৩০. ফিরে দেখি সর্বত্র বরফ

ফিরে দেখি সর্বত্র বরফ, দোরের গোড়ায় আবদুর রহমান আর ঘরের ভিতর গনগনে আগুন। আমি তখন শীতে জমে গিয়েছি।

আবদুর রহমান হাসিমুখে আমার হাতে চুমো খেল, কিন্তু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তার মুখ শুকিয়ে গেল। দাঁড়ান হুজুর বলে আমাকে কোলে করে এক লাফে উঠানে নেবে গেল। এক মুঠো পেঁজা বরফ হাতে নিয়ে আমার নাক আর কানের ডগা সেই বরফ দিয়ে ঘন ঘন ঘষে আর ভীতকণ্ঠে জিজ্ঞেস করে চিন্ চিন্ করছে কিনা। আমি ভাবলুম, এও বুঝি পানশিরের কোনো জঙ্গলী অভ্যর্থনার আদিখ্যেতা। বিরক্ত হয়ে বললুম, চল, চল, ঘরের ভিতর চল, শীতে আমার হাড়মাস জমে গিয়েছে। আবদুর রহমান কিন্তু তখন তার শালপ্রাংশু মহাবাহু দিয়ে আমাকে এমনি জড়িয়ে ধরে দুকানে বরফ ঘষছে যে, আমি কেন, কিকড় সিংয়েরও সাধ্যি নেই যে, সে-বহ ছিন্ন করে বেরতে পারে। আবদুর রহমান শুধু বরফ ঘষে আর একটানা মন্ত্রোচ্চারণের মত শুধায়, চিন্ চিন্ করছে, চিন্ চিন্ করছে? শেষটায় অনুভব করলুম সত্যই নাক আর কানের ডগায় ঝি ঝি ছাড়ার সময় যে রকম চিন্ চিক্ করে সে রকম হতে আরম্ভ করেছে। আবদুর রহমানকে সে খবরটা দেওয়া মাত্রই সে আমাকে কোলে করে আরেক লাফে ঘরে ঢুকল, কিন্তু বসাল আগুন থেকে দূরে ঘরের আরেক কোণে। রোদে-পোড়া মোষ যে রকম কাদার দিকে ধায়, আমিও সেই রকম আগুনের দিকে যতই ধাওয়া করি, আবদুর রহমান ততই আমাকে ঠেকিয়ে রেখে বলে, সর্বাঙ্গে রক্তচলাচল শুরু হোক, হুজুর, তারপর যত খুশী আগুন পোয়াবেন!

ততক্ষণে সে আমার জুতো খুলে পায়ের আঙুলগুলো পরখ করে দেখছে সেগুলোর রঙ কতটা নীল। আবদুর রহমানের চেহারা থেকে আন্দাজ করলুম নীল রঙের প্রতি তার গভীর বিতৃষ্ণা। ঘষে ঘষে আঙুলগুলোকে যখন বেশ বেগুনী করে ফেলল তখন সে চেয়ারসুদ্ধ আমাকে আগুনের পাশে এনে বসাল। আমি ততক্ষণে দস্তানা খুলতে গিয়ে দেখি কমলী ছোড়তে চায় না, আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গিয়েছে। দুষ্ট ছেলে যেরকম খাওয়ার সময় মাকে পেট কামড়ানোর খবর দেয় না আমিও ঠিক সেই রকম আঙুল ফোলার খবরটা চেপে গেলুম। সরল আবদুর রহমান ওদিকে আমার পায়ের তদারক করছে আমি এদিকে আগুনের সামনে হাত বাড়িয়ে আরাম করে দেখি, কলাগাছ বটগাছ হতে চলেছে। ততক্ষণে আবদুর রহমান লক্ষ্য করে ফেলেছে যে, আমার হাত তখনন দস্তানা-পরা। টমাটোর মত লাল মুখ করে আমাকে শুধাল, হাতের আঙুলও যে জমে গিয়েছে সে কথাটা আমায় বললেন না কেন? এই তার প্রথম রাগ দেখলুম। ভৃত্য আবদুর রহমানের গলায় আমীর আবদুর রহমানের গলা শুনতে পেলুম। আমি চি চি করে কি একটা বলতে যাচ্ছিলুম। আমার দিকে কান না দিয়ে বলল, চা খাওয়ার পরও যদি দস্তানা না থােলে তবে আমি কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলব?

আমি শুধালুম, কি কাটবে? হাত না দস্তানা?

আবদুর রহমান অত্যন্ত বেরসিক। আমি আবো ঘাবড়ে গেলুম।

কিন্তু শুধু আমিই ঘাবড়াইনি। দস্তানা পর্যন্ত আবদুর রহমানের গলা শুনে বুঝতে পেরেছে যে, সে চটে গেলে দস্তানা, দস্ত কাউকে আস্ত রাখবে না। চায়ের পেয়ালায় হাত দেবার পুর্বেই অক্টোপাশের পঞ্চপাশ খসে গেল।

সে রাত্রে আবদুর রহমান আমাকে সাত-তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিয়ে আপন হাতে বিছানায় শুইয়ে দিল। লেপের তলায় আগেই গরম জলের বোতল ফ্ল্যানেলে পেঁচিয়ে রেখে দিয়েছিল। সেটাতে পা ঠেকিয়ে আমি মুনি-ঋষিদের সিংহাসনে পদাঘাত করার সুখ অনুভব করলুম। পেটের ভিতরে চর্বির ঘন শুরুয়া, লেপে-চাপা গরম বোতলের ওম, আর আবদুর রহমানের বাঘের থাবার উলাই-মলাই তিনে মিলে এক পলকেই চোখের পলক বন্ধ করে ফেলেছিলুম।

সমস্ত কাহিনীটি যে এত বাখানিয়া বললুম তার প্রধান কারণ, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ বই কোনো দিন কারো কোনো কাজে লাগবে না। আর আজকের দিনের ভারতদণ্ডিন কমুনিস্টরা বলেন, যে-আর্ট কাজে লাগে না সে-আর্ট আর্টই নয়। অর্থাৎ শিবলিঙ্গ দিয়ে যদি দেয়ালে মশারির পেরেক পোতা না যায় তবে সে শিবলিঙ্গের কোন গুণ নাই তার কপালে আগুন।

তবু যদি কোনো দিন পাকচক্রে ফ্রস্টবি হন তবে প্রলেতারিয়ার প্রতীক ওঝা আবদুর রহমানকে স্মরণ করে তার দাওয়াই চালাবেন। সেরে উঠবেন নিশ্চয়ই, এবং তখন যেন আপনার কৃতজ্ঞতা আবদুর রহমানের দিকে ধায়। আবদুর রহমানের প্রাপ্য প্রশংসা আমি কেতাবের মালিকরূপে কেড়ে নিয়ে শোষক, বুর্জুয়া নামে পরিচিত হতে চাইনে।

পরদিন সকাল বেলা দেখি, তিন মাইল বরফ ভেঙ্গে বৃদ্ধ মীর আসলম এসে উপস্থিত। বললেন, আত্মজনের বাচনিক অবগত হইলাম তুমি কল্য রজনীর প্রথম যামে প্রত্যাবর্তন করিয়াছ। কুশলসন্দেশ কহ। শৈত্যাধিক্যে পথমধ্যে অত্যধিক ক্লেশ হয় নাই তো?

আমি আবদুর রহমানের কবিরাজির সালঙ্কার বর্ণনা দিলে মীর আসলম বললেন, নাতিদীর্ঘদিবস তথা শর্বরীর প্রথম যামই স্বতশ্চলশকটাররাহীকে শিশির-বিদ্ধ করিতে সক্ষম। কৃশানুসংশ্রব হইতে রক্ষা করিয়া তোমার পরিচারক বিচক্ষণের কর্ম করিয়াছে। অপিচ লক্ষ্য করে নাই, স্বদেশে আতপতাপে দগ্ধ হইয়া স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন মাত্রই সুশীলা জননী তদ্দশ্যেই শীতল জল পান করিতে নিষেধ করেন, অবগাহনক উন্মোচন করেন না? সঙ্কটদ্বয় আয়ুর্বেদের একই সূত্রে গ্রথিত।

হক্‌ কথা।

বললুম, ইয়োরোপে আমান উল্লার সম্বর্ধনা নিয়ে হিন্দুস্থানের হিন্দু-মুসলমান বড়ই গর্ব অনুভব করছে।

মীর আসলম গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, বিদেশে সম্মান-প্রাপ্ত নৃপতির সম্মান স্বদেশে লাঘব হয়।

এ যেন চাণক্য শ্লোকের তৃতীয় ছত্র। ভাবলুম, জিজ্ঞেস করি, মহাশয় ভারতবর্ষে কোন্ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন, মুসলমানী না হিন্দুয়ানী, কিন্তু চেপে গিয়ে বললুম, আমান উল্লা বিদেশে সম্মান পাওয়াতে স্বদেশে সংস্কার কর্ম করবার সুবিধা পাবেন না?

মীর আসলম বললেন, সংস্কার-পঙ্কে যে নৃপতি কণ্ঠমগ্ন, বৈদেশিক সম্মানমুকুটের গুরুভার তাঁহাকে অধিকতর নিমজ্জিত করিবে।

আমি বললুম, রানী সুরাইয়াকে দেখবার জন্য প্যারিসের ছেলে-বুড়ো পর্যন্ত রাস্তায় ভিড় করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

মীর আসলম বললেন, ভদ্র, অদ্য যদি তুমি তোমার পদদ্বয়ের ব্যবহার পরিত্যাগপূর্বক মস্তকোপরি দণ্ডায়মান হও তবে তোমার মত স্বল্পপরিচিত মনুষেরও এবম্বিধ বাতুলতা নিরীক্ষণ করিবার জন্য কাবুলহট্ট সম্মিলিত হইবে।

আমি বললুম, কী মুশকিল, তুলনাটা আদপেই ঠিক হল না; রানী তো আর কোনোরকম পাগলামি করছেন না।

মীর আসলম বললেন, মুসলমান রমণীর পক্ষে তুমি অন্য কোন্ বাতুলতা প্রত্যাশা করো? অবগুণ্ঠন উন্মোচন করিয়া প্রশস্ত রাজবত্মে কোন্ মুসলমান রমণী এবম্বিধ অশাস্ত্রীয় কর্ম করিতে পারে?

আমি বললুম, আপনি আমার চেয়ে ঢের বেশী কুরান-হদীস পড়েছেন; মুখ দেখানো তো আর কুরান-হদীসে বারণ নেই।

মীর আসলম বললেন, আমার ব্যক্তিগত শাস্ত্রজ্ঞান এস্থলে অবান্তর। পার্বত্য উপজাতির শাস্ত্রজ্ঞান এস্থলে প্রযোজ্য। তাহা তোমার অজ্ঞাত নহে।।

আমি আলোচনাটা হাল্কা করবার জন্য বললুম, জানেন, ফরাসী ভাষায় সুরীর শব্দের অর্থ মৃদু হাস্য। রানী সুরাইয়ার নাম তাই প্যারিসের সক্কলের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

মীর আসলম বললেন, আমীর হবীব উল্লার নামের অর্থ প্রিয়তম বান্ধব; ইংরেজ শতবার এই শব্দার্থের প্রতি আমীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করত শপথ গ্রহণ করিয়াছে। কিন্তু যখন শক্তহস্তের লৌহকীলক তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিবার উপক্রম করিল, তখন হবীব উল্লার কোন হবীব তাঁহাকে স্মরণ করিল? অপিচ, হবীব উল্লার হবীববৰ্গই তাহাকে পুলসিরাতের (বৈতরণীর) প্রান্তদেশে অকারণে, অসময়ে দণ্ডায়মান করাইয়া দিল।

আমি বললুম, ও তো পুরোনো কাসুন্দি। কিন্তু ঠিক করে বলুন তো আপনি কি আমান উল্লার সংস্কার পছন্দ করেন না?

বললেন, বৎস, গুরুর পদসেবা করিয়া আমি শিক্ষালাভ করিয়াছি, আমি শিক্ষাসংস্কারের বিরুদ্ধে কেন দণ্ডায়মান হইব? কিন্তু আমান উল্লা যে ফিরিঙ্গী-শিক্ষা প্রবর্তনাভিলাষী আমি তাহা ভারতবর্ষে দর্শন করিয়া ঘৃণাবোধ করিয়াছি। কিন্তু ভদ্র, তোমা, সুমিষ্ট চৈনিক যুষ পরিত্যাগ করিয়া এই তিক্ত বিষয়ের আলোচনায় কি লভ্য? যুষপত্র কি তুমি স্বদেশ হইতে আনয়ন করিয়াছ? গুরুগৃহের সুগন্ধ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করিতেছে।

আমি বললুম, আপনার জন্যও এক প্যাকেট এনেছি।

মীর আসলম সন্দিগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বললেন, কিন্তু ভদ্র, শুদ্ধবণিকের ন্যায্য প্রাপ্য অর্পণ করিয়াছ সত্য?

আমি বললুম, আপনার কোনো ভয় নেই। কাবুল কাস্টম হৌসকে ফাঁকি দেবার মত এলেম আমার পেটে নেই। বিছানার ছারপোকাকে পর্যন্ত সেখানে পাসপোর্ট দেখাতে হয়, মাশুল দিতে হয়। আমি তাদের সব অন্যায্য দাবীদাওয়া কড়ায়-গণ্ডায় শোধ করেছি। আপনাকে হারাম খাইয়ে আমি কি আখেরে জাহান্নমে যাব?

মীর আসলম আমাকে শীতকালে কোন্ কোন্ বিষয়ে সাবধান হতে হয় সে সম্বন্ধে অনেক উপদেশ দিলেন, আবদুর রহমানকে ডেকে ঘৃতলবণতৈলতণ্ডুলবস্ত্রইন্ধন সম্বন্ধে নানা সুযুক্তি দিয়ে বিদায় নিলেন।

খবর পেয়ে তারপর এলেন মৌলানা। আমি আমান উল্লার বিদেশে সম্মান পাওয়া, আর সে সম্বন্ধে মীর আসলমের মন্তব্য তাকে বললুম। মৌলানা বললেন, আমান উল্লা যাদের কথায় চলেন, তারা তো বাদশাহের সম্মানে নিজেদের সম্মানিত মনে করছে। তারা বলছে, মুস্তফা কামাল যদি তুর্কীকে, রেজা শাহ যদি ইরানকে প্রগতির পথে চালাতে পারেন, তবে আমান উল্লাই বা পারবেন না কেন? এই হল তাদের মনের ভাব; কথাটা খুলে বলার প্রয়োজন পর্যন্ত বোধ করে না। কারণ কোনো রকম বাধাও তো কেউ দিচ্ছে না।

আমি বললুম, কিন্তু মৌলানা, কতকগুলো সংস্কারের প্রয়োজন আমি মোটেই বুঝে উঠতে পারিনে। এই ধরো না শুক্রবারের বদলে বৃহস্পতিবার ছুটির দিন করা।

মৌলানা বললেন, শুক্রবার ছুটির দিন করলে জুম্মার নমাজের হিড়িকে সমস্ত দিনটা কেটে যায়, ফালতো কাজ-কর্ম করার ফুরসত পাওয়া যায় না। তাই আমান উল্লা দিয়েছেন সমস্ত বৃহস্পতিবার দিন ছুটি, আর শুক্রবারে জুম্মার নমাজের জন্য আধ ঘণ্টার বদলে এক ঘণ্টার ছুটি। কিন্তু জানো, আমি আরেকটা কারণ বের করেছি। এই দেখ না অ্যারোপ্লেনে করে যদি তুমি শান্তিনিকেতনের ছুটির দিন বুধবারে বেরোও, এখানে পৌঁছবে ছুটির দিন বৃহস্পতিবারে, তারপর ইরাক পৌঁছবে শুক্রবারে সেও ছুটির দিন, তারপরের দিন প্যালেস্টাইনে সেখানে ইহুদীদের জন্য শনিবারে ছুটি, তারপরের দিন রবিবারে ইয়োরোপ, তারপরের দিন সাউথ-সীআয়লেণ্ডে, সেখানে তো তামাম হপ্তা ছুটি।

আমি বললুম, উত্তম আবিষ্কার করেছ, কিন্তু বেশ কিছুদিনের ছুটি নিয়ে এখানে এসেছ তোত? না হলে বরফ ভেঙে কাবুলে ফিরবে কি করে?

মৌলানা বললেন, দু-একদিনের মধ্যেই বরফের উপর পায়েচলার পথ পড়ে যাবে; আসতে যেতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু আমি চললুম দেশে, বউকে নিয়ে আসতে। বেনওয়া সায়েব মত দিয়েছেন, তুমি কি বল?

আমি শুধালুম, বউ রাজী আছেন? মৌলানা বললেন, হাঁ।

আমি বললুম, তবে আর কাবুল-অমৃতসরে প্লেবিসি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন? তোমাদেরই ভাষায় তো রয়েছে বাপু,–

মিয়া বিবি রাজী
কিয়া করে কাজী?

মনে মনে বললুম, বগদানফ গেছেন, তোমার দাড়িটির দর্শনও এখন আর কিছু দিনের তরে পাব না। নতুন বউয়ের কা তব কান্তা হতে অন্তত ছটি মাস লাগার কথা।

মৌলানা চলে যাওয়ার পর আবদুর রহমানকে ডেকে বললুম, দাও তো হে কুর্সিখানা জানালার কাছে বসিয়ে; বাকি শীতটা তোমার ঐ বরফ দেখেই কাটাব।

আবদুর রহমানের বর্ণনামাফিক সব রকমেরই বরফ পড়ল। কখনো পেঁজা পেঁজা কখনো গাদা গাদা, কখনো ঘূর্ণিবায়ুর চক্কর খেয়ে দশদিক অন্ধকার করে, কখনো আস্বচ্ছ যবনিকার মত গিরিপ্রান্তর ঝাপসা করে দিয়ে; কখনো অতি কাছে আমারই বাতায়ন পাশে, কখনো বহুদূরে সানুশ্লিষ্ট হয়ে, শিখর চুম্বন করে। আস্তে আস্তে সব কিছু ঢাকা পড়ে গেল, শুধু পত্ৰবিবর্জিত চিনার গাছের সারি দেখে মনে হয় দাঁত ভাঙা পুরোনো চিরুণীখানা ঠাকুরমা যেন দেয়ালের গায়ে খাড়া করে রেখে বরফের পাকা চুল এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

কিন্তু আবদুর রহমান মর্মাহত। আমাকে প্রতিবার চা দেবার সময় একবার করে বাইরের দিকে তাকায় আর আর্তস্বরে বলে, না হুজুর, এ বরফ ঠিক বরফ নয়। এ শহুরে বরফ, বাবুয়ানী বরফ। সত্যিকার খাঁটি বরফ পড়ে পানশিরে। চেয়ে দেখুন বরফের চাপে এখনো গেট বন্ধ হয়নি। মানুষ এখনো দিব্যি চলাফেরা করছে, ফেঁসে যাচ্ছে না।

আবদুর রহমানের ভয় পাছে আমাকে বোকা পেয়ে কাবুল উপত্যকা তার ভেজাল বরফ গছিয়ে দেয়। নিতান্তই যদি কিনতে হয় তবে যেন আমি কিনি আসল, খাঁটী মাল মেড ইন পানশির।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *