দ্বিতীয় কাণ্ড। চতুর্থ প্রপাঠক
প্রথম অনুবাক
মন্ত্র- দেবা মনুষ্যাঃ পিতরস্তেহনত আসন্নসুরা রক্ষাংসি পিশাচাহেন্যততেষাং দেবানামুত যদল্পং লোহিতমকুৰ্ব্বন্তদ্রক্ষাংসি রাত্রীভিরসুভ্রন্তাৎসুব্ধাম্তানভি ব্যৌচ্ছড়ে দেবা অবিদুর্যো বৈ নোহয়ং মিয়তে রক্ষাং স বা ইমং মুন্তীতি তে রক্ষাংস্যুপমন্ত্রয়ন্ত অন্যব্রুবম্বরং বৃণামহৈ যদসুরাঞ্জয়াম তন্নঃ সহাসদিতি ততো বৈ দেবা অসুরানজয়ন্তেসুরাঞ্জিত্ব রক্ষাংস্যপান্ত তানি রক্ষাংস্য নৃতমকত্তে তি সমস্তং দেবান্ পৰ্য্যবিশন্তে দেবা অগ্নাবনাথন্ত তেহগ্নয়ে প্রবতে পুরোডাশমষ্টাকপালং নিরবপন্নগ্নয়ে বিবাধবতেহগ্নয়ে প্রতীকবতে যদগ্নয়ে প্রবতে নিরবপন্যান্যে পুরস্ত্যদ্রক্ষাংসি আসস্তানি তেন প্রাণুদন্ত যদষ্ময়ে বিবাধবতে যান্যেবাভিতো রক্ষাংস্যাসন্তানি তেন ব্যবাধন্ত যদগয়ে প্রতীকবতে যান্যের পশ্চাদ্ৰক্ষাংস্যাসন্তানি তেনাপানুদন্ত তততা দেবা অভব পরাইসুরা যো ভ্রাতৃব্যবাৎ স্যাৎ সম্পদ্ধমান এতয়েষ্ট্যা যজেতাগ্নয়ে প্রবতে পুরোশ মষ্টাকপালং নিৰ্বপেদগ্নয়ে বিবাধবতেহগ্নয়ে প্রতীকবতে যদয়ে প্রবেত নির্বপতি য এবাম্মাচ্ছুনয়া ভ্রাতৃব্যস্তং তেন প্র ণুদতে যদগ্নয়ে বিবাধবতে য এবৈনেন সদৃং তেন বাধ যদগ্নয়ে প্রতীকবতে এবাস্মাৎ পাপীয়ান্তং তেনাপ নুদতে প্র শ্রেয়াংসং ভ্রাতৃব্যং নুদতেহতি সদৃশং ক্ৰামতি নৈনং পাপীয়ানাপ্নোতি য এবং বিদ্বানেতয়েষ্ট্যা যজতে ॥১॥ [সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থস্য প্রথমানুবাকে ভ্রাতৃব্যবতঃ স্পর্ধমানস্য ত্রিহবিষ্কাং কঞ্চিদিষ্টিং বিধাতুং প্রস্তোতি। অর্থাৎ–এই অনুবাকে শত্রুগণের প্রতি স্পর্ধাপূর্বক তাদের বিনাশের নিমিত্ত ত্রিহবিষ্ক যাগের বিধান কথিত হয়েছে।
মর্মার্থ- (পূর্বকালে একদা) দেবতা ও অসুরগণ পরস্পর যুদ্ধকামী হয়ে উভয় পক্ষেই সৈন্যের দ্বারা বহ রচনা করেছিল (সন্নদ্ধমাসী)। দেবতাগণের পক্ষে মনুষ্যগণ ও পিতৃগণ এবং অসুরগণের পক্ষে রাক্ষস ও পিশাচগণ যোগদান করেছিল। অসুরবর্গ ছিল রাক্ষসগণের অন্তঃপাতী (অবাস্তর অর্থাৎ মধ্যগত) জাতি। (অর্থাৎ অসুর ও রাক্ষস একই জাতির মধ্যগত)। সেই যুদ্ধে স্বল্প প্রহারেই দেবগণের শরীরে যে রক্ত ক্ষরিত হত, প্রতিদিন রাত্রে আগমন পূর্বক রাক্ষসগণ সেই রক্ততাযুক্ত স্থানে কোনও বিষ ইত্যাদি প্রয়োগ করে ক্ষুভিত (ব্যাকুলিত) করত। সেইজন্য সেই ক্ষোভে দেবতাগণ মৃতপ্রায় হয়ে পড়তেন। অতঃপর রাত্রি প্রভাত হলে দেবগণ সেই অবস্থা লক্ষ্য করে এই কর্ম যে রাক্ষসগণের দ্বারা কৃত তা অবগত হলেন। তখন তারা (দেবগণ) রাক্ষসগণকে আমন্ত্রণ করে তাঁদের উৎকোচ প্রদানের প্রতিশ্রুতির দ্বারা নিজেদের অধীন করেন। তাতে রাক্ষসগণ বিজয়ফলের ভাগ প্রার্থী হয়ে আপন সৈন্যগণ সহ অসুর পক্ষ হতে নির্গত হয়ে দেবসৈন্যে (দেবপক্ষে) প্রবিষ্ট হলো। তাতে দেবগণ অসুরগণকে পরাজিত করার পরে রাক্ষসগণকেও দুরীকৃত করলেন (অপনোদিতবস্তঃ)। তখন রাক্ষসগণ নিশ্চিত হলো যে, দেবগণ মিথ্যা কর্ম করেছেন; সুতরাং তারা তাদের পরিবেষ্টিত করে ফেলল। তখন দেবগণ আপন কার্যসিদ্ধির নিমিত্ত অগ্নির শরণপ্রার্থী হলেন। এই প্রার্থনা পূর্তির জন্যই তারা ত্রিহবিষ্কা যাগ নির্বপণ করলেন। সেই বিষয়ে (অর্থাৎ এই ত্রিবিষ্কা যাগে) প্রথম হবির দেবতা হলেন প্রবান অগ্নি (প্রয়মগ্নির্ভরতস্যেত্যাদিকয়োর শ্রুতঃ প্ৰশব্দো যস্যাগেরস্তি সোহয়ং প্রবান), দ্বিতীয় হবির দেবতা হলেন বিবাধবান (পৃথুনেত্যস্মিন্মন্ত্রে শায়মাণে বিবাধশব্দো যস্যাগেরস্তি সোহয়ং বিবাধবান) অগ্নি, এবং তৃতীয় হবির দেবতা হলেন প্রতীকবান অগ্নি (ত্বমগ্নে প্রতাঁকেনেতি মন্ত্রে প্রতীকশব্দো যস্যাগেরস্তি সোইয়ং প্রতীকবা)। প্রবান্ অগ্নিকে অষ্টকপাল পুরোডাশ নির্বপণ পূর্বক যাগ করার ফলে সেই অগ্নি পূর্বদিক হতে রাক্ষসগণকে প্রতিহত করলেন। বিবাধবান্ অগ্নির উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করলে, তার ফলে দক্ষিণ ও উত্তর পার্শ্বস্ত রাক্ষসগণ বিতাড়িত হলো (বিবাধিতবন্তঃ)। প্রতীকবান্ অগ্নির উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানের ফলে পশ্চিম দিক হতে রাক্ষসগণ অপসারিত হলো (অপনোদিতবন্তঃ)। অতঃপর দেবতাগণ বিজয়ী হলেন এবং অসুরগণ পরাজিত হলো। যাঁরা শত্রুগণের প্রতি স্পর্ধমান পূর্বক এই যাগানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হন, তাঁরা প্রবান অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকপাল পুরোডাশ নির্বপণ করবেন এবং বিবাধবা ও প্রতীকবান অগ্নির উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করলে, তাদের শত্রুগণ বিতাড়িত হবে। তিনরকম শত্রু আছে–প্রবল, সমানবল ও হীনবল। ত্রিহবিষ্ক যাগে অর্থাৎ তিন প্রকার (প্রবান, বিধবা ও প্রতীকবা) অগ্নির যাগের ফলে ঐ তিনরকম শত্রু যথাক্রমে পরাভূত হয়; অর্থাৎ প্রবল শত্রুগণ প্রবান অগ্নির কৃপায় বিতাড়িত হয় (প্রণুদতে), সমবলসমম্বিত শত্রুগণ বিবাধবান্ অগ্নির কৃপায় আক্রান্ত হয় (অতিক্রামতি) এবং হীনবল শত্রুগণ প্রতীকবান্ অগ্নির কৃপায় যুগানুষ্ঠাকারীর নিকটস্থ হতে পারে না (ন প্রাপ্লেত্যেব) ১।
[সায়ণাচার্য বলেন–অর্থ দ্বিতীয়ে তসৈব বিজিতিসংজ্ঞামিষ্টিং বিধাতুং প্রস্তৌতি। অর্থাৎ–এই দ্বিতীয় অনুবাকে বিজিত নামে অভিহিত যাগের বিষয় কথিত হয়েছে]
.
দ্বিতীয় অনুবাক
মন্ত্র- দেবাসুরাঃ সংযত্তা আসন্তে দেবা অব্রুবনন্যা নো বীৰ্য্যাবত্তমস্তমনু সমারভামহা ইতি ত ইমব্রুবন্তং বৈ নো বীৰ্য্যাবত্তমোহসি কামনু সমারভামহা ইতি সোহব্রবীত্তিম্রো ম ইমাশুনুবো বীৰ্য্যাবতীস্তাঃ প্রণীতাথাসুরানভি ভবিষ্যথেতি তা বৈ, ব্রুহীতারুন্নিয়মংহোমুগিয়ং বিধেয়ামিয়াবতী ইত্যব্রবীত্ত ইয়াংহোমুচে পুরোশমেকাদশকপালং নিরবপন্নিায় বৈমৃধায়েন্দ্ৰায়েন্দ্রিয়াবতে যদিায়াং হোমুচে নিরবপন্নংহস এব তেনামুচ্যন্ত যদিায় বৈমৃধায় মৃধ এব তেনাপিঘ্নত যদিাযেন্দ্রিয়াবত ইন্দ্রিয়মেব তেনাহত্মম্নদধত ত্রয়স্ত্রিংশৎকপালং পুরোডাশং নিরবয়ন্ত্রয়ত্রিংশদ্বৈ দেবতাস্তা ইন্দ্র আত্মম্ননু সমারম্ভয়ত ভূত্যৈ তাং যাব দেবা বিজিতিমুত্তমামসুরৈজয়ন্ত যো ভ্রাতৃব্যবাৎ স্যাৎ স স্পর্ধমান এতয়েষ্ট্যা যজ্যেতায়াংহোমুচে পুরোশমেকাদশকপাল নিৰ্ব্বপেদিন্দ্রায় বৈমৃধায়ে ন্দ্রিয়াবতেহংহসা বা এষ গৃহীতো যম্মাচ্ছুয়ান্ ভ্রাতৃবব্যা যদিন্দ্রায়ংহোমুচে নির্বপত্যংহস এব তেন মুচ্যতে মৃধা বা এষোহভিষগো যম্মাৎ সমানেন্যঃ শ্রেয়ানুভ্রাতৃব্যে যদিায় বৈমৃধায় মৃধ এব তেনাপ হতে যদিায়েন্দ্ৰিয়াবত ইন্দ্রিয়মেব তেনাহমন্ধত্তে ক্রয়স্ত্রিংশৎ কপালং পুরোডাশম্ নিৰ্ব্বপতি ত্রয়স্ত্রিংশদ্বৈ দেবতাস্তা এব যজমান আত্মম্ননু সমারম্ভয়তে ভূত্যৈ সা বা এষা বিজিতির্নামেষ্টি এবং বিদ্বানেতয়েষ্ট্যা যজত উত্তমামেব বিজিতিং ভ্রাতৃব্যেণ বি জায়তে ॥ ২॥
মর্মার্থ- (পূর্বকালে একদা) দেবতা ও অসুরগণের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন হয়ে উঠেছিল। সেই যুদ্ধে উদ্যোগী দেবতাগণ মিলিত হয়ে পরস্পর কথোপকথন প্রসঙ্গে বললেন–আমাদের মধ্যে যিনি অতিশয়রূপে বীর্যবন্ত (শক্তিমান), আমরা তাকেই অনুসরণ করে সম্যভাবে যুদ্ধ শুরু করব (উপক্ৰমং কুর্ব)। সেই নিমিত্ত তারা (দেবরাজ) ইন্দ্রকে অতিশয় বীর্যবন্তরূপে নিশ্চিত হয়ে তাকে বললেন–আপনি আমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিমান, সুতরাং আমরা আপনাকেই অনুসরণ করব। ইন্দ্র বললেন-আমার যে তিনটি তনু আছে, সেইগুলির উদ্দেশে আপনারা যাগানুষ্ঠান করুন। তখন তারা তাঁর উক্তিমতো তিনটি তনুর তর্পণ (তৃপ্তি) সাধনে ব্রতী হলেন। তারা হবির দ্বারা ক্রমে পাপ-বিমোচক (পাপবিমোকং) বৈরীবিনাশক (বৈর্যপঘাতং) এবং সামর্থ্য-ধারক (সামর্থ্যধারণং), এই তিনটি ইন্দ্ৰতনুর প্রতিটির উদ্দেশে একাদশ কপাল করে পুরোডাশ নির্বপণ পূর্বক সর্বসমেত (মিলিত্বা) তেত্রিশ কপাল হবিঃ সম্পন্ন করলেন। এবং সেই জন্য ইন্দ্ৰ তেত্রিশসংখ্যক দেবতাকে আপন অধীনস্থ করলেন, অর্থাৎ তাদের ঐশ্বর্যসম্পন্ন করলেন। তার ফলে দেবতাগণ অসুরগণের সাথে যুদ্ধে শত্রুবধের উপযুক্ত ইন্দ্রিয়ধারণ করে বিজয় প্রাপ্ত হলেন। যে যজমান শত্রুগণকে পরাজিত করতে ইচ্ছা করেন, তিনি ঐরূপ তিনটি তনুর উদ্দেশে তিনটি যুগানুষ্ঠান করলে, তার ফলে, উত্তম বিজয় লাভ করবেন। এই হলো বিজিতি নামক যাগ; এই কথা বিদিত হয়ে যিনি শত্রুগণের সাথে যুদ্ধ করেন, তিনি পূর্বোক্ত পাপমোক্ষ বা পাপবিনোক ইত্যাদি রূপ উত্তম বিজয় লাভ করেন (উত্তমাং বিজিতিং প্রাপ্লেতি) ॥২॥
[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বিতীয় অনুবাকে শত্রুজয়ের নিমিত্ত বিজিতি নামক যজ্ঞের বিষয় কথিত হয়েছে। অথ তৃতীয়ে ভ্রাতৃব্যবতঃ স্পর্ধমানস্য সংবর্গেষ্টিং বিধিৎসুরাদৌ তদঙ্গভূতং মন্ত্রং পঠিতুং প্রস্তেীতি। অর্থাৎ এই অনুবাকে শত্রুবর্গের প্রতি স্পর্ধাপূর্বক সংবর্গ নামে অভিহিত যাগের বিষয় কথিত হয়েছে]
.
তৃতীয় অনুবাক
মন্ত্র- দেবাসুরাঃ সংযত্তা আসন্তেষাং গায়ত্রোজো বলমিয়িং বীৰ্য্যম প্রজাং পশুৎসংগৃহ্যাহদায়াপক্রম্যাতিষ্ঠত্তেহমন্যন্ত যতরাষ্য ইয়মুপাবৎর্সতি ত ইদং ভবিষ্যম্ভীতি তাং ব্যহ্য়ন্ত বিশ্বকৰ্ম্মন্নিতি দেবা দাভীত্যসুরাঃ সা নান্যতরাং শুনোপাবৰ্ত্তত তে দেবা এত্যজুরপশ্যগন্নাজোহসি সহে ইসি বলমসি ভ্রাজ্যেহসি দেবানাং ধাম নামাজি বিশ্বমসি বিশ্বায়ুঃ সৰ্ব্বমসি সৰ্বায়ুরভি ভূরিতি বাব দেবা অসুরাণামোজা বলমিয়িং বীৰ্যং প্রজাং পশূনবৃঞ্জত যায়পক্রম্যাতিষ্ঠত্তম্মদেতাং গায়ত্রীতীষ্টিমাহুঃ সদ্বৎসররা বৈ গায়ত্রী সম্বৎসরো বৈ তদপক্রম্যাতিষ্ঠদ্যদেতয়া দেবা অসুরাণামোজো বলমিয়িং বীৰ্য্য প্রজাং পশূনবৃঞ্জত তম্মদেং সংবর্গ ইতীষ্টিমাহুর্যো ভ্রাতৃব্যবাৎ স্যাৎ স স্পর্ধমান এতয়েষ্ট্যা যজেতাগ্নয়ে সংবর্গায় পুরোডাশমষ্টাকপালং নিৰ্ব্বপেত্তং শৃতমাসমেতেন যজুহভি মৃশেদোজ এব বলমিয়িং বীৰ্য্যং প্রজাং পশূ ভ্রাতৃব্যস্য বৃক্তে ভরত্যাত্মনা পহস্য ভ্রাতৃব্যো ভবতি ॥ ৩৷৷
মর্মার্থ- (পুরাকালে একদা) দেবতা ও অসুরগণের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন হলে গায়ত্রী তাদের উভয় পক্ষের ওজঃ (তেজ বা ওজো নামা অষ্টমীদশা), বল (শরীরের শক্তি), ইন্দ্রিয় (দৃষ্টি ইত্যাদির দক্ষতা), বীর্য (উৎসাহ), প্রজা, (পুত্র ইত্যাদি) ও পশু (গো ইত্যাদি)–এই ছয়টি পদার্থ সংগ্রহ করে নিয়ে উভয়ের নিকট হতে দূরে স্থিতবতী হয়েছিলেন, অর্থাৎ দূরে গমন করেছিলেন। তা দর্শন করে দেবতা ও অসুরগণ মনে মনে বুঝতে পারলেন–আমাদের উভয় বর্গের (দলের) মধ্যে যে বর্গ গায়ত্রীকে প্রাপ্ত হবে, সেই বৰ্গই ঐ ঐশ্বর্যসমূহ প্রাপ্ত হবে। তখন তারা উভয় পক্ষই গায়ত্রীকে বিশেষণযুক্ত শব্দের দ্বারা (বিলক্ষণেন শব্দেন) আহ্বান করতে লাগলেন। দেবতাগণ গায়ত্রীকে হে বিশ্বকর্মনি! এবং অসুরগণ তাঁকে হে দাভী (বিরোধিগণের দমনকারিণী)! বলে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু গায়ত্রী উভয়পক্ষের কোনও পুরুষের পক্ষে প্রাপ্তা হলেন না; অর্থাৎ দেবতা ও অসুর কোন পক্ষই গায়ত্রীকে প্রাপ্ত হতে সমর্থ হলেন না। তখন দেবগণ তাঁকে প্রাপ্তির উপায়স্বরূপ এই যজুমন্ত্রটি দর্শন করেছিলেন–ওজোহসি সোহসি বলমসি ইত্যাদি, অর্থাৎ আপনি ওজঃ (তেজ), আপনি ধৈর্য (সহিষ্ণু), আপনি বল, আপনি দীপ্তি, আপনি স্বর্গ (অর্থাৎ দেবগণের ধাম), আপনি দেবগণের নাম (অর্থাৎ ইন্দ্র ইত্যাদি নাম নামে অভিহিতা), আপনি বিশ্বমসি (অর্থাৎ অচেতন কৃৎস্য (সর্ব) জগৎ), আপনি বিশ্বায়ু (অর্থাৎ সর্ব (কৃৎস্ন) অন্নযুক্ত), আপনি সর্বমসি (অর্থাৎ চেতনরূপ কৃৎক্স (সর্ব) জগৎ), এবং আপনি সর্বায়ুরভিভূঃ (অর্থাৎ জগতের সকলকে চেতনারূপ আয়ুৰ্দাত্রী এবং শত্রুগণের পরাভবকারিণী)।এই স্তুতিরূপ সর্বাত্মক মন্ত্রের দ্বারা দেবতাগণ গায়ত্রীর প্রসাদে অসুরগণের ছয়টি দ্রব্য বিনাশ করলেন এবং নিজেদের ছয়টি দ্রব্য পুনরায় লাভ করলেন। এই যাগের দুটি নাম–গায়ত্রী ও সংবর্গ। যেহেতু গায়ত্রী সর্ব দ্রব্য সহ অপসৃত হয়েছিলেন এবং পুনরায় মন্ত্রের দ্বারা স্তুত হয়ে সেই সর্ব দ্রব্যই আনয়ন করেছিলেন, এই নিমিত্ত এই মন্ত্রের দ্বারা ক্রিয়মাণ যাগেকে গায়ত্রী বলা হয় (ক্রিয়মাণেষ্টির্গায়ত্রীত্যুচ্যতে)। গায়ত্রী হলেন সম্বৎসররূপা; কারণ সম্বৎসরে দ্বাদশ মাসের অর্ধ অর্ধ হিসাবে যে চতুর্বিংশতি সংখ্যা হয়, (অর্থাৎ এক সম্বৎসরে পক্ষ হিসাবে যে চতুবিংশতি সংখ্যা হয়)–তা গায়ত্রীর অক্ষরের সমান–সেই নিমিত্ত সম্বৎসরই হলেন গায়ত্রী। আবার যেহেতু এই যাগের দ্বারা দেবগণ অসুরবর্গের ওজঃ ইত্যাদি ছয়টি দ্রব্য সম্যরূপে বিনাশ করেছিলেন, সেই কারণে এই যাগকে সংবর্গ যাগও বলা হয়। যিনি শত্রুগণকে জয় করতে ইচ্ছা করেন, তিনি এই সংবর্গ যাগের দ্বারা অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকপাল পুরোশ নির্বপণ করবেন। (সংবর্গ শব্দ শ্রবণমাত্রই শত্রুসম্বন্ধীয় ওজঃ ইত্যাদি বর্জন হেতু এই অগ্নিও সংবর্গ অগ্নি নামে অভিহিত)।(পূর্বপঠিত ওজোহসি ইত্যাদি মন্ত্রের বিনিয়োগ কথিত হচ্ছে)-পুরোডাশ পাক পূর্বক বেদিতে সংস্থাপিত করে (বেদ্যামাসাদিতম) এই যজুমন্ত্রটি পাঠ করলে শত্রুর ওজঃ, বল, ইন্দ্রিয়, বীর্য, প্রজা ও পশু বিনাশ প্রাপ্ত হয় এবং নিজে (আত্মানা) শত্রুগণকে পরাভূত করতে সমর্থ হয়। ৩
[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থে গামূতং চরুং বিধাতু প্রস্তৌতি। অর্থাৎ–এই চতুর্থ অনুবাকে গামূত-চরু নির্বপণের বিষয় কথিত হয়েছে]
.
চতুর্থ অনুবাক
মন্ত্র- প্রজাপতিঃ প্রজা অসৃজত তা অস্মাৎ সৃষ্টাঃ পরীচীরায়ন্তা যত্রাবসন্ততে গমুদুদতিষ্ঠত্তা বৃহস্পতিশ্চান্ববৈতাং সোহবীদ বৃহস্পতিনয়া জ্বা প্রতিষ্ঠান্যথ ত্ব প্রজা উপাবৎভীতি তং প্রাতিষ্ঠত্ততে বৈ প্রজাপতি প্রজা উপাবৰ্ত্তন্ত যঃ প্রজাকামঃ স্যাত্তস্ম এতং প্রজাপত্যং গাৰ্ম্মতং চরুং নিৰ্ব্বপেৎ প্রজাপতিমের যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মৈ প্রজাং প্র জনয়তি প্রজাপতিঃ পশূনসৃজত তেহস্মাৎ সৃষ্টাঃ পরাঞ্চ আয়ন্তে যাবসন্তত গম্বুদ্বুদতিষ্ঠত্তান্ পূষা চাম্ববৈতাং সোহব্রবীৎ পূষাহনয়া মা প্রতিষ্ঠাথ ত্বা পশব উপিবস্তীতি মাং প্র তিষ্ঠেতি সোমোহব্রীষ্মম বৈ অকৃষ্টপচ্যমিত্যুভৌ বাং প্রতিষ্ঠানীত্যরবীত্তেী প্রাতিষ্ঠত্ততো বৈ প্রজাপতিং পশব উপাবৰ্ত্তন্ত যঃ পশুকামঃ স্যাত্তস্ম এতং সোমাপৌষ্ণং গাৰ্ম্মতং চরুং নিৰ্বপেৎ সোমাপূষণাবেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাস্মৈ পশু প্র জনয়তঃ সোমো বৈ রেতোধাঃ পূষা পশুনাং প্রজনয়িতা সোম এবাস্মৈ রো দধাতি পূষা পশূ প্র জনয়তি ॥৪৷
মর্মার্থ- (পুরাকালে) প্রজাপতি প্রজা সৃষ্টি করেন; তারপর তারা তার প্রতি পরাম্বুখ (বিমুখ) হয়ে তাঁর নিকট হতে প্রস্থান পূর্বক যে দেশে নিবাস করছিল, সেই দেশে গমুত নামক অরণ্যে বিনা কারণে (অকৃষ্টপচ্য) উরূপ ধান্য উৎপন্ন হতো। বৃহস্পতি ও প্রকৃত প্রজাপতি সেই প্রজাগণকে অনুসরণ করে তথায় উপনীত হয়েছিলেন। তখন বৃহস্পতি প্রজাপতিকে বললেন–আপনাকে এই গামুতরূপ (অর্থাৎ গমুর্তারণ্যে জাত অথবা গমুত নামক তৃণবিশেষে উৎপন্ন) ধান্যের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করছি; তার ফলে ধান্যবন্ত আপনার নিকট ধান্যের প্রার্থনায় প্রজাগণ আপনার নিকট উপস্থিত হবে। এই কথা বলে বৃহস্পতি প্রজাপতিকে ধন্যবন্ত করে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তারপর ধন্যবন্ত প্রজাপতির নিকট ধান্যার্থী হয়ে প্রজাগণ উপস্থিত হয়েছিল। যিনি প্রজা কামনা করেন, তিনি প্রজাপতির উদ্দেশে গামুত-চরু নির্বপণ করবেন। প্রজাপতির নিকট ভাগধেয় সহ গমন করলে তিনি এইরূপ প্রজার প্রজনন করেন। অতঃপর পশুকামীর দ্বারা সোম ও পূষার উদ্দেশে গামুত-চরু, নির্বপণের বিধি কথিত হচ্ছে)–(পুরাকালে) প্রজাপতি পশু সৃষ্টি করেন, তারপর তারা তার প্রতি বিমুখ হয়ে যে স্থানে অবস্থান করছিল, সেখানেও ভক্ষিততৃণের উচ্ছিষ্ট গোময় ইত্যাদির পতনের ফলে উৎপন্ন গামুত ধান্য ছিল (গমুদুদতিত্বা)। পূষা ও প্রজাপতি সেই পশুগণকে অনুসরণ করে তথায় উপনীত হলেন। তখন পুষা প্রজাপতিকে বললেন–আপনি এই ধান্যের দ্বারা সমৃদ্ধি লাভ করুন, তা হলে পশুগণ আপনার নিকট আগত হবে। সোমদেব বললেন-আমাকেও বিনাকারণে উৎপন্ন এই ধান্যে প্রতিষ্ঠিত করুন। তখন প্রজাপতি সেই গামুত ধান্যের দ্বারা পূষা ও সোমের প্রতিষ্ঠা পূর্বক পশুসমূহ প্রাপ্ত হয়েছিলেন (প্রতিষ্ঠাপ্য পশুনাপ্তবা)। যিনি পশু কামনা করেন, তিনি সোম ও পূষার উদ্দেশে গামুত-চরু নির্বপা করবেন। যিনি সোম ও পূষার নিকট তাদের ভাগধেয় সহ যথাশীঘ্র গমন করেন, তিনি তাঁদের দ্বারা পশু লাভ করেন। (অর্থাৎ পূষা ও সোম তাঁকে পশু প্রদান করেন)। সোমদেব হলেন রেতোধা, অর্থাৎ শুক্ৰধাতুর ধারক; এবং পূষা হলেন পশুনাং প্রজনয়িতা, অর্থাৎ পশুসমূহের জন্মদাতা। সোম রেতঃ প্রদান করেন এবং পূষা পশুসমূহকে গর্ভগ্রহণ করিয়ে থাকেন (পশূ প্র জনয়তি) ॥৪৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–অর্থ ব্যবহিতেন ষষ্ঠেন চিত্রাগং বিধিৎসুরাদৌ পঞ্চমেনানুবাকেনো হোমমন্ত্রান পঠতি। অর্থাৎ-ষষ্ঠ অনুবাকে যে চিত্রাযাগের কথা উক্ত হয়েছে, এই পঞ্চম অনুবাকে তার হোম-মন্ত্র পঠিত হচ্ছে।]
.
পঞ্চম অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নে গোভিন আ গহীন্দো পুষ্ট্যা জুষস্ব নঃ। ইন্দ্ৰো ধৰ্তা গৃহে নঃ। সবিতা যঃ সহস্রিয়ঃ স নো গৃহেযু রাণ। আ পূষা এত্বা বসু। ধাতা দদাতু নো রয়িমীশানো জগতস্পতিঃ। স নঃ পূর্ণেন ব্যবৎ। ত্বষ্টা যো বৃষভো বৃষা স নো গৃহে রাণ। সহস্রেণামুতেন চ। যেন দেবা অমৃতম দীর্ঘং শ্রবো দিব্যৈরয়ন্ত। রায়ম্পোষ মস্মভ্যং গং কুল্মিং জীবস আ যুবস্ব। অগ্নিগৃহপতিঃ সোমো বিশ্ববনিঃ সবিতা সুমেধাঃ স্বাহা। অগ্নে গৃহপতে যন্তে ঘৃত্যো ভাগনে সহ ওজ আক্রমমাণায় ধেহি শ্রৈষ্ঠ্যাৎ পথো মা যোষং মূর্ধা ভূয়াসং স্বাহা ॥৫॥
মর্মার্থ- হে অগ্নি! গো-বর্গের সাথে আপনি আমাদের প্রতি আগমন করুন। হে ইন্দু! পশুসমূহের পুষ্টি সাধনের দ্বারা আপনি আমাদের লক্ষ করুন। ইন্দ্র আমাদের গৃহের পশুসমূহের ধারণকর্তা হোন। সহস্রিয়, অর্থাৎ সহস্র পশুদ্বারা সমৃদ্ধ, যে সবিতা, তিনি আমাদের গৃহে আনন্দজনক হয়ে অবস্থান করুন। পশুর পোষক দেবতা পূষা আগমন করুন (আগচ্ছতি) এবং ধনসমূহও আগত হোক। সকলের বিধাতা (সর্বস্য বিধাতা) জগতের পালক ঈশ্বর আমাদের ধন দান করুন। সেই ঈশ্বর আমাদের পূর্ণরূপে ধনের দ্বারা রক্ষা করুন। সেই ত্বষ্টা, যিনি শ্রেষ্ঠ কামনাসমূহের বর্ষক, তিনি আমাদের গৃহে সহস্র ও অযুত পশুর সাথে আনন্দজনক হয়ে অবস্থান করুন। হে ধনপোষক! যে আপনি দেবতাগণের কীর্তিহেতুভূত অনুরূপ অমৃত স্থাপিত করেছেন, সেই আপনি আমাদের জীবনযাপনের নিমিত্ত গো-সঙ্ আহরণ পূর্বক যুক্ত করুন (মিশ্রয়)। অগ্নি আমাদের গৃহের অধিপতি; সোম বিশ্ববনি, অর্থাৎ সর্বজনের সেবা করেন (ভজত); সবিতা সুমেধা, অর্থাৎ শোভনা মেধাযুক্ত। এঁদের সকলের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করা হচ্ছে (স্বাহুতমস্তু)। হে গৃহপতি অগ্নি! আপনার ঘৃতযোগ্য যে ভাগ আছে, সেই ভাগের দ্বারা অনুষ্ঠানকারী যজমানের শরীরে অষ্টমধাতুরূপ ওজঃ (তেজঃ) স্থাপন করুন। যজমান আমি যেন শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠানরূপ পথ হতে বিযুক্ত না হই; আমি যেন যজমানগণের মধ্যে শিরোবৎ উত্তম হই। (দেহের মধ্যে উত্তম অঙ্গ হলো মস্তক, আমি যেন সকল যজমানরূপ অঙ্গের মধ্যে সেই মস্তকের ন্যায় উত্তমতা প্রাপ্ত হই)। আমি আপনার উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি ॥৫॥
[সায়ণাচার্য বলেন-পঞ্চম অনুবাকে চিত্রাযাগের হোমমন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে। অথ তং যাগং বিধত্তে। অর্থাৎ–এই ষষ্ঠ অনুবাকে সেই চিত্রাযাগ সম্পর্কে বলা হয়েছে।]
.
ষষ্ঠ অনুবাক
মন্ত্র- চিত্রয়া যজেত পশুকাম ইয়ং বৈ চিত্রা যদ্বা অস্যাং বিশ্বং ভূতমধি প্ৰজায়তে তেনেয়ং চিত্রা য এবং বিদ্যাংশ্চিত্ৰয়া পশুকামো যজতে প্ৰ প্ৰজয়া পশুভিৰ্মিথুনে জ্জায়তে প্রৈবাহয়েয়েন বাপয়তি রেতঃ সৌম্যেন দধাতি রেত এব হিতং ত্বষ্টা রুপাণি বি করোতি সারস্বতৌ ভবত এতদ্বৈ দৈব্যং মিথুনং দৈব্যমেবাস্মৈ মিথুনং মধ্যভো দধাতি পুষ্ট্যৈ প্রজননায় সিনীবাল্যৈ চর্ভবতি বাথৈ সিনীবালী পুষ্টিঃ খলু বৈ বা পুষ্টিমেব বাচমুপৈত্যৈন্দ্র উত্ত মা ভবতি তৈনৈব তন্মিথুনং সপ্তৈতানি হবীংষি ভবন্তি সপ্ত গ্রাম্যাঃ পশব সপ্তাহরণ্যাঃ সপ্ত ছন্দাংস্যুভয়স্যা বরুদ্ধ্যৈ অথৈতা আহুতীৰ্জ্জুহোত্যেতে বৈ দেবাঃ পুষ্টিপতয়স্ত এবাস্মিন্ পুষ্টিম দধতি পুষ্যতি প্রজয়া পশুভিরথো যদেতা আহুতীৰ্জ্জুহোতি প্রতিষ্ঠিত্যৈ ॥৬॥
মর্মার্থ- পশুকামী জন এই চিত্রা নামধেয় যাগের অনুষ্ঠান করবেন। সেই চিত্রা হলেন ভূমিস্বরূপা। যে কারণে (যেহেতু) এই ভূমিতে প্রাণীজাত অধিকরূপে উৎপন্ন হয়, সেই হেতু সেই বিচিত্র অর্থাৎ আশ্চর্যজনক প্রাণিসমূহের উৎপাদনের নিমিত্ত এই ভূমিকে চিত্রা বলা হয়। সেই রকমে, বিচিত্র প্রজা পশুর হেতুস্বরূপ যে যাগ হয়, সেই যাগকেও চিত্রাযাগ বলা হয়। এই কথা বিদিত হয়ে যে পশুকামী ব্যক্তি চিত্রার দ্বারা যাগানুষ্ঠান করেন, (বা চিত্ৰাযাগের অনুষ্ঠান করেন), তিনি প্রজা ও পশু লাভ করে থাকেন।–চিত্রার স্বরূপভূত সাতটি যাগবিশেষের বিধান ক্রমে তুলে ধরা হচ্ছে (উন্নয়তি)।–এই স্থানে অগ্নির উদ্দেশে হবির প্রবাপনে প্রকৃষ্টরূপে পশু-উৎপত্তির বীজ প্রক্ষিপ্ত হয়। ব্রীহি ইত্যাদি বীজের (অঙ্কুরোদ্দামের) নিমিত্ত গোময় ইত্যাদির প্রয়োগের মতো সোমের উদ্দেশে হবিঃ নির্বপণের দ্বারা প্রজা ইত্যাদির বীজস্বরূপ (অর্থাৎ প্রজননের হেতুস্বরূপ) পোষক রেতঃ ধারণ করা হয়। এবং তৃতীয় হবির দেবতা ত্বষ্টা সেই রেতঃকে নানারূপ আকারসম্পন্ন করেন। সরস্বতী দেবতা হলেন দেবগণের স্ত্রী-পুরুষরূপত্ব-দেবতাসম্বন্ধী মিথুনস্বরূপা; তার উদ্দেশে নির্বাপিত হবির মধ্যে অর্থাৎ যজ্ঞ অনুষ্ঠানের দ্বারা যজমানের নিমিত্ত গৃহের মধ্যে দৈব-মিথুন সম্পাদিত হয়ে থাকে। তা উৎপাদিত প্রজা ও পশুগণের পুষ্টি সম্পাদিত করে এবং প্রজা ও পশুগণের প্রজনেন বা উৎপত্তি সম্পাদিত করে। তারপর সিনীবালীর উদ্দেশে চরু নির্বপণ কর্তব্য। (সিনীবালী বাকের দেবতা। সভামধ্যে বাকের পুষ্টিহেতু যজমান পণ্ডিতরূপে অবলোকিত হয়ে থাকেন)। সিনীবালীর উদ্দেশে চরু নির্বপণ করলে বাক্য (অর্থাৎ পাণ্ডিত্যপূর্ণ বাকশক্তি) লাভ করা যায়। চরমে অর্থাৎ শেষে ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান কর্তব্য। কারণ ইন্দ্রের দ্বারা পুরুষত্ব ও সিনীবালীর দ্বারা স্ত্রীত্ব–এই উভয়ের মিলনে মিথুন হয়।-(পাঠপ্রাপ্ত হবিঃসংখ্যার প্রশংসা করা হয়েছে)–এই চিত্রাযাগে মোট সাতটি হবি (অর্থাৎ অগ্নি, সোম, ত্বষ্টা, সরস্বতী, সিনীবালী, ইন্দ্র ও ইন্দ্রাগ্নী) যথাক্রমে (পর পর) নির্বপণ করতে হয়; তার ফলে সাতটি গ্রাম্য পশু (গো, পুরুষ, অশ্ব, অজা, অবি, গর্দভ ও উষ্ট্র), ও সাতটি আরণ্য পশু (দ্বিখুর, শ্বাপদ, পক্ষী, সরীসৃপ, হস্তি, মর্কট ও জলচর তথা নদীসত) এবং সাতটি ছন্দ (গায়ত্রী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী, পঙক্তি, ত্রিষ্টুপ ও জগতী) লব্ধ হয়। (অর্থাৎ এতে পশুসঙ্ ও ছন্দসঙ্ উভয়ই লাভ করা যায়)। –হে অগ্নি! আপনি গো-গণের সাথে আগমন করুন ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা অগ্নি ও ইন্দ্রের উদ্দেশে সম্মিলিত হোম অর্থাৎ আহুতি প্রদান করণীয়। তার ফলে পুষ্টির পোষণকারী দেবতাগণ প্রজা ও পশুর সাথে পুষ্টি বা পোষণ দান করেন; এই আহুতি সমূহ প্রতিষ্ঠার কারণ হয় ॥৬॥
[সায়ণাচার্য বলেন-ষষ্ঠ অনুবাকে পশুকামীর পক্ষে অনুষ্ঠেয় চিত্রা নামে আখ্যাত যাগের বিষয় কথিত হয়েছে। অতঃপর সপ্তম হতে দশম অনুবাক পর্যন্ত কারীরী যাগের বিষয় প্রতিপাদিত হয়েছে। সপ্তম অনুবাকে তার কিছু বিধৃত]
.
সপ্তম অনুবাক
মন্ত্র- মারুতমসি মরুতামোজোহপাং ধারাং ভিন্ধি রময়ত মরুতঃ শ্যেনমায়িনং মনোজবসং বৃষণং সুবৃক্তি। যেন শৰ্দ্ধ উগ্রমবসৃষ্টমেতি তদশিনা পরি ধং স্বস্তি। পুরোবাতো বর্ষারাবৃং স্বাহা বাতাবর্যমুগ্নরাবৃৎ স্বাহা। স্তনয়ম্বৰ্ষ ভীমরাবৃৎ স্বাহাহনশন্যবস্থূৰ্জন্দিদ্যুদ্বষেরাবৃৎ স্বাহাইতিরাং বর্ষ পুঞ্জিরাবৃৎ স্বাহা বহু হায়মবৃষাদিতি শ্ৰুতরাবৃৎ স্বাহাহতপতি বর্ষান্বিরাড়াবৃৎ স্বাহাহবস্ফূর্জন্দিদ্যুদ্বন ভূতরাবৃৎ স্বাহা মান্দা বাশাঃ শুক্কুরজিরাঃ। জ্যোতিষ্মতীস্তমম্বরীরুন্তীঃ সুফেনাঃ। মিত্রভৃতঃ ক্ষত্ৰভৃতঃ সুরাষ্ট্র ইহ মাহবত। বৃষ্ণো অশস্য সন্দানমসি বৃষ্ট্যৈ হোপ নহ্যামি ॥৭॥
মর্মার্থ- হে কৃষ্ণবাস (কৃষ্ণবর্ণ পরিধেয় বস্ত্র)! তুমি মরুতের সাথে সম্বন্ধবিশিষ্ট। (অর্থাৎ বস্ত্রে প্রক্ষিপ্ত কৃষ্ণদ্রব্য মিশ্রিত জল মরুৎ-গণ শোষণ করেন; সেই বস্ত্রের উদ্দেশে আহ্বান করা হচ্ছে)। অতএব তুমি মরুৎ-গণের বলস্বরূপ, জলের ধারার উদ্দেশে প্রতিবন্ধরূপ মেঘকে ভিন্ন করো (মেঘং ভিন্ধি)। হে মরুৎ-গণ! আপনারা শ্যেনের ন্যায় প্রবলগতিসম্পন্ন পুরোবাতের (সম্মুখ দিকের অর্থাৎ বিপরীত দিক হতে বাহিত বায়ুর সাথে ক্রীড়া করে থাকেন। (কীরকম পুরোবাত? না) মনের ন্যায় বেগশালী, বীর্যান্বিত জলের বর্ষণকারী, পশ্চাতের বায়ুর সুষ্ঠু বর্জনকারী এবং যার দ্বারা মেঘ হতে মোচিত জল তীব্র ধারারূপ হয়ে শীর্ণতা প্রাপ্ত হচ্ছে–সেই পুরোবাত।–হে অশ্বিযুগল (দেবতাগণের বৈদ্যদ্বয়)! সেই জল যাতে মঙ্গলকর (ক্ষেমকরং) হয়, সেইভাবে আপনারা তা ধারণ করুন। যে পুরোবাত বৃষ্টির প্রবর্তন করে প্রজাগণের তুষ্টি সাধনপূর্বক আবর্তন করে, সেই পুরোবাতের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করা হচ্ছে। ঝঞ্জাবায়ুর সাথে যুক্ত হয়ে (প্রবাতেন যুক্ত) তীব্র ধারাযুক্ত যা ভীষণ গর্জন পূর্বক ভয়ঙ্কর, প্রাণঘাতক বজ্রপতনের মতো শব্দকারী, বিদ্যুৎ প্রকাশের সাথে যুক্ত, বর্ষধারায় শস্যক্ষেত্র ইত্যাদির উদ্দীপক, দিবারাত্র পৃথিবীর পূরয়িতা, প্রভূত বর্ষণকারী বলে জনগণের মধ্যে খ্যাত, রৌদ্রের অবস্থানেও বিশেষরূপে রাজমান–সেই গর্জনকারী ও বিদ্যুযুক্ত অর্থাৎ যথৌক্তগুণযুক্ত সর্বধারণক্ষম বায়ুর উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। হে মান্দা-বাশা (মান্দা অর্থাৎ হর্ষহেতুকরী ও বাশা অর্থাৎ শব্দের দ্বারা বর্ষণযুক্তা), শুক্কু (শুদ্ধি হেতুকরী), অজিরা (প্রবাহরূপে গমনশীলা), জ্যোতিষ্মতী (শুকুরূপযুক্তা), তমস্বরী (সূর্যকে আচ্ছাদিত করে যেভাবে তমঃ অর্থাৎ অন্ধকার ঘটানো হয়, সেইভাবে আপন ইচ্ছায় অন্ধকার সৃষ্টিকারিণী, উতী (ভূমির ক্লেদনাশিনী), সুফেনা (জলপ্রবাহের বাহুল্যের দ্বার বহুফেনযুক্তা), মিত্রভূত (জগতের মিত্রভূতা ওষধিসমূহের ধারণকত্রী), ক্ষত্ৰভৃত (সুবৃষ্টির দ্বারা দেশাধিপতি রাজবর্গের সন্তোষ পোষণকারিণী), সুরাষ্ট্রা (শোভন শস্যের দ্বারা পূর্ণ রাষ্ট্রসৃষ্টিকারিণী)-হে জলবর্গ! তোমরা আমাকে এই যজ্ঞকর্মে ফলপ্রদানের দ্বারা রক্ষা করো। –হে রঞ্জু! কৃষ্ণসার মৃগের চর্মদ্বারা নির্মিত তুমি সেচনসমর্থ অশ্বের (বৃষ্ণোহশ্বস্য) মুখের দৃঢ় বন্ধনসাধন হও; অতএব বৃষ্টিসৃষ্টির নিমিত্ত এই রজ্জ্বরূপ হে কৃষ্ণাজিন! তোমাকেও বন্ধন করছি । ৭।
[সায়ণাচার্য বলেন-সপ্তম অনুবাকে কারীরী যাগের প্রাচ্যাঙ্গ মন্ত্রসমূহ কথিত হয়েছে। অথাবশিষ্টমন্ত্রা অষ্টমে বণ্টন্তে। অর্থাৎ–এই অষ্টম অনুবাকে কারীরী যাগের অবশিষ্ট মন্ত্রগুলি বর্ণিত হচ্ছে।]
.
অষ্টম অনুবাক
মন্ত্র- দেবা বসব্যা অগ্নে সোম সূর্য। দেবাঃ শৰ্ম্মণ্যা মিত্রাবরুণাহৰ্য্যমন। দেবাঃ সপীতয়োহপাং নপাদাশুহোমন। উল্লো দত্তোদধিং ভিন্ত দিবঃ পর্ফন্যান্তরিক্ষাৎ পৃথিব্যাস্ততো নো বৃষ্ট্যাহত। দিবা চিত্তমঃ কৃন্তি পৰ্জন্যেনোদবাহেন। পৃথিবীং যন্দন্তি। আ যং নরঃ সুদানবো দদাশুষে দিবঃ কোশমচুচ্যঝুঃ। বি পৰ্জনাঃ সৃজন্তি রোদসী অনু ধন্বনা যন্তি বৃষ্টয়ঃ। উদীয়থা মরুতঃ সমুদ্রতো ঘূয়ং বৃষ্টিং বর্ষয়থা পুরীষিণঃ। ন বো দম্রা উপ দস্যন্তি ধেবঃ শুভং যাতামনু রথা অবৃসত। সৃজা বৃষ্টিং দিব আহদ্ভিঃ সমুদ্রং পৃণ। অজা অসি প্রথমজা বলমসি সমুদ্রিয়। উন্নন্তয় পৃথিবীং ভিন্ধীং দিব্যং নভঃ। উদ্বো দিব্যস্য নো দেহীশানো বি সৃজা দৃতিম্। যে দেবা দিবিভাগা যেহস্তবিক্ষভাগা যে পৃথিবিভাগাঃ। ত ইমং যজ্ঞমবস্তু ত ইদং ক্ষেত্রমা বিশন্তু ত ইদং ক্ষেত্ৰমনু বি বিশন্তু ॥৮॥
মর্মার্থ- হে প্ৰজাগণের বাসয়িতা (আশ্রয়দাতা) অগ্নি, সোম ও সূর্য দেবত্রয়! হে সুখপ্রদায়ক মিত্র, বরুণ ও অৰ্মা দেবত্রয়! হে জলের অবিনাশকারী (অপাং নাপাদুকানামবিনাশয়িত) শীঘ্রগতিসম্পন্ন সোমপানকারী দেবগণ! আপনারা দ্যুলোক, অন্তরীক্ষ ও পৃথিবী–এই তিন লোকের নিমিত্ত মেঘ বিদারণ পূর্বক বৃষ্টির (জলের) দ্বারা আমাদের রক্ষা করুন। যখন দেবগণ বিশেষভাবে ক্লেদযুক্ত পৃথিবীকে জলের দ্বারা ধৌত করেন, তখন দিবাভাগও অন্ধকারে আবৃত করে দেন, রাত্রের আর কি কথা? (অর্থাৎ রাত্রি তো এমনই অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে)। মনুষ্যরূপা ঋত্বিৰ্গণ সুষ্ঠুভাবে হবিঃ দানকারী যজমানের নিমিত্ত দুলোক হতে জলের বাহক মেঘকে প্রসারিত করে থাকেন। পূর্ববর্তী সেই এক মেঘও বহু মেঘ হয়ে দ্যাবাপৃথিবীকে লক্ষ্য করে বিবিধ বৃষ্টির সৃষ্টি করে; কিন্তু মরুভূমিকে জলরহিত রাখে। হে মরুৎগণ! আপনারা সমুদ্রসমান মেঘ হতে বৃষ্টি উৎপাদিত করুন; তারপর পাংসুযুক্ত (ধূলিময়) ভূপ্রদেশসমূহ প্লাবিত করুন (বষয়থাপ্লাবয়থ)। হে ভূমিশোষণ-নিবারণকারী মরুৎ-গণ! আপনাদের ধেনুসদৃশ মেঘসমূহ কখনও উপেক্ষার যোগ্য নয়। (কারণ) তার দ্বারা আপনারা জগতের প্রতি অনুগ্রহরূপ মঙ্গলকার্য সাধিত করে থাকেন। আপনাদের রথের অনুবর্তনকারী (পশ্চাতে গমনকারী) অন্য দেবগণও বৃষ্টি দামের নিমিত্ত রথে আরোহিত হয়ে আমাদের এই যজ্ঞকর্মে সমাগত হোন। হে মরুৎ সঙ্! দ্যুলোকের নিকট হতে বৃষ্টি সৃষ্টি করুন, বহ্নিদাহসদৃশ রৌদ্রতাপে শুষ্ক এই সমুদ্রসদৃশ কুম্ভ পূর্ণ করুন। হে মেঘ! তুমি জল হতে উৎপন্ন (অজা) প্রথমজাত, সমুদ্রসম্বন্ধি বলের দ্বারা বৃষ্টির উৎপাদনে সামর্থযুক্ত। (অর্থাৎ জল যেন তোমার মাতা-পিতা, তাদের দ্বারাই তুমি উৎপন্ন)। হে পুনর্নবা (পুনরায় নবরূপে জাত) অর্থাৎ বর্ষা! তুমি প্রকৃষ্টরূপে ক্লেদযুক্ত পৃথিবীকে সিঞ্চিত করো; তার নিমিত্ত আকাশের ন্যায় ব্যাপ্ত মেঘমণ্ডলকে বিদীর্ণ করো; এবং বিদারণ পূর্বক আকাশে উৎপন্ন জল আমাদের প্রদান করো। (অর্থাৎ আমাদের প্রতি বর্ষণ করো)। পুনর্নর্বা-সমূহের (পুনর্নর্বায়া) অর্থাৎ পুনরায় নবরূপে জাত ওষধিসমূহের উৎপাদক হে দেব! আপনি বর্ষণের নিমিত্ত জলপূর্ণ ভিস্তীর সমান মেঘ প্রেরিত করুন (বিসৃষ্টদ্বারং কুরু)। যে দেবতাগণ দুলোকের, অন্তরীক্ষলোকের ও পৃথিবীলোকের আধার, তারা সেই তিন লোক হতে এই যজ্ঞে আগমন পূর্বক প্রথমে শস্যনিষ্পদক ক্ষেত্রে সামান্যরূপে প্রবেশ করুন এবং তারপর প্রতি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রবেশ করুন। ৮।
[সায়ণাচার্য বলেন–অথ নবমে পূর্বভাগস্থাঃ সপ্তমানুবাকোক্তমন্ত্রা ব্যাখ্যায়ত্তে। অর্থাৎ–এই নবম অনুবাকে সপ্তম অনুবাকে উক্ত পূর্বভাগের মন্ত্রগুলি ব্যাখ্যাত হচ্ছে।]
.
নবম অনুবাক
মন্ত্র- মারুতমসি মরুতামোজ ইতি কৃষ্ণং বাসঃ কৃষ্ণতৃষং পরি ধত্ত এতদ্বৈ বৃষ্ট্যৈ রূপং সরূপ এব ভূত্বা পর্জন্যং বয়তি রময়ত মরুতঃ শ্যেনমায়িনমিতি পশ্চাদ্বতং প্রতি মীবতি পুরোবাতমেব জনয়তি বর্ষস্যাবরুদ্ধে বাতনামানি জুহোতি বার্বৈ বৃষ্টা ঈশে বায়ুমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবামৈ পজ্জন্যং বর্ষয়ত্যষ্টেী জুহোতি চতম্রো বৈ দিশশ্চতম্রোইবান্তরদিশা দিগভ্য এব বৃষ্টিং সং প্র চ্যাবয়তি কৃষ্ণাজিনে সং যৌতি হবিরেবাকোহস্তৰ্বেদি সং যৌত্যবরদ্ধ্যৈ যতীনামদ্যমানানাং শীর্ষাণি পরাহপতন্তে খর্জুরা অভবতেষাং রস উর্ধোহ পতত্তানি কররাণ্যভবৎ সৌম্যানি বৈ করীরাণি সৌম্যা খলু বা আহুতির্জিবো বৃষ্টিং চ্যাবয়তি যকরীরাণি ভবন্তি সৌম্যয়ৈবাহহুত্যা দিবো বৃষ্টিমব রুন্ধে মধু সং যৌত্যপাং বা এষ ওষধীনাং রসো যন্মধ্বত্ত্য এবৌষধীভ্যো বৰ্ষত্যখো অঙ্য এবৌষধীভ্যো বৃষ্টিং নি নয়তি মান্দা বাশা ইতি সং যৌতি নামধেয়ৈ রেবেনা অচ্ছৈত্যতো যথা ব্রুয়াদসাবেহীত্যেবমেবৈনা নামধেয়েরা চ্যাবয়তি বৃষ্ণো অশ্বস্য সানমসি বৃষ্ট্যৈ তোপ নহ্যামীত্যাহ বৃষা বা অশো বৃষা পজ্জন্যঃ কৃষ্ণ ইব খলু বৈ ভূত্বা বৰ্ষতি রুপেণৈবৈনম সমৰ্দ্ধয়তি বৰ্ষস্যাবরুদ্ধ্যে ॥৯৷৷
মর্মার্থ- (যজমানের বস্ত্র পবিধান বিধি)-মারুত অসি মরুতাম্ ওজঃ অর্থাৎ তুমি মরুৎ-গণের বলস্বরূপ–এই মন্ত্রে কৃষ্ণবস্ত্র পরিধানের কথা ব্যক্ত হয়েছে। জলপূরিত মেঘের দ্বারা আদিত্য প্রকাশিত হলে অর্থাৎ সর্বত আবৃত থাকায় বৃষ্টির স্বরূপ কৃষ্ণবর্ণ হয় (কৃষ্ণভাতি)। সেই রকম যজমানও কৃষ্ণবস্ত্র পরিহিত থাকায় বৃষ্টির সমান রূপ প্রাপ্ত হয়ে মেঘ বর্ষণে সমর্থ হন (প্রভুর্ভবতি)। রময়ত মরুতঃ শ্যেনমায়িনমিতি ইত্যাদি, অর্থাৎ হে মরুৎ-গণ! আপনাক শ্যেনের ন্যায় প্রবলগতিসম্পন্ন হয়ে পুরোবাতের (সন্মুখ দিকের অর্থাৎ বিপরীত দিক হতে বাহিত বায়ুর) সাথে ক্রীড়া করে থাকেন-এই মন্ত্রে পশ্চাতের বাতাস রুদ্ধ পূর্বক সন্মুখস্থ বাতাস বর্ষণের নিমিত্ত উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাতনামানি জুহোতি ইত্যাদি, অর্থাৎ পুরোবাতের উদ্দেশে স্বাহামন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি–এই মন্ত্রের বায়ুর নাম করে আহুতি প্রদান করা হচ্ছে। বায়ু হলেন বৃষ্টির ঈশ্বর (স্বামী বা প্রভু), সুতরাং বায়ুর নিকটু তার ভাগধেয় সহ গমন করলে (অর্থাৎ বায়ুর উদ্দেশে হোম করলে) বায়ু তাকে (অর্থাৎ সেই হেমকারীকে) বৃষ্টি দান করেন। মান্দা বাশাঃ শুন্ধরজিরাঃ ইত্যাদি, অর্থাৎ হে মান্দা-বাশা, শুন্ধু, জ্যোতিষ্মতি ইত্যাদি মন্ত্রে তার আধারের কথা ব্যক্ত হয়েছে। কৃষ্ণাজিনের উপর হবিঃ-স্বরূপ ব্রীহি (তণ্ডুল) পেষণ করা হয়ে থাকে (ব্রীহিনহন্তি তণ্ডুলান্ পিনষ্টি চ)। সেই হেতু এই স্থানেও অর্থাৎ বেদির মধ্যে হবির মিশ্রণ কর্তব্য। পারমহংসরূপে চতুর্থাশ্রমে প্রাপ্ত (অর্থাৎ সন্ন্যাসাশ্রম প্রাপ্ত পরমহংস নামে কথিত) যে যতিদের (তপস্বীগণের) মুখে ব্রহ্মত্ম প্রতিপাদক বেদান্ত শব্দ নেই ইন্দ্র তাদের আরণ্য হিংস্ৰজন্তসমূহের মধ্যে নিক্ষেপ করেন (শ্বভ্য প্রাযচ্চৎ)। (নিত্যকর্ম পরিত্যাগ করে, বেদান্ত শ্রবণ না করে, যে সন্নাসী অবস্থান করেন, তিনি পতিত হয়ে থাকেন, তাতে কোন সংশয় নেই)। নেকড়ে বাঘ শৃগাল ইত্যাদির দ্বারা ভক্ষিত যতিগণে মস্তক বা কপালের যে অস্থিসমূহ ভূমিতে পতিত হয়, সেগুলি হতে খর্জুরবৃক্ষ উৎপন্ন হয়। তাল নামে অভিহিত সেই সহাখজুর ফলগুলি (অর্থাৎ তালবৃক্ষের তাল নামক ফলগুলি) মস্তকের মতো দৃষ্ট হয়। (অর্থাৎ মনুষ্যমুণ্ডের আকারসম্পন্ন হয়ে থাকে)। সেই ফলগুলির রস ঊর্ধ্ব হতে নিম্নের ভূমিতে পতিত হয়ে সোমলতার ন্যায় (অর্থাৎ সোমলতার তুল্য) অঙ্কুররূপে উন্নত হয়। সেইগুলিকে করীর শব্দে অভিহিত করা হয়। এই নিমিত্ত এই করীরসমূহ সোমাঙ্কুরের ন্যায় সৌম্য (সুন্দর বা সোমতুল্য)। এবং সেই সৌম্যসমূহের আহুতি প্রদান করলে আকাশ হতে বৃষ্টি পতিত হয় (প্ৰচ্যাবয়তি)। মক্ষিকা (মধুমক্ষিকা) নানারকম পুষ্প হতে মধু রস সংগ্রহ পূর্বক মধু সঞ্চয় করে (মধু কুৰ্বান্তি); এবং সেই রসসমূহ হতে (অর্থাৎ মধু হতে) ওষধি উৎপন্ন হয় এবং সেই ওষধি বৃষ্টি আনয়ন করে। ওষধির উৎপাদন ও দ্রবজের কারণে তাতে উভয়ের সারত্ব থাকে (রসানামোষধি জন্যত্বাäবচ্চোভয়সারত্ব। মান্দা বাশা ইত্যাদি জলের নামের দ্বারা তাদের আহ্বান করা হয়েছে। (কৃষ্ণাজিনবন্ধনের মন্ত্র ব্যক্ত হচ্ছে)–হে রজ্জো তৃং বৃষ্ণোহশ্বস্য ইত্যাদি,অর্থাৎ হে রক্ষ্ম! কৃষ্ণসার মৃগের চর্মদ্বারা নির্মিত তুমি সেচনসমর্থ অশ্বের মুখের দৃঢ় বন্ধনসাধন হও ইত্যাদি মন্ত্রে যেমন অশ্ব সেচনসমর্থ এইরকমে পন্য বা মেঘও সেচনসমর্থ জলে পূর্ণ হয়ে (উদকপূর্ণেন) কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে, এবং তার পর বর্ষণ সম্পাদন করে। এতএব কৃষ্ণবর্ণ রঞ্জুরূপের দ্বারা মেঘ সমৃদ্ধ হয় এবং তার ফলে বর্ষণ সম্পন্ন হয়ে থাকে ॥৯॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অথোত্তরভাগস্থমন্ত্র দশমে ব্যাখ্যায়ন্তে। অর্থাৎ এই অনুবাকে কারীরী যাগের উত্তরবাগস্থ অর্থাৎ অষ্টম অনুবাকে উক্ত মন্ত্রগুলি ব্যাখ্যাত হয়েছে]
.
দশম অনুবাক
মন্ত্র- দেবা বসবা দেবাঃ শৰ্ম্মণ্যা দেবাঃ সপীয় ইত্যা বন্ধুতি দেবাতাভিরোবাল্বং বৃষ্টিমিচ্ছতি যদি বর্ষের্ভাবতে হোতব্যাং যদি ন বর্ষেদ্যে ভূতে হবিনিৰ্ব্বপেদহোরাত্রে বৈ মিত্রাবরুণাবতোরাত্ৰাভ্যাং খলু বৈ পৰ্জ্জনন্যা বর্ষতি নক্তং বা হি দিবা বা বৰ্ষতি মিত্রাবরুণাবেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাস্মৈ অহোরাত্ৰাভ্যাং পর্জন্যং বর্ষয়তোহগ্নয়ে ধামচ্ছদে পুরোডাশমষ্টাকপালং নিৰ্ব্বপেস্মারুতং সপ্তকপালং সৌৰ্য্যমককপালমগ্নি ইতো বৃষ্টিম দরৈয়তি মরুতঃ সৃষ্টাং নয়ন্তি যদা খলু বা অসাবাদিত্যো ন্যত্রশিভিঃ পৰ্য্যাবৰ্ত্ততেইথ বৰ্ষতি ধামচ্ছদিব খলু বৈ ভূত্বা বর্ষত্যেতা বৈ দেবতা বৃষ্ট্যা ঈশতে তা এব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাঃ এবাস্মৈ পর্জন্যংবর্ষয়তাবর্ষিষ্যন্বষত্যেব সূজা বৃষ্টিং দিব আহদ্ভিঃ সমুদ্রং পূণেত্যাহেমাশ্চৈবামূশ্চাপঃ সমৰ্দ্ধয়ত্যথো আভিরেবাচ্ছৈত্যজা অসি প্রথমজা বলমসি সমুদ্রিয়মিত্যাহ যথাযজুরেবৈতদুন্নয় পৃথিবীমিতি বর্ষাং জুহোত্যে বা ওষধীনাং বৃষ্টিবনিস্তয়ৈব বৃষ্টিমা চ্যাবয়তি যে দেবা দিবিভাগা ইতি কৃষ্ণাজিনম ধূনোতীম এবাস্মৈ লোকাঃ প্রীতা অভীষ্টা ভবন্তি ॥১০৷
মর্মার্থ– দেবাঃ বসবা দেবাঃ শৰ্মণ্যা দেবাঃ সপীতয় ইত্যাদি, অর্থাৎ হে প্রজাগণের বাসয়িতা অগ্নি, সোম ও সূর্য দেবত্রয়! হে সুখপ্রদায়ক মিত্র, বরুণ ও অর্যমা দেবত্রয়! হে সোমপানকারী দেবতাবর্গ! ইত্যাদি মন্ত্রে সেই সেই দেবতার অনুগ্রহে তিন দিনের প্রতিদিনই বৃষ্টির ইচ্ছা করা হয়েছে। যদি প্রথম দিনে বৃষ্টি হয়, তবে পিণ্ডয় হোমের দ্বারা যজ্ঞকর্মের সমাপ্তি করা বিধি (পিণ্ডত্ৰয়হোমেনৈব কর্মর্সমাপ্তিঃ)। সেইরকম দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনেও করণীয়। এই তিন দিনে যদি বৃষ্টির অভাব ঘটে, তবে চতুর্থ দিনে পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়। সূর্যের প্রকাশযুক্ততার কারণে দিনের দেবতা মিত্র (সূর্য), এবং অন্ধকারের দ্বারা লীনত্বহেতু রাত্রের দেবতা বরুণ (জলাধিপতি দেবতা, যিনি পশ্চিম দিকের অর্থাৎ সূর্যাস্তের অভিমুখী দেবতাও বটেন)। দিবা বা রাত্র ব্যতীত মেঘ বৃষ্টির বর্ষণে অক্ষম (ন ক্ষমঃ), কারণ দিবা ও রাত্র ব্যতীত আর কোন কালই নেই (কালান্তরস্যাভাবাৎ)। রাত্রি বা দিবসে অথবা দিবারাত্র (সর্বদা) কখন যে বর্ষণ হবে, তা পূর্বে জ্ঞাত হওয়া যায় না বলেই নিরন্তর বন্ধন করনীয় (অর্থাৎ রাত্রি ও দিনকে যেন যজ্ঞের দ্বারা বন্ধন করা হচ্ছে, এমনভাবে অবিচ্ছদে যজ্ঞ সাধনীয়)। তাতে মিত্র ও বরুণ তুষ্ট হয়ে বর্ষণ দান করেন (বষয়তঃ)। (অর্থাৎ মিত্র ও বরুণের নিকট তাঁদের ভাগধেয় সহ গমন করলে, তার ফলস্বরূপ আহোরাত্রব্যাপী মেঘ বর্ষণ দান করে)। ধাম বা স্থানের আচ্ছাদক অগ্নিদেবতার উদ্দেশে অষ্টকপাল পুরোডাশ, মরুৎ-দেবতার উদ্দেশে সপ্তকপাল পুরোডাশ, এবং সূর্যদেবতার উদ্দেশে এক কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করণীয়। (স্মৃতিশাস্ত্র অনুসারে) অগ্নিদেব সূর্য বা আদিত্যদেবের দ্বারা বৃষ্টির উৎপাদন করেন, সেই উৎপাদিত বৃষ্টিকে মরুৎ-গণ যেস্থানে সেস্থানে (যত্র তত্র) বাহিত করেন (নয়ন্তি)। যে সময়ে আদিত্যদেব তীব্র রশ্মির দ্বারা অতিশয় সন্তাপ দান করেন, তখন মেঘের দ্বারা তিনি বর্ষণ করিয়ে থাকেন। গৃহ ইত্যাদি আচ্ছাদিত করেই যেন বহুল মেঘযুক্ত হয়েই বর্ষণ করেন। সেই নিমিত্ত অগ্নি, মরুৎ ও আদিত্য এই তিন দেবতাকে বৃষ্টির নিয়মনে সমর্থ দেবতারূপে অভিহিত করা হয়। এঁদের নিকট এঁদের ভাগধেয় নিয়ে গমন করলে (অর্থাৎ হবিঃ নির্বপণ করলে) তাতে তুষ্ট হয়ে তারা যজমানের নিমিত্ত বর্ষণ করেন। সৃজা বৃষ্টিং দিব আহদ্ভিঃ সমুদ্রং পৃণ অর্থাৎ হে মরুৎসঙ্! দুলোকের নিকট হতে বৃষ্টি সৃষ্টি করে বহ্নিদাহসদৃশ রৌদ্রতাপে শুষ্ক এই সমুদ্রসদৃশ কুম্ভ পূর্ণ করুন–এই মন্ত্রে জলের দ্বারা পূর্ণ করার অর্থে এই ভূলোকস্থিত জলের বৃদ্ধি সূচিত মা হচ্ছে; এবং সৃজা বৃষ্টিং এই মন্ত্রাংশের দ্বারা ভূলোকস্থিত এই জল স্বর্গস্থিত জল প্রাপ্তির নিমিত্ত গমন করছে–এই অর্থ সূচিত হচ্ছে। অজাঅসি প্রথমজা বলমসি সমুদ্রিয় অর্থাৎ হে মেঘ! তুমি জল হতে উৎপন্ন প্ৰথমজাত, সমুদ্রসম্বন্ধি বলের দ্বারা বৃষ্টির উৎপাদনে সামর্থযুক্ত এই মন্ত্রের যথাত যজুই তার অর্থ সূচিত করছে (যথাযজুরেবৈতৎ)। উন্নম্ভয় পৃথিবীং ভিন্ধীদং দিব্যং নভঃ ইত্যাদি মন্ত্রে জলপূর্ণ ভিস্তীর সমান মেঘ প্রেরণ করুন ইত্যাদি বচনের দ্বারা বর্ষার উদ্দেশে হোম অনুষ্ঠানের কথা ব্যক্ত হয়েছে। বর্ষাকালে ওষধিসমূহের মধ্যে পুনর্ণবা (বর্ষা) বহুলতর বৃষ্টির সমুদ্ভব করে। যে দেবা দিবিভাগা ইত্যাদি মন্ত্রে দ্যুলোক, অন্তরীক্ষলোক ও পৃথিবীলোকের আধারভূত দেবতাগণের তুষ্টি কামনা করে তাদের যজ্ঞক্ষেত্রে আগমন পূর্বক যজমানের অভীষ্টপ্রদ হওয়ার (যজমানায়াভীষ্টপ্রদা ভবন্তি) কথা ব্যক্ত হয়েছে ১০
[সায়ণাচার্য বলেন–অনুবাকে তু দশমে কারীরীষ্টিঃ সমাপিতা। অথৈকাদশে ত্রৈধাতবীয়েষ্টিবিধীয়তে। অর্থাৎ-দশম অনুবাক পর্যন্ত কারীরী যাগের বিষয় সমাপ্ত হয়েছে। অতঃপর এই একাদশ অনুবাকে ত্রৈধাতবীয় যাগের বিষয় কথিত হয়েছে]
.
একাদশ অনুবাক
মন্ত্র- সৰ্বাণি ছন্দাংস্যেতস্যামিষ্ট্যামনুচানীত্যাহুস্ত্রিভো বা এতদ্বীর্যং যকুদুফিহা জগত্যৈ যদুষ্ণিহককুভাবাহ তেনৈব সৰ্বাণি ছন্দাংস্যব রুন্ধে গায়ত্রী বা এষা যদুষ্ণিহা যানি চত্বাৰ্য্যধ্যক্ষরাণি চতুষ্পদ এব তে পশবো যথা পুরোভাশে পুরোডাশোহধ্যেবমেব দ্যদৃচ্যধ্যক্ষরাণি যজ্জগত্যা পরিদধ্যান্তং যজ্ঞং গময়েলিষ্ঠুভা পরি দধাতীন্দ্রিয়ং বৈ বীৰ্য্যং ত্রিস্তুগিন্দ্রিয় এব বীর্যে যজ্ঞং প্রতি ঠাপয়তি নান্তং গময়ত্যগ্নে ত্ৰী তে বাজিনা ত্ৰী ষধস্থেতি ত্রিবত্যা পরি দধাতি সরূপত্বায় সর্বো বা এষ যজ্ঞে যলৈধাতবীয়ং কামায়কামায় প্র যুজ্যতে সৰ্বেভ্যো হি কামেভ্যো যজ্ঞঃ প্রযুজ্যতে ত্রৈধাতবীয়েন যজেতাভিচরন্যৎ সৰ্বো বৈ এষ যজ্ঞো যুত্রৈদাতবীয়ং সর্বেণৈৰৈনং যজ্ঞেনাভিচরতি স্থণুত এবৈন মেতয়ৈব যুজেতাভিচৰ্য্যমাণঃ সর্বো বা এষ যজ্ঞো যলৈধাতবীয় সৰ্ব্বেণৈব যজ্ঞেন যজতে নৈমভিচরন্তণুত এতয়ৈব যজেত সহস্রেণ যক্ষ্যমাণঃ প্রজাতমেবৈদ্দদাত্যেতয়ৈব যজেত সহস্রেণজানোহন্তং বা এষ পশুনাং গচ্ছতি যঃ সহস্রেণ যজতে প্রজাপতিঃ খলু বৈ পশূনসৃজত তাংস্ত্রৈধাতবীয়েনৈবাসৃজত য এবং বিদ্বাংস্ত্রৈধাতবীয়েন পশুকামো যজতে যম্মাদেব যোনেঃ প্রজাপতিঃ পশুনসৃজত তম্মাদেবৈনাৎ সৃজত উপৈনমুত্তরং সহস্রং নমতি দেবতাভ্যো রা এষ আ বৃশ্চ্যতে যো যক্ষ্য ইত্যুত্ত্বা ন যজতে ত্ৰৈধাতবীয়েন যজেত সৰ্বো বা এষ যজ্ঞো যলৈধাতবীয় সর্বেণৈব যজ্ঞেন যজতে ন দেবতাভ আ বৃশ্যতে দ্বাদশকপলঃ, পুরোশো ভবতি তে এয়শ্চতুষ্কপালাস্ত্রি সমৃদ্ধত্বয় এয়ঃ পুরোশা ভবন্তি জয় ইমেলোকা এযাং লোকানামাপ্তা উত্তর উত্তরো জায়ান ভবতত্যবমি হীমে লোগা যময়ো মধ্য এতদ্বা অন্তরিক্ষস্য রূপং সমৃদ্ধ্যৈ সর্বেষামভিগময়ব দ্যত্যচ্ছষকার হিরণ্যং দদাতি তেজ এব অব রুন্ধে তাপং দদাতি পশূনেবাব রুন্ধে ধেনুং দদাত্যাশিষ এবার রুদ্ধে সামো বা এষ বর্ণো যদ্ধিরণ্যং যজুষাং তাপমুকথামদানাং ধেনুরেনেব সৰ্বান্বর্ণানব রুন্ধে ॥১১৷
মর্মার্থ- অভিজ্ঞ জনবৃন্দ বলে থাকেন যে, এই ত্ৰৈধাতবীয় যজ্ঞে অগ্নি-সন্দীপন-মন্ত্রের দ্বারা (সামিধেনীরূপেণ) সকল ছন্দগুলির অনুবচন (সদৃশবাক্য) প্রয়োগ করা কর্তব্য। সকল ছন্দের অনুবচর কি করে সম্ভব, সেই প্রসঙ্গে উক্ত হয়েছে–ককু ছন্দ ত্রিষ্টুভের সার, উষ্ণি ছন্দ জগতীর সার। অতএব ঐ উভয়ের অনুবচনের দ্বারা সকল ছন্দের অনুবচন সম্পন্ন হয়। কিন্তু এর দ্বারা (অর্থাৎ ককুদ ও উষ্ণিক এই উভয় ছন্দের বচনের বা কথনের দ্বারা) ত্রিষ্টুপ ও জগতী ছন্দের লাভ হলেও গায়ত্রী ছন্দের অলাভের শঙ্কা নিবারণ প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে– উষ্ণিক ছন্দ অষ্টাবিংশতি অক্ষর সমন্বিতা, সুতরাং সেখানে (অর্থাৎ তার মধ্যে) চতুর্বিংশতি অক্ষরযুক্ত গায়ত্রী অন্তর্ভুত আছেন। গায়ত্রীর চতুর্বিংশতি ব্যতীত উষ্ণিকের আরও যে চারটি অক্ষর অধিক রয়েছে, তা চতুষ্পদ পশুস্বরূপা সদৃশ। পূর্ববর্তী প্রপাঠকে (২কাণ্ডের ২য় প্রাপঠকের ৬ষ্ঠ অনুবাক ইত্যাদি দ্রষ্টব্য) যেমন একটি পুরোডাশের উপরিভাগে অপর পুবোডাশ স্থাপনের বিধি দেখান হয়েছে, সেইরকম উষ্ণিক ছন্দযুক্ত ঋকে (উষ্ণিকছস্কায়ামৃচি) গায়ত্রী ছন্দের অক্ষরসংখ্যার অধিক চারটি অক্ষর স্থাপিত বলে অবগত হতে হবে (যত্তদবগন্তব্য। বিকল্পে ত্রিষ্টুভের আবরণে (দ্বারা) সামিধেনী সমাপন কর্তব্য। ত্রিষ্ঠুভ (বা ত্রিষ্টুপ) ইন্দ্রিয়-সামর্থ্যে প্রতিষ্ঠাপিত, সেইজন্য তাতে যজ্ঞের বিনাশ হয় না (ন নাশয়তি)। এই ঋকে যেমন ত্রি শব্দ আছে (তৃতীয় কাণ্ডের দ্বিতীয় প্রপাঠকে ব্যাখ্যাত), ত্রৈধাতবীয় কর্মেও তেমন ত্রি শব্দ থাকায় উভয়ের (অর্থাৎ ত্রিষ্টু ছন্দ ও ত্রৈধাতবীয় যজ্ঞের) সারূপ্য (সমরূপতা) আছে। সকল যজ্ঞে যে ছন্দসমূহ প্রয়োগ করা হয়, সেইগুলি সবই এই উষ্ণিক ও ককুদের দ্বারা উক্ত (বা রচিত)। যেমন জ্যোতিষ্ঠোম ইত্যাদি যজ্ঞ সমুহ সকল কামনার নিমিত্ত প্রযুক্ত হয়; সেইরকম সকল যজ্ঞের স্বরূপও সকল কামনার সাথে যুক্ত। বিশেষতঃ আভিচারিক ক্রিয়ায় এই ত্রৈধাতবীয় যজ্ঞের বিধি আছে। আবার অভিচার পরিহারের নিমিত্তও এই ত্ৰৈধাতবীয় যজ্ঞের বিধি আছে। যিনি সহস্র দক্ষিণার দ্বারা যাগানুষ্ঠানে সমর্থ, তিনি এই অভিলাষ নিয়ে যাগানুষ্ঠান করলে পরে বহুরক ভাবে সহস্র দান করতে সমর্থ হন (শক্তো ভবত্যেব)। (অর্থাৎ) তার পর সেইরকম কর্মানুষ্ঠান সিদ্ধ হয় (তাদৃশকর্মানুষ্ঠানং সিধ্যতি)। (অনন্তর সহস্রদক্ষিণা দানের দ্বারা যায়ানুষ্ঠানে বহুবিধ যজ্ঞসাধন দ্রব্যের বিধি কথিত হচ্ছে)–যে পুরুষ (বা মনুষ্য) গো-সহস্র দান পূর্বক যাগে অভিলাষী হন, তার এই পশুসমূহ শেষ হয়ে যায়; সুতরাং তার পর তিনি আর যজ্ঞানুষ্ঠানে অসমর্থ হন। প্রজাপতি হলেন পশুগণের স্রষ্টা, সেই কারণে প্রথমে পশুকামনায় প্রজাপতির উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানের দ্বারা পশু লাভ পূর্বক যজমান পরবর্তী গো-সহস্র যাগে সমর্থ হন। দেবতার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানের সঙ্কল্প করেও যিনি তা সাধন করেন না, সেই সঙ্কল্প-ভ্রষ্ট ব্যক্তি এই ত্রৈধাতবীয় যজ্ঞানুষ্ঠান করলে সেই দোষ নষ্ট হয় এবং দেবতার দ্রোহ হয় না, অর্থাৎ দেবতা হতে বিচ্ছেদ ঘটে না। (এই যজ্ঞকর্মের দ্রব্যবিধি)–এই যজ্ঞে চার কপালে করে তিন বারে মোট দ্বাদশ কপাল পুরোডাশ প্রদান করতে হয় এবং তার ফলে সমৃদ্ধি লাভ করা যায়। তিনবারে পুরোডাশ অর্পণের দ্বারা যজমান উত্তরোত্তর তিনটি লোক, অর্থাৎ ভূলোক, অন্তরীক্ষলোক ও স্বর্গলোকের অধিকার প্রাপ্ত হন। ভূলোকবর্তী মনুষ্যগণ স্বর্গলোকবর্তী সূর্য চন্দ্র ইত্যাদিকে স্পষ্টভাবে উপলব্ধি (বা দর্শন) করতে পারে, কিন্তু অন্তরীক্ষবর্তী যক্ষ গন্ধর্ব ইত্যাদি দেবযোনিগণ তা দর্শন করতে পারেন না। যব (শস্যবিশেষ) হলে অন্তরীক্ষলোকের স্বরূপ (অন্তরিক্ষরূপত্বম), সুতরাং যবের দ্বারা যাগানুষ্ঠান করলে তাতে সমৃদ্ধি সম্পাদিত হয়। ত্রৈধাতবীয় যজ্ঞে পুরোডাশ নির্বপণের শেষে যে দক্ষিণা দানের বিধি আছে, তা তিন প্রকার, যথা–হিরণ্য, ঘৃতাক্ত বস্ত্র (ঘৃতের দ্বারা লেপিত বস্ত্র) ও ধেনু। এর মধ্যে হিরণ্য দানের দ্বারা তেজঃপ্রাপ্ত হওয়া যায়, ঘৃতাক্তবস্ত্র দানের দ্বারা পশুপ্রাপ্তি ঘটে; এবং ধেনু দানের দ্বারা কামধেনুর নিকট হতে প্রাপ্ত সর্বকামনার সিদ্ধিস্বরূপ আশিস প্রাপ্তি হয় (অর্থাৎ সর্বকামনার পূর্তি হয়)। (সুতরাং) উক্ত দ্রব্য তিনটি দক্ষিণস্বরূপ দানের দ্বারা উপরের বর্ণনানুসারে ফলপ্রাপ্তি হয় (উক্তদ্রব্যত্রয়-দানেনোক্তাম্বর্ণ প্রাপ্নোতি) ॥১১।
[সায়ণাচার্য বলেন-অর্থ দ্বাদশে তস্য দ্রব্যস্যেন্দ্রাবিষুদেবতাকত্বং সহস্রদক্ষিণাং চ বিধাস্যন্নাদৌ কৰ্মনামি ত্রিধাতুত্বসম্পাদনা-য়োপাখ্যানং দর্শয়তি। অর্থাৎ-পূর্ববর্তী অনুবাকে যে ত্রৈধাতবীয় যজ্ঞের কথা উক্ত হয়েছে, এই দ্বাদশ অনুবাকে সেই যাগ সম্পর্কিত দেবতার উপাখ্যান, সহস্র দক্ষিণা-বিধি ইত্যাদি কথিত হয়েছে।]
.
দ্বাদশ অনুবাক
মন্ত্র- ত্বষ্টা হতপুত্রো বীন্দ্রং সামমাহইরত্তম্মিন্নি উপহবমৈচ্ছত তং নোপাহয়ত পুত্ৰং মেহবধীরিতি স যজ্ঞবেশসং কৃত্বা প্রাসহ সোমমপিবত্তস্য যদত্যশিষ্যত তত্ত্বষ্টাহহবনীয়মুপ বয়ৎ স্বাহেন্দ্ৰশত্ৰুৰ্বৰ্ধস্বেতি। স যাবদূৰ্দ্ধঃ পরাবিষ্যতি তাবিত স্বয়মেব ব্যরমত যদি বা তাবৎ প্রবণমাসীদ্যদি বা তাবদধ্যাপেরাসীৎ স সম্ভবন্নগ্নীষোমাভি সামভবৎ স ইমুমাত্রমিযুমাত্রং বিবর্ধত স ইমাল্লোঁকানবৃণোদ যদিমাল্লোঁকান বৃণোত্ত বৃত্রস্য বৃত্রত্বং তস্মাদিন্দ্রাহবিভেদপি তৃষ্টা। তস্মৈ ত্বষ্টা বজ্ৰমসিঞ্চত্তপো বৈ স ব আসীমুদ্যং নাশক্লোথ বৈ তহি বিষ্ণুরন্যা দেবতাহসীৎ সোহব্রবীদ্বিষ্ণবেহীদমা হরিষ্যাবো যেনায়মিদমিতি স বিষ্ণুস্ত্রেধাহত্মানং বি ন্যধত্ত পৃথিব্যাং তৃতীয়মন্তরিক্ষে তৃতীয়ং দিবি তৃতীয়মভিপৰ্য্যাবৰ্ত্তৰ্ধ্যবিভেৎ যৎ পৃথিব্যাং তৃতীয়মাস ত্তেনেত্রো বজ্রমু দযচ্ছদ্বিষ্ণু বস্তিতঃ সোহবীল্ম মে প্র হারস্তি বা ইদং ময়ি বীৰ্য্যং তত্তে প্ৰ দাস্যামীতি তদস্মৈ প্রাযচ্ছত্তৎ প্রত্যগৃহাদ্বিৰ্মাহধা ইতি তদ্বিষ্ণবেহতি প্রাযচ্ছত্ততদ্বিষ্ণুঃ প্রত্যগৃহাদম্মাষিন্দ্র ইন্দ্রিয়ং দধাত্বিতি। যদন্তরিক্ষে তৃতীয়মাসীত্তেনেত্রো বজ্রমুদযচ্ছদ্বিষ্ণনুস্থিতঃ সোহব্রবীমা মে প্র হারস্তি বা ইদং ময়ি বীৰ্য্যং তত্তে প্ৰ দাস্যামীতি তদস্মৈ প্রাযচ্ছত্তং প্রত্যগদ্বিৰ্মাহধা ইতি তদ্বিবেহতি প্রাযচ্ছত্তদ্বিষ্ণুঃ প্রত্যগদম্মাস্বিন্দ্ৰ ইন্দ্রিয়ং দধাত্বিতি। যদ্দিবি তৃতীয়মাসীত্তেনেন্ট্রো বজ্রমুদযচ্ছদিনুস্থিতঃ সোহব্রবীন্মা মে প্র হারস্তি বা ইদং ময়ি বীৰ্য্যং তত্তে প্ৰ দাস্যামীতি তদস্মৈ প্রাযচ্ছত্তং প্রত্যগুহাদ্বিৰ্মাহধা ইতি তদ্বিষ্ণবেহতি প্রাযচ্ছত্তদ্বিষ্ণুঃ প্রত্যগৃহাদম্মাম্বিন্দ্র ইন্দ্রিয়ং দধাত্বিতি। যদ্দিবি তৃতীয়মাসীত্তেনেলা বজ্রমুদযচ্ছদ্বিষ্ণনুস্থিতঃ সোহববীম্মা মে প্র হাৰ্য্যেনাহমিদমস্মি তত্তে প্রদাস্যমীতি দ্বী ইত্যব্রবীৎ সন্ধ্যাং তু সং দধাবহৈ ত্বমেব প্ৰ বিশানীতি যং প্রবিশেঃ কিং মা ভুঞ্জা ইত্যব্রবীত্তামেবেন্ধীয় তব ভোগায় ত্বাং প্র বিশেয়মিত্যব্রবীত্তং বৃত্রঃ প্রাবিশদুদরং বৈ। বৃত্রঃ ক্ষুৎ খ বৈ মনুষ্যস্য ভ্রাতৃব্যো যঃ এবং বেদ হন্তি ক্ষুধং ভ্রাতৃব্যং তদস্মৈ প্রাযচ্ছত্তৎ প্রত্যগৃহ্নালিৰ্মাহধা ইতি তদ্বিষ্ণবেহতি প্রাচ্ছত্তদ্বিষ্ণুঃ প্রত্যগৃহাদম্মাস্বিন্দ্র ইন্দ্রিয়ং দধাত্বিতি যলিঃ প্রযচ্ছলিঃ প্রত্যাগত্যুত্তলি ধাতোস্ত্রিধাতুত্বং যদ্বিষ্ণুরম্বতিষ্ঠত বিষ্ণবেহতি প্রাযচছত্তস্মাদৈন্দ্রাবৈষ্ণবং হবির্ভবতি যদ্বা ইদং কিং চ তদস্মৈ তৎ প্রাযচ্ছদৃচঃ সামানি যজুংষি সহস্রং বা অস্মৈ তৎ প্রাযচ্ছত্তস্মাৎ সহস্রদক্ষিণম্ ॥১২৷৷
মর্মার্থ- (একদা) ইন্দ্রদেব বিশ্বরূপ নামক ত্বষ্টাপুত্রকে বধ করেছিলেন। (পরবর্তী প্রপাঠকের প্রথম অনুবাক দ্রষ্টব্য)। সেই কারণে হতপুত্র ত্বষ্টা কোপান্বিত হয়ে ইন্দ্ররহিত সোমযাগের অনুষ্ঠান করতে উদ্যত হলেন। ইন্দ্রহীন সেই যাগে তাকে আহ্বান করার জন্য ইন্দ্র অনুরোধ করলেন (মামাহুয়েত্যেবমিন্দ্রোহব্রবীৎ)। কিন্তু ত্বষ্টা তার পুত্রকে বধ করার নিমিত্ত তাতে সম্মত হলেন না, অর্থাৎ সেই যজ্ঞে ইন্দ্রকে আহ্বান করলেন না। তথাপি ইন্দ্র সেই বিঘাত করে বলপূর্বক সোম পান করলেন (বলাৎকারেণ সোমং পীতবা)। অতঃপর, ইন্দ্র কর্তৃক বলপূর্বক পীত সোমরসের যে স্বল্পপরিমিত অংশ অবশিষ্ট ছিল, তা গ্রহণ পূর্বক ত্বষ্টা ইন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিচার কর্মের দ্বারা তাঁর শত্রু উৎপাদনে প্রবৃত্ত হয়ে আহবনীয় অগ্নিতে আহুতি প্রদান করলেন। সেই হোমে তার উচ্চারিত মন্ত্র হলো–স্বাহেন্দ্ৰশক্রবধ;–তার অর্থ হে অগ্নি! আপনাকে স্বাহামন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। আপনি পুনরায় ইন্দ্রের বিনাশকারী (শাতয়িতা) কোন পুরুষ হয়ে বর্ধিত হোন। কিন্তু সেই অগ্নি যে সময়ে ঊর্ধ্বশিখা সম্পন্ন হয়ে ইন্দ্রকে পরাভূত করতে উদ্যত হলেন, সেই সময়ে স্বয়ং বহ্নি জ্বালাবিরহিত হয়ে শান্ত হয়ে গেলেন। এটা হলো ত্বষ্টার উচ্চারিত মন্ত্রগত স্বরের বিকৃতির অপরাধে। (অপরাধটি এই যে, ইন্দ্রের শাতয়িতা (তথা ইন্দ্ৰশত্রু) অর্থে তৎপুরুষ সমাসে অন্ত্য, স্বরের দ্বারা উদাত্ত অর্থাৎ উচ্চস্বরবিশেষ হওয়ার কথা, অর্থাৎ ইন্দ্রের শত্রু বক্তব্য ছিল। কিন্তু ভ্রান্তিবশতঃ আদি স্বরটিই উদাত্ত বা উচ্চস্বরবিশেষে উচ্চারিত হওয়ায় বহুব্রীহি সমাস হয়ে গেল, যার অর্থ হলো ইন্দ্র যার শাতয়িতা বা পাতনকারী। মন্ত্রগত এই স্বরের ভ্রান্তিজনিত অপরাধ না ঘটলে অগ্নি ঊধ্বদিকে শিখাবিশিষ্ট হয়ে যজমানের কার্যসিদ্ধি সূচিত করেন। আর, অপরাধ ঘটলে অগ্নির শিখা নিম্নাভিমুখী হয়ে যজমানের কার্যসিদ্ধির অভাব ঘটিয়ে থাকেন। (অপরাধে ত্ববনতয়া জ্বালয়া যজমানস্য কার্যসিদ্ধিঃ অভাবঃ সুচ্যতে)। সুতরাং তৃষ্টা কর্তৃক স্বরাচ্চারণের ত্রুটিজনিত অপরাধে) সেই অগ্নি হতে পুরুষরূপে উৎপন্ন এক শত্রু আবির্ভূত হয়ে হোমাদারাঙ্গাভিমানী অগ্নিদেব এবং হৃয়মান রসাভিমানী সোমদেব উভয়কেই আপন মুখে প্রক্ষিপ্ত করল, অর্থাৎ দন্তপংক্তির দ্বারা আঘাত করল। সে প্রতিদিন ইষুপতন স্থান পর্যন্ত (অর্থাৎ একবার বাণ নিক্ষেপ করলে যতদূর পর্যন্ত যায়, প্রতিদিন ততদুর পর্যন্ত) বর্ধিত হতে লাগল। এইভাবে সে সকল দিক ব্যাপ্ত হয়ে প্রতিদিন বর্ধিত হতে হতে সর্বলোকের আবরণরূপ হয়ে যথার্থ বৃত্র (অন্ধকার) নাম ধারণ করল। সেই বৃত্র তিনলোক আবৃত করায় স্থানাভাবের কারণে ইন্দ্র ও ত্বষ্টা উভয়েই সমান ভাবে ভয়প্রাপ্ত হলেন। তখন ত্বষ্টা স্বয়ং ইন্দ্রের সাথে মিত্রতা স্থাপন পূর্বক সেই বৃত্রকে বধ করার নিমিত্ত সেই ইন্দ্রের বজ্রকে সিঞ্চিত করলেন, অর্থাৎ তার বজ্রকে অস্ত্ররূপে অভিমন্ত্রিত করে জলের দ্বারা প্রক্ষালন পূর্বক তাকে প্রদান করলেন, সেই ইন্দ্রসম্বন্ধী বজ্ৰ অভিমন্ত্রত্বের কারণে তপোরূপ (অর্থাৎ তপস্যার দ্বারা লব্ধ অস্ত্রের স্বরূপ) হয়ে উঠল। কিন্তু তপোরূপ সেই বজ্র উত্তোলনে সমর্থ না হওয়ায়, তিনি সম্মুখবর্তী বিষ্ণু নামধারী কোনও দেবতার নিকট সাহায্যের প্রার্থনা জানালেন। ইন্দ্র সেই বিষ্ণুকে বললেন–বৃত্রের বীর্য স্মরণ করে ভয়ে ভীত হয়ে আমার হস্ত বজ্রকে উত্তোলিত করতে সক্ষম হচ্ছে না (ন প্রভবতি)। অতএব হে বিষ্ণু! আপনি আমার সহকারীত্বে আগমন করুন, যাতে আমরা এই জগৎব্যাপ্ত বৃত্রের নিকট হতে তার বীর্য হরণ করে নিতে পারি। (বৃত্রাদাহরিষ্যাবঃ)। (সাহায্যপ্রার্থীর প্রতি বিষ্ণুর আচরণের ধরন দেখান হচ্ছে)–বিষ্ণু তিনটি মূর্তি ধারণ পূর্বক তিনটি লোককে রক্ষার নিমিত্ত স্থাপিত হলেন। (দ্যুলোক, অন্তরীক্ষলোক ও পৃথিবী–এই তিনলোকের সর্বদিকে ব্যাপ্ত বৃত্ৰজনিত ইন্দ্রের ভীতি নিবারণের উদ্দেশ্যেই এই তিন লোকের প্রতিটিতে বিষ্ণু এক এক মূর্তিতে নিজেকে স্থাপিত করলেন)। (মূৰ্তিত্রয় স্থাপনের পরে ইন্দ্রের কর্মপ্রবৃত্তি বর্ণিত হচ্ছে)–বিষ্ণুর যে তৃতীয় শরীর পৃথিবীতে স্থাপিত হয়েছিল, সেই শরীরের সাথে যুক্ত হয়ে তার পশ্চাতে অবস্থান পূর্বক ইন্দ্র বজ্র উত্তোলন করলেন। তখন সেই বৃত্র ভীত হয়ে বলল–হে ইন্দ্র! আমার শরীরে প্রহার করো না; তার বিকল্পে (বা বিনিময়ে) এই পৃথিবীতে ব্যাপ্তিক্ষম (অর্থাৎ পৃথিবীকে আবৃত করার) আমার যতটুকু শক্তি (বীর্য) আছে, তার সবটুকুই তোমাকে প্রদান করছি। এই কথা বলে বৃত্র তা ইন্দ্রকে প্রদান করল (ইন্দ্রায় দত্তবা। ইন্দ্র তা স্বীকার পূর্বক বিষ্ণুকে প্রদান করলেন। আমাদের মধ্যে ইন্দ্র বীর্যের (শক্তির) ধারয়িত্বা হোন–এই অভিপ্রায়ে বিষ্ণু সেই শক্তি প্রতিগ্রহণ পূর্বক ইন্দ্রে স্থাপন করলেন। এইবাবে অন্তরীক্ষে স্থিত বিষ্ণু শরীরের সাথে যুক্ত হয়ে তার পশ্চাতে অবস্থানপূর্বক ইন্দ্র বজ্র উত্তোলন করে বৃত্রকে প্রহারে, উদ্যত হলে বৃত্র তার অন্তরীক্ষের আবরক শক্তিও ইন্দ্রকে প্রদান করল এবং বিষ্ণুও সেই পূর্বের মতোই অভিপ্রায়ে তা প্রতিগ্রহণ করলেন। তৃতীয় পর্যায়ে এইভাবে বৃত্র তার দুলোকের আবরণ শক্তিও ইন্দ্রকে প্রদান করল। কিন্তু সেই শক্তি প্রদানের পূর্বে বৃত্র বলল-হে ইন্দ্র! তোমাকে তো সকল শক্তিই প্রদান করলাম, কিন্তু এবার তোমার সাথে সন্ধি করতে ইচ্ছা করি। সর্ব শক্তিই যদি দেওয়া হলো, তবে আর কিসের সন্ধি? সেই কারণেই বৃত্র বলল-হে ইন্দ্র! আমি তোমার মধ্যে প্রবেশ করতে ইচ্ছা করি। (ত্বীমেবাহং প্রবিশানীতি)। এই কথা শ্রবণ করে ইন্দ্র বললেন তোমাকে আমার মধ্যে প্রবিষ্ট হতে দিতে পারি না, কারণ তাহলে তো তুমি আমাকে ভক্ষণ করে ফেলবে। বৃত্র বলল-না, আমি তোমাকে ভক্ষণ করব না (অঙ্গীকার করছি); বরং আমি তোমার উদরস্থ অগ্নিকে দক্ষতার সাথে উদ্দীপিত করব, যার ফলে তুমি বহুরকম অন্নভোগের উপযুক্ততা লাভ করবে, সেই নিমিত্তই তোমাকে প্রবেশ করতে চাই। এই কথা বলে বৃত্র ইন্দ্রের দেহে প্রবেশ পূর্বক বহু অন্নপূরণক্ষমস্থানরূপ উদর হলো। লোকেও (পৃথিবীতেও) মনুষ্যের উদরে বর্তমান ক্ষুধা হলো সহজাত শত্ৰু,–এটা বিদিত হতে পারলেই ক্ষুধার বিনাশ হবে। বৃত্র ইন্দ্রদেহে প্রবেশের পূর্বে। তাকে তিনবার তিনলোকস্থিত শক্তি প্রদান করেছিল, ইন্দ্র সেই তিনবারই তিনলোকস্থিত শক্তি বিষ্ণুকে প্রদান করেছিলেন, এবং বিষ্ণু তা পুনরায় ইন্দ্রে স্থাপন করেছিলেন। বৃত্রের তিনবার প্রদান ও ইন্দ্রে তিনবার প্রতিগ্রহণের দ্বারা বীর্যরূপ পুরোশের হবিঃ ত্রিধাভিন্ন হওয়ার কারণে ত্রিধাতু নাম সম্পন্ন হয়েছে। এই যুগে প্রতি বারে চার কপাল করে (চতুষ্কপালরূপ) পুরোডাশ প্রদান করার জন্য তিনবারে মোট দ্বাদশ-কপাল পুরোডাশ নির্বপণ হয় বলে এই যাগ ত্রিধাতু নামে অভিহিত। যেহেতু বিষ্ণুর আনুকূল্যে স্থিত হয়ে (বা বিষ্ণুর সহায়তায় অবস্থিত থেকে) ইন্দ্র তাঁকে অতি আদরের দ্বারা (শ্রদ্ধার সাথে) বীর্য প্রদান করেছিলেন, সেই হেতু এই যজ্ঞের দেবতা হলেন ইন্দ্র ও বিষ্ণু। তিন বারের প্রদত্ত সেই বীর্যরূপ হবিঃ হলো তিনটি বেদের স্বরূপ–ঋক, সাম ও যজুঃ। এই যাগে সহস্র দক্ষিণা প্রদানের কথা বলা হয়েছে (সহস্রদক্ষিণাকমিদং কর্ম দ্রষ্টব্য) ॥১২৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–..ঐন্দ্রাবাম্পত্যং চরুং বিধাতুং প্রস্তৌতি–। অর্থাৎ–এই ত্রয়োদশ অনুবাকে ইন্দ্র ও বৃহস্পতির উদ্দেশে চরু প্রদানের বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
ত্রয়োদশ অনুবাক
মন্ত্র- দেবা বৈ রাজন্যাজ্জায়মানাদবিভয়ুস্তমন্তরেব সন্তং দাম্নাংপৌস বা এযোহাো জায়তে যাজনন্যা যদ্বা এমোহনপাো জায়েত বৃত্ৰান্ ঘংশ্চরে দ্যং কাময়েত রাজন্যমনপোলা জায়েত বৃত্রা স্নং চরেদিতি তম্মা এতমৈন্দ্রাবাম্পত্যং চরুং নিৰ্বপেদৈন্দ্রো বৈ রাজন্যো ব্ৰহ্ম বৃহস্পতিব্বহ্মণৈবৈনং দামোহপোনান্মুঞ্চতি হিরন্ময়ং দাম দক্ষিণা সাক্ষাদেবৈন দামোহপোম্ভনান মুঞ্চতি ॥১৩৷৷
মর্মার্থ- দেবতাগণ রাজন্যবৃন্দের অপ্রতিহত শক্তি হতে ভীতি প্রাপ্ত হয়ে রঞ্জুর দ্বারা গর্ভমধ্যে স্থিত অবস্থায় তাদের (অর্থাৎ সেই রাজন্য-ণের) শক্তি প্রতিবদ্ধ করে থাকেন। (রাজন্যং শক্তিপ্রতিবন্ধলক্ষণেন দাম্নাহপগতশক্তিকো যথা ভবতি তথৈম্ভঞশক্তিপ্রতিবন্ধং পুরিতবঃ)। যদি তা না করা হতো, তাহলে গর্ভ হতে নির্গমন-মাত্রই (অর্থাৎ জন্মমাত্রই) ক্ষত্রিয় রাজন্যগণ শত্ৰুবর্গকে হত্যা করে লোকে বিচরণ করতে থাকত (বৈরিণো মারয়ন্নিব লোকে চরেৎ)। যে অধ্বর্য দেবতাগণকৃত রাজন্যের এই শক্তি-প্রতিদ্ধতা নিবারণ করতে কামনা করেন, তিনি ইন্দ্র ও বৃহস্পতির উদ্দেশে চরু নির্বপণ করবেন। ইন্দ্র হলেন ক্ষত্রিয় (কারণ বৃহদারণ্যকে ইন্দ্র, বরুণ, সোম ও রুদ্রকে ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে) এবং বৃহস্পতি হলেন ব্রাহ্মণ (কারণ ব্রহ্ম বৈ দেবানাং বৃহস্পতি, অর্থাৎ দেবগণের ব্রাহ্মণ হলেন বৃহস্পতি)। অতএব ইন্দ্র ও বৃহস্পতির উদ্দেশে চরু নির্বপণ করলে রাজন্য বা ক্ষত্রিয় ইন্দ্রদেব ব্রাহ্মণ বৃহস্পতির সামর্থ্যের দ্বারা দৈব-প্রতিবন্ধন হতে রাজনগণকে মুক্ত করে থাকেন (দৈবিকাচ্ছক্তিপ্রতিন্ধান মোচয়তি)। এই যুগে হিরন্ময় দাম (অর্থাৎ স্বর্ণ বা রাৈপ্যনির্মিত রঞ্জু) দক্ষিণা প্রদান বিধি। এই রঞ্জু দানের বিনিময়ে প্রত্যক্ষভাবে বন্ধন মুক্তি হয় ॥১৩।
[সায়ণাচার্য বলেন–য়োদশে চরুঃ প্রোক্তঃ শক্তিস্তম্ভনিবারকঃ। ইথং কামোষ্টয়ঃ সমাপ্তা। ১ অথান্তিমানুবাকে চতুর্দশে যাজ্যানুবাক্যা বক্তব্যা। অর্থাৎ-ত্রয়োদশ অনুবাকে শক্তিস্তম্ভ-নিবারক চরুর কথা উক্ত হয়েছে এবং সেই পর্যন্ত কামেষ্টির কথা সমাপ্ত হয়েছে। এই চতুর্দশ অনুবাকে মন্ত্রসমূহের যাজ্যা ও পুরোনুবাক্যা কথিত হচ্ছে]
.
চতুর্দশ অনুবাক
মন্ত্র- নবোনবো ভবতি জায়মানোহাং কেতুরুষসামেত্যগ্রে। ভাগং দেবেভ্যো বি দত্যায় প্র চন্দ্রমাস্তিরতি দীর্ঘমায়ুঃ।। যমাদিত্য অংশুমাপ্যায়য়ন্তি যমক্ষিতমক্ষিতয়ঃ পিবন্তি। তেন নো রাজা বরুণো বৃহস্পতিরা প্যায়য়ন্তু ভুবনস্য গোপাঃ। প্রাচ্যাং দিশি ত্বমিাসি রাজোতোদীচ্যাং বৃত্ৰহন বৃত্ৰহাইসি। যত্র যন্তি স্রোত্যান্তজ্জিতং তে দক্ষিণততা বৃষভ এধি হব্যঃ। ইন্দ্রো জয়াতি ন পরা জয়া অ ধরাজো রাজসু রাজয়াতি। বিশ্বা হি ভূয়াঃ পৃতনা অভিীরূপসদ্যো নমস্যো যথাহসৎ। অস্যেদেব প্ৰ রিরিচে মহিং দিবঃ পৃথিব্যাঃ পৰ্য্যন্তরিক্ষাৎ। স্বরাড়িা দম আ বিস্বৰ্ত্তঃ স্বরিমত্রো ববক্ষে রণায়। অভি ত্বা শূর নোনুমোহদুগ্ধা ইব ধেনবঃ। ঈশানমস্য জগতঃ সুবর্দশমীশানমি তযঃ। ত্বামিদ্ধি হবামহে সাতা বাজস্য কারবঃ। ত্বং বৃত্ৰেম্বিন্দ্ৰ সৎপতিং নরাং কাষ্ঠাস্বৰ্বতঃ। যদ্যাব ইন্দ্র তে শতং শতং ভূমীরুত স্যু। ন ত্বা বজিৎ সহস্রং সূৰ্যা অনু ন জাতমষ্ট রোদসী। পিবা সোমমিন্দ্র মন্দতু ত্বা যং তে সুষাব হৰ্য্যশ্বাদ্রিঃ! সোতুবাহুভ্যাং সুযতো না। রেবতীর্নঃ সধমাদ ইন্দ্ৰে সন্তু তুবিবাজার। ক্ষুমন্তো যাভিৰ্ম্মদেম। উদগ্নে শুচয়স্তব বি জ্যোতিষোঙ্গু ত্যং জাতবেদসং সপ্ত ত্ব হরিততা রথে বহন্তি দেব সূৰ্য্য। শশাচিঙ্কেশং বিচক্ষণ। চিত্রং দেবানামুকগাদনীকং চক্ষুৰ্মিত্রস্য বরুণস্যাগ্নেঃ। আহপ্রা দ্যাবাপৃথিবী অন্তরিক্ষং সূৰ্য্য আত্মা জগতস্তষশ্চ। বিশ্বে দেবা ঋতাবৃধ ঋতুভিীবনশ্রুতঃ। জুষস্তাং যুজ্যং পয়ঃ। । বিশ্বে দেবাঃ শৃণুতেমং হবং মে যে অন্তরিক্ষে য উপ দ্যবিষ্ঠ। যে অগ্নিজিহ্বা উত বা যজত্রা আসদাম্মিম্বহিষি মাদয়ধ্ব। দেবা মনুষ্যা দেবাসুরা অব্ৰুবন্দেবাসুরাস্তেষাং গায়ত্রী প্রজাপতিস্তা যত্ৰাগ্নে গোভি শ্চিত্ৰয়া মারুতং দেবা বসবা অগ্নে মারুতং দেবা বসব্যা দেবাঃ শৰ্ম্মণ্যাঃ সৰ্ব্বণি ত্বষ্টা হতপুত্রো দেবা বৈ রাজন্যান্নবোনশ্চতুর্দশ ৷ দেবা মনুষ্যাঃ প্রজাং পশুবো বসব্যাঃ পরিদধ্যাদিদমস্মষ্টাচত্বারিংশৎ ॥১৪৷৷
মর্মার্থ- আদিত্যের দ্বারাই চন্দ্র দীপ্তি লাভ করেন, সেই নিমিত্ত চন্দ্রের সাথে অভেদরূপে এই স্থানে আদিত্যেরও স্তুতি করা হচ্ছে (অভেদেনাহদিত্য ইহ স্থূয়তে)। চন্দ্রমা প্রতিদিন উদিত হয়ে প্রতিদিনই নবরূপ লাভ করে। (অর্থাৎ শুক্ল প্রতিপদ হতে দিনে দিনে একটু একটু করে কলাবৃদ্ধির দ্বারা এবং কৃষ্ণ প্রতিপদে হতে দিনে দিনে একটু একটু করে কলাক্ষয়ের দ্বারা প্রতিদিনই চন্দ্রের রূপ নবরূপে প্রতিভাত হয়ে থাকে)। আদিত্যও প্রতিদিন নূতনরূপে উদিত হন। (অর্থাৎ স্বরূপে বৃদ্ধি বা ক্ষয় না হলেও দক্ষিণ-উত্তর গতি দ্বারা আদিত্য নূতনত্ব লাভ করেন। ঊষার অর্থাৎ প্রভাতকালে প্রথমে পূর্বদিকে সূর্যের উদয়ে দিনের চিহ্ন সূচিত হয় এবং তারই অনুসরণে প্রাতঃকালে অগ্নিহোত্র ইত্যাদি কর্মে প্রবৃত্ত হলে দেবগণকে ভাগ প্রদান করা হয়। সেই হেন চন্দ্রকলার বৃদ্ধি ও ক্ষয়ের হেতুভূত আদিত্য এই কর্মে আগত হয়ে দীর্ঘ আয়ু প্রকর্ষের সাথে প্রদান করুন (প্রকর্ষেন দদাতু)। শুক্লপক্ষে আদিত্যগণ প্রতিদিন এক এক কলা প্রদান করে যে চন্দ্রকে অক্ষীণরূপে বর্ধিত করেন (আপ্যায়য়ন্তি), আবার পূর্ণিমার পরে, কৃষ্ণপক্ষে স্বয়ং ক্ষয়রহিত বহ্নি ইত্যাদি দেবতাগণ প্রতিদিন ক্ষয়প্রাপ্ত যে চন্দ্রকলার এক এক অংশ পান করেন; সেই অমৃতরূপ রাজা চন্দ্রের দ্বারা দীপ্যমান আদিত্য, বরুণ, বৃহস্পতি ইত্যাদি ভুবনপালক দেবতাগণ (ভুবনস্য গোপ্তারো দেবা) রোগগ্রস্থ আমাদের রোগ নিবারণপূর্বক বর্ধন করুন। হে ইন্দ্রদেব! আপনি পূর্বদিকের রাজা, আপনি উত্তর দিকে বৃত্রের হননকারী, আপনি বৃত্ৰহা। অপিচ, আপনি বৃত্ৰহারূপে সবরকমে বৈরিঘাতক হন। আরও, যেস্থান যেস্থানে নদীগুলি বাহিত হয়েছে, সেই সকল দিক আপনি জয় করেছেন (তে জিত)। (নদী সর্বদিকে প্রবাহিত, সুতরাং সর্বত্র আপনার বিজয় হয়েছে, এটাই অর্থ)। অধিকন্তু, আপনি কামসমূহের বর্ষয়িতা; আপনি হোমের যোগ্য হয়ে প্রজলিত আহবনীয় অগ্নির দক্ষিণভাগে স্থিত হয়ে ঋত্বির্গের হবিদান সম্পূর্ণ করুন। ইন্দ্র সর্বত্র জয়লাভ করে থাকেন, কখনও কোথাও পরাজিত হন না (ন তু কাপি পরাজয়তে)। সকল রাজার অধিরাজারূপে ইন্দ্র সকলের উপর প্রভুত্ব করেন, অ-রাজা (অর্থাৎ রাজা নয়, এমন) জনকেও রাজ্য প্রদান পূর্বক তাকে রাজত্বসম্পন্ন করে থাকেন। অধিকন্তু, সকল রাজার শরণ্য ও নমস্কারাই (নমস্কারের যোগ্য পাত্র) ইন্দ্র সকল পরকীয় সেনাগণকে পরাভূত করতে সমর্থ হোন। এই হেন ইন্দ্রদেবের মহিমা স্বর্গ, পৃথিবী ও অন্তরীক্ষ এই লোকত্রয় অতিক্রম পূর্বক স্থিত আছেন। আরও, ইন্দ্রদেব যুদ্ধের নিমিত্ত বহু সেনা প্রেরণ করে থাকেন। (কীরকম ইন্দ্র? না,) তিনি স্বরা (অর্থাৎ স্বয়ই রাজা, কখনও পরাধীন নন), তিনি বিশ্বপূর্ত (অর্থাৎ গৃহ হতে শীঘ্র নিষ্ক্রান্ত হয়ে রণক্ষেত্রে গমনকালে সকল অস্ত্র গৃর্তনে অর্থাৎ উত্তোলনে উদ্যোগী), তিনি স্বরি (অর্থাৎ পরকীয় সেনাগণের উপরে গমনশীল), তিনি ক্ষুধারূপ রোগে আক্রান্তগণকে অন্নদানের দ্বারা ত্রাণকর্তা। অদুগ্ধা অর্থাৎ দুগ্ধহীনা ধেনুগণ যেমন বৎসগণের উদ্দেশে আদরের সাথে হম্ভারব করে,তেমনই, হে বীর ইন্দ্র (শুরেন্দ্র)! আমরাও পুনঃ পুনঃ আপনার স্তুতি করছি। (কীরকম আপনি? না, আপনি এই জগতের জঙ্গমসমূহের, অর্থাৎ প্রাণিজাতসমূহের, ঈশ্বর; আবার আপনি স্থাবরপদার্থসমূহেরও, অর্থাৎ বৃক্ষ ভূমি ইত্যাদিরও ঈশ্বর; আপনি শুভরূপ স্বর্গের প্রদর্শক। হে ইন্দ্র! এই যজ্ঞানুষ্ঠানকারী আমরা হবির দ্বারা আপনার আহ্বান করছি। (কি নিমিত্ত? না) অন্নের দানের নিমিত্ত)। শত্রুগণকে প্রাপ্ত হলে, অর্থাৎ শত্রুগণের দ্বারা আক্রান্ত হলে, আমরা সৎপথের পালক আপনাকে আহ্বান করি মনুষ্য আমরা সর্ব দিকে শত্রুসেনার অশ্বসমূহকে দর্শন করে আপনাকে আহ্বান করি। (অর্থাৎ চারিদিকে হতে শত্রুর দ্বারা বেষ্টিত হয়ে মুক্তিলাভের আকাঙ্ক্ষায় আপনাকে আহ্বান করে থাকি)। হে ইন্দ্রা! দ্যাবা অর্থাৎ স্বর্গলোক যদি শতসংখ্যক (শতগুণযুক্ত) হয়, এবং পৃথিবী লোকও যদি শতসংখ্যক হয়, তথাপি সেই দ্যাবাপৃথিবীতে জাত ঐশ্বর্যসমূহ আপনার ঐশ্বর্যের অনুকরণে সমর্থ হয় না। সেইরকমে যদি বা সূর্যও সহস্ৰসংখ্যক হন (অর্থাৎ বর্তমান সূর্য যদি সহস্রগুণ বিশালত্ব ধারণ করেন), তথাপিও, হে বজ্রধারী! তিনি তেজের দ্বারা আপনার তেজের অনুকরণে সমর্থ হবেন না। হে ইন্দ্র! আপনি সোম পান করে হর্ষান্বিত হোন। হে হ্যশ্ব (অর্থাৎ হরি নামক অশ্বের অধিকারী)! আপনার দ্বারা পীতব্য সেই সোম ঋত্বিকবর্গের সংযত (নিয়মিত) বাহু দ্বারা পাষাণে (সোম ইত্যাদির অভিষবণ রূপ স্থানে) অভিযুত। (অতএব দক্ষতার সাথে অভিযুত সেই সোমরস যত্র তত্র পতিত হয়ে বিনষ্ট হয় না; আপনি এমন সেই সোমরস পান করে আমাদের বীর্য দান করুন, এটাই অভিপ্রায়)। ধনবান (ধনবতাঃ), আমাদের সাথে হর্ষযুক্ত বহু অন্নযুক্ত (বহুন্নেপেতা) জলদেবীবর্গ (জলরাশি) আমাদের প্রভু ইন্দ্রের নিকট গমন করে আমাদের সুখের নিমিত্ত অবস্থান করুন। সেই জলরাশির সাথে আমরা সশব্দে ইন্দ্রের স্তুতি করে হৃষ্ট হবো। হে অগ্নিদেব! আপনি আপনার নির্মল জ্যোতির সাথে প্রকাশিত হচ্ছেন। (হে প্রজ্ঞানাধার অগ্নিদেব! নির্মল, পাপনাশক, দীপ্যমান আপনার দিব্যজ্যোতি ও তেজ সাধকের হৃদয়ে প্রেরণ করুন–উদগ্নে শুচয়স্তব শুকা এই পুরাণুবাক্যা ১ম কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকের ১৪শ অনুবাকে ব্যাখ্যাত)। হে অগ্নিদেব! আপনি জ্ঞানরূপ মহান জ্যোতির দ্বারা প্রকাশিত হচ্ছেন। (বি জ্যোতিষা বৃহতা ভাত্যগ্নিরা এই যাজ্যা ১ম কাণ্ডের ২য় প্রপাঠকের ১৪শ অনুবাকে ব্যাখ্যাত)। (সৌকর্মসমূহে পুরোনুবাক্যের প্রতীকরূপে উদুত্যং জাতবেদসম এই মন্ত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। এইটি ১ম কাণ্ডের ২য় প্রপাঠকের ৮ম অনুবাকে এবং ৪র্থ প্রপাঠকের ৪৩শ অনুবাকে ব্যাখ্যাত। এর অর্থ–) রশ্মিসমূহ (জ্ঞানরশ্মি) সকলের দর্শনের নিমিত্ত বা সকলকে দর্শনের নিমিত্ত সেই জাবেদা অগ্নিসদৃশ দ্যোতমান সূর্যকে (জ্যোতিস্বরূপ পরব্রহ্মকে) উর্ধ্বে বহন করছে। হে বিচক্ষণ সূর্যদেব! আপনি দীপ্যমান কেশস্থানীয় রশ্মির ন্যায় হরিৎ নামক সপ্ত অশ্বের দ্বারা বাহিত হচ্ছেন (সপ্ত হরিতোহশ্বা রথে বহন্তি)। রক্ত শ্বেত ইত্যাদি বিবিধ বর্ণের রশ্মিমণ্ডল দেবসৈন্যসদৃশ উদিত হচ্ছে (অর্থাৎ আপনাকে বেষ্টন করে চলেছে)। (কীরকম? না, সেই সূর্যদেব মিত্র, বরুণ, অগ্নি ইত্যাদি দেবতাকে উপলক্ষিত করে প্রাণীজাতের ইন্দ্রিয়াধিষ্ঠাতা সকলের চক্ষুস্বরূপ। সেই রশ্মিমণ্ডলস্থ সূর্যদেব জগতের (স্থাবর-জঙ্গমের) আত্মারূপে দ্যুলোক, ভূলোক ও অন্তরীক্ষলোক এই লোকত্রয় সর্বতোভাবে পূর্ণ করছেন (পূরিতবা)। সকল দেবতা আমাদের দ্বারা প্রদত্ত ক্ষীরের ন্যায় সারভূত যোগ্য হবির সেবা করুন। (কি রকম দেবতা না,) সেই দেবগণ ঋতাবৃধ অর্থাৎ সত্যের বা যজ্ঞের বর্ধক; তারা প্রতিটি ঋতুর উপলক্ষিত কর্মে বা যজ্ঞ কর্মে) আমাদের আহ্বান শ্রবণ করে থাকেন। (অর্থাৎ আমাদের আহ্বান শ্রবণ করে, আগত হয়ে থাকেন)।হে বিশ্বদেবগণ! আপনারা আমার এই আহ্বান শ্রবণ করুন। যাঁরা অন্তরীক্ষলোকে অবস্থান করছেন, যাঁরা এই পৃথিবীতে আমাদের নিকটস্থ হয়ে আছেন, এবং যাঁরা দ্যুলোকে (স্বর্গে) স্থিত হয়ে আছেন, যাঁরা অগ্নিজিহ্ব হয়ে (অর্থাৎ অগ্নির জিহ্বার ন্যায় জিহ্বশালী হয়ে) অগ্নির মাধ্যমে হবিঃ-স্বীকার করে থাকেন, বা অন্য যাঁরাও যাগযোগ্য আছেন, সেই সকলে আপনারা এই যজ্ঞস্থানে কুশের আসনে উপবেশন করে হৃষ্ট হয়ে যজমানের হর্ষ বর্ধন করুন (যজমানং হর্ষয়ধ্ব)।১৪।