দ্বাত্রিংশ অধ্যায়
মন্ত্রঃ– তদেবাগ্নিস্তাদাদিত্যস্তদ্ধায়ুস্তদু চন্দ্রামাঃ। তবে শুক্রং তদ্ৰহ্ম তা আপঃ স প্রজা পতিঃ ১। সর্বে নিমেষা জজ্ঞিরে বিদ্যুতঃ পুরুষাদধি। নৈনমূৰ্ব্বং ন তিঞ্চং ন মধ্যে পরি জগ্রভৎ৷৷২৷৷ ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্যশঃ হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যে যস্নান্ন জাত ইত্যেষঃ৷৷৩৷৷ এষো হ দেবঃ প্রদিশোহনু সর্বাঃ পূর্বো হ জাতঃ স উ গর্ভে অন্ত। স এব জাতঃ স জনিষ্যমাণঃ প্ৰত্য জনাস্তিষ্ঠতি সর্বতো মুখঃ ॥৪৷৷ যম্মাজ্জাতংন পুরা কিং চনৈব য আবভূব ভুবনানি বিশ্বা। প্রজাপতিঃ প্রজয়া সংররাণস্ত্রীণি জ্যোতীংষি সচতে স ষোড়শী৷৷৷৷ যেন দৌরুগ্রা পৃথিবী চ দৃঢ়া যেন স্বঃ স্তভিতং যেন নাকঃ। যো অন্তরিক্ষে রজসো বিমানঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম৷৷৬৷৷ যৎ ক্রন্দসী অবসা তস্তভানে অভ্যৈক্ষেং মনসা রেজমানো যত্ৰাধি সূর উদিতো বিবাতি কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। আপো হ যদ্ধৃহতী যশ্চিদাপঃ।।৭৷৷ বেনস্তপশ্যন্নিহিতং গুহা সদ্যত্র বিশ্বং ভবত্যেকনীড। তস্মিদিং সং চ বি চৈতি সর্বং স ওতঃ পোতশ্চ বিভূঃ প্রজাসু৷৷৷৷ প্র তদ্বোচদমৃতং নু বিদ্বান্ গন্ধর্বো ধাম বিভৃতং গুহা সৎ। ত্ৰীণি পদানি নিহিতা গুহাস্য যস্তানি বেদ স পিতুঃ পিতাহসৎ৯৷৷ স নো বন্ধুর্জনিতা স বিধাতা দামানি বেদ ভুবনানি বিশ্বা যত্র দেবা অমৃতমানশানাস্তৃতীয়ে ধামন্নধ্যেরয়ন্ত।১০। পরীত্য ভূতানি পরীত্য লোকান্ পরীত্য সর্বাঃ প্রদিপশা দিশশ্চ। উপস্থায় প্রথমজামৃতস্যাত্মনাহইত্মানমভি সং বিবেশ৷৷১১৷৷পরি দ্যাবাপৃথিবী সদ্য ইত্বা পরিলোকান্ পরি দিশঃ পরি স্বঃ। ঋতস্য তন্তুং বিততং বিকৃত্য তদপশ্যত্তদভবত্ত দাসীৎ৷৷১২। সদসম্পতিমদ্ভুতং প্রিয়মিন্দ্রস্য কাম্যম্। সনিং মেধাময়াসিং স্বাহা।১৩৷ যাং মেধাং দেবগণাঃ পিতরশ্চোপাসতে। তয়া মামদ্য মেধয়াগ্নে মেধা বিনং কুরু স্বাহা।১৪।মেধাং মে বরুণোদদাতু মেধামগ্নিঃ প্রজাপতিঃ। মেধামিন্দ্রার্স্ট বায়ুশ্চ মেধাং ধাতা দদাতু মে স্বাহা।।১৫।ইদং মেব্রহ্ম চক্ষত্রং চোভেশ্ৰিয়মতাম্। ময়ি দেবা দধতু স্রিয়মুত্তমাং তস্যৈ তে স্বাহা।।১৬৷৷
[কাণ্ড-১৬, মন্ত্র : ১৬]
.
