৩২. জায়গার নাম মালাবার হিল

স্থান বোম্বে (মুম্বাই) শহর। জায়গার নাম মালাবার হিল। রাজপ্রাসাদের মতো এক বাড়ি। আরব সাগরের তীরে আড়াই একর জমিতে অপূর্ব এই প্রাসাদের ডিজাইন করেছেন ব্রিটিশ স্থপতি ক্লদ ব্যাটনি। প্রাসাদটির মালিক মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ। এই প্রাসাদে আজ একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এসেছেন। তার নাম মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধি। গান্ধিজির মুখ বিষণ্ণ। মুসলিম লীগের ডাকে ডাইরেক্ট অ্যাকশান কর্মসূচি পালিত হয়েছে (১৬ জুলাই ১৯৪৬), দাঙ্গা শুরু হয়েছে। কোলকাতার দাঙ্গায় সাত হাজার মুসলমান এবং তিন হাজার হিন্দু নিহত হয়েছে। দাঙ্গা পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে।

তাঁরা দু’জন প্রাসাদের লবিতে বসেছেন। এখান থেকে আরব সাগরের ঢেউ দেখা যায়। গান্ধিজি সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদেরকে কিছুক্ষণ আগে লেবু চা দেয়া হয়েছে। দু’জনের কেউ সেই চা স্পর্শ করেন নি। মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর হাতে সিগারেট। তিনি একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে যাচ্ছেন। তার সামনে দামি অ্যাসট্রো আছে, তারপরেও তিনি সিগারেটের ছাই ফেলছেন এইমাত্র আনা চায়ের কাপে। তাকে খুবই অস্থির লাগছে। লবিতে তাঁর কন্যা দিনা এসেছিল গান্ধিজিকে সালাম জানাতে। মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ মেয়ের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলেছেন, এখন বিরক্ত করবে না। দিনা অপ্রস্তুত হয়ে দ্রুত চলে গেছে।

দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে ইংরেজিতে। গান্ধিজি স্বভাবসুলভ নরম স্বরে কথা বলছেন। মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ স্পষ্ট এবং তীক্ষ্ণ স্বরে কথা বলছেন।

গান্ধিজির মুখ হাসিহাসি, কিন্তু জিন্নাহর মুখে হাসি নেই। তাদের কথাবার্তা নিম্নরূপ।

গান্ধিজি : আপনি কি চান যে আমাদের মাতৃভূমি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাক?

জিন্নাহ : আমি যে এটা কখনো চাই নি এবং এখনো চাচ্ছি না তা আপনি জানেন। রাজনীতিবিদদের একটি অস্ত্ৰ ‘মিথ্যা’। আমি এই অস্ত্ৰ ব্যবহার করি না।

গান্ধিজি : ডাইরেক্ট অ্যাকশান কি আমাদের সেই দিকে নিয়ে যাচ্ছে না?

জিন্নাহ : হ্যাঁ  যাচ্ছে। তার জন্যে দায়ী কংগ্রেস। আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলাম (লক্ষ্মৌ চুক্তি) সেই চুক্তি থেকে কংগ্রেস কি সরে যায় নি?

গান্ধিজি : (চুপ করে আছেন। দৃষ্টি সাগরের ঢেউয়ের দিকে)

জিন্নাহ : কংগ্রেস এখন কী করছে? মুসলিম লীগকে একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বীকার না করে খেলাফত আন্দোলনকে স্বীকার করছে।

গান্ধিজি : মাতৃভূমি ভাঙার দুঃখ আমি নিতে পারব না। আমি এবং আপনি কি এটা বন্ধ করতে পারি না?

জিন্নাহ : না, পারেন না। পণ্ডিত নেহেরু কিন্তু এই ভাগাভাগি চাচ্ছেন।

গান্ধিজি : আপনি ভুল করছেন। ভারত বিভক্তি কারোই কাম্য নয়। নেহেরুর তো কখনোই নয়। *

—————

* ভুল গান্ধিজি করেছিলেন। নেহেরু এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কংগ্রেসকে রাজি করান যেন ভারত দুটি দেশে ভাগ হয়। ভারতের নতুন ভাইসরয় লর্ড লুই মাউন্টব্যাটিন ভারত বিভক্তির পরিকল্পনা শুরু করেন। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় মৃত্যুর দিনরাত্রি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *