৩২. দ্য এলডার ওয়্যান্ড

৩২. দ্য এলডার ওয়্যান্ড

সব কিছু কি শেষ হয়ে গেছে, তাহলে এখনো কেন যুদ্ধ চলছে, থামছে না কেন। কেন ক্যাসল নিস্তব্ধ, প্রতিটি যোদ্ধা তাদের হাতের যাদুদণ্ড নামিয়ে রেখেছে? হ্যারির মন বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে, নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অসম্ভব বিষয়টি গ্রহণ করতে পারছে না। কারণ ফ্রেড উইসলি মরতে পারে না। তার চিন্ত রি সব প্রমাণ নিহিত আছে

এবং তখনই একটি শরীর দেয়ালের ভাঙা ছিদ্রটি দিয়ে স্কুলের ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করল এবং অন্ধকারের ভেতর থেকে ওদের দিকে কার্স ছুটে আসতে থাকল। একটুর জন্য মাথায় না লেগে, পেছনের দেয়ালে গিয়ে লাগতে থাকল।

নিচু হও! রাতের আধার ভেদ করে আরো কার্স ছুটে আসতে থাকলে হ্যারি চিৎকার করে সবাইকে বলল। রন এবং হ্যারি দুজনে মিলে হারমিয়নকে ধরে টান দিয়ে মেঝের উপর তুলল। কিন্তু পার্সি ফ্রেডের শরীরটা আগলে বসে থাকল যাতে আর কোনো আঘাত এসে তার গায়ে না লাগে। হ্যারি চিৎকার করে বলল, পার্সি! চলো, আমাদের দ্রুত বের হতে হবে। কিন্তু পার্সি মাথা নাড়ল।

পার্সি! হ্যারি দেখল রনের ধুলিমাখা মুখ দিয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। সে তার ভাইয়ের কাঁধটা ধরে রেখেছে এবং টেনে তুলতে চেষ্টা করছে। কিন্তু পার্সি নড়ছে না। পার্সি, তুমি ওর ব্যাপারে কিছু করতে পারবে না, আমরা সবাই

হারমিয়ন চিৎকার করে উঠল। হ্যারি তার চোখ অনুসরণ করে তাকালো। কেন চিৎকার দিয়েছে তা মুখে বলার কোনো প্রয়োজন নেই। একটি ছোটখাটো প্রাইভেট কারের মত বিশাল সাইজের মাকড়শা দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে ঢুকতে চেষ্টা করছে। অ্যারাগগের একটি, যুদ্ধ করতে নেমে এসেছে।

রন এবং হ্যারি একই সঙ্গে চিৎকার করে উঠল; ওদের ছুঁড়ে দেয়া স্পেল দুটির ঘষা লাগল। এবং মাকড়শাটির গায়ে স্পেল লাগায় এটি ধাক্কা খেয়ে পেছনে চলে গেল অন্ধকারের মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়ার সময় এটির পা ঝাঁকি খেতে দেখা গেল।

ওটি আরো সঙ্গী নিয়ে আসবে! হ্যারি অন্যদের উদ্দেশে বলল। হ্যারি দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে ক্যাসেলের একপ্রান্তের দিকে দেখল। বেশ কয়েকটি মাকড়শা ক্যাসেলের দেয়াল বেয়ে উঠে আসছে। পাশের নিষিদ্ধ জঙ্গল থেকে ওগুলো উঠে আসছে, যে জঙ্গলে ডেথ-ইটাররা ঢুকে গেছে। হ্যারি উঠতে থাকা সবচেয়ে উপরের মাকড়শাটির দিকে কার্স ছুঁড়ে দিল। গায়ে লেগে মাকড়শাটি বাকি উঠতে থাকা বাকিগুলোর উপর পড়ল। ফলে ওরা বিল্ডিং-এর গা থেকে হুড়মুড় করে পড়ে গেল এবং সেগুলো পেছন দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। ঠিক তখনই হ্যারির দিকে স্পেল ছুটে এসে মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। এত কাছে দিয়ে গেল যে হ্যারি বাতাস কেটে যাওয়ার শব্দ পেল।

চলো, এখনই!

হারমিয়ন এবং রনকে সামনে ঠেলে দিয়ে হ্যারি নিচু হয়ে শক্ত করে বাহুর নিচে ধরল। পার্সি বুঝতে পারল হ্যারি কি করতে চাচ্ছে। সে ফ্রেডের শরীরটা ছেড়ে দিয়ে হ্যারিকে তুলতে সাহায্য করল। দুজনে মিলে নিচু হয়ে কার্সগুলোকে এড়িয়ে ফ্রেডকে প্রায় মাটির সঙ্গে ঘেষে টেনে নিতে থাকল।

এখানে, হ্যারি বলল। ওরা একটি পরিস্কার জায়গায় ফ্রেডকে নামালো যেখানে আগে থেকেই একটি আর্মার রাখা আছে। হ্যারি এক পলকের বেশি ফেডের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না। সে যখন বুঝল যে ফ্রেডের দেহটা ভাল করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে তখন সে রন এবং হারমিয়নের পেছনে ছুটল। ম্যালফয় এবং গয়েল অদৃশ্য হয়ে গেছে। কিন্তু করিডোরের শেষ প্রান্তে বালু পাথরে ভরে উঠেছে। জানালার কাঁচ অনেক আগেই ভেঙে গেছে। সে দেখল অনেক লোক সামনে পেছনে দৌড়াচ্ছে। শত্রু না মিত্র তা বুঝতে পারল না। কোণার দিকে ঘুরতেই পার্সি ষাড়ের মত চিৎকার করে উঠল, রু-কু-ড! এবং লাফিয়ে লম্বা লোকটির দিকে ধেয়ে গেল। লোকটি কয়েকজন ছাত্রকে তাড়া করছে।

হ্যারি, এখানে! হারমিয়ন চিৎকার করে বলল।

হারমিয়ন রনকে টেনে একটি ভারি পর্দার পেছনে নিয়ে গেল। মনে হল যেন। ওরা ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে। মুহূর্তের জন্য হ্যারির মনে পাগলের মত চিন্তা হল ওরা কি আবার আলিঙ্গন করছে। কিন্তু পর মুহূর্তেই বুঝতে পারল যে হারমিয়ন রনকে বাধা দিয়ে পার্সির পেছনে ছোটা থেকে বিরত করতে চাইছে।

আমার কথা শোনো! কথা শোনো রন!

আমি ওকে সাহায্য করব…আমি ডেথ-ইটারকে হত্যা করতে চাই।

তার মুখটা বিকৃত হয়ে আছে। ধোয়া এবং ধুলোর কারণে মুখের চেহারা পাল্টে গেছে। সে রাগে এবং দুঃখে থরথর করে কাঁপছে। —

রন, একমাত্র আমরাই এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পারি। প্লিজ রন আমাদের ওই সাপটিকে দরকার; সাপটিকে আমাদের হত্যা করতে হবে! হারমিয়ন বলল।

কিন্তু হ্যারি জানে রন কেমন বোধ করছে অন্য একটি হরক্রুক্স খোঁজার মধ্যে ওর প্রতিশোধের আগুন নিভবে না। সেও এখন যুদ্ধ করতে চায়। ওদের শাস্তি দিতে চায়, যারা ফ্রেডকে হত্যা করেছে। আর সে অন্য উইসলিদের খুঁজে বের করতে চায়। সর্বপোরি নিশ্চিত হতে চায় যে জিনি কোনো ঝামেলায়–কিন্তু এ কথা চিন্তায় আনতেও তার ভয় করে

আমরা অবশ্যই ফাঁইট করবো! হারমিয়ন বলল। সাপটির কাছে পৌঁছতে হলে আমাদের ফাঁইট করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে চোখের বাইরে যেও না আমরাই একমাত্র এ অবস্থার অবসান ঘটাতে পারি!