মন্ত্ৰার্থঃ– ১। [সর্বমেধের মন্ত্রগুলির বিধান এখান থেকেই প্রারম্ভ হচ্ছে] এই পরমাত্মা পুরুষই অগ্নি; তিনিই আদিত); তিনিই বায়ু; তিনিই চন্দ্রমা; তিনি বীর্য; তিনিই ব্রহ্ম বা শব্দব্রহ্ম (ত্রয়ী লক্ষণ); তিনিই আপঃ (জল); এবং তিনিই প্রজাপতি।
২। সেই বিদ্যোতমান পুরুষ হতেই সকল কাল-অবয়ব-নিমেষ-বর্ষা ইত্যাদি উৎপন্ন হয়েছে। এই পরম পুরুষকে আজ পর্যন্ত কেউই উদ্ধে, মধ্যে বা চতুর্দিকে অনুসন্ধান করেও ধরতে পারেনি (তিনি সর্বথা অপার অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ইত্যাদির বিষয়ীভূত নন)।
৩। সেই পরমাত্মার সূর্য ইত্যাদি অন্য কোনই উপমানও নেই (অর্থাৎ তার সাথে তুলনা করার মতো কিছুই নেই–যে পরমাত্মার নাম মহাযশ। সেই হিরণ্যগর্ভইত্যাদি, এই চারি মন্ত্র। তিনি যেন আমাদের না হনন করেন–ইত্যাদি অপর একটি মন্ত্র। যাঁর অপেক্ষা বৃহৎ কেউ উৎপন্ন হয়নি–ইত্যাদি এবং তিনি সম্রাট–ইত্যাদি এই দুটি মন্ত্রও এই ব্রহ্মেরই প্রতিপাদক। এগুলির পাঠ জপ ব্রহ্মযজ্ঞে করা উচিত)৷
৪। এই পরমাত্মাদেব সম্পূর্ণ দিসমূহকে ব্যাপ্ত করে স্থিত আছেন। তিনিই সর্বপ্রথম উৎপন্ন হয়েছিলেন, এবং তিনিই উৎপন্নশীল সর্ব-প্রপঞ্চ। হে মনুষ্যগণ! এই পরমাত্মা সকলের মধ্যে ব্যাপ্ত হয়ে স্থিত হয়ে থাকেন। ইনি সর্বত্রই মুখ ইত্যাদি অবয়বশালী৷
৫। তার পূর্বে কিছুই উৎপন্ন হয়নি–তিনি স্বয়ং সর্বভূতময় হয়ে আছেন। সেই প্রজাপতি পরমাত্মা আপন জীবপ্রজার সাথে সম্যক রমমাণ হয়ে অগ্নি, বায়ু ও আদিত্য এই তিন জ্যোতিকে নির্মাণ করে থাকেন এবং তাদের মধ্যে ব্যাপ্ত হয়ে থাকেন। সেই পরমাত্মাই ষোড়শ অবয়বশালী ষোড়শী।
৬। যে পরমাত্মার দ্বারা এই উগ্রস্বভাব দ্যুলোক (আদিত্য প্রভৃতি) ধারিত হয়েছে, এবং এই পৃথিবী যার দ্বারা দৃঢ়ীকৃত হয়ে স্থির হয়ে রয়েছে, সে পরমাত্মার দ্বারা স্বর্গলোক স্তব্ধ হয়ে আছে, এবং যাঁর দ্বারা বৈকুণ্ঠলোকও আধারিত হয়ে আছে, যিনি অন্তরিক্ষে জল বা রজোকণার দ্বারা নক্ষত্র ইত্যাদিকে নির্মাণ করেন এবং তাদের ধারণকারী হয়ে থাকেন, সেই সর্বশক্তিমানের উদ্দেশ্যে হবিঃ সমর্পণ পূর্বক পরিচরণ করছি৷
৭। এই ক্রন্দনশীলা দ্যাবাপৃথিবী বৃষ্টি-অন্ন ইত্যাদির দ্বারা জগৎকে স্তম্ভিত করণশালিনী হয়েও মনে মনে কম্পিত হয়, আপন রক্ষার নিমিত্তে যে পরমাত্মা পুরুষের মুখপানে প্রতীক্ষিত হয়ে থাকে, যাঁতেই উদয় হয়ে এই সূর্য প্রকাশমান হয়, সেই প্রজাপতি দেবের উদ্দেশ্যে আমরা হবিঃ সমর্পণ পূর্বক পরিচরণ করছি। (এরপর–মহতী আপঃ যখন বিশ্বকে গর্ভে ধারণ করেছিল এবং যিনি আপঃ অর্থাৎ জলকে ইত্যাদি মন্ত্র ও পাঠ করা উচিত)।
৮। বিদ্বান্ পুরুষ সেই পরমাত্মাকে আপন বুদ্ধিতেই প্রতিষ্ঠিত দর্শন করে থাকে। সেই পরমাত্মায় এই সর্ব সত্যপ্রপঞ্চ সংকুচিত হয়ে সমানা হয়ে যায়। সেই পরমাত্ম পুরুষে এই চরাচর জগৎ গতিশীল হয়ে থাকে। ইনিই সকলের মধ্যে ওতপ্রোত হয়ে থাকেন। প্রজাগণের মধ্যে তিনি ব্যাপ্ত হয়ে আছেন।
৯। ওরে! কোন বেদবিৎ বিদ্বান্ যদি সেই অমৃতস্বরূপ পরমাত্মাকে তত্ত্বতঃ (বা শাশ্বত) বলে থাকে তো তা-ই সত্য; যে তেজোধাম পরমাত্মা বুদ্ধির অগোচর। এই পরমাত্মার তিনি ভাগ বা পদ তো গুহাতে লুপ্ত হয়েই স্থিত আছে; (একভাগ মাত্র হলো–এই প্রপঞ্চজাত)। তার সেই তিন গুপ্ত ভাগ বা পদকে (সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় কিংবা ঋক্-যজুঃ-সাম কিংবা ভূত ভবিষ্য-বর্তমানকে) যে জ্ঞাত হয়, সে আপন অজ্ঞানী পিতারও পিতা হবে। (অর্থাৎ তাঁর সেই অজ্ঞাত স্থানত্রয় সম্পর্কে জ্ঞাত জন ব্রহ্মারও পিতা পরমাত্মা)।
১০। সে আমাদের বন্ধু। সে-ই আমাদের উৎপাদন করণশালী। সে আমাদের নির্মাণশীল। সে সমস্ত তেজঃ ও লোককে জ্ঞাতশালী। যে পরমাত্মপুরুষের মধ্যেই দেবতাগণ অমৃতকে ভোগ করে তৃতীয় স্বর্গে স্বেচ্ছায় বিহার করে।
১১। সেই পরমাত্মা ব্রহ্মরূপ সকল প্রাণীকে লঙঘন করে, ব্রহ্মরূপ সর্বলোককে লঙ্ঘন করে এবং সম্পূর্ণ, ব্রহ্মরূপ দিক্-বিদিককে লঙ্ঘন করে বিদ্যমান। ঋত অর্থাৎ সত্য বা যজ্ঞের পূর্বে উৎপন্না বাক্ বা প্রকৃতিকেই অধিষ্ঠিত করে সেই পরমাত্মা স্বয়ং স্বয়ংয়েই (নিজে নিজেতেই) সম্যক প্রবিষ্ট হয়ে রয়েছেন।
১২। সেই দেব অতিশীঘ্রতায় এই দ্যাবাপৃথিবীকে লঙঘন করে। এই সকল লোককে লঙ্ঘন করে, সকল দিককে লঙ্ঘন করে এবং স্বর্গকেও অতিক্রম করে স্থিত আছে। ঋতকে (অর্থাৎ ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতিকে) বিস্তৃত করে সূত্রকে, উচ্ছেদিত করে তাতে সেই প্রপঞ্চ ব্রহ্মকে দর্শন করেছিল (বা অনুধ্যান করেছিল)। সে স্বয়ংই সেই (প্রপঞ্চ) হয়ে গিয়েছে। সে-ই ছিল হিরণ্যগর্ভ৷
১৩। যজ্ঞগৃহের পতি (অধিস্বামী), অদ্ভুত, ইন্দ্রের প্রিয় এবং সেবকগণের দ্বারা কামনা করার যোগ্য অগ্নির নিকট হতে অন্ন ও ধনের দান এবং মেধা যাচিত করছি। তার নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি৷
১৪। যে পরম পবিত্র মেধাকে দেবগণ ও পিতৃপুরুষগণ উপাসনা (বা প্রার্থনা) করে থাকে, হে অগ্নি! আজ তুমি সেই মেধার দ্বারা আমাকেও মেধাবী করো। তোমার উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি৷
১৫। বরুণ আমাকে মেধা প্রদান করুক। অগ্নি আমাকে মেধা প্রদান করুক এবং প্রজাপতিও আমাকে মেধা প্রদান করুক। ইন্দ্র ও বায়ু আমাকে মেধা প্রদান করুক। ধাতাও আমাকে মেধাই প্রদান করুক। সকলের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি।
১৬। আমার এই মেধারূপী শ্রীকে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় দুজনেই আস্বাদিত (ভোগ) করুক। দেবগণ এই সর্বোত্তমা শ্রী ও মেধাকেই আমাতে স্থাপিত করুক। হে মেধা! সেই দেবস্বরূপিণী ঐশ্বর্যাধিষ্ঠাত্রী তোমার উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই পূর্ণহুতি প্রদান করছি। (প্রসন্না হও)।