২.৫৪ করোনেশান ব্রীজের কাছে

করোনেশান ব্রীজের কাছে এসে জিপ থেকে নেমে পড়লো অতীনরা! কৌশিকই বললো, এই ব্রীজটা ওরা হেঁটে পার হবে, গাড়িতে গেলে এমন সুন্দর দৃশ্যের প্রায় কিছুই উপভোগ করা যায় না। কৌশিক এদিকে আগে দু’বার এসেছে। মানিকদাও একবার এসেছিলেন খুব ছোটবেলায়, শুধু অতীনের কাছে তিস্তা নদীর এই রূপ একেবারে নতুন।

ব্রীজের অনেক নিচে নদী, দু পাশে খাড়া পাহাড়, দুপুরের রোদে জল একেবারে রূপোলি। এই রকম কোনো কোনো জায়গায় প্রকৃতি একসঙ্গে অনেকখানি ঐশ্বর্য দেখিয়ে দেয়, যা দেখে মানুষ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।

এখানকার সুন্দরের মধ্যে একটা গাম্ভীর্য আছে। শুধু জঙ্গল, পাহাড়, সেতু, ও নদী নয়, সব মিলিয়ে একটা অপূর্ব নির্মাণ।

ব্রীজের ওপর দিয়ে যাচ্ছে বড় বড় মালবাহী লরি, কয়েকটি আর্মির ট্রাক। একদিকের পাহাড় কেটে রাস্তাটা চওড়া করার কাজে নিযুক্ত কিছু নেপালী শ্রমিক। গাড়ির গর্জন ও পাথর ভাঙা আওয়াজের যে মিলিত ধ্বনি, তাও যেন কানে বেসুরো লাগছে না, এখানে মানিয়ে যায়।

একটু পরে কৌশিক বললো, দ্যাখো অতীন, ব্রীজে ওঠার আগে যে রাস্তাটা সিধে চলে গেল, ওটা গেছে কালিম্পঙের দিকে। আর ব্রীজ পেরিয়ে আমরা যাবো ডান দিকের রাস্তা ধরে হাসিমারায়।

অতীন বললো, কালিম্পঙ! ওখান থেকে একবার ঘুরে আসতে পারি না? কতক্ষণ লাগবে?

ওদের সঙ্গে দীপক নামে আর একটি ছেলে এসেছে, মানিকদার মামাতো ভাই। সে বললো, কালিম্পঙ খুব কাছে নয়, এখন গেলে সন্ধের আগে আর ফেরা যাবে না!

মানিকদার একটা কাশির দমক উঠলো। কাশতে কাশতে তিনি হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলেন। তাঁর গলার দুটো শিরা ফুলে উঠেছে। শিলিগুড়িতে এসেও মানিকদার শরীরের বিশেষ উন্নতি হয়নি।

দীপকের দাদা কাজ করে হাসিমারার কাছে এক চা বাগানে। মানিকদা সেখানে কিছুদিন থাকবেন শরীর সারাবার জন্য। অতীন আর কৌশিক মানিকদাকে হাসিমারায় পৌঁছে দিয়ে ফিরে যাবে কলকাতায়। শিলিগুড়িতে ওদের কেটে গেছে দু’সপ্তাহ।

কৌশিক মানিকদার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

অতীন কয়েকটা পাথরের নুড়ি জোগাড় করে টুপ টুপ করে ফেলতে লাগলো তিস্তার জলে। এত ওপর থেকে নুড়িগুলো পড়তে বেশ কয়েক মুহূর্ত সময় লাগে, জলে পড়ার পর একটা গোল আবর্ত স্পষ্ট দেখা যায়। অতীন অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে বারবার। কয়েকদিন শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে এদিকে ওদিকে খানিকটা ঘোরাঘুরি করে উত্তর বাংলার পার্বত্য সৌন্দর্য দেখে সে মোহিত হয়ে আছে। দেওঘরের ত্রিকূট ছাড়া বড় পাহাড় তো সে আগে দেখেনি, জঙ্গলের এই রূপও তার জানা ছিল না।

সুন্দর কিছু দেখলেই তার মনে পড়ে অলির কথা। অলিকে নিয়ে এই জায়গায় একবার বেড়াতে আসতে হবে। কোনো কিছুর দিকে অলি যখন অবাক হয়ে কিংবা মুগ্ধ ভাবে তাকায়, তখন অলির চোখদুটি যে কী গম্ভীর হয়ে যায়। একটা পবিত্র পবিত্র ভাব, অলির মতন ওরকম চোখ পৃথিবীতে আর কারো নেই।

একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে অতীন দেখলো তার হাত কাঁপছে। অলিকে সে অনুভব করছে সারা শরীরে। নিশ্বাসে সে পাচ্ছে অলির চুলের গন্ধ।

অতীনের একটু একটু অপরাধ বোধ হলো। মুখের সামনে ধোঁয়া সরাবার মতন সে হাত নেড়ে অলির ছবিটাকে মুছে দিতে চাইল, যেন অন্যরা টের পেয়ে যাবে, কয়েকদিন ধরে তারা যে সব আলোচনার মধ্যে রয়েছে, সেখানে অলিকে যেন মানায় না।

দীপক বললো, এই যে তিস্তাকে এখানে এত সুন্দর দেখছেন, আসলে কিন্তু ডেঞ্জারাস নদী, বর্ষাকাল এলেই আমাদের ভয় হয়…।

অতীন মুখ ঘুরিয়ে তাকালো দীপকের দিকে, শূন্য দৃষ্টি, কথাটা তার মাথায় ঢুকলো না। অতীন এই মুহূর্তে এখানে নেই, তাকে ফিরে আসতে হবে।

রুমাল দিয়ে মুখ মুছে মানিকদা বললেন, রোদ্দুরটা আমার সহ্য হচ্ছে না রে, চল এবার গাড়িতে উঠি।

মানিকদার চোখের পাতায় সূক্ষ্ম জলের পদা, বেশীক্ষণ কাশতে কাশতে এরকম হয়। তিনি চারদিকে চোখ মেলে তাকিয়ে বললেন, এইসব সুন্দর দৃশ্য দেখবার জন্য মনটাকে তৈরি করতে হয়। আর মন তখনই তৈরি হবে, যখন জানবো যে দেশটা বদলেছে, দেশের সব মানুষ সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার পেয়েছে।

কয়েক পা এগিয়ে মানিকদা আবার বললেন, চারুবাবু ঠিকই বলেছেন, কলকাতায় বসে শুধু তর্ক আর আলোচনায় কোনো কাজ হবে না, আসল সংগ্রাম শুরু করতে হবে এই রকম জায়গা থেকেই।

কৌশিক বললো, মানিকদা কলকাতায় আমাদের স্টাডি সার্কেলে আমরা এই লাইনেই চিন্তা করছিলুম, কিন্তু চারুবাবুর কথাবার্তা অনেক কংক্রিট। উনি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন যে কমরেড লেনিনের পর বিপ্লবী সংগ্রামের নেতৃত্ব এখন মাও সে তুঙ-এর হাতে। চীনের পার্টির বিরোধিতা করা মানে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিপ্লবী পথ থেকে সরে যাওয়া। আমাদের পার্টি তো এখন তা-ই করছে।

মানিকদা বললেন, চারুবাবুর সঙ্গে আমার আগে পরিচয় ছিল না, আমি জানতুম না যে শিলিগুড়িতে বসে অ্যাকচুয়াল সংগ্রামের পদ্ধতি নিয়ে একজন এইসব চিন্তা করছে!

অতীনরা শিলিগুড়িতে পৌঁছবার বেশ কয়েকদিনের মধ্যেও চারু মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মাত্র দু’দিন আগে এই দীপকই ওদের নিয়ে গিয়েছিল চারুবাবুর বাড়িতে। চারুবাবুর স্ত্রী লীলা দেবীকে দীপক চেনে অনেকদিন ধরে, সেই সূত্রে।

শিলিগুড়ির প্রবীণ কংগ্রেসী নেতা বীরেশ্বর মজুমদারের ছেলে এই চারু মজুমদার। শীর্ণ, হাড়-চামড়া সম্বল চেহারা, চোখদুটিতে রয়েছে তীব্রতা। বাল্য বয়সে মেধাবী ছাত্র ছিলেন, ফাস্ট ডিভিশনে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে পাবনার এডোয়ার্ড কলেজে পড়তে গিয়েছিলেন, কিন্তু ধরাবাঁধা পড়াশুনোয় মন বসেনি, বি এ পরীক্ষার আগেই কলেজ ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন রাজনীতিতে। প্রথম দিকে ছিলেন কংগ্রেসের সোসালিস্ট পার্টিতে, তারপর জলপাইগুড়ি জেলার শচীন দাশগুপ্ত ও বীরেন দত্তের প্রভাবে চলে আসেন কমুনিস্ট পার্টিতে, কাজ শুরু করেন কৃষক ফ্রন্টে। ছেচল্লিশ সালের তেভাগা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয় কর্মী, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেই আন্দোলনকে ছাপিয়ে গেল, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ডুয়ার্সের মঙ্গলবাড়িতে পুলিশের গুলিতে মারা গেল এগারোজন, পার্টি নেতৃত্ব সেই আন্দোলন বন্ধ করে দিতে চাইলে চারু মজুমদার দারুণ বিক্ষুব্ধ বোধ করেছিলেন এবং গ্রেফতার হয়েছিলেন কিছুদিনের মধ্যেই।

জেল থেকে ছাড়া পান তিন বছর বাদে, তখন স্বাধীন ভারতের বয়েস মাত্র চার বছর। প্রকৃত মার্কসবাদীর চোখে এই স্বাধীনতা মোটেই প্রকৃত স্বাধীনতা নয়, দেশব্যাপী শ্রমিক কৃষকরা আগের মতনই দারিদ্র্য ও অবিচারের নিগড়ে বন্দী। তিনি কাজ শুরু করলেন চা বাগানের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার আদায়ের আন্দোলনে, সভাপতি হলেন রিকশাওয়ালাদের ইউনিয়নের। কিন্তু পার্টির সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হতে থাকে নানা বিষয়ে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে আন্তজাতিক কমুনিস্ট আন্দোলনের একমাত্র পথ হচ্ছে সশস্ত্র বিপ্লবের পথ। কিন্তু স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর থেকেই ক্রুশ্চেভপন্থী এক ধরনের শোধনবাদ ছড়িয়ে পড়ছে পার্টির নেতাদের মধ্যে। শান্তিপূর্ণ পথে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ ও শোষক-শোষিতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান! পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এই বুলি কপচেছেন, এই নীতিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সোভিয়েত রাশিয়া, ভারতের ক্যুনিস্ট পার্টির নেতারাও এই সুবধাজনক নিরীহ পথে এগোতে চাইছে। চীন-ভারত যুদ্ধের সময় ডাঙ্গে রাজেশ্বর রাও প্রমুখ নেতারা সমর্থন জানালেন নেহরুকে, চারু মজুমদারের মতন আরও কয়েকজন যুব নেতা পার্টির মধ্যে জ্বলন্ত ভাষায় করলেন এর প্রতিবাদ, তাঁরা বললেন, “জন বিরোধী ভারত সরকারই চীনকে আক্রমণ করেছে। কমুনিস্ট আন্তজাতিকতাবাদের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের উচিত এই যুদ্ধের বিরোধিতা করা।” এতটা উগ্রতা প্রমোদ দাশগুপ্তের মতন রাজ্যনেতাদেরও সহ্য হয়নি।

চারু মজুমদার একবার নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন, জলপাইগুড়ির এক বাই-ইলেকশনে। সংসদীয় রাজনীতিতে যাঁর বিন্দুমাত্র আস্থা নেই, তাঁকে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছিল সম্ভবত স্থানীয় সহকর্মীদের উপরোধে, সেবারে তাঁর জামানত জব্দ হয়েছিল।

ব্যক্তিগত সুখ সাচ্ছন্দ্য অগ্রাহ্য করে তিনি গ্রামে গ্রামে, চা বাগানে কাজ করেছেন অক্লান্ত ভাবে, তাঁর শরীর বরাবরই অপটু, মনোবলই তাঁর প্রধান সম্বল, তবু চৌষট্টি সালে তাঁর একবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল। কমুনিস্ট পার্টিও সেই সময় দ্বিখণ্ড হয়েছে। তিনি সি পি আই (এম)-এর দিকে চলে এলেও পার্টির নেতাদের চিন্তাধারার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারছেন না। দেশের বর্তমান অবস্থায় প্রকৃত মার্কসবাদী কর্মীর কর্তব্য কী সে সম্পর্কে তিনি দলিল রচনায় মন দিলেন।

মোট পাঁচটি প্যামফ্লেট রচিত হবার পরেই তিনি গ্রেফতার হলেন দ্বিতীয়বার। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দের তৎপরতায় প্রায় এক হাজার কমিউনিস্টকে বন্দী করে রাখা হয়। চারুবাবু এতে বিস্মিত হননি। প্রতিক্রিয়াশীল ভারত সরকারের কাছ থেকে এছাড়া আর কী আশা করা যায়? চারুবাবু বিশ্বাস করেন যে কাশ্মীর একটি পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হবার জন্য কাশ্মীরীদের আন্দোলন যুক্তিপূর্ণ, এবং সেই আন্দোলন দমন করার জন্যই ভারত সরকার নানান ছুতোয় পাকিস্তান আক্রমণ করেছে। প্রকৃত বিপ্লবীর কর্তব্য হচ্ছে এই সরকারকে যতভাবে সম্ভব আঘাত করা।

অতীনরা যেদিন চারুবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গেল, তার মাত্র একমাস আগে তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এখন তাঁর বয়েস প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি, শরীর বেশ দুর্বল। প্রথমে তিনি মানিকদার সঙ্গে ভালো করে কথা বলতেই চাননি, কলকাতার বক্তৃতাবাজ পার্টি কর্মীদের সম্পর্কে তাঁর মনে স্পষ্ট একটা বিরাগ ভাব আছে বোঝা গেল। মানিকদা ধৈর্য হারাননি, বিনীতভাবে উত্তরবাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে টুকটাক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন, হঠাৎ চারুবাবু ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করলেন, আগে আসল কথাটা বলুন তো! সশস্ত্র সংগ্রামের পথে। বিশ্বাস আছে? আপনারা কি বিশ্বাস করেন যে দেশের এখন যা অবস্থা, তাতে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করার এটাই উপযুক্ত সময়? ‘মজুত উদ্ধার’, ‘ঘেরাও’ ‘লাগাতার ধর্মঘট’, ‘প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট এইসব ন্যাকা মধ্যবিত্ত-সুলভ উগ্র বামপন্থী আওয়াজ শুনলে আমার গা জ্বলে যায়! আপনাদের ঐ সব বিশ্বাস থাকলে আমার কাছে কোনো সুবিধে হবে না!

মানিকদা মৃদু হেসে অতীন ও কৌশিকের দিকে তাকিয়েছিলেন। এইসব ব্যাপার নিয়েই পমপমের বাবার সঙ্গে তাঁর মতভেদ। শ্রমিক ফ্রন্টে শুধু দাবিদাওয়া ও মাইনে বাড়াবার আন্দোলন নিয়ে ঠাট্টা করায় একবার হরেকৃষ্ণ কোঙার প্রচণ্ড বকুনি দিয়েছিলেন তাঁকে।

মানিকদা বললেন, চারুবাবু সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হবে কী করে, কী ভাবে অস্ত্র যোগাড় করা যাবে, সে সম্পর্কে কি আপনি কিছু ভেবেছেন? শাসক দলের সঙ্গে রয়েছে পুলিশবাহিনী ও আর্মি, তাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে অস্ত্র, জোগাড় করাই কি প্রধান সমস্যা নয়?

মানিকদার চোখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে থেকে চড়া গলায় চারুবাবু বললেন, অস্ত্রের দোহাই দিয়ে নিশ্চেষ্টভাবে বসে থাকাও আসলে শোধনবাদ! কেন, দা, কুড়ুল, শাবল, কাস্তে, লাঠি এগুলোও কি অস্ত্র নয়? গ্রামের মানুষ এই সব অস্ত্রই ব্যবহার করতে জানে। এইসব দিয়েই লড়াই শুরু করা যায়। গ্রামের মানুষকে বোঝাতে হবে যে জোতদার-পুলিশ বুর্জোয়া

পার্টির অত্যাচারে মুখ বুজে থাকলে চলবে না। প্রতিঘাত করতে হবে। ছোট ছোট এলাকা ভিত্তিক মুক্তি সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

–তারপর?

–তারপর ওদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিতে হবে। মাও সে তুঙ বলেননি যে ‘শত্রুর অস্ত্রাগার আমাদেরই অস্ত্রাগার’?

অতীন কোনো কথা বলেনি, সে চুপ করে শুনছিল। মানিকদার সঙ্গে কৌশিক মাঝে মাঝে কথায় যোগ দিয়েছে। চারুবাবুর চোখের দৃষ্টিতে যেন চুম্বক আছে। এমন প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি কথা বলেন যে প্রতিটি শব্দ মনের মধ্যে গেঁথে যায়। গ্রামাঞ্চলে ছোট ছোট ইউনিট গঠন করে ক্ষমতা দখলের সংগ্রামের যে ব্লুপ্রিন্ট দিলেন, তা শুনে অতীনের মনে হয়েছিল, এক্ষুনি কাজ শুরু করা দরকার।

পরের দিনও দীর্ঘ সময় ধরে চারুবাবুর সঙ্গে ঐ বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো। কিন্তু শেষের দিকে চারুবাবু অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তাঁর বুকে উঠলো ইসকিমিয়ার ব্যথা। জেলে থাকার সময় তাঁর শরীর আরও ভেঙেছে অথচ মানুষটি যেন কিছুতেই বিশ্রাম নিতে জানেন না। লীলাদেবী তাঁকে ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলেন প্রায় জোর করে। মানিকদারও বিশ্রী কাশিটা না সারালেই নয়। তাই ঠিক হলো কয়েকদিনের জন্য আলোচনা স্থগিত থাকবে। কৌশিক আর অতীনকেও একবার ফিরতেই হবে কলকাতায়।

পাহাড়ী রাস্তা ধরে জিপটা চলেছে, কৌশিক আর মানিকদা চারুবাবু সম্পর্কেই কথা বলে চলেছেন, অতীন আবার অন্যমনস্ক।

অতীন জানে, তার মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব আছে। মানিকদার সংস্পর্শে এসে সে দেশের মানুষের কথা ভাবতে শিখেছে। এই সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সে যে-কোনো কাজ করতে প্রস্তুত। মানিকদার মতন মানুষ, চারুবাবুর মতন মানুষ যদি নিঃস্বার্থভাবে দেশের কাজে নিজেদের নিযুক্ত করতে পারে, তাহলে সেই বা পারবে না কেন? ওঁরা এমন কিছু অসাধারণ মানুষ নন।

কিন্তু মানিকদা বা আরও কয়েকজনকে সে দেখেছে, যাঁরা সর্বক্ষণ এইসব কথাই ভাবেন, আলোচনা করেন, তাঁদের অন্য কোনো দিকে আগ্রহ নেই, কোনো হাসিঠাট্টা নেই, ছাইগাদার মধ্যে একটা গাঁদা-ফুলের গাছ থাকলেও তাঁরা ছাইটাই দেখবেন, ফুল দেখবেন না। তার বন্ধু কৌশিকেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে, ফার্স্ট ইয়ার সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ার সময় কৌশিক খুব কবিতা-টবিতার চর্চা করতো, নিজেও লিখতে গোপনে গোপনে। সেই কৌশিক হঠাৎ একদিন জীবনানন্দ দাশের একটা কবিতার বই জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলেছিল, ধুৎ এসব আর্টস ফর আর্টস সেক-এর সাহিত্য আর কোনোদিন পড়বো না। শুধু শুধু মনটাকে বিগড়ে দেয়।

অতীন অবশ্য কবিতার ভক্ত নয়, তবু নিছক তর্কের খাতিরেই সে বলেছিল, আধুনিক বাংলা কবিতার বই না হয় তুই ছুঁড়ে ফেলে দিলি, কিন্তু তোর কাছে যে শেক্সপীয়রের বই আছে, সেটা কী করবি?

কৌশিক উত্তর দিয়েছিল, ওসব ক্লাসিকস নিয়েও পরে চিন্তা করা যাবে, এখন আলমারিতে। তালা বন্ধ করে রাখবো!

অতীন কবিতার ভক্ত নয়, ফুলটুলেরও ভক্ত নয়, ছাইগাদায় একটা গাঁদা ফুল দেখলে তার চোখ টানে বটে, মন উথলে ওঠে না। কিন্তু তার ভালো লাগে সিনেমা দেখতে, বিশেষত ও ওয়েস্টার্ন ফিল্ম। চৌরঙ্গি পাড়ার হলগুলিতে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন দেশেরই ছবি আসে বেশি, আর কিছু কিছু ব্রিটিশ ফিল্ম, অন্য কোনো দেশের সিনেমা দেখার তো প্রায় কোনো সুযোগই নেই, তবু ঐ সব ছবিও সে উপভোগ করে। মনে মনে তার একটা অপরাধ বোধ হয়। এসব সিনেমা দেখা তার উচিত নয়, তবু নেশার মতন, দেওয়ালের পোস্টারে সোফিয়া লোরেন, বার্ট ল্যাঙ্কাস্টার, গ্রেগরি পেক, ইনগ্রিড বার্গম্যানের ছবি দেখলেই তার ছুটে যেতে ইচ্ছে করে।

আর যখন-তখন মনে পড়ে অলির কথা। স্টাডি সার্কেলের সঙ্গে অলি সম্পর্ক ছেদ করেছে, আর সে তাদের সহযাত্রিণী নয়। অনুপমরা প্রায়ই অলিকে বড়লোকের আদুরে মেয়ে বলে ঠাট্টা করতো। ওরা জানতো, অলি কোনো আদর্শের টানে স্টাডি সার্কেলে আসেনি, এসেছিল শুধু অতীনের টানে। অলিরা বড়লোক? হ্যাঁ, এদেশের স্ট্যাণ্ডার্ডে ওদের বড়লোকই বলতে হবে। অলির বাবা বইয়ের ব্যবসা করেন, তিনিও কি তাহলে শোষক শ্রেণীর প্রতিভূ? এই গরিবদেশে অন্য অনেক লোককে বঞ্চনা না করে কেউ ধনী হতে পারে না।

তাহলে কি অলির সঙ্গে তার আর মেশা উচিত নয়? এই চিন্তাটা এলেই অতীন দিশাহারা হয়ে যায়। অলি তার নিজস্ব, অলি যেন তার শরীরেরই একটা অঙ্গ। অন্য কোনো পুরুষ অলির সঙ্গে সামান্য ঘনিষ্ঠতা করতে এলেই অতীনের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। এমনকি অলির মেয়ে বন্ধুদেরও সে পছন্দ করতে পারে না। অলির সঙ্গে গল্প করার সময় একদিন বিমানবিহারী ওপরের ঘর থেকে মেয়েকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন, অতীন অলির হাত চেপে ধরে রক্ত চক্ষে বলেছিল, এখন যেতে হবে না, একটু পরে যাবে! অতীন জানাতে চেয়েছিল, অলির বাবার চেয়েও অলির ওপর তার অধিকার বেশি!

সেই অলির সঙ্গে তার বিচ্ছেদ কি সম্ভব?

মানিকদাকে সে ভালোবাসে, মানিকদার কথায় সে প্রাণ দিতে পারে, মানিকদা যদি কোনোদিন বলেন, অতীন, একজন সংগ্রামী কর্মীর পক্ষে ব্যক্তিগত প্রেম ভালোবাসা এগুলো হলো তুচ্ছ বিলাসিতা, এসব এখন মুলতুবি রাখতে হয়, তুমি অলির সঙ্গে আর মিশো না! তখন অতীন কী করবে?

পাহাড় ছেড়ে জিপটা সমতলে নেমেছে,দু’পাশে চা বাগান। অতীন আগে কখনো চা বাগান দেখেনি। বুক সমান উঁচু, সমান করে ছাঁটা গাছ, মনে হয় যেন মাইলের পর মাইল। মাঝে মাঝে এক একটা লম্বা লম্বা অন্য গাছও রয়েছে। দীপক তাকে বোঝালো যে, ঐ গাছগুলোকে বলে শেড ট্রি, ওদের ছায়াটা দরকার, চা-গাছের পাতায় বেশি রোদ লাগলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।

দীপক বি এ পাস করে, আপাতত বেকার। বেঁটে খাটো বলিষ্ঠ চেহারা। কিছু কিছু পার্টির কাজ করে, যে-কোনো একটা চা বাগানে চাকরির চেষ্টাও করছে। ছেলেটি অনেক কিছুরই খবর রাখে।

অতীন জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা, অনেক জায়গায় তো দেখেছি কোনো বেড়া নেই। বাইরের লোকে চা-পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিয়ে যেতে পারে না?

দীপক বললো, কত নেবে? একটু আধটু নিলেও কিছু যায় আসে না। তাছাড়া কাঁচা চা-পাতা নিয়ে তো তেমন লাভ নেই, প্রসেসিং না করলে লিকার হয় না। মাঝখানে অনেক ব্যাপার আছে।

কৌশিক বললো, নর্থ বেঙ্গলে চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে কী বিরাট একটা অর্গানাইজড ফোর্স হতে পারে ভেবে দ্যাখ তো? যদি কোনোদিন এরা একসঙ্গে রুখে দাঁড়ায়…

একটা টি-এস্টেটের মধ্যে ঢুকে পড়লো জিপটা। দু’পাশে চা বাগান, তার মাঝখান দিয়ে রাস্তা। অনেকখানি ভেতরে যাবার পর সব কোয়াটার্স। দীপকের দাদা অসীম এই চা বাগানের সহকারি অ্যাকাউন্টান্ট। তার কোয়াটারে যাবার আগেই সহকারি ম্যানেজারের বাংলো, সেই বাংলোর চওড়া বারান্দায় বসে আছেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। সেদিকে তাকিয়ে দীপক বলে উঠলো, এই রে!

কৌশিক বললো, কী হলো?

দীপক আঙুল দেখিয়ে বললো, ঐ যে খদ্দরের পাঞ্জাবী পরা লোকটাকে দেখছেন, কাঁচা-পাকা চুল, উনি হলেন শৈলেন দাশগুপ্ত!

কৌশিক জিজ্ঞেস করলো, বিখ্যাত লোক? নাম শুনলেই চিনতে পারার কথা?

–নাম শোনেননি? নর্থ বেঙ্গলের বেশ বড় গোছের কংগ্রেস লিডার, অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজারের শ্বশুর হয়, বেড়াতে এসেছে। ঐ শৈলেন দাশগুপ্তের এত ক্ষমতা যে এস পি, ডি এমরা ওর কথায় ওঠে বসে।

মানিকদা বললেন, তাতে আমাদের কী আসে যায়? কংগ্রেসীদের দেখেই ভয় পেতে হবে, এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে নাকি?

–না তা নয়, তবে আপনাদের পরিচয় এখানে না জানানোই ভালো, তা হলে আমার দাদার ট্রাবল হতে পারে!

মানিকদা বললেন, তোমার দাদার কাছে আত্মীয় স্বজনরা বেড়াতে আসতে পারবে না?

অসীমকে কোয়ার্টারেই পাওয়া গেল। সে বিবাহিত, দুটি ছেলেমেয়ে এখানকার স্কুলেই পড়াশুনা করে। অসীম প্রায় মানিকদারই সমবয়সী, ছেলেবেলায় দু’তিন বছর একই স্কুলে পড়াশুনো করেছে। ওদের পেয়ে সে খুব খুশী। শৈলেন দাশগুপ্তর ব্যাপারটা সে আমলই দিল না। বরং বলল, উনি পুরনো আমলের কংগ্রেসী, খুব ভদ্দরলোক!

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর মানিকদা ঘুমিয়ে পড়লেন, অতীন আর কৌশিক চা বাগান দেখতে বেরুলো। দীপকের হাতে একটা লাঠি, চা-ঝোঁপের আড়ালে নাকি অনেক সময় শেয়াল লুকিয়ে থাকে।

চতুর্দিকে শুধু সবুজ, তাতে চোখ জুড়িয়ে যায়। এখন সীজন নয়, তাই কুলি-কামিনদের পাতা তুলতে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। বিশাল চা বাগানটি যেন শুনশান হয়ে পড়ে আছে। দূরের একটা শেড দেখিয়ে দীপক বললো, ঐটে কারখানা, ঐখানে প্রসেসিং-এর কাজ চলছে, ওদিকে যাবেন?

অতীনের কারখানা দেখার ইচ্ছে নেই, সে চায় শুধু এই সবুজের মধ্যে হেঁটে বেড়াতে।

কৌশিক বললো, সে একবার মধেসিয়া শ্রমিকদের বস্তিটা দেখতে যাবে।

আকাশে আজ রোদ নেই, ঘোরাঘুরি করছে টুকরো টুকরো মেঘ, তার মধ্যে কয়েকটি বেশ কালো, যে-কোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। সে যখন বৃষ্টি নামবে, তখন দেখা যাবে, তার আগে এখন আবহাওয়াটি বড় মনোরম।

একটা বাঁক ঘুরতেই শৈলেন দাশগুপ্তর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। বেশ দীর্ঘকায় প্রৌঢ়, ধপধপে সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবি পরা, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা, মুখে বেশ একটা সৌম্য ভাব আছে। তাঁর সঙ্গে একটি যুবতী ও একটি কিশোরী। মেয়েদুটি প্রায় অলি আর বুলির বয়েসী। বড় মেয়েটি লম্বা, ছিপছিপে, মাজা মাজা রং, ভুরুদুটি প্রায় জোড়া। অলির সঙ্গে চেহারার কোনো মিল নেই, তবু তাকে দেখে অতীনের মনে পড়লো অলির কথা।

শৈলেন দাশগুপ্ত নিজেই আগে হাত তুলে বললেন, নমস্কার, আপনারা কোথা থেকে আসছেন? কুচবিহার না জলপাইগুড়ি?

কৌশিক বললো, আমরা কলকাতা থেকে আসছি। আমাদের একজন আত্মীয় আছেন এখানে।

শৈলেন দাশগুপ্তর বয়েসী লোকেরা সাধারণত অতীন-কৌশিকদের বয়েসীদের সঙ্গে তুমি বলে কথা বলতে শুরু করে। ইনি আপনি বললেন, মানুষটি বেশ আলাপী, অনেক কথা শুরু করলেন কৌশিকের সঙ্গে।

এখানে আসবার আগেই কয়েকটি কংগ্রেসী গুণ্ডার সঙ্গে মারামারি হয়েছে বলে কংগ্রেসী নাম শুনলেই অতীনের গা জ্বলে যায়। শৈলেন দাশগুপ্তর ব্যবহারে তাঁকে অপছন্দ করার কোনো কারণ নেই, তবু অতীন লোকটির দিকে তাকাচ্ছে না, কোনো কথাও বলছে না। এবং একজন কংগ্রেসী নেতার মেয়ে বলে সে ঐ মেয়েদুটিকেও গ্রাহ্য করলো না।

শৈলেন দাশগুপ্ত চা বাগানের খুঁটিনাটি বিষয়ে এমন আলাপ ফেঁদে বসেছেন কৌশিকের সঙ্গে যে চট করে চলেও যাওয়া যাচ্ছে না। বাবা-জ্যাঠার বয়েসী লোকের সামনে অতীন সিগারেট খায় না, কিন্তু এই লোকটির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের জন্য সে ফস করে একটা সিগারেট ধরালো।

মেয়ে দুটি শৈলেন দাশগুপ্তর কন্যা নয়। তিনি নিজেই আলাপ করিয়ে দিলেন, ওরা তাঁর জামাইয়ের বোন, বড়টির নাম শর্মিলা, ছোটটির নাম সুভদ্রা, ওরাও জামসেদপুর থেকে বেড়াতে এসেছে এখানে। অতীনরাও নিজেদের নাম জানালো।

শর্মিলা অতীনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনারা চিতা বাঘটা দেখেছেন? অতীন অবাক হয়ে বললো, চিতাবাঘ? কোথায় চিতাবাঘ?

শর্মিলা বিস্ময়মাখা হাসি দিয়ে বললো, ওমা, আপনারা চিতা বাঘটার কথা শোনেননি? কাল রাত্তিরে ম্যানেজারের বাংলোয় ধরা পড়েছে, কী সুন্দর দেখতে!

তার ছোট বোন সুভদ্রা দুটো হাত তুলে মাপ দেখিয়ে বললো, এইটুকু, গাটা একেবারে সিল্কের মতন!

শৈলেন দাশগুপ্ত বললেন, চিতা বাঘ নয়, লেপার্ড। এদিকে চা বাগানগুলোতে তো প্রায়ই চলে আসে জঙ্গল থেকে। এটা তিন চার মাসের বাচ্চা হবে, ধরে রেখে দিয়েছে ম্যানেজারের বাংলোয়।

শর্মিলা উৎসাহের সঙ্গে বললো যাবেন, যাবেন, দেখতে যাবেন? আমরা নিয়ে যেতে পারি। চিড়িয়াখানার বাইরে অতীন কখনো জংলী জানোয়ার দেখেনি। লেপার্ডের কথা শুনে তার বুকটা নেচে উঠেছে ছেলেমানুষের মতন। সে কৌশিকের দিকে তাকালো, দৃষ্টি দিয়ে যেন বলতে চাইলো, শ্রমিকদের বস্তিতে যাবার আগে একবার লেপার্ডের বাচ্চাটা দেখে এলে কি খুব দোষ হয়?

কৌশিক বললো, চল দেখে আসি!

শর্মিলা, অতীনের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো, আপনি এত গম্ভীর হয়ে আছেন কেন, আপনি বুঝি হাসতে জানেন না?

অতীনকে উত্তর দিতে হলো না, তক্ষুনি নেমে গেল ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি। পাহাড়ী এলাকার বৃষ্টি এরকম হুড়মুড়িয়েই আসে। শর্মিলা হাততালি দিয়ে বলে উঠলো, পালানো চলবে না কিন্তু, আমরা বৃষ্টিতে ভিজবো!

সবাই একটা শেড ট্রির নীচে দাঁড়ালো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *