যোধপুর পার্কে নিজেদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মাতালের মতো টলছে সোমনাথ ব্যানার্জি। হাতে তার দুখানা উপহারের শাড়ি এবং পকেটে সেই চিঠিটা–যা তাকে সমস্ত অর্থনৈতিক অপমান থেকে মুক্তি দিয়েছে। সোমনাথ এখন আর চাকরির ভিখিরি নয়—সে এখন সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। প্রতি মাসে একটা অর্ডার থেকেই হাজার টাকা রোজগার করবে সে। কারুর কাছে আর ভিখিরি থাকতে হবে না সোমনাথকে। তপতীকে জানিয়ে দেবে সে আর কাউকে ভয় করে না।
কমলা বউদিকেই প্রথম খবরটা দিলো সোমনাথ। তারপর শাড়িটা এগিয়ে দিলো। কমলা বউদি বুঝলেন, সোমনাথ আজ বড় একটা কিছু করেছে। “তুমি আজ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছ তাহলে?” কমলা বউদি গভীর আনন্দের সঙ্গে বললেন।
আনন্দে আত্মহারা হয়ে বউদি এবার দেওরের দেওয়া প্রথম উপহারের প্যাকেট খুলে ফেললেন। বললেন, “বাঃ।” সোমনাথকে খুশী করার জন্যে বউদি এখনই সেই শাড়ি পরতে গেলেন। বললেন, “এই শাড়ি পরেই জন্মদিনের পায়েস পরিবেশন করবো।”
বউদি পাশের ঘরে যেতে-না-যেতেই সোমনাথ কাতরভাবে ডাকলো, “বউদি!”
“কী হলো তোমার? অমনভাবে চিৎকার করছো কেন?” বউদি ফিরে এসে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
করুণভাবে সোমনাথ বললো, “বউদি, ওই কাপড়টা আপনি পরবেন না।”
“কেন? কি হলো?” কমলা কিছুই বুঝতে পারছেন না।
“ওতে অনেক নোংরা বউদি?” আমতা-আমতা করতে লাগলো সোমনাথ। সকালে যখন কিনেছিলাম তখনও বেশ পরিষ্কার ছিল। এই সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎ নোংরা হয়ে গেলো। ওতে অনেকরকম ময়লা আছে বউদি-আপনি পরবেন না!”
দেবরের এমন কথা বলার ভঙ্গী কমলা বউদি কোনোদিন দেখেননি। বললেন, “হাত থেকে নোংরার মধ্যে পড়েছিল বুঝি।”
সোমনাথ আবার বললো, “আপনাকে তো বারণ করলাম ঐ কাপড় পরতে।” কমলা অগত্যা কাপড়টা কাচবার জন্যে সরিয়ে রাখলেন।
আরও রাত হয়েছে। অভিজিৎ আসানসোল ফ্যাকটরিতে গিয়েছে—আজ ফিরবে না। সোমনাথ খেতে আসছে না দেখে বলল ওকে ডাকবার জন্যে ঘরে ঢুকে পড়েছিল। ভেবেছিল, সেই সময় অভিনন্দন জানিয়ে নিজের কাপড়টাও চেয়ে নেবে।
কিন্তু মুখ শুকনো করে সে সোমনাথের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। দিদির কাছে দ্রুত এসে উদ্বেগের সঙ্গে ফিসফিস করে সে বললো, “দিদি কী ব্যাপার! সোম বালিশে মুখ গুঁজে লুকিয়ে লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।”
কমলার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। বললেন, “নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ওর বোধহয় মায়ের কথা মনে পড়ে গেছে।” বউদি কি যেন ভাবলেন, তারপর বললেন, “ওকে লজ্জা দিও না—ওকে কাঁদতে দাও।”
—————