২.৬৮ পমপম একটা রেডিও রেখে গেছে

পমপম একটা রেডিও রেখে গেছে। রেডিওটি দেখতে ছোট কিন্তু শক্তিশালী, পমপমের বাবা একবার হংকং থেকে কিনে এনেছিলেন। মানিকদার বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই তাই রেডিওটি চালাতে হয় ব্যাটারিতে। এইসব ব্যাটারি এখনও ভারতবর্ষে তৈরি হয় না, কিন্তু শিলিগুড়ির একটা বাজারে ভালোভাবে খুঁজলে পাওয়া যায়। এই বাজারটিরও স্থানীয় ডাকনাম হংকং মার্কেট।

এই রেডিওতে বি বি সি এবং পিকিং ধরা যায়, একটু রাতের দিকে স্পষ্ট শোনা যায় পিকিং-এর ইংরিজি অনুষ্ঠান। অতীন, মানিকদা আর তপন গভীর আগ্রহ নিয়ে সেই খবর ও ভাষ্য শোনে। প্রথম যেদিন, ২৮শে জুন, পিকিং বেতারে উত্তর বাংলার কৃষক বিদ্রোহের সংবাদ শোনা গেল, সেদিন কী বিপুল উত্তেজনা! বিপ্লবের ডাক এসেছে! সেদিনকার সেই বাতায় একটা লাইন মুখস্থ করে ফেলেছে অতীন, ‘দা ফ্রন্ট প অফ দা রেভোলিউশানারি আর্মড স্ট্রাগল লড বাই ইন্ডিয়ান পিল আন্ডার দা গাইডেন্স অফ মাও সে-তুং’স টিচিংস।

তারপর থেকে প্রায় প্রতিরাত্রেই খাওয়াদাওয়ার পর ঘণ্টা দু’এক ধরে পিকিং রেডিও শোনার চেষ্টা করে ওরা। লেনিনের পর মার্ক্সবাদী চিন্তাধারার নেতৃত্ব এখন যাঁর হাতে, সেই চেয়ারম্যান মাও সে-তুং-এর সরাসরি নির্দেশে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে ভারতের বিপ্লব স্ফুলিঙ্গ, এটা একটা বিরাট ঐতিহাসিক ঘটনা। শুনলেই রোমাঞ্চ হয়।

পিকিং বেতারের নারী-ভাষ্যকারটির কণ্ঠস্বর অতি ধারালো, ইংরিজি বাক্যগুলি বলে ভেঙে ভেঙে, বুঝতে কোনো অসুবিধে হয় না। একদিন সেই মেয়েটি জানালো, উত্তরবঙ্গের নকশালবাড়ি অঞ্চলের তিনটি গ্রামের পুলিস স্টেশন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, একজন পুলিস অফিসার ও দশজন পুলিস নিহত। পুলিসরা এখন ভয়ে অনেক গ্রামে ঢুকতে সাহস করে না।

তপন জিজ্ঞেস করলো, মানিকদা, একজন ইনস্পেক্টর ওয়াংদি তো শুধু মারা গেছে, দশজন পুলিসের মরার খবর তো এখানে শোনা যায়নি?

মানিকদা বললেন, ওরা ঠিকঠাক খবর রাখে। এখানকার গভর্নমেন্ট অনেক কিছু চেপে যায়। দেখছিস না দিল্লিরও টনক নড়ে গেছে, তা কি এমনি এমনি। হরেকৃষ্ণ কোঙার বারবার শিলিগুড়িতে ছুটে আসছেন কেন? এই নিয়েই তো অজয় মুখার্জির সঙ্গে জ্যোতিবাবুর ঝগড়া লেগে গেছে!

অতীন বললো, মানিকদা, হরেকৃষ্ণ কোঙারের মতন মানুষও বুরোক্রেসি মানছেন? উনি আইন-আদালত মেনে ভূমিহীন চাষীদের জমি দিতে চান?

মানিকদা বললেন, সংবিধানের শপথ নিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন যে। তাতে মোল্লার দৌড় ঐ মসজিদ অবধি!

অতীন বললো, আমি তো মনে করি, আগে জোতদার-জমিদারদের কাছ থেকে সব জমির দলিল কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা উচিত। নইলে এদেশের কিচ্ছু হবে না।

মানিকদা মৃদু মৃদু হেসে মাথা নাড়তে থাকেন।

অতীন কলেজে ক্লাস নেওয়া শুরু করে দিয়েছে অনেকদিন। তার ভয় ছিল, সে ঠিক মতন পড়াতে পারবে না, মফস্বল কলেজের ধেড়ে ধেড়ে ছেলেদের সামলাতে হিমসিম খেয়ে যাবে। কিন্তু সেদিক থেকে তার কিছু অসুবিধা হলো না। ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেদের ইনঅরগানিক কেমিস্ত্রি পড়ানো এমন কিছুই না, প্রায় গল্প বলে যাওয়ার মতন। এমনিতেই অর্ধেক ছেলে আসে

ক্লাসে, কলেজও বন্ধ থাকে প্রায়ই। ক্লাসে যারা আসে, তাদের মধ্যে মাত্র তিনচারজনের পড়াশুনোয় কিছুটা মন আছে, অতীনও ঠিক করেই রেখেছে যে শুধুমাত্র পড়াশুনোয় যারা খুব আগ্রহী তাদেরই সে সাহায্য করবে। বাকি ছাত্ররা যার যা খুশি করুক। কোনোরকমে একটা ডিগ্রি নিয়েই বা তাদের কী এমন হাতি-ঘোড়া হবে?

ক্লাস রুমে রাজনীতির আলোচনা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন মানিকদা। কলেজের গভর্নিং বডিগুলো কংগ্রেসের ঘাঁটি। অতীন অস্থায়ী নিয়াগপত্র পেয়েছে, সামান্য কারণে তার চাকরি যেতে পারে। চাকরি চলে গেলে তার আর উত্তরবঙ্গে থাকা হবে না।

ক্লাস রুমে অতীন সে রকম কিছু না বললেও সে সহকর্মীদের কাছে নিজেকে চেপে রাখতে পারে না। প্রফেসার্স রুমে এখন কোনো পড়াশুনোর কথা হয় না, সব সময় রাজনীতির আলোচনা। যারা বাড়ির চাকরদের সঙ্গে, রিকশাওয়ালা, বাজারের ছোট দোকানদার, গ্রামের চাষা, কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে তুই-তুকারি ছাড়া কথা বলে না, তাদের মুখেও শ্রমিক কৃষক শ্রেণী সম্পর্কে বড় বড় কথা শুনলে অতীনের পিত্তি জ্বলে যায়। তাছাড়া, বেশীর ভাগ এইসব তথাকথিত শিক্ষিত অধ্যাপকদের পৃথিবীর ইতিহাস ও সমাজব্যবস্থার বিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান যে এত কম, অতীনের তা ধারণায় ছিল না। কিছুদিন আগেও সে ছিল ছাত্র, অধ্যাপক শ্রেণীকে অনেক দূরের মানুষ বলে মনে হতো, আরও মনে হতো, এরা সবাই অন্য চাকরি না নিয়ে শিক্ষা জগতের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে অনেক আত্মত্যাগ করছেন। এখন অতীন অনেক বয়স্ক অধ্যাপকদের সঙ্গে এক ঘরে বসে আড্ডা দেয় এবং টের পায় যে এরা অধিকাংশই অতি স্যাঁতসেঁতে ধরনের সাধারণ মানুষ। এদের এত কাছাকাছি না এলেই ভালো হতো।

সখের বামপন্থীদের মতন অতীন ধীর, স্থির, যুক্তিবাদী নয়। অন্যদের মুখে প্রতিক্রিয়াশীল কথাবার্তা শুনেও সে সূক্ষ্ম ব্যঙ্গের হাসি হাসতে পারে না। সে রেগে ওঠে, সে টেবিল চাপড়ায়, কারুর মুখের ওপর বলে দেয়, আপনি মশাই মঙ্গলকাব্য পড়েছেন বলে লাও চাও-এর লেখা পড়বেন না, এমনকি কেউ মাথার দিব্যি দিয়েছে আপনাকে।

সহকর্মীদের মধ্যে অতীনের গোপন ডাকনাম হয়ে গেছে রাগী মজুমদার।

গরমের ছুটিতে অতীনের কলকাতায় যাওয়া হলো না, সেই সময়েই তো আসল ঘটনাগুলো ঘটতে লাগলো উত্তরবঙ্গে। অতীন আশা করেছিল, ভূমি দখলের লড়াইগুলিতে গোপনে গোপনে তারাও অংশ নেবে। কিন্তু মানিকদা বলেছেন, তার কোনো প্রয়োজন নেই। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যুবকদের ঐ সব জায়গায় দেখা গেলে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠবেই। এখনও তার সময় আসেনি। অতীন আর কৌশিক অবশ্য মানিকদাকে না জানিয়ে তবু দুটো জায়গায় জমি অধিকার দেখতে গিয়েছিল। দু জায়গাতেই প্রতিরোধ হয়েছে অতি সামান্য।

মানিকদার আখড়ায় এখনও অতীন আর তপন নিয়ে তিনজনই স্থায়ী বাসিন্দা। পমপম আর কৌশিক আসে মাঝে মাঝে। পুরোনো স্টাডি সার্কেলের আরও কেউ কেউ আসে, কিন্তু বেশিদিন থাকে না।

অতীন তার মন থেকে দ্বিধা ঝেড়ে ফেলেছে। বিপ্লব শব্দটা শুনলেই তার রক্ত চনমন করে ওঠে। একটা সত্যিকারের বিপ্লবে অংশ নেবার জন্য তার আর তর সইছে না। একটা অটুট যুক্তিও তৈরি হয়ে গেছে মনের মধ্যে। তার বাবা ও তাদের পরিবারকে সে অনেক কষ্ট সহ্য করতে দেখেছে। সে দেখেছে অনেক মূল্যবোধের অবক্ষয়। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু এখনো এদেশে মাথা গোঁজবার জায়গা পায়নি কিংবা পায়নি মানুষের সম্মান। তারা যেন মানুষের চেয়ে হীনজাতীয় কিছু। এজন্য তার বাবা এবং আরও অনেকে শুধু দেশ বিভাগকেই দায়ী করেন। আসলে এটাই চরম ভুল! ভারতের স্বাধীনতাই তো নিছক সেন্টিমেন্টাল ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না। তাদের পরিবারের মতন আরও অনেক পরিবারই দিন দিন নেমে যাচ্ছে নীচে, পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুরা যে-অবস্থায় আছে, এদেশের কোটি কোটি ভূমিহীন খেত মজুরদের অবস্থা তাদের থেকে কোনো অংশে ভালো নয়। আসলে সমাজ ব্যবস্থারই কোনো পরিবর্তন হলো না। ঘুচলো না শ্রেণী বিভেদ, আর সমবণ্টনের কথা তো শাসক শ্রেণী উচ্চারণই করে না। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ঘুচলো না ধর্মীয় বিভেদ। জাতীয়তাবাদের মিষ্টি মিষ্টি বুলি দিয়ে ক্রমাগত ঢাকা দেবার চেষ্টা হচ্ছে দেশ জোড়া দারিদ্র্যের দগদগে ক্ষত। এতদিন ব্রিটিশরা শুষেছে, এখন শুষছে মহাজন, জোতদার, ব্যবসায়ী ও আমলাতন্ত্র। সশস্ত্র আঘাত না দিলে, আগুন না জ্বাললে এই ব্যবস্থা বদলাবে না। সেই বদলের প্রক্রিয়ায়, সেই বিপ্লবে অতীন যদি অংশ নিতে পারে, তাহলে সে তো তার বাবা-মায়ের আক্ষেপই দূর করবে। সে একদিন তার বাবার সামনে গিয়ে বলতে পারবে, দ্যাখো, তোমরা যা পারোনি, আমরা তাই করেছি, আর কোনো বঞ্চিত মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হবে না এদেশের বাতাস।

পুজোর ছুটিতে অলি দার্জিলিং বেড়াতে আসবার কথা লিখেছিল। অতীন তাকে নিষেধ করেছে। অলি বলে রেখেছিল, অতীন উত্তরবঙ্গে চাকরি নিলে সে এই দিকটা ভালো করে বেড়াবে। একা আসবে না অবশ্য, দু একজন বান্ধবীকে আনবে, ছোট বোন বুলিকেও আনতে হবে, তাছাড়া অলির এক মামাতো বোন সঙ্ঘমিত্রাও আসতে চায়। কিন্তু এখন অতীনের পক্ষে অলিদের গাইড হয়ে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করা একেবারেই অসম্ভব। তাছাড়া, এই কি বেড়াবার সময়? যে-কোনোদিন বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অলির তিন চারখানা চিঠির উত্তরে অতীন একটা চিঠি লেখে, তাও বেশ সংক্ষিপ্ত। অলি ঠিক কোনো অনুযোগ করে না, তবু অতীনের মনে অপরাধ বোধ জমে। সে কেন ভালো করে চিঠি লিখতে পারে না? অলি ইংরিজি সাহিত্যের ছাত্রী, সে বাংলাও ভালো জানে, সে সুদীর্ঘ, বর্ণনামূলক চিঠি লেখে। অতীন রবীন্দ্রনাথের মতন সাহিত্য-সাহিত্য চিঠি লিখবে তা নিশ্চয়ই কেউ আশা করে না, কিন্তু সে কেন নিজের মনের কথাও লিখতে পারে না স্পষ্ট করে? সে অলিকে ভালোবাসে এতে তো কোনো ভুল নেই, দূরে এলে ভালোবাসার ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বোঝা যায়, প্রতিদিন অলির কথা তার মনে পড়ে অনেকবার, সে কথা আর কারুকে বলা যায় না, কিন্তু অলিকেও চিঠিতে লেখা যায় না? সে চিঠি লিখতে বসলেই মানিকদা, কৌশিক, পমপমের মুখগুলো মনে পড়ে, ওরা তো কারুর সঙ্গে প্রেম করে না, প্রেমের চিঠি লেখে না, তবে অতীন কি স্বার্থপর? কৌশিক, মানিকদা, পমপম জীবনে অন্য কারুকে চুমু খেয়েছে একথা ভাবাই যায় না। ওরা যদি জানতে পারে…তাহলে কি অতীনকে নিজেদের দল থেকে বাদ দিয়ে দেবে? ঠাট্টা করবে?

তবু একদিন অলির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সে খুব আশ্চর্য ঘটনা। অলি চিঠিতে কিছুই লেখেনি, অতীনেরও সেদিন ঐ সময় হিল ভিউ হোটেলের সামনে যাবার কথা নয়। কয়েকদিন আগেই কৌশিক চিঠিতে জানিয়েছিল যে ধর্মতলা স্ট্রিটে “দেশহিতৈষী” অফিসে পার্টির একদল ক্যাডার জোর করে ঢুকে পড়ে সুশীতল রায়চৌধুরীকে তাড়িয়ে দিয়ে পত্রিকাটার দখল নিয়েছে! তারপরেই নকশালবাড়ি আন্দোলনের সমর্থকরা “দেশব্রতী” ও “লিবারেশান” নামে দুটি পত্রিকা বার করার সিদ্ধান্ত নেয়, দু’চারদিনের মধ্যেই বেরুবে। হিল ভিউ হোটেলের তলায় মনোজবাবুর কাছে পাওয়া যাবে সেই পত্রিকা। অতীন গিয়েছিল সেই খোঁজ নিতে।

সেই পত্রিকার কোনো কপি আসেনি, অতীন দেখতে পেল অলি আর তার তিনজন বান্ধবীকে। তাদের মধ্যে একজন বর্ষা।

অতীন প্রথমেই ভাবলো, বইওয়ালা বিমানবিহারী খুব মডার্ন হয়েছে তো! কোনো পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছে? এমনকি ইনফরমার হিসেবে ছোট মেয়ে বুলিকেও পাঠায়নি?

অলি তখনও দেখতে পায়নি অতীনকে, সে পেছন ফিরে কথা বলছে একজন ড্রাইভার জাতীয় লোকের সঙ্গে। বর্ষার সঙ্গেই তার প্রথম চোখাচোখি হলো, বর্ষার মুখে একটা চাপা বিদ্রূপের হাসি। অতীন বেশ খানিকটা দ্বিধার মধ্যে পড়লো। এমনভাবে, কোনো খবর না দিয়ে, এক দঙ্গল মেয়ে নিয়ে এসে পড়লো অলি! এখন ওদের থাকার ব্যবস্থা করা যাবে কোথায়? মানিকদার ওখানে ঘর আছে বটে, কিন্তু সেখানে ওদের নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে? মানিকদা একদিন বলেছিলেন, খাঁটি রাজনৈতিক কর্মীদের শুধু নৈতিক চরিত্র বিশুদ্ধ রাখাই বড় কথা নয়, তাদের সব সময় সজাগ থাকা দরকার যাতে কেউ তাদের লঘুচিত্ত, বিলাসী বলে মনে না করে। সত্যিকারের কর্মীদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে একেবারেই খুঁতখুঁতে হলে চলবে না, মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করার ব্যাপারে সব সময় সংযত থাকা দরকার। পমপমের কথা আলাদা, সে এলে একসঙ্গেই থাকে, কিন্তু স্টাড়ি সার্কেলের অন্য মেয়েরা এসে উপস্থিত হলে মানিকদা তাঁর মামাবাড়িতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

অলিকে চেনেন মানিকদা, অলি স্বেচ্ছায় স্টাডি সার্কল ছেড়ে দিয়েছিল। তার সঙ্গে রয়েছে। আবার উগ্র সাজপোশাক করা দুটি মেয়ে আর বর্ষা, ঐ বর্ষা নামের মেয়েটা মানিকাদার মুখে মুখে কী কথা বলে বসবে তার ঠিক নেই। এদের মানিকদার আস্তানায় নিয়ে যাবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

ওদের জন্য একটা হোটেল ঠিক করে দিতে হবে! অতীন বেশ বিরক্ত বোধ করলো অলির ওপর।

বর্ষা অলির কাঁধ ছুঁয়ে ইঙ্গিত করতেই অলি পেছন ফিরে অতীনকে দেখলো। তার সরল দুটি চোখে ফুটে উঠলো প্রকৃত বিস্ময়। সে লজ্জা লজ্জা ভাব করে হেসে জিজ্ঞেস করলো, বাল্লুদা, তুমি কী করে খবর পেলে? মুন্নি বুঝি চিঠি লিখে দিয়েছে? তুমি আমাদের জন্য কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছো এখানে? ট্রেন একটু লেট ছিল…আলাপ করিয়ে দিই, এই আমার মামাতো বোন সঙ্ঘমিত্রা, আর এ হচ্ছে অনীতা, আমাদের সঙ্গে পড়তে এক সময়।

অতীন বললো, চল আগে তোদের জন্য হোটেল ঠিক করি, এখানে এই সময়টায় হোটেল পাওয়া মুশকিল।

অলি বললো, আমরা এখানে থাকবো কেন? আমরা তো দার্জিলিং যাচ্ছি।

অতীন ভুরু কুঁচকে বললো, দার্জিলিং যাবি? এতজনে মিলে সেখানে থাকবি কোথায়? আগে থেকে বুক না করলে কি দার্জিলিং-এ হোটেল পাওয়া যায়?

–এই সঙ্ঘমিত্রাদের একটা বাড়ি আছে ম্যালের কাছেই, সেখানে থাকবো, সব ব্যবস্থা করা আছে! তাছাড়া দার্জিলিং-এর এস পি বাবার বন্ধু…

অতীন ধরেই নিয়েছিল যে অলিদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা ও দেখাশুনো করার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। কিন্তু অলিরা শিলিগুড়িতে থাকতে আসেনি, দার্জিলিং ভ্রমণের ব্যবস্থা তারা আগেই ঠিক করে নিয়েছে। কোনো অচেনা জায়গায় থাকতে গেলে অতীন হোটেলের কথাই ভাবে, সে উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান, তার খেয়াল থাকে না যে অলিরা অনেকটা উচ্চস্তরের মানুষ, তার মামা কিংবা কাকাদের বাড়ি থাকে দার্জিলিং কিংবা পুরীতে, হাইকোর্টের জজ ব্যারিস্টাররা তাদের মেলোমশাই-পিসেমশাই হয়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিসের এস পি-দের তারা অমুকদা, তমুকদা বলে ডাকে। প্রথমে অলিদের থাকার ব্যবস্থা তাকে করতে হবে ভেবে অতীন অস্বস্তি বোধ করছিল, এখন ওদের জন্য কোনো ব্যবস্থাই তাকে করতে হবে না। জেনে সে একটু অপমানিত বোধ করলে।

সঙ্ঘমিত্রা নামের মেয়েটি বললো, আপনি যাবেন আমাদের সঙ্গে? চলুন না, তিন-চারটে ঘর আছে, কোনো অসুবিধে হবে না।

অলি ছেলেমানুষের মতন আবদারের সুরে বললো, চলো, বাবলুদা, চলো! দুটো তিনটে দিন কলেজ থেকে ছুটি নিতে পারবে না?

উত্তর বাংলায় চাকরি করতে এসেও এতদিনের মধ্যে অতীনের দার্জিলিং কালিম্পং দেখা হয়নি। নিছক ভ্রমণের জন্য হয়তো ওদিকে কখনো যাওয়াও হবে না। মানিকদা বলেছেন এখন শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির তরাই অঞ্চলেই সংগ্রামের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে।

অলি আর সঙ্ঘমিত্রার কথা শুনে অতীনের একবার লোভ হলো। চট করে দিন তিনেকের জন্য ঘুরে এলে কেমন হয়? কলেজে ছুটি নেওয়া কোনো সমস্যাই নয়।

পরমুহূর্তেই সে ভাবলো, এটা অসম্ভব! চারটি যুবতী মেয়ের সঙ্গে সে একা পুরুষ মানুষ হিসেবে পাহাড়ে বেড়াতে যাবে? যে-কেউ এটাকে বেলেল্লা মনে করবে না? মানিকদা শুনলে ছি ছি করবেন। এই যে সে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে এদের সঙ্গে কথা বলছে, এটাই কি শোভন হচ্ছে, তার ছাত্রেরা ছড়িয়ে আছে সব জায়গায়, কেউ না কেউ নিশ্চয়ই দেখছে, যদি কিছু বদনাম ছড়ায়?

অলির প্রতি তার অভিমান হলো! অলি একা আসতে পারতো না? অলির সঙ্গে তার কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি। সেই শুধু একবার কৃষ্ণনগর যাওয়ার পথে …

সে শুকনো গলায় বললো, আমি কী করে যাবো! আমার কয়েকটা জরুরী কাজ আছে। অলি তবু বললো, বাল্লুদা, প্লীজ চলো। খুব মজা হবে। অতীন বললো, আমার যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তোরা কি টয় ট্রেনে দার্জিলিং যাবি?

–না। ট্যাক্সিতে, ঠিক করা হয়ে গেছে।

তাহলে তো আর কিছুই বাকি নেই। অতীন কি ওদের অন্তত এককাপ করে চা খাওয়াবে? এতদিন পর অলির সঙ্গে দেখা, তার বুকের ভেতরটা এখনও উত্তেজনায় থরথর করছে, অথচ অলির সঙ্গে একটাও ব্যক্তিগত কথা বলা হলো না। বাকি তিনটি মেয়ের কাছ থেকে অলিকে আলাদা করে সরিয়ে নেওয়া যায় না। অলি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অতীনের মুখের দিকে। সে যেন কিছু শুনতে চাইছে।

কিন্তু আর কিছুই বলা হলো না। ট্যাক্সি ড্রাইভার তাড়া দিচ্ছে, ওরা উঠে পড়লো গাড়িতে। অতীন ওদের চা খাওয়াবার প্রস্তাবও দিল না। বর্ষা একটাও শব্দ উচ্চারণ করেনি, কিন্তু তার ঠোঁটে সেই চাপা হাসি, যেন সে বলতে চায়, অলির ওপরে অতীনের চেয়ে তার অধিকার বেশী।

গাড়িটা ছাড়ার আগের মুহূর্তে অলি জিজ্ঞেস করলো, ফেরার সময় তোমার সঙ্গে দেখা হবে?

অতীন খানিকটা যুক্তিহীনভাবে বললো, আমি সামনের সপ্তাহে কলকাতা ফিরছি, তোরা এই সময়ে কেন এলি? আমাকে অনেক কিছু কাজকর্ম গুছিয়ে নিতে হবে।

অলি বললো, তুমি যে ফিরছো, সেকথা তো আমায় জানাওনি। আমরা ভেবেছিলুম, তোমার আর কলকাতায় যেতে ইচ্ছেই করে না। তুমি কবে যাবে, আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে ফিরো। আমরা মঙ্গলবার বিকেলে এখানে চলে আসছি।

–আমায় রোববার ট্রেন ধরতে হবে।

–কেন, দুটো দিন অপেক্ষা করতে পারবে না? আমরা ট্রেনে একসঙ্গে যেতে পারি তাহলে

–মাকে চিঠি লিখে দিয়েছি সোমবার পৌঁছোবো, এখন আর বদলানো যাবে না।

ট্যাক্সিটা যানবাহনের স্রোতে মিলিয়ে যাবার পরেও অতীন সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো কয়েক মিনিট। মাকে সে ফেরার তারিখ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে, অলিকে কিছু লেখেনি। আজই সে অলিকে চিঠি পাঠাবে ঠিক করেছিল, একথাটা অলিকে বলা হলো না, বললেও অলি কি বিশ্বাস করতো? এই কয়েক মাসেই অলি যেন অনেকটা বদলে গেছে!

সাইকেল রিকশা না নিয়ে অতীন হাঁটতে লাগলো বাড়ির দিকে।

আজ অতীনের অফ ডে। কলেজ যাবার তাড়া নেই, আজ তার ওপর রান্নার ভার। কিন্তু বাড়ি পৌঁছে সে দেখলো, তপন অফিস যায়নি, রান্নাবান্না সে-ই সেরে রেখেছে এর মধ্যেই। মানিকদা মেঝেতে বড় একটা কাগজ মেলে মন দিয়ে ম্যাপ আঁকছেন। ইদানীং ম্যাপ আঁকার খুব ঝোঁক হয়েছে মানিকদার। একদিন তিনি খুব দ্রুতগতিতে, মাত্র কয়েকটা টানে অতীনের মুখের একটা স্কেচ করেছিলেন, তাতে বোঝা যায় মানিকদার বেশ ভালোই আঁকার হাত কিন্তু তিনি ঐ প্রসঙ্গ তুললেই উড়িয়ে দিতে চান।

আজ সকালের ঘটনায় অতীনের ঠিক মন খারাপ হয়নি কিন্তু মেজাজটা খিঁচড়ে গেছে। চারটে মেয়ে ঝলমলে পোশাক পরে দার্জিলিং বেড়াতে যাচ্ছে, এরকম অনেকেই যায়, কিন্তু তাদের মধ্যে অলি থাকবে কেন? অলিকে মানায় না। বর্ষাও পরেছে শাড়ির বদলে শালোয়ারকামিজ, যথারীতি সিগারেট টানছিল, ঐ মেয়েটাকে অতীন পছন্দ করে না জেনেও অলি কেন ওকে প্রশ্রয় দেয়? এরপর অলিকে একদিন স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে, তুমি বর্ষা আর আমার মধ্যে একজনকে বেছে নাও!

নিজের ঘরে গিয়ে সাদা দেওয়ালে পিঠ দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে রইলো অতীন। ছোটবেলায় তার রাগ হলেই দেয়ালের এক কোণে গিয়ে এইভাবে বসে থাকতো সে। একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে দেশলাই কাঠির বারুদটা ফস করে অনেকটা জ্বলে গিয়ে তার আঙুলে ছ্যাঁকা লাগলো। এক একদিন এরকমই হয়। কেন সে আজ ঐ সময়ে বাস স্টেশনে গেল, অলির সঙ্গে তার আজ দেখা না হলেই ভালো হতো! অতীন শিলিগুড়িতে রয়েছে, তবু তাকে কিছু না জানিয়েই অলি দার্জিলিং যাবার ব্যবস্থা করবে, এটা অন্যায় নয়?

মানিকদা একসময় অতীনকে ডেকে ম্যাপটা দেখাতে লাগলেন। একটা পিন টানতে টানতে বললেন, এই দ্যাখ, পশ্চিমে নেপাল, পুবে সিকিম আর ভুটান, আর দক্ষিণে হলো

পূর্ব-পাকিস্তান। এইটুকু এরিয়ার মধ্যে আমাদের কাজ। আর্মড স্ট্রাগল শুরু করার পক্ষে এরকম স্ট্র্যাটেজিক এরিয়া পাওয়াই একটা দারুণ ব্যাপার। নকশালবাড়ি আর নেপালের মাঝখানে এই যে নদীটা দেখছিস, এর নাম মেচি, শীতকালে প্রায় শুকিয়ে যায়, পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। এরপর যখন সরকার-পুলিসের সঙ্গে আমাদের সত্যিকারের কনফ্রনটেশান হবে, তখন আমাদের হাইড আউট হবে এই নদী পার হয়ে নেপালে।

তপন বললো, কিন্তু আন্দোলন তো থেমে গেল, মানিকদা। টাঙ্গি, লাঠি, শাবল নিয়ে যে বন্দুকধারী পুলিসের বিরুদ্ধে লড়া যায় না, তা তো প্রমাণ হয়ে গেল।

মানিকদা বললেন, না, কিছুই প্রমাণ হয়নি। আন্দোলন থামেনি, এটা হচ্ছে প্রথম রাউন্ড। এর থেকে কিছু কি শিক্ষা পাওয়া যায়নি? প্রধান শিক্ষাই হলো এই যে এই প্রথম দেখা গেল চাষীরা শুধু জমি কিংবা ফসলের জন্য লড়েনি, তারা লড়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য। সরকার কিংবা পুলিসের বিরুদ্ধে তারা তাদের নিজস্ব অস্ত্র নিয়ে লড়তে ভয় পায়নি। কোনো কোনো জায়গায় পুলিসের হাত থেকে রাইফেলও কেড়ে নেওয়া হয়েছে, কী হয়নি?

তপন দুবার মাথা নাড়লো। অতীন অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে, তবু সে যেন ঘাড় ধরে তার মনটাকে ফেরাতে চায়।

মানিকদা আর একটি ম্যাপ বার করে বললেন, এটা দ্যাখ, এটা হচ্ছে ফাঁসি দেওয়া থানা এরিয়ার ডিটেইল, তার মধ্যে এই জায়গাটার নাম চৌপুখুরিয়া।

অতীন জিজ্ঞেস করলো, এখানে কী হবে?

মানিকদা বললেন, আজ দুপুরে ঐ চৌপুখুরিয়ায় যাবো, যদি তোদের আপত্তি না থাকে। কিন্তু কেন যাচ্ছি, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা চলবে না।

তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে ওরা বেরিয়ে পড়লো। খানিকটা রাস্তা যাওয়া হলো বাসে, তারপর মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটা। সকালে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, তাই একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। দুদিকের মাঠে কোনো কোনো জমিতে ফসল ফলেছে, কোনো কোনো জমি ফাঁকা। এরই কিছু কিছু জমিতে কিষান সভার ঝাণ্ডা উড়েছিল, দু’এক মাস পুলিস এদিকে পা বাড়াতেই পারেনি কিন্তু এখন সেইসব ঝাণ্ডার আর কোনো চিহ্ন নেই। মাঝারি চাষী ও জোতদারেরা ফিরে পেয়েছে তাদের জমি-জায়গা।

একটা ক্ষেতের দিকে হাত দেখিয়ে মানিকদা বললেন, এই জমিটা ছিল বিগুল কিষানের। মনে আছে তার কথা?

অতীন আর তপনের কিছু মনে নেই। মানিকদা বললেন, বিগুল কিষান ছিল একজন বগাদার। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা যেদিন থেকে এলো, সেদিন থেকে হঠাৎ রটে গিয়েছিল যে এই অকংগ্রেসী সরকার এবার মাঝারি চাষী ও জোতদারদের জমির মালিকানা কেড়ে নিয়ে বগাদার আর ভূমিহীন শ্রমিকদের দিয়ে দেবে। তাই ‘জোতদারেরা, বগাদারদের হঠাতে শুরু করে দিল, জমি চাষ করা বন্ধ করে দিল। এই বিগুল কিষানও জমি থেকে বিতাড়িত হয়ে মামলা লড়তে গেল কোর্টে এবং আশ্চর্যের ব্যাপার জিতেও গেল। এতে আমাদের হরেকৃষ্ণ কোঙারদের মতন নেতাদের খুশি হওয়ার কথা। তাঁরা তো আইনের পথেই চাষীদের অধিকার দিতে চান। দ্যাখ কোঙারদাকে তো আমি অনেকদিন ধরে চিনি, মানুষটা সাচ্চা, গ্রামে-গঞ্জের চাষীদের অবস্থাও খুব ভালো বোঝেন, তবু তিনি যে কেন আইন কানুনকে এত ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে শুরু করলেন সেটাই বুঝি না।

তপন জিজ্ঞেস করলো, বিগুল কিষান জেতবার পর কী হলো?

লবডঙ্কা হলো। মামলায় জেতবার পরেও জমির মালিক তাকে জমিতে পা দিতে দিল, মেরে ধরে তাড়িয়ে দিল তাকে। এত ভেতরের দিকের গ্রামে কে আইনকানুন মানে? কে কোর্টের রায় গ্রাহ্য করে? যারা একটু অবস্থাপন্ন তারা পয়সা দিয়ে পুলিসকে হাত করে রাখে। মামলায় জিতেও বিগুল কিষান কিছুই পেল না। তখন সে গেল জঙ্গল সাঁওতালের কাছে। গত মে মাসে কিষাণ সভার একটি বড় দল এসে জবর দখল করে গেল এই জমি, এখানে ঝাণ্ডা পোঁতা হলো, জোতদারের গুণ্ডারা এদিকে ঘেঁষতে সাহস পেল না।

তারপর আবার তার জমি চলে গেল, এই তো?

–হ্যাঁ, আবার জোতদার আর পুলিস হাত মিলিয়ে তাকে হঠিয়েছে বটে, কিন্তু বিগুল একটা জিনিস বুঝেছে। তার মতন গরিব লোকদের আদালতের দ্বারস্থ হয়ে কোনো লাভ নেই। যদি তাকে অধিকার ফিরে পেতে হয়, তাহলে সঙ্ঘবদ্ধ চাষীদের সঙ্গে থেকেই সে তা পাবে। এরপর, তাদের আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।

–আচ্ছা মানিকদা, বিগুল কিষানের মতন যারা এবছর কোনো জমিই চাষ করার সুযোগ। পেল না, তারা এখন কী করবে, তারা সারা বছর কী খেয়ে বাঁচবে?

–যারা জেলে যায়নি, তারা অনেকে বনে জঙ্গলে লুকিয়ে আছে। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে লড়াই থেমে যায়নি, তারা হেরে যায়নি, কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

একটু থেমে পকেট থেকে ভাঁজ করা ম্যাপটা বার করে দেখতে লাগলেন মানিকদা। এর মধ্যে মেঘে আকাশ কালো হয়ে এসেছে, ভালো করে দেখা যায় না। এক জায়গায় আঙুল দিয়ে মানিকদা বললেন, আর একটু পরেই একটা ছোট নদী পেয়ে যাবার কথা। তার পাশে একটা ছোটখাটো জঙ্গল আছে, সেই জঙ্গলের মধ্যে একটা মুসলমানদের গ্রামে যেতে হবে আমাদের।

তপন বললো, মানিকদা, মাঠের মধ্যে খুব জোর বৃষ্টি এসে গেলে মুশকিলে পড়ে যাবো।

মানিকদা বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু বৃষ্টির চেয়েও বেশি মুশকিল হবে অন্ধকার হয়ে গেলে। তখন আর জঙ্গলে ঢোকা যাবে না।

তারপর পেছন দিকে একবার ঝট করে তাকিয়ে বললেন, তোরা কি লক্ষ করেছিস, অনেকক্ষণ ধরেই ঐ তিন-চারটে লোক আমাদের পেছন পেছন আসছে? ওরা কি আমাদের ফলো করছে, না এমনি গ্রামের লোক।

তপন বললো, আমিও অনেকক্ষণ ধরেই ওদের দেখছি। আর কোনো লোক নেই, শুধু ওরা তিনজনই আমরা যেদিকে যাচ্ছি সেদিকেই যাচ্ছে।

মানিকদা চিন্তিতভাবে বললেন, তাহলে বোধ হয় আজ আর না যাওয়াই ভালো, চল বড় রাস্তায় উঠে পড়া যাক।

অতীন অবাক হয়ে বললো, আমরা মাঠ দিয়ে হেঁটে যাবো, তাতে আমাদের কেউ ফলো করবে কেন? এদিকে যাদের বাড়ি তারা তো মাঠ দিয়েই যায়। আমরা কারুর জমি দিয়ে যাচ্ছি না, আল দিয়ে হাঁটছি।

মানিকদা বললেন, লোকগুলো সুবিধের মনে হচ্ছে না। চল আজ ফিরে যাওয়াই যাক।

অতীন বললো, এতদূর এসে ফিরে যাবো? আপনি হঠাৎ এত ভয় পাচ্ছেন কেন মানিকদা? চলুন, চলুন কিছু হবে না।

মানিকদা অতীনের চোখের দিকে চেয়ে বললেন, তুই বলছিস যেতে? তাহলে চল। আমি ভয় ঠিক পাচ্ছি না।

তপন বললো, ওরা যদি বাজে লোক হয়, তা হলে এই মাঠের মাঝখানে আমাদের ঘিরে ফেললে আমরা কিছুই করতে পারবো না।

অতীন তাকে এক ধমক লাগিয়ে বললো, তুই তো দেখছি মহা ভীতুর ডিম! কোনো একটা কাজে বেরিয়ে সেটা ফুলফিল না করে ফিরে যাওয়া আমি পছন্দ করি না!

আবার ওরা হাঁটতে লাগলো সামনের দিকে। এদিকের মাঠ একেবারে ফাঁকা, কাছাকাছি . কোনো জনবসতি নেই। পেছনের লোকগুলোকেও আর দেখা গেল না। মেঘ একেবারে নিচু হয়ে এসেছে, আর বিশেষ দেরি নেই বর্ষণের। কেন যেন অসংখ্য ফড়িং উড়ছে এখানে।

আকাশের গায়ে রেখা টেনে উড়ে যাচ্ছে অনেক চিল।

অতীন বললো, দেখলি তপন, ওরা এমনি নিরীহ লোকই ছিল, তুই শুধু শুধু ভয় খাচ্ছিলি। মানিকদা, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? আপনি অনেকক্ষণ সাসপেন্সে রেখেছেন। আমরা কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, এবার জানতে পারি?

মানিকদা হেসে বললেন, হ্যাঁ, এবার বলা যেতে পারে। ইস্ট পাকিস্তান থেকে এসেছেন যে কমরেড খোকন মজুমদার, তিনি এখানে এক জায়গায় লুকিয়ে আছেন। চারুবাবু তাঁকে একটা বিশেষ খবর দেবার জন্য পাঠিয়েছেন আমাকে। খবরটা জরুরী। অন্য কারুর মুখেও পাঠানো যায় না।

অতীন বললো, কমরেড চারু মজুমদার আপনাকে একটা কাজ দিয়েছেন, তবু সেটা না কমপ্লিট করে আপনি ফিরে যেতে চাইছিলেন? কী বলছেন, মানিকদা?

–আরে, আমি যদি মাঝপথে ধরা পড়ে যাই, তাহলে আমিও পোঁছোবো না, খবরটাও পৌঁছোবে না। তাতে কি কোনো লাভ আছে?

–আমরা থাকতে আপনাকে কে ধরবে? আপনার সঙ্গে কি কোনো চিঠি-টিঠি আছে না ওয়ার্ড অফ মাউথ!

–কমরেড খোকন মজুমদারকে যা বলার তা শুধু আমাকেই বলতে হবে। সে কথা এখন তোদের জেনে লাভ নেই।

তপন হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা মানিকদা, ঐ খোকন মজুমদার হিন্দু না মুসলমান? মানিকদা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে জিজ্ঞেস করলেন, হঠাৎ এই কথাটা মনে হলো কেন তোর? তপন, তুই ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাস নাকি?

তপন একটু লজ্জিতভাবে বললো, না, না, সে জন্য না। উনি পূর্ব-পাকিস্তান থেকে এসেছেন কি না, সেইজন্য জানতে ইচ্ছে হলো।

মানিকদা খানিকটা ভাবগম্ভীরভাবে বললেন, খোকন মজুমদার–সাচ্চা একজন বিপ্লবী, শুধু এইটুকুই আমি জানি। নজরুলের লেখা মনে নেই? ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম, ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন? কাণ্ডারী, বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোরা মা’র।…এখানে ‘ডুবিছে’র জায়গায় ‘লড়িছে’ হবে।

একটু থেমে দু’বার কেশে মানিকদা আবার বললেন, তবু তোদের কাছে স্বীকার করতে লজ্জা নেই, আজ আমার কেন যেন নাভাস লাগছে, কিসের যেন একটা পিছুটান…আমি নিজেই ম্যাপ একে এখন নদীটা খুঁজে পাচ্ছি না। দে তো অতীন, তোদের একটা সিগারেট দে!

বেশ কাছেই সাত-আটটা খেজুর গাছের জটলা, খানিকটা উঁচু জমি। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে চারজন মানুষ, দু’জনের হাতে লোহার ডাণ্ডা, একজনের কাঁধে একটা ঝোলা। অন্যজন আড়াআড়িভাবে বুকের ওপর রেখেছে দু’হাত, সে কর্কশ গলায় বললো, কী রে মানিক, এদিকে কোথায় চললি? তোদের কানু সান্যাল এখানেই লুকিয়ে আছে নাকি রে? অ্যাঁ?

মানিকদা লোকটিকে চেনেন না, কখনো দেখেন নি। কিন্তু এরা যখন তাঁর ওপর নজর রেখেছে, তখন এদের মতলোব খারাপ। মানিকদা নিরীহ মুখ করে বললেন, আপনাদের তো চিনলাম না? আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি, বড় রাস্তাটা কোন্ দিকে হবে বলতে পারেন?

লোকটি বললো, সবচেয়ে বড় রাস্তা হলো যমের দক্ষিণ দুয়োরের দিকে। চল সেখানে নিয়ে যাচ্ছি। তোদের বাপ চারু মজুমদার আর তোদের বাঁচাতে পারবে না!

মানিকদা কৃত্রিম ভয়-পাওয়া নাকি সুরে বললেন, চারু মজুমদার কে? আপনারা কার কথা বলছেন?

লোকটি সামান্য একটু ঠোঁট ফাঁক করে রসিকতার সুরে বললো, কেন ন্যাকামি করছিস, মানিক! বাপের নাম ভুলে গেলি? সব শালা চীনের দালাল! তোরা তিনটে শুয়োরের বাচ্ছা, মাথার ওপর হাত তোল, তারপর এক পা এক পা করে এগিয়ে আয়…

মানিকদা অতীন আর তপনের মুখের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতে বোঝালেন ভয় নেই। তারপর ফস করে কোমর থেকে একটা রিভলভার বার করে সেটা উঁচিয়ে ধমক দিয়ে বললেন, কেন ঝামেলা করছিস তোরা? রাস্তা ছেড়ে দে। এটা দেখেছিস? এবার তোরা মাথার ওপর হাত তুলে পেছন ফিরে এক পা এক পা করে হাঁট।

মানিকদার মতন একজন নরম ধরনের মানুষের সঙ্গে যে রিভলভার থাকতে পারে তা অতীন কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি। এতদিন ধরে মানিকদার সঙ্গে মেলামেশা, এক বাড়িতে থাকা, অথচ মানিকদার কাছে যে এমন একটা সাংঘাতিক অস্ত্র আছে তা তিনি ঘুণাক্ষরেও জানাননি। অতীনের ভয় করছে না। মানিকদার প্রতি তার শ্রদ্ধা কয়েক মুহূর্তের মধ্যে শতগুণ বেড়ে গেল!

মানিকদা রিভলভার তুলতেই ঐ চারজন লোক কথা থামিয়ে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো। মানিকদা আবার আদেশ করলেন, মাথার ওপর হাত তোল, পেছন ফের! আমি কোনো ঝঞ্ঝাট করতে চাই না, আমাদের চলে যেতে দে!

ওরা এবার পেছন ফিরলো, দু’পা গেল, তারপরেই যার কাঁধে ঝোলা সে বিদ্যুৎবেগে ঘুরে গিয়ে হাত উঁচু করে একটা বোমা ছুঁড়লো মানিকদার দিকে। মানিকদা ধপাস করে পড়ে গেলেন, অতীন আর তপন আত্মরক্ষার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো মাটিতে।

বোমা ফাটার বিকট শব্দ, তারপরেই ধোঁয়া। অতীন ওর মধ্যেই দেখলো, মানিকদা নিন্দ হয়ে গেছেন, তাঁর এক হাতে তখনও অস্ত্রটা ধরা। অতীন এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না, চোখের নিমেষে কী হয়ে গেল ব্যাপারটা? মানিকদা মারা গেছেন? ওদিকের লোকটা বোমাটা ছোঁড়ার জন্য হাত তুললো, টিপ করলো, তখনও মানিকদা গুলি চালালেন না? মানিকদা এ কী করলেন?

মানিকদা মারা গেছেন…মানিকদা, মানিকদা…ঐ লোকগুলোকে দেখে মানিকদা আর এগোতে চাননি, অতীনই জোর করেছিল, মানিকদা তার দাদার মতন, অতীনের জন্যই…তার দাদাও জলে ডুবে গিয়েছিল অতীনের জন্যই…মানিকদা, মানিকদা, না, না, অসম্ভব…

অতীন মুখ উঁচু করে দেখলো অপরপক্ষের একজন লোহার ডাণ্ডা উঁচিয়ে ছুটে আসছে। এবার তাকে মারবে? মানিকদার হাত থেকে রিভলভারটা কেড়ে নেবে? তপন কোথায়? মানিকদা মরে গেলে অতীনও আর বেঁচে থাকতে চায় না। এই লোকটা তার মাথা চুরমার করে দেবে? মানিকদার মৃত্যুর প্রতিশোধ’নেওয়া হবে না? মাঠের মাঝখানে সামান্য কয়েকটা গুণ্ডার হাতে এইভাবে ব্যর্থ মৃত্যু…

অতীন লাফিয়ে উঠে মানিকদার হাত থেকে রিভলভারটা খুলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালালো। একবার, দু’বার, তিনবার। অতীন জীবনে কখনো রিভলভার ছুঁয়েও দেখেনি, তার কোনো অস্ত্র শিক্ষা নেই। প্রথমবার তার শরীরে এমন ঝাঁকুনি লাগলো যে গুলিটা চলে গেল আকাশের দিকে…তবু একটা গুলি লেগেছে, ডাণ্ডা হাতে লোকটা পড়ে গেছে মাটিতে…-হেঁচড়ে হেঁচড়ে পালাবার চেষ্টা করছে…সাঙ্ঘাতিক রাগে ‘জ্বলছে অতীনের মাথাটা, মানিকদাকে মেরেছে, ঐ লোকটাকে কিছুতেই বাঁচতে দেওয়া হবে না, বিপ্লবের শিক্ষা হলো, শুধু শুধু প্রাণ দিও না, মেরে মরো-প্রতিক্রিয়াশীলরা পাগলা কুকুর…

অতীন দৌড়ে গিয়ে ঐ লোকটার ডাণ্ডাটা তুলে নিয়ে পেটাতে লাগলো প্রাণপণ শক্তিতে।

পেছন থেকে কারা যেন তাকে ডাকছে, অতীন, অতীন, বাবলু, বাবলু,…

যেন সহসা প্রবল ঝড় উঠেছে, আকাশে বজ্র গর্জন, পায়ের তলায় চড়াৎ চড়াৎ করে ফেটে যাচ্ছে মাটি, সেই সব কিছুর মধ্য থেকে ভেসে আসছে ডাক, অতীন, অতীন, বাবলু, বাবলুদা,

তুমি কী করছো, কী করছো, আর না, আর না, পালাও, পালাও…

সেই ব্যাকুল স্বরে মিশে আছে তার মা, বাবা, প্রেমিকা, বোন, বন্ধু সকলের আহ্বান। সবাই তাকে থামতে বলছে, ফিরে যেতে বলছে। তবু সে থামলো না।

তারপর শোনা গেল, মানিকদার গলা, এই অতীন, এই অতীন…

এবার চমকে সে ফিরে তাকালো। মানিকদা উঠে বসেছেন। সমুদ্রের বড় একটা ঢেউয়ের মতন আনন্দের ঝাঁপটা লাগলো অতীনের শরীরে। মানিকদা বেঁচে আছেন? তার নিজের দাদার মতন মানিকদা হারিয়ে যাননি এখনো…।

সে কয়েক পা পিছিয়ে এসে বললো, আপনার চোট লাগেনি মানিকদা?

মানিকদা বললেন, খানিকটা লেগেছে, খুব সীরিয়াস কিছু নয়। তুই লোকটাকে একেবারে মেরে ফেললি, অতীন?

অতীন জয়ের গর্বে বললো, বেশ করেছি! তোমার গায়ে বোমা ছুঁড়েছে, আর একটু হলে আমাকেও খতম করে দিত।

–কী করলি রে তুই! ওদের শুধু ভয় দেখালেই চলতো। একেবারে মার্ডার-…এখনো তার সময় হয়নি…

–আমরা আত্মরক্ষার জন্য মেরেছি! আমরা না মারলে ওরা আমাদের শেষ করে দিত।

–আমাকে চেনে, তোকেও জড়াবে…মার্ডার চার্জ।

অতীনকে সত্যি সত্যি গুলি চালাতে দেখে অন্যরা পালিয়ে গেছে। যে লোকটা গুলি। খেয়েছে মানিকদা তাকে পরীক্ষা করে দেখলেন, তার প্রাণ নেই। তপনকেও দেখা যাচ্ছে না!

মানিকদা বললেন, আর সময় নষ্ট করা যাবে না। ওরা এক্ষুনি ফিরে আসবে। অতীন তুই পালা…আমরা দু’জনে দু’দিকে…

–না, মানিকদা, আমি আপনার সঙ্গে থাকবো।

–ছেলেমানুষী করিস না। যা বলছি তাই শোন! দৌড়ো, দৌড়ে বড় রাস্তায় উঠে পড় কোনোরকমে, না হলে ওরা লিচ করবে, শিলিগুড়ি ফিরিস না এখন…কলকাতাতেও যাসনি, যা, যা, অতীন, এঁকেবেঁকে ছুটবি।

–মানিকদা, আপনি দৌড়োতে পারবেন না।

–আমি ঠিক পারবো, আমার সঙ্গে রিভলভারটা রইলো, আমার জন্য চিন্তা নেই… দূরে একটা হই হই রব শোনা যেতেই মানিকদা ঠেলে দিলেন অতীনকে।

অতীন দৌড়োতে লাগলো। কোন্ দিকে বড় রাস্তা? বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টির মধ্যে ওরা তাকে দেখতে পাবে না…অতীন মজুমদারকে ধরা অত সহজ নয়…সে ঠিক বেঁচে যাবে, মৃত্যু তাকে ছোঁয় না…আরও জোরে আসছে বৃষ্টি…অলিরা এখন দার্জিলিঙে, অলি ডেকেছিল তাকে, অলিদের সঙ্গে গেলে এসব কিছুই ঘটতো না…একটা লোক মারা গেছে…মার্ডার চার্জে অতীনকেই সবাই খুনী বলবে, সে যে আত্মরক্ষার জন্য…না, না, বিপ্লবী কক্ষনো আদালতে যায় না, সে কিছুতেই ধরা দেবে না…ইস, মাকে ফেরার তারিখটা জানিয়ে কেন চিঠিটা লিখতে গেল সে, মা অপেক্ষা করবে, কিন্তু এখন কলকাতায় ফেরা বিপজ্জনক…সে লুকোবে…পেছনে পেছনে ওরা কি তেড়ে আসছে বৃষ্টিতে সব ঝাঁপসা…কোথায়, কোনদিকে রাস্তা:…তাকে ধরার সাধ্য পৃথিবীতে কারুর নেই…

সমস্ত দিগন্ত জুড়ে এখন ধারাবর্ষণ, তার মধ্যে ছুটতে লাগলো অতীন। সে সামনে-পেছনে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না, তবু সে অন্ধের মতন ছুটছে।

(যৌবন পর্ব সমাপ্ত)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *