দাদপুরের লোকরা বুধেডাঙায় বসবার জোগাড় করে নিয়েছে। তারা সান্যালমশাইয়ের বাগানের পাশ থেকে ক্রমে নেমে আসছে। সর্বসমেত কমবেশি পনেরো ঘর লোক হবে। তারপরই বিলমহলের আট-দশ ঘর ভালুকে চেহারার চাষী। এরকম কিংবদন্তী রটেছে, এদের গায়ে শ্যাওলা আছে।
এসব ব্যাপারে যেমন হয়, ইতিমধ্যে দু-একটা ছোটোখাটো কাজিয়া-ঝগড়াও হয়ে গেছে। জমি সুনির্দিষ্ট নয় এখনো, তবু কেউ এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে চায় না। দাদপুরের গলায় কণ্ঠি কৈবৰ্তরা আর বিলমহলের মোষের মতো কাদামাটি-মাখা মুসলমান তাঁতীরা এ বিষয়ে সমান। কাজিয়া দু-একবার লাঠির পর্যায়ে পৌঁছাবে এমন সূচনাও হয়েছিলো। কিন্তু নায়েব প্রতিবারেই এসে দাঁড়িয়ে গোলমাল মিটিয়ে দিয়েছে।
এদের ঝগড়ার সূত্রপাত অনেক সময়ে ছেলেমানুষি কথার থেকে হয়।
একদিন বিলমহলের জসিমুদ্দিন বললো, আরে রাখো রাখো। জলের ভয়ে পলাও, আবার কথাটা সে বলেছিলো ঠিক তার পাশে যে ঘর তুলছিলো তেমন একজন দাদপুরী কৈবর্তকে। তার নাম মুকুন্দ।
মুকুন্দ বললো, ভাই রে, এ বিল না। এ জলেক মান্য করা লাগে।
জসিমুদ্দিন বললো, বিল দেখছো না?
হয়, যেখানে কাদা থাকে।
কাদা? আমাদের বুঝি কাদার প্রাণী মনে করলা?
তা কবো কেন্? কাদা মাখবের ভালোবাসো।
মুখ সামলে কথা কয়ো।
কেন্? বিলের ডরে? আমরা পদ্মাপারী।
রাগের মাথায় জসিমুদ্দিন বললো, তোমার পদ্মাক ধরে বিলে ডুবায়ে রাখবের পারি।
দুইজনেই চালের উপরে বসে ঘর বাঁধছিলো। প্রায় একইসঙ্গে লাফ দিয়ে মাটিতে নামলো তারা।
সান্যালকর্তা বাগান ঘেঁষে বসাইছেতাই বুঝি নিজেক মনে করছে খুব লায়েক? জসিমুদ্দিন বললো।
সেই হিংসায় জ্বলে মরো, মোষের মতো কাদা ঘোলায়ে তোলো! মুকুন্দ উত্তর দিলো।
সামাল।
খবরদার।
চোপ।
চপরাও।
গদাগদ। দমাদম।
চারিদিক থেকে লোক ছুটে এলো। নায়েবমশাইয়ের কাছে খবর গেলো। এই বিশেষ কলহটায় একটু বৈশিষ্ট্য আনলো রামচন্দ্র। সে গড়িমসি করেও জমিদারের কথা রাখার জন্য জমি দেখতে বেরিয়েছিলো। লোকজনকে ছুটতে দেখে সেই এগিয়ে এসেছিলো। সে বললো, মনে কয় দুজনেক পদ্মার জলে চাপে ধরে মাথা ঠাণ্ডা করে দেই।
একজন বললো, পারো তা?
কওয়া যায় না। পারলেও পারবের পারি।
পিছন থেকে নায়েবমশাইয়ের গলা শোনা গেলো।’কে, রামচন্দ্রনা? ধরো, তাই ধরো।পদ্মায় না নিয়ে যাও, কাছারিতে চলল। কর্তা বাগানে দাঁড়িয়ে ওদের মারামারি দেখে গেছেন।
কথাটা মন্ত্রের মতো কাজ করলো।মুকুন্দ ও জসিমুদ্দিন পরস্পরকে ছেড়ে দিয়ে মাটি ঝাড়তে লাগলো নিজেদের গা থেকে।
কৈবর্তদের অগ্নিকুমার বললো, ছাওয়ালডা নতুন বিয়ে করে মনে করছে পিরথিমি ওর হাতের তলায়।
বিলমহলের এরশাদ বললো, তাইলে তো আমাগের জছুরও তো সেই ব্যারাম। শোনোনাই, লাবেনের মিয়ের সঙ্গে ওর কথা চলতিছে?
রামচন্দ্র গম্ভীর মুখে বললো, তেঁতুলগোলা জলে নিশা ছাড়ে শুনছি।
.
কিন্তু শহরের কাজিয়া অন্যরকম। সেখানে অনেক মিহির সান্যাল আছে এবং অনেকগুলি আলেফ সেখ। নানা দিক্দেশ থেকে মিহির সান্যালরা এবং আলেফ সেখরা সেখানে জমায়েত হয়েছে।
কিছুদিন যাবৎ চিকন্দিতে সান্যালবাড়িতে রেডিও মারফত খবর আসছিলো, নোয়াখালিনামে। এক জেলায় বহু লোকের প্রাণনাশকারী দাঙ্গা শুরু হয়ে ক্রমশ সেটা বিস্তৃতিলাভ করেছে।
কথাটা রূপুর মুখে প্রথম শুনে সান্যালমশাই বললেন, এ খবর যেন গ্রামে না রটে, বাড়ির দাস-দাসীরাও যেন না জানে।
কিন্তু দিঘা শহর হিসাবে কলকাতার মতো না হলেও, শহরের জাত্যগুণ কিছু কিছু ছিলো তার। সেখানে রেলের কলোনি থেকে স্ত্রীলোক ও শিশুরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে।কলোনির ভিতরেও কর্তৃপক্ষের সহায়তায় কোয়ার্টার্স বদলে বদলে কলোনিটিকে সাম্প্রদায়িক বিভাগে বিভক্ত করছে অধিবাসীরা। সেখান থেকে খবর আসছে লোকের মুখে মুখে।
একদিন কাদোয়া থেকে মনসা এলো। হাসিখুশি মুখে অনসূয়ার সঙ্গে খানিকটা কথা বলে সে সদানন্দর খোঁজ করলো, খুঁজে বার করলো। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপও হলো। আলাপের মূল কথাই হচ্ছে দু-তিন হাজার টাকার আতসবাজি চাই। শহরের যেসব বাজিকর আছে তাদের দিয়ে তেমন ভালো বাজি তৈরি হয় না আজকাল, কাজেই বিপিনকে চাই, সেই নুলো বিপিন মুখুজ্যেকে।
বিপিন মুখুজ্যের নাম শুনে সদানন্দর মুখ গম্ভীর হয়েছিলো। তখন দরজা বন্ধ করে প্রায় পনেরো মিনিট কাল তারা দুজনে সলা-পরামর্শ করলো। শহর থেকে বাজিকরদের আনানো হবে স্থির হলো। এবং এও স্থির হলে বিপিন মুখুজ্যেকে যদি না পাওয়াই যায় সদানন্দ বিপিনের দলের আর কাউকে আনবে এবং সে নিজেও বাজিকরদের প্রয়োজন মতো উপদেশ দেবে।
এরপর মনসা আবার অনসূয়ার কাছে গিয়ে বসেছিলো যেমনভাবে একটি অত্যন্ত আদরিণী মেয়েই বসতে পারে।
কথায় কথায় মনসা প্রস্তাব করলো, তাদের গ্রামে কিছু কিছু স্ত্রীলোক ও শিশুকে সান্যালবাড়িতে কিছুকালের জন্য রাখা যায় কিনা।
তুমি তাদের আনিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করো, মণি। অনসূয়া বললেন।
তাহলে আমি এখন যাই। দরকার হলেই তাদের পাঠিয়ে দেবো।
দাঁড়াও। তোমার জ্যাঠামশাইকে বলি। বলে অনসূয়া উঠে দাঁড়ালেন।
না, না, সেটা ভালো হবে না। বলে সিঁড়ি দিয়ে মনসা নামতে লাগলো।
সঙ্গে তোক দিচ্ছি, দাঁড়াও।
লোক আছে সঙ্গে। বলতে বলতে মনসা উঠোন পার হয়ে গেলো।
অনসূয়া ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলেন, মনসার চার-বেহারার পাল্কিটার দাঁড়ায় আটজন কাঁধ দিয়েছে। সেটা পড়িমরি করে ছুটে চললো।
সান্যালমশাই অন্দরে এসে বললেন, মণি এসেছিলো যেন?
চলে গেছে। বলে সে কেন এসেছিলো, কি তার প্রস্তাব তা বর্ণনা করলেন অনসূয়া।
সান্যালমশাই ভ্রুকুটি করে উঠে দাঁড়ালেন, তাঁর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো।
পরমুহূর্তে তিনি আসনে বসলেন আবার, হেসে বললেন, তামাক দিয়ো।
তামাকে মন দিয়ে সান্যালমশাই সদানন্দকে ডেকে পাঠালেন।
মণির খবর এই, তাদের গ্রাম নিরাপদ নয়। কী করা যায়?
নিরাপদ না হলেই বা ক্ষতি কী? সদানন্দ বললো।
তার মানে?
মাৎস্যন্যায়ের সময়ে নিরাপত্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। সে-অবস্থায় নিরাপত্তা মানে অপরপক্ষকে আঘাত দেওয়ার ক্ষমতা। মণি ফিরে গিয়ে খুব ভালো করেছে। যদি তেমন হয় তাহলে তাকে রক্ষা করার জন্যে দু-একজন মনুষ্যত্ব দেখাবে।নতুবা মাৎস্যন্যায়ের মধ্যে একমাত্র যা দ্রষ্টব্য সেটারই অভাব হবে। মানুষ রাক্ষস তো হয়েছেই, জন্তুও হবে।
সান্যালমশাই বললেন, তুমি মনে মনে একটা বক্তৃতা ঠিক করে রেখেছিলে বুঝতে পারছি। কিন্তু তোমার মতিগতি বুঝতে পারছি না।
খুব শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারি।
তুমি কি একটি চিতোরগড় কল্পনা করছো?
তাছাড়া অবস্থা যদি খারাপের দিকে যায় আমি সকলকে বুঝিয়ে দেবো:বাঁশের লাঠি সারা গ্রামে অজস্র আছে। সেন্সস রিপোর্ট এ ব্যাপারে অর্থহীন। মনের জোর নিয়ে রুখতে পারলে অপরপক্ষ একসময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়বে, সংখ্যায় ভারি হলেও। মরতে ভয় পেলে চলবে না।
এ কি রেটরিকের বেশি কিছু?
নদীর অকল্যাণ-গতিকে আটকাতে কখনো কখনো প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটাতে হয়।
ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত রুখতে হবে? কিন্তু তুমি কি শুধু একপক্ষের কথাই চিন্তা করছে না? আমার প্রজাদের মধ্যে উভয় পক্ষই আছে।
সদানন্দ লজ্জিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করলো।
.
একদিন আল মাহমুদকে দেখা গেলো। সে গ্রামের দিকে আসতে আসতে হায় হায় করতে লাগলো। যেন সে কোনো নতুন এক কারবালার জন্য শোক করছে। পথের লোকরা বিস্মিত হলো। ক্রমশ বিস্ময় বাড়াতে বাড়াতে অবশেষে এরফান ও আলেফের বাড়ির মাঝামাঝি জায়গায় পৌঁছে সে দাঁড়িয়ে পড়লো এবং বুক চাপড়াতে লাগলো। তার চোখে জল নেই কিন্তু শোকের কান্নার শব্দগুলি মুখ থেকে বেরুচ্ছে। লোক জমে গেলো। এরফান অমঙ্গলের শব্দে নমাজ শেষ করতে না পেরে উঠে এলো। আলেফ জলযোগ করতে করতে ভাবছিলো, সিং-জমিদারের সীমানা-সামিল এক লপ্তের অতখানি জমি যদি রামচন্দ্র না নেয় তবে দখলে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে হয়তো পত্তনি বন্দোবস্তেও পাওয়া যেতে পারে। সেও উঠে এলো।
কী হইছে, মহরম কেন্?
আর কী হবি, কলকেতায় শেষ।
কী শেষ হবি কলকেতায়, হলেও তোমার কী?
একজন মোসলমান বাঁচে নাই। কে, গজব?
না। হিঁদু আর শিখে মারে শেষ করছে।
কেরদানি রাখো। তুমি যে কও সে-দেশে এখন মুসলমানের নবাবি।
তাইলে কি হয়? আমাদের সাদেক নাই।
কী কও, আমার সাদেক নাই? এরফান যেন মৃত্যুর আঘাতে আর্তনাদ করে উঠলো। আলেফের বাস্ফুরণ হলো না।
এরফান আবার প্রশ্ন করলো, কী কলি, সাদেক নাই?
এরফান মাটিতে বসে পড়লো। তার প্রৌঢ়তার মর্যাদা ধুলিতে লুটিয়ে দিয়ে সে মাথা চাপড়ে আঁ-আঁ করে কাঁদতে লাগলো। হায় খোদা, হায় রহমান, হায় খোদা।
খানিকটা কেঁদে উঠে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে এরফান বললো, বড়োভাই, তুমি কাঁদো না। দুই ভাইয়ের ওই এক ছাওয়াল খোদা নিছে। বড়োভাই, এমন কোন গুনাহ্ করছি আমি যার জন্যি খোদা এমন শাস্তি দিবি? আমি এই কাপড়েই কলকেতা যাবো। সেই আজব শহর শয়তানের আড্ডায় আমি খোঁজবো। ছাওয়ালের খবর আনবো। ছাওয়াল আমার বাঁচে আছে। চেরকাল বাঁচার সে-ছাওয়াল।
এরফান খকরে আল মাহমুদের হাত চেপে ধরলোক সত্যিকথা। গাঁয়ের লোক খেপাতে আসছিস? দিঘায় এই সব আজকাল হতিছে, তাই এখানে করবের আসছিস? ক। তোর হাত আমি মুচড়ায়ে ভাঙে দিবো। ক।
আল মাহমুদ এতক্ষণ একটা মৃদু একটানা শোকের শব্দ করে যাচ্ছিলো। ভয় পেয়ে সেটা বন্ধ করে সে যা বললো তার সারমর্ম এই : দিঘার একজন দোকানদার জুতো কিনতে কলকেতা শহরে গিয়েছিলো। যে হোটেলে সে ওঠে সেই হোটেল দাঙ্গায় পুড়ে গেছে। তখন প্রাণভয়ে সে এক মেসে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। সেখানে কথায় কথায় এ জেলার কয়েকটি ছেলের পরিচয় সে পায়, তার মধ্যে সাদেক সেখও একজন। সে একদিন সন্ধ্যায় তার কলেজে গিয়ে আর ফেরেনি।
সে হয়তো অন্য জায়গায় আছে।
তা হবের পারে। আল মাহমুদ এ সম্ভাবনাকে স্বীকার করতে বাধ্য হলো।
এরফান বললো, বড়োভাই, এখন তাড়াতাড়ি হাঁটে গেলে এগারোটার ট্রেন পাবো দিঘায়। এক কথা কয়ে যাই, আল মাহমুদের উপরে চোখ রাখবা আর কোনো অধর্ম করবা না। বিপদে পড়ে যাতেছি, এখন খোদাকে নারাজ করবা না। মনে রাখো, মজিদে না আলেও আদমজাদমাত্রই খোদার।
এরফান বাড়িতে ঢুকে কিছু টাকা নিয়ে দিঘার দিকে পড়িমরি করে ছুটলো।
আল মাহমুদের উদ্দেশ্য আংশিক সিদ্ধ হলো। কাব্যের সততা রক্ষা করে বলা যায় না খবরটা কতটুকু জেনে এসে সে এ গ্রামে হাহাকারটা ছড়িয়ে দিলো। তার চরিত্র যতটুকু উদঘাটিত তাতে কোনো কিছু অনিবার্যভাবে গ্রহণ করা যায় না। এমনও হতে পারে জুতোওয়ালা তাকে মিথ্যা করে বানিয়ে গল্পটা বলেছিলো। সেক্ষেত্রে দেখা যাবে একটি বদ্ধমূল হীনমন্যতা থেকে উপজাত বিদ্বেষ তার দুঃখবোধটাকে প্রচারের মতো শোকে রূপান্তরিত করেছিলো।
সে যা-ই হোক আলেফ নিরুদ্ধ কণ্ঠে ‘সাদেক সাদেক’ বলতে বলতে ঘরে গিয়ে ঢুকলো। তার স্ত্রী আগেই খবর পেয়ে বিছানায় মাথা রেখে ফুলে ফুলে কাঁদছিলো। কথাটা চরনকাশির সর্বত্র রাষ্ট্র হলো এইভাবে, আলেফ সেখের ছেলেকে হিন্দু আর শিখরা একা পেয়ে হত্যা করেছে। বাকিটুকু করলো আল মাহমুদ।
.
একদিন হাজিসাহেব গোরুগাড়ি করে সান্যালমশাইয়ের কাছারিতে উপস্থিত হলেন।
সান্যালকর্তা, কও, তুমি নাকি সব মসজিদ ভাঙো? সব মুসলমান কাটে পদ্মায় ভাসাও? কেন, তা করো কেন্? কাটো আগে আমার এই মাথা। দেখি কত বড়ো বীর হইছে আমার সেই হাতে-ধরে-শিখানো ছাওয়াল।
সান্যালমশাই স্তব্ধ হয়ে রইলেন।
এখন কী করবা? হাজিসাহেব এগিয়ে গিয়ে সান্যালমশাইকে স্পর্শ করলেন।
সান্যালমশাই বললেন, মুশকিল এই, আপনার আর লাঠি ধরার শক্তি নেই।তা থাকলে আমি কলকাতার নবাবদের পরোয়া করতাম না। আপনি কয়েকটি দিন গোরুগাড়ি করে গ্রামের পথে পথে ঘুরে বেড়ান।
আর কী করবো?
আল মাহমুদ বলে এক ছোকরা এসেছে এ গ্রামে।
তা আসুক। শয়তান কাটে লাভ নাই, আরও শয়তান জন্মায়।
এরপরে অত্যন্ত ধীর ভঙ্গিতে হাজিসাহেব পরামর্শ দিলেন, শহরের আগুন এ। সেখানে তাপ কলি এখানে নিবে যাবি। কেবল বুদ্ধি করে এড়ায়ে এড়ায়ে যাও। তোমাক আর কী কবো, বুদ্ধি ঠাণ্ডা রাখো। তোমার হিন্দু মুসলমান প্রজা বাঁচবি। তুমি কি একা পারা কলকাতার নবাবেক জব্দ করবের? আমি একেবারে অথব্ব।
মানুষের অদ্ভুত আচরণগুলি লক্ষণীয় হয়ে উঠলো। সাধারণত মানুষ একা একা ভয় পায়, দলে থাকলে নির্ভয় হতে পারে। কিন্তু বিপরীতটাই ঘটতে লাগলো। একটি হিন্দুর সঙ্গে পথে একটি মুসলমানের দেখা হলে আলাপ না জমলেও তারা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করে। কিন্তু পাঁচজন হিন্দুর সঙ্গে পাঁচজন মুসলমানের দেখা হলে সকলেই শঙ্কিত হয়ে ওঠে, হিংস্রতাও জেগে ওঠে মনের মধ্যে। খেতে গেলে পাছে একসঙ্গে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় এইজন্যই যেন মাঠে যাচ্ছে না চাষীরা। হাট বসছে না। মানুষের মনের সঙ্গে সমপর্যায়ে আসবার জন্য বছরের এ সময়টাও যেন রুক্ষ হয়ে উঠলো। আবার যেন একটি মহা অমঙ্গল গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে। গাছের পাতাগুলোর উপরেও ধুলোর একটা স্তর জমেছে, যেমন মলিন হয়েছে মানুষের মুখ।
সান্যালমশাই দীর্ঘ সন্ধ্যাগুলি তার প্রাসাদের ছাদে পায়চারি করে কাটাতে লাগলেন। একটিমাত্র চিন্তা তার,কলকাতার রাজনীতির এই প্লাবন যা তার গ্রামকে বেষ্টনকরে থৈথৈ করছে। সেটা যদি তার গ্রামের উপরে ভেঙে পড়ে কী করে তিনি সে ধ্বংসকে কাটিয়ে উঠবেন।কখনো তার মনে হয় রাষ্ট্রশক্তি যদি অসতের সহায়তা করে তবে সমগ্র রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত। তার অস্থির পদচারণায় অলিন্দগুলিতে প্রতিধ্বনি ওঠে। কিন্তু প্রায় পরমুহূর্তে মনে পড়ে যায় প্রাচীন ভূঁইয়াদের মতোনবাবী আক্রমণ প্রতিহত করার সাধ্যায়ত্তনয়। মনের মধ্যে খুঁজতে। গিয়ে তিনি তেমন কোনো ভালোবাসার সাক্ষাৎও পান না। প্রজাদের ধর্মনিরপেক্ষ প্রীতি দিতে। গিয়ে কুণ্ঠিত হন তিনি। তার অনুভব হয়, তেমন কেউ কি নেই যে অপরিমিত শক্তি, অনির্বাণ ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে রাজনীতির এই অন্ধ ভবিষ্যতে নিজেকে পরাজিত মনে হয় এবং তা হতে হতে তার সমগ্র চেতনা কঠিন হয়ে ওঠে। প্রাচীন ভূঁইয়াদের মতো প্রতিজ্ঞা করেন শেষবারের মতো এই দুর্গেই দাঁড়াতে হবে–যা হয় হোক। যা হয় তোক।
.
পাঁচদিন পরে এরফান শহর থেকে ফিরলো। এ কয়দিনের পরিশ্রম, উল্কণ্ঠা ও শোকে সে যেন অন্য আর এক মানুষ হয়ে গেছে। আলেফের অবস্থাও তার চাইতে ভালো নয়। খবর পেয়ে সে যখন ঘর থেকে বেরুলো তার চোখ দুটি লাল টকটক করছে, সে চোখের উভ্রান্ত দৃষ্টি দেখে জ্বরবিকারের কথা মনে পড়ে যায়। ভাইকে একা একা ফিরতে দেখে ব্যাপারটা বুঝতে বাকি রইলো না। এরফান এতক্ষণ তার শোককে ঠেকিয়ে রেখেছিলো। হু হু করে কেঁদে সে সিঁড়ির উপরে বসে পড়লো। বড়োভাই, তাক আনতে পারি নাই, তাক আনতে পারি নাই বড়োভাই। আলেফ কী বললো বোঝা গেলো না। তার চোখ থেকে জল পড়তে লাগলো।
কিন্তু সহসা আলেফর তীব্র চিৎকারে সম্বিৎ পেয়ে এরফানকেও চোখ তুলে চাইতে হলো। সে দেখতে পেলো তীব্ৰধার একটি বল্লম হাতে করে আলেফ চিৎকার করতে করতে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
বড়োভাই, বড়োভাই।
ছুটতে ছুটতে গিয়ে মসজিদটার কাছে একটা গাছের শিকড়ে পা বেধে পড়ে গেলো আলেফ। এরফান যখন তার কাছে গিয়ে পৌঁছলো তখন আলেফের কশ বেয়ে ফেনা গড়াচ্ছে।
পাড়ার লোকরা ভিড় করে এসেছিলো। আলেফকে ধরাধরি করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার সেবায় আলেফের স্ত্রীকে এবং নিজের স্ত্রীদের বসিয়ে দিয়ে এরফান বাইরে এসে দাঁড়ালো। এতক্ষণে সে যেন তার স্বরূপ ফিরে পেয়েছে। যেন কিছু হয়নি এমনি স্বরে সে বললো, একজন চিকন্দিতে গিরীশ ডাক্তারেক খবর দিবা? তা যদি সাহস না পাও সান্যালমশাইয়ের কাছে যাও,
আমার মিনতি কয়ো, কয়ো ডাক্তারেক যেন পাঠায়ে দেন।
একটি ছেলে সাহসে ভর করে রওনা দিলো।
কে তুমি?
জে, ইজু। বুধেডাঙার ইয়াজ সান্দার।
যাও বাবা, যাও। আল্লা তোমার উপর খুশি হবি।
ইয়াজ চলে গেলে সমবেত গ্রামবাসীর দিকে ফিরে এরফান বললো, আমার ছাওয়াল আমার বড়ো-ভাইয়ের ছাওয়াল মারামারি করে যায় নাই। সে ডাক্তার হবের গিছিলো তাই রাস্তার থিকে জখমি-লোক কুড়ায়ে আনবের গিয়ে মারা গেছে। সে যে—
এরফান এই পর্যন্ত বলে আবার হাতের আড়ালে মুখ ঢেকে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকলো।
.
বহুদর্শী হাজিসাহেব যা বলেছিলেন ব্যাপারটা তেমনি হলো। কলকাতার দাহ শেষ হতেই এদিকেও আগুন নিবে এলো।
ইতিমধ্যে বিলমহলের সর্দার এরশাদ একদিন গিয়ে আল মাহমুদকে বলে এসেছে, মোভাই, শহরের ভদ্রলোক শহরে যাও। এখানে বেশি কথা কয়ো না। ভদ্রলোকের সঙ্গে মারপিঠ করা গা।
তোমরা কী?
যা-ই হই। জমিদারের হুকুম হলে হিন্দু কাটবের পারি, মোসলমানও কাটবের পারি। আমার নাম এরশাদ, তা মনে রাখো।
.
প্রকৃতির দিকে চেয়ে রুক্ষতাটাই চোখে পড়ে। গ্রামের সীমান্তে দাঁড়িয়ে বুধেভাঙার দিকে পদ্মার তীরভুক্ত জমিগুলির দিকে চেয়ে দেখলে কষ্ট হয়। ধুলোর ঝড় উঠে পড়ে দুপুরবেলা। বিকেলের দিকে মনে হয় তামাটে রঙের আকাশে সেই ধুলো পাক খেয়ে খেয়ে উঠে যাচ্ছে। মনে হবে, খুব দূরে আকাশ ও মাটির মধ্যে একটা বাতাসের সিঁড়ি বেয়ে পৃথিবীর সব সরসতা ধুলোর আকারে সরসর করে উঠে যাচ্ছে। খেতের আউস ধুলোয় ঢাকা। আমনের জমি ঘাসে ডুবে যাচ্ছে। ফসল কোনোদিন হবে এমন ভরসাও নেই।
একদিন বিকেলে ছিদাম সাহস করে বুধেডাঙায় গিয়েছিলো। বিলমহলের এরশাদ তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। পাঁচ-ছয়জন বাছাবাছা লোকের পরামর্শ হবে।
সান্যালদের বাগানের মধ্যে দিয়ে ছিদাম দাদপুরী কৈবর্তদের নতুন পাড়ায় উপস্থিত হলো। মুকুন্দর সঙ্গে ইতিপূর্বে তার আলাপ হয়েছিলো। সে মুকুন্দর দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, যাওয়া হবি নে?
না। অগ্নিদাদা আর রাবণ যাবি। তারা গেছে বোধায়।
ছিদাম আরও কিছু এগিয়ে বিলমহলের পাড়ায় গিয়ে উপস্থিত হলো–এরশাদদাদা?
আসো, ভাই, আসো।
ছিদাম দেখলো এরশাদের ঘরের বারান্দায় পাঁচ-ছয়জন লোক জমেছে।
এরশাদ বললো, কী করা এখন, কও। জমির দিকে না চায়ে উপায় কী?
চাতে হবি।
ইয়াজ বললো, জলবৃষ্টি নাই। খেত হবি কে? তা এরশাদচাচা, এখন কী করা লাগে?
হাল বলদ ঠিকঠাক করা লাগে। জমিদারের লোক ডাকে আনে পত্যিকের জমির আল ঠিক করে নেওয়া লাগে। সকলেই কঞ্চি গাড়ে দখল নিছে।
এরা যখন কথা বলছিলো তখন মাঝেমাঝে ধুলোর ঝাঁপটা এসে এদের গায়ে লাগছিলো। একবার রাবণ কথা বলার জন্য মুখ খুলতেই তার উন্মুক্ত মুখে কিছু ধুলো ঢুকে গেলো। অন্য সকলের চোখে-মুখেও কিছু বর্ষিত হলো।
এরশাদ বললো, চলেন, ঘরে বসি। জলের দেখা নাই, ঝড়ের দেখা নাই, কেবল ধুলোর ফকুড়ি।
এদের আলাপ-আলোচনার মাঝেমাঝে দূরের কলরবের মতো, কখনো বা আর্তনাদের মতো একটা চাপা শব্দ কানে আসছিলো।
একজন বললো, নিকম্মার সাটুপাটু বেশি। ধূলায় দুনিয়া পয়মাল।
বুঝলা না, আর একজন হেসে বললো, যে কামড়ায় সে ভোকে না। ঝড় হবের হলে এতকাল এমন ধূলা ওড়ে না।
কথাটা আকাশেক শুনায়ে দেন। ছিদাম বললো।
কিন্তু এর কিছুদিন পরে এক বিকেলে ধুলো থেকে নাকমুখ বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে ছিদাম বুথেডাঙা থেকে দ্রুতপদে ফিরে আসছিলো। সে ভাবছিলো : এরশাদ তার জমায়েতের ব্যাপারে তাহলে সান্যালমশাইয়ের হুকুমে কাজ করেছে। যে কাজটা দুদিন পরে হলেও চলতে পারে সেটাকে এখনি করা দরকার বলে চোখের সম্মুখে তুলে ধরা হয়েছে।
কে একজন তার পাশ থেকে বললো, হাঁটো যে?
কেন, দৌড়াবো? ভয় কী?
আকাশ দেখছো?
ছিদাম আকাশের দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে গেলো। পড়ন্তবেলায় আকাশ চিরদিনই অভিনব মূর্তি ধারণ করে কিন্তু বুজ কালোয় মেশানো এমন রং কদাচিৎ দেখা যায়। শুধু তাই নয়, মনে হচ্ছে আকাশেমন্থন হচ্ছে। এতদিন ধরে আকাশ যে ধুলো সংগ্রহ করেছিলো সেগুলি যেন পদ্মার বুকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে। গোঁ-গোঁ করে একটা শব্দ আগেও হচ্ছিলো। তখন ছিদাম সেটা গ্রাহ্য করেনি। কিন্তু বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখার উপায় নেই। একটা ধুলোর কাপটা এসে ছিদামকে যেন ধাক্কা মেরে তাড়িয়ে দিলো।
ছিদাম শব্দটা সহসা শুনতে পেয়েছিলো। হুড়মুড় দুমদাম প্রভৃতি অনুকার অব্যয় দিয়ে সে শব্দটাকে ধরা যায় না। মনে হলো, একসঙ্গে পৃথিবীর যত ঘরদোর সব ভেঙে পড়লো। খুব কাছেই কার বাড়ির খড়ের চালের একটা মস্ত বড়ো অংশ উড়ে গিয়ে একটা বড়ো আমগাছে লাগলো। আমগাছটার মোটা একটা ডাল ভেঙে পড়লো। ছিদাম দাঁড়িয়ে পড়লো। সম্মুখে সান্যালমশাইয়ের বাগান, প্রাচীন গাছে পরিপূর্ণ। একটা ডাল ভেঙে পড়লে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সপাৎকরে কে যেন তার বাঁ হাতের উপরে চাবুক মারলো। আঘাতটা এমন যে সে আর্তনাদ করলেই স্বাভাবিক হতো। ছিদাম দেখলো একটা আমের পল্লব এসে পড়েছে তার গায়ে। তরঙ্গের উপরে তরঙ্গে শোঁ-শোঁ শব্দটা ভেসে আসছে। চোখে কিছু দেখা যায় না। আন্দাজে সান্যালবাগানের পাশ দিয়ে গ্রামে যাওয়ার রাস্তা ধরে ছুটলো সে, কিন্তু কয়েক পা গিয়েই থামলো। সে পথের দুপাশেবাঁশঝাড়। এখন সে পথে মোটা মোটা বাঁশগুলি ঝট্রর মতো মাটিতে লুটোপুটি করছে। যাওয়া মানে প্রথম আঘাতেই মৃত্যু। ছিদাম নিজের পাড়ায় যাওয়ার ঘোরাপথটা ধরলো। চড়বড় করে শব্দ হচ্ছিলো। এবার কড়কড় শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আকাশ ফেটে ফেটে তার দাহটাও প্রকাশ পেতে লাগলো।
বৃষ্টি-শিলা। বাতাসের জোর কমেছে। শিলাগুলি গায়ে পড়ে ব্যথা লাগছে কিন্তু তবু প্রাণে আশ্বাস এলো। জলের এই তোড় ঠেলে বাতাস এগোতে পারবে না।
পথ পিছল হয়ে গেছে। দু-একবার পড়ে গিয়ে কাপড়চোপড় ও গায়ে কাদা মেখে গেলো ছিদামের। ইচ্ছা করলে সে এখন পাশের কোনো বাড়িতে দাঁড়াতে পারতো কিন্তু এতক্ষণ ঝড়ের নিশ্বাস নিয়ে তার প্রাণেও দুর্দম্য পুলকের নেশা লেগেছে।
বাড়িতে পৌঁছে বারান্দার উপরে উঠে সে দেখলো পদ্ম একটা খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। জলের ঝাঁপটায় তার সর্বাঙ্গ ভিজে যাচ্ছে। ছিদাম তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই দু হাত বাড়িয়ে সে ছিদামকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তার কান্নাটাও প্রকাশ পেলো।
বাব্বা, কী ঝড়!
হয়, রান্নাঘরের চাল উড়ে গেছে।
বাবা গেছে কতি?
মুঙ্লাদের বাড়ি।
তুমি কাঁদো কে?
কোথায় কাঁদি? পদ্ম চোখ মোছার চেষ্টাও করলো না।
ভাদ্রের শেষে এই আশ্চিমুখো ঝড় চলে গেলো একখণ্ড বর্ষা রেখে দিয়ে। আউসের ফলন্ত শীষের ধুলো ধুয়ে দিয়ে স্নান মানুষগুলিকে ভিজিয়ে দিয়ে ঢু মারতে মারতে আমনের দলে জমিগুলিতে এক-আধ হাত পরিমাণ জল দাঁড়িয়ে গেলো-পদ্মরঙের জল।
পরদিন সকালে ছিদাম এরশাদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলো। কাত-হয়ে-পড়া চালের তলা থেকে এরশাদের একমুখ দাড়ি আর একগাল হাসি দেখা দিলো।
কেমন এরশাদদাদা?
আগায়ে দ্যাখো জসিমুদ্দিন আর মুকুন্দর কাজিয়া কতদূর। জসিম কয়–আমার বেড়া ফিরায়ে দেও, মুকুন্দ কয়–তোমার বেড়া আমার ঘরের চাল ভাঙছে, তার খেসারত কে দেয়?
এখন করা কী?
রাঁধে খায়ে বিলে যাবো। মনটা ভালো নাই। ছাওয়াল বউ রাখে আসছি। ছাওয়ালের আবার ডোঙা নিয়ে বিলে মাছ ধরা বাতিক। ঝড় গেলো, মনে শান্তি নাই, ভাই।
ফিরে আসেও তো কিছু করা লাগবি?
হয়, এত জল। মনে কয় কিছু হেঁউতি ছিটালে হয়, নইলে জল তো বের্থা।
.
কিন্তু কিছু লোকের মনে দাগ রেখে গেলো এই সাম্প্রদায়িক ভীতি এবং তজ্জনিত বিদ্বেষ। নদানন্দর স্কুলের চারজন শিক্ষক ছুটি থেকে ফিরলোনা।কমত্যাগের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেতারা।
সান্যালমশাইয়ের সেই সুমিত-প্রাসাদের কনট্রাক্টারও যেন ফিরছে না। তার খোঁজে লোক পাঠাতে হলো সদরে।