এবারে পুলিস হারীতকে মারধর করলো না কেন, তা হারীত নিজেই বুঝতে পারলো না। পুলিসের গাড়িতে ওঠার পরই হারীত ধরে নিয়েছিল, বুড়ো হাড়ে সে আর মার সহ্য করতে পারবে না। এবারে পুলিস তাকে শেষ করে দেবে। কিন্তু একটা রুলের আঘাতও পড়লো না তার শরীরে, তার বদলে শুধু জেরা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। সে জেরারও কোনো মাথা মুণ্ডু নেই, পুলিস যেন সব কথাই জানে, তবু সেইসব কথাই তারা আবার হারীতের মুখ দিয়ে বলাতে চায়।
সেদিন চন্দ্রার আশ্রমে পুলিসের কাণ্ডকারখানা দেখে হারীত হাঁ হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিনের ব্যবধান, হারীতের মুখভর্তি দাড়ি গোঁফ এবং শরীরে সাধুর পোশাক সত্ত্বেও পুলিসদের একজন তাকে চিনতে পেরে নাম ধরে ডেকেছিল। তবে তখুনি তাকে হাতকড়াও পরায়নি কিংবা মাথার চুল খামচে ধরে শালা-হারামজাদাও বলেনি। বরং আপনি আজ্ঞে সম্বোধন করে মিষ্টিভাবে বলেছিল, আপনি বসুন হারীতবাবু, আপনার সঙ্গে পরে কথা হবে।
পুলিস প্রথমে প্রমীলা আশ্রম তন্নতন্ন করে সার্চ করলো। তারা নকশালদের খোঁজ করতে এসেছিল। হারীতের ধারণা, পুলিসের কখনো ভুল হয় না, তারা যা খুঁজতে এসেছে তা পাবেই। চন্দ্রা একটুও ভয় পায়নি, তার মুখের একটা রেখাও কাঁপেনি, বাঘছালের আসন ছেড়ে সে। একবারও উঠলো না পর্যন্ত। গোটা আশ্রমটা খুঁজে খালি হাতে ফিরে আসার পরে চন্দ্রা তীক্ষ্ণ বিদ্রূপের সুরে বলেছিল, পেছন দিকে একটা নতুন গোয়ালঘর করা হয়েছে, সেটা দেখেছেন? চারটে গরু রাখা হয়েছে সেখানে। গোয়ালঘরটাও একবার দেখে আসুন, যদি সেখানে কিছু লুকোনো থাকে! তবে সাবধান, একটা ভাগলপুরী গরু আছে, সেটা বড় গুতোয়!
পুলিস আবার গোয়ালঘরটা দেখতে গেল এবং ফিরে এলো খালি হাতে। চন্দ্রার তুলনায় অসমঞ্জ বরং অনেকটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন, মুখখানা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল, সার্চ করার সময় তিনি সর্বক্ষণ পুলিসের সঙ্গে সঙ্গে থেকেছেন। পুলিস যখন সত্যিই কিছু পেল না, তখন অসমঞ্জ ব্যক্তিত্ব ফিরে পেয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন। তিনি বলতে গেলেন, আপনারা মিছিমিছি একটা আশ্রমে ঢুকে হ্যারাস করলেন, আমি পুলিস কমিশনারের কাছে,…খবরের কাগজে
চন্দ্রা হাত তুলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল, তুমি চুপ করো, অসম! ওঁদের ডিউটি ওঁরা। করেছেন। ওঁদের যখন একটা সন্দেহ হয়েছিল
পুলিস অফিসার দু’জনের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রা বলেছিল, তা হলে এবার স্বীকার করছেন, আপনাদের ভুল হয়েছে? আপনারা এই আশ্রমে অযথা উৎপাত করতে এসেছেন!
পুলিস দু’জন কোনো কথা না বলে অপ্রস্তুত ভাবে হাসলো।
চন্দ্রা বললো, ভুল করলে শাস্তি পেতে হয়। আমি পুলিস কমিশনারের কাছে নালিস করতে চাই না, খবরের কাগজেও কিছু জানাতে চাই না। আপনারা দু’জন কান ধরে পাঁচবার ওঠবোস করুন, তাহলেই আমি খুশি হব।
হারীতের চোখ দুটি কপালে ওঠার উপক্রম হয়েছিল। এই স্ত্রীলোকটির এত তেজ, পুলিসকে কান ধরতে বলে? চন্দ্রার চোখ দিয়ে যেন জ্যোতি বেরুচ্ছে, সত্যিই কিছু অলৌকিক শক্তি আছে। নাকি তার?
এস বি অফিসার অমরেশ দাশগুপ্ত বাচ্চা ছেলের মতন লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকে বলেছিলেন, আজ্ঞে, সেই ইস্কুল-টিস্কুল ছাড়ার পর তো আর কেউ কান ধরে ওঠবোস করতে বলেনি, তাই ওটা ঠিক পারবো না। আপনি বরং অন্য কিছু শাস্তির কথা ভাবুন। তার আগে। আপনাকে গোটা কতক প্রশ্ন করতে পারি?
অসমঞ্জ গলা গরম করে বললেন, আপনারা যথেষ্ট সময় নষ্ট করেছেন। আর কোনো প্রশ্ন। নয়। আমাদের এখন জরুরি কাজ আছে।
বিনয়ের অবতার হয়ে বিনায়ক চৌধুরী বললেন, সত্যি, অনেকটা সময় নিয়ে নিয়েছি, আর মিনিট পাঁচেকের বেশী লাগবে না। মিঃ দাশগুপ্ত, আপনিই শুরু করুন তা হলে?
অমরেশ দাশগুপ্ত পকেট থেকে একটা ছোট্ট নোট বই বার করে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বললেন, কী যেন নামটা? আপনাদের আশ্রমের সুপার, এই যে হ্যাঁ, পেয়েছি, পেয়েছি, কুমুদিনী, কুমুদিনী সাহা, তিনি এখন কোথায়?
অসমঞ্জর দিকে একবার চোখাচোখি করে চন্দ্রা বললো, হ্যাঁ, সে আগে ছিল এখানে। এখন চলে গেছে।
–কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে, না, ছুটিতে বাড়ি-টাড়ি চলে গেছে?
–এখানে কেউ চাকরি করে না, সুতরাং কাজ ছাড়ার প্রশ্ন ওঠে না। কুমুদিনীর কোথাও কোনো বাড়িঘর আছে কি না তাও আমরা জানি না। এখানে তার মন টেকেনি, অনেকে তাকে বাঘিনী বলে খেপাতো, আমি বারণ করলেও আড়ালে কেউ কেউ বলতো, সেইজন্য সে এখান থেকে চলে গিয়ে সম্ভবত অন্য কোনো আশ্রমে যোগ দিয়েছে।
–সম্ভবত বলছেন, ঠিক কোন আশ্রমে তিনি যোগ দিয়েছেন, তা আপনি জানেন না?
–না, জানি না।
–আপনি দু’ দিন আগে নৈহাটি গিয়েছিলেন?
–আমি কোথায় যাই, না যাই, সে সম্পর্কেও আপনাদের কৈফিয়ৎ দিতে হবে?
–না, না, কৈফিয়ৎ নয়, ও ভাবে ধরছেন কেন। সামান্য দু-একটা ইনফরমেশন। নৈহাটিতে আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?
–নৈহাটিতে একজন একটা ছোট বাড়ি দান করেছে, সেখানে আর একটি আশ্রম খোলা হচ্ছে। সেটাই তদারকি করতে গিয়েছিলাম।
–তার মানে, আপনাদের প্রমীলা আশ্রমের একটা ব্রাঞ্চ খুলছেন নৈহাটিতে, এই তো! এখানকার এই আশ্রমে অনাথা মেয়েদের রাখা হয়, ঐ নৈহাটির আশ্রমে কাদের রাখা হবে?
–সেখানেও অসহায় মেয়েদেরই রাখা হবে! অলরেডি ছ’-সাতজনকে রাখাও হয়েছে।
–আমি যদি বলি, নৈহাটির সেই আশ্রমে একটি মেয়ে নেই, সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল কয়েকজন আহত নকশাল ছেলেকে? তাদের মধ্যে দু’জন আবার দাগী ক্রিমিনাল, এখনকার ভাষায় লুমপেন প্রলেতারিয়েত। আপনি পরশুদিন একজন ডাক্তার নিয়ে গিয়েছিলেন। নৈহাটির সেই বাড়িতে।
বিনায়ক চৌধুরী কবজি উল্টে ঘড়ি দেখে বললেন, এবার ওয়াইণ্ড আপ করুন! পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে।
যেন খুব খুদে খুদে অক্ষর পড়তে হচ্ছে, এইভাবে নোট বুকটাকে প্রায় চোখের সামনে এনে অমরেশ দাশগুপ্ত বললেন, হ্যাঁ, নৈহাটির আশ্রম সার্চ করে পাওয়া গেছে দুটি রিভলভার, একুশটা বোমা, তিনটে পাইপগান, চন্দ্রা দেবীর ওখানকার একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাস বই, জেলের কয়েদীদের তিনটে জামা, রিসেন্টলি দমদম জেল ব্রেক থেকে পালানো চার-পাঁচজন ওখানে ছিল, তাদের মধ্যে দু’জন ধরা পড়েছে অবশ্য।
ফট করে হারাতের দিকে মুখ ফিরিয়ে তিনি বললেন, আপনার ছেলে সুচিরতও নৈহাটির বাড়িতে ছিল, কিন্তু এবারেও সে পালিয়েছে, তবে বেশী দূর যেতে পারবে না।
আবার চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, কুমুদিনী সাহাকে আপনি সেই নকশাল আশ্রম চালাবার ভার দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তা ভদ্রমহিলার বাঘিনী নামটা সার্থক, রেজিস্ট করেছিলেন খুব, শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকেও ধরে আনা হয়েছে, বাইরে গাড়িতেই আছেন।
ফিক করে হেসে ফেলে তিনি বললেন, তাহলেই বুঝতে পারছেন, চন্দ্রা দেবী, ভুল আমাদের হয়নি, এবারে আর আপনি আমাদের কোনো শাস্তি দিতে পারছেন না। আপনি তৈরি হয়ে নিন, একটু যেতে হবে আমাদের সঙ্গে।
অসম বললেন, এসব কী বলছেন আপনারা? সব মিথ্যে কথা! চন্দ্রাকে আপনারা ধরে নিয়ে যাবেন? শী ইজ আ হোলি পারসন, স্পিরিচুয়াল লীডার অফ সো মেনি ডিভোটিজ! আমি আগে একজন ল-ইয়ার ডেকে আনবো।
বিনায়ক চৌধুরী বললেন, আজকাল আর ল-ইয়ার লাগে না, আমরা এমনিই অ্যারেস্ট করতে পারি। চ্যাঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই।
অমরেশ দাশগুপ্ত বললেন, অসমঞ্জবাবু, আপনি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের রীডার, এই আশ্রমের অন্যতম ট্রাস্টি, আপনাদের ট্রাস্ট ডিডে কি নৈহাটি ব্রাঞ্চেরও নাম আছে? মানে, নৈহাটি আশ্রমের কোনো দায়িত্বও কি আপনাকে নিতে হয়?
পাংশুমুখে অসমঞ্জ বললেন, না, না, না, নৈহাটি আশ্রমের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আমি কিছুই জানি না! সেখানে যে একটা আশ্রম খোলা হয়েছে, সে কথাও আমাকে জানানো হয়নি!
–দেন, উই হ্যাভ নাথিং এগেইনস্ট ইউ! এই আশ্রম সার্চ করে কোনোরকম ইনক্রিমিনেটিং অবজেক্টস পাওয়া যায়নি, সুতরাং এ আশ্রম যেমন চলছে তেমনি চলতে পারে। প্রার্থনা-ট্রার্থনা শেষ হয়ে যাবার পর, বাইরের লোকজন সব চলে গেলে আমরা এসেছি। ব্যান্ড পাবলিসিটি আমরা দিতে চাইনি। শুধু চন্দ্রা দেবী আপাতত অ্যাবসেন্ট থাকবেন!
চন্দ্রা শিরদাঁড়া সোজা করে বসে একদৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে চেয়ে আছে।
অমরেশ দাশগুপ্ত বললেন, চন্দ্রা দেবী, আপনি যদি কিছু পোশাক-টোশাক সঙ্গে নিতে চান, নিতে পারেন।
চন্দ্রা মুখ ফিরিয়ে আস্তে আস্তে বললো, পুলিসে চাকরি করলেও আপনারা তো এদেশেরই মানুষ? আদর্শবাদী, বিপ্লবী ছেলেগুলোকে আপনারা ক্রিমিনাল সাজাচ্ছেন, যখন তখন গুলি করে মারছেন, আপনাদের কি বিবেক বলে কিছু নেই?
হঠাৎ বিনায়ক চৌধুরী অস্বাভাবিকভাবে চেঁচিয়ে বললেন, শাট আপ! ওসব বাজে বক্তৃতা আমাদের শোনাবেন না! কতকগুলো ফলস আদর্শের কথা শুনিয়ে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের মাথা খাচ্ছেন আপনারা! শুধু শুধু তারা মরছে!
ধমক খেয়েও চুপসে না গিয়ে চন্দ্রা একই রকম ঠাণ্ডা, কঠিন গলায় বললো, নৈহাটিতে নিশীথ সরকার নামে একটি ছেলেকে আপনারা গুলি করে মেরেছেন, জীবনে সে কখনো
একটাও অন্যায় কাজ করেনি, সে ছিল তার বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
–সি পি এম কিংবা কংগ্রেসের যে-সব ছেলেদের আপনারা মারছেন, তারা কেউ বুঝি কোনো বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান হতে পারে না?
অমরেশ দাশগুপ্ত বললেন, এখন তো সাধারণ গুণ্ডা বদমাশরাও যাকে তাকে খুন করে নকশালী বিপ্লব বলে চালাচ্ছে। বেশ মজা পেয়েছে ওরা। এই তো হারীতবাবুর ছেলেই অন্তত তিনটে খুন করেছে। আগে সে এক কংগ্রেস লীডারের হয়ে গুণ্ডামি করতো, এখন সে নকশাল হয়ে গেছে! কলেজ ইউনিভারসিটির অধ্যাপকদের মেরে কিসের বিপ্লব হয়, অসমঞ্জবাবু, আপনিই বলুন না!
অসমঞ্জ তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, আমি কোনোরকম পলিটিকসের মধ্যেই নেই! আমার মনে হয়, আপনাদের এখনও ভুল হচ্ছে। চন্দ্রাও কখনো রাজনীতি নিয়ে…নৈহাটির বাড়িটায় আপনারা যে সব আমস পেয়েছেন, সেগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা রেখে যায়নি তো?
–নৈহাটিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা? হাসালেন মশাই! চন্দ্রা দেবী, চলুন, চলুন, আর দেরি করে কী হবে?
চন্দ্রা আর হারীতকে এক গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলেও রাখা হলো না একই জায়গায়। চন্দ্রাকে সেদিনের পর আর হারাত দেখেনি, চন্দ্রার ভাগ্যে কী ঘটেছে তাও সে জানে না।
পশ্চিম বাংলায় ফিরে আসার ব্যাপারে হারীতের ওপরে যে একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল, সে ব্যাপারটা একবারও উল্লেখ করেনি পুলিস। তারা শুধু সুচরিত্র সম্পর্কে আগ্রহী। মোহনবাগান। লেনে আনন্দমোহনের সঙ্গে দেখা করার পর থেকে হারীতের গতিবিধি সবই পুলিসের জানা। হারীত বনগাঁ সীমান্তে গিয়েছিল কেন? সেখানেই কি কোথাও লুকিয়ে আছে সুচরিত! কিংবা সে বর্ডার ক্রশ করে ওপারে পালিয়েছে? কাশীপুরের রিফিউজি কলোনিও সার্চ করে দেখা হয়েছে, সেখানেও সুচরিত নেই। চন্দ্রার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে হারীতই কোথাও লুকিয়ে রেখেছে তার ছেলেকে, সেই জায়গাটা কোথায়?
পুলিস একই কথা বারবার বলে। ঐ অমরেশ দাশগুপ্ত নামে লোকটির ধৈর্য অসীম, একটুও রাগ করেন না, হাসিমুখে বলেন, হারীতবাবু, আপনি একটা ব্যাপার বুঝতে পারছেন না, আমাদের হাতে ধরা পড়লে তবু আপনার ছেলের বাঁচার আশা আছে। সে জেল খাটবে। বাইরে থাকলে একদিন না একদিন সে খুন হবেই। কংগ্রেসের একজন বড়গোছের চাঁইয়ের হত্যার ব্যাপারে তার নাম জড়িত, কংগ্রেসের ছেলেরা বদলা না নিয়ে ছাড়বে?
পুলিসের কাছ থেকেই হারীতকে তার ছেলের জীবন কাহিনী শুনতে হয়। অথচ পারুলবালা এতদিন আশা করেছিল, কলকাতার ভালো বাড়িতে আশ্রয় পেয়ে তার মেধাবী ছেলে অনেক লেখাপড়া শিখবে, একদিন সে জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে!
দিন সাতেক পরে গারদ থেকে বার করে হারীতকে চাপানো হলো একটা ঢাকা গাড়িতে, ভেতরে পাহারাদারদের সঙ্গে আরও দু’জন কয়েদী। সেই দু’জনই কুড়ি বাইশ বছরের ছেলে, হাত-পা লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা। চোখ চেয়ে থাকলেও মনে হয় যেন ঘুমন্ত। বুঝতে অসুবিধে হয় না, তাদের এত মারধর করা হয়েছে যে এর মধ্যেই তারা প্রায় অর্ধমৃত। আশ্চর্য, হারীত মারধরও খায়নি, তার হাত-পা বাঁধেনি। সাধুর পোশাক পরেছিল বলেই কি তার প্রতি এতখানি খাতির?
তখন প্রায় শেষ বিকেল। শহর ছাড়িয়ে গাড়িটা ছুটলো গ্রামের দিকে। কিছুদূর যাবার পরই শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি, ভাঙা রাস্তায় গাড়িটা লাফাচ্ছে অনবরত। ঢাকা গাড়ি হলেও ওপরটা ফুটো, জল আসছে সেখান থেকে। দু’জন সিপাহী গায়ে বর্ষাতি জড়িয়ে নিয়ে সিগারেট টানতে লাগলো। ক’দিন ধরে এমনিতেই কাশি হয়েছে হারীতের, বৃষ্টি ভিজলে আরও বাড়বে। কিন্তু সে দুশ্চিন্তার থেকেও সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধে তার মন বেশী আনচান করে উঠলো।এই কদিনের গারদবাসে সে ধূমপানের কোনো সুযোগ পায়নি।
সে হঠাৎ বলে উঠলো, জয়বাবা কালাচাঁদ! জয় শংকর! ও সেপাইজী, একটা কথা বলবো!
একজন কনস্টেবল খেঁকিয়ে উঠে বললো, এই চুপ যা!
হারীত তবু বললো, বোম ভোলানাথ! বোম শংকর! সেপাইজী, আমি সাধু মানুষ, আমায় ভুল করে ধরেছে। তবে হ্যাঁ, একটা কথা বলবো, সরকার বাহাদুর ভুল করে ধরলেও আমায় কোনো অযত্ন করে নাই! তোমাদের মঙ্গল হোক, বাল বাচ্চারা সুখে থাকুক!
আশীর্বাদের ভঙ্গিতে সে হাত তুললো সিপাহীদের দিকে। মনে মনে সে একটা পৈতের অভাব বোধ করলো। সাধুই যখন সেজেছে, তখন একটা পৈতে লাগালেই বা কী ক্ষতি হতো! আশীবাদের সময় পৈতেটা হাতে জড়িয়ে নিলে আরও ভাল দেখায়। দেশে থাকতে সে পণ্ডিতমশাইদের এই ভাবেই আশীর্বাদ করতে দেখেছে।
সিপাহীদের মধ্যে যে একটু বয়স্ক সে হাতজোড় করে হারীতের দিকে একটা নমস্কার জানিয়ে ফেললো। তার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে হারীত সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, একটু সিগারেট টানতে দাও বাবা! তোমাদের পুণ্য হবে! ছেলে পুলিসে নোকরি পাবে, মেয়ের শাদী হবে ‘দারোগার সাথে।
বয়স্ক সিপাহীটি একটু হেসে নিজের অর্ধেক সিগারেটটাই এগিয়ে দিল হারীতের দিকে।
লোভীর মতন সেটা নিয়েই হারীত জোরে টান দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাশিতে নুয়ে পড়লো। কয়েকদিনের অনভ্যাস। কষ্ট হবে খুব, তবু নেশার সুখটাও পাওয়া যাচ্ছে খানিকটা।
অন্য ছেলে দুটি একটু নড়ে চড়ে বসতেই তাদের হাত-পায়ের শিকলের ঝনঝন শব্দ হল। ছোকরা সিপাইটা রাইফেলের কুঁদো দিয়ে একজনের কাঁধে খোঁচা দিয়ে বলল, কেয়া হুয়া রে?
তীব্র ঝলকে একটা বিদ্যুৎ আর জোর শব্দে বজ্রপাত হল এই সময়ে।
হারীতের একবার মনে হল, ঐ ছেলে দুটির হাত-পা যদি শিকল বাঁধা না থাকত, তা হলে সেপাই দুটোকে কাবু করে এই গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করা যেত একবার। এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির গতি বেশী নয়, অন্ধকার মাঠের মধ্য দিয়ে ছুটে পালানোও শক্ত হত না। তার নিজের জীবন তো শেষ হতেই চলেছে, এই অল্পবয়েসী ছেলে দুটিকে কোনক্রমে বাঁচানো যায় না? কী এমন দোষ করতে পারে এরা!
কিন্তু ছেলেদুটির সমস্ত উদ্যমই যেন নষ্ট হয়ে গেছে। মার খেয়ে তারা কোঁকাচ্ছে, ফুঁসে উঠতে পারছে না। আহা রে, ছেলেদুটির মায়েদের নিশ্চয়ই বুক ফাটছে শোকে-দুঃখে।
এক সময় গাড়ি এসে থামলো বসিরহাট থানায়। অমরেশ দাশগুপ্ত সেখানে আগে থেকেই বসে আছেন, তাঁর হাতে চায়ের কাপ। গাড়ি থেকে তিনজন কয়েদীকে নামাবার পর তিনি একজন সাব ইনসপেকটরকে বললেন, অন্য ছেলে দুটিকে নিয়ে যেতে। তারপর হারীতকে আপ্যায়ন করে বললেন, আসুন হারী বাবু, আসন, চা খান! এই কৌন হয়, একঠো কুর্সি লাও!
সত্যিই অতবড় একজন পুলিস সাহেবের পাশে একটি চেয়ারে বসতে দেওয়া হল হারীতকে। গরম চা দেওয়া হল। দাশগুপ্ত সাহেব নিজে থেকেই বললেন, সিগারেট খাবেন নাকি, এই নিন!
তারপর স্মৃতি রোমন্থনের ভঙ্গিতে তিনি বললেন, আমারও বাড়ি ছিল খুলনায়, বুঝলেন। আপনি তো এক সময় মূর্তি-টুর্তি গড়তেন, তাই না? আমাদের দেশের বাড়িতে খুব বড় করে দুর্গাপুজো হত, প্রতিমা যে বানাতো, তার নাম সৃষ্টিধর, কী অপূর্ব হাত ছিল তার, মায়ের চোখ একেবারে জীবন্ত। খুব নাম ছিল আমাদের বাড়ির প্রতিমার। সেই সৃষ্টিধরের চেহারা ছিল অনেকটা আপনারই মতন। সে এখন কোথায় আছে কে জানে, হয়তো আপনারই মতন কোনো রিফিউজি ক্যাম্পে!
এসব কথায় না ভুলে হারীত লঘু সুরে জিজ্ঞেস করল, আমাকে এত দূরে নিয়া আসলেন ক্যানো সার? এইখানে বুঝি ফাঁসি হয়?
অমরেশ দাশগুপ্ত চমকে উঠে বললেন, ফাঁসি! আপনাকে ফাঁসি দেওয়া হবে কেন? তাছাড়া, আমরা কি ফাঁসি দেবার মালিক? সে তো আদালতের ব্যাপার, আমাদের কাজ ইনভেস্টিগেট করা। হঠাৎ ফাঁসির কথা আপনার মনে এল কেন?
মুচকি হেসে হারীত বলল, গারদের মইধ্যে অইন্যরা বলতেছিল কি না যে এখানে আর একরকম ফাঁসি হয়। মাঠের মাঝখানে গাড়ি থিকা লামাইয়া দিয়া পিছন থিকা দুই একখান গুলি চালাইলেই, ব্যাস, কাম ফতে। জজ-ম্যাজিস্ট্রেটের ঝামেলাও নাই!
অমরেশ দাশগুপ্ত রেগে উঠে বললেন, বাজে কথা! এসব কথা কে বলেছে আপনাকে? কে কে বলেছে, তাদের নাম বলুন!
–আমি কি কাউর নাম জানি? অন্ধকারের মইধ্যে মুখও দেখি নাই! গাড়িতে আসতে আসতে দ্যাখলাম, এই দিকে বেশ সুন্দর সুন্দর ফাঁকা মাঠ আছে। আমি মরলে, কাশীপুরের নেতাজী কলোনিতে আমার এক পালিত পোলা আছে, তারে একটা খবর দিবেন, সার? সে ঠিক আমার পোলা না, নাতি, কিন্তু আমারে বাবা বইল্যা ডাকে। তার নাম নবা!
–আহ, হারীতবাবু, আপনি মিছিমিছি এসব বাজে কথা বলছেন। আপনার মরার কোশ্চেন উঠছে কোথায়? আপনাকে এ পর্যন্ত কেউ ট্রচার করেছে? আমি নিজে ইস্ট বেঙ্গলের লোক, আই হ্যাভ স্ট্রং সিমপ্যাথি টু দা রেফিউজিস্!
–আমি ইংরিজি বুঝি না, সার!
–বলছি যে, রেফিউজিদের প্রতি আমার পুরো সিমপ্যাথি, মানে, ইয়ে, সহানুভূতি আছে। তারা তো আমাদেরই জাত ভাই।
–রিফুজিদের উপর গভরনমেন্টের যা সহানুভূতি, তার চোটেই আমরা কোনোরকমে আধমড়া হয়ে আছি। আর বেশী সহানুভূতি দেখাইলে একেবারে পঞ্চভূতে বিলীন হইয়া যাব, সার। সহানুভূতির কথা শোনলেই আমার ভয় করে। এই সহানুভূতির ঠ্যালায় আমাগো কতগুলা ক্যাম্পে যে ঘুরতে হইছে তা তো জানেন না!
–হারীতবাবু, আপনি বড়ড সিনিক হয়ে গেছেন। গভর্নমেন্ট যথাসাধ্য করছে, কিন্তু এত রেফিউজি, তার ওপর দেখুন না, ইস্ট পাকিস্তান থেকে আবার লাখ লাখ আসতে শুরু করেছে!
–আমাকে এতদূরে কেন আনলেন, তাতো কইলেন না?
–আপনাকে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে। তারপরেই আপনার ছুটি।
–কী ছোট কাজ?
–বসুন, চা খান ভাল করে। ইস, একেবারে ভিজে গেছেন দেখছি। আপনার বড় ছেলেটাকে কলকাতায় রেখে গেলেন কেন, হারীতবাবু? আপনাদের সঙ্গে সে দণ্ডকারণ্যে গেলে সংসারের অনেক সাহায্য করতে পারত। আই অ্যাম সরি টু সে, কলকাতার আশেপাশে যেসব রেফিউজি থেকে গেছে, তাদের ছেলেরা হয় বড় বেশী পলিটিকস নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, অথবা ক্রিমিন্যাল হয়ে যাচ্ছে!
–আপনি ইস্টবেঙ্গলের মানুষ হইলেও আপনার ছেলেমেয়েরা ভাল আছে তো, সার?
একটু বাদেই হারীত দেখল, সেই শিকল-বাঁধা ছেলে দুটিকে ঠেলতে ঠেলতে এনে আবার তোলা হল গাড়িতে। অল্প আলোতেও দেখতে পাওয়া যায়, তাদের দু’জনেরই নাক দিয়ে গড়াচ্ছে রক্তের ধারা।
অমরেশ দাশগুপ্ত উঠে দাঁড়িয়ে প্রথমে কাকে যেন জিজ্ঞেস করলেন, ওরা আইডেন্টিফাই করেনি তো? জানতাম!
তারপর তিনি হারীতের হাত ধরে বললেন, এবার আপনি চলুন!
একজন লোক ছাতা মাথায় ধরলো অমরেশ দাশগুপ্তর, হারীত ভিজছে দেখে তিনি তাকে কাছে টেনে নিলেন। মানুষের কাছ থেকে এত ভাল ব্যবহার পেতে দেখলেই হারীতের ভয় করে। এই লোকটার মত লোব কী? ছেলের অপরাধে বাপকে মেরে ফেলবে? অমরেশ দাশগুপ্তর ভালোমানুষীর সুযোগ নিয়ে সে আর একটা সিগারেট চাইল। যা থাকে কপালে, আগে তো দামী সিগারেট খেয়ে নেওয়া যাক।
ওরা এসে দাঁড়াল একটা টিনের ঘরের সামনে। দরজাটা ভেজানো। সেটা খোলার আগে অমরেশ দাশগুপ্ত বলল, একটু মন শক্ত করুন, হারীতবাবু! আপনাকে এমন একটা দৃশ্য দেখতে হবে, হঠাৎ খুব আঘাত পাবেন। আই অ্যাম সরি, কিন্তু আমাদের চাকরিতে এরকম কতবার যে করতে হয়!
ঘরের মধ্যে খড়ের ওপর শোয়ানো একটি মনুষ্য মূর্তি। সাদা চাঁদর দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা। একটা অল্প পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে, বিচ্ছিরি একটা ভ্যাপসা গন্ধ, কিচ কিচ শব্দ করে পালালো কয়েকটা ইঁদুর।
একজন কনস্টেবল টান মেরে সরিয়ে দিল চাঁদরটা। এত পোড় খাওয়া মানুষ হয়েও আঁতকে উঠল হারীত। সম্পূর্ণ নগ্ন যুবকটির বুক থেকে পেটের অংশটা একেবারে ছিন্নভিন্ন, মনে। হয় কেউ যেন কোদাল দিয়ে কুপিয়েছে। ইঁদুরেও ঠুকরে খেয়েছে সেই মাংস। তবে মুখটা প্রায় অবিকৃত, বয়েস হবে পঁচিশ-তিরিশের মধ্যে, মাথা ভর্তি চুল।
নাকে রুমাল চাপা দিয়ে অমরেশ দাশগুপ্ত বললেন, বাঁ পায়ের পাতাটা দোমরানো, খুঁড়িয়ে হাঁটতো, সেই জন্য ওর ডাক নাম ল্যাঙা। আর কোন বার্থ মার্ক দেখতে পাচ্ছেন? আমি তো বলেইছিলাম, হারীতবাবু, আমাদের কাছে ধরা দিলে প্রাণে বেঁচে যেতে পারত। এই খেলায় যারা একবার নামে, তারা শেষ পর্যন্ত কেউ বাঁচে না।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যে মনস্থির করে নিল হারীত। সেই মৃতদেহের ওপর আছড়ে পড়ে সে আর্তনাদ করতে লাগল, ওরে ভুল! ভুলুরে! আমার কপালে এই ছিল! তোর মায়রে আমি কী কমু! তোর মায় কত আশা কইরা আছে, ওরে ভুলুরে, তুই আছিলি আমাগো শেষ আশা-ভরসা।
একজন কনস্টেবল হারীতের কাঁধ ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে এল। অমরেশ অন্য একজনকে বললেন, নোট করে নিন, আর একটা ডাক নাম ভুলু! আহা, ভদ্দরলোককে একটু কাঁদতে দিন না, এতদিন পর ছেলের দেখা পেলেন!
হারীত প্রায় বুক আছড়ে কাঁদতে লাগল। বারবার সে একই কথা বলতে লাগল, তোর মায়রে কী কবো, ভুলু! তুই এত নিষ্ঠুর হইতে পারলি, মায়ের কথা একবার ভাবলি না, তুই ল্যাখাপড়া শিখা আমাগো উদ্ধার করবি, সেই ভরসায় আছিলাম! ভুলুরে একটু বাদে অমরেশ জিজ্ঞেস করলেন, তা হলে এ ঠিকই আপনার ছেলে সুচরিত! কোনো আইডেনটিটি মার্ক, বার্থ মার্ক আছে কিনা মিলিয়ে দেখেছেন?
ইংরিজি না বুঝেও হারীত বলল, ঐ যে নাকের উপর তিল! সেই চক্ষু, সেই নাক, কে আমার ভুলুর এমন সর্বনাশ করল, বলেন সার? পুলিসে মারে নাই, তয় কে মারছে?
অমরেশ বললেন, সে সব কথা এখন থাক। বডি এখন পোস্ট মর্টেমে যাবে। আপনারা যদি পরে বডি দাহ করতে চান লর্ড সিনহা রোডে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন কাল-পরশু। হারীতবাবু, আপনাকে আর আটকে রাখতে চাই না। ইউ আর ফ্রি!)
একটা রিপোর্ট তৈরিই ছিল, হারীত তাতে টিপসই দিল। যদিও সে খানিকটা লেখাপড়া জানে, নাম সই করতে তো জানেই, কিন্তু কেউ তাকে সই দিতে বলল না, আগেই বুড়ো আঙুলের ছাপ নেবার জন্য নিয়ে এসেছিল স্ট্যাম্প প্যাড।
অমরেশ আর হারীতের সঙ্গে কোনো কথা না বলে বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে ডেড বডিটা শহরে পাঠাবার জন্য কিছু নির্দেশ দিলেন। হারীতকে তিনি হঠাৎ মুক্তি দিলেও এই রাতে, বৃষ্টির মধ্যে সে কী করে ফিরবে, তা চিন্তাও করলেন না।
হারীত থানার কম্পাউণ্ড থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগল, কাছেই একটা বাজার, সেখানে কিছু দোকানপাট খোলা আছে। বাজারটা পেরিয়েও চলে গেল হারীত, একটু ফাঁকা জায়গায় এসে সে আপন মনে চেঁচিয়ে উঠলো, জয় বাবা, কালাচাঁদ! প্রভু, তুমি ধন্য!
হারীতের এখন নাচতে ইচ্ছে করছে। গুরু কালাচাঁদ ঠিক সবসময় তাকে রক্ষা করে চলেছেন। এবার তাকে মার খেতে হয়নি, গারদেও থাকতে হয়নি বেশীদিন। গুরু কালাচাঁদের দয়াতেই বেঁচে আছে তার ছেলে সুচরিত। ভুলুর নাকের ডগায় কস্মিন কালেও অতবড় তিল ছিল না। ঐ মৃত যুবকটি আর কোন মাবাবার স্নেহের দুলাল, মুখখানা দেখলে মনে হয় ভাল ঘরের ছেলে। লেখাপড়া জানে। কিন্তু সে কিছুতেই সুচরিত নয়। পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করতে পেরেছে হারীত। এখনও তার সারা মুখ চোখের জলে মাখামাখি।