরিখা কাটা নেই। তাছাড়া জানোয়ারেরা তো আর রাস্তা ধরে চলে না! তবে সুখের কথা এইই যে, ওরা ওদের একমাত্র মেয়েটার বিয়ে দিয়েছে। গাব্দাগোব্দা নাতি হয়েছে একটা। মালাঞ্জখণ্ডে কাজ পেয়ে চলে গেছে দামাদ। ভালই আছে। ভাল খাচ্ছে। মেয়ের মাথায় তেল, গায়ে সাবান জোটে; সিনেমা পর্যন্ত দেখতে পায় মাঝে মধ্যে। অনেক দুঃখের মধ্যে এইটেই ইতোয়ারিনের সবচেয়ে সুখের খবর। নাতিটাকে দেখতে ভারী ইচ্ছে হয় কিন্তু মাসে একবারের বেশি দেখতে পায় না। যাওয়া-আসার খরচ অনেক। মেয়েই আসে। কখনও একা। কখনও বা জামাইর সঙ্গে।
পঁচিশ মিনিট কি আধ ঘণ্টাটাক হেঁটে যখন ওদের গ্রামে পৌঁছল তখন মাদলে চাঁটি পড়েছে, কার্মা নাচের জায়গায়। টোরা-টুরীরা এসে জমায়েত হচ্ছে একে একে। আগুনের পাশে বসে বয়স্করা মহুয়া খাচ্ছে। অন্য পাশটা ফাঁকা রাখা হয়েছে নাচের জন্যে।
হঠাৎ অসময়ে নাচ?
পৃথু শুধোল।
টিনডার মাইনে বেড়েছে পাঁচ টাকা।
পাঁচ টাকা?
হ্যাঁ।
কোথায় কাজ করে?
বাজারের গুড়ের দোকানে।
কাজটা কী?
বস্তা সেলাই করে।
বাঃ। বলল পৃথু।
বলেই ভাবল, কাকে যে বলল! টিনডার, না টিনডার গুড়ের দোকানী মালিককে; না এই স্বাধীন ভারতের সমাজ ব্যবস্থাকে তা নিজেই বুঝতে পারল না। লজ্জাটা নিজের থুথুর সঙ্গে গিলে ফেলল। এই লজ্জার পেছনে তারও পরোক্ষ অবদান আছে কিছুটা।
এই অল্প-সুখে-সুখী—টিনডাদের এই নাচের জন্যে বাহবা দিতেই হয়। মাতাল যেমন প্রতি সন্ধ্যাতে নতুন নতুন অজুহাত খুঁজে নিয়ে বোতল খুলে বসে তেমনই নাচ যাদের রক্তে আছে তারাও ছুতো বানিয়ে নেয় নতুন নতুন। পাঁচ টাকা মাইনে বাড়াটা তো একটা যথার্থ কারণই। ছুতো নয় আদৌ।
ইতোয়ারিন বলল, এবার ডানদিকে সাহাব।
ডানদিকে ঘুরতেই কার্মা নাচের জায়গার আলোটা মুছে গেল। গভীর অন্ধকার এখন। হঠাৎ আলোর মধ্যে এসে পড়ায় চোখ বেঁধে গেছিল। টর্চটা জ্বালল পৃথু। ইতোয়ারিন লাউগাছে ছাওয়া কাঠের বেড়ার ফাঁকের দরজা দিয়ে আগে ভিতরে ঢুকে আপ্যায়ন করে বলল, আইয়ে।
দুটি ছোট ছোট ঘর— একই চালার নীচে। জংলিবস্তির ঘর যেমন হয় আর কী! মাটির, সামান্য চওড়া বারান্দা। একটি ঘরে ছাগল-মুরগি জিনিসপত্র থাকে। অন্য ঘরে খাওয়া-শোওয়া। সবকিছু। ঘরের মধ্যে কেরোসিনের টেমি জ্বলছিল একটা। পৃথু ঢুকতেই, গুগ্গা মাটির মেঝের ওপরে পাতা কাঁথার ওপর উঠে বসার চেষ্টা করল। তারপর না পেরে, শুয়ে পড়ল আবার। হাসল একটু। পৃথুও হাসল, সহকর্মী সহকর্মীকে দেখে যেমন হাসি হাসে; সহমর্মিতার হাসি, কমরেডশিপ-এর হাসি, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কাজ করার সুখ-দুঃখের হাসি।
কী হল? যাবে না কাজে? হলটা কী তোমার? বুড়ো হয়ে গেলে নাকি সত্যি সত্যিই?
উত্তরে ও বুকের ওপর হাত রেখে দেখালো, বুকে ব্যথা।
কাল আমি ঝিংকু ডাক্তারকে পাঠিয়ে দেব। যা বলবে, করতে হবে কিন্তু ট্যাঁ-ফোঁ করবে না কোনওরকম।
ও হ্যাঁ-ও করল না, না-ও করল না পৃথুর কথায়। ওর মুখ দেখে পৃথুর মনে হল না যে, শরীরের কারণে ও খুব বেশি চিন্তিত।
অবাকই হল একটু পৃথু।
তারপর ও ইশারাতে ইতোয়ারিনকে ঘরের বাইরে যেতে বলল। তাতে ইতোয়ারিনও অবাক হল না কম। পৃথু তো হলই।
ইতোয়ারিন চলে গেলে, গুগ্গা চাপা গলায় বলল, আমার অসুখের জন্যে তোমাকে ডাকিনি পাগলা সাহাব। বুড়ো হলে অসুখ করেই। একদিনও না কামাই করেই তো গত পঁচিশ বছর কাজ করলাম কারখানায়। তুমি আসার পাঁচবছর আগে থেকেই। তার আগে বিড়িপাতার ঠিকাদারের কাছেও তিরিশ বছর কাজ করেছি। মাইসে সুদ্ধ যদি মাস দুয়েক ছুটি দাও তাহলে এই শুয়ে-বসেই আমার শরীর সুস্থ হয়ে উঠবে।
তুমি তো জানো যে…।
পৃথু বলল।
গুগ্গা বলল, জানি আমি। আমি কিন্তু সে জন্যেও তোমাকে ডাকিনি।
এবার আরও অবাক হল পৃথু।
শুধোল, তবে?
আমি আর কাজ করব না।
নিজে থেকেই ছেড়ে দেবে? তা এর জন্যে আমাকে ডাকার কী ছিল? এমনিতেই তো ছাড়তে পারতে। কিন্তু কাজ ছাড়লে খাবে কী?
খাব, যা হোক কিছু করে। বুড়ো মানুষের খেতে বেশি কী লাগে?
তোমার কথা বুঝছি না আমি। খুলে বলো যা বলবে। যা বলছ, ভাল করে ভেবে বলছ কী?
ভাবাভাবি শেষ। আমার আর ইতোয়ারিনের বদলে আমার মেয়ে-জামাইকে চাকরি দাও সাহাব।
সে কী?
তোমার জামাই না এত ভাল চাকরি করে? ভাল থাকে, ভাল খায়, সরকারী কারখানাতে তবু?
ভাল চাকরিই তো বিপদ ডেকে আনল সাহাব। দামাদটা আমার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটাও।
যার যতটুকু টাকার যোগ্যতা, যার যেরকম জীবনে অভ্যেস, প্রয়োজন, তার চেয়ে হঠাৎ বেশি টাকা হাতে এলে মানুষ নষ্ট হয়ে যায় সাহাব। বরবাদ হয়ে যায় বিলকুলই।
কেন তুমি এরকম ভাবছ? এত লোক মালঞ্জখণ্ড-এ কাজ করছে, সকলেই কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? পাগলের মতো কথা বলছ তুমি।
সকলের সেই বুদ্ধিই নেই। যখন তারা নষ্ট হয়ে যায়, তখন মনে ভাবে তাদের ভীষণই ভাল হচ্ছে বুঝি। না, না, আমি বেঁচে থাকতে তা হতে দিতে পারি না। তুমি আমাকে চেনো, জানো; ভালবাসো। তোমার ক্ষমতা আছে আমাদের বদলে আমার মেয়ে আর দামাদকে নিয়ে নেবার। নতুন লোক তো আর নিচ্ছ না!
শেষের দিকে গুগ্গার গলাটা জোর হল। এবং ওর কথা শেষ হতে না হতেই বাইরে থেকে ইতোয়ারিন ঢুকল ঘরে। উত্তেজিত হয়ে বলল, এই জন্যেই পাগলা সাহেবকে ডাকা? পাগল হয়েছিস তুই। গাধা কোথাকার! দামাদ, মেয়েকে যে ভাল রেখেছে, ভাল পরাচ্ছে, দুজনে মিলে ফুর্তি করছে তা বুঝি তোর সহ্য হচ্ছে না? তুই আমাকে কী করে রেখেছিস সারাজীবন? তাও তো নিজে বসে খাইনি। দুজনে কামিয়েও দুটি সুখা-রোটি ছাড়া জোটেনি বলতে গেলে কিছুই, সামনেই বলছি, এইই তো ছাতার কোম্পানি তোদের!
আঃ! ইতোয়ারিন্। তোরা কী সবই বুঝিস? তোরা সব বুঝিস না। তোরা দূর অবধি দেখতে পাস না তাইই এমন বলিস। এমন ভুল করিস না। ভাল থাকা আর ভাল খাওয়ার চেয়েও আরও অনেক বড় ভাল আছে। আমাদের এই বস্তিতে শান্তি আছে, সুখ আছে, বিশ্বস্ততা আছে। ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়নি আজও। অন্য লোকের বউকে ধরে কেউ টানাটানি করে না, টাকা দিয়ে কেউ কাউকে লোভ দেখায় না, আর যদি তা করেও বা লোভও দেখায় তা হলেও গাওয়ান-এর সামনে তার ফয়সালা হয়। তাকে বিয়ে করে ঘর করতে হয়।
কোন আমলের লোক রে তুই? অজীব আদমী সচ্মুচ্। যে শুনবে, সেই হাসবে, দিমাগ খরাপ হো গ্যয়া তেরা। বে-অকল্ আদমী।
গুগ্গা এক ঝটকায় উঠে বসল, গায়ের ছেঁড়া কম্বল মাটিতে ফেলে দিয়ে। ওর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল।
নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল, আমি ওখানে গিয়ে ওদের সঙ্গে থেকে এসেছি। ওখানে লোভ আছে। নানারকম লোভ। চক্চকে ময়ালসাপের মতো সেই লোভ সবসময় টানছে সবাইকে। ওরা নষ্ট হয়ে যাবে ইতোয়ারিন। টাকাটাই সব নয়, ওরা নষ্ট হয়ে যাবে, ফিরে না এলে।
বলেই, গুগ্গা আবার শুয়ে পড়ল। তার কপালময় বলিরেখা, বড় ক্লান্ত তার মনের ভাবটি; অনেকদিন না-কামানো গলাময় সাদা-কালো দাড়ি, কিন্তু মুখটির মধ্যে এক গভীর প্রশস্তি, যেমন প্রশান্তি দিগা পাঁড়ের মুখে পৃথু দেখে।
গুগ্গা ডান হাতটা উপরের দিকে তুলে, হাতের পাতাটা ছড়িয়ে দিয়ে বলল, সব নষ্ট হয়ে যাবে দেখিস তুই, দেখিস ইতোয়ারিন, এই টাকা, এই ট্রানজিস্টার, মো-গাঁওয়ের ওই চোখ-ঝলসানো হাট, এই সিনেমা মিলেমিশে সবকিছুই নষ্ট করে দেবে, যা কিছু ভাল ছিল আমাদের, যা কিছুই আমাদের বাপ-দাদারা যুগযুগ ধরে এই জঙ্গল-পাহাড়ের বুকের মধ্যে সাবধানে গড়ে তুলেছিল! গুগ্গার মেলে-দেওয়া হাতের পাতার ছায়াটা পড়েছিল কেরোসিন-টেমির আলোর বিপরীতে, মাটির দেওয়ালে। হাতটা দোলাচ্ছিল গুগ্গা। মস্ত একটা কাল-কেউটের কালো ফনার মতো ভয়ের ছায়া দুলিয়ে দিল সেই ছায়াটা মুহূর্তের মধ্যে।
হঠাৎই গা-ছমছম করে উঠল পৃথুর।
ইতোয়ারিন গাল দিল আবার। বাইগা ভাষায়। গুগ্গাকে।
পৃথু, গুগ্গার হাতটা মুঠোয় নিল। কালো সাপের ফনাটার দোলা বন্ধ হল। আশ্বস্ত হল পৃথু। বলল, আমি এখন চললাম। তোমরা ঝগড়া করো। তুমি যা বললে গুগ্গা, আমার পক্ষে সেটা করা মুশকিল হবে না। কিন্তু কী করবে না করবে, তা তোমরা দুজনেই ঠিক করে তারপর আমাকে জানাবে।
পৃথু উঠে, নিচু দরজা দিয়ে মাথা হেঁট করে বেরোতে বেরোতে বলল, কাল ঝিংকু ডাক্তারকে পাঠিয়ে দেব আমি।
গুগ্গা গোঙানির মতো বলল, না। না। আমাদের সময় শেষ হয়েছে। মরলেই আমি খুশি হব।
সে কথার উত্তর না দিয়ে দুজনকেই চলি বলে বেরিয়ে পড়ল পৃথু।
কার্মা নাচের জায়গায় তখন নাচ-গান জমে উঠেছে। ভিড় জমেছে এখন। ভিড়ের মধ্যে তাকে চিনলও কয়েকজন। অনেকেই উঠে দাঁড়িয়ে, আদর করে বসতে বলল ওকে যদিও হাটচান্দ্রার কারখানায় এই বস্তির খুব কম লোকই কাজ করে। মহুয়া খেতেও অনুরোধ করল হাতজোড় করে। নাচতে-নাচতে সরু-কোমর, ভারী-বুকের করৌঞ্জ আর নিমের তেলে চকচকে যুবতীরা কুর্নিশ জানাল।
নাঃ। না, নাঃ। বড় বিষণ্ণ হয়ে গেল পৃথু। ঠিক এইরকমই খোলা-মেলা, সহজ-সুখের উদোম রোদ-চাঁদের বুনো-গন্ধের জীবন চেয়েছিল পৃথু। হল না। এ জন্মে কিছুই হল না…
ওরা আবার ডাকল। মেয়েগুলো কলকলিয়ে উঠল স্বগতোক্তিতে এক ঝাঁক পরিযায়ী হাঁসের মতো, তাদের মরালী-গ্রীবা বেঁকিয়ে।
পৃথুর বুকের মধ্যে কষ্ট হচ্ছিল। না। ন্ না। পরে আসব। অন্য কোনও দিন। বলল পৃথু। আসলে বলতে চেয়েছিল অন্য কোনও জন্মে…আসব… ঠিক…।
অনেক কষ্টে ওদের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে এগোল। বস্তির কাঠের গুঁড়ির আগুনের আলোকে পিছনে ফেলে, দূরের বিজলি-আলো আর বিজ্লীর দুরের হাটচান্দ্রার দিকে পা বাড়াল। জঙ্গলের মধ্যে এসে পড়তেই ভাল লাগতে লাগল খুব। মাথাটা পরিষ্কার হয়ে গেল। পথের বাঁদিকে একটি ঝোরা মতো আছে। অন্ধকারে তার সাদা বালিরেখা দেখা যাচ্ছে। ঝোরার এক পাশের খাত দিয়ে পাথরে পাথরে জেদি শিশুর একঘেয়ে নিচু-স্বরের কান্নার মতো জল বয়ে চলেছে ভেজা, একটানা আওয়াজে। একটা কোট্রা হরিণ হয়তো পৃথুর পায়ের আওয়াজ পেয়েই বা ওকে দেখেই, হঠাৎ ব্বাক্ ব্বাক্ ব্বাক্ করে ডেকে উঠল। অন্ধকার আকাশের তারারাও যেন চমকে উঠল সেই ডাকে পথের সামনের ঘনসন্নিবিষ্ট বয়ের গাছের সারির সঙ্গে।
একমুহূর্ত থমকে দাঁড়াল পৃথু। আগে, একেবারেই নিঃশব্দে চলাফেরা করতে পারত। আজকাল সেই সুঅভ্যেস ছেড়ে যাচ্ছে, আরও অনেক সু-স্বভাবেরই মতো। টর্চটা একবার ওদিকে ফেলে, ঘোরাল এদিক ওদিক, পাহাড়ের পায়ের কাছেও, ঝোরার সাদা গায়ে। বাঘ তো আছে এদিকের বনে পাহাড়ে অনেকেই, পৃথু ঘোষ ছাড়া অনেকই বাঘ আছে। অতি-সাহস ভাল নয়। জঙ্গল-পাহাড় বাহাদুরি-প্রবণতা সহ্য করে না। গত মাসেই বম্বে থেকে আসা এক বার্ড-ওয়াচার নাক তুলে উঁচু ডালে পাখির খোঁজ করতে করতে হেঁটে গিয়ে এক ঘুমন্ত বাঘের ঘাড়ে পড়ে তার ঘাড়টি খুইয়ে গেল। জঙ্গলে কেউ প্রজাপতিই ধরুক, পাখিই দেখুক, ফোটোই তুলুক অথবা প্রেমই করুক তাকে সব সময় জঙ্গলে অলিখিত আইন-কানুন মেনে চলতেই হবে। না-মানলেই বিপদ। সেই সব নিয়ম পৃথু ঘোষ ভুলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, চর্চার অভাবে।
দুপেয়ে পৃথুকেই দেখল কোটরাটা না কোনও চারপেয়ে বাঘকে তা জানা নেই। টর্চটা ঘুরিয়ে নিল একশ আশি ডিগ্রী। বিভিন্ন উচ্চতাতে। বার তিনেক। নিজের পেছনেও দেখল। টর্চ নিভিয়ে দিয়ে একটুখন চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল চোখে অন্ধকার সইয়ে নিতে। তারপর আবার এগোল।
চড়াইটা নেমেই উৎরাই। পায়ে চলা পাকদণ্ডী পথ। সম্বর, বারাশিঙা, কোটরা, শুয়োর, চিতল চিতা, কখনও-সখনও বড় বাঘও ব্যবহার করে এই পথ রাত গভীর হলে। আরও দুটো চড়াই আর উৎরাই উঠে নেমে, বাঁদিকে একটা ছড়ানো সেগুন প্ল্যানটেশান পড়বে। সেইখানে মাঝে মাঝে বাইসনেরা চলে আসে। ইতোয়ারিন বলছিল। ওই জায়গাটার আগে পৌঁছে একবার টর্চ ফেলে দেখে নেবে। খালি-হাতে অন্ধকারে বাইসনের ভুঁড়ির সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার ইচ্ছে নেই কোনও। হাঁটতে হাঁটতে, অন্ধকার রাতের শিশিরভেজা বনের মিশ্রগন্ধে বুঁদ হয়ে ইতোয়ারিন আর তার স্বামীর কথা ভাবছিল পৃথু। ভাবছিল তাদের অদেখা মেয়ে-দামাদের কথা। এই প্রজন্ম, এই প্রজাতি শেষ হয়ে আসছে, সুদূর উত্তর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান প্রজাতি মোহিকানসরা? গুগ্গাও আরেকজন শেষ লোক; লাস্ট অফ দ্যা মোহিকানস্-এরই মতো। এক ক্রম-বিলীয়মান কৃষ্টি, সংস্কার, বিশ্বাস এবং বোধকে আঁকড়ে ধরে আছে ও এখনও। কে জানে? গুগ্গাই ভুল না ইতোয়ারিন? ভবিষ্যতই বলতে পারে একমাত্র। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থকরী-বিদ্যা, বাড়ি-গাড়ি, বিদ্যুৎ, অ্যাটম যা-কিছুই আপাতসুখ, আপাত-বৈভব, আপাত-দম্ভ আমাদের দিয়েছে তার কতটুকু আমাদের পক্ষে ভাল তা আমাদের নিজেদেরই চোখের জলে আবিষ্কার করতে হবে পরে। পৃথু একটা ব্যাপারে গুগ্গার সঙ্গে একমত। এই বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞানের দম্ভে মানুষ ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে তা আসলে বোধহয় কিছুই উদ্ভাবন করেনি, কিছুই করেছে সবই নিছক আবিষ্কার। সবই ছিল। যা ছিল তাইই আবিষ্কার করে আত্মশ্লাঘায় মানুষ বেঁচে রয়েছে। আধুনিকতম বিজ্ঞানের যা অবদান তা লিভিংস্টোনের অবদানেরই মতো। তারচেয়ে বেশি কিছু নয়। পৃথু জানে, যে সকলে তাকে মহামূর্খ, ইমবেসাইল, স্টুপিড, ইললিটারেট বলে এই মনোভাবের জন্যে। রুষা ও ছেলেমেয়েরাও বলে। পৃথু কিছুই বলে না উত্তরে তাদের। বলে, ভাবো। নিজের মতো করে ভাবো একটু। একটু চুপ করে থাকো। একা থাকো। ভাবার ক্ষমতা মানুষ ছাড়া আর কারওরই নেই। ভাবো। সবসময় পরিবৃত থেকো না, “টাইম-কিল” করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ো না গো তোমরা, সময়কে হাতে নিয়ে সুন্দর কোনও হলুদ-বসন্ত পাখির মতো। তাকে ভালবাসো, তার ডানার রঙে নিজেদের রাঙিয়ে নাও। মানুষ যে তোমরা! মানুষের মতোই হাবভাব হোক তোমাদের একটু! এবারে সেগুন প্ল্যানটেশানের কাছাকাছি এল। পৃথু ভাবছিল, কে জানে, হয়তো গুগ্গার ভয়টা একেবারে অমূলক নয়। ওদের বস্তি নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে ও যেমন ভীত, তেমনই পৃথুও জানে যে হাটচান্দ্রাও নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে প্রযুক্তি, কল-কারখানা, মুনাফার লোভ সেখানেই স্বাভাবিকতা, সুস্থ পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যেখানে অনেক উজ্জ্বল মার্কারি-ভেপার হ্যালোজেন-ভেপারের আলো, চকচকে গাড়ি, চোখ-চমকানো বাড়ি, যেখানে টাকা, অঢেল টাকা, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনের অনেকই বেশি অপ্রয়োজনীয় টাকা, সেই হাটচান্দ্রার পরিবেশও নষ্ট হয়ে গেছে। পৃথিবীর কোনও তালেবর ইকোলজিস্টও আর পরিশোধন করতে পারবেন না এর দূষণ। এখানে, ইদুরকার, রুষা, পৃথু, বিজ্লী, ইমম্যাটেরিয়াল ম্যানেজার শর্মা, ভগয়ান শেঠ, ডাকু মগনলাল এরা সকলেই থাকে।
আর কুর্চি? কুর্চিও তো থাকে কাছাকাছি।
না, না, কুর্চি নষ্ট হয়নি। কুর্চি নষ্ট হলে কী নিয়ে বাঁচবে পৃথু। তার শেষ অবলম্বন যে কুর্চি। তার বাতিঘর। কুর্চি তো ফুল। ফুল যে কখনই নষ্ট হয় না, অন্যকে নষ্ট করে না। জন্ম, বিবাহ, জরা মৃত্যু সবকিছুকেই ফুল সম্রান্ত করে দেয়। মৃত্যুকেও। সাধারণকে অসাধারণ করে।
না, না, কুর্চি, কুর্চিই। কুর্চি আর কারও মতো না। একবারে আলাদা মানুষ সে।
হাটচান্দ্রার পৃথুর, গুগ্গার কথা শুনে, ভেবে, নিজের জন্যে, হাটচান্দ্রার সকলের জন্যে বড় কষ্ট হচ্ছিল। ভাগ্যিস এই অন্ধকার রাত ছিল। বড় বড় গাছ ছিল জঙ্গলে, পাহাড়ের আড়াল ছিল, তার কোলে গাঢ় অন্ধকার ছিল, ভাগ্যিস এই সচেতন অথচ লজ্জিত, অনুতপ্ত, মুখটাকে লুকোবার জায়গা ছিল অনেকই চারদিকে। আঃ। জঙ্গল সকলকে, সব বোধকেই আব্রু দেয়। রাতের জঙ্গল তো বটেই! এখানেই কেউই বে-আব্রু হয় না। এই পরম নিশ্চিন্তি।