রফিকের আজ হঠাৎ করে তিন শ টাকার দরকার হয়ে পড়েছে। বায়োডাটা দিয়ে চাকরির দরখাস্ত করবে জাপানের এক ফার্মে। দরখাস্তের সঙ্গে ওদের দশ ডলার পাঠাতে হবে। দশ ডলার কেনার জন্যেই টাকাটা দরকার। ব্যাপারটা হয়তো পুরোপুরি ভাঁওতা। তবে কোম্পানিটা বিদেশি। বিদেশিরা এতটা চামার নাও হতে পারে। হয়তো সত্যি-সত্যি কিছু হবে।
মুশকিল হচ্ছে তিন শ টাকার জোগাড় এখনো হয় নি। নীলুর কাছে চেয়েছিল। নীলু দিতে পারে নি। পঞ্চাশ টাকার একটি নোট বাড়িয়ে দিয়ে বলেছে, বেতন পেলে বাকিটানিও। টাকা আমার কাছে কিছু ছিল, বাবা নিয়ে নিয়েছেন। রফিক বিরক্ত হয়ে বলেছে, বাবার আবার টাকার দরকার কী?
তোমার দরকার থাকলে তাঁরও থাকতে পারে।
তাঁর তো পেনশনই আছে।
পেনশনের টাকার সবটা তোমাকে দিয়ে দিতে হয়।
রফিক রীতিমত চিন্তায় পড়ে গেল। শারমিনের কাছে হয়তো কিছু টাকা আছে, কিন্তু এখন চাওয়া যাবে না। কথাবার্তা পুরোপুরি বন্ধ। সামান্য এক চিঠি নিয়ে এই কাণ্ড। কত দিন এরকম চলবে কে জানে। রফিকের মাঝে-মাঝে মনে হয়, এ রকম আবেগপ্রবণ একটি মেয়েকে বিয়ে করে সে বোধহয় ভুল করেছে। তার জন্য দরকার ছিল হাসিখুশি ধরনের একটি মেয়ে, যে খুব রাগ করবে, আবার পরমুহূর্তেই সব কিছু ভুলে হেসে ফেলবে। রাত একটার সময় ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজতে যার কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু শারমিন মোটেই সে-রকম নয়।
রফিক শেষ পর্যন্ত ঠিক করল শফিকের অফিসেই যাবে। ভাইয়ার আফসে গিয়ে টাকা চাওয়ার একটা সুবিধা আছে। ভাইয়া কখনো না বলবে ওঁঠা। সঙ্গে টাকা না থাকলে বলবে-ঘণ্টাখানিক পরে আয়। এই এক ঘণ্টায় কোনো-না কোনোভাবে সে ম্যানেজ করবেই।
রফিকের জন্যে বড়ো রকমের বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। শফিক অফিসে নেই। যে-ঘরটায় বসত, সেখানে অপরিচিত এক ভদ্রলোক বসে আছেন। তিনি বিরক্ত মুখে বললেন, কাকে চাই?
শফিক সাহেবকে, এখানে বসতেন।
তাঁর সঙ্গে আপনার কী দরকার?
উনি আমার বড়োভাই।
ও আচ্ছা, আসুন, বসুন। এখানে।
ভদ্রলোক অতিরিক্ত রকমের ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সরু গলায় বললেন, আপনার ভাইয়ের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ নেই?
যোগাযোগ থাকবে না কেন? আমরা তো একসঙ্গেই থাকি।
ও আচ্ছা।
ভদ্রলোক খুবই অবাক হলেন। তারপর যা বললেন, তা শুনে রফিকের মাথা ঘুরতে লাগল। কী সর্বনাশের কথা। শুনেও বিশ্বাস হতে চায় না।
ভাইয়াকে সাসপেণ্ড করা হয়েছে?
জ্বি।
তিনি অফিসে আসেন না।
জ্বি-না। আপনারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না?
জ্বি-না। এই প্রথম জানলাম। ভাইয়া খুব চাপা স্বভাবের মানুষ।
আমার বোধহয় এটা আপনাকে বলা ঠিক হল না। অফিসের আমরা সবাই ব্যাপারটায় খুব আপসেট।
ওর বিরুদ্ধে অভিয়োগটা কী?
বেশ কিছু অভিযোগ আছে।
আমার বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে। কোনো রকম অন্যায় করার ক্ষমতাই ভাইয়ার নেই। নিশ্চয়ই কোথাও কিছু ভুল হচ্ছে।
তা তো হচ্ছেই। অভিযুক্ত হবার জন্যে সব সময় কিন্তু অন্যায় করতে হয় না। নিন, সিগারেট নিন। চাখাবেন?
জ্বি-না। চা-সিগারেটকিছুই খাব না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ঠাণ্ডা একাগ্রাস পানি খাওয়াতে পারেন?
নিশ্চয়ই পারি।
ভদ্রলোক কোন্ড ড্রিংক আনালেন। রফিক দীর্ঘ সময় ভদ্রলোকের সামনে বসে রইল। উঠে যাবার মতো শক্তিও তার নেই। এই বিশাল সমস্যার কি সমাধান হবে?
সে সেখান থেকে সরাসরি নীলুর অফিসে চলে গেল। নীলু কী একটা ফাইল নিয়ে খুব ব্যস্ত। চোখে চশমা। এই চশমা সে বাসায় পরে না। অফিসে এলে চোখে দেয়, তখন তাকে একবারেই অন্য রকম লাগে। নীলু হাসিমুখে বলল, কী খবর রফিক?
কোনো খবর নেই ভাবী। আমি যখনই আসি, তখনই দেখি তুমি কী ব্যস্ত। একটা দিন দেখলাম না তুমি কলিগদের নিয়ে জমিয়ে গল্প করছ।
কী করব, তুমি বেছে–বেছে কাজের দিনগুলোতেই শুধু আস। আজ কী ব্যাপার?
তোমার সঙ্গে একটা জরুরি কথা আছে ভাবী। চল, তোমাদের ক্যান্টিনে যাই।
এখানে বলা যাবে না?
না।
ক্যান্টিন পুরো ফাঁকা। চা পাওয়া গেল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঞ্চ আওয়ার শুরু হবে। এখানে লাঞ্চ আওয়ারে চা হয় না। নীলু বলল, কী বলবে তাড়াতাড়ি বল। জরুরি কথার নাম দিয়ে তুমি যা বল, সেটা কখনো জরুরি হয় না।
এবারেরটা হবে।
বল, শুধু—শুধু দেরি করবে না।
তার আগে একটা হাসির গল্প শুনে নাও, ভাবী। এতে খারাপ খবর সহ্য করা সহজ হবে। গল্প হচ্ছে-এক লোক এক্সিডেন্ট করেছে। গাড়ি নিয়ে খাদে পড়ে গেছে। ট্রাফিক সার্জন বলল, তুমি গাড়ি নিয়ে খাদে পড়ে গেলে, ব্যাপারটা কি-
নীলু বিরক্ত হয়ে বলল, তুমি কী বলতে এসেছ বলে চলে যাও।
ভাইয়াকে সাসপেণ্ড করা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে। তদন্ত কমিটি বসেছে, তদন্ত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ভাইয়া অফিসে যায় নি। ঘর থেকে বের হয়ে পার্কে-টার্কে কোথাও বসে সময় কাটাচ্ছে হয়তো।
নীলু হতভম্ব হয়ে গেল। অনেকক্ষণ কোনো কথা বলতে পারল না।
যা বলছি, ঠিক বলছ?
সব জিনিস নিয়ে কি ভাবী রসিকতা করা যায়?
এত বড়ো একটা ঘটনা, সে আমাকে বলবে না?
কী করবে বল, স্বভাব।
স্বভাব-টভাব কিছু না, এত দিন হয়েছে আমাদের বিয়ের, এখনও সে আমাকে দূরে-দূরেই রেখেছে। কেন, আমি কি এতই তুচ্ছ, এতই ফেলনা?
নীলু ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। ক্যান্টিনের বয়গুলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রফিক বিরক্ত হয়ে বলল, কী শুরু করলে এসব। তোমাদের এই জিনিসটা দুচোখে দেখতে পারি না। এটার মধ্যে কেঁদে ফেলবার কী আছে?
নীলু, চোখ মুছে বলল, না, কাঁদবার তো কিছুই নেই। খুব আনন্দের সৃংবাদ। মনিপুরী নাচ শুরু করলে তুমি বোধহয় খুশি হও।
রফিক হেসে ফেলল। লাঞ্চের আগেই নীলু ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে এল। শফিক নেই। হোসেন সাহেব মনোয়ারাকে নিয়ে খিলগাঁয়ে গিয়েছেন। টুনি, বাবলু স্কুল থেকে ফেরেনি। বাড়ি খা-খী করছে। বিকেল পর্যন্ত নীলু বিছানায় শুয়ে রইল। মাঝখানে শারমিন এক বার এসে জিজ্ঞেস করল, তোমার কি শরীর খারাপ ভাবী?
নীলু সে-কথার জবাব দিল না। তার আজ কথা বলতেই ইচ্ছা করছে না। শারমিন আবার বলল, কী হয়েছে ভাবী? নীলু তিক্ত গলায় বলল, প্লাজ, আমাকে বিরক্ত করবে না। প্রচণ্ড মাথা ধরেছে।
ও সরি। তোমার কাডটা নাও।
কিসের কার্ড?
শাহানা পাঠিয়েছে। ভিউকার্ড।
টেবিলে উপর রেখে দাও।
শারমিন চলে যেতে গিয়ে আরেক বার জিজ্ঞেস করল, তোমার কী হয়েছে, বল। এস, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।
ডাক্তারের কাছে নেওয়ার মতো কিছু হয় নি।
এ বাড়িতে শরীর খারাপ বেশিক্ষণ শুষে থাকার কোনো উপায় নেই। হোসেন সাহেব তাঁর হোমিওপ্যাথির বাক্স নিয়ে এসে পড়লেন।
মা দেখি, উঠে বস তো।
আমার তেমন কিছু হয় নি, বাবা। মনটা শুধু খারাপ।
হোসেন সাহেব বিজ্ঞের হাসি হাসলেন।
মনখারাপও একটা অসুখ। সব অসুখের মূলে হচ্ছে এই অসুখ। ইংরেজিতে একে বলে মেলাংকলি। মনখারাপ সারাতে পারলে সব অসুখই সারান যায়। মাথাব্যথা আছে?
আছে অল্প।
চাপা ব্যথা, নাকি সূচের মতো ব্যথা?
চাপাব্যথা।
দেখি মা, জিব দেখি। হাঁ, হজমেরও অসুবিধা হচ্ছে। হাতের তালুকি খুব ঘামে?
একটু একটু ঘামে।
যা ভেবেছি তাই। তোমার কি মৃত্যুচিন্তা হয়? চট করে উত্তর দিও না, ভালো করে ভেবে বল।
এত দুঃখেও নীলু হেসে ফেলল। হোসেন সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন, লক্ষণ বিচারটাই হচ্ছে আসল। ঠিকমতো লক্ষণবিচার করে একটা ডোজ দিতে পারলেই কেল্লা ফতে। এই যে দেখ তোমার শাশুড়ির মেজাজ। এরও ওষুধ আছে। তিনটা ডোজ দিতে পারলে মেজাজ কনটোল হয়ে যাবে। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে।
দিচ্ছেন না কেন তিনটা ডোজ?
দিলেই কি সে খাবে? তাকে চেন না তুমি? সকাল থেকে হৈচৈ করছে। দুপুরেও কিছু খায় নি।
কেন?
জানি না কেন। তুমি একটু চেষ্টা করে দেখ তো মা। আমি এই ফাঁকে তোমার অসুখটা নিয়ে একটু ভাবি। এটা তো আর এ্যালোপ্যাথি না যে চোখ বন্ধ করে ব্রড স্পেকট্রােম এন্টিবায়োটিক দিয়ে দেব। লক্ষণ বিচার করতেই দুই-তিন ঘণ্টা লাগবে। বইপত্র দেখতে হবে। বড়ো কঠিন জিনিস মা হোমিওপ্যাথি। বড়ো কঠিন।
মনোয়ারার আজকের রাগের কারণ হচ্ছে-শাহানা সবাইকে কার্ড পাঠিয়েছে, তাঁকে পাঠায় নি। নিজের পেটের মেয়ে এই কাণ্ড কী করে করল? তিনি কি তাকে অন্যদের চেয়ে কম ভালোবাসেন? সবাই তাঁকে অপছন্দ করে কেন? অপছন্দ করার মতো কী আছে তাঁর মধ্যে?
নীলু দরজার কাছে এসে বলল, মা আসব?
আসতে ইচ্ছে হলে আস।
আপনি নাকি দুপুরে কিছু খান নি?
তাতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়েছে? আমি খেলেই কী না-খেলেই কী?
খাবার গরম করে টেবিলে দিয়েছি মা।
খামোকা আগ বাড়িয়ে কাজ করতে যাও কেন? কে তোমাকে টেবিলে খাবার দিতে বলেছে?
নীলু বেশ কড়া করে বলল, আপনি মা শুধু—শুধু অশান্তি করেন, সবাইকে বিরক্ত করেন।
মনোয়ারা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। এই মেয়ে তাঁর মুখের উপর এসব কী বলছে। এত সাহস এই মেয়ে পেল কোথায়? তিনি রাগে কাঁপতে-কাঁপতে বললেন, নীলু, এই ঘর থেকে বের হয়ে যাও।
এই প্রথম তিনি বৌমা না বলে নীলু বললেন। তাঁর মনে হল তাঁর চারপাশের ঘরবাড়ি থরথর করে কাঁপছে। চোখে তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। নীলু ছুটে গিয়ে তাঁকে ধরে ফেলল। হোসেন সাহেব ডাক্তার আনতে ছুটলেন। ডাক্তার বলল, প্ৰেশার খুবই হাই। এক বার সোহরাওয়াদিতে নিয়ে যাওয়া উচিত।
সোহরাওয়াদি হাসপাতালে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে নিল। এতগুলি ঘটনা ঘটল খুব দ্রুত। নীলু বলল, বাবা, রাতে আমি থাকব। যুগ্ম-আপনি পারছিনাক দিয়ে চলে যান। ডাক্তার তো বলেছেন ভয়ের কিছু নেই।
হোসেন সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, এত বড়ো একটা ঝামেলা, রফিক-শফিকের কোনো খোঁজ নেই। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে মা।
ওরা বোধহয় এতক্ষণ এসে পড়েছে। ওদের গিয়ে খবর দিন।
যাচ্ছি। তোমার একা-একা খারাপ লাগবে না তো?
একা কোথায়? মা আছেন। তাছাড়া হাসপাতাল-ভর্তি রোগী।
রাতে তুমি ঘুমুবে কোথায়?
এক রাত না ঘুমুলে কিছু হবে না। বাবা, আপনারা একটা বেবি ট্যাক্সি নিয়ে চলে যান।
মনোয়ারা বেশ খুশি। তাঁকে নিয়ে যে এত বড়ো একটা হৈচৈ হচ্ছে, এই আনন্দে তিনি উৎফুল্ল। নীলুকে ডেকে এক বার বললেন, আত্মীয় সবাইকে তো খবরটা দেওয়া দরকার। কখন কী হয়! হাটের ব্যাপার।
হার্টের আপনার কিছু হয় নি, মা। খুব প্ৰেশার ছিল, তাতেই…
তুমি কি ডাক্তারদের চেয়ে বেশি জান? যা করতে বলেছি কর।
সবাইকে খবর দাও। ঢাকার বাইরে যারা, তাদের চিঠি দিয়ে দিও।
জ্বি আচ্ছা।
রফিক-শফিকের কাণ্ডটা দেখ তো! নিজের মা মরে যাচ্ছে, কোনো খেয়াল নেই।
এখনও খবর পায়নি।
তোমার কি ধারণা, খবর পেলেই ছুটতে—ছুটতে চলে আসবে? নিজের ছেলেদের আমি চিনি না? খুব চিনি।
নীলু তার শাশুড়ির পাশে বসে মৃদুস্বরে বলল, মা, আপনি আমার কথায় রাগ করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। আমার কী যে খারাপ লাগছে!
বলতে-বলতে নীলুর চোখ ভিজে উঠল। গলা ভার-ভার হল। মনোয়ারা বিরক্ত গলায় বললেন, বলেছ ভালো করেছ। আমি দিনে এক হাজার কড়া কথা বলি, আর তুমি একটা বলতে পারবে না? কাঁদতে শুরু করবে না তো মা। গায়ের মধ্যে কুটকুট করছে। বিছানায় ছারপোকা আছে কিনা কে জানে। মুটুমি ঐ নার্সটাকে জিজ্ঞেস করে আস তো, বিছানায় ছারপোকা আছে কিনা।
নীলু বাধ্য মেয়ের মতো উঠে গেল। মনোয়ারা মনে মনে বললেন, আল্লাহ, তুমি আমার এই লক্ষ্মী বৌটাকে সুখে রেখা। কোনো রকম দুঃখ তাকে দিও না।
রফিক এল রাত নটার দিকে। নীলু অবাক হয়ে বলল, তুমি একা? তোমার ভাই আসে নি?
সকালে আসবে।
বল কী তুমি! সকালে আসবে মানে? অসুস্থ মাকে দেখতে আসবে না?
রফিক চুপ করে গেল। সে টিফিন কেরিয়ারে করে খাবার নিয়ে এসেছে। ভাত, কৈ মাছ ভাজা, ফুলকপির ভাজি।
খেয়ে নাও ভাবী। খিদে লেগেছে নিশ্চয়ই।
খিদে লেগেছে, কিন্তু খেতে ইচ্ছা করছে না। তোমার ভাইয়ের কি মন-টন বলে কিছু নেই?
সেটা ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে। আমাকে জিজ্ঞেস করে তো লাভ নেই।
তুমি এখানে আর রাত করে কী করবে? মাকে দেখে চলে যাও।
আমিও আছি তোমার সঙ্গে। হাসপাতালের বারান্দায় বসে থাকব। তুমি এক-একা রাত জগবে, তা হয় নাকি? একটা চায়ের দোকান দেখে এসেছি, সারা রাত খোলা থাকে। ঐখানে গিয়ে এক ঘণ্টা পরপর চা খাব আর হাসপাতালের বারান্দায় বসে মশার কামড় খাব। রাতটা ভালোই কাটবে।
নীলু হেসে ফেলল। রফিক সঙ্গে সঙ্গে গম্ভীর হয়ে বলল, হাসপাতাল নিয়ে একটা জোক শুনবো? খুব হাসির।
ঘটনার উত্তেজনায় মনোয়ারা এখন খানিকটা ক্লান্ত। ডাক্তাররা ঘুমের ওষুধ দিয়েছে, তাতে ঘুম ঠিক আসছে না। ঝিমুনির মতো আসছে। নীলুকে ন তাঁর সঙ্গে নিয়ে শুয়েছেন। জেগে আছে নীলুও। কিছুতেই তার মনের పోప్గా এক সময় মনোয়ারা বললেন, বৌমা, ঘুমিয়ে পড়েছ?
জ্বি-না।
তোমার শ্বশুরের কাণ্ডটা দেখেছি? তার উচিত ছিল না হাসপাতালে থাকা? একটা মানুষ মরে যাচ্ছে, আর সে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। ছিঃ ছিঃ। বৌমা ঘুমিয়ে পড়লে?
জ্বি-না।
রফিক আছে তো?
জ্বি, বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছে।
ব্যাটাছেলে এক জন থাকা ভালো। কখন কী দরকার হয়, তাই না? হার্টের অসুখ।
জ্বি। আপনি ঘুমান মা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিই?
নীলু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। অনেক দিন পর গভীর তৃপ্তি নিয়ে মনোয়ারা ঘুমুতে গেলেন।