হারমিয়ন কাঁদছে। সে তার জামার ছেঁড়া হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছল। কিন্তু সে ডুকরে ধাক্কা দিয়ে শ্বাস নিয়ে কথা বলছে। শক্ত করে রনকে ধরে রেখেছে। এরপর হ্যারির দিকে ফিরল।

তুমি খুঁজে বের করে ভোল্ডেমর্ট কোথায়, কারণ সাপটি আছে ভোল্টেমর্টের সঙ্গে। তাড়াতাড়ি করো, হ্যারি! ওর ভেতরে প্রবেশ করো!

কাজটি খুবই সহজ, কারণ কয়েক ঘণ্টা ধরে হ্যারির স্কারটিতে জ্বালাপোড়া করছিল। ভোল্ডেমর্টের চিন্তার ভেতর প্রবেশের জন্য টানছিল। সে হারমিয়নের কথামতো চোখ বন্ধ করল। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার, ফেটে পড়ার শব্দ, যুদ্ধের চিৎকার চেঁচামেচি সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মনে হল শব্দগুলো অনেক দূরে চলে গেছে, এবং সে দাঁড়িয়ে আছে অনেক অনেক দূরে…

সে দাঁড়িয়ে আছে একটি ফাঁকা কিন্তু বিস্ময়করভাবে পরিচিত রুমের মাঝখানে। রুমটির দেয়ালের সঙ্গে কাগজ ছেঁড়া, এবং শুধু একটি জানালা ছাড়া বাকি সবগুলো বন্ধ। খোলা জানালা দিয়ে দূরের ক্যাসলে জ্বলতে থাকা আলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অন্ধকার রুমটিতে শুধু একটি তেলের বাতি টিমটিম করে জ্বলছে।

সে আঙুলগুলো নিজের হাতের ভেতর ঘুরাচ্ছে। সেটা দেখছে। তার চিন্তা ক্যাসলের রুমের ভেতর। চেম্বারের মত সেই গোপন রুমটি সেই একমাত্র জানে… এই রূপ পেতে হলে বুদ্ধিমান, চালাক এবং আবিষ্কারের মেধা থাকতে হবে… সে নিশ্চিত যে ওই ছোকরা রুমটির ভেতর ডায়াডেম খুঁজে পাবে না….অবশ্য ডাম্বলডোরের এই পুতুলটি সে যা ভেবেছিল তারচেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর… অনেক দূর…।

মাই লর্ড, একটি কণ্ঠ বলল। হতাশ এবং ভাঙা গলা। সে সেদিকে ঘুরল। লুসিয়াস ম্যালফয় অন্ধকারে এক কোণে বসে আছে। ছোকরাটি হাত থেকে পালিয়ে যাবার পর তাকে শাস্তি দেয়ার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তার একটি চোখ বন্ধ হয়ে আছে, চোখটি ফুলে আছে। মাই লর্ড… প্লিজ… আমার ছেলেটি…।

যদি তোমার ছেলে মারা গিয়ে থাকে লুসিয়াস, সেটার জন্য আমি দায়ী না। সে স্নিথারিনের অন্য ছেলেদের মত আমার কাছে এসে দলে যোগ দেয়নি। হয়তো সে বারি পটারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে?

না–কখনোই না! ফিসফিস করে ম্যালফয় বলল।

 তুমি আশা করতে পারো যে যোগ দেয়নি।

আপনি..আপনি শঙ্কিত নন মাই লর্ড যে হ্যারি আপনার হাতে ছাড়া অন্য কারো হাতে মরে যেতে পারে? ম্যালফয় বলল। তার কণ্ঠ কেঁপে উঠল। এটা হতে পারে না…আমাকে ক্ষমা করবেন মাই লর্ড… যুদ্ধ বন্ধ করাটা ভালো হতো না, যাতে আপনি নিজে সেখানে ঢুকে হ্যারি পটারকে চাইতে পারেন?

ভনিতা করো না লুসিয়াস, তুমি যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলছ যাতে তুমি তোমার ছেলেকে খুঁজে পাও। আমার পটারকে খুঁজে বের করার কোনো দরকার নেই, রাত শেষ হওয়ার আগেই পটার নিজেই আমাকে খুঁজতে আসবে।

ভোল্ডেমর্ট আবার চোখ নামিয়ে তার আঙ্গুলের ফাঁকে ধরা যাদুদণ্ডের দিকে তাকালো। এটি তাকে অসুবিধা করছে…. এবং যেসব জিনিস লর্ড ভোল্ডেমর্টকে

অসুবিধা করে সেগুলোকে একবার ঝালাই করে নিতে হয়….

যাও এবং স্নেইপকে নিয়ে আসো!

স্নেইপ..মা-মাই লর্ড?

হ্যাঁ স্নেইপ, এখন আমার তাকে প্রয়োজন। তার কাছ থেকে একটি কাজ করিয়ে নিতে হবে, যাও!

আতঙ্কিত এবং অন্ধকারে হোঁচট খাওয়া ম্যালফয় রুম থেকে বের হয়ে গেল। ভোল্ডেমর্ট সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সে আঙ্গুলের ফাঁকে যাদুদণ্ডটি ঘোরাচ্ছে। সেটির দিকে তাকিয়ে আছে।

একমাত্র উপায় হল নাগিনী, সে বিড়বিড় করে বলল এবং ঘুরে তাকালো। ওই তো মোটা বিশাল সাপটি, এখন ঝুলে আছে শূন্যে। যাদুর মাধ্যমে নির্দিষ্ট জায়গার ভেতর আটকে রাখার কারণে সে ফুশছে এবং দুলছে।

একটি নিঃশ্বাস টেনে হ্যারি আবার নিজের জায়গায় ফিরে এল এবং ধীরে ধীরে চোখ খুলল। ঠিক একই সময় তার কানে চেঁচামেচি, বিকট শব্দ এবং ধুমধাম শব্দ ঢুকল।

সে এখন শ্ৰিকিং স্যাকে আছে। সাপটিও তার সঙ্গে। সেটিকে কিছু যাদুর প্রোটেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। সে এই মাত্র লুসিয়াস ম্যালফয়কে পাঠিয়েছে স্নেইপকে খুঁজতে।

ভোল্ডেমর্ট আরাম কেদারায় বসে আছে? ব্যরমিয় রাগের সুরে বলল। এমনকি সে নিজে যুদ্ধে যোগ দেয়নি?

হ্যারি বলল, সে চিন্তা করেছে তার নিজের যোগ দেয়া দরকার পড়বে না। সে চিন্তা করছে আমি নিজেই তার ওখানে যারে।

কিন্তু কেন?

সে জানে যে আমি হরক্রুক্সটি খুঁজে বেড়াচ্ছি। সে নাগিনীকে নিজের কাছাকাছি রেখেছে–অবশ্যই আমি ওখানে যাবো ওটার কাছে-

ঠিক, রন কাধ ঝাঁকি দিয়ে বলল। তাহলে তুমি যেতে না পারে সেটাই সে আশা করছে, এটাই সে কি চায়। তুমি এখানে থাকো, এবং হারমিয়নের দিকে নজর রাখো, আমি সেখানে যাবো এবং কাজটি করবো-

হ্যারি ওকে বাধা দিল।

তুমি এখানে থাকো, আমি অদৃশ্য আলখাল্লা পরে যাবো। এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসবো-

না, হারমিয়ন বলল। যদি আমি আলখাল্লা নিয়ে যাই সেটা হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ এবং-

এমন চিন্তা বাদ দাও, রন ধমকের সুরে হারমিয়নকে বলল।

হারমিয়ন কেবল বলতে শুরু করেছে, রন, আমি তোমাদের মতই সক্ষম- ঠিক তখনই সিঁড়ির কাছের ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানকার ভারি পর্দাটি সপাট করে খুলে গেল।

পটার!

মুখোশ পরিহিত দুটি ডেথ-ইটার দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ওদের যাদুদণ্ড দুটি পুরোপুরি তোলার আগেই হারমিয়ন চিৎকার করে বলল,গি-সও।

যেখানে ওরা দাঁড়িয়েছিল সেখান থেকে সিঁড়ি চোখের পলকে নেমে গেল। রন, হারমিয়ন এবং হ্যারি তাতে করে নেমে গেল। এত দ্রুত যে ডেথ-ইটারদের ছুঁড়ে দেয়া স্টান মাথার অনেক উপর দিয়ে চলে গেল। ভারী পর্দা ভেদ করে ওদের স্পেল বিপরীত দিকের দেয়ালে গিয়ে পড়ল।

ডুরো! হারমিয়ন বলল। যাদুদণ্ডটি ভারি পর্দার দিকে তাক করা। ভয়ানক মড়মড় শব্দ শোনা গেল। পলকের ভেতর ভারি পর্দাটি পাথরের মত হয়ে গেল এবং ডেথ-ইটার দুটো তার সঙ্গে থেতলে গেল।

সরে আসো! রন চিৎকার করে বলল। সে, হ্যারি এবং হারমিয়ন একেবারে দরোজার সঙ্গে লেগে রইল। মুহূর্তের মধ্যে একদল অশ্বারোহী বিদ্যুত গতিতে ওদের পাশ দিয়ে চলে গেল। পেছনে পেছনে ওদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। তিনি ওদেরকে দেখতে পাননি। তার চুলগুলো অনেকটা নিচে নেমে এসেছে এবং তার মুখের উপর ক্ষত দাগ দেখা গেল। তিনি কোণা পর্যন্ত যেতেই ওরা তার কণ্ঠে চিৎকার করে বলতে শুনল, চার্জ!

হারমিয়ন বলল, হ্যারি, তুমি অদৃশ্য আলখাল্লাটি গায়ে দাও! আমাদের নিয়ে চিন্তা করো না

– কিন্তু হ্যারি তিনজনের উপর দিয়েই আলখাল্লাটি চড়িয়ে দিল। ওদের বের হয়ে থাকা পা ধুলো এবং পাথরের ভেতর দিয়ে কেউ দেখবে বলে মনে হল না।

ওরা দৌড়ে অন্য একটি সিঁড়ি দিয়ে একটি করিডোরে নামল এবং দেখল একদল যযাদ্ধার ভেতরে এসে পড়েছে। যোদ্ধাদের দু পাশের পোর্টেইট গুলো সচল হয়ে উঠেছে, দেয়ালের সঙ্গে যেন লেপটে আছে। ছবিগুলো যোদ্ধাদের বুদ্ধি দিচ্ছে এবং সাহস যোগাচ্ছে। আর মুখোশ পরা এবং মুখোশ ছাড়া ডেথ-ইটারগুলো ছাত্রদের এবং শিক্ষকদের সঙ্গে লড়াই করছে। ডিন নিজের একটি যাদুদণ্ড যোগাড় করেছে। সে তার যাদুদণ্ড দিয়ে দোহোলভের মুখোমুখি লড়ছে, পার্বতী লড়ছে ট্রাভার্সের বিরুদ্ধে। হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন একসঙ্গে যাদুদণ্ড তুলল, কিন্তু ওরা লড়াই করতে করতে এতটা ঘুরপাক করছে যে কার্স ছুঁড়ে দিলে নিজেদের যে কারো গায়ে লেগে যেতে পারে। ওরা গায়ে গা মিলিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকল। সুযোগের জন্য, কিন্তু হু-ই-ই-ই-ই করে একটি শব্দ হল। ওরা উপরের দিকে তাকাল। দেখল উপর থেকে পিভস নেমে আসছে। শ্লোরগালুফের খোসা ছড়িয়ে দিচ্ছে ডেথ-ইটারদের উপর। সঙ্গে সঙ্গে ডেথ-ইটারদের মাথায় সেগুলো পেচিয়ে রইল গাছের শেকড়ের মত। দেখলে মনে হচ্ছে যেন মোটা মোটা কেচো।

আর্ঘ!

কতগুলো শেকড় এসে আলখাল্লার উপর রনের মাথা বরাবর পড়ল। মনে হল যেন উজ্জ্বল রঙের কিছু শেকড় শূন্যে ঝুলে আছে। রন সেগুলো ঝাঁকি দিয়ে আলগা করতে চেষ্টা করল।

কেউ একজন অদৃশ্য হয়ে আছে! একটি ডেথ-ইটার ওদের দিকে দেখিয়ে বলল।

ডিন সামান্য সময়ের জন্য তাকে ধ্বংস করাটা বাধা দিয়ে রেখেছিল। দোহোলভ প্রতিশোধের জন্য মাত্র প্রস্তুতি নিয়েছে ঠিক এমন সময় তাকে বডি বাইন্ড কার্স করল।

চলো যাই! হ্যারি চিৎকার করে বলল। রন হ্যারি এবং হারমিয়ন নিজেদের চারপাশে শক্ত করে আলখাল্লা ধরে রাখল, মাথা নিচু করে যুদ্ধরতদের ভেতর দিয়ে পাথরের সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল।

আমি ড্র্যাকো ম্যালফয়, তোমাদের দলের লোক!

ড্র্যাকো উপরের জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে একটি ডেথ-ইটারের কাছে আবেদন করছে। যাবার সময় হ্যারি ডেথ-ইটারটিকে স্টান করল। ড্র্যাকো চারদিকে ঘুরে তাকে কে রক্ষা করলো দেখতে চেষ্টা করল। রন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। সে ডেথ-ইটারটির উপর গিয়ে পড়ল। তার মুখ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে। সে অবাক হয়ে গেছে।

এই দ্বিতীয়বারের মত আজ রাতে তোকে আমরা রক্ষা করলাম, দুমুখো জারজ! রন চিৎকার করে বলল।

সামনে এগোতেই দেখা গেল করিডোর এবং রুম জুড়ে সম্মুখ লড়াই চলছে। হ্যারি দেখল সর্বত্র ডেথ-ইটার। ইয়াক্সলি সামনের দরোজার কাছে ফ্লিটউইকের সঙ্গে লড়ছে। তার পাশেই একটি মুখোশ পরা ডেথ-ইটার কিংসলের সঙ্গে লড়ছে। ছাত্ররা চারদিকে ছোটাছুটি করছে, কেউ কেউ আহত বন্ধুদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হ্যারি সরাসরি মুখোশধারী ডেথ-ইটারের দিকে স্পেল ছুঁড়ে দিল। কিন্তু সেটা মিস হল। অল্পের জন্য নেভিলের গায়ে লাগল না। নেভিল হাতভরে লম্বা বিষধর কিছু টেনটাকুলা নিয়ে এসেছে। সেগুলো কাছের ডেথ-ইটারের গা পেচিয়ে ধরেছে।

হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন দ্রুত পাথরের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকল। দুপাশের কাঁচগুলো ভেঙে গেছে। স্রিথারিনের সময় মাপার আওয়ারগ্লাসটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, তার উপর দিয়ে চলাচলকারীদের পা পিছলে যাচ্ছে। ওরা নিচে এসে পৌঁছতেই দুটি শরীর ব্যালকনির মাথা থেকে ধপাস করে নিচে পড়ল। এবং হ্যারি দেখল একটি চারপায়ের অস্পষ্টজম্ভ দ্রুত এসে আছড়ে পড়া শরীরের উপর দাঁত বসিয়ে দিল।

না! হারমিয়ন তীব্র কণ্ঠে বলল। ওর যাদুদণ্ড থেকে কান ফাটানো শব্দ হল এবং ফেনরির গ্রেব্যাক ল্যাভেনডার ব্রাউনের দুর্বল শরীরের উপর থেকে ছিটকে পড়ল। সে গিয়ে পাথরের রেলিং এর উপর ধাক্কা খেল এবং পায়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল। ঠিক তখনই একটি উজ্জ্বল সাদা আলো জ্বলে উঠল এবং ক্রিস্টাল বল এসে তার মাথার উপর পড়ল। সে মেঝের সঙ্গে থেতলে গেল এবং স্থির হয়ে গেল।

আমার কাছে আরো আছে? প্রফেসর ট্রোলোনি রেলিং এর উপর থেকে বললেন। আরো আছে তাদের জন্য যারা ওদেরকে চায়! এখানে-

এবং তিনি টেনিস বল সার্ভ করার মত করে আরো একটি ক্রিষ্টস্টালের বল তার ব্যাগ থেকে বের করে ছুঁড়ে দিলেন। যাদুদণ্ডটি তুলে শুন্যে ঘোরালেন। ফলে ক্রিস্টালের বলটি ভোভো করে হলের ভেতর ঘুরতে থাকল। এবং জানালা ভেঙে বের হয়ে গেল। ঠিক একই সময় কাঠের ভারি সামনের দরোজা শব্দ করে খুলে গেল। আরো অনেকগুলো বিশালাকৃতির মাকড়শা ঘরের ভেতর প্রবেশ করল।

বাতাসে চিৎকারের আওয়াজ। ডেথ-ইটার এবং হোগার্টের সবাই একইভাবে বিক্ষিপ্ত ছুটাছুটি করতে থাকল। লাল এবং সবুজ বিদ্যুত গতির আলো বিশালাকৃতির প্রাণীগুলোর দিকে ছুটে যাচ্ছে। ওগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে এবং আরো ভয়ানক হয়ে উঠছে।

আমরা বের হবো কীভাবে? সব শোরগোল ছাপিয়ে রন উচ্চস্বরে বলল। কিন্তু হ্যারি অথবা হারমিয়ন উত্তর দেয়ার আগেই ওরা ধাক্কা খেয়ে পাশে সরে গেল। হ্যাগ্রিড ঝড়ের গতিতে মেঝেতে এসে নামল। সে তার গোলাপি ফুলের মতো ছাতাটি মাথার উপর ধরে রেখেছে।

ওদেরকে আঘাত করো না! ওদেরকে আঘাত করো না! সে চিৎকার করে বলল।

হ্যাগ্রিড! না!

হ্যারি সবকিছু ভুলে গেল। সে অদৃশ্য আলখাল্লার নিচ থেকে দৌড়ে বের হল। সারা ঘরের কার্স এবং ইমিনেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিচু হয়ে দৌড়ালো।

হ্যাগ্রিড, ফিরে এসো!

কিন্তু সে অর্ধেক পথও তার দিকে গিয়ে পৌঁছতে পারেনি, দেখল হ্যাগ্রিড মাকড়শার ভেতর ডুবে গেছে। চারদিক দিয়ে মাকড়শাগুলো ভয়ানকভাবে হ্যাগ্রিডের উপর গিয়ে পড়ছে। স্পেল গায়ে লেগে পিছিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু হ্যাগ্রিড ওগুলোর ভেতর ডুবে গেছে।

হ্যাগ্রিড!

হ্যারি শুনতে পেল কেউ একজন তার নিজের নাম ধরে ডাকছে। শত্রু না বন্ধু তা জানা নেই। সে অন্ধকারে গ্রাউন্ডের মাঝখানের দিকে দৌড় দিল। মাকড়শাগুলো শিকার নিয়ে দৌড়ে ছোটাছুটি করছে, হ্যাগ্রিডের কোনো অবশিষ্টাংশই হ্যারি দেখতে পেল না।

হ্যাগ্রিড!

হ্যারির মনে হল সে হয়তো মাকড়শার ভীড়ে হ্যাগ্রিডের মোটা হাতটা উঁচু করতে দেখবে। কিন্তু সে যখন মাকড়শাগুলোর পেছনে ছুটতে শুরু করেছে ঠিক তখনই তার সামনে অন্ধকার থেকে একটি মনুমেন্টের মত পা এসে পড়ল। এবং সে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তা থরথর করে কেঁপে উঠল। সে চোখ তুলে তাকালো। একটি বিশাল শরীর, অন্তত কুড়ি ফুট লম্বা। উপরের অংশটি অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না। ক্যাসলের দরোজা দিয়ে আলো পড়েছে সেটির পশমী পায়ের। নিচের অংশে। এটি ধীরে ধীরে চলার সময় উপরের তলার জানালার উপর ঘুষি। দিল। সঙ্গে সঙ্গে জানালার কাঁচগুলো ভেঙে নিচে পড়তে থাকল। হ্যারি দৌড়ে দরোজার পাশে গিয়ে আশ্রয় নিল।

ওহ্ মাই- হারমিয়ন চিৎকার করে বলল। সে এবং রন দৌড়ে এসে হ্যারির সঙ্গে যোগ দিল এবং উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল এই বিশাল শরীরটি উপরের তলায় জানালা দিয়ে মানুষ ধরতে চেষ্টা করছে।

না! রন চিৎকার করে বলে উঠল। হারমিয়ন যাদুদণ্ডটি উপরের দিকে তুলতেই সে হারমিয়নের হাতটা টেনে ধরল। ওকে স্টান করলে অর্ধেক ক্যাসল ধ্বংস হয়ে যাবে।

হ্যাগার?

গ্রোপ ক্যাসলের এক পাশ দিয়ে টলতে টলতে এল। এখন হ্যারির মনে পড়ল গ্রোপ ছিল ছোটখাটো একটা দৈত্য। বিশাল দৈত্যটি উপরের তলার মানুষদেরকে হত্যা করতে চেষ্টা করছে এবং ভয়ানকভাবে গর্জন করে উঠছে। দৈত্যটি হেঁটে আকারে ছোট গ্রোপের কাছে যাওয়ার সময় পাথরের সিঁড়ি কাঁপতে থাকল। গ্ৰোপের মুখটি হা হয়ে আছে, তার মুখের ভেতর দিয়ে আধভাঙা হলুদ দাঁত দেখা যাচ্ছে। তারপর তারা একটি আরেকটির দিকে সিংহের শক্তি নিয়ে এগিয়ে গেল।

দৌড়াও! হ্যারি গর্জন করে বলল। চারদিকে তারস্বরে চিৎকার, বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। হ্যারি হারমিয়নের হাত ধরল। ওরা দৌড়ে নিচে নেমে এল। রনও অনুসরণ করল। হ্যারি হ্যাগ্রিডকে বাঁচানোর আশা ছেড়ে দেয়নি। ওরা এত দ্রুত দৌড় দিল যে এক দৌড়ে অর্ধেক পথ পার হল এবং তারপর ওদের থামতে হল।

ওদের চারপাশে বাতাস বরফের মত জমে গেল। হ্যারির দম আটকে গেছে বুকের ভেতরে। অন্ধকারের ভেতর কিছু নড়াচড়া করছে। কালো শরীরগুলো সব ক্যাসলের দিকে দৌড়াচ্ছে। ওদের মাথাগুলো ঢাকা এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কাঁপুনির শব্দ হচ্ছে ….

রন এবং হারমিয়ন হ্যারির পাশে। ওদের পেছনে যে যুদ্ধের শব্দ বেড়ে চলছিল তা হঠাৎ যেন থেমে গেল। কারণ এই নিস্তব্ধতা একমাত্র ডেমেনটররাই আনতে পারে…।

হ্যারি চলে আসো!, হারমিয়নের কণ্ঠ শোনা গেল। মনে হল অনেক দূর থেকে। প্যাট্রোনাস, হ্যারি চলে আসো!

হ্যারি তার যাদুদণ্ডটি তুলে ধরল। কিন্তু একটি হতাশা তাকে চেপে ধরল : ফ্রেড মারা গেছে, হ্যাগ্রিড নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে, অথবা এতক্ষণে মারা গেছে। আরো কতজন এভাবে মৃত্যুবরণ করবে সে সম্পর্কে এখন কিছুই জানে না। মনে হল যেন নিজের আত্মাটা শরীর থেকে অর্ধেক বের হয়ে গেছে…

হ্যারি! চলে এসো! হারমিয়ন আবার বলল।

শতশত ডেমেনটর ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। ওরা হ্যারির স্থির হয়ে থাকা অবস্থাটার দিকেই এগিয়ে আসছে, যেন সামনে খাবার রয়েছে…

হ্যারি দেখল রনের প্যাট্রোনাস, ছোট কুকুরটি যাদুদণ্ড থেকে ছিটকে বের হল এবং দুর্বল হতে হতে নিঃশেষ হয়ে গেল। হারমিয়নের ভোঁদড়টি শুন্যে পাক খেল এবং নিঃশেষ হয়ে গেল। এবং হ্যারির নিজের যাদুদণ্ডটি হাতের ভেতর কাঁপছে, সে স্থির হয়ে যেন বিপদকে ডেকে আনছে, কোনো উত্তাপ নেই..

ঠিক তখনই একটি রুপালি খরগোশ, একটি বেজি এবং একটি শিয়াল হ্যারি, হারমিয়ন এবং রনের মাথার উপর দিয়ে ওদের অতিক্রম করে গেল। প্রাণীগুলো কাছে যাওয়ার আগেই ডেমেনটরগুলো পড়ে গিল। তিনজন মানুষ অন্ধকারের ভেতর থেকে বের হয়ে এসে ওদের পাশে দাঁড়ালো। তারা যাদুদণ্ড থেকে প্যাট্রোনাস কাস্ট করতে থাকল : ওরা হল লুনা, এরনি এবং সিমাস।

সব ঠিক আছে, লুনা এমনভাবে বলল যেন ওরা রুম অব রিকোয়ারমেন্টে ফিরে গেছে। আর স্পেলগুলো যেন এমনিতেই ডিএ তে প্র্যাকটিস করা হচ্ছিল। সব ঠিক আছে হ্যারি, আসো… ভাল খবরের কথা চিন্তা করো…

ভালো খবর? হ্যারি বলর। তার গলা ভেঙে আসলো।

আমরা এখনো এখানে আছি, লুনা ফিসফিস করে বলল। আমরা এখনো যুদ্ধ করছি। এখন চললো…

একটি রুপালি আলো ঝলকে উঠল, তারপর একটি আলো দপদপ করে জ্বলে উঠল। হ্যারি সর্বাত্মক চেষ্টার ফসল হিসাবে তার যাদুদণ্ডের আগা দিয়ে একটি মাদী হরিণ বের হয়ে এল। অশ্বের গতিতে সামনের দিকে ধেয়ে গেল এবং ডেমেনটরগুলো সব পরিস্কারভাবে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে রাতটা যেন অনেক হালকা হয়ে গেল। কিন্তু তখনো চারপাশ থেকে যুদ্ধের শব্দ কানে এসে ঢুকছে।

তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না, রন লুনা, এরনি এবং সিমাসের দিকে ফিরে বলল। তোমরা আমাদের জীবন রক্ষা-

একটি গর্জন করে, ভূমি কাঁপিয়ে অন্ধকারে জঙ্গলের ভেতর থেকে আরো একটি দৈত্য বের হয়ে আসল। হাতে ছোট কাঠির মত একটি লাঠি ধরে আছে যেটি হ্যারিদের যে কারো চেয়ে অনেক বড়।

রন! হ্যারি বলল। কিন্তু অন্যদেরকে তা না বললেও চলতো। সবাই বিক্ষিপ্তভাবে দৌড়ে সরে গেল। এবং এক সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যেই দৈত্যটির বিশাল পা এসে ঠিক ওরা যেখানে দাঁড়ানো ছিল সেখানে পড়ল। হ্যারি চারদিকে ঘুরে তাকালো। রন এবং হারমিয়ন তাকে অনুসরণ করে এসেছে। কিন্তু অন্য তিনজন দৌড়ে যুদ্ধে যোগ দিতে চলে গেছে।

চলো নাগালের বাইরে চলে যাই! রন বলল। দৈত্যটি হাতের লাঠিটা প্রচণ্ডভাবে ঘুরালো এবং চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকার রাতে চারদিকে প্রতিধ্বনি তুলল।

এটি হোমপিং উইলো! হ্যারি বলল। চলো!

হ্যারি মন থেকে এটিকে সরিয়ে রাখল। এটার ব্যাপারে ছোট একটা জায়গা মনের ভেতর রাখল যেখানে এখন তাকানোর সময় নেই। সে ফ্রেডকে নিয়ে চিন্তা করছে, হ্যাগ্রিডকে নিয়ে চিন্তা করছে। সে তার কাছের মানুষগুলো নিয়ে চিন্তিত। যারা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ক্যাসলের বাইরে এবং ভেতরে রয়েছে। তারা অবশ্যই অপেক্ষা করছে। কারণ হ্যারিদেরকে চলে আসতে হয়েছিল সাপটির জন্য, ভোল্ডেমর্টের জন্য। কারণ বিষয়টি, হারমিয়ন যেমন বলেছে, এ যুদ্ধ শেষ করার একটিই উপায়

হ্যারি প্রচণ্ড গতিতে দৌড় দিল, তার মনে হল যে সে মৃত্যুকে রুখতে পারবে। সে চারদিকে অন্ধকারের ভেতর থেকে ছোটা স্পেলের লাল, সবুজ আলো তোয়াক্কা করল না। লেকের ভেতর থেকে সমুদ্রের মত গর্জন হল, নিষিদ্ধ জঙ্গলের ভেতর থেকে বাতাসহীন মটমট শব্দ হল। হ্যারি এত জোরে দৌড় দিল যে তার জীবনে কখনো এত জোরে দৌড়ায়নি। এবং হ্যারিই প্রথম সেই বিশেষ গাছটি দেখল। এই উইলো গাছটিই তার শেকড়ের গোড়ায় গোপন পথ ঢেকে রেখেছে।

হ্যারি হাপাতে হাপাতে কাছে এসে থামল। গাছের শাখাগুলো চারদিকে দুলছে। হ্যারি তাকিয়ে এর গোড়ায় শেকড়ের সঙ্গে একমাত্র বাধনটি দেখতে পেল। এই বাধনটিই একমাত্র গাছটিকে অকেজো করতে পারে। রন এবং হারমিয়নও এসে পৌঁছেছে। হারমিয়ন এতটা হাপাচ্ছে যে কথা বলতে পারছে না।

আ-আমরা –ভে–ভেতরে ঢুকব কি–কিভাবে? রন হাপাতে হাপাতে বলল। আমি–জায়গাটি দেখতে পাচ্ছি, আ-আমাদের যদি একটা ক্রুকশ্যাঙ্ক থাকতো

ক্রুকশ্যাঙ্ক? হারমিয়ন হাপাতে হাপাতে বলল। সে নিচু হয়ে গেছে। বুকের কাছে চেপে ধরে রেখেছে। তুমি কী কোনো যাদুকর–না কি?

ওহ–ঠিক–হ্যাঁ, ঠিকই-

রন চারদিকে ঘুরে তাকালো। এবং তার যাদুদণ্ড দিয়ে মাটির সঙ্গে থাকা গাছের একটি শাখার দিকে তাক করে বলল, উইনগার্ডিয়াম লেভিওসা! শাখাটি। মাটি থেকে লাফিয়ে উঠল। সেটি শূন্যে পাক খেয়ে সরাসরি গাছের দুলতে থাকা শাখার উপর গিয়ে পড়ল। শাখাটি গিয়ে পড়ল গাছের একটি শেকড়ের উপর এবং ঘুরতে থাকা গাছটি স্থির হল।

পারফেক্ট! হারমিয়ন হাপাতে হাপাতে বলল।

দাঁড়াও!

চারদিকে ধুমধাম এবং ভাঙাচোরার শব্দ হচ্ছে। হাঁটতে শুরু করার মুহূর্তেই হ্যারি একটু দ্বিধা করল। ভোল্ডেমর্ট চায় যে সে আসুক,…সুতরাং সে কি রন এবং হারমিয়নকে নিজের সঙ্গে ফাঁদে জড়িয়ে ফেলছে?

ঠিক তখনই তার কাছে নিষ্ঠুর বাস্তবতাটা ধরা দিল : সামনে একটিই উপায় আছে সাপটি কে হত্যা করা। এবং সাপটি রয়েছে ভোল্টেমর্টের কাছেই। আর ভোল্ডেমর্ট আছে এই টানেলের শেষ প্রান্তে…।

রন হ্যারিকে ঠেলে দিয়ে বলল, হ্যারি আমরাও আসছি, তুমি ঢুকতে থাকো।

হ্যারি ঘুরে গাছের ভেতর দিয়ে মাটির প্যাসেজে ঢুকল। শেষবার যখন ঢুকেছিল তার চেয়ে এখন পথটি অনেক বেশি চাপা। টানেলের সিলিংটি অনেক নিচু। চারবছর আগে যখন ঢুকেছিল তখন দ্বিগুন চওড়া ছিল। এখন সেখান দিয়ে ক্রল করে ঢুকতে হচ্ছে। হ্যারি যাদুদণ্ডটি জ্বালিয়ে প্রস্তুত রেখেছে। যে কোনো সময় সামনে বাধা পড়তে পারে। কিন্তু কেউ আসল না। হ্যারি সামনের দিকে তাকিয়ে আগালো।

অবশেষে টানেল বেকে উপরের দিকে চলে গেছে। হ্যারি সামনে যাদুদণ্ডের আলোতে রুপালি টুকরো টুকরো দেখতে পেল। হারমিয়ন তার হাটুর উপর ধাক্কা দিল।

আলখাল্লা! সে ফিসফিস করে বলল। আলখাল্লাটা পরে নাও!

হ্যারি পেছনে হাতড়াতে থাকল, হারমিয়ন তার হাতটিতে হ্যারির পেছনের থেকে কাপড়ের গাট্টি খুলে দিল। হ্যারি কষ্ট করে সেটা তার সামনে আনল। বিড়বিড় করে বলল, নক্স! হ্যারির যাদুদণ্ডের আলোটি নিভে গেল। যতটা সম্ভব শব্দ

করে সে হাত পা নাড়তে থাকল। প্রতিটি মুহূর্তে সে অপেক্ষা করতে থাকল একটি শীতল কণ্ঠ শোনার জন্য, একটি সবুজ আলোর ঝলকানি দেখার জন্য।

এবং ঠিক তখনই সে ঠিক তাদের সামনে একটি রুম থেকে গলার আওয়াজ শুনতে পেল। টানেলের শেষ প্রান্তে খুট করে একটি শব্দে বন্ধ হয়ে গেল। মনে হল যেন একটি পুরাতন বাক্স দিয়ে আটকে দেয়া হল। নিঃশ্বাস নিতেও সাহস হচ্ছে না। হ্যারি টানেলের মুখের শেষ প্রান্তে চলে এল। বাক্স এবং দেয়ালের মাঝখানে যে সামান্য একটু ফাঁক আছে সেখান দিয়ে তাকালো।

বাহিরের দিকে রুমটিতে হালকা আলো জ্বলছে। কিন্তু সেই আলোতেই ওখানে নাগিনীটাকে দেখা যাচ্ছে। নিরাপদে যাদুর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ঘিরে রাখা হয়েছে। নাগিনী শুন্যে ভাসছে। মনে হচ্ছে যেন পানির ভেতর সরিসৃপ যেমন ভাসে তেমনি ভাসছে, পাক খাচ্ছে। সে টেবিলের এক প্রান্ত দেখতে পেল এবং দেখা গেল লম্বা সাদা আঙুলগুলো একটি যাদুদণ্ড নিয়ে খেলা করছে। তখনই স্নেইপ কথা বলে উঠল। হ্যারির বুকের ভেতর ধপ করে উঠল। সে ঠিক যেখান দিয়ে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে আছে তার থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে স্নেইপ দাঁড়িয়ে আছে।

মাই লর্ড, ওদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে…

–এবং সেটা হচ্ছে তোমার সাহায্য ছাড়াই, উচ্চ এবং পরিস্কার গলায় ভোল্ডেমর্ট বলল। তুমি একজন দক্ষ উইজার্ড হওয়ার পরও সেভেরাস, আমার মনে হয় না তুমি এখন কোনো কিছু করতে পারবে। আমরা সেখানে প্রায় পৌঁছে গেছি, প্রায় পৌঁছে গেছি।

ওই ছোকরাটিকে আমাকে খোঁজার অনুমতি দিন, আমি ওকে আপনার সামনে এনে হাজির করব। আমি জানি, আমি তাকে খুঁজে বের করতে পারব, মাই লর্ড, পি-জ।

স্নেইপ ঠিক সামান্য ফাঁকের জায়গাটি লম্বা পা ফেলে অতিক্রম করল। হ্যারি একটুখানি পিছিয়ে এল। কিন্তু নাগিনীর দিকে চোখ রাখল। সে চিন্তা করতে থাকল, এমন কোনো স্পেল আছে ওর বেধে দেয়া জায়গাটি ভেদ করা যায়? একবার চেষ্টা ব্যর্থ হলে আর কিছু করার থাকবে না…

ভোল্ডেমর্ট উঠে দাঁড়ালো, হ্যারি এখন তার লাল চোখ এবং তার সাপের মতো মুখটি দেখল। আধো অন্ধকারে তার মুখের বিষণ্ণ ভাবটি ফুটে উঠেছে।

আমার একটি সমস্যা আছে, সেভেরাস, ভোল্ডেমর্ট নরম কণ্ঠে বলল।

মাই লর্ড? স্নেইপ বলল।

ভোল্ডেমর্ট তার হাতের এলডার ওয়্যান্ড তুলল, কনডাকটরের হাতের ব্যাটনের মত ধরে রাখল।

এটা আমার জন্য কাজ করে না কেন, সেভেরাস?

নিস্তব্ধতার ভেতর হ্যারি শুনতে পেল সাপটি হিসহিস করছে এবং একবার পেচিয়ে যাচ্ছে আবার সোজা হচ্ছে। নাকি এটা ভোল্ডেমর্টের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ?

স্নেইপ অসাড়ভাবে ভলল, মাই লর্ড! আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, আপনি এটা দিয়ে অসাধারণ যাদু করেছেন।

ভোল্ডেমর্ট বলল, না, আমি আমার সাধারণ ম্যাজিকগুলোই করেছি। আমি অসাধারণ, কিন্তু এই যাদুদণ্ডটি….না। এই যাদুদণ্ডটি এর আশ্চর্য ক্ষমতা দেখাচ্ছে না। অলিভ্যান্ডারের কাছ থেকে কয়েক বছর আগে যে যাদুদণ্ডটি নিয়েছিলাম সেটি আর এই যাদুদণ্ডটির ভেতর আমি কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না।

ভোল্ডেমর্টের গলা বিস্ময়করভাবে শান্ত। কিন্তু হ্যারির স্কারটি অসম্ভব রকমের জ্বালা করতে শুরু করল। সে অনুভব করতে পারল যে ভোল্ডেমর্ট তার ভেতরে বাড়তে থাকা ক্রোধটাকে দমিয়ে রেখেছে।

কোনো পার্থক্য নেই, ভোল্ডেমর্টে আবার বলল।

স্নেইপ কোনো কথা বলছে না। হ্যারি তাকে দেখতে পাচ্ছে না। ভাবল, স্নেইপ বিপদটা বুঝতে পেরেছে এবং তার প্রভুকে শান্ত করার জন্য হয়তো শব্দ খুঁজছে।

ভোল্ডেমর্ট রুমের ভেতর হাঁটতে শুরু করল। হ্যারির চোখের সামনে থেকে সে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সরে যাচ্ছে। সে শান্তস্বরে একইভাবে কথা বলছে। হ্যারির ভেতরে যন্ত্রণা এবং ক্রোধ বাড়তে শুরু করেছে।

আমি অনেক চিন্তা করেছি, সেভেরাস….তুমি জানো তোমাকে আমি কেন যুদ্ধ। থেকে এখানে ডেকে এনেছি?

 হ্যারি মুহূর্তের ভেতর স্নেইপের শরীরটা দেখতে পেল। তার চোখ স্থির হয়ে আছে সাপটির দিকে….

না, মাই লর্ড, কিন্তু আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আমাকে যুদ্ধে ফিরে যেতে দিন। হ্যারিকে খুঁজে বের করতে দিন।

তুমি লুসিয়াসের মত কথা বলছ। তোমরা কেউ পটারকে আমার চেয়ে বেশি চেন না। তাকে খুঁজে বের করতে হবে না। পটার নিজেই আমার কাছে আসবে। আমি তার দুর্বলতা জানি। সে তার চারপাশে অন্যরা মরে যাচ্ছে এটা কখনোই সহ্য করবে না। সে জানে যে এ মৃত্যুর কারণ সে। যে কোনো কিছুর বিনীময়ে সে এ মৃত্যু বন্ধ করতে চাইবে। সে চলে আসবে।

কিন্তু মাই লর্ড, সে দুর্ঘটনাবশত আপনার বদলে অন্য কারো হাতে খুন হয়ে যেতে পারে।

ডেথ-ইটারদের প্রতি আমার পরিস্কার নির্দেশ দেয়া আছে। পাটারকে ধরতে হবে। যত খুশি ওর লোকজনকে হত্যা করো, ক্ষতি নেই। কিন্তু ওকে হত্যা করা যাবে না।

কিন্তু পটার নয়, তোমার সঙ্গে আমার কথা বলা দরকার, সেভেরাস। তুমি আমার কাছে অনেক মুল্যবান, অনেক মুল্যবান।

আমার প্রভু নিশ্চয়ই জানেন, একমাত্র তার সেবাতেই আমি নিয়োজিত। কিন্তু আমাকে যেতে দিন এবং ওকে খুঁজে বের করে আনতে দিন। আমি জানি আমি পারব।

আমি তোমাকে বলেছি, না? ভোল্ডেমর্ট বলল। সে ঘুরতেই হ্যারি তার লাল চোখের আভা দেখতে পেল। তার আলখাল্লাটির উপর সাপের মত পিচ্ছিল। হ্যারির স্কারটিতে অসম্ভব জ্বালাপোড়া করছে। আমার এখন চিন্তার বিষয় হল, কি হবে যখন ওই ছোকরার সঙ্গে আমার সামনাসামনি দেখা হবে!

মাই লর্ড এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই, আপনি নিশ্চিত-?

-কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, সেভেরাস, একটা প্রশ্ন।

ভোল্ডেমর্ট আবার দাঁড়ালো। হ্যারি তাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে হাতের যাদুদণ্ডটি ঘোরাচ্ছে। সে স্নেইপের দিকে তাকালো।

কেন আমার দুটো যাদুদণ্ডই কাজ করল না যখন আমি তা হ্যারি পটারের দিকে তাক করলাম?

আমি..আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না, মাই লর্ড!

তুমি পারছ না?

ক্রোধে সে ধমকে উঠল যা হ্যারির মাথায়ু চাকুর মত গিয়ে বিধল। সে যন্ত্রণায় চিৎকার করা থেকে নিজেকে ধরে রাখতে এক হাত মুখের ভেতর পুরে দিল। সে চোখ বন্ধ করল এবং হঠাৎ সে ভোল্টেমর্টের ভেতরে প্রবেশ করল। ভোল্টেমর্টের ভেতর দিয়ে স্নেইপের কালো হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকাল।

ইয়ু গাছের তৈরি যাদুদণ্ডটি সব কাজই করছে, সেভেরাস, শুধু হ্যারি পটারকে হত্যা করা ছাড়া। দুবার আমি ব্যর্থ হয়েছি। অলিভ্যান্ডারকে নির্যাতন করার সময় সে আমাকে বলেছিল আরেকজনের যাদুদণ্ড নিয়ে চেষ্টা করতে। কিন্তু লুসিয়াসের যাদুদণ্ডটি হ্যারির সামনেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

আ-আমার কা-কাছে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই, মাই লর্ড!

স্নেইপ এখন আর ভোল্টেমর্টের দিকে তাকাচ্ছে না। তার কালো চোখ দুটি এখনো সাপের দিকে।

আমি তৃতীয় যাদুদণ্ড হিসাবে এলডার ওয়্যান্ড নিয়েছি, সেভেরাস, নিয়তির যাদুদণ্ড, ডেথস্টিক যাই বলো। আমি এটি নিয়েছি যাদুদণ্ডটির আগের মালিকের কাছ থেকে। আমি এটি নিয়েছি অ্যালবাস ডাম্বলডোরের কবরের ভেতর থেকে।

স্নেইপ এবার ভোল্টেমর্টের দিকে তাকালো। তার মুখটি মৃত মুখোশের মত দেখাচ্ছে। মুখটা মার্বেলের মতো সাদা হয়ে আছে। কথা বলার সময় এমন স্থির হয়ে থাকল যে মনে হল চোখ দুটোর পেছনে আদৌ কোনো জীবিত মানুষ আছে কি না সন্দেহ।

মাই লর্ড–ওই ছোকরাকে ধরতে যেতে দিন

এই দীর্ঘরাতে যখন আমি জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি, তখন আমি এখানে বসে আছি, ভোল্ডেমর্টে শান্ত কণ্ঠে প্রায় ফিসফিস করে বলল। বসে বসে ভাবছি কেন এলডার ওয়্যান্ডটি ঠিকমতো কাজ করছে না। এ যাদুদণ্ডটির যে সুনাম আছে। সে অনুযায়ী কাজ করছে না। এর ব্যাপারে বিশ্বাস আছে যে সঠিক মালিকের কাছেই এটি কাজ করে….এবং এর উত্তর আমার কাছে আছে।

স্নেইপ কথা বলছে না।

সম্ভবত তুমি সেটা ইতিমধ্যেই জানো? তুমি যথেষ্ট চতুর মানুষ, সেভেরাস। তুমি ছিলে আমার ভালো এবং বিশ্বস্ত চাকর, কিন্তু যা ঘটছে সে জন্য আমি দূঃখিত।

মাই লর্ড

এলডার ওয়্যান্ডটি ঠিক মতো আমার হয়ে কাজ করছে না, কারণ আমি এটির সত্যিকারের প্রভু নই। তুমি অ্যালবাস ডাম্বলডোরকে হত্যা করেছ। তুমি যতক্ষণ জীবিত আছো, সেভেরাস, ততক্ষণ যাদুদণ্ডটি আমার হতে পারে না।

মাই লর্ড! স্নেইপ প্রতিবাদ করে বলল। সে হাতের যাদুদণ্ডটি তুলল।

অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই, ভোল্ডেমর্ট বলল। আমাকে অবশ্যই যাদুদণ্ডটির প্রভু হতে হবে, সেভেরাস। যাদুটির কর্তৃত্ব এবং শেষে হ্যারির উপর কর্তৃত্ব।

ভোল্ডেমর্ট শুন্যে যাদুদণ্ডটি ঘুরালো। সেটা স্নেইপকে কিছু করল না। সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য সে ভাবল, তাকে পরিত্রাণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরই ভোল্ডেমর্টের সিদ্ধান্তটি পরিস্কার হয়ে গেল। সাপের পুরো অদৃশ্য খাঁচা একটা গড়ানি দিল। স্নেইপ চিৎকার দেয়ার বেশি আর কিছু করার আগেই খাঁচাটি তাকে ভেতরে নিয়ে নিল। স্নেইপের মাথা থেকে কাঁধ পর্যন্ত। ভোল্ডেমর্ট পারসেলটঙের ভাষায় বলল

মারো!

একটা ভয়ানক চিৎকার শোনা গেল। হ্যারি দেখল ইেপের মুখের রঙ পাল্টে যাচ্ছে। চোখ দুটো বিস্ফারিত, সাদা হয়ে আসছে। সাপটি ওর গলার ওপর ছোবল দিয়েছে। ইেপ চেষ্টা করেও যাদুকরা বাক্সটি থেকে সরে আসতে পারেনি। তার পা পিছলে গেছে এবং সে মাটিতে পড়ে গেছে।

আমি দুঃখিত, ভোল্ডেমর্ট ঠাণ্ডা গলায় বলল।

সে ঘুরে চলে গেল। তার চোখে মুখে দুঃখ বোধের কোনো চিহ্ন নেই। এখন তার এ জায়গা থেকে সরে নেমে পড়ার সময়। যাদুদণ্ডটি এখন তার হয়ে কাজ করবে। সে সাপটির বাক্সটির দিকে যাদুদণ্ডটি তাক করল, সেটি স্নেইপের কাছ থেকে সরে শুন্যে উঠে গেল। স্নেইপ মেঝেতে পড়ে থাকল। তার গলা দিয়ে রক্ত ফিনকে বের হচ্ছে। পেছনের দিকে একবারও না তাকিয়ে ভোল্ডেমর্ট রুম থেকে বের হয়ে গেল। বিশাল সাপটি তার যাদুকরা বাক্সসহ ভোল্ডেমর্টের পেছনে পেছনে চলে গেল।

টানেলের ভেতরে হ্যারি নিজের ভেতর ফিরে এসে চোখ খুলল। যাতে গলা দিয়ে শব্দ না বের হয় সে জন্য সে তার ঠোঁট কামড়ে রেখেছিল, তার থেকে রক্ত বের হয়ে আসছে। সে এবার ছোট বাক্সটি এবং দেয়ালের ফাঁক দিয়ে তাকালো। দেখল স্নেইপের কালো জুতো মেঝেতে ছটফট করছে।

হ্যারি! হারমিয়ন চাপাস্বরে তার পেছন থেকে বলল। কিন্তু ততক্ষণে সে তার যাদুদণ্ডটি দেয়াল এবং বাক্সটির দিকে তাক করেছে। বাক্সটি একটু শূন্যে উঠল এবং পাশে চলে গেল। যতটা শব্দ না করে সম্ভব হ্যারি রুমটির ভেতরে প্রবেশ করল।

সে জানে না কেন সে এ কাজটি করছে। কেন সে একজন মৃত্যুমুখী মানুষের কাছে যাচ্ছে। সে জানে না স্নেইপের সাদা মুখটির দিকে তাকিয়ে তার কি মনে হল। স্নেইপ তার আঙুলগুলো দিয়ে ক্ষতটা রোধ করতে চেষ্টা করছে। হ্যারি অদৃশ্য আলখাল্লা টান দিয়ে সরিয়ে বের হয়ে আসল এবং যে মানুষটিকে সে ঘৃণা করে তার দিকে নিচু হয়ে তাকালো। তার সাদা হয়ে আসা বিস্ফারিত চোখ দুটি হ্যারিকে দেখল। সে কিছু বলতে চেষ্টা করল। হ্যারি আরো নিচু হয়ে ঝুঁকে পড়ল। স্নেইপ তার গাউনটা ধরে আরো কাছে টানল। স্নেইপের গলা দিয়ে একটি ভয়ানক গরগর করা শব্দ বের হয়ে আসল।

এটা…নাও…এটা…না-ও..

স্নেইপের ভেতর থেকে রক্ত ছাড়াও আরো কিছু বের হয়ে আসছে। নীল ও রুপার মিশ্রণ রঙের বস্তুটি গ্যাসও না আবার তরল পদার্থও না। সেগুলো বের হয়ে আসছে স্নেইপের মুখ, কান এবং চোখ দিয়ে। হ্যারি জানে বস্তুটি কি, কিন্তু এখন কি করতে হবে ভেবে পাচ্ছে না।

হারমিয়ন হাত বাড়িয়ে শূন্যের থেকে একটা একটা ফ্লাস্ক এনে ওর হাতে দিল। হ্যারি ওই পদার্থগুলো তার যাদুদণ্ড দিয়ে সে ফ্লাস্কের ভেতর ভরল। ফ্লাস্কটি যখন ভরে গেল মনে হল স্নেইপের ভেতর আর কোনো রক্ত নেই। ওর গাউন ধরে থাকা তার হাতটি শিথিল হয়ে গেল।

আমার…দিকে…তাকাও… সে ফিসফিস করে বলল।

সবুজ চোখ দুটো কালো হয়ে গেল, কিন্তু এক সেকেন্ড পর কিছু একটা বস্তু তার চোখ থেকে গভীরে প্রবেশ করল। চোখ দুটো পলকহীন, স্থির হয়ে গেল। হ্যারিকে ধরে থাকা হাতটি মেঝেতে পড়ে গেল। স্নেইপ আর নড়ল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *