সেই লাজুক স্বল্পভাষী কিশোরটি আর নেই। এক সময় যার উপস্থিতিই টের পাওয়া যেত না এই গৃহে। এখন গঙ্গানারায়ণ বলিষ্ঠকায় রাশভারী যুবা। তার গৌরবর্ণ মুখে শ্যামল কোমল গুম্ফ দাড়ি গজিয়েছে কিছু কিছু। তার গুম্ফটি যদিও এখনো সুবিন্যস্ত করার মতন স্বাস্থ্যবান হয়নি, তবু কারুর সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে কথা বলবার সময় সে তার নরম গুফের একপ্ৰান্ত পাকবার চেষ্টা করে যায়।
এখন আর সহাধ্যায়ী বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্ৰাম্ভালপে কালক্ষেপণ করে না গঙ্গানারায়ণ।। সকালে কাছারিঘরে সে নিজে উপস্থিত থেকে গোমস্ত কর্মচারিদের নানাপ্রকার কাজের নির্দেশ দেয়। তারপর আহারাদি সম্পন্ন করে সে তাদের তিনটি হীস পরিদর্শনে যায়, তার কোটের পকেটে একটি ঘড়ি থাকে, কোনোদিন সে এক মিনিটও সময়ের ব্যত্যয় করে না। কোনো কোনো দিন সন্ধ্যাকালেও ব্যবসায় কার্য্যের পরামর্শের জন্য বাড়িতে লোকজন আসে, তাদের সঙ্গে গঙ্গানারায়ণ অনেক রাত পর্যন্ত নিযুক্ত থাকে। বিধুশেখরও উপস্থিত থাকেন সেখানে আর মাঝে মাঝেই তাঁর সঙ্গে গঙ্গানারায়ণের তর্কদ্বন্দ্ব বেঁধে যায়।
অবশ্য তার ভিতরের রোমাণ্টিক, আবেগপ্রবণ মনটি এখনো রয়ে গেছে, এখনো সে বিরলে গ্রন্থপাঠ করতে করতে অশ্রু বিসর্জন করে। তার স্ত্রী লীলাবতী অধিকাংশ সময়ই থাকে পিত্ৰালয়ে। লীলাবতীর বালিকা স্বভাব আর ঘূচালো না, বাবা-মা ও পুতুল খেলার সঙ্গিনীদের ছেড়ে সে এখনো বেশী দিন থাকতে পারে না, নানান ছুতো দেখিয়ে তো প্রায়ই বাগবাজারে বাপের বাড়ি চলে যায়। গঙ্গানারায়ণ অবশ্য এজন্য কোনোদিনই আপত্তি জানায়নি, লীলাবতী সম্পর্কে তার মনে বিন্দুমাত্র আগ্ৰহ জাগেনি। নিজের কক্ষে একাকী গঙ্গানারায়ণ এক একদিন দীপের আলোকে পুস্তক পাঠ করতে করতে সারারাত্রি জেগে কাটিয়ে দেয়।
ইদানীং সংস্কৃত সাহিত্য সম্পর্কে তার আগ্রহ জেগেছে, ইংরেজী কাব্যগুলির পাশাপাশি সে সংস্কৃত কাব্যগুলি মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ে। তবে, সংস্কৃত কাব্যগুলিতে শৃঙ্গার রসের বড় আধিক্য, পড়তে পড়তে তরুণ গঙ্গানারায়ণের কৰ্ণমূল আরক্ত হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে বই মুড়ে রেখে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে থাকে। সেই সব গভীর নির্জন মধ্যরাত্রে বিন্দুবাসিনীর কথা তার মনে পড়ে যায়, তার অন্তরের মধ্যে সে যেন শুনতে পায় ঝড়ের গর্জন। সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, বিন্দুবাসিনীর সঙ্গে তার আর কোনোদিন দেখা হবে না!
প্রায় সকালে গঙ্গানারায়ণের ঘুম ভাঙে এক কচি সুরেলা কণ্ঠে সংস্কৃত স্তোত্র পাঠ শুনে। নবীনকুমারের বয়েস এখন আট বছর, সে জেগে ওঠে অতি প্ৰাতে এবং দ্বিতলের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে উচ্চকণ্ঠে স্তোত্র পাঠ করে। আশ্চর্য এই বালকের স্মৃতিশক্তি, এতটুকু বয়েসেই সে মহাভারতের কঠিন কঠিন শ্লোক কণ্ঠস্থ করে ফেলেছে। তার মেধা দেখে সকলেই চমৎকৃত। বিম্ববতী নবীনকুমারকে চোখের আড়াল করতে চান না বলে এখনও নবীনকুমারকে কোনও বিদ্যালয়ে পাঠানো হয় না, কিন্তু গঙ্গানারায়ণ তার কনিষ্ঠ ভ্রাতার শিক্ষার জন্য ব্যবস্থার কোনো ত্রুটি করেননি। সংস্কৃত কলেজ ও হিন্দু কলেজ থেকে বাছাই করা তিনজন ছাত্রকে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা নবীনকুমারকে সংস্কৃত, ইংরেজী ও অঙ্ক শিক্ষা দেন। এ ছাড়া নবীনকুমারের সঙ্গীত প্রীতি লক্ষ্য করে এক ওস্তাদজীকেও মাসোহারার বন্দোবস্তে রাখা হয়েছে বাড়িতে, তাঁর কাছ থেকে নবীনকুমার কণ্ঠ সঙ্গীতের তালিম নেবে। ভিখারি বৈরাগীদের গান শুনলেই নবীনকুমার ঠিক ঠিক শিখে নেয়, যে-সব গানের কথার অর্থ তার একেবারেই বোঝার কথা নয়, সেগুলিও সে বেশ ভাব দিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে গায়। মাঝে মাঝে সে তার মায়ের সামনে নানাপ্রকার নাট্য রঙ্গ করেও দেখায়, কোথা থেকে যে সে এসব শেখে, কে জানে!
নবীনকুমার তার দাদা গঙ্গানারায়ণকে বড় ভালোবাসে। নবীন কিছু নতুন পাঠ শিখলেই সেটি তার দাদাকে শোনানো চাই। গঙ্গানারায়ণ ঘুম থেকে উঠেই নবীনকুমারকে নিজের ঘরে ডেকে আনে।
গঙ্গানারায়ণ জিজ্ঞেস করে, গাড় মানে কী?
নবীন বলে, ঈশ্বর!
গঙ্গানারায়ণ আবার বলে, লার্ড?
নবীন বলে, প্ৰভু।
তারপর নবীন নিজেই গড় গড় করে হাততালি দিতে দিতে বলে, আমি ফিলজফর মানে জানি! বিজ্ঞলোক। আর প্লৌম্যান মানে চাষা!
নবীনেতে আর গঙ্গানারায়ণে এই সখ্য বিধুশেখরের চক্ষুশূল। গঙ্গানারায়ণ বেয়াদপী শুরু করলেও বিধুশেখর জানেন, একদিন নবীনকুমারকে দিয়েই তিনি এ গৃহ থেকে গঙ্গানারায়ণকে উৎখাত করবেন। এর জন্য প্রয়োজন শুধু অপেক্ষা। নবীনকুমার আর একটু বড় হোক, তখন বিধুশেখর দেখবেন গঙ্গানারায়ণের দপ কীভাবে ভাঙতে হয়।
বিম্ববতী এক অপরাহ্ন ডেকে পাঠালেন গঙ্গানারায়ণকে। সকালবেলা বিম্ববতী যখন তাঁর পোষা পাখিদের ছোলা খাওয়ান তখন একবার গঙ্গানারায়ণের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। গঙ্গানারায়ণ এসে জননীকে প্ৰণাম করে, দু-একটি কুশল বাক্য বিনিময় হয় তখন। বৈষয়িক ব্যাপারে কোনো আলোচনা থাকলে দিনের অন্য সময়ে গঙ্গানারায়ণ নিজেই খবর পাঠিয়ে বিম্ববতীর কাছে যায়। অপরাহ্ন বিম্ববতী স্বয়ং যখন এত্তেলা পাঠিয়েছেন, তখন নিশ্চয়ই কিছু গুরুতর ব্যাপার আছে।
অবশ্য ব্যাপারটি তেমন কিছু গুরুতর নয়।
গঙ্গানারায়ণ এসে মায়ের পদধূলি নিয়ে নত মস্তকে দাঁড়াবার পর বিম্ববতী বললেন, বাগবাজার থেকে তত্ত্ব এয়েচে আজ, তুই শুনিচিস?
গঙ্গানারায়ণ একটু বিমূঢ় বোধ করলো। বাগবাজারে তার শ্বশুরালয়। তত্ত্ব সেখান থেকেই এসেছে মনে হয়। কিন্তু একথা তাকে জানাবার কী আছে? তত্ত্ববাহিকারা বড় বড় পরাতে নানাপ্রকার জিনিস সাজিয়ে অন্দরমহলেই চলে আসে এবং গৃহকর্ত্রীর কাছ থেকেই তারা দক্ষিণা পায়। এসব মেয়েমহলের ব্যাপার, গঙ্গানারায়ণ মাথা ঘামাতে চায় না।
গঙ্গানারায়ণ শুষ্ক কণ্ঠে বললো, ও!
বিম্ববতী হেসে ফেলে বললেন, ও কী? তুই এর মর্ম বুজলিনি?
গঙ্গানারায়ণ বললো, তত্ত্বের আবার মর্ম কী মা?
বিম্ববতী বললেন, পালা-পার্বণ কিচু নেই। জামাইষষ্ঠী নয়, তিলষষ্ঠী নয়, সংক্রান্তি নয়, দধিমুখ নয়, হঠাৎ অমনি অমনি তত্ত্ব পাঠালে? তুই এটাও বুজিস না?
গঙ্গানারায়ণ বললো, দ্যাখো গে ও বাড়িতে বোধহয় কোনো ব্ৰত-ট্ৰত আচে—
—না রে না। বেয়ান আমায় ঠেস দিয়েচে! ছ মাস হয়ে গ্যালো, লীলাবতীকে আমরা ও বাড়ি ঠেঙে আনিনি, তুই একবার খোঁজ নিতেও যাসনি, তাই তত্ত্ব পাঠিয়ে বেয়ান আমাদের মনে করিয়ে দিলে।
–ও।
—আবার ও! একটা ব্যবোস্তা কর। ওঁরা বারো মাতা তত্ত্ব পাঠিয়েচে, আমি কালই ষোলো মাতা পটাচ্চি, জনাৰ্দন আর দেবীপদকে বলিচি ভালো সন্দেশ আর দশসেরি রুই মাচ জোগাড় করতে, তারপর পরশুদিন তুই গিয়ে লীলাকে নিয়ে আয় গে যা।
গঙ্গানারায়ণ উদাসীনভাবে বললো, আমি যে এখন বড়ই কাজে ব্যস্ত মা, আমি তো যেতে পারবো না, অন্য কারুকে পাঠিয়ে দাও।
—তা কি হয়? তোকে নিজে যেতে হয়। তুই একেবারে শ্বশুরবাড়িমুখো হতে চাস না কেন?
—আমায় যেতে গেলে অনেক দেরি হবে। এ মাসে সময় হবে না।
বিম্ববতী গঙ্গানারায়ণের পিঠে তাঁর সমেহ হাতটি রেখে বললেন, যা একবারটি ঘুরে আয়। এই তো বাগবাজার, কতটুকুই বা রাস্তা! তোর শ্বশুরবাড়ি অত বড় মানী বংশ, তুই নিজে না গেলে তাঁরা মেয়ে পাঠাবেনই না। লীলাকে এত বেশী দিন বাপের বাড়ি ফেলে রাখা ভালো দেকায় না। তুই এই একবারটি যা, আর যেতে হবে না। পুরুষমানুষের বেশী শ্বশুরবাড়ি না যাওয়াই ভালো–এই দ্যাক না, তোর বাবা-বিয়ের পর সেই যে আমি এয়িচিলুম, আর কোনোদিন বাপের বাড়ি চক্ষে দেকিনি, আমায় যেতে দিলেন না, উনিও কখনো গেলেন না।
অকস্মাৎ রামকমল সিংহের প্রসঙ্গ এসে পড়ায় বিম্ববতী চক্ষে আঁচল দিলেন।
মায়ের অনুরোধ ঠেলতে পারলো না গঙ্গানারায়ণ, বাগবাজার থেকে লীলাবতীকে নিয়ে আসতে হলো তাকে। এবার যেন সে লীলাবতীর বেশ খানিকটা পরিবর্তন দেখতে পেল। এই কয়েক মাসেই অনেকখানি লম্বা হয়ে গেছে লীলাবতী, মুখের চামড়ায় চিক্কণ ভাব এসেছে, হাত ও পায়ের গড়নে সুডৌল ভাব, বালিকাসুলভ চাপল্যের বদলে তার ব্যবহারে এখন লাজুকতাই বেশী। এর আগে লীলাবতীকে তেমনভাবে লক্ষ্য করার কোনো সুযোগই হয়নি গঙ্গানারায়ণের। লীলাবতীর সঙ্গে সারাদিন তার দেখাই প্রায় হয় না, রাত্রে যখন সে শুতে আসে ততক্ষণে লীলাবতী ঘুমে বিভোর। এবারও গঙ্গানারায়ণ তার স্ত্রী সম্পর্কে বিশেষ কোনো আগ্রহ বোধ করলো না। মায়ের আদেশে স্ত্রীকে সে এনেছে, এখন মা-ই ওর ভার নেবেন।
এক সকালে নবীনকুমার তার দাদার কাছে নালিশ জানাতে এলো। বড় বৌঠান পড়াশুনোয় বড়ই অমনোযোগী। সে এত চেষ্টা করছে, তবু বড় বৌঠান কিছুতেই পড়বে না।
গঙ্গানারায়ণ কৌতুক বোধ করলো।
মাঝে মাঝে সে দেখেছে বটে যে বালক নবীনকুমার আর একজন বালকের ওপর গুরুমশাইগিরি করছে। এই বালকটি ভৃত্য মহলেরই কারুর সন্তান, তার ওপরে আসা ব্যাপারে অনেক বারই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, কিন্তু নবীনকুমার কান্নাকাটি করে প্রতিবারই ভেঙে দিয়েছে সেই নিষেধাজ্ঞা। নবীনকুমারের কোনো খেলার সঙ্গী নেই, মায়ের সঙ্গে ছাড়া কখনো সে বাড়ির বাইরে যেতে পারে না, সেইজন্য বালকটিকে সে সঙ্গী হিসেবে চায়। শেষ পর্যন্ত সেই বালকটিকে নবীনকুমারের নিজস্ব ভৃত্য করে নেওয়া হয়েছে। সে ছেলেটি নবীনকুমারের সঙ্গে খেলে, তার হুকুম তামিল করে আবার তার ছাত্র সেজেও বসে। পড়া না পারলে নবীনকুমারের হাতে সে মারও খায়।
গঙ্গানারায়ণ জিজ্ঞেস করলো, তুই বড় বৌঠানকেও পড়াতে শুরু করিচিস? বাঃ খুব ভালো কথা! তাহলে তো তার জন্য গুরুদক্ষিণার ব্যবস্থা করতে হয়!
নবীনকুমার বললো, বড় বৌঠান আমার কথা শোনে না। খালি খালি হাসে। তুমি ওকে বকে দেও।
গঙ্গানারায়ণ হাসতে হাসতে বললো, কেন, হাসে কেন? খুব অন্যায়!
নবীনকুমার বললো, বড় বৌঠানকে আমি কেতাব দিয়ে দিয়িচিলুম তা ছিঁড়ে ফেলেচে! আমি মারতে গেলুম, অমনি মার কাচে গিয়ে নুকোলো!
গঙ্গানারায়ণ হাসতে লাগলো খুব।
সারাদিন নানান কাজের মধ্যেও এই কথাগুলো ঘুরতে লাগলো গঙ্গানারায়ণের মাথায়। লীলাবতীকে সত্যি সত্যি পড়াশুনো শেখালে কেমন হয়! ধৰ্মপত্নীকে তো সে আর ফেলতে পারবে না, সারাজীবন এর সঙ্গেই কাটাতে হবে। যদি নিজের মতন তৈরি করে নেওয়া যায়, তবে লীলাবতী হয়তো একদিন তার যোগ্য সহধর্মিণী হয়ে উঠতে পারবে। খৃষ্টান মেয়েরা আজকাল অনেকেই লেখাপড়া শেখে। লীলাবতীর জন্য একজন ইউরোপীয় মহিলাকে বাড়িতে এসে শিক্ষা দিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গঙ্গানারায়ণ জানে যে তার মা বিম্ববতী এতে আপত্তি করবেন না; আর বিধুশেখর আপত্তি করলেই বা কী যাবে আসবে? বিধুশেখর বিন্দুবাসিনীর শিক্ষা মধ্যপথে বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তখন গঙ্গানারায়ণ কোনো প্ৰতিকার করতে পারেনি। কিন্তু লীলাবতীর ক্ষেত্রে সে রকম কোনো বাধাই আসতে পারবে না।
গঙ্গানারায়ণ বিন্দুবাসিনীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, বিধুশেখর গুরুমশাইয়ের কাছে পড়া বন্ধ করে দিলেও সে নিজে গোপনে বিন্দুকে নিয়মিত পড়াবে। সেকথা রাখেনি গঙ্গানারায়ণ, তখন কলেজে বন্ধুবান্ধবদের সংসর্গে উত্তেজনাকর জীবনযাত্রার মধ্যে কিছুকালের জন্য বিন্দুবাসিনীর কথা বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল একেবারে। সেজন্য আজও গঙ্গানারায়ণের অনুশোচনা হয়।
সেদিন রাত্রে আপন কক্ষে এসে গঙ্গানারায়ণ দেখলো, তার পত্নী লীলাবতী তখনও জেগে আছে। একটা জমকালো সিল্কের শাড়ি পরা, জরির কারুকার্য করা একটা কালো রঙের শাল গায়ে জড়ানো। খোঁপায় ও বাহুতে ফুলের অলঙ্কার। শুধু জেগে থাকার জন্যই নয়, রাত্রে তার এই বিশেষ সাজ-সজ্জা দেখেও বিস্মিত হলো গঙ্গানারায়ণ। এসব কী ব্যাপার?
সংলগ্ন ছোট ঘরটিতে গিয়ে বস্ত্র পরিবর্তন করার পর এবার ফিরে এসে গঙ্গানারায়ণ দেখলো, লীলাবতীর.. দু চোখে জল।
গঙ্গানারায়ণ জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েচে? মায়ের জন্য মন কেমন কচ্চে? তা এই রাত্তিরেই তুমি সেজোগুঁজে বসেচো, সেখানে যাবার জন্য নাকি?
লীলাবতী বললো, না।
–তবে?
লীলাবতী উঠে এসে গঙ্গানারায়ণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো, আপনি আমার সঙ্গে কতা বলেন না। কেন? বাপের বাড়িতে গেলেই আমার গঙ্গাজল জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁ, ল, তোর বর তোর সঙ্গে সারারাত জেগে বকর বকর করে? তোর বর সোহাগ করে?
গঙ্গানারায়ণ বললো, সারারাত জেগে বকর বকর করবো, আমি কি পাগল নাকি?
লীলাবতী ওষ্ঠ ফুলিয়ে বললো, গঙ্গাজল বলে যে ওর বর নিজেও সারারাত জাগে আর ওকেও জাগিয়ে রাকে।
গঙ্গানারায়ণ বললো, তোমার গঙ্গাজলের বর নিশ্চয়ই তাহলে সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমোয়। নিষ্কমার টেকি! আমায় সারাদিন অনেক কাজ করতে হয়।
—আমি বাপের বাড়ি গেলে ওরা যে হাসে আমায় নিয়ে।
–হাসুক! শোনো, নবীন তোমায় পড়াতে চায়, তুমি পড়ে না কেন? সে আমার কাছে নালিশ কচ্চিল।
—ঐটুকু ছেলের মুকে পাকাপাকা কতা, ও যা বলে তাই আমি শুনবো নাকি! ও কি আমার গুরুঠাকুর!
—বেশ তো, তুমি অন্য কারুর কাছে পড়বে?
–না।
—কেন? মেমসাহেব এসে তোমায় পড়াবে। একবার পড়তে শিখলে দেখবে কত কী জানা যায়, কত আনন্দ পাবে।
—না, আমার দরকার নেই। পড়ালেখা করলে মেয়েমানুষের কপাল পোড়ে!
—বাজে কথা, এসব কে বলেছে তোমাকে!
—সবাই বলে। এই তো সুহাসিনীর কপাল পুড়লো!
—ছিঃ অমন কথা বলতে নেই। ওসব নির্বোধের মত কথা।
–আমার মাও বলেচে।
—এবার বাপের বাড়ি গিয়ে তোমার মা-কে বোঝাবে। তোমার কপাল পোড়া মানে তো আমার মরে যাওয়া। তাই যদি হতো, তাহলে কি আমি নিজে তোমাকে পড়াশুনোর কথা বলতুম?
—সুহাসিনীর বরও তো তাকে লেখাপড়া শেখাতো!
—সুহাসিনীর স্বামী মারা গ্যাচে কঠিন অসুখে। যারা লেখাপড়া শেখে না, তাদেরও ঐ অসুখ হয়। তারাও মারা যায়। শোনো, তোমাকে আমি একটা বই থেকে পড়ে শোনাচ্চি। ঐ কুলুঙ্গিতে যে তিনটে বই রয়েচে, তার সবের নীচের বইটা নিয়ে এসো তো!
—আপনি আনুন।
গঙ্গানারায়ণ উচ্চহাস্য করে বললো, কেন বই ছুলেই তোমার কপাল পুড়ে যাবে নাকি? আমি ছুঁলে কোনো দোষ নেই? হাঃ হাঃ হাঃ।
বইখানি নিয়ে এসে পাতা উল্টে এক জায়গায় থেমে গঙ্গানারায়ণ বললো, এই জায়গাটা শোনো। দুজন মেয়ে এস্থানে কথা বলচে। মনে করো, তুমি আর তোমার গঙ্গাজল। দুজনে আলাপচারি কচ্চে! শোনো, প্রথমে একজন প্রশ্ন কল্লো, ওলো এখন যে অনেক মেয়া মানুষ লেখাপড়া করিতে আরম্ভ করিল, এ কেমন ধারা। কালে ২ কতই হবে ইহা তোমার মনে কেমন লাগে।
তখন অন্যজন উত্তর দিচ্চে, তবে মন দিয়া শুন দিদি। সাহেবরা এই যে ব্যাপার আরম্ভ করিয়াছেন, ইহাতেই বুঝি এত কালের পর আমার কপাল ফিরিয়াছে। এমন জ্ঞান হয়।
প্রশ্ন : কেন গো। সেসকল পুরুষের কাজ। তাহাতে আমাদের ভাল মন্দ কি।
উত্তর : শুন লো। ইহাতে আমাদের ভাগ্য বড় ভাল বোধ হইতেছে, কেননা এদেশের স্ত্রীলোকেরা লেখাপড়া করে না, ইহাতেই তারা প্ৰায় পশুর মতন অজ্ঞান থাকে। কেবল ঘর-দ্বারের কাব্য-কর্ম করিয়া কাল কাটায়।
প্রশ্ন : ভাল। লেখা পড়া শিখিলে কি ঘরের কায কর্ম করিতে হয় না। স্ত্রীলোকের ঘর দ্বারের কাব্য রাঁধা বাড়া ছেলেপিলা প্রতিপালন না করিলে চলিবে কেন। তাহা কি পুরুষে করিবে।
উত্তর : না। পুরুষে করিবে কেন, স্ত্রীলোকেরই করিতে হয়। কিন্তু লেখাপড়াতে যদি কিছু জ্ঞান হয় তবে ঘরের কায কর্ম সারিয়া অবকাশ মতে দুই দণ্ড লেখা পড়া নিয়া থাকিলে মনস্থির থাকে, এবং আপনার গণ্ডাও বুঝিয়া পড়িয়া নিতে পারে।
প্রশ্ন : ভাল। একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। তোমার কথায় বুঝিলাম যে লেখা পড়া আবশ্যক বটে। কিন্তু সেকালের স্ত্রীলোকেরা কহেন যে লেখাপড়া যদি স্ত্রীলোকে করে তবে সে বিধবা হয়, এ কি সত্য কথা। যদি এটা সত্য হয় তবে মেনে আমি পড়িব না। কি জানি ভাঙ্গা কপাল যদি ভাঙ্গে।
উত্তর : না বইন না, সে কেবল কথার কথা। কারণ আমি আমার ঠাকুরানী দিদির ঠাঁই শুনিয়াছি যে কোন শাস্ত্রে। এমত লেখা নাই, যে মেয়া মানুষ পড়িলে রাঁড় হয়। কেবল গতর শোগা মাগিরা এ কথার সৃষ্টি করিয়া তিলে তাল করিয়াছে। যদি তাহা হইত। তবে কত স্ত্রীলোকের বিদ্যার কথা পুরানে শুনিয়াছি, ও বড় ২ মানুষের স্ত্রীলোকেরা প্রায় সকলেই লেড়াপাড়া করে এমত শুনিতে পাই। সংপ্ৰতি সাক্ষাতে দেখনা কেন, বিবিরা তো সাহেবের মতন লেখাপড়া জানে, তাহারা কেন রাঁড় হয় না।
লীলাবতী বললো, থাক, থাক, আমি আর শুনবো না। জানি এসব কত কোনো ফিরিঙ্গি বা স্নেচ্ছ লিকেচে। ওরা ঐ সব বলে আমাদের জাত মাত্তে চায়।
গঙ্গানারায়ণ বললো, ম্লেচ্ছ ফিরিঙ্গি নয়, এ বই গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার নামে এক খাঁটি ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতের লেখা। আর একটু শুনে দ্যাখে :
প্রশ্ন : ভাল। যদি দোষ নাই তবে এতদিন এ দেশের মেয়্যা মানুষে কেন শিখে নাই।
উত্তর : শুন লো। যখন স্ত্রীলোক মা বাপের বাড়ী থাকে, তখন তাহারা কেবল খেলাধূলা ও নাট্যরঙ্গ দেখিয়ে বেড়ায়। বাপ মায়ও লেখাপড়ার কথা কহেন না। কেবল কহেন যে ঘরের কায কর্ম রাঁধা বাড়া না শিখিলে পরের ঘর কন্না কেমন করিয়া চালাইবি। সংসারের কর্মে দেয়া থোয় শিখিলেই শ্বশুরবাড়ি সুখ্যাতি হবে। নতুবা অখ্যাতির সীমা নাই। কিন্তু জ্ঞানের কথা কিছুই কহেন না।
লীলাবতী বললো, আমি যখন ছোট ছিলুম, তখনো আমার বে হয়নিকো, আমার ভাই গুরুমশাইয়ের কাচে পড়তো, আমিও পাততাড়ি নিয়ে তার পাশে বসেচিলুম, অমনি আমার না পিসীমা এসে আমায় কান ধরে তুলে নে গেল আর বকে বকে বললো, মদ টেটি ছুড়ি, তুই ব্যাটাছেলের সমান হতে চাস? শেষে আমার মতন বেওয়া বিধবা মাগি হয়ে জীবন কাটাবি? সেই কতগুলান স্মরণে এলেই এখনো আমার বুক কাঁপে!
গঙ্গানারায়ণ গম্ভীরভাবে বললো, তোমার বাপের বাড়ির কোনো নিয়ম বা কারুর কথা এখানে খাটবে না। আমি আগামী মাস থেকেই তোমার জন্য মাস্টারনী ঠিক করবো।
লীলাবতী ভয়ার্ত গলায় বললো, আমার যে মাথায় বুদ্ধি নেই! লেখাপড়ার শক্ত শক্ত জিনিস আমার মাথায় ঢুকবে না।
গঙ্গানারায়ণের ইচ্ছে হলো হাতের বইখানা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এত অবোধকে সে কী করে মানুষ করবে? আর কোনো কথা না বলে বইখানি কুলুঙ্গিতে রেখে এসে সে শুয়ে পড়লো।
খানিক পরে সে টের পেল লীলাবতী তার বুকের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। এটা গঙ্গানারায়ণের নতুন অভিজ্ঞতা। এমন আগে ঘটেনি। সে ঘুমের ভান করে নিথর হয়ে রইলো।
লীলাবতী ফিসফিস করে বললো, আপনি ঘুমুচ্চেন? আপনি রাগ কল্লেন?
গঙ্গানারায়ণ কোনো উত্তর দিল না।
লীলাবতী আবার বললো, আচ্ছা, আমি পড়বো। আপনি নিজে পড়াবেন? মেমসাহেব দেখলেই আমার ভয় লাগে। আপনি পড়ালে আমার কোনো ভয় থাকবে না।
গঙ্গানারায়ণ বললো, ঠিক আচে, এখন ঘুমোও!
—আপনি আমায় একটুও সোহাগ করেন না। গঙ্গাজল বলছেল—
—তোমার গঙ্গাজল কী বলছিল, তা কাল শুনবো। আজি ঘুমোও।
—গঙ্গাজল বলছেল, তোর বর তোকে মা করে দিতে চায় না? তোর বরকে বলবি…
-ছিঃ, ওসব বাজে কথা আমি শুনতে চাই না।
।—গঙ্গাজল মা হয়েছে, আমি মা হবো না? সুহাসিনী মা হয়েচে, ক্ষেমঙ্করী মা হয়েচে, দুর্গাময়ী মা হয়েছে, আমি হইনি–সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। সবাই বলে, তোর বর তোকে পীরিত করে না।
—ওসব কথা কাল শুনবো। আজ এখন ঘুমোও, আমার ঘুম পেয়েচে, কাল সকালে আমার অনেক কাজ।
লীলাবতী গঙ্গানারায়ণকে আঁকড়ে ধরে তার বুকে মাথা ঘষতে ঘষতে এক সময় ঘুমিয়েই পড়লো। সে রজঃস্বলা হবার পর নারীমহল তাকে নানারকম শিক্ষা দিয়েছে পতিকে বশ করবার জন্য। বয়েসের তুলনায় লীলাবতী এখনো বেশ সরল, সে অতশত বোঝে না, সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ঘুমিয়ে পড়লো। তার সখীরা বলেছিল, রাত্রে বর যখন প্ৰথম ঘরে আসবে, তখন একটু সেজোগুঁজে কাঁদতে বসলেই কেল্লা ফতে হয়ে যাবে। কিন্তু তার বর তো তার কান্নাকে কোনো মূল্যই দিল না!
লীলাবতী ঘুমিয়ে পড়লেও গঙ্গানারায়ণ ঘুমোতে পারলো না। অনেকক্ষণ। চোখ থেকে ঘুম সম্পূর্ণ অন্তহিঁত হয়ে গেছে, সে কেবলই ছটফট করছে। কেন যে এই অস্থিরতা, তা সে নিজেই বুঝলো না। এক সময় সে উঠে বসলো।
লীলাবতীর বাহুবন্ধন শিথিল হয়ে গেছে, গঙ্গানারায়ণকে ছেড়ে সে এখন চিৎ হয়ে শয়ন। তার নিদ্ৰাপ্নত মুখখানিতে জানলা দিয়ে এসে পড়েছে। শেষ শীতের স্বচ্ছ জ্যোৎস্না। লীলাবতীর গা থেকে সরে গেছে লোপ।
গঙ্গানারায়ণের বিস্ময় ও মুগ্ধতা। হঠাৎ পাল্লা দিতে শুরু করলো। লীলাবতী যে এত সুরূপা, তা তো সে কোনোদিন জানেনি। অথবা কি এই জ্যোৎস্নার জন্যই তার মুখখানি এত অপরূপ দেখাচ্ছে!
সে বিড়বিড় করে বললো, ও শী ডাথ টিচু দা টর্চেস টু বার্ন ব্ৰাইট ! তারপর খুব সন্তৰ্পণে তার ধ্ৰুগড় রাখলো লীলাবতীর কপালে। তার মনে পড়ে যাচ্ছে তার পঠিত বিভিন্ন কাব্যের নারী-বর্ণনা।
লীলাবতীর একখানা হাত সে তার মুঠিতে তুলে নিয়ে আবার বললো, ইফ আই প্রোফেন উইথ মাই আনওয়াদিয়েস্ট হ্যাণ্ড দিস হোলি স্রাইন, দা জেণ্টল সিন ইজ দিস।।
গঙ্গানারায়ণ যেন আর গঙ্গানারায়ণ নয়, সে এখন শেক্সপীয়ারের কোনো নাট্যকাব্যের চরিত্র। রোমিও এর পর কী করেছিল? ও, দেন, ডিয়ার, সেইন্ট, লেট লিপস ড়ু হোয়াট হ্যাণ্ডস ড়ু! দে প্ৰে : গ্র্যাণ্ট দাউ, লেস্ট ফেইথ টার্ন টু ডিসপেয়ার।
গঙ্গানারায়ণ মুখ নীচু করে লীলাবতীর ওষ্ঠ চুম্বন করলো।
লীলাবতী ধড়মড় করে জেগে উঠে বললো, কে? কে? ওমা গো!
গঙ্গানারায়ণ আচ্ছন্নভাবে বলে চললো, সিন ফ্রম মাই লিপস? ও ট্রেসপাস সুইটলি আৰ্জড! গিভ মি মাই সিন এগেইন।
নাট্যের নির্দেশ মতন গঙ্গানারায়ণ আবার গাঢ়ভাবে চুম্বন করলো লীলাবতীকে।
লীলাবতী একেবারে গলে গিয়ে বললো, কী ভালো লাগচে, আমার মাথা বিমঝিমিয়ে উঠলো য্যানো-আমি গঙ্গাজলকে বলবো, আমার বরও আমায় সোহাগ করে, শুধু তোর বর একলা করে না।
গঙ্গানারায়ণ বললো, এখন কথা বলো না।
তারপর সে লীলাবতীকে শুইয়ে দিয়ে একদৃষ্টি চেয়ে রইলো তার দিকে। ইংরেজীর বদলে এবার তার মনে পড়লো সংস্কৃত। সে আপন মনে বলতে লাগলো :
তস্বী শ্যামা শিখরি-দশনা পাকবিম্বাধরোষ্ঠী
মধ্যে ক্ষমা চকিত-হরিণী প্ৰেক্ষণা নিম্ন-নাভিঃ!
শ্রেণী:ভারাদলস-গমনা স্তেক-নর্স্রা স্তনাভ্যাং
যা তত্ৰ স্যাদ যুবতি-বিষয়ে সৃষ্টি রাদ্যোব ধাতুঃ!
লীলাবতী জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি বিয়ের মন্ত্র পড়াচেন? আমাদের তো কবেই বে হয়ে গ্যাচে! গঙ্গানারায়ণ হেসে বললো, না। তুমি এসব বুঝবে না।
—একটু বুঝিয়ে বলুন না।
—সে তন্বী, সে শ্যামা, সুন্দর শিখর যুক্ত তার দাঁত, পাকা বিম্বফলের মতন তার ওষ্ঠ ও অধর, তার কোমর সরু, তার দৃষ্টি হরিণীর মতন চঞ্চল, গভীর তার নাভি, তার গতি নিতম্ব গুরুভারে শিথিল, স্তনের ভরে সে সামান্য ঝুঁকে রয়েচে—তুমি এরকম যাকে দেখবে, তোমার মনে হবে যুবতী সৃষ্টিতে সে-ই বিধাতার আদর্শ। কে লিখেচোন জানো? কালিদাস! তুমি কি এই রকম?
লীলাবতী বললো, কী জানি! সব কতার মানেই বুজলাম না যে!
গঙ্গানারায়ণ তখন বর্ণনা মতন লীলাবতীর দাঁত, ঠোঁট, স্তন, কোমর ও নাভিতে হাত দিয়ে বুঝিয়ে দিতে লাগলো এটা এই, এটা এই। তারপর লীলাবতীর ঘন ঘন নিশ্বাসে আন্দোলিত বক্ষে নিজ হস্ত স্থাপন করে আবার বললো, ঘটয়তি সুঘনে কুচ-যুগ গগনে মৃগমদ রুচি রুচিতে। মনিসরমমলং তারক-পটলং নখ-পদ-শশি-ভূষিতে…। এই স্তনে কি সত্যিই নখরাঘাত করে রক্ত বয়ার করে দিতে হয়? গঙ্গানারায়ণ সত্যিই লীলাবতীর বক্ষের কচুলি সরিয়ে স্তনের ওপর পাঁচ আঙুল চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো, লাগচে? তোমার ব্যথা লাগচে?
লীলাবতী বললো, আঃ, আঃ, আঃ!
এরপর কুমারসম্ভবের বর্ণনা অনুযায়ী ঠিক মিলিয়ে মিলিয়ে গঙ্গানারায়ণ লীলাবতীর সমস্ত বস্ত্ৰ উন্মোচিত করে রতি ক্রিয়া শুরু করলো।
দুজনেই এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ, কিন্তু আনন্দের যেন অবধি নেই। লীলাবতীর বেশী আনন্দ এইজন্য যে সে এখন থেকে তার গঙ্গাজল এবং অন্যান্য সখীদের সমপৰ্যায়ভুক্ত হয়ে গেল। তাদের কাছে এবার সে সগর্বে এই ঘটনার বর্ণনা দিতে পারবে বারবার, যেমন ওরা দেয়। উচ্ছ্বাসে লীলাবতী এইসব কথা গঙ্গানারায়ণকে শোনাতে যাচ্ছিল, গঙ্গানারায়ণ আকুলভাবে বলতে লাগলো, চুপ করো, চুপ করো, এখন কথা কয়ো না! এবং সেই পরম উৎসুক নারী শরীরকে সম্পূর্ণ গ্রহণ করার পর সে মনে মনে ভাবতে লাগলো, এ যেন লীলাবতী নয়, সে বিন্দুবাসিনীকেই ভোগ করছে।