২.৬ দ্বিতীয় কাণ্ড। ষষ্ঠ প্রপাঠক

দ্বিতীয় কাণ্ড। ষষ্ঠ প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- সমিধো যজতি বসন্তমেবনামব রুন্ধে তনুনপাতং যজতি গ্রীষ্মমেক রুন্ধ ইডো যজতি এবার রুন্ধে বহির্জতি শরদমেবার রুদ্ধে স্বাহাকার যজতি হেমন্তমেবাব রুন্ধে তস্মাৎ স্বাহাকৃতা হেমন্ পশবোহব সীদন্তি সমিধো যজতুষস এব দেবতানামব রুন্ধে তনুনপাতং যজতি যজ্ঞমেবার রু ইড়ো যজতি পশুনেবাব রুন্ধে বহির্জতি প্রজামেবাব রুন্ধে সমানয়ত উপভৃস্তেজো বা আজ্যং প্রজা বহিঃ প্রজাম্বেব তেজো দধাতি স্বাহাকারং যজতি বাচমেবাব রুন্ধে দশ সং পদ্যন্তে দশাক্ষরা বিরাডম্নং বিরাড বিরাজৈবান্নাদ্যম রুন্ধে সমিধ্যে যজত্যস্মিন্নেব লোকে প্রতি তিষ্ঠতি তনুনপাতং যজতি যজ্ঞ এবান্তরিক্ষে প্রতি তিষ্ঠতীড়ো যজতি পশুষের প্রতি তিষ্ঠতি বহির্যজতি য এব বিনাঃ পন্থানস্তেবে প্রতি তিষ্ঠতি স্বাহাকারং যজতি সুবর্গ এব লোর্কে প্রতি তিষ্ঠত্যেতাবন্তো বৈ দেবলোকাস্তেবে যথাপূৰ্ব্বং প্রতি তিষ্ঠতি।। দেবাসুরা এষু লোকেম্পৰ্দ্ধন্ত তে দেবাঃ প্রযাজৈরেভ্যো লোকেভেহিসুরা প্রাণুদন্ত তৎ প্রজানাং প্রজত্বং যস্যৈবং বিদুষঃ প্রজা ইজ্যন্তে প্রেডভ্যা লোকেভ্যো ভ্রাতৃব্যানুদতেহভি কামং জুহোত্যভিজিত্যৈ যো বৈ প্রয়াজানাং মিথুনং বেদ প্ৰ প্ৰজয়া পশুভিৰ্ম্মির্থনৈজ্জায়তে সমিধো বহুীরিব যজতি তনুনপাতমেকমিব মিথুনং তাদড়ো বহুীরিব যজতি বৰ্হিরেকমিব মিথুনং তদেতদ্বৈ প্রজানাং মিথুনং য এবং বেদ প্ৰ প্ৰজয়া পশুভিৰ্মিথুনৈজ্জায়তে দেবানাং বা অনিন্টা দেবতা আসন্নথাসুরা যজ্ঞমজিঘাংসন্তে দেবা গায়ত্ৰীং বৌহ পঞ্চাক্ষরাণি প্রাচীনানি জীণি প্রতীচীনানি তততা বৰ্ম যজ্ঞায়াভবৰ্ম্ম যজমানায় যৎ প্রজানূজা ইজ্যন্তে বৰ্ম্মৈব ত্যজ্ঞায় ক্ৰিয়তে বর্ম যজমানায় ভ্রাতৃব্যাভিভূত্যৈ তস্মাদ্বরূথং পূরস্তাঘর্ষীয়ঃ পশ্চাদ্ধসীমো দেবা বৈ পুরা রক্ষোভ্যঃ ইতি স্বাহাকারণে প্রজে যজ্ঞং সংস্থাপ্যমপশ্যন্তং স্বাত্মকারেণ। প্রজে সমস্থাপয়ম্বি বা এত যজ্ঞং ছিন্দন্তি যৎ স্বাহাকারেণ প্রজে সংস্থাপয়ন্তি প্ৰজানি হবীষ্যেভি ঘারয়তি যজ্ঞস্য সন্তত্যা অথো হবিরেবাকরখো যথাপূৰ্বৰ্ম পৈতি বৈ প্রজাঃ প্রজ্যহনুযাজা যৎ প্ৰজানিষ্টা হবীংষ্যভিঘারয়তি পিতৈব তৎ পুত্রেণ সাধারণং কুরুতে তম্মাদাহুর্যশৈবং বেদ যশ্চ ন কথা পুত্রস্য কেবলং কথা সাধারণং পিতুরিত্যস্কন্নমেব তদৎ প্রযাজেম্বিষ্টেযু স্কন্দেতি গায়বে তেন গর্ভং ধত্তে সা প্রজাং পশন যজামানায় প্র জনয়তি ॥১॥  

[সায়ণাচার্য বলেন-তত্র প্রথমানুবাকে প্রজা বিধাতব্যাঃ। তেষাং মন্ত্ৰস্তু মন্ত্ৰকাণ্ডে পঞ্চমানুবাক এবমাতাঃ–অর্থাৎ এই প্রথম অনুবাকে প্রজ মন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে। এই মন্ত্রগুলি মন্ত্ৰকাণ্ডের পঞ্চম অনুবাকে এইরকমেই কথিত হয়েছে ]

মর্মার্থ- এই অনুবাকে সমিধ ইত্যাদি শব্দসমূহের দ্বারা যজ্ঞবিশেষের নাম উল্লেখিত হয়েছে। ঋতুগুলি হলো প্রযাজ (যজ্ঞের উপসর্গ বা আরম্ভ); ঋতু অনুসারে যজ্ঞগুলিকে স্তুতি করণের উদ্দেশে ক্রমের দ্বারা বসন্ত ইত্যাদি ঋতুর প্রাপ্তি বিষয়ে কথিত হয়েছে। সমিধ যাগের দ্বারা বসন্ত নামক ঋতু,তনপাতের দ্বারা গ্রীষ্ম নামক ঋতু, ইড়া যাগের দ্বারা বর্ষা নামক ঋতু, বহি যাগের দ্বারা শরৎ নামক ঋতু এবং স্বাহাকারযোগের দ্বারা হেমন্ত ঋতুকে প্রাপ্ত হওয়া যায়। হেমন্ত ঋতুতে দ্বিপাদ ও চতুষ্পদ সকল জীব পীড়িত হয়। তেমনই দৃষ্টান্ত স্বাহাকৃতের। স্বাহাকারের দ্বারা অগ্নিতে প্রক্ষিপ্ত সমিধ যেমন দাহের দ্বারা পীড়িত হয়, তেমনই হেমন্তকালে হিমের প্রভাবে সকলে পীড়া অনুভব করে। সেইরকমই, উগ্র হেমন্ত ঋতুও এই যাগের অধীন বলে যাগের স্তুতি করা হয়েছে (তাদৃশঃ উগ্রোহপি হেমন্তোৎস্যাধীনো ভবতীতি যাগস্তুতিঃ) পুনরপি অন্য বিধানের দ্বারা (বিধানন্তরেণ) যাগের প্রশাংসা করা হয়েছে। যেমন, সমিধ যাগের দ্বারা ঊষাকালে দেবগণকে অবরোধ করা যায় অর্থাৎ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তনুনপাতের দ্বারা যজ্ঞকে অবরোধ বা লাভ করা যায়, ইড়া যাগে পশুসমূহকে লাভ করা যায় এবং বহি যাগের দ্বারা প্রজাসমূহ লাভ হয়। সমিধ শব্দের দ্বারা সমিৎ-এর স্তুতি সূচনা করার কারণে ঊষার কথা কথিত হয়েছে, তনুনপাৎ শব্দের দ্বারা বিনাশ সূচনা করার কারণে সকল যজ্ঞের কথা কথিত হয়েছে, ইট শব্দের দ্বারা ক্ষীর ইত্যাদির সূচনা করার কারণে পশুলাভের বিষয় কথিত হয়েছে (ইটশব্দেনেষ্যমাণক্ষীরাদিসুচনাৎ পশ্ববরোধঃ), বহি শব্দের দ্বারা বহির্যাগের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে এবং এই যাগের দ্বারা প্রজা লাভের কথা কথিত হয়েছে। উপভৃৎ (বটকাষ্ঠনির্মিত যজ্ঞপাত্র) হতে আজ্য (ঘৃত) গ্রহণ কর্তব্য। বহির্যাগের প্রজারূপত্বের কারণে আজ্যের তেজঃ প্রজাতে স্থাপিত হয়। স্বাহাকার যাগের দ্বারা (অর্থাৎ এই যাগে স্বাহা শব্দে অগ্নি ইত্যাদি বহু নাম উচ্চারণের দ্বারা) বাক্ বা বাগিন্দ্রিয়ের লাভ হয়। বসন্ত ইত্যাদি পঞ্চ ঋতুর প্রাপ্তি ও ঊষাকাল ইত্যাদি পঞ্চের প্রাপ্তি এই দশসংখ্যা দ্বারা যাগের প্রশংসা করা হয়েছে। দশ অক্ষর হলো বিরাট; এটি অনুরূপ, এই নিমিত্ত বিরাট যাগের অনুষ্ঠানে অন্ন লাভ করা হয়। সমি-যাগের দ্বারা প্রথমলোকে অর্থাৎ এই ভুবনে প্রতিষ্ঠা লব্ধ হয়; তনুনপাৎ-যাগের দ্বারা ভবন ও দেবলোকের অন্তর্বর্তী দ্বিতীয় লোকে অর্থাৎ অন্তরিক্ষে লোকে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তি ঘটে; ইড়াযাগের দ্বারা পশু লাভ করা হয়। (ইড্যাগস্য পশুসম্বন্ধঃ), বহি শব্দের দ্বারা দেবযানমাৰ্গ রূপ সাধন সূচিত হয়, সুতরাং বহি যাগের দ্বারা দেবলোকে যাত্রার পথ লব্ধ হয়; স্বাহাকার যাগের দ্বারা যথাপূর্ব স্বর্গলোকে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তি ঘটে। ভূলোক হতে আরম্ভ করে স্বর্গলোক পর্যন্ত (স্বর্গান্তা) যা উক্ত হয়েছে, তা দেবগণেরে ক্ষেত্রে, (দেবানাং পূজ্যানামপেক্ষিতা লোকাস্তেষু…) এই সকল ক্ষেত্রে যথাক্রমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নিমিত্ত পূর্বোক্ত যাগসমূহের যথাযথ অনুষ্ঠান কর্তব্য। দেবতা ও অসুরগণ এই সকল ক্ষেত্রকে নিজেদের অধিকারভুক্ত করার মানসে পরস্পর স্পর্ধা করত। দেবগণ প্রযাজ যাগের অনুষ্ঠান করে স্বর্গ ইত্যাদি সকল স্থান হতে অসুরগণকে বিতাড়িত করেন। যে যাগানুষ্ঠানের দ্বারা বিরোধীগণকে দুরীভূত করা যায়, সেই যাগের নাম প্রজ। যাঁরা এই সম্পর্কে বিদিত হয়ে প্রযাজ যাগের অনুষ্ঠান ১ করেন, তাঁরা এই লোক হতে শত্রুগণকে বিতাড়িত করতে পারেন। দুরে স্থিত হয়ে প্রথম আহুতি প্রদান করতে হয়, তারপর সন্মুখ ভাগে পাদ স্থাপন করে দ্বিতীয় আহুতি প্রদান করতে হয়। যিনি প্রযাজ যাগের মিথুন জ্ঞাত আছেন, তিনি মিথুন (অর্থাৎ পুরুষ ও স্ত্রীবর্গ সমন্বিত) প্রজা ও পশু লাভ করেন। সমিৎ-যাগের দ্বারা বহু যাগ করণীয়, তনুনপাৎ-এর দ্বারা একটি মিথুন, ই-যাগের দ্বারা অনেক মিথুন, বহির্যাগের দ্বারা একটি মিথুন যাগ কর্তব্য। (এক পুরুষের বহু স্ত্রী থাকলেও সেই পুরুষ ও একাধিক স্ত্রী নিয়ে একটি মিথুন ধরা হয়)। এইরকম যিনি জ্ঞাত আছেন, তিনি মিথুন (পুরুষ ও স্ত্রী সমন্বিত) প্রজা ও পশু লাভ করে থাকেন।–পুরাকালে একদা দেবাগণ যখন যজ্ঞ আরম্ভ করেছিলেন, তখন আজ্যভাগ ইত্যাদির অধিকারী দেবগণ অনিষ্ট (অনভিষিত) ছিলেন। সেই অবসরে সেই স্থানে অসুরগণ সমাগত হয়ে যজ্ঞের হানি সাধনে তৎপর হলো। এই প্রতিবন্ধের প্রতিকারের নিমিত্ত দেবতাগণ অষ্টাক্ষরে গায়ত্রীপাদের দ্বারা দুটি ব্যুহ রচনা করলেন। তার মধ্যে পঞ্চ অক্ষরযুক্ত ব্যুহ পূর্ব দিকের ও তিন অক্ষরযুক্ত ব্যুহ পশ্চিম দিকের রক্ষক। সেই দুটি ব্যুহ যেমন যজ্ঞের, তেমনই যজমানের কবরূপ আচ্ছাদনতুল্য। এই নিমিত্ত পঞ্চ অক্ষররূপ পঞ্চ (অর্থাৎ পাঁচটি) প্রযাজ প্রথমে করতে হয় এবং তিন অক্ষররূপ তিনটি প্রযাজ পরে করতে হয়। এই উভয় কবচ যজ্ঞ ও যজমানকে উভয় দিক হতে রক্ষা করে। এই রক্ষণের দ্বারা শত্রুগণের অভিভূতি (পরাভব বা বিনাশ) ঘটে। এই স্থানে যেমন পূর্বদিকের ব্যুহে অধিকতর (বহু) অক্ষর ও পশ্চিমদিকের বা পশ্চাতের ব্যুহে অল্পতর অক্ষর থাকে, সেইরকম যুদ্ধার্থে গমনকালে পরকীয় (বিপক্ষীয়) সৈন্যগণের মনে ভয় উৎপাদনের নিমিত্ত পুরোভাগে (সম্মুখে) বহুসংখক সৈন্য (জনসঙ্ঃ) এবং পৃষ্ঠভাগে (পশ্চাতে) অল্প সৈন্য রাখতে হয়। কোনও এক কালে দেবতাগণ যাগানুষ্ঠান আরম্ভ করে প্রথমেই যজ্ঞ-উপঘাতক (যজ্ঞ-বিনাশকারী) রাক্ষসগণের আর্বিভাবের পূর্বে স্বাহাকার নামধেয় পঞ্চমযাজের দ্বারা যজ্ঞ সমাপনীয় বিচার করে সেই মতো যজ্ঞানুষ্ঠান করেন। তাতে যজ্ঞ-বিচ্ছেদ হওয়ার নিমিত্ত, তা যুক্তিযুক্ত নয়। এই নিমিত্ত প্রযাজের পরে অবশিষ্ট হবির দ্বারা যাগানুষ্ঠান করা হলে যজ্ঞের বিস্তরা হয়ে থাকে (সন্ততো ভবতি)। অতঃপর পুরোডাশ ইত্যাদি দ্রব্যের দ্বারা হোম করণীয়। এইভাবে যথাপূর্ব ও যথারে প্রজের নির্বিঘ্ন অনুষ্ঠান করলে যজ্ঞও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। প্রযাজ হলো পিতৃস্থানীয় এবং অনুযাজ হলো তার পুত্রস্থানীয়। অনুযাজের নিমিত্ত হবিঃ উপভৃতে (যজ্ঞপাত্রে) গৃহীত বা রক্ষিত থাকে। পুরোডাশ ইত্যাদি হৰিঃ-র অভিক্ষরণ কালে প্রজের শেষে উপভৃতে রক্ষিত অভিঘার অর্থাৎ হবিঃও প্রদান করতে হয়। তাহলে পিতৃস্থানীয় প্রযাজের যা অবশিষ্ট আজ্যদ্রব্য, তা পুত্রস্থানীয় অনুজেরও সাধারণ দ্রব্য হয় (সাধারণং কৃতং ভবতি)। এই বিষয়টি একটি লৌকিক উদাহরণের দ্বারা স্পষ্টীকৃত হয়। যেমন,–এই জগতে বাল্য বয়সে পুত্র যা উপার্জন করে থাকে, সেই সেই দ্রব্য পরবর্তীকালে পুত্রের নিমিত্ত সাধারণভাবে সংগৃহীত করে রেখে দেওয়া হয়, তা পিতা কিংবা ভ্রাতৃগণকেও দেওয়া হয় না। কিন্তু পিতা যা উপার্জন করে, তা পিতার বালক পুত্র ও সেই স্থানীয় সকলেরই সমান ভোগ্যরূপে পরিগণিত হয়। সেইরকমই (পিতৃস্থানীয়) প্রযাজ হলো সাধারণ, তার শেষ ভাগের দ্বারা সেইজন্যই অন্য হোম করা হয়। অনুযাজ (পুত্রস্থানীয়) হলো অসাধারণ, তার শেষ ভাগের দ্বারা আর বিনিয়োগ করা যায় না। যাগানুষ্ঠানের পূর্বে যাগের জন্য সংগৃহীত দ্রব্যের অন্যত্র পতন হলে তা বিনষ্ট হয়। এই কারণেই প্রযাজ যাগের পরে অন্যত্র হবির শেষ প্রক্ষিপ্ত করতে হয়। তাতে বিনষ্ট দোষের পরিহার হয় (তস্মাদেতদস্কন্নমবিনষ্টমেব)।পুনরায় প্রকারান্তরে প্রশংসিত হচ্ছে যে,-একদিকে গায়ত্রীর পঞ্চাক্ষাররূপা প্রজ, অন্য দিকে গায়ত্রীর তিন অক্ষর রূপা অনুযাজ। মধ্যে যে অভিঘারণ (হোম) করা হয়, তার দ্বারা গায়ত্রী আপন উদরে গর্ভ ধারণ করেন (গর্ভং ধৃতবতী ভবতী)। এরই ফলে সেই গায়ত্রী যজমানের নিমিত্ত (যজমানার্থং) প্রজা ও পশুসমূহ উৎপাদিত করে থাকেন ॥১॥

 [সায়ণাচার্য বলেন–অনুবাকে দ্বিতীয়েহস্মিন বক্তব্যাবাজঃভাগকৌ। অর্থাৎ–এই অনুবাকে দুটি আজ্যভাগের বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- চক্ষুষী বা এতে যজ্ঞসা যদাজ্যভাগৌ যজতি চক্ষুষী এব তদ্যজ্ঞস্য প্রতি দধাতি পূৰ্ব্বার্ধে জুহোতি তস্মাৎ পূৰ্ব্বার্ধে চক্ষুষী প্রবাহুজুহোতি তস্মাৎ প্রবাহু চক্ষুষী দেবলোক বা অগ্নিনা যজমানোহনু পশ্যতি পিতৃলোকং সোমেনোত্তরাৰ্দেহগ্নয়ে জুহোত দক্ষিণার্ধে সোমায়েবমিব হীমৌ লোকাবনয়োলোকয়োরনুখ্যাত্যৈ রাজানৌ বা এতৌ দেবতানাং যদষ্মীযোমাবন্তরা দেবতা ইজ্যেতে দেবতানাং বিধৃত্যৈ তস্মাদ্ৰাজ্ঞা মনুষ্যা বিধৃতা ব্ৰহ্মবাদিনো বদন্তি কিং তদ্যজ্ঞে যজমানঃ কুরুতে যেনান্যতোদশ পশূন্দাষারোভয়তোদতশ্চেতৃচমচ্যাজ্যভাগস্য জুষাণেন যজতি তেনান্যতোদতো। দাধার…মনুচ্য হবিষঃ ঋচা যজতি তেনোভয়তোদতো দাধার। মূর্ধন্বতী পুরোনুবাক্য ভবতি মূৰ্ধানমেবৈনং সমানানাং কয়রাতি নিযুত্বত্যা যজতি ভ্রাতৃবাস্যৈব পশুন্নি যুবতে কেশিনং হ দার্ভং কেশী সাত্যকামিরুবাচ সপ্তপদাং তে শরীং শো যজ্ঞে প্রযোক্তাসে যস্যৈ বীণে প্র জাতা ভ্রাতৃব্যানুদতে প্রতি জনিষ্যমাণান্যস্যৈ বীর্য্যেপোভয়োর্লাকয়োর্জোতিৰ্দ্ধত্তে যস্যৈ বীর্যেণ পূৰ্বাদ্ধে নানা ভুক্তি জঘনার্দেন ধেনুরিতি পুরস্তাল্লহ্মা পুরোনুবাক্যা ভবতি জানে ভ্রাতৃব্যান প্রদত উপরিষ্টাক্ষ্মা যাজ্যা জনিষ্যমাণাবে প্রতি নুদতে পুরাক্ষ্মা পুরোনুবাক্যা ভবত্যস্মিয়ে লোকে জ্যোতিৰ্দ্ধত্ত উপরিষ্টাল্লক্ষ্ম যাজ্যাইমুম্মিন্ধেব লোকে জ্যোতির্পত্তে জ্যোতিষ্মাবম্মা ইমৌ লোকৌ ভবতো য এবং বেদ পুরস্তালক্ষ্মা পুরোনুবাক্যা ভবতি তস্মাৎ পূর্বানোনা ভুন্যপরিষ্টাল্লক্ষ্মা যাজ্যা তম্মাজ্জঘনাৰ্দ্ধেন ধেনুর্য এবং বেদ ভুক্তে এনমেতৌ বজ্র আজ্যং বজ্র আজ্যভাগে বজো বষট্‌কার স্ত্রিবৃতমেব বজ্রং সংভৃত্য ভ্রাতৃব্যায় প্র হরত্যছারমপগুৰ্য বষরাতি ত্যৈ গায়ত্রী পুরোনুবাকা ভবতি ত্ৰিগজ্যা ব্ৰহ্মম্নেব ক্ষয়ম্বারয়তি তস্মাদ্রাহ্মণো মুখ্যো মুখ্যো ভবতি য এবং বেদ ৈৈবনং পুরোনুবাক্যয়াহহ প্রণয়তি যাজ্যয়া গময়তি বষট্‌কারেণৈবৈনং পুরোনুবাক্যয়া দত্তে প্র যচ্ছতি যাজ্যয়া প্রতি বষট্‌কারেণ স্থাপয়তি ত্রিপদা পুরোনুবাকা ভবতি ত্ৰয় ইমে লোকা এম্বেব লোকে প্রতি তিষ্ঠতি চতুষ্পদা যাজ্যা চতুষ্পদ এব পশূনব রুন্ধে দ্ব্যক্ষরো বষট্‌কারো দ্বিপাদ্যজমানঃ পশুষেবোপরিষ্টাৎ প্রতি তিষ্ঠতি গায়ত্রী ভবতি ত্রিষ্টুগাজ্যৈষা বৈ সপ্তপদা শরী যা এতয়া দেবা অশিক্ষন্তদশবন্য এবম্ বেদ শক্লোত্যে যচ্ছিতি ॥২॥

মর্মার্থ- (যজ্ঞাগ্নিকে উদ্দেশ করে কথিত হচ্ছে)–এই অগ্নিদেব আমাদের অনুগ্রহ করে থাকেন। তিনি আমাদের কর্মানুষ্ঠান-নিবারক সমূহকে (বৃত্ৰাণি) অর্থাৎ পাপসমুদয়কে অতিশয়রূপে বিনষ্ট করে থাকেন। তিনি আমাদের স্তুতির দ্বারা (তুষ্ট হয়ে) আমাদের নিমিত্ত ধনেচ্ছু (অর্থাৎ আমাদের ধন প্রদানের নিমিত্ত ইচ্ছুক হয়ে) সম্যভাবে জ্বালিত হোন। আমাদের দ্বাৰা আহুত হয়ে এই অগ্নি প্রীত হোন এবং আমাদের প্রদত্ত এই আজ্য ভক্ষণ করুন (অস্মাদ্দত্তমিদমাজমশ্নাতু)। হে সোমদেব! আপনি সৎ-ভাবান্বিত জনের অনুষ্ঠিত কর্মসমূহের পালক (পতিয়সি)। আপনি দীপ্তিমান রাজা। অধিকন্তু আপন পাপঘাতী। আপনি মঙ্গলকর ফলপ্রদানের দ্বারা সকলের পক্ষেই মঙ্গলস্বরূপ, আপনি যজ্ঞের নিম্পাদনকর্তা। এমনই যে আপনি (সোম) এই আজ্য ভক্ষণ করুন। এই অগ্নিদেব পুরাতন জন্মের দ্বারা আপন দেহ শোধন করে থাকেন। এই অগ্নিদেব কবি অর্থাৎ পণ্ডিত; ইনি অপরের অভিপ্রায় জ্ঞাত হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। এমনই অগ্নিদেব আমাদের স্তুতির দ্বারা তুষ্ট হয়ে আমাদের দত্ত এই হবিঃ ভক্ষণ করুন। হে সোমদেব! বাক্যের তাৎপর্য বিষয়ে অভিজ্ঞ আমরা স্তুতিরূপা বাক্যের দ্বারা আপনাকে বর্ধিত করছি। আপনি সম্যকরূপে সুখ সম্পন্ন হয়ে আমাদের নিকট আগত হোন। এমনই সোমদেব আমাদের দত্ত এই হবিঃ ভক্ষণ করুন। যজমান ব্রাহ্মণের দ্বারা উচ্চারিত বা নিবেদিত অগ্নিদেব ও সোমদেবের প্রতি উদ্দিষ্ট এই দুটি মন্ত্র বা আজ্যভাগ যজ্ঞের চক্ষুস্বরূপ। যাঁরা এই আজ্যভাগের (তথা মন্ত্রের) দ্বারা যাগ নিষ্পন্ন করেন, তারা জ্ঞের চক্ষুদান করে থাকেন। লোকের যেমন মস্তকের সম্মুখ ভাগে (পূর্বর্ভাগে) চক্ষু থাকে, পশ্চাতে (পৃষ্ঠভাগে) নয়, তেমনই পূর্বার্ধে এই চক্ষুস্বরূপ যাগ করা বিধি। লোকের দুটি বাহু যেমন সমান হয়, সেইরকমই পরিমাণ-বৈষম্য নিবারণ করে উভয় আহুতির পংক্তিরূপত্বে সাম্য (সমতা বিধান করণীয়। দেবলোক উত্তর দিকে অবস্থিত (উত্তরদেশস্থঃ) এবং পিতৃলোক দক্ষিণ দিকে অবস্থিত (দক্ষিণদেশস্থঃ)। সেইভাবেই যজমান দেবলোক ও পিতৃলোককে দর্শন করে থাকেন। (অগ্নি ও সোম) এই দুই দেবতা দেবগণের রাজার ন্যায় পরিগণিত; সুতরাং দেবগণের মধ্যে যে দুজনকে প্রধান বলা হচ্ছে তাদের উদ্দেশে যাগ করণীয়। তাহলে রাজা কর্তৃক সেবক-ভৃত্য ইত্যাদির পরিপোষণের ন্যায় এই অগ্নি ও সোমও সকল দেবতার পোষক হন। এইভাবে দুইটি আজ্যভাগের নিরূপণ করে (ইস্থমাজ্যভাগে নিরূপ্য) সেগুলির যাজ্যানুবাক্যে উপরিতন অগ্নির প্রধান হবিঃ-র যাজ্যা ও অনুবাক্যের বিষয় ক্রমে কথিত হচ্ছে। কোন কোন ব্ৰহ্মবাদী ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে থাকেন–যজমান কৃত সেই যজ্ঞাঙ্গ কিরকম বা তার নাম কি যার দ্বারা অধোভাগে (নিম্নদিকে) দন্তবিশিষ্ট গো ইত্যাদি পশু লাভ করা যায় এবং সেই যজ্ঞাঙ্গই বা কিরকম (অর্থাৎ তারই বা নাম কি) যার দ্বারা ঊর্ধ্ব ও অধঃ অর্থাৎ উভয় ভাগেই দন্তবিশিষ্ট অশ্ব ইত্যাদি পশু লাভ করা যায়? এর উত্তরে বিজ্ঞজনগণ বলে থাকেন–আজ্যভাগের হোমের সময়ে পুরোনুবাক্যরূপ কোনও ঋক্‌ পাঠপূর্বক যাজ্যারূপে জুষাণ ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা যাগ করতে হয়। তা হলে অধোভাস্থ সম্পূর্ণ ঋক্‌ পাঠের কারণে অধোভাগস্থ দন্তযুক্ত পশুসমূহ প্রাপ্ত হওয়া যায়। আবার প্রধান অগ্নির হোমে পুরোনুবাক্যা ঋক্ পাঠ করে যাজ্যা ঋকের দ্বারাও যাগ করতে হয়। তাতে উধ্ব নিম্ন উভয় ঋক সম্পূর্ণ হওয়ার কারণে উভয়ভাগে (উপরে ও নিম্নে) দন্তযুক্ত অশ্ব ইত্যাদি পশু প্রাপ্ত হওয়া যায়। উভয় ঋমন্ত্র পূর্বেই ব্যাখ্যাত হয়েছে (তত্রাজ্যভাগবিষয়া পুরোনুবাক্যা যজুশ্চেত্যুভয়ং পূর্বমেবোক্তং ব্যাখ্যাতং চ)। আগ্নেয় যাগের যাজ্যানুবাক্যা সামান্য বিধায় বিশেষ আকারে বলা হচ্ছে–মূর্ধ-শব্দ সমন্বিত ঋকের দ্বারা (অর্থাৎ যে ঋকে মূর্ধ শব্দ আছে সেই মূর্ধন্বতী নামে অভিহিত ঋকের উচ্চারণে) যজমান সমশ্রেণীয়গণের মধ্যে উৎকৃষ্ট হয়ে থাকেন; আর নিযুত্বতী অর্থাৎ নিযুৎ-শব্দ সমন্বিত ঋকের দ্বারা শত্রুগণের পশুবগকে বিযযাজিত (বিযুক্ত) করা হয়ে থাকে। এই যাজ্যানুবাক্যা যুগলের অনেক রকমে প্রশংসা উপলক্ষে বলা হয়েছে–পুরাকালে দর্ভ নামক ঋষির একটি পুত্র ছিলেন, তার নাম কেশী; আবার সত্যকাম নামক ঋষির পুত্রের নামও ছিল কেশী। একদা সত্যকাম-পুত্র কেশী তার সহযোগী দৰ্ভ-পুত্র কেশীকে বলেছিলেন–হে দার্ভ! আগামী দিনে তোমার যজ্ঞে সপ্ত-পদরূপ শঙ্করী-ছন্দের প্রয়োগ করো। সেই ঋক অত্যন্ত বীর্যবতী অর্থাৎ ক্ষমতাশালী। (অগ্নিমূর্ধা ইত্যাদি ত্রিপাদ এবং ভুবো যজ্ঞশ্চ ইত্যাদি চতুঃপাদ; উভয়ে মিলিত হয়ে সপ্তপদা শঙ্করী হয়)। সেই শরীর সামর্থ্যের দ্বারা পূর্বে উৎপন্ন শত্রুসমূহ নিরাকৃত হয়, এবং জন্মের সম্ভাবনা যুক্ত অর্থাৎ যে শত্রু এখনও উৎপন্ন হয়নি (জনিষ্যমান), তার আর উৎপত্তি হয় না। এমন কি সেই (শরী) ছন্দের ক্ষমতাবলে পুরুষ ভূলোক ও স্বর্গলোকের (জ্যোতিঃ) উৎকর্ষ ধারণ করে। সেই শরীর ক্ষমতাবলে লাঙ্গল ও শকটবাহী বলীবদগণ তাকে প্রভুর ন্যায় সেবা (পালন করে। ক্ষীরপ্রদানকারী গাভীগণ যেভাবে প্রভুকে সেবিত (পালন) করে, শঙ্করীও সেইরকম (সেই যাজ্ঞিকের অধীন হয়)।–যাজ্যা ও অনুবাক্যার লক্ষণ প্রদর্শন করছেন–যে ঋকে মন্ত্রের প্রতিপাদ্য দেবতার নামধেয় পূর্বার্ধে চিহ্নরূপে (লক্ষ্ম) থাকে, তা পুরোনুবাক্যা; আর দেবতার নাম পরার্ধে (উত্তরার্ধে) থাকলে, তা যাজ্যা। যথা–অগ্নিমূর্ধা ইত্যাদি মন্ত্রে পুর্বার্ধে গ্নি-শব্দ থাকায় তা পুরোনুবাক্যা। অবার, জিহ্বামগ্নে চকৃষে হব্যবাহন ইত্যাদি মন্ত্রে উত্তরার্ধে অগ্নি-শব্দ (অর্থাৎ দেবতার নাম) উল্লেখিত থাকায় তা যাজ্যা। পূর্বাধগত দেবতার নাম-চিহ্নে (লক্ষ্ম) পূর্ব উৎপাদিত শত্রুগণের বিনাশ (নিরাকরণ) ও উত্তরার্ধগত নামের (লক্ষ্মণের) দ্বারা জনিষ্যমান শত্রুর জন্মে প্রতিবন্ধ ঘটে। পুরোনুবাক্যার দ্বারা এই লোকের উপরিভাগে অবস্থিত স্বর্গলোকের জ্যোতিঃ এবং যাজ্যার দ্বারা এই লোকস্থিত জ্যোতিঃ ধারণ করা যায়। এই উভয় বিষয় সম্পর্কে যাঁরা বিদিত হন, তারা উভয় লোক লাভ করে থাকেন এবং পূর্বে পরিব্যক্ত শকটবাহী বলীবদরে দ্বারা বহিত (পালিত) ও ক্ষীরপ্রদানকারী ধেনুর দ্বারা পালিত হওন-রূপ উপকার লভ করেন। আজ্য, আজ্যভাগ ও বষট্‌কার–এই তিনটিকে বজ্র নামে অভিহিত করা হয়। এই তিনটি আজ্যভাগ নামে আখ্যায়িত কর্মসূহে মিলিত হয়ে ত্রিগুণাত্মক বজ্র সম্পাদিত হয়। তার দ্বারা শত্রুর প্রহার করা হলে বষট্‌কারে বৈয় হয়, তার অর্থাৎ শত্রুর প্রহার হয় না। সেই নিমিত্তই বলা হচ্ছে–উচ্চধ্বনি করার নিমিত্তই বার। সেই ধ্বনিই শত্রুর প্রতি হিংসা কর্ম সম্পাদিত করে থাকে। গায়ত্রী (ছন্দ) পুরোনুবাক্যা; অগ্নিমূর্ধা-ই গায়ত্রী, এইটি ব্রাহ্মণের সাথে উৎপন্ন হওয়ার কারণে ব্রহ্মস্বরূপা। ত্রিষ্টুপ (ছন্দ) যাজ্য। ভুবো যজ্ঞস্য-ই ত্রিষ্টুপ। তা ক্ষত্রিয়ের সাথে উৎপন্ন হওয়ায় ক্ষত্রস্বরূপা। গায়ত্রী ও ত্রিষ্টুভের পৌবাপর্যানুসারে, অর্থাৎ ব্রাহ্মণের পরে ক্ষত্রিয়ের প্রবর্তন হওয়ার কারণে ব্রাহ্মণ মুখ্য হয়ে থাকেন (যস্মাব্রাহ্মণঃপূর্বং প্রবৃত্তস্তস্মান্মুখখ্যা ভবতি)। যিনি এইরকম জানেন, তিনিও মুখ্য হন।

পুরোনুবাক্যা পাঠের দ্বারা হবিঃ-র দাতা দেবতার সম্মুখে প্রকর্ষের সাথে কথিত হন। যাজ্যের দ্বারা তাঁকে পথের দ্বারা নিয়ে যাওয়া হয়। বষট্রারের দ্বারা দেবতাকে প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই তিনিটি মন্ত্র ক্রমে যজমানকে গ্রহণপূর্বক দেবতার নিকট প্রদান করে সেখানে (দেবতার সম্মুখে) উপবেশন করিয়ে দিয়ে থাকে। ত্রিপদা পুরোনুবাক্যা হয়; এই তিন পদের দ্বারা যজমান তিন লোকে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হন। চতুষ্পদা যাজ্যা হয়; এই চারি পদের দ্বারা যজমান চতুষ্পদ পশু লাভ করেন। দুই অক্ষরা বক্কার হয়। এই দুই অক্ষরের দ্বারা যজমান আপন দুইটি পদে স্থিরভাবে অবস্থান করেন এবং (মনুষ্য-প্রজারূপ দ্বিপদযুক্ত) পশু লাভ করেন। পূর্বে উক্ত সপ্তপদা শরীর সপ্তপাদের উদাহরণের গুণকীর্তন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে–গায়ত্রী পুরোনুবাক্যা, ত্রিষ্টুপ যাজ্যা এবং এই দুইয়ের যোগে সপ্তপদী হলো শঙ্করী। (যিনি এই বিষয়টি বিদিত হন, তিনি) এই শরীর দ্বারা আপন ইচ্ছানুযায়ী কার্যে সিদ্ধিপ্রাপ্ত হন ॥২॥

[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয়ানুবাকে প্রধানভৃত আগ্নেয় পুরোশোহভি ধাতব্য। অর্থাৎ–যাগে দুই দিনে নির্বপণীয় প্রধানভূত আগ্নেয় পুরোডাশের বিষয় কথিত হয়েছে]।

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতিদ্দেবেভ্যো যজ্ঞান ব্যাদিশৎ স আত্মম্নজ্যমধত্ত তং দেবা অব্ৰুবম্নেষ বাব যজ্ঞো যদাজ্যমপ্যেব নোহস্থিতি সোহব্ৰবীদ্যজাম্ব আজ্যভাগাবুপ স্থণানভি ঘারয়ানিতি তস্মাদ্যজত্যাজ্যভাগাবুপ তৃণ্যভি ঘারয়ন্তি। ব্ৰহ্মবাদিনো বদন্তি কস্মাৎ সত্যাদ যাতযামান্যন্যানি হবীংষ্যযাতযামমাজ্যমিতি প্রাজাপত্যম ইতি ব্রুয়াদযাতযামা হি দেবানাং প্রজাপতিরিতি ছন্দাংনসি দেবেডেভ্যাহপাক্রামন্ন বোহভাগানি হব্যাং বক্ষ্যাম ইতি তেভ্য এতচ্চতুরবত্তমধারয় পুরোনুবাক্যায়ৈ যাজ্যায়ৈ দেবতায়ৈ বষট্‌কারায় যচ্চতুরবত্তং জুহোতি ছন্দাংস্যেব তৎ প্রীতি ন্যস্য প্রীতানি দেবেভ্যো হ্যং বহত্যঙ্গিরসসা বা ইত উত্তমাঃ সুবৰ্গং লোকমায়ন্তদৃষয়ো যজ্ঞবাস্তুভ্যবায়ান্তে অপশ্যন পুনরাশং কুৰ্মং ভূতং সন্তং তমব্রুবন্নিায় প্রিয়স্ব বৃহম্পতয়ে প্রিয় বিশ্বেভ্যো দেবেভ্যো খ্রিয়ম্বেতি স নাপ্ৰিয়ত তমব্রুবন্নগ্নয়ে প্রিয়ষেতি সোহগুয়েইখ্রিয়ত যদাগ্নেয়োহাকপালোহমা বাস্যায়াং চ পৌর্ণমাস্যাং চাচ্যুত ভবতি সুবর্গস্য লোস্যাভিজিত্যৈ তমব্রুবন্ কথাহহাস্থা ইত্যনুপাক্তোহভূবমিত্যব্রবীদ যথাহক্ষোহনুপাক্তঃ অবাচ্ছত্যেবমবাহর মিত্যুপরিষ্টাদভ্যজ্যাধস্তাদুপানিক্তি সুবর্গস্য লোস্য সমষ্ট্যৈ সর্বাণি কপালানভি প্ৰথয়তি তাবতঃ পুরোডাশানমুন্মিল্লোঁকেইভি জয়তি যো বিদগ্ধঃ স নৈঋততা যোহশৃতঃ স রৌদ্রো যঃ শৃতঃ স সদেবস্তস্মাদবিদহতা শৃতকৃত্যঃ সদেবত্বায় ভস্মনাহভি বাসয়তি তস্মান্মাং সেনাস্থি ছন্নং বেদেনাভি বাসয়তি তস্মাৎ কেশৈঃ শিশ্চন্নং প্রচ্যুতং বা এতদন্মাল্লোকাদাগতং দেবলোকং যচ্ছুতং হবিরনভিঘারিত মভিঘাৰ্য্যোদ্বাসয়তি দেবত্ৰৈবৈনপময়তি যদ্যেকং কপালং নশ্যেদেকো মাসঃ সম্বৎসরস্যানবেতঃ স্যাদথ যজমানঃ প্র মীয়েত যুদ্ধে নশ্যোং ছৌ মাসৌ । সম্বৎসরস্যনবেতৌ স্যামথ যজমানঃ প্র মীয়েত সংখ্যায়োঘাসয়তি যজমানস্য গোপীথায় যদি নশ্যেদানিং দ্বিকপালং নিৰ্ব্বপেদ দ্যাবাপৃথিব্যমেককপালমশ্বিনৌ বৈ দেবানাং ভিষজৌ ভ্যামেবাস্মৈ ভেষজং করোতি দ্যাবাপৃথিব্য এককপালো ভবত্যনয়োৰ্বা এতন্নশ্যাতি যশ্যত্যনয়োরেবৈদ্বিতি প্রতিষ্ঠিত্যৈ ॥৩।

মর্মার্থ- (একদা) দেবতাগণের মধ্যে যজ্ঞসাধনের দ্রব্যসমূহ বিভাগ করে দিয়ে প্রজাপতি তার নিজের নিমিত্ত আজ্যদ্রব্য সংরক্ষিত করে রেখে দিয়েছিলেন (স্থাপিতবা)। তখন দেবতাগণ প্রজাপতিকে বললেন–আজ্যই হলো যজ্ঞ (অর্থাৎ যজ্ঞের নিমিত্তই আজ্যের নাম যজ্ঞ); যজ্ঞকর্মের যোগ্য সকল দ্রব্যের মধ্যে ঘৃত (আজ) সারবস্তু (ঘৃতস্যৈব সারাৎ)। সেই কারণে আমাদেরও এই আজ্যের কিছুটা ভাগ প্রদান করুন। তখন প্রজাপতি দেবতাগণকে বললেন-হে দেবগণ! আপনাদের উদ্দেশ্যে যাজ্ঞিকগণ আজ্যভাগদ্বয়ের দ্বারা যাগ করুন এবং প্রধান হবিঃ-প্রদানের পর অভিঘারণ (সিঞ্চিত) করুন। আজ্যভাগের যাগ আজ্যের দ্বারা করতে হয় (আজ্যভাগাবাজ্যেন যজেয়ুঃ)। পুরোডাশ, চরু ইত্যাদি হবিঃ দুই বা তিন দিনেই গতসার (বিনষ্ট) হয়ে যায়; কিন্তু আজ্য সোর (অবিনষ্ট) থাকে, তার স্বাদও নষ্ট হয় না (ন তু স্বাদিমানং পরিত্যজতি)। এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসু হয়ে ব্রহ্মবাদীবর্গ পরস্পর প্রশ্ন করতে থাকলে কোন একজন বুদ্ধিমান ব্ৰহ্মবাদী বললেন যে, এই আজ্য প্রজাপতিরই। এই কারণেই এই বস্তু যতাযথ (সারবা) থাকে। ইন্দ্র, অগ্নি ইত্যাদি দেবতাগণ কল্পে কল্পে বিনশ্বরতা প্রাপ্ত হন, কিন্তু প্রজাপতি তাঁর জগদীশ্বরত্বের প্রভাবে তাদের পুনঃ পুনঃ বিনাশ ও সৃষ্টি পূর্বক নিজে যথাপূর্ব বিরাজমান থাকেন (অর্থাৎ তিনি অবনিশ্বর), এই কারণে তাঁর আজ্যও সর্বদা সারবান্ অর্থাৎ অসারত্বহীন হয়ে থাকে। পুরোনুবাক্যা ইত্যাদি মন্ত্রের মধ্যগত গায়ত্রী ইত্যাদি ছন্দ সমূহ হবির্ভাগী দেবগণের নিকট হতে বিমুখ হয়ে আমরা ভাগরহিত হওয়ার কারণে আপনাদের হব্যসমূহ বহন করব না–এই বলে নির্গত হয়ে যাচ্ছিলেন। এই ছন্দ-শব্দের দ্বারা তাদের অভিমানী দেবতা বোঝাচ্ছে। অতঃপর হবির্ভাগী দেববর্গ সেই ছন্দ-অভিমানী দেবতাগণকে ভাগ প্রদান করেন। এই স্থলে পুরোনুবাক্যো ইত্যাদি শব্দে অভিধেয় হয়েছেন ছন্দের অভিমানী দেবতাগণ, এবং আহুতির আধারভূত অগ্নি ইত্যাদি দেবতাগণ। সেই জন্যই যেমন আহুতির আধারভূত দেবতাগণকে, তেমনই ছন্দের অভিমানী দেবতাগণকেও তাদের প্রীতির নিমিত্ত যাগ কর্তব্য। তাতে প্রীত হয়ে ছন্দের অভিমানী দেবগণ হবির্ভাগী দেবতাগণের উদ্দেশে নিবেদিত হবিঃ বহন করবেন। (একদা) অঙ্গিরা নামক ঋষিগণ ভূলোক হতে নির্গত হয়ে স্বর্গলোকে গমন করেন। সেখানে সেই ঋষিগণ স্বর্গের যজ্ঞভূমিতে সমাগত হয়ে দেখলেন যে, পুরোডাশ অভিমানী দেবতা আপন শরীরকে অন্তর্হিত করে কূর্মশরীর ধারণ করে প্রকৃষ্টরূপে পলায়ন করছেন (কুর্মশরীরী ভূত্বা প্রকর্ষেণ পলায়ত)। তাকে দর্শন করে ঋষিগণ বললেন-ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতার উদ্দেশে তোমাকে প্রদান করব। এই কথাতেও পুরোডাশ-অভিমানী দেবতার পলায়ননিবৃত্তি হলো না।–অগ্নির উদ্দেশে তোমাকে প্রদান করব–এই কথা বলার ফলে সেই পুরোডাশ-অভিমানী দেবতা স্থিতবা হলেন, অর্থাৎ পলায়ন স্থগিত করলেন। এই নিমিত্ত দিনদ্বয়ে অর্থাৎ দুই দিনে অগ্নির উদ্দেশে অষ্ট কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়। তাতে স্বর্গ জয় হয়ে থাকে (স্বর্গাভিজয়ে ভবতীতি)। ঋষিগণ অতঃপর পুরোশকে জিজ্ঞাসা করলেন –কোন্ হেতুতে তুমি এই যজ্ঞভূমি পরিত্যাগ করছ? তবে পুরোডাশ বলল-আমি অঞ্জনের দ্বারা অলঙ্করণরহিত হয়ে আছি, সেই নিমিত্তই ত্যাগ করে গমন করছি (তস্মাত্তাবনস্মি)। লোকে যেমন শকটের চক্র (তৈল ইত্যাদি) মিশ্রণরহিত করে রাখলে তা বিনষ্ট হয়ে যায়, সেইরকমই আমিও অঞ্জন-রহিত হওয়ার কারণে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছি। এই নিমিত্ত পুরোশের উপরে ও নীচে ঘৃতসিক্ত করণীয় (আজ্যেনালং কুর্যাৎ)। তার দ্বারা স্বর্গের সম্যক ব্যাপ্তি হয়ে থাকে। যতগুলি কপাল স্থাপিত হবে, তার সবগুলিই প্রসারের কারণ হয়; অর্থাৎ স্থাপিত কপালের সংখ্যানুসারে পুরোডাশ নির্বাপণের দ্বারা স্বৰ্গমুখ প্রসারিত করা হয়। বিকৃতভাবে (অর্থাৎ আংশিক) দগ্ধ বা পক্ক দ্রব্য রাক্ষসগণের প্রিয়; অপক্ক (অর্থাৎ পাক না করা) দ্রব্য রুদ্রের প্রিয়, এবং সুষ্ঠুভাবে (অর্থাৎ সম্পূর্ণতঃ) পাক করা দ্রব্য দেবতাগণের প্রিয়। সেই নিমিত্ত সম্যভাবে পক পুরোডাশ দেবগণের প্রীতির নিমিত্ত প্রদান করা কর্তব্য। পাক করা কঠিন পুরোডাশের উপরে ভস্মের দ্বারা আচ্ছাদন করা হলে তা মাংসচ্ছাদনের মতো হয়। আচ্ছাদনকালে বেদগত দৰ্ভনাড়ীর সংস্পর্শের দ্বারা কেশচ্ছন্ন মস্তকের মতো হয় (কেশচ্ছন্নং শির ইব ভবতি)। মন্ত্রের দ্বারা হবিঃ পাক করা হলে এই লোক হতে প্রচ্যুতি ঘটে; অভিঘারণের অভাবে শাস্ত্রায়ত্ব অর্থাৎ সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে স্বর্গপ্রাপ্তি হয় না। সেই নিমিত্ত শাস্ত্রীয় মতে আজ্যের দ্বারা অভিঘারণ করে পরে উদ্বাসন (বিসর্জন) করণীয়; তা হলে তা দেবতাগণের প্রাপিত (ভোগ্য) হয়। কপালসমূহের উদ্বাসন কালে, গণনা করা উচিত; কারণ একটি বা দুটি কপাল নষ্ট হলে সম্বৎসরের মধ্যে যজমানের মৃত্যু হয়; সুতরাং যজমানের রক্ষার নিমিত্ত কপাল-গণনা কর্তব্য। প্রমাদ ইত্যাদির কারণে যদি কপাল বিনষ্ট হয়ে থাকে, তবে তার জন্য প্রায়শ্চিত্ত কর্তব্য। তখন অশ্বিদ্বয়ের উদ্দেশে দুটি কপাল ও দ্বিকপাল দ্যাবাপৃথিবীর নিমিত্ত এক কপাল হবিঃ নির্বপণ করতে হবে। অশ্বিদ্বয় হলেন দেবগণের ভিষজ অর্থাৎ চিকিৎসক, তাঁরা দেবগণকে ভেষজ দান করেন অর্থাৎ তাদের চিকিৎসা করে থাকেন। এইভাবে (এই প্রায়শ্চিত্তের দ্বারা) কপাল-বিনষ্টি-জনিত দোষের ক্ষালন হয় এবং যজমান প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকেন৷৩৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থেহনুবাকে বেদির্বিধাতব্যা। অর্থাৎ–এই অনুবাকে বেদি নির্মাণের বিধি কথিত হয়েছে।]

.

চতুর্থ অনুবাক

মন্ত্র- দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসব ইতি স্ফ্যমাদত্তে প্রসূত্যা অশ্বিনোৰ্ব্বাহুভ্যামিত্যাহাশ্বিনৌ হি দেনামধ্বর্য্য আস্তাং পুষ্ণো হস্তাভ্যামিত্যাহ যত্যে শতভৃষ্টিরসি বানম্পতত্যা দ্বিষতো বধ ইত্যাহ বমেব তৎ সংশ্যতি ভ্রাতৃব্যায় প্রহরিষ্যন্তস্তম্বযজু হরত্যেবতী বৈ পৃথিবী যাবতী বেদিস্তস্যা এতাবত এব ভ্রাতৃব্যং নির্ভজতি তস্মান্নাভাগাং নির্ভজন্তি ত্রিহরতি ত্ৰয় ইমে লোকা এভ্য এবং লোকেভ্যো নির্ভজতি তৃষ্ণীং চতুর্থং হত্যপরিমিতাদেবৈনং নির্ভজ্যুদ্ধন্তি যদোস্যা অমেধ্যং তদপহন্তদ্ধন্তি তম্মদোষধয়ঃ পরা ভবন্তি মূলং ছিনত্তি ভ্রাতৃব্যস্যৈ মূলং ছিনত্তি পিতৃদেবত্যাহতিখাতেয়তীং খনতি প্রজাপতিনা যজ্ঞমুখেন সংমিমা প্রতিষ্ঠায় খনতি যজমানমেব প্রতিষ্ঠাং গময়তি দক্ষিণতো বর্ষীয়াসীং করোতি দেবষজনস্যৈব রূপমকঃ পুরীষবতীং করোতি প্রজা বৈ পশবঃ পুরীষ প্রজয়ৈবৈনং পশুভিঃ পুরীষবন্তং কবোত্যুত্তরং পরিগ্রাহং পরি গৃহ্নাতোলাবতী বৈ পৃথিবী যাবতী বেদিস্তস্যা এতাবত এব ভ্রাতৃব্যং নির্ভজ্যাহত্নন উত্তরং পরিগ্রাহং পরি গৃহৃতি ক্রমিব বৈ এতৎ করোতি যদ্বেদিং করোতি ধা অসি স্বাধা অসীতি যোযুপ্যতে শাস্ত্যৈ পোণীরা সাদয়ত্যানপো বৈ রক্ষোপ্পী রক্ষসামপহত্যৈ ফ্র্যস্য বয়ঁৎ সাদয়তি যজ্ঞসা সংতত্যৈ যং দ্বিষ্যাত্তং ধ্যায়েছুচৈবৈনমপঁয়তি ॥৪॥

মর্মার্থ- দেবস্য ত্বা সবিতুঃ অর্থাৎ সবিতা দেবতার প্রেরণায় ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা স্ক্য (খঙ্গের ন্যায় আকৃতি বিশিষ্ট খাদির কাষ্ঠনির্মিত মৃত্তিকা খননের নিমিত্ত যজ্ঞীয় অস্ত্রবিশেষ) গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর অশ্বিনোর্বাহুভ্যাম্ অর্থাৎ অশ্বিযুগলের বাহুদ্বয়ের দ্বারা ইত্যাদি এবং পুষ্ণো হস্তাভ্যাম অর্থাৎ পুষাদেবতার হস্তদ্বয়ের দ্বারা ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করতে হবে। অশ্বিযুগল হলেন দেবতাবর্গের অধ্বর্য। অতঃপর নিম্নোক্ত মন্ত্র পঠনীয়–হে স্ক্য! তুমি শতসংখ্যক শত্রুর সন্তাপরূপ পাকবিশেষ (স্ক্য নামক অস্ত্রের দ্বারা যেন শত্রুগণকে জলসেক ব্যতীত অগ্নিতে পাক করা হয়ে থাকে), বনস্পতির বিকার, বিদ্বেষকারী শত্রুগণের বধের হেতুভূত (বধহেতুরসি)। এই মন্ত্রের দ্বারা শত্রুর প্রতি প্রহারের নিমিত্ত বজ্রকে সম্যভাবে তীক্ষ্ণ (শাণিত) করতে হয়। তারপর স্তম্বযজুঃ ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা বেদিস্থানে স্থাপিত দর্ভ ছেদন করে পাংশুর সাথে নিক্ষেপ করতে হবে। এর দ্বারা (অর্থাৎ স্তম্বযজুরণের দ্বারা) শত্রুগণকেও নিঃসারিত (অর্থাৎ নিক্ষিপ্ত) করা হয়ে থাকে। এই মন্ত্র তিনবার আবৃত্তির দ্বারা তিন লোক হতে শত্রুগণকে দূর করা হয়, চতুর্থ বার আবৃত্তির দ্বারা লোকত্রয় বহির্ভূত অপর সকল স্থান হতেই তাদের নিঃসারণ করা যায়। তারপর বেদিস্থানে স্থিত উপরের দিকের মৃত্তিকা অপসারিত করতে হবে; কারণ ঐ মৃত্তিকা উচ্ছিষ্ট ইত্যাদির সংস্পর্শের সম্ভাবনায় অমেধ্যও (অযজ্ঞিয় বা অপবিত্র) হতে পারে। এর ফলে ওষধি সহ উদ্দত (অবাঞ্ছিত) তৃণ ইত্যাদিও ত্যক্ত বা বিনষ্ট হয়। অতঃপর ওষধির যে মূলগুলি পুনরায় প্ররোহিত (অঙ্কুরিত) করার নিমিত্ত ভূমিতে রক্ষিত থাকে, সেগুলির ছেদন বিহিত। সেই মূলসমূহের ছেদনে শত্রুগণের মূলোচ্ছেদ (সমূলে বিনাশ) সাধিত হয়ে থাকে। তার পর যজমানের চিবুক (থুতনি) হতে মুখ পর্যন্ত যতটুকু পরিমাণ, সেই পরিমিত খনন বিধি। যতটুকু খননের ফলে ভূমি দৃঢ় হয়, ততটুকু পর্যন্ত খননের দ্বারা যজমানের প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তি হয় (যজমানঃ প্রতিষ্ঠাং প্রাপিত ভবতি)। দক্ষিণভাগ উন্নত করলে দেব-যজনের রূপ হয়; দক্ষিণভাগের নিম্নত্বে পিতৃ-যজনের রূপ হয়। যে ভূমিতে প্রজা ও পশুর সঞ্চার বাহুল্য আছে, তা পুরীষতুল্য (অর্থাৎ প্রজা ও পশুর বিষ্ঠায় আকীর্ণ) হয়। বেদি নির্মাণের পূর্বে বসবত্ত্ব ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা বেদির সীমা নির্দেশ পরিগ্রহ কর্তব্য। নির্মাণের পরে অমৃতমসী ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা উত্তর পরিগ্রহ কর্তব্য। পূর্ব পরিগ্রহের দ্বারা বেদি-মর্যাদা সিদ্ধ করতে হয়। খননের ফলে নিম্ন বা উন্নত হয়ে গেলে বেদি ক্রুর (ক্ষতিকারক) হয়, সমীকরণে (সমান হলে) তার দ্বারা শান্তি লাভ হয়। (সমীকরণেন তচ্ছান্তিৰ্ভবতি)। অতঃপর হে বেদে ধা অসি… ইত্যাদি অর্থাৎ হে বেদি! তুমি ধারক (অর্থাৎ তোমার স্বরূপ বৰ্হি বা যজ্ঞ ইত্যাদির ধারক), তোমার উপরে কুশ ইত্যাদি রক্ষিত করা হবে। এই মন্ত্রের পরে জল ইত্যাদির দ্বারা বেদির প্রোক্ষণ (সেচন) কর্তব্য; তার ফলে রাক্ষসগণ অপহত (বিনাশপ্রাপ্ত) হয় এবং যজ্ঞের বিস্তৃতি হবে ॥৪॥

[সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চমে তস্যাং বেদাং বহির্বিষয় প্রয়োগহভিধীয়তে। অর্থাৎ-পূর্ব অনুবাকে যে বেদি-নির্মাণের বিষয় বিস্তৃত কথিত হয়েছে, এই অনুবাকে সেই বেদির উপরিস্থিত দ্রব্যাদি সম্পর্কে উক্ত হয়েছে।]

.

পঞ্চম অনুবাক

মন্ত্র- ব্ৰহ্মবাদিনো বন্যঙিহৰীংষি প্রৌক্ষীঃ কেনাপ ইতি ব্ৰহ্মণেতি ক্ৰয়াদম্ভিহেব হীংষি প্রোক্ষতি ব্ৰহ্মণাহপ ইবৰ্হি পোক্ষতি মেধ্যমেবৈনৎ কররাতি বেদিং থোক্ষতৃক্ষা বা এষাংলোমাহমেধ্যা যদ্বেদির্মেধ্যামেবৈনাং করোতি দিবেত্বাহন্তরিক্ষায় ত্বা পৃথিবব্যৈ ত্বেতি বহিরাসাদ্য প্ৰ উক্ষত্যেভা এবৈল্লোকেভ্যঃ প্রোক্ষতি কুরমিব বা এতৎ করোতি যৎ খনত্যপো নি। নয়তি শাস্ত্যৈ পুরস্তাৎ প্রস্তরং গৃহাতি মুখ্যমেবৈনং করোতীয়ন্তং গৃহূতি প্রজাপতিনা যজ্ঞমুখেন সংমিতং বর্হিঃ শুণাতি প্ৰজা বৈ বহিঃ পৃথিবী বেদিঃ প্রজা এব পৃথিব্যাং প্রতিষ্ঠাপয়তানতিশ্নং সৃণাতি প্রজয়েবৈনং পশুভিরন তিদৃশ্নং করোতি উত্তরং বহিষঃ প্রস্তরং সাদয়তি প্ৰজা বৈ বহিষজমানঃ প্রস্তররা যজমানমেবাযজমানাদুজরং করোতি তস্মাদ্যজমানোহযজমানা দুত্তয়োহন্তৰ্দধাতি ব্যাবৃত্ত্যা অনক্তি হবিষ্কৃতমেবৈনং সুবর্গং লোকং গময়তি ত্রেধানক্তি ত্ৰয় ইমেলোকা এবৈনং লোকেভ্যোনক্তি ন প্রতি শৃণোতি যপ্রতি- শ্ৰণীয়াদং ভাবুকং যজমানস্য স্যাদুপরী প্ৰ হরতি উপরীব হি সুবর্গো লোকো নিযচ্ছতি বৃষ্টিমেবাস্মৈ নি যচ্ছতি নাত্যগ্রম প্রহরে যদত্যগ্রং প্রহরেদত্যাসারিণ্যধ্বৰ্য্যো নাকা স্যান্ন পুরস্তাৎ প্রত্যস্যেদ্যৎ পুরস্তাৎ প্রত্যস্যেৎ সুবর্গাল্লোকাদ যজমানং প্রতিমুদেৎ প্রাঞ্চং প্র হরতি যজমানমেব সুবর্গং লোকং গময়তি ন বিঞ্চং বি মুযাদ্যঞ্চিং বিষুযাৎ স্ত্রস্য জায়েতোৰ্দ্ধমুদৌত্যুৰ্ধমিবহি পুংসঃ পুমানেবাস্য জায়তে যৎস্ফেন বোপবেষেণ বা যোযুপ্যেত চিরেবাস্য সা হস্তেন যোযুপ্যতে যজমানস্য গোপীথায় ব্রহ্মবাদিনো বদন্তি কিং যজ্ঞস্য যজমান ইতি প্রস্তর ইতি তস্য ক সুবর্গো লোক ইত্যাহবনীয় ইতি ব্ৰয়াদ যৎ প্রস্তরমাহবনীয়ে প্রহরতি যজমানমেব সুবর্গং লোকং গময়তি বি বা এতদ্যজমানো লিশতে যৎ প্রস্তরং যোযুপ্যন্তে বৰ্হিরনু প্র হরতি শাস্ত্যা অনারম্ভণ ইব বা এতধ্বঃ স ঈশ্বররা বেপনো ভবিতো ধ্ৰুরাহসীতীমামভি মৃশতীয়ং বৈ ধ্রুবাহস্যামেব প্রতিতিষ্ঠতি ন বেপনো ভবত্যগগাহনগ্লাদিত্যাহ যদ্রব্রুয়াদগন্নপ্নীতিরত্য গ্নাবগ্নিং গময়েন্নির্যজমানং সুবৰ্গালোকাজেদগন্নিত্যেব ব্ৰয়াদ্যজমানমেব সুবৰ্গং লোকং গময়তি ॥৫॥

মর্মার্থ–জিজ্ঞাসু ব্ৰহ্মবাদীগণ অধ্বর্যকে উদ্দেশ করে বললেন, হে অধ্বর্য! আপনি জলের দ্বারা হবিঃ প্রেক্ষণ করে থাকেন, কিন্তু অন্য কিসের দ্বারা জলকে শোধিত করেন? এর উত্তরে ব্রাহ্মণ অধ্বর্য বললেন, মন্ত্রের দ্বারা। (হবিঃ ও জল এই উভয়ের যেমন যেমন পোণ, তেমনই করণীয়; অর্থাৎ মন্ত্রের দ্বারা জলকে শুদ্ধ করে নিয়ে সেই জলের দ্বারা হরির শুদ্ধি কর্তব্য)। এইভাবে কাষ্ঠ, কুশ ইত্যাদি ইন্ধন সামগ্রীর পোক্ষণের পরে বেদির পোক্ষণ কর্তব্য। দিবে ত্বাহন্তরিক্ষায় ত্বা পৃথিব্যৈ ত্বা.. অর্থ্যাৎ দ্যুলোক, অন্তরিক্ষলোক ও ভুলোকের নিমিত্ত আমি তোমাকে প্রেক্ষিত করছি ইত্যাদি (মকাণ্ডে ব্যাখ্যাত) মন্ত্রের দ্বারা কুশ গ্রহণ করে বেদির প্রোক্ষণ করণীয়। লোমরহিত পুরুষ পোণ-কর্মের উপযুক্ত নন, কারণ এমন পুরুষ যাগযোগ্য হন না। বেদির পূর্বভাগে ব্রহ্মা (ঋত্বিবিশেষ) কিংবা যজমান প্রস্তর ধারণ করবেন। কুশতৃণ বিস্তৃত করে বেদির আস্তরণ করণীয়। প্রজা হলো বৰ্হি সদৃশ,পৃথিবী হলো বেদি সদৃশ। এর দ্বারা প্রজাগণ পৃথিবীতে প্রতিস্থাপিত হয়ে থাকে। অনতিদৃশ্ন অর্থাৎ অতিরিক্তভাবে যাতে ভূমি দৃশ্যমান না হয়, সেইভাবে বেদির আস্তরণ করণীয়; তাতে চতুর্দিক হতে প্রজা ও পশুগণের দ্বারা বেষ্টিত যজমানকে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে না। আস্তীর্ণ কুশের উপরে প্রস্তর স্থাপন করতে হবে। প্রজা হলো বৰ্হি-সদৃশ এবং যজমান হলেন প্রস্তর-সদৃশ। আস্তীর্ণ কুশ অধঃস্থিত হওয়ার কারণে তার প্রজাত্ব (অর্থাৎ প্রজাতুল্য) এবং প্রস্তর প্রধানভূত হওয়ার কারণে তার যজমানত্ব (অর্থাৎ যজমানতুল্য)। বেদিতে আস্তীর্ণ বহির (অর্থাৎ কুশের) উপরে স্থাপিত প্রস্তরের মধ্যভাগে দুটি কুশ তির্যকভাবে স্থাপনা করে ব্যবধান রক্ষা করা বিধি। তারপর প্রস্তরকে ঘৃতের দ্বারা অঞ্জনিত (সিক্ত করে স্বর্গপ্রাপ্তির যোগ্য করা হয়। ত্রিলোকের স্মরণে প্রস্তরকে তিনবার ঘৃত-সিঞ্চিত করনীয়। ঊর্ধ্ব দিক হতে অগ্নির উপরে প্রস্তরের আঘাত করা কর্তব্য; তার ফলে যজমানের স্বর্গলোকের উপরে স্থান হয়। প্রস্তরযুক্ত হস্তের, অধোমুখত্ব বিধি (অর্থাৎ যে হস্তে প্রস্তর ধারণ করা হবে, সেটি নিম্নের দিকে রক্ষণীয়)। তাতে যজমানের নিমিত্ত বৃষ্টি ন্যভূত অর্থাৎ নিম্নভিমুখী হবে। প্রস্তরের দ্বারা অতিরিক্তভাবে আঘাত বা প্রহার করা উচিত নয়, কারণ যত অধিক আঘাত করা হবে, তত অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে শস্যহানি এবং অধ্বর্যর বিনাশের সম্ভাবনা থাকে। (অতিবৃষ্টির ফলে শস্যহানিজনিত কারণে অধ্বর্যর সর্বনাশ, অথবা ব্যাধির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অধ্বর্যর বিনাশ–এই কথাই এখানে ব্যক্ত হয়েছে)। এই জন্যই প্রস্তরাগ্রের আহবনীয় অতিক্রম নিষিদ্ধ (প্রস্তরাগ্রস্যাহহবনীয়াতিক্রমং নিষেধতি)। পশ্চিম দিকে মুখ করে প্রস্তরের আঘাত করা নিষিদ্ধ; কারণ তার ফলে যজমান স্বর্গলোক হতে প্রত্যাবৃত্ত হবে (প্রতিনুদেৎ)। সেই নিমিত্ত পূর্বাভিমুখী হয়ে প্রহার কর্তব্য, যাতে যজমানের স্বর্গলোকে গমন সুনিশ্চিত হয়। প্রস্তরগত দর্ভের অগ্রভাগ সর্বতো অর্থাৎ নানাদিকে বিশ্লেষ অর্থাৎ পৃথক বা বিযুক্তকরণ অকর্তব্য; কারণ তার ফলে যজমানের স্বপত্য অর্থাৎ কন্যাসন্তান জন্মে। দর্ভের অগ্রভাগগুলি সমূহরূপে অর্থাৎ একত্রে গুচ্ছ করে রাখতে হবে; তার ফলে যজমানের পুত্রসন্তান জন্মে (পুমানবে জায়তে)। দৰ্ভগুলি হস্তের দ্বারা একীকৃত অর্থাৎ গুচ্ছ করলে তা যজমানের পক্ষে রক্ষার কারণ হবে; কিন্তু স্ক্যা-দ্বারা গুচ্ছবদ্ধ করলে তা যজমানের হিংসার কারণ হবে। যজমান যজ্ঞের কোন স্থানীয় ব্রহ্মবাদীগণ কর্তৃক এইরকম জিজ্ঞাসিত হলে বুদ্ধিমান ব্যক্তির উত্তর হবে–প্রস্তরস্থানীয়। আহবনীয়ে প্রস্তরের প্রহার করা হয়, সেই নিমিত্ত যজমান স্বর্গলোকে গমন করেন; এতএব যজমান যজ্ঞের প্রস্তরস্থানীয় ॥৫

[সায়ণাচার্য বলেন–ষষ্ঠেহনুবাক উপাংশুজস্বিষ্টকৃতৌ বক্তব্যৌ। অর্থাৎ–এই ষষ্ঠ অনুবাকে উপাংশু ও স্বিষ্টকৃৎ–এই দুটি যাগের বিষয় কথিত হয়েছে ]

.

ষষ্ঠ অনুবাক

মন্ত্র- অগ্নেয়ো জ্যায়াংসো ভ্রাতর আসন্তে দেবেভ্যো হব্যাং বহন্তঃ প্ৰমীয়ত সোহগিরবিভেদিখং বাব স্য আৰ্ত্তিমাহরিষ্যতীতি স নিলায়ত সোহপঃ প্রাবিশং দেবতাঃ প্রৈষমৈচ্ছন্তং মৎস্যঃ প্রাব্রবীত্তমশপদ্ধিয়াধিয়া ত্বা বধ্বাসুৰ্যো মা প্রাবোচ ইতি তস্মাম্মৎস্যং ধিয়াধিয়া ঘুন্তি শিপ্তঃ হি তমম্ববিন্দন্তমব্রুবনুপ ন আ বৰ্ত হব্যং নো বহেতি সোহব্রবীদ্বরং বৃণৈ যদেব গৃহীতস্যাহুতস্য বহিঃপরিধি স্কন্দাত্তন্মে ভ্রাতৃণাং ভাগধেয়মসদিতি তন্মাদয়গৃহীতস্যাহুতস্য বহিঃপরিধঃ স্কতি তেষাং তদ্ভাগধেয়ং নেব তেন প্রীণতি পরিধীন পরি দধাতি রক্ষস্যমপহত্যৈ সংস্পর্শয়তি রক্ষামনন্ববচারায় ন পুরস্তাৎ পরি দুধ ত্যাদিত্যো হ্যেবোদ্যন পুরস্তাদ্রক্ষাংস্যপহর্কে সমিধাবাদধাতুপরিষ্টাদেব রক্ষাংস্যপ হন্তি যজুষাইন্যাং তৃষ্ণীমন্যাং মিথুনত্বায় দে আ দধাতি দ্বিপাদ যজমানঃ প্রতিষ্ঠিত্যৈ ব্ৰহ্মবাদিননা বদন্তি স ত্বৈ যজেত যো যজ্ঞস্যাহত্তা বসীয়ান্ তস্যাদিতি ভূপতয়ে স্বাহা ভূবনপতয়ে স্বাহা ভূতানাং পতয়ে স্বাহেতি মনু মন্ত্ৰয়েত যজ্ঞস্যৈ তদাত্তা যজমানো বসীয়া ভবতী ভূয়সীৰ্হি দেবতাঃ প্রীতি জামি বা এতদ্যজ্ঞস্য ক্রিয়তে যদন্বঞ্চেী পুরোডাশাবুপাংশুযাজমন্তরা যজত্যজামিত্বায়াথো মিথুনত্বায়াগ্নিরমু স্মিংশ্লোক আসীদ্যমোহস্মিন্তে দেয়া অব্রবন্নেতেমৌ বি পৰ্যহামেত্যন্নাদেন দেবা অগ্নিম উপমন্ত্রয়ন্ত রাজ্যেন পিতারা যমং তম্মদগ্নিৰ্দোনামন্নাদো যমঃ পিতৃণাং রাজা য এবং বেদ এ রাজ্যমন্নাদ্যমাপ্পেতি তম্মা এতদ্ভাগধেয়ং প্রাযচ্ছন যদয়ে স্বিষ্টকৃতেহবদ্যন্তি যদগয়ে স্বিষ্টকৃতেহবদ্যতি ভাগধেয়েনৈব তরুদ্রং সমধয়তি সকৃংসকৃদব দ্যতি সকৃদিব হি রুদ্র উত্তরার্ফাদবদ্যত্যেষা বৈ রুদ্রস্য দিখায়ামে দিশি রুদ্রং নিরবদয়তে দ্বিরভি যারয়তি চতুরবস্যাহপ্ত্যৈ পশবো বৈ পূৰ্ব্বা আহুতয় এষ রুদ্ৰো যদগ্নি যৎপূৰ্ব্বা আহুতিরভি জুহুয়াদ্রায় পশূনপি দধ্যাদপশুর্জমানঃ স্যাতিহায়্য পৰ্ব্বা আহুতীৰ্জ্জুহোতি পশুনাং গোপীথায় ॥৬॥

মর্মার্থ- অগ্নিদেবতার তিনজন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন। তারা দেবতাবর্গের নিমিত্ত হবিঃ বহন করতে করতে মারা গিয়েছিলেন। অগ্নি ভাবলেন, যে হবিঃ বহন করবে সে-ই মরণপ্রাপ্ত হবে– এমন ভেবে অগ্নি ভীত হয়ে জলের মধ্যে প্রবেশ করে লুকিয়ে পড়লেন। দেবগণ প্রকৃষ্টভাবে অগ্নির সন্ধান করতে থাকলে মৎস্য জলের মধ্যে অবস্থানকারী অগ্নির কথা দেবগণের নিকট প্রকাশ করে দিয়েছিল। সেই কারণে অগ্নি সেই মৎস্যকে এইরকম অভিশাপ দিলেন, হে মৎস্য! তুমি যেমন হিংসাভাবান্বিত হয়ে দেবগণের সম্মুখে আমার সংগুপ্তির কথা জ্ঞাপন করেছ, সেই ভাবে জালধারী কৈবর্তগণ বুদ্ধিকৌশলে অম্বেষণ করে জাল ইত্যাদির দ্বারা তোমার বন্ধনপ্রাপ্তি ঘটাবে এবং তোমাকে হত্যা করবে। অতঃপর মৎস্যের মুখ-হতে অগ্নির অবস্থান সম্পর্কে বিজ্ঞাত হয়ে দেবগণ অগ্নির নিকটে গমনপূর্বক তাকে বললেন, হে অগ্নি! আপনি আমাদের সমীপে সমাগত হোন এবং আমাদের হবিঃ বহন করুন। তখন অগ্নিদেব তাঁদের নিকট বর প্রার্থনা করলেন, তাহলে হবিঃ-সম্বন্ধি যে দ্রব্য (আজ্যা) হোমের পূর্বে সুক্ (ঘৃত প্রক্ষেপণের পাত্র) হতে পরিধির বহির্ভাগে পতিত হবে, তা আমার (মৃত) ভ্রাতৃগণের প্রাপ্তিযোগ্য হোক। দেবগণ তাঁকে সেই বর প্রদান করলেন। এর ফলে হোমে প্রক্ষেপণ কালে যে হবিঃ পরিধির বহির্ভাগে পতিত হয় (অর্থাৎ ক্ষরিত হয়ে পড়ে), তার দ্বারা যজমান অগ্নির ভ্রাতৃগণকে প্রীত করে থাকেন (তেন স্কনেন তানগ্নি ভ্রাতৃন) যজমানঃ প্রীণয়তি)। পরিধির বহির্দেশে অগ্নির ভ্রাতৃগণের উপযুক্ত স্থান নির্ধারিত হওয়ার নিমিত্ত তা রাক্ষসগণের অপঘাতের (অপকৃষ্ট মরণের) কারণ হয়। পশ্চিম দিকে স্থাপিত মধ্যম পরিধিকে দক্ষিণ ও উত্তর পরিধির দ্বারা সংস্পৰ্শন বিধি। তার ফলে রাক্ষসগণ যজ্ঞকেন্দ্রে অর্থাৎ হোমক্ষেত্রে প্রবেশের কোন ছিদ্র প্রাপ্ত হয় না; সুতরাং অগ্নির সমীপে সঞ্চরণ করতে পারে না। (ছিদ্রাভাবাদগ্নিসমীপে সংচারো ন ভবতি)। উত্তর দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক ব্যতীত পূবদিকে পরিধির প্রয়োজন হয় না; কারণ সেই দিকে আদিত্য উদয়ের দ্বারাই রাক্ষসগণকে বিতাড়িত করে থাকেন; অর্থাৎ রাক্ষসগণের অপঘাতের জন্যই পরিধির যে প্রয়োজন, পূর্বদিকে সেই কর্মটি আদিত্যের দ্বারাই সিদ্ধ হয়। দক্ষিণোত্তর পরিধির অগ্রদেশে (উপরের দিকে) দুটি সমিধ স্থাপন করা কর্তব্য; তার ফলে চারটি দিক থেকে রক্ষার মতো উধ্ব দিক হতেও রাক্ষসগণের অপঘাত হয়। দক্ষিণে সমিধ স্থাপন কালে মন্ত্রকাণ্ডে কথিত বীতিহোত্রং ত্বা কব ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করণীয়। হবির ক্ষরণে যজ্ঞের বিনাশ হয়, তার দ্বারা যজমান বিনাশাভিমুখী (বিনাশপ্রাপ্তির সম্ভাবনাযুক্ত) হন; তা পরিহারের দ্বারা যজমান কি ভাবে অনেক ধনবান (বসুমত্তর) হবেন-এর উত্তরস্বরূপ বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলেন–যজ্ঞের আহরণকর্তা ভূপতয়ে স্বাহা ভুবনপতয়ে স্বাহা ভূতানাং পতয়ে স্বাহা এই তিনটি মন্ত্র পাঠ করবেন। ভূপতি ইত্যাদি অগ্নির ভ্রাতারূপী দেবতাবিশেষ তাদের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রের দ্বারা হবিদত্ত হওয়ার নিমিত্ত যজ্ঞেরও আর্তি (বিপত্তি) বিনাশ করেন; ফলে যজমান ধনপ্রাপ্ত হন। আগ্নেয় যজ্ঞে অগ্নিও সোমের উদ্দেশে পুরাডাশ নির্বপণের ক্ষেত্রে অবনুক্রমগত কারণে যজ্ঞের জাম্যালস্য (জামি অর্থাৎ পুত্রবধু, ভগিনী, দুহিতা ইত্যাদি সম্পর্কিত অনুভাব) ঘটতে পারে; অতএব তথাকোথিত অলিস্য পরিহারের নিমিত্ত সেই পুরোশের মধ্যে উপাংশু যাগ কর্তব্য। পুরোডাশ দ্রব্যের একটি যাগ, এবং আজ্য দ্রব্যের অপর যাগ, এই উভয়ের মিথুনত্ব হয়ে থাকে। (অর্থাৎ পুত্র-পুত্রবধু, ভগিনী-ভগ্নীপতি, দুহিতা-জামাতা ইত্যাদি প্রাপ্তি সম্ভবিত হয়ে থাকে)। অতঃপর স্বিষ্টকৃতের বিষয় সম্পর্কে বলা হচ্ছে–(স্বিষ্টকৃতং বিধত্তে)–পুরাকালে কোনও সময়ে অগ্নি স্বর্গে ছিলেন, যম ছিলেন ভূলোকে। এর ফলে (অর্থাৎ ভুলোকে অগ্নির অনুপস্থিতির কারণে) মনুষ্যগণ পাক (রন্ধন) ইত্যাদি কার্য সম্পন্ন করতে পারত না। (সুতরাং হোমের অভাবে) পিতৃগণের পক্ষে রাজা হওয়া সম্ভব হতো না। এর পরিবর্তন সাধনে ইচ্ছুক দেবগণ অগ্নি ও যমকে পরস্পর আহ্বান করে উৎকোচ দানের দ্বারা প্রলোভিত করলেন। তারা অন্ন ইত্যাদি প্রাপ্তিরূপ উৎকোচের দ্বারা অগ্নিকে পৃথিবীতে গমনের এবং পিতৃগণের রাজ্য প্রাপ্তিরূপ উৎকোচের দ্বারা যমকে স্বর্গে গমনের জন্য প্রলুব্ধ করলেন। ফলে ভুলোকে আগত অগ্নি সকল দেবগণের মধ্যে বহু অন্নের ভক্ষক হলেন, এবং যম পিতৃগণের রাজা হলেন। এই উভয় বিষয় যিনি জ্ঞাত হন, তিনি প্রকৃষ্ট রাজ্য ও অন্ন ইত্যাদি প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। অতঃপর দেবগণ অগ্নিকে যজ্ঞভাগ দান করলেন। কোন্ ভাগ? না, যজমান স্বিষ্টকৃৎ অগ্নির উদ্দেশে যে হবিঃ প্রদান করেন সেই হলো অগ্নির ভাগ। সেই হতে অগ্নি স্পিষ্টকৃৎ হবিঃ প্রদত্ত হয়ে থাকেন। এই ভাগপ্রদানের দ্বারা রুদ্রভাবাপন্ন ক্রুর অগ্নিকে সমৃদ্ধ করা হয়ে থাকে। ঈশান দিক (উত্তর-পূর্ব কোণের দিক) হলো রুদ্রের দিক। সেই নিমিত্ত উত্তরার্ধ (অর্থাৎ না পূর্ণ উত্তর, না পূর্ণ পূর্ব) হতে হবিঃ প্রদান করলে রুদ্রের তুষ্টি বিধান করা হয়। পূর্বে পুরোডাশ ইত্যাদি আহুতিসমূহ ছিল পশুস্বরূপ অর্থাৎ পশুবৎ অভীষ্টদায়ক (পশুবদিষ্টার্থপ্রাপকত্বাৎ)। এই অগ্নি কূরত্বের কারণে রুদ্রস্বরূপ, সুতরাং যদি পূর্বে তাদের উদ্দেশে আহুতি প্রদান করা হতো, তাহলে তা সকল পশুর ঘাতক রুদ্রের অধিকার ভুক্ত হতো। তাতে যজমান পশুহীন হয়ে পড়তেন। এই নিমিত্ত পুর্বের আহুতি পরিত্যাগ করে দুরে (অর্থাৎ নিকটকালে নয়, পরে) হোম কর্তব্য; এমন হোম পশুগণের সংরক্ষণ করে থাকে ॥৬৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন–অস্মিন্ সপ্তমানুবাক ইড়োপানবিধিস্তন্মত্রব্যাখ্যানং চ প্রস্তুয়তে। অর্থাৎ এই সপ্তম অনুবাকে ইড়ার উপানবিধি ও মন্ত্রসমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।]

.

সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- মনুঃ পৃথিব্যা যজ্ঞিয়মৈচ্ছৎ স ঘৃতং নিষিক্তমবিন্দ সোহব্রবীৎ কোহস্যেশ্বরো যজ্ঞেপি কর্তোরিতি তাবব্ৰুতাং মিত্রাবরুণৌ গোরেবাহবমীশ্বরৌ কৰ্তোঃ স্ব ইতি তৌ ততো গাং সমৈরয়তাং সা যত্র যত্ৰ ন্যক্রামত্ততো ঘৃতমপীড্যত তস্মাদ ঘৃতপদ্যুচতে তদস্যৈ জন্মোপহৃতং রথন্তরং সহ পৃথিব্যেত্যাহ ইয়ং বৈ রথযুরমিমামেব সহান্নদ্যেনোপ হয়ত উপহৃতং বামদেব্যং সহান্তরিক্ষেণেত্যাহ পশবো বৈ বামদেব্যং পশুনে সহান্তরিক্ষেপোপ হয়ত উপহূতং বৃহসহ দিবেত্যাহৈরং বৈ বৃহদিরামেব সহ দিবোপ হয়ত উপহৃতাঃ সপ্ত ছোত্রা ইত্যাহ হোত্রা এবোপ হয়ত উপহৃতাধেনুঃ সহভেত্যাহ মিথুনমেবোপ হয়ত। উপহুতো ভক্ষঃ সখেত্যাহ সোমপীথমেবোপ হয়ত উপহুতাং হো ইত্যাহাহন মেবোপ হয়ত আত্মা হুপহুতানাং বসিষ্ঠ ইড়ামুপ হয়ত পশবো বা ইড়া পশনেবোপ হয়তে চতুরূপ হয়তে চতুপাদো হি পশবো মানবীত্যাহ মনুৰ্য্যেতাম্ অগ্ৰেহপশ্যদঘৃতপদত্যাহ যদেবাস্যৈ পদাঘৃতমপীড্যত তম্মাদেবমাহ মৈত্রাবরুণীত্যাহ মিত্রাবরুণেও হেনাং সমৈরয়তাং ব্রহ্ম দেবকৃতমপহূতমিত্যাহ ব্ৰহ্মবোপ হয়তে দৈব্যা অধ্বর্যব উপহৃতা উপহুতা মনুষ্যা ইত্যাহ বেদমনুষ্যানোবোপ হয়তে য ইমং যজ্ঞমবান্যে যজ্ঞপতিং বৰ্দ্ধানিত্যাহ যজ্ঞায় চৈব যজমানায় চাহশিষমা শান্ত উপহুতে দ্যাবাপৃথিবী ইত্যাহ দ্যাবাপৃথিবী এবোপ হয়তে পুজে ঋতাবরী ইত্যাহ পূৰ্ব্বজে হ্যেতে ঋতাবরী দেবী দেবপুত্রে ইত্যাহ দেবী হেতে দেবপুত্রে উপহুতোহয় যজমান ইত্যাহ যজমানমেবোপ হয়ত উত্তরস্যাং দেবজায্যামুপহুতো ভূয়সি হবিস্করণ উপহুতো দিব্যে ধামনুপহুতঃ ইত্যাহ প্রজা বা উত্তরা দেব্যজ্যা পশবো ভূয়ো হবিষ্করণং সুবগো লোকো দিব্যাং ধামেদমসীদমসীত্যেব যজ্ঞস্য প্রিয়ং ধামোপ হুয়তে বিশ্বমস্য প্রিয়মুপহুতমিত্যাহাছম্ব কারমেবোপ হুয়ত ॥৭॥

 মর্মার্থ- পুরাকালে কোনও সময়ে ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীতে যজ্ঞের নিমিত্ত কি কি দ্রব্যের অস্তিত্ব আছে, তার অন্বেষণে সর্বত্র ঘুরতে ঘুরতে সেখানে গো-পাদাঙ্কিত ভূপ্রদেশে নিষিক্ত (সিক্ত বা ক্ষরিত) ঘৃত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। (অর্থাৎ গরুর পায়ের চাপে মাটিতে গঠিত গর্তে দুগ্ধ ঘৃত দেখতে পেয়েছিলেন)। তা প্রাপ্ত হয়ে তিনি দেবতাগণের উদ্দেশে এইরকম বললেন, এই গো-পাদে স্থিত ঘৃতের স্বরূপ উপযুক্ত লৌকিক পাত্র কে (প্রস্তুত) করতে সমর্থ? এই কথা শ্রবণ পূর্বক সেখানে উপস্থিত বরুণদ্বয় (অর্থাৎ মিত্র ও বরুণ দেবতাদ্বয়) বললেন, গাভীর কার্যভূত ঘৃতের কি প্রয়োজন? তার কারণভূত গাভীকেই যজ্ঞের অঙ্গরূপে উপযুক্ত করে দিতে আমরা সমর্থ। এই কথা বলে তারা দুজন ঊর্ধ্ব হতে ইরূপা গাভীকে সমভূমিতে আনয়ন করলেন। সেই গাভী ভূমিতে যেখানে যেখানে পাদ-প্রক্ষেপ করতো সেখানে সেখানে সেই গো-পাদাঙ্কিত ভূ-প্রদেশে ঘৃত নিপীড়িত (নিড়ন) হতো। যে স্থানে তার পাদ হতে ঘৃত নির্গত হতো, সেই স্থান বা সেই ভূমি ঘৃতপদী নামে প্রসিদ্ধি হয়। এইরকমে যজ্ঞভূমিতে ইড়ার জন্ম সম্পন্ন হয়। এবার মন্ত্র বলা হচ্ছে রথন্তরং সাম তৎপৃথিব্যা সহ ময়োপহৃতং সমীপে যথা তিষ্ঠতি তথাইহ্বানং কৃতম্ (পৃথিবীর সাথে রথন্তর সামকে আমার হোমের নিকট অবস্থান করতে আহ্বান করি)–এই মন্ত্রের মধ্যগত রথন্তর শব্দের দ্বারা ভূমি উপলক্ষিত হচ্ছে; পৃথিবী শব্দের দ্বারা তার কার্য অন্ন ইত্যাদিকে উপলক্ষ্য করা হয়েছে। অতএব অন্ন ইত্যাদির সাথে ভূমিকে আহ্বান করছি মন্ত্রবাক্যের এই অর্থই বোধিতব্য। উপহুতং বামদেব্যং… অর্থাৎ অন্তরিক্ষের সাথে বামদেব্যকে আহ্বান করছি-ইত্যাদি মন্ত্রে সামবিশেষবাচী বামদেব্য শব্দের দ্বারা সেই সামসাধ্য পশুকে উপলক্ষ্য করা হয়েছে (পশব উপলক্ষ্যন্তে)। ইরা শব্দের দ্বারা যে মন্ত্রে বৃষ্টিকে উপলক্ষ্য করা হয়েছে, সেই মন্ত্র যথা–উপহতং দিবেত্যাহৈরং. অর্থাৎ দিবলোকের সাথে বৃহৎ ইরাকে আহ্বান করছি ইত্যাদি। বৃহসাম হতে বৃষ্টি হয়, সেই নিমিত্ত তার সম্বন্ধি বৃহৎসামকে ইরা শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। উপহৃতাঃ সপ্ত হোত্রা…ইত্যাদি মন্ত্রের সাতজন হোতা হলেন–হোতা, প্রশাস্তা, ব্রাহ্মণচ্ছংসী, পোতা, নেষ্টা, অগ্নী ও অচ্ছাবাক। উপহৃতা ধেনু… অর্থাৎ ঋষভের সাথে ধেনুকে আহ্বান করছি। ইত্যাদি মন্ত্রে– মিথুনের আহ্বান সুচিত হয়েছে। উপহুতো ভক্ষঃ সখা ইত্যাদি মন্ত্রে সখা শব্দে স্ব-উপকারক। সোমপানকে উপলক্ষ্য করা হয়েছে। উপহৃতাং হো ইত্যাদি মন্ত্রে হো শব্দপ্রযুক্ত স্বরূপবাচী অর্থাৎ আপনাকে আহ্বান করা হয়েছে (স্বরূপবাচীত্যেতদ্দর্শয়তি)। আত্মায়ূপহূতানাং বসিষ্ঠ-এর অর্থে আত্মার আহ্বানের প্রয়োজন দেখানো হয়েছে। ইড়ামুপহুয়তে পশবো…অর্থাৎ ইড়ার আহ্বান করছি ইত্যাদি মন্ত্রে ইড়া শব্দের দ্বারা গো-শরীরধারিণী দেবতাকে বলা হয়েছে। তার উপাহ্বান ইড়া উপহুতা ইত্যাদি বাক্যের দ্বারা করণীয়। ইড়ার পশুরূপত্বের নিমিত্ত তার আহ্বানের দ্বারা পশু-প্রাপ্তি হয়ে থাকে। পশুগণের চতুষ্পদত্বের নিমিত্ত মন্ত্রের আরোহ অবরোহ ইত্যাদি ক্রমে আবৃত্তির দ্বারা চারবার আহ্বান সম্পন্ন করতে হবে। মানবীত্যাহ মনুৰ্হেতামগ্রে.. অর্থাৎ মনু পৃথিবী হতে যজ্ঞিয় দ্রব্য অন্বেষণ করেছিলেন–ইত্যাদি উপাখ্যানে মিত্র ও বরুণ ইড়াকে আনয়ন করেছিলেন, তা কথিত হয়েছে। পুরাকালে দেবতাগণের দ্বারা নিম্পাদিত ইড়ার আহ্বানরূপ যে কর্ম-সামর্থ্যে ব্রহ্মের আহ্বান করা হয়েছে, তা ব্ৰহ্ম দেবকৃতমপহৃঙ্গামিত্যাহ ব্ৰহ্মৈবোপ হুয়তে-র দ্বারা ব্যক্ত। দৈব অর্থাৎ দেবতাগণের অধ্বর্য হলেন অশ্বিনীকুমারদ্বয়; তাদের আহ্বানের দ্বারা এই জগতের দৃশ্যমান) মনুষ্যরূপ অধ্বর্যকেও আহ্বান করা হয়েছে। পূর্বোক্ত দৈব অধ্বযুদ্বয় এবং মনুষ্য অধ্বর্যগণ সকলে এই যজ্ঞ রক্ষা করুন ও যজ্ঞপতির বর্ধন করুন-এই বক্তব্যের দ্বারা নিমিত্ত আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়েছে। উপতে দ্যাবাপৃথিবী ইত্যাদি রখন্তর (সামবিশেষ) মন্ত্রে দ্যুলোক ও ভূলোকের আহ্বান করা হয়েছে। পূর্বজে ঋতাবরী… মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, দেবতা, পশু-পক্ষী, মনুষ্য ইত্যাদির উৎপত্তির পূর্বে দ্যাবাপৃথিবী (দ্যুলোক ও ভুলোক) উৎপন্ন হয়েছে; ঋত শব্দের দ্বারা যজ্ঞকে বর্তায়, সেই যজ্ঞ এই দুটি লোকে (দেবলোকে ও মনুষ্যলোকে) অনুষ্ঠিত হওয়ার নিমিত্ত তাদের ঋতাবরী (ঋতবযৌ) বলা হয়েছে। কেবল ঋত্বিক ইত্যাদিরূপে নয়, দেবতাগণ যে এই দুটি লোকেরই পুত্র, সেই অর্থই দেবপুত্রে বিশেষণটির দ্বারা বোধিত হয়েছে। উপহুতোহয়ং যজমান… মন্ত্রে অর্থান্তরে প্রস্তর ইত্যাদিকে লক্ষ্য করা হয়নি, এখানে যজমানকেই উদ্দেশ করে আহ্বান জ্ঞাপিত হয়েছে। সোমযাগ ইত্যাদি রূপ উত্তর দেব্যজ্যাগুলির প্রজাহেতুত্বের নিমিত্ত প্রজাত্ব এবং এই যজ্ঞ বহু হবিঃ-দ্বারা সম্পাদিত হওয়ার কারণে পশুহেতুত্বের নিমিত্ত পশুত্ব সুচিত হয়েছে উত্তরস্যাং দেবযজ্যায়াম ইত্যাদি মন্ত্রের মধ্যে। ইদমসীদমসীত্যেব… অর্থাৎ দেবগণ আমার প্রদত্ত এই হবিঃ ভক্ষণ করুন-ইত্যাদি মন্ত্রে সোমযাগরূপ কর্মে চিকীর্ষ (ইচ্ছুক) হয়ে সর্বকর্মানুষ্ঠান বিবক্ষিত যজ্ঞের প্রিয় স্থানের প্রতি যজমান আহ্বান জানাচ্ছেন। বিশ্বমস্য প্রিয়ম্ ইত্যাদি মন্ত্রে যজমানের যা প্রিয় তার সকল সামগ্রীকেই তিনি আহ্বান করছেন, যাতে যজ্ঞের প্রচ্ছাদনের দ্বারা অনুষ্ঠানে কোনরকম বৈয়াৰ্থ না ঘটে, অর্থাৎ যজ্ঞের সম্পূর্ণতা সম্পাদিত হয় ॥৭ ৷৷

[ইড়ভোশিত্ৰভক্ষৌ দ্বাবুচ্যেতে অষ্টমে পুনঃপুনরায় ইড়া ও প্রাশি ভক্ষণের বিষয় কথিত হয়েছে]

.

অষ্টম অনুবাক

মন্ত্র- পশবো বা ইড়া স্বয়মা কামমেবায়ানা পশুনামা দত্তে ন হন্যঃ কামং পশুনা প্রযচ্ছতি বাচম্পতয়ে ত্বা হতং প্রশ্নামীত্যাহ বাচমে ভাগধেয়েন প্রণাতি সদসম্পয়ে ত্বা হতং প্রাশ্নামীতাহ স্বগাকৃত্যে চতুরবং ভবতি হবির্বৈ। চতুরবং পশশ্চরবং যুদ্ধোত্রা প্রাশ্নায়াদ্ধোতা আৰ্ত্তিমাচ্ছেদ যদগ্নৌ জুহুয় দ্রুদ্রায় পশূনপি দধ্যাদপশুজমাৰঃ স্যাঘাচম্পতয়ে ত্বা হুতং প্রামীত্যাহ পরোক্ষমেবৈনজুহোতি সদসম্পতয়ে ত্বা হুতং প্রাশ্নামীত্যাহ স্বর্গাকৃত্যৈ প্রান্তি তীর্থ এব প্রান্তি দক্ষিণাং দদাতি তীর্থ এব দক্ষিণাং দদাতি বি বা এত্যজ্ঞম, ছিন্দন্তি যন্মধ্যতঃ প্রাত্যদ্ভিৰ্মাৰ্জ্জয়ন্ত আপো বৈ সৰ্বা দেবতা দেবতাভিরেব যজ্ঞং সং তন্তি দেবা বৈ যজ্ঞাদ্রমন্তরা যন্তস যজ্ঞমবিধ্যত্তং দেবা অভি সমগচ্ছন্ত কল্পতাং ন ইদমিতি তেহবন্তস্বিষ্টং বৈ ন ইদং ভবিষ্যতি যদিমং রাধরিষ্যাম ইতি তৎষ্টিকৃত স্বিষ্টকৃত্তং তস্যাহবিদ্ধং নিঃ অকৃত্তন্যবেন সংমিতং তস্মাদ্যমাত্রমব দ্যেদ্যজ্জায়োহবদ্যেদ্রোপয়েত্ত্যজ্ঞস্য যদুপ চ ণীয়াদভি চ ঘরয়েদুভয়তঃ সংশ্বায়ি কুৰ্য্যাদবদায়াভি ঘারোত দ্বিঃ সং পদ্যতে দ্বিপাদ্যজমানঃ প্রতিষ্ঠিত্যৈ যত্তিরীশ্চনমতিহরেদনাভবিদ্ধং যজ্ঞস্যাভি বিধ্যেদ গ্ৰণ পরি হরতি তীর্থেনৈব পরি হরতি তৎপূষ্ণে পৰ্য্যহরৎ পূষা প্রাশ্য দত্তোহরুণত্তস্মাৎ পূষা প্রাপিষ্টভাগোহদন্তকো হি তং দেবা অবৰি বা অয়মাধ্যশিত্রিয়ো বা অয়মভূদিতি বৃহস্পতয়ে পৰ্য্যহরন্তসোহবিভেদ বৃহস্পতিরিখং বাব স্য আৰ্ত্তিমাহরিষ্যতীতি স এতং মন্ত্রমপশ্যৎ সুর্যস্য ত্বা চক্ষুষা প্রতি পশ্যামীত্যব্রবীন্ন হি সূর্যস্য চক্ষুঃ কিং চন হিনস্তি সোহবিভেৎ প্রতিগৃহস্তং মা হিংসিষ্যতীতি দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোৰ্ব্বাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাং প্রতি গৃহামীত্যব্রবীৎ সবিতৃপ্রসূত এবৈব্রহ্মণা দেবতাভিঃ প্রত্যগন্থাৎ সোহবিভেৎ প্রান্তং মা হিংসিষ্যতীত্যগ্নোহস্যেন প্রশ্নামীত্যব্রবীন্ন হ্যগ্নেরাস্যং কিং চন হিনস্তি সোহবিভেৎ, প্রাশিতং মা হিংসিষ্যতীতি ব্রাহ্মণস্যোদরেণেত্যব্রবীন্ন হি ব্রাহ্মণস্যোদরং কিং চন হিনস্তি বৃহম্পতে ব্ৰহ্মণেতি সহি ব্ৰক্ষিষ্ঠোহপ বা এতস্মাৎ প্রাণাঃ ক্রামস্তি যঃ প্রাশিং প্রাশ্নাত্যৰ্ম্মিাজ্জায়িত্ব প্রাণাৎ সং মৃশতেহমৃতং বৈ প্রাণা অমৃতমাপঃ প্রাণানে যথাস্থানমুপ হয়তে॥৮

মর্মার্থ- গোরূপা ইড়ার পশুত্বের কারণে হোতা যখন ইড়ার আকাঙ্ক্ষা করেন, তখন তার (হোতার) পশুসমূহেরই অভিলাষের জন্য স্বীকৃত হয়ে থাকে। হোতা ব্যতীত অন্য কেউই ইড়ারূপা পশু-কামনা পূর্ণ করতে সমর্থ হন না (দাতুং সমর্থঃ)। ইড়ার আহ্বানরূপা যে বচন, তার পতি হলেন জীবাত্মা; তার উদ্দেশে আহুত (হুতং) হে পুরোডাশ! তোমাকে ভক্ষণ করছি–এই মন্ত্রের উচ্চারণের দ্বারা ভাগ প্রদান পূর্বক বচনের দেবতাকে প্রীত করা হয়। যজ্ঞসভার (সদসো) পতি যে হোতা, তার জীবাত্মার উদ্দেশে আহুত (হোমের) পুরোডাশ আমি আপন উদরকৃত করছি। এই ভাবেই বাচস্পতয়ে ত্বা হুতং ইত্যাদি মন্ত্রে পুরোডাশের ভক্ষণ (ইড়াভাগপ্রাশন) সম্বন্ধে বলা হয়েছে। হোতার হস্তে ক্রিয়মান অবদানের সংখ্যা সম্বন্ধে চতুরবত্তং ভবতি ইত্যাদি মন্ত্রের বক্তব্য এই যে, পশুর পাদসংখ্যা চার, সুতরাং এই মন্ত্রটিরও চারবার আবৃত্তি করণীয়। দেবতারূপা ইড়ার ভক্ষণের দ্বারা হোতা মরণপ্রাপ্ত হয়। ভক্ষণ পরিত্যাগপূর্বক অগ্নিকে (তদ্ভাগ) হোমে সেই ইড়ারূপ গো ইত্যাদি পশুসমূহ অগ্নিরূপ ক্রুর রুদ্রকে সমর্পিত করা হলে যজমান পশুরহিত হন। এই মনিমিত্তই প্রথমে বাচস্পতয়ে ত্বা হুতং ইত্যাদি মন্ত্রের উচ্চারণের পর পুরোডাশ ভক্ষণ করলে সাক্ষাৎ অগ্নিতে হোম (হুতং) হয় না, রুদ্রকেও পশুসমর্পণ করা হয় না; এই স্থলে বাচস্পতির ব্যবধানের দ্বারা পরোক্ষভাবে আহুতি হয়ে যায়। তার ফলে এর দ্বারা এটিও সাক্ষাৎ ইড়ার ভক্ষণ না হওয়ার কারণে (ন প্রশ্নাতি) যজমানের মরণদোষ হয় না। মরণদোষরূপ দুঃখ উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে ঋত্বিকগণেরও ভক্ষণের ফলে দক্ষিণাও প্রদান করা হয়ে যায়। জল হলো সর্ব দেবতার। স্বরূপ (সর্বদেবতারূপত্ব), এই নিমিত্ত জলের দ্বারাই যজ্ঞের বিস্তার করণীয়। পুরাকালে দেবতাগণ প্রথমে যজ্ঞ করতে আরম্ভ করে (যজ্ঞং প্রথমমকুৰ্বস্তদা) স্বিষ্টকৃৎ অগ্নিরূপ রুদ্রকে অন্তরিত (অপসারিত) করে রেখেছিলেন; সেই অপসারিত হওয়ার কারণে রুদ্র কুপিত হয়ে তাদের যজ্ঞকে নিষ্ফল করে দেন। অতঃপর দেবতাগণ সেই রুদ্রের অভিমুখে গমন করে তাদের যজ্ঞানুষ্ঠান সম্পূর্ণ করে দেবার নিমিত্ত প্রার্থনা জ্ঞাপন করলেন। তখন বুদ্ধিমত্ত দেবতাগণের কোন কোন জন একে অপরকে বলতে লাগলেন, যদি আমরা হবিঃ প্রদানের দ্বারা রুদ্র দেবতার আরাধনা করি, তাহলে আমাদের কর্ম সিদ্ধ হবে (স্পিষ্টং ভবিষ্যতীতি)। এই ভাবে হবিঃ-র দ্বারা আরাধনার মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সিদ্ধ করার নিমিত্ত অগ্নিদেব স্বিষ্টকৃৎ নাম-সম্পন্ন হয়েছিলেন। অতঃপর দেবতাগণ তাঁর আরাধনা করে যবমাত্র পরিমিত পুরোভাশের অংশ ছিন্ন করে তাকে প্রদান করেন। এই নিমিত্ত যবমাত্র ভক্ষণভাগ (প্রাশিভাগ) অর্পণ করা কর্তব্য। এর অধিক দান করলে (অধিকাবদানে) যজ্ঞের প্রয়োগে ভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। যদি অবদানের পূর্বে উপস্তরণ ও পরে অভিঘারণ করা হয়, তাহলে পুরোশের উভয় পার্শ্বে সংশ্বায়ি ব্যাধি হয়। সম্যকভাবে বিনষ্টিপ্রাপ্তিরূপ রোগবিশেষের নাম সংশ্বায়ি (উচ্ছন্নত্বরূপ রোগবিশেষো….)। এই নিমিত্ত একবার (সকৃত) অবদান ও অভিঘারণ করলে যজমানের প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকে। পুরাকালে কোনও এক সময়ে দেবতাগণ সেই প্রাশি পূষাদেবকে সমর্পন করেছিলেন। এবং পূদেবতা মন্ত্র ব্যতীতই সেই প্রাশি। দন্তবলে (দন্তের দ্বারাই) চর্বণ করেছিলেন, ফলে তাঁর সকল দন্তই পতিত হয়ে যায় (স্বকীয়ান্তান পাতিতবান)। এই কারণেই তার পর হতে সর্বত্র পূষাদেবকে চরুর পিষ্টভাগ (মর্দিত পূর্বক) প্রদান করা হয়। তখন দেবতাগণ দন্তহীন পূষার দ্বারা প্রাশি ভক্ষণের অসামর্থ্য দেখে, তা বৃহস্পতিদেবকে অর্পণ করলেন। বৃহস্পতিদেবতা মনে মন ভাবলেন (মনস্টেবমবিভেৎ), পূষা যখন প্রাশি ভক্ষণ করতে গিয়ে আর্ত (অর্থাৎ পীড়িত) হয়েছেন, তখন অন্যেরাও এই প্রাশি ভক্ষণে পীড়িত হবে। তখন বৃহস্পতিদেব সূর্যস্য ত্বা চক্ষুষা ইত্যাদি মন্ত্র দর্শন করলেন। তিনি দর্শন করলেন–মনুষ্যগণের চক্ষু চক্ষু রোগের দ্বারা হিংসিত (বা আক্রান্ত) হয়, কিন্তু আরোগ্যপ্রদ সূর্যের চক্ষু কখনও (রোগের দ্বারা) হিংসিত হয় না। তখন দেব বৃহস্পতি অভীত হয়ে সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোবাহুভ্যাং… অর্থাৎ সবিতা দেবতার প্রেরণায় অশ্বিযুগলের বাহুর দ্বারা ও পূদেবতার হস্ত দুটির দ্বারা আমি তোমাকে (অর্থাৎ প্রাশিভাগকে) গ্রহণ করছি ইত্যাদি মন্ত্রে তা প্রতিগ্রহ করলেন। এই ব্রহ্ম মন্ত্রের দ্বারা অশ্বিন ইত্যাদি দেবতাগণ তাদৃশ প্রতিগ্রহ করলে, চাঁদের কোন হানি হলো না। সেইজন্যই এই মন্ত্রের দ্বারা (প্রাশিত্র) প্রতিগ্রহ কর্তব্য। এই জন্যই প্রবৃদ্ধ অরণ্য দাবাগ্নির দ্বারা ভক্ষিত হলেও শুষ্ক কাষ্ঠ কিংবা কণ্টক ইত্যাদি তাঁর মুখবিবরের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে না (কেনাপি ন হিংস্যতে)। শ্রাদ্ধ ইত্যাদিতে ব্রাহ্মণ পরান্ন (পরপিণ্ড বা অপরের পক অন্ন) ভোজন করলেও তার উদর কোন অনিষ্টের দ্বারা আক্রান্ত হয় না (প্রত্যবায়েন ন হিংসিতং ভবতি)। যেহেতু বৃহস্পতিদেব ব্রহ্মিষ্ট অর্থাৎ মন্ত্রাবিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, সুতরাং বৃহস্পতে ব্রাহ্মণ ইত্যাদি মন্ত্রভাগ পাঠ করা কর্তব্য। অতঃপর অপ বা এতস্মাহ প্ৰাণাঃ ক্রামান্তি যঃ প্রাশি….. অর্থাৎ যে প্রাশি ভক্ষণ করবে, জল তার প্রাণকে রক্ষা করবে ইত্যাদি মন্ত্রে জলসেচন পূর্বক শিরোমার্জন করে প্রাণ রক্ষা কর্তব্য। অমৃত হলো প্রাণ, অমৃত হলো জল; তা প্রাণকে যথাস্থানে আহ্বান করে থাকে ॥৮॥

[অনুযাজাঃ সুক্তবাকা নবমে দ্বয়মীর্যতে-নবম অনুবাকে অনুযাজ ও সূক্তবাক, এই দুইয়ের কথা উক্ত হয়েছে]

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- অগ্নী আ দধাতগ্নিমুখানেবৰ্ত্তন প্রীতি সমিধমা দত্যুত্তবাসামাহুতীনাং প্রতিষ্ঠিত্যা অথো সমিধত্যে জহোতি পরিধীনসং মার্ক্সি পণাত্যেবৈনানৎস কৃৎসকৃৎ সং মাৰ্টি পরাঙিব হ্যেতৰ্হি যজ্ঞশ্চতুঃ সংপদ্যতে চতুষ্পদঃ পশবঃ পশুনেবাব রুন্ধে ব্ৰহ্মন্ প্র স্থাস্যাম ইত্যাহাত্র বা এতৰ্হি যজ্ঞঃ শ্রিতঃ যত্ৰ ব্ৰহ্মা যত্রৈব যজ্ঞঃ শ্রিতস্তত এবৈনমা রভতে যদ্ধতেন প্রমীবেদেপনঃ স্যাদ্যচ্ছীষ্ণা শীর্ষক্তিনাস্যাদ্যক্তৃষ্ণীমাসীতাসংপ্রত্তো যজ্ঞঃ স্যাৎ প্রতিষ্ঠেত্যে ক্ৰয়াদ্বাচি বৈ যজ্ঞ শ্রিতো যত্রৈব যজ্ঞঃ শ্রিতন্তত এবৈনং সং প্র যচ্ছতি দেব সবিতরেতত্তে প্ৰ আহেত্যাহ প্রসূত্যৈ বৃহস্পতিব্রহ্মেত্যাহ স হি হ্মিণ্ঠঃ স যজ্ঞং পাহি স যজ্ঞপতিং পাহি স মাং পাহীত্যাহ যজ্ঞায় যজমানায়াহত্মনে তেভ্য এবাহশিষমা শাস্তেহনাৰ্ত্ত আশ্রাব্যাহহ দেন যজেতি ব্ৰহ্মবাদিনো বদন্তীষ্টা দেবতা অথ কতম এতে দেবা ইতি ছন্দাংসীতি ক্ৰয়াগায়ত্ৰীং ত্রিষ্ঠুভম অগতীমিত্যবো খাহুব্রাহ্মণা বৈ ছন্দাংসীতি তানেব তদজতি দেবানাং বা ইষ্টা দেবতা আসন্নখাগ্নির্নোদজ্বলং দেবা আহুতীভিরযাজেবিন্দ যদনুযাজা যজত্যগ্নিমেব তৎসমিদ্ধ এতদুর্বৈ নামাহসুর আসীৎ স এতহি যজ্ঞস্যাহ শিষবৃঙক্ত যক্ৰয়াদেতৎ উ দ্যাবাপৃথিবী ভদ্রমভূদিত্যেতদুমেহসুরং যজ্ঞস্যাহশিষং গময়েদিদং দ্যাপৃথিবী ভদ্রমভুদিত্যে ক্ৰয়াদ যজমানমেব যজ্ঞস্যাহশিষং গময়ত্যাগ্ধ সূক্তবাকমুত নমোবাকামত্যাহেদমৎস্মেতি বাবৈতদাহোপশ্রিততা দিবঃ পৃথিবব্যারিত্যাহ দ্যাবাপৃথিব্যোহিঁ যজ্ঞ উপশ্রিত ওমন্বতী তেহস্মিন্ যজ্ঞে যজমান দ্যাবাপৃথিবী স্তমিত্যাহাহশিষমেবৈতামাশাস্তে যক্ৰয়াৎ সূপাসানা চ স্বধ্যবসানা চেতি প্ৰমায়ুকো যজমানঃ স্যাদ যদা হি প্রমীয়েতথেমামুপাবস্যাতি সূপচরণা চ অধিচরণা চেত্যে ক্ৰয়াদ্বরীয়সীমেবাস্মৈ গতিমা শাস্তে ন প্রামায়ুকো ভবতি তয়োরাবিদ্যগ্নিরিদং হবিরজুষতেত্যাহ যা অক্ষ্ম দেবতাস্তা অরীরধামেতি বাবৈতদাহ যন্ন নির্দিশেৎ-প্রতিবেশং যজ্ঞস্যাহশীৰ্গচ্ছেদা শাস্তেয়ং যজমানোহসাবিত্যাহ নিৰ্দিশ্যৈবৈনং সুবর্গং লোকং গময়তায়ুরা শাস্তে সুপ্রজাস্তু শান্ত ইত্যাহাহশিষমেবৈমা শাস্তে সজাতবনস্যামা শান্ত ইত্যাহ প্রাণ বৈ সজাতাঃ প্রাণানেব নান্তেরতি তদগ্নি বো দেবেভ্যো বনতে বয়মগ্নৰ্মানুষ ইত্যাহাগ্নিৰ্দেবেভ্যো বনুতে বয়ং মনুষ্যেভ্য ইতি বাবৈতদাহেহ গভিৰ্বামস্যেদং চ নমো দেবেভ্য ইত্যাহ যাশ্চৈব দেবতা যজতি যাশ্চ ন আভ্য এবোভয়ীভ্যো নমস্কয়োত্যাত্মনোহনাত্তৈ ॥৯৷৷

মর্মার্থ- আগ্নীপ্রভাগ প্রথমেই প্রদান করা কর্তব্য; কারণ পৌরডাশিক কাণ্ডে আগ্নিপ্ৰভাগপ্রদান প্রথমের সাথে যুক্ত। আগ্নীপ্র (হোমকুণ্ড) হলো ইধ্যমান অগ্নির মুখস্বরূপ (মুখত্ব)। সমিধযুক্ত অগ্নিতে যাগ (সমিদযুক্ত এবাপ্পাবনূযাজাঞ্জুঘোতি)। সেই সময়ে পরিধির সংমাষ্টি (সম্মার্জন) করণীয়। যখন আহুনীয়ের দক্ষিণদিকে ব্রহ্ম (ঋত্বিকবিশেষ) স্থিত থাকেন (বর্ততে), তখন যজ্ঞ তাকে আশ্রয় করে হোতব্য হয়ে থাকেন (তৎসমীপে স্থিত্বা হোতব্যত্বাৎ)। এই জন্যই ব্রহ্মার অনুজ্ঞার দ্বারা যজ্ঞ যে দিকে আশ্রিত সেই দিক হতে যজ্ঞের উপক্রম (উদ্যেগ) করণীয়। ব্ৰহ্মর অনুজ্ঞাপ্রদানের প্রকার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা রয়েছে–ব্রহ্মা হস্তাগ্র সঞ্চালন করে অনুজ্ঞা দেবেন, কিম্বা শিরশ্চালন করে, অথবা মৌনী হয়ে (তুষ্ণীমেবাহস্ত) কিম্বা তার বিকল্পে বাক্যের দ্বারা–এর মধ্যে কোন্ ভাবে এই অনুজ্ঞা-প্রদান সমুচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,–যদি হস্তচালনার দ্বারা অনুজ্ঞা প্রদত্ত হয়, তবে শরীরে বায়ু ইত্যদির নিমিত্ত কোন কম্পরোগ উৎপাদিত হবে; শির-চালিত করে অনুজ্ঞা প্রদান করলে শিরোরোগে আক্রান্ত হবে (শিরোরোগবান্ ভবেৎ); মৌনভাবে অবস্থিত হয়ে অনুজ্ঞা প্রদান করলে যজ্ঞ অসম্প্রত্ত অর্থাৎ সম্যভাবে প্রবৃত্ত হবে না; সেই নিমিত্ত অবশিষ্ট প্রকারে অর্থাৎ বচনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ইত্যাদি মন্ত্রের উচ্চারণের দ্বারা–অনুজ্ঞা প্রদান করবেন। মন্ত্ররূপ বাক্যে যজ্ঞের আশ্ৰয়ত্ব থাকার কারণে অর্থাৎ যজ্ঞ মন্ত্ররূপ বাক্যে আশ্রিত থাকেন বলে এই মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারাই যজ্ঞ প্রতিষ্ঠ হন (প্রযচ্ছতি)।হে সবিতাদেব! ইত্যাদি মন্ত্রে যেমন অনুজ্ঞা প্রার্থনা করা হবে, তেমনই তার পরে অধ্বর্য আপনি যাগ করুন ইত্যাদি বলতে হবে। বৃহস্পতি এখানে ব্রহ্মা। হে বৃহস্পতি! আপনি এই যজ্ঞকে রক্ষা করুন; যজ্ঞপতি (যজমান) ও মনুষ্য-ব্রহ্মারূপী আমাকেও রক্ষা করন।হে অধ্বর্য! আপনি যা বলেছেন, তাই তোক (তথাহস্তু) অর্থাৎ যাগ করতে প্রস্থান করুন। অন্যের শ্রুতিযোগ্যভাবে বলতে হয় দেবান যজেতি অর্থাৎ দেবতাগণের যাগ করুন। ব্রহ্মবাদীগণ জিজ্ঞাসা করেন–অগ্নি প্রজাপতি ইত্যাদি যে সকল দেবতা পুরোডাশ ইত্যাদির দ্বারা যাগ-প্রদত্ত হয়ে থাকেন, অর্থাৎ যাঁদের উদ্দেশে যাগ অনুষ্ঠিত করতে হয়, তাঁরা কত জন? এর উত্তরে পূর্ব পক্ষীয় কোন কোন জন বলে থাকেন–অধ্বর্য যে দেবতাগণের যাগানুষ্ঠানের আরম্ভ করেছেন, তারা ব্যতীত আর কোন দেবতা অবশিষ্ট নেই। অপর পক্ষীয় কোন কোন জন বলেন-ছন্দগুলি অবশিষ্ট আছে; অর্থাৎ গায়ত্রী, ত্রিষ্ঠুভ ও জগতীর যাগও কর্তব্য। এই উক্তির বিশেষত্ব হলো– ছন্দগুলি ব্রাহ্মণের দ্বারা পঠিত হওয়ার জন্য ব্রাহ্মণ হলেন ছন্দের রূপ (ছন্দোরূপা)। অতএব ব্রাহ্মণজাত্যাভিমানী যে অগ্নি, তাঁরও যাগনুষ্ঠান কর্তব্য; সেই অগ্নি হলেন এই অনুযাজেয় দেবতা (এবানুযাজদেবতা)। পুরাকালে কোনও সময়ে দেবতাগণ যে যাগানুষ্ঠানে কৃতবন্ত হয়েছিলেন, সেই যাগে তাদের ইষ্ট ছিলেন অগ্নি, প্রজাপতি ইত্যাদি দেবতা। তখন সেই যাগের ঊর্ধ্বে আহুতির আধারভূত অগ্নি প্রজ্বলিত হলেন না। তারপর দেবতাগণ অনুযাজের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে সেখানে নিলীন অগ্নিকে অন্বেষণ পূর্বক আহুতির দ্বারা লাভ করেছিলেন। অতএব অনুযাজের দ্বারা যাগ করলে তবেই অগ্নি প্রজ্বলিতবান হয়ে থাকেন। [দেবং বৰ্হি অর্থাৎ দ্যোতনশীল বৰ্হিনামক যে অগ্নিস্বরূপ ইত্যাদি অনুযাজের মন্ত্রগুলি মন্ত্রকাণ্ডে কথিত (আত) হয়েছে]। পুরাকালে এতদু নামে কোন এক অসুর ছিল। সে কোন এক যজ্ঞে এইরকম সুক্তবচন পাঠকালে সমাগত হয়ে যজমান-সম্বন্ধিনী আয়ু, সুপ্ৰজা ইত্যাদি প্রার্থনা করে। (অর্থাৎ নিজেকে যজমান-রূপে চিন্তা করে প্রকৃত যজমানের বিনাশ এবং নিজের সম্বন্ধিনী আশীর্বাদ প্রার্থনা করে)। তখন যদি হোতা এতদু (এতদিদং–এই) দ্যাবাপৃথিবী ইত্যাদি শাখাত্তরোক্ত এই সূক্তবাক্য পাঠ করতেন, তবে তার আশীর্বাদ অসুর প্রাপ্ত হতো; এই নিমিত্ত অন্য শাখায় উক্ত দ্যাবাপৃথিবী ভদ্রম (এতদুর এই প্রথমবাক্য ব্যতিরেকে) সূক্তবাক্য পাঠ কর্তব্য। তাহলে যজ্ঞের ফল ( আয়ু, সুপ্রজা ইত্যাদি) যজমানের প্রাপ্ত হয়। সুক্তবাক ও নমোবাক এই শব্দ দুটির ক্রিয়াবিশেষণত্ব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, এই দুটি যেমন হবে (যথা ভবতি), তেমন সমৃদ্ধি প্রাপ্তি পূর্বক মন্ত্রবাক্য বলতে হবে। যজ্ঞ অগ্নিরূপে পৃথিবীতে আশ্রয় করে থাকেন এবং দিব্যলোকে (অর্থাৎ স্বর্গলোকে) ফলরূপে অবস্থান করেন। শাখান্তরে পঠিত অবসান শব্দের দোষ সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, যখন কোন জনের মৃত্যু হয়, তখন তার পর্যঙ্ক (অর্থাৎ খট্রা বা খাট) ইত্যাদিতে শয়ন পরিত্যাগ করিয়ে (অর্থাৎ সেখানে হতে অবতরণ করিয়ে) ভুমিতে উপেত (প্রাপ্ত বা শায়িত) করা হলে, তখন তার অবসান হয়। সেই জন্য এই সাদৃশ্যের কারণে সুপাবসান শব্দে মরণশীল অর্থ সূচিত হয়। সুতরাং সুপাবাসান শব্দের পরিবর্তে সু-অধিচরণ (স্বাধিচরণ) শব্দ প্রয়োগ কর্তব্য। ভূমিবিষয়ক স্বধিচরণ শব্দের দ্বারা প্রভূত-পরিমিত শ্রেষ্ঠ (বরীয়সীমতিবহুলাং) গোচারণ-ভূমির কামনা থাকে।–সূক্তবাকের দ্বিতীয় ভাগের পাঠে বলা হয়েছে–আজ্যভাগী দেবতা অগ্নি কর্তৃক প্রদত্ত এই হবিঃ সেবন পূর্বক যজমানের বর্ধন করে থাকেন (যজমানুং বর্ধিতবা)। তার দ্বারা যজমানের অধিক তেজঃ সম্পাদিত হয়ে থাকে। মন্ত্ৰকাণ্ডে কথিত সূক্তবাকের মধ্যভাগের তাৎপর্যে বলা হয়েছে যে, এখানে ইষ্টবন্ত (অভীষ্ট) দেবতার অভিবৃদ্ধি কামনার মধ্য দিয়ে স্বকীয় বৃদ্ধিও কামনা করা হয়েছে। হোম ইত্যাদি ক্রিয়ায় মন্ত্রের মধ্যগত অসৌ পদের দ্বারা যজমানের নাম উচ্চারণ (নির্দেশ) করা কর্তব্য। যদি এখানে যজমানের নাম নির্দেশ করা না হয়, তবে যজ্ঞ-সম্বন্ধিনী আয়ু ইত্যাদি আশী (আশিস-এর স্ত্রীলিঙ্গ) যজ্ঞশালায় প্রবিষ্ট পার্শ্বস্থ যে কোনও ব্যক্তি প্রাপ্ত হতে পারে। এই নিমিত্ত যজমানের নাম নির্দেশ করা (অবশ্য) কর্তব্য। তার ফলে যজমান যজ্ঞের আশী তত লাভ করবেনই, পরন্ত তার স্বর্গের প্রাপ্তিও সম্ভব হবে। দেবতার নিকট হতে ও মনুষ্যের নিকট হতে (দেবসকাশান্মনুষ্যসকাশ্বাচ্চ) যজ্ঞের ফল হোত অগ্নির নিকট সম্যক অবস্থিত থাকে। (অর্থাৎ দেবতা ও মনুষ্যগণ যজ্ঞক্রিয়া সুসম্পাদনের কারণে যে সুফল অর্জন করে থাকেন, তা হোতা অগ্নির নিকট গচ্ছিত থাকে)। দেবতা অগ্নি অর্থাৎ দৈবযজ্ঞের হোত দেবগণের নিকট এবং মনুষ্য অগ্নি অর্থাৎ মনুষ্য-যজ্ঞের হোতা মনুষ্যগণকে যজ্ঞফলের ভোগ প্রদান করে থাকেন। এই যজ্ঞকর্মে হবিঃ-র দ্বারা যে দেবগণকে সকৃত করা না হয়ে থাকলে, তাদের নমস্কারের দ্বারাও সৎকার করা যায়। এই উভয়বিধ সকারই দেবতাগণের প্রসন্নতা-সাধক ॥৯॥

[দশমে শংযুবাকমব্যাথ্যা পত্নীসংযাজাশ্চ বক্ষ্যন্তে।–অর্থাৎ এই দশম অনুবাকে শংযুবাক নামক মন্ত্রের ব্যাখ্যা ও পত্নীসংযাজ নামক যাগের বিষয় উক্ত হয়েছে।]

.

দশম অনুবাক

মন্ত্র- দেবা বৈ যজ্ঞস্য স্বগাকারং নাবিতে শংযুং বাহঁম্পত্যমব্রুমিং নো যজ্ঞং স্বর্গ কুৰ্ব্বিতি সোহব্ৰবীদ্বরং বৃণৈ যদেবাব্রাহ্মণোহেশ্ৰধানো যজাতৈ সা মে যজ্ঞস্যাহশীরসদিতি তস্মাদ্যব্রাহ্মণণাত্তোহখানো যজতে শংযুমের তস্য বাম্পত্যং যজ্ঞস্যাহশীর্গচ্ছতত্যতন্মমেত্যব্রীৎ কিং মে প্রজায়াঃ ইতি যোহপশুরাতে শতেন যাতযাদ্যো নিহনৎ সহণে যাতযাদ্যো লোহিতং করবদ্যাবতঃ প্রদ্য পাংশূন্তসংগৃহ্বাত্তাবতঃ সম্বৎসরা পিতৃলোকং ন প্র জানাদিতি তস্মাদ ব্রাহ্মণায় নাপ গুরেত ন হি হন্যান্ন লোহিতং কুদেবতা হৈনসা ভবতি তচ্ছংযোরা বৃণীমহ ইত্যাহ যজ্ঞমেব তৎ স্বগা করোতি তৎ শংযে রা বৃণীমহ ইত্যাহ শযুমে বাম্পত্যং ভাগধেয়েন সমর্জয়ত্রি গাতুং যজ্ঞায় গাতুং যজ্ঞপতয় ইত্যাহাহশিষ মেবৈমা শাস্তে সোমং যজতি রেত এব তন্দধাতি ত্বষ্টারং যজতি রেত এব হিতং ত্বষ্টা রূপাণি বি করোতি দেবানাং পত্নীৰ্যৰ্জতি মিথুনত্বয়াগ্নিং গৃহপতিং যজতি প্রতিষ্ঠিত্যৈ জামি বা এতদ যজ্ঞস্য ক্রিয়তে যদাজ্যেন প্রজা ইজ্যন্ত আজ্যেন পত্নীসংজা ঋচমনুচ্য পত্নীসংজানামৃচা যজত্যজামিত্বায়াথো মিথনত্বায় পঙক্তিপ্রায়ণণা বৈ যজ্ঞঃ প্য দয়নঃ পঞ্চ প্রজা ইজ্যন্তে চত্বারঃ পত্নীসংযাজাঃ সমিষ্টযজুঃ পঞ্চমং পঙক্তিমেবানু প্রযুক্তি পঙক্তিমদ্যন্তি ॥১০৷৷

মর্মার্থ- যে দেবতার নিমিত্ত যে হবিঃ প্রদান বিহিত (যস্মৈ দেবায় যদ্ধবির্ধিহিতং), সেই হবিঃ অপর দেবতার হবিঃ-র সাথে মিশ্রিত না করে (সাংকমন্তরেণ) যাতে সেই দেবতার স্বাগত অর্থাৎ নিজস্ব বা আত্মগত করা হয়, তার নিমিত্ত দেবতাগণ শংযু নামধারী বৃহস্পতি-পুত্রের নিকট (প্রতি) বলেছিলেন। তাতে শংযু চিন্তা করলেন (চিন্তিতবান)–এইসব যজ্ঞগুলির মধ্যে কেউ যদি আপন ইচ্ছায় কোনটির অনুষ্ঠান করে, কিংবা শারহিত হয়ে (অর্থাৎ অনিচ্ছাক্রমে) কোনটির অনুষ্ঠান করে, সেই উভয় যজ্ঞের ফলই আমার হোক (মোস্কৃতি বরঃ)। সেই হতে অনুষ্ঠিত ঐ যজ্ঞফলদ্বয় শংযুর প্রাপ্তি হলো। পুনরায় শংযু এইরকম বললেন-তাহলে ঐ দুই ফলে আমার প্রাপ্তি সম্পন্ন হলো, কিন্তু আমার পুত্র-পৌত্র ইত্যাদিরূপ প্রজাগণকে কি প্রদান করছেন? তখন দেবতাগণ তার পুত্রদের অধীনে অপগোরণ ইত্যাদি কর্মের যাতনাপ্রাপ্তির বর প্রদান করলেন। তাড়ন অর্থাৎ আঘাত বা প্রহারের উদ্যোগ অর্থাৎ চেষ্টাকে অপগোরণ বলে। ব্রাহ্মণদের উপরে সেই তাড়নার উদ্যোগ যে করে, সে শতনিষ্ক (শত কাহন পরিমাণ অর্থ) দণ্ডের ক্লেশ প্রাপ্ত হয়; যে ব্রাহ্মণকে বধ করার উদ্দেশে তাড়না বা আঘাত করে, সে সহস্ৰ নিষ্ক দণ্ডের ক্লেশ প্রাপ্ত হয়; যে ব্রাহ্মণের শরীরে তাড়নার দ্বারা রুধির (লোহিতং) গ্রহণ করে অর্থাৎ রক্তপাত ঘটায়, সেই রুধির ভূমির উপরে পতিত হয়ে যত পরমাণু পরিমিত স্থান ব্যাপ্ত হবে, আঘাতকারী তত বৎসরব্যাপী পিতৃলোক প্রাপ্ত হবে না, অধিকন্তু যমযাতনা অনুভব করবে। এই সমস্তই তাঁর (অর্থাৎ শংযুর) পুত্রপৌত্র ইত্যাদি প্রজাগণের নিমিত্ত দেবগণের দ্বারা প্রদত্ত বর হলো (তৎসর্বং ত্বপ্রজাধীনমিতি বরঃ)। যেমন বলা হলো তেমনভাবে ব্রাহ্মণের প্রতি অধিক্ষেপ অর্থাৎ তিরস্কার ইত্যাদি কর্ম হতে বিরত থাকা কর্তব্য। এর প্রত্যবায় হলে (অর্থাৎ বিপরীত আচরণ করলে) পূর্বোক্ত পাপের দ্বারা যুক্ত (লিপ্ত) হতে হয়। এই রকম প্রশস্ত ফল বৃহস্পতি-পুত্র শংযুর নিকট আমরা প্রার্থনা করি। কি রকম ফল? না, যজ্ঞের ফল দেবতাগণের প্রতি গমন করুক; যজ্ঞপতি (যজমান) দেবতাগণের নিকট গমন করুন; আমাদের মাঙ্গল্যে দেবগণের নিমিত্ত ও মনুষ্যগণের দ্বারা কৃত বিঘ্নের বা প্রতিবন্ধের উপশম হোক। সর্বপাপের এই ঔষধ (ভেষজ) নির্বিঘ্নে সমাপ্তি প্রাপ্ত হোক (অবিঘ্নেন সমাপ্তিং প্রাণোতু), আমাদের অর্থাৎ দ্বিপদধারী মনুষ্যগণের ও চতুষ্পদ পশুগণের মঙ্গল ঘটুক (সুখমস্তু)। –শংযুর নিকট প্রার্থনা করছি (তচ্ছংযোরা বৃণীমহ) ইত্যাদি মন্ত্রের পাঠের দ্বারা যজ্ঞের ফল সেই সেই দেবতাগণ স্বগতভাবে (নিজ নিজ নামে) প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। এই মন্ত্রবাক্য পাঠের দ্বারা বাম্পত্য শংযুও তার অভীষ্ট ভাগ লাভ করে তুষ্ট হন।গাতুং যজ্ঞায় গাতুং যজ্ঞপতয় ইত্যাদি মন্ত্রে আশিস প্রাথনা করা হয়েছে। তারপর সোমং যজতি রেত ইত্যাদি চারটি মন্ত্রে পত্নী-সংযাজের বিষয় কথিত হয়েছে। যথা,সোমদেবের যাগ করলে তিনি রেতঃ (বীর্য) প্রদান করে থাকেন; তা ধারণ পূর্বক ত্বষ্টার (বিশ্বকর্মার) উদ্দেশে যাগ করলে তিনি সেই রেতঃকে বিকৃত করে নানা রূপ প্রদান করে থাকেন; দেবপত্নীগণের উদ্দেশে যাগকর্মের দ্বারা মিথুনত্ব লাভ হয়; গৃহপতি অগ্নির নিমিত্ত যুগানুষ্ঠান করলে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়। প্রজ ও পত্নী-সংযাজের মধ্যে দ্রব্য-সম্পর্কিত (তাবন্দ্ৰব্যকৃতং) কোন বৈষম্য নেই; তবে যদি মন্ত্রগত বৈষম্য থাকে তবে তা পরিহারেরও উপায় আছে। সে ক্ষেত্রে যজুঃ-মন্ত্রের যাজ্যানুবাক্যে প্রযাজ যাগ এবং ঋক্‌-মন্ত্রের যাজ্যানুবাক্যে পত্নী-সংযাজ যাগের অনুষ্ঠান করতে হয়। (এই যাজ্যা ও অনুবাক্যের মধ্যগত প্রথম পুরোনুবাক্যা ও যাজ্যা এবং দ্বিতীয় পুরোনুবাক্যা ও যাজ্যা–উভয়ই যথাক্রমে চতুর্থ কাণ্ডের দ্বিতীয় প্রপাঠকে এবং তৃতীয়কাণ্ডের প্রথম প্রপাঠকে ব্যাখ্যাত হয়েছে)।–অনন্তর অর্থবাদের দ্বারা সমিষ্ট-যজুর বিধি কথিত হচ্ছে।–পঞ্চাক্ষরা পংক্তি, সেই কারণে পংক্তি শব্দের দ্বারা পঞ্চসংখ্যা বোঝায় (লক্ষ্যতে)। এই পংক্তি যার প্রারম্ভে (প্রায়ণে) থাকে, তাকে পংক্তি-প্ৰায়ণ যাগ বলে। পংক্তির সমাপ্তি (উদয়ন) যাতে থাকে, তাকে পংক্তি-উদয়ন (পঙক্তৃদয়নঃ) যাগ বলে। দর্শপূর্ণমাস যাগের প্রারম্ভে পঞ্চ প্রযাজ যাগ কর্তব্য (ইজ্যন্তে) এবং সমাপ্তিতে চারটি পত্নী-সংযাজের সাথে একটি (পঞ্চম) সমিষ্ট-যাগ করণীয়। সেই রকমভাবে পংক্তির দ্বারা প্রারম্ভ ও পংক্তির দ্বারা অন্ত (শেষ) সম্পন্ন করতে হয়। তাহলে সমিষ্ট-যজুর দ্বারা যাগ হবে–এটাই তাৎপর্যার্থ। দেবা গাতুবিদঃ ইত্যাদি মন্ত্র যজ্ঞের সম্পূর্ণতা সূচিত করে বলে (ইষ্টিসংপূর্তিকারিত্বাৎ) তা সমিষ্ট-যজুঃ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। [সেই মন্ত্র আধ্বর্যবকাণ্ডে পুনরায় কথিত ও ব্যাখ্যাত হয়েছে। ১০।

[সায়ণাচার্য বলেন–দশমে শংযুবাকশ্চ পত্নীসংযাজকাঃ স্থিতা। যা দর্শপূর্ণমাসাখ্যা সেষ্টিরত্র সমাপিতা। অথৈকাদশে সম্বর্গেষ্টিহৌত্রমন্ত্ৰা অভিধীয়ন্তে। অর্থাৎ–দশম অনুবাক পর্যন্ত দর্শপূর্ণমাস নামে অভিহিত ইষ্টি সমাপ্ত হয়েছে। এই একাদশ অনুবাকে সম্বর্গ নামক ইষ্টির হোমমন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে]

.

একাদশ অনুবাক

মন্ত্র- যুক্মা হি দেবহূতমান্ অশ্বান্ অগ্নে রথীরিব। নি হোতা পুৰ্ব্ব সদঃ। উত নো দৈব দেবান অচ্ছা বোচো বিদুষ্টরঃ। দ্বিশ্বা বাৰ্য্যা কৃধি।। ত্বং হ যদ্যবিষ্ঠা সহসঃ সুনবাহুত। ঋতাবা যজ্ঞিয়ো ভুবঃ। অয়মগ্নিঃ সহষিণো বাজস্য শতিনস্পতিঃ। মূৰ্দ্ধা কবী রয়ীণা।। তং নেমিমৃভবোযথাহনমস্ক সহুতিভিঃ। নেদীয়ো যজ্ঞ অঙ্গিরঃ। তস্মৈ নুনমভিদ্যবে বাঁচা বিরূপ নিত্যয়া। বৃষ্ণে চোদ্দস্ব সুষ্ঠুতিম্। কমু ধিদস্য সেনয়াহগেরপাকচক্ষসঃ। পণিং গোষু স্তরামহে। মা নো দেবানাং বিশঃ প্রতীরিবোম্রাঃ। কৃশং ন হাসুরগ্নিয়াঃ। মা নঃ সমস্য দৃঢঃ পরিষেশো অংহিতঃ। উৰ্ম্মির্ণ নামা বধীৎ। নমস্তে অগ্ন ওজসে গৃণন্তি দেব কৃষ্টয়ঃ। অমৈঃ অমিত্রময়। কুবিসু নো গবিষ্টয়েহগ্নে সংবেষিযো রীয়ম। উরুকৃরু ণস্কৃধি। মা নো অস্মিন্মহাধনে পরা বগর্ভারভৃদ্যথা। সংবর্গং সংরয়িং জয়। অন্যমম্মুত্তিয়া ইয়মগ্নে সিষ দুচ্ছুনা। বৰ্ধা নো অমবঙ্বঃ । যস্যাজুষন্নমস্বিনঃ শমামদুৰ্ম্মখস্য বা। তং ঘেদগ্নিৰ্বধাহুবতি। পরস্যা অধি সম্বোহবরাং অভ্যা তর। যত্ৰাহমশ্মি তাং অব। বিদ্যা হি তে পুরো বয়মগ্নে পিতুর্থাহবসঃ। অধা তে সুমীমহে। য উগ্র ইব শৰ্য্যহা তিগশৃঙ্গো ন বংসগঃ। অগ্নে পুরো ক্লরোজিথ। সখায়ঃ সং বঃ সম্যঞ্চমিষং স্তোমং চাগ্নয়ে। বর্ষিায় ক্ষিতীনামূৰ্জো নপত্রে সহস্বতে। সং সমিবসে বৃষন্নগ্নে বিশ্বান্যৰ্য্য আ। ইড়ম্পদে সমিধ্যসেস নো বন্যা ভর। প্রজাপতে স বেদ সোমাপূষণেমৌ দেবৌ ॥১১।

মর্মার্থ- হে অগ্নিদেব! রথস্বামী যেমন রথে অশ্ব যোজনা করে, সেইভাবে আপনি আমাদের এই প্রসিদ্ধ যজ্ঞকর্মে আহ্বানযোগ্য দেবতাগণকে যুক্ত করুন। এবং আপনি হোম-উৎপাদক (হোতা) হয়ে এই যাগস্থানে (যজ্ঞসভায়) আসীন বা স্থিত হোন (নিষীদ)। আরও, হে দেবাগ্নি! আপনি আমাদের অভিপ্রায় অতিশয়রূপে বিদিত হয়ে দেবগণের নিকট গমন পূর্বক তাদের বলুন যে, এই যজমান হবিঃ প্রদান করবেন। আমাদের সকল বরণীয় অভিপ্রায় যাতে বিশ্বাসযোগ্য হয়, তেমন করুন। হে যুবতম! হে বলের পুত্র (শত্রুকে বিনাশকারী শক্তির উৎপাদক)! হে দেবগণের আহ্বাতা! যেহেতু আপনি সত্যের স্বরূপ, সেই হেতু আপনি যজ্ঞ-সাধন হন। এই ইধ্যমান (দীপ্তিশালী) অগ্নিদেব শতসহস্র-সংখ্যক অন্নের পালনকর্তা, মস্তকের ন্যায় উন্নত (শিরোবদুন্নতঃ), বিদ্বান এবং ধনসমূহের দাতা হোন। হে অঙ্গসৌষ্ঠবযুক্ত অগ্নি! দেবগণের আহ্বানে সম-সামর্থ্যবান যে সকল ঋত্বিক আছেন, তাদের দ্বারা আহুত হয়ে এই যজ্ঞে আমাদের সমীপে দেবগণকে তেমনভাবে আনয়ন করুন, যেমন ভাবে দেবতক্ষণগণ (সূত্ৰধারগণ) রথচক্রের নেমিগুলিকে (পরিধিকে) আপন আয়ত্তে আনয়ন করে পরিভ্রমণের যোগ্য করে (পরিভ্রাম্যমাণাং কুন্তি)। হে বিবিধরূপযুক্ত অগ্নিদেব! সর্বতোভাবে দ্যোতমান, কাম্যবস্তুসমূহের বর্ষণকারী, যজনীয় (যষ্টব্যায়) দেবগণের উদ্দেশে বৈদিকমন্ত্ররূপ বাক্যের দ্বারা ক্রিয়মান আমাদের শোভন স্তুতি সর্বথা তাদের নিকট প্রেরণ করুন (অর্থাৎ তাদের নিকট বলুন)। সর্ব বিষয়ে জ্ঞানধারী এই অগ্নির পরিচারক-জনের সাথে গো-ইত্যাদি দ্রব্য বিষয়ে কোন কিছুর ব্যবহার গোপন করতে পারব না। (কেবলমাত্র) তার (অগ্নির) অনুগ্রহের দ্বারাই সর্ব দ্রব্যের ব্যবহার করতে পারব। দেবগণ সম্পর্কীয় বাণিজ্যকারী প্রজাগণ (অর্থাৎ যাজ্ঞিক ব্রাহ্মণ ইত্যাদি) যেন আমাদের পরিত্যাগ না করেন, যেমন ক্ষীরপুর্ণস্তনযুক্তা গাভী তার শিশুকে (বৎসকে) পরিত্যাগ করতে পারে না। যেমন নদীতে গমনকারী নৌকাকে ঊর্মিমালা (তরঙ্গসমূহ) বিনাশ করে না, তেমনই শত্রুগণ কৃত কোন অনিষ্টাচরণ (দ্রোহ) যেন আমাদের বিনাশ করতে না পারে। হে দেবাগ্নি! মনুষ্যগণ আপনার তেজঃ বা বলের নিমিত্ত নমস্কার বাচক শব্দ প্রয়োগ করে থাকে; (অর্থাৎ আপনাকে নমস্কার করে)। আপনি আমাদের অপকারী অমিত্র অর্থাৎ শত্রুদের রোগ ইত্যাদির দ্বারা বিনাশ করুন। হে অগ্নি! আপনি আমাদের ধনবাহুল্যের সম্যক ব্যাপ্তি করুন। গাভীযুক্ত যজ্ঞের নিমিত্ত আমাদের কর্মফল প্রভূত করুন। আমাদের প্রতি প্রদত্ত আপনার মহাধন যেন কোন কারণে বর্জন বা বিনাশ করবেন না। এই লোকে যেমন ভারবাহী বলীবর্দ ইত্যাদি দ্রব্যের বিনাশ ঘটতে দেওয়া হয় না, তেমনই আপনার দেয় ধনরাশিতে পুনঃ পুনঃ প্রভূত ধন সমানীত করে (অর্থাৎ সরবরাহের দ্বারা) তার সম্যক্ বৃদ্ধি করুন (সম্যক প্রাপয়)। হে অগ্নিদেব! আমাদের যারা বৈরিগণের দারিদ্ররূপ অনেকরকম পীড়ার সংবৃদ্ধি করুন, যাতে সেই বৈরিগণ ভীত হয়ে পলায়ন করে তথা পীড়া প্রাপ্ত হয়। শত্রুগণের রোগ বৃদ্ধির মতো আমাদের বল বৃদ্ধি করুন। (অনন্তর পুরোনুবাক্যা)–অগ্নিদেব সম্যক যুগানুষ্ঠানকারী যজমানের সুখরূপ আহুতির সেবা করেন (সুখকরীমাহুতিমজুষদগ্নিবসেবত) এবং সম্যক যজ্ঞানুষ্ঠানকারী ও সম্যভাবে তাঁকে নমস্কারকারী এই উভয় যজমানকে ধন ইত্যাদি বর্ধনের দ্বারা রক্ষা করে থাকেন। (বিকল্পিত পুরোনুবাক্যা) সম্যভাবে ভজনীয় এই ক্রিয়ায় (সম্যানুতে ভজতে যস্যাং সা ক্রিয়া সংবৎ) আমরা নিকৃষ্ট হলেও আমাদের অভিমুখে আগমন পূর্বক আমার দুঃখসমূহ বিনাশ করুন; যাঁরা আমাদের বন্ধু, তাঁদেরও রক্ষা করুন (বন্ধুনপ্যব রক্ষ)। হে অগ্নি! লোকে যেমন পিতার পালন-কর্ম জেনে থাকে, সেইরকম আমরা আপনার রক্ষণ-কর্ম জ্ঞাত আছি। সেই কারণে আপনার সম্পাদিত (অর্থাৎ আপনার দ্বারা প্রদত্ত) সুখ আমরা প্রাপ্ত হবে। (অনন্তর তিনটি মন্ত্রের উপহোমের অর্থ বর্ণিত হচ্ছে। তার মধ্যে প্রথমটি)–হে অগ্নি! আপনি উগ্র অর্থাৎ ক্রুর রাজার ন্যায় শত্রুগণের ভৎসনকারী (তর্জিতবানসি), তীক্ষ্ণ শৃঙ্গধারী মৃগের ন্যায় বনশ্রেণীতে গমনকারী এবং দাবাগ্নিরূপ ধারণ করে বনে অবস্থান করে থাকেন। সেই আপনি সেইরূপেই শত্রুবর্গের পুর (অর্থাৎ নগরগুলিকে) ধ্বংস করুন। (অতঃপর দ্বিতীয়টি)–হে পরস্পর সখ্যযুক্ত ঋত্বিক ও যজমান! আপনারা সমীচীন অভীষ্ট সম্পাদন করুন; পৃথিবীতে নিবাসহেতুগণের মধ্যে বৃদ্ধতম (সর্বাপেক্ষা প্রাচীন) বলের নগ্ধা (পৌত্র বা দৌহিত্র), স্বয়ং অতিশয় বলশালী,–সেই হেন অগ্নির উদ্দেশে স্তোত্র (স্তুতিমন্ত্রের পাঠ) সম্পাদন করুন। (অতঃপর তৃতীয়টি)–হে বৃষ (কামবর্ষণকারী অর্থাৎ সকলের সর্বকামনার পূরণকর্তা) অগ্নি! আপনি ঈশ্বর, যজ্ঞের সকল ফল সম্পাদিত করে যজমানের সাথে যুক্ত করুন (অর্থাৎ যজমান যেন যজ্ঞের সকল ফল লাভ করেন), আপনি পৃথিবীরূপা বেদীস্থানে সম্যক জ্বলিত হোন এবং মহানুভবতার সাথে আমাদের নিমিত্ত ধনসমূহ সম্যরূপে আহরণ পূর্বক প্রদান করুন (সম্যগাহৃত্য প্রযচ্ছ)। [প্রজাপতে স বেদ সোমাপূষণেমৌ দেবৌ- মন্ত্রটির পুরোনুবাক্য ও যাজ্যাগুলির মধ্যে এর মর্মার্থ ব্যাখ্যাত হয়েছে। ১ম কাণ্ডের ৮ম প্রপাঠকের ১৪শ অনুবাকে, ২য় কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ১২শ অনুবাক, ১ম কাণ্ডের ৮ম প্রপাঠকের ১২শ অনুবাক দ্রষ্টব্য] ॥১১।

[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বাদশে পিতৃযজ্ঞস্য হৰিষং হৌমুচ্যতে। অর্থাৎ–এই দ্বাদশ অনুবাকে পিতৃযজ্ঞে হবিঃ নির্বপণ সম্পর্কে বলা হয়েছে।]

.

দ্বাদশ অনুবাক

মন্ত্র- উশন্তা হবামহ উশন্তঃ সমিধীমহি। উশনুশত আ বহ পিতৃন্ হবিষে অত্তবে। ত্বং সোম প্রচিকিত মনীষ ত্বং রজিষ্ঠমনু নেষি পন্থাম। তব প্রণীতী পিতরো ন ইন্দ্রো দেবেষু রত্নমভজন্ত ধীরাঃ। ত্বয়া হি নঃ পিতরঃ সোম পূৰ্ব্বে কৰ্ম্মাণি চক্রঃ পবমান ধীরাঃ। বন্নবাতঃ পরিধীরপোর্ণ বীরেভিরমৈঘবা ভব নঃ। ত্বং সোম পিতৃভিঃ সংবিদানোহনু দ্যাপৃথিবী আ ততন্থ। তস্মৈ ত ইন্দো হবিষা বিধেম বয়ং স্যাম পতয়ো রয়ী। অগ্নিদাত্তাঃ পিতর এই গচ্ছত সদঃসদঃ সদত সুপ্রণীতয়ঃ।। অত্তা হীংষি প্ৰয়তানি বৰ্হিৰ্য্যথা রয়িং সৰ্ববীরং দধাতন। বহিষদঃ পিতর উত্যৰ্বাগিমা বো হব্যা চকৃমা জুষধ্ব। ত আ গতাবসা শম্ভমেনাথাশ্মভ্যাম্ শং যোররপো দখাত। আহহং পিতৃৎ সুবিদত্ৰাং অবিৎসি নপাতং চ বিক্রমণং চ বিষ্ণোঃ। বহিষদো যে স্বধয়া সুতস্য ভজন্ত পিত্বস্ত ইহাহগমিষ্ঠাঃ। উপহৃতাঃ পিতরঃ সোম্যাসো বহিষ্যেষু নিধিষু প্রিয়ে। ত আ গমন্তু ও ইহ বধি ব্রুবন্তু তে অবম্মান। উদীরতামবর উৎপরাস উন্মধ্যমাঃ পিতরঃ সোম্যাসঃ। অসুম য ঈয়ুরবৃকা ঋতজ্ঞান্তে নোহবস্তু পিতরো হবে। ইদং পিতৃভভ্যা নমো অদ্য যে পুর্বাসো য উপরাস ঈয়ুঃ। যে পার্থিবে রজস্যা নিষত্তা যে বা নূনং সুবৃজনাসু বিক্ষু। অধা যথা নঃ পিতরঃ পরাসঃ প্রত্নসো অগ্ন ঋতমাশুষাণাঃ। শুচীদয়ন্দীধিতিমুকথশাসঃ ক্ষামা ভিন্তো অরুণীরপ ব্রন। যদয়ে কব্যবাহন পিতৃ য্যতাবৃধঃ। প্র চ হব্যানি বক্ষ্যসি দেবেভ্যশ্চ পিতৃভ্য আ। ত্বমগ্ন ঈড়িত জাতবেদোহবাচ্চব্যানি সুরভীণি কৃত্বা। প্রাদাঃ পিতৃভ্যঃ স্বধয়া তে অক্ষন্নদ্ধি ত্বং দেব প্রযতা হবীংষি। মাতলী কব্যৈর্যমমা অঙ্গিবোভিবৃহস্পতিঋকৃভিৰ্ব্বাবৃধানঃ। যাংশ্চ দেবা বাবৃধুর্যে চ দেবাৎ স্বাহাহন্যে স্বধয়াহন্যো মদন্তি। ইমং যম প্রস্তরমা হি সীদাঙ্গিরোভিঃ পিতৃভিঃ সংবিদানঃ। আ বা মন্ত্রাঃ কবিশস্তা বহনো রাজন হবিষা মাদয়স্ব। অঙ্গিরোভিরা গহি যজ্ঞিয়েভিম বৈরূপৈরিহ মাদয়স্ব। বিবস্বত্তম হুবে যঃ পিতা তেহস্মিন যজ্ঞে বহিষ্যা নিষদ। অঙ্গিরসো নঃ পিতরো নবগ্ধা অথৰ্ব্বাণো ভৃগবঃ সোম্যাসঃ তেষাৎ বয়ং সুমতৌ যজ্ঞিয়ানামপি ভদ্রে সৌমনসে স্যাম ॥১২৷৷

মর্মার্থ- হে অগ্নিদেব! আমরা পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কামনা করে (কাময়মান হয়ে) আপনাকে আহ্বান করছি এবং সমিধ ইত্যাদি দ্বারা প্রজ্বলিত করছি। আপনিও হবিঃ-ভক্ষণের নিমিত্ত কাময়মান হয়ে যজমানের পিতৃগণের আহ্বান করুন। হে সোমদেব! আপনি আপন বুদ্ধির (মনীষার) উৎকর্ষের দ্বারা সব কিছু জ্ঞাত হয়ে থাকেন। এরই সহায়তায় আপনি প্রতিদায়ক অন্নজল লাভের অকথিত পথ প্রাপ্ত করিয়ে দিন। হে ইন্দু (সোমদেব)। আপনার পরিচর্যায় (পরিচরণেন) আমাদের পিতৃবর্গ দেবতাগণের মধ্যে স্থিত হয়ে ধীর হয়ে রমনীয় (রত্নং) হবিঃ-র সেবা করেছেন (ভজন্ত)। হে পবমান (শোধক) সোম! আপনার অনুগৃহীত হয়ে আমাদের পিতৃগণ তাদের পূর্বকৃত কর্মসমূহ এবং জন্মাবলি স্মরণ পূর্বক ধীর হয়ে অবস্থান করছেন (ধীরাস্থিন্তি)। আপনি বায়ুর নিমিত্ত অনপেক্ষ্য হয়ে অর্থাৎ অপেক্ষা না করে আমাদের প্রজ্বলিত হবিঃ ভক্ষণ পূর্বক আপনার যুদ্ধ কুশলতার দ্বারা যজ্ঞীয় পরিধির ন্যায় সর্বতো অবস্থিত প্রতিবন্ধকসমূহ নিরাকৃত করুন। আপনি আমাদের (প্রদানের) নিমিত্ত ধনবান্ হোন। হে সোমদেব! আপনি আমাদের পিতৃগণের দ্বারা জ্ঞাত হয়ে (সংবিদং প্রাপ্তোহনুক্রমে) দ্যাবাপৃথিবীতে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন। হে ইন্দু (সোমদেব)! সেই রকমে (অর্থাৎ সেই কারণে) আমরা আপনাকে হবিঃ দ্বারা পরিচর‍্যা করছি। আপনার প্রসাদে (প্রসন্নতায়) আমরা ধনের পতি হবো। হে অগ্নিম্বাত্তা (পিতৃলোকবাসী পিতৃগণ! আমাদের কৃত পরিচর‍্যা লাভ পূর্বক আপনারা এই যজ্ঞকর্মে আগমন করুন এবং আপন আপন স্থান প্রাপ্ত হোন। এই যজ্ঞে প্রকৃষ্ট যত্নের সাথে সম্পাদিত হবিঃ ভক্ষণ করুন। অনন্তর বৈদিক কর্মে কুশল পুত্রকে ধনদান সম্পাদিত করুন। হে বহিষদ (পিতৃলোকবাসী) পিতৃগণ! অর্বাচীন (অধম) আমাদের রক্ষা করা আপনাদের কর্তব্য। আপনাদের উদ্দেশে প্রদত্ত (যুম্মদর্থমিমা) এই হবিঃ সেবন করুন। (অর্থাৎ হবিঃ সেবন পূর্বক আমাদের রক্ষণের দ্বারা সুখ প্রদানের নিমিত্ত আগমন করুন)। অতঃপর আমাদের প্রথমাবধি সুখ প্রদান (অর্থাৎ দুঃখবিযুক্ত) করুন এবং আমাদের পাপ-রহিত করুন। আমি যজমান, আমার ভক্তির দ্বারা সুষ্ঠুভাবে জ্ঞাত হয়ে আমার পিতৃগণকে আমি লাভ করেছি এবং সর্বব্যাপী যজ্ঞের অবিনাশী (বিনাশাভাবং) প্রবৃত্তিকে বিশেষভাবে লাড় করেছি। যে বহিষদ পিতৃগণ এই যজ্ঞে আগমন করেছেন, তারা আদরপূর্বক প্রদত্ত সোমসম হবিঃ-র স্বাদ গ্রহণ করে প্রীতি লাভ করুন। আমাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ সোম্য (সোমপ্রিয়) পিতৃগণ যাগযোগ্য তৃপ্তিকর নিধির ন্যায় এই হবিঃ-র নিমিত্ত আমাদের দ্বারা আহুত হয়ে এই যজ্ঞকর্মে আগত হোন; এবং আগত হয়ে এই যজ্ঞে প্রযুক্ত আমাদের স্তুতি শ্রবণ করুন; এবং তা শ্রবণ করে এই যজমান সাধু ইত্যাদি আদরের সাথে বলুন; এবং বলে আমাদের পালন বা রক্ষা করুন (অব)। উত্তম, মধ্যম ও অধম-পিতৃপুরুষগণ এই তিন রকম (ত্রিবিধাঃ)। যারা যথানিয়মে শ্ৰেীত-কর্মের (বেসিদ্ধ কর্মের অর্থাৎ শ্রুতিসম্মত কর্মের অনুষ্ঠান পূর্বক পিতৃলোক প্রাপ্ত হয়েছেন, তারা উত্তম; যাঁরা স্মার্ত-কর্মের (অর্থাৎ মনু, অত্রি ইত্যাদি প্রণীত স্মৃতিশাস্ত্র বা ধর্মসংহিতা-অনুসারী কর্মের) সাধন পূর্বক পিতৃলোকে গমন করেছেন, তারা মধ্যম। এবং যাঁরা কোনরকম সংস্কার-রহিত, তারা অধম। তারা সকলেই (উৎকৃষ্ট-নিকৃষ্ট নির্বিশেষে) আমাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হোন। যে পিতৃগণ বৃকের ন্যায় (অরণ্যচর শ্বাপদের মতো) আমাদের হিংসা করেন না, যারা আমাদের অনুষ্ঠিত যজ্ঞ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে আমাদের প্রাণকে রক্ষা করতে (রক্ষিতুং প্রাপ্তস্তে) আগমন করেছেন, তারা আমাদের আহ্বান মতো আমাদের রক্ষা করুন। যাঁরা যজমানের পূর্বে জাত হয়েছেন (যেমন, জ্যেষ্ঠভ্রাতা পিতা পিতামহ ইত্যাদি) এবং পিতৃলোক প্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে যাঁরা এই পার্থিব রজোগুণাত্মক কর্মে আনীত হবিঃ স্বীকার করতে (অর্থাৎ গ্রহণ করতে) আগমন পূর্বক এই স্থলে উপবিষ্ট হয়েছেন, এবং অপর যে সকল বন্ধুবৰ্গরূপ পিতৃলোকপ্রাপ্ত জন তাদের ধনসমৃদ্ধ শ্রাদ্ধ ইত্যাদি কর্মপরায়ণ সন্ততিগণের এই যজ্ঞকর্মে আগমনপূর্বক উপবিষ্ট হয়েছেন, তাঁদের সকলের উদ্দেশে অদ্য এই আহুতি প্রদান পূর্বক নমস্কার করছি। হে অগ্নিদেব! অতীতকালে আমাদের পিতৃগণ যজ্ঞানুষ্ঠান পূর্বক যেরকম শুদ্ধ লোক প্রাপ্ত হয়েছেন, আমরাও সেই রকমভাবে দীপ্যমান পিতৃরূপ দেবতার উদ্দেশে উথ-শস্ত্র (সাম মন্ত্রবিশেষ) পাঠ করে সেইরকমই উচ্চস্থান প্রাপ্ত হবে। সেই পিতৃগণ কিরূপ? না,তারা আমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্ট পিতা পিতামহ এবং তাদের অপেক্ষাও পুরাতন বা পূর্বভাবী। সেই পূর্বতম পিতৃপুরুষগণ এই হবিঃ-র দ্বারা ক্ষুধার উপদ্রব নিবৃত্ত করে দেবত্ব লাভ পূর্বক আমাদের ফল-প্রতিবন্ধক পাপ অপাকৃত (অপসারিত) করুন। হে কব্যবাহন (মৃত পিতৃলোককে দেয় অন্ন ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য বহনকারী) অগ্নিদেব! যে কারণে আপনি যজ্ঞবর্ধক পিতৃগণের যাগ করেন, সেই কারণে দেবগণের উদ্দেশে (হব্য) এবং পিতৃগণের উদ্দেশে (কব্য)-এই শ্রেষ্ঠ হবিঃ পুনঃ পুনঃ বহন করুন। হে জাতবেদা (প্রাণিমাত্রেরই জঠরে অবস্থানকারী অথবা সর্ব জগৎকে বিদিত) অগ্নিদেব! আপনি যজমানের দ্বারা স্তুত হয়ে তাদের প্রদত্ত হবি-সমূহকে সুগন্ধযুক্ত করে বহন করুন এবং তা পিতৃগণকে প্রদান করুন। সেই পিতৃগণ স্বধাকারের (অর্থাৎ পিতৃলোকের উদ্দেশে জলপিণ্ড ইত্যাদি প্রদানের মন্ত্রের) দ্বারা প্রদত্ত হব্য ভক্ষণ করুন। হে দেব (অগ্নি)! আপনিও প্রযত্নে সম্পাদিত হবিঃ ভক্ষণ করুন। মাতলীর (অর্থাৎ ইন্দ্রের রথের সারথির) সাথে ইন্দ্রও কব্যভাগী পিতৃগণের সাথে বর্ধমান হন। যমও অঙ্গিরস পিতৃবিশেষের সাথে বর্ধমান হন, এবং বৃহস্পতি ঋক্‌-প্রতিপাদ্য (অর্থাৎ ঋক্‌-মন্ত্রের দ্বারা বোধ্য) পিতৃবিশেষের সাথে বর্ধমান হন। যে কব্যভাগী পিতৃগণ ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণের বর্ধন করেন, তাঁদের মধ্যে ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ স্বাহাকারের (অর্থাৎ দেবতার উদ্দেশে হবিঃ-দানের মন্ত্রের) দ্বারা তৃপ্ত হন; অন্য পিতৃগণ স্বাধাকারের দ্বারা তৃপ্ত হন। হে যম! অঙ্গিরস নামক পিতৃগণের সাথে ঐক্যমত প্রাপ্ত হয়ে এই প্রস্তীর্ণ যজ্ঞবিশেষে আগমন পূর্বক উপবেশন করুন। যখন উপবেশন করবেন তখন বিদ্বান ঋত্বিকগণের প্রযুক্ত মন্ত্রসমূহ আপনাদের আহ্বান করুক। হে রাজন! এই হবির দ্বারা তুষ্ট হয়ে যজমানের হর্ষ সাধিত করুন (হয়স্ব)। হে যম! বিবিধ রূপযুক্ত যজ্ঞের যোগ অঙ্গিরসগণের সাথে আগত হয়ে যজমানের হর্ষ সাধিত করুন। এই যজ্ঞে আপনার পিতা বিবস্বানকে (সূর্যকে) আহ্বান করছি। তিনিও এই যজ্ঞে আগমনপূর্বক উপবেশন করে যজমানের হর্ষ সাধিত করুন। অঙ্গিরা নামক, অথর্ব নামধারী এবং ভৃগু নামে অভিহিত আমাদের পিতৃপুরুষগণ অভিনব অর্থাৎ নূতনের মতো আমাদের প্রীতিজন হোন। তারা সোম্যা অর্থাৎ সোম প্রাপ্তির যোগ্য। তারা যজ্ঞিয়, অর্থাৎ যজ্ঞকর্মের যোগ্য; আমরা তাদের সুমতির দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবো; আমরা তাদের প্রসন্নতায় (সৌমনস্যকারণে) যজ্ঞের কল্যাণপ্রদ ফলে সর্বদা স্থিত হয়ে থাকব ॥১২।

— দ্বিতীয় কাণ্ড সমাপ্ত —

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